মাইনুল, সাদাসিধে একজন মানুষ। এক পা খোঁড়া, স্ত্রী আর এক মেয়ে নিয়ে নির্ঝঞ্ছাট পরিবার। মাঝরাতে জড়িয়ে পড়ল এক ঝামেলায়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান কবির খানকে পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়। খুনিকে ধরার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল স্থানীয় থানা। উপর মহল থেকে চাপ আসছে ক্রমাগত। থানার দুই অফিসার, আরিফুল হক এবং হাফিজ সরকার উঠে পড়ে লাগল খুনিকে খুঁজে বের করতে। এক খুনের সমাধান না হতেই দ্বিতীয় খুন। তারপর... মাইনুল কি খুনি? কিংবা খুনি কে?
Shariful Hasan hails from Mymensingh, Bangladesh. He has spent his childhood by the banks of Brahmaputra river. He completed his Masters in Sociology from University of Dhaka and is currently working in a renowned private organization.
Shariful's first novel was published on 2012 titled Sambhala. With two other books, this captivating fantasy trilogy has received widespread acclimation both within and beyond the borders of Bangladesh. The Sambhala Trilogy was translated in English and published from India.
Although his inception consisted of fantasy and thriller, he has later worked on a variety of other genres. These works have been received fondly by the Bangladeshi reader community. Lot of his works have also been published from different publications in West Bengal.
Award- Kali O Kalam Puroshkar 2016 for 'অদ্ভুতুড়ে বইঘর'
সহজপাচ্য। তবে বেশি সহজ করতে গিয়ে 'ফেনভাত' হয়ে গিয়েছে।
মোটের উপর গল্প বলা ভালো। খুন কে করেছে তার জন্য কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে কী উপস্থিত হয় সেটা দেখার প্রবাহটা পরিমিত পরিসরে ছিল। কারণ ছোট ছোট অধ্যায় পড়ায় গতি এনে দেয়।
গল্পে এবং বাক্যে বেশকিছু ফাঁক ছিল। গল্পেরগুলো বড় বলে উল্লেখ করছি না। বাক্যে ভুলগুলো এরকম–খুন হবার দিন পুলিশ অফিসার আরিফ সুমনার বাড়িতে যান। কিন্তু পরের দিনের বিবরণে বলা হয়, 'অনেকদিন সুমনার ওখানে যাওয়া হয় না। …' এ ধরনের ছোটখাটো ভুল দৃষ্টি এড়ানোর মতো ছিল না।
সাম্ভালা পড়ে একটু বেশিই উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়ে গিয়েছিল... সেটা কেটেছে। তা বলে 'রাত্রি শেষের গান' একেবারে খারাপও নয়। এটা হলো মূলত যারা মানসিক চাপ না নিয়ে থ্রিলার পড়তে চায়, তাদের জন্য আদর্শ।
সিন্যামাটিক কিছুটা! চিত্রনায়ক জসিম মেয়ের অসুস্থতার টাকা জোগাড় করতে যেয়ে অনিচ্ছায় খুন করে ফেলে৷ কিন্তু আমরা জানি জসিম সাহেব খুনটা করেন নাই৷ আমাদের কানে ক্রমাগত বাজতে থাকে উনার কঠিন দৃঢ় কন্ঠস্বরে দুই হাত নেড়ে বলা সেই সংলাপ "বিশ্বাস করুন জজ সাহেব, আমি কোনো খুন করি নি, আমি খুন করি নি, বিশ্বাস করুন"৷ তবুও পরিবারসহ জসিম সাহেবকে পালিয়ে বেড়াতে হয়৷ পেছন পেছন " হ্যান্ডস আপ, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না' বাহিনীও এদিক-সেদিক জোড়াতালি মেরে ধাওয়া করতে থাকে৷ আমরাও অধীর অপেক্ষায় থাকি আসল কালপ্রিটের আহমদ শরীফ মার্কা ঢেউটিনের উজ্জ্বল হাসির জন্য৷
শরীফুল হাসানের 'সাম্ভালাঃ দ্বিতীয় যাত্রা' বেশ বিরক্তি নিয়ে শেষ করেছিলাম৷ এখন আবার থ্রিলার বইয়ের প্রতি কেমন অনিহা চলে আসছে৷ একদম কড়া জিনিস ছাড়া পিনিক আসে না! তবুও বইটা ছোট দেখার কারণেই অথবা লেখকের সম্প্রতি 'যেখানে রোদেরা ঘুমায়' বইয়ের উচ্চমাত্রার প্রসংশার বলেই হোক, ভাবলাম পড়ে দেখি কেমন৷ নাহ, মন্দ লাগল না৷ একটানেই কামতামাম৷ সহজ লেখনী৷ অতিরিক্ত বর্ণনার বালাই নেই৷ মোটামুটি প্লট৷ তবে শেষের দিকে হাফিজের কাছে হঠাৎ করে তেলচর্বিযুক্ত সব তথ্যপ্রমাণ ভিম সাবানের ঠেলায় ফকফকা হয়ে যাওয়াটা তাড়াহুড়ো লেগেছে৷ আরো ভালো এক্সিকিউশান দেওয়া যেত৷ আর কিছুটা প্লটহোলও ছিল, যা অদেখা করা যায় অবশ্য৷
সাম্ভালা পার্ট ১ পড়েছি কিছুদিন আগে। পিডিএফএ পড়ার পর মনে হলো এটা কিনেই বাকিগুলো পড়বো। একই সাথে “রাত্রি শেষের গান” ছোট একটা বই হওয়াতে মনে হলো এটাও পড়ে দেখি। ইদানিং কিছু থ্রিলার পড়ার কারণে বুঝতে পেরেছিলাম এ দেশের থ্রিলার গুলোতে অনেক সমস্যা থেকে যায়। যথেষ্ট প্লট টুইস্টের অভাবে ইচ্ছে করে ঝুলিয়ে রাখা, দুর্বল ডায়ালগ, চরিত্রের সাথে যায় না এমন ডায়ালগ, প্রথম দিকে বর্ননা বেশি কিন্তু শেষ দিকে তাড়াহুড়া, চরিত্রের উপস্থাপন ডায়ালগ কিংবা দৃশ্যে না এসে লেখকের বর্ননার চলে আসা – এমন অনেক কিছু থাকে। আর যদি ছোট থ্রিলার হয় তাহলে প্লটটাও কেন যেন দুর্বল/ সাধারণ একটা পুলিশি তদন্ত হয়ে যায়। তাই ছোট থ্রিলারে আগ্রহ কমে আসছিল। . এরকম সময় সাম্ভালার লেখক তার ছোট কলেবরের লেখায় কি লিখেছেন দেখতে ইচ্ছে হলো। অবাক করলেও সত্য যে সাম্ভালাতেও কিছু ব্যাপার ছিলো যা আমার ভালো লাগেনি; এবং সেই জিনিসগুলোই এই “রাত্রি শেষের গান” – এ নেই। সেই সাথে এ দেশের অনেক হিট থ্রিলারেও কিছু ব্যাপারে আমার অড লাগলেও এটাতে দেখলাম সেসব নেই। . # অপ্রয়োজনীয় বর্ননা নেই। # চরিত্রের উপস্থাপন লেখকের মুখে সরাসরি না এসে দৃশ্যে কিংবা ডায়ালগে এসেছে। # কেউ নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে ক্ষ্যাত কথা বলেনি। অর্থাৎ যার মুখে যেমন কথা মানায় তেমনটাই ছিলো। অযথা, ডায়ালগ বাড়ানো হয়নি। যে কথপোকথন যেখানে শেষ হবার কথা যতটুকু হবার কথা সেখানেই শেষ হয়েছে। # ইচ্ছে করে ঝুলিয়ে রাখা হয়নি। একদম স্বাভাবিক গতিতে, নিয়মিত ছন্দে প্লট রিভিলেশন ঘটেছে কিছুক্ষণ পরপরই। প্লট ট্যুইস্টের অভাবে ইচ্ছাকৃত তথ্য আটকে রাখা হয়নি। # সাসপেন্স ইচ্ছাকৃত নয়, একদম যতটুকু যেখানে থাকা উচিৎ ততটুকুই। # ভাষাশৈলী পুওর না। আবার কাব্যিকও না। থ্রিলারে যেমন থাকা উচিৎ তেমনটাই। # ফেসবুকীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। অনেক বইতে আমি ডায়ালগের বাইরে এরকম শব্দ পেয়েছি। এবং সব চরিত্র ঢালাও ভাবে ওইসব শব্দ ব্যবহার করতো। যেটা মূলত হয়তো লেখকেরই অভ্যাসের পরিচয়, চরিত্রের নয়। কিছু বই পড়লে মনে হয় বই পড়ছি না, স্ট্যাটাস পড়ছি। “রাত্রি শেষের গান” – এটা একদমই মনে হয়নি। এটাতেই আমি বিশাল খুশি। . যে ব্যাপারটা সবচেয়ে ভালো লাগলো সেটা হচ্ছে এইটাতে এতো অল্প পৃষ্ঠার বইতে তাও থ্রিলারে দুটো চরিত্রের গ্র্যাজুয়াল বিকাশ ঘটেছে – যেটা সাধারণত ক্লাসিক যুগের সমকালীনে দেখা যেত। অর্থাৎ, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে চরিত্রকে/ মানুষকে কিভাবে তার মনস্তাত্বিক দিক এবং ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করে একই সাথে কিছু সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যায় – সেটা এই বইটিতে পেলাম। এবং থ্রিলার জানরায় পেলাম – সেটাই অবাক লাগলো। সার্থক একটা বই বলবো। সাধারণ একটা পুলিশি কেইসের গল্প হলেও সার্থকভাবে তুলে ধরাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। . সাম্ভালা ২, ৩ ও পড়বো। সাম্ভালার স্টোরি আইডিয়া অবশ্যই আমার এটা থেকে ভালো মনে হয়েছে। আর “রাত্রি শেষের গান” ছোট থ্রিলার হিসেবে ভালো মনে হয়েছে। উপস্থাপন অবশ্যই সাম্ভালা ১ থেকে বেশি ভালো। . . ***[এখন থেকে ইন ডিটেইলস সব ভালো লাগা – খারাপ লাগা বলবো ভেবেছিলাম। রিভিউয়ের জগতে অথেনটিক রিভিউ পড়ে নিজে উপকার তেমন না পেলেও; ঠিক করেছি আমি অন্য পাঠকদের উপকার করবো। তাই আমার ম্যাক্সিমাম খারাপ-লাগা, ভালোলাগার সব পয়েন্টই এখানে দেয়া হলো; কিছুই লুকাইনি।]***
এটাই বোধহয় শরীফুল হাসান ভাইয়ার সবচেয়ে ছোট বই। কিন্তু এই ১২৮ পাতার ভেতরেও তার সিগনেচার স্টাইল খুঁজে পাওয়া যাবে দারুণ ভাবে। ছিমছাম একটা মার্ডার মিস্ট্রি, এক্সিকিউশনও দারুণ। ^_^
#রিভিউ রাত্রি শেষের গান শরিফুল হাসান বাতিঘর প্রকাশনী মাইনুল,একজন মোটর মেকানিক। স্ত্রী জয়নাব আর মেয়ে ফুলিকে নিয়ে টানাটানির সংসার। একদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখে মেয়ের অনেক জ্বর। ডাক্তার দেখানো লাগবে কিন্তু পকেটে নাই টাকা। টাকার জন্য হাত পাততে বের হয়ে যায় সে। কেউ তাকে সাহায্য করে না। হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় এক ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটি হয় মাইনুলের। সব হতাশা আর ক্রোধ ওই লোকটার ওপর মেটায় মাইনুল। পরের দিন সেই জায়গায় লোকটার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ফেঁসে যায় মাইনুল। খুনটা কি সে করেছে নাকি লুকিয়ে আছে কোন এক রহস্য???
আরিফ সামাজিক জীবনে চরম ব্যর্থ এক পুলিশ অফিসার। তার কাঁধে এসে পড়ে এ কাজের ভার। কানাগল��� এক খুনের রহস্য। খুনিকে খুঁজতে তাকে সাহায্য করে আরেক অফিসার হাফিজ। খুনিকে খুঁজতে গিয়ে বের হয়ে আসে এক রহস্য।
ভালোবাসা, সামাজিক সমস্যা, দারিদ্রতা ,ক্রোধ আর লোভের সংমিশ্রনে শরিফুল হাসানের থ্রিলার রাত্রি শেষের গান। মাত্র ১২৮ পেজের বইটা শেষ না করে উঠা কঠিন। বেশ কিছু টুইস্ট আর সাসপেন্স এর কম্বিনেশনের দারুন এক মার্ডার মিস্ট্রি হচ্ছে রাত্রি শেষের গান। চরিত্রগুলাও অসাধারণ। অপরাধী মাইনুল এর জন্য মায়া লেগেছে পড়তে যেয়ে। আবার ইন্সপেক্টর আরিফের চরিত্রটা প্রশংসার যোগ্য দাবিদার। তার চরিত্রটা অনেকটা সপ্তরিপুর বাশারের মতই দুর্দান্ত। ভালো লেগেছে ব্যাপারটা। সবথেকে বড় কথা একটা মার্ডার মিস্ট্রি অথবা থ্রিলারের থেকেও বেশি কিছু হচ্ছে রাত্রি শেষের গান। রহস্য ,আবেগ , ভালোবাসা আর হতাশার গল্পে ডুব দিতে চাইলে বইটা মিস করা উচিৎ হবে না। রেটিং ৫/৫।
ছোট ছিমছাম গোছানো লেখা। শুরুতেই যখন দেখেছি খুব সাধারণ একটা গল্প আর খুনি কে সেটাও সিম্পলি বোঝা গেছে, তখুনি বুঝেছি এখানে কোন 'কিন্তু' আছে। কিন্তু এ পর্যন্তই। ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি আসল ঘটনাটা কোনদিকে যাচ্ছে। শরীফুল ভাইয়ের ঝরঝরে লিখনশৈলী আর সুন্দর প্লটটায়, সব মিলিয়ে বেশ ভালোই লেগেছে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
সাদাসিধা মানুষ মাইনুল। খোঁড়া পা নিয়ে কাজ করে একটা গ্যারেজে। স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে ফুলিকে নিয়ে একটা বস্তিতে থাকে। ফুলির অনেক জ্বর, ডাক্তার দেখানো দরকার। কিন্তু মাইনুলের কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই। কী হবে এখন? টাকার খোঁজে বের হল মাইনুল। ব্যস, পড়ে গেল ঝামেলায়।
এলাকার প্রাক্তন এমপি'র ছেলে কবির খানকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। এমপির মৃত্যুর পর ইলেকশনে কবির খানেরই দাঁড়ানোর কথা ছিল। শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে কবির খানকে। ব্যক্তিগত আক্রোশ নাকি রাজনৈতিক কোন্দল? রেকর্ড বলে পার্টি থেকেও কবির খানকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল আগামী নির্বাচনের। তাছাড়া কবির খানের ইলেকশন করা নিয়ে দলের আর কারো কোনো মাথাব্যথা নেই, তাদের চোখে কব্জ্র খানই যোগ্য লোক। তাহলে খুন হলো কেন?
লোকাল থানার ওসি আরিফ আর তার সহকারী হাফিজের চোখে ঘুম নেই। যে করেই হোক কবির খানের খুনিকে বের করতে হবে। উপর থেকে প্রেশার আসছে খুব। এদিকে এক খুনের তদন্তের কূল-কিনারা না হতেই আরেকটা খুন হয়ে গেল। কবির খান যেখানে খুন হয়েছিল ঠিক তার পাশেই। দুটো খুন কি একই সূতোয় বাঁধা?
শরিফুল হাসানের লেখা এবারই প্রথম পড়লাম। অবাক হতে পারেন, আপনি সাম্ভালা পড়েননি? না পড়িনি। তবে সাম্ভালা তিন খন্ডই আলাদাভাবে আমার সংগ্রহে আছে। কেন এখনো পড়িনি? এই ট্রিলজি নিয়ে এত পরিমাণ হাইপ উঠেছিল, বিভিন্ন বইয়ের গ্রুপে এত এত রিভিউ পড়েছি, ভাবলাম এখন পড়তে গেলে আমি আসল মজা নিতে ব্যর্থ হব। হাইপ কমে যাক, আমার মাথা থেকেও পড়া রিভিউগুলো দূর হোক, তখন আয়েশ করে পড়ব। এবার আসি এই বইয়ের আলোচনায়।
শুরু থেকেই আপনার মনোযোগ আটকে রাখতে সক্ষম "রাত্রি শেষের গান"। থ্রিলার বই এমনই হতে হয়, প্রথম এক কি দুই পাতা পড়লেই যেন এমন একটা অবস্থা হয়, পুরো বই শেষ না করে যেন আর শান্তি পাওয়া না যায়। প্রথম দুই পাতা পড়ে ফেলতে পারলে এই বই আর রাখতে পারবেন না আপনি। তবে, কিছু ব্যাপার আমার কাছে ধোঁয়াটে মনে হয়েছে আমার। বইয়ের কাহিনীটা যে এলাকায় ঘটেছে, পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে সেটা ঢাকার মধ্যেই কোনো একটা এলাকায় ঘটেছে। আবার এক জায়গায় আজিমপুরের কথাও বলা হয়েছে। যেহেতু একটা বস্তির কথাও বলা হয়েছে এবং আজিমপুরকে বলা হয়েছে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি, সেহেতু লালবাগ বা পুরান ঢাকা হতে পারে, অথবা আজিমপুরও হতে পারে। কিন্তু আরেক ঘটনায় বলা হয়েছে, ঘটনা নিশ্চয় খুব গুরুতর, নয়তো ঢাকা থেকে ফোন আসতো না। এটা হলো থানার ওসির কথা। যে জায়গায় খুন হয়েছে তার পাশের থানাই তদন্ত করছে, কিন্তু বলা হচ্ছে ঢাকা থেকে ফোন এসেছে যেহেতু, কেসটা গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে কী দাঁড়ালো? আমার মনে হয় লেখক এই জায়গায় কিছুটা গুলিয়ে ফেলেছেন।
তাছাড়া যেহেতু মার্ডার মিস্ট্রি, আমার মনে হয় এখানে স্থানের উল্লেখ করাটা জরুরি ছিল। স্থানের নাম উল্লেখ থাকলেই আর এই জটিলতা হত না। কাপড় পরা আর বই পড়ার পরা/পড়া নিয়ে চোখে পড়ার মত অনেক ভুল রয়েছে। আশা করব পরবর্তী সংস্করণে এই ভুলগুলো থাকবেনা। চমৎকার প্রচ্ছদের জন্য তানিয়া আপুকে ধন্যবাদ। প্রচ্ছদটা আমার অতিমাত্রায় পছন্দ হয়েছে।
যদি রহস্যের পাগল হয়ে থাকেন, থ্রিলার আপনার পছন্দের জনরা হয় তবে এখনই শুরু করে দিতে পারেন। দুই ঘন্টায় শেষ হয়ে যাবে বই। এই দুই ঘন্টায় দারুণ এক জার্নি হবে আপনার। হ্যাপি রিডিং।
আমার কাছে শরীফ ভাই সবসময়ই সাম্ভালা সিরিজের স্রষ্টা হয়েই থাকবেন। স্বভাবতই যখন শুনলাম উনি ফ্যান্টাসি জনরার বাইরে বিচরণ করছে, কিছুটা দুরুদুরু বুকেই হাতে তুলে নিলাম। বাকিটা ইতিহাস। যে রাঁধতে জানে সে চুলও বাঁধতে জানে। এখন মনে হচ্ছে উনি ড্রামা থৃলার লেখুক আরও কয়েকটা! খুবই ভালো লেগেছে।
গল্পের প্লট ভালো ছিল। এক্সিকিউশন আরো ভালো হতে পারত। শরীফুল হাসানের লেখনী তো বরাবরই ভালো। বই শেষ না করে, হাত থেকে নামানোর উপায় নাই।
তবে এই বইয়ের পিছনে লেখকের সময় এবং যত্নের অভাব মনে হয়েছে। বেশকিছু বড়সড় প্লটহোল গল্পে বিদ্যমান।
খোড়াব্যক্তিদের খুনি হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে, ৫জনের মধ্যে হুট করে মইনুলকেই বেছে নেওয়া হল৷ একজন পাগল, আরেকজন বেকার - এই যুক্তিতে সন্দেহভাজনদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়াটা বোধগম্য হয় নি।
ফোনের মধ্যে পুলিশ শুনতে পায়, বাসের হেল্পার যাত্রী তুলার জন্য "নান্দাইল" বলে চিৎকার করছে। এই সুত্র থেকেই পুলিশ ধরে নেয় মাইনুল নান্দাইলই যাচ্ছে।
বাসের হেল্পার যাত্রী তুলার জন্যে "সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী" বলে প্যাসেঞ্জার ডাকলেও, সব প্যাসেঞ্জার যে যাত্রাবাড়ীতেই নামবে এমন না। অনেকে আসাদগেট, শ্যামলী, কল্যানপুরেও নেমে যেতে পারে।
সাজু এবং সুমনা এর ভূমিকা গল্পে ক্লিয়ার না। যুবক সাজুর মৃত্যুর ব্যাখাও পছন্দ হয় নি। "সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। সেই ঘুম আর ভাঙলো না।"
নভেলা হিসেবে "রাত্রি শেষের গান" মন্দ নয়। তবে কিছু বিষয় দৃস্টিকটু লেগেছে। আমার মত খুঁতখুঁতে স্বভাব যাদের নেই, তাদের ভালো লাগবে।
২ ঘন্টায় পড়ে শেষ করার মত বই। সময় কাটাতে চাইলে এবং মার্ডার মিস্ট্রি ভালো লা��লে - খুব হাই এক্সপেক্টেশন না রেখে শুরু করতে বলব।
১ ঘন্টা লেগেছে শেষ করতে। মাত্র ১২৮ পেজে পারফেক্ট মার্ডার মিষ্ট্রি লেখা যায় জানা ছিল না। মাইনুল কে দিয়ে আরো কিছু মিষ্ট্রি তৈরি করলে বেশ ভাল ভাবে জমে উঠত।
বড্ড দেরিতে পড়ে ফেললাম। এইরকম প্লটের অনেক মুভি/নাটক আগেই দেখে ফেলেছি। কিছু কিছু জায়গায় বর্ণনা অনেকটা সিনেম্যাটিক। তবে লেখা বেশ ঝরঝরে। আয়েশ করে দুই বসায় শেষ করেছি।
ছোট একটা বই, ছোট ছোট কিছু জীবন... কিন্তু জীবন কি ছোট হয়? জীবন যে ছোট হয় না সমাপ্তি সেটা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। ছিমছাম, সাদামাটা একটা মার্ডার মিস্ট্রি কিন্তু সম্পর্কযুক্ত চরিত্রগুলোর জন্যই গল্প জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
একজন লেখকের সবচেয়ে বড়ো গুণ কী? যখন একটা সাধারণ পটভূমির কোনো এক গল্প লেখকের লেখনীর শক্তিতে অসাধারণ হয়ে ওঠে, এখানেই লেখকের সার্থকতা।
"রাত্রি শেষের গান" গল্পটা তেমনই। খুবই সাধারণ মনের গল্প। তারপরও যেন মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়। থ্রিলার হিসেবে চিন্তা করলে এমন গল্প অহরহ পাওয়া যায়। খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু নয়। শুরুতে একটা খু ন। ঠিক কী কারণে খু নটা হলো, সেটা শুরুতেই জানা যায়। তারপর শুরু হয় ইদুর বেড়াল খেলা। খু নিকে ধরতে পুলিশের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। শূন্য থেকে খু নিকে ধরার প্রয়াস ভালো লেগেছে। যেখানে কোনো সূত্র নেই, সেখানে তথ্য সাজিয়ে সূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হয়। এখানে বুদ্ধির খেল প্রধান। বুদ্ধিতে খুব অসাধারণ হতে হবে এমন না, শুধু যুক্তি তর্কের উপস্থাপলেই আসল অপরাধী বেরিয়ে আসে।
খু ন হয়েছে কবির খান নামের সাবেক এমপির পুত্র, যে নির্বাচনে দাঁড়ানোর তোড়জোড় করছে। খু নের কারণ, রাস্তায় কোনো মানুষকে অবজ্ঞা করে তির্যক বাণী ছুড়ে দেওয়া। আপাত দৃষ্টিতে কারণ এটি মনে হলেও, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি? এমন এক হোমরা চোমরা জাতীয় মানুষের খু ন হলে স্বভাবতই উপর মহল থেকে চাপ আসে। সেই চাপে পিষ্ট পুলিশেরা একের পর সূত্র সাজিয়ে যখন খুনির পেছনে ছুটছে, তখনই আরেকটা খু ন। কোথায় যেন যোগসূত্র আছে, ঠিক ধরা যাচ্ছে না।
সব শেষে যখন অপরাধী ধরার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই নতুন মোড়। শেষের এই টুইস্ট আমার ভালো লেগেছে। গল্পের অনেক কিছুই ধারণা মাফিক হলেও এই টুইস্ট আশা করিনি। সাধারণ মাপের বাস্তব সম্মত সমাপ্তি। লেখকের সমাপ্তি নিয়ে আক্ষেপ থাকে, তার যেকোনো গল্পের শেষটা বিষাদে ঘেরা হয়। এই দিক দিয়ে ব্যতিক্রম বইটি। ভালো লেগেছে ভীষণ।
শরীফুল ভাইয়ের আমার যে দিকটি সবচেয়ে ভালো লাগে, তার তৈরি প্রতিটি চরিত্র সমানভাবে ফুটে ওঠে। তিনি গল্প বলে যান। এই গল্পের মধ্যেই একেকটি চরিত্র প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। এই বইয়েও তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। বইয়ে লেখক তিন ধরণের দম্পতির কথা বলেছেন। কারো মনে প্রিয় মানুষটির প্রতি ভালোবাসা অঢেল। নিজের অর্ধাঙ্গীর জন্য সব কিছু করতে পারে। বিপদে আপদে পাশে থাকে। আবার কেউ আছে অন্যের কথা মাথায় রেখে অবিশ্বাসের ডালপালা ছড়াতে পারে। কিন্তু ভালোবাসা কি হারিয়ে যায়? কোথাও কোথাও ভালোবাসা টিকে থাকে। আবার কোথাও সত্যিই হারিয়ে যায়। আর হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে ওঠে। মন হয়ে যায় পাষাণ। আর সবশেষে জায়গা করে নেয় নিষ্ঠুরতা।
পরিশেষে, ১২৬ পৃষ্ঠার ছোট্ট বইটি দারুণ এক সময় উপহার দিয়েছে। সমাজের এক অংশের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। ফুটিয়ে তুলেছে ভালোবাসাময় জীবন অথবা প্রেমহীন সংসারের কাব্য। আমাদের সমাজে দুটিই পাশাপাশি চলে। কারো দুঃখ যেখানে, সেখানেই সুখ বাসা বাঁধে। একটু আলোচনা যেখানে দুঃখকে দূরে পাঠাতে পারে, সেখানে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে নিজেরা দূরে সরে যায়। ঠিক এভাবেই হারিয়ে যায় ভালোবাসা।
বই : রাত্রি শেষের গান লেখক : শরীফুল হাসান জনরা : সামাজিক থ্রিলার প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ পৃষ্ঠা : ১২৭
ঘুমের রেশ কাটছিল না কিছুতেই। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, কত আর ঘুমানো যায়। বই পড়লে ঘুম কেটে যায় আমার (জানি অনেকের উল্টোটা হয়)। তাই শরীফুল হাসানের ‘রাত্রি শেষের গান’ বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। ছোট বই, ঘণ্টা দেড়েক লাগল পড়তে।
শরীফুল হাসানের গল্প বলার ভঙ্গী বেশ ভালো। প্রথম লাইন থেকে গল্প বলতে পারেন। শুরুতেই পাঠককে অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা দিয়ে বিরক্ত করে তোলেন না। আগে গল্প শোনাতে শুরু করেন, যখন বোঝেন যে পাঠক আর উঠবে না গল্প ছেড়ে, তখন অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেন।
গল্প এক দরিদ্র মেকানিককে নিয়ে। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে না পেরে হতাশ হয়ে হাঁটছিল রাস্তায়। এক তরুণ তাকে দেখে ‘পাগল ছাগলে ভরে গেছে দেশ’ বলতেই মেজাজ বিগড়ে যায় তার। হাতাহাতি থেকে খুন হয়ে যায় সে তরুণ। পরে দরিদ্র লোকটি জানতে পারে খুন হওয়া ছেলেটা ছিল এক এমপির আত্মীয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এভাবে এগোয় গল্প।
মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া কোন টুইস্ট নেই, অসাধারণ কোন প্লট নেই, বুদ্ধির খেলা নেই, মার মার কাট কাট অ্যাকশন নেই। দারিদ্র্য, অসহায়ত্ব, ক্ষমতা, লোভ ইত্যাদি সামাজিক উপকরণ নিয়ে লেখা একটা থ্রিলার। না পড়লে জীবন নষ্ট, এমন কোন বই নয়। সোজাসাপ্টা জীবনে একটুখানি থ্রিলের গল্প। অলস দুপুরে, একাকী সন্ধ্যায়, হালকা মেজাজে পড়ার মতো সুখপাঠ্য একটা বই।
বইতে ফাইন টিউনিং দরকার ছিল দুয়েক জায়গায়। কোথাও কোথাও একটানা কয়েকটা বাক্য ‘ছিল’, ‘গেল’, ‘পেল’ টাইপের শব্দ দিয়ে শেষ করা হয়েছে। চরিত্র সংখ্যা একটু বেশি মনে হয়েছে ছোট বইয়ের তুলনায়। এছাড়া আর কোন সমস্যা চোখে পড়েনি আমার। বড় ধরনের কোন কিছু বিরক্ত করেনি আমাকে। শরীফুল হাসানের গল্প বলার ভঙ্গী বরাবরের মতোই ভালো লেগেছে আমার।
সাম্ভালা পড়বার পর থেকেই শরীফুল হাসানের লেখার ভক্ত আমি। এরকম একটা বিশাল প্লটে বাংলা উপন্যাস বহুদিন দেখিনি আমরা। তাই পাঠকনন্দিত হয়েছে সাম্ভালা অনেক। আর এবার তো বোনাস হিসেবে একখন্ডে নতুন মোড়কে এসেছে সিরিজটা। গত বছর "মেঘ বিষাদের গল্প" গতানুগতিক ধারার বাইরে অন্যরকম একটা স্বাদ দিয়েছিল। আর এবার পেলাম "রাত্রি শেষের গান"।
খুব সাধারন একটা প্লট। যেখানে একটা হত্যাকান্ড ঘটে যায় রাতের আধারে। পুলিশ তার স্বাভাবিক পন্থাতেই খোঁজ করে খুনির। একসময় তথ্য প্রমানের ভিত্তিতেই ধরা পরে সম্ভাব্য খুনি। কিন্তু সমস্যা একটাই। কিছুতেই স্বীকার করছে না সেই খুনটা করেছে। এদিকে খুন করার আপাতঃ কোন কারন মানে মোটিভও নেই তার। তাহলে খুনটা কি সে করে নাই? অন্যকোন কাহিনী আছে এতে???
খুব সাধারণ একটা কাহিনী হলেও পাঠককে ভাবাবে প্রথম থেকেই যে আসলে ঘটনা কি হতে পারে। এমনকি খুনিকে খুঁজে পেতেই বেগ পেতে হবে সবাইকে। আমি যদিও প্রথমেই যাকে অপরাধী ঠিক করেছিলাম সেই শেষপর্যন্ত অপরাধী প্রমাণ হয়েছিল (অতিরিক্ত কল্পনাশক্তি থাকার কুফল -* আমার মতে)। কিন্তু আপনাকে পুরো বইটা পড়তে বাধ্য করবে। আর শেষ করে আপনিও বলতে বাধ্য হবেন আহামরি কিছু না হলেও সময়টা ভালো কেটেছে এতক্ষন "রাত্রি শেষের গান"এর সাথে।।।
শুরুটা ঠিকঠাক ছিল , একজন খোঁড়া লোক সন্তানের অসুস্থতা, সংসারে নিজের অক্ষমতা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চাপে পড়ে অন্ধকার রাস্তায় হামলা করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কবির খানকে ,আহত করে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু আসল ঝামেলাটা ঘটলো যখন সকালে পাওয়া গেল তার মৃতদেহ,তার রহসে্যর জের কাটতে না কাটতেই খুন হলো আরো দুজন মানুষ.কে আছে এই খুনের পিছনে? খোঁড়া মাঈনুল?কবিরের বন্ধু?না কি সর্ষে মধ্যে আছে ভূত!
বাকিটা জানতে হলে পড়তে হবে বইটি,তবে যেরকম থ্রিল আশা করেছিলাম তার প্রায় চৌদ্দ আনাই থাকলো অপূর্ণ.
সাবলীল রচনা। থ্রিলার হিসেবে একটু দুর্বল কিন্তু খারাপ না। লেখকের মৌলিক উপন্যাস আগে পড়িনি। তাই এখনই মন্তব্য করবো না, আরো দু একটা পড়ে দেখে নি আগে। আমাদের দেশে মৌলিক থ্রিলার খুব কম, কয়েকজন সাহস করে লিখছে এটা বাহবা পাওয়ার যোগ্য।
শরিফুল হাসানের অন্যান্য বইগুলোর ফ্লেভার এ বইতে খুব একটা পাই নি। প্লট টাও আহামরি না তবে গল্প বলা টা দারুণ ছিলো। শব্দ বুনন আর চরিত্র গাঁথুনি দুটোই পার্ফেক্ট ছিলো। একটানা পড়ে যাওয়ার মতো বইটা। লেখনির জন্য ২ বা তারচেয়ে আরো বেশিবার পড়া যাবে বইটা।
এক পা খোঁড়া মাইনুলকে আমজনতা বললেও ভুল হবে মনে হয়। কারণ নিম্নবিত্তদের আমরা জনতার কাঁটারেই ফেলিনা। মেয়ে বউকে নিয়ে দরিদ্রপল্লীতে বাস তার। এক গ্যারেজে কাজ করেন। একদিন মেয়ে অসুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা করাবার টাকা নেই তার কাছে। এমন সময় পথে এক ব্যাকটির সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পরে মাইনুল। তার মানিব্যাগ চুরি করে সে। পরদিন জানতে পারে লোকটি মারা গেছে। প্রাক্তন এমপির ছেলের খুনিকে খুঁজছে পুলিশ। কি হবে তার? খুন তা কি তাহলে তার হাত দিয়েই হল? পুলিশ থেকে বাঁচতে পরিবার সমেত গ্রামে চলে গেল মাইনুল। তারপর…।।
পাঠ পতিক্রিয়া- নিখাদ একখানা মার্ডার মিস্ট্রি। খুব সাদাসিধা একটা গল্পকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। শবরের বইগুলোর মত ফিল পাচ্ছিলাম। পড়তে বেশ লেগেছে।
❝ রাত্রি শেষের গান ❞ শরীফুল হাসানের থ্রিলার জনরার একটা উপন্যাস।
খোঁড়া একজন মানুষ মাইনুল, সামান্য গ্যারেজের দেখাশোনা করে দিন চলে, নির্ঝঞ্ঝাট জীবন, একরাতের ব্যবধানে পাল্টে যায় সব, রাগের বসে মেরে রক্তাক্ত করে দেয় একজনকে। পরদিনই ব্যস্ত রাস্তায় পাওয়া যায় লোকটার লাশ। লোকটা আর কেউ না সাবেক এমপির ছেলে কবির খান। অপরাধ বোধ জেঁকে বসে মাইনুলকে। তবে কী তার আঘাতে লোকটা মারা গেছে? এদিকে সে তো টাকার অভাবে লোকটার মানিব্যাগও নিয়ে এসেছে। কী হবে,কী করবে, ভেবে পায় না মাইনুল। পালিয়ে বেড়ায় নিজেকে খুনের দায় থেকে মুক্ত করতে।
এদিকে পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে। এমন ক্ষমতাধর একজন মানুষকে কে মারবে যার কোনো শত্রু নেই। হাজার খুঁজেও পাওয়া যায় না তার সাথে কারো শত্রুতার আভাস। পুলিশের হাতে কোনো ক্লু নেই, নেই কোনো প্রমাণ। হঠাৎই প্রভাতবেলার প্রথম সূর্যকিরণের মতো পাওয়া যায় একটা সূত্র। ঘটনার দিন এক ভিক্ষুক একজন খোঁড়া মানুষকে ঔ লাশের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছে। কাজে লেগে পড়ে পুলিশ।
এদিকে কবির খানের বাসার কাজের লোকের ও লাশ পাওয়া যায় একই রাস্তায়। দুইটা খুন কী একই লোকের করা, হত্যাকারী কী একজনই নাকি ভিন্ন ভিন্ন জন। কিন্তু একজন কালের লোককে কেন কেউ খুন করবে? এর ভিতর কী কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে?
ধরা হয় সন্দেহ ভাজন ব্যক্তি খোঁড়া মাইনুলকে প্রথমে সে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে নেয়। কিন্তু পুলিশ অফিসার আরিফের মনে হয় কিছু একটা ঠিক নেই, মাইনুল শুধু মাত্র রাগের বশে বা কয়েকটা টাকার লোভে কাউকে খুন করবে না। নতুন করে শুরু হয় তদন্ত। বেরিয়ে আসে এক গোপন সত্য। খুনি সম্পর্কে সব প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু খুনির কাছে পৌঁছানোর আগেই আত্মহত্যা করে বসে খুনি। কিন্তু কেন? অপরাধবোধ থেকে বাঁচতে, নাকি সম্মানের ভয়ে? পুলিশের হাতে ধরা দেওয়ার থেকে তার কাছে কী নিজের জীবন শেষ করা সহজ ছিল? ভেবে পায় না পুলিশ অফিসার আরিফ। হঠাৎই বেরিয়ে আসে অযাচিত তথ্য। বেরিয়ে পড়ে আসল খুনি, আসল রহস্য!!! কিন্তু খুনি কে?
শেষটা বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন লেখক। ছোটো হিসাবে লেখাটা উপভোগ্য ছিল। আর বেশ গতিশীলও। তবে আরো একটু সাজানো গুছানো হলে জমে ক্ষীর হয়ে যেত!!
আমাদের জীবনে নানান সম*স্যার উৎপত্তি হয়। সময়ের সাথে সাথে আবার তার সমাধানও হয়ে যায়৷ তবে সুন্দর সমাধানের জন্য চাই ধৈর্যধারণ করা। রাগকে প্রশমিত করা। একটি রা*গ, হতা*শা গোটা জীবনকে ধ্বং*স করে দিতে পারে। ধ্বং*স করে দিতে পারে নিজের সংসার, নিজের সাথে জড়িয়ে থাকা ভালোবাসার মানুষদেরও। আবার একটু নমনীয় হয়ে, নিজের জেদ, রাগ, অবহেলা একপাশে রেখে প্রিয় মানুষদের সাহচর্য দিলে হয়তো বেঁচে যেতে পারে শেষ হতে যাওয়া একটি সংসার৷ কেউ কেউ আবার নিজের সার্থের জন্য, অর্থলিপ্সার জন্য আপন মানুষদেরও পিছন থেকে পিঠের উপর ছু*ড়ি বসাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
একটি খুনের রহস্য ভেদ পাশাপাশি জোরালোভাবে উঠে এসেছে এই দিকগুলো। উঠে এসেছে সমাজের আরো নানান দিক।
'রাত্রি শেষের গান' সাধারণ মানের একটি গল্প। গড়পড়তা একটি থ্রিলার বইয়ে যেমনটা হয়ে থাকে। একটি রহস্যজনক খু*ন। সেটাকে ঘিরেই পরবর্তীতে ডালপালা মেলে বের হয়ে আসে আরো টুকরো কিছু ঘটনা। আরো কিছু রহস্য। এই বইটাও অনেকটা তেমন। তবে লেখকের লেখনশৈলীর গুণে সাধারণ এই গল্পটিই হয়ে উঠেছে অসাধারণ। সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ করে উপস্থাপন করাই হয়তো লেখকের বড় সার্থকতা।
বইয়ের প্রতিটি চরিত্র দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। সবগুলো চরিত্রের স্থায়িত্ব ভালো ছিল।
তবে মঈনুলের খুন করার বিষয়টা বারবার অস্বীকার করা অনেকটা সিনেমাটিক লেগেছে। যদিও এটাকে একপাশে রাখলে ওভারঅল সবটুকু গল্পই ভালো ছিল। শেষের টুইস্ট আশা করিনি৷ এত বড় বিশ্বাসঘা*তকতা কেই বা আশা করে!
বইয়ের কোয়ালিটি আমার কাছে খুব একটা ম্যাটার করে না। তবুও সনামধন্য একটি প্রকাশনীর বইয়ের কোয়ালিটি এত বাজে হবে এমনটাও আশা করা যায় না, মেনেও নেয়া যায় না। বোর্ড নরম, পেইজও নিম্নমানের। বইটা যদিও ২০১৮ সালের। এতদিন শুনে আসছিলাম বাতিঘরের আগের বইয়ের তুলণায় এখন কোয়ালিটি ভালো করেছে। আগের বইয়ের কোয়ালিটি আসলেই ভালো ছিল না। তবে সম্পাদনার ঘাটতি খুব একটা চোখে পড়েনি। বইয়ের দামটাও সহনীয় লেগেছে। প্রচ্ছদ সুন্দর।
পাঠক চাইলেই পড়ে দেখতে পারেন ছোট পরিসরের এই চমৎকার বইটি। কান পাততে পারেন রাত্রি শেষের গানে। ডুব দিতে পারেন রাত্রি শেষের গানে মেতে উঠা প্রকৃতিতে।
অনেকদিন ধরে সামাজিক থ্রিলার খুঁজছিলাম। "সামাজিক থ্রিলার" শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে ইদানিংকালে হিস্টোরিকাল থ্রিলার, ফ্যান্টাসি থ্রিলার, মিথলজিকাল থ্রিলার, স্পাই আর ইনভেস্টিগেটর থ্রিলারের ভিড়ে কল্পনায় সেসব ক্যারেক্টার সাজিয়ে নিতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। তাই কিছুদিন ধরে এমন একটা বই পড়িতে চাচ্ছিলাম যেটাতে আমার দেখা এই চিরচেনা পরিবেশেই জমজমাট একটা থ্রিলার পাবো। সে আশা কিছুটা মিটেছে বলা যায়। বস্তির খোঁড়া মেকানিক মাইনুল, একমাত্র মেয়ে জ্বরের ঘোরে পড়ে আছে কিন্তু ডাক্তার দেখানোর টাকাটুকুও নেই তার কাছে। টাকা জোগারের ব্যর্থ চেষ্টা করে ফেরার পথে দেখে নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে এক মোটরসাইকেল আরোহী। রাগের মাথায় তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে মানিব্যাগ চুরি করে আনার পর সকালে খবরের কাগজ মারফত খোঁড়া মাইনুল জানতে পারে সেই মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছে এবং ঐ আরোহী আর কেউ নয়, চারবারের এমপির পুত্র কবির খান। বেশ সহজ, সাবলীল, চর্বিহীন বর্ণনায় গল্প ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখক অবশ্যই বাহবা পাবেন। কিন্তু থ্রিলারের জমজমাট ভাবটা মোটেই ফুটিয়ে তুলতে পারেন নি। শেষের দিকে পুলিশ অফিসার হাফিজের রহস্যভেদটা আরো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। শেষটায় খুব বেশি তাড়াহুড়ো করেছেন বলেছেন। সেইসাথে টুকটাক প্লটহোল চোখে পড়েছে যেগুলো ইদানিংকালের লেখায় খুবই সাধারণ। লেখকের প্রতি শুভকামনা রইলো।