সাড়ে চার বছর ধরে কোমায় পড়ে থাকা এজেন্ট বাবু'কে জাগানোর মানে একটাই-আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে দেশের মাথায়। ফেল মেরে গেছে বাকি সব এজেন্ট।
আসলেই তাই। বাংলাদেশের বুকে বসে একটা ওয়েবসাইট খুলে গোপন নথি ফাঁস করতে শুরু করেছে সিআইএ'র হুইসলব্লোয়ার এজেন্ট কার্ল সেভার্স, আর তাকে থামানোর জন্য সমস্ত শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গোপন সংস্থা দ্য অক্টোপাস। নানান দেশের সেরা এজেন্টদের একের পর এক পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে, আর তাদেরকে ঠেকাতে হবে বাজিকর বাবুর! টেক্কা দিতে হবে ভারত আর পাকিস্তানের বাজিকরের সাথেও। এর ওপরে আছে কার্ল আর সাব্বিরকে খুঁজে বের করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবার ঝক্কি, প্রধানমন্ত্রির ওপরে দিনে-দুপুরে করা হামলা ঠেকানো। রহস্যময় এক খোঁড়া সুপার জিনিয়াস মাস্টার সিফাতের বুদ্ধি নিয়ে কাজ করতে হবে ওকে, যার স্ট্র্যাটেজিতে করা ইউক্রেন মিশন ব্যর্থ হয়েছিল ভয়ানকভাবে।
আসলে কি চায় মাস্টার সিফাত? একের পর এক বিপদে ঠেলছে কেন সে বাবুকে? এমন কোনো গোপন প্ল্যান কি তার আছে, যেটার কথা শুধু সে-ই জানে?
এদিকে একা গোটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে নেমেছে সিআইএ'র সেরা এজেন্ট ট্রাভিস আরভাইন। কেন? এমন কি হয়েছে যে তার মত দেশপ্রেমিক পাল্টে গেছে সবচেয়ে বড় দেশদ্রোহিতে?
আর সত্যিই কি ইউক্রেন মিশনের সবাই মরে গেছে? আপনি নিশ্চিত, তাদের কেউ ফিরে আসবে না অতীতের সব হিসাব চুকিয়ে নিতে?
এক্সপেক্টেশন যখন হাই থাকে আর তার থেকেও বেশি কিছু পাওয়া যায় তখন আমার জন্য এক্সপ্রেশন টা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। বাজিকর পড়ে বাজি থেকে যা যা এক্সপেক্ট করেছি তার থেকে কয়েকগুন বাড়িয়ে নাবিল ভাই ব্যাক দিয়েছে!
বাজি শুধু এসপিওনাজ থ্রিলারের থেকে অনেক বেশি কিছু। লেখকের গল্পকথন ছিল অনবদ্য আর দুর্দান্ত! এত ফাস্টপেসড একশান এর সাথে মিস্ট্রি টেনে নিয়ে এগিয়ে গেছেন বই প্রথম অক্ষর থেকে শেষ অক্ষর পর্যন্ত। স্পিডের সাথে প্লট যেভাবে এগোতে থেকেছে চরিত্র চিত্রন তত গভীরতা পেয়েছে।
বাংলা ভাষায় যতগুলো মৌলিক স্পাই থ্রিলার আছে তার ভেতরে অবশ্যই প্রথম শ্রেনীর দিকে হবে বাজিকর ট্রিলোজি।
থ্রিলার বলতে আপনি কী বোঝেন? এর নানারকম তাত্ত্বিক উত্তর হয়। পাশাপাশি আসে রহস্যগল্প বা রোমাঞ্চকর নানা গোত্রীয় উপাখ্যানের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা। তবে সে-সব ছেড়ে, একেবারে সরল সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়~ যে লেখা শুরু করার পর শেষ না করে ছাড়া যায় না, সেটাই থ্রিলার। যেমন 'বাজি'! নাবিল মুহতাসিম যে কী দুর্ধর্ষ সব থ্রিলার লেখেন, তা সবাই জানেন। সে 'শ্বাপদ সনে'-র মতো প্যারানর্ম্যাল নিয়ে হোক বা 'বাজিকর'-এর মতো এস্পিওনাজ নিয়ে, নাবিল যে থ্রিলার লেখায় রীতিমতো কাবিল - এটা পরীক্ষিত সত্য। আলোচ্য উপন্যাস 'বাজি' সেই সত্যকেই আরও একবার প্রতিষ্ঠা করল আমাদের সামনে। 'বাজিকর' যেখানে থেমেছিল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছে এই উপন্যাস। তাই ওই উপন্যাসটি পড়া না থাকলে এই লেখার যথাযথ রসাস্বাদন সম্ভব হবে না। আবার ভুল করে আগে এটিকে পড়ে ফেললে 'বাজিকর'-এর প্রকাণ্ড সব স্পয়লার জানা হয়ে যাবে। এটাই এই উপন্যাসের একমাত্র দুর্বলতা। বাকি সবটাই শক্তি। প্রচুর পড়াশোনা, যত্ন আর চরিত্রদের জন্য সমবেদনা নিয়ে এই কাহিনি গড়ে তুলেছেন লেখক। তাতে রোমাঞ্চ আর গতির ভাগ এতটাই বেশি যে একটি অধ্যায় শেষ হয়ে অন্যটি শুরু হয়ে যায় নিজের অজান্তেই৷ আর এভাবেই পাঠক উলটে যেতে থাকে হেকিমের কাটামুন্ডুর নির্দেশ মেনে সুলতানের মতো - যতক্ষণ না বই শেষ হয়! ও হ্যাঁ, বইয়ের আরও একটা দুর্বলতা আছে। সেটার জন্যই আমি একটি তারা খসাতে বাধ্য হলাম। এই উপন্যাস যেখানে থেমেছে তাতে তৃতীয় বইটি (বাজিমাত) না পড়ে বসে থাকা যাচ্ছে না। অত্যাচারের এইরকম স্যাডিস্টিক পদ্ধতি যে এজেন্সি থেকে লেখক শিখেছেন, তার সদর দফতরে ট্যাংক নিয়ে হামলা করার আবেদন জানালাম। সেই ফাঁকে বইটা পড়ে ফেলুন।
Action and drama overloaded. Perhaps too much at some points. But, because of some great turn of events it made a great read. You see, even impossibility can be appreciated if done right. And this was done excellent, super and heartfelt.
Truly, this series is turning out to be a real gem in Bangla book industry.
এই রিভিউটা এককভাবে 'বাজি' বইটির নয়, বরং পুরো ট্রিলজির কমবাইন্ড রিভিউ। যেহেতু ট্রিলজি হিসেবে রিভিউ এড করার সুযোগ নেই গুডরিডসে, তাই এই বইটিতে এড করে দিলাম। প্রথম বইটাতেও এড করেছি, শেষেরটাতেও করবো।
ঘটনা প্রবাহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
ঘটনাটার শুরু ইউক্রেনে, বিস্তার লাভ করলো বাংলাদেশের মাটিতে(!) আর মীমাংসা হলো উত্তর কোরিয়ায়।
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ লাগলে সেটার রেশ থাকবে ইউক্রেন আর রাশিয়ায়, বড়জোর ইউক্রেন সমর্থনকারী আর দশটা ইউরোপীয় দেশে এবং সেই যুদ্ধের ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হবে বাংলাদেশে (যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা!)।
কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশে বাজি পটকা ফুটবে, তা মানা যায় না৷ না মানলেও ঘটনাটা ঘটলো সিআইএর হুইসেল ব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্সের জন্য!
দুটো আমেরিকান নামের মাঝে একটা বাংলা নাম দেখেই বুঝছেন কার্লের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ আছে কাকতালীয়ভাবে। হ্যাঁ, কার্লের মা বাংলাদেশী। সেটা বাদেও, তিনমাস আইটি প্রশিক্ষণের সুবাদে বাংলাদেশী এজেন্ট সাব্বিরের সাথে পরিচয়ের অধিকারে কার্ল সোজা চলে এলো বাংলাদেশে।
এদিকে বাংলাদেশে এসে সে সুবোধ বালকের মতো বসে থাকেনি। একটা ওয়েবসাইট খুলে সিক্রেট অর্গানাইজেশন দ্য অক্টোপাসের একের পর এক গোপন নথি ফাঁস করে চলেছে! এই ফাঁসাফাঁসি ঠেকাতে পারে কেবল কার্ল নিজে!
কার্ল কে থামানোর জন্য দুটো উপায় আছে। তার প্রথমটা নিয়ে সিরিজের প্রথম বই বাজিকর। এবং দ্বিতীয়টা নিয়ে দ্বিতীয় বই বাজি।
প্রথমটাই প্রথমে এপ্লাই করলো দ্য অক্টোপাস । বাংলাদেশ সরকারের কাছে কার্ল সেভার্সকে দাবি করলো তারা! কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্লকে ফেরত দেবেন না মর্মে সিদ্ধান্ত নিলেন।
এদিকে দ্য অক্টোপাস এদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে থাকা তাদের পোষা লোককে বললো কার্লকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে। সেটাও সম্ভব হয়নি। সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।
এরপর বাংলাদেশের পিএম এর মেয়ে সহ দেশীয় কিংবদন্তীতুল্য গোয়েন্দা সংস্থা দ্য এজেন্সির বাজিকর জনিকে কিডন্যাপ করে ইউক্রেনে রেখে দিলো তারা। কার্লকে ফেরত না দিলে পিএম এর মেয়ে আর জনিকে ছাড়া হবে না।
পিএম হার মানলেন না। দ্য এজেন্সির বেস্ট সিক্স কে পাঠালেন রেসকিউ মিশনে। পাঁচজন ফুলটাইম এজেন্ট, একজন নবিশ অপারেটিভ ; বাজিকর আহাদ!
পাঠক, ফ্ল্যাপ পড়ে আপনারা জানেন, এই রেসকিউ মিশনের দায়িত্ব শেষমেশ এসে চাপে বাজিকর আহাদের উপরে!
যাহোক, আহাদ শেষ পর্যন্ত পিএম এর মেয়েকে উদ্ধার করে ফেলে, এবং ঘটনাপ্রবাহ আরও গভীরে যায়।
এরপর দ্বিতীয় উপায় এপ্লাই করে দ্য অক্টোপাস। ঝাঁকে ঝাঁকে এসপিওনাজ এজেন্ট পাঠাতে থাকে বাংলাদেশে! আর তাদেরকে ঠেকানোর জন্য বাজিকর বাবুকে কোমা থেকে ওঠানো হয়, কারণ রাষ্ট্রের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
বাজিকর বাবু, দ্য এজেন্সির চিফ স্ট্রাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতের সহায়তায় একের পর এক এজেন্টের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে কতল করে, কার্ল-সাব্বিরকে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।
এবারেও কার্ল কে ধরতে ব্যর্থ হয়ে দ্য অক্টোপাস পিএম কে এলিমিনেট করার প্ল্যান করে। তাদের এই প্ল্যানও সফল হয় না। বাজিকর বাবু আর আহাদ মিলে ঠেকিয়ে দেয় এই হামলা!
ঘটনার প্রায় শেষ অঙ্কে উপস্থিত আমরা। তুরুপের তাস অনেকের হাতেই, অনেকের আস্তিনেই রুমাল লুকানো, কিন্তু বাজিমাত করবে একজনই!
ঘটনার সমাপ্তি একটা নিউক্লিয়ার এয়ার ক্রাফটে। এই এয়ার ক্রাফট থেকেই হামলা চালানো হবে উত্তর কোরিয়ায়। লাগিয়ে দেয়া হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ; এটাই চায় সিক্রেট অর্গানাইজেশন দ্য অক্টোপাস।
বাজিমাত করতে জাহাজে উপস্থিত দ্য লুনাটিক ট্রাভিস আরভাইন আর বাজিকর আহাদ। তাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে পুরনো এক শত্রুর সাথে।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ :
বাজিকর ট্রিলজি পাঁচে পাঁচ পাওয়া একটা সিরিজ, অধিকাংশের কাছেই��� কয়েকজন আপত্তি জানিয়েছিলেন সিরিজটির এসপিওনাজ কলা কৌশল নিয়ে। কারণ মাসুদ রানার সাথে এর বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবে এই ফারাকটার জন্যই আসলে বাজিকর ট্রিলজি পাঁচে পাঁচ পাবে।
মাসুদ রানা মূলত কনক্রিট ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন বেজড মিশন এক্সিকিউট করা প্লটের। এসপিওনাজ এজেন্টরা কীভাবে কাজ করে, কীভাবে একেকটা ইনফরমেশন কালেক্ট করে মিশনের দিকে এগিয়ে যায়, তাদের উপরে কীভাবে কাউন্টার এসপিওনাজ করা হয়; এসব নিয়েই মাসুদ রানা।
অপরদিকে বাজিকর ট্রিলজিতে লেখক এসব ইনভেস্টিগেশন এড়িয়ে কালারফুল সুররিয়েলিস্টিক অ্যাকশন বেজড একটা প্লটের উপরে লিখেছেন। বাজিকর ট্রিলজির সাফল্য এবং আপত্তির জায়গা এটাই।
প্লট:
রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল এক্সাইটমেন্টের সাথে সিক্রেট অর্গানাইজেশন, স্পাই এজেন্সি, ডাবল এসপিওনাজ, দেশিয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মিলে প্লট টা বেশ ইউনিক। সরকারের অনুগত স্পাই এজেন্সির বাইরে নাবিল মুহতাসিম লিখলেন স্পাইয়ের অন্য এক জগত নিয়ে।
লিখনশৈলী:
এই বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো এর স্টোরিলাইন। নাবিল মুহতাসিম সামনাসামনি বসে গল্প শোনাচ্ছেন, আর পাঠক সেটা ভিজুয়ালাইজ করছে; ব্যাপারটা ঠিক এরকম।
পরিমিত স্ল্যাং, স্যাটায়ার, নিজস্ব কিছু পাঞ্চলাইন; প্রায় প্রতি চ্যাপ্টারেই এসবের উপস্থির জন্য পাঠক পরের চ্যাপ্টার পড়েছেন আগ্রহ নিয়ে।
"অমুক তো ঘাস খেয়ে মো সা দের এজেন্ট হয়নি যে এক ঘুষিতেই কাবু হবে।" এরম কিছু লাইন পড়তে গিয়ে কখনো হেসে ফেলেছি, কখনো মুগ্ধ হয়েছি।
তবে কিছু কিছু লাইন একটু মেলোড্রামাটিক লেগেছে। "আধ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুরলো", "সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ঘুষি চালালো।"
তবে বু লে ট ফায়ার করা নিয়ে কিছু লাইন প্রথমে মেলোড্রামাটিক লাগলেও পরে সত্যতা পেয়েছি। যেমন সেকেন্ডের মধ্যে গুলি করা।
হাইলি ট্রেইন্ড একজন শ্যুটারের জন্য এটা স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে সদ্য অফিসার হিসেবে কমিশন পাওয়া আমার এক বন্ধু।
চরিত্রায়ন:
বাজিকর ট্রিলজির সাফল্যের অন্যতম কারণ এর চরিত্রায়ন। চরিত্রগুলো আমাদের আশেপাশের হলেও তারা থাকে অন্য জগতে।
বাজিকর আহাদ আর বাজিকর বাবু ট্রিলজির অন্যতম প্রধান দুই চরিত্র। এছাড়াও সময়ে সময়ে দ্য এজেন্সির চিফ স্ট্রাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতকে দেখা গেছে বিভিন্ন চ্যাপ্টারে।
আহাদের পার্কুর টেকনিক মুগ্ধ করার মতো বিষয়। তার ফাইটিং স্কিল আর দশটা এসপিওনাজ এজেন্টের মতোই। কিন্তু আহাদ জিতেছে তাদের সাথে কারণ সে শেষ পর্যন্ত লড়তে জানে।
একজন নবিশ ইয়াং এজেন্টের মতোই আহাদ ভয় পায়, শঙ্কিত হয়, কষ্ট পায়। কিন্তু সে শেষ পপর্যন্ত লড়তে জানে।
বাজিকর বাবু তর্কসাপেক্ষে সিরিজের বেস্ট ক্যারেক্টার। এরোগেন্ট, কনফিডেন্ট, আ গুড ফাইটার এন্ড শ্যুটার, অলসো অ্যান ইথিকাল পারসন। বাজি'তে মাস্টার সিফাত তার উপরেই বাজি ধরে কারণ বাজিকর বাবুকে কিনে নেয়া সম্ভব না।
বাজিতে বাবু একের পর এক বিদেশী এজেন্টের সাথে লড়াই করে। প্রায় প্রতিবারই মৃত্যুর মুখ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনে বাবু। কারণ সে ভয় না কোনো কিছু বা কাউকে।
বাবুর এরোগেন্ট ক্যারেকটারটাই ভালো লাগে। মুড না থাকলে এজেন্সির ডিরেক্টর আতিয়ার রহমানেরও প্রশ্নের উত্তর না দেবার রেকর্ড আছে বাবুর!
এদিকে ডিরেক্টর আতিয়ার, আনডিফিটেড বাজিকর, স্বল্পস্থায়ী একটা চরিত্র হলেও তার ইম্প্যাক্ট প্রথম দুটি বইয়ে বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায়। এবং তৃতীয় বইটায়ও কিছুটা রেশ পাওয়া যায়।
স্বল্পস্থায়ী আরও কয়েকটি চরিত্র মন জিতে নিয়েছে। প্রেজেন্স কম হলেও ওয়েল বিল্ড ক্যারেক্টারাইজেশনের জন্য চরিত্রগুলো মনে দাগ কাটে। একজন পাকা লেখকের মতোই নাবিল মুহতাসিম স্বল্প সময়ে চরিত্রগুলোকে স্থায়িত্ব দিয়েছেন।
বাজিকর জনি, ট্রাভিস আরভাইন, মাস্টার সিফাত যখনই বইয়ের পাতায় এসেছে, আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। তাদের অন্তর্ধান পরবর্তী চ্যাপ্টারগুলো পড়ার আগ্রহ জাগিয়েছে "আবার কখন পাব ট্রাভিসকে?" এটাও একরকম ক্লিফহ্যাঙ্গার বলা চলে।
টুইস্ট:
বাজিকর, বাজি, বাজিমাত; তিনটা বইয়েই সতন্ত্র টুইস্ট আছে।
বাজিকরে ক্যারেক্টার টুইস্ট বেশ ভালোই লেগেছে।
বাজিতে প্লট+ক্যারেক্টার টুইস্ট দুটোই ছিল। এবারে টুইস্ট প্রথম বইয়ের তুলনায় আরও জোরালো।
বাজিমাতে কয়েকটি টুইস্ট ছিল। এরমধ্যে একটা প্রায় বুঝতে পেরেছিলাম পড়ার সময়ে, আরেকটির স্পয়লার দিয়েছিল এক হাড়ে-বজ্জাত ছোট ভাই!
এন্ডিং:
বাজিকরে এন্ডিং ঠিকঠাক ছিল, একটু বিষন্নতায় মোড়ানো।
বাজিতে এন্ডিং হয়েছে একগাদা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে।
বাজিমাতে এন্ডিং একটু নাটকীয় লেগেছে।
বাজিকর ৪.৫/৫
বাজি ৫/৫
বাজিমাতের রেটিং ৪/৫
বাজিকর, বাজি পড়ে অ্যাকশন সিন গুলো নিয়ে একটু বেশিই অবসেসেড হয়ে গেছিলাম। বাজিমাতেও এরকম হাই অকটেন অ্যাকশন সিন আশা করেছিলাম তাই। তবে বাজিমাত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া আর নাটকের সমাপ্তি বলে অ্যাকশন সিন একটু কমই ছিল। শেষে একটা জবরদস্ত একশন ছিল বলে আক্ষেপ তেমন নেই। তবুও এক তারা রেটিং কেটে নিলাম একশন সিন কম বলে (!)
পরিশিষ্ট:
বাংলা মৌলিক থ্রিলারে বাজিকর ট্রিলজি একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷ আর কোনো বই না লিখলেও নাবিল মুহতাসিম থ্রিলার লেখক হিসেবে টিকে যাবেন।
বাজিকর ট্রিলজি বাদেও বাংলা ভাষায় লেখা আরও কিছু মৌলিক স্পাই থ্রিলার পড়া হয়েছে আমার। সেগুলো অন্য দিক থেকে অনন্য, তবে আমি যেহেতু অ্যাকশন থ্রিলারের ভক্ত তাই আমার কাছে বাজিকর ট্রিলজিই শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে।
বাজিকর ট্রিলজির দ্বিতীয় বইটি হাতে নেওয়ার পূর্বে বিস্তর প্রশংসা শুনেছি। আজ সেই প্রশংসার মূলক-অমূলক নিয়ে স্বল্প কিছু আলোচনা করতে চাই।
প্রথমত কাহিনির শুরুতে একটা ধাক্কা! একি! সেটা না-হয় বাদ দিলাম। এর পরপর-ই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, আমি কি কোনো ফ্যান্টাসি দুনিয়ায় বাজিকর ইউনিভার্সে ঢুকে পড়েছি? এ-ভাবে হুড়মুড় করে বাজিকরদের আগমনে কোথায় একটু সুস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধাতস্থ হব কিন্তু সেটা লেখক থাকতে দিলে তো! ভেবেছি ৩২০ পৃষ্ঠার বই হয়তো স্লো-বার্ন হয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে কোথাও; কিন্তু আমার এই ধারণাকে স্রেফ তুবড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো। কীভাবে? এমনিতে শুরু থেকে শেষ—উত্তেজনা একেবারে তুঙ্গে। নাটকীয় আর কাকতালের মিশেল তো আছেই। এ-সব না থাকলে কি এসপিওনাজ থ্রিলার জমে? ভাগ্য থাকবে, তারা সহায় হবে। বাজিকর-বাজিকার-বাজিগার মরতে মরতে বেঁচে গিয়ে লড়াই করবে; তবেই না মজা। তবে একপাক্ষিকতা প্রায়শ ভ্রুকুঞ্চন করতে দিলেও—গল্পের পটভূমির কথা মাথায় রেখে সে-দিকটা কম্প্রোমাইজ না-হয় করলাম। আফটার অল—কতটা মজা পেয়েছি সেইটে হচ্ছে আসল কথা।
ট্রিলজির প্রথম বইতে দ্য অক্টোপাসের ষট্-চক্রে আমেরিকা-রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের দোনেৎস্ক শহরে লড়াই হলেও; দ্বিতীয় বইতে হয়েছে বাজিকর টু বাজিকর লড়াই। তা-ও দেশিয় পটভূমিতে। অর্থাৎ বাংলাদেশে। সেয়ানে সেয়ানে বলব না; কারণ এখানেও অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিক ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করলে; ভজকট পাকবে। তাই লেখক যে-ভাবে গল্পটি পরিচালনা করেছেন—আমিও সেই অনুযায়ী বাজিকর বাবু-আহাদ আর মাস্টার সিফাতের মতো চুপচাপ মেনে নিয়েছি। নিতে হয়েছে, উপায় নেই। তবে পুরো বইটি দারুণ উপভোগ্য। এই উপভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে লেখকের জাদুকরী লেখনশৈলী আর ফাইটিং সিকোয়েন্সের অসাধারণ সব বর্ণনা ভঙ্গি। পুরাই অ্যাকশন প্যাক থ্রিলার।
✱ আখ্যানপত্র— | ◆ গুডরিডস অথবা কমেন্ট বক্সের প্রথম কমেন্ট চেক করুন। | ✱ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛বাজি❜ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, প্রথ�� প্রশ্ন হচ্ছে—প্রথম বই থেকে কতটা এগিয়ে অথবা পিছিয়ে ট্রিলজির দ্বিতীয় বই? ওয়েল, কিছু আলোচনার পর সেই দিকটি আমি উন্মোচন করছি।
দ্বিতীয় বই হিসেবে প্রথম বইয়ে স্কিপ করা অনেক ছোটো ছোটো ঘটনার খোলাসা এই বইয়ে উপযুক্ত ধারণা দিয়ে বাঁধা হয়েছে। প্রথম বইয়ের মতোই এই বইয়েও ব্যাকস্টোরি আর ফ্ল্যাশব্যাকের কোনো কমতি লেখক রাখেননি। সত্য বলতে, যখনই এই ব্যাকস্টোরি আর ফ্ল্যাশব্যাকের উপস্থিতি হতো—মুগ্ধ হয়ে পড়ে যেতাম।
প্রথম বই থেকেও ‘দ্য অক্টোপাস’-এর কার্যক্রম খুবই ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে দেখানো হলেও একই সাথে রাশিয়াকে হাইডে রেখে আমেরিকা ওপর ফোকাস রাখা হয়েছে বেশি। এ-কারণে হয়তো পৃথিবীর রহস্যময় এক গোপন জায়গা—এড়িয়া ফিফটি ওয়ান নিয়েও একটা তত্ত্ব লেখক দাঁড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন। তা-ও মোটামুটি আকৃষ্ট করার মতোই। কাহিনির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ-ছাড়া সিঙ্গেল টাইমলাইনে গল্প চললেও, দেশ অথবা চরিত্র অনুযায়ী পর্ব পরিবর্তন হওয়ায় একই জায়গায় দৃশ্যপট স্থির থাকেনি। সিকোয়েন্স সাজানোর কোনো কমতি অন্তত আমি লক্ষ করেনি। খুবই সাবলীলভাবে গল্প চলেছে নিজ গতিতে, যথাস্থানে মোড় নিয়ে লক্ষ্যের দিকে লাগামছাড়া হয়ে ছুটে বেড়িয়েছে।
দেশের দিকে তাকালে নরক গুলজার ইতোমধ্যে শুরু হওয়ার পর্যায়ে। অক্টোপাসের মূল হোতার এক তুড়িতে বিভিন্ন দেশের সেরা সব অ্যাজেন্ট পিলপিল করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে; উদ্দেশ্য একটাই—কার্ল এবং সাব্বিরকে যে-কোনো উপায়ে থামানো। অক্টোপাসের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত থাকেনি দ্য এজেন্সিও! কিন্তু সেটা কীভাবে?
ভার্চুয়া অর্থাৎ ফেসবুকের ‘বাজিকর’ ভার্সন নিয়ে ভালোই আলাপ-আলোচনা রয়েছে। আছে ইমোশনাল অনেক সিন। চরিত্রায়নও হয়েছে পোক্ত। সব মিলিয়ে উপভোগ্য।
● সূত্রপাত—
প্রথম বইয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার ছয় মাস পরের কাহিনি। জাগানো হলো দ্য এজেন্সির সাড়ে চার বছর কোমায় থাকা বাজিকর বাবুকে। থামাতে হবে অক্টোপাসের ইশারায় দেশে ঢুকতে থাকা বিভিন্ন দেশের সব বাজিকরকে! কারণ একটাই; যে-কোনো উপায়ে বাঁচাতে হবে কার্ল সেভার্স ও কম্পিউটার মাস্টার সাব্বিরকে। দেশের স্বার্থে-বিশ্বের সুরক্ষাতে।
ওইদিকে খুন হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! করল কে এ-কাজ! রহস্যের সমাধান খুঁজতে প্রয়োজন ট্রাভিস আরভাইন কে! কিন্তু কোথায় সে?
আহাদ কোথায়? ইউক্রেনের মিশনের পর তার কোনো হদিস নেই কেন? কী হয়েছে ওর? বেঁচে আছে তো?
প্রশ্ন অনেক—উত্তর খুঁজে পেতে চাইলে ট্রিলজির প্রথম বই পড়তে হবে আগে। এর পরে দ্বিতীয় বই ❛বাজি❜। টানটান উত্তেজনা পূর্ণ একটি রোমহষর্ক থ্রিলার।
● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—
বারবার যদি বইটি আমাকে পড়তে বলা হয়; নির্দ্বিধায় সেই আদেশ মেনে নিতে আমি বাধ্য। কারণ বইটি লেখা হয়েছে—বারবার পড়ার মতো করে। হয়তো পুরো ট্রিলজিটি লেখক সেই ভেবে লিখেছেন। যাকে বলে, মনের মাধুরী মিশিয়ে। প্রথম বই কম ভালো, দ্বিতীয় বই বেশি ভালো—এই টাইপ কোনো কথা আমি বলতে রাজি নই। দুটো বই-ই নিজ জায়গা থেকে স্বতন্ত্র।
লেখকের গল্প বুননের দক্ষতার কথা নতুন করে বলার নেই। বাছাই করা শব্দ আর তা দিয়ে বাক্য গড়নের মুনশিয়ানা পরপর বইগুলোয় খুব কমই দেখা যায়। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। ধীর লয়ে সাজিয়েছেন গল্পের প্রতিটি স্তর। আমাকে টানতে হয়নি; গল্প আমাকে আপন গতিতে টেনে নিয়েছে শেষ পর্যন্ত।
নিখুঁত শব্দ চয়ন। গালিগালাজ আর আঞ্চলিকতা সংলাপ থাকলেও প্রত্যকটি চরিত্রের আলাদা স্বকীয়তা ঠিকই বজায় থেকেছে। পারিপার্শ্বিক বর্ণনা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলতে চাই না। চরিত্রদের মনোভাব এই উপন্যাসে সবচেয়ে বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। নিদারুণ সব বর্ণনা। একেবারে জলজ্যান্ত।
আর ফাইটিং সিকোয়েন্স? এই বইয়ের রাশিয়ান, চাইনিজ, পাকিস্তানি, ব্রিটেন, ইজরায়েলের ফাইটিং স্কিলগুলো অনুসরণ করে সেগুলো উপন্যাসে ব্যবহার করা হয়েছে। পড়লেই টের পাবেন। প্রত্যকটি দক্ষতার নামকরণ ও প্রয়োগ বলে দেওয়া আছে। বেশ উপভোগ্য আর সাবলীল বর্ণনা। মনে হবে, আপনি স্বয়ং সেই স্থানে উপস্থিত হয়ে লড়ছেন। এটাই ম্যাজিক।
গল্প পোক্ত হয়েছে উপরিউক্ত কারণগুলোর জন্য। যত ভাবে বিল্ডাপ দেওয়ার সুযোগ এসেছে—লেখক হাতছাড়া করেননি একটিও। একেবারে মহাভারতে দুর্যোধনের বলা—বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদনী টাইপ। এ-রকম ‘এস্টার এগ’ অথবা উক্তি যথারীতি গল্পে আরও আছে।
● চরিত্রায়ন—
চরিত্রের শেষ নেই। তবে সাজানো হয়েছে সুন্দরভাবে। বিশেষ করে চরিত্রের উপস্থিতি; যাকে আমরা সিনেমায় ‘এন্ট্রি’ বলে সম্বোধন করি। একেবারে সিনেম্যাটিক স্টাইলে। ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে। প্রত্যক চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদাভাবে নজর কাড়ে।
তবে এই উপন্যাসে বাজিকর বাবু এবং মাস্টার সিফাতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। গল্পের নির্দিষ্ট একটি অংশ পর্যন্ত—সেই রেওয়াজ বজায় ছিল। শেষটা তো আরও চমকানো। ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট তো আছেই। বাদ রাখেনি কোনো কিছু।
● অবসান—
বড়োসড়ো এক টুইস্টের অপেক্ষায় আছেন? একেবারে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হবে। এমনিতে উপন্যাসের আগে-পিছে অনেক টুইস্ট আছে; কিন্তু শেষ টুইস্ট পালটে দিয়েছে পুরো গল্পের গতি। আপনার পছন্দের শব্দ-গালি-বাক্যটি তখনই মুখ দিয়ে হালকা বের হয়ে আসতে চাইবে; কেউ না শোনে মতো—চেপে রেখে সেটা বলতে হবে।
শুরু এবং শেষ দুটোই আনন্দদায়ক। পুরোটা সময়টা উপভোগ করেছি বইয়ের গল্প-চরিত্র এবং ঘটনাপ্রবাহের সাথে। ◆ ◆⚊◆ ◆ খুচরা আলাপ—
❛বাজি❜ উপন্যাস লেখকের সফল একটি উপন্যাস বটে। স্ট্যান্ড অ্যালোন হিসেবে বিবেচনা করলেও। গল্পের সূত্র ধরে দেশি-বিদেশি অনেক ঘটনার চিত্রপট এবং এ-সব প্রতিকার নিয়ে ভালোই আলোচনা রয়েছে বইতে। ভবিষ্যৎ নিয়ে ধরতে গেলে ছোটোখাটো ভবিষ্যদ্বাণী করে দিলেন। যা গল্প হলেও সত্য। ◆ ◆⚊◆ ◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
টানা ভাইয়ের লেখা পড়ছি। বোরিং তো দূতে থাক; বলতে গেলে দিনকে দিন আকৃষ্ট হচ্ছি আরও। স্টোরিটেলিং-এ নাবিল ভাই—অনবদ্য। বাজিকরের রেশ তিনি ❛বাজি❜ উপন্যাসেও ধরে রেখেছেন। এখন বাজিমাত পড়ার অপেক্ষায়। ট্রিলজির শেষ পেরেক কীভাবে গেঁথেছে তা দেখার অপেক্ষায়। আশাবাদী; জানি তিনি হতাশ করবেন না।
● সম্পাদনা ও বানান—
সম্পাদনায় আরেকটু সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। না ধরা যায় মতো কয়েকটি অসংগতি থাকলেও থোড়াই কেয়ারের মতো। যাহোক, ওইভাবে মার্ক করিনি। তবে নাম বিভ্রাট আর টাইপো ভালোই প্যারা দিয়েছে। বানানেও অনেক ভুল আছে।
একটা পাচ তারকার যোগ্য দেশীয় প্রেক্ষাপটের স্পাই থ্রিলার। অ সা ধা র ন স্টোরিটেলিং। কোনো প্লট, কাহিনী ছাড়াই অকারনে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে যাইতে পারার মতো লেখনী। অম্লমধুর। শুধু মাত্র তিনটা সমস্যা খুব ভুগিয়েছে। অসংলগ্নতা, কাকতালীয়তা, একপাক্ষিকতা।
আসমান থেকে ���্যারাশুট ছাড়া লাফ দিলেন। নিচে কোনো এক ভাবে সারভাইভ করেও দুই চার পা হেটেই পিস্তল ও পড়েছিলো সেইটা খুজে পেয়ে গেলেন! একজন লোক সারা বছর কোমায় থেকেও একশান এর পর একশান করেই যাচ্ছে। বার বার ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে। মরার মত অবস্থ বা আঘাত পেয়েও বেচেই যাচ্ছে! আগের বই-এইটা দুইটাতে এই জিনিস টা দেখেছি, একজন মার খেতে খেতে পুরো আধমরা হয়ে যাচ্ছে, একদম মরে যাওয়াটা কমনসেন্স সেখান থেকে বেচে ��াচ্ছে। লেখকের একশান সিন এ উচিত আরেকটু জোর দেওা যৌক্তিকতা নিয়ে। লাইক আপনি বুকে গুলি খায়া আরো দুইটার সাথে এক ঘন্টা ফাইট দিতে পারবেন না। এইটা একটা মেটাফোর- এই টাইপ হচ্ছে আরকি। ভাগ্যের অতিরিক সহায়তা। একবার মরে গিয়ে পুরো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়া আবার ফিরে আসা! এই অতিরিক্ত ব্যাপার গুলো খুব চোখে ঠেকেছে আমার। গল্পের শেষ একশান দৃশ্যও পরিষ্কার না। ঘোলাটে। ক্লিয়ারলি বুঝি নাই। অতিরিক্ত ভাগ্যজোড়? নাকি কি!
এনিওয়ে এই তিন টা সমস্যা বাদে উপন্যাস টা অবশ্য পাঠ্য। উত্তেজনা পূর্ণ। আর একেবারে ফার্স্ট ক্লাসের স্টোরিটেলিং।
কাহিনি সংক্ষেপঃ সিআইএ'র হুইসলব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্স নিজের বানানো বংশীবাদক ওয়েবসাইটে একের পর এক ফাঁস করে চলেছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন দ্য অক্টোপাসের একের পর এক অপকীর্তির তথ্য। তাও খোদ বাংলাদেশের বুকে লুকিয়েই এমন দুঃসাহসিক কাজ করে চলেছে সে। বাংলাদেশের এসপিওনাজ সংস্থা দ্য এজেন্সির একসময়ের এজেন্ট কার্লের হরিহর আত্মা বন্ধু সাব্বিরও রয়েছে তার সাথে। বংশীবাদক ওয়েবসাইট নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে দিয়ে প্রকাশ করে চলেছে অতীতে বিশ্বজুড়ে দ্য অক্টোপাসের নানা অপকর্ম ও বিভিন্ন দেশে তাদের নিযুক্ত টেন্টাকলের নাম। দ্য অক্টোপাসের মুখোশ এই খুলে গেলো বলে।
খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ওপর একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলা হলো। তাঁকে গদি থেকে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দ্য অক্টোপাস। সেই সাথে বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা হুইসলব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্স ও সাব্বিরকে নিজেদের হাতের মুঠোতে পেতে আমেরিকা, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চায়না ও ইজরায়েলের সেরা এজেন্টদের পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে। এমন অস্থিতিশীল অবস্থায় কোমায় থাকা বাজিকর বাবুকে জাগানো ছাড়া দ্য এজেন্সির কোন উপায়ও রইলোনা। অন্যান্য দেশের বাজিকরদের হাত থেকে কার্ল ও সাব্বিরকে একমাত্র বাজিকর বাবু ছাড়া কেউই নিরাপদ রাখতে পারবেনা।
চার বছর ধরে কোমায় থাকা বাজিকর বাবু যখন জাগলো, নতুন করে পুরোনো সব কষ্টের স্মৃতি ওকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগলো। দ্য এজেন্সির চিফ স্ট্রাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতের পরিকল্পনা অনুসারে মিশনে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাবু। এই রহস্যময় স্বভাবের মাস্টার সিফাতও বাবুকে ফেলে দিলো চরম অস্বস্তিতে৷ অনেকটা যেন ইচ্ছে করেই বারবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পাঠানো হচ্ছে বাজিকর বাবুকে। পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারছেনা সে মাস্টার সিফাতকে। হুইলচেয়ারে বসা এই মাস্টারমাইন্ডের প্ল্যান মুখ থুবড়ে পড়েছিলো ছয় মাস আগের ইউক্রেন মিশনে। মারা গিয়েছিলো ওই মিশনের সবাই। আসলেই?
নিজের ভালোবাসার মানুষকে একটা মানুষ কতোবার হারায়, বলতে পারেন? নিজের একান্ত বিশ্বস্ত মানুষগুলো কতোবার নিজেদের চিরচেনা চেহারা পাল্টায়? মহা ক্ষমতাধর দ্য অক্টোপাস নিজের আটটা শুঁড় দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে চায় সমগ্র পৃথিবীকে। দ্য এজেন্সির বাজিকর বাবুর হাতেই একমাত্র দ্য অক্টপাসের এই অপচেষ্টা বানচালের ক্ষমতা আছে, এমনটাই বা ভাবছি কেন! হাইলি কোয়ালিফাইড কিলিং মেশিন বাজিকর বাবু যখনই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যায়, নতুন একগাদা প্রশ্ন সামনে এসে পড়ে।
বারবার মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে দিতে যখন নিজের মিশন প্রায় শেষ করে আনলো বাজিকর বাবু, অবাক হয়ে খেয়াল করলো আগুনের দিন এখনো শেষ হয়নি। আরো অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া বাকি আছে।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নাবিল মুহতাসিমের বাজিকর ট্রিলোজির দ্বিতীয় কিস্তি 'বাজি'। প্রথম বই 'বাজিকর' পড়েছিলাম বেশ কয়েক মাস আগে। এবার পড়ে ফেললাম এটা। এসপিওনাজ থ্রিলার ঘরানার মৌলিক এই ট্রিলোজির শেষ কিস্তি 'বাজিমাত'। ওটাও প্রকাশিত হয়ে গেছে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে ২০২০-এর অমর একুশে বইমেলায়।
আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থতার পাল্লা ভারি থাকা ইউক্রেন মিশনের ছয় মাস পরের ঘটনাবলী নিয়ে রচিত হয়েছে 'বাজি'। প্রথম কিস্তি 'বাজিকর'-এ আমরা দেখতে পেয়েছি নবিশ এজেন্ট আহাদের কারিকুরি। আর এই কিস্তিতে দেখা গেছে কোমা থেকে ওঠা কিংবদন্তিতুল্য বাজিকর বাবুর অতিমানবীয় কার্যকলাপ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন দ্য অক্টোপাসের নিজ অস্তিত্ব যখন সিআইএ'র হুইসলব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্সের কারণে হুমকির মুখে, তখন তাদের মরিয়া চেষ্টা ছিলো কার্লকে থামানো। আর সেখানেই বাজিকর বাবুর বাগড়া দেয়ার গল্প শুরু।
আদর্শ এসপিওনাজ থ্রিলার উপন্যাস হিসেবে 'বাজি'-তে অ্যাকশন সিকোয়েন্সের কোন কমতি ছিলোনা। প্রত্যেকটা অ্যাকশন সিকোয়েন্সের বর্ণনাই বেশ উত্তেজনাকর ছিলো। পড়ার সময়ে কিছু কিছু জায়গায় নিজের শরীরে অ্যাড্রেনালিনের প্রবাহ বেশ বেড়ে গেছিলো আমার। রক্তকণিকা নেচে উঠছিলো বারবার। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি যেমন বেড়ে যাচ্ছিলো, আবার মাঝে মাঝে শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতিও জড়িয়ে ধরছিলো আমাকে৷ 'বাজি' একটা এসপিওনাজ থ্রিলার তো বটেই, এটাকে পিওর অ্যাকশন থ্রিলার বললেও অত্যুক্তি হবেনা।
সুলেখক নাবিল মুহতাসিম মৌলিক এসপিওনাজ থ্রিলার লেখায় কতোটা পারদর্শী, তা অতীতে 'বাজিকর' দিয়ে প্রমাণ করেছেন। ট্রিলোজির দ্বিতীয় উপাখ্যান 'বাজি' সেই সাফল্যেরই ধারাবাহিকতা। গল্প বলার ধরণ, ক্যারেক্টার ডেভেলপিং, অ্যাকশন সিকোয়েন্স ও টুইস্ট সবগুলোতেই ছিলো নাবিল মুহতাসিমের মুনশিয়ানার ছাপ। আর তিনি এমন এক সুতো ছেড়েছেন 'বাজি'-এর শেষ অধ্যায়ে যে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই ট্রিলোজির শেষ কিস্তি 'বাজিমাত' পড়তে হবে। দেশে চলমান অস্থিতিশীলতা কাটলে ওটাও কিনে ফেলবো।
ডিলান সাহেবের করা প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে। এসপিওনাজ থ্রিলার যাদের পছন্দের ঘরানা, তারা পড়ে ফেলতে পারেন বইটা। তবে অবশ্যই প্রথম বই 'বাজিকর' পড়ে নেবেন আগে। তা না হলে কাহিনি না বুঝে ডিগবাজি খাবেন।
"এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর। " - সৈয়দ শামসুল হক - বাজি গল্পটির মূল প্লট এই সিরিজের আগের বই বাজিকরের ঠিক ছয় মাস পরে। আগের গল্পের আত্মগোপনে থাকা দুই বন্ধু কার্ল সেভার্স আর সাব্বির ফাঁস করতে শুরু করে অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি ,টনক নড়ে গোপন সংস্থা " দ্য অক্টোপাস "এর হেডের। কার্ল আর সাব্বির কে বের করতে সে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় নানান দেশের সেরা সব স্পাইদের। - এদিকে দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে জাগিয়ে তোলা হয় দ্য এজেন্সির বর্তমান সেরা এজেন্ট বাবুকে। মাস্টার সিফাতের সহায়তায় সেও শুরু করে কার্ল সেভার্স আর সাব্বির কে খোঁজা আর একইসাথে শুরু হয় রাশিয়া , আমেরিকা , ইংল্যান্ড , চীন , ইজরায়েল , ভারত আর পাকিস্তানের বাজিকরদের বাংলাদেশে আসা এবং বাজিকর বাবুর তাদের সাথে লড়াই করার প্রস্তুতি। - এখন এজেন্ট বাবু কি পারবে এই নানান দেশের বাজিকর আর এজেন্���দের এই মেলা থেকে কার্ল সেভার্স আর সাব্বির কে খুঁজে পেতে ? সব দেশের এজেন্টরা কি শুধু সাব্বির আর কার্লকে খুঁজতেই বাংলাদেশে আসছে না কারো কোন অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে ? গোপন সংস্থা " দ্য অক্টোপাস " এর হেড আর বাংলাদেশী টেন্টাকলই বা কারা ? এ সব কিছু জানতে হলে পড়তে হবে " বাজি " . - গত বছর স্পাই থ্রিলার ঘরানার বাজিকর পড়ার পর থেকেই এর সিক্যুয়ালের অপেক্ষায় ছিলাম।সে দিক থেকে বলা যায় লেখক একেবার��ই আশাহত করেননি । বাজির প্লট বাজিকরের চেয়েও বিশাল আর গভীর মনে হয়েছে । সিরিজের দুই গোপন সংস্থা " দ্য অক্টোপাস " আর দ্য এজেন্সি " সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এ বইতে। - বাজিকর বইতে যে জিনিষটা চোখে পড়েছিল তা হলো এজেন্ট আহাদের কারণে বাকি চরিত্রগুলো স্লান হয়ে যাওয়া। এ বইতে এ সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠিয়েছেন লেখক। প্রায় প্রতিটি চরিত্রের ডিটেলিং আর কিছু চরিত্রের নিজস্ব সাবপ্লট গুলো বেশ ভালো লেগেছে। (যদিও কয়েকটি সাব প্লটের কোন ফিনিশিং পায়নি , আশা করি পরবর্তী বইতে এ প্লট গুলোর ফিনিশিং পাবো ) , - স্পাই থ্রিলার হিসেবে বাজি বেশ ভালোই ফাস্ট পেসড,দুই এক জায়গায় একটু বেশি বর্ণনা বাদে অত্যন্ত সুখপাঠ্য। আগের বইতে ইমোশন একটু বেশি মনে হলেও এ বইতে এস্পিওনাজ আর ইমোশনাল কন্টেন্ট এর মিক্সিং ভালো লেগেছে।কয়েক পাতা পর পর কিছু টার্ন্স এন্ড টুইস্ট থাকায় পড়তে কখনোই বোর ফিল হয়নি। আর শেষ দিকের রকেট গতির ফিনিশিং আর এক আনএক্সপেক্টেড ক্লিফহ্যাংগার থাকায় পরবর্তী বই সম্পর্কে আরো আগ্রহী করে তুলেছে। - এক কথায় ,আগের বছরের স্পাই থ্রিলার "বাজিকর " এর স্বার্থক সিক্যুয়াল হলো " বাজি " . এই সিরিজের শেষ বই " বাজিমাত " এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম।
বাবু জেগে উঠেছে। সাড়ে চার বছর পর কোমা থেকে তাকে জাগিয়ে তুলা হয়েছে। কারণ একটাই। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিপদ ধেয়ে আসছে। "দ্য এজেন্সি" এর বাজিকর এখন সে-ই। বাজিকর ট্রিলজির প্রথম পর্বে তাকে জাগানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়। বাবু ছাড়া ইউক্রেন মিশনে শেষ হয়ে যায় বোমার থেকেও ভয়ানক মানুষ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটির সেরা এজেন্টরা।
"দ্য অক্টোপাস" তাঁর অগণিত শুঁড় পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ঐ নারকীয় গুপ্তসঙ্ঘের প্রধান যেন নিটসের উবারম্যান। বিবেক তাঁর কাছে ফালতু বিষয়। বিশ্বের সকল রাষ্ট্র এবং জাতীয়তাবাদের উচ্ছেদ ঘটিয়ে একক নতুন বিন্যাসের পথে হাঁটছেন তিনি। বাজিকর কাহিনীতে এই জিনিয়াসের ছকে রাশিয়া বনাম আমেরিকা যুদ্ধ প্রায় বেঁধেই গিয়েছিল। এবার এই খ্যাতিমান তরুন উদ্দ্যোক্তার গলায় কাঁটা লেগেছে।
এই গলার কাঁটারা হলেন কার্ল এবং সাব্বির। এই দু'জন ইন্টারনেটে সুকৌশলে অক্টোপাসের সকল তথ্য ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা এমন গলার কাঁটা যে বাজিকর উপন্যাসে তাদের বিপরীতে বন্দিবিনিময় হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির কন্যাকে পর্যন্ত হোস্টেজ বানিয়ে রাখা হয়েছিল। কার্ল এবং সাব্বিরকে অক্টোপাসের প্রধানের জ্যান্ত দরকার।
গলার কাঁটা নামানোর জন্য একের পর এক বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ এসপিওনাজ এজেন্ট বা বাজিকরদের পাঠানো শুরু হয় বাংলাদেশে। চীনের এমএসএস, ভারতের "র", পাকিস্তানের আইএসআই, ইজ্রাইলের মোসাদ সহ সকল শক্তিশালি সিক্রেট সার্ভিসের বাজিকরদের লাইন লেগে যায় বাংলাদেশ অভিমুখে।
এই সকল বাজিকরদের সামনে একটি-ই মিশন। কার্ল এবং সাব্বিরকে জীবিত পাকড়াও করা। তাদের সামনে একটিই দেয়াল। বড় শক্ত দেয়াল এটি। বাজিকর বাবু। কোমা থেকে জাগানো বাবুকে নির্দেশনা দিচ্ছেন দু'শর বেশি আইকিউ সম্পন্ন মাস্টার সিফাত। তবে ঘাড়ত্যাড়া বাবুর সাথে নতুন এই স্ট্রাটেজিস্টের বোঝাপড়া খুব করুণ। তাছাড়া একের পর এক বাজিকরেরা কিভাবে বাবুকে খুঁজে পাচ্ছেন? মাস্টার সিফাতের নির্দেশনায় ইউক্রেন অভিযান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। শারীরিকভাবে পঙ্গু এই মাস্টারমাইন্ডের লক্ষ্য কি?
সিআইএর সেরা এজেন্ট ট্রাভিস আরভাইন গত অভিযানের পর গা ঢাকা দিয়েছেন কেন? বাংলাদেশের মিশনে যেতে কেন তাঁর অনীহা? লুনাটিক এই এজেন্ট, যে কিনা এককালে সেরা দেশপ্রেমিক ছিল, এখন কেন একদম তাঁর মার্কিন মুলুকের বিরোধীতা করছেন? "দ্য এজেন্সি" এর মত সিআইএর মধ্যেও কি ঘাপটি মেরে আছেন অক্টোপাসের অসংখ্যা শুঁড়?
রাশিয়ার এক অদ্ভুত শহর। যেখানে বিলি সিম্পসন, একজন ছদ্মবেশি সিআইএ এজেন্ট কাজ করছেন। কিন্তু এই শহরের সকল বাড়ি-ঘর একরকম। ভুবনমোহিনী রূপ, ভালোবাসা এবং গুনের অধিকারি স্ত্রীসহ আন্ডারকাভার বিলির মনে বাস করতে শুরু করেছে এক সন্দেহ। যে সন্দেহ তাঁর অস্তিত্বের উপর পর্যন্ত হাত দিয়ে দেয়। হচ্ছেটা কি রাশিয়ার স্ট্রেঞ্জ এই শহরে?
বাজিকর বাবু। একের পর এক মুখোমুখি হয়ে পড়ছেন বিভিন্ন দেশের বাজিকরদের সাথে। কোমা থেকে যতবার উঠে আসেন বাবু ঠিক ততবার মায়ের মৃত্যু এবং অন্যান্য দুঃখজনক স্মৃতি মনে পড়ে যায় তাঁর। এবারের বার আরো ট্র্যাজিক পরিস্থিতি চলে আসলো তাঁর সামনে। কৃত্রিমভাবে কোমায় রাখার কারণে শারীরিক কিছু অসুবিধা এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হয় তাকে। ক্যান্সারের ঝুঁকির পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আবার কোমায় ফিরে যেতে হবে তাকে।
প্রায় সব হারানো বাবুর এখন আর হারানোর কিছু নেই। অত্যন্ত শক্তিশালি এই চরিত্র সকল দূর্দশাকে বুকে জড়িয়ে "দ্য এজেন্সি" ধরা মূল বাজিতে পরিণত হন। এমনকি তাকে মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হয় তাঁরই গুরু ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের কিংবদন্তি এমআইসিক্সের সাথে। ভয়ানক সুদর্শন এবং স্টাইলিশ এই ব্রিটিশ লিজেন্ড কি জানেন যে অন্যান্য বাজিকরদের মত তিনিও অক্টোপাসের টেন্টাকলে বন্দী একজন?
শারীরিক এবং মানসিক প্রচন্ড চাপের মুখে বাবুকে যেন কোন অসম্ভব অভিযানকে সম্ভবে পরিণত করতে হবে। ইউক্রেন মিশনে কি সবাই মারা পড়েছিলো। নাকি কেউ ফিরে আসবে? বাবুর প্রচন্ড শক্তি, একরোখামি এবং স্কিলের দেখা পাওয়া যায় এই অভিযানে। যার হারানোর কিছু নেই সে-ই হয়তো হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে ভয়ানক। এদিকে প্রধানমন্ত্রির উপর অবধারিতভাবে হিট আসছে। অক্টোপাসের কাছে দেশের এই নির্বাহী প্রধান মাথা নত করবার ব্যক্তি নন। বাবু যেন ছুটে চলেছেন সময় এবং স্রোতের ঠিক বিপরীতে। এমন সময় এবং স্রোত যেখানে কে কোনদিক বেছে নিয়েছেন বলা খুব কঠিন। পার্কুর মত আখ্যান এগুতে থাকে এদিক থেকে ওদিকে।
নাবিল মুহতাসিমের "বাজি" এসপিওনাজ নভেলের চেয়ে থ্রিলার আখ্যান বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে। গল্পকথনে নিজস্ব আকার-ইঙ্গিত এবং ভঙ্গিমায় তিনি দুর্দান্ত এক আখ্যান রচনা করেছেন। রহস্যরোমাঞ্চ এবং একশনে ভর্তি এই উপন্যাস অত্যন্ত ফাস্ট রিড। যে পরিমাণ ইন্টেনসিটি গল্পের শেষ পর্যায় পর্যন্ত লেখক ধরে রেখেছেন তা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে একশন দৃশ্যগুলোর চিত্রায়ণ এক কথায় অসাধারণ। এছাড়া বাবুসহ বিভিন্ন বাজিকরের সুদক্ষতার পাশাপাশি একধরণের মানসিক বিপন্নতাও ফুটিয়ে তুলেছেন নাবিল। যা হয়তো পাঠককে খানিকটা বিষন্ন করে তুলতে পারে, অথবা বিপন্ন। নাবিল মুহতাসিমের "বাজি" আমি বহুদিন মনে রাখবো, হয়তো প্রায় সারাজীবন।
অনেকের মতে জীবন যেন এক জুয়া খেলা। এই খেলায় বাজি ধরতে হয়। অনেকসময় বাজি ধরতে হয় নিজের উপর। নিজ পরাণের গহীন ভিতরের সুপ্ত ব্যক্তিসত্ত্বার তীব্র জাগরণের মাধ্যমে কেউ কেউ হয়তো পরিণত হন বাজিকরে।
যারা প্রথমটা পড়েন নি তাদের জন্য স্পয়লার অ্যালার্ট কিছু কিছু বই আছে যেগুলো অনেক ভালো লাগে। এই বইটাও ঠিক তেমন। খুব ভালো লেগেছিল বইটা। কাহিনি সংক্ষেপ- চার বছর পর ��োমা থকে জেগে উঠার মানে একটাই বাজিকর বাবুর কাছে- আকাশ ভেঙে পড়েছে দেশের মাথায়।ফেল মেরে গেছে সব এজেন্ট।আসলেই কি তাই? বাংলাদেশের বুকে বসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ছেলে কার্ল হাসান সেভার্স একটা গোপন ওয়েবসাইট খুলে ধীরে ধীরে সব নথি ফাঁস করছে। যাকে ঠেকানোর জন্য পুরো দ্য অক্টোপাস সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে।নানান দেকশের সেরা এজেন্টরা ভিড়ছে বাংলাদেশে, শুধুমাত্র একটা হুইসলব্লোয়ারকে থামাতে। আর ঠেকানোর দায়িত্ব বাজিকর বাবুর। রহস্যময় সুপার জিনিয়াস পঙ্গু মাস্টার সিফাত( আমার নামও সিফাত। কিন্তু পঙ্গু না।) বুদ্ধিতে কাজ করতে হবে বাবুকে। যার অনুসরণ করেই ইউক্রেন মিশন ব্যর্থ হয়েছে। আসলে কি চায় মাস্টার সিফাত? কি তার উদ্দেশ্য? কেন বারবার বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে বাবুকে? এমন কি গোপন কথা আছে যা শুধু মাস্টার সিফাতই জানে? এদিকে গোটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে নেমেছে সিআই'র সেরা এজেন্ট ট্রাভিস আরভাইন। কেন? আর সত্যিই কি ইউক্রেন মিশনের সবাই মারা গেছে? কেউ কি ফেরে আসছে না? পাঠ-পতিক্রিয়া- খুব সুন্দর শুরু। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন বোম অ্যাটাকে। তবে এই বইয়ে প্রচুর প্লটহোল ছিল। যা আগেরটায় একদমই ছিল না। আগেরটার তুলনায় এই বইয়ের অ্যাকশনও অতটা মন কাড়েনি। যার কারণে বলা যেতে পারে হতাশ হয়েছি। কিন্তু এবারেরটার ফিনিশিংটাও আগেরটার মতো খুবই সুন্দর ছিল। যার কারণেই এই বইটাও প্রিয়য়ের তালিকাভুক্ত হয়েছে। লেখকের লেখনী মনোমুগ্ধকর। আর সাথে অ্যাকশন ও রহস্যে ভরা কাহিনি। আর শেষে সুন্দর একটা টুইস্ট। যার কারণে বেশ ভালো লাগে আমার। আর নিজের চরিত্র দেখতে কার না ভালো লাগে। যদি সেটা হয় একেবারে নায়ক পর্যায়ের চরিত্র। আপনি স্পাই থ্রিলার পছন্দ করলে এই বইটা অবশ্যই রেকোমেন্ডেড। চরিত্র- এখানেও আগের মতো আমার কয়েকটা চরিত্র আমার মনে দাগ কেটে গেছে। ১. বাজিকর বাবু। ২. মাস্টার সিফাত। নিজের চরিত্রটাও যে এত ভালো হবে সেটা জানতাম না। এই চরিত্র অবশ্যই আমার প্রিয় একটা চরিত্র হয়ে সারা জীবন থাকবে। প্রোডাকশন, প্রচ্ছদ, বাঁধাই- বাতিঘর প্রকাশনীর বইয়ের প্রোডাকশন নিয়ে কিছুই বলা লাগে না। অনেক ভালো প্রোডাকশন। বাঁধাইও খুব ভালো। আর ডিলান মিয়ার প্রচ্ছদটাও বেশ লেগেছে। বইটা একনজরে, বাজি নাবিল মুহতাসিম বাতিঘর প্রকাশনী ৩৪০ টাকা ৩২০ পৃষ্ঠা প্রচ্ছদ- ডিলান জনরা- স্পাই থ্রিলার
৪.৫ তারা এসপিওনাজ থ্রিলার হিসেবে বেশ ভালো প্লট। সাথে আছে দারুণ স্টোরিটেলিং ও দুর্দান্ত এক্সিকিউশন। বাজিকর ভালো লেগেছিলো , বাজি চমৎকার লাগলো। আশা করি বাজিমাতও বাজিমাত করতে পারবে 😉
বাজিকরে যেসব ঘাটতি ছিল, সেগুলো পূরণ করবার বেশ ভালোই প্রচেষ্টা চালিয়েছেন লেখক। অনেকাংশে তিনি সফল। বাজিকর যেমন ছিল বিশাল শত্রুর বিরুদ্ধে আহাদের একার লড়াই, বাজি তেমনি এজেন্ট বাবুর একার লড়াই। লড়াইটা আরও বড়, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের তিন বাজিকর সহ আমেরিকা, রাশিয়া, চীনসহ সব পরাশক্তির এজেন্টদের আগমন ছাড়াও বাবুর ব্যক্তিগত জীবনের দ্বন্দ্বগুলো চলে আসে সামনে।
আহাদের ব্রেনওয়াশ, তাকে স্লিপার এজেন্ট হিসেবে পাঠানো -এই টুইস্টটা ভালোই ছিল, তবে বইয়ের শেষার্ধে ব্যাপারটা বিশ্রীরকম প্রকট হয়ে ওঠে। সিফাতকে ক্ষেত্রবিশেষে খুব মেরি স্যু লাগলেও কাহিনী বা universe-building এর স্বার্থে মেনে নেয়াই যায়। তবে আতিয়ার রহমানের কাহিনীটা একদমই খাপছাড়া। তার মোটিভ কি, তার প্ল্যান কি, কোনো কিছুই ক্লিয়ার নয়, লেখক সেগুলো বাজি এবং পরবর্তীতে বাজিমাতেও ক্লিয়ার করতে পারেন নি। সবমিলিয়ে জগাখিচুড়ি থেকেও একটা সুতো টেনে বইয়ের একটা দারুণ সমাপ্তি দিতে পেরেছেন লেখক - এইজন্যেই ট্রিলজির সেরা বই "বাজি"।
"বাজি"র মূল আকর্ষণ তার বর্ণময় অ্যাকশন। লেখক খুবই ভালো রপ্ত করেছেন জিনিসটা। ক্ষেত্রবিশেষে ট্যাকটিকাল গলদ থাকলেও (ডেজার্ট ইগলের মতো একটা পিস্তল কোমরে নিয়ে বাবুর ঘোরাঘুরি বা আইগো ঝ্যাঙের অস্ত্রের উদ্ভট চয়েস - দুই ক্ষেত্রেই আরও অনেক বেটার অস্ত্রশস্ত্র ছিল চয়েস করবার মতো), একের পর এক বাঘা স্পাইদের সাথে বাবুর টক্কর আর জিতে বেরিয়ে আসা বেশ চমৎকার থ্রিলিং জয়-রাইড। জিম বেনেটের গুরুমারা কাণ্ডের সময় নিজেকে ম্যাথু রাইলির জায়গায় বসিয়ে ফেলেছিলেন হয়তো লেখক। প্রধানমন্ত্রীর ওপরে হামলার দৃশ্যটা একটু অবিশ্বাস্য লাগলেও দুর্দান্ত এক্সিকিউশন হয়েছে শেষ অবধি। ট্যাঙ্ক দিয়ে দ্য এজেন্সি উড়িয়ে দেয়া, ভেতরে ঢুকে ক্লিন-আপ মিশন - ছুঁয়ে গেছে একদম। সবমিলিয়ে খুবই মজার। তবে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়ে যায় এক পর্যায়ে - মোসাদের গুপ্তচর এসে পৌঁছতে পৌঁছতে পাঠক হাই তুলতে থাকবেন। অভিজিৎ গাঙ্গুলীর চরিত্রটা আরও বাড়তে পারতো হয়তো।
সবমিলিয়ে মধুরেণ সমাপয়েত না হলেও বেশ ভালো একটা গোছানো থ্রিলার। বাজিকরের সিক্যুয়েল হিসেবে যতটা ভালো হবার কথা, তার থেকেও বেশি হয়েছে বলা যায়।
বাজিকরের পরে আরেকটি টানটান এস্পিওনাজ থ্রিলার নিয়ে এসেছেন লেখক। চমৎকার একশন বৃত্তান্ত এবং আকর্ষণ ধরে রাখার ক্ষমতা আছে এখানে আগের পর্বের মতই। তবে আগের পর্বের দুর্বলতাগুলো এখানে আরো জোরে এটে বসেছে। বাজিকরের একটা নেগেটিভ দিক ছিল একের পর এক বস ফাইটের মত এজেন্টদের ওয়ানঅনওয়ান ডুয়েল। এই বৈশিষ্ট্য এবারও আছে। সাথে আরো জোরদার হয়েছে ঘনঘন ফোর্থ ওয়াল ব্রেকিং আর উপমার অতিরিক্ত ব্যবহার। একটা পিস্তল ঢুকে গিয়েছে শোকেসের নিচে, এটাকে খুব সহজভাবেই বলা যায়। কিন্তু তার সাথে "সেই পিস্তল বের করে আনতে হলে পাশের রুম থেকে একটা লাঠি নিয়ে আসা লাগবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সেটা সহজ নয়।" এর মত রঙ লাগানো খানিকটা বিরক্তিকরই। এরকম উদাহরণ আরো অনেকবার এসেছে। এই জিনিসটা আমার জন্যে টানটান উত্তেজনার দিকে মনোযোগ ধরে রাখার মধ্যে বারবারই বাধা দিয়েছে বিরক্তি জাগিয়ে। তবে এসব ব্যাপারকে একটু কষ্ট করে চোখের নিচে দ্রুত ���্কিপ করে নিলে, ওভারল বাজি আমার জন্যে খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। এখন বাজিমাত পরে বুঝার পালা, ট্রিলজির সফল সমাপ্তি ঘটেছে কিনা।
ভাসিটির প্রেসারে কয়েকদিন এমনেই অনেক প্যারায় ছিলাম,তারওপর নন-ফিকশন পড়ার ভুত চাপছে মাথায়।যেই কথা সেই কাজ,পড়া শুরু করলাম নন-ফিকশন।কিন্তু পরপর কয়েকটা বই পড়ার পরই বুঝলাম না বাবা,নন ফিকশন তোমার জন্য না। লাইব্রেরিতে গিয়ে এবার আনলাম এই বই। যাক বেশ ভালো একটা সময় গেল এটার সাথে, এটাও যদি খারাপ হইতো তাহলে ভাই পুরো ডিপ্রেশনে পইড়া যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না
বাজিকর পড়ে লেখকের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষটা যেভাবে হয়েছিল.... পুরোটা উপন্যাস তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছি। স্পয়লার হয়ে যাবে তাই কিছুই বলছি না আপাতত। কিন্তু আমার বিশ্বাস, নাবিল মুহতাসিম থ্রিলারের জগত মাতিয়ে যাবেন দীর্ঘদিন, সবে শুরু।
প্রসংগত একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। ধন্যবাদ মোঃ নাজিম উদ্দিনকে, নিজে লেখালেখির পাশাপাশি তরুণ লেখকদের সুযোগ দেয়ার জন্যে। শরীফুল হাসান, মাশুদুল হক, তানজীম রহমানদের পরবর্তী তিন তুর্কি নাবিল মুহতাসিম, কিশোর পাশা ইমন, সালমান হক। তাদের হাত ধরে আরও সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশি থ্রিলার সাহিত্য। :)
হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে মুখোমুখি দেশসেরা এসপিওনাজ এজেন্ট বাজিকর বাবু ও ইংল্যান্ডের সেরা এজেন্ট জিম বেনেট যে আবার বাবু'র গুরু ও। আকাশে উড্ডয়নরত অবস্থায় হাতে থাকা ঘড়ির সাহায্যে হেলিকপ্টার উড়িয়ে দিয়ে বিনা প্যারাসুটে লাফ দেন বাজিকর বাবু। এর আগে একমাত্র প্যারাসুট নিয়ে হেলিকপ্টার থেকে লাফ দেন জিম বেনেট। মাঝ আকাশেই প্যারাসুট নিয়ে দুই এজেন্টের মধ্যে ধস্তাধস্থি শুরু। সাত হাজার ফুট উঁচুতে জিম বেনেটের হাত থেকে কেবল প্যারাসুট ই ছিনিয়ে নেন নি বাবু নিজের মেন্টর কে গুলি ও করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন!
হয়তো এর আগে এমন বাংলা থ্রিলার লেখা হয়নি কিংবা কোন ইংলিশ বা অন্যকোন ভাষায় লেখা কোন থ্রিলারে এমন অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনার বর্ণণা পড়ার সৌভাগ্য হয়নি বলেই বিষয়টা মেনে নিতে যথেষ্ঠ কষ্ট হচ্ছিল। তবে বাংলা ভাষায় ও যে এইরকম রৌমহর্ষক থ্রিলার লেখা সম্ভব এবং বাংলা সাহিত্যে লেখক যে নতুন ঘরনার উপন্যাসের সংযোজন করেছেন তার জন্য অবশ্যই লেখকের প্রশংসা করতেই হবে।
"বাজিকর" ট্রিলজির প্রথম খন্ড বাজিকর এ বলা হয়েছিল একটি গোপন সংস্থা "দ্যা অক্টোপাসে"র কথা যার কার্যক্রমের গোপন সব তথ্য নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সিআইএ এর এজেন্ট কার্ল। কার্লকে হাতে পেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গাজী সোবহানুল হকের মেয়ে আনিলা হক সহ দেশ সেরা এজেন্ট বাজিকর জনি সমেত দোনেস্কৎ শহরে বিমান ছিনতাই করে কর্ণেল সেবাস্তিয়ানের নেতৃত্বাধীন অক্টোপাসের ইশারায় কাজ করা বিদ্রোহী বাহিনী। যদিও উপন্যাসের শেষ অংশে দেখা যায় কর্ণেল সেবাস্তিয়ান আসলে বাজিকর জনি ই যে "দ্য অক্টোপাসের" এজেন্ট। শিক্ষানবিশ অপারেটিভ আহাদ নিজের সব যোদ্ধাদের হারিয়ে ইউক্রেনের মাটিতে একাই জনি ও তার অন্যান্য সঙ্গীদের প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রী কন্যাকে উদ্ধার করার দূর্ধষ কাহিনীতে গড়া বাজিকর ট্রিলজির প্রথম খন্ডের পর দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণনা রয়েছে দেশের মাটিতে বিদেশি টেন্টাকলদের প্রতিহত করে কার্ল ও তার সহযোগী সাব্বিরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার ঘটনা।
বংশীবাদক নামক একটি ওয়েবসাইট খুলে দ্যা অক্টোপাসের সব গোপন নথি পৃথীবির সামনে নিয়ে আসছে কার্ল ও সাব্বির। এ দুজন ছাড়া এই ওয়েবসাইট আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না তাই তাদের জীবিত ধরতেই বাংলাদেশে রাশিয়া, পাকিস্তান, চীন, ইংল্যান্ড, ইসরায়েল ও ভারতের সেরা এজেন্টদের পাঠিয়ে দেয় দ্যা অক্টোপাসের হেড। তাদের প্রতিহত করতে দ্য এজেন্সির ডিরেক্টর আতিয়ার রহমানের নির্দেশে বাজিকর বাবু কে কোমা থেকে জাগিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে এজেন্সির চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতের দিক নির্দেশনায় কাজ করতে গিয়ে বারবার বিপাকে পড়তে হয় বাবু কে। একসময় মাস্টার সিফাতকে নিয়ে বাবুর মনে সন্দেহ জাগে এবং ক্রমেই তা জটিল রূপ ধারণ করতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী কন্যাকে উদ্ধার করার পর গুরুতর আহত অবস্থায় আহাদ কে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায় সিআইএ এর এজেন্ট'রা। অনেকেই তাকে মৃত ভেবে নিলেও তুখোর এই এজেন্টকে নিজেদের কাজে লাগানোর ফন্দি আটছিলো আমেরিকান'রা। দোনেস্কৎ শহরের কয়লাখনিতে দেখা হওয়া আরেক আমেরিকান এজেন্ট ট্রাভিস আরভাইনের সহযোগীতায় মার্কিন ফন্দি ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে আহাদ। সিলেটে বাবু পৌছানোর আগেই কার্ল ও সাব্বির কে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি দ্য অক্টোপাসের বাংলাদেশি টেন্টাকল কে প্রতিহত করে সে।
এরাআগে, বিমানবন্দর সড়কে জাপান ফেরত প্রধানমন্ত্রী'র গাড়িবহরে দিনে-দুপুরে হামলা চালায় সেনাবাহিনী। দ্য অক্টোপাসের ইশারাতে সাজোয়া যান আর ট্যাংক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী'র গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা করে বিদপগামী'রা। অন্যদিকে নিজের গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে ট্রাকে করে পালিয়ে যায় মাস্টার সিফাত। বাংলাদেশি টেন্টাকলকে প্রতিহত করতে গিয়ে নতুন রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ে আহাদ!
অ্যাকশন থ্রিলার ঘরনার এই ধরনের উপন্যাস বাংলা সাহিত্য প্রথম বলেই আমার ধারণা। নিঃসন্দেহে এটি বাংলা সাহিত্য কে আর ও পরিপূর্ণতা প্রদান করবে এবং পাঠকদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে থ্রিলার পাঠকেরা নতুন এক ধরণের স্বাদ পাবেন বইটি পড়ে। আহাদ যে নতুন রহস্যে জড়িয়ে পড়েছে সেটা'র সমাধান জানতে এখন বাজিকর সিরিজের তৃতীয় খন্ড বাজিমাত পড়তে মুখিয়ে আছি...
২.বাজি এটার রিভিউ আনবায়াসড কারণ আমি ভুলে "বাজি" প্রথমে পড়ি (তখন লেখক আমার বন্ধু/শত্রু কিছুই ছিলোনা,জাস্ট অ্যানাদার গাই ইন দা ক্লাস),পরে বাজিকর পড়ি,তাই "বাজি" বইয়ের সবচেয়ে বড় সারপ্���াইজ যেটি অপেক্ষা করছিলো "বাজিকর" পাঠকদের জন্য,সেটি পুরোটাই মিস করি,তাও খারাপ লাগেনি দেখেই পরে "বাজিকর" কিনে পড়ার কৌতুহল জাগে।আমার মতে তিনটি বইয়ের মধ্যে "বাজি" বইয়ের প্লটটি হচ্ছে মুভি অ্যাডাপ্টেশনের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত-থ্রিল,ড্রামা,প্রেম,বেদনা-সব মিলে কমার্শিয়াল স্ক্রিপ্টের মালমসলা ভরপুর,বেশিরভাগেরই প্রথম কিস্তিটির তুলনায় এটাই বেশি ভাল্লাগবে।তাহলে কেন "বাজি" র চেয়ে "বাজিকর" আমার বেশি প্রিয়?কারণ আমার অত নাটকীয়তা আর আবেগী জিনিসপাতি সয় না,সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ডিসফাংকশন।
বই হোক, বা সিনেমা - খুব কম ক্ষেত্রেই সিকুয়েল প্রথম গল্প কে ছাড়িয়ে যেতে পারে, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। কাহিনী একঘেয়ে অনেকটা, বিশ্বের সব দেশের বাঘা বাঘা এজেন্টরা বাংলাদেশে এসে একজন একজন করে দেশসেরা এজেন্ট বাবু কে আক্রমণ করবে আর প্লট আর্মার গায়ে নিয়ে বাবু একাই সবাইকে ধরাশায়ী করবে - কাহিনী মোটা দাগে এটাই। ( যদিও শেষে ব্যাখ্যা ছিল কেনো বাংলা সিনেমার মতো একজন একজন করে হামলা চালানো হচ্ছে।) আশা করছি বাজিমাত দিয়ে লেখক পুষিয়ে দিবেন।
The story is again action packed with some expected and unexpected plot twist. This time the protagonist is a hot blooded and fearless agent named Babu. I like him more than Ahad. The story ended with a plot twist that leaves the reader waiting for the third installment in the trilogy.