কার্ল পপার লিখেছেন: “যাঁকে তাঁর স্বীয় নগরবাসী ৫০০জন অ্যাথেনীয় জুরিসদস্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল, সেই সক্রেটিসকে আমি ভালোবেসেছিলাম, প্রশংসায় ভূষিত করেছিলাম। তাঁর সাফাই বক্তৃতা—যা তাঁর ছাত্র প্লেটো সক্রেটিসের জবানবন্দি নামে প্রকাশ করেছিল, আমার জানামতে পৃথিবীর সুন্দরতম দার্শনিক রচনা।” জবানবন্দি পাঠ করে, তাতে জ্ঞানের প্রতি, সত্যের প্রতি, দর্শনের প্রতি সক্রেটিসের সার্বিক অঙ্গীকার ও ঐকান্তিকতা লক্ষ করে সেই বক্তব্যে দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে উঠি আমরা। সক্রেটিস তাঁর জবানবন্দিতে মানুষের এবং নিজের অজ্ঞানতা নিয়ে যে চূড়ান্ত বিনয় প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের কাছে অবশ্য-অনুসরণীয় বলে প্রতিভাত হয়েছে। নৈতিক জীবনই যে শ্রেষ্ঠ জীবন, ‘আত্মার পরিচর্যা করা’ই যে আমাদের ধ্যানজ্ঞান হওয়া উচিত, সেকথা বলায় সোচ্চার হয়েছিলেন সক্রেটিস; সেজন্য তাঁকে অন্যায় অভিযোগে অভিযুক্ত করে আদালতে নেওয়া হয়েছিল, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পূর্বে এবং তার অব্যবহিত পরে তিনি নিজের ক্রিয়াকর্ম, জীবন ও দর্শনচর্চার পক্ষে আদালতে যে কৈফিয়ত দিয়েছিলেন তা-ই হল সক্রেটিসের জবানবন্দি। দর্শনকে সক্রেটিস প্রথাগত জীবনের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলেন, ‘অপরীক্ষিত জীবনকে’ যাপনযোগ্য মনে করেননি; জীবনকে ‘পরীক্ষা’ করতে গিয়ে, সত্যের, ন্যায়ের পথ অনুসরণ করতে গিয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করতেও পিছপা হননি। সক্রেটিসের জবানবন্দি যে কেবল সক্রেটিসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে রুজু করা ‘অধার্মিকতা’ আর ‘যুবকদের কলুষিতকরণের’ অভিযোগের উত্তরে ‘সর্বোত্তম, সবচেয়ে জ্ঞানী, সবচেয়ে নৈতিক’ মানুষটির জবানবন্দি, তা-ই নয়, এটি দর্শনের পক্ষেও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘সাফাই-জবাব’।
"আমাদের কেউই অত্যন্ত মূল্যবান কিছু জানি না; কিন্তু তিনি (রাজনীতিবিদ) তা না-জেনেও ভাবছেন যে, তিনি তা জানেন; আমি আদতে যেমন জানি না, তেমনি জানি বলে ভাবিও না। যাই হোক, এমন দেখা যাচ্ছে যে, একটি ক্ষুদ্র বিষয়ে অন্তত আমি তাঁর চাইতে অধিক জ্ঞানী কোনো কিছু না-জেনেও আমি ভাবি না যে, আমি তা জানি।"
এই গণতান্ত্রিক(!) শাসন ব্যবস্থাতেই সক্রেটিস এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিলো — সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের বিরোধে তার অবস্থানের কারনে।
নাহ! কিচ্ছু বদলায়নি। এখনকার শাসনব্যবস্থাও গনতান্ত্রিক(!), এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপরীতে অবস্থান নিলে মৃত্যুশঙ্কায় থাকতে হয়। কিচ্ছু বদলায়নি গত ২৫০০ বছরে।