রাতদুপুরে পলাশবাড়ি পৌছে বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে যায় অরিন্দম। জনবিরল বাজারে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে রাতটা কাটানো যায়। এদিকে তাপমাত্রা পারদের হিসেবে চড় চড় করে নামছে, কুয়াশা ঘনীভূত হচ্ছে, বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে রাতচরা পাখির ডাক। উদভ্রান্ত অরিন্দমকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে এক রহস্যময় বেঁটে মানুষ। অনেকগুলো গলি-ঘুপচি পেরিয়ে লোকটা অরিন্দমকে নিয়ে যায় আওলাদ মিয়ার হোটেলে, যেখানে অরিন্দমের মতো আটকেপড়া আরো পাঁচজন মানুষকে একাট্টা করা হয়েছে।হোটেলের মালিক আওলাদ মিয়ার চাওয়া খুব সামান্য,একটা গল্প বলতে হবে। নিজের জীবনের এমন একটা গল্প যেটা মোটাদাগে অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক। গল্পে গল্পে সারা রাত উঠে আসে এমন সব ঘটনা, যেগুলো মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বকেই নাড়িয়ে দেয়। 'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে' আপনাকে স্বাগতম!
নিয়াজ মেহেদীর জন্ম রংপুরের বেনীপুর গ্রামে, ২৯ আগস্ট ১৯৮৯ সালে। মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান নিয়াজের হাতেখড়ি পত্রিকার ছোটদের পাতায় লিখে। একসময় লেখালিখি ভুলে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর অনুজ নাবিল মুহতাসিম ও অগ্রজ লেখক মশিউল আলমের। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল বিপুলভাবে সমাদৃত। এরপর লিখেছেন উপন্যাস আড্ডা দেওয়া নিষেধ ও ধাঁধার থেকেও জটিল। ছোটগল্পের দুটি বই বিস্ময়ের রাত ও মর্কট মঞ্জিল। তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো, রহস্য পত্রিকা, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, বণিক বার্তা ও কিশোর আলোর পাতায়।
"আওলাদ মিয়া" নামক হোটেল-মালিকের এক অদ্ভুত নেশা আছে, তা হল গল্প শোনার নেশা। সে তার হোটেলে হরেক শ্রেণীর মানুষকে স্বাগতম জানান, আপ্যায়ন করেন শুধুমাত্র গল্প শোনার জন্য। সবাই এক গোল টেবিলে বসবে এবং একে একে গল্প বলবে। আপনি যদি ভাল গল্প বলিয়ে হন তাহলে আপনি আওলাদ মিয়ার হোটেলে স্বাগতম...
আমাদের সকলের জীবনে এমন একটা হলেও গল্প থাকে যা খুব ই করুন-মর্মান্তিক, যা আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারি না। আওলাদ মিয়ার গল্প-বলিয়ে দের গল্পগুলো হতে হবে এমন। নিজের জীবন থেকে নেওয়া এবং বেশ করুন অভিজ্ঞতার কোন গল্প
বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে এসে গল্প বলেন। আওলাদ মিয়া সহ সাতজন মানুষের গল্প আছে এতে। এখানে যেমন ছিল উত্তর বঙ্গের মানুষ। তেমনি ছিল সিলেটের মানুষের গল্প(এই গল্প পড়তে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। পরে আবার এক বন্ধু সিলেটি ভাষা অনুবাদ করে দিয়েছেন😑)
এক জনের গল্পে যেমন উঠে এসেছে সাফল্য লাভের জন্য বলিদানের গল্প, তেমনি অন্যজনের গল্পে এসেছে প্রাচীন ইতিহাস বা নিজের প্রিয় কোন জীব হারিয়ে কিছু লাভের গল্প। এই গল্পগুলো এমন তাদের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে গল্পটা, যেন চাইলেও সৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলা অসম্ভব।
লেখকের প্রতি সাধুবাদ জানাই এমন ভিন্ন ধরনের গল্প প্রকাশ করার জন্য, কারণ এমন অপরিচিত typeএর সাথে পাঠক পরিচিত নয়। এমন একটা কাজকে experiment বলা যায়। তাছাড়া বলতেই হয়, লেখক বেশ পড়াশুনা করেছেন এই ছোট বইটি লেখতে। দেশের বিভিন্ন জেলার ভাষা নিয়ে ধারণা নিতে হয়েছে। নতুন লেখক হলেও বেশ প্রতিভাবান বলতে হয় লেখককে। এমন বই যদি আপনি পড়তে যান তাহলে শূন্য expectation নিয়ে পড়া উচিত বলে আমি মনে করি
বইটা নিয়ে কিছু বলার আগে বাতিঘর প্রকাশনীর প্রাণপুরুষ নাজিমুদ্দিনের উদ্দেশে একটি সেলাম পেশ করি। এই কনসেপ্ট নিয়ে বই প্রকাশ করতে গেলে কলজের জোর, এবং ব্যতিক্রমী সাহিত্যের প্রতি যথার্থ অনুরাগ আবশ্যক। সেই সাহস ও অনুরাগের ছোঁয়া আর পাঁচজনের মনে লাগলে এই ভাষার তরণী বেয়ে আমরা অনেকদূর যেতে পারব। বইটা কী নিয়ে? অকালপ্রয়াত এক বন্ধুর কবরে দু'মুঠো মাটি, আর তার প্রিয় ফুল রেখে আসার জন্য উত্তরবঙ্গের মারাত্মক ঠান্ডায় রাতদুপুরে পলাশবাড়ি পৌঁছয় অরিন্দম। রাত কাটানোর জন্য সে আশ্রয় নেয় একটি হোটেলে। কিন্তু সে হোটেলের মতো জায়গা, বা ওই রাতের মতো কোনো রাত, অরিন্দমের জীবনে কখনও আসেনি। কেন? এই পোর্টম্যান্টু উপন্যাস আদতে অসাধারণ পরিবেশে কথিত ছ'টি অবিশ্বাস্য গল্পের সংকলন। ওই হোটেলে রাত কাটানোর ফাঁকে অরিন্দম এবং অন্য 'অতিথি'রা তাঁদের জীবনের যে কিস্যাগুলো আমাদের সামনে পেশ করেন, সেগুলোই এখানে পরপর সাজানো হয়েছে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কী জানেন? প্রত্যেক বক্তার গল্প বলা হয়েছে তাদের জবানিতে, আঞ্চলিক ও শ্রেণিগত বৈশিষ্ট্য অটুট রেখে। কিন্তু সে গল্পের এমন টান যে বুঝে নিতে একটুও সমস্যা হয়নি। এদের মধ্যে কোনোটি পৌরাণিক, কোনোটি লৌকিক, কোনোটি অলৌকিক, এবং কোনোটি ট্র্যাজিক। গল্পগুলো পড়তে গেলে মনে হয়, যেন আমরাও পৌঁছে গেছি রঙপুরের এক ভুলে যাওয়া শহরের এক হোটেলে, যার বাইরে ঝিমঝিম করছে শীতের রাত। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন গৌণ হয়ে যায়। থাকে শুধু গল্প শোনার রোমাঞ্চ। তবে এই বইয়ের সপ্তম আখ্যানটিই সেরা। সেটি আছে বইয়ের শেষে, আওলাদ মিয়ার জবানিতেই। সেই গল্পটা আসলে আমাদের সবার গল্প। আওলাদ মিয়ার মতো আমরাও মরিয়া হয়ে খুঁজে চলেছি গল্প... যাতে আমাদের গল্পের শেষটাও হয় জেল্লাদার, মনে রাখার মতো। পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতা লেখক ও প্রকাশককে উৎসাহিত করুক এমন ব্যতিক্রমী সাহিত্য সৃজন ও প্রকাশে, এই আশা রাখি।
লেখার হাত দারুণ,পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সিদ্ধহস্ত।
প্রচণ্ড শীতের এক রাতে আওলাদ মিয়া তার ভাতের হোটেলে জমান এক অদ্ভুত আসর।
গল্পের ভিতরে গল্প বা নেস্টেড ন্যারেটিভের অনুসরণে এক নভেলার ভিতরে ৭ জন মানুষ শোনায় ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্প।
কখনও সুপ্রাচীন পুঁথিতে লিপিবদ্ধ সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সেই কানুর জীবনের অজানা এক গল্প, বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ(মনসামঙ্গল) রচনার গল্পের পেছনের গল্প.... আবার কখনও লেখক আমাদের শোনাবেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে ভর্তি শায়লার রেপ কেসের গল্প কীভাবে অরিন্দম দে'র জীবনকে পাল্টে দিলো। নুরুন নাহারের গল্প আর ছামিদুলের গল্প শীর্ষক গল্প দুটোতে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ আর উদ্ভট ঘটনার ঘনঘটা বেশিই ইউনিকনেস দিয়েছে অন্য গল্পগুলোর তুলনায়।
নিয়াজ মেহেদী'র প্রথম বই হিসেবে এইটা বেশ ভালো রকম একটা ডেব্যু ছিল। পরবর্তীতে "আড্ডা দেয়া নিষেধ" নামের ডিস্টোপিয়ান নভেলা কিংবা "ধাঁধার থেকেও জটিল" নামের ইউনিক সায়েন্স ফিকশন থ্রিলারে তার কলমকে আরও শক্তিশালী হিসেবে দেখতে পাই।
'মর্কট মঞ্জিল' পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম আওলাদ মিয়া তার প্রথম উপন্যাস। এবং এইটা এখনো পড়া হয় নাই। ছোটখাটো ছিমছাম থাকায় চটজলদি হাতে তুলে নিলাম। এবং তিনটে ঘন্টা বেশ আয়েশি মুডেই কাটিয়েছি । সবগুলো গল্পই বেশ ভালো। তয় ছামেদুলের গল্পটা পড়তে গিয়ে কালোঘাম ছুটে গেছে। এখন' মর্কট মঞ্জিল' র একটা গতি করি। দেখি আর কি কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
সেলিম। বইপড়ুয়া শান্তশিষ্ঠ এক ছেলে। যখন বন্ধুরা বিসিএস প্রস্তুতি এবং কর্পোরেট জবের খোঁজে ব্যস্ত তখন সেলিমের মধ্যে বই পড়া এবং গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে টিচার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। ঠিক এ কারণেই বন্ধুরা তাকে ডাকে 'মফিজ সেলিম' নামে।
এরকম একটি ছেলের মৃত্যুতে অতি মাত্রার নরম মনের অধিকারি কেউ যদি উত্তর বঙ্গের তীব্র শীতে অটাইমে পলাশবাড়ি গিয়ে হাজির হয় তাহলে খুব একটা বিস্মিত হওয়ার মতো ঘটনা বলা যায় না সেটিকে।
পৌনে দুটোয় অপরিচিত এক এলাকায় পৌছে সেলিমের বন্ধু ঠান্ডার প্রকোপ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগার চেয়ে অপরিচিত এক লোকের সাহায্য নিয়ে পৌছে যান 'আওলাদ মিয়ার হোটেল' এ।
হোটেল খুঁজছিলেন সংবেদী মনের বন্ধুটি। দিনের আলো ফুটলে সেলিমের প্রিয় ফুল রডোডেনড্রস তাঁর কবরে রেখে আসবে উপন্যাসিকাটির মূল চরিত্র। অবশ্য এই নভেলায় মূল চরিত্র কে বোঝা মুশকিল।
রহস্যময় আওলাদ মিয়া খাতির-যত্নের কোন ত্রুটি না রাখলেও তাঁর হোটেলে ছয়জন এক ধরণের বন্দি-ই। তাদের গল্প শুনাতে হবে আওলাদ মিয়াকে। শুরু হয় একের পর এক অদ্ভুত সব গল্পকথন।
ছয়টি গল্প সম্পর্কে কোন স্পয়লার দিতে চাই না। তবে প্রতিটি স্টোরি-ই বেশ ইন্টারেস্টিং। কুসংস্কারাচ্ছান্ন মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য ওঝার সরণাপন্ন হওয়ার গল্প কিংবা কোন এক ছেমড়া��� গোবর গাঁদা থেকে ভিন্ন ভূবনে চলে যাওয়ার স্টোরি বলা হচ্ছে আওলাদ মিয়ার হোটেলে। একই সাথে ১৯৭১ সনের যুদ্ধের গল্প বলছেন কেউ, আবার কেউ বা বলছ��ন মা মনসাকে ঘিরে মিথের সাথে তাঁর প্রাসঙ্গিকতার কথা। মিথলজি, ইতিহাস, সহিংসতা, মানব মনের ভয় এবং লোভের চমৎকার সব গল্পে ঠাসা এক রাত পার করছেন হোটেলের সবাই। আওলাদ মিয়ার নিজের গল্প তো আছেই।
নিয়াজ মেহেদীর বই মনে হয় আমার আরো আগে পড়া দরকার ছিলো। নভেলার মধ্যে এক একজনের গল্পগুলো পাঠককে একদম ধরে রাখার মতো। কারণ আপাতদৃষ্টিতে অস্বাভাবিক এবং অস্বস্তিকর ব্যাপার-স্যাপারই তো ভালো গল্পের অন্যতম ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া প্রমিতের পাশাপাশি কথ্য এবং আঞ্চলিক ভাষায় স্টোরিটেলিং হওয়াতে উপন্যাসিকাটি একধরণের বহুমাত্রিকতা পেয়েছে।
রাত শেষ হয়ে আসছে। চলছে একের পর এক গল্প। কখনো আগ্রহ কখনো বিস্ময়, ভয় এবং অস্বস্তির সাথে গল্প শুনে যাচ্ছেন আওলাদ মিয়ার বদ্ধ হোটেলের সবাই। গল্পকথন ছাড়া কারো যেন মুক্তি নেই।
বই রিভিউ
নাম : আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল লেখক : নিয়াজ মেহেদী প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদ : ডিলান জনরা : উপন্যাসিকা রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
আহ কী যে ভালো লাগছে অনেকদিন পর এমন আমেজে একটা বই পড়তে পেয়ে। এখানে যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে সেটি হলো গল্প বলার স্টাইল। ৬ জন মানুষের ৬ টি গল্প এবং প্রত্যেকটায় নিজ জায়গায় ইন্টারেস্টিং।
এইবার পরের বইটি পড়ার পালা। এমন লেখা আরও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আঞ্চলিক ভাষায় লেখা একটা গল্প রয়েছে, সেটা পড়িনি, পড়তে পারতাম, বাট মাথা খাটাতে ইচ্ছা করেনি। বাকিগুলোর মধ্যে একটা ভুত এফএম এ আগেই শোনা, অন্যান্যগুলো সুন্দর।
রাত মোটামুটি চারটের কাছাকাছি। এইমাত্র পড়ে শেষ করলাম আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল। ক্ষিদেও পেয়ে যাচ্ছে কেন যেন! যাকগে। প্রকাশনীঃ বাতিঘর লেখকঃ নিয়াজ মেহেদী আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের সাহায্যেই আত্মপ্রকাশ করলেন নিয়াজ মেহেদী। প্রথমেই তাকে স্বাগত জানাই ভিন্নধর্মী প্লট উপহার দেবার জন্য। বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অরিন্দম রওনা করেছেন উত্তরবঙ্গে। বাস থেকে নেমেই পড়তে হলো বিপাকে। একটু আয়াসে যে রাতটা কাটাবেন, তার কোনো উপায় নেই। রহস্যময় এক বেঁটে ভদ্রলোক তাকে নিয়ে চললো আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে, যেখানে অপেক্ষা করে আছে অরিন্দমের মতোই কিছু রাতের অতিথি। গল্পটা যেন আপনাকে মনে করিয়ে দেবে আলিফ লায়লার কথাকে। সম্রাট শাহরিয়ারকে গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী শেহেরজাদ। রাতের পর রাত বিস্ময়কর সব গল্প শুনে অভিভূত হয়ে থাকেন সম্রাট। এও কি সম্ভব? এমনটাও কি ঘটে? আমাদের আওলাদ মিয়াও হয়তো এমন একজন সম্রাট। তবে শেহেরজাদ একজন নয়, অনেকজন। মৃত্যুভয় কি তাদের মাঝেও কাজ করে? কে জানে! পড়বার পরই পাঠকরা বুঝতে পারবেন। ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্প নিয়ে এসেছেন আওলাদ মিয়ার অতিথিরা। সেগুলো শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে আছে সবাই। বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা পড়েই কেন যেন মনে হলো বইটা রাতে পড়বার জন্যই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। সিদ্ধান্তটা বৃথা যায় নি। তবে একটি জিনিসের আক্ষেপ থাকবে। রংপুরের ভাষা বুঝতে পারি না বলে ছামিদুলের গল্পটা পড়তে বেশ কষ্টই হয়েছে। চমৎকার লেগেছে আওলাদ মিয়ার নিজের গল্পই। যাই হোক, আওলাদ মিয়া তার ভাতের হোটেলের জন্য পাচ্ছেন ৩/৫ (যদিও রেটিংএ এসে যায় না কিছু। পড়ে আনন্দ পেয়েছে, এটাই বড় কথা) হ্যাপি রিডিং...
শুরুটা এমন। অরিন্দম নামের এক যুবকের বন্ধু সেলিম অকস্মাৎ সাপের কামড়ে মারা যায়। বন্ধুর কবরে মাটি দেয়ার জন্য কল্যাণপুর থেকে বাসে ওঠে অরিন্দম। পলাশবাড়িতে গিয়ে যখন বাস থামে তখন রাত দুইটা। আশেপাশে কোন হোটেল নেই। ঘটনাক্রমে আওলাদমিয়ার হোটেলে ঢোকে অরিন্দম। সেখানে অরিন্দম আর আওলাদমিয়াসহ সাতজন সাতটা গল্প বলে।
১। নুরুন নাহারের গল্পঃ একজন বৃদ্ধা। তার মতে তার বয়স পঞ্চান্ন, ষাটের মতো। তার জীবনের গল্প বলে যায় আওলাদমিয়ার হোটেলে। গল্পটা সাদামাটা হতে পারতো। কিন্তু না, এটা সাদামাটা না হয়ে অসাধারণ এবং কিছুটা অস্বাভাবিকও। তার জীবনের উত্থান, পতন, আবার উত্থান, আবার পতন এবং গল্পের মোড় ঘুরে অন্যদিকে। গল্পগুলো পরিসরে ছোট হওয়ায় আর বিস্তারিত বলছি না।
এই গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে।
২। সুধাংশু গুপ্তের গল্পঃ এই গল্পটা ভিন্ন। অন্যান্য গল্প থেকে ভিন্ন৷ এই গল্পটা অতীতের। দেবী মনসাকে নিয়ে লেখা পদ্ম পুরাণ। সেই পদ্ম পুরাণ লিখতে গিয়ে কবির জীবনের অভিজ্ঞতা সুধাংশু গুপ্তের পরিবার বয়ে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। শুধুই কি অভিজ্ঞতার কাহিনী? নাকি আরো কিছু আছে। সেটা পড়লেই জানতে পারবেন।
এই গল্পটা আরো ভালো লেগেছে।
৩। ছামেদুলের গল্পঃ কিশোরের নাম ছামেদুল। আঞ্চলিক ভাষায়ই তার গল্প বলে যায়। কিন্তু, বলতে হয় আঞ্চলিক ভাষাটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সেই সাথে একই ভাষা এই গল্পকে অনন্য করেছে যেন এটার দরকার ছিলো। গল্পটা অস্বাভাবিক। ভুলোয় পাওয়া ছামেদুলের সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রাকৃত কাহিনী।
বেশ ইউনিক প্লট। ভালো লেগেছে।
৪। আলাউদ্দীন মন্ডলের গল্পঃ এই গল্পটা নিয়ে বিশদ লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু, আমি চাই এই বইয়ের নবীন পাঠক নিজেই পড়ে নিক। ড্রাগসের প্রভাব এবং আরও খারাপ অভ্যাস কিভাবে সম্ভাবনময় কিশোরের জীবনের ছক পালটে দেয় তার গল্প। শুধুই কি তাই? নাকি আরও কিছু আছে? উহ্য থাক। 🙂
৫। সাজেদুল ইসলামের গল্পঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগে পড়া সাজেদুল প্রাচীন পুথির খোজে রৌমারী যায়। এবং সেখানের পুথিতে পাওয়া এক কাব্যকে গল্প আকারে উপস্থাপন করে সাজেদুল। সেই গল্পটা অন্য রকম। দন্তী শব্দের অর্থ হাতি। 🙂
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আহামরি লেগেছে বলবো না। তবে ভালো লেগেছে।
৬। অরিন্দম দের গল্পঃ কথক অরিন্দম তার জীবনের অন্যরকম এক গল্প শোনায়। রক্ত দিতে গিয়ে পেশেন্টের প্রতি দুর্বলতা বোধ করে অরিন্দম। দুর্বলতা না বলে, বলি সে পেশেন্টের প্রেমে পড়ে যায়। তারপর কি হয়? 🙂
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এই গল্পটাও বলব আহামরি না। তবে, ভালো লেগেছে।
৭। আওলাদমিয়ার গল্পঃ স্বভাবতই আওলাদ মিয়ার কাছ থেকে অন্যরকম একটা গল্প আশা করেছিলাম। কিন্তু, গল্পটা কেমন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় নি। যদি শুধু এই গল্পের রেটিং করি তাহলে ২.৫/৫.০০। তবে, আগামী কোন বইয়ে যদি আওলাদ মিয়া তার গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসে, তবে ভিন্ন কথা।
পরিশেষে, অল্পকিছু কথা বলি। বইটা সুখপাঠ্য। লেখক মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। সাতটা গল্প যেখানে সাধারণ হতে পারতো, বইটা সাধারণ গল্পসংকলন হতে পারতো, লেখক সবগুলো গল্প একসুতোয় বেধে গল্পগুলোকে অসাধারণ করেছেন। অরিন্দম দে তার বন্ধুর কবরে মাটি দেওয়া ��র্যন আরও একটি গল্প হতে পারত। এবং, আজ এই পর্যন্তই।
অতি আগ্রহের সাথে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। শুরুটা অত্যন্ত চমকপ্রদ। এতে ছয়টা গল্প আছে, এসব গল্প ছয়জন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত গল্প। পড়তে ভাল লাগলেও আহামরি কিছু মনে হয়নি। আলাদা করে বলার মত কিছু পাচ্ছি না। শেষ গল্প যেটা আওলাদ মিয়া নিজে বলেছেন সেইখান থেকে আমি আলাদা কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু শেষ গল্পটা আশা পূরন করতে পারল না।
১৫ দিন পর এক্সাম অথচ এই মুহুর্তে মাথায় ভুত চাপলো গল্পের বই পড়ার। তাই এই ছোটখাটো বইটা নিয়ে বসে গেলাম।
নিয়াজ মেহেদীর লেখা প্রথম পড়া হলো বটে। তবে লেখনী একেবারে মন ভালো করে দিল। পাঠককে গল্পের ভেতর আটকে রাখার মত লেখা। ছামেদুলের গল্পের অংশে তো আঞ্চলিকতার কারনে প্রায় অর্ধেক কথাই বুঝতে পারছিলাম না তবুও বিরক্তি আসেনি একটুও, বরং সাগ্রহে গল্পে আঁটকে ছিলাম।
ভালো লেগেছে প্রথমদিকের গল্পগুলো। আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আমার অভিযোগ নেই। এই ভাষা আগে থেকে জানা না থাকলেও বুঝতে সমস্যা হয়নি। তবে খারাপ লাগার মধ্যে যেটুকু আছে সেটা হলো বইয়ের বিশেষ আকর্ষণ আওলাদ মিয়ার গল্পে৷ যুতসই লাগেনি। অর্থাৎ এন্ডিং ভালো লাগেনি আমার।
****স্পয়লার এলার্ট****
আওলাদ মিয়ার গল্পে যে লেখক মানুষটির কথা বলা হলো, সেই লেখকের পাণ্ডুলিপিতে সাতটি গল্প থাকার কথা। ঘটনাচক্রে চারটি গল্প লেখা ছিল পাণ্ডুলিপিতে। বাকি তিনটা গল্প ছিল না, অর্থাৎ অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি। যে চারটি গল্প পড়ে আওলাদমিয়ার গল্প শোনার বাতিক তৈরি হলো, সে চারটি গল্প যদি বইতে পেতাম তাহলে ভালো লাগতো। বুঝতে পারতাম তার গল্প শোনার আগ্রহ তৈরির কারণ। বইটাও তাহলে আরেকটু বড় পরিসরে পেতাম।
****স্পয়লার শেষ*****
এন্ডিং বাদ দিলে বাকি গল্পগুলো খারাপ লাগেনি। চার তারা দিতে পারতাম। কিন্তু অসন্তুষ্টি থেকে গেল। তাই তিন তারা।
This entire review has been hidden because of spoilers.
কতগুলো ছোটগল্পের সম্বনয়ে গঠিত । ছোট গল্প গুলো আসলেই অসাধারণ। বেশ জানাশোনা করতে হয়েছে লিখার আগে । সবগুলো গল্প এক সুতোয় গাঁথা হয়েছে । তবে আমার মনে হয়েছে গুলো আলাদা রাখলেও চলত। মানে ছোট গল্পের বই হিসেবে দারুণ মানাত। আর সবচেয়ের গল্প টি মানে কেন্দ্রীয় চরিত্র আওলাদ মিয়ার গল্পে টুইস্ট একটু কম লেগেছে। সেটায় টুইস্ট বেশি থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সবমিলিয়ে বইটি বেশ ভাল। নতুন একটা লেখার স্টাইল পাওয়া গেছে ।
“Short fiction seems more targeted - hand grenades of ideas, if you will. When they work, they hit, they explode, and you never forget them.” ― Paolo Bacigalupi - আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল - অরিন্দম দে, শীতের রাতে এসে পড়েন রংপুরে। এত রাতে হোটেল খোঁজার বাসনায় বের হলে ফুল মিয়া নামের একজনের সাথে তার দেখা হয়। সেই তাকে নিয়ে যায় "আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল" এ। - সেখানে গিয়ে দেখতে তার মতোই আরো কয়েকজন মানুষ আছে সেখানে। হোটেলের মালিক আওলাদ মিয়া জানায় আজকে এক বিশেষ রাত, যেখানে অতিথিরা প্রত্যেকেই একটি করে গল্প শোনায়। সেই খন্ড খন্ড গল্প গুলো নিয়েই লেখা হয়েছে "আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল।" - "আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল" লেখক নিয়াজ মেহেদি এর লেখা প্ৰথম উপন্যাস। সেই হিসেবে লেখনী মোটামুটি ভালো বলা যায়, কিছু জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে। শীতের রাতের পটভূমিটাও এ ধরনের গল্পের জন্য চমৎকার। - "আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল" বইটি ফ্রেম স্টোরি (গল্পের ভিতরে গল্প) স্টাইলের লেখা। বইয়ের বিভিন্ন ধারার গল্পগুলোর ভিতরে প্রায় সবগুলোই কম বেশি ভালো লেগেছে, তার ভিতরে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সুধাংশু গুপ্তের গল্প। তবে ছামেদুলের গল্প ভাষাগত সমস্যার কারণে বুঝতে সমস্যা হয়েছে। বইটির শেষের গল্প আর ফিনিশিংটা একটু হতাশাজনক, খুবই সাধারণ মানের। - "আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল" বইয়ের কারিগরি দিকগুলো ভালোই লেগেছে। প্রচ্ছদটিও মোটামুটি ভালোই। যাদের গল্পসংকলন বা ছোট গল্প পড়তে পছন্দ তাদের বইটি বেশি ভালো লাগবে।
বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে উত্তরবংগের পলাশবাড়িতে অরিন্দম যখন এসে পৌঁছায় তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। একে শীতের রাত, তার উপর গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে সেই সময়ে তেমন কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা বিপদে যখন পড়েছিলো তখনই ঘটনাচক্রে আওলাদ মিয়ার অতিথি হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করে সে। আওলাদ মিয়ার বিচিত্র শখ, বছরে একবার হোটেলে সমবেত সবাইকে নিয়ে বসবে, যারা তাদের নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত কোনো ঘটনা প্রকাশ করবে। অরিন্দম ছিলো সেই সভার সর্বশেষ অতিথি। তাই সে আসার পরেই একে একে বর্ণনা করতে শুরু করে নিজেদের জীবনের অদ্ভুত সে সব কাহিনী।
বইয়ের বর্ণনা বেশ সবালীল মনে হয়েছে। অতিরিক্ত শব্দভারে ভারাক্রান্ত মনে হয়নি। অফিসে যাওয়া আসার পথে বইটা পড়েছি । বেশ লেগেছে।
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল লেখক নিয়াজ মেহেদির প্রথম বই। বিভিন্ন ডিস্টারবেন্স নিয়ে লেখা ছয়টি গল্প আছে এখানে। ছয়জন মানুষ পাকেচক্রে পরে হাজির হয় আওলাদ মিয়ার হোটেলে। আওলাদ মিয়ার অনুরোধে তাদেরকে জীবনের সবথেকে অদ্ভুত ঘটনার গল্পটি বলতে হয়। নুরুন নাহারের গল্প ও সুধাংশু গুপ্তের গল্প অসাধারন ছিল। সুধাংশু গুপ্তের গল্পে মনসামঙ্গল লেখক বিজয়গুপ্তের একটি কাহিনীর মাধ্যমে বলা হয়েছে। এরপর আসে ছামেদুলের গল্প। পুরোটা আঞ্চলিক ভাষায় লেখা গল্পটা। কিছুটা ফ্যান্টাসি ঘরনার। তবে এ গল্পটা আমার কাছে একটু দুর্বল লেগেছে। এরপর আসে আলাউদ্দিন মন্ডলের গল্প। তর্কসাপেক্ষে সেরা গল্প বলা যায় এটিকে। কিছুটা অতিপ্রাকৃত বা ডিস্টারবেনন্স এই গল্পেও আছে কিন্তু অনেকটা ক্রাইম থ্রিলার টাইপের গল্প। সব থেকে ভালো ল���গেছে এটাই। সাজ্জাদুল ইসলামের গল্পটি প্রাচীন পুঁথি থেকে কালেক্ট করা লোককথা। মোটামোটি মানের ছিল। এরপরে সব শেষে আসে যার হাত ধরে কাহিনীর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেই অরিন্দমের গল্প। একটি ধর্ষিত মেয়ের গল্প। ব্যাখ্যাতিত একটি ঘটনা। সবশেষে আওলাদ মিয়ার গল্পের নেশা কিভাবে ধরেছে সেই গল্প দিয়ে বইয়ের শেষ হয়। তার গল্পটি আরেকটু স্ট্রং হলে ভালো লাগতো। তবে লেখক নিয়াজ মেহেদী ভাই চাইলে আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল ২য় পর্ব আশা করা যেতেই পারে। কেননা আওলাদ মিয়া প্রত্যেক বছরেই একটি নির্দিষ্ট দিনে গল্পের আসর বসান।
প্রছদ্দ সাথে বইয়ের নাম দেখে খুব আগ্রহ সহকারে বইটা নিয়ে বসি কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হইতেসে চরম আকারে হতাশ হইসি...লেখক সাহেব কি বুঝাইতে চাইসে তার কিছুই আমি বুঝি নাই,ফ্লাপে লেখা ছিল বইয়ের ঘটনা মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বকে নাড়া দিবে বাস্তবে বই শেষ করে মহা বিরক্ত হইসি...যাই হোক একান্তই নিজের মতামত ব্যক্ত করলাম...
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা হয়তো আজও আছে। কালের পরিক্রমায় এই আড্ডা টিকে থাকবে। শুধু বদলে যাবে কুশীলব। একইভাবে আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলেও আড্ডা বসে ভিন্ন ভিন্ন কুশীলব নিয়ে। প্রতি বছরের বিশেষ এক দিনের গভীর রাতে এই আড্ডার আয়োজন হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে এখন যে যার মতো করে ব্যস্ত অরিন্দমের বন্ধুরা। কারো সময় নেই। এমন এক সময় বন্ধু সেলিমের মৃ ত্যুর খবর বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। সবাই নিজেদের জীবনের দোহাই দেয়, কিন্তু বন্ধুর পরিবারকে শেষবারের মতো স্বান্তনা দেওয়ার সময়টা কারো নেই। অগত্যা অরিন্দম নিজেই ছুটল উত্তরবঙ্গে সেলিমের এলাকায়। বন্ধুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
শীতের এই গভীর রাতে তাকে বাস নামিয়ে দিল নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিন্তু এরপর? রাতটা কাটানোর জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই যে বড্ড প্রয়োজন। তখনি পেছন থেকে এক অদ্ভুত মাংকি টুপি পড়া অদ্ভুত অবয়বের আগমন। একটি হোটেলের সন্ধান পাওয়ার আশায় তার পেছন পেছন যেতে হলো অরিন্দমকে।
“আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল”-এর আওলাদ মিয়ার একটা শখ আছে। সে প্রতি বছরের বিশেষ এক তারিখে গভীর রাতে ছয়জন আগন্তুক ও নিজে, মোট সাতজন মিলে একটা গল্প বলার আসর জমিয়ে তোলে। তার গল্প শোনার ভীষণ শখ। আর এই শখ পূরণের জন্য অপরিচিত মানুষদের বেছে নেয় সে। কারণ, অন্যের জীবনের গভীরে থাকা অজানা গল্পগুলো যে তাকে তৃপ্ত করে।
আওলাদ মিয়া ছাড়াও এই আসরে থাকা আরও ছয়জন হলেন — নুরুন নাহার, সুধাংশু গুপ্ত, ছামেদুল, আলাউদ্দিন মন্ডল, সাজ্জাদুল ইসলাম ও অরিন্দম দে।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কিছু না কিছু গল্প থাকে। যে গল্প আমরা কাউকে বলতে পারি না। নীরবে মনের মধ্যে জমতে জমতে পাহাড় সমান বোঝা তৈরি করে। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের এই গল্পের আসরে তেমন কিছু গল্প উন্মুক্ত হয়।
যেমন নুরুন নাহার নামের বৃদ্ধার গল্প বিস্ময়কর। সত্য, মিথ্যা জানা নেয়। তবুও এ গল্পের রেশ তার ছোটো থেকে একটা প্রিয় জিনিসকে বলি দেওয়ার হাহাকারকে উনুক্ত করে। সুস্থ হওয়ার লোভ যার জন্য দায়ী। অন্যদিকে আলাউদ্দিন মন্ডল গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই অপরাধের উপর গড়ে উঠেছে। একাত্তরের সময় বাবা-দাদা মুক্তিযু দ্ধ বিরোধী ছিলেন। তার ফল তারা পেয়েছেন। অন্যদিকে পরিবারের ছায়া না থাকা আলাউদ্দিন বখে গিয়েছিলেন। ফিরেও এসেছিলেন সৎ পথে। কিন্তু অসৎ সঙ্গ বলি না লোভ, কিংবা নিতান্তই নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে যে অপরাধ করেছেন, তার জন্য কি তিনি অনুতপ্ত? ভরা মজলিসে এমন গল্প বলার সাহস সবার থাকে না। হয়তো হালকা হতে চেয়েছেন। অপরাধের শাস্তি তো পেয়েছেন-ই। মনের বোঝা কমাতেও বোধহয় চেয়েছেন।
সুধাংশু গুপ্ত কিংবা সাজ্জাদুল ইসলামের গল্প অনেকটা ইতিহাস কিংবা বাংলার গড়ে ওঠে কিংবদন্তির কথা বর্ণনা করে। একদিকে মা মনসার কথা। মানুষ তার অহংকারকে কখনও বিসর্জন দিতে পারে। নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে অন্যকে ছোটো প্রমাণের চেষ্টা অবধারিত এক গল্প। আর এর ফলে যে অভিশাপ কুড়ানো হয়, এর পরিণতি এই পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। অন্যদিকে আরেক গল্পটা ভীষণ ভালো লেগেছে। কাল্পনিক হোক, কিন্তু এক অবলা প্রাণীকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সে সারাজীবনের কৃতজ্ঞতায় ডুবে যায়। মানুষের মতো অকৃতজ্ঞ হয় না। ফলে এক গজদন্তির পিঠে চড়ে এক কিশোরের যুবক হয়ে ওঠা যেন শত্রুর জন্য ভয়ংকর কোনো অভিজ্ঞতা।
ছামেদুলের গল্পটা ইন্টারেস্টিং। সবচেয়ে মজার লেগেছে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখক পুরো গল্পটা বয়ান করেছেন। কেমন যেন রহস্য ও ঘোরলাগা কাজ করে। যার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। অরিন্দম দে’র গল্পটা ভালোবাসার। কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায়। কিছু রহস্য অজানা থেকে যায়। এই অপূর্ণ ভালোবাসা ও অজানা রহস্যের যে গল্প অরিন্দম বলেছেন, হয়তো এ জন্মে আর কাউকে বলা হবে না।
এই আসরের সবশেষে আওলাদ মিয়ার গল্পটা জানান দেয়, তার এই গল্প শোনার বাতিক কীভাবে হলো। গভীর রাতে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত গল্প শোনার ইচ্ছা তার হয়তো ফুরোবে না। কতশত গল্প মানুষের জীবনের!
“আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল” জনপ্রিয় একটা বই হলেও আমি বেশ দেরিতে পড়লাম। পড়ে ভালো লেগেছে। সবগুলো গল্পই মোটামুটি ভালো। কোনটা খুব যে খারাপ লেগেছে এমন না। ব্যতিক্রম গল্পগুলো বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। লেখকের লেখা সাবলীল। কোনো জড়তা নেই বিধায় দ্রুত পড়া যায়। তবে ছামেদুলের গল্পটা যেহেতু আঞ্চলিক ভাষায়, পড়তে একটু বেগ পেতে হয়েছে। তবে পুরো গল্পটায় লেখক যেভাবে আঞ্চলিক ধারা বজায় রেখেছিলেন, তারিফ করতেই হয়।
তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বাতিঘরের ট্রেডমার্ক বজায় রেখে এখানে বানান ভুলের বা ছাপার ভুলের পরিমাণ তেমন একটা নেই। প্রচ্ছদ ইউনিক। দেখতে সুন্দর লাগে।
পরিশেষে, প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন কিছু গল্প থাকে, যে গল্প কাউকে বলা হয় না। বলার সুযোগ পাওয়া যায় না। মানুষ হয়তো সুযোগ খুঁজে। একবার সুযোগ পেলে বলতে দ্বিধা থাকে না।
নিয়াজ মেহেদী সাহেবের লেখা যে কারণে আমার পছন্দ তা হল-- সাবলীলভাবে গল্প বলে যাবার দক্ষতা। পাঠককে জোর করে বই ধরে থাকতে হয়না৷ পড়তে শুরু করতে অনায়াসেই এগিয়ে যাওয়া যায়৷
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল - লেখকের প্রকাশিত প্রথম বই যা প্রকাশ করেছে বাতিঘর।
মূলত উপন্যাসের আঙ্গিকে লেখা হলেও বইটিকে আদতে একটি গল্পগ্রন্থই বলা চলে৷
ছয়জন ভিন্ন লোকের জবানীতে ছয়টি ভিন্ন স্বাদের গল্প খুঁজে পাওয়া যায় বইটিতে। গল্প একাধিক লোকের হলেও সবগুলো গল্পই একই ঘরানায় পড়ে বোধহয়। পরাবাস্তব গল্প।
যদিও আওলাদ মিয়া নামক লোকটির দ্বারা বিবৃত শেষ গল্পটিকে আমার অবাস্তব কিছুই মনে হয়নি এবং ছয়খানা গল্পের মধ্যে এই গল্পটিই আমার তুলনামূলক দুর্বল মনে হয়েছে। যেহেতু এই গল্পের মাধ্যমেই বইটির ইতি টেনেছেন লেখক, সেক্ষেত্রে এই গল্পের বুনন আরো শক্তিশাল�� এবং বিস্তৃত করা উচিত ছিল৷
মর্কট মঞ্জিল নামক লেখকের অপর বই এ বইটার চেয়ে তুলনামূলক এগিয়ে থাকবে তার গল্পগুলোর প্লটের কারণে৷
অবশ্যপাঠ্য না হলেও আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে সময় করে একবার ঘুরে যেতে পারেন। এর খাবারগুলো কেমন তা চেখে দেখবেন নাহয়!
এই বইটি "গল্পগ্রন্থের"-ই এক ভিন্ন সংস্করণ বলা যায়। আওলাদ মিয়া নামক এক ব্যক্তি রহস্যময়ভাবে গল্পের আসর বসান এবং সেই আসরটাই মূলত সবগুলো গল্পের মানুষদের যোগসূত্র। তাছাড়া এক গল্পের সাথে অন্য গল্পের কোনো যোগসূত্রতা নেই।তবে গল্পগুলো সাবলীল। হ্যাপি রিডিং💙
❝মানুষের অজানা অনেক গল্প জেনেছি||তবু আমার গল্পের খিদে মেটেনি|| ইচ্ছে আছে যতদিন বেঁচে আছি , এই গল্প শোনার আসর চালিয়ে যাব❞
"গল্প" বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এর গল্প থাকে,আড্ডার আসরে আমরা সবাই গল্প বলিয়ে||সবার গল্প এক মোড় থেকে ঘুরে আরেক মোড়ে এসে আমাদের মোহের ফাঁদে লেপ্টে ফেলে|| এই গল্পই ত যুগযুগ ধরে কখন ও লোককথা,কখন ও গল্পকথা কখন ও বা মায়ের আদুরে গলায় ঘুম পাড়ানি গল্প হিসেবে ধরা দিয়ে এসেছে|| এমন ই কিছু গল্প নিয়ে এই বই এর গল্পকাহীনি!!
'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল' বই এর মূল বিষয়বস্তু হল- একজন হোটেল মালিক যিনি কিনা কিছু হারানো গল্পের সন্ধ্যানে বছরে একবার করে গল্পের আসর বসান|| এই রকম আসর বসাতে বসাতে তিনি মানুষের অনেক গল্প জেনেছেন কিন্তু এত গল্প শুনে তিনি কি তার গল্পের খিদে মিটাতে পেরেছেন? জানার জন্য বসে পড়ুন বই নিয়ে :3
⚫️আখ্যান ও সূত্রপাত --- "স্কুল মাস্টার বন্ধুর মৃত্যুতে ঢাকা থেকে রংপুর আসে অরিন্দম||রাতে রংপুর নেমে হোটেল খুজতে খুজতে এসে পরে আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে|| যেখানে রহস্যময়ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন জনা ছয়েক মানুষ|| তারপর আগমন ঘটে আওলাদ মিয়ার,যিনি কিনা গল্পের আসর বসিয়েছেন|| কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত হলেও বিকল্প উপায় না থাকায় গল্পের আসরে বসে পড়লো অরিন্দম|| গল্পে গল্পে আগাতে থাকে রাতে|| রাত শেষে কি হয়, জানতে হলে পড়তে হবে বইটি ;)
⚫️পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛ আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল ❜ অনেকটা এক রুমের মধ্যে গল্প শেষ টাইপ উপন্যাস|| আসলে এক টেবিলে বসেই গল্প শেষ|| প্লট টা অদ্ভুত ধরণের সুন্দর ছিল কিন্তু ঘটনার মূলে যে দুজন তাদের একজনের গল্প মাতাতে পারলেও আওলাদ মিয়াকে ঘিরে যে রহস্যের পর্দা ঘনীভূত হয়েছিল,লেখক যেন তার অপমৃত্যু ঘটালেন|| অসাধারণ একটা প্লটের সাধারণ সমাপ্তি|| সমাপ্তির টুইস্ট টাও ভাল ছিল কিন্তু এতক্ষণ ধরে পাঠকের আগ্রহ ধরে রেখে হুট করে খাপছাড়া হয়ে যাওয়াতে ভাল লাগেনি :( তবে একবার পড়ে ভাল লাগার মতন একটি বই |
⚫️চরিত্রায়ন—
খুব বেশি চরিত্র না থাকায় আমার জন্য সুবিধা হয়েছে,মনোযোগ ধরে রাখতে পারছিলাম|| তবে যার হোটেল আর যার কর্মকাণ্ড নিয়ে এত রহস্য তার চরিত্রায়ন টা যথাযথ লাগেনি|| এর অবশ্য একটাই কারণ-তার উপস্থিত আবহের সাথে তার গল্প টা খাপ খাইনি|| অন্য সবার চরিত্রায়ন যথাযথ ছিল||
⚫️খুচরা আলাপ—
একেবারে সাদামাটা একটি বই||গল্পে গল্পে গল্প শেষ|| একটানা পড়তেছিলাম বই টা|| বেশ সাবলীলভাবে উপস্থাপন হয়েছে সব কিছু||গল্প বলার ধরণ টা ও বেশ সুন্দর|| লেখনীর মধ্যে পাঠক ধরে রাখার মতন উপযোগ ছিল|| তবে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দিয়েছেন,যে আওলাদ মিয়াকে ঘিরে এত রহস্য,তার গল্প টা শেষ করে দিল সব|| এর থেকে আর ও ভাল কিছু হয়ত করা যেত|| তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দিয়েছেন লেখক এমন মনে হল| তবে আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে 🖤
নামকরণ আর প্রচ্ছদের ডিজাইন দেখে আর দ্বিতীয়বার চিন্তা করি নি। খুলে দেখি বেশ কয়েকটি গরম,তাজা রসগোল্লাকে একটি সুন্দর প্যাকেটের মাঝে রাখা।খেতে গিয়ে এক সেকেন্ডের জন্য মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি। দুই-তিন বছর আগে wild tales নামে একটি স্প্যানিশ ভাষার সিনেমা দেখেছিলাম। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলেও ঠিক কাছাকাছি ধরনের কিছু অতি বন্য গল্প বলা হয়েছে।যদিও wild tales এ গল্প গুলো এক সুতোয় বাঁধা ছিল না, কিন্তু আওলাদ মিয়া সে কাজটি করেছেন দারুণভাবে।এই সুতোয় বাঁধার ব্যাপারটি বইটির অন্যতম শক্তিশালী ব্যাপার। আমি ভালো মানে বিনোদিত হয়েছি,আনন্দিত হয়েছি, তাই শব্দের ঝংকার, সাহিত্যগুণ,গল্পের ফ্ল,তুলনামূলক অবস্থান ইত্যাদি বিচার করতে ইচ্ছে করে নাই। বইটা শেষ হলে মনে হবে আসলেই প্রচ্ছদটা এবং নামকরণ টা সার্থক হয়েছে।
এই সময়ের বইগুলোর মধ্যে ভাল একটা বই এটা। ক্ল্যাসিক বা বহুদিন ধরে মনে রাখার মত কিছু নয় তবে গল্পগুলো পড়ে ভালোই লেগেছে। রেখে রেখে পড়তে হয়না, অনেকটা ঝালমুড়ির মত একবসায় শেষ করে ফেলতে হয়। প্রতি গল্পের শেষে একটা করে টুইস্ট। গল্পগুলো বলার আগে প্রেক্ষাপট(আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে পৌছে গিয়ে গল্পের আসরে অংশগ্রহণ) তৈরি করার ব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে। বই কেনার টাকাটা পুরোই উসুল।
যখন বইটার কনসেপ্ট সম্পর্কে জানতে পারি, আপনা-আপনি বইটা নিয়ে মনের মাঝে তীব্র আগ্রহের সঞ্চার হয়। আমি এই আওলাদ মিয়া সিরিজটা কেনার জন্য উতলা হয়ে যাই এবং বহু কষ্টে সংগ্রহ করি। কারণ প্রথম পার্টটা এই মুহুর্তে স্টক আউট। যাইহোক, আমার পরীক্ষা সামনে, নিজের পড়ার প্রেসারের মাঝে সময় করে এই বইটা পড়লাম, না পড়ে থাকতে পারছিলাম না সত্যি বলতে। সেজন্য মধ্যরাএে একবসায় শেষ করলাম সমগ্র বইটা।
এখন বলি বইটা সম্পর্কে আমি কি ভেবেছিলাম। বেশ কিছু দিন আগে ভূত ডট কমে এমন একটা স্টোরী সম্ভবত শুনেছিলাম যেখানে এক যাএী মধ্যরাএে একটা হোটেলের সন্ধান পায় এবং সেখানে তার সাথে ঘটতে থাকে অতিপ্রাকৃত ঘটনা। এখন আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের সাথে মিলটা একটু হলেও অনুভব করতে পারছিলাম। আর ভৌতিক,অতিপ্রাকৃত, রহস্যময় কনসেপ্ট গুলা আমাকে বারবার তাদের দিকে টানে। সেই হিসাবে বইটা কিনে পড়া শুরু করি। আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের পরিচয়পর্বটা হয় অরিন্দমের হাত ধরে। এবং লেখক শুরুতে দারুণ ভাবে উওরবঙ্গের আবহাওয়া এবং মধ্যরাএে বর্ণনা করেছেন যা এক্সপেকটেশনের আগুনে ঘি ঢালার মতন অবস্থা সৃস্টি করে। অতঃপর আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলে গিয়ে পৌছায় সে এবং শুরু হয় আওলাদ মিয়ার গল্প শোনার খেলা। আওলাদ মিয়া গল্পপ্রিয় মানুষ যে বছরের বিশেষ একদিন সমগ্র রাত জেগে গল্প শোনে এবং নিজে একটা গল্প শোনায়, সময়কাল ফজরের আজানের আগ অব্দি। কনসেপ্টটা কিন্তু দারুণ। এবং প্রথম গল্পটা শোনায় নুরুন নাহার, এবং সত্যি বলতে সমগ্র বইয়ের মাঝে এই একটা গল্পই আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। একটা বিভৎসতা, একটা অতিপ্রাকৃত/অদ্ভুত টুইস্ট সবকিছুই ছিল। একদম মন মতন। প্রথম গল্পটা পড়ে, নড়েচড়ে বসে দ্বিতীয় গল্পটা পড়া শুরু করি কিন্তু পরবর্তী গল্প গুলা পড়তে গিয়ে, সত্��ি বলতে খুব খাপছাড়া লেগেছে। নো অফেন্স বাট আমার ক্ষেএ বিশেষ কয়েকটা গল্প পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে কোন অল্পবয়সী কেউ মন মতন গল্প ফেঁদেছে, যেখানে গল্পের কোন মাথা মুন্ডু নাই শুধু যেমন খুশি তেমন লিখো প্রতিযোগিতায় শুধু লিখে গেছে। জ্বোরজবরদস্তি করে থ্রিল ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে মনে হচ্ছিল। কোন গল্পই অনুভব করতে পারছিলাম না সেভাবে, গল্প কিভাবে এগোচ্ছে, গল্পের চরিত্রের পরিণতি কোন কিছুই আর সেই প্রথম গল্পটার মতন লাগছিল না। কিন্তু লেখক যেই প্লট নিয়ে লেখা শুরু করেছিলেন, অজানা একটা স্থানে, মধ্যরাএে, অপরিচিত মানুষের মাঝে, রহস্যময় একজন মানুষ বসে আছে, তার একটাই আবদার, তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিনিময়ে তাদের গল্প শোনাইতে হবে। জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত গল্পটা। সবাই একে একে বলে যাচ্ছে জীবনে ঘটা এমন সব গল্প যার পিছের কারণ বা রহস্য তারা নিজেরাও আজ অব্দি অনুধাবন করতে পারে নাই! কি দারুণ হইত না ব্যাপারটা? এখানে আওলাদ মিয়াকে যদি বয়স্ক একজন এবং অজ্ঞ হিসাবে পোট্রে করানো হত তবে আরো দারুণ হতো। এবং তাকে একজন রহস্য মানব হিসাবে সম্পূর্ণ কাহিনি জুড়ে রাখলে তার ক্যারেক্টার, একটা ভয় ভয় কিংবা থ্রিল ক্রিয়েট করতে পারত পরিবেশে। কিন্তু সে ৪০-৪৫ বছর বয়সী নিতান্তই মানুষ হিসাবে ছিলেন সমগ্র বই জুড়ে।
আমার অরিন্দমের কাহিনিটা পড়ার সময় সত্যি বলতে হাসি পাচ্ছিল, কোমায় বসে একজন, হয় স্বপ্নে যোগাযোগ করতে পারে বা সেটায়ো একটা সেন্স হয়, মানুষের আত্না কানেক্ট করতে চেষ্টা করছে অপরএকজনের সাথে কিন্তু তাই বলে সজাগ মানুষের সাথে একজন কোমায় থাকা মেয়ে ফেসবুকে মেসেজে তার সাথে ঘটা ঘটনা বর্ণনা করছে! সিরিয়াসলি 😩
বইটা যতটা আগ্রহ সহকারে হাতে নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম তার থেকে বেশি হতাশ হয়ে শেষ করে রাখলাম। অতি আগ্রহ নিয়ে একসাথে দুইটা পার্ট ই কিনেছিলাম। এখন মনে মনে ভাবছি আবার আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলটা পড়ব কিনা। লেখকের লেখা প্রথম বই ছিল এটা। তার কাঁচা হাতের লেখা হয়ত ভবিষ্যতের বই গুলায় ভাল হতে পারে। শুধুমাত্র এই আগ্রহ নিয়েই পরবর্তী বইটা পড়ব আমি।
লেখকের প্রতি আমার শুভকামনা থাকবে। আমি একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত সেয়ার করলাম।
This entire review has been hidden because of spoilers.