সাম্ভালা একটি রহস্য--এর খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। সত্যি কি এর অস্তিত্ব আছে? কেউ কি এর খোঁজ পেয়েছে শেষ পর্যন্ত?
ছোট্ট একটি গ্রামে কাহিনীর সুত্রপাত। ইতিহাস এবং বর্তমান হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে সহস্রাব্দ প্রাচীন এক রহস্যময় পরিব্রাজকের সঙ্গি হয়ে। ইউরোপ, মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট। অবশেষে রহস্যময় অভিযাত্রীর সাথে যোগ হয় বর্তমানকালের এক যুবকের ছুটে চলা, যার পেছনে ধাওয়া করছে তার বন্ধুর হত্যাকারী শয়তান-উপাসকের দল। প্রাচীন সেই পথিক কি দেখা পেয়েছে সাম্ভালা'র? জানতে হলে পড়ুন শরীফুল হাসানের এক অনবদ্য থ্রিলার উপন্যাস "সাম্ভালা"
Shariful Hasan hails from Mymensingh, Bangladesh. He has spent his childhood by the banks of Brahmaputra river. He completed his Masters in Sociology from University of Dhaka and is currently working in a renowned private organization.
Shariful's first novel was published on 2012 titled Sambhala. With two other books, this captivating fantasy trilogy has received widespread acclimation both within and beyond the borders of Bangladesh. The Sambhala Trilogy was translated in English and published from India.
Although his inception consisted of fantasy and thriller, he has later worked on a variety of other genres. These works have been received fondly by the Bangladeshi reader community. Lot of his works have also been published from different publications in West Bengal.
Award- Kali O Kalam Puroshkar 2016 for 'অদ্ভুতুড়ে বইঘর'
সময়টা ২০১২ সাল। তখন আমরা সবেমাত্র কৈশোর পেরোচ্ছি। সত্যি বলতে ঐ সময়েও আমরা জাফর, সত্যজিৎ, হুমায়ুন, শীর্ষেন্দু, সুনীল আর অল্প কিছু ক্লাসিক লেখকদের লেখায় পড়তাম। বাতিঘরের সাথে ঐসময়ে আমাদের পরিচয় একদম ছিল না। ঐ সময়ের লেখকদের বই পড়তে ঠিক আগ্রহও পেতাম না। তারপর ধীরে ধীরে নাজিম উদ্দীন ভাইয়ের কিছু লেখা পড়ার মাধ্যমেই এ জগতে প্রবেশ। এখন মোটামুটি নতুন বছরের প্রায় অধিকাংশ বই গুলো পড়া হলেও পূর্বের সেই সোনালী দিনের অনেক বই ই অপঠিত আছে। এই বইটি সেই কাতারের।
ভেবে অবাক হই, ঐ সময়ে আমরা এরকম দুর্দান্ত বইগুলো মিস করে গেছি। আমি নিশ্চিত ঐ সময়ে পড়লে হয়তো এই বইটি আমার ধ্যান জ্ঞান হয়ে যেত। এখনো যে কম উপভোগ করেছি সেটা বলব না। দ্বিতীয় যাত্রাতে খানিকটা স্লো আর বোরিং হলেও শেষমেশ পুষিয়ে দিয়েছেন লেখক ষোলোআনা।
শরিফুলে মুগ্ধ আমি প্রতি বছর হই। 'বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ' তো চির প্রিয়। এবছর 'এক নক্ষত্রের নিচে' পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি। ধন্যবাদ লেখককে। আমাদেরকে প্রতি বছর অসম্ভব সুন্দর কিছু লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
my review বইয়ের নাম: সাম্ভালা: এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা। (টৃলজি) লেখক:শরীফুল হাসান। জনরা : ফ্যান্টাসি ফিকশন। প্রকাশনা :বাতিঘর প্রকাশনী। প্রকাশ কাল : অখন্ড প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি:২০১৮। মূল্য :৭২০ টাকা গায়ের দাম।
ভূমিকা: আপনি কি কালো জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক এ বিশ্বাস করেন, আপনি কি অমরত্ব এ বিশ্বাস করেন? করেন না! কিন্তু ফ্যান্টাসি ফিকশন এ ত সবই সম্ভব। সাম্ভাল এমনই একটি ফ্যান্টাসি ফিকশন। অমরত্ব কালো জাদুর গল্পনিয়ে সাম্ভালা। সাম্ভালা একটি স্থান যেখানে আছে পৃথিবীর সবচে শান্তি, আছে সম্রাট অশোক এর সময়ে হারিয়ে যাওয়া ন জন।সাম্ভালা একটি মিথ। যা কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ করেনা। যাই হোক এই সাম্ভালা হন্য হয়ে খুজছে একদল লোক। হাজারো রহস্য ইতিহাস এর মাঝে লুকিয়ে আছে এই সাম্ভালা। প্রিয় পাঠক আপনাকে সাম্ভালার তিনটি পর্বে স্বাগতম।
কাহানি সংক্ষেপ: প্রথম পর্ব: গল্পটা শুরু কোন এক অজপাড়া গ্রামে, আব্দুর মজিদ ব্যাপারি এক রহস্য মানব। তার নাতি রাশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পরালেখা করে এবং ঢাকায় থাকে বন্ধু শামীম এর সাথে। লিলি তার গার্লফ্রেন্ড। শামীম ছেলেটা একদম চুপচাপ। পড়ালেখা আর টিউশন বাদে আর কিছুই নেই তার জীবনে। প্রায়শ শামীম নীলক্ষেত থেকে বই কিনে পড়ে একবার তার হাতে ব্ল্যাক ম্যাজিক এর একটা বই হাতে এসে লাগে, তা ঐটা পরে কৌতুহলি আরেটা বই সার্চ করে তারপর আবার যখন দোকানে যায় দোকানি তাকে একটা চিরিকুট দেয় সেখানে একটা ইমেল এড্রেস থাকে এবং শামীম তার সাথে যোগাযোগ করে। লোকটির নাম আকবর আলী মৃধা, তিনি শয়তান এর পুজারী তথা মহান লুসিফার এর উপাসক। শামীমকেও তার দলে নিয়ে নেয়। শামীম আকবর আলী মৃধার বাসা থেকে একটি প্রাচীন বই উদ্ধার করে। যা তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। শামীম এই বইটি নিয়ে চলে আসলে আকবর আলী মৃধা তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় বুড়িগঙ্গায়। শামীম মৃত্যুর আগে একটি ট্রাভেল ব্যাগ এবং একটি চিটি দিয়ে যায় রাশেদ এর হাতে এবং চিঠিতে রাশেদ কে বলে ড.আরেফিন এর সাথে যোগাযোগ করতে।ড.আরেফিন, প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যাপক ড.কারসন তিনি ঢাকায় আসলে তাকে বাংলাদেশ এর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখান। শামীম জানতো যে ড.কারসন এই বই এর ভাষার মর্ম উদ্ধার করতে পারবে। এদিকে রাশেদ এর পিছে লেগে গেছে আকবর আলী মৃধার দল। ড.আরেফিন আর ড.কারসন আছে প্রত্নতাত্ত্বিক খোজে। হঠাতই অজানা বিপদ এসে পরলো সবার ঘারে।ঐ দিকে আব্দুল মজিদ ব্যাপারি এক রহস্য মানব। কালের সাক্ষী হয়ে আজো বেচে আছেন সেই যীশু খ্রিস্ট এর আমল থেকে।তিনি ইতিহাস এর অনেক অধ্যায় এর সাথে জরিয়েছেন সেই মিশরীয় সভ্যতা, গ্রীক সভ্যাতা আরো হাজারো ইতিহাস তিনি নিজের চোখে দেখে আজ আব্দুল ব্যাপারি নামে রাশেদ এর দাদা।এই রহস্য মানব অমর। রাশেদ এর পিছনে লেগে থাকা আকবল আলী মৃধার যেভাবে হোক চাই বইটা। কি আছে এই বই টাতে? কেন আকবর আলীর চাই এই বই।রাশেদ কি পেরেছিল আকবর আলীর হাত থেকে নিজেকে বাচাতে, আর ড.আরেফিন এবং কারসন কি পেরেছে বইটা ভাষা উদ্ধার করতে??? জানতে হলে আসতে হবে সাম্ভালা এর প্রথম পর্ব এ।
দ্বিতীয় পর্ব: এবার ড.কারসন বাংলাদেশ থেকে দিল্লী চলে আসেন এবং কিছুদিন পর দিল্লী থেকে তিনি ড.আরেফিন এর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি ড.আরেফিন, প্রফেসর সুব্রমানিয়াম, সন্দীপ চক্রবতীকে নিয়ে দিল্লী হয়ে নেপাল এর পথ দিয়ে তিব্বত যাবেন সাম্ভালা এর খোঁজে। যেখানে আছে শান্তি অমরত্ব আর সম্রাট অশোক এর সময় থেকে হারিয়ে যাওয়া ন জন মানুষ।তাই ড.কারসন তাদের দল নিয়ে সাম্ভালা খোঁজে বের হয়ে পরেন। ঐ দিকে অমর আব্দুল মজিদ ব্যাপারি ভারতের আসামে এক অঞ্চল এ আশ্রয় নেয় এক পরিবার এর সাথে সেখানে তিনি পান নতুন পরিচয় লাখনিয়া সিং। বুড়ো আব্দুল মজিদ ব্যাপারি এখন যুবক লাখনিয়া সিং। তার হাতে সাম্ভালার আসল মেপ তিনিও বের হয়ে পরেন সাম্ভালার খোঁজে। রাশেদ আর রাজু (তার আরেক বন্ধু) বন্দরবন ঘুরে গিয়ে পরে যায় আরেক বিপদ এ। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে রাশেদ জরিয়ে পরে পুর্তগীজ তিবাওয়ের লুকানো গুপ্তধন উদ্ধার এ। তার সাথে আছে লরেন্স ডি ক্রুজ। আর গল্পের খলনায়ক সঞ্জয় সিং। ঐদিকে অমরত্বের আরেক দাবিদার মিচনার হাটছে যুগ যুগ ধরে। সে খুজছে এমন একজনকে যার হাতে তার মৃত্যু হবে। সে লাখনিয়া সিংকে খুজছে। আর তাদের পিছনে লেগেছে আরেক আন্টিক ব্যাবসাহী বিনোদ চোপড়া। সবকিছু মিলে একাকার সাম্ভালার দ্বিতীয় পর্ব।
তৃতীয় পর্ব: দ্বিতীয় পর্বের অভিযান এর পর ঢাকায় যখন বিশ্রামরত রাশেদ আর রাজু।হঠাত তার একটা ইমেল আসে। ইমেল করে মিসেস আফরোজা আরেফিন,ড.আরেফিন এর স্ত্রী। তিনি জানায় ড. আরেফিন এর কোন যোগাযোগ নেই তাই তিনি রাশেদ কে আরেফিন এর খোঁজ নেয়ার জন্য নেপাল এ পাঠান। এ দিকে নেপাল এ ড.কারসন এর দল থেকে ড.আরেফিনকে অপহরন করা হয়। আর বয়সের ভারেক্রান্ত প্রফেসর সুব্রামানিয়াম তিনি তার মেয়ে ড.লতিকাকে তার বদলে সাম্ভালা খোজের অভিযান এ পাঠায়, সাথে আছে সন্দীপ আর সুরেশ ঝুনঝুনিওয়ালা। এদিকে সাম্ভালার আসল মেপ হাতে নিয়ে লাখনিয়া সিং ও তিব্বত এর পথে, তার সঙ্গী সন্নাসী যগেস্বর আর বিনোদ চোপরা। থেমে নেই যুগ যুগ ধরে হেটেঁ আসা মিচনারও। অন্য দিকে ঠিক সিনেমাটিক কায়েদায় জেল থেকে বের হয়ে আসলো এক খলনায়ক এসে খুজছে রাশেদ কে। রাশেদ এর সাথে যে তার পুরানো হিসাবনিকাস বাকি।মহান লুসিফার এর চাই রাশেদ এর রক্ত তাই তিনি খুজছেন রাশেদকে। তাহলে এবার ফাইনাল রহস্য এর পালা। সবাই হন্য হয়ে খুজছে সাম্ভালাকে। তারা কি সবাই পাবে সাম্ভালা। কত যুদ্ধ কত রক্তপাত হবে এই সাম্ভালার জন্য। সামনে আসবে মানুষের আসল রুপ। তারপরওও কি তারা পাবে সাম্ভালার সন্ধান?? জানতে হলে ডুব দিতে হবে সাম্ভালার তৃতীয় এবং শেষ যাত্রায়।
ভালো লাগার কারন: উফ সাম্ভালা। সাম্ভালা। নি��সন্দেহ এ বলা যায় লেখক দুর্দান্ত একটি প্লট এনেছে। এত্তো সুন্দর ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখক সাজিয়েচে তা এককথায় অসাধারন। সাম্ভালার প্রথম পর্ব এত্তোটা মারাত্মক লেগেছে উফ। দ্বিতীয় পর্ব একটু ঝুলে গেলেও তৃতীয় পর্বে এসে এত্তো এত্তো থৃলিং রহস্য এ্যাকশন। যে কি বলবো। এত্তোটা নেশা ধরেছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। বাংলা ভাষায় বাংলাদেশি কোন লেখক এর হাতে এমন একটা বই সত্যি অবাক করার মতো। বাংলা ভাষায় এই ধরনের মৌলিক ফ্যান্টাসি আমি আগে কখনো পরিনি। সো আমার কাছে সাম্ভালা টৃলজি এত্তো ভালো লেগেছে যা বলার ভাষা নাই। ধন্যবাদ শরীফুল হাসান স্যারকে এমন একটা বই পাঠকের হাতে দেয়ার জন্য।
একটু ইয়ে লেগেছে যেখানে: সাম্ভালা টৃলজিতে অনেক অনেক ইতিহাস রয়েছে। প্রথমে ইয়ে লেগেছে যে কিছু কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র এর নাম সামান্য ভুল আছে। দ্বিতীয়ত্ব বই এর মাঝে অনেক বানান ভুল আছে।তৃতীয়ত্ব আমার মনে হয়েছে গল্পটা রাবার এর মতো টেনে বড় করা হয়েছে এত্তো বড় না করলেও হতো।চতুর্থত ২য় পর্বটা নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ।
দুটি কথা: বইটি অবশ্যই সিরিয়াল ওয়াইজ পরতে হবে তা নাহলে কাহিনীর কিছুই পাঠক ধরতে পারবেনা কেননা একটার সাথে আরেকটা অনেক মিল আছে।
উপসংহাস : ঘাতপ্রতিঘাত থাকলেও একটি এমন একটি বই সত্যিকার অর্থেই আমাকে অবাক করেছে। বই এর কাহিনী নিঃসন্দেহ এত্তো ভালো লেগেছে। লেখক অনেক পড়াশুনা করে বইটি সাজিয়েছে।তাই বলা যায় নিছক গল্প হিসাবে তো বটেই সাথে জানার দুয়ারও খুলে দিবে সাম্ভালা। প্রিয় পাঠক যদি হাতে সময় থাকে তাহলে সাম্ভালা নিয়ে বসে যান। সময়টা মোটেও খারাপ কাটবে না।
বইটা যখন প্রথম প্রকাশ হয় সেই সময় হিসেবে আমাদের দেশের জন্য বইটা অসাধারণ। কারণ এমন কাজ তখনো হতো না আমাদের দেশে। সাম্ভালা গল্পটা তার পাঠককে হাত ধরে নিয়ে যাবে ব্যাখ্যাহীন এক যাত্রায় তবে উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই দীর্ঘ যাত্রায় অনেক চরিত্রের সাথে পরিচয় ঘটবে, অনেক ঘটনার সৃষ্টি হবে, অনেক ঘটনার অবসান হব । সেই সাথে পরিচয় হব নতুন নতুন রহস্যের সাথে। এটাই হচ্ছে বইটার মজার দিক। তবে এই যাত্রাটা যেনো একটু বেশি দীর্ষ হয়ে গেছে। প্রথম বইটা পড়ে বেশ মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খন্ড পড়তে গিয়ে বিরক্তি ধরে গেছে।
যাইহোক সব মিলিয়ে মোটামুটি সময় কাটানোর জন্য ঠিকাছে।
প্রথম খণ্ড পড়ে যতখানি ভালো লেগেছিলো, পুরোটাই উবে গেছে পরের দুই খণ্ড পড়ে। কেন অমুক চরিত্র তমুক সিদ্ধান্ত নিলো কিছুই বুঝিনি। খুব সহজ উদাহরণ হতে পারে ডক্টর কারসনের কাহিনী। কেন এই ভদ্রলোক অচেনা মানুষদের নিয়ে ক্রু বানালেন সাম্ভালা অভিযানের জন্য, এতো জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে শত্রু বানালেন, যখন তার কাছে সেই প্রথম থেকেই সাম্ভালার অবস্থান জানা ছিলো, একেবারেই বোধগম্য না। চরিত্রগুলোর চিন্তাভাবনা, মানসিকতা প্রচণ্ড স্ববিরোধী। মোটামুটি বিরক্তির মধ্য দিয়ে কাহিনী শেষ করলাম।
This entire review has been hidden because of spoilers.
এই বই কে আমি কোন ক্যাটাগরিতে ফেলবো। মিথিক্যাল, ফ্যান্টাসি, এডভেঞ্চার। চমৎকার একটি বই বাংলা থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য। শরীফুল হাসান ভাইয়ের অন্য সব বই পড়া হলেও সাম্ভালা জমিয়ে রেখেছিলাম রসিয়ে রসিয়ে পড়ার জন্য। সাম্ভালার সাথে এই দশটা দিন চমৎকার সময় কাটলো তবে শরীফুল ভাই আবার কবে এ ধরনের লেখা লিখবেন কোন গ্যারান্টি নাই। এখন ডুবে আছেন ক্রাইম ফিকসনে। বাতিঘরের আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এ রকম লেখা আরও চাই।
সাম্ভালাঃ এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা শরীফুল হাসান গুডরিডস র্যাটিংঃ ৪.৫/৫ ব্যক্তিগত র্যাটিংঃ ৩.৮/৫
শরীফুল হাসানের লিখা আগে পড়া হয়নি।ফ্যান্টাসি জিনিসটা আমাকে বরাবরই টানে। তাই সাম্ভালাও বেশ জোরেশোরেই দাবী জানিয়েছিলো পড়ার জন্য। সাম্ভালা! নামটাতেই কেমন থ্রিল আর ফ্যান্টাসির ভাব। তারপর জানলাম যে এটা আসলে বিশাল কলেবরের এক ট্রিলজি। যত বড়, তত ডিটেইলস, ততই রোমাঞ্চকর। পড়া শুরু করেই ভালো লেগে গেলো শরীফুল হাসানের লিখার স্টাইলে। সাবলীল, স্টাইলিশ লিখা। এমনিতেই পরের পৃষ্ঠায় টেনে নিবে। কিছুক্ষণ পড়ার পরে অবশ্য খটকা লাগার শুরু আমার। সে ব্যাপারে পরে আসছি। সাম্ভালা গল্পটা গড়ে উঠেছে সাম্ভালা নামক এক জায়গা নিয়ে যে মীথ আছে তাকে ঘিরে। সাম্ভালা এমন এক জায়গা যেখানে শান্তি ছাড়া আর কিছু নেই।(গভীরভাবে চিন্তা করলে অনেক বোরিং বলা যায়😬) যেখানে হানাহানি, অশান্তি, জরার ঠাঁই নেই। স্বভাবতই এই দারূন প্যাকেজ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই৷ কিন্তু সমস্যা হলো এই জায়গা কি সত্যিই আছে? নাকি অন্য হাজার হাজার মীথের মতো এটাও শুধুই একটা মীথ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন আমাদের প্রধান চরিত্র পৃথিবীর একজন প্রাচীন পরিব্রাজক। হাজার বছর ধরে যিনি বেঁচে আছেন এবং দর্শক হয়ে আছেন পৃথিবীর পরিবর্তনের, কষ্টের, সুখের ইতিহাস সাথী করে। এই জায়গায় এসে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। একে ফ্যান্টাসি, সাথে ঐতিহাসিক রেফারেন্স। এই অভিযানে শরীক না হতে পারলে আফসোস থাকবে। গল্পের শুরু এক অজপাড়াগাঁয়ে। বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ, তার ছেলে আজিজ ব্যাপারি এবং নাতি রাশেদের কাহিনী দিয়ে। রাশেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঘরকুনো, বইপড়ুয়া ছাত্র। তার সহপাঠী ও বন্ধু শামীম একদিন হাজির হয় রাশেদের রুমে। তার অস্থিরতা একটু সন্দেহ জাগায় রাশেদের মনে। পরদিন শামীম খুন হয়ে যায় অজ্ঞাত কারও কাছে। সন্দেহভাজন হিসেবে ফেসে যায় রাশেদ। গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে শামীমের খুনী রাশেদকেও খুঁজছে। কারণ, একটা মূল্যবান ব্যাগ রাশেদের রুমে রেখে গিয়েছিলো শামীম। শুরু হয় রাশেদের পালিয়ে থাকার খেলা। তার সাথেই উন্মোচন করার দায়িত্ব সেই ব্যাগের মূল্য কেন এতো বেশি! বেশ টানটান উত্তেজনার ভেতর কখন প্রথম খন্ড শেষ হয়ে যাবে বোঝা যাবেনা। প্রথম খন্ড জন্য পাঁচের মধ্যে চার পাবে। বাকি একও দিয়ে দিতাম কিন্তু পুরো বইয়ে মূল প্লট সাম্ভালাকে অবহেলিত লেগেছে। ইতিহাসের যে ঘটনাগুলো বলা হয়েছে পরিব্রাজককে নিয়ে সেগুলো ঠিক থাকলেও মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়েছে পরিব্রাজককে নায়ক বানাতে গিয়ে একটু বেশি বলা হয়ে গেছে। ইতিহাসের সাথে যোগাযোগটা যেজন্য একটু দুর্বল হয়ে গেছে। আর আব্দুল মজিদের চরিত্রটাকে ধোয়াশাপূর্ণ করতে গিয়ে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। স্পয়লার হতে পারে তাই পরে বলছি এটাও। প্রথম খন্ড এতো সুন্দর রোমাঞ্চ উপহার দিলেও দ্বিতীয় খন্ডে গিয়ে বিপদে পরে গেলাম৷ পরিব্রাজকের বিপরীত শক্তি দাঁড় করাতে এই খন্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি পেলেও পুরো বইয়ে একটা খুঁতের সৃষ্টি হয়। লেখক কাহিনীটাকে প্রথম ও তৃতীয় খন্ড���র সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করলেও সেটা হয়ে উঠেনি ভালোভাবে। অনেক অনেক দুর্বল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে শুধু যার দরকার ছিলো বলে মনে হয়না। এই দ্বিতীয় খন্ডের কারণে প্রথম খন্ডের উত্তেজনায় ব্যাঘাত ঘটে যা প্রভাব ফেলে তৃতীয় খন্ডে। প্রথম যাত্রায় মনে হয়েছিলো আমিই যাত্রা করছি। দ্বিতীয় খন্ডকে শুধু লেখকের যাত্রা মনে হয়। তাই তৃতীয় খন্ডে আমাকে আবার নতুন করে যাত্রায় অংশ নিতে হয়। যা এ���টু কষ্টসাধ্য। কিন্তু লেখকের লিখার গুণে একটু চেষ্টাতেই আবার যোগ দেওয়া যায়। তৃতীয় খন্ডও অনেক থ্রিল, ফ্যান্টাসির কারখানা। কিন্তু মাঝেমধ্যে একটু বেশি বেশি মনে হওয়ায় পূর্ণ র্যাটিং দেওয়া যাচ্ছেনা। আর পুরো গল্পে মনে হয়েছে রোমান্স জগতটায় লেখকের অনেক ঘাটতি। রোমান্টিকতাটা অনেকটা জোর করেই ঢুকানো হয়েছে গল্পে। পুরো গল্পের কাহিনী এখানে ওখানে একটু আধটু বাধা পড়ায় পুরো গল্পকে একটা গল্পে গাথতে সমস্যা হয়েছে। নইলে বইটা মাস্ট রীড জনরায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতো। 🚫স্পয়লার অ্যালার্ট কিছু জায়গা আমার কাছে অসংগতিপূর্ণ মনে হয়েছে। সেগুলো উত্তর আর পাইনি। গল্পের শুরুতেই আব্দুল মজিদ তার ছেলেকে বলে সেরাতে বাড়ি ফেরার সময় সে যেন কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসে এবং সত্যি সত্যিই সেরাতে আসার সময় আজিজ ব্যাপারির উপর আক্রমণ হয়। তখন মজিদ ব্যাপারি যে ভবিষ্যতের কথা বলে দিতে পারে তা বোঝানো হয়। অথচ পুরো বইয়ে এই গুণ কাজে লাগানো হয়েছে বলে মনে পড়েনা। আর তার একমাত্র নাতি রাশেদ যখন ঘোর বিপদে তখনো লেখকের লিখায় একবারও মনে হয়নি মজিদ এই নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তিত। দুয়েকবার নাতির প্রতি টানের কথা বলা হলেও পাঠক হিসাবে আমার কাছে কোনো ইমোশনাল ফীল তৈরি করতে পারেনি। ড. কারসনকে নিয়ে লেখকের মাঝে একটু দোটানা আছে মনে হচ্ছিলো। ওকে ভালো দেখাবেন নাকি খারাপ তাই নিয়ে ঝামেলা হতে হতে আমার কাছে বিরক্তিকর চরিত্র হয়ে উঠছিলো। রাজুকে বন্ধু হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু পুরো কাহিনীতে ওকে ভার্সিটির ছোট ভাই মনে হয়েছে। তার পার্সোনালিটি কাহিনী অনুযায়ী সুইং করছিলো। কখনো বোকা, কখনো সাহসী, কখনো ভীতু, কখনো বুদ্ধিমান। যার কোনো কারণ দেখানো হয়নি। মিচনার যে সাম্ভালার বিরুদ্ধ শক্তি দ্বারা তৈরি ভিলেন, যার চরিত্র বিল্ডআপ করতে প্রায় দুই খন্ড বই ব্যবহার করা হয়েছে তার অমর হওয়ার কাহিনী দুই লাইনে শেষ! এটা কেমন কথা। কে তাকে তৈরি করলো, তাদের শক্তি কতটুকু, কেন তাকে তাদের দরকার তা কিছুই বলা হলোনা। শুরুতে হুট করে পানি খাইয়ে তৈরি করে ফেললো, শেষে এক লাইনে বলে দেওয়া হলো সে সাম্ভালার বিরুদ্ধ শক্তির তৈরি। শেষ। ড. আরেফিন দল থেকে কিডন্যাপ হয়ে যায় যখন তখন কারও মাথায় কোনো দুশ্চিন্তার কিছু দেখলাম না। মনে হলো এটাই স্বাভাবিক। মানুষ হইছো, সাম্ভালার খোঁজে আসছো কিডন্যাপ তো হবাই। এই ধারণা শুধু কারসনের হলে মানা যেতো। কারণ তার চিন্তা অন্য। কিন্তু সন্দীপ, লতিকা, সুরেশ তিনজনের কেউই এই নিয়ে একটা কথা বললোনা। মিনোস/মজিদ/লখানিয়া এর অতীতের সেই ইতিহাসের কথা বলতে গেলে বলা লাগে ওর সব কাজেই মনে হচ্ছিলো সে ভবিষ্যৎ জানে তাই একেবারে ওইসব জায়গায় আবির্ভূত হচ্ছিলো যেটা পরে ইতিহাসের অংশ হবে এবং ঠিক ঠিক সিদ্ধান্তও নিচ্ছিলো। ভুল হয়নি একবারও। সবচেয়ে ক্রিঞ্জি লেগেছে আমেরিকা তৈরির সময় সবাইকে মোটিভেশনাল স্পীচ দিয়ে স্বাধীনতায় উৎসাহিত করার কাজটা।
তবে দিনশেষে মৌলিক ফ্যান্টাসি থ্রিলার হিসেবে বেনিফিট অব ডাউট দিয়ে বলতে হয় শরীফুল হাসান বেশ ভালো বইই লিখেছেন। লিখার শুরুতে ৩.৫ দিলেও এখন মনে হচ্ছে ৩.৭/৮ দেওয়াই যায়।
মানুষ মরণশীল। এটি একটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু কজনই বা মানতে চায় এটা। সবাই আশা করে এক দীর্ঘ জীবনের। কিন্তু কেউই হয়ত পায়না আবার পেতেও পারে। লেখক শরিফুল হাসানের চালাও অমরত্বের উপর নির্মিত। ইতিহাস ও বর্তমান একই সাইকেলের দুই চাকা বানিয়ে কাহিনী কে এগিয়ে নিয়ে যান লেখক। সাম্ভালা হলো অমরদের জায়গা, চিরযৌবনের দেশ। যেখানে আছে অমরত্ব এবং এমন কিছু জ্ঞান যা সম্রাট অশোক লুকিয়ে রাখার ব্যাবস্থা করেছিলেন। এরকম একটা জায়গার সম্পর্কে ধারণা পেলে আমি, আপনি, আমরা সকলে সেদিকেই ছুটব। ঠিক তেমনি, সাম্ভালা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে বেশ কিছু লোক তাদের নিজের মতো সাম্ভালার উদ্দেশ্যে বের হয়.. যাদের মধ্যে মিনোস, মিচনার, ড. কারসনই অন্যতম।।।। তাদের একেকজনের যাত্রাশুরুর স্থান ভিন্ন হলেও গন্তব্য একই।।। তাদের মধ্যে কারা সাম্ভালার নিকটে পৌছুতে পেরেছিলো, সাম্ভালা কি তারা আসলেই খুজে পেয়েছিলো কিনা কিংবা পেলেও কারা কারা প্রবেশ করেছিলো এছাড়া লখানিয়া সিং,আব্দুল মজিদ ব্যাপারী, কাউন্টেস, মুগাওয়ার, মিনোস- এরা কারা এদের সম্পর্কে জানতে আপনাকে এই সাম্ভালা পড়তেই হবে.... প্রত্যেকটি ঘটনাই লোমহর্ষক। এই ট্রিলজিতে লেখক ভালোমতোই সকল কিছুর যোগসাজশ ঘটিয়েছেন। লুসিফারের সেবক আকবর আলী মৃধা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাশেদ ও শিক্ষক আরেফিন বা পর্তুগিজ ডাকাত বংশধর লরেন্স ডি ক্রুজ অথবা হিটলার অনুসারীর বংশধর আধুনিক থুল সোসাইটির প্রচারক ড. কারসনের চরিত্র যাত্রাকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়। বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল🙂🙂
লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর অনুপ্রেরণায় থাকা তাঁর পিতা মো. আব্দুর রশীদ, মাতা মিসেস সেলিনা রশীদ ও স্ত্রী নিপা হাসানকে।
আর দ্বিতীয় যাত্রায় প্রায় সবাইই রিডার্স ব্লকে পড়তে পারেন। আমার নিজেরই এক মাসের মতো সময় লেগেছে আশা করি কেও পড়া ছেড়ে দিবেন নাহ
সাম্ভালা পরে কিন্তু আমার মনে হয়েছে এখন অন্তত তিব্বত একবার যাওয়া দরকার। যদি আপনারও তাই মনে হয়ে থাকে চলুন একসাথে পরিকল্পনা করে বের হয়ে পরি🙂🙂
সাম্ভালা? কোনো জায়গা নাকি কোনো বস্তু? যেটা দিবে আমাদের অমরত্বের সন্ধান? কাহিনী শুরু হয় ছোট একটি গ্রামে। রাশেদ নামের এক যুবককে ঘিরেই মূল কাহিনী আগায়। ছোট গ্রাম ছাপিয়ে কাহিনী আগাতে থাকে মিশর, তিব্বত, ভারতবর্ষ, নেপাল এমনকি প্রাচীন অনেক রাজা রানীর রাজ্য পর্যন্ত। অমরত্বের সন্ধান পাওয়ার জন্য কিছু মানুষের ছুটে চলা আর না চাইলেও রাশেদের এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতার এক নিখুঁত বর্ণনা লেখক দিয়েছেন। বইটি পড়ে অনেক প্রাচীন ইতিহাস, অমরত্বের পেছনে মানুষের ছুটে চলা, ব্ল্যাক ম্যাজিক, অনেক প্রাচীন জায়গার বর্ণনা এসব সম্পর্কে মোটামুটি বিশদ ধারনা পাওয়া যাবে। অখন্ড এই ট্রিলজীর আকার বিশাল হলেও মোটেও বোরিংনেস আসবেনা। লেখক মোটামুটি মুগ্ধ করে রাখবে প্রতিটা মিনিট। . . বইয়ের বাইন্ডিং, পেজ কোয়ালিটি, প্রিন্ট, প্রচ্ছদ, হার্ডকভার সবই খুব উৎকৃষ্টমানের ছিলো। তবে প্রচুর বানান ভুল ও ছিল যেটা বাতিঘরের বইতে প্রায় সব সময় ই পাই। অজানা কারনে 'ষ্ট' এর জায়গায় প্রায় সব জায়গাতেই " ’ " এই চিহ্নটা এসে গেছে। যেটা বিরক্তিকর লেগেছে। লেখক খুব বেশি চরিত্র এনে ফেলেছে উপন্যাসে, যার ফলাফল শেষ অব্দি সব চরিত্রে সমান গুরুত্ব দিতে পারেনি। যেটা আদৌ সম্ভব ও নয়। . . সব মিলিয়ে গল্পের প্লট আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশী প্রফেসর ড. আরেফিন এর ক্যারেক্টার আমাকে সবথেকে বেশি মুগ্ধ করেছে। 'আশে পাশে এখন বুড়া বুড়ি দেখলেই আমার কেন জানি মনে হয় লখানিয়া সিং।'- এই লাইনটার মানে বুঝতে হলে আপনাকে পুরো উপন্যাস টা শেষ করতে হবে। . . এটা আমার লেখা প্রথম বুক রিভিউ। বই পোকা হিসেবে এতদিন শুধু আপনাদের রিভিউ ই পড়ে গেছি। হঠাত মনে হল যেকোনো বই পড়েই তার একটা রিভিউ দেওয়া উচিত। তাহলে পাঠকরা অন্তত জানতে পারবে বই সম্পর্কে। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম। . #হ্যাপী_রিডিং
বইয়ের নাম 'সাম্ভালা : এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা' হলেও পড়ার পর একে 'সাম্ভালা : এক বিরক্তিকর অভিযাত্রা' বললেও ভুল হবে না।
সাম্ভালা - এক রহস্যময় স্থান।যেখানে নেই কোন দুঃখ,জরা,ব্যাধি।আছে শুধু অনাবিল সুখ,সমৃদ্ধি আর অনন্ত জীবন।আর অনন্ত জীবনের লোভ কার না আছে?সেই অনন্ত জীবন লাভের উদ্দেশ্য সাম্ভালার খোঁজে বারবার নেমেছে মানুষ।আমাদের লেখকের গল্পে সাম্ভালার খোঁজে নেমেছেন এক বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক,এক প্রাচীন পথিক (পৃথিবীর সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যিনি প্রত্যক্ষ করেছেন)।তাদের ঠেকাতে আছে চীনের গোয়েন্দা সংস্থা,আছে তিব্বতের বৌদ্ধ লামাদের সংগঠন 'দি প্রটেক্টর অফ সাম্ভালা'।সাম্ভালা কি আসলেই আছে নাকি শুধুই একটা মিথ?এই প্রশ্নের উত্তরই লেখক দিয়েছেন ৭৫২ পৃষ্ঠা জুড়ে।
মোটামুটিভাবে এই ছিলো গল্পের সারাংশ।তো প্রথমে লেখককে ধন্যবাদ জানাই এই সুবিশাল প্রেক্ষাপটে এই বই লেখার জন্যে।ধন্যবাদ শরীফুল হাসান।
প্রথমেই বলে নিয়েছি বইটা পড়া 'বিরক্তিকর অভিযাত্রা'।তো,বইটার সমস্যা কোথায়?সমস্যা হলো লেখকের গল্প বলার ধরণে,ক্যারেক্টার বিল্ডআপে...।প্রতিটি চরিত্রের নিজস্বতা বলতে কিছুই লেখক তৈরি করতে পারেননি।একেকটা ক্যারেক্টারের মুড স্যুইং দেখলে আপনি অবাক হবেন।প্রতি চ্যাপ্টারে তাদের মুড,চিন্তা কোন কারণ ছাড়াই বদলে যায়।লেখকের লেখার ধরন চরম শিশুসুলভ।
আমাদের লেখকেরা পাঠকদের বোকা ভাবেন।যা ইচ্ছা মন চায় লিখে দিলেই হলো।দু'চারটা ড্যান ব্রাউন পড়েই বই লিখতে বসে যান তারা।আবার এই বইকেও অনেকে পাঁচ তারকা,চার তারকা রেটিং দেয়।এ থেকেই বুঝা যায় আমাদের বর্তমান পাঠককুলের অবস্থা কিরকম।দুঃখজনক।
অমরত্ব, জাদু, কালোজাদু বিশ্বাস না করলেও ঘটনাগুলো হাতে হাত ধরে চলেছিল 'সাম্ভালা' বইটিতে। সাম্ভালা কি? সেটার পেছনের কাহিনী জানার জন্যে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয় শেষ পর্বের। সংক্ষেপে বলতে গেলে, 'সাম্ভালা'র কথা ছড়িয়ে পড়েছে সম্রাট অশোকের সময় থেকে। সাম্ভালা এমন এক জায়গা যেটাকে স্বর্গর সাথে তুলনা করা যায়। নয়জন অমর পুরুষ থাকেন সেখানে, সম্রাট অশোক যাদের সেখানে পাঠান, যেন তারা প্রয়োজন হলে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে আসতে পারেন।
১ম পর্ব: আব্দুল মাজিদ এক শতাব্দী প্রাচীন বুড়ো, যে ছিল ইতিহাসের অনেক জায়গায়, নানা ঘটনায়। নানান কিছু আবিষ্কারের নেশা যার দুর্বার!
আব্দুল মাজিদের নাতি রাশেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার বন্ধু শামীম। অনেকটা অজান্তেই শামীম জড়িয়ে পরে এক অন্ধকার রাস্তায়। সেখানে তার হাতে হটাৎ করে চলে আসে এক পুরানো বই, যার পাতায় লুকিয়ে আছে প্রাচীন এক সূত্র - অমরত্বের সূত্র, যেটা সবাই জানতে চায়। এই বই উদ্ধার করার জন্যে পেছনে লাগে আকবর আলী মৃধা, যে একজন কালো যাদুকর। পুরাতত্ত্ববিদ ড. কারসন বিদেশ থেকে আসলে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারেন। তারপর তিনিও জড়িয়ে যান ড. আরেফিনের সাথে সেই বইয়ের পেছনে। এদিকে থেমে থাকেন না সেই প্রাচীন বুড়ো। মানবজাতিকে রক্ষায় এগিয়ে তাকে আসতেই হয়!
২য় পর্ব: এ পর্ব শুরু হয় আব্দুল মজদের নতুন পরিচয় আর মিচনারের কাহিনী দিয়ে। সেই সাথে চলে আসে সাম্ভালার খোঁজ। ড. কারসনের সাথে ড. আরেফিন ছাড়াও যোগ দেন ইন্ডিয়ার আরো দুইজন প্রত্নতাত্ত্বিক। তারা ছাড়াও আরো ভিন্ন দুইটি দল অন্য রাস্তায় খুঁজতে থাকে সাম্ভালাকে। সেই খোঁজের পদে পদে বাধা তো ছিলই। অন্যদিকে, রাশেদ আর রাজু ঘুরতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে। সেখান থেকে তারা জড়িয়ে পরে পর্তুগিজ জলদস্যুর গুপ্তধন খোঁজায়৷ এমনভাবে আটকে যায় তারা এ অভিযানে, ফিরে যেতে চাইলেও পারেনা।
(দ্বিতীয় পর্ব টেনে এত বড় করা হয়েছে যে দুইদিন পড়ার পর একমাস নিজেকে সময় দিতে হয়েছে সেই একঘেয়েমি লিখা আবার পড়া শুরু করার জন্যে। 😑)
৩য় পর্ব: 'সাম্ভালা - এক রোমাঞ্চকর যাত্রা' বইটির নামকরণের সার্থকতা পাওয়া যায় এই পর্বতেই। ড. কারসন, ড. আরেফিনরা বাধার মুখেই এগিয়ে যেতে থাকেন সাম্ভালায় খোঁজে।
এদিকে আকবর আলী মৃধা জেল থেকে ছাড়া পেয়েই রাশেদকে মেরে ফেলার জন্যে মারিয়া হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রাশেদ আর রাজু রওয়ানা হয় তিব্বতে ড. আরেফিনকে খোঁজে। পেছন পেছন আসতে থাকে আকবর আলী মৃধা আর তার দল।
মিচনার আগের চেয়ে আরো ভয়ংকর আর হিংস্র - এগিয়ে চলছে তার প্রতিদ্বন্ধীকে মারতে... জানা যায়, আব্দুল মজিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্যও!
চীনের সামরিক বাহিনীর প্রধান চ্যাং আর লামা জানতে চায় আসলেই কি সাম্ভালা আছে? সেজন্যে তারা ভয়ংকর হয়ে যেতেও পিছপা হয়না।
তারপর সব এসে মিলে এক জায়গায়। সেই দুর্ধর্ষ, রুদ্ধশ্বাসকর পরিস্থিতি। বেরিয়ে আসে সাম্ভালার কাহিনী, নানান জনের ভেতরের আসল পরিচয়।
সবগুলা ছেড়া ছেড়া ঘটনার একটা গ্রহণযোগ্য পরিনতি 'সাম্ভালা'র শেষ পর্যন্ত ছিল। তাই বইটির পেছনে সময় দেয়া সার্থক মনে হয়েছে।
অমরত্ব, মানুষের এক অন্যতম আকাঙ্ক্ষা। সত্যিই কি মানুষ পারবে মৃত্যুর মতো অনিবার্য সত্যকে ভুল প্রমাণিত করে অমর হতে? হলেও প্রকৃতি কি মেনে নেবে এই ব্যতিক্রম? কাউন্ট দ্য সেইন্ট জারমেইন, রেনেঁসা যুগের এক অন্যতম বিতর্কিত বিজ্ঞানী। ধারণা করা হয় তিনি আলকেমির এলিক্সির অফ লাইফ আর ফিলসফার স্টোনের মতো অসম্ভব বিদ্যাগুলো রপ্ত করতে পেরেছিলেন, তবে তা লুকিয়ে রেখেছেন। তার বয়স নাকি তিনশো-চারশো বছর। তবে সত্যিটা হলো তিনি এই পৃথিবীর বুকে সহস্রাধিক বছর ধরে বেঁচে আছেন। তার আসল নাম সেইন্ট জারমেইনও নয়। তিনি নানা নামে মানব সভ্যতার ইতিহাসে তার অস্তিত্বের সূক্ষ্ম ছাপ রেখে এই পৃথিবীতে চলছেন। তবে ফরাসি বিপ্লবের পর তিনি প্রবেশ করেন ভারতীয় উপমহাদেশে, সাম্ভালা নামের এক বিশেষ জায়গার খোঁজে। সত্যিই কি সাম্ভালার অস্তিত্ব আছে, হাজার বছরের এই পরিব্রাজক কেন তা খুঁজছে?
বর্তমান সময়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক রাশেদ পড়ে এক কঠিন বিপদে। তার কাছের বন্���ু শামিমকে এক ভয়ংকর শয়তানের উপাসক দল নৃসংশভাবে খুন করেছে। তবে মৃত্যুর আগে শামিম তার কাছে হস্তান্তর করে যায় এই সত্যিটা, আর একটা প্রাচীন বই যাতে সাংকেতিকভাবে লেখা আছে অমরত্বের চাবিকাঠি অমৃতপানের হদিশ। এই শয়তানের উপাসক দলের নেতা আকবর আলী মৃধা, যে কিনা পুরো পৃথিবীকে দখল করতে চাই। তার আর এই চক্রান্তের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সেই বই, যা রাশেদের হাতে। একদিকে বন্ধুর খুনের দ্বায়ে ফেঁসে যায় রাশেদ, অন্যদিকে তাকে মারার জন্য হন্যে হয়ে থাকে আকবর আলী মৃধা আর তার দলবল। রাশেদ কি পারবে এই বিপদ থেকে বাঁচতে, সেই প্রাচীন বইটার সমাধান করতে? বইটার উৎসই বা কি?
বিশ্ব নন্দিত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রফেসর নিকোলাস কারসন। বৃদ্ধ বয়সে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন তিনি। তার উদ্দেশ্য সেইন্ট জারমেইনের ট্রেইল ধরে সাম্ভালার সত্যিটা খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে কি তিনি সফল হবেন, কি তার এই কাজের সত্যিকারে��� উদ্দেশ্য? প্রাক্তন শিক্ষক, সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর আরেফিন জড়িয়ে পরে এসব ঘটনাগুলোর সাথে, পরে মারাত্মক বিপদে। কি হতে যাচ্ছে তার পরিণামে। ওদিকে, রাশেদের গ্রামে চলছে আরেক অদ্ভুত ঘটনা। হয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ নিখোঁজ তো কেউ হচ্ছে নৃসংশভাবে খুন। তবে সব ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে রাশেদের দাদা আব্দুল মজিদ ব্যাপারি। আজিজ ব্যাপারি বুঝতে পারেন না কি হচ্ছে তার বাবার সাথে। বৃদ্ধ মানুষটা কিভাবে এইসব ঘটনার সাথে জড়িত? আব্দুল মজিদ ব্যাপারি এমন অদ্ভুত আচরণই বা কেন করেন?
মিচনার, মধ্যযুগের এক সাধারণ যুবক, জাহাজের কেরানি। যার ইচ্ছা ছিল সারা পৃথিবী ঘোরার। তবে এক ভয়াবহ ঘটনার পর সে অমরত্ব পেয়ে বসে। কিন্তু সেটাই তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে সুঠাম দেহী, দেবতাদের মতো সুদর্শন এই যুবক সভ্যতা থেকে আলাদা হতে থাকে। সে হয়ে ওঠে এক পশু, রক্ত যার নেশা। তবে প্রকৃতি এতো ব্যতিক্রম সহ্য করবে না। সাম্ভালার হাজার বছরের পরিব্রাজক, অথবা সে, যেকোনো একজনকেই বেঁচে থাকতে হবে, অন্যকে মরতে হবে তার হাতেই। তাই সে বেরিয়ে পরে পৃথিবীর বুকে, উদ্দেশ্য অন্য অমরকে হত্যা করা। একাধিক গোষ্ঠী, অনেক মানুষ, তাদের নানা উদ্দেশ্য, তবে সবই জড়িয়ে আছে সাম্ভালা নামের সেই অজানা জগতের সাথে। সবশেষে কি হয়, তা জানতে পড়তে হবে বাংলা মৌলিক ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শরিফুল হাসানের 'সাম্ভালা' ট্রিলজি।
'সাম্ভালা', বাংলা মৌলিক ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার জনরায় এক নতুন মাইলফলক। আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে প্রকাশিত ভিন্নধর্মী প্লটের বইটা পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তাই সেটা পড়ার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল। এই ট্রিলজির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক অবশ্যই এর গল্প। বহু ইতিহাস, মিথ, কিংবদন্তিকে মিশিয়ে এতো বড় পরিসরের কাহিনী তৈরি করা অবশ্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং। আর সেই চ্যালেঞ্জের কাজটাই প্রথমবারের মতো করতে পেরেছেন লেখক।
প্লট বিল্ডআপ খুব ভালো ছিল। এতো বড় পরিসরের গল্পকে তিন পর্ব মিলে চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। সেইসাথে বিভিন্ন ইতিহাস আর মিথকে এক করার প্রক্রিয়াও দারুণ। গল্পের হিস্টোরিকাল অংশগুলো বেশ লেগেছে আমার কাছে। সেইসাথে সাম্ভালার হাজার বছরের পরিব্রাজক আর মিচনারের মতো সলিড ফ্যান্টাসি চরিত্রদের গঠনও ভালো হয়েছে। কিছু ভালো দৃশ্যপটের অ্যাকশন সিন ছিল। তবে দূর্বল গঠনের জন্য সেগুলো ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেছে।
যদিও ট্রিলজির প্রথম দুই বইয়ে লেখনীতে দূর্বলতা ছিল প্রচুর, যা সত্যি বলতে বইটার বেশিরভাগ অংশকেই দূর্বল আর বোরিং বানিয়ে দিয়েছিল। শরিফুল হাসানের লেখনীতে কিছুটা সাবলীলতা থাকলেও দূর্বল বর্ণনাভঙ্গির ফলে গল্পে সৃষ্টি হয় প্রচুর অসংগতি। সেইসাথে চরিত্রায়নেও ছিল দূর্বলতা। চরিত্রদের কাজকর্ম, উদ্দেশ্য কিছুই ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছিল না, তাদের কাজে যৌক্তিকতা ছিল না। সেই সাথে বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলোও হয়ে দাঁড়াচ্ছিল প্রচুর বিরক্তিকর।
আর গল্পের ইতিহাসের ঘটনার নানা দিককে বর্তমান সময়ে গোঁজামিল আর কাকতাল দিয়ে এক সুতোয় আনাটাও পছন্দ হয় নি। বর্ণনাভঙ্গির দূর্বলতার জন্য জিনিসটা চোখে লাগে আরও বেশী। আর সবচেয়ে বড় হতাশা ছিল দ্বিতীয় বইটা। গল্পের অল্প একটা অংশকে আস্ত উপন্যাস বানিয়েছেন লেখক। ফলে যা হওয়ার তা হয়েছে, কাহিনী হুদাই ত্যানা প্যাঁচায় লম্বা করেছেন, যেটা গল্পকে মন্থর গতির বানিয়েছে। সেইসাথে একটা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ঘটনা ঢোকানো হয়েছে তাতে। সবমিলিয়ে ট্রিলজির দ্বিতীয় বইটা সবচেয়ে খারাপ লেগেছে আমার। সেই বইটা আসলে পরবর্তী পর্বের জন্য একটা ভালো বিল্ডআপ ছিল শুধু।
তবে ট্রিলজির শেষ আর বেস্ট বইতে লেখক দূর্বলতাগুলো অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন। তাতে লেখনীও অনেক ইমপ্রুভড প্রথম দুই বই থেকে। ফলে গল্পটা সত্যিকার অর্থে পেজ টার্নার ছিল। সেটাতে তিব্বতের ভৌগোলিক বর্ণনাগুলো ছিল দূর্দান্ত। আর লেখক যেভাবে গল্পের সমস্ত দিককে শেষ বইয়ে সমাধান করেছেন, চরিত্র গঠন করেছেন তা যথেষ্ট ভালো ছিল। সব মিলিয়ে সাম্ভালার সমাপ্তিটা চমৎকার লেগেছে। ট্রিলজিটার শুরু আর মাঝখান দিকে অনেক কিছু হতাশ করলেও, শেষটা পড়ে ভালোই লাগল। সেইসাথে বাংলা মৌলিক থ্রিলারের একটা মাইলফলক হিসেবে এটাকে এক তারা বেশীই দিলাম।
📚 বইয়ের নাম : সাম্ভালা : এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা
📚 লেখক : শরিফুল হাসান
📚 বইয়ের ধরণ : হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার, মিথলজিক্যাল ফ্যান্টাসি
বইয়ের নাম সাম্ভালা হলেও প্রকৃত নাম হচ্ছে ❛শাম্ভালা❜ বা সাংগ্রিলা। বইটি পড়ার শুরুতে বা কেনার পূর্বে মাথায় আসতে পারে এই সাম্ভালা কী বা কেন এই নামকরণ? শাম্ভালা হচ্ছে পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় এক স্থান। অনেকের চোখে পৌরাণিক রহস্যে ঘেরা এক দেশ। পৌরাণিক বলার পেছনে কারণ রয়েছে, বইয়ের তথ্য অনুসারে তিব্বতের কৈলাস পর্বতের মানস সরোবর ও রাক্ষসতাল হ্রদের মাঝামাঝি এক জায়গায়তে এই শাম্ভালা রাজ্যের অবস্থান। শাম্ভালার বিশেষত্ব হচ্ছে বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসে এই জায়গার উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন কালচক্র তন্ত্র থেকে তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের জ্যাংজুং সংস্কৃতিতে এই রাজ্য বা শহরের নাম পাওয়া গিয়েছে।
শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্মীয় মানুষদের কাছে এই শাম্ভালা আটকে থাকেনি, হিন্দুদের কাছে আর্যদের পবিত্র রাজ্য এই শাম্ভালা। চীনাদের কাছে এই রাজ্য 'হেসি তিয়ান' নামে পরিচিত। পশ্চিমা জগত আবার একে 'হোসি ওয়াং মু' নামে চেনে। বিস্ময়কর এই স্থানটি নিয়ে প্রচুর মিথ প্রচলিত থাকলেও বিভিন্ন ধর্মের জাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করে পৃথিবীতে এই শাম্ভালার অস্তিত্ব রয়েছে। যে রাজ্যে সম্রাট অশোকের বিশেষ নয়জন ব্যক্তি শাম্ভালার গোপন জ্ঞান ও শিক্ষা খুবই গোপনীয়তার সাথে রক্ষা করে যাচ্ছে। এছাড়া বিষ্ণুপুরাণেও উল্লেখ রয়েছে, বিষ্ণুর অবতার কল্কির জন্মস্থান এই শাম্ভালায়।
শাম্ভালা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ইতিহাস টানা লাগবে তাই ইস্তফা দিয়ে দিচ্ছি। বইয়ের ধারাতে ফিরে আসি, কথা বলি সাম্ভালা ট্রিলজির প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু নিয়ে। এই সাম্ভালা রাজ্যে বা লুকায়িত শহরকে উদ্দেশ্য করে পুরো ট্রিলজির প্রেক্ষাপট দক্ষ হাতে তৈরি করেছেন লেখক শরীফুল হাসান। ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে ছোটো ছোটো মূল কারণগুলো নিয়ে গল্পের সাথে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল সবকিছু, বিশ্বাসযোগ্য (বইয়ের কাহিনি অনুযায়ী) লেগেছে অতিরঞ্জিত কোনো কিছু মনে হয়নি। এত বিশাল কলেবরে ��্রেক্ষাপট সামলাতে গিয়ে একেবারে যে উতরে গিয়েছে এই ভাবনা ভাবাও ভুল। তাল সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন, মাঝেমধ্যে চরিত্রের উদ্দেশ্য হারিয়েছেন। তবে সেগুলো মাথা না নিয়ে পরিপূর্ন রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গী হয়ে শেষ অব্দি যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
➲ আখ্যান—
সাম্ভালা একটি রহস্য-এর খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। সত্যি কি এর অস্তিত্ব আছে? কেউ কি এর খোঁজ পেয়েছে শেষ পর্যন্ত?
ছোট্ট একটি গ্রামে কাহিনির সূত্রপাত। ইতিহাস এবং বর্তমান হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে সহস্রাব্দ প্রাচীন এক রহস্যময় পরিব্রাজকের সঙ্গি হয়ে। ইউরোপ, মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট। অবশেষে রহস্যময় অভিযাত্রীর সাথে যোগ হয় বর্তমানকালের এক যুবকের ছুটে চলা, যার পেছনে ধাওয়া করছে তার বন্ধুর হত্যাকারী শয়তান-উপাসকের দল। প্রাচীন সেই পথিক কি দেখা পেয়েছে সাম্ভালা'র? জানতে হলে পড়ুন শরীফুল হাসানের এক অনবদ্য থ্রিলার উপন্যাস "সাম্ভালা"
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
একজন অ্যাডভেঞ্জার প্রেমী হিসেবে এই ট্রিলজি-কে দেশিয় প্রেক্ষাপটে সেরার কাতারে অবশ্যই রাখব৷ উক্ত ট্রিলজি নবাগত লেখকদের ফ্যান্টাসি থ্রিলার সাহিত্যকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ভবিষ্যতেও করবে। অনেক লেখক ইতোমধ্যে এই প্রেক্ষাপট ও প্লট বিল্ডাপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে একইসাথে ইতিহাসের মেলবন্ধনে সৃষ্ট অসাধারণ এই সাম্ভালা ট্রিলজি বিশ্ব দরবারে বেশ প্রসিদ্ধ স্থান দখল করে নিতে পারবে বলে বেশ আশাবাদী। এই ট্রিলজির ইংলিশ ভার্সন অলরেডি পাওয়া যাচ্ছে।
● প্রারম্ভ—
যেহেতু সম্পূর্ণ ট্রিলজি পড়েছি তাই প্রারম্ভ তিন খণ্ডে তিনভাবে শুরু হয়েছে। সেদিক থেকে মূল কাহিনির সূচনা যেখান থেকে হয়েছে সেদিক থেকে আলোচনা করা যাক। প্রথম খণ্ডে শুরুতে এক বৃদ্ধের কাহিনি দিয়ে গল্পের সূত্রপাত। গল্পে ঢোকার জন্য যথেষ্ট ছিল, কাহিনির সাথে জড়িয়ে যেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি৷ রোমাঞ্চকর যাত্রার প্রথম রোমাঞ্চ বেশ ভালোভাবে হয়েছে। শুরুটা এখনও চোখে ভাসে, সাদামাটা শুরু হওয়া গল্প যে এত বিস্তৃত কে জানত।
● গল্প বুনন—
লেখক খুব ভালো গল্প বুনন করতে পারেন৷ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যেভাবে গল্পের সিকুয়েন্স, চরিত্রের স্থান-কাল সাজিয়েছেন এক কথায় অসাধারণ। লেখকের প্রধান কাজ থাকে নিজের কাহিনিকে পাঠকের মানসপটে জীবন্ত করে তোলা, ভাসা ভাসা ভাবে সবকিছু চোখের সামনে ভেসে ওঠা। যখন পাঠক তৃপ্তি নিয়ে সেইসব দৃশ্যায়ন সাবলীল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তখন পূর্ণ স্বার্থকতা আচ্ছাদিত হয়ে আঘাত হানে লেখকের মনে। পাঠক পুলকিত হবেন সেটা দেখে লেখক স্মিত হাসি হেসে বলবেন—আমি স্বার্থক, আমার সৃষ্টি স্বার্থক।
● লেখনশৈলী—
যে বিষয় পাঠককে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে এবং লেখক থেকে লেখককে আলাদা করে রাখে তা হচ্ছে লেখনশৈলী। পাঠক কোনো বইয়ের শুরুতে যে বিষয় লক্ষ করে সেটা হচ্ছে লেখনশৈলী। লেখক কীভাবে তার লেখা লেখেছেন, শব্দ চয়নে কেমন শব্দ নির্বাচন করেছেন। সাবলীল ভাবে সেগুলো বাক্যের মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছেন কিনা এইসব কিছু। সাম্ভালা ট্রিলজিতে এই লেখনশৈলী বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গল্পের সাথে হুকড করার মতো যে শক্তি সেটা লেখক এই লেখনশৈলীর মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্ণনা থেকে ফাইট সিকুয়েন্স, চরিত্রের সংলাপ ইত্যাদি সহজ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দেখে কাহিনি গতিময় ছিল, থমকে যাওয়া বা বোরিং হওয়ার কোনো চান্স ছিল না৷
● বর্ণনাভঙ্গি—
গল্পের গাঁথুনিতে বাক্যের সাবলীলতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই যেমন, লেখক কোনো ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে সেই ঘটনার বিভিন্ন দৃশ্য একই সাথে চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, অনুভূতি জীবন্ত করে তুলে ধরছেন সেটা সম্ভব বর্ণনার বিবরণের মাধ্যমে। সাম্ভালা ট্রিলজির প্রত্যকটি গল্প, গল্পের পেছনের ঘটনাবলি, সেগুলা কীভাবে ঘটেছে ইত্যাদি বিষয়গুলো সুনিপুণভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। সবুজ পাহাড়ের বুকে ঝড়ে পড়া তুমুল বর্ষণ থেকে কাঠমুন্ডু ও তিব্বতের সৌন্দর্যের রূপরেখা শিল্পী তুলিতে আঁকলে যেভাবে দেখায় ঠিক সেইভাবে দেখিয়েছেন। চরিত্রের মধ্যকার সাসপেন্স, দূরত্ব, অনুসরণ, লুকোচুরি খেলা, ইতিহাসের মাহাত্ম্য কোনকিছু বাদ রাখেননি বর্ণনা করতে। কাহিনির স্বার্থকতা এইখানে যে লেখক তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ও ধ্যান এই জীবন্ত বর্ণনার পেছনে ব্যয় করেছেন বলে।
● চরিত্রায়ন—
পুরো কাহিনিতে ছিল চরিত্রের মনোমুগ্ধকর খেলা। কখনও রূদ্ধশ্বাসে এক চরিত্র অন্য চরিত্রকে ধাওয়া করা, আবার কখনও পদে পদে বিপদের মুখোমুখি লড়াই করা। চরিত্র বিল্ডাপে লেখকের ত্রুটি তেমন ছিল না। প্রত্যক চরিত্রের ব্যাকস্টোরি ছিল তরতাজা। সামান্য চরিত্রের গুণ খুব ভালোভাবে প্রকাশিত করতে পেরেছেন। বিশেষ দুই চরিত্রের পাশাপাশি অন্যান্য যতসব চরিত্র সৃষ্টি করেছেন সবার মধ্যে উৎকৃষ্ট শক্তিসামর্থ্য, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আগেই বলেছি লেখক ইতিহাসের অনেক কিছু টেনেছন গল্পের স্বার্থে সেদিক থেকে বিশেষ এক চরিত্রের ব্যাকস্টোরি দারুণ ভাবে যুক্ত করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। প্রোটাগনিস্টের ব্যবহার করেছেন দক্ষতার সাথে, পাঠকের জন্য রয়েছে শেষদিকে চমকপ্রদ সাসপেন্স। চরিত্রের সাসপেন্স ও প্লটের আর্কষণ দুই মিলে এই রোমাঞ্চকর যাত্রা সত্যিকার অর্থে রোমাঞ্চিত করেছে।
● সমাপ্তি—
কাহিনির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা লেখক সৃষ্টি করে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন সেদিক থেকে সফল হয়েছেন। কারণ আমি সন্তুষ্ট। আমি অনেক অভিযোগ দেখেছি যে দ্বিতীয় খণ্ড প্রায় পাঠকের ভালো লাগেনি বা রুচির সাথে মেলেনি৷ তবে আমি বলব কাহিনির মূল গাঁথুনি ছিল এই খণ্ডে। প্রোটাগনিস্ট তৈরি থেকে সব চরিত্রকে একজোটে বেঁধে নিয়ে এসে এক স্থানে বন্দি করার প্রক্রিয়া সত্যিকারের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেই। যারা 'তিগো' ভালোবাসেন এবং রোমাঞ্চকর জার্নি পছন্দ করেন তাদের জন্য সোনায় সোহাগা বলা যায়। ইতিহাসের মিশেলে নতুন এক স্বাদ পাঠকের অন্তরে স্রোতের মতো প্রভাবিত হবে৷ সমাপ্তি যেমন দরকার ছিল তেমন হয়েছে, খুব বেশি ধীরে নয় আবার খুব দ্রুতও নয়। কাহিনি শেষে চরিত্রের মাধ্যম যে ম্যাসেজ লেখক দিয়েছেন সেটাও বেশ যুক্তিযুক্ত। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে এই প্রবাদবাক্য একেবারে জুতসই৷
.
চরিত্র নিয়ে বিস্তারিত লেখতে গেলে অনেক কিছু লেখা লাগবে৷ সংক্ষেপে বলে দিলে এখানে অবিনশ্বর চরিত্রের পাশাপাশি খারাপ আত্মার এক রক্তপিপাসু রয়েছে। যে অদম্য শক্তির অধিকরি এবং মূল অ্যান্টাগনিস্ট৷ তবে শত্রুর অভাব নেই, ভালোর পাশাপাশি খারাপ দিকটা লেখক মাথায় রেখে সমানে সমানে লড়াই করিয়েছেন। একজন পৃথিবীর জন্মের সূচনালগ্ন থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন অন্যদিকে ২০০ বছর ধরে সেই রক্তপিপাসু অবিনশ্বর মানুষটার সাথে দ্বন্দযুদ্ধে লিপ্ত হতে এগিয়ে যাচ্ছেন। এরমাঝে কাল্ট সোসাইটি থেকে শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ, র' এজেন্ট, চোরাকারবারি, মাফিয়া সব রকমের চরিত্র দিয়ে ঠাঁই পেয়েছে সাম্ভালার পাতায়। এছাড়া খুটিনাটি অনেক কিছু লেখার থাকলেও অফ গেলাম। নিজ দায়িত্বে পড়ে নেওয়া ভালো।
রাশেদ-রাজুর মতো টিনেজ চরিত্র কিশোরদের অনেক মুগ্ধ করবে। কিশোর অ্যাডভেঞ্জার উপন্যাস হিসেবে অনায়াসে বিবেচনা করতে পারবে এই ট্রিলজিকে।
সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর এই যাত্রায় সঙ্গী হওয়ার জন্য আহবান রইল।
➢ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
ইতোমধ্যে শরীফুল হাসান দেশিয় লেখকদের মধ্য আমার পছন্দনীয় একজন। ওনার লেখনশৈলী এবং গল্প বুননে যে দক্ষতা রয়েছে তা অসামান্য। তরুণদের মোটিভেট করেছেন, করে যাচ্ছেন৷ 'সাম্ভালা' ট্রিলজির ন্যায় ওনার 'অন্ধ জাদুকর' ট্রিলজি আরেকটি দুর্দান্ত উপন্যাস হতে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে। এছাড়া যেভাবে সামাজিক থ্রিলারের মতো জনরা বিল্ডাপ করেছেন পাঠক বেশ আকৃষ্ট হয়েছেন। ইতিহাস, থ্রিলার ও রোমাঞ্চ নির্ভর জনরাতে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বটে। দোয়া রইল আগামীতে যাতে ওনার তরফ থেকে আরও অসাধারণ সব বই পাঠক উপভোগ করতে পারে। ব্যক্তিত্বের দিক থেকে তিনি ভীষণ অমায়িক একজন মানুষ, এত বড়ো লেখক অথচ সবরকম আলোচনায় পাঠকদের সাথে সব শেয়ার করেন, ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দেন এই ছোটোখাটো কাজগুলো একজন লেখককে সম্মান করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শুভকামনা রইল।
● সম্পাদনা—
অখণ্ড এই ট্রিলজিতে ছোটো ছোটো অনেক জায়গায় সম্পাদনার অভাববোধ করেছি৷ কিছু বাক্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা গিয়েছে৷ তবে সেগুলো আরেকবার সম্পাদনা করলে অনায়াসে ঠিক করে ফেলা যায়৷
বিশেষ এক জায়গায় লেখক লেখেছেন, হিন্দুধর্মের অবতার শিব!
আসলে শিব বা মহাদেব স্বয়ং আদি দেবতা, যিনি ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-লয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি স্বয়ং ঈশ্বর তাই এই বাক্যতে 'অবতার' ইন্ডিকেট করাটা ভুল হয়েছে। তথ্যগত ভুল ছিল আশা করি নতুন লিমিটেড সংস্করণে এই সমস্যা সমাধান করা হবে৷
এছাড়া মেজর কোনো সমস্যা বিশাল কলেবরের বইতে চোখে পড়েনি, আর যেহেতু ফিকশন তাই ইচ্ছে করে কিছু জিনিস এড়িয়ে যেতে হয়েছে। বেশি খুঁতখুঁত থাকলে ফিকশন বই পড়া উচিত নয়৷
● বানান—
বানান নিয়ে বিশাল অভিযোগ, লেখক স্বয়ং এইসব কিছু ঠিক করে নিয়েছেন ইতোমধ্যে নতুন সংস্করণের জন্য। তাও উল্লেখযোগ্য যে ভুলগুলো ছিল। প্রকাশনার উচিত এই দিক বিশেষভাবে লক্ষ রাখা৷ ৮০% নির্ভুল হলেও বই সুখপাঠ্য হয়।
১. কোনো এক অদ্ভুত কারণে 'ষ্ট' সম্পূর্ণ মিসিং ছিল। সেখানে এই উদ্বৃতিচিহ্নের (’) ব্যবহার দেখা গিয়েছে। কোনো কারণে 'ষ্ট' ফাইন্ড রিপ্লেস করতে গিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ৭৩, ৭৭, ৮৫, ৯৮, ৯৯, ১০৯, ১৭২, ১৮২ উক্ত পৃষ্ঠা গুলো দেখলে সেটা ক্লিয়ার হবেন যদিও এইরকম ভুল পুরো বইতে রয়েছে।
একইভাবে 'ষ্ণ' পুরোপুরি গায়েব। ৩৯৬ ও ৪০১ পৃষ্ঠা সহ আরও অনেক জায়গায় এই ভুলের দেখা মিলবে।
২. 'ন ও ণ' এর বিশাল ভুল লক্ষ করা গিয়েছে। যেমন : ‘কিছুক্ষন, যতক্ষন, বিষন্ন' শব্দগুলোর সঠিক বানান 'কিছুক্ষণ, যতক্ষণ, বিষণ্ণ' এইরকম হওয়ার কথা কিন্তু অনেক 'ণ' শব্দের জায়গায় 'ন' থেকে গিয়েছে।
৩. কি/কী এর ব্যবহারে অনীহা। কোন বাক্যটি প্রশ্নবোধক, কোনটি বিস্ময়সূচক এইসবের ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ পেয়েছে।
৪. 'ও-কার' ফরমেটে মিশ্র বানান প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
৫. গুরুত্বপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ বানান লেখা হয়েছে 'গুরুত্বপুর্ন, ঝুকিপুর্ন' এইভাবে।
৬. হ্রস্ব ই-কার (ি) ও দীর্ঘ ঈ-কার (ী) এর ভুল ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত চোখে পড়েছে।
৭. জঙ্গল/জংগল, পাম্পসু/পাম্পশু এইরকম ভুল তো আছেই।
৮. ৩৬৯,৩৭০, ৪১৭ ও ৪১৮ পৃ: 'বিনোদ চোপড়া' চরিত্রের নাম একবার হয়েছে 'ডবোনদ' আরেকবার 'আকাশ' এইরকম!
৯. 'ব্রাহ্মণ' বানান কে 'ব্রাক্ষন' লেখা রয়েছে।
১০. 'নিঁখুত' বানান লেখা 'নিঃখুত' ভাবে।
১১. ৪৪৯ পৃ: 'পাল্লায়' কে 'পালণ্ঢায়' লেখা হয়েছে।
● প্রচ্ছদ, নামলিপি—
'সাম্ভালা' নামলিপি বেশ পছন্দ হয়েছে। এই নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও প্রচ্ছদ বেশ সাদামাটা মনে হয়েছে। অথচ এই বিশাল বইয়ের প্রেক্ষাপট অনুসরণ কত কী যে ফুটিয়ে তোলা যেত তা অভাবনীয়। আশা করছি এই হিস্টোরিক্যাল ফ্যান্টাসি বইটি নতুন সংস্করণে যোগ্যতম প্রচ্ছদ পাবে৷ সাদামাটা প্রচ্ছদ ভেবে কেউ আমার সাধারণ মনে করিয়েন না, এই বই কভার দেখে বিচার-বিবেচনা করা নির্বুদ্ধিতা।
● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা—
অলৌকিক ব্যাপার ঘটেছে এইখানে। সবার অভিযোগ যে সাম্ভালা পড়তে গিয়ে পাতা ছিড়ে গিয়েছে, শান্তিতে পড়তে পারিনি। উপভোগ্য ছিল না, এই সমস্যা ওই সমস্যা। সমস্যা যে একেবারে ছিল না তা না। ঢাউস সাইজের এই বই আরাম করে পড়া একপ্রকার কল্পনা। তবে আমি নিজ স্টাইলে আরাম করে পড়ে গিয়েছি। কোনো পাতা খসে পড়েনি, বাঁধাই শক্তপোক্ত ছিল। কাগজ ছিল ক্রিম কালারের, ফন্ট স্পেসিং, লাইন গ্যাপ সব ওকে৷
নতুন লিমিটেড এডিশন আসছে। সজল ভাইয়ের নামলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে আশা করি প্রচ্ছদও শীঘ্রই দেখতে পাব, দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। আর সেই মুখিয়ে থাকাতে স্থগিত থাকতে হবে। কেনা আর হবে না এই এক বেদনা৷ যার কিনবেন তারা ভাগ্যবান কারণ ভুল ত্রুটি একেবারে কমিয়ে ফেলা হয়েছে, নতুন নামলিপি, নতুন প্রচ্ছদ সাথে তিনটে খণ্ড বক্সসেট হিসেবে বিক্রি হবে। তাই প্রস্তুত হয়ে যান।
➠ বই : সাম্ভলা : এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা (অখণ্ড) ➠ লেখক : শরীফুল হাসান ➠ জনরা : হিস্টোরিক্যাল অ্যাডভেঞ্জার ফ্যান্টাসি ➠ অখণ্ড প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ➠ টাইপোগ্রাফি : নিউটন ➠ প্রচ্ছদ : ডিলান ➠ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী ➠ মুদ্রিত মূল্য : ৭২০ টাকা মাত্র
সাম্ভালার গল্প একজন প্রাচীন পথিকের যাত্রাকে ঘিরে। হাজার বছর ধরে যে পথিক পৃথিবীজুড়ে ভ্রমণ করে চলেছে। কতদূর যাবার আছে তার? প্রবীণ পথিকের গল্পে এসে যোগ দেয় নতুন এক প্রাণ। সেই পথিকের নাতি, নাম তার রাশেদ। গল্পের বিভিন্ন মোড়ে একটি সন্ধান চলছে - সাম্ভালার সন্ধান। কিন্তু এই সাম্ভালার অর্থ কী?
সাম্ভালা একটি ট্রিলজি বা সাম্ভালা সন্ধানের যাত্রাকে লেখক তিন অংশে ভাগ করে লেখেছেন। প্রথম গল্প শুরু হয় বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেই গ্রামে বাস করেন আব্দুল মজিদ ব্যাপারী। বৃদ্ধ এই লোক প্রকৃতির আজব খেয়ালের শিকার। ঘটনাক্রমে আব্দুল মজিদ ব্যাপারীর নাতি রাশেদ ফেঁসে পড়ে এক ষড়যন্ত্রে। আকবর আলী মৃধা, শয়তানের এক উপাসক রাশেদের পিছনে পড়েছে। লুসিফারের সাধক ওই ভয়ানক লোক রাশেদের বন্ধু শামীমের মস্তকছেদ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। এই সময়ে ঢাকায় উপস্থিত এক বিদেশি প্রত্নতত্ত্ববিদ, নাম ড. নিকোলাস কারসন। ড. কারসনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের এক প্রাক্তন অধ্যাপক যুক্ত হন, ড. আরেফিন। ভাগ্যের পরিহাসে ড. কারসন অপহৃত হন আকবর আলী মৃধার দ্বারা। আব্দুল মজিদ ব্যাপারী কিভাবে তার বংশধরকে রক্ষা করবেন? আকবর আলী মৃধার উদ্দেশ্যই বা কী?
সাম্ভালার দ্বিতীয় যাত্রা শুরু হয় এক নতুন বেগে। আব্দুল মজিদ ব্যাপারী এখন লখানিয়া সিংয়ের নাম ধারণ করেছেন। আর সাম্ভালার সন্ধান পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে লখানিয়া সিং। ঠিক এই সময় লখানিয়া সিংয়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মিচনার এতদিন মানুষের তৈরি জেলে আটকে ছিল। কিন্তু কোনো জেলখানা যে আর মিচনার কে ধরে রাখতে পারবে না। তার মূল লক্ষ্য লখানিয়া সিংকে পরাজিত করা। মিচনার যে লখানিয়ার থেকে কোনো অংশে কম যায় না কারণ মিচনার ও যে প্রকৃতির বিশেষ খেয়ালের শিকার। অন্যদিকে, বান্দরবনে বন্ধু রাজুকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে রাশেদ পড়েছে লরেন্স ডি ক্রজ নামক এক মাদক ও অস্ত্র চোরা চালানকারীর কবলে। লরেন্স তার পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া গুপ্তধনের খোঁজ করছে। শেষমেশ রাশেদ কিভাবে মুক্তি পেয়েছিল? লরেন্সের শত্রু সঞ্জয়ের কপালেই বা কী ছিল?
এভাবেই সাম্ভালার শেষ যাত্রায় এসে পড়ে। এই খন্ডে বেড়িয়ে আসবে সাম্ভালার আসল সত্য। মিচনার খুঁজে পাবে তার চিরশত্রুকে। প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. কারসন এবার দিল্লির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাশেদের শুভাকাঙ্ক্ষী ড. আরেফিন সহ আরো দুইজন প্রফেসরকে। ড. কারসনের দলের ও একই উদ্দেশ্য, সাম্ভালা খুঁজে বের করা। অন্যদিকে সাম্ভালার রক্ষক এক বৃদ্ধ লামা লোভের কবলে এসে ভক্ষক রূপ ধারণ করেন। এর মাঝে আকবর আলী মৃধা পালিয়ে এসেছে। তার মূল উদ্দেশ্য রাশেদের রক্ত লুসিফারকে উপহার দেওয়া। কিন্তু সবাই যে এক যাত্রার মাঝে রয়েছে। সাম্ভালার সন্ধান নাকি পাওয়া যাবে পৃথিবীর ছাদ অর্থাৎ তিব্বতে। শেষমেশ কী সাম্ভালার খোঁজ পাওয়া যাবে? রাশেদ কী আব্দুল মজিদ ব্যাপারীর যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারবে?
শরিফুল হাসান সাম্ভালার এই সিরিজে আমাদেরকে এক ভিন্নধর্মী গল্প উপহার দিয়েছেন। এই সিরিজের মাঝে কিছু লুকোনো নৈতিক বাণী ও আছে। সাম্ভালাকে নিয়ে লেখা বইটার লেখনী সুন্দর, প্লট দারুণ। কিছু কিছু জায়গায় প্লট কনভিনিয়েনন্সের জন্য কিছু কিছু কাহিনী উঠে এসেছে। এই যেমন ক্যামোফ্লজ হওয়ার জন্য রাজু হঠাৎ সাদা প্যান্ট- শার্ট বের করে আনলো। তিনটি খন্ডেই তিন তলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার একটি করে দৃশ্য আছে। এটি একটি সিগনেচার মুভ হলেও খানিকটা অযৌক্তিক। যদিও বইটিতে ফ্যান্টাসির উপাদান একটু যৌক্তিক ভাবে বাড়ালে আরো ফ্যান্টাসি ধর্মী হতো বইটি। তবে এই গল্পে ফরাসি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে রাণী নেফারতিতির ইতিহাসের অংশবিশেষ ও উঠে এসেছে। আর বাংলদেশ থেকে শুরু করে কাটমুন্ডু হয়ে তিব্বতে ছড়িয়ে আছে এই গল্পের প্লট। আবার কখনও কখনও আমরা মিশরে গিয়ে পৌঁছাই। শেষ খন্ডে ড. লতিকা প্রভাকরের মতন একজন বলিষ্ঠ মহিলা চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ড্যান ব্রাউনের লেখনশৈলী কিংবা প্লটের ধরণ সাম্ভালার মাঝে অতি মাত্রায় প্রকট। যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। যদিও বেশ কিছু বানান ভুল আছে বইটিতে এছাড়া বইয়ের কম্পোজিশন সুন্দর। থ্রিলার বা অ্যাডভেঞ্চার ধর্মী লেখা হিসেবে বইটি অসাধারণ। ঘরবন্ধি থেকেও ইতিহাসে ডুব দিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারো এই বইটিকে।
প্রথম খন্ডে আসাধারন সূচনা করলেও দ্বিতীয় খন্ডে কেমন জানি খেই হারা লেগেছে। তৃতীয় খন্ডে শুরুর দিকে এসে অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলাম, তবে শেষটায় এসে লেখক আবার হাল ধরছেনে চমৎকার ভাবে। কিছু কিছু ঘটনা বেশ অসংলগ্ন লেগেছে, কিছু কিছু জায়গায় বেশী কাকতালীয় লেগেছে। তবে বই লিখার জন্য লেখক বিস্তর পড়াশোনা করেছেন। বিশেষ করে মূল চরিত্রকে যেভাবে ইতিহাসের অংশ করে নিয়েছেন বিভিন্ন সময় সেটা প্রশংসনীয়। হাতে সময় থাকলে, কিছুকটা ধৈর্য থাকলে পড়তে পারেন। শেষটায় গিয়ে হতাশ হবেন না আশা করি।
শরীফুল হাসানের অনবদ্য একশন-এডভেঞ্চার থ্রিলার উপন্যাস “সাম্ভালা” ট্রিলজি কেনা বৃথা যায় নাই।যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।এত বিশাল প্লট কে লেখক এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ছি,দুই দিনে দুই পর্ব পড়া শেষ।এখন শেষ যাত্রা পড়া শুরু করবো।
এই বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা পড়েই আমি লেখকের ভক্ত হয়ে গিয়েছি। একটানা পড়ে শেষ করেছি প্রথম পার্ট। এভাবে শেষ কবে একটা বই টানা পড়েছি আমার মনে নেই। গল্পের বিষয়বস্তুতে এবং ইতিহাসে আমার আগ্রহ আছে যার কারনেই মনে হয় বইটি বেশি ভাল লেগেছে। দারুন একটা বই।
ছোট্ট একটি গ্রামে কাহিনীর সূত্রপাত । ইতিহাস ও বর্তমানের হাত ধরাধরি করে গল্প এগিয়েছে সহস্রাব্ধ প্রাচীন, রহস্যময় এক পরিব্রাজকের সঙ্গী হয়ে । ইউরোপ,মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট । নিতান্ত দুর্ভাগ্যবশত এক শয়তান উপাসকের দলের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে রাশেদ যারা ইতিমধ্যেই প্রতিজ্ঞা করেছে রাশেদের চামড়া ছিলে রক্ত উৎসর্গ করবে লুসিফারের নামে । রাশেদ কি পারবে ভয়ংকর এই খুনে দলের সাথে লড়াই করতে?
সাম্ভালা - কী এই বস্তু যার খোঁজে একদল অভিযাত্রী নেমে পড়েছে? দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করে ম্যাকলডগঞ্জ হয়ে নেপাল পাড়ি দিয়ে যাত্রা করছে তিব্বতের উদ্দেশ্যে । কিন্তু তারা একা নয় । তাদের পেছনে আছে আরো অনেকে । সকলের রয়েছে আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য । তিবাওয়ের গুপ্তধন হবে কার?
মানুষ সেই আদিমকাল থেকেই অমরত্বের সন্ধানী । বিবর্তনের সিঁড়ি বেয়ে আর বাঁচার তীব্র ইচ্ছায় মানুষ একে অপরকে খুন করতেও দ্বিধা করেনি কোনোকালেই । তবু সেই অমরত্ব রয়ে গেছে অধরা । সাম্ভালার দেখা পেতে নেমে পড়েছেন সেই রহস্যময় পরিব্রাজক । কিন্তু পথে যে তার সহস্রবছরের পুরোনো এক শত্রু অপেক্ষা করছে । প্রকৃতি কখনও দুই ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল না । বেছে নিতে হবে একজনকে । অবশেষে কি মুখোমুখি হতে চলেছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী? সাম্ভালা কি শুধুই একটা মিথ নাকি অকল্পনীয় বাস্তব? কল্পনা হলে কেন এত দ্বন্দ্ব! আর বাস্তব ই যদি হয় তবে কোথায় আছে সেটা? কীভাবে পাওয়া যাবে অমরত্বের স্বাদ?
সাম্ভালা বইটির প্রথম আবির্ভাব ঘটে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে । এরপর এর তুমুল জনপ্রিয়তায় একে একে অখণ্ড সংস্করণ এবং সবশেষে এবছর প্রকাশিত হল এর লিমিটেড এডিশন । এতদিন কেনার ইচ্ছে থাকলেও নানা টালবাহানায় কেনা হয়নি ট্রিলজিটা । কিন্তু অবশেষে যখন লিমিটেড এডিশনের ঘোষণা এল তখন আর না কিনে পারলাম না । সাম্ভালার পথে আমার যাত্রা নিয়েই আজকের আলোচনা ।
সাম্ভালা - প্রথম যাত্রা
ফ্যান্টাসি হিসেবে চমৎকার একটা প্লট বেছে নিয়েছেন লেখক । মানুষ বরাবর ই অমরত্বের প্রত্যাশী । কিন্তু অমরত্বের পথটা যে কম বন্ধুর নয় সেটাই তুলে ধরেছেন লেখক । ট্রিলজির প্রথম বই হিসেবে চমৎকার । পুরো বইটিতে তিনি মূল গল্পটা ডেভেলপ করেছেন । পাশাপাশি চমৎকার একটা গল্পও পাঠককে উপহার দিয়েছেন । চরিত্রায়নের কথা বলতে গেলে আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট । বিশেষত পুরো গল্পে মজিদ ব্যাপারে চরিত্রটি শক্ত বিল্ডাপ দেওয়া হয়েছে , পাশাপাশি রাশেদ চরিত্রটির স্ক্রিনটাইমও অনেক বেশি । দুজনকেই যথেষ্ট ভালোভাবে লেখক গড়ে তুলেছেন পরবর্তী পর্বে পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে । এছাড়া লেখকের স্টোরিটেলিং বেশ ভালো হওয়াতে পুরো বইটা প্রায় এক বসাতে শেষ করেছি । উপস্থাপনাকৌশল লিনিয়ার ধাচের । তাই গল্প যত সামনে এগিয়েছে ততই সাসপেন্স বেড়��ছে । তবে ফিনিশিংটা ছিল প্রেডিক্টেবল । কিন্তু এতে গল্পে বিন্দুমাত্র অনাগ্রহ বোধ করিনি আমি ।
সব মিলিয়ে প্রথম যাত্রা আমার হাত গলে অনায়াসে পাঁচে সাড়ে চার পাবে ।
সাম্ভালা - দ্বিতীয় যাত্রা
যাত্রার মধ্যভাগ । তেমন কিছু বলার নেই এখানে । প্রথম পর্বেই লেখক যথেষ্ট স্ক্রিনটাইমের মাধ্যমে চরিত্রগুলো ডেভেলপ করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে, প্লটের ভিত্তিপ্রস্তরের গাঁথুনীও প্রথম পর্বেই হয়ে গিয়েছে - তাই এই পর্বে লেখক শুধু গল্পে মনোযোগী হয়েছেন । পাশাপাশি নতুন বেশকিছু চরিত্র এসেছে । এই পর্বটা আমার কাছে এভারেজ লেগেছে । গল্পটাও খানিকটা মেদযুক্ত মনে হল । যদিও লেখকের উপস্থাপনা ও স্টোরিটেলিং ভালো হওয়ায় পড়তে বেশি বেগ পেতে হয়নি ।
ব্যক্তিগত রেটিং : ৩.৫/৫
সাম্ভালা - শেষ যাত্রা
অবশেষে সকল প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা । ট্রিলজির সবথেকে টানটান উত্তেজনাকর পর্ব এটা । মূল ভিলেনের আবির্ভাব, গল্পের নতুন নতুন বাঁক, একশন দৃশ্য - সবকিছুর মিশেলে এই পর্বটি ছিল অনবদ্য । এখানে স্টোরিটেলিং, বর্ণনাভঙ্গি আরও ভালো । প্রতিটা দৃশ্য চোখের সামনে কল্পনা করতে পেরেছিলাম । এই পর্বের নেগেটিভ দিক তেমন নেই । শুধু মনে হল গল্পের শুরুটা একটু স্লো । বাকিসব ঠিকঠাক ।
ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫
● প্রোডাকশন, সম্পাদনা ও অন্যান্য
সাম্ভালা লিমিটেড এডিশনটি বরাবরের মত প্রকাশিত হয়েছে বাতিঘর প্রকাশনীর ব্যানারে । প্রোডাকশন দিক থেকে বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছে তারা । বাইন্ডিং, ফন্ট, পৃষ্ঠার মান - সবকিছু ছিল চমৎকার । তবে সম্পাদনায় বেশ ভালোরকমের ত্রুটি ছিল । অনেকগুলো বানান ভুল চোখে পড়েছে আমার । বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সজল চৌধুরী । তাকে বিশেষ ধন্যবাদ এরকম কনসেপচুয়াল প্রচ্ছদের জন্য ।
সব মিলিয়ে এই ছিল শরীফুল হাসানের 'সাম্ভালা' নিয়ে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া । দেশীয় কিছু ফ্���ান্টাসি পড়েছিলাম, আমার ততটা ভালো লাগেনি । কিন্তু 'সাম্ভালা' আমাকে আরো বেশি ফ্যান্টাসিমুখী করবে বলেই মনে হচ্ছে । ফ্যান্টাসি পাঠকদের জন্য নিঃসন্দেহে বেশ ভালো একটি পছন্দ হতে পারে এই বইটি ।
এক নজরে, বই : সাম্ভালা (লিমিটেড এডিশন) লেখক : শরীফুল হাসান প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্য : ১০০০ টাকা ওভারল রেটিং : ৮/১০
সাম্ভালা -কারো কাছে শুধুই মিথ,কারো কাছে বিশ্বাস, আর কারো কাছে সারা জীবন এর সাধনা। কি এই সাম্ভালা? সাম্ভালা এক রহস্যময় স্থান যেখানে সম্রাট অশোকের বিশেষ নয়জন ব্যক্তি শাম্ভালার গোপন জ্ঞান ও শিক্ষা খুবই গোপনীয়তার সাথে রক্ষা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসে বিভিন্ন নামে এই জায়গার কথা বর্ণিত হয়েছে।
গল্পটা শুরু হয় কোনো এক অজপাড়া গ্রামে, এক রহস্যময় বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ ব্যাপারি কে দিয়ে। তরুন বয়সে তিনি এ গ্রামে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার গ্রামে আসার আগের জীবন সম্পর্কে কেউ কিছু জানেনা!! অন্যদিকে মজিদ ব্যাপারির নাতি রাশেদ, তার বন্ধু শামীমের খুনের মধ্য দিয়ে জড়িয়ে যায় এক গুপ্ত রহস্যের সাথে, যা কিনা শত শত বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল।
হাজার বছরের অতীত ইতিহাস আর বর্তমান কে এক সুতোয় গেঁথে নিয়ে গল্প এগিয়ে নিয়েছেন লেখক। কখনো বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লব,আবার কখনো কন্সট্যান্টিনোপোল জয় করে সুলতান মুহাম্মদ এর 'ফতেহ' উপাধি প্রাপ্তি, মিশরীয় সাম্রাজ্যের ফারাও রাজার মমি ও নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি তৈরী এরকম বহু ঘটনাবহুল ইতিহাস উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। মানব ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, মিথ,বিশ্বাস আর বর্তমান সময় একত্র হয়ে বিশাল কলেবর হলেও ধৈর্য্যচূ্্যতি ঘটার অবকাশ কম। আর এখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আমার খটকা লেগেছে। পুরো ট্রিলজি তে আব্দুল মজিদ ব্যপারি কে একজন মানবিক ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, বলতে গেলে উনি ই এই গল্পের নায়ক। কিন্তু প্রথমেই তাকে দিয়ে গরিব এক ছেলেকে খুন করানো হল। অন্যভাবে ব্যাপারটা কি সাজানো যেত না।।!! আবার, রাশেদের বান্ধবী যেভাবে স্বাভাবিকভাবে, রাশেদকে ওর বন্ধুর খবর জানালো মনে হতে পারে, হয়ত দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ওর মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু টা যেন প্রত্যাশিত ছিল। এরকম ছোট ছোট বিষয় ছাড়া প্রথম খন্ড টি মিথ,ফ্যান্টাসি আর থ্রিল এর অদ্ভুত মিশেলে রচিত। সাথে শেষের দিকে কিছু একশন ও আছে বোনাস হিসেবে। "সাম্ভালা- এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা" র এই অভিযাত্রা সত্যিকার অর্থে শুরু হয় দ্বিতীয় খন্ড থেকে। এলিক্সির অফ লাইফ বা অমৃত - রস বা আবে- হায়াত যে নামে ই ডাকা হোক না, অমরহত্বের স্বাদ কে না পেতে চায়। অমরত্বের খোঁজে ইউরোপ থেকে শুরু করে ভারত উপমহাদেশ ছাড়িয়ে সুদূর তিব্বতে এই অভিযাত্রায় সামিল হয়- পরিব্রাজক, শয়তানের উপাসক, প্রত্নতাত্ত্বিক, গবেষক সহ কিছু মানুষ। এ পর্যায়ে অভিযাত্রার বর্ণনা পড়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল তিব্বতের সৌন্দর্যের রুপরেখা যেন আমার চোখের সামনে ফুটে উঠেছে। একদিকে হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য আর অন্যদিকে তিব্বতের প্রাচীন ধর্মীয় নিদর্শন- দুই এর মিশেলে দ্বিতীয় যাত্রার প্রতিটা মুহূর্ত অ্যাডভেঞ্চারে পূর্ন ছিল।ট্রিলজির শুরু থেকে গল্পের প্রোটাগনিস্ট এর চরিত্রায়ন করা হয়েছে আর দ্বিতীয় যাত্রায় এসে শক্তিশালী এন্টাগনিস্ট এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, যা গল্পকে নতুন মাত্রা এনে দেয়। ল হাজার বছর পূর্বের- ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাবলি, প্রাচীন এক মিথ আর বর্তমানের চরিত্রের স্থান -কাল ধারাবাহিকভাবে লেখক সাজিয়েছেন সুন্দর লেখনশৈলীর মাধ্যমে।
" সাম্ভালা " ট্রিলজি বিশেষ ভাবে উপভোগ্য ছিল এর প্লট এর জন্য আর এর অনন্যতা ও এখানে। একই গল্পে ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার,ফ্যান্টাসি , থ্রিল, রোমাঞ্চ সব ই যেন একাকার হয়ে গেছে। মিথোলজিকে কেন্দ্র করে এরকম প্লটের গল্প আগে খুব বেশি পড়া হয়নি। পাশাপাশি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকেরও কিন্তু কিছুটা রেশ পাওয়া যায় লেখায়। মানুষ লোভ,হিংসা,ক্রোধ এসব রিপু দিয়ে তাড়িত হয়ে কোথায় গিয়ে নামতে পারে ও তার পরিণাম কি হয় তা খুব সূক্ষ্ম ভাবে উঠে এসেছে লেখায়। আর যেসব মানুষ এই রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তারাই তো প্রকৃত মানুষ, চির শান্তির স্থান সাম্ভালা তাদের জন্য ই মুক্ত। রিপু তাড়িত মানুষের এখানে কোনো স্থান নেই। শেষের দিকে এসে সাম্ভালা খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে লেখক শরীফুল হাসান খুব সুন্দর এক বার্তা রেখে গেছেন। লোভ,কাম,ক্রোধ, ঘৃনা এসব পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে আমরা শুভ গুনের চর্চা করতে পারি, তবে আমরা পৃথিবী জুড়ে সাম্ভালা কে ছড়িয়ে দিতে পারবো।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বইটির নাম সাম্ভালা হলেও সাথে একটা ছোট্ট কথা লেখা আছে নিচে, "এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা"। তিনটি খন্ডে প্রকাশিত হওয়া বইটি অনেক পাঠক প্রায় বছর খানেক ধরে পড়লেও আমার জন্যে এই রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা ছিল মাত্র ১০ দিন। আর এই অভিযাত্রায় প্রায় নাওয়া খাওয়া ভুলে সত্যি সত্যি শেষে এসে মনে হয়েছে না সাম্ভালা আমিও খুঁজে পেয়েছি, অন্তত অনুভূতিটা তেমনই ছিল।❤️ একটা ক্ল্যাসিক গল্প হতে আসলে কি লাগে? আমার কাছে মনে হয় গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই রকম ভালোলাগা, মনোমুগ্ধকর প্লট,অস্থির কিছু চরিত্র আর তাদের চরিত্রায়ন এবং শেষমেষ সবসময়ের জন্য পাঠকের মনের মধ্যে একটা দাগ কেটে দেয়া। সেই ছোটবেলায় পড়া বিভূতির "চাঁদের পাহাড়" আমার কাছে এরকম একটা বই ছিল। তখন থেকেই এই এ্যাডভেঞ্চার এর নেশা, যেই নেশা আসলে একবার ঢুকলে বের করা অসম্ভব। গতকাল সাম্ভালা শেষ করার পর মনে হলো আবার সেই ছোটবেলার অনুভূতিটা যেন ফিরে পেলাম। কি নেই এই বইটাতে? সেই প্রাচীন মিশরের ইমহোটেপ থেকে শুরু করে আমেরিকার স্বাধীনতা, রোমান সম্রাট থেকে শুরু করে ব্যাবিলন, সম্রাট ফিলিপ থেকে শুরু করে আলেকজান্ডার, ফারাও পত্নী নেফারতিতি থেকে সলোমনের রাণী মাকিদা, জুলিয়াস সিজার থেকে আলেকজান্ডার,নাৎসি ষড়যন্ত্র থেকে সম্রাট অশোকের রহস্যময় নয় মানব, এলিক্সির অফ লাইফ থেকে শয়তানের উপাসক, আরো কত কাহিনী এত সুনিপুণভাবে এই বইয়ে আছে যে আসলে কোনটা রেখে কোনটা নিয়ে একটু ভালোমত ভাববো তার ফুরসৎ নেই। কারণ প্রাচীন এইসব কাহিনীর সাথে এগিয়ে গেছে বর্তমান এর এক দুর্ধর্ষ অভিযাত্রার গল্প, যা একমুহুর্তের জন্যেও পাঠককে বিশ্রাম দিবে না। এই গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছেন প্রাচীন এক পরিব্রাজক, যার নাম যুগে যুগে অনেকগুলা হলেও যখন সেইন্ট জার্মেইন নামটা দেখি তখনই নড়েচড়ে বসি, কারণ এই নামে আমার প্রিয় Castlevania গেইম এও প্রায় সেইম একজন পরিব্রাজক ছিল,যে ইতিহাসের কালক্রমে যুগ যুগ ধরে বেচেঁ আছেন অজ্ঞাতসারে। তার সাথে আছে বর্তমানের তরুণ চরিত্র রাশেদ, যাকে লেখক অনেক সুন্দর ভাবে ম্যাচিউরড একজন চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে। পার্শ্ব চরিত্র গুলোও কোনো অংশে কম নয়, কিন্তু তাদের কথা বলতে গেলে আসলে লেখা শেষ হবে না। চমৎকার গতিতে গল্প এগোয়, কখনো হয়তো এই চরিত্রের ভাষ্য, কখনো আবার আরেকজন তার প্রেক্ষাপটে গল��প এগিয়ে নেয়। সুদূর ইউরোপ থেকে প্রাচীন নীল নদ হয়ে বাংলা, ভারতবর্ষ আর শেষমেষ নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতে বিস্তৃত এই কাহিনী। যুগে যুগে মানুষের অমরত্ব খোঁজার যে বাসনা এবং তা নিয়ে তৈরি কত কল্পকাহিনী সবকিছুর মধ্যেও এই উপন্যাস টা আমার সবথেকে পছন্দের একটি হয়ে থাকবে।পড়তে পড়তে খুব ভালোমত ভিজ্যুয়ালাইজ করার ব্যাপারটা সব বইয়ের ক্ষেত্রে হয় না, কিন্তু এই বইয়ের লেখা এত সাবলীল আর আকর্ষণীয় ছিল যে পুরো কাহিনীই মনে হয়েছে নিজের চোখেই দেখছি। লেখক কে বলবো এরকম উপন্যাস যাতে আরও বের হয়, নিঃসন্দেহে এই জনরায় আপনার বইগুলো মাস্টারপিস হয়ে থাকবে।এরকম বিশাল কলেবরের বই লেখার জন্য যে আসলে কতটুকু জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর নেশা থাকা লাগে তা বলাই বাহুল্য। বাংলা ভাষায় এরকম আরো অনেক মৌলিক বই বের হবে এইটাই প্রত্যাশা। ব্যক্তিগত রেটিং: 10/10
ফ্ল্যাপ থেকে : সাম্ভালা একটি রহস্য--এর খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। সত্যি কি এর অস্তিত্ব আছে? কেউ কি এর খোঁজ পেয়েছে শেষ পর্যন্ত? ছোট্ট একটি গ্রামে কাহিনীর সুত্রপাত। ইতিহাস এবং বর্তমান হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে সহস্রাব্দ প্রাচীন এক রহস্যময় পরিব্রাজকের সঙ্গি হয়ে। ইউরোপ, মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট। অবশেষে রহস্যময় অভিযাত্রীর সাথে যোগ হয় বর্তমানকালের এক যুবকের ছুটে চলা, যার পেছনে ধাওয়া করছে তার বন্ধুর হত্যাকারী শয়তান-উপাসকের দল। প্রাচীন সেই পথিক কি দেখা পেয়েছে সাম্ভালা'র???
#### সাম্ভালা, নাম শুনেই কারো মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এইটা আবার কি নাম????অনেকে ভ্রু কুঁচকিয়ে বই টা হয়তো বলেই বসবেন এইটা কোনো নাম হইলো?? সত্যি বলতে আমিও অবাক হয়েছিলাম নাম টি দেখে, কিন্তু নীচে যখন লেখক সাহেবের নাম দেখলাম, মনে বিশ্বাস আসলো। সাথে সাথে অনেক পজিটিভ রিভিউ পেলাম। পরা শুরু করার পর বুঝলাম এই বই কেনো এতোটা সফল???
রহস্যময় এক স্থান এই সাম্ভালা। সাম্ভালাকে পাবার নেশায় সবাই বিভোর। সবাই কেনো সাম্ভালাকে পেতে চায়? এর কারণ সাম্ভালা প্রকৃতির নিয়ম বর্জিত এক স্থান। যেখানে বয়স থেমে চায়, ঘড়ির কাটা চলতে থাকে। হাজার বছরের এই পুরোনো শহরের দেখা পেতে উদগ্রীব মানুষগুলো একে অপরের শত্রু হয়ে পড়ে। সবাই একে অপরকে টপকে পেতে চায় সেই দুর্লভ অমরত্বকে। যার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে তারা প্রস্তুত। এক দিকে শয়তান পূজারী আকবর আলী, আরেকদিকে ড: কারসন এবং তার সহকর্মীগণ, অপরদিকে সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র আজিজ ব্যাপারী। সবার আগে কে পৌছাবে সাম্ভালার দরজায়?? আর রাশেদ যার অমরত্বকে পাওয়ার চেয়ে তার প্রিয় বন্ধুর নিরাপত্তা সবচেয়ে আগে সেকি পারবে অতীতের প্রতিশোধের সাথে নিজের বন্ধুকে রক্ষা করতে??সব প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে বইয়ের শেষ অংশ পর্যন্ত।
বাংলাদেশে থ্রিলার বই গুলো একটা অন্যমাত্রা পেয়েছে বাতিঘরের কল্যানে। শরীফুল হাসান ভাই বাতিঘরের অন্যতম একটা সেরা লেখক। আমাদের দেশে এমন ফ্যান্টাসি এবং এডভেঞ্চার জনরার থ্রিলার এর কথা ভাবতেও পারতাম নাহ। সাম্ভালা পড়ে সেই ধারনা টা একদম দূর হয়ে গেলো। যতদূর জানি বইটির ইংরেজিতে অনুবাদ ও হয়েছে। এতো বিশাল বড় লেখনীতে লেখক পুরোপুরি সার্থক । ভালোবাসা এবং দোয়া রইলো লেখকের প্রতি 💙
সুবিশাল এক যাত্রার সমাপ্তি হলো। আট দিন লাগিয়ে পড়লাম শরীফুল হাসান রচিত বাংলা ভাষার অ্যাডভেঞ্চার-ফ্যান্টাসি ঘরানার এই মাস্টারপিস ট্রিলজি। • কেমন লেগেছে? এককথায় আসলে বলা সম্ভব না। একজন ব্যক্তির হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকা, তার গল্পের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নানান ঘটনার বিবরণ জানতে পারার সুনিপুণ এক সৃষ্টি এই সাম্ভালা। ফিকশন, মিথ আর অল্প-বিস্তর বাস্তবতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে, তৈরি করেছে অদ্ভুত সুন্দর এক মায়া। এক গল্পে অজস্র গল্প বলেছেন লেখক। একটি গল্পেই উঠে এসেছে নানা সাম্রাজ্যের উত্থান আর পতনের আখ্যান। • গল্পের কনসেপ্ট বেশ ইউনিক। হাজার বছর ধরে বেঁচে আছেন একজন মানুষ। খুঁজে ফিরছেন কিছু একটা। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে যায়, নতুন নাম নিয়ে নতুন জায়গায় চলে যান তিনি। আবারও নতুন করে শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকে গল্প। সাথে এসে মেশে নতুন নতুন চরিত্র। জড়িয়ে যান এক জটিল গোলকধাঁধায়। পেছনে লাগা শত্রু। বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে নেপাল, তিব্বতে গিয়ে শেষ হয় সে যাত্রা। সাথে নিয়ে যান আরও কিছু মানুষকে। রেখে যান স্মৃতি আর নিজের উত্তরাধিকার। • ভালো লাগেনি যা • বইয়ে বানানভুল অনেক। এই বিষয়টা বড্ড দৃষ্টিকটু লেগেছে। • আরেকটি বিষয় খারাপ লেগেছে, তা হলো—গল্প মনে হয় একটু টেনে ইচ্ছে করেই লম্বা করা হয়েছে। এক গল্পে একাধিক গল্প ঢোকানোর চেষ্টা কিছুটা সফল হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেমানান লেগেছে। যেমন: রাশেদের গল্পটাই। মূল গল্পের সাথে রাশেদের যোগসাজশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। কিন্তু এই যোগসাজশটি ধরে রাখার জন্য আলাদা আলাদা তিনটি গল্প ঢোকাতে হয়েছে। প্রথমে শামিমের রেখে যাওয়া বই-কাণ্ড, যেখান থেকে আকবর আলী মৃধার সাথে রাশেদের শত্রুতার সূত্রপাত হয়; দ্বিতীয়ত লরেন্সের গুপ্তধন-কাণ্ড, এই গল্পটির আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল কি না—বুঝতে পারিনি। কেমন যেন খাপছাড়া মনে হয়েছে এই অংশটি। তারপর আবার রাশেদকে মূল গল্পের সাথে জড়ানোর জন্য ড. আরেফিনকে উদ্ধারের জন্য তার অভিযান। প্রথম ও শেষ গল্পটি বোধগম্য হলেও মাঝের লরেন্সের সাথে যুক্ত গল্পটির আদৌ কোনো দরকার ছিল কি না বুঝতে পারিনি। হয়তো সে অংশটা না থাকলেও কিছু হতো না। • শেষকথা সবমিলিয়ে গল্পটা বেশ উপভোগ্য। বাহুল্যদোষ বাদ দিলে ভালোই লেগেছে।