Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী) was a Bengali author, academician, scholar and linguist.
Syed Mujtaba Ali was born in Karimganj district (in present-day Assam, India). In 1919, he was inspired by Rabindranath Tagore and started writing to the poet. In 1921, Mujtaba joined the Indian freedom struggle and left his school in Sylhet. He went to Visva-Bharati University in Santiniketan and graduated in 1926. He was among the first graduates of the university. Later, he moved to Kabul to work in the education department (1927–1929). From 1929 to 1932 he studied at the universities in Berlin, London, Paris and Bonn. He earned Ph.D. degree from University of Bonn with a dissertation on comparative religious studies in Khojas in 1932. In 1934-1935 he studied at the Al-Azhar University in Cairo. Subsequently, he taught at colleges in Baroda (1936–1944) and Bogra (1949). After a brief stint at Calcutta University (1950), Mujtaba Ali became Secretary of the Indian Council for Cultural Relations and editor of its Arabic journal Thaqafatul Hind. From 1952 to 1956 he worked for All India Radio at New Delhi, Cuttack and Patna. He then joined the faculty of Visva-Bharati University (1956–1964).
বিভিন্ন ভারী এবং গুরুগম্ভীর বিষয়আশয় সংবলিত বই ওলটাতে-পালটাতে মগজে খিল করে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎই চোখে পড়ল মুজতবা রচনাবলিতে। দেখলাম ২নং খন্ডের 'ধূপছায়া' পড়িনি। কি বিপদ! একেই মগজে তালা, তায় 'ধূপছায়া' পড়া হয়নি। মু্র্শিদের নাম করে ঝাঁপিয়ে পড়লাম 'ধূপছায়া'র ওপর।
প্রবল সন্তুষ্ট চিত্তে সমাপ্ত হল 'ধূপছায়া' পাঠ৷ তাতে মগজের জট খুলে গেল। কিছুক্ষণ সৈয়দ সাহেবের রসিকতার সায়রে ডুবে রইলাম, জ্ঞানের ভুবনে যাতায়াত হলো। বিভাগত্তোর ভারতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লেখাগুলো পড়তে পড়তে তৎকালীন সময়ের রাজনীতি না, সমাজনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে ধারণা পেলাম। সেই সাথে জ্ঞানের বহুবিস্তৃত শাখায় বিচরণ করলাম।সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা পড়ে সবসময়ই মনে হয়, কত অজনারে জানার বাকি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
'ধূপছায়া'তেই 'রসগোল্লা' ছিল। পুনর্পাঠ এবং আবারও মুগ্ধ হয়ে যাওয়া।
'চিল্কা' - পর্বে চিলিকা লেক ভ্রমণবৃত্তান্ত কি প্রশান্তিকর! প্রথমে ছিল একটি লাল গোলাপের প্রস্ফুটিত হওয়ার নৈসর্গিক বর্ণনা। 'দাবা খেলার জন্মভূমি কোথায়?' - পর্ব সহজে গুছিয়ে লেখা। 'পিকনিকিয়া' সুন্দর কন্ঠে বাঁশমূলক। 'আসা-যাওয়া' সহ বেশির ভাগ পর্বই হলো জ্ঞানগর্ভ, witty and wholesome.
সৈয়দ মুজতবা আলী(১৯০৪-১৯৭৪)'র কখনো শব্দের অভাব পড়ে না। গল্পের অভাব তো অনেক পরের ব্যাপার! যা লেখেন তাই গল্প। খাদ্যরসিক, ভ্রমণরসিক, যুক্তিরসিক এবং জীবনরসিক মুজতবা আলী।
যদিও সে সময়ের সমসাময়িক বিষয়/পরিস্থিতি/কান্ডকারখানা নিয়ে লিখছেন প্রবন্ধ আকারে, অনেক কিছু সম্পর্কে যথাযথ পূর্ববিদ্যা না থাকার পরও পড়ে ভালো লাগে। অভিজ্ঞতা, চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, লেখনী সবকিছুতে লবণের পরিমাণ ঠিকঠাক। একটুও এদিক ওদিক নয়।
আজকাল নতুন লেখকদের লেখায় সিচুয়েশন বেশি ক্রিটিকাল করে দেখায়। লেখক মস্তিষ্ক অধিকতর ঝামেলায় আক্রান্ত। পেসিমিজম ভরা। জীবন, জীবনকে দেখার ধরণ -সবকিছুর মধ্যে নীটশামার্কা নাথিংনেস ও নিহিলিজম। বিষন্নতা। ছাইরঙা চশমার আড়ালে রংহীন মৌনতা।
অথচ, আগের দিনে লেখকরা কত মজা করে লিখতেন, কত আমেজে রং ঢালতেন। দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল নির্যাস-রসে সম্মোহিত মৌমাছির পুঞ্জাক্ষী। তাই তাঁদের যেকোনো লেখা থেকে সুন্দর সুঘ্রান বের হত। হিউমর ছিল বেশ।
"আফ্রিকান এক ক্রিশ্চান নিগ্রো আমাকে দুঃখ করে বলেছিলেন, 'ক্রিশ্চান মিশনারিরা যখন আমাদের দেশে এসেছিলেন তখন তাদের হাতে ছিল বাইবেল, আমাদের ছিল জমিজমা। কিছুদিন বাদেই দেখি, ওদের হাতে জমিজমা, আমাদের হাতে বাইবেল।' " -রসগোল্লা, ধূপছায়া
হতবাক হলাম এইটা জেনে যে, আমার পড়া অন্যতম প্রিয় লেখা 'রসগোল্লা' গল্পটা ছিল সংক্ষিপ্ত ভার্সন। গল্পটা 'ধূপছায়া' এর একমাত্র গল্প, মূল ভার্সন এই বইয়েই আছে। আমার মত অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়েই গল্পটি পড়েছেন, তাদেরকে অন্তত মূল গল্পটি পড়ে দেখার আহবান। সৈয়দ মুজতবা আলী এর লেখা যতটুকু পড়সি মনে হল খুব বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন, আদর করে বললে, "খুব দুষ্ট প্রকৃতির!"। অন্য লেখাগুলি প্রবন্ধ হলেও রসগোল্লার রস বেরিয়ে সেগুলোও ভিজে গেছে। মূলত উনী নিজেই রসভর মাথার লোক। বাঙালির বিদেশ ভ্রমণ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলি বিশেষ মজার।
ধূপছায়া মূলত তৎকালীন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সৈয়দ মুজতবা আলীর যেসব লেখা ছাপা হয়েছিল তারই একটা সংকলন। যার মাঝে তখনকার সমাজ, শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পর্কিত লেখকের আলোচনা ও সমালোচনা স্থান পেয়েছে। রসগোল্লা বাদে সবগুলোই প্রবন্ধ। আমরা স্কুলে পাঠ্যপুস্তকে এই রসগোল্লা গল্পটার সংক্ষেপিত ভার্সন অনেকেই পড়েছি। সৈয়দ সাহেবের সকল লেখাই রম্য ধাঁচের; প্রবন্ধও ঠিক সেরকম। কিন্তু রম্যের ফাঁকে ফোকরে গুরুকথা তিনি স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করেন। অসাধারন ভাষাগত দক্ষতা ও কাহিনি বিনির্মাণের জন্য আমি বরাবরই মুজতবাপ্রেমী।
মুজতবা আলীর লেখাগুলো এমন যে, পড়লে মনে হবে আপনি বুঝি লেখকের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। ধূপছায়া তে এমন আড্ডা দিলাম ভারতবর্ষ ও বিশ্বের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। রুচিশীল রসাত্মক আঙ্গিকে লিখতে মুজতবা আলীর জুড়ি নেই..
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘রসগোল্লা’ গল্পটি যাঁরা পাঠ্যবইয়ে পড়েছেন, তাঁরা জেনে নিন- স্কুলজীবনের অসম্ভব প্রিয় এই গল্পটি ‘ধূপছায়া’ গ্রন্থ থেকেই নেয়া হয়েছিল এবং নেয়া হয়েছিল নির্দয়ভাবে কাটাছেঁড়া করে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তাদের সম্পাদনায় ‘রসগোল্লা’র গোল্লাটুকু আমরা পেয়েছিলাম, রস প্রায় সবই বাদ পড়েছিল। কিন্তু তাতেই আমাদের স্কুলজীবন খলখলিয়ে উঠেছিল। বইয়ের পাতা থেকে ঝাণ্ডুদা যদি বেরিয়ে আসতে পারতেন, তবে কে জানে, আমাদের কান মলে দিয়ে হয়তো বলতেন- তবে রে! এই পড়েই এতো! আসল জিনিস তো জানিসই না।
তো সে জিনিস জানতে ‘ধূপছায়া’র ধূপে আত্মাহুতি দেয়া চলে। আর সে মরা প্রেমে মরার মতোই রসের সন্দেহ নেই।
ফেইসবুকে 'বাঙালি' নামের একটা প্রবন্ধের কিছু অংশ পড়ে 'ধূপছায়া' বইটি পড়বার প্রথম শখ জাগে। সে শখ পুরণ করতে বসা হয় কিন্তু সব গুলো টানা পড়া হয়নি। হয় ক্লাসের ফাঁকে নয়তো বিকেলে হলের বেলকনিতে বসেই একটা দুইটা করে মোট ৩১ টা গল্প-প্রবন্ধ-ভ্রমণগাঁথা শেষ হলো ২০২৪ এর শেষ দিনে। ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থা, গান, শিক্ষাব্যবস্থা, জনপ্রিয় ব্যক্তি-স্থান ও কৃষ্টির অনবদ্য আলোচনা রয়েছে এ গ্রন্থে। লেখনীতে তুলনা, আলোচনা, সমালোচনা, বর্ণনা, গাম্ভীর্যতা, হাস্যরস সবই আছে। এই বৈচিত্র্যময় লেখনী শক্তির জন্যই তো মুজতবা আলী এত প্রিয়🤍
ফাইনাল চলার কারণে দীর্ঘ চারমাস স্থির ছিলাম 'ধূপছায়া' তে...🙆♂️
পুরো বইয়ে গল্প/প্রবন্ধ মিলে এন্ট্রি আছে ৩১টি। তন্মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে 'ইংরেজি বনাম মাতৃভাষা' প্রবন্ধটি। এই প্রবন্ধে মুজতবা সাহেব দেখিয়ে দিলেন যে তিনি শুধু শব্দের উপর শব্দ সাজিয়েই বিতর্কে পারদর্শী নন, একইসাথে পরিসংখ্যান পরিবেশন করেও যুক্তি ফাঁদতে তিনি দারুণ পটু। সুচারু রসিকতাসম্পন্ন সেই ১৯৫৩ সালে লেখা এই প্রবন্ধখানি আজ এই ২০১৯ সালের বাংলাদেশে কতটুকু 'রিলেভেন্ট' তা আজ আমার পক্ষে পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব নয়।
এক জাতির অভ্যেসের সাথে আরেক জাতির অভ্যেসের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তিনি যে রসের সাথে করেছেন সেরকম রস বাংলা সাহিত্যে পাওয়া যাবে না আর বৈকি৷