বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৮ জুলাই জারি হলো জরুরী অবস্থা, ইন্টারনেট শাটডাউনের সাথে কারফিউ। ঢাকার বাইরে বেড়াতে এসে আমিও যখন ঘরবন্দী, এই বইটা হাতে এল ঠিক তখন।
আর আবিষ্কার করলাম, কাকতালীয় ভাবে এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটও একটি রাজনৈতিক জরুরি অবস্থাঃ ১৯৭৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা ইমার্জেন্সি।
ইমার্জেন্সি চলাকালীন সময়ে শতভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া দেশকে এ উপন্যাসে উপস্থাপন করা হয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপকে। জরুরী অবস্থার পুলিশি ধরপাকড় শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, গ্রেপ্তার হয় বামপন্থী ছাত্ররা, তাদের বাঁচাতে গিয়ে আটকে পড়েন আদর্শবাদী কজন শিক্ষকও। কিন্তু সেই দারুণ দুঃসময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মেরুদণ্ড গুছিয়ে রাখেন লাইব্রেরির শেলফে, তোষামোদের কালিতে তারা লিখতে থাকেন রিসার্চ প্রপোজাল, পর্দার আড়ালে তারা ব্যস্ত থাকেন উঁচু পদ আর পার্টির অনুগ্রহ পেতে। জেএনইউ এর আঙিনায় তখন যেদিকেই চাওয়া যায়, থাকে কেবল বিশ্বাসঘাতক ব্রুটাস।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর কানকথা লাগানোর খেলায় এই উপন্যাস কিছুটা যেন স্মরণ করায় ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা। উঠে আসে, সমাজে সম্মানিত অধ্যাপকদের বিবিধ নষ্টামির বয়ান। উঠে আসে, জ্ঞানচর্চা মুখ্য হবার কথা ছিলো যেখানে, বিশ্ববিদ্যালয় নামের সেই প্রতিষ্ঠানকেও আমরা কতটা নষ্ট করেছি – তার একটা সাংবাদিকসুলভ বিবরণ।
অথচ, এই সাংবাদিকের দৃষ্টিই উপন্যাসটাকে টেনে ধরে পেছনে। ততকালীন ভারতবর্ষের প্রদেশ আর জাতের যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সে সম্পর্কে কিছুমিছু ধারণা না থাকলে ধরা যায় না চরিত্রদের পক্ষ। অধ্যাপক রজতপ্রকাশ মিত্র, সালমান কুরেশি আর মোহনলাল গৌতমদের কাঠামো এমনভাবে স্ট্যাপল করা ওই সত্তরের দশকের ভারতে; চরিত্রগুলো তাই কিছুতেই হতে পারে না উপন্যাসের জগতের।
শুধুমাত্র রচনাশৈলীর জন্য দুইটি তারকা দিলাম। রচয়িতা স্বাধীন ভারতের উপর্যুপরি রাজনৈতিক ঐতিহাসিক সময়কে মূল-এ রেখে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস রচনা করেছেন। এখানে ১৯৭৫-১৯৭৭ সালে ভারতের জরুরী অবস্থা (ইমার্জেন্সি)- কে কেবলমাত্র ঘটনার উত্তপ্ততা বোঝাতে কাজে লাগানো হয়েছে। এছাড়া লেখক যেভাবেই হোক একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অভ্যন্তরীণ' রাজনীতি কিভাবে কাজ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অভ্যন্তরীণ' রাজনীতি কিভাবে ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পাঠচক্র ঘুরেঘুরে একই অবস্থানে চলে আসে যথা- ইমার্জেন্সি, পুলিশ ছাত্রাবাসে ঢুকে ছাত্রদের গ্রেপ্তার, এবং ভি সি-প্রক্টর-ডীন তাদের সম্পূর্ণ জীবনি শেষে একটু রাজনীতি অতঃপর আবার সেই ইমার্জেন্সি।
চরিত্র কেন্দ্রীক উপন্যাসের চরিত্রই মূখ্য। তাই চরিত্রগুলোকে স্বচ্ছতা প্রদান করা জরুরী। তবে পাশাপাশি জরুরী হচ্ছে চরিত্রগুলোও কেন্দ্রীয় ঘটনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটা এই উপন্যাসে অন্তত আমি খূঁজে পাইনি। যেন এক পাক্ষিক শুধু বলেই গেলেন।
'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি' বিষয়ক পড়াশুনা করতে যাদের আগ্রহ আছে তারা একবার পড়ে দেখতে পারেন। রেজারেন্স হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
This entire review has been hidden because of spoilers.