Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.
Birth and Family Background: Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.
Education: Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.
Personal Life: Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.
Academic Career: After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.
Literary career: Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.
Other Activities and Awards: Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.
সত্যি অসাধারণ একটা বই। বইটি শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে লেখা হয়েছে।মহাবিশ্বের বিলিওন বিলিওন গ্যালাক্সির সাধারণ একটা গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ, সেই গ্যালাক্সির সাদামাটা একটা নক্ষত্রের নাম সূর্য, সেই সূর্যের ছোট একটি নীল গ্রহের নাম পৃথিবী। সেই পৃথিবীর বাসিন্দার নাম মানুষ, তাদের মাথার দেড় কেজি ওজনের মস্তিষ্কটি ব্যবহার করে তারা বের করে ফেলেছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কেমন করে সৃষ্টি হয়েছে! অসাধারণ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন আগাগোড়া বিজ্ঞানের মানুষ। শিক্ষকতা করছেন বিজ্ঞানের বিষয়ে, গবেষণা করছেন বিজ্ঞানের বিষয়ে লেখালেখি করছেন বিজ্ঞানের বিষয়ে। সকল কিছু নিয়ে ব্যক্তি জাফর ইকবালও পুরোদস্তর বিজ্ঞানমনস্ক। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির হাতও অত্যন্ত চমৎকার, বিজ্ঞানের লেখা যখন লিখেন তা হয় একদম অমৃত। তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো একটুখানি বিজ্ঞান ও আরো একটুখানি বিজ্ঞান নামের দুটি চমৎকার বই। কিন্তু লেখালেখির বেশির ভাগ সময়টা প্রদান করেন সায়েন্স ফিকশন কিংবা কিশোর উপন্যাসে। এ নিয়ে বিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকদের মাঝে একটা স্থায়ী আক্ষেপ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল কেন আরো বেশি বেশি করে বিজ্ঞানের বই লিখেন না।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার ২০১৮-র বইমেলায় প্রকাশিত হলো 'বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস' নামে জাফর ইকবালের একটি বিজ্ঞানের বই। খুব খুশি হয়েছিলাম নন-ফিকশন ঘরানার বিজ্ঞানের এই বইটি প্রকাশ হয়েছে দেখে। তবে বই হাতে নিয়ে খুশি অনেকটাই কমে গেছে। প্রথমত বইয়ের কালেবর একদমই ছোট। বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে হোমো স্যাপিয়েনস পর্যন্ত আসতে হলে চারশো থেকে পাঁচশো পৃষ্ঠা লাগবে সচরাচর। সৃষ্টির শুরুর মুহূর্ত থেকে এগোতে এগোতে আজকের এই মুহূর্তটি পর্যন্ত আসতে আসলেই অনেক বড় কালেবরের দরকার। এমনিতে কেউ যদি নিজের উপস্থাপনার মুন্সিয়ানা ব্যবহার করে আড়াইশো থেকে তিনশো পৃষ্ঠায় তা উপস্থাপন করতে পারে তাহলেও চলে যায়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো কেউ লিখলে সেটা দুইশো পৃষ্ঠার মাঝে শেষ হয়ে গেলেও বলা যায় সমস্যা নেই। কিন্তু এই বইয়ে এত বিস্তৃত প্রসঙ্গের আলোচনা শেষ হয়ে গেছে মাত্র পঞ্চান্ন পৃষ্ঠায়। তা-ও আবার বইয়ের আকার সাধারণ উপন্যাসের বইয়ের মতো না। পকেট বইয়ের মতো ছোট। ফলে হয়েছে কি, মূল বিষয়গুলোতে শুধুমাত্র একটুখানি করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিয়েই শেষ। সেজন্য বইটি নিয়ে একটি বড়সড় আক্ষেপ রয়েই গেল।
আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী নই। সবসময়ে গণিত আর বিজ্ঞান ছিল আমার কাছে ভীষণ ঝামেলার দুইটা বিষয়। বিপদে না পড়লে এই দুই বিষয়ে মনোযোগ দিতাম না। এর একটা বড় কারণ ছিল, বিজ্ঞান বইয়ের খটোমটো ভাষা এবং কোন স্কুলেই গণিতের কখনোই ভালো একটা শিক্ষক না পাওয়া। সুতরাং, এই বিষয়ে আগ্রহ ছিল কি ছিল না, বুঝতেও পারতাম না। কিন্তু, ভবেশ রায়ের একটা বই পড়েছিলাম ছোটবেলায়। নানা বিজ্ঞানীদের পরিচিতি নিয়ে। নাম মনে নেই। খুব ভালো লেগেছিল সেই বয়সে। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র কৌতূহল থেকেই বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু পড়লেও পুরোপুরি বুঝতে পারি না এখনো। এই বই কেনা নিয়ে সেই কারণে একটু দোনমনো ছিলাম, কিন্তু, মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার যাই লিখেন, পড়ি। জানি যে, পড়া শেষ করে মনে হবে না যে সময়টা নষ্ট করলাম। 'বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস' পড়ে স্যারকে আরো ভালো লাগলো। এটি কালজয়ী কোন রচনা হয়তো নয়। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে স্যার প্রাণপনে শুধুমাত্র বাচ্চারা যাতে একটু বইপড়ার অভ্যাসে ঢুকে যায় এবং বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে ভয় দূর করে যাতে এই দুটো বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর বই আমরা যারা পড়তে পড়তে বড় হয়েছি, তাদের অনেকের এই বই ভালো নাও লাগতে পারে। আমার ভালো লাগে এটা ভাবতে যে উনি এই বিষয়ে একটুও দুশ্চিন্তা করেন না। কেন আরো বই 'দীপু নম্বর টু' হচ্ছে না, সেই ভাবনায় ওনার লেখা আড়ষ্টও হয়ে পড়ে নাই। উনি নানা বিষয়ে এবং অনেকটা দায়িত্বের সাথে একাই বাচ্চাদের জন্য লিখে যাচ্ছেন। এই বইও আসলে বিজ্ঞজনের জন্য নয়। ছোট ছোট মানুষ যাদের এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা থাকে এবং পাঠ্যবইয়ের কঠিন ভাষার ঠেলায় যাদের আগ্রহ গোড়াতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাদের জন্য এই বই এবং এই বই না লিখলে আসলে ওনার হারানোর কিছু ছিল না। জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে অনেকদিন ধরে এরকম একটা কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম। কারণ, লেখক হিসেবে সাহিত্যজগতে বিরাট কিছু করে ফেলার চেয়ে বাচ্চাদেরকে পাঠক হিসেবে তৈরি করার যেই চেষ্টা উনি নিঃস্বার্থ ভাবে করে যাচ্ছেন, আমরা যারা অনেকেই ওনার বই দিয়েই বইপড়ার চর্চায় ঢুকেছি তারা এই চেষ্টাকে যথাযথ সম্মান করি না। হ্যা, তাঁর বই ভালো নাই লাগতে পারে, কিন্তু তিনি কেন লিখেন তা যেন আমরা বড় হতে হতে ভুলে বসে আছি। ভাগ্যিস, উনি কারও কথা শুনে পাল্টে যাচ্ছেন না। সমানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বাচ্চাদের জন্য প্রতিবছর বেশ কটি বই উপহার দিতে। আর তাঁর কারণেই, এখনো ভবিষ্যতের সিরিয়াস সব পাঠক তৈরি হচ্ছে যারা হয়তো ইতিমধ্যেই গুডরিডসে একাউন্ট খুলে ফেলেছে। :)
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একেবারেই ছোটোদের কথা মাথায় রেখে বইটি লিখেছেন। তাই সহজ ভাষায় ও অল্পকথায় বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনসদের ইতিবৃত্ত লিখতে হয়েছে তাকে। আমি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নই। তা-ও মনে হলো বেশ তাড়াহুড়ো করে লেখা। আবার, কোথাও কোথাও যতটুকু ব্যাখা দেওয়া প্রয়োজন ততটুকু দেওয়া হয়নি। সবকিছু মিলে একেবারেই ছোটোদের জন্য বইটি উপযুক্ত হলেও টিনেজার পাঠকদের এই বই পড়তে নিরুৎসাহিত করব। খোঁজাখুঁজি করলে তারা আরও বিস্তারিত ও সহজ ভাষায় লেখা বই পেতে পারে। যেমন: স্যাপিয়েন্স বইটির বাংলায় মানসম্মত অনুবাদ প্রকাশ করেছে ইউপিএল।
জীববিজ্ঞান সম্ভবত মুহাম্মদ জাফর ইকবালের আ্যকাডেমিক পড়াশোনার ক্ষেত্র নয়। তিনি পদার্থবিদ্যা ও কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক ছিলেন। তাই পদার্থবিদ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বইতে বেশ গুছিয়েই লিখেছেন। আর, এত অল্পকথায় লেখার চাইতে সময় নিয়ে ও আরও তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে বড়ো পরিসরে লেখা যেতো। তাতে সকল বয়সের পাঠকের জন্য উপযোগী হতে পারতো বইটা।
১৯৫২ সালে মিলার ও উরি একটা ছোট্ট পৃথিবী সৃষ্টি করলেন ল্যাবে। কিভাবে? কাচের আবদ্ধ একটা গোলকে তারা পানি,মিথেন, এমোনিয়া ও হাইড্রোজেন নিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা আর গরম করতে লাগলেন। পানি বাস্পীভূত হতে লাগল আর তরলে ফেরত আসতে লাগল৷ কারেন্ট ডিসচার্জ দিয়ে তারা ব্জ্রপাতও বানালেন। কিছুদিনের মধ্যেই জীবনধারণের প্রয়োজনীয় এমিনো এসিডগুলি ওই একটা গোলকে তৈরী হয়ে গেল! মাই গড!!!
জাফর ইকবাল মূলত বইটা লিখেছেন ছোটদের জন্য। মাত্র ৫৫ পাতায় তিনি আমাদের টেনে নিয়ে গেছেন বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স পর্যন্ত। বিগ ব্যাং এর পার্টটা মোটামুটি ঠিক আছে কিন্তু হোমো স্যাপিয়েন্স মানে প্রাণের আবির্ভাব ও বিবর্তনের পার্টটায় অনেক গ্যাপ আছে। যেটা স্বাভাবিক কারণ স্যার জীববিজ্ঞান এর ছাত্র ছিলেন না। তিনি এই পার্টটা না লিখলেও পারতেন।
বইটা শিশুদের জন্য লেখা দেখে অনেক জায়গায় আউটডেটেড ও ভেজাইল্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে মনে হয়। তবে মোটামুটি ক্রম তিনি ঠিক রাখার ট্রাই করেছেন।
একই সময়ে আমি নীল ডি গ্রাস টাইসনের বই এস্ট্রোফিজিক্স ফর ইয়াং পিপল পড়ছি দেখে কিছু মিল লক্ষ্য করেছি৷ তবে টাইসন তার সীমানার বাইরে পা ফেলেননি দেখে তার বইটা অনেক বেশি অথেনটিক ও সুন্দর হয়েছে।
আর আমার ব্যাক্তিগত মত হচ্ছে বিজ্ঞানের বইতে আপনি কতটা সিম্পলিফিকেশন করছেন? আপনি যতটা লিখবেন সলিড লিখেন।কিছু কঠিন আইডিয়া, তথ্য, বিশ্লেষণ থাকুক, যেগুলি বাচ্চাদের পরবর্তী দিনের কৌতুহল জাগায়, অথচ বইয়ে কোন অর্ধসত্য না থাকে। বিবর্তন এর পার্টটা আমার কাছে এই অর্ধসত্য ক্যাটেগরিতে পড়েছে।
আমি আসলে শিশুদের এমন ভেজাল তথ্য দেবার পক্ষপাতী নই। যে বিষয়ে আমি অথরিটি নই, সেই বিষয়ে কেন আমার লিখতে হবে? এর চেয়ে স্যার বিগ ব্যাং ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে লিখতেন!
বইটি বেশ সংক্ষিপ্ত মনে হতে পারে, কিন্তু মুহম্মদ জাফর ইকবাল মূলত সবার কথা, বিশেষ করে ছোটোদের কথা মাথায় রেখে খুবই সহজ ভাষায় বিষয় পরিচিতি মূলক একটি বই লিখার চেষ্টা করেছেন, এইদিক থেকে লেখককে পুরোপুরি সফলই বলব। তবে ইদানিং কালের গৎবাঁধা এবং একঘেয়ে সায়েন্স ফিকশানের পর তাঁর কাছ থেকে আরো বড় পরিসরে এই ধরনের আরো কিছু লিখা পাওয়ার তৃষ্ণাটা রয়েই যাচ্ছে।
জাফর স্যারের কাছ থেকে বিগ হিস্ট্রির বই আরও আগেই আসা উচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত এলো যখন, পড়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ছোটদের জন্য লেখা বই, তাই একটু বেশিই অনুযোগ আছে। কিছু কিছু অংশ এমনভাবে লেখা হয়েছে যে, আগে থেকে প্রসঙ্গগুলোর ব্যাপারে জানা না থাকলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা থাকে। আর এত্তো ছোট পরিসরে লিখতে গেলে হাত-পা বেঁধে লিখতে বসতে হয় - তা জানার পরও লিখলেন, এটাই আশ্চর্যের। উনি তিনশ পাতার বই লিখলেও বাচ্চারা পড়বে- ব্যাপারটা উনিও জানেন। চাইলেই বইটিকে বিস্তৃত করে আরও চমৎকার করে তোলা সম্ভব ছিল। আফসোস!
এটা শুধু একটা বই না, বলা যায় পুরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা আছে সব কিছু সম্পর্কে একটা কালেকশন। মহাবিশ্ব সৃষ্টি থেকে শুরু করে কিভাবে পৃথিবীতে প্রানের আগমন হলো, কেন পৃথিবীতেই হলো সবই জানা যায় এখান থেকে। এমন কি মানুষের সৃষ্টির আগেও যে এর আরো প্রজাতি ছিল সারা বিশ্ব জুরে, সে বিষয়েও খুব সুন্দর বর্ণনা আছে। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে বই টা থেকে অনেক কিছু জানতে পারা যায়।
ধীরে ধীরে আমাদের দেশে বিজ্ঞান এবং গণিত নিয়ে লেখালেখি, বই বের হওয়া, পাঠকের কাছে এইসব বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোটদের জন্য সহজ ভাষায় বিজ্ঞান বা গণিতের বই লেখা শুরুর কৃতিত্ব'টা অনেকটা জাফর ইকবাল স্যারের। তিনি নিউরণে অনুরণন, নিউরণে আবারো অনুরণন, একটুখানি গণিত, গণিতের মজা মজার গণিত, একটুখানি বিজ্ঞান, আরেকটুখানি বিজ্ঞান ইত্যাদি অনেক বই রচনা করেছেন।
ধীরে ধীরে পাঠকের কাছে এই ধরণের বইয়ের চাহিদা যখন বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন অন্যান্য আরো অনেক লেখক যোগান দিতে এগিয়ে এসেছে। তবে জাফর ইকবাল স্যার নিজে এই ধরণের বই লেখা কমিয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকের দাবির মুখে তিনি আবার এই জনরা'য় লেখালেখিতে ফিরে আসেন। ২০১৭ সালে সহজ ক্যালকুলাস, এবং ২০১৮ সালের বইমেলায় তাঁর "বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স" প্রকাশিত হয়।
বইয়ের বিষয়বস্তু বইটির নামের মধ্যেই চলে এসেছে। সৃস্টির শুরু বিগ ব্যাং থেকে আজকের আমরা। এই দীর্ঘ সময় পরিক্রমনে কেমন ছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
সময়ের শুরু, বিগ ব্যাং, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণ, ইনফ্ল্যাশন, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, ডারউইন ও বিবর্তন, ডায়নোসরের বিলুপ্তি, হোমো ইরেক্টাস, হোমো ফ্লোরোসিয়েন্সিস, হোমো নিয়ানডারথাল এবং হোমো সেপিয়েন্স।
সবকিছুই বইটির মধ্যে রাখা হয়েছে তবে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে৷ বইটি মাত্র ৫৫ পেজের। সেটিও সাধারণ বইয়ের সাইজে নয়, পকেটবুক সাইজ। যেহেতু অনেক ক্ষুদ্র পরিসরে লিখা, তাই এই বইয়ে ডিটেইলসের আশা না করাই ভালো। আশাহত হতে হবে। বইটি আরো একটু বড় ক্যালিবারে আরেকটু ডিটেইলসে গেলে আরো অনেক ভালো হতো।
কিন্তু বইটি যেহেতু ছোটদের জন্য লেখা, বেশি ডিটেইলস বা বর্ণনায় গেলে তাদের কাছে ব্যাপারগুলি বোধগম্য হতো না।
বিগ ব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত ১৩.৭ বিলিয়ন বছরের ধারণাটুকু নিতে চাইলে বেশ ভালো বই। ছোটদের বিজ্ঞান বিষয়ক বই হিসেবে ভালো সংযোজন৷ তবে যারা আরো গভীর থেকে জানতে বা শিখতে চান, এই বই পড়ে তাদের আশাহত হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে৷
ফরিদপুরের বই মেলা থেকে বইটি কিনলাম। বইটিতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার বিগ ব্যাং এর সময় থেকে মানব প্রজাতির ইতিহাস সংক্ষেপে খুব সুন্দর ভাবে লিখেছেন। কিন্তু বইটি খুব বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। তারপর বই সাইজটাও অন্যান্য বইয়ের মত না। বইটিতে বিগ ব্যাং ও মানব প্রজাতি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া থাকলেও আরো কিছু তথ্য দিয়ে মোটামুটি ২০০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশীত হলে আমাদের মত সাধারণ পাঠকেরা বিগ ব্যাং সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারত।
খুবই ছোট্ট একটা বইয়ে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় গল্পগুলো বেশ ভালভাবেই তুলে ধরেছেন জাফর ইকবাল স্যার। পড়ার সময়ে মনে হচ্ছিল, একই সাথে কসমস আর স্যাপিয়েনস এর ফ্লেভার পাচ্ছি। বইয়ের গ্রাফগুলোর প্রিন্টের কোয়ালিটি বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে বেশ কিছু জায়গায়।
বই: বিগ ব্যাং থেকে হোমোস্যাফিয়েনস লেখক: মোহাম্মদ জাফর ইকবাল মূল্য: উল্লেখ নেই (পিডিএফ আছে) পৃষ্ঠা: ৫৪ ধরণ: সায়েন্টেফিক
"বিগ ব্যাং থেকে হোমোস্যাফিয়েনস" ন��মটা দেখেই বইটির বিষয়বস্তু অনুধাবন করা যায়। মহাবিশ্বের সূচনা কীভাবে হয়েছে? কী আছে এই মহাবিশ্বে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানিরা আবিষ্কার করেন "বিগ ব্যাং তত্ত্ব"।
বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে এক মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় মহাবিশ্ব। বিস্ফোরণ বলতে এখানে দ্রুত প্রসারণকে বুঝানো হয়েছে। সৃষ্টির শুরু থেকে এখন অবধি এই প্রসারণ চলমান রয়েছে। যার কারণে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু ক্রমশ একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। (এই প্রসারণ বুঝার জন্য সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে, বেলুন। একটা বেলুনের গায়ে ছোটো ছোটো বিন্দু এঁকে বেলুনটি ফুলানো হলে আমরা দেখতে পাবো, বিন্দুগুলো ক্রমশ একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তুও এভাবে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।)
বিগ ব্যাং শুরুর এক সেকেন্ডের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রন জাতীয় কণা তৈরি হয়। এর তিন মিনিটের মধ্যে ইলেক্ট্রন জাতীয় পদার্থগুলো সৃষ্টি হয়। পরবর্তী বিশ মিনিটের মধ্যে তৈরি হতে শুরু করে পরমাণুর নিউক্লিয়াস। এর প্রায় তিন লক্ষ আশি হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো মুক্ত আলো ছড়িয়ে পড়ে মহাবিশ্বে। যার অস্তিত্ব মাইক্রোওয়েভ হিসেবে আবিষ্কার করে উড্রো উইলসন ও আর্নো পেনজিয়াস নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তারপর দীর্ঘ ১৫০ মিলিয়ন বছর পর একটি দুটি করে আবির্ভাব হতে থাকে নক্ষত্রের।
ডার্ক ম্যাটার বা অন্ধকার বস্তু, যা দেখা যায় না, কোনোরকম বিক্রিয়াও করে না, কিন্তু মহাকর্ষ থেকে এটির অস্তিত্ব আছে বুঝা যায়, বিগ ব্যাংয়ের আটত্রিশ হাজার বছর পর এর পরিমাণ ছিলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ৬৮%। সেই ডার্ক ম্যাটারেই হাইড্রোজেন জমা হয়ে তাপ ও চাপের প্রভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভব হয় নক্ষত্রের। তেমনি এক বিশাল নক্ষত্রের বিস্ফোরণের আঘাতে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে জন্ম হয় সূর্যে, পৃথিবীসহ গ্রহগুলো। পৃথিবীর সাথে থিয়া নামক গ্রহাংশের মহাজাগতিক সংঘর্ষে জন্ম হয় চাঁদের। তারও বহু বছর পর ক্রমাগত সৃষ্টি হতে থাকলো নিউক্লিয়াসবিহীন এককোষী প্রাণি, ভাইরাস, ব্যক্টেরিয়া, অক্সিজেন, বহুকোষী প্রাণি, ডাইনোসর, স্তন্যপায়ী, প্রাইমেট, এপ এবং মানুষ। বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের বিবর্তনের ফসল এসব। বলা হয়, এক প্রজাতির ডাইনোসোরের বিবর্তনের ফসল চড়ুইপাখি। বানর নয়, বরং স্তন্যপায়ী ইঁদুরের মতো স্তন্যপায়ীরাই মানুষের পূর্বপুরুষ। স্তন্যপায়ীদের একটা অংশ পানিতে নেমে বসবাস শুরু করে। যা তিমি এবং ডলফিনে রূপান্তরিত হয়। ডাঙায় থাকা স্তন্যপায়ীরা বিবর্তনের মধ্যদিয়ে নানা রূপ ধারণ করেছে, তারই একটা রূপ হচ্ছে প্রাইমেট। বানর থেকে মানুষ নয়, বরং মানুষ এবং বানর দুটি দুই প্রজাতির প্রাইমেট থেকে এসেছে। পরিবর্তন ঘটেছে মানুষের আকার আকৃতিতে। বিপ্লব ঘটেছে চিন্তা ও আবিষ্কারে।
আমাদের শরীরের যে ভারী মৌলগুলো আছে, সেগুলো এসেছে নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে। তাই আমরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছু নই, আমরা নক্ষত্রের সন্তান।
এছাড়াও, মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী? হোমোস্যাফিয়েন্সের ভবিষ্যৎ কী? মানুষের বিভিন্ন প্রজাতি, মানুষের দ্বারা পৃথিবীতে সৃষ্ট বিপর্যয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।
প্রতিক্রিয়া: ধর্মীয় অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যা যেমন বিজ্ঞান দিতে পারে না, বিজ্ঞানের অনেক ব্যাখ্যাও ধর্ম মানতে পারে না। এই বইটি পড়তে গেলে অতি অবশ্যই এই বিষয়টা মাথায় রেখেই পড়তে হবে। কোনটা আপনি ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিশ্বাস করবেন, কোনটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্বাস করবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। এখানে মানুষের বিবর্তন নিয়ে ডারউইনের মতাবাদের সাথে যেমন সংঘর্ষ আছে, তেমনি সংঘর্ষ আছে ইসলাম ধর্মের। বইটিতে উল্লেখিত সবগুলো বিষয়ই সংক্ষেপে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপনভঙ্গি বেশ ভালো লেগেছে। প্রতিটি বিষয়ের আলাদা শিরোনাম এবং সচিত্র বর্ণনার জন্য বুঝতে বেগ পেতে হয়নি। বিগ ব্যাং তত্ত্ব এতদিনে এসে সুস্পষ্ট হতে পেরেছি। এখানে মহাবিশ্বের প্রসারণ, নক্ষত্রের জন্ম, অন্ধকার জগত, প্রাণের আবির্ভাব, বিবর্তন, মানুষের বিভিন্ন প্রজাতি ইত্যাদি সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সহজ ভাষায়। প্রতিটি টপিকস নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে, আছে বিস্মিত হবার সুযোগ। সব মিলিয়ে, চিন্তার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সহায়ক হবে সল্প বিস্তৃতির এই বইটি। বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ থাকলে, মহাবিশ্ব নিয়ে আকর্ষণবোধ করলে পড়ার আমন্ত্রণ রইলো 'বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাফিয়েনস'। হ্যাপি রিডিং!
ধরা যাক, পেশায় আপনি একজন ব্যবসায়ী বা একজন পুলিশ; অথবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের শারিরিক শিক্ষার ক্লাস নেন। কিন্তু আপনার অনেকগুলো অভ্যাসের মধ্যে একটি ভালো অভ্যাস হচ্ছে অল্পতেই বিস্মিত হওয়া এবং প্রশ্ন করা। আপনি সময় পেলে টুকটাক বই-ও পড়েন। মহাবিশ্ব নিয়ে জানার আপনার আগ্রহ আছে কিন্তু সময়ের অভাবে কিংবা একটু জটিল বিষয় হওয়ার কারণে মহাকাশ বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে না। এ বিষয়ে আপনার একদম-ই জ্ঞান নেই অথবা ভাসাভাসা ধারণা রাখেন।
মানুষের বিবর্তন নিয়েও অনেক তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা শোনেন কিন্তু সেই বিতর্কের কিয়দাংশও বুঝে উঠতে পারেন না। এমতাবস্থায় একটা সহজ ও সাবলীল বই দরকার যা আপনাকে এই বিষয়গুলো সস্পর্কে কিছুটা হলেও জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করবে। সেই ক্ষেত্রে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস বইটা আপনার জন্য পাঠ্য হতে পারে।
একটা ছোট বিন্দু থেকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির গল্পে আপনিও হাঁটতে শুরু করবেন। বিগ ব্যাং নামের মহাবিস্ফোরণের কারণ আমরা না জানলেও ইনফ্লাশন(বিস্ফোরণের নিকটবর্তী সময়), হাইড্রোজেন বা হিলিয়ামের ফিউশন ও সুপারনোভার কারণে নক্ষত্রের সৃষ্টি, গ্যালাক্সির উদ্ভব এসব সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হবে।
মহাবিশ্ব যে এক জায়গায় থেকে নেই সেসবের জটিলতাও একটু একটু করে সহজ হয় উঠবে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা বিস্ময়কর ডার্ক ম্যাটারের কারণে অন্যসব গ্যালাক্সি থেকে আমরা কেন প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি সেই বিষয়েও আগ্রহ তৈরি হবে।
মহাবিশ্ব ও আমাদের সৌরজগতের বয়সের হিসাব খুব জটিল কোনো বিষয় না। মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের সৌরজগত খুবই নগন্য। এরকম কোটি কোটি সৌরজগত ইতোপূর্বে তৈরি হয়েছে আবার নতুন করেও তৈরি হচ্ছে। সবকিছু ছাপিয়ে সর্বোচ্চ আগ্রহের ব্যাপার হলো আমাদের পৃথিবী নামক নীল গ্রহটি।
মিল্কিওয়ে(ছায়াপথ) গ্যালাক্সির কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে অতি ছোট একটি নক্ষত্র সূর্যকে কেন্দ্র করে আটটি গ্রহের সবথেকে বিস্ময়কর গ্রহে আমরা বসবাস করছি। সৌরজগতের মাত্র এই একটি গ্রহেই প্রাণের উদ্ভব ও বিস্তার ঘটেছে। মহাবিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী হোমো স্যাপিয়েন্স(সভ্য মানুষ) এই পৃথিবীতেই বিচরণ করে।
আমরা মানুষ হওয়ার পূর্বে আমাদের পরিচয় কী ছিলো? পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার কেন এবং কীভাবে ঘটেছে? মহাদেশগুলো কীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে? পৃথিবী ও মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস কীভাবে জানা সম্ভব হয়েছে? এককোষী প্রাণী থেকে মস্তবড় ডাইনোসর, ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গাছগাছালি ও সর্বশেষ স্তন্যপায়ী প্রানীদের বিবর্তনের ধারা কীভাবে পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত সেসব জানতে বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।
বইটি একেবারেই প্রাথমিক পাঠ বলা যায়। বইয়ের অভ্যন্তরে অনেক ঘটনাপ্রবাহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই। যা থাকলে হয়ত ভালো হত। আমার মনে হয় লেখক জাফর ইকবাল এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছেন। এই বইটি মূলোতো স্কুলের বাচ্চাদের জন্য লেখা। তাঁদের উপযোগী করে তোলার জন্য নক্ষত্রের উদ্ভব, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, ডার্ক ম্যাটার, প্রাণের বিবর্তণের বিষদ ব্যাখ্যাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যা প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের জন্য একটু বিরক্তিকর মনে হতে পারে। তবে... কেবল এই বইটি পড়েই যে সব জেনে ফেলা সম্ভব তা কিন্তু নয়। বরং বই পড়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হওয়া-ও যে কোনো বইয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। যা আমার কাছে যথার্থ বলেই মনে হয়েছে। মাত্র পঞ্চান্ন পৃষ্ঠার এই পুস্তিকাটি সবার সুখপাঠ্য হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
সর্বোপরি, আমরা নক্ষত্রের সন্তান। আমাদের দেহের গাঠনিক উপাদানগুলো অন্য কোনো নক্ষত্রের বিস্ফোরণের মাধ্যমে এসেছে। কেবল আমাদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে তা কিন্তু নয়। বরং ভিন্ন কোনো গ্যালাক্সির ভিন্ন কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করেও আমাদের থেকে উন্নত প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে থাকতে পারে। হয়ত আমরা বা সেই উন্নত প্রাণী কেউ কারো কাছে আসার সুযোগ পাচ্ছি না; বরং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বৈশিষ্টের কারণে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি। কোনোদিন আমরা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারবো না কি তার পূর্বেই কোনো দানবাকার গ্রহাণু এসে আমাদের ধ্বংস করে দিবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। উন্নত প্রাণী মানেই বিধ্বংসী। ঠিক যেমনটা আমাদের পূর্ব পুরুষ হোমো ইরেক্টাস বা নিয়ান্ডারথালেরা তাঁদের নিকটবর্তী জাতি ও পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীকে ধ্বংস করেছে।
------ বই পর্যালোচনা - ফোরকান ১৪ মে ২০২৩ -------- বই: বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স লেখক: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
"হে প্রাচীন, হে প্রবীণ, হে আদিম মহাকাশ! লুকিয়ে রেখেছো ভুলে যাওয়া ইতিহাস।", —দানিকেন, রূপম ইসলাম
বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস
একটা প্রবাদ আছে— ছোট মরিচে ঝাল বেশি। পঞ্চান্ন পৃষ্ঠার 'বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস' গ্রাফিক নভেলটি ঠিক তেমন। সুন্দর সুন্দর বৈজ্ঞানিক ছবি, লেখনী এবং বর্ণনার ধরনে গুরুগম্ভীর বিজ্ঞানের বই থেকেও ফ্যান্টাসি পাঠের অনুভূতি বেশি পেয়েছি। আসলে মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে বই যতই প্রাঞ্জল করার চেষ্টা হোক না কেন তা অসম্ভব। তবে সুখপাঠ্য। প্রতিটি পরিচ্ছেদ অনুধাবন করতে চাইলে পঞ্চান্ন পৃষ্ঠার পিছনে একশ পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠার সময় দিতে হবে।
মহাবিশ্বের বিলিওন বিলিওন গ্যালাক্সির সাধারণ একটা গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ, সেই গ্যালাক্সির সাদামাটা একটা নক্ষত্রের নাম সূর্য, সেই সূর্যের ছোট একটি নীল গ্রহের নাম পৃথিবী। সেই পৃথিবীর বাসিন্দার নাম মানুষ, তাদের মাথার দেড় কেজি ওজনের মস্তিষ্কটি ব্যবহার করে তারা বের করে ফেলেছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কেমন করে সৃষ্টি হয়েছে! (ফ্ল্যাপ)
বৃহত্তম বৃহস্পতি, সুন্দরীতমা শুক্র, মূলশক্তির উৎস সূর্যের নিকটতম বুধ এইসব গ্রহতে না এসে এই নীল গ্রহে প্রাণ এল কীভাবে? কী এর বিশেষত্ব? গুহামানব থেকে আজ আমরা চাঁদে পাড়ি জমিয়েছি। এই নিযুত বছরের পথচলাটা কি এতটাই মসৃণ ছিল? কেমন ছিল তা এক বসায় ধারণা পেতে চাইলে বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস ভালো একটা উপায়। নামের মতই মহাবিশ্বের উৎপত্তি থেকে 'জ্ঞানী মানুষ' সৃষ্টি হওয়ার সময়কালের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে বইটা।
বাংলা বইয়ে পাঠ-পরিচিতি বলে একটা ব্যাপার ছিল। এই বইটিও সেই পাঠ-পরিচিতির মত বিগ ব্যাং থেকে মানুষের উৎপত্তি পর্যন্ত ঘটিত প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে হালকা ধারণা দেবে সংক্ষিপ্তাকারে। যা আরো বিস্তারিতভাবে জানার আগ্রহ তৈরি করে দিবে। কমবয়সীদের সামনে খুলে যাবে সম্পূর্ণ নতুন এক জগত। তবে বইটি জানার ইচ্ছেকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না। শুধু একটি জটিল প্যাঁচের কিছু সুঁতোর মুখের সন্ধান দিবে। যা মাথায় মোটামুটি গিঁট্টু লাগিয়ে দিবে। যেই গিঁট্টুগুলো আসলে বিজ্ঞান কখনো সমাধান করতে পারবে বলে মনে হয় না।
বইটিতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, প্রাণের উদ্ভব, নক্ষত্রের জন্ম, বিবর্তনবাদ এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ভবিষ্যৎ এসব নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা হয়েছে। বিজ্ঞানের এসব জাদুকরী বিষয় যাদের কাছে একঘেয়ে এবং কঠিন, ক্রাউন সাইজের এই বইটি তাদের জন্য সহজবোধ্য। প্রতিটি আলোচনার সাথেই সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট রঙিন ছবি দেয়া আছে। মহাকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিস্ফোরণ কোনটি? আইস্টাইনের মত বিজ্ঞানীর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কী? "বানর থেকে মানুষ"- বিবর্তনবাদ নিয়ে এইরকম একটা অবসেশন আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এই অবসেশনটা কতটুকু ভুল তা বইটি ধরিয়ে দিবে। একটুখানি দাঁড়ানো যে চড়ুইটাকে 'হুঁশ' বলে ভয় দেখাচ্ছেন তারও পূর্বপুরুষ অতিকায় কোনো ডায়নোসর। আমার জন্য সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হল মানুষের অনেকগুলো প্রজাতি অধ্যায়টা। এই প্রজাতি নিয়ে জাফর ইকবাল স্যার একটা সায়েন্স ফিকশনও লিখেছিলেন— 'নিয়ান'। ওটাও বেশ পছন্দের। আমরা নক্ষত্রের সন্তান জেনে যেমন গর্ব অনুভব করবেন, আবার আমরাই পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ হব জেনে অপরাধ বোধ হবে। সুপারহিরো লাভাররা জেনে খুশি হবেন ভবিষ্যতে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে একজন সুপার মানব সন্তান জন্মানো সম্ভব। এমনই চমক জাগানিয়া সব তথ্যের সমাহার বইটিতে।
আমরা কী বিশ্বাস করব বা করব না তা একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্য কারোর তা বিচার করার অধিকার নেই। কিন্তু সভ্য পৃথিবীর মানুষ হিসেবে বিজ্ঞানের এইসব বিষয়ে ধারণা রাখা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে যে জাতির তথ্যভাণ্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ সে জাতি তত উন্নত। (ব্যক্তিগত মতামত)
সবশেষে এই বইয়ের মূল কথা আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে চাই।
প্রিয় অংশ: "তুমি কিন্তু মোটেও তুচ্ছ একজন মানুষ নও, তুমি হচ্ছ নক্ষত্রের সন্তান! তোমার শরীরে নক্ষত্রের অংশ রয়েছে, যার শরীরের নক্ষত্রের অংশ রয়েছে, সে কী কখনো ক্ষুদ্রতা, হীনতা, দৈন্যতা দেখাতে পারে?"
এই মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি আছে।এরকম একটা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ।এই বিশেষত্ব হলো এই গ্যালাক্সি এর একটা গ্রহে আমরা বাস করি যার নাম পৃথিবী।পৃথিবীর ইতিহাস জানতে চাইলে তাই গ্যালাক্সি আসবে,গ্যালাক্সি এর সৃষ্টি জানতে চাইলে জানা লাগবে এই অসীম মহাকাশের গল্প। লেখক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছোট কথায় মহাকাশের সৃষ্টি থেকে শুরু করে পৃথিবীর সৃষ্টি দিয়ে মানবজাতির উত্থান সম্পর্কে ভাল তথ্য দিয়েছে। যদিও আরও বিস্তৃত লিখলে ভাল হতো তবুও এটা ছোটদের জানার জন্যে ভাল বই।
বিশেষকরে বিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার এবং চিন্তা করবার শুরু জাফর ইক���াল স্যারের এই বই থেকে। অসাধারণ। যেকেউ বিগব্যাং থেকে হোমোস্যাপিয়েন্স পর্যন্ত প্রাথমিক জ্ঞান এবং যুক্তিনির্ভর চিন্তা অর্জন করতে পারবে এই বইটি পড়ে।
বাচ্চাদের জন্য অনেক ভালো ছবিও রয়েছে। ভালোই লাগলো।খারাপ না।তবুও কেনো ৩ দিলাম আল্লাহই জানে।তবে বইটা বিগ ব্যাং থেকে হমো সাপিয়েন্স পর্যন্ত অনেক সহজ ও সক্ষেপে ব্যাখা করেছে।🙄
বেশ সহজ করে বড় বড় বিষয় খুব অল্প কিছু বাক্যে ব্যখ্যা করা হয়েছে। ক্লাস ৯-১০ এর ছাত্রদের জন্যে নিখুঁত। একটা সাধারণ ধারণা যেমন তৈরি করবে ঠিক তেমনি আরো জানার জন্যে আগ্রহী করে তুলবে।
গ্রন্থটি তে মহাজগতের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত বলা হয়েছে। বিজ্ঞানে মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমার মতে এই গ্রন্থগুলো বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় পড়তে দেওয়া উচিত।
বইটি মূলত বাচ্চাদের জন্য হলেও যে কেউ পড়তে পারেন। অনেক তথ্য আগে থেকে জানলেও নতুন কিছুই যে জানিনি তা বলা যাচ্ছে না। বইয়ের যা শিরোনাম তাতে বইটির অন্তত তিনশো চারশো পৃষ্টা হবার কথা। অতি সংক্ষেপে বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে হোমো স্যাপিয়েনসের ইতিহাস সহজ ভাবে তুলে ধরেছেন। কিভাবে বিগ ব্যাংয়ের পর থেকে আমাদের বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি হলো, হলো সৌরজগত, পৃথিবী, পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার, পৃথিবীতে প্রাণী বসবাস উপযোগী হওয়া থেকে শুরু করে হোমো স্যাপিয়েনসের ইতিহাস একনাগাড়ে বলে গেছেন স্যার। কিন্তু তিনি চাইলে এই বর্নণা আরো বিশালাকারে দিতে পারতেন আর তার লেখা হিসাবে আমাদেরও তা থেকে মনের খোরাক জুটত।