অবশেষে ধরা পড়ে গেছে পলাতক। এখন ছিনিয়ে নেওয়া হবে যা তার ছিল। কী নিয়ে সে পালিয়েছিল? কেনই বা পালিয়েছিল? হাইকিং করতে আসা ছেলেটি কে? কী তার উদ্দেশ্য। জাফতিন কি পারবে ভালোবাসার মানুষকে পেতে? ক্রমে ক্রমে খোলাসা হয় অনেককিছু। জানা যায়, আসলে কে পলাতক। কিসের জন্য পলাতক। কার জন্য পলাতক। বেরিয়ে আসে এমন সব সত্য যা জানা ছিল না কারোই। উঠে আসে এমন কিছু যা করে দেয় স্তব্ধ।
জন্ম ২২শে ডিসেম্বর। সাইফাই ও ফ্যান্টাসি প্রিয়। বিভিন্ন গল্প সংকলন ও পত্রিকায় লেখালেখি ছাড়াও সম্পাদনা করেছেন কিছু সংকলন ও ম্যাগাজিন। শখের বশে টুকটাক অনুবাদ করে থাকেন। সেই সাথে একজন প্রকাশক, প্রফেশনাল প্রুফরিডার, এডিটর এবং বুককভার ডিজাইনার। প্রকাশিত বইসমূহ : পলাতক (২০১৮), এক পাতার গল্প (২০২৩), বিয়ে থা (২০২৪) প্রকাশিতব্য বইসমূহ: শবশিঙা: জিঘাংসা, সংক্রমণ ১.০
Sazal Chowdhury is a Bangladeshi author, editor, and translator with a keen interest in science fiction and fantasy. He began writing for literary magazines and anthologies, later expanding into editing curated collections and periodicals. His creative work often blends imagination with a sharp sense of narrative structure, while his translations bring lesser-known voices into new linguistic landscapes.
Alongside writing, Sazal is a publisher, professional proofreader, literature editor, and book cover designer.
Published Works: Palatak (Sci-fi, 2018), Ek Patar Golpo (Micro fiction, 2023), Biye Tha (Meta Fiction, 2024)
বিজ্ঞান কম বুঝে এমন এক সুন্দরীকে বইটা ধরাই দিছি। পড়ে বুঝুক বিজ্ঞান কারে কয়। যদি কপচানো বিজ্ঞান বুঝতে পারে তাইলে লেখক সফল। কেননা লেখক যে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আমাদের মতো বিজ্ঞান জানা পাঠকের জন্য না। ওটুকু কমন বিজ্ঞান আমরা অনেক আগে থেকেই জেনে আসছি বুঝে আসছি। যাইহোক, শুধু গল্প হিসেবে আমি বলব লেখার প্লটটা বেশ দুর্বল। ডায়লগ গুলোও সেইম দুর্বল। দুর্বল লেখনিও। লেখনিতে অ্যামেচার হলেও থ্রিলারের যে স্বাদটা উনি দিতে চেয়েছেন সেটাতে সফল। তাই সাধারণ বিজ্ঞান আর থ্রিলারের স্বাদ নিতে চাইলে অনায়াসেই বইটা পড়তে পারেন। ভালো লাগবে।
বইটা পড়তে গিয়ে প্রথমদিকে মাথাটা সিরিয়াসলি গরম হচ্ছিল, জানেন! তার কারণগুলো কী, শুনবেন? গ্রাম্য ভাষা, ভয়ানক-রকম দ্বিমাত্রিক সব চরিত্র, একপেশে বিবরণ, হাস্যকর সংলাপ, হলিউড থেকে তুলে আনা একের পর এক বিবরণ— আর ক'টা বলব? কিন্তু... কিন্তু এগুলো ছাপিয়ে এই বই বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে নিজের জায়গা বানাতে সক্ষম হয়েছে দু'টি জিনিস দিয়ে। প্রথমত, এর নন-লিনিয়ার প্লট— যা গল্পের অভিমুখ, গতি, এমনকি চরিত্রদের নিয়ে আমাদের ভাবনাকেও বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি, দর্শন, বিজ্ঞান, এমনকি কবিতার সমন্বয়ে একটিই লেখায় এতখানি ভাবার খোরাক বাংলা কল্পবিজ্ঞানে পাওয়া এক অতি বিরল ঘটনা। তা সত্বেও বইটাকে তিনটি তারার বেশি দেওয়া যেত না। কিন্তু নির্ঘণ্ট অংশে দেওয়া বারকোড-টি স্ক্যান করে আমি প্রায় 'দরবিগলিত' হলাম। এখানে বিস্তৃততর পাঠের জন্য যে-সব রিসোর্স দেওয়া আছে, তা স্রেফ অমূল্য। অতঃপর চতুর্থ তারাটি ঢুকে পড়ল রেটিঙে। বইটা পড়ুন। গল্প নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বরং নির্ঘণ্ট অংশে দেওয়া জিনিসপত্র, আর সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের অতি কঠিন তত্ত্বকেও বোঝাতে পারার জন্যই বইটা অবশ্যপাঠ্য বলে আমি মনে করি। অলমিতি।
কল্পবিজ্ঞান কী? এই নিয়ে মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হতেই পারে। নানান জন এতে নানান মত দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করে। তবে সংক্ষেপে যদি বলি—‘ভবিষ্যৎ রূপকথা’র আরেক নাম এই কল্পবিজ্ঞান; তাহলে অবাক হবেন? খুবই সাধারণ উত্তর, অবাক হওয়ার কিছু নেই। কল্পবিজ্ঞানের উৎপত্তি ঘটে কল্পনা থেকে। যে কল্পনায় মিশে থাকে সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ছোঁয়া। আজকের দিনে ব্যবহৃত সাবমেরিন, ট্যাংক কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র-সহ এমন অনেক আবিষ্কারের উদ্ভাবন হুট করে হয়নি। যেমন, ফরাসি লেখক জুল ভার্নের ‘টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালে। যেখানে সমুদ্রের তলদেশে এক জলযানের সাথে আমাদের পরিচিত করানো হয়েছিল। সেই জলযানের অনুপ্রেরণা নিয়ে ঠিক আটাশ বছর পরে সিমন লেক ১৮৯৮ সালে সাবমেরিন আবিষ্কার করে বসেন। কল্পবিজ্ঞান যখন রূপ নেয় বাস্তবতায় তখন সেটাকে আর কল্পকাহিনি বলে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব না।
যাহোক, এই ভবিষ্যৎ রূপকথা’র ইতিহাস যে অনেক পুরোনো—তা বলা না গেলেও; তৎকালীন সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার সেইভাবে প্রচলন ঘটেনি বলে হয়তো সাহিত্যিক’রা এইরকম দারুণ কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন। বর্তমানে যদি এই কল্পবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করা হয়, প্রথমেই লেখকদের মাথায় ব্যামো শুরু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আজ থেকে ১০০ বছর পর কী হবে বা ১০০০ বছর পর এই মহাবিশ্বে কী কী পরিবর্তন ঘটবে; তা নিয়ে চিন্তা করা এবং সেই চিন্তা অনুযায়ী পুরো গল্প দাঁড়া করিয়ে বৈজ্ঞানিক আলপনা আঁকা—অনেক কষ্টসাধ্য বটে। সে-জন্য দরকার কঠিন সাধনা। ঠিক এই কারণে হয়তো দেশে কল্পবিজ্ঞান নিয়ে কাজের প্রসার খুব একটা হচ্ছে বলে মনে হয় না। একজন লেখক একটি থ্রিলার গল্প যত সহজে লিখতে সক্ষম, কল্পবিজ্ঞান লেখা কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। কারণ সেই কল্পবিজ্ঞানে নতুন কিছু নিয়ে অনুমান, সেই অনুমানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গল্প সাজিয়ে বৈজ্ঞানিক সম্ভাষণ—খুব সহজ কোনো বিষয় না। কিন্তু ❛পলাতক❜ উপন্যাসের লেখক—সেই অসম্ভবকে কিছুটা হলেও সম্ভব করে দেখাতে পেরেছেন।
❛পলাতক❜ লেখকের লেখা প্রথম বই হলেও, সেখানে তিনি গতানুগতিক কল্পবিজ্ঞানের দেওয়াল ভেঙে নন-লিনিয়ার প্লটের সাথে জীববিজ্ঞানের জ্ঞান, প্রযুক্তি নিয়ে সহজ ধারণা, দর্শন নিয়ে ভাবনা, দারুণ সব সংজ্ঞা এবং উপমা দিয়ে উপন্যাসটি সাজাতে সক্ষম হয়েছেন। উক্ত বইয়ে শুধু একটি গল্প আর তাতে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির হরেক রকম ব্যবহার দিয়ে সাজানো রয়েছে ভাবলে অনেকটা ভুল হবে; এই গল্প অমরত্বের খোঁজে পালিয়ে বেড়ানো এক পলাতকের। অমরত্বের সংজ্ঞার্থ যেহেতু এসেছে উপন্যাসে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গল্প-কাহিনি আমি-আপনি পড়লেও এই বইয়ে সেটা অনেকটা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একেবারে হাতেকলমে শিখিয়ে দেওয়ার মতোই। তথ্য-উপাত্ত বিস্তর থাকলেও সেগুলো বেশ সুন্দরভাবে বোঝানোর আয়োজন করেছেন লেখক। ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক’রা অমরত্বের সন্ধানে যে এইরকম কিছু করে বসবে না; সেটাও বা কে জানে?
➲ আখ্যানপত্র—
অবশেষে ধরা পড়ে গেছে পলাতক। এখন ছিনিয়ে নেওয়া হবে যা তার ছিল। কী নিয়ে সে পালিয়েছিল? কেনই বা পালিয়েছিল? হাইকিং করতে আসা ছেলেটি কে? কী তার উদ্দেশ্য। জাফতিন কি পারবে ভালোবাসার মানুষকে পেতে? ক্রমে ক্রমে খোলাসা হয় অনেককিছু। জানা যায়, আসলে কে পলাতক। কীসের জন্য পলাতক। কার জন্য পলাতক।
বেরিয়ে আসে এমন সব সত্য যা জানা ছিল না কারোই। উঠে আসে এমন কিছু যা করে দেয় স্তব্ধ।
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛পলাতক❜ উপন্যাসটি নিয়ে শুরুতে কুণ্ঠাবোধ থাকলেও সেটা খুব দ্রুত কেটে যেতে শুরু করে। প্রথমত এই বইয়ের নন-লিনিয়ার টাইমলাইম এমনভাবে সাজানো—সেই জন্য এই সমস্যার সৃষ্টি হবে। তবে ভয়ের কিছু নেই, কয়েকটা পর্ব পড়ার পর সবকিছু ঝকঝকে তকতকে মনে হবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, সিকোয়েন্স সাজানো হয়েছে পাঠক মস্তিষ্ককে ধোঁকা দেওয়ার জন্য; এই ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যটা ভালো লেগেছে।
❛পলাতক❜ উপন্যাসে লেখক বায়োবট, টেলোমিয়ার নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। ‘শূন্য থেকে সৃষ্টি’ হওয়া ভুজুংভাজুং দিয়ে পাঠক বুঝিয়ে গল্প নিয়া টানাটানি একেবারেই করেননি। কেন, কী, কীভাবে হয়েছে প্রত্যকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তা-ও প্রাঞ্জল বর্ণনা দিয়ে। লিখনপদ্ধতি প্রথমে কঠিন মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে সেটা সহজবোধ্য হয়েছে। শুধু বিজ্ঞানের ব্যবহার দিয়ে গল্প এগিয়েছে তা না; রয়েছে ইমোশনাল অনেক সংলাপ, ফাইটিং সিকোয়েন্স এবং কয়েকটি সুন্দর টুইস্ট। সাসপেন্সও রয়েছে যথোপযুক্ত। সব মিলিয়ে উপভোগ্য।
● সূত্রপাত—
সময়টা ৩০১৮ সালের। পৃথিবীতে তখন মাত্র কয়েক মিলিয়ন লোকের আবাসভূমি। সবাই পাড়ি জমিয়েছে অন্যান্য গ্রহের উদ্দেশ্য। সেখানে তাদের বসবাস। উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া তখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গলিঘুঁজিতে। স্কাইক্যাবে করে আকাশ রুটে রয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। এ-সব বাদ দিলে, গল্পটা শুরু হয় একরামকে অপহরণের মাধ্যমে। আড়াইশ বছর ধরে পালিয়ে থাকা একরামকে কেন অ��হরণ করা হয়? কীভাবে সে এতগুলো বছর বেঁচে রয়েছে? তা-ছাড়া ‘শুভ বিদায়, আব্বু।’ বারবার বলা সংলাপের মাহাত্ম্য কী? অমরত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা একরাম, মনুষ্য মস্তিষ্ক নিয়ে চলা আজাদ, দূরদর্শী ও সতর্ক খর্বিশ এবং ‘আলোকমালা’র স্রষ্টা জাফতিনের মধ্যকার কী সম্পর্ক; সেই সব প্রশ্ন নিয়ে আবর্তিত হয়েছে ❛পলাতক❜ বইয়ের মূল কাহিনি।
● গল্প বুনট • লিখনপদ্ধতি • বর্ণনা শৈলী—
কল্পবিজ্ঞান জনরায় লিখনপদ্ধতি যদি সুখপাঠ্য না হয় তবে সেটা দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। আরও যেহেতু লেখকের প্রথম বই; তাই এই নিয়ে আলাদা সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। লেখক সেই সতর্কতা মেনে সহজ লিখনপদ্ধতি অনুসরণ করে, জটিল বিষয়বস্তুর স্বচ্ছ বর্ণনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপনা করা হলেও, রেশটুকু থেকে গিয়েছে পুরোনো। এই পুরোনো রেশ ধরে রাখতে লেখক একরাম-সহ কয়েকটি চরিত্রের সংলাপে ‘আঞ্চলিক’ ভাষার প্রচুর ব্যবহার করেছেন। কেন এই ব্যবহারের উদ্যোগ সেই নিয়ে ব্যাখাও দিয়েছেন। বিষয়টি প্রথমে দৃষ্টিকটু মনে হলেও, পরবর্তীতে স্বাভাবিক মনে হবে। দেশিয় ভাবটা মাথায় রেখে লেখক যে কাজটা করেছেন; তা বই পড়লে আরও ভালোভাবে আন্দাজ করতে পারবেন।
নন-লিনিয়ার স্টাইলে গল্প বুননের সাথে অনেক সংলাপ বা সিকোয়েন্স কয়েকবার রিপিট হয়েছে। এই রিপিট হওয়াটা দরকার ছিল, পূর্বের পর্বে কী ঘটেছিল তা জানাতে। কারণ অতীত-বর্তমান দুই টাইমলাইন একসাথে চলা; তার ওপর নন-লিনিয়ার প্লটের সিকোয়েন্স! একটু ভাবেন শুধু। লেখককে যে কতটা খাটতে হয়েছে এই টাইপ প্লট বিল্ডাপ করতে সেটা আপাতত ভাবতে চাই না। ফাইটিং সিকোয়েন্স গতানুগতিক হলেও ভালো লেগেছে। এই উপন্যাসে অনেকগুলো কবিতার ব্যবহার ছিল, যার মধ্যে প্রায়ই জীবনানন্দ দাশের। গল্পের ব্যগ্রতা প্রদর্শনের জন্য এই কবিতাগুলো দারুণ মানিয়েছে। এক ধরনের শূন্যতা ঘিরে ধরে তখন।
● চরিত্রায়ন—
গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে একরাম, আজাদ, জাফতিন, খর্বিশ-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আছে তাদের ব্যাকস্টোরি, যেখানে মিশে আছে লুকানো যত সত্য। কাহিনির সাথে চরিত্রায়নও বেশ পোক্ত। এই দিকটা অবশ্যই অন্যান্য দিকগুলোর সাথে পজিটিভ মার্কের যোগ্য।
● অবসান—
শেষটা ভালো। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নেই। যেহেতু এই বইটি একটি সিরিজের অংশ; সেই দিক থেকে সমাপ্তি যথার্থ মনে হয়েছে। যদিও শেষের পর্বগুলো খুব দ্রুত শেষ হচ্ছিল, তবুও এই নিয়ে অভিযোগের কিছু নেই।
● খুচরা আলাপ—
পলাতকের শূন্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বার্থ হাসিলের যুদ্ধ, অমরত্ব স্বাদের মিশেলে তৈরি করা গল্পে দার্শনিকতার ছোঁয়া পূর্ণতা এনে দিয়েছে। বেশ কিছু সংলাপ মনে দাগ কাটার মতো এবং কিছু সংজ্ঞা দীর্ঘদিন স্মরণে রাখার তুল্য। বলার মতো রয়েছে আরও অনেককিছু, তবে সেটা পাঠকদের জন্য তোলা থাক। সব অনুভূতি আর রহস্য আমি প্রকাশ করে দিতে চাই না। পলাতকের দুনিয়ায় প্রবেশ করে—আপনিও পলাতকের পালিয়ে বেড়ানোর রহস্য খুঁজতে এখনই নেমে পড়ুন।
➣ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
প্রচ্ছদ শিল্পী সজল চৌধুরীকে, এই বই পড়ার পর সম্পূর্ণ অন্য রূপে আবিষ্কার করলাম। কল্পবিজ্ঞানের মতো ভবিষ্যৎ সজল চৌধুরী লেখক হিসেবে যে কতটা দারুণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম বইতে সেই ধারণা স্পষ্ট। উন্নতি করে আরও দুর্দান্ত কিছু উপহার দেওয়ার যোগ্যতা যে ওনার রয়েছে; সেটা লুকিয়ে রাখাটা বরং অন্যায় হবে। ২০১৮ সালের পর লেখক সজল চৌধুরী যে-ভাবে পলাতক; অতি শীঘ্রই যদি দুয়েকটা বই প্রকাশ না হয় তাহলে অনর্থ হয়ে যাবে। ‘শবশিঙা’ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আসার কথা থাকলেও, মনে হয় না এই বছরও মাস ছয়েকের মধ্যে আসবে। প্রচ্ছদের চাপে সংক্রমিত হয়ে ‘সংক্রমণ ১.০’ লেখার কথা মনে আছে কি-না; সেটাও এখন বিরাট প্রশ্ন হয়ে মাথায় ঘুরছে।
কল্পবিজ্ঞান জনরায় আরও বই ওনার থেকে পাঠক হিসেবে চাওয়া। এই জনরা নিয়ে আরও কাজ হোক, বলা যায় না ভবিষ্যতে এ-রকম কনসেপ্টে কিছু আবিষ্কারও হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তি এখন অনেক দ্রুতগতিতে ছুটছে। শুধু লেখক সজল চৌধুরী এক জায়গায় থমকে আছে।
● সম্পাদনা ও বানান—
বানান ভুল আর টাইপোর পাশাপাশি সম্পাদনায় যে ঘাটতি রয়েছে; লেখক সেটা আগেই জানিয়েছে। নতুন সংস্করণে বাড়তি শব্দ যোগের সাথে ভুলচুক ঠিক করে নেওয়া হবে আশা করি।
● প্রচ্ছদ • অলংকরণ • নামলিপি—
সজল ভাইয়ের প্রথম বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদ। অর্থাৎ এই প্রচ্ছদ দিয়ে ওনার যাত্রা শুরু। শুরুতে বাজিমাত করে দিয়েছে বলব না; তবে ২০১৮ সালের বিচারে এই প্রচ্ছদ ভালোই। পলাতকের কনসেপ্টের সাথে মিলেছে।
● মলাট • বাঁধাই • পৃষ্ঠা—
বইটির বাঁধাই ভালো। ১৯১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়তে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
⛃ বই : পলাতক • সজল চৌধুরী ⛁ জনরা : কল্পবিজ্ঞান থ্রিলার ⛃ প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ⛁ নামলিপি • অলংকরণ • প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী ⛃ প্রকাশনা : ভূমিপ্রকাশ ⛁ মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা মাত্র ⛃ পৃষ্ঠা : ১৯১
" এমন মানব জনম আর কি হবে মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে। " - লালন গীতি - ড.একরাম ,একসময়ের বিশাল মেধাবী এক বিজ্ঞানী ২৫০ বছর ধরে পলাতক। কিন্তু হঠাৎ করেই এক গোষ্ঠীর কাছে ধরা পরে যান তিনি। আস্তে আস্তে খোলাসা হতে থাকে ২৫০ বছর আগে তার অদ্ভুতুড়ে জীবন আর আবিষ্কার সমূহ। এখন কে বা কারা তাকে এত বছর ধরে খুঁজছে , কেনই বা এত বছর তাকে কেউ ধরতে পারছিলো না আর কি এমন জিনিস যার জন্য তারা এত বছর ধরে ড. একরামের পিছু ছাড়ছিলো না তা জানার জন্য পড়তে হবে " পলাতক "। - বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের সাইন্স ফিকশনের চর্চা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে প্রায় একই থিমের কিছু সাইন্স ফিকশন পড়তে পড়তে হাফিয়ে উঠেছিলাম। পলাতককে বলা যায় সে ধরণের টিপিক্যাল সাই ফাই থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরণের। গল্প নন লিনিয়ারভাবে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে। নন লিনিয়ার স্টোরিলাইন হওয়াতে গল্পে হার্ড বয়েল্ড সাই ফাই আর গল্পের ইমোশনাল দিকগুলো ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। সাথে কয়েকটি অধ্যয়ে কিছু কমিক রিলিফ আর কবিতার উপযুক্ত ব্যবহার গল্পকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। - গল্পের প্রধান চরিত্রগুলো গল্পের সাথে ভালোভাবেই মানিয়ে গিয়েছে। গল্পে বেশ কিছু জটিল সাইন্টিফিক টার্ম ব্যবহার করা হলেও সহজ লেখনীর কারণে সেগুলো বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।এই গল্পে বিশেষ এক চরিত্রের ক্যামিও গল্পকে আরো ইন্টারেষ্টিং করে তুলেছে ,আশা করি সামনে সেই চরিত্র সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারবো। শেষে গিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর পায়নি ,সেগুলোও এই সিরিজের পরবর্তী গল্পের জন্য তোলা থাকলো। তবে গল্প পড়তে গিয়ে কিছু প্রিন্টিং মিস্টেক চোখে পড়েছে ,আশা করি পরবর্তী সংস্করণে সেগুলো ঠিক করা হবে। - এক কথায়,এদেশের তথাকথিত সাই ফাই থেকে একেবারেই ভিন্নধারার এক গল্প হলো " পলাতক " ।গল্পের প্লট আর লেখনীর মান লেখকের প্রথম নভেল হিসেবে খুবই ইম্প্রেসিভ। যাদের সাইন্স ফিকশন রিলেটেড গল্প পড়তে পছন্দ তাদের জন্য হাইলি রিকোমেন্ডেড।সামনে এ সিরিজ সহ লেখকের পরবর্তী গল্প গুলোর জন্য শুভকামনা রইলো।
প্রথম প্রথম খেই পাচ্ছিলাম না। ধীরে ধীরে সবকিছু জোড়া লাগতে শুরু করে। আসলে অনেকদিন ফেলে রেখে রেখে না পড়ে বইটা টানা কয়দিন লাগিয়ে শেষ করলে হয়তো আরও বেশি উপভোগ্য হত। শেষটা সুন্দর আর চমকপ্রদ ছিল। আর বিজ্ঞানের অনেক অজানা কিছু জানা হল।
হিমেল ভাইয়ার বিভীষিকা'র ব্যাক পেজে বইটার নাম দেখেই ইন্টারেস্টিং লেগেছিল । অবশেষে পড়ে মনে হচ্ছে ,"হ্যাঁ ,বইটা আমাদের জন্যই ছিল ।" অনেক নতুন কিছু শিখেছি । নিজেকে এখন মহাজ্ঞানী পন্ডিত মন�� হচ্ছে ।
অনেকদিন পর বই পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো এর জন্য কিছু ফিডব্যাক দিবো। পাঠের প্রতিক্রিয়া দিবো। কিন্তু বহুদিনের ঘুমন্ত মস্তিষ্ক আর অচল হাত পড়ার পর কিছু লেখতে অসম্মতি জানাতে শুরু করায় প্রতিক্রিয়া লিখতেও দেরি হয়ে গেল। লিখতে বসেও মনে হচ্ছিলো আরেহ, কি যেন লিখবো? কি যেন ভালো লাগছে? কি যেন খারাপ লাগছে? সব শব্দ দেখি ব্রেন্টের উপর দিয়ে যায়, ধরতে পারছি না! 🙄🙄 😣
যাই হোক, লিখবো তো লিখবোই। রিভিউ যেমনই হোক। .
যদি এক কথায় বইটা পড়ার অনুভূতি প্রকাশ করি- লং ড্রাইভ। পড়তে পড়তে আমার কাছে একটাই জিনিস মনে হচ্ছিলো, আমি চমৎকার কোন রাস্তায় লং ড্রাইভে বের হয়েছি। ফান ট্যুর, জানালা দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের ঝলকানি দেখা যায়, রাস্তায় সামান্য রিস্ক আছে কিন্তু সেই রিস্কটাই আসল মজা। ঠিক যেন চান্দের গাড়ির সামনে বসে নীলগিরি ভ্রমণ।
কিন্তু নিলগিরি পৌছে আর ভালো লাগছে না। আরেহ! সব রহস্য সব মজা তো রাস্তায় রেখে আসছি! রাস্তার দুই পাশের খাদে! যা লেখক বিটলামি করে লুকাই রাখছে। 😠 .
কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্স ফিকশন আমার তেমন পড়া হয় না। এই জনরাটা আমার কাছে কেন জানি তেমন আকর্ষণীয় লাগে না। কিন্তু সুলতান সাহেবের এই কল্পবিজ্ঞান যেন অনেক ভিন্ন। না, শুধু এর গল্পে না, এর ধরনেই একেবারে ভিন্ন। এতগুলো টাইম লাইন একসাথে স্মুদলি মেলানো, আর এমন ভাবেই লেখা যে বুঝতে একদমই বেগ পেতে হয়নি। আর এত্ত মজা করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো লেখা যে মনে হচ্ছিলো পাহাড়ের নির্মল বাতাস খেতে খেতে সাথে কুলফিও খাচ্ছি। 🤤
.
নেগেটিভ বলতে শেষদিকে তাড়াহুড়ো করেছেন প্রুফরিডার। বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক রয়ে গেছে। আর শেষ রাস্তাটুকু বেশি সরল ছিল। এমন জার্নির পর সরল রাস্তা কি ভালো লাগে? অথবা হতে পারে মস্তিষ্ক উল্টাপাল্টা অবস্থায় আছে বলে সাধারণ সুন্দর কিছু পছন্দ করতে পারেনি। এটা একান্তই আমার মতামত। তবে বড় ক্ষোভ অন্য জায়গায়। লেখক পলাতক 2 লিখবেন আমি বুড়ি হওয়ার পর। -_-
.
কাহিনি সংক্ষেপ :
পলাতকের কাহিনী সংক্ষেপ আবার কি লিখবো? এমন একটা বই নিজ থেকে কাহিনী সংক্ষেপ লিখতে গিয়ে কোথায় কি স্পয়লার দিয়ে দেই আল্লাহ জানে! থাক!
জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন-
"সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব- নক্ষত্রেরো আয়ু শেষ হয়!"
একজন অমর ব্যক্তির বেশ কয়েকটি টাইমলাইনের গল্প এই বই। ব্যক্তিটি একরাম। সে কীভাবে অমর হলো ? তাহলে পলাতকই বা কে? পলাতক কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে? একরামই বা অমর হয়ে কি করছে? এর বেশী কিছু বললে নিশ্চিত স্পয়লার হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ এটা একটুখানি বিজ্ঞান এবং অনেকখানি ফিকশন নয়। বরং যতুটুকু ফিকশন তার থেকে একটু বেশী বিজ্ঞান। অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
পাঠ পতিক্রিয়া- বেশ ভিন্ন ধরণের সাই ফাই। অন্তত বাংলায় এমন সাইফাই আমি পড়িনি। সাথে থ্রিল টাও আছে মোটামুটি। প্রথমে সব কিছু কেমন কেমন খাপছাড়া লাগলেও যখন উত্তরগুলো পাওয়া শুরু হয় তখন বেশ চমকপ্রদ হয়ে ওঠে। প্লটটা বেশ। তবে এই বইটা আরও বড় হোলে ভালো হতো। কেমন যেন আধপেটা অনুভুত হচ্ছে। ব্যাপার না। পলাতক ২.০ আসছে। লেখককে শুভকামনা।
ড. একরাম। আবিষ্কার করে ফেলেছেন অমরত্ব। কিন্তু অমরত্ব লাভ করেও তার শান্তি নাই। ২৫০ বছর থেকে গ্রহ থেকে গ্রহন্তরে পালিয়ে বেরোতে হচ্ছে তাকে। কারন কেউ একজন (একরামেরই সহকর্মী খর্বিশ) তার অমরত্বকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায়। ক্ষমতার শিখরে উঠতে চায় তার এই অমরত্বকে ব্যবহার করে। কিন্তু একরাম কিছুতেই এটা হতে দিবে না। তাই ২৫০ বছর ধরে এই পালিয়ে বেরানো খর্বিশের বংশধরদের থেকে। কিন্তু কোন এক অসতর্ক মুহুর্তে ধরা পড়ে যায় তনিমা খর্বিশের হাতে। এবার হয়ত তাকে হারাতে হবে তার রহস্যের। কিন্তু দৃশ্য পটে এসে হাজির হয় এক বায়োবট। আজাদ। একরামেরই তৈরী। কিন্তু কি তার আসল উদ্দেশ্য, পরিচয়?
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ অন্য রকম একটা সায়েন্স ফিকশন বলা যাবে এটাকে। লাস্ট কয়েকপেজে এসে বড় ধরনের একটা ঝটকা খেতে হয়।
(যদিও ৫ দিয়ে দিয়েছি, কারণ সেখানে ভগ্নাংশ রেটিং দেওয়া সম্ভব নয়। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০ এর মধ্যে রেটিং দিই বলে, সেখানে ৯ এর অর্ধেক ভগ্নাংশই আসে)
পাঠ প্রতিক্রিয়া : . বইটি পড়ার জন্য প্রচুর এক্সাইটেড ছিলাম। সেদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন মেলায় গিয়ে পৌঁছলাম, তখনও পরিচিতরা কেউ গিয়ে পৌঁছায়নি। মেলায় ঢুকে ঘুরাঘুরি না করে, সাহিত্য বিকাশের স্টলের সামনে গিয়ে চোখ বুলাতে লাগলাম বইগুলোর দিকে, কিন্তু খেয়াল করলাম প্রকাশিত পরিচিত সব বই সাজানো আছে, একটি বই নেই! সেল্সমেনকে জিজ্ঞেস করলাম, “পলাতক বইটা স্টলে নাই?”। তিনি বললেন, আছে। ভেতর থেকে দুই কপি বের করে একটা ওপরে অন্যান্য বইগুলোর সাথে সাজিয়ে, আরেকটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “উপরে রাখা কপিটা বিক্রি হয়ে গেছে”। হাতে দেওয়া বইটি নেড়েচেড়ে দেখে রেখে দিলাম। একটুখানি পড়লেও পরে একসাথে পড়ার মজাটা যদি কমে যায়! সেজন্য। . পরদিন ফিরে আসার সময় গাড়ি জ্যামে আটকা পড়ায় ভাবলাম, ‘বই পড়ি’। তখন এটাই তুলে নিলাম পড়ার জন্য। গাড়িতে বসে একটু পড়লাম, বাসায় এসে বাকিটা পড়লাম ঘুমের ফাঁকে ফাঁকে, কারণ এর আগের দুইদিনের জার্নি ও রাতে ঘুম না যাওয়ায় প্রচুর টায়ার্ড ছিলাম, ঘুম পাচ্ছিলো। সেজন্য এই ছোটো বইটি পড়ে শেষ করতে মোট দুই দিনের মত লেগে গিয়েছিল। শুরু থেকে কাহিনী খুব মসৃণভাবে চলেছে এবং সেটা একদম শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। কোথাও দৌঁড় দেয়নি বা ঝুলে যায়নি। বেশ টানটান উত্তেজনাময় ছিল পুরো উপন্যাসটি। যতটা এক্সপেক্টেশন নিয়ে পড়তে বসছি, হতাশ হইনি বরং এক্সপেক্টেশনের তুলনায় বেশিই পেয়েছি। অপেক্ষা করছি সিরিজের পরবর্তি বইয়ের জন্য। . বইয়ের একদম শুরু থেকেই আগ্রহজাগানো, প্রতিটি অধ্যায়কে আগ্রহপূর্ণ করেছেন অধ্যায়ের নামের মাধ্যমে এবং অধ্যায়ের শেষে এমন কন্টেন্টগুলো রেখেছেন যে, ‘এর পরে কী হবে’ এটা জানার জন্যই পরের অধ্যায়ে যেতে হবে। লেখক প্রতিটি অধ্যায়কে সংখ্যাভিত্তিক না করে প্রতিটির আলাদা আলাদা নাম দিয়েছেন সেই অধ্যায়ের মূল বিষয়ের ওপর। এই কাজটা খুব ভালো লেগেছে। . প্রথমত আমার প্রিয় দু’টি জনরা হচ্ছে সাই ফাই ও থ্রিলার। আর যদি এই দু’টিকে একত্রে জুড়ে দেওয়া হয় সেটা আমার জন্য হয়ে ওঠে অবশ্যপাঠ্য। সেই সাথে রয়েছে লেখকের বৈচিত্র্যময় প্লট ও দারুণ লেখনী। সাসপেন্স, মিস্ট্রি, সাইন্স, হিস্টোরি সবই আছে বইয়ে। রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ম্যাথস, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি ও আরো বিভিন্ন বিষয়। . লেখক সাহিত্যের বিভিন্ন দিকগুলো নিয়ে যে এক্সপ্রেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে���, সেটা তিনি আগেই দেখিয়েছিলেন তার আগেকার অনলাইন ও অফলাইনের বিভিন্ন সংকলন ও ম্যাগাজিনের কাজগুলোর মাধ্যমে। এই বইতে লেখক তা আরো পাকাপোক্তভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন। বইটি লিখতে লেখককে যে কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়েছে সেটাই আমি ভাবছি শুধু পড়তে পড়তে! এত এত ইনফোর মিশেলে এত অসাধারণ একটা প্লট, যেই সেই কাজ না। দারুণ কাজ দেখিয়েন লেখক। অনেক অনেক তথ্য পেয়েছি পড়তে পড়তে, কিন্তু এত তথ্য ধারণ করতে একটুও ক্লান্তি আসেনি। সত্যি কথা বলতে, এত এত তথ্যসমৃদ্ধ লেখা আমার খুব পছন্দের। কিছু জানা তথ্য আবার জানলাম এবং অনেক অজানা তথ্য নতুন করে জানতে পারলাম। বেশ কয়েকবার পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গুগল, উইকি ও বিভিন্ন ব্লগেও এবং বইতে লেখকের দেওয়া নির্ঘন্টের লিঙ্কগুলোতে ঢুঁ মেরেছি আরো বিস্তারিত জানার জন্য বিষয়গুলো। . প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের পাঠকদের মধ্যে যারা সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করেন তারাই সায়েন্স ফিকশনের টার্মগুলো বুঝতে পারেন, বাকি আর্টস ও কমার্সের স্টুডেন্টদের কাছে এসব টার্মগগুলো ‘ব্রেন্টের ওপুর দিয়ে যায়’। কিন্তু এই বইটির ক্ষেত্রে লেখক সেসব টার্মগুলোকে বিস্তারিতভাবে সবার বোঝার সুবিধার জন্য অনেক সহজভাবে ব্যবহার করেছেন। সেই সাথে আরো ভালো করে বোঝার সুবিধার্থে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছবি। ছবির সংযুক্তির কারণে বিষয়গুলো আরো ভালোভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠেছে। এবং আমার বিশ্বাস বইতে ব্যবহৃত সায়েন্স এলিমেন্টগুলো সবাই সহজভাবে বুঝবে এবং উপভোগ করবে। . একেকবার একেক চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনাগুলোকে দেখিয়েছেন লেখক। এই বিষয়টি ভালো লেগেছে। বর্ণনাভঙ্গি অনেক বাস্তবিক ছিল, যার কারণে ঘটনাপ্রবাহগুলো অনুভব করছিলাম। আর লেখকের যেই দারুণ লেখনী, সাসপেন্স ধরে রেখেছেন তিনি পুরো বইয়ে। পাঠককে বইতে ধরে রাখার মত লেখনী। মনেই হচ্ছিলো না যে, এটি লেখকের প্রথম একক বই। লেখক শুরু থেকে রহস্যের জাল যেভাবে ছড়িয়েছে, ঠিক সেভাবেই ধীরে ধীরে রহস্যের জাল গুটিয়েছেন। রহস্যের সমাধানের মাধ্যমে, বিষয়গুলো ব্যাখ্যার মাধ্যমে দারুণ তৃপ্তি দিতে পেরেছেন। . বইয়ে দৃশ্যায়ন, সংলাপ, ছোটখাটো একটি অ্যাকশন এবং খুঁটিনাটি বর্ণনা করা হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। কাহিনীর মাঝে ঢুকে গেলে শেষ করেই উঠতে হবে। বইয়ের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট খুব ভালো লেগেছে। লেখক যে এই কাজটিতে খুব পটু, সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন এই বইয়ের প্রতিটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে। সেই সাথে রেখেছেন লেখকের পরবর্তি বই “সংক্রমণ”র একটি ক্যারেক্টার ‘অরূপ’ এর ক্যামিও। সবগুলো চরিত্রকে ভালো লেগেছে। মজা লেগেছে হেনা, রাশেদা, বাদল ও মজনুর “সবকিছু ব্রেন্টের ওপুর দিয়ে যাওয়া” ঘটনাগুলো। . বইয়ের ঘটনাগুলোর প্রয়োজনে যেসব কবিতা, গান ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলা একদম যথাযথ ছিল এবং সেগুলোর ফন্টের জন্য আরো বেশি ভালো লেগেছে। . বইয়ের প্রচ্ছদ এবং নামকরণ একদম ঠিক আছে। প্রচ্ছদটাও বেশ ভালো লেগেছে। প্রচ্ছদটাও করেছেন লেখক নিজেই। প্রচ্ছদের দিক থেকেও দারুণ কাজ দেখিয়েছেন লেখক। . নন লিনিয়ার স্টোরিটেলিং এর কারণে হয়তো কারো কারো কাছে খাপছাড়া লাগতে পারে, কিন্তু আমি ভরসা করেছি লেখকের কাজে এবং সেজন্যই লাভবান হয়েছি। . বেশকিছু বানান ভুল ও প্রিন্টিং মিস্টেক ছিল, কিন্তু কাহিনীর মধ্যে মশগুল থাকায় এগুলো অতটা চোখেই আটকায়নি। একটি সঙ্ঘঠনকে দেখানো হয়েছে যেটি সম্পর্কে কিছু জানায়নি লেখক। জাফতিনের অতীত জানায়নি, আরো বিভিন্ন চরিত্রের জীবনকে আলো-আঁধারীতে রেখে দিয়েছেন, আশা করি পরবর্তি বইয়ে লেখক সেগুলো জানাবেন। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি বইটি সংগ্রহ করার জন্য ও পড়ার জন্য।
পছন্দের জনরার মধ্যে অন্যতম জনরা হলো সায়েন্স ফিকশন। আর সায়েন্স ফিকশন হিসাবে "পলাতক" এক কথায় অসাধারণ। আমার মতে দেশে প্রচলিত অধিকাংশ সায়েন্স ফিকশন "একটুখানি বিজ্ঞান আর অনেকখানি ফিকশন" এই ধারণার, তবে "পলাতক" বলতে গেলে ব্যতিক্রমি। চরিত্রায়ণ, কাহিনি, লেখনিশৈলি সবটা মিলিয়ে এক কথায় চমৎকার। বিজ্ঞানের বিভিন্ন টার্মের ব্যবহার ও তথ্য-উপাত্তগুলো ছিল বেশ উপভোগ্য।
তবে অতৃপ্ত থেকে গেছি। কারণ উপন্যাসটা যেন খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে। আরেকটু থাকলে ভালো হতো। এজন্য রেটিং ৪। বেশ বুদ্ধিদৃপ্ত প্লট। শেষ টুইস্টটাও ছিল চমৎকার।
প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে আমি সজল চৌধুরীর বিশাল ভক্ত৷ দেশের অন্যতম সেরা প্রচ্ছদশিল্পীর কাতারে থাকা সজল চৌধুরীর যে মৌলিক থ্রিলার রয়েছে তা জানা ছিল না৷ ভার্সিটির এক জুনিয়রের সাথে সপ্তাহখানেক আগে রাতে চা খেতে খেতে গল্প করার সময় জানতে পারলাম৷ জানার পরেই নিয়ে এসে পড়লাম বইটি৷
প্রথমেই বলতে চাই যে কথা, এই উপন্যাসটি আসলে অন্যান্য গতানুগতিক সাইফাই নয়৷ লেখক ভিন্নভাবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে থ্রিলারের সাথে মিশিয়ে একটা চমৎকার গঠন দিয়েছেন উপন্যাসটিতে৷ আমার ভালো লেগেছিল লেখকের কাব্য অংশও৷ এছাড়াও দর্শনের বিভিন্ন দিকও লেখক সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন৷ একটা জিনিস ভালো লেগেছে, লেখকের বৈজ্ঞানিক জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ভাষায় প্রকাশের ব্যাপারটা৷ কেউ যদি দ্বিধাগ্রস্ত হন, তবে নির্ঘণ্ট অংশে রয়েছে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য৷
খারাপ লাগার মধ্যে বলতে গেলে ডায়ালগগুলো আমার কাছে তেমন শক্তিশালী লাগে নি৷ আর কিছু বিবরণ মনে হয়েছিল অনুবাদ বইয়ের মত, পাশ্চাত্যের অনুবাদ যা ঐ দেশের কনটেক্সটে লেখা৷ আর গ্রাম্য ভাষার প্রয়োগটা আরও ভালো হতে পারতো৷ এসব ছাপিয়েও উপন্যাসটি বেশ উপভোগ্য। লেখকের সামনে আরও বই চাই৷ এবার তো ধার করে পড়লাম, পরেরবার সেলফি,অটোগ্রাফ সহ মেলা থেকে বই সংগ্রহ করবো আশা রাখি৷ আর লেখকের প্রচ্ছদগুলোও আন্তজার্তিক পর্যায়ে যাক সেই কামনাও রইলো।
It's a nice book, good story buildup and the universe is created nicely. While reading, I always have the feeling, that the writer is rushing in every aspect. very fewer details and some things are not connected. So it would have been an excellent one if the writer has taken some more time to in portraying the characters and didn't rush to complete the book. Looking forward towards the part2.
ভালো ছিল। কবিতার ব্যবহারগুলো সুন্দর হয়েছে। লেখনীও ভালো। বিরক্তিকর ব্যাপারের মধ্যে ছিল মাঝেমাঝেই সংলাপের মধ্যে উত্তম পুরুষের পরিবর্তে নাম পুরুষ হয়ে গেছে কথাগুলো। বানান ভুল আছে কিছু। এটুকুই।
পড়ে শেষ করলাম সজল ভাইয়ের মৌলিক বই "পলাতক"। থ্রিলার কল্পবিজ্ঞান ঘরানার এটাই আমার পড়া প্রথম বই। আমি আসলে রিভিউ লিখতে পারি না তাই এখন যা লিখবো তা ঠিক রিভিউ হবে নাকি জানি না।
পলাতক বইটা মূলত থ্রিলার আর কল্পবিজ্ঞানের মিশেল হলেও এখানে ভালোবাসা আর দর্শনের বেশ কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছেন সজল ভাই। যা আসলেই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাছাড়া কিছু কিছু অধ্যায়ে ঘটনা অনুযায়ী ভাই কবিতার ব্যবহারও করেছেন যা মুগ্ধ হওয়ার আরও একটি কারণ।বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভাই এতো সহজভাবে বইয়ে তুলে ধরেছেন যে কারও যদি এই ব্যাপারে কোনো ধারণা নাও থাকে সে খুব সহজে বিষয়গুলো বুঝতে পারবে। এই তথ্যগুলো বেশ চমকপ্রদ। কারো যদি এসব বিষয় নিয়ে আরও জানার আগ্রহ থাকে তার জন্য বইয়ের শেষে নির্ঘন্টে বারকোড দেওয়া আছে তা স্ক্যান করলেই বিষয়গুলো নিয়ে আরও জানা যাবে আশা করি। বইটা পড়তে আসলেই অসাধারণ লেগেছে এবং পড়ার সময়টা বেশ উপভোগ করেছি। বইয়ের বেশ কিছু উক্তি অনেক ভালো লেগেছে বিশেষ করে বাবার সংজ্ঞাটা। বইয়ের প্রচ্ছদ আর বাইন্ডিং ভালো লেগেছে। কিছু জায়গায় বানান ভুল লক্ষ্য করেছি অবশ���য এতে পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি। কিছু কিছু প্রশ্ন থেকে যায় বইটা পড়ার পর যেগুলোর উত্তর পলাতক ২.০ তে পাবো আশা করি।
বইটা পড়ার পর আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হলো প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে সজল ভাইয়ের চমৎকার কাজ নিয়ে অনেক আলোচনা হয় কিন্ত তার এই বই বা লেখালেখি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। আমার মতে ভাইয়ের লেখাও তার প্রচ্ছদের কাজের মতই চমৎকার এবং তার এই দিকটাও আলোচনায় থাকা উচিত। অপেক্ষায় থাকলাম ভাইয়ের সংক্রমণ ১.০ আর পলাতক ২.০ এর জন্য। ভাইয়ের প্রতি শুভকামনা। ❤
বেশ মজার একটা থ্রিলার কল্পবিজ্ঞান পড়লাম। মূল চরিত্রের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো মজার ছিল। পাশাপাশি আজাদ, খবিশ্যা গুষ্টির সবাই, গিরগিটির কাজগুলো ছিল পেশাদারি। আলোকমালার রাশেদা, ব্রেন্টের ওপুর দিয়ে যাওয়া মজনু, বাদল, হেনা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উন্নতি করায় ভালো লেগেছে। জাফতিনের জন্য খারাপ লেগেছে। তবে কাহিনী শেষের দিকে এসে ধীর হয়ে গিয়েছে অনেক। শুরুর দিকের মত থাকলে পুরোটাই উপভোগ্য হত।
পদার্থবিজ্ঞান আর জীববিজ্ঞানের অনেক টপিকস উঠে এসেছে বইতে। কিছু মানুষ যেটার পিছনে ছোটে সেটার ভালো একটা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক তথ্য-উপাত্ত সহকারে। ভালো লেগেছে এটা। আর আজাদের পূর্ব জীবনের কাহিনী কষ্টদায়ক ছিল। তয় যেই লাইনটা পইড়্যা হাইস্যা ফালাইছিলাম সেইটা তুইল্যা দিলাম -
তারা বুঝে গেছে, গিরগিটি নামের এত দামী ঐ রোবটটা আদতে একটা গাধা। গিরগিটি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আজাদের বাচ্চা!”
ভিন্ন ধাঁচের তথ্যপূর্ণ একটি সায়েন্স ফিকশন। শেষ মুহূর্তের টুইস্ট বইটিকে দিয়েছে ভিন্নরকম এক মাত্রা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর প্রচলিত ধারায় ছুরি-কাঁচি চালানো 'পলাতক' লেখক সজল চৌধুরীর প্রথম মৌলিক বই হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।