দুই খণ্ডে লেখা এই উপন্যাসটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। লেখকের মতে, এটি কোনো ঐতিহাসিক উপন্যাস না। তবু ১৯০৫ সাল থেকে শুরু করে দেশবিভাগের পূর্বের সময়টুকুতে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, অন্তর্দ্বন্দ্ব, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষসহ অনেক কিছুই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে মোটামুটি দেশ বিভাদের সময়কাল পর্যন্ত ঘটনাবলি নিয়ে দারুণ একটা বই । আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে । প্রথম পার্ট পড়ে যে এক্সপেকটেশন ছিল তার পুরোটাই উসুল ।
হারাইনি। আছি এখনও। তবে, সমস্যা হচ্ছে, ভয়াবহ রিডিং ব্লকে পড়েছিলাম। লাস্ট ১১ দিনে মাত্র কয়েক পৃষ্ঠাই পড়তে পেরেছিলাম। যা হিসাব করতে গেলে ৫০ পৃষ্ঠাও হবে না। তবে, আজ শেষ করতে পেরেছি একটা বই। আশা করছি রিডিং ব্লক থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছি।
মধ্যাহ্ন-১ শেষ করে রিভিউ লিখেছিলাম। মধ্যাহ্ন-১ যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু মধ্যাহ্ন-২। হুদাই বললাম। জানি আমি। এইটা যে কেউই আন্দাজ করতে পারবেন। যাইহোক, হুমায়ূন আহমেদের লিখা মধ্যাহ্ন-২ আসলে এক বিস্তৃত কাহিনীর ধারাবাহিকতা, যা ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে হলেও ঐতিহাসিক উপন্যাস না। 'ঐতিহাসিক' শব্দটা শুনতেই ভারী লাগে না? মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বইয়ে ঐতিহাসিকতার কোনো কড়াকড়ি নাই। হুমায়ূনী স্টাইলে লিখা। যা মোটাদাগে যে কেউ সহজে বুঝবে।
সামনে এগোয়। বেশি বড় করবো না। আগেই বলেছিলাম, কাহিনী শুরু হয়েছে ১৯০৫ সালের প্রেক্ষাপটে, যার শেষ হয় ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের ঠিক আগ দিয়ে। কাহিনী সাবলীল। সেই আগের ধাঁচেই এসেছে। তবে আমি একটা সমস্যা পেয়েছি। সমস্যা হচ্ছে প্রথম খন্ডে যেমন চরিত্রগুলার আবির্ভাব, গ্রামীণ সমাজের চিত্র, গল্পের জমে ওঠাগুলা উপভোগ করছিলাম, কোনো জোর জবরদস্তি ছিলো না। মনে হচ্ছিলো সব সত্যি। এই দ্বিতীয় খন্ডে সেই বিষয়টা কেমন জানি মিসিং লেগেছে। গল্প এগোয়, চরিত্র এগোচ্ছে। কিন্তু প্রথম খন্ডে যেমন মুগ্ধ হয়েছিলাম, এইটাতে সেই মুগ্ধতাটা নাই।
তবে, তাই বলে মধ্যাহ্ন-২ কে দুর্বল বলার সুযোগ নাই। এই খন্ডও যথেষ্ট সুন্দর। পড়ে ফেলুন। আমি নিশ্চিত যে আপনার মধ্যাহ্ন'র দুইটি খন্ডই ভালো লাগবে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ নিয়ে দুই খণ্ডে লেখা "মধ্যাহ্ন" ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে কতটুকু সার্থক তা বিবেচনার দায় সাহিত্য সমালোচক ও বিশারদের । "মধ্যাহ্ন" হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বা একমাত্র ঐতিহাসিক উপন্যাস না । তবে নিঃসন্দেহে তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর একটি ।
ঔপনিবেশিক সময় নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় তিনটি উপন্যাস আছে । একজন লেখকের সাথে আরেকজন লেখক বা এক সাহিত্যকর্মের সাথে আরেক কর্মের তুলনা করা সবসময় সমীচীন নয় ।তবুও তুলনা এসে যায় এ কারণে যে, বিংশ শতাব্দীর ঐ সময়সীমা নিয়ে সাহিত্যকর্ম আছে এবং ভবিষ্যতেও লেখা হবে । কারণ কালপরিক্রমায় নির্দিষ্ট সময়সীমা কোন জাতিগোষ্ঠীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অস্তিত্বের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় ।
"মধ্যাহ্ন" বাঙালি জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের প্রতিফলন। অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলার একটি গ্রাম বান্ধবপুর। সেই গ্রামের মানুষ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। যদিও শুরুতেই বলেছি ঐতিহাসিক উপন্যাস, কিন্তু জানিয়ে রাখি এখানে রাজনীতি, কূটনীতির কঠিন বিষয়গুলো লেখক শুধু এড়িয়ে গেছেন তাই না, চরিত্রদের উপরেও খুব বেশি প্রভাব ফেলতে দেন নি । হুমায়ূন আহমেদ তাঁর স্বভাবসুলভ লেখনীতে আশ্বিনের ঝড়ের মত হুটহাট কিছু প্রসঙ্গ অবতারণা করেছেন, তবে তা কাহিনীর গতির শ্লথ ভাব দূর করে চালু রাখার প্রয়াস মনে হয় । যেমন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের চরিত্রদের তিনি বান্ধবপুর গ্রামে হাজির করেছেন, কিন্তু গ্রামের মানুষের উপরে এর কোন প্রভাব পড়তে দেন নি।
এই পর্যন্ত আমার লেখা পড়ে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরী হচ্ছে কি? অথচ শুরুতে আমি রেটিং দিয়েছি ৫ আর বলেছি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি । কেন? আরও পরে আসছি । তবে এই রাজনৈতিক ইস্যুর একটা ফায়সালা আগে করি। রাজনীতিকে পুঁজি না করে আমার দৃষ্টিতে লেখক ভুল করেন নি। কারণ বাংলার এক অজপাড়া গাঁ দেশভাগের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এটা দেখলেই বরং ভ্রূ উপরে উঠত। এটা কল্পনা করা খুব কঠিনা না যে, সেই সময় বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনে কি হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে অন্ধকারেই ছিল। দেশভাগ হয়ত অবধারিতই ছিল, কিন্তু এটা তো মিথ্যে নয় যে এ নিয়ে রাজনীতি কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই সুবিধাভোগী ক্ষমতাবান মানুষেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কূটচালে ব্যস্ত থাকে এই বিষয় দেখাতে লেখক ভুলে যান নি ।
কাহিনী বিচারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "প্রথম আলো" কিংবা "পূর্ব-পশ্চিম" অনেক বেশি বাস্তব, অনেক বেশি ঐতিহাসিক, অনেক বেশি জমাট । তবে সেখানে শেষ পর্যন্ত কাহিনীই মুখ্য, চরিত্ররা সময় ও কাহিনীর সম্পূরক । সেই সময়কে গল্পে প্রতিফলিত করলেও চরিত্রের প্রতি কি পাঠক মমতা অনুভব করে, কিংবা নিজের আবেগ চরিত্রের সাথে মেশাতে পারে?
তুলনায় "মধ্যাহ্ন" অনেকটাই খাপছাড়া । লেখক অবশ্য ভূমিকায় বলছেন, ইতিহাস নয়, সময়কে তুলে ধরাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল । পড়া শেষে মনে হয়, এর আবেদন অন্য জায়গায় । হুমায়ূনের অন্য সব উপন্যাসের মত চরিত্ররাই গল্পকে ছাড়িয়ে, সময়, ইতিহাসকে পিছনে ফেলে প্রথমে চলে আসে, মুখ্য হয়ে ওঠে । একাধিক প্রধান চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে উপন্যাসে। আর চরিত্ররা তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। "মধ্যাহ" উপন্যাসে আপনি পাঠক হিসেবে নৈর্ব্যক্তিক থাকতে পারবেন না। চরিত্রগুলোর প্রতি আপনার নিজস্ব আবেগ অনুভূতি মিশে যাবেই। কোন চরিত্রের প্রতি তীব্র ভালবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা অনুভব করবেন, কোন চরিত্রের প্রতি ঘৃণা, শ্লেষ। তাদের সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্যে আপনিও সহযাত্রী হবেন ।
এখানেই "মধ্যাহ্ন" উপন্যাসের সার্থকতা ।
শেষে আরেকটা প্রসঙ্গ আনতেই হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদ সম্ভবত পণ করেছিলেন হোক না হোক একটা "ঐতিহাসিক" উপন্যাসই লিখবেন। তাই হঠাত হঠাত কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যার সাথে গল্পের কাহিনী বা চরিত্রের কোন সম্পর্ক নাই । তবে সেই অধ্যায়গুলো খুব একটা খারাপও লাগে নাই । তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় মজার অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন । সেগুলা অনেকটা কমিক রিলিফের মত লেগেছে।
বান্ধবপুরের গল্প বলতে গিয়ে লেখক তৎকালীন বিশ্বে চলমান ঘটনা উপন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে নিয়ে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ,তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নুল আবেদীন, মহাত্মা গান্ধী, মোহম্মদ আলী জিন্নাহ সহ তখনকার সময়কার আরও কয়েকজন বিখ্যাত মানুষদেরও উপন্যাসে দেখা গেছে। ও হ্যাঁ,উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ডে হিটলার সাহবকেও মাঝে মধ্যে তার বান্ধবী ইভা ব্রাউন ও তার অধীনস্থদের সাথে কয়েকটা দৃশ্যে দেখা গেছে। এসব বর��ণনা পড়তে গিয়ে বড়সড় কিছু তথ্যগত ত্রুটিও চোখে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ক্ষমতায় ছিলেন না। কিন্তু এখানে তা বলা হয়েছে। আর উপন্যাসের সমাপ্তি লেখক এমনভাবেই করেছেন যেখান থেকে নতুন আরেক গল্প শুরু করা যায়। তবে নতুন গল্প শুরু না করে লেখক বোধহয় ভালোই করেছেন।
এই বইটা বেস্ট। যদি বিংশ শতাব্দীর সেই শুরুর সময়টায় চলে যেতে চান তাহলে মধ্যাহ্ন আপনাকে নিয়ে যাবে। তখনকার সমাজ, মানুষের ভিতরের সম্পর্কের দ্বন্দ্ব, ইংরেজ এর বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের আন্দোলন, মানুষের শোষণ শাসন, ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস সব মিলিয়ে তখনকার দেশের অনেক পরিস্থিতি একসাথে উঠে এসেছে । চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের সেই ভালো মন্দ আর সুখ দুঃখের পৃথিবী থেকে🌻
দুই খন্ডই পড়লাম। অতিপ্রাকৃত রহস্য জাল দিয়ে হুমায়ুনীয় স্টাইলে ঐতিহাসিক উপন্যাস। সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিকগুলোকে বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছেন।
মধ্যাহ্ন ১ যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুর মধ্যাহ্ন ২।
মৎস্যকণ্যার মাংস খেতে গিয়ে মৃত্যু হয় শশাঙ্ক পাল এর। এমনিতেই মারা যেতো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাচার জন্য আর একটু চেষ্টাটুকু করে গেলেন। তাকে আগুন দেয়ার কেউ ছিলো না তাই মাউলানা ইদরিস শশাঙ্ক পালকে আগুন দেয়। ১৯০০ সাল এর দিকে সুন্দর সাম্প্রদায়িকতা ফুটে উঠে এখানে।
এক কড়ি সাহার চালের আরত। যুদ্ধের কারণে চাল ডাল এর দাম ফেলে ফেপে একাকার। আগে থেকেই কিছু চাল মজুদ করে রেখেছিলো তিনি। তাই তিনি মানুষের দুঃসময়ে সবচেয়ে বড়লোক। মানুষ খেতে না পেয়ে মরছে। দুঃর্ভিক্ষ হছে। ভাত খাওয়ার ভাত নাই। মানুষ ভাত এর মাড় খেতে বাড়ি বাড়ি ঘুড়ছে। তখন প্রধান বিনোদন এর মাধ্যম নিউজপেপার। এক কড়ি সাহার দোকানে আয়োজন করে খবর পাঠ করা হয়। সবাই তাদের মতামত দেয়।
এদিকে লাবুস/জহির এর খানা পিনার অবস্থা ভালো না। এক বেলা খায় তো ২ বেলা খাবার পায় না। ভিক্ষা করে চলতে হয় এমন অবস্থা।
ইমাম করিম এর মনে ক্ষোভ লাবুসের প্রতি। লাবুস তাকে শিক্ষা দিয়েছে। ল্যাংটা করে বাড়িতে পাঠিয়েছে। কিভাবে লাবুসকে শায়েস্তা করা যায় তাইই প্রধান চিন্তার বিষয় ইমাম করিম এর।
ধনু শেখ হরিচড়ণের সম্পদ বুঝিয়ে দিয়েছে লাবুসকে। ভিখারি থেকে এখন জমিদার হয়ে গেলো লাবুস। হাদিস উদ্দিন নাম এর এক চোর ও শ্রী নাথকে চাকরি দেয়া হয় লাবুস এর বিষয় সম্পত্তি দেখার জন্য। এদিকে শ্রী নাথ শুদ্ধ ব্রাহ্মন।
মাউলানা ইদরিস এর বউ জুলেখার সন্তান্ত হবে। সন্তান হওয়ার পরই জুলেখা মাউলানার কাছে তাকে রেখে চলে যায়। মাউলানার এমন অবস্থা যে দিন আনে দিন খায়। এর মধ্যে বাচ্চাকে সামলাতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তাকে উদ্ধার করে লাবুস। মাউলানা ইদরিসকে নিজের বাড়িতে এনে রাখে, সাথে তার সৎ বোনকেও।
লাবুসকে শিক্ষা দেয়ার জন্য ইমাম করিম মজু গুন্ডাকে ঠিক করে ১০০ টাকা দিয়ে। খুন করার পরিকল্পনা ছিলো। এই ১০০ টাকাও চুরি করে তার বউ শরিফা থেকে। কিন্তু মজু কাজ শেষ করতে পারে নাই। রাতের আধারে খুন করতে গিয়ে লাবুস এর আদ্ধাত্মিক ক্ষমতা চোখে পড়ে মজুর। পুকুর ঘাটে লাবুস একা বসে নাই। আরো একজন থাকে লাবুস এর সাথে। লাবুস এর অনেক ধরণের অজানা ক্ষমতা আছে। কেউ সেটা জানে না। যাই হোক, মজু ভয় পেয়ে চলে আসে কাজ না সেড়েই। ১০০ টাকা ফেরত দেয় শরীফার কাছে। এদিকে শরীফা ব্যাকুল হয়ে সেই টাকা খুজছিলো। এটা নিয়েই ইমাম এর সাথে ঝগড়া হয়ে তালাক হয়ে যায়। কিন্তু ইমাম করিম আবার যখন বিয়ে করতে চায়, তখন শরীফার হিল্লা বিবাহ হওয়া লাগতো। মানে কারো সাথে বিয়ে হয়ে তালাক হতে হবে। ধনু শেখ হিল্লা বিবাহ করতে রাজি হয়। কিন্তু তালাক দিতে আর রাজি হয় না। আমোদ ফুর্তি করার ইচ্ছা। বউ হারিয়ে ইমাম করিমের পাগল প্রায় অবস্থা। শরীফাকে নিয়ে পালানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। আতর শরীফাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, তাকে নিয়ে পালানোর জন্য যেই নৌকা ছিলো, সেই নৌকার মাঝিরা তাকে ধর্ষন করে মাঝ নদীতে। শরীফার জায়গা হয় রঙ্গীলা নটিবাড়িতে।
শিবশঙ্করের এর শরীর খারাপ। তাই বান্ধবপুর এ থাকতে এসেছে। এখানেই তার দেখা হয় ধনু শেখ এর মেয়ে আতর এর সাথে এবং ভালোও লেগে যায় তাকে।
এদিকে লাবুস এর বোন মীরা একটাই শব্দ বলতে পারে, তা হলো "রাম"। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে, মীরার পা ধোঁয়া পানি নিয়ে যাচ্ছে। এই কাজটি করেছে শ্রী নাথ। নিজের ধর্ম প্রকাশ করায় শ্রীনাথ এর অনেক ইচ্ছা। তাকে নাকি স্বপ্নে আদেশ পেয়েছেন মীরার নামে একটি মন্দির করার।
মাউলানা ইদরিস ভ্রমণে বের হয়েছেন। বগুড়ার মহাস্থান নাম এর এক জায়গায় যেতে গিয়ে তিনি তার সব সম্বল হারালেন। তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তার সেবা করে যমুনা, যাকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন যখন সবাই যমুনাকে ত্যাগ করে। তার প্রতিদান হিসাবে যমুনা সবচেয়ে বড় ডাক্তার নিয়ে আসে মাউলানা ইদরিস এর চিকিৎসা করার জন্য।
শ্রীনাথ লাবুসের ঘর থেকে মূর্তি চুরি করে এক কড়ি সাহার মন্দিরে রেখে দিয়েছে। হাদিস উদ্দিন এর এটা নিয়ে অনেক রাগ। কেনো মূর্তি চুরি হলো। লাবুসকে এই ঘটনা বলা হয়েছে। কিন্তু লাবুস এর মধ্যে কোনো ভাব এর পরিবর্তন নেই। কিন্তু মন্দির থেকেও মূর্তি চুরি হয়ে গেছে। শ্রীনাথ এর বিহিত করতে চেয়েছে। ধনু শেখ এর কাছে বিচার দিতে এসেছে লাবুস ও হাদিস উদ্দিন এর নামে। এদিকে মসজিদের নতুন ইমাম রাখা হয়েছে। মোহম্মদ সিদ্দিক। বয়স অল্প এই ইমাম এর। এই ইমামের অনেক জ্ঞান।
অনেক শীত পড়েছে বান্ধবপুরে। শীত কমানোর ব্যবস্থা করেছে ধনুশেখ। পুরো দেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হচ্ছে। হিন্দু কিছু কমানোর জন্য হিন্দু ঘরে আগুন লাগানোর ব্যবস্থা করেছে। সেই সাথে মসজিদ জ্বালানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে যাতে মুসলমান এর উপর দোষ না চাপাতে পারে কেউ। এতেই মারা গেলো নতুন ইমাম মোহাম্মদ সিদ্দিক। মসজিদে আগুন দেয়ার জন্য ধরা হয় এক কড়ি সাহাকে। পুলিশকে টাকা দিতে দিতে এক কড়ি সাহার সব টাকা শেষ হয়ে যায়। নিঃস্ব ও পাগল হয়ে যায় তিনি।
এদিকে জুলেখা এখন অনেক বড় গায়িকা। কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তার উঠা বসা।
ধনু শেখ তার মেয়ে আতরের বিয়ে ঠিক করে শাহনেয়াজ এর সাথে। শাহনেয়াজের কবিতা লেখার শখ। পাগল ধরণের মানুষ। বিয়ের আগে দিয়ে শিবশঙ্করকে তার ভালো লাগার কথা জানায় আতর। কিন্তু শিব তা বুঝতে বুঝতে অনেক দেরী হয়ে যায়। এদিকে শিবও অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিবশঙ্কর অনেক পড়ুয়া ছিলেন। তার Ph.D গবেষণাপত্র An Intro to Tantric Buddhism তিনি উৎসর্গ করেছিলেন আতরকে।
আতর এর বিয়ে হয়ে যায় শাহনেয়াজের সাথে। শাহনেয়াজ তার স্ত্রীকে দিয়ে নানান ধরণের কাজ করাচ্ছে, বই পড়ানো, কবিতা পড়তে দেয়া, সেজেগুজে বসে থাকা কবি শাহনেয়াজের সামনে, এতে করে নাকি প্রেমের কবিতা আসে। সুখেই আছে আতর শশুড়বাড়িতে।
কৈবর্ত পাড়ার নড়েশ এর মেয়ে ভাত খেতে চায়। কিন্তু এক কড়ি তাকে ফিরিয়ে দিলে লাবুস তাকে তার ঘরে এনে ভাত খাওয়ায়। এতেই লাবুস এর মন গলে যায়। সে ঠিক করে সে লঙ্গরখানা দিবে। সবাইকে খাওয়াবেন। ল���বুসের এই লঙ্গরখানা খুবই পরিচিত হয়ে যায়। দুনিয়ার মানুষ এসে এখানে খাওয়া দাওয়া করে। ধনু শেখ কিছু সাহায্য পাঠালো, রঙ্গীলা নটিবাড়ি থেকেও ৩ হাজার টাকা চলে এলো। হিন্দু মুসলিম একসাথে বসে খাচ্ছে। সময়টা ১৯৪৩ সাল।
মাউলানা ইদরিস এর সাথে পথেই পরিচয় হয় জয়নুল আবেদিন এর। জয়নুল আবেদিন মাউলানাকে কাক আঁকা শিখায় দেয়। মাউলানা ইদরিস এর সাথে বিভূতিভূষণ এরও যোগাযোগ থাকে। বিভূতিভূষণ আলাভোলা মানুষ, খাওয়া দাওয়া করতে পছন্দ করেন। মাউলানা ইদরিস জানেন না তিনি বিখ্যাত মানুষদের সাথে উঠা বসা করছেন।
করিম পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে। তাকে লঞ্চে তুলে দেয়া হয়েছে। কোনো এক অজানা গ্রামে তাকে রেখে আসা হবে। তার পাশে বোরকা পড়া অবস্থায় আছে শরীফা। শরীফা শেষ বারের মতো দেখে নিচ্ছে বান্ধবপুরের রঙ্গিলা বাড়ি। আর কোনোদিন এখানে ফিরবে না সে। তারা আতর এর বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। সেখানে সুখেই আছে তারা।
ধনু শেখ দাঙ্গা লাগানোয় ব্যস্ত কিন্তু তার কোনো ট্রিকই কাজে লাগলো না। বান্ধবপুর পড়েছে হিন্দুস্থানে।
লাবুস খুবই অসুস্থ। তাকে দেখতে এসেছে তার মা জুলেখা। মীরা তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি কি আমার আর লাবুসের মা?" জুলেখা লাবুসকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। পুকুরঘাট থেকে যে সুরধ্বনি আসছে, তার জন্ম এই পৃথিবীতে নয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
সম্প্রতি পড়লাম “মধ্যাহ্ন”। একটা “মধ্যাহ্ন” লেখার জন্যেই হুমায়ুন আহমেদের হাত সোনা দিয়ে বাধিয়ে দেওয়া যেত। এই একটি রচনার জন্যেই তাকে বসানো যায় বাংলা সাহিত্যের সেরা স্রষ্টাদের আসনে। আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাসগুলি যেমন সাতকাহন, সেই সময়, The Glass Palace, মাধুকরী এইগুলি সবই আয়তনে অনেক বড়, সেই তুলনায় হুমায়ুন আহমেদ মাত্র চারশ আশি পাতার মধ্যে রঙ তুলির মতো আঁচড় টেনে সাবলীল ভাবে যে সময়, ঘটনা ও সর্বোপরি চরিত্র অঙ্কন করে গিয়েছে ক্রমাগত তা অবাক বিস্ময়ে বিভোর হয়ে অনুধাবন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এই রকম সরল অথচ গভীর ভাবে ঘটনাবলী ব্যক্ত করা কেবল হুমায়ুন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব। আর আমাকে যা আরও বেশী মোহিত করেছে তা হল ২-টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা একই সূত্রে গ্রন্থিত করা। এছাড়া তথ্য বহুলতাও লক্ষ্যনীয় – যেমন জার্মানিকে রুখতে প্রেসিডেন্ট রুসভেল্টকে পরমানু বোমা বানানোর জন্য অনুরোধ করে রবীন্দ্রনাথের পত্র লেখা, মুসোলিনির আতিথেওতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে এক মহান ব্যক্তি বলে রবীন্দ্রনাথের বর্ণনা, অথবা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং নেহেরুর উদ্যোগেই যে ভারতকে হিন্দু ও মুসলিম দুইটি ভাগে বিভক্ত হতে হয় তা দ্বিধা হীন চিত্তে উল্লেখ করা কেবল হুমায়ুন আহমদের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সরলতা বা বাঙ্গালী বিপ্লবীদের কর্মকান্ডের তাৎপর্য তার লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সকলের এই বই অন্তত একবার পড়া উচিত।
বিশেষ ভালো লাগা একটি অংশ – "আতর চান বিবির রেকর্ডটা আবার ছেড়েছে। সে ঝুঁকে আছে রেকর্ডের ওপর। গান শুনতে শুনতে এক চোখে পানি আসবে। এক ফোটা পানি রেকর্ডে পড়বে। গ্রামোফোনের পিন যখন অশ্রুভেজা জায়গাটা পার হবে তখন গান আরো মধুর লাগবে। ব্যাপারটা আতরের পূর্বপরীক্ষিত।
আতর এক ফোটা চোখের পানি ফেলে রেকর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। একই সময় ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল তার ক্যাম্পে একটি রেকর্ড বাজাচ্ছেন। রেকর্ডে waltz মিউজিক হচ্ছে। তিনি এক বোতল রেড ওয়াইন খুলেছেন। কর্ক খুলতে গিয়ে কিছুটা রেড ওয়াইন ছিটকে পড়েছে রেকর্ডে । তিনি গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বললেন, The wine will make the music sweeter."
এই বইটার প্রথম খন্ড পড়েছিলাম দুইবছর আগে ঠিক এই বসন্তে অসাধারণ একটা বই ছিল, নিঃসন্দেহে হুমায়ুন আহমেদের সেরা বইগুলোর মধ্যে একটা। গতবছর বসন্তে বইটার কথা মনে পড়লেও দ্বিতীয় খন্ড কি কারনে যেন পড়া হয়নি এবার বসন্তে আবার বইটার কথা মনে পড়েছে তাই শুরু করে দিলাম দ্বিতীয় খন্ড, ব্যাস সময় যেন কোথায় চলে গেলো বার বার মনে হচ্ছিলো বইটা যেন না শেষ হয় তবুও এক সময় শেষ হলো। যতক্ষণ বইটা পড়েছি মন্তমুগ্ধের মতো পড়েছি। সত্যি মধ্যাহ্ন দুই খন্ড মিলিয়ে হুমায়ুন স্যারের অসাধারণ সৃষ্টি।
মধ্যাহ্ন বইটি পড়ার মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের ২০০+ বই পড়ার তালিকা আমার ঝুলিতে জমা হলো। বইয়ের সংখ্যা থেকেই বোঝা যায় আমি এক ক্ষুদ্র হুমায়ূন ভক্ত বৈকি। এবার আসা যাক মধ্যাহ্ন ২ এর ব্যাপারে। ১ম খন্ডের থেকে বেশ ভালো লেগেছে এই বইটি । পূর্বের থেকে এই কাহিনিটা কিছুটা গোছালোও ছিল বটে। তবে যতটা আশা ছিল পুরো অখন্ড বইটা নিয়ে ,ততটা আশানুরূপ হয়নি।কারণটা হতে পারে আমি হুমায়ূনপ্রেমী, তাই তাঁর বই নিয়ে আশা সবসময় আকাশচুম্বী।
প্রথম খন্ডের কিছু কিছু কুৎসিত ঘটনার শেষ এখানেও এসেছে এবং চলেছে এবং আগের খন্ডের রিভিউতেও যা বলেছিলাম, “এই বইয়ের কুৎসিত ঘটনাগুলোর বর্ণনা অসহ্য লেগেছে, ফিকশন এর ক্ষেত্রে সাধারণত যা আমার হয় না। নইলে ★★★★ ই দিতাম।” ওভারঅল ভালোই বইটা।
১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪৭ সালের সময়কে ঘিরে মধ্যাহ্নের দ্বিতীয় অংশ। পুরোপুরি ইতিহাস না ঠিক, ইতিহাসের পাশাপাশি কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে সেই সময়ের চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক।
মধ্যাহ্ন প্রথম অংশের মতো এই অংশটিতেও হিন্দু মুসলমানের ভয়াবহ রেষারেষির চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। বাস্তব জীবনে ধনু শেখের মতো হাজারো লোক সমাজে আছে যারা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মানুষের সাথে মানুষের বিভেদ সৃষ্টি করে, হিন্দু মুসলমানকে তারা আলাদা করতে চায়। আবার লাবুসের মতো মানুষ সমাজে আছে বলে সমাজ এখনো টিকে আছে। ভারতবর্ষ ভাগের ঠিক পূর্বের অবস্থা যে কি ভয়াবহ এবং কুসংস্কার পূর্ণ ছিল তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ এই বইটি।
গল্পে ধনু শেখের কন্যা আতর যখন শিবশংকরকে একটা চিঠি লিখতে বললো এবং চিঠিটা শিবশংকরকে রেখে দিতে বললো, ওই অংশটুকু অনেক সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। আবার মাওলানা ইদরিসের সাথে যখন জয়নুল আবেদিনের দেখা হয় সেই অংশটুকু সুন্দর। গল্পের মাধ্যমে লেখক এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আগমন ঘটিয়েছেন, মনে হচ্ছিল একদম সত্য ঘটনা।
তবে দ্বিতীয় অংশ থেকে প্রথম অংশ আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।