ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা কড়া রোদ চারদিকে। বাতাস উষ্ণ। গেটের বাইরে প্রকাণ্ড শিমুল গাছের লাল লাল ফুল। বসন্তকালের লক্ষণ এই একটিই। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস চোখে শিমুল গাছের দিকে তাকিয়ে রইল। অ্যাসিন্টেট জেলার সাহেব তাকে শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত রেলের একটি পাস এবং ত্রিশটি টাকা দিয়েছেন। এবং খুব ভদ্রভাবে বলেছেন, জহুর, ভালোমতো থাকবে। ছাড়া পাবার দিন সবাই খুব ভালো ব্যবহার করে। জহুর আমি ছ’বছর তিন মাস পর নীলগঞ্জের দিকে রওনা হলো। কড়া রোড। বাতাস উষ্ণ ও আর্দ্র। বসন্তকাল।
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
গুডরিডস অনুযায়ী 'এই বসন্তে' হুমায়ন আহমেদের কম জনপ্রিয় বইয়ের একটি। গড় রেটিং বেশ কম।আমি এই রেটিং দেখেই বছরখানেক আগে পড়তে গিয়েও পড়িনাই। অথচ মোহাম্মদ আজম তাঁর বই ' হুমায়ন আহমেদ ; পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য ' বইতে উক্ত নিয়ে উপন্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা রেখেছেন এবং হুমায়ন আহমেদের অন্যতম 'সিরিয়াস' রচনা হিসেবে একে উল্লেখ করেছেন। তা দেখে বইটি একবসাতে শেষ করলাম। খুব বেশি সময় লাগেনি।আর কেনো এই বই অতি তাৎপর্যপূর্ণ তা তৎক্ষণাৎ জলের মতো না বুঝলেও বইটি কেনো জনপ্রিয় নয় তা বুঝতে সময় লাগেনি। বইটি সাধারণত পাঠকদের ভালো না লাগার কারণ আছে। একটি ঘটনার দিকে আগাতে আগাতে ঘটনা শুরু হবে ঠিক তখনই উপন্যাসটি শেষ হয়ে যায়।পাঠকের মনে হবে এটাও কোন রকমে ঈদ সংখ্যায় দিবার জন্য abruptly শেষ করে দিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ।বিরক্ত আসাটা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু পাঠক যদি তৎপরতা দেখিয়ে একটু খুঁটিয়ে পড়ে তাহলেই সে বুঝতে পারবে যে এই হঠাৎ শেষ করে ফেলবার জন্যই পুরো উপন্যাসটা লেখা!
হুমায়ন আহমেদের রচনাশৈলীর গুণে তিনি অনেক জটিল জিনিস তরলবৎ করে বলেছেন।খুব সহজে এক কথায় দু'কথায় চলচ্চিত্রের মতো স্পষ্ট করে কোন অনেক বিস্তৃত ঘটনা দেখিয়ে দিকে পেরেছেন। তাই পড়বার সময় আমাদের মনে হয়- এতো তিনি বসেই লিখে ফেলেছেন, এরজন্য আবার ভাবতে বসেছেন নাকি?লোকটা একটু সেরিয়াস হলোনা জীবনে! অথচ হুমায়ন আহমেদের ইন্টার্ভিউ আর আজম সাহেবের আলোচনা থেকে বুঝতে পারছি তিনি কত ভেবেচিন্তে একটা লেখা সেট করেছেন। হুমায়ুন আবার পাঠ করতে হবে কোন রকম ভক্তির আতিশয্য কিংবা সেরিয়াস পাঠকের কৌলীন্য এক সাইডে রেখে।
বেশ কয়েক বছর পর জহুর বোনের বাড়ি ফিরলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছে। এখন সে জেল থেকে ফিরলো। মিথ্যা খুনের মামলার আসামী হয়ে বছর সাতেক কাটাতে হল জেলে। বোনের বাড়িতে ফিরে এসে তেমন পরিবর্তন চোখে পড়লো না, খালি বোনের মেয়ে টুনী, অঞ্জু বড় হয়েছে। বোন তো নেই, দুলা ভাই দবির আবার বিয়ে করেছিল। আগের পক্ষের দুটো যমজ ছেলে আছে এবং এরা নিঃশব্দে ঝগড়া করতে পটু।
কাহিনী বিশেষ কিছু নয়। নীলগঞ্জ গ্রামের এই মানুষদের হাল-হকিকত আরকি। কাহিনী পড়ে জানা যায় জহুরকে ফাঁদে ফেলে চৌধুরি সাহেব। কিন্তু এদের কি কাহিনী তা খোলাসা করা হয় নি। অবশ্য হুমায়ূন সাহেবের বই থেকে তা আশাও করা যায় না। উনি উনার মতো করেই লিখতেন, যেটুকু লিখতে ইচ্ছা হয় সেটুকুই লিখতেন। অনেকটা ছাড়া ছাড়া ভাব আরকি! অনেকেই ভেবেছিল জহুর হয়তো কিছু করবে তার প্রতি ঘটিত অন্যায়ের ব্যাপারে, কিন্তু সে শান্ত হয়েই বসে থাকে। তবে দেখা যায় সে বদি ভাইয়ের স্ত্রীর বাড়িতে যায় মাঝে মাঝে। এই বদি ভাইকে খুনের অপরাধেই তাকে জেল খাটতে হয়।
এরমধ্যে আবার দবির মিয়ার দোকানে চুরি হয়। নীলগঞ্জ থানার লোকেরা গ্রেফতার করে দোকানেরই পাহাড়াদার মনসুরকে। পিটিয়ে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলে। রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গানের মাস্টার সাইফুল একটা ভয়ানক আর্তচিৎকার শুনতে পায়। পরদিন সকালে সবাই জানতে পারে মনসুর মার খেয়ে মারা গেছে। কেউ এ ব্যাপারে কিছু করতে যায় না।
এদিকে দেখা যায় টুনির বিয়ে ঠিক হয়। ছেলে তার পছন্দও হয়েছে, তবুও সে কাঁদে। কিন্তু অঞ্জু এই কান্নার কোনো কারণ খুঁজে পায় না। অঞ্জুর কোনো হেলদোল নেই; সে তার বাবার হাতে মার খেয়েও চুপচাপ থাকে যেন কিছুই হয় নি।
গানের মাস্টার সাইফুল প্রতি রাতে ঘরে যাওয়ার সময় দেখে মনসুর বসে আছে নিজের কবরের কাছে। সে ভয় পায়। সবাইকে বলতে চায়। কেন বিচার হচ্ছে না!! পুলিশরা পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেললো!! সে চিঠি লিখার সিদ্ধান্ত নেয়, বেনামী চিঠি!! তাতে থাকবে এই অন্যায় ঘটনার বিবরণ। যদিও সে আগেও অনেক চিঠি লিখেছে তার গানের ছাত্রীদের, সেখানে নানা অশ্লীল কথাও লিখা আছে তবে সেগুলো কাউকে দেয়া হয় নি। এবার এই চিঠি দিতেই হবে।
শেষে দেখা যায় মাস্টারের ঘর সার্চ করে মেয়েদের কাছে লেখা চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে, চৌধুরী সাহেবের উপস্থিতিতে তাকে উঠবস করানো হল। তারপরও সাইফুলের মনে হয় এই অন্যায়ের ব্যাপারে চিঠি ছাপাতে হবে।
তারপর হুট করেই শেষ হয়ে গেল।
পড়তে পড়তে একটু অন্যরকম লাগছিল। একটা বার্তা! শেষটা কি হয়। আশা জাগলো, আগ্রহ বাড়লো। শেষে আশার মোমবাত্তি ধূপ কইর্যা নিভ্যা গেল। আর আমি হয়ে গেলাম বিরক্ত....... এটাও সেই দলে গেল। হুমায়ূন আহমেদের লিখার ইচ্ছা হয়েছিল, তাই-ই লিখেছিলেন।
~১৯ এপ্রিল, ২০২১
This entire review has been hidden because of spoilers.
এই উপন্যাসটা হুমায়ূন আহমেদের অন্য উপন্যাসগুলোর মতো না৷ একটা ম্যাসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভালো লেগেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার জহুর ফিরে এসেছে। যুদ্ধ থেকে নয়। জেল থেকে। নীলগঞ্জের প্রতাপশালী ছোট চৌধুরী তাকে এক মিথ্যা খুনের মামলায় জেল খাটায়। জহুর ফিরে আসার দিন থেকে উপন্যাসের শুরু। সবার মনেই আশঙ্কা জহুর নিশ্চয়ই এবার ছোট চৌধুরীর ওপর শোধ নেবে। ছোট্ট নীলগঞ্জের নিস্তরঙ্গ জনজীবনে একটা সাসপেন্স যেন তৈরি হলো।
দবির মিয়া গঞ্জে কাপড়ের দোকান করেন। প্রায়শই রাতে চুরি হয়। তাই মনসুরকে দোকান পাহারায় রেখেছিলেন দবির। তবুও দোকানে চুরি হলো। পুলিশ ধরে নিয়ে গেল নিরীহ মনসুরকে। থানায় পিটিয়ে মেরে ফেলল মনসুরকে। এই ঘটনার সাক্ষী হলো গানের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। যে আপাতদৃষ্টিতে আলাভোলা, একটু নারীলোভী স্বভাবের। অথচ বাইরে কারো কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই।
দবির সাহবের বড় মেয়ে লুকিয়ে গান শেখে সাইফুল মাস্টারের কাছে। দবির মিয়া সংসারজীবনে সুখী নন। সদাই উগ্রমূর্তি ধরে থাকেন। তারও টেনশন শ্যালক জহুরকে নিয়ে। না জানি কী ঘটায় একদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার জহুর।
নীলগঞ্জ থানার পুলিশ চায় নির্দোষ মনসুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে। স্থানীয় প্রভাবশালী চৌধুরী এক্ষেত্রে তাদের পক্ষে। গানের শিক্ষক সাইফুলের নিজের সরাসরি কিছু করার ক্ষমতা নেই। সে বেনামে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাতে থাকে ওসিকে।
চৌধুরী জহুরের ভয় ভীত। সে তাই জহুরের আশ্রয়দাতা ও তার দুলাভাই দবির মিয়ার কন্যার জন্য ভালো পাত্রের ব্যবস্থা করে। জহুরের জন্য চাকরির টোপ ফেলে।
এদিকে গানের মাস্টারের সাধের হারমনিয়াম চুরি হয়ে যায়। সে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পূর্বে হুমকিদাতার হস্তাক্ষরের সাথে গানের মাস্টারের হস্তলিপির মিল পেয়ে পাকড়াও করেন গানের মাস্টারকে।
নীলগঞ্জ বাজার আজ উত্তপ্ত। লোকমুখে শুধুই গানের মাস্টারের কথা। তাকে ভরা মজলিশে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন ছোট চৌধুরী। মারধোর করা হয়েছে।
দবির মিয়া নীলগঞ্জে ছিলেন না। পৌঁছেই শুনলেন সবার মুখে এককথা। গানের মাস্টারের ঘটনা। বিরস মুখে বাড়ি গিয়ে দেখলেন একদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার জহুর চুপচাপ বসে সিগারেট ফুঁকছে। এই অন্যায় তাকে স্পর্শ করেনি। সে যেন অন্যায়কে সইবার জন্যই সদাপ্রস্তুত। তা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না দবির মিয়া। জহুরকে উদ্দেশ করে বললেন,
' সব মানুষ মাছের মতো হলে বাঁচা যায় না। দু'একজন অন্যরকম মানুষ লাগে। '
চরম অপমানিত হয়ে অন্ধকারে ঝোপে বসে আছেন সাইফুল ইসলাম। ভাবছে একসময় ছোট চৌধুরীর জুলুমের প্রতিবাদ করা জহুরের কথা সকলের মুখেমুখে এখনও ফেরে। তিনি কী এভাবে কাপুরুষের মতো রাতের আঁধারে পালিয়ে যাবেন? নাকী রুখে দাঁড়াবেন? কেউ হয়তো তার এই দ্রোহে সঙ্গী হবে না। গানের মাস্টার সাইফুল নিজেকে নিজে বলছে কেউ আজ তার সহযোদ্ধা না হোক নিশ্চয়ই জহুর তার সহচর হবেই।
একটি মেয়ে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে ভালো ঘরে, সে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রান্না করছিল সে। হঠাৎ তার মনে হলো তার মামা নিশ্চয়ই মানুষটিকে আজ নিয়ে আসবে। দবির মিয়ার কন্যা টুনী বাইরে এসে দেখল দহলিজে বসা তার মামা জহুর বারান্দায় নেই। কোথায় গেল সে?
' এই বসন্তে ' হুমায়ূন আহমেদের একেবারেই অনালোকিত উপন্যাস। তিনি লিখছেন বিস্তর। শুধু 'লিখতে হয় তাই লিখি' গোছের রচনাও কম নয়। তবে সেই তালিকার বাইরে জায়গা পেতে পারে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত 'এই বসন্তে'র মতো ক্ষুদ্র উপন্যাসটি। এই উপন্যাসে যে বার্তাটি হুমায়ূন আহমেদ দিতে চেয়েছেন তা তাঁর অনেক উপন্যাসেই নেই।
জহুর ছয় বছর পর জেল খেটে গ্রামে ফিরে আসে এবং সেখান থেকেই উপন্যাসের সূচনা। সে তার মৃত বোনের সংসারে আশ্রয় নেয়। উপন্যাসের এন্টাগোনিস্ট গোছের চরিত্র হিসেবে চৌধুরী সাহেবকে দেখানো হয়েছে। জহুর এবং চৌধুরী সাহেবের অতীত কখনোই পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়না। জহুর, তার দুলাভাই দবির মিয়া, টুনী, অঞ্জু, গানের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, চৌধুরী সাহেব - মোটামুটি এদেরকে নিয়েই কাহিনী এগিয়ে চলে।
সব গ্রামেই কিছু নির্বোধ মানুষ থাকে যারা নিজের জন্য যেমন সমস্যা তৈরি করে তেমনই তাদের আশেপাশের মানুষদেরও ঝামেলায় ফেলে। আমার কাছে সাইফুল কে এমনই একজন মনে হয়েছে। আর অন্য সবার মত সাহসী জহুর কে পছন্দ না হয়ে আমার সব থেকে ভাল লেগেছে দবির কে । আবেগপ্রবণ হলেও একইসাথে বাস্তববুদ্ধি ও আছে।
# বুক রিভিউ # এই বসন্তে # হুমায়ন আহমেদ কড়া রোদ চারিদিকে । বাতাস উষ্ণ । গেটের বাইরে প্রকাণ্ড শিমুল গাছে লাল লাল ফুল । বসন্ত কালের লক্ষন এই একটাই ।এরকম এক দিনে জেলখানা থেকে মুক্তি পায় জহুর আলি । ছয় বছর তিন মাস আগে একটি খুনের দায়ে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে । বইটির কাহিনী জহুরকে নিয়ে , যাকে মিনু নামে একটি মহিলার স্বামীর খুনের অভিযোগে শাস্তি পেতে হয় , কিন্তু খুনটা কে করেছিল তা অবশ্য হুমায়ন আহমেদ বইটিতে স্পষ্ট করেননি । বইয়ে ক্ষমতাশালী চৌধরী , ভাল মানুষ দবির মিয়া , গায়ক সাইফুল , থানার নিষ্ঠুর ওসি, নির্দোষ মনসুর থেকে শুরু করে সব চরিত্র বাস্তবেই আছে। এটি একটি বাস্তবেরই গল্প , যা আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে । দবির মিয়ার সংসার , সাইফুলের হাহাকার এসব তো আমাদের বাস্তবেরই গল্প ।
বইটিতে আমাদের সমাজের বিত্তবানদের প্রভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এছাড়া বইটি পড়ে মধ্যবিত্ত সমাজের অসহয়তা ও পুলিশদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড নিয়েও একটু আঁচ করতে পারবেন । সব বইটির শেষটাও অনেক অদ্ভুত ছিল । শেষ হইয়া শেষ হলো না এরকম টাইপ ।
সত্তর দশকের জনজীবন,সামাজিক অবস্থা,পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা সম্বলিত “এই বসন্ত” উপন্যাসটি লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দের। সমকালীন উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য বলতে আমরা সে সময়টার আবহে প্রতিটা উপাদানের সরল ব্যাখ্যা বুঝি। অর্থাৎ লেখক যে গল্পটা লিখছেন, যে চরিত্রগুলো সাজাচ্ছেন, সে সমাজ ব্যাবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, যে নিয়ম তুলে ধরছেন সেসব বিষয় সে সময়টার প্রতিনিধিত্ব করবে। ঠিক যেমন 'এই বসন্তে' উপন্যাসটি সত্তর দশকের রুপায়ন।
“সে ছাড়া পেল বসন্তকালে।
কড়া রোদ চারদিকে। বাতাস উষ্ণ। গেটের বাইরে প্রকাণ্ড শিমুল গাছে লাল- লাল ফুল। বসন্তকালের লক্ষণ এই একটিই। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস চোখে শিমুল গাছের দিকে তাকিয়ে রইল। এ্যাসিস্টেন্ট জেলার সাহেব তাকে শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত রেলের একটি পাস এবং ত্রিশটি টাকা দিয়েছেন। এবং খুব ভদ্রভাবে বলেছেন, ‘জহুর, ভালমত থাকবে।’ ছাড়া পাবার দিন সবাই খুব ভাল ব্যবহার করে।
জহুর আলী ছ’বছর তিন মাস পর নীলগঞ্জের দিকে রওনা হল। কড়া রোদ। বাতাস উষ্ণ ও আর্দ্র। বসন্তকাল।”
জেল থেকে জহুর আলীর মুক্তি পাওয়ার ঘটনা দিয়ে সূচনা হয়েছে ‘এই বসন্তে’ উপন্যাসটির। মফস্বল বা থানা শহরকে উপজীব্য করে হুমায়ূন আহমেদের উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিগুলোর মধ্যে এটি একটি। ১৯৮৪ সালে ‘রোববার’ ঈদসংখ্যায় উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে জহুর রওনা হয় নীলগঞ্জের দিকে। সত্তর বা আশির দশকে বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু মফস্বলগুলোর একটির প্রতিনিধিত্ব করেছে নীলগঞ্জ জায়গাটি। এই নীলগঞ্জে প্রভাব- প্রতিপত্তি বজায় রাখার জটিল রাজনীতি, সাধারণ মানুষের আপোসকামী মনোভাব এবং ভীতি ও আতঙ্কের আবর্তে প্রতিবাদী চেতনা তৈরির দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে ‘এই বসন্তে’ উপন্যাসটিতে।
ছয় বছর তিন মাস পরে জহুর নীল���ঞ্জে এসে উপস্থিত হয় তার দুলাভাই দবির মিয়ার বাড়িতে। ইতোমধ্যে জহুরের বড় বোন সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে এবং তার দুলাভাই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। জহুর নীলগঞ্জে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথেই নীলগঞ্জের মানুষের নিস্তরঙ্গ জীবনে একটা চাপা উত্তেজনা লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ ছয় বছর তিন মাস পরেও তারা জহুর আলীকে বিস্মৃত হতে পারে নি। জহুরের উগ্র মেজাজী দুলাভাই দবির মিয়াকেও শালাকে সাদরে গ্রহণ করতে দেখা যায়।
জহুর আলীকে নিয়ে মানুষের এই আগ্রহের কারণটা কি? কোন অপরাধে সে এতদিন জেলে ছিল? উপন্যাসের শুরুতেই একটা চাপা আগ্রহ ছড়িয়ে পড���ে পাঠকের মাঝেও।
হুমায়ূন আহমেদ তার কোনো উপন্যাসেই আয়োজন করে চরিত্রগুলোর পরিচয়পর্ব সৃষ্টির দিকে যান না, বরং তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সাথে আমরা পরিচিত হই গল্পের ক্রমপ্রবাহেই। এই উপন্যাসটিও তার ব্যতিক্রম নয়। জহুর আলী কিংবা নীলগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার সাথে আমরা পরিচিত হই ধীরে ধীরে।
ক্রমশ স্পষ্ট হয় যে নীলগঞ্জের সব ক্ষমতা যার হাতে পুঞ্জীভূত, সেই ছোট চৌধুরীর সাথে বিরোধের সূত্র ধরে জহুরকে এক মিথ্যা হত্যা মামলায় খুনের আসামি হিসেবে জেলে যেতে হয়েছিল। নীলগঞ্জেরই আরেক ছেলে বদি ভাই এবং তার স্ত্রী মিনুর সাথে বিশেষ সখ্যতা ছিল জহুরের। সেই বদিকেই খুন করিয়ে মিথ্যা মামলায় জহুরকে ফাঁসিয়ে দেন ছোট চৌধুরী।
জেল থেকে বের হয়ে কয়েকদিন পরেই মিনুর সাথে দেখা করে জহুর। জিজ্ঞেস করে,
“ভাবী, আমি একটা কথা জানতে আসলাম, আপনার মনে কি আমাকে নিয়ো কোন সন্দেহ আছে? আপনি কি কোনদিন ভেবেছেন আমি এই কাজটা করেছি?”
মিনু ভাবী কঠিন স্বরে বললেন, “ছিঃ, জহুর ভাই ছিঃ। আপনি আমাকে এত ছোট ভাবলেন?”
জহুর ক্লান্ত স্বরে বলল, “জেল- খানাতে আমার একটা কষ্টই ছিল। আমি শুধু ভাবতাম আপনি কি বিশ্বাস করেছেন আমি এই কাজটা করেছি।”
স্পষ্ট হয় যে, মিনুর প্রতি গভীর ভালবাসা আছে জহুরের। অন্যদিকে চৌধুরী সাহেব যিনি মিথ্যা খুনের দায়ে জহুরকে জেলে পাঠিয়েছিলেন, জহুর ছাড়া পেলে তিনি বরং আতঙ্ক অনুভব করা শুরু করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে জহুরের সাথে দেখা হলে তিনি বলেন,
“নীলগঞ্জের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কি বল জহুর?” জহুর তার উত্তরে থেমে থেমে বলে, “চৌধুরী সাহেব, কিছু- কিছু জিনিসের কোন পরিবর্তন হয় না।”
তবে কি চৌধুরী সাহেবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জহুর প্রতিশোধ নেবে? পাঠকের আগ্রহ এভাবেই ক্রমশ ঘনীভূত হয়।
জহুরের দুলাভাই দবির মিয়া আছেন এ উপন্যাসের একটা বিরাট অংশ জুড়ে। একজন আপোসকামী সাংসারিক মানুষ হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ তাকে চিত্রিত করেছেন। প্রচণ্ড উগ্র মেজাজের হলেও একটি কোমল হৃদয় আছে তার। নিজের অসুস্থ স্ত্রী, স্ত্রীর আগের পক্ষের দুই ছেলে এবং শ্যালক জহুরের প্রতি ক্ষেত্রবিশেষে সেই স্নেহ এবং মমত্ববোধ প্রকাশ পায়।
এই শান্ত নীলগঞ্জেই অকস্মাৎ একটা নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। বাজারের দোকান থেকে চুরির দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় দবির মিয়ার দোকানের কর্মচারী মনসুরকে। সন্দেহের বশে পিটাতে পিটাতে এক সময় পুলিশ তাকে মেরে ফেলে। দবির মিয়া এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েও চৌধুরী সাহেবের পরামর্শে চুপ হয়ে যায়। পুলিশের সাথে বিরোধে জড়ানো উচিত হবে না ভেবে অন্যরাও চুপ করে থাকে। পুলিশের সাথে মিলে চৌধুরী সাহেব ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার যথসাধ্য চেষ্টা করতে থাকেন। কারণ “নীলগঞ্জ খুব ঠাণ্ডা জায়গা, কিন্তু ঠাণ্ডা জায়গা একবার গরম হয়ে গেলে খুব মুশিবত হয়।”
এই মৃত্যুর ঘটনাটা প্রভাবিত করে কেবলমাত্র সাইফুল ইসলামকে। সে নীলগঞ্জের স্থানীয় মানুষ না, ঐ এলাকায় ভাড়া থেকে সে মেয়েদেরকে গান শেখায়। মনসুরের মৃত্যুর রাতে থানার পাশ দিয়ে আসার সময় শোনা বিকট এবং বিভৎস চিৎকার সে কিছুতেই ভুলতে পারে না। সে আদতে ভীতু টাইপের মানুষ হলেও এই ঘটনাটা সে বারবার চারপাশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে। চৌধুরী সাহেবকে এই কথা জানালে তিনি জিজ্ঞেস করেন,
“বলেছে কে তোমাকে? জহুর বলেছে নিশ্চয়ই। .... সে মুক্তিযুদ্ধের সময় কমান্ডার আছিল, অনেক কাজ কারবার করেছে বুঝলে? ডেঞ্জারাস লোক। যে যেটা বলে সেটাই বিশ্বাস করতে হয় না। চিন্তাভাবনা করতে হয়।”
তখন জহুরের নতুন এক পরিচয় আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়, পাশাপাশি এলাকার সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও জহুরের ভীতি চৌধুরী সাহেবকে কীভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে তা পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অবশেষে সাইফুল ইসলামকেও দমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। তার ঘর সার্চ করে নিজের খাতায় এলাকার মেয়েদেরকে চিঠি লেখার অপরাধে চৌধুরী সাহেব তাকে লোকসম্মুখে বিশবার কান ধরে উঠ- বস করান। প্রতিবাদী হয়ে ওঠার আগেই সাইফুল ইসলামের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চান তিনি।
নীলগঞ্জের একটা মজা খালের পাশে উবু হয়ে বসে থাকা সাইফুল ইসলামের তখনকার অবস্থা লেখক বর্ণনা করেছেন এভাবে,
“সাইফুল ইসলামের হঠাৎ করে জহুর ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। জহুর ভাই না- কি একবার চৌধুরী সাহেবের পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে বলেছিল, “হাত জোড় করে মাফ চাও না হলে এইখানেই খুন করে ফেলব।”
চৌধুরী সাহেব হাত জোড় করে মাফ চেয়েছিলেন। কতদিনের কথা, এখনো লোকে সেই ঘটনাটা মনে রেখেছে। তার নিজের কেন এ রকম সাহস নাই?”
অপমানিত এবং আতঙ্কিত সাইফুলের সামনে তখন প্রেরণা হয়ে উঠে জহুর আলী। তবে পুরো ঘটনায় জহুরের কোনো সক্রিয়তা পরিলক্ষিত হয় না। এদিকে জহুরের আপোসকামী সংসারী দুলাভাইও এই নির্লিপ্ত জহুরকে মেনে না নিতে পেরে বলে বসেন,
“এত বড় একটা অন্যায় হয়েছে, আর তুমি কিছুই করলা না? তুমি মাছের মত হয়ে গেছ জহুর। সব মানুষ মাছের মত হলে বাঁচা যায় না। দু’একজন অন্যরকম মানুষ লাগে।”
তবে কি বর্তমান ‘জহুর’ আগের ‘জহুরে’র ছায়ামাত্র? জহুরের প্রতিবাদী সত্ত্বার কি মৃত্যু ঘটেছে, না কি সে আবারও জেগে উঠবে? —পাঠকের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন একসাথে খেলা করতে থাকে।
এই উপন্যাসটির চরিত্র চিত্রণে হুমায়ূন আহমেদ বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিটি চরিত্রে সমান আলো ফেলে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বলা এই গল্পটি তাই পাঠকের কাছে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে উপন্যাসের ভূমিকায় লেখা হুমায়ূন আহমেদের কথা স্মরণ করা যেতে পারে,
“গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় আমি আমার সব লেখাই প্রচুর ঘষা মাজা করি। এখানে তা করা হয় নি। পরিমার্জনাহীন টানা লেখাতে এক ধরনের বন্য গন্ধ থাকে। এই বসন্তে তার প্রয়োজন ছিল।”
মোহাম্মদ আজম তাঁর বই “ হুমায়ূন আহমেদ: পাঠপদ্ধতি ও তাৎপর্য” বইতে উক্ত নিয়ে উপন্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা রেখেছেন এবং হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম 'সিরিয়াস রচনা হিসেবে একে উল্লেখ করেছেন। বস্তুত ‘এই বসন্তে’ একটি সিরিয়াস ধরনেরই রচনা মনে হয়েছে। এখানে তিনি একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা তিনি যথাযথভাবে সফলও হয়েছেন
জীবনের বিভিন্ন মাত্রায় ভ্রমণের পাশাপাশি গভীরতম সত্য অনুসন্ধানের একটি প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় এই উপন্যাসে। এদিক থেকে এই উপন্যাসটি হুমায়ূন আহমেদের অন্য সব উপন্যাসের থেকে আলাদা।
নীলগঞ্জে ‘এই বসন্তে’ সাইফুল ইসলামের প্রভাবে জহুর আবার তার পুরোনো বিপ্লবী সত্ত্বায় ফিরুক!
দ্বিতীয়বারের মতন পড়ে শেষ করলাম। প্রথমবার অবশ্য আমার হার্ডকভার পড়া হইছিল না, অডিওবুকের কল্যাণে, ওখান থেকেই শুনেছিলাম। পরবর্তীতে গল্পটা আমার ভাল লেগে যাওয়ায় কিনে ফেলি হার্ডকভারটাও। এরপর তুলে রেখেছিলাম, পড়ব পড়ব করে আর পড়া হচ্ছিল না, অবশেষে সেদিন হাতে তুলে নি...আর পড়ে শেষ ও নামাই।
খুব সাধারণ ছিমছাম একটা উপন্যাস। আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদের বড়লোক কেন্দ্রিক উপন্যাসগুলা অত্যাধিক কৃওিম আর অতিরঞ্জিত লাগে কিন্তু সেদিক বিবেচনায়, এইযে গ্রাম্য, মধ্যবিত্ত নিয়ে তার লেখা সব দিক হতেই হৃদয়স্পর্শী। গ্রাম্য পলিটিক্স, ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই, পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা, মানুষের প্রতি মানুষের আচার-আচরণ সবকিছুই পড়ার সময় খুব রিয়েলিস্টিক ম��ে হতে থাকে।
তবে... উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নিজেকে উপস্থাপন কিংবা তার নিজের ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্টে লেখক তেমন ইফোর্ট দেন নাই। সে গল্পের প্রোটাগনিস্ট হওয়া স্বত্বেও কেমন যেন সব পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল। থেকে নাই এমন প্রকারের।
গল্পটা কিছু অংশে ট্রাকলেস, বিশেষ করে এন্ডিংটা হুট করেই হয়ে গেল। চাইলে কাহিনি একটু বাড়ানো যেতে পারত। এই বইটা নিয়ে ক্রিটিসাইজ করার মেইন পয়েন্ট এটা হতে পারে, যে হুট করেই শেষ করে দিল সবটা। হয়ত হুমায়ুন স্যার ডিনারের পর লিখতে বসেছিলেন, কিছুক্ষণ লেখার পর তার ঘুম এসে যায় আর সে লেখা থামিয়ে ঘুমাতে চলে যায়, পরবর্তীতে এতটুকুই নসিবে জোটে উপন্যাসটার।
গতবার ৪★ দিয়েছিলাম। এবার একটা স্টার কমিয়ে দিলাম। কাহিনি খারাপ না, সময় কেটে যাবে, বিরক্তি আসবে না, তবে খাঁচ বাংলায় বললে, বলতে হবে... "ত্যাড়াব্যাকা"।
সত্তর - আশি দশকের জনজীবন, সামাজিক অবস্থা, পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা মিলিয়ে "এই বসন্ত" উপন্যাসটি।
বইয়ে 'মনসুর আলি' চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে যায় এবং এই চরিত্রের পরিণতি বড়ই কষ্টদায়ক। তবে এ চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে খুবই বিশেষ এক বার্তা দেওয়া হয়েছে। যা আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
বইটি যেহেতু হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা, তাই লেখনী নিয়ে খুব বেশি কিছু বলবো না। সচারাচর উনার উপন্যাসগুলো যেমন হয়, এটাও তেমন। পড়লে কিছুক্ষণ বিষন্ন লাগবে, আবার না পড়লেও ক্ষতি নেই। ঠিক যখন সবকিছু একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় ঠাশ করে শেষ হয়ে গেল।
প্রেক্ষাপট বইটি ছোট একটি বাজার (নীলগঞ্জ) এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তির প্রভাব, বিভিন্ন অপরাধের বিচার না হওয়া এবং অপরাধীদের বদলে নিরাপরাধীদের বিচার হওয়া নিয়ে লেখা। শুরু বইটি একজন খুনের মামলার (মিথ্যা মামলা) আসামি জহুরের জেল থেকে ছাড়া পাবার সময় থেকে শুরু হয়। লেখনী বইটির লেখক হুমায়ূন আহমেদের লেখনী বরাবরের মতই সাবলীল। কাহিনি সংক্ষেপ জহুর আলি মূলত এই বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে বিভিন্ন অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলত, আন্দোলন করত। এই সূত্রে সে বহুবার এলাকার প্রভাবশালী ছোট চৌধুরীর সাথে অনেক বাজে ব্যাবহার করে। একবার ছোট চৌধুরীর কলার ধরে সে বলেছিল " হাতজোড় করে মাফ চা, নইলে এখানেই খুন করে ফেলব"। তিনি সেখানে হাতজোড় করে মাফ চেয়েছেনও। এর প্রতিশোধ তিনি তোলেন জহুরকে বদি খুনের মামলার আসামী করে। এতে জহুরের নয় বছরের মত জেল হয়। সে ছাড়া পায় ছয় বছর তিন মাস পরে। জেল থেকে ছাড়া পাবার পর অনেক ধরণের কথাবার্তা নীলাগঞ্জ বাজারে চলতে থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে "সে ছোট চৌধুরী কে খুন করবে"। বদির স্ত্রী মিনুকে জহুর আগে থেকেই পছন্দ করত। ছাড়া পেয়ে সে তার সাথে দেখা করে জানতে চায় যে মিনুও কি বিশ্বাস করে কি না যে খুনটা জহুর করেছে। মিনু জানায় সে জানে জহুর করেনি। এরপর সে সেখানে বারবার যাওয়া আসা শুরু করে। মিনুর বিভিন্ন কথা ধারণা দেয় যে সেও জহুরকে পছন্দ করে। তবে এই ঘটনা আর বেশিদুর অগ্রসর হয় নাই। বইয়ে দেখা যায় অনুফা (জহুরের দুলাভাই এর দ্বিতীয় স্ত্রী) জহুরকে মানা করে সেই বাড়িতে যেতে এবং জহুর সম্মতি জানায়।
জহুর জেলে যাবার আগে থাকত তার আপার বাড়িতে। তার দুলাভাইয়ের নাম দবির মিয়া। জহুর জেলে যাবার পর তার আপার এবরশন হয়। সময়মতো হাসপাতালে না যেতে পারার কারণে মৃত্যু হয় তার। দবিরের দু মেয়ে। টুনী আর অঞ্জু। এরপর দবির অনুফা নামক একজনকে বিয়ে করে। তার স্ত্রীর আগের পক্ষের দুই ছেলে ছিল। তারা দবিরদের সাথে বসবাস শুরু করে। দবির সবসময়ই বাচ্চা দুটির (নিজের বাচ্চাদের সাথেও) সাথে খারাপ ব্যাবহার করলেও শেষের দিকে তাকে ভাল ব্যাবহার করতে দেখা যায়। দবিরের কাপড়ের ব্যাবসা। এ ছাড়াও তাকে ডাল স্টক করতে দেখা যায়।
অবিচারের আরেকটি আমরা দেখি দবিরের দোকানে চুরি হবার পর থেকে। তার নাইটগার্ড মনসুরকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ চোর সন্দেহে। দবির ছাড়াতে গেলেও ছাড়ে না। এরপর পুলিশের মার খেয়ে মনসুরের মৃত্যু হয়। তারা দবিরকে ডেকে বলে এটা নিয়ে ঝামেলা না করতে এবং মানুষকে বলতে যে মনসুর আসলেই চোর ছিল।
সাইফুল ইসলাম একজন গানের শিক্ষক। সে তার ছাত্রীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল চিন্তাভাবনা করত এবং ঘরে বসে তাদেরকে অনেক অশ্লীল চিঠি লিখত। মনসুর মারা যাবার আগের রাতে সে থানার পাশ দিয়ে যাবার সময় চিৎকার শুনতে পায়। মনসুর হত্যার বিচারের জন্য থানা ও পত্রিকা অফিসে বেনামে চিঠি লিখতে থাকে। থানার ওসি সেটা টের পেয়ে তার ঘর সার্চ করে অশ্লীল চিঠিগুলো পেয়ে প্রচার করে এবং তাকে বাজারে বিশবার কানধরে উঠাবসা করায়।
উপন্যাসের শেষদিকে আমরা দেখি দবির জহুরকে বলছে যে সব মানুষ মাছের মত হলে হয় না। সে জহুরকে তার আগের কথা (অন্যায়ের প্রতিবাদকারী জহুর) মনে করে দেবার চেষ্টা করে, যদিও সে শুরু থেকেই বলে আসছিল সব কথা ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে। একবারে শেষ পর্যায়ে লেখক বোঝান যে সাইফুলকে টুনী পছন্দ করে (এই জন্য টুনীর দুইটি বিয়ের প্রস্তাবের একটি নিয়েও খুশই হতে দেখা যায় নাই)।
বাস্তবতার সাথে তুলনা ঘটনাগুলির মিল বাস্তবতার সাথে যথেষ্ট আছে। অবিচার, নিরপরাধীদের শাস্তি, অপরাধের বিচার না হওয়া আমাদের সমাজে নতুন কিছু না। এগুলো আমাদের সমাজে এত বেশি যে, ঘটনাগুলো উপন্যাসের না হয়ে সত্যি হলেও হয়ত কেউ চমকে উঠত না।
This entire review has been hidden because of spoilers.
নীলগঞ্জে দবির মিয়াঁর কাপড়ের ব্যবসা। সে খুব ধূর্ত একজন মানুষ। আগে থেকে হিসাব করে বের করে রাখে কোন জিনিশের দাম বাড়বে ভবিষ্যতে, সেই জিনিস সে কিনে জমায়। যখন দাম বাড়ে তখন বিক্রি করে। তার পরিবারে আছে তার প্রথম পক্ষের বিয়ের ২ মেয়ে টুনী ও অঞ্জু আর দ্বিতীয় পক্ষ বিয়ের ২ যমজ ছেলে বাবলু ও বাহাদুর। এরা দবির মিয়াঁর সন্তান না। দ্বিতীয় পক্ষের বউ এর প্রথম পক্ষের সন্তান। দবির মিয়াঁর শ্যালক জহুর ৬ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পায়। জহুর দবির মিয়াঁর প্রথম বউ এর ভাই। জহুরকে ফাঁসিয়ে দেয় গ্রামের প্রতাপশালী ব্যাক্তিত্ব চৌধুরী সাহেব। জহুর এসে উঠে দবির মিয়াঁর বাড়িতে। জহুরের আসার খবর শোনার পর থেকেই চৌধুরী সাহেবের মনে ভয় ঢুকে যায় এইবার হয়তো জহুর তার বদলা নিবে। কিন্তু জহুর কিছুই করে না। নীলগঞ্জের বাজারে আমাবস্যা রাতে চুরি হবেই। দবির মিয়াঁর দোকানেও চুরি হলো। আর পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেলো বুড়ো মনসুরকে। মনসুর দবির মিয়ার দোকানে রাতে থাকতো, পাহারা দিতো। দবির মিয়া মনসুরক�� ছাড়াতে যেয়ে দেখেন মনসুর আধামৃত। থানাওয়ালারা পিটিয়ে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। তার পর দিন খবর আসে যে থানাওয়ালারা মনসুরকে পিটিয়ে মেরেই ফেলে। এই ব্যাপারটা সাইফুল ইসলাম এর মনে ব্যপক দাগ কাটে। সাইফুল ইসলাম নীলগঞ্জে একমাত্র গান জানা লোক। টুনী সাইফুল ইসলামের কাছে গান শিখে লুকিয়ে লুকিয়ে। এই ব্যাপারটা কেউ জানে না। সাইফুল ইসলাম লোকটা নারীদের নিয়ে ফ্যান্টাসাইজ করতে পছন্দ করে। তাদের নানারকম অশ্লীল চিঠি লেখে কিন্তু পাঠায় না। এইরকমই বেনামী চিঠি লিখে ফেললো থানাওয়ালাদের কাছে। তাদের কাছে মনসুর এর হত্যার খোলাসা চেয়ে চিঠি পাঠাতে লাগলো। এমনিতে সাইফুল ইসলাম খুব ভীতু ধরণের একজন লোক। কিন্তু তার মনে হয় মনসুর এর হত্যার বিচার পাওয়াটা খুবই জরুরি। এই নিয়ে সে জহুর এর সাথে দেখা করে। নীলগঞ্জে সবাই জহুরকে ভয় পায় কারণ জহুর এর ছিলো অগাধ সাহস। কিন্তু জেল থেকে আসার পর কেমন ম���ইয়ে গেছে জহুর। সাইফুল ইসলামের ঘর থেকে হারমোনিয়াম চুরি হওয়ায়, থানায় রিপোর্ট করতে গিয়ে সাইন করায় সাইফুল ইসলামের বেনামী চিঠির রহস্যা ফাস হয়ে যায়। তখন তাকে জনসম্মুখে উঠবস করানো হয়। দবির মিয়া নীলগঞ্জে ছিলেন না। পৌঁছেই শুনলেন সবার মুখে এককথা। গানের মাস্টারের ঘটনা। বিরস মুখে বাড়ি গিয়ে দেখলেন একদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার জহুর চুপচাপ বসে সিগারেট ফুঁকছে। এই অন্যায় তাকে স্পর্শ করেনি। সে যেন অন্যায়কে সইবার জন্যই সদাপ্রস্তুত। তা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না দবির মিয়া। জহুরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ' সব মানুষ মাছের মতো হলে বাঁচা যায় না। দু'একজন অন্যরকম মানুষ লাগে। ' টুনীর একটা ভালো বিয়ে ঠিক করে দিয়েছেন চৌধুরী সাহেব, জহুরের চাকরির ব্যবস্থাও করছেন। কিন্তু তার মনে তো ভয়, যদি উলটা পালটা কিছু করে বসে জহুর? টুনীর ভালো বিয়ে ঠিক হলেও তার মনে দুঃখ। সে সারাক্ষণ কাঁদে। বারান্দায় যখন জহুরকে সে পায় না, তখন সে ভাবে জহুর হয়তো সাইফুল ইসলামকে আনতে গিয়েছে। সাইফুল ইসলামের জন্য টুনী ভাত বসায়। মানুষটা বাড়িতে আসবে, ৪ টা ভাত তো খাবে। টুনীর চেহারা তেমন ভালো নয়। কিন্তু আগ্নের আঁচে তাকে রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে। আগুনের পাশে মানুষকে সবসময়ই সুন্দর দেখায়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
আধুনিকায়নে চিড় ধরিয়ে চলুন পিছের দিকে পাতা ওলটানো যাক! জানা যাক গল্পের মাধ্যমে কয়েক যুগ আগের মানুষদের কথা। জানা যাক তাদের চলন,কথন,ধরণের নিয়মাবলি বা তাদের খাদ্যাভ্যাস আর সমাজ ব্যাবস্থা। এসব তথ্যের জন্য হাতে চারকোণা মুঠোফোনের উইকিপিডিয়া না বরং একখানা বই তোলা যাক।
সত্তর দশকের জনজীবন,সামাজিক অবস্থা,পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা সম্বলিত ❝এই বসন্ত❞ উপন্যাসটি লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দের। সমকালীন উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য বলতে আমরা সে সময়টার আবহে প্রতিটা উপাদানের সরল ব্যাখ্যা বুঝি। অর্থাৎ লেখক যে গল্পটা লিখছেন, যে চরিত্রগুলো সাজাচ্ছেন, সে সমাজ ব্যাবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন, যে নিয়ম তুলে ধরছেন সেসব বিষয় সে সময়টার প্রতিনিধিত্ব করবে। ঠিক যেমন 'এই বসন্তে' উপন্যাসটি সত্তর দশকের রুপায়ন।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
কড়া রোদ চারদিকে। বাতাস উষ্ণ। গেটের বাইরে প্রকান্ড শিমুল গাছে লাল লাল ফুল। বসন্তকালের লক্ষণ এই একটি-ই।..... নামানুসারে এভাবে বসন্তের আবহাওয়া বর্ণনা করে উপন্যাসের সূচনা।
বিনাদোষে খুনের আসামী হওয়া 'জহুর' চরিত্রটির ছ-বছর তিনমাস বাদে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনার মাধ্যমে কাহিনীর সুত্রপাত। জহুরের জেল হতে নীলগঞ্জে ফেরত আসাকে কেন্দ্র করে ছয় বছরের ব্যাবধানে নীলগঞ্জের বিশদ পরিবর্তন,চেনা মানুষগুলোর জীবনধারা,আইন ব্যাবস্থা,ব্যাবসায়ীদের অবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিস্তরভাবে ঘটনাক্রমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরো বর্ণিত আছে "মিনু" নামকএক বিধবার সমাজে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া। বিধবাদের কত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সমাজে টিকে থাকার জন্য? আছে বহু বছর ধরে নীলগঞ্জে প্রভাব বিস্তার করতে থাকা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা 'চৌধুরী সাহেব' এর আত্মগ্লানি। অনুতপ্ত হবার পরে তাঁর ভালো কাজের চেষ্টা, অন্যের উপকারের চেষ্টা কতখানি ছিলো?
চরিত্র পর্যালোচনাঃ
প্রথমেই বলবো "দবির মিয়া"-র কথা। পুরো উপন্যাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনায় তার উপস্থিতি। নীলগঞ্জের এই ব্যাবসায়ী দবির মিয়া ব্যাক্তিগতভাবে কেমন? আমার চরিত্রটিকে ভালো লেগেছে। রাগী চরিত্রটির চারপাশ নিয়ে ভাবনা,নির্দোষীকে নিয়ে ভাবনা আমার ভালো লেগেছে। আবার অনেক জায়গায় তার অপ্রয়োজনীয় রাগ খারাপ লেগেছে।
'জহুর' এর ব্যবহারে, নিশ্চুপতায়,কর্মকান্ডে,চলনে তার সাহসিকতার শক্ত একটা রেশ পাওয়া যায়। এইদিকে এই চরিত্র বেশ স্ট্রং ইম্প্যাক্ট দেয়।
'টুনি আর অঞ্জু' চরিত্রটি দুঃখের কাঠি ছুঁইয়েছে। টুনির গানের শখ,অশ্রুপাত,অঞ্জুর সরল জীবনিপাতেও ছিলো দুঃখের পরশ।
'সাইফুল ইসলাম' চরিত্রটি উপভোগ্য।
'মনসুর আলি' এই চরিত্রটির পরিণতি বড্ড কষ্টদায়ক। এ চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে খুবই বিশেষ এক বার্তা দেওয়া হয়েছে। ছোট শহরগুলোতে আমাদের আইন ব্যাবস্থা ঠিক কতটুকু কার্যকর? বা প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কি অন্যায় করছেন?
পরিশেষে দবির আলির দোকান,বারান্দা,বেচারি অনুফার অসুস্থতা,মিনুর অসহায়ত্ব,নান্টুর মিউজিক টেস্ট সব মিলিয়ে উপন্যাসটি ভিজুয়ালাইজ করতে দারুন লাগছে।
মতামতঃ উপন্যাস থেকে পাওয়া বার্তাটা অনেক স্ট্রং। নেহাৎই সত্তর দশকের সমাজব্যাবস্থার মেজর অংশ উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। চরিত্রগুলোও ছিলো জীবন্ত,হৃদস্পর্শী।
জনপ্রিয় লেখকের আন্ডাররেটেড বই সম্পর্কিত আলোচনার এক পর্যায়ে এক বড়ভাই এই বইটার কথা বলেছিল। বইটা শুরু করবার আগে কথাটা মনে পড়ে গেল। হুমায়ুন আহমেদের অন্য অনেক বইয়ের মতো এখানে কোন সমাপ্তি নেই। অনেক পাঠকের কাছেই বিষয়টা ভালো নাও লাগতে পারে, তবে এই গল্পের শেষ না থাকলেও লেখক একটা ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন।
মিথ্যা মামলায় ছ'বছর জেল খাটার পর মুক্তি পায় জহুর। তাকে জেল খাটতে হয়েছিল চৌধুরি সাহেবের ষড়যন্ত্রে। জহুর প্রচন্ড তেজোদীপ্ত যুবক, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার। তবে এই সবই এখন অতীত। জেল থেকে বের হওয়ার পর তার সব অনুভূতি-ই যেনো ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। তবে গল্পের শেষে তার পরিবর্তন ঘটে কীনা তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
গল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দবির মিয়া, প্রচন্ড অনুভূতিশীল মনকে তিনি লুকিয়ে রাখেন ভাবলেশহীন, রাগী মুখাবয়বের আড়ালে। দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম পক্ষের দুই ছেলেকে কারণে অকারণে প্রহার করলেও গভীর রাতে কিসসা শনাতে কার্পণ্যতা করেন না তিনি। বিয়ের পাত্র পছন্দ না হওয়ায় মেয়েকে বকলেও দুইদিন পর অজানা কোন কারণে বিয়ে ভেঙে যায়। জেলফেরত শ্যালকের হাতে টাকা না দিয়ে মেয়েকে দিয়ে চুপিচুপি পকেটে রেখে দিতেই সাস্থন্দ্য বোধ করেন তিনি। কাজের লোককে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেললে বিপদ জেনেও তাদে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবেন তিনি। আবার একই সাথে উটকো কোন ঝামেলাও চান না তিনি, জহুরের জেল খাটার পেছনে চৌধুরির হাত আছে জেনেও তাদের মিট্মাট করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। নির্দোষ জেনেও পুলিশের কথায় চাকরের চুরির ঘটনা রটান তিনি।
সাইফুল ইসলাম মেয়েলি স্বভাবের গানের শিক্ষক। ফর্সা মেয়েদের নিয়ে ভাবতে এবং তাদের অস্লীল চিঠি লিখতেই স্বাছন্দ্য বোধ করে সে। তবে লেখা পর্যন্তই, সে চিঠি কখনো কাওকে পাঠানো হয় না। কিন্তু হঠাত এক দুঃসাহসী কাজ করে ফেললেন তিনি। বেনামী চিঠি লেখে ফেললেন পুলিশকে। নিরীহ গানের মাস্টার থেকে গল্পের একমাত্র প্রতিবাদী চরিত্র সে। সব মানুষ মাছের মতো হলে বাঁচা যায় না। দু'একজন অন্যরকম মানুষ লাগে।
কড়া রোদ চারদিকে। বাতাস উষ্ণ। গেটের বাইরে প্রকাণ্ড শিমুল গাছের লাল লাল ফুল। বসন্তকালের লক্ষণ এই একটিই। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস চোখে ��িমুল গাছের দিকে তাকিয়ে রইল। অ্যাসিন্টেট জেলার সাহেব তাকে শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত রেলের একটি পাস এবং ত্রিশটি টাকা দিয়েছেন। এবং খুব ভদ্রভাবে বলেছেন, জহুর, ভালোমতো থাকবে। ছাড়া পাবার দিন সবাই খুব ভালো ব্যবহার করে। জহুর আমি ছ’বছর তিন মাস পর নীলগঞ্জের দিকে রওনা হলো। কড়া রোড। বাতাস উষ্ণ ও আর্দ্র। বসন্তকাল।
হুমায়ুন আহমেদ এর ছোট উপন্যাস গুলোতে উনি প্রোপার এন্ডিং এর ধাঁর ধাঁরেন না তবে " শেষ হয়েও যেন হইলো না শেষ" টাইপ একটা ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। পাঠকের চিন্তার অবকাশ থাকে। সেই তুলনায় এটার শেষ টা অনেক ই বাজে। প্লট ভালো। ক্যারেকটার দের যেই রঙতুলি তে আঁকানো সেটাও ভালো। তবে শেষ টা করার আগে আরোও কিছু প্রপার বাইন্ডিং প্রয়োজন ছিল কাহিনীর
বরাবরের মতই সুপাঠ্য ! ক্যানভাস টা অনেক বড় ছিলো ... এবং আরো অনেক কিছুই করা যেত । পরিশেষে একটা অতৃপ্তি থেকে গেলো । . . কিন্তু ঐযে হুমায়ুন আহমেদ এর সাবলীল উপস্থাপন .. তার জন্য ৩/৫ না দিয়ে উপায় নেই ।
হুমায়ূন আহমেদের শত শত স্থূল উপন্যাসের মধ্যে এটা একটা উপন্যাস যা সত্যিই অনেক গভীরে গিয়ে একটা চিন্তা দর্শনকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু লেখক সেই চিন্তাটাকে পয়েন্টটাকে আরেকটু সুন্দরভাবে ইচ্ছে করেই তুলে ধরেন নায়। পয়েন্ট দেখানো শেষ, উপন্যাসও শেষ। অনেকেই এতে বিরক্তও বটে। কিন্তু আমার অস্থির লেগেছে।