কোন কিছু বোঝার আগেই তপুর জীবনটা হঠাৎ করেই পাল্টে গেলো চিরদিনের মত। দেখতে দেখতে তার আপনজনেরা দূরে সরে যেতে থাকে, এক সময় তপু আবিষ্কার করে সে একা। একেবারেই একা।
নিঃসঙ্গ কিশোরের এই দুঃসহ জীবনে বন্ধুতের হাত বাড়িয়ে দিল তার বিচিত্র সব সঙ্গী সাথী। তাদের নিয়ে সে কী পাড়ি দিতে পারবে তার বান্ধবহীন নিষ্ঠুর এই জীবন?
'আমি তপু' নিঃসঙ্গ এক কিশোরের বেঁচে থাকার ইতিহাস । নিষ্ঠুরতার ইতিহাস এবং ভালবাসার ইতিহাস।
Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.
Birth and Family Background: Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.
Education: Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.
Personal Life: Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.
Academic Career: After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.
Literary career: Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.
Other Activities and Awards: Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.
কিছু বই এমন যে যেকোনো বয়সেই পড়া যায়। ❝আমি তপু❞ আমার কাছে এমনই একটা বই। যতবারই পড়ি না কেন একবুক কষ্ট, আনন্দ, বিচ্ছেদ, পাওয়ার প্রশান্তি দিয়ে যায়। গল্পটা এক হতভাগা ছেলের, তপু। দুর্ঘটনায় বাবা হারানোর পর থেকে জীবন বিষিয়ে ওঠে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো জীবনে বিষ ঢালা ব্যক্তিরা তারই আপনজন। জীবিত থেকেও যেনো সে মৃত! কিন্তু মিরাকল হয়ে যায়। বন্ধুবেশে এক ম্যাজিশিয়ান চলে আসে জীবনে, যে তারসহ বাকিদের জীবনে খুশি বিলিয়ে দিতে থাকে। কিন্তু এই পথ চলা কেমন ছিল তপুর?
মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাসগুলোর প্রায় কমন একটা বিষয় হলো ❝বন্ধুত্ব❞। মূল চরিত্রের সাথে উনি বন্ধু বা বন্ধুদল জুড়ে সুন্দর মিষ্টি একটা গল্প বানিয়ে ফেলেন। পড়তে যেয়ে কখন যে নিজের কল্পনার জগতে হারিয়ে যাই বুঝতেই পারি না। স্কুলে থাকতে যখন কিশোর উপন্যাসগুলো পড়তাম তখন মনে হতো; ইশ, যদি আমারও এমন বন্ধুদল থাকতো! যাদের সাথে আমি এমন মজা করতে পারতাম, এডভেঞ্চারে বের হতে পারতাম, অসাধ্য সাধন করতে পারতাম। মিষ্টি-মধুর বন্ধুত্বের এমন গল্প আমার সবসময়ই প্রিয়। তপুর সাথে প্রিয়াংকা ও বন্ধুদের গল্প অনেক ভালো লেগেছে। সত্যিই প্রিয়াংকা কথা রেখেছে। আম্মু, ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব সবই সে হয়েছে তপুর!
বইটা পড়ার সময় কখনও হেসেছি তো কখনও চোখ ভিজে উঠেছে। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ও তপুর কষ্ট দেখে বুকটা কেমন জানি খালি খালি লাগে। তবে পড়ার সময় রাগও অনেক হয়েছে। কাছের মানুষটা এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে! সমাপ্তি আমার কাছে সুখের মনে হয়েছে। বিষাক্ত জীবনের থেকে ভালোবাসার বিদায় শ্রেয়।
বইটার দুটো ভাগ আছে। একভাগে আছে তপুর মা'এর তার প্রতি নিদারুণ অত্যাচার, আরেক ভাগে আছে সে ব্যবহারের প্রেক্ষিতে তপুর অনুভূতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। তপুর মা'এর তপুর প্রতি অমানুষিক আচরণের অংশটা আমার বিশ্বাস হয়নি। কোন মা নিজের গর্ভের ছেলের সাথে এরকম আচরণ করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না (অনেকে বলতে পারেন মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, ব্যাপারটা যে আমারও মনে হয়নি তা নয় কিন্তু আমার বিশ্বাসের পাল্লা বিপরীত দিকেই বেশি ভারী)। তবে এটুকু বিশ্বাস না হলেও তপুর অনুভূতিটা আমি খুব তীব্রভাবে অনুভব করতে পেরেছি। বই পড়তে পড়তে কোন আমার চোখে আর্দ্র হয়ে উঠেছে কখনো আবার বই বন্ধ করে ভেবেছি, বন্ধুত্ব কি দারুণ একটা সম্পর্ক! এরকম একটা প্রিয়াংকা থাকলে তপুরা কখনোই হারবে না। হোঁচট খেলেও সবসময় ট্র্যাকেই থাকবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমার ভীষণ পছন্দের একজন লেখক। তার লেখা কিশোর উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশনগুলো আমার আজকের আমিতে গড়ে ওঠার পথে অনেক অনেক অবদান রেখেছে। তাই তার লেখা নিয়ে আমি কিছু বলতে গেলে বায়াসড হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও একটা ব্যাপারে হয়তো সব পাঠকই একমত হবেন যে, তার লেখা মাখনের মত নরম। কখন মুখে নিলাম, কখন গলে গেলো আর কখন পেটে চলে গেলো; টেরই পেলাম না। এই বইটাও তাই। অফিসের কাজের ফাঁকে ১২৩ পৃষ্ঠার বইটা পড়তে আমার দু'ঘন্টাও লাগেনি, এতটাই স্মুথ তার লেখা। স্যার, আপনি দীর্ঘজীবী হউন। নিজেকে দিয়ে বুঝি, এদেশের প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর আপনাকে দরকার।
খুব প্রিয় একজন বন্ধুর কাছে গিফট পেয়েছিলাম বইটা। আমার সবচাইতে বেশিবার পড়া কিশোর উপন্যাস আমি তপু। প্রতিবারই বইটা পড়ে বোকার মত কাঁদতে থাকি!
হঠাৎ করে বাবা মারা যাওয়ার পর তপুর পারফেক্ট লাইফটা সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে যায়। স্কুলের সবাই ভাবে এককালের অসম্ভব ভাল ছাত্র তপু বোধহয় গুন্ডা কিংবা সন্ত্রাসী হয়ে গেছে। শুধু তপু জানে তার আর কেউ নেই। তার আম্মু আর বড় ভাই বোন থেকেও নেই। বেঁচে থাকতে হলে তাকে একা বেঁচে থাকতে হবে। বড় হতে হলে তাকে একা একা বড় হতে হবে। যার চোখের পানির কোন মূল্য নেই এই পৃথিবীতে তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই!
প্রিয়াঙ্কা নামে ম্যাজিকের মত একটা মেয়ে আছে এই গল্পে। প্রথম দিন ক্লাসে এসেই রাজাকার স্যারকে বলে- "এক বন্ধুর সামনে আরেক বন্ধুকে মারলে আমাদের খুব লজ্জা হয়। আমাদের মারলে আমরা ব্যথাটা সহ্য করতে পারি, কিন্তু লজ্জাটা সহ্য করতে পারিনা।" আহা.. কি নির্মম সত্যি! শেষ বেঞ্চে বসে পা দোলাতে দোলাতে মানুষ দেখার মধ্যেও এত আনন্দ সেটা কে জানতো! কিংবা সম্পূর্ণ অচেনা মানুষকে খুঁশি করে দেয়ার মাঝে যে খাঁটি আনন্দ পাওয়া যায় সেটা কি প্রিয়াঙ্কা না বলে দিলে কখনও জানতে পারতাম?! তার ভাষায় এটা হল বিক্ষিপ্তভাবে আনন্দ বিতরণ। সুন্দর করে কথা বলতে পারাটা কিংবা সবার সাথে মিশতে পারাটাও যে একটা গুণ সেটা প্রিয়াঙ্কাকে দেখে বুঝতে পারি।
ম্যাথস অলিম্পিয়াডে গিয়ে সবচাইতে কঠিন অংকটা সলভ করে তপু যখন চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য চ্যাম্পিয়নস হয় তখন আনন্দে চোখে পানি চলে আসে!
রাতের বেলা তপুর আম্মু তপুকে মারতে আসলে তপু বলে "এখন আমাকে যাই কর না কেন, ছোট থাকতে আমাকে যে আদর করেছিলে সেটা কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবেনা।"
সাধারণত জাফর ইকবাল স্যারের বই যারা পড়ে তারা এই বই প্রায় প্রথমদিকেই পড়ে। কিন্তু উনার প্রায় বেশিরভাগ বই পড়ার পরেও যখন আমার কাজিন জানলো আমি এই বই এখনো পড়িনি তখন খুবই অবাক হলো। তখনই সিদ্ধান্ত নেই এই বই পড়ার। এই বই আমি পড়েছি ২০১৮ সালে, এইচএসসি পরীক্ষার মাঝে। পড়তে গিয়ে কেঁদে কেটে চোখ ফুলিয়ে সেই এক অবস্থা। জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো বই পড়ে আমি কেঁদেছি। কেউ যদি আমাকে জাফর ইকবাল স্যারের একটা বই সাজেস্ট করতে বলে তাহলে তাকে আমি এই বইটা পড়তে বলবো। যদিও উনার সব কিশোর উপন্যাস গুলোই ভালো, তবুও কেন জানিনা আমার এই বই এর প্রতি অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। আমার all time favourite একটা বই।
বইটি প্রথম যখন পড়ি তখন আমি ক্লাস এইটে। তখন নতুন নতুন জাফর ইকবাল পড়া শুরু করেছি, একটু একটু করে তার ভক্ত হওয়া শুরু করেছি। ঠিক এইরকম একটা সময়ে বইটা প্রথম বার পড়ি।
রাত জাগার অভ্যাস আমার সেই ছোট কাল থেকে। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেলে তখন এইসব বই পড়তে বসতাম। কারণ পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যকোন বই পড়া আমাদের বাসায় বারণ ছিল। খুব সম্ভবত রাত সাড়ে বারোটা কি একটার দিকে বইটা নিয়ে বসি।
আমি তপুই প্রথম বই যেটা পড়ে আমি হাপুস নয়নে কেঁদেছিলাম। আমি তখন ক্লাস এইটে, বয়স ১৩। তপুও ক্লাস এইটে, তারও বয়স ১৩। পড়ার সময় মনে হচ্ছিল তপুর সাথে না, সব আমার সাথেই ঘটছিল। চোখের সামনে সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম একটু খানি আদর, একটু খানি ভালবাসা পাওয়ার জন্য তপুর কি আকুতি; অবহেলায় অতিষ্ঠ হয়ে হয়ে বাড়ি ছেড়ে তপুর চলে যাবার সিদ্ধান্ত, স্কুলে গিয়ে প্রিয়ংকার সাথে দেখা, প্রিয়ংকার ডাক শুনে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে তপুর লাফ দেয়া, বুকের উপর একটা ইঁদুর ছানাকে বসিয়ে তার সাথে সুখ দুঃখের গল্প ককরা, গণিত অলিম্পিয়াডে ত��ুর চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, প্রিয়ংকার সাথে তার ঘুরে ঘুরে আনন্দ বিতরণ, প্রিয়ংকাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে ভড়কে দিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেয়া, তপুর শেষমেশ তার মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া... ঠিক যেন পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি। একের পর এক আমার চোখের সামনে প্রতিটি দৃশ্য চিত্রিত হচ্ছে, আমি সব দেখতে পাচ্ছি, সব অনুভব করতে পারছি। জীবনে প্রথম কোন বই পড়ে এতটা জীবন্ত অনুভূতি পেয়েছিলাম।
বইটা শেষ হতে হতে রাত ৩টা বাজে। সবাই ঘুমাচ্ছে এরমাঝে আমি হাপুস নয়নে কাঁদছি। বুকে প্রচন্ড কষ্ট, দুচোখে অঝোর ধারায় পানি... এখন মনে পড়লে হাসি পায়! আসলে ঠিক হাসি না, সেই পুরানো অনুভূতিটা ফিরে আসে। এতটা কষ্ট...
কিছু পাঞ্চ লাইন ছিল যেগুলো আজীবন মনে থাকবে আমার। প্রিয়াঙ্কার বাবা যখন তপুকে বলছিল, খ্যাতি পাওয়াটাই বড় কথা নয়, খ্যাতিটা যাতে অপাত্রে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপর শেষ দিকে তপু যখন হাসপাতালের রুম থেকে বেরিয়ে আসে, চোখে পানি আর ঠোঁটের কোণায় এক টুকরো হাসি, কি বিচিত্র দৃশ্য। এসব লাইন কি কখনো ভোলা সম্ভব?
This entire review has been hidden because of spoilers.
বইটা একবুক কষ্ট ঠেলে প্রায় আঠার বছর পর দ্বিতীয়বার পড়লাম। এ বই পড়ার পর আমি বারবার ভুলে যেতে চাই। পথে বের হয়ে পড়েছিলাম। স্ট্রে। বইটা আমাকে আরো একবার ফিরিয়ে আনল। আমি কি তপু? জানি না। তবে আমারও একজন প্রিয়াংকা আছে, এটা জানি। ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
চোখে পানি আর ঠোঁটের কোণায় একটু হাসি - এটা কী বিচিত্র একটি দৃশ্য!
জাফর ইকবালের লেখা এই বইটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। এর আগেও পড়েছি এবং পরে যতবার পড়ব ততবার ভালো লাগবে। মনে পড়ে, বন্ধু পড়ে বলেছিল প্রিয়াংকাকে ভালোলেগে গেছে। আমি এমনভাবে তাকিয়েছিলাম! ভাবতেই হাসি পেয়ে যায়! কী ছেলেমানুষ ছিলাম! :D
বইটার ব্যাপারে অভিযোগ হচ্ছে এটা A Child Called 'It' এর নকল। বই দুটোর তুলনা করা যাক। দুইটাতেই একজন মা তার বাচ্চাকে অত্যাচার করে। বাড়ির অন্যদের থেকে আলাদাভাবে দেখে, খেতে দিতে চায় না, বাড়ির কাজ করায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। ওটাতে মেরুদন্ডহীন বাবা আছে, এটায় আছে ভাই-বোন। ওখানে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মা খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয়, এটায় একটা কারণে শুরু হয়। এরকম আরো কিছু বলা যাবে। এবং এভাবে দেখলে যে কেউ রায় দিয়ে দিবে এটা নকল।
কিন্তু একটা ব্যাপার। বই দুটোর ফোকাস কোন দিকে? ওটায় অত্যাচারটাই, এটায় কিন্তু তা না। এটাই কি সব? এখন কেউ তো বলতেই পারে, একটু কর আর পুরোটাই কর, ...... অথবা ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করা যাক। জাফর ইকবাল বইটা পড়েছেন এবং অনুপ্রাণিতও হয়েছেন। কিন্তু এটা তো স্বীকার করা দরকার ছিল। অথবা হুমায়ূন আহমেদের মতোই কোন ঘটনা ঘটেছে? ওয়েল, আমি আসলে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। স্বয়ং লেখক সেটা বলতে পারবে।
এ বইয়ের সবচেয়ে বেখাপ্পা অংশ হচ্ছে ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ব্যাপারটা। বাস্তবতার উপরে উঠে কল্পনার জগতে চলে গেল। কিন্তু ব্যাপারটাকে ছাড় দেয়া যায়। ২০০৫ সালে লেখা। ওইসময়ে অলিম্পিয়াডের শিশুকাল। বাংলাদেশ প্রথম পদক পেয়েছে ২০০৯ এ। IMO এবং IOI এ। সেই হিসেবে কল্পনার ডানা মেলাটা যুক্তিযুক্তই মনে হয়। আর তাছাড়া অলিম্পিয়াড নিয়ে আরো কয়েকটা বইয়ে আছে, যেমন রাশা। ওটায় কিন্তু এরকম না। সবকিছু মাটিতেই আছে, আকাশে উড়ছে না। তাছাড়া পরবর্তীতে তপুকে দেয়া প্রিয়াংকার বাবার উপদেশ বেশ খাপ খাইয়ে দেয় পুরো ব্যাপারটাকে।
আর একটা বেখাপ্পা অংশ হচ্ছে, 'ইংলিশ মিডিয়ামে যারা পড়ে তাদের কাছে টাকা নাকি হাতের ময়লা!' ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দেয়া হয়েছে। একটা খারাপ message দেয়া হল কিন্তু!
বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র অবশ্যই প্রিয়াংকা। 'আমি তোর আম্মু হব, তোর ভাই হব, বোন হব, তোর বন্ধুবান্ধব হব - দেখিস তুই, খোদার কসম!' অথবা 'তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হতে লাগলো আমি যেন কোরবানির গরু এবং আমার নাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে সে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং সবাইকে বলছে যে এরকম মোটাতাজা কোরবানির গরুটা কিনে আনার পুরো কৃতিত্বটা তার!' কী সুইট! ^_^
ক্লাস ফাইভে প্রিয়াংকা নামে আমার বন্ধু ছিল। তাও দুইজন। চৌধুরী আর ভট্টাচার্য্য। দুইজনই যথেষ্ট বদ ছিল! :3 -_-
হাহা! এবং সবাই যখন তপুকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল তখন দুলি খালাই কিন্তু পাশে ছিল।
এবং এবং প্রিন্সিপাল ম্যাডাম। 'আমরা তার দিকে তাকিয়ে সেই ছোট মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম।' আমার সহজে মন-টন খারাপ হয় না, কান্না তো দূরের কথা। কিন্তু এটা পড়ে আমার চোখে জল চলে আসলো। চারপাশটা ফাঁকা মনে হল। প্রিয় জাফর ইকবাল, আপনি কি জানেন, বাচ্চাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ঢুঁকিয়ে দিয়েছেন শুধু এটুকুর জন্য আপনাকে আমি কখনো ভুলবোনা?
মুজাইক সর্বশেষ যখন চট্টগ্রাম আসলেন তখন এক পিচ্চি প্রশ্ন করেছিল, "তপুর সাথে মেয়েরা কথা বলে, আমার সাথে কেন ক্লাসের মেয়েরা কথা বলেনা?" পুরো জায়গাটা প্রচন্ড হাসিতে ভরে গেল। পুলা একেবারেই পিচ্চি কিন্তু কী শয়তানী বুদ্ধি!
*প্রথম পৃষ্ঠায় আছে ক্লাসে ৪৮ জন ছেলেমেয়ে। তাহলে প্রিয়াংকার রোল ৫২ হয় কীভাবে?
অনেকদিন পর একটি গল্প একবার বসেই শেষ করে ফেললাম। থামতে পারলামনা শেষ না করে। কাঁদলাম, আর পড়ে গেলাম। কি গল্প সেই নিয়ে বিস্তরে আর বলছিনা। পড়ে দেখুন । ভালো লাগবে।
আমি আমার পুরো জীবনে মাত্র দুটো বই পড়ে কেঁদেছি। প্রথমবার কেঁদেছিলাম 'আমি তপু' পড়ে আর পরেরবার 'পথের পাঁচালী' পড়ার সময় দুর্গার মৃত্যুতে। এই বই তুমুল জনপ্রিয়। কাচা বয়সে সবাই পড়েছে। আমি বইটার বিষয়ে অন্তত একটা কথা বলতে পারি, এই বই পড়ার পর আমার যে অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছি��, তা আজ পর্যন্ত আর কোথাও খোঁজে পাই নি।
জাফর ইকবাল স্যার যে কত ভালো লেখেন তা হয়তো আমরা বয়স হওয়ার সংগে সঙ্গে ভুলে যাই। একই টাইপের লেখা আর কতো পড়া যায়! কিন্তু যেসব বইয়ের সাথে ছেলেবেলার পুরনো আবেগ জড়িয়ে আছে, সেসব বই পুনঃপাঠের সময় আবার সেই অনুভূতি কিছুটা হলেও ফিরে আসে। পুরো ছেলেবেলা কেটেছে সত্যজিৎ রায়, অদ্ভুতুড়ে সিরিজ আর জাফর ইকবাল পড়ে। কিন্তু এই কথার সাথে হয়তো অনেকেই সহম�� হবেন যে, আর অন্য কিছুই জাফর ইকবালের বইয়ের মতো আমাদের শৈশব-কৈশোর কে এতটা ছুঁয়ে যেতে পারে নি।
সাস্টে যেদিন স্যারের মাথায় ছুরি মারা হয়েছিল, সেদিন সন্ধ্যায় আমার এক বন্ধুর সাথে মেসেঞ্জারে টেক্সটিং করছিলাম। হঠাৎ করে যখন জানতে পারলাম স্যারেকে আক্রমণ করা হয়েছে, তক্ষুনি আমার বন্ধুটি কল করে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছিল। আমিও নিজেকে আটকাতে পারি নি। কেঁদেছিলাম। যে লোকটার জন্য চৌদ্দ-পনেরো বছরের ছেলেরা কাঁদতে পারে, সেই লোকটাকে আর যাই হোক বিফল বলা যায় না।
জাফর ইকবাল হয়তো বড়দের জন্য লিখে দেশের প্রথম সারির একজন সাহিত্যিক হতে পারতেন। কিন্তু উনি যেটা করেছেন সেটাও কম প্রয়োজনীয় কিছু ছিল না । উনার নিরন্তর লেখালেখির ফলেই এই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর নেটফ্লিক্সের যুগের ছেলেমেয়েরা বই পড়া শিখেছে। বই পড়ছে।
আজকের মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে কোনোভাবেই প্রায় দুই দশক আগেকার জাফর ইকবালের সাথে মেলানো যাবে না। লেখক নিজে যেমন সেই পরিস্থিতি রাখেননি ; সমাজকাঠামো ও রাজনীতির বাঁক বদলের কারণে পাঠকের কাছেও তিনি আগের মতো আদরণীয় নন। আগে তিনি ছোচ্চাচু কিংবা ভূত সুলায়মান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন না। সেই সময়েই লিখেছিলেন তাঁর অন্যতম সেরা কিশোরকাহিনি 'আমি তপু'।
বই পড়ে কিংবা বই দেখে চোখের জল আসা কাজের কথা না। আমাদের দেশে এই ধরনের লোকের ভাত নাই। তবুও ক্লাস সিক্সের আমি তপুর ঘটনায় ভীষণ কাতর হয়ে পড়েছিলাম। এই বই পড়ে মন খারাপ হয়নি - এমন কিশোরবয়সী পাঠক খুঁজে পাওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন। তবুও একাধিকবার 'আমি তপু' পড়েছি এবং মন খারাপ করেছি। আমাদের সমাজে তপুর মায়ের মতো মা কম নেই। তবে দুর্লভ হলো প্রিয়ঙ্কা। তপুকে না কি প্রিয়ঙ্কা, কাকে বেশি ভালো লেগেছিল তা এখন স্মরণ করা মুশকিল।
'আমি তপু' বইটা আমার পড়া সবচেয়ে পছন্দের একটা বই। জাফর ইকবাল স্যারের লেখা অনেকগুলো বই পড়েছি, কিন্তু কোন বইকেই আমি এইটার ঊর্ধ্বে স্থান দিতে পারি নি। 'আমার বন্ধু রাশেদ' কিংবা 'দীপু নাম্বার টু'- কেও নয়। বই জিনিসটাই অদ্ভুত, একজনের মনের সাথে আরেকজনের মনের চাহিদা মিলবে এমনটা চিন্তা করাও হয়ত বোকমি। তাই আমার দেওয়া রিভিউয়ের সাথে হয়ত মিল পাওয়াটাও তেমনি একটা বোকামি হবে। আমার পড়া প্রতিটা বইয়ের সাথে কেন জানি মজার মজার গল্প বা বেশ কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। তেমনি এই বইটার সাথেও আছে। চাইলেও উপেক্ষা করতে পারি না।
"সেইবার গ্রীষ্মের বইমেলায় অনেক বই ঘাটতে ঘাটতে অনেকগুলো বই কিনে এনেছিলাম যার মধ্যে 'আমি তপু' বইটা ছিল। বইটা অনেক দিন নতুন অবস্থায় ফেলে রেখেছিলাম। টার্ম পরীক্ষার একগাদা চাপের বস্তাটা থেকে তখনো মুক্তি পাই নি। ভাবতাম- এইতো আর কয়েকটা দিন.. শেষ হলে বইগুলো খোলা যাবে। টার্ম পরীক্ষা শেষ হল। চারিদিকে গাছের পল্লবগুলো তাদের ডানা গুটিয়ে নিচ্ছে, বহু আকাক্ষ্খিত শীতকাল চলে এসেছে। প্রতি বছর এই একটা সময়ের জন্য আমি প্রায় সারা বছর ধরে তীব্র অপেক্ষায় থাকি। এই সময়ে পড়াশোনার কোন চাপ থাকে না, ভ্রমণের জন্য একটা লম্বা সময় বরাদ্ধ থাকে, জাল টাঙ্গিয়ে বাইরে ব্যাডমিন্টন কোর্ট সাজানো হয় নতুবা ক্যাম্পাস মাঠে ক্রিকেটের তীব্র ধুম পড়ে যায়, আর চায়ের কাপ হাতে ইচ্ছে মত বই পড়ে সময়গুলো কাটানো যায়। সত্যি বলতে এমন আমেজের কোন জুড়ি নেই।
ঠিক এমনই একটা দিনে শীতের আমেজকে মুড়ি দিয়ে 'আমি তপু' বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। আমি কেন জানি একটানা কোন বই পড়তে পারি না। নইলেও দেখা যায় ১০০পাতা পড়ে একটু টিভির রিমোর্ট হাতে নেই, দু-পাঁচ মিনিট এদিক-ওদিক করে আবার মনোনিবেশ করি। বইটা পড়তে পড়তে বেশ রাত হয়ে গেল, লেপ মুড়ি দিয়ে নিভুনিভু বাতি জ্বালিয়ে পড়তে লাগলাম। মা বুঝতে পারলেই একটা বকা দিয়ে যাবে, এমনিতেই সকালে উঠতে আজকাল ৯টা অবধি বাজিয়ে দিচ্ছি। অন্য দিন স্কুল থাকে, প্রয়োজনে জীবনের উপর বাজি রেখেও সকাল ৬টায় উঠা লাগে। এই শীতকালেই যত্তসব নিয়মের অনিয়ম করার একটা সুবর্ণ সুযোগ আসে।
পড়তে পড়তে অনেক ঘটনায় আমার চোখে জল চলে আসল, অনেক সময় আবার বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। বইটা পড়া যখন শেষ করলাম তখন শেষ কয়টা মুহূর্তে আমি একদম হুহু করে কাঁদতে লাগলাম। কান্না শুনে পাশের ঘর থেকে মা একটু আতঙ্কেই ছুটে আসল। এসেই বলতে লাগল, "কি রে কি হয়েছে? কাঁদিস কেন?", দুঃস্বপ্ন দেখেছি বোধহয়। আমি শুধু বলেছিলাম, "এমনটাই কেন হতে হবে? এমনি শুধু হয়!", তারপর মা কে জড়িয়ে আবার হুহু করে কাঁদতে লাগলাম।
মা গ্লাসে করে জল এনে দিল। আমি তারপর একটু শান্ত হয়ে ঘুমাতে গেলাম।
কলেজে উঠেও বইটা একবার পড়েছিলাম। কলেজ থেকে ফার্স্ট ইয়ারের সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষায় আমি জাফর ইকবাল স্যারের লেখা 'বকুলাপ্পু' বইটা পড়েছিলাম, আর কথা পেয়েছিল 'আমি তপু' বইটা। তখন আরেকবার এই বইটা পড়েছিলাম। তখন যদিও আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। অনেক রূঢ় বাস্তবতা বুঝতেও শিখেছি। তবুও আমি যতবার বইটা পড়েছি ততবারই চোখের কোণে একটু হলেও জল চলে এসেছে।
I can't say enough how much I loved reading this book. It's the best children's contemporary I have ever read. I'm so glad Apu made me read it. It's perfect.
আমার জীবনে পড়া দ্বিতীয় এবং স্মরণীয় বই। লেখকের লেখা সবচেয়ে প্রিয় বই। এই বইটা আমার জীবনে পড়া সেরা ৫ বইয়ের মধ্যে থাকবে। অবশ্যপাঠ্য, সুখপাঠ্য-দুঃখপাঠ্য।
মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, বর্তমান সময়ের টপ কন্ট্রোভার্শিয়াল লেখকদের মধ্যে একজন উনি। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন বুক সেলিং সাইট, পেজ এমনি বই বিষয়ক গ্রুপ গুলা থেকে তাকে ব্যান করে দেওয়া হয়েছে। অথচ একটা সময় এই মানুষটা শিশু কিশোরদের মাঝে খুব জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কিন্তু সে নিজের পতন নিজেই ডেকে নিয়ে এসেছেন। তার কুরুচিমূলক মন্তব্য, স্বৈরাশাসকের তোষামোদ ইত্যাদির মাধ্যমে সে আজ ঘৃণিত, বহিষ্কৃত।
এই মানুষটার লেখা ছোট বেলায় আমার খুব একটা পড়া হয়ে উঠে নাই। বলতে গেলে খুব অল্প সংখ্যক বই'ই পড়েছি আমি। বইমেলায় আম্মু টুনটুনি-ছোটাচ্চু সিরিজের কয়েকটা বই কিনে দিছিল, এগুলাই ছিল আমার পড়া জাফর ইকবালের প্রথম বই। তখন সংগ্রহে গল্পের বই ছিল খুবই কম এজন্য একি বই একাধিকবার করে পড়তাম। মজা লাগত পড়ে, বাচ্চা মনের কল্পনায় নিজেকে আবিষ্কার করতাম পিচ্চি ডিটেকটিভ হিসেবে। পরবর্তীতে তার লেখা হাত কাটা রবিন, গ্রামের নাম কাঁকনডুবি পড়ে ছিলাম। ভালই লাগত শিশুতোষ এসকল বইগুলা। কিন্তু ওনার লেখা মাস্টারপিস বই গুলা কখনই পড়া হয় নাই।
গতবছর আমাদের দেশে চলছিল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মোহাম্মদ জাফর ই���বাল, শুধুমাত্র উপরমহলের নজরে ভাল থাকার আশায় ছাত্র জনতার বিপরীতে গিয়ে এমন এক কুমন্তব্য করে বসেন যে তাকে লেখক হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের টপ লেভেলের ব্যাকল্যাস ফেস করতে হয়। তাকে ছাত্র জনতা সবাই ব্লক আউট করে দেয়। বুক শপ তার বই বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়। তার সাহিত্য নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন জনপ্রিয় পড়ুয়া গ্রুপ। একদম ষোলকলাপূর্ণ হওয়া যাকে বলে। মানুষ তার মনের তীব্র ঘৃণ��� প্রকাশের জন্য সংগ্রহে থাকা জাফর ইকবালের বইগুলা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে তা ফেসবুকে পোস্ট করছিল, যা এক ট্রেন্ড হয়ে গেছিল। আমার সংগ্রহে থাকা জাফর ইকবালের বইগুলা হারিয়ে গেছিল বলে আমি আর এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে পারছিলাম না। কিন্তু বাসার নিচতলার ভাড়াটে ছোট ভাই আমাকে তার কাছে থাকা একটা জাফর ইকবালের বই দিয়ে যায় পোড়ানোর জন্য। কিন্তু বইটা আমি টেবিলের নিচে রেখে দিছিলাম। ওভাবেই থেকে গেছে। আর পোড়ানো হয় নাই। আমি পুরাপুরি ভুলেই গেছিলাম বইটা সম্পর্কে। কিন্তু সেদিন হঠাৎ টেবিল পরিষ্কার করতে গিয়ে পুরাতন পেপার, কাগজপত্রের নিচে খুঁজে পাই বইটি। বইটা দেখে হাসি পাচ্ছিল। এরপর অনেকটা কৌতূহল নিয়ে বইটা তখনই ফ্লোরে বসে পড়া শুরু করি। এরপর... এরপর কেটে গেল বেশ কয়েক ঘন্টা। বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে, ফ্লোরেই বসে,শুয়ে পড়ে শেষ করলাম গোটা বইটা। আর বইটা শেষ করে মনে হল...এটা জাফর ইকবাল ষাঁড়ের লেখা বই, সিরিয়াসলি!?
বইয়ের নাম "আমি তপু"। কি অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ এক উপন্যাস। বইটা পড়ছিলাম আর প্রতি মুহুর্তে ভাবছিলাম, ইস এই বইটা আমি আগে কেন পড়ি নাই, এই বইটা বহু আগে পড়া উচিত ছিল। বইটা শিশুতোষ কিন্তু এই বইটা যেকোনো বয়সের মানুষই পড়তে পারবে, পড়ে মনের গহীনে অনুভব করতে পারবে, কেউ কেউ হয়ত কেঁদেও ফেলবে। এটা এমন একটা বই যা নির্দ্বিধায় একটা মানুষের পড়া টপ টেন মোস্ট ফেভারিট, হার্ট টাচিং বইয়ের কাতারে সুন্দর ভাবে তুলে রাখা যাবে।
গল্পের প্রধান চরিত্র আরিফুর ইসলাম তপু, সংক্ষেপে তপু। মাত্র দশ বছর বয়সী বাবা মায়ের তিন সন্তানের, ছোট সন্তান সে। খুব আদর স্নেহ ভালোবাসায় বড় হচ্ছিল সে। পড়ালেখায় ও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু আচমকা এক এক্সিডেন্ট বদলে দিল তপুর সমগ্র জীবনটাকেই। তপুর বাবা তপুর জন্য ব্যাট কিনতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে মা*রা যান। এখানে বাচ্চা তপুর কোন দোষ ছিল না কিন্তু তার মা, তার স্বামীর মৃত্যুর সব দায় চাপিয়ে দিলেন তার ছোট্ট বাচ্চাটার উপর। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে শুরু করে পাশবিক নির্যাতন ছোট্ট বাচ্চাটির উপর। তপুর বড় ভাই বোন প্রথম প্রথম তাকে বাঁচালেও একটা সময় গিয়ে সবাই যেন তপুর পরিচয় ভুলে যেতে শুরু করে। কারণে অকারণে তার মা তাকে পশুর মতন প্রহার করত। তার খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিল, ছিনিয়ে নিল তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তার জায়গা হল বাসার স্টোরুপের ময়লার মাঝে। তাকে দিয়ে ঘরের কাজ করিয়ে নিত বাকি সদস্যরা। আর সে ঠিকমতোন কাজ না করলে বা কোন ভুল করলে তাকে পেটানো হত অমানুষিক ভাবে। এতকিছু সহ্য করে সে স্কুলে গিয়ে পড়ালেখায় আর মন দিতে পারল না। তার মার খাওয়া চেহারা দেখে ক্লাসের বাকি স্টুডেন্টরা ভাবত, হয়ত সে বোকাটে আর রাস্তাঘাটে মারামারি করে বেড়ানো তার কাজ। ফলাফল স্বরুপ সে হয়ে গেল পুরাপুরি ভাবে নিঃসঙ্গ।
"নিঃসঙ্গতা" একটা ভারী শব্দ। জাফর ইকবাল, তপুর মতন মাত্র দশ বছর বয়সী একটা ছেলের মধ্য দিয়ে এই নিঃসঙ্গতাটাকে যেভাবে প্রেজেন্ট করেছেন এটা অবিশ্বাস্য এবং প্রশংসনীয়। একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মানসিক বিপর্যয়কে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছন। বন্ধুহীনতা, পরিবারের মানুষদের থেকে লাঞ্ছনা সহ্য করতে করতে একসময় সে সিদ্ধান্ত নেয় বাসা ছেড়ে পালিয়ে যাবে, অনেক অনেক দূরে কোথাও। কিন্তু...
বাংলাদেশের জনপ্রিয় Encore, musical Band এর একটা জনপ্রিয় গান হচ্ছে "স্রোতস্বিনী"। এই গানের একটা সুন্দর লিরিকঃ আছে - "তবে তাই যদি হয়, করি নাকো ভয় ; জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়"। আমার খুব খুব প্রিয় একটা লাইন। যখনই আমি লো ফিল করি তখনই শুনি। এখানে বলা হয়েছে মানুষের জীবনে খারাপ সময় আসে এবং আসবে কেউ এটা থামাতে পারবে না কিন্তু এই খারাপ সময় কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সৃষ্টি কর্তা এতটা নিষ্ঠুর কখনই হবেন না। জাফর ইকবাল ও সেটাই দেখিয়েছেন এই গল্পে।
যখন তপু তার নিজের জীবনের পর থেকে পুরাপুরি হাল ছেড়ে দিয়েছে, বাসা ছেড়ে অনেক দূরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ঠিক তখনই তার জীবন "Guardian Angel" হিসাবে চলে এসেছে প্রিয়ংকা নামের হাসিখুশি, অন্যকে আনন্দ বিলিয়ে বেড়ানো একটা মেয়ে। তারই ক্লাস মেট। এই ছোট্ট মেয়েটা তপুকে শিখেয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ। ভিতর থেক মৃতপ্রায় তপুকে পুণরায় জীবিত করতে এই মেয়েটা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে। যদি এই মেয়েটা সময় মতন না আসত তপুর জীবনে, হয়ত তপু সারভাইভ করতে পারত না। আমি যখন পড়ছিলাম উপন্যাসটা, প্রতিমুহূর্তে ভাবছিলাম, আমাদের জীবনে আমরাও এমন প্রিয়াঙ্কার মতন নিঃস্বার্থ সাপোর্টিং ফ্রেন্ড ডিজার্ভ করি কিন্তু ফিকশন কখন রিয়ালিটি হয় না, আফসোস।
ছোট্ট এই গল্পে গাণিতিক অনেক প্রবলেম ছিল যা তপু সলভ করে। এটা মূলত জাফর ইকবালের নিজস্ব একটা স্টাইল সে তার শিশুতোষ লেখায় এমন প্রভলেম দিয়ে রাখেন যা হয়ত শিশুরা বইটা পড়ার সময় নিজেরাই আগ্রহ নিয়ে সলভ করার চেষ্টা করবে।
গল্পের পরবর্তী অংশে তপুর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠা, এবং পরিবেশের সাথে পুণরায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। একাডেমিক দিক থেকে বড়সড় একটা কামব্যাক দেওয়া সবই লেখক ধীরে ধীরে দেখিয়েছেন। তার বড় ভাইয়ের মতন অসমাপ্ত ফেলে পাঠকের মন ভার করেন নাই।
গল্পের শেষটা সুন্দর কিন্তু আপনাকে ভেঙেচুরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। সমগ্র উপন্যাস জুড়ে আমি তপুর মা'কে মনে প্রাণে ঘৃণা করে গেছি। কিন্তু মানসিক অসুস্থ এই মহিলার শেষ পরিণতি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। ভাগ্যিস আমার হৃদয় পাথরের তৈরি, নাহলে আমি নির্ঘাত কেঁদে ফেলতাম।
বইটা অবশ্যই আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় সগর্ভে নিজের স্থান বানিয়ে নিয়েছে। আমি রিভিউ লিখতে লিখতে হাসতেছিলাম, এই বইটা আমি হয়ত পুড়িয়ে ফেলতাম.. না পড়েই! আচ্ছা আমি যদি পড়তাম, তারপর কি আমি পোড়াতে পারতাম?! আমার কি হাত কাঁপত না? মনের মধ্যে চাপা যন্ত্রণা হত না?!
আমি জাফর ইকবালকে এখনো অপচ্ছন্দ করি। তাকে স্যার বলে ডাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু এই ঘৃণা শুধুমাত্র তোষামোদ কারী, সুবিধাভোগী, লম্পট একজন প্রোফেসারের জন্য যার কাছে তার নিজের ছাত্র ছাত্রীর জীবনর মূল্য নাই । কিন্তু একজন লেখক... লেখক যেই সময়টায় বসে এই উপন্যাসটা লিখেছিলেন তখন তিনি তার প্রাইম এ্যারাতে ছিলেন। তার মাঝে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব জীবিত ছিল এজন্যই তিনি পেড়েছিলেন এমন দারুণ একটা উপন্যাস লিখতে। কিন্তু আফসোস...
পরিশেষে ছোট্ট একটা কথা বলে ইতি টানব আমার এখন অব্দি লেখা সর্ববৃহৎ এই রিভিউটার - "Pyramids can be built again, but Zafar Iqbal or anyone else can’t write a book like "Ami Topu" again, impossible."
অনেক বছর আগে যখন পড়েছিলাম, চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই 'তপু' নামের ছেলেটার জন্য। ছেলেটার প্রতি এত বেশি মায়া জন্ম নিয়েছিল যে কাল্পনিক চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও এখনো ছেলেটার জন্য কষ্ট লাগে। নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি গল্প।
আমি তপু বইটা যখন পড়ি তখন আমি খুব অসুস্থ । গায়ে ১০৩ কিংবা ৪ ডিগ্রি জ্বর । ওষুধ খেয়ে রাতে ঘুমানোর কিছুক্ষন পরেই ঘুম ভেঙ্গে যায় । সারা গা তখন ঘামে ভিজে যাচ্ছিলো । ফ্যানটা ছেড়ে বইটা নিয়ে আবার শুয়ে পরি । কিছু পাতা পড়ার পরই বইয়ের ভেতর পুরো মজে গেলাম । বইতে এক মাকে দেখা যায়, যে কিনা তার স্বামীর অকাল মৃত্যুর কারণ হিসেবে তারই ছোট ছেলেকে দায়ী করেন এবং ছেলেটির প্রতি নির্দয় অবহেলা দেখান । বাংলা সাহিত্যে সন্তানের প্রতি সৎমায়েদের এইরকম আচরণ সচরাচরই দেখা যায়, কিন্তু আপন মায়ের এইরকম আচরণ সত্যই বিরল । বেশ ছোট হওয়ায় বেশিক্ষন লাগেনি বইটা শেষ করতে । বুকের ভেতর হু হু করে উঠছিল । চোখের সামনে বারবার তপুর প্রতি নির্যাতনের দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছিল । এটা নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সেরা বইগুলোর একটা । বইটাতে লেখক তপুর প্রতি নির্দয় নির্যাতন চালিয়ে ওর ওপর পাঠকের মায়া সৃষ্টি করতে চেয়েছেন এবং লেখক এতে বেশ সফল হয়েছেন ।
ক্লাস নাইন-টেনে থাকতে এই বইটা অনেক বার পড়ছি। প্রত্যেক বারই অসাধারণ লেগেছে। আজকেও আবার পড়লাম। ভালো বই বারবার পড়ার রোগ আছে কিনা! আজকেও সেই ভালো লাগার রেশ একই আছে।
এই বইটা পড়তে পড়তে হাউমাউ করে না হোক, অন্তত নিজেদের অজান্তে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েনি, এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া ভার। একটা কিশোর বয়সী ছেলের জীবন কতটা কষ্টের আর তিক্ততার হতে পারে আর জীবনে কত প্রতিকূলতা আসতে পারে প্রিয়জনদের কাছ থেকেই, তা 'আমি তপু' পড়ার আগে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা সেরা কিশোর উপন্যাসগুলোর তালিকা যদি করতে হয়, এবং সেই তালিকা যত ছোটই হোক না কেন তাতে 'আমি তপু'র নাম থাকবেই। ছোটদের জন্য এত সাবলীল ভাষায় ট্র্যাজেডি টাইপের উপন্যাস আর লেখা হয়েছে বলে মনে হয় না।
আমি তপু" তে মুহম্মদ জাফর ইকবাল তুলেধরেছেন তপু নামের এক কিশোরের নিঃসঙ্গতা আর তার প্রতি নিষ্ঠুরতার ইতিহাস।জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে জয় করার ইতিহাস।আমাদের আশে-পাশে তপুর মতো এমন অনেকেই আছে যাদের স্থান পেছনের বেঞ্চে।আমরা তাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্ঠা করি কখনো তাদের পিছিয়ে পরার কারণ খুঁজি না
"আমি তপু" উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই দূর্ঘটনায় তপুর বাবার মৃত্যুর পর মায়ের চোখের বালি হয় তপু।তার বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তপুকে।শুরু হয় তপুর উপর নির্মম অত্যাচার যেখানে নিরব দর্শক তপুর ভাই-বোনও।তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় সবাই। পাল্টে যায় তপুর জীবন।কিন্তু একদিন তার বন্ধু হয়ে যায় ক্লাসের নতুন মেয়ে প্রিয়াঙ্কা।সে তাকে উৎসাহিত করে জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে।অনেক চেষ্ঠা করে গণিত অলিম্পিয়াডে তপুর নাম দেয় প্রিয়াঙ্কা।সেখানে অসাধারন মেধার পরিচয় দিয়ে তপু হয় চ্যাম্পিয়নদের চাম্পিয়ন।এগিয়ে আসে তার বন্ধু-বান্ধব আর শিক্ষকরা।কিন্তু এত কিছুও তপুকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি তার হারানো মাতৃস্নেহ।অবশেষে মায়ের মৃত্যুশয্যায় তপু ফিরে পায় হারানো মাতৃস্নেহ। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি তপুকে বুকে জড়িয়ে ধরেই এ পৃথিবী ছেঁড়ে যায় তপুর মা।
আমি রিভিউ লিখতে পারি না ; তাই এই বইটার সাথে আমার গল্পটা বলি শুধু । ক্লাস ফোরে থাকতে পড়েছিলাম বইটা - তখন ডায়েরি লিখতাম না ; তবুও মনে আছে ক্লাস ফোরে থাকতে বইটা পড়েছিলাম । আমি আমার এখনকার ঘরটায় বসে - বইটা পড়ছি । বই পড়ে কাঁদতে লজ্জা লাগত তখন খুব ; এমনকি এখনো লাগে ; বই এর কিছু চরিত্রের জন্য এত কষ্ট পেয়েছি - হয়তো বাস্তব জীবনের কোনো একটা অনেক কষ্টের ব্যাপার আমাকে স্পর্শ করলেও কাঁদাতে পারেনি । এই বইটা যখন পড়ছিলাম চোখ থেকে টুপটাপ করে বৃষ্টি ঝরছিল ; আম্মু আশেপাশেই আমাকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে - আমি ধড়মড় করে চোখ মুছে অভিনয় করার চেষ্টা করছি যে আমি কোনোভাবেই কান্না করিনি । আম্মু দেখেও না দেখার ভাব করল ; সব শেষে আরেকবার পড়লাম- আরেকবার কাঁদলাম ।
তপুর কষ্ট - তপুর ডেডিকেশন - প্রিয়াঙ্কা - আর সেই ছোট্ট মেয়েটা - যার কোলে তার ভাইটা মাথা রেখে "আমার সোনার বাংলা- আমি তোমায় ভালোবাসি" শুনতে শুনতে আকাশপারে চলে গেল ---- এইসবকে কী করে ব্যাখ্যা করব আমি ?
আমার সবচেয়ে সত্য-সুন্দর অনুভূতি তৈরি হয়েছিল এই বইটা পড়ে ; তাই যাই হোক না কেন - আমার এই বইটার কথা মনে থাকবে ।
যাই হোক না কেন - মনে থাকবে ।
সবাই জীবনে প্রিয়াঙ্কা আর তপুর মতো বন্ধু পাক - অন্তত নিজের জন্য সবাই যাতে প্রিয়াঙ্কা হতে পারে - সেই প্রার্থনা করি ।
আমি তপু একটা নিরপেক্ষ ভালোবাসার নাম "আমি তপু" বই। স্কুল লাইফে এই বই পড়লে হয়তো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রেহায় পাওয়া যেত।
সাহিত্যের আসল রস আসলে এসবই। বাইরের প্রাপ্যতা থেকে ভেতরেরটা অনেক বেশি। যেগুলো অনেক সময় ব্যাখ্যা করা যায়না। বা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কিন্তু ভেতরে গভীর ছাপ রেখে যায়। ভেতরটাকে রসে পরিপুষ্ট করে।
যেমন এই বইয়ে যেভাবে বিষয় গুলোকে ব্যাখ্যা করা আছে সেভাবে ভাবলে আসলেই সব কিছুর ভেতরই আনন্দ পাওয়া সম্ভব। যেসব বিষয় নিয়ে মানুষ রাগ করে সেসব বিষয় একটু অন্য ভাবে চিন্তা করলেই আনন্দের ঘ্রান পাওয়া যায়। দৃষ্টিভঙ্গি হলো এমন এক বিষয় যেটাকে যেভাবে ব্যাবহার করা হবে তার ফলও ঠিক সেরকমই হবে। এক্ষেত্রে তপুর জিপালি বিতরণের সময়কার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় গুলো বা প্রিয়াঙ্কার সারপ্রাইজ দেওয়ার বিষয় গুলো উপযুক্ত উদাহরণ হতে পারে।
This is one of the best book written by Zafar Iqbal sir. I became sad after reading this, I laughed when the main character Topu became the champion of the math olympiad. Thank you sir for this outstanding book. I love you Topu. <3
আজ দুপুরের দিকে শুরু করলাম এবং কিছুক্ষন আগেই শেষ হলো।আমি মোটেও এক বসা তে শেষ করি নি,মাঝে আমি হেটেছি খেয়েছি তারপরেই শেষ করেছি।বইটা অসম্ভব সুন্��র।এই বইয়ের মূল কাহিনী হলো একটা ছেলের জীবন কি করে ধ্বংস হয় আবার বিন্দু বিন্দু জলের ফোটা দিয়ে কি করে এক সাগর সুখ লাভ করে তা নিয়ে।তবে প্রকাশ্য বিষয় হিসেবে দুঃখ টাই বেশি প্রকাশিত হয়েছে।কোনো এক অজানা কারনে শেষের দিক টায় আর শুরুর দিক টায় আমার লেস্ন জোড়া বার বার ভিজে যাচ্ছিল।
খুব সম্ভবত তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, ঠিক ৩১ ডিসেম্বর রাতে জাফর ইকবাল স্যার এর এই অসাধারণ বইটি ভাইয়ার বইয়ের আলমারি থেকে চুপি চুপি নিয়ে এসে পড়তে শুরু করি। বইটি আসলে তপু নামের এক প্রডিজি যে কিনা এইটুক বয়সেই একজন গণিত জিনিয়াস, তাকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও আমি যে চরিত্রটির মাঝে একদমই ডুবে গিয়েছিলাম সে হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা! ঠিক আমাদের কাছাকাছি বয়সী একটা মেয়ে কিন্তু কি অসাধারণ তার দৃষ্টিভঙ্গি! ক্লাসের সব্বাই তার বন্ধু , সত্যি বলতে তার এতোটুকু ভয় লাগে না, চমৎকার গুছিয়ে কথা বলে, এই বয়সেই সে একা একা ঘুরে শহর দেখে, সবচেয়ে বড় কথা সে মানুষ দেখে! মানুষ দেখতে তার কোন ক্লান্তি নাই, যেন চারপাশে মজার কোন খেলা হচ্ছে এই ব্যাপারটা প্রথম আমাকে ছোট খাটো একটা ধাক্কা দিয়ে গেলো। আসলেই তো আমাদের চারপাশে সারাক্ষণই মজার মজার নানা ইন্টারেস্টিং ঘটনা সারাক্ষণই হচ্ছে অথচ আমরা সবাই এতো বেশি আত্মকেন্দ্রিক আর আত্মমগ্ন যে কেউ পারতপক্ষে লক্ষ্যই করছি না কি হচ্ছে আশেপাশে। নানা সমস্যাতে জর্জরিত থেকেও প্রিয়াঙ্কার মুখ থেকে কখনো হাসি সরে না, প্রিয়াঙ্কা খুব বেশি ভালো ছাত্রী না এবং তা নিয়ে তার এতোটুকু মাথা ব্যাথা নেই, এবং প্রিয়াঙ্কার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, সে আসলে কখনো হতাশ হয়ে পড়ে না! তবে প্রিয়াঙ্কার যে ব্যাপারটি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিলো তা হচ্ছে 'বিক্ষিপ্তভাবে আনন্দ বিতরণ' ! মনে আছে, প্রিয়াঙ্কা কিভাবে সবার প্রয়োজনের কথা মনে রেখে হুটহাট সারপ্রাইজ দিয়ে বেড়াতো? এই ব্যাপারটা একদম মনে গেঁথে গিয়েছিলো। প্রিয়াঙ্কা সবার সমস্যা জানতো এবং হাতে কিল দিয়ে এটা কোন ব্যাপারই না ভাব নিয়ে ঠিক ঠিক সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে না পারলেও অন্তত চেষ্টাটুকু করতো। প্রিয়াঙ্কা একজন চমৎকার ফাইটার, সবথেকে বড় কথা এই অসাধারণ চরিত্রটি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের! প্রিয়াঙ্কা আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে হেরে যাওয়ার আগে আসলে কখনো হারতে নেই, আমাকে বুঝতে শিখিয়েছে একটা ছোট্ট সাপোর্টিভ রোল মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে, একটু ভালো কাজ আর একটু ভালো মানুষ হলেই পৃথিবীটা আসলে বেশ চমৎকার জায়গা হয়ে যায়। প্রিয়াঙ্কা কে জানার পর থেকে আমি সবসময়ই মানুষের বন্ধু হতে চেয়েছি, খুব ভালো বন্ধু। প্রতিবছরই ৩১ ডিসেম্বর আমি চেষ্টা করি আমি তপু বইটা বের করে পড়তে। হার মেনে না নিয়ে কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়, কৈশোরে বহুক্ষেত্রেই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবার কেউ থাকে না, আমি তপু বইটি আমাদের এই ব্যাপারটিই খুব সহজেই বুঝিয়ে দেয়। আর প্রিয়াঙ্কার মত চমৎকার চরিত্রের জন্য জাফর স্যার কে কয়েকশত গ্যালন ধন্যবাদ দেয়াই উচিত তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না! আসলেই মুজাই Rocks!!! Happy Reading! ^_^