Jump to ratings and reviews
Rate this book

ধূসর পাণ্ডুলিপি

Rate this book
ধূসর পাণ্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় জীবনানন্দ লিখেছিলেন:

আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল—১৩৩৪ সালে (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ)। কিন্তু সে বইখানা অনেকদিন আমার নিজের চোখের আড়ালে হারিয়ে গেছে। আমার মনে হয় সে তার প্রাপ্য মূল্যই পেয়েছে।

১৩৩৬ সালে আর একখানা বই বার করবার আকাঙ্ক্ষা হয়েছিল। কিন্তু নিজ মনে কবিতা লিখে এবং কয়েকটি মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত ক'রে সে ইচ্ছাকে আমি শিশুর মত ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম। শিশুকে অসময়ে এবং বারবার ঘুম পাড়িয়ে রাখতে জননীর যেরকম কষ্ট হয়, সেইরকম কেমন একটা উদ্বেগ—খুব স্পষ্টও নয়, খুব নিরুত্তেজও নয়—এই ক'বছর ধরে বোধ করে এসেছি আমি।
আজ ন'বছর পরে আমার দ্বিতীয় কবিতার বই বার হ'ল। এর নাম "ধূসর পাণ্ডুলিপি"। এই বইয়ের সব কবিতাই ১৩৩২ থেকে ১৩৩৬ সালের মধ্যে রচিত হয়েছে। ১৩৩২ সালে লেখা কবিতা, ১৩৩৬ সালে লেখা কবিতা—প্রায় এগারো বছর আগের প্রায় সাত বছর আগের রচনা সব আজ ১৩৪৩ সালে (১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) এই বইয়ের ভিতর ধরা দিল। আজ যে-সব মাসিক পত্রিকা আর নেই—প্রগতি, ধূপছায়া, কল্লোল—এই বইয়ের প্রায় সমস্ত কবিতাই সেইসব মাসিকে প্রকাশিত হয়েছিল একদিন।

সেই সময়কার অনেক অপ্রকাশিত কবিতাও আমার কাছে রয়েছে—যদিও ধূসর পাণ্ডুলিপির অনেক কবিতার চেয়েও তাদের দাবি একটুও কম নয়—তবুও সম্প্রতি আমার কাছে তারা ধূসরতর হয়ে বেঁচে রইল।

115 pages, Hardcover

First published December 1, 1936

66 people are currently reading
1309 people want to read

About the author

Jibanananda Das

84 books421 followers
Jibanananda Das (bn: জীবনানন্দ দাশ) is probably the most popular Bengali poet. He is considered one of the precursors who introduced modernist poetry to Bengali Literature, at a period when it was influenced by Rabindranath Tagore's Romantic poetry. During the later half of the twentieth century, Jibanananda Das emerged as the most popular poet of modern Bengali literature. Popularity apart, Jibanananda Das had distinguished himself as an extraordinary poet presenting a paradigm hitherto unknown. It is a fact that his unfamiliar poetic diction, choice of words and thematic preferences took time to reach the heart of the readers. Towards the later half of the twentieth century the poetry of Jibanananda has become the defining essence of modernism in twentieth century Bengali poetry.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
224 (69%)
4 stars
65 (20%)
3 stars
17 (5%)
2 stars
9 (2%)
1 star
6 (1%)
Displaying 1 - 28 of 28 reviews
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
December 16, 2021
"যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই,
যদি আমি চলে যাই
নক্ষত্রের পারে,—
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!"


প্রেম, বিরহ, বিষন্নতা, হেমন্ত আর আকাশের নক্ষত্র একাকার হয়ে গেছে "ধূসর পাণ্ডুলিপি"-তে। মনের মধ্যে শূন্যতার হাহাকার জাগায় এই কবিতাগুলো, একই সাথে ঐশ্বরিক কিছুর সাথেও যেন যুক্ত করে, মনে হয় আমিও প্রকৃতির সাথে লীন হয়ে আছি। "The cosmos is within us. We are made of star-stuff." জ্যোতির্বিজ্ঞানি কার্ল সেগানের এই উক্তিটা আক্ষরিক অর্থে বলা, আর জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি যদিও প্রাচীন মানুষের মত কুসংস্কার আর বিস্ময়মিশ্রিত চোখে চেয়ে থাকে নক্ষত্রের রাতের দিকে; তারপরও মনে হয় এই দুজনের কথা-কবিতার একটা যোগ আছে, দুজনই আমাদেরকে আলোকবর্ষ দূরের তারকারাজির সাথে একটা অদ্ভুত আপন মায়ার সম্বন্ধে জড়িয়ে আচ্ছন্ন করে দিয়েছেন।

"বাঁচিয়া থাকিতে যারা হিঁচড়ায়- করে প্রাণপণ,-
এই নক্ষত্রের তলে একবার তারা যদি আসে,-
রাত্রিরে দেখিয়া যায় একবার সমুদ্রের পারের আকাশে!"


যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দু-চারটা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেলি, একুশ শতকের কবিতাপ্রেমী কদাচিৎ নির্জন সমুদ্রের পারে বসে আকাশের তারা দেখার সুযোগ পায়। এখন সমুদ্রপারে থাকে পর্যটকদের ভীড়, বায়ুদূষণ আর আলোকদূষণের কারণে সবখানে আকাশের তারা দেখা যায় না। আর পারিপার্শ্বিকতা শুধু কবিকেই প্রভাবিত করে না, কবিতার পাঠককেও করে। জীবনানন্দের কবিতাকে বুঝতে বা অনুভব করতে গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতিকে অন্তরে ধারণ করার কমবেশি প্রয়োজন আছে। আবার বাংলাও এখন আর তেমন গ্রামীণ নেই,রূপসী বাংলা হয়ে গেছে বিগতযৌবনা নায়িকার মত; গ্রামকে শহর বানানোর পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে আশঙ্কাজনক গতিতে। ভাগ্যিস জীবনানন্দ তখন কবিতা লিখেছিলেন! এমনটা এখন কি আর সম্ভব হতো?

"চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এই খানে, এখানে হতেছে স্নিগ্ধ কান,
পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপশালি- ধান ভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ!"


"অবসরের গান" কবিতা থেকে কোট করেছি। হেমন্তের প্রথমার্ধে, মানে কার্তিকে নবান্ন উৎসবের আগমনী নিয়ে এই কবিতা। এমন কবিতা আর হয় না! এই কবিতা ছুটির দিনে শহুরে সাহেবকে টেনে-হিঁচড়ে গ্রামে ধরে আনার ক্ষমতা রাখে। শুধুমাত্র একটা সকাল অগ্রহায়ণের মিঠা রোদে আমন ধানের ক্ষেতের পাশে বসে থাকার জন্য, শিশিরধোয়া ঘাসের ঘ্রাণ নেবার জন্য, মাছির গান শুনবার জন্য;
শুধুমাত্র একটা সকাল!
আর শেষ বিকালটাই বা বাদ যায় কেন? দিনের আলো কমে এলেই তো বিষন্নতা দানা বাঁধতে শুরু করে। হারানো সময় আর না পাওয়া ভালোবাসারা মন খারাপের রূপ ধরে ভীড় করে আমাদের মনে। যতরকম ব্যর্থতা আর হতাশার গল্প শোনায়।

“ আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় —
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়!
যা হয়েছে শেষ হয়; শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়! ”


রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর গানে-কবিতায় বাংলার বর্ষাপ্রেমীদের রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন করে রাখেন; জীবনানন্দের কবিতায় তেমন পাওয়া যায় হেমন্তের রং আর ঘ্রাণ, যদিও তাঁর ক্ষেত্রে হেমন্ত উচ্ছ্বাস আর বিষন্নতার মিশ্র অনুভূতিতে পূর্ণ। মন ভালো থাকলে অঘ্রাণ ধানের গুচ্ছের সোনালি হবার সময়, পূর্ণতাপ্রাপ্তির সময়, তখন তিনি বলেন -"আমি এই অঘ্রাণেরে ভালোবাসি"। আবার সংকটের সময় অঘ্রাণ ধূসর সময়, সবুজ পাতা নিষ্প্রাণ হলুদ হবার সময়; যতরকম দুঃখ-গ্লানি-শোক-জ্বরা আছে, সবকিছুর তুলনা তখন হেমন্তের সাথে।

"তুমি চ’লে যাও প্রেম ;- একবার বর্তমান হয়ে ,-
তারপর , আমাদের ফেলে যাও পিছনে –অতীতে,-
স্মৃতির হাড়ের মাঠে ,- কার্তিকের শীতে !"


জীবনানন্দ বিরহকাতর কবি, তাঁর বেদনার অনুভব খুব শক্তিশালী; তাই প্রেমের বহিঃপ্রকাশেও তিনি অনন্য। "প্রেম" কবিতায় প্রেমের যে বন্দনা তিনি করেছেন, এতোটা মহিমান্বিত মূল্যায়ন সে(প্রেম) বাংলা সাহিত্যের কোথাও পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। তিনি একজায়গায় লিখছেন, প্রেম যদি না আসে জীবনে, তবে প্রেমের ইশারা আসুক! কী সর্বনাশের কথা! স্বয়ং প্রেম এই কবিতা পড়লে আপ্লুত হয়ে যাবে। এমন সম্মান, এমন স্তুতি কোন অধরা বস্তু হয়তো পায়নি কখনও।

"জীবন হয়েছে এক প্রার্থনার গানের মতন
তুমি আছ ব’লে প্রেম
...
ওগো প্রেম ,-বাতাসের মতো যেই দিকে যাও চ’লে
আমারে উড়ায়ে লও আগুনের মতন তখন !
আমি শেষ হব শুধু , ওগো প্রেম , তুমি শেষ হলে !"


"প্রেম" কবিতায় উদ্ধৃত করার উপযুক্ত পঙক্তির অভাব নেই। পুরো কবিতাটাই এখানে তুলে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। সেটা করা ঠিক হবে না। তাই সান্ত্বনাস্বরূপ শেষ কয়টা লাইন-

"যে ব্যথা মুছিতে এসে পৃথিবীর মানুষের মুখে
আরো ব্যথা-বিহ্বলতা তুমি এসে দিয়ে গেলে তারে ,-
ওগো প্রেম ,- সেই সব ভুলে গিয়ে কে ঘুমাতে পারে!"


উর্দু কবিতা শোনার পর শ্রোতারা যেমন "আহা! আহা!" করেন, "প্রেম" কবিতার প্রতিটা স্তবক পড়ার পর ওমন "আহা! আহা! কি লিখেছেন গুরু" করতে ইচ্ছা হয়। হয়তো ধূসর পাণ্ডুলিপির বেশিরভাগ কবিতা বিষন্ন ভাবের প্রকাশ ঘটায় বলেই অবসরের গান,প্রেম, মৃত্যুর আগে-এর মত রঙিন উজ্জ্বল কবিতা একটু বেশিই ভালো লাগে।
"মৃত্যুর আগে" কবিতাটা খুব প্রিয়, এই কবিতাটা প্রকৃতির প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে শেখায়, মনে হয় বুক ভরে শ্বাস নিই, আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ জিনিসগুলোকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখি, নিজের ক্ষুদ্রতায় বিহ্বল হয়ে থাকি।
এই কবিতা নিয়ে যথোপযুক্ত প্রশংসা মন্তব্য ভেবে পাইনা, একটা কবিতা আমাকে জাদুর মতন মোহগ্রস্ত করে রাখে-

"মিনারের মতো মেঘ সোনালি চিলেরে তার জানালায় ডাকে,
বেতের লতার নিচে চড়ুয়ের ডিম যেন শক্ত হয়ে আছে,
নরম জলের গন্ধ দিয়ে বার-বার তরীটিরে মাখে ,
খড়ের চালের ছায়া গাড় রাতে জ্যোৎস্নার উঠানে পড়িয়াছে ;
বাতাসে ঝিঁঝিঁর গন্ধ- বৈশাখের প্রান্তরের সবুজ বাতাসে;
নীলাভ নোনার বুকে ঘন রস গাড় আকাঙ্ক্ষায় নেমে আসে ;"


যদিও "ঝরা পালক"-এর মাধ্যমে প্রকাশিত কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশের অভিষেক হয়েছিল, কিন্তু তাঁর মৌলিক কবিসত্তার প্রথম উদ্ভাস "ধূসর পাণ্ডুলিপি"। বাংলা ভাষায় এমন পাণ্ডুলিপি আর দ্বিতীয়টি নেই। কার কবিতার খাতা পারে নক্ষত্রকে এমন আপন করে নিয়ে মৃত্যুকে নিবিড়ভাবে অনুভব করাতে?

"সকল মাটির গন্ধ আর সব নক্ষত্রের আলো যে পেয়েছে,
...
সব ভালোবাসা যার বোঝা হল ,- দেখুক সে মৃত্যু ভালোবেসে!"
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
December 31, 2020
"আমার নিকট থেকে তোমারে নিয়েছে কেটে কখন সময়!
চাঁদ জেগে রয় তারা-ভরা আকাশের তলে,
জীবন সবুজ হয়ে ফলে,
শিশিরের শব্দে গান গায় অন্ধকার-
আবেগ জানায় রাতের বাতাস!" (কয়েকটি লাইন)

রাতের বাতাস আবেগ প্রকাশ করুক আর নাই করুক, কবি জীবনানন্দ দাশ বিভিন্ন উপমা, রূপক, পরাবাস্তবতা এবং চিত্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের আবেগের মুক্ত প্রকাশ করে গেছেন। প্রথম কাব্য সংকলন ঝরা পালক এ অন্য কবির ছায়া রয়েছে, তো সেদিক থেকে এই পান্ডুলিপি দিয়েই আমাদের চেনা পরিচিত অনন্য জীবনানন্দের যাত্রা শুরু। চেনা পরিচিত দেশীয় শব্দগুলোর ব্যবহারই মূলত কবিকে আরও অনন্য করে তুলেছে।

মোট ১৭টি কবিতা আছে, সম্ভবত এই বইয়ের কবিতা সবচেয়ে দীর্ঘ। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- একই সাথে নিন্দিত ও নন্দি��।

"এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;
সারারাত দখিনা বাতাসে
আকাশের চাঁদের আলোয়
এক ঘাইহরিনীর ডাক শুনি-
কাহারে সে ডাকে! (ক্যাম্পে)

ক্যাম্পে!!! এই কবিতার কথা অনেকেরই জানা। শেষমেশ অশ্লীলতার ট্যাগও অর্জন করেছিল ক্যাম্পে কবিতা।
ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদেরও হৃদয়,
কথা ভেবে – কথা ভেবে – ভেবে ।
এই ব্যথা - এই প্রেম সব দিকে রয়ে গেছে -
কোথাও ফড়িঙে-কীটে ,- মানুষের বুকের ভিতরে ,
আমাদের সবের জীবনে ।
বসন্তের জ্যোৎস্নায় ওই মৃত মৃগদের মতো
আমরা সবাই। (ক্যাম্পে)

অথচ শেষ লাইনগুলোই প্রমাণ দেয় এটা নিছক কোনো শিকারের গল্প নয় কিংবা অশ্লীলতার দিকে কোনও ইঙ্গিত নয়। কবি মূলত সৃষ্টির সামনে মানুষের অসহায়তা কিংবা দুর্বল অবস্থানের বিষয়টি ক্যাম্পের শিকারী ও শিকার রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন মাত্র।

এছাড়া বেশকিছু কবিতা প্রশংসিতও হয়েছিল। বোধ কবিতায় অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার নিয়ে কবির ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে;শকুন কবিতায় এসেছে সাম্রাজ্যবাদ; প্রেম কবিতায় উঠে এসেছে প্রেম-ভালবাসার বিভিন্ন ধাপ; মাঠের গল্প কবিতায় কি নিখুঁত ভাবে সুন্দর উপমার মাধ্যমে জগত-সংসারের ধীরে ধীরে বয়ে চলা/ আবর্তনের কথা উঠে এসেছে! অন্যান্য কয়েকটি কবিতায় উঠে এসেছে জীবনের কথা, জীবন ধীর-লয়ে বয়ে চলার কথা, স্বপ্নের কথা, আকাঙ্ক্ষার কথা। কিংবা কখনও কবি আড়ালে থেকে ভালবেসে যাওয়ার কথা বলেছেন-

"তুমি তো জান না কিছু, না জানিলে -
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে!" (নির্জন স্বাক্ষর)

জীবন, প্রেম-অপ্রেম, অন্যায়ের বিপরীতে জেগে উঠা বোধের বিপরীতে কবি লিখেছেন হতাশা আর মৃত্যু কামনার পান্ডুলিপি। কাজেই ধূসর পান্ডুলিপি যথার্থ নামকরণ।

At the end of 2020, this book was a great delight🖤

Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
June 10, 2021
★ নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয় , নক্ষত্রের মতন হৃদয়
পড়িতেছে ঝ’রে-
ক্লান্ত হয়ে- শিশিরের মতো শব্দ ক’রে !
জানো নাকো তুমি তার স্বাদ ,
তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,
জীবন অগাধ !


★ শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-
বলিলামঃ ‘ একদিন এমন সময়
আবার আসিও তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়;
পঁচিশ বছর পরে ।‘
এই ব’লে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর, কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে- মাঠে মরে গেল, ইঁদুর – পেঁচারা
জ্যোৎস্নায় ধানক্ষেত খুঁজে
এল-গেল ! – চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বাঁয়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত- কেউ !- রহিলাম জেগে
আমি একা- নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশ,
তার চেয়ে আগে চ’লে আসে
যদিও সময়,-
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয় !-


★ সব ছেড়ে দিয়ে আমি তোমারে একাকী ভালোবেসে
তোমার ছায়ার মতো ফিরিয়াছি তোমার পিছনে !


★ আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়;
আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে,
সব কাজ তুচ্ছ হয়—পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা—প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।

মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়—প্রেম নয়—কোনো এক বোধ কাজ করে।
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চ’লে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে:
সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়!
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি? পাবে না আহ্লাদ
মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন!
মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন!
শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!



ধূসর পান্ডুলিপির কবিতাগুলো অনেক ধূসরতর কবিতা এবং অনেক দীর্ঘ কবিতা। এই বইয়ের আমার সবচেয়ে প্রিয় দুইটা কবিতা হলো 'পঁচিশ বছর পরে' আর 'বোধ'। অন্য কবিতা গুলোও সুন্দর তবে কয়দিন পরপরই ওই দুটো কবিতা খুব পড়া হয়।

এই বইতে কিছু অপ্রকাশিত কবিতাও দেওয়া আছে, যেগুলোও অনেক বিষণ্ণ সুন্দর। জীবনবাবু মানেইতো মেলানকোলিক কিছু।

Profile Image for Sumaiya Akhter  Lisa.
83 reviews
February 14, 2022
মাঝেমধ্যে অদ্ভুত অদ্ভুত মোহে ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে না?
এই যেমনটা আজকে আমার মনে হলো, জীবন্ত কাঠের গন্ধে আমি সারাক্ষণ মোহান্ধ হয়ে থাকতে পারব। আজকে সকালের আগে আমি জানতামই যে, সদ্য কাটা কাঠের গন্ধ আমার অসম্ভব রকমের ভালো লাগে। বইয়ের সাথে কথা গুলো কোন মিল নেই তবুও বলতে ইচ্ছে করলো। গুস্তাগী মাফ করবেন। 
 আজ রাতে শীত শেষ হয়ে যাবে। বসন্ত আসবে। এইবার বাবাই অনেক যত্ন করে সুর্যমুখীর গাছ লাগিয়েছেন। অনেকদিন থেকে অপেক্ষা করছি কবে ফুল গুলো বড় হবে আর আমি মায়ের শাড়ি পরে ফুলের সাথে ছবি তুলব। কি কালজয়ী ব্যাপার না! 

কোন এক কঠিন হৃদয়ের কেউ একজন বলেছেন, যে ভাঙ্গে তাকে একা হতে হয়। কিন্তু এই কবিতা গুলো পড়তে গিয়ে মনে হয় প্রিয় মানুষ গুলো সবাই  আশেপাশেই আছে। 
সবকিছু সত্য মনে হয়। 
বিষাদচূড়ায় আসে তৃপ্তি। 
আমার নিকট থেকে তোমাকে কেটে নিয়েছে যদিও সময়। সেই সময়কে তুচ্ছ মনে হয়। অভিযোগ-অভিমান গুলো ফানুসের মতো উড়ে যায়।
তুষার, সূর্যমুখী, পাতা, বৃষ্টি, বন এই সবকিছুর মধ্যে লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। 
আচ্ছা, উনার কবিতা গুলোর তুমিটা কে?  
কেন মনে হয় অদ্ভুত কোন এক আচেন মানুষের কথা বলছেন। সেই 'তুমি'র এতরূপ! একেক কবিতায় একেক রকম। 
আমার খুব ইচ্ছে করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যদি বেঁচে থাকতেন আর উনি আমাকে রোজ কবিতা গুলো পড়ে শুনাতেন! 
"তুমি তো জানোনা কিছু, 
না জানিলে, 
আমার সকল গান তবুও তোমাকে লক্ষ্য করে। "

আথবা 
"কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে- মাঠে মরে গেল, ইঁদুর – পেঁচারা 
জ্যোৎস্নায় ধানক্ষেত খুঁজে 
এল-গেল ! – চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বাঁয়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত- কেউ !- রহিলাম জেগে
আমি একা- নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশ,
তার চেয়ে আগে চ’লে আসে
যদিও সময়,-
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয় !-"
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
July 31, 2021
জীবনানন্দ নিয়ে কবিতার ছলে কিছু বলার চেষ্টা করলাম একটুখানি (জানি তেমন সুবিধে করতে পারিনি) 😐

যিনি প্রকৃতিরে নিয়েছে আপন করে,
নিজ সন্তানের মতো প্রকৃতিরে করেছে লালন,
তিনি জীবনানন্দ ছাড়া অপর কেউ নন

যিনি কবিতাতে আমাদের দুঃখের সাথে আপন দুঃখকে করেছে বুনন,
তিনি জীবনানন্দ ছাড়া কেউ নন

নদী, নক্ষত্র, প্রেম-ভালবাসা, হতাশা, সাগর, ঢেউ পরে কবিতা লিখে বানিয়েছেন আপন গগণ,
তিনি জীবনানন্দ ছাড়া কেউ নন
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,864 followers
June 10, 2021
"মনে পরে গেল এক রূপকথা ঢের আগেকার,
কহিলাম,— শোনো তবে, —
শুনিতে লাগিল সবে,
শুনিল কুমার;
কহিলাম,— দেখেছি সে চোখ বুজে আছে,
ঘুমোনো সে এক মেয়ে— নিঃসাড় পুরীতে এক পাহাড়ের কাছে;
সেইখানে আর নাই কেহ,—
এক ঘরে পালকের 'পরে শুধু একখানা দেহ
পড়ে আছে;— পৃথিবীর পথে পথে রূপ খুঁজে-খুঁজে
তারপর,— তারে আমি দেখেছি গো,— সেও চোখ বুজে
পড়ে ছিল;— মসৃণ হাড়ের মতো শাদা হাত-দুটি
বুকের ওপর তার রয়েছিল উঠি!"
অতি সাধারণ ক'টি লাইন। রূপকথার গল্পে— সে ঠাকুরমার ঝুলি-তে হোক বা গ্রিম ভাইয়েদের সংকলিত আখ্যানমালায় আমরা এই গল্পটি না-জানি কতবার পড়েছি। কিন্তু কোথাও, কোত্থাও কি ওই রূপকল্পটি পেয়েছি যেখানে হাতদু'টির তুলনা হয়েছে মসৃণ হাড়ের সঙ্গে?
না, পাইনি আমরা এ-জিনিস। আর এই সাংঘাতিক, অমোঘ, অব্যর্থ চিত্রকল্প, যেখানে সৌন্দর্যবোধ আর মৃত্যুচেতনা একাকার হয়ে যায়, যেখানে রূপসাগরে ডুব দিয়েও শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি নীল করে দেয় পাঠকের ঠোঁট, সেটির সৃজনেই জীবনানন্দের সার্থকতা।
এবং, মাইন্ড ইট, এটি কবি'র দ্বিতী��় কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা "পরস্পর" থেকে উদ্ধৃত!
এই আশ্চর্য সুন্দর বইটির ছত্রে-ছত্রে ছড়িয়ে আছে এমন নানা পরশপাথর। বালি, নুড়ি, পাথর আর নোনা জলের মধ্যে কখন আনমনে সেই এক-আধটি শব্দ যে আমাদের মনের লোহার শিকলটিকে সোনার করে তুলবে, তা আমরা ভাবতেও পারি না!
যদি এখনও না পড়ে থাকেন, তাহলে প্লিজ পড়ুন। এই বই বাংলা ও বাঙালির শাশ্বত উত্তরাধিকার। পড়ুন, আর বলুন,
"আলো-অন্ধকারে যাই— মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়,— কোন্‌ এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয়— শান্তি নয়— ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ হয়,— পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা— প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!"
Profile Image for Akash.
446 reviews149 followers
March 22, 2023
"সকল লোকের মাঝে বসে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?"
Profile Image for Sajid.
457 reviews110 followers
February 5, 2022
তবু তুমি শীত রাতে আড়ষ্ট সাপের মতো শুয়ে
হৃদয়ের অন্ধকারে পড়ে থাক—কুণ্ডলী পাকায়ে!—
অপেক্ষায় বসে থাকি—স্ফুলিঙ্গের মতো যাবে ছুঁয়ে
কে তোমারে!—কোন্ অশ্রু,কোন্ পীড়া হতাশার ঘায়ে
কখন জাগিয়া ওঠো—স্হির হয়ে বসে আছি তাই।
শীত রাতে বাড়ে আরো—নক্ষত্রেরা যেতেছে
হারায়ে—ছাইয়ে যে আগুন ছিল সেই সবও হয়ে যায় ছাই!
তবুও আরেকবার সব ভস্মে অন্তরের আগুন ধরাই।


বহুদিন পর আবার ধূসর পান্ডুলিপি পড়লাম। এবার খু্ব নতুন করে আবিষ্কার করলাম কবিতাগুলিকে।শীতের রাতে একা বসে বসে আবৃত্তি করেছি। গভীর শান্তি!
Profile Image for basri.reads.
50 reviews6 followers
February 9, 2023
তোমার আকাশে তুমি উষ্ণ হয়ে আছ, তবু—
বাহিরের আকাশের শীতে
নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,
নক্ষত্রের মতন হৃদয়
পড়িতেছে ঝ’রে—
ক্লান্ত হয়ে—শিশিরের মতো শব্দ ক’রে!
জানো নাকো তুমি তার স্বাদ,
তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অগাধ,
জীবন অগাধ! (নির্জন স্বাক্ষর)


******


গানের সুরের মতো বিকালের দিকের বাতাসে
পৃথিবীর পথ ছেড়ে— সন্ধ্যার মেঘের রঙ খুঁজে
হৃদয় ভাসিয়া যায়— সেখানে সে কারে ভালোবাসে!
(অনেক আকাশ)


******

আলো-অন্ধকারে যাই— মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয়— শান্তি নয়— ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ মনে হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা— প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়! (বোধ)


******


অলস মাছির শব্দে ভরে থাকে সকালের বিষন্ন সময় ,
পৃথিবীরে মায়াবীর নদীর পারের দেশ বলে মনে হয়;
সকল পড়ন্ত রোদ চারি দিকে ছুটি পেয়ে জমিতেছে এইখানে এসে,
গ্রীষ্মের সমুদ্র থেকে চোখের ঘুমের গান আসিতেছে ভেসে,
এখানে পালন্কে শুয়ে কাটিবে অনেক দিন জেগে থেকে ঘুমাবার সাধ ভালোবেসে! (অবসরের গান)


******


আরম্ভ হয় না কিছু— সমস্তের তবু শেষ হয়—
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়!
যা হয়েছে শেষ— শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়! (জীবন)



খুব বেশি পছন্দের কবিতাগুলোয় টুকে রাখা কারণ পছন্দের লিস্টে আরো আছে যা লিখতে গেলে ফুরোবে না আর! কারণ জীবনানন্দ মানে “ঐ পছন্দের লাইন আসিতেছে ভেসে—“
Profile Image for Md. Tahseen Quayum.
16 reviews17 followers
March 16, 2023
বনলতা, সুরঞ্জনা ছাড়া একটা বকুলও পাওয়া গেল। জহির রায়হানের 'শেষ বিকেলে মেয়ে'র মত। কিছুটা। সুন্দর। সুন্দর।

'পরস্পর' নামের কবিতায় আছে সে।
Profile Image for Utsob Roy.
Author 2 books77 followers
December 5, 2015
তুমি যদি রহিতে দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায়, তবু যদি তোমার দু — পায়ে
হারায়ে ফেলিতে পথ — চলার পিপাসা! —
একবারে ভালোবেসে — যদি ভালোবাসিতে চাহিতে তুমি সেই ভালোবাসা।
Profile Image for Rashed.
127 reviews26 followers
May 16, 2021
আমি যদি হতাম বনহংস,

বনহংসী হতে যদি তুমি;

কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে

ধানক্ষেতের কাছে

ছিপছিপে শরের ভিতর

এক নিরালা নীড়ে;


তাহলে আজ এই ফাল্পুনের রাতে

ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে

আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে

আকাশের রুপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-

তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-

নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা,

শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে

সোনার ডিমের মতো

ফাল্গুনের চাঁদ।

হয়তো গুলির শব্দঃ

আমাদের তির্যক গতিস্রোত,

আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,

আমাদের কন্ঠে উত্তর হাওয়ার গান!


হয়তো গুলির শব্দ আবারঃ

আমাদের স্তব্ধতা,

আমাদের শান্তি।

আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকত না:

থাকত না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার;

আমি যদি বনহংস হতাম,

বনহংসী হতে যদি তুমি;

কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে

ধানক্ষেতের কাছে।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
Read
February 10, 2024
যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে,—
পথের পাতার মত তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে র’বে?
অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!
তোমার এ জীবনের ধার
ক্ষ’য়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল,
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই!—
শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে!—
আমি ঝরে যাব,—তবু জীবন অগাধ


জীবনানন্দের কবিতার ভেতর যে একটা ঘোর আছে, অন্য জগৎ আছে, সেটা টের পায় তার এক জীবনী পড়তে গিয়ে। শাহাদুজ্জামান এর লেখা ‘একজন কমলালেবু’ পড়ে জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। একটা ভালোলাগা, অন্যরকম একটা অর্থ তৈরি হওয়া।

সেদিন হঠাৎই রাতের বেলা বই কিনব না-কিনব না করে, বাতিঘর এর ওয়েবসাইটে অর্ডার দিয়ে ফেলি ধূসর পান্ডুলিপি। সত্যি বলতে, কবিতা পড়লে একটা ভালো লাগা কাজ করে, কিন্তু আমি যেন লেখার অনেক অংশ ধরতে পারি না। সম্ভবত সেই ম্যাচুরিটি আসেনি এখনো। তাই তুলে রাখা থাকলো পরে আবার পড়ার জন্য।
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
May 31, 2024
'যা পেয়েছি একবার পাব নাকি আবার তা খুঁজে!' 

'সব ছেড়ে দিয়ে আমি তোমারে একাকী ভালোবেসে  
তোমার ছায়ার মতো ফিরিয়াছি তোমার পিছনে !'

'যে নদী হারায়ে যায় অন্ধকারে –রাতে – নিরুদ���দেশে,
তাহার চঞ্চল জল স্তব্ধ হয়ে কাঁপায় হৃদয় !'

'হয়তো সে মিশে গেছে- তারে খুঁজে পাবে নাকো কেউ!
কেন যে সে এসেছিল পৃথিবীর কেহ কি তা জানে !'

'তুমি তা জানো না কিছু—না জানিলে,
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে;'

'শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-
বলিলামঃ ‘ একদিন এমন সময়
আবার আসিও তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়;
পঁচিশ বছর পরে ।‘

'কে আমারে ব্যথা দেছে ,- কে বা ভালোবাসে ,-
সব ভুলে ,- শুধু মোর দেহের তালাশে
শুধু মোর স্নায়ু শিরা রক্তের তরে
এ মাটির’পরে
আসিব কি নেমে !'

'নক্ষত্রের পানে যেতে যেতে
পথ ভুলে বারবার পৃথিবীর ক্ষেতে
জন্মিতেছি আমি এক সবুজ ফসল !-'

'সকল ক্ষুধার আগে তোমার ক্ষুধায় ভরে মন!  
 সকল শক্তির আগে প্রেম তুমি, তোমার আসন  
সকল স্থলের’ পরে, সকল জলের’ পরে আছে!'

'জীবন হয়েছে এক প্রার্থনার গানের মতন  
 তুমি আছ বলে প্রেম, গানের ছন্দের মতো মন  
 আলো আর অন্ধকারে দুলে ওঠে তুমি আছ বলে!'

'আমি শেষ হব শুধু, ওগো প্রেম, তুমি শেষ হলে!  
 তুমি যদি বেঁচে থাক,—জেগে রব আমি এই পৃথিবীর পর—যদিও বুকের পরে রবে
মৃত্যু—মৃত্যুর  
 কবর!  '

'আলোর চুমায় এই পৃথিবীর হৃদয়ের জ্বর
ক’মে যায়; -তাই নীল আকাশের স্বাদ- স্বচ্ছলতা-
পূর্ণ ক’রে দিয়ে যায় পৃথিবীর ক্ষুদির গহ্বর;'

'কতো দেহ এলো,- গেল,- হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
দিয়াছি ফিরায়ে সব,- সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
বসে আছি,- সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে।'

'তোমার শরীর ,-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার;- তারপর,- মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানিনি তা,- হয়েছে মলিন
চক্ষু এই;- ছিঁড়ে গেছি- ফেড়ে গেছি ,- পৃথিবীর পথ হেঁটে হেঁটে
কত দিন রাত্রি গেছে কেটে !'

'তুমি আর আমি
ঠাণ্ডা ফেনা ঝিনুকের মতো চুপে থামি
সেইখানে রবো প’ড়ে-
যেখানে সমস্ত রাত্রি নক্ষত্রের আলো পড়ে ঝরে
সমুদ্রের হাওয়া ভেসে আসে,
গান গায় সিন্ধু তার জলের উল্লাসে।'

'হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার।
তোমার আকাশ—আলো—জীবনের ধার
ক্ষ’য়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই, শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে।
আমি চ’লে যাবো—তবু জীবন অগাধ'

'যে-পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস—আকাশ তোমার।
জীবনের স্বাদ ল’য়ে জেগে আছো, তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে পারো তুমি;'
Profile Image for Mahin.
6 reviews
October 28, 2025
ধূসর পাণ্ডুলিপি - জীবনানন্দ দাশ
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

২২শে অক্টোবর জীবন দাশ শঙ্খচিল হয়ে উড়াল দিলেন ধানসিঁড়ি নদীর দিকে— দারুচিনি দ্বীপের ঐ ধূসর গুহার দিকে যেখানে তার অমর পাণ্ডুলিপি পড়ে আছে অতি অবহেলায়। বাতাস- পূর্ণিমার চাঁদ সইতে পারে নায় এই অন্যায়। পাহাড়ি মেঘ শেষরাতের আকাশে নক্ষত্রের চিঠি ও পাণ্ডুলিপিকে নিয়ে এই মৃত পৃথিবীর কোনো দূর গাঁয়ে উড়িয়ে এনে শস্যের খেতে রেখে যায়। চিঠিতে জোৎস্নার কালিতে লেখা, " মাটির গল্প শেষ হয়ে হ'লে অনেক তবুও থাকে বাকি— তুমি জানো—এ পৃথিবী আজ জানে তা কি! "

তিনি বিষণ্নতার নিঃসঙ্গ গান নিশীথের বাতাসে যেভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন তা আমার হাড়ের মজ্জায় মজ্জায় অনুরণিত হয়। সমুদ্রের নোনা পানির অকল্পনীয় স্বাদ মস্তিস্ক তার কবিতা থেকে আহরণ করে। আমরা নির্জনতম পথ দিয়ে হেঁটে তার কবিতার নাগাল পাই। বনলতার নাবিক বেশে আমি অনেকবার অথৈ সাগর পাড়ি দিয়েছি, পৌঁছে যাই ঐ দারুচিনি দ্বীপের তীরে। যেখানে, " জলের উচ্ছ্বাসে পিছে ধু-ধু জল তোমারে যে ডাকে। "

আমার ইচ্ছা হয় ধূসরের প্রতিটা শব্দ দেয়ালে লেখে ফেলি। আমার আত্মা বের হয়ে চলে যেতে পারে ঐ হলদে তৃণে ভরা মাঠে, সেখানে কীট-মেঠো ইঁদুরের সাথে বন্ধুত্ব বেশ জমবে। ঘুরে ঘুরে খুদ খাবো আর ভুলে যাবো নিষ্টুর বাস্তবতার কথা। ইচ্ছে হয় মাথার উপরের দেয়ালে একটা স্কাইলাইট বানিয়ে কার্তিক মাঠের চাঁদ দেখি। কিন্তু সাদা দেয়ালের নিশ্চুপ হাহাকার ছাড়া কিছুই দেখতে বা শুনতে পাই না।
এই বইয়ের পাতায় যে কাব্য লেখা তার মর্মউদ্ধার করতে যতবার নামবো ততবারই " বসন্তের জোৎস্নায় ঐ মৃত মৃগের মতো " পড়ে থাকবো। এতেই আমার শান্তি। তার কবিতা দিয়েই সাহিত্যে পথ চলা শুরু হয়েছিল। আমি এখনো ঐ ট্রামকে অভিশাপ দেই কেন ও এই কমলালেবুর খোঁসায় মোড়া মানুষটাকে ওদিন দেখে নাই? ওর চোখে কি লেগেছিলো-ঢুকেছিলো?

তার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা রেখে ধূসর পাণ্ডুলিপি অবশ্যই ক্ষনিকের জন্য বন্ধ করছি। বারবার ঐ মৃত বসন্তের রাত কে না চায় বলেন?
Profile Image for Pathok Bolchi.
97 reviews5 followers
February 7, 2023
'ধূসর পাণ্ডুলিপি'র প্রায় সমস্ত কবিতার প্রকৃতির এক ‘ধূসর, ক্ষয়িষ্ণু,শীতার্ত, ম্লান অন্ধকার’ প্রকাশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। শুধু এক নির্জন ধূসরতায় লীন প্রকৃতি এখানে উপস্থাপিত। নামকরণের প্রতীকি ইঙ্গিতেও এ তত্ত্বটি প্রকাশিত।

জীবনানন্দ স্বয়ং একটি চিঠিতে লিখেছেন- "আমার কাব্যের উৎস নিরবধিকাল ও ধূসর প্রকৃতি-চেতনার ভেতর রয়েছে বলেই তো মনে করি। তবে সে প্রকৃতি সবসময়-ই যে ধূসর, তা হয়তো নয়।"

একথাও সর্বতোভাবে সত্য; 'কেননা 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'র সাময়িক মৃত্যুচেতনার জটিল কুহেলি অতিক্রম করে জীবনের পাখিরা অনন্ত আকাশে প্রদক্ষিণ শুরু করে। কবি 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'র মৃত্যুচেতনার অন্ধকার পর্যায় পেরিয়ে সময়চেতনার চিন্ময় সূর্যকে নবরাগে রঞ্জিত দেখেন; এ কাব্যেই ঘটে যায় প্রতীক্ষিত উষালগ্ন, যা উদ্ভাসিত ঐশ্বর্যে বিকীর্ণ হয়ে পড়ে ‘বনলতা সেন'-এর পরিব্যাপ্ত পটভূমিতে।' (জীবন শিল্পী জীবনানন্দ দাশ: আসাদুজ্জামান)

'ধূসর পাণ্ডুলিপি'তে কবি যে প্রকৃতির রূপে আবিষ্ট, তা ক্ষয়িষ্ণু সৌন্দর্যের তীব্র আস্বাদে অপরূপে জগৎ যেন কবির চেতনায় শরীরী হয়ে উঠেছে এবং এখানে চিত্ররূপময়তা ও ধ্বনিগন্ধময়তা যেন সমান্তরালভাবেই উপস্থিত।

‘জীবনানন্দর কাব্যে দেখা যায় যে চিত্ররচনার অজস্রতা, তার বিশেষত্বও উল্লেখযোগ্য। যত উপমায়, যত ইঙ্গিতে তিনি কল্পনাকে প্রকাশ করেন, সেগুলি ভাবাত্মক নয়, রূপাত্মক; চিন্তাপ্রসূত নয়, অনুভূতি প্রসূত। তাঁর একটি কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ একবার বলেছিলেন ‘চিত্ররূপময়’; জীবনানন্দর সমগ্র কাব্য সম্বন্ধেই এ আখ্যা প্রযোজ্য। ছবি আঁকতে তাঁর নিপুণতা অসাধারণ। তার ওপর ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়, গন্ধ ও স্পর্শেরও বটে, বিশেষভাবে গন্ধ ও স্পর্শের।'
(কালের পুতুল; বুদ্ধদেব বসু)

‘ধূসর পাণ্ডুলিপি'র নিসর্গজগতে যে-ঋতুকে দেখতে পাওয়া যায়, তা হলো শীত ঋতু- এখানে শুধুই কুয়াশা, হিম আর পাতার ঝরে পড়া; সূর্যের অনুপস্থিতিও লক্ষ্যগোচর। তা বাদে
'ধূসর পাণ্ডুলিপি' এক পিপাসার গান, -সে পিপাসা সৌন্দর্যের, যে সৌন্দর্য অপরূপ অথচ মরণাহত; অনির্বচনীয় তবু নশ্বর। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র সকল কবিতাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগের বিপর্যয়ের ঘনিষ্ঠ, অন্তত রচনাকালের দিক থেকে।

আপাতদৃষ্টিতে অবশ্য এসব কবিতার জগৎ রূঢ় বাস্তব নয়, কাব্যের বিষয় প্রাত্যহিক পৃথিবীর সমস্যা সংঘর্ষ নয়।
নিসর্গের যে অপরূপতা মৃত্যুর দ্বারা আক্রান্ত জেনেই কবির চেতনা বিষণ্নতার বোধে ভারাক্রান্ত হতে দেখেছি 'ধূস�� পাণ্ডুলিপি'র জগতে, তার-ই সঙ্গে ইতিহাসের ঢের লুপ্ত অধ্যায়ের গরিমা ও কীর্তির নশ্বরতার বিষণ্ন উপলব্ধির সংযুক্তি জীবনানন্দর কাব্যসৃষ্টিতে একটি নূতনতর চরিত্র লক্ষণ নিয়ে এসেছে, যা তাঁর আগামী রচনায় আরো বড় আয়তনে ও তাৎপর্যে অর্থময় হয়ে উঠেছে। নিসর্গের রূপাবিষ্ট ইন্দ্রিয়াসক্ত অনুপুঙ্খ অবলোকনের ভিত্তিভূমি থেকে স্বপ্নপ্রয়াণের যে আকাঙ্ক্ষাতীব্রতা 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'কে দিয়েছে অনন্য স্বকীয়তা, ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাবলীতে সে বিশিষ্টতা প্রবলভাবে উপস্থিত।' (জীবনানন্দের চেতনাজগৎ; প্রদ্যুম্ন মিত্র)
'ধূসর পাণ্ডুলিপি' কাব্যগ্রন্থে প্রেমচেতনা, নায়িকা বর্ণনা প্রভৃতি সমস্তই আছে। কিন্তু বিষণ্ন শীতার্ত নৈসর্গিক পটভূমিকায় প্রেম এক রোমান্টিক দীর্ঘশ্বাস, আর নায়িকারা প্রবলভাবে দেহজ কামনা-বাসনার আরক্ত সংসর্গে আবদ্ধা, ঈর্ষা-বঞ্চনা-অবহেলার ব্যর্থতায় চিত্রায়িত।

জীবনানন্দের এই 'ধূসর পান্ডুলিপি' কাব্যগ্রন্থে তার জীবনের সবচেয়ে বিতর্ক কবিতা ' ক্যাম্পে' আছে। এই সম্পর্কে কিছু বলি এবার- ১৯৩২ সালে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় ‘ক্যাম্পে’ নামক কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতার কিছু অংশ তুলে ধরছি-

‘একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে।
সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে
দাঁতের-নখের কথা ভুলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে ওই
সুন্দরী গাছের নিচে জ্যোৎস্নায়!
মানুষ যেমন করে ঘ্রাণ পেয়ে আসে
তার নোনা মেয়ে মানুষের কাছে।...’

এ কবিতায় অশ্লীলতার অভিযোগে সিটি কলেজের অধ্যাপনা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। সজনীকান্ত ( তিনিও একজন কবি ছিলেন) আজীবন নেতিবাচক সমালোচনা করতেন। কলকাতার অনেকে জীবনানন্দের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। সেজন্য বিতকের্র জায়গা না থাকলেও বিতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। না হলে প্রকাশিত কবিতায় ‘নোনা মেয়ে’ শব্দ নিয়ে কেন এত বিতর্ক? আলোচ্য কবিতায় কোথায় অশ্লীলতা রয়েছে! এ মত অনেকের। আমি অন্তত অশ্লীল কবিতা হাজারখানেক দেখাতে পারব(যদিও অশ্লীল আমার কাছে একটা শব্দ মাত্র) এ থেকে ধারণা করা হয় প্রথমে কলকাতার সাহিত্যসমাজ কবিকে মেনে নিতে পারেননি! মৃত্যুর পর বতর্মান প্রজন্ম তাকে মূল্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। বলা যায়, কবির কবিতার অনুপম শিল্পগুণ পাঠকসমাজকে আকৃষ্ট করছে।

ক্যাম্পে কবিতার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার সবচেয়ে বড় অহেতুক অভিযোগটা করেন সজনীকান্ত সেন তার ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায়। সজনীকান্ত জীবনানন্দকে পছন্দ করতেন জীবনানন্দ দাশের কবিতা কোথাও প্রকাশিত হলেই তিনি সেটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রপ করতেন, হাসি-ঠাট্টা তামাশা করতেন। তাকে মাতাল, পাগল ইত্যাদি নানা অভিধায় ভূষিত করতেন বলে অনেকে বলে থাকেন। ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটা 'পরিচয়'-এ ছাপা হওয়ার পরে তিনি তার শনিবারের চিঠিতে এই কবিতার বিষয়ে লিখলেন, ‘কবিতাচ্ছলে কবি যে বিরহিণী ঘাইহরিণীর আত্মকথা ও তাহার হৃদতুতো দা’র মমর্কথা কহিয়াছেন তাহা পরম রমণীয় হইয়াছে। বনের যাবতীয় ঘাইহরিণকে তাহাদের হৃদয়ের বোন ‘ঘাইহরিণী’ অঘ্রাণ ও আস্বাদের দ্বারা তাহার পিপাসার সান্ত¡নার জন্য ডাকিতেছে। পিসতুতো, মাসতুতো ভাইবোনদের আমরা চিনি। হৃদতুতো বোনের সাক্ষাৎ এই প্রথম পাইলাম।’

পরে অবশ্য বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ আর সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘পরিচয়’ তৎকালীন অনেক কাব্যজিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছিল।

বিশেষ করে ‘ঘাই’ শব্দের মানে সবাই না জানায় বিব্রত হচ্ছিলেন তাঁরা। 'ঘাই' একটি অসমিয়া শব্দ। এটি আসলে অন্য পাখিকে ধরার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহৃত আরেকটি পাখিকে বোঝানো হয়। সচরাচর এই টোপ হয়ে থাকে পুরুষ পাখি। টোপের এই সংজ্ঞাটিকে জীবনানন্দ হরিণীতে রূপান্তর করেছিলেন। সন্দেহ করার কারণ নেই, যৌনতাই এই টোপের প্রতি প্রলোভন জাগিয়ে তোলে।

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এই কবিতা একেবারেই ছাপতে চাননি। পরিচয় পত্রিকার প্রথম সাত বছরে জীবনানন্দের প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে জীবনানন্দ সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথের মনোভাবকেও অনেকে দায়ী করে থাকেন।

অন্যদিকে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশের উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, কবিজীবনের একেবারে প্রথমদিকে জীবনানন্দের রচনা ছিল সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও নজরুল ইসলামের মতো। ধূসর পাণ্ডুলিপিতে এসে প্রকাশিত হলো তাঁর অনন্যতা। বুদ্ধদেব লিখছেন, ‘রূপকথার জগতের মতোই এ-কবির জগৎ আমাদের আত্মসাৎ করে নেয়, সেখান থেকে বেরোবার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না।’

আজও বেশ বকে ফেললাম। এইসবের অনেক তথ্য জানতে সাহায্য করেছেন 'বিভাস' এর ধ্রুবকুমার দাদা। দাদাকে ধন্যবাদ। দেখা হলে চা খাওয়াবো।হিহিহি,

কবিতা পড়ুন। আর জীবনানন্দ যেমন বলেছেন, ভালো থেকো ভালোবাসা ।
এই লেখাটি যারা পড়বেন তারা আমার ভালোবাসা জানবেন। কাছের মানুষদের খোঁজ নিন, কথা বলুন আর একটিবার বলুন তাদের, ভালোবাসি।
জীবনানন্দ কে কেউ বলে নি কিন্তু আপনি বলুন।
1 review1 follower
Want to read
July 5, 2014
i want to about dusar pandulipi
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,759 reviews357 followers
February 20, 2025
বাংলা কবিতার আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা কবিতার আঙ্গিকে এক অনন্য পরিবর্তন এনেছে। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "ধূসর পাণ্ডুলিপি" বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক মাইলফলক। এ গ্রন্থে তিনি প্রকৃতি, নিসর্গ, মানবজীবন, অতীতচেতনা এবং নির্জনতার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন। এই কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দ দাশ তাঁর স্বতন্ত্র রূপ ও আঙ্গিকে বাংলার প্রকৃতি, নিসর্গ, গ্রামবাংলার জীবন ও মানুষের অন্তর্দহন ফুটিয়ে তুলেছেন। এখানে বিষাদের এক গভীর সুর লক্ষ্য করা যায়, যা তাকে বাংলা কবিতার "নির্জনতার কবি" হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কবিতাগুলোতে প্রকৃতি এবং মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে এক অন্তর্লীন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।

এই কাব্যগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১) প্রকৃতির বিমূর্ত রূপ: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতি কেবল দৃশ্যমান কোনো বিষয় নয়, বরং এক জীবন্ত সত্তা, যা কবির অনুভূতির প্রতিফলন ঘটায়।

২) অতীত ও স্মৃতিচারণ: বহু কবিতায় কবি বাংলার হারানো ঐতিহ্য, অতীত দিনের স্মৃতি ও ইতিহাসের ছোঁয়া দিয়েছেন।

৩) বিষাদ ও নির্জনতার সুর: ধূসর পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলোতে বিষাদময় এক নির্জনতার অনুভূতি লক্ষ করা যায়, যা কখনও ব্যক্তিগত, কখনও সামষ্টিক বেদনার প্রতীক হয়ে ওঠে।

৪) প্রতীকধর্মিতা: কবি তাঁর কাব্যে নানা প্রতীক ব্যবহার করেছেন, যেমন— 'আকাশ', 'পাখি', 'নীল', 'ধূসর', 'ঘাস', যা এক গভীর অর্থবহ মাত্রা সৃষ্টি করে।

৫) নতুন ভাষাশৈলী ও চিত্রকল্প: জীবনানন্দ দাশের কবিতার ভাষা প্রথাগত কবিতা থেকে পৃথক, যা তাঁকে অন্যান্য কবিদের থেকে স্বতন্ত্র করেছে।

এই কাব্যগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলির অন্যতম "বনলতা সেন", যেখানে প্রেম, ক্লান্তি, অতীতের স্মৃতি ও সৌন্দর্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে। "আকাশলীনা" কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রকৃতির গভীরতা ও একাকিত্বের অনুভূতি। "অন্ধকার" কবিতাটি মানবজীবনের অনিশ্চয়তা ও হতাশার প্রতিচ্ছবি। "মধ্যরাতে" কবিতায় ফুটে উঠেছে রাতের স্তব্ধতা ও কবির একাকিত্ব।

সমগ্র কাব্যগ্রন্থে জীবনানন্দ দাশের ভাষা স্নিগ্ধ, বিমূর্ত এবং আবেগময়। তাঁর কবিতায় অ্যালিটারেশন, মেটাফর, ইমেজারি এবং অলংকারের দক্ষ প্রয়োগ দেখা যায়।

"ধূসর পাণ্ডুলিপি" বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থ পাঠ করলে প্রকৃতি ও মানবজীবনের এক অন্তর্নিহিত বেদনা, নিস্তব্ধতা এবং এক রহস্যময় সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। এটি বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং কবিকে চিরকালীন করেছেন।

পরিশেষে এটুকুই বলার যে "ধূসর পাণ্ডুলিপি" শুধু একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, এটি এক গভীর জীবনদর্শন, যেখানে বিষাদ, নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি এবং অতীতচেতনার এক অনবদ্য সংমিশ্রণ ঘটেছে। বাংলা কবিতার জগতে এটি এক কালজয়ী সৃষ্টি, যা পাঠকদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।




Profile Image for Mahmudur Rahman.
11 reviews2 followers
July 11, 2020
আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
Profile Image for Subham Panda.
1 review1 follower
March 22, 2018
GHFYHH
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Dey Debasmita.
49 reviews11 followers
February 16, 2019
হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার।
Profile Image for Niloy Shahriar.
5 reviews
Read
February 15, 2023
কালের খেয়ায় জীবন বাবু যেমন দেখেছেন, তেমনটাই নিবদ্ধ এই বইয়ে।
Profile Image for Abdullah Zahed.
14 reviews2 followers
Read
August 20, 2018
সারাদিন ধরে পড়েও মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। দাশের কবিতা বুঝতে মাথায় যে পরিমাণ ঘিলু থাকা প্রয়োজন তা এখনো হয়নি আমার। shmoop.com এর মতো বাংলা কবিতার লাইন বাই লাইন এক্সপ্লেনেশন কোথায় পেতে পারি জানালে উপকৃত হতাম।
Profile Image for Soumitro Roy.
117 reviews
March 16, 2016
Surrealism at its best... J.Das poems portals me to those quain locations of Bengal. Addictive.
Profile Image for Samia Rashid.
296 reviews15 followers
December 15, 2024
একজন জীবনানন্দ দাশ, এবং তার মায়াময় সব কবিতা...
Displaying 1 - 28 of 28 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.