আমাদের সমাজের সকল মানুষ এবং ইসলাম সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞানও আছে তারা সকলেই জানেন যে, জাতি, ধর্ম , বর্ণ , গোত্র নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের অন্যতম প্রেরণা । তাত্ত্বিক , প্রায়োগিক ও ঐতিহাসিকভাবে তা সর্বজনবিদিত । বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সকল মানুষই ধর্মীয়ভাবে শান্তিপ্রিয় । সবাই আমরা শান্তি চাই । এখন সমস্যা হলো, তাহলে ইসলামের নামে বোমাবাজি , অশান্তি , নিরিহ নিরপরাধ মানুষ হত্যা, আত্মহত্যা ইত্যাদি কেন ঘটছে ? এ সকল ঘটনার কারন জানা শুধু কৌতূহল নিবারণের বিষয় নয়, বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় । সন্ত্রাস একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি । এর নিরাময়ের জন্য এর সঠিক কারন নির্ণয় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ । সঠিক কারন নির্ণয় এই ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের পথ সুগম করে । পক্ষান্তরে এর কারন নির্ণয়ে বিভ্রান্তি সমস্যাকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে ।
ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছিলেন একাধারে ইসলামী চিন্তাবিদ, টিভি আলোচক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক আলেম, গবেষক ও লেখক ।
তিনি পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন ও এনটিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে ইসলামের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। ফরেন টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি ইউএস-এর উপদেষ্টা ছিরেন তিনি । এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, মসজিদের খুতবায় ও টিভি আলোচনায় খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দেশের সহজ-সরল মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়গুলো আলোচনা করে জনসচেতনতা তৈরি করে আসছিলেন।
এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম হয় ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তার পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও মা বেগম লুৎফুন্নাহার।
তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন । এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করার উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সৌদি আরব গমন করেন। রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রিয়াদে অধ্যয়নকালে তিনি বর্তমান সৌদি বাদশাহ ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমানের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। সৌদিতে তিনি শায়খ বিন বাজ বিন উসায়মিন, আল জিবরিন ও আল ফাউজান সহ বিশ্ববরেণ্য স্কলারদের সান্নিধ্যে থেকে ইসলাম প্রচারে বিশেষ দীক্ষা গ্রহণ করেন।
রিয়াদে অধ্যয়নকালে তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে প্রায় তিন বছর কর্মরত ছিলেন।
লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৯৯ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইসলামি উন্নয়ন ও আরবি ভাষা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২০০৯ সালে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুরে আল ফারুক একাডেমি ও আস সুন্নাহ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন বরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। সেখানে ছেলেমেয়েদের হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষা ও ঝিনাইদহের চ্যারিটি ফাউন্ডেশনে, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউটের।
এছাড়াও তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস হিসেবে সহীহ বুখারীর ক্লাস নিতেন। তিনি ওয়াজ মাহফিলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলোচক ছিলেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি মানুষকে শোনাতেন শাশ্বত ইসলামের বিশুদ্ধ বাণী।
বাংলা ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক প্রায় পঞ্চাশের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- এহয়াউস সুনান, তরিকে বেলায়েত, হাদিসের নামে জালিয়াতি, ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ইত্যাদি।
ফুরফুরা শরীফের পীর আবদুল কাহহার সিদ্দীকির মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
"ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ" একটি ক্ষুদ্র পাঠ পর্যালোচনা
বইটি রচিত হয়েছে জেএমবি ও হরকতের কিছু নাজায়িজ কর্মকান্ডের পর এবং উলামাদের পক্ষ থেকে তিনিই সম্ভবত প্রথম লিখিত কিতাব আকারে তাদের বিভ্রান্তি তুলে ধরে মুমিনদের সতর্ক করার হক আদায় করেছেন। শাইখ রাহ. বিস্তারিত জিহাদের ফিকহ আলোচনা করেননি, বা অবিন্যস্ত-অপরিণত জিহাদের দিকে উদ্বুদ্ধকারী কোন কিতাব হিসেবে এটা রচনা করেন নি। এটাকে কেউ বইয়ের অসম্পূর্ণতা! হিসেবে ধরতে পারে বা এর উপর ভিত্তি করে সমালোচনায় লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু এটি যে ইসলামি জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের সম্প্রসারিত রূপ ফলে আলোচ্য বিষয়ের বিস্তারে অনিবার্যভাবে সীমাবদ্ধ এবং এর পাঠক শ্রেণীর বৈচিত্রে বিশেষরকম এইটা মাথায় রাখা চাই। আসলে তিনি বিধ্বংসী ও ভ্রান্তিকর কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়কে ফোকাস করেছেন, এবং প্রত্যেক বিষয়ের ভিত্তি হিসেবে পর্যাপ্ত নুসুসের আশ্রয় নিয়েছেন। এবং নুসুসের ফাহমের সত্যায়নকারী হিসেবে সালাফদের কর্মপন্থাও যুক্ত করেছেন। যে কোন ইবাদতের মত জিহাদ-কিতালের ব্যবস্থাপনায় সামর্থ্যের প্রসঙ্গ বা সামর্থ্যের বাইরে কোন কিছুই অনিবার্য হয়না- ফলে আবেগী হয়ে ইদাদ-আসবাব ছাড়া কেবল কুফফারের ক্ষতিসাধন শরীয়ার মাক্সাদ কিনা এসব বিষয় ও সামর্থ্যহীনতায় কাফির-মুরতাদ শাসকের আনুগত্যও ফুকাহাদের কাছে বিধিসিদ্ধ জায়িজ এসব বিষয়েও ইজতিহাদি আলোচনা করেন নি। তিনি কোথাও তালিবান বা আলকায়দার সুনির্দিষ্ট সমালোচনা করেন নি বরং সাইয়্যেদ আহমাদ বেরেলভীর রহ. ইমারাহ এর মত তালিবানি ইমারাহকেও হক হিসেবেই গন্য করেছেন, নাইজেরিয়ার উসমান দান ফুদিওর সংস্কারে নির্মিত ইমারাহর প্রশংসা করেছেন, কুফফারদের আক্রমনে ডিফেন্সিভ জিহাদকে যারা জংগীবাদ বলে তাদেরও সমালোচনা করেছেন, দাওয়াত,তালীম, এসলাহ, রাজনীতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে যারা ঢালাওভাবে জিহাদের পরিভাষা বা ফাযায়েল ব্যবহার করেন তাদেরও সমালোচনা করেছেন। সমস্যা হল সুধারনার সুন্নাহতে অনভ্যস্ত অনেক ভাই তাদের পছন্দনীয় ঢংয়ে না হবার কারণে এগুলোকে অন্যান্য সরকারী আলিম বা বক্তার কথার সাথে মিলিয়ে ফেলেন এবং আশ্চর্যভাবে এই পূর্বধারনায় পুরোদস্তুর আক্রান্ত হয়ে বক্তব্য পুরো না পড়েই অসংখ্য অসংগতি খুজে পান। অথচ এটা তাঁর অন্যান্য বইয়ের মতই বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ, সমৃদ্ধ, অনবদ্য, অবশ্যপাঠ্য বইগুলির একটি। কোনটি ওয়াহি- মুজমায়ালাইহি বিষয়, আর কোনটি ইজতিহাদগত ফুরুয়ী অবস্থান, কোনটি জায়িজ কিন্তু সুন্নাহ নয়, কোনটি জাদিদ ইস্তিলাহে ইজতিহাদি অবস্থান, কোনটি সমালোচকদের তথ্য বিকৃতি(যেমন- আগে থেকে চলে আসা বায়যান্টেনিয় এলাকা উবনায় জিহাদ, ইমামকে- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবাহী নেতা না মনে করে সালাত বা অন্যকিছু হতে পারে মনে করা, বেসামরিক হারবি কাফির হত্যার ফিকহি জায়িজ বনাম অনুসৃত সুন্নাহ ইত্যাদি) তার পার্থক্য মাথায় রাখার তৌফিক দিন। মূলত সুস্থ মনে বইটির পাঠই এর যথার্থতার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ আমাদের হক বুঝার ও মুসলিমদের ব্যাপারে সুধারণার ও কথার সদর্থের তৌফিক দিন।
অজ্ঞতার বেড়াজাল ব্যাক্তি বিশেষ থেকে শুরু করে শিক্ষিত একটি শ্রেনীকেও ডুবিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। সে ধারায় আমরা দেখতে পাই জঙ্গীবাদের নামে বিশ্বজুড়ে ইসলামকে হেয় করার প্রবনতা যেন আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর এই অজ্ঞতার অটুট সঙ্গী এক শ্রেনীর মতাদর্শে গড়া অজ্ঞ দল ও নির্দিষ্ট শ্রেনীর মিডিয়ার অন্ধ বিশ্লেষণ। এতে স্বভাবতই কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন উদয় হয় ইসলাম কি তাহলে সত্যিই জঙ্গীবাদ সমর্থন করে? উত্তরটা খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (র.) চমৎকার ভাবেই তুলে ধরেছেন তার "ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ" বইতে। তিনি দেখিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদ থেকে শুরু করে অজ্ঞ শ্রেনী পর্যন্ত, মিডিয়া থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট মতাদর্শে বেঁড়ে উঠা মানুষ কি ভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামি বা অজ্ঞতার ফাঁদে পরে। অপব্যাক্ষা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ফায়দা পেতে কি ভাবে মানুষ ইসলামকে অপব্যাহারে মেতে উঠে। তারপর তিনি ইসলামের নামে তথাকথিত এই জঙ্গীবাদকে একটু করে নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবা (রাঃ) গনের জীবনাদর্শের সামনে দাড় করিয়ে চূর্ণ করে দিয়েছেন, অন্ধত্বের জানালা আলোকিত করেছেন লেখনীতে। বিশেষ করে শিক্ষিতদের জন্য অবশ্যই পাঠনীয় বইটি।
চারিদিকে বিভ্রান্তি, এরমাঝে কিছু উত্তর খোঁজার চেষ্টা। জঙ্গিবাদের সাথে আসলেই কি ইসলামের সম্পর্ক আছে?সবই কি ইহুদি খ্রিষ্টান ষড়যন্ত্র?ইসলামের অতীত ইতিহাসে কখনো কি চরমপন্থার আর্বিভাব হয়েছে?বিভ্রান্তির কারণ গুলাই বা কী? এসব প্রশ্নের উত্তর সহ সমাধান লেখক খুব ভালোভাবে তুলে ধরেছেন।যারা মুসলিম হিসেবে কিছুটা হলেও আহত হন এসব ঘটনার দ্বারা, তাদের জন্য এই বইটি হতে পারে নতুন একটি অধ্যায় এর সূচনা। Happy Reading🙂
Best book I ever read on militancy. A resourceful discussion on what causes them, what is Islamic view about it and how to prevent it. Everyone (specially Muslims) would benefit from this read.