অভীক সরকারের জন্ম পয়লা জুন, উনিশশো উনআশি সালে। বেড়ে ওঠা প্রাচীন শহর হাওড়ার অলিগলিতে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, মা স্কুল শিক্ষিকা। রয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পেশায় সেলসম্যান, কর্মসূত্রে ঘুরেছেন পূর্ব-ভারতের প্রায় সব শহর ও গ্রাম। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাসা বেঁধেছেন হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মুম্বাই ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে। শখের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশক। লেখালেখির শুরু আন্তর্জালে ও বিভিন্ন ব্লগে। প্রকাশিত বইগুলো হল মার্কেট ভিজিট, তিতিরপাখি ও প্রিন্সেস (সহলেখক অনুষ্টুপ শেঠ), এবং ইনকুইজিশন, খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, চক্রসম্বরের পুঁথি, ইত্যাদি। বিবাহিত। কন্যা সন্তানের পিতা। ভালোবাসেন ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল, ইয়ারবন্ধু এবং ইতিহাস।
সাঁওতাল বিদ্রোহের বিচিত্র সে সব কথা বর্ননার বুলি পড়তে পড়তে মানসপটে সেই মনোহর পুরুলিয়ার কোলঘেঁষে অয্যোধার পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট গ্ৰামের মাঝে দাফন করা সেই শত বছরের মাটির ওমে ,মহুয়ার ফুলে,শালপিয়ালের বনে ঘোরলাগানো পলাশের আগুনে লুকিয়ে থাকা অভিশাপ যদি মারন বিষের বিবমিষা নিয়ে পুত্রশোকে কাতর হয়ে মাতম করা পিতার দীর্ঘ শ্বাস মিশে তবে সেই শাপ থেকে মুক্তির শক্তি বিশ্বচরাচরে যাবতীয় দৈবিক বিশ্বাস ভক্তির মিলন ছাড়া কি মেলে?
মন্ত্রপূত ভস্ম নিয়ে ভূতের মতো ছাইচাপা প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা নিয়ে ছাইমানবের কায়ায় ছায়ার মতো এক পিতার যুগান্তর ধরে অপেক্ষার সাথে অগুনতি না পাওয়ায় গল্প যেখানে আছে শাসন- শোষণ,বিশ্বাস -অবিশ্বাস,ডাকিনী-যোগিনী কল্পকথা তারই সুন্দর বুনট নিয়ে বইয়ের প্রথম গল্প"কালিয়া মাসান"
পরের খানা আহামরি পাত পেড়ে বলার মতো না হলেও গালগল্প করার মতো ভালোই মালমশলা রয়েছে খোঁড়া ভৈরবীকে নিয়ে।তবে তার রচনাশৈলী আর ঘটনার ঘুরপাকে নেহাতই চাপা পড়ে গেছে কালিয়া মাসানের সামনে।
ছোট্ট বই, আলগোছে নিয়ে পড়তে চাইলে দিব্যি কেটে যাবে এক ঘন্টা।
'খোঁড়া ভৈববীর মাঠ' গল্পে প্রতিটা হত্যাকান্ডের বর্ণনা উপেক্ষা করে সহজেই আরো স্টোরিলাইন যোগ করা যেত৷ একটা কনসেপ্ট কোনোভাবে খাঁড়া করায়ে ভেরি পুওর এক্সেকিউশন৷
অভীক সরকার নামটা শুনলেই আমার গা টা একটু একটু শিউরে উঠে। ব্যাটা না জানি এবারে কি গল্প ফেঁদে বসল! পড়লে রাতে একলা ঘুমাতে পারব তো? আরও কতো হাবিজাবি চিন্তা! অভীক সরকার তার নামটা রাখতে পারলেন না :3 আমি হতাশ। ভয় পাবার মজা থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশ। কালিয়া মাসান ভালো ছিল। মূলত অই গল্পটার জন্যই এই রেটিংটা দেয়া। খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ নিয়ে যেই প্রত্যাশা ছিল পূরণ হয়নি।
'কালিয়া মাসান'। কী সেই জিনিস? কোনো মন্ত্র? সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসের এক কুখ্যাত ঘটনা, যেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয় তন্ত্রবিদ্যার ভয়ঙ্করতম মারণ অস্ত্র কালিয়া মাসান। লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে কিছু সাঁওতালকে নির্মমভাবে হত্যা করে এক নায়েব। এরপর সাঁওতালরা তাদের লোকেদের লাশকে পুড়িয়ে একধরনের বিষাক্ত মন্ত্রপুত ছাইয়ের আত্মা সৃষ্টি করে ওই নায়েবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে। এই ছাইয়ের আত্মার বলি হয় নায়েবের বংশধর। কিন্তু কীভাবে মহুয়া সেই কালিয়া মাসানের শিকার হয়? কালিয়া মাসানের বাণ থেকে রক্ষা পেতে হলে সেই আত্মার রক্ত প্রয়োজন। কিন্তু আত্মার রক্ত আবার কীভাবে পাওয়া যায়? মহুয়ার বন্ধুরা কি অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে মহুয়া কে রক্ষা করতে পারবে?
খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ:
ভৈরবীর মাঠে ৩০০ বছর পূর্বে তৈরি ওক কালী মন্দির নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। একবার মন্দিরের কালী মূর্তির এক পায়ের নখ ভেঙে যায়। ওই ভাঙা মূর্তি পূজার ফলে কালী রুষ্ঠ হয় গ্রামবাসীর ওপর। তাল দীঘির খোঁড়া ভৈরবী দেবীর মূর্তিতে দেখা গেল রক্তের দাগ। তার পর থেকেই গ্রামের একের পর এক মানুষ রহস্যজনক ভাবে মারা যেতে থাকলো। তাহলে কি দেবী রুষ্ট হয়েছেন গ্রামবাসীর ওপর এবং একে একে তার কোপ পুরো গ্রামটাকে গ্রাস করে নেবে? ভৈরবী মা কি বাঁচাতে পারবেন তাঁর গাঁয়ের মানুষদের এই অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে?
পাঠ-প্রতিক্রিয়া:
গল্প না বলে এ দুটোকে নভেলাই বলা যায়। প্রথম নভেলার গল্প বলার ধরন বেশ ভালো। বৃষ্টিবাদলের দিন পড়ছিলাম, তাই পড়ার সময় অনুভূতিটাই আলাদা! এটাকে একটা বন্ধুত্বের গল্পও বলা যায়। কিছু কিছু জায়গায় বিভৎসতার বর্ণনা একটু বেশিই ছিল। ইতিহাস আর বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে অলৌকিক কাহিনি সৃষ্টি করেছেন লেখক। দীপু পিসি চরিত্রটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তার জবানিতে লেখক যেভাবে গল্পটি বলিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছিল আমিও তার আসরে বসেই গল্প শুনছি। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন আমার চোখের সামনেই প্রতিটি ঘটনা ঘটছে। অসাধারণ লেখকের রচনাশৈলী। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত কাহিনি। . . এরপর দ্বিতীয় নভেলার দিকে আসা যাক৷ অনেক ভয়ের উপাদান, বীভৎসতা ও অভিশাপে ভরপুর। নভেলার শেষে একটা টুইস্টও আছে। অত্যন্ত নিখুঁত বর্ণনা। সেইসঙ্গে প্রতিটি চরিত্র খুব সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন লেখক।
দুটি কাহিনিই প্রতিটি পাঠকের ভাল লাগতে বাধ্য! আজকাল হুটহাট বিকেলের দিকে বৃষ্টি নেমে যায়৷ সেই সময় বইটা হাতে নিয়ে পড়তে বসলে ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ হবে না!
অভীক সরকার রচিত, কলকাতার হরর বই। বইয়ে একটি নভেলা আর একটি গল্প রয়েছে।
প্রথমে নভেলার ব্যাপারে আশা যাক। নভেলার নাম কালিয়া মাসান। সাঁওতাল বিদ্রোহের ওপর ভিত্তি করে রচিত হরর নভেলা। লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে কিছু সাঁওতালকে নির্মমভাবে হত্যা করে এক নায়েব। এরপর সাঁওতালরা তাদের লোকেদের লাশকে পুড়িয়ে একধরনের বিষাক্ত মন্ত্রপুত ছাইয়ের আত্মা সৃষ্টি করে ওই নায়েবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে। এই ছাইয়ের আত্মার বলি হয় নায়েবের বংশধর। এভাবেই এগোতে থাকে কাহিনী।
এরপর গল্পের ব্যাপারে আশা যাক। গল্পের নাম খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ। ভৈরবীর মাঠে ৩০০ বছর পূর্বে তৈরি ওক কালী মন্দির নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। মন্দিরের কালী মূর্তির এক পায়ের নখ ভেঙে গেছিল। ওই ভাঙা মূর্তি পূজার ফলে কালী রুষ্ঠ হয় গ্রামবাসীর ওপর। নেমে আসে অভিশাপ।
এবার কিছু বিশ্লেষণ করা যাক। নভেলার ক্ষেত্রে কনসেপ্ট অসাধারণ। হররের যথেষ্ট উপাদান ও অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ঠিকভাবে এক্সিকিউট করতে পারেননি লেখক। এজন্য একটু গড়পড়তা মনে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত গল্প নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কালীমন্দির ও কালী নিয়ে অসাধারণ একটা গল্প। যথেষ্ট ভয়ের উপাদান, বীভৎসতা ও অভিশাপে পরিপূর্ণ। লেখক শেষে একটা টুইস্ট দিয়েছেন।
বুকস্ট্রিট ও রাজশাহী নিউজ হোমের কল্যাণে বইটা সংগ্ৰহ করেছি। ১০১ পৃষ্টার বইটা চাইলে অর্ডার করে আনাতে পারেন। অভীক সরকারের লেখনি বেশ ভালোই। বৃথা যাবেনা।
দুটো গল্প রয়েছে, 'কালিয়া মাসান' আর 'খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ'। 'কালিয়া মাসান' গল্পটা ভালো লেগেছে, 'খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ' গল্পটার পেছনের ধারণটা ভালো হলেও গল্প রচনা ভালো হয়নি, গল্পটাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল।
অতিপ্রাকৃত চমৎকার দুইটা বড়গল্প "কালিয়া মাসান" আর "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ" এর সংকলন। "কালিয়া মাসানে" ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সাঁওতাল বিদ্রোহ, ডাকিনিবিদ্যা, প্রতিহিংসা, অসাধারণ পাহাড়ের প্রকৃতির মিশেল খুব ভালো লেগেছে। "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ" পিশাচ কাহিনি হিসেবে অসাধারণ, গ্রামীণ পটভূমিতে রহস্যময় ভয়াবহ পিশাচের হানা আর তার নৃশংসতার বর্ণনা দুর্দান্ত। পুরো বইয়ের লেখনি টানটান, অতিপ্রাকৃত ব্যাপার ছাড়াও যথেষ্ঠ পরিমাণে রহস্যের ছোঁয়াও আছে, সবমিলিয়ে হরর প্রেমীদের জন্য একটানে পড়ার মতই বই।
#পাঠক_প্রতিক্রিয়া বই- খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ লেখক- অভীক সরকার প্রকাশনা- পত্রভারতী দাম- ১৫০/- পাতা- ১০৪ প্রচ্ছদ ও অলংকরণ- কৃষ্ণেন্দু মন্ডল বাইন্ডিং- হার্ড বাইন্ডিং ✍️ শুভজিৎ রায়
প্রথমেই বলি প্রচ্ছদ সম্বন্ধে, বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী কৃষ্ণেন্দু মন্ডল মহাশয়। ওনার প্রতিটি কাজই আমার অসাধারণ লাগে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমার প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ দুটোই অসাধারণ লেগেছে। তার সাথে উপরের লেখাটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বেশ একটা নতুনত্ব আছে। এরজন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ মাননীয় কৃষ্ণেন্দু মন্ডল মহাশয় কে। এরপর বলবো বই এর বাঁধন এবং পাতার ব্যাপারে। ভালো বই মানেই পত্রভারতী, এ কথা অকপটে স্বীকার করে নিতে হবে সকলকেই। এই বই টির ও বাঁধন অত্যন্ত সুন্দর এবং মজবুত। তার সাথে পাতার মান অত্যন্ত উন্নত এবং পাঠকের সুবিধার্থে লেখাও বেশ প্রমাণ মাপের। এরজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই পত্রভারতী কে এবং বই এর সাথে যুক্ত সকলকে। এবার বলি বিষয় বস্তু নিয়ে। এই বই এ মোট দুটি কাহিনী আছে। তার মধ্যে একটি উপন্যাস এবং একটি উপন্যাসিকা। উপন্যাস হলো কালিয়া মাসান, এবং উপন্যাসিকা টি হলো খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, অর্থাৎ এই বইটি যেটির নামে। কালিয়া মাসান- এর ট্যাগ লাইন " ইতিহাস, রোমাঞ্চ, অলৌকিক এর দূর্দান্ত মিশ্রণ কালিয়া মাসান" এই উপন্যাস দুই বন্ধুর গল্প। তারা পুরুলিয়ায় ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির শোভার মাধ্যে তাদের উপর নেমে আসে এক অভিশাপ। কিন্তু কী সেই অভিশাপ? আর সাঁওতাল দের সাথে কীই বা হয়েছিল? এই সব কিছুর উত্তর জানার জন্য এই উপন্যাস। এর সাথে এখানে আছে ছাঁয় দেহের মানবের কথা, সে কে? আর সবথেকে বড় প্রশ্ন এই কালিয়া মাসান জিনিস টাই বা কী? বেশ ভালো রোমহর্ষক উপন্যাস একি। আমার বেশ ভালো লেগেছে। তবে এর খারাপ দিক হলো বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথোপকথন এখানে আছে, তার সাথে একই কথা বারবার বলে উপন্যাস এর তাল কেটে দেওয়ার হয়েছে। খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ ট্যাগ লাইন " প্রতিপদে গায়ে কাঁটা দেওয়া রুদ্ধশ্বাস কাহিনি খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ" লেখকের এই লেখাটি পড়ে আমি অত্যন্ত আশাহত হলাম। কারন ওনার লেখার যে মান এবং ধার তাতে এটি ওনার লেখা বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।এর যে ট্যাগলাইন অর্থাৎ গায়ে কাঁটা দেওয়া রুদ্ধশ্বাস কাহিনি, এটি একেবারেই বানানো, কারন এরকম দৃশ্য মোটে একটি আছে তাও দু লাইনে। এখানে আছে, এক ভৈরবীর মন্দির , সেই দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় দেবীর পায়ের একটি আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। তার সত্তেও বিশেষ কারনে পূজিতা হন তিনি। হঠাৎ একদিন দেবীর গায়ে রক্ত দেখা যায়, কার রক্ত? প্রতিদিন খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ এ নৃশংস ভাবে মৃত্যু হচ্ছে গ্রামের মানুষ এর। কেন? এই সব কিছুর উত্তর আছে এই উপন্যাসিকা তে। এই কাহিনী টি লেখক বড্ড তারাহুরো করে শেষ করে দিয়েছেন, যা একেবারেই কাম্য নয়। মানে ধরুন আপনি চিলি চিকেন খাবেন ভাবলেন কিন্তু তার বদলে এলো পাতি অল্প মশলা যুক্ত মাংসের পাতলা ঝোল। এই বইটির ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। 🙏 ধন্যবাদ 🙏 বিঃ দ্রঃ- মতামত একান্ত নিজস্ব এবং সৎ। তাই এই নিয়ে কোন সমস্যার সৃষ্টি হোক তা কাম্য নয়। প্রতিক্রিয়া আলোচনার মাত্রায় উন্নীত হোক।🙏
একটি অলৌকিক উপন্যাস এবং একটি গল্পের সংকলন এই বইটি, দুটি কাহিনীই মূলত তন্ত্র-ভিত্তিক ।
"কালিয়া মাসান" উপন্যাসটির কাহিনি অভিনব । ইতিহাস আর বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই অলৌকিক কাহিনি সৃষ্টি করেছেন লেখক । মূলত সাঁওতাল বিদ্রোহের ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাস । লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে কিছু সাঁওতালকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, ঐ অঞ্চলের এক নায়েবের চক্রান্তে । এরপর সাঁওতালরা সেই মৃত ব্যক্তির লাশকে পুড়িয়ে একধরনের বিষাক্ত মন্ত্রঃপুত ছাইয়ের আত্মা সৃষ্টি করে ওই নায়েবের বিরুদ্ধে প্রতিশােধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে । ‘কালিয়া মাসান’ গল্পের কথক দীপু পিসি চরিত্রটি যথেষ্ট আকর্ষণীয় ।এছাড়াও কখনাে প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা, কখনাে কালিয়া মাসান নামক বিষে আক্রান্ত মহুয়ার অবস্থার বর্ণনা, সত্যিই অসাধারণ । পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন আমার চোখের সামনেই প্রতিটি ঘটনা ঘটছে । সত্যিই গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত কাহিনি ।
এরপর গল্পের ব্যাপারে আশা যাক, গল্পের নাম ‘খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ’। ভৈরবীর মাঠে ৩০০ বছর পূর্বে তৈরি কালী মন্দির নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয় । গ্রামে ঘটতে থাকে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা । তবে কি দেবীর অভিশাপ নেমে এল গ্রামের ওপর ? এর প্রতিকারই বা কি ?
দুটি গল্পই প্রচন্ড আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম, কিন্তু আমার মনে হয়েছে লেখক যেন অতিমাত্রায় ভয় পাওয়াতেই চেয়েছিলেন ���কলকে । গল্পটির এত সুন্দর প্লট থাকা সত্বেও তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট । ’কালিয়া মাসান’ হয়ত ’খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ’ গল্পটির থেকে ভালো । কিন্তু, লেখক কালিয়া মাসান নিয়ে আর একটু যত্নশীল হলে... আমরা দুর্দান্ত মানের একটি ভৌতিক উপন্যাস পেতাম বলে আমার মনে হয় ।
ভয় পেলাম প্রচুর। নিখাদ ভয়। বাকি রাতটাও ভয় লাগবে জানি। কিন্তু জাস্ট এইটুকুই। ভয় পাওয়ানোই লেখকের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে হল। ভীষণ হতাশ। চূড়ান্ত ওভারহাইপড বই। প্রাইজের কুপন থেকে কিনলাম বলে টাকাটা গায়ে লাগল না। এবং ইনকুইজিশন অনেক অনেক বেশি যত্ন নিয়ে লেখা ছিল। কিন্তু লেখক নিজেই নিজের ছকে পড়ে গেছেন। প্রতিশোধ- অভিশাপ - বীভৎস রস - উত্তরাধিকার - মায়া - সেই একধাঁচের predictable লেখা। কালিয়া মাশানে সাঁওতাল বিদ্রোহের ছোঁয়াটুকুই শুধুমাত্র পড়বার মত। সরকার মশাই, ইতিহাস নিয়ে সিরিয়াসলি লিখুন প্লিজ! সেই কবে ঋতবাকে একটা লেখা পড়েছিলাম, "একটি প্রাচীন পাপ" বোধহয়। ধারেকাছেও আসে না "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ"।
বইটা ভয়াবহ। নিজের ভয় সহ্য করার লিমিট টেস্ট হয়ে গেল প্রায়। বই এ দুটো গল্প আছে।
এক - কালিয়া মাসান : খুব ভালো ভাবে বলা একটা গল্প। গল্পের প্লট খুব ভালো। গোটা গল্প রহস্য আর উৎকণ্ঠায় ডুবে থাকবেন। তবে গল্পের শেষ টা এতো সুন্দর যে প্রায় চোখে জল চলে আসবে আনন্দে। (আমার তো এসেছিলো )
দুই - খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ : এটাই প্রধান গল্প বলা যায়। গল্পের লেখার ধাঁচ দারুন। গল্পের শুরু থেকে শেষ শুধু আতঙ্ক অনুভব করবেন। ২কেজি দুধ মেরে ৫০ গ্রাম ক্ষীর বানানো যেমন এই গল্পে ঠিক সেভাবে অনেকটা ( অনেক অনেক অনেক অনেক অনেকটা ) ভয় কে ঘনীভূত করে পেশ করা হয়েছে। একা একটা ঘরে বসে পড়ার ভুল আমি করেছি আপনি দয়া করে করবেন না। ( বা করতেও পারেন। এডভেঞ্চার বেশ। তবে সাবধান করা কর্তব্য তাই করলাম)
সব মিলিয়ে বইটা একদম টাকা উসুল। ১০৪ পাতার গোটাটাই ভয় আর আতঙ্ক কে dedicate করা।
প্রথম কাহিনী ......."কালিয়া মাসান " - শুরুর দিকে বেশ কিছুটা গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো স্টাইলে এক মাঝবয়সী চরিত্র, নাম "দিপুপিসি"-----তার মুখ দিয়ে এক স্মৃতি আখ্যানের শুরু। তারপর একটু সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আর সাথে 'ম্যাকবেথ'এর মতোই যেন তিন ডাইনীবুড়ি কে নিয়ে বেশ ভালোই জমিয়ে দিলেন লেখক। এরপর বেশ কিছুটা প্রকৃতি-ভ্রমণ আর সামান্য এডভেঞ্চার এর পর "তারানাথ তান্ত্রিক" এর মতো এগোতে লাগলো গল্প। যাইহোক, শেষটা খুব সাবধান এবং গোছানো ভাবনাচিন্তার লেখনীর জন্য ভালোই উৎরে গেলো। সব মিলিয়ে খারাপ লাগেনি। দিপুপিসির আরও দু একটা গল্প শোনার ইচ্ছা রইলো।
দ্বিতীয় কাহিনী ........"খোঁড়া ভৈরবির মাঠ" - শুরুটা বেশ ছিলো, বাংলার পাড়াগায়েঁর লৌকিক দেবীর আখ্যান আর এক জমিদার বংশের ইতিহাস দিয়ে ভালোই এগোচ্ছিল। একটু পর থেকে কি হলো......নানারকম গ্রাম্য আর আধাগ্রাম্য চরিত্র (কিছুটা শীর্ষেন্দু ঘরানার) একের পর এক এসে আর তাদের গোজামিল দিয়ে তাড়াহুড়ো করে জুড়তে চেয়ে, গল্পটা হয়ে পড়লো ভুলভাল আর কিছুটা অনুমানযোগ্য। একদম ভালো লাগে নি।
যাক আরো একজন লেখক পাওয়া গেলো যার বই বের হলে খুব বেশী চিন্তা ভাবনা না করে হুট করে কিনে টুক করে পড়ে ফেলা যাবে। অন্তত অতি প্রাকৃত জনরায়! ছমছমে ভয়ের গল্প পাগল বাঙালির এমনিতেই এই সব এলাকায় ভালো কোন লেখকের দারূণ তেমন কোন গল্প নেই এই কস্ট ম্যালা দিনের। এই হাপিত্যেশ কমুক
আর এই বই এর কথায়,ছোট এই বইটাতে গল্প আছে সাকুল্যে দুটি। তা মোটের উপর মনে হয়েছে,'খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ' এর গল্প 'এবং ইনকুইজিশন' এর মত জমজমাট না হলেও একটানে পড়ে ফেলার মত বই!
সবচাইতে অশ্লীল হলো লেখকের বর্ণনায় ইংরেজি শব্দ চলে আসা। যদি ইংরেজ কোনো চরিত্রের মুখে এমনটা হয় মানা যায়। কিন্তু লেখকের বর্ণনায় যদি ইংরেজি শব্দ আসে সেটা মানা যায় না। এমনিতেই শিক্ষিত শ্রেণির মুখে ইংরেজি-হিন্দি মেশানো বিশ্রী বাংলা দিন দিন বাড়ছে। সাহিত্যে এ ব্যামো এসে গেলে এ মহামারি আর থামানো যাবে না।
এই যে মশাই, হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, লেখক বাবু তো, কি পান বলেন দেখি পাঠক কে ভয় পাইয়ে। আপনার জন্য তো দেখি রাত বিরেতে একা একা ইয়ে করতে যেতেও ভয় লাগছে। কাল রাত্রে হাতে পেয়েছিলাম বইটি, মধ্যরাতের পর কালিয়া মাসানের ভয় এরকম জাঁকিয়ে বসলো যে বেডরুম লাগোয়া বাথরুমে যেতেও ঘরের সব আলো জ্বালিয়ে ফেললাম। কি লিখেছেন দাদা, সত্যি। তথাকথিত ভূতের গল্প এখন এই একত্রিশের কোঠায় এসে যখন হাস্যাস্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই সময় আপনার গল্প পড়ে ভয় তো দেখছি সেই ছোটবেলার হ্যারিকেনের আলোয় একা একা বারান্দায় পড়তে বসার সময়ের ভয় মনে করিয়ে দিল। সেলাম দাদা, সেলাম আপনাকে আর আপনার কলমকে।
লেখকের প্রথম বই এবং ইনকুইজিশন পড়েছিলাম মাস খানেক আগে। একটি গল্প বাদ দিয়ে ভীষণ ভালো লেগেছিল বাকি তিনটি গল্প। তারপর বইচই পূজাবার্ষিকীতে পড়লাম পেতবুথথু। উফ:, ছাপিয়ে গেছিলেন আগের সব সৃষ্টিকে, বিজ্ঞানের সাথে তন্ত্রের মিল যে কি বস্তু বুঝিয়ে ছেড়েছিলেন লেখক মহাশয় তাঁর সব গুণমুগ্ধ পাঠক কে। তারপর এই খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ। বইটা প্রকাশের পর কিনতে একটু দেরি হল, কিন্তু বিশ্বাস করুন কেনার পর আর ফেলে রাখিনি। কাল রাত্রের ঘণ্টা ছয়েক ঘুমের সময় বাদ দিয়ে মোটামুটি দম বন্ধ করেই গিলেছি বইটি। পছন্দের লেখকের বই পরেও ভালো লাগা খারাপ লাগার খতিয়ান কষতে বসা ঠিক পোষায় না, তবু ওই বয়েসের সাথে বদভ্যাসের মতো বিজ্ঞ যে ভাবটা মস্তিষ্কে এঁটেলুর মতো এঁটে বসেছে সেটার দৌলতে কিছু লিখেই ফেলছি। প্রথমেই আসি ভালো লাগার কথা বলতে। ১) যে দুটি গল্প আছে বইতে, অর্থাৎ কালিয়া মাসান আর খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ দুটোই মেদহীন লেগেছে আমার কাছে। পাঠক চিত্তে পটভূমি অঙ্কন করতে ঠিক যেটুকু বর্ণনা প্রয়োজন সেটুকুই লেখা হয়েছে। পুরো গল্প পড়ে শেষ হবার একবার ও মনে হয়নি যে অমুক জায়গা পড়েছিলাম যার সাথে গল্পের কোনও লিঙ্ক নাস্তি। ২) কালিয়া মাসান গল্পে প্রথম থেকে দুলকি চালে গল্পের গতি এগিয়ে ধীরে গতি-লাভ করে প্রচণ্ড উত্তেজনা বাড়িয়ে একদম সঠিক সময়ে থেমে গেছে আবার পরের গল্পটি প্রথম থেকেই পাঠক কে একেবারে নিঃশ্বাস বন্ধ করিয়ে আটকে ধরে রেখেছে বইয়ের পাতায়। দুটি গল্পের গতির এই ভিন্ন ত্বরণ কিন্তু বেশ একটি লক্ষণীয় বিষয়। লেখক মহাশয় যে নিজের সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই দ্যোতনা বোধহয় লুকিয়ে রয়েছে এর মধ্যে। নতজানু হই স্যার আপনার সম্বন্ধে, দুরকম গতিতেই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন আপনি আর খেলেছেন নিঃসন্দেহে বেশ দৃষ্টি নন্দন ভাবেই। ৩) সোম রসের স্বাদ আস্বাদনে আমেজ আসে, আর ভয়াল রসের? এ আরও ভয়ঙ্কর নেশা মশাই। পড়তে যত ভয় লাগবে ততো মনে হবে আরেকটু পরে দেখি, আরেকটু, শেষ���া কি হচ্ছে। শেষ করে তবে শান্তি পাবে মন। এই ব্যাপারটুকু কিন্তু অভীক বাবুর সব গল্পে কমন। ভয় যতই লাগুক নেশা টা ধরে ভয়ের থেকে বেশি, তাই শেষ করতেই হয়, না পড়ে ফেলে রাখার জো নেই একটুও। ৪) গল্পে ভয়াল রস যতই সম্পৃক্ত পর্যায়ে থাকুক না কেন শেষ মেশ একটু ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে টুইস্ট। উফফ, কালিয়া মাপান গল্পের মজাটা অনেকগুণ যেন বেড়ে গেছে স্নেহের পরশ বুলানো উপসংহারটিতে। পুরো গল্পে যেমন ভয়ে ভেস্তে গেছিলুম শেষটুকুতে মন ভালো করা উপসংহার টি যেন বলিয়েই ছাড়ছে 'সেলাম তোমাকে সেলাম।'
এবার একটু একটা ছোট ব্যাপারে খারাপ লাগাটা শেয়ার করি। যেটা বলতে চলেছি সেটা আমার পর্যাপ্ত বোঝার খামতিও হতে পারে তবু কথা পেটে রাখলে গ্যাস হবার ভয়ে বলেই ফেলি। শেষ অর্থাৎ ২ নম্বর গল্প বইয়ের, অর্থাৎ খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ গল্পের শেষে যিনি ভৈরবীর রূপে আত্মপ্রকাশ করলেন তাঁর পরিচয় গল্পের প্রথম দিকে পেয়েছি স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে, গল্প যত এগিয়েছে তার ব্যাবহারে ও আদব কায়দায় পাঠকের মনে একটি পিশাচিনির ছবি ভেসে এসেছে, কিন্তু গল্পের একদম শেষে প্রচণ্ড টুইস্ট এসে তার ভৈরবী রূপ দেখিয়ে ফেলেছে। এই ট্রান্সিসন টা পাঠক হিসেবে আমার একটু বেহিসাবি রকম মনে হয়েছে। হয়তো এই শেষ মুহূর্তের টুইস্টের আগে যদি চরিত্রটিকে আরেকটু বেশি করে পাঠক মনে অঙ্কিত করা হতো তবে মনে হয় বেশি ভালো লাগতো গল্পটা। এরকম টান টান একটা গল্পের শেষটা যেন প্রচণ্ড মোচড় দিয়ে দুম করে থেমে গেল। যাই হোক এটা তো নেহাৎ আমার ব্যক্তিগত মত। গল্পের মান যে একটুও কমতি নয় সেটা বলাই বাহুল্য। সবশেষে প্রণাম জানাই লেখক মহাশয় কে, আরও মাতিয়ে রাখুন পাঠক কূলকে আপনার কলমের সৃষ্টি দিয়ে। ভালো থাকবেন স্যার।
বই টা ভালো, কিন্তু "এবং ইনকুইজিশন" পড়ার পর যে আগ্রহটা তৈরি হয়েছিল, সেটা এখানে পরিপূর্ণ হইনি। কিছু টা নিরাশ হতেহয়েছে । লেখাটা ভালো, যথেষ্ট ভয় দেখাই, কিন্তু কোথায় যেনো কিশোর আর প্রাপ্ত বয়স্ক সাহিত্যের মধ্যে হারিয়ে যাই। আমার মনে হয়, কোনো গল্প বলিয়ে না ব্যবহার করলেই বোধই ভালো হতো।
দীপুপিসি বাড়িতে এলেই সেটা উৎসবের মত । কারন তার গল্পের ভান্ডার এতই সমৃদ্ধ যে সেটা বলে বোঝান যাবে না । তিনি বাড়িতে এলেই সেটা উৎসবের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায় । সবাই কাজ কর্ম ফেলে দিয়ে দীপুপিসির সামনে মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে থাকে ।
এবারও তিনি এসেছেন । তাই গল্প না শুনে ছেড়ে দেয়াটা অন্যায় হবে । পাড়ার সব গুলো এরই মধ্যে জড় হয়ে গিয়েছে । তাছাড়া লোক বলতে মাত্র ৫ বা ৬ জন হবে । তারপর ও যেন একটা উত্তেজনা রয়ে গিয়েছে । এবার তিনি নিজের জীবনের একটা সত্য ঘটনা বলবেন । সেসবের তোয়াক্কা না করে দীপুপিসি নিজের মত করে শুরু করলেন ।
অনেক দিন আগে দীপু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন তখন একদিন কলেজ স্ট্রিট গেলন বই কিনতে তার বান্ধবী মহুয়ার সাথে । সেখান থেকেই ঘটনার শুরু । কলকাতায় রাত হতে হতে অনেক দেরি কিন্তু কোন এক কারনে সেদিন রাত সাড়ে আটটার মধ্যে সব ফাকা । ওদিকে আড্ডা দিতে গিয়ে দেরি । রাস্তায় কিছুই নেই । কোন রিকশাও নেই । হঠাত একটা রিকশা এলো । যদিও অদ্ভুত তারপরও রিকশাতে চড়ে বসল ।
হঠাত কোথা থেকে একটা গন্ধ নাকে এলো । এরপর ধুলো উড়ে আসতে দেখা গেল । কিন্তু আসে পাশে তো ধুলো নেই । যখন চোখ পরল । সেটা অদ্ভুত ভাবে দেখা গেলো রিকাশ চালক লোকটা গা থেকে ধুলো উড়ছে । তবে সেটা ধুলো নয়, ছাই ।
দেরি না করে দীপু বান্ধবীকে নিয়ে নেমে গেলেন রিকশা থেকে । আর লোকটা শুধু বলল, “কালিয়া মাসান, কালিয়া মাসান” এই বলে উধাও । কোথাও নেই । হাওয়া মিলিয়ে গেল যেনো ।
ফিল্ডওয়ার্কে গিয়ে জায়গাটা ভাল লেগে গেলো দীপুপিসির । সেখানেই কয়েকদিন থাকবেন বলে ঠিক করলেন । সাথে তার বান্ধবী মহুয়াও ছিল । তার সব কিছু ম্যানেজ করে থেকে গেলেন । হয়ত এটাই কাল হয়ে দাড়াল ।
কিছু জিনিশ কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন দীপুপিসি আর মহুয়া । সেখানে মহুয়ার হঠাৎ ঘুঘনি খাওয়ার শখ হলো । সে যেখানেই যায়, ঘুঘনি খায় । ঘুঘনি বিক্রি করার লোকটার দিকে চোখ যায় দীপুপিসির এতো সেই লোক । কিন্তু ততখনে দেরি হয়ে গিয়েছে । মহুয়া ঘুঘনি খাচ্ছে । আর দীপুপিসি পেছনে ফিরে দেখেন লোকটা বলছে “কালিয়া মাসান, কালিয়া মাসান” । এই বলে লোকটা আবার উধাও ।
এই দিকে মহুয়ার শরীর খারাপ হতে থাকে । আর কে বা কি এই কালিয়া মাসান । দীপু বুঝে উঠে পারে না । পেটের ব্যথ্যার জন্য ঔষুধও দেয়া হলো । কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না । তবে শেষ পর্যন্ত কি বাচবে মহুয়া? আর কালিয়া মাসানের রহস্য কি জানা যাবে ।
“আছে পায়ের ছাপ, শুধু নেই একটা আঙুল”
গ্রামের মধ্যে ভৈরবী মায়ের ভক্ত সবাই । কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন । পিশাচ জেগেছে । প্রতি রাতেই যাচ্ছে কারো না কারো প্রান । কিন্তু কে এই পিশাচ । কোথা থেকে এসেছে । আর এই গ্রামের উপর এত ক্রোধ কেন তার । নাকি এটা কারো অভিশাপ ।
গ্রামের দেবীর আরধানা সবাই করে, কিন্তু এখন আর কেউ রাতে বের হয়না ভয়ে । ভোরের আলো ফোটার আগে কেউ ঘর থেক বের হয় না । অজানা আতঙ্কে কাটছে দিন । তাহলে গ্রাম ত্যাগ করে চলে যেতে হবে ।
নিতাইয়ের নতুন বউ রাত হলে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায় । গ্রামে এত আতঙ্কের মাঝেও যেন সে অবিচল । তার মুখে কোন শব্দ নেই । সে যেন কোন কিছু নিয়ে এত বিচলিত নয় । নিতাই যেন তার বউকে চিনতেই পারছে না ।হঠাৎ করেই যেন অচেনা মানুষ হয়ে গিয়েছে ।
শুধু সে রাতে বেলাতেই কোথায় যেন যায় । কিন্তু কোথায় যায় সে । আর এই গ্রামে যেই মাঠ রয়েছে সেটা হচ্ছে খোড়া ভৈরবীর মাঠ । এর রহস্যটাই বা কি ।
গুডরিডসে পয়েন্ট দেয়ার সময় চিন্তা করছিলাম কতো তারকা দিবো... এক নাকি দুই ? কারণ 1.5 তো আর দেয়া যায় না। যাই হোক 'কালিয়া মাসান' গল্পটার জন্যই মূলত দুই তারকা দেয়া। দুটো গল্প তথা খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ এবং কালিয়া মাসানের প্রতিক্রিয়া দুইধাপে দেয়ার চেষ্টা করছি...
গ্রাম বাংলার আর পাঁচটা মন্দিরের মতােই এক ভৈরবী মন্দির। তফাতের মধ্যে দেবীমুর্তিটির পায়ের একটা আঙুল ভাঙা। খুঁতাে হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কারণে সেই মূর্তিই স্থাপন হয়েছিল গ্রামের কল্য���ণার্থে। হঠাৎ একদিন সেই প্রাচীন ভক্তি-বিশ্বাসের আশ্রয়স্থলে ঘনিয়ে এল অশনি সংকেত। কার রক্ত দেবীর গায়ে ? কেন পরপর মারা পড়ছে গ্রামের বাসিন্দারা? রাতে ফেরার পথে পথিকদের উপর কিসের বিপদ ঘনিয়ে আসে এই মন্দির সংলগ্ন মাঠে? কে এই বিস্রস্ত-আঁচল অস্ত্রধারিণী—সে-ই কি পা টেনে টেনে হেঁটে ফিরছে শিকারের সন্ধানে ?… প্রতি পদে গায়ে কাঁটা দেওয়া রুদ্ধশ্বাস কাহিনি খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ।
প্লটটা আকর��ষণীয় কিন্তু গল্পটা পড়ার পর মনে হলো পুরো সময়টাই নষ্ট। যেভাবে বর্ণনা দেয়া হচ্ছিলো প্রথমে, আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম যে হয়তো কোনো জটিল রহস্য আছে কিংবা কোনো পৌরাণিক কাহিনি বা অন্য কোনো কিছু কিন্তু খুব সাধারণভাবে গল্প শেষ হয়ে যায়। গল্পের এতোবড় কুখ্যাত ভিলেন অমনি অমনিই মারা গেলো! আর এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র শাম্ভবীর ছদ্মবেশ নাহয় নিখুঁত ছিলো, তাই বলে ওর বাকিসব কাজকর্মের কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই গল্প শেষ? সবচেয়ে বড় কথা খুনগুলির ভয়ানক বর্ণনাগুলি তো ফালতু ছিলো, পেইজ বাড়ানো ছাড়া এগুলোর আর কোনো ভূমিকা ছিলো না।
দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু ঘুরতে গেছিল পুরুলিয়াতে। অরণ্যের মনােরম পরিবেশে হঠাৎ করে কোন ভয়ঙ্কর অভিশাপের বিষাক্ত ছােবল আছড়ে পড়ল তাদের মধ্যে? কলেজ স্ট্রিটের সেই রিকশাওয়ালাই বা কে, যার গা থেকে উড়ে আসে ছাইয়ের কণা? আজ থেকে দেড়শাে বছর আগে সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় কী ঘটেছিল এখানে? ছাইয়ের শরীর খুঁড়ে কে তুলে আনবে প্রতিষেধক রক্ত ?… কে বাঁচাবে অসুস্থ মেয়েটিকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে? ইতিহাস, রােমাঞ্চ, অলৌকিকের দুরন্ত মিশ্রণ কালিয়া মাসান।
এ গল্পের শুরুতেও পরিচয়ের ফিরিস্তি দিতে দিতে অনেক পেইজ লেগে গিয়েছে... ইংরেজ বিদ্রোহের কিছু ইতিহাস আর প্রতিশোধমিশ্রিত প্লট। যতোটা আশা করেছিলাম নিরাশ ই হতে হয়েছে। লাস্টের টুইস্টটা ভালো ছিলো।
“ঘোর বিপদের মুখে আমরা এমন সব কাজ করে ফেলতে পারি, যেটা হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় করার কথা চিন্তাই করতে পারতাম না।”
কলেজ স্ট্রীট থেকে টুকটাক কেনাকাটার পর কফিশপে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে রাত আটটা বেজে গিয়েছে, দীপান্বিতা আর মহুয়ার মধ্যে কেউই বুঝতে পারেনি। ঘড়ির দিকে একবার চোখ যেতেই তড়িঘড়ি করে তারা উঠে পড়ল। কিন্তু রাস্তায় এসে আরো অবাক হলো, এখানে রাত আটটা এমন কোনো রাত না। বলতে গেলে কেবল শুরু। অথচ রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ ফাঁকা। আকাশ প্রচন্ড মেঘলা হয়ে আসায় বোধ হয় এমন অবস্থা।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন রিকশা না পেয়ে তারা হতাশ, ঠিক তখনই স্ট্রীট লাইট থেকে বের হয়ে এলো একটা রিকশা। যেন হঠাৎ করেই আলোর মধ্যে উদয় হলো। মহুয়ার অবশ্য অতশত খেয়াল নেই। কিন্তু দীপান্বিতা তখনই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লেগেছে। মহুয়ার টানাটানিতে চুপচাপ উঠে বসল রিকশায়। রিকশা চলতে শুরু করলো। রিকশা কিছুদূর এগিয়েছে, হঠাৎই কোথা থেকে ছাই উড়তে শুরু করল। এই ছাইয়ের উৎস খুঁজতে গিয়েই দীপান্বিতার গা দিয়ে একটা ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে গেল। এই ছাইগুলো উড়ে আসছে রিকশাওয়ালার গা থেকে...
◽পাঠপ্রতিক্রিয়া :
এই বইয়ে “কালিয়া মাসান” নামে একটা উপন্যাস এবং “খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ” নামে একটা বড় গল্প রয়েছে। দুটোই ভৌতিক। প্রথমটার সাথে লেখক খানিক প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু খুব লম্বা পরিসরের বই না, তবুও পড়তে ভালো লেগেছে। সবসময় কাহিনির মধ্যে একটা টানটান উত্তেজনা ছিল।
অভীক সরকারের বর্ণনার হাত যে অত্যন্ত চমৎকার, তা স্বীকার করতেই হবে। পরপর দুটো বই পড়লাম এবং উভয় বইই পড়ার সময় শরীরের মধ্যে একটা শীতল ভাব বজায় ছিল। আবার পাশাপাশি উত্তেজনাও। লেখক খুব সাধারণ ঘটনার মধ্যেও তার চমৎকার বর্ণনার দ্বারা পাঠককে ভয় আর উত্তেজনার মিশ্র অনুভূতি দিতে সক্ষম।
আমি একটু বেশিই বলছি কিনা জানি না। বেশ অনেকগুলো নেগেটিভ রিভিউ দেখেছি এই বইয়ের। আমার মতে হাড় হীম করা ভয় না থাকলেও শিরশিরে ভয়ের একটা অনুভূতি ছিল। আর গল্পটা আরেকটু কম টেনে, আরেকটু মেদহীন করা যেত বলে মনে হয়। তবে ওভারঅল, ভালো। একেবারেই যে খারাপ লাগবে, তা না। ট্রাই করতে পারেন। যেহেতু খুবই ছোট বই সময়ও বেশি লাগার কথা না।
◽বই : খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ ◽লেখক : অভীক সরকার ◽প্রকাশনী : পত্রভারতী ◽পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭২ 🔴 ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫
অভীক সরকার রচিত "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ" বইটিতে নিবন্ধ হয়েছে দুইটি আল্লৌকিক, তান্ত্রিক ও ভৌতিক কাহিনী, এখানে প্রথমটি উপন্যাস ও দ্বিতীয়টি ছোট গল্প।
প্রথম কাহিনী "কালিয়া মাসান" - সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটের এক কুখ্যাত ঘটনা। লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে কিছু সাঁওতালকে নির্মম ভাবে হত্যা করে এক নায়েব, এর পর সেই সাঁওতালরা নিজের প্রিয়জনদের দেহ পুড়িয়ে ডাকিনীবিদ্যা দ্বারা মন্ত্রপূত ছাইয়ের আত্মার সৃষ্টি করে ওই নায়েবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে। আর এই ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের শিকার হয় নায়েবের বংশধর।
দ্বিতীয় গল্প, "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ", ৩০০ বছর পুরোনো এক ভৈরবী মন্দির। মন্দিরের কালী মূর্তির এক পায়ের নখ ভেঙে যাওয়ার পরও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই মন্দির। তারপর থেকেই ঘনিয়ে আসতে থাকে ঘোর বিপদের ছায়া, একে একে রহ্যজনকভাবে মরে যেতে থাকে গ্রামবাসীরা। তাহলে কী দেবী মা রুষ্ট হয়েছেন গ্রামবাসীদের ওপর! তাহলে কী তার কোপ পুরো গ্রামটাকে গ্রাস করে নেবে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া : ভৌতিক গল্প আমি সেরকম পড়িনা, ওই হঠাৎ হয়তো ২-১ টি পড়ি। এই বই আমায় উপহার দিয়েছিল আমার এক বন্ধু, এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা থেকে। বেশ ভালো রোমহর্ষক গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। ভেবেছিলাম একদিনেই পড়বো, কিন্তু বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতেই কিছু কিছু জায়গায় এমন নিখাদ ভয় লাগছিল, এগোতেই পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল আর এগোলেই হয়তো রাতের ঘুম পালিয়ে দেহহীন মানুষেরা আমার মস্তিষ্কে হানা দেবে 😂। তবে লেখকের ভয় পাওয়ানোটাই হয়তো প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, যেটায় উনি সাফল্য হয়েছেন কিন্তু আমার "কালিয়া মাসান" যতটা ভালো লেগেছে, "খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ" অতটা ভালো লাগেনি, আরও ভালো হতো যদি না লেখক তাড়াহুড়ো করে গল্পটা শেষ না করতেন। তবে পুরো বইটা ভালো লেগেছে বেশ। যারা ভুত প্রেত পছন্দ করে, তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে এই বই।