আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ যে বাণী প্রচার করেছিলেন তা কোন নির্দিষ্ট স্থান, কাল বা পাত্রের উদ্দেশে ছিল না। ধর্মবাণী প্রচারের মাধ্যমে কোন ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীও তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। মানবজাতি শুধু নয়, সমগ্র জীব ও জগতের কল্যাণেই বিমুক্তির বাণী প্রবর্তন এবং প্রচার করেছিলেন মহামতি গৌতম। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হৌক’—এই অসীম উদার বাণীতে সে সত্যই প্রতিভাত হয়।
বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের জন্য সুখবর, দীর্ঘদিন পর একটি ভিন্নমাত্রার বই তাদের হাতে আসছে, যাতে গৌতম বুদ্ধের কিছু কালজয়ী অক্ষয় বাণী স্থান পেয়েছে। ইংরেজি থেকে অনূদিত ‘বুদ্ধের হৃদয়’ গ্রন্থটি যে বাংলা ভাষার পাঠকদের অশেষ উপকার সাধন করবে—বইটি পাঠ না করলে এই সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
Books can be attributed to "Unknown" when the author or editor (as applicable) is not known and cannot be discovered. If at all possible, list at least one actual author or editor for a book instead of using "Unknown".
Books whose authorship is purposefully withheld should be attributed instead to Anonymous.
আমি যতটুকু বুঝি—বুদ্ধ বলতেন, নিব্বানা বা নির্বাণ এমন কোনো জিনিস না যেটা ভাষা দিয়ে বলা যাবে, এবং যুক্তি দিয়ে বোঝা যাবে। কাজেই এ বইয়ে লেখা বুদ্ধের বাণীগুলো থেকে আমরা কেবল খানিকটা ইমপ্রেশনই লাভ করতে পারি (কিংবা কে জানে, সেটাও পারি কিনা)!
তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আমার মাথায় খুব ঘুরছে—কংগ্রেসের কোনো এক ক্যাম্পে মুনির স্যার এই এক্সপেরিমেন্টটা করেছিলেন। পেছনের সারিতে বসে থাকা ক্যাম্পারকে কানে কানে বলেছিলেন, ‘এই ক্লাসশেষে আমরা ঘুরতে বের হবো।’ যাকে বলা হয়েছিল, তার দায়িত্ব ছিল কথাটা পাশেরজনের কানে বলা, পাশেরজন আবার বলবে তার পাশেরজনকে। তো, এই কথা যখন গোটা ত্রিশেক ক্যাম্পারের কান ঘুরে সামনেরজনের কাছে আসলো, এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হল কথাটা কী ছিল—সে বললো, ‘মাছ!’
বুদ্ধের জীবনকালে, কিংবা তার পরবর্তী দু-একশো বছরেও তার বাণীর কোনো লিখিত দলিল পাওয়া যায় না। তার সংঘের সন্ন্যাসীরা মুখে মুখেই বুদ্ধের বাণী প্রচার করতেন—যদি দশ-কান হবার পরেও বাণীগুলো লেখা হয়ে থাকে—এবং আমি যদ্দূর জানি, সবচেয়ে আদি যেসব লেখা পাওয়া যায় ওগুলো পালি ভাষার—সেই ভাষা থেকে কয়েকবার অনূদিত হয়ে বাংলায় আসার পর আমরা যখন বাণীগুলো পড়ছি—সেসব আসলে কতখানি বুদ্ধের, আর কতখানি মধ্যবর্তী মানুষদের—সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সলিমুল্লাহ খান অবশ্য ভালো বলেছেন—আমরা এ বইতে বুদ্ধের বাণীর চেয়ে বরং আতিকুজ্জামান সাহেবের হৃদয়বুদ্ধের কথা শুনছি।
সেও তো কম সুন্দর না!
“আপন দূরদর্শিতার বলে সে তাহার মুক্তির সন্ধান পাইয়াছে: তাহার চিন্তা শান্তি তাহার কথা শান্তি তাহার কর্ম শান্তি।”
কিছু কিছু বই পড়লে আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খায়, তা হলো, বইটা আর কয়েক বছর আগে পড়লে কেমন লাগতো আমার। এটা সেরকম একটা বই। অন্তত কিছুদিন পরে আবার পড়ে দেখতে পারবো কেমন লাগবে! বুদ্ধের বাণী বা বৌদ্ধধর্মের বাণী নিয়ে অনেক বেশি না পড়লেও কিছু পড়েছি। তবে বাংলায় এই প্রথম। অনুবাদের ভাষা বেশ সুন্দর, আর সাবলীল, তবে বানী চয়নে হয়তো আরও কিছু বাছাই করা যেতো। একান্তই ব্যতিগত মতামত। তবে বেশিরভাগ কথাই মনে দাগ কেটে যায়, চিরসত্যের মতো। আর সব কথাই ভাবায়। মূল লেখার পাশাপাশি ডঃ সলিমুল্লাহ খানের review ও ভালোলাগার কারণ। আর বইয়ের ভীষণ সুন্দর অলঙ্করণ এর কথা অবশ্যই বলতে হয়। প্রচ্ছদ আর বাঁধাইয়ের দিকে এক ঝলক দেখেই যে প্রশান্তি আসে, প্রতি পাতায় বাণীগুলোর সজ্জা তা বাড়িয়েই চলে। ছোট বই, অনেকবার ঘুরে ফিরে চোখ বুলিয়ে যাবার মতো বই, অবশ্যই কিনে সংগ্রহে রাখার মতো বই।
এমন না যে এই বই পড়লেই আপনি বুদ্ধের হৃদয়ের সব গোপন কথা জেনে যাবেন। আবার বুদ্ধ'কে জানতেই হবে এমন কথাও নেই। সবটাই আপনার ইচ্ছা। সবকিছু বাদ দিয়ে বইপত্র নিয়ে কপচানোর সাইটে যখন আমার এই লেখা পড়ছেন, ধরে নিতেই আপনি বিজ্ঞ মানুষ। ভাল-মন্দ বোঝার জ্ঞান আছে আপনাদের।
এই বইটা খুব ছোট আকৃতির। বই থেকে তেমন কিছু একটা না বলে বরং মহামুনি অতীশ দীপঙ্করের শেষ দেশনা থেকে কয়েকটা বলি।
মনের ধরে পাহারা বসাও। রাতদিন সে যেন সৎকর্মে নিয়োজিত থাকে।
হৃদয় দিয়ে ধর্ম করলে খাদ্য আর সমৃদ্ধি আপনিই আসে।
সুখ, সমৃদ্ধি, বন্ধুত অর্জন সকলই ক্ষণিকের। এদের মায়া ত্যাগ করো।
অন্যকে দুষো না। এই জন্মের যা কিছু সুখ কিংবা যাতনা সবই যে তোমার আপন কর্মফল।
মন সায় না দিলে কর্মযোগে শামিল হয়ো না। তারচে' বিশ্রাম ভালো।
আরো অনেক আছে। সেসব না একটু কষ্ট করে খুঁজে নিবেন। এই দেশনা গুলো কোন ধর্মের না। আশা করি, আমরা সবাই আমাদের মতো করে সুখী হওয়ার চেষ্টা করবো, শান্ত থাকার আমল করবো, মৌন হবো।
" অতীতে ডুবিয়া থাকিও না ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনিও না বর্তমান মুহূর্তে মন দাও।"
শুধু মানবজাতির নয়, সমগ্র জীব ও জগতের কল্যাণেই বিমুক্তির বাণী প্রবর্তন ও প্রচার করতে গিয়ে যিনি বলে গেছেন--- " জগতের সকল প্রাণী সুখী হৌক।" বুদ্ধের এই অসীম উদার বাণীতে তিনি সত্যিই প্রতিভাত হন।
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ যে বাণী প্রচার করেছিলেন তা কোন নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্রের উদ্দেশ্যে ছিল না।
"বুদ্ধের হৃদয় " নামে বইটাতে রয়েছে সহৃদয় হৃদয়নিঃসৃত বুদ্ধবচন, যা সবগুলো একজায়গায় করেছেন আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান। যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে ইংরেজি থেকে তর্জমা করেছেন তিনি।
বইটা কি যে এক প্রশান্তির। এক বসাতে শেষ করলাম, যদিও বইটা ছোট। তবে একবার পড়ে রেখে দেবার মত নয় বইটা। মাঝে মাঝেই পড়তে হবে।
* অতীতে ডুবিয়া থাকিও না ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনিও না বর্তমান মুহূর্তে মন দাও।
* সকল কিছু বদলায়।
কিছুই না বদলাইয়া পারে না।
* খোদ আপনাকে যখন বাসনা হইতে মুক্ত করিব
আমরা তখন নির্মলতাও মুক্তিকে চিনিব।
* আমাদের জীবনে যাহা কিছু ঘটে তাহার সকলি আমরা নিজে যাহা ভাবিয়াছি বলিয়াছি কিংবা করিয়ছি তাহার ফলাফল।
কেবলমাত্র আমরাই আমাদের জীবনের জন্য দায়ী।
~ এরকম অনেক সুন্দর সুন্দর বুদ্ধের বাণী নিয়ে 'বুদ্ধের হৃদয়' বইটা। বইটা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা, কিন্তু আপনার পড়তে মোটেও খারাপ লাগবেনা। বরং কিছু কিছু কথা খুবই ভাবাবে আপনাকে।
কমলা রংয়ের মলাটে ছোট্ট সুন্দর একটা বই অথচ কত দামী কথা বলে গেছেন গৌতম বুদ্ধ। আসলে এটার কিন্তু কোন সোর্স নাই যে কথাগুলো বুদ্ধের-ই কিনা। তাও আপনার পড়তে ভালো লাগবে।
জীবন এক টুকরা মায়া একপ্রস্ত খোয়াব একখানা বুদবুদ একফালি ছায়া
চিরস্থায়ী কিছু নাই রাগ করিবার কিছু নাই বিবাদ করিবার কিছু নাই। কিছুই নাই।
বইটার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর ভাষা ও শব্দচয়ন, অনুবাদগ্রন্থের ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের শুরুতে অনুবাদকের "কৈফিয়ত" এবং বইয়ের শেষে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এর "পুনর্দৃষ্টি" - উভয় অংশের ভাষায় খুবই মুগ্ধ হয়েছি। আর অনুবাদও খুবই চমৎকার লেগেছে।
বইটির বাঁধাই, নকশা এবং Page Format অত্যন্ত মুগ্ধকর।
বইটা ছোট; এক বসায় পড়ে ফেলা গেলেও বইটা কিন্তু মোটেও একবার পড়ার জন্য নয়। এমন সুন্দর, সহজ ভাষায় অনূদিত মূল্যবান উপদেশমালা সজ্জিত বই বারবার পড়া যায়। উপহার হিসেবেও বাহুল্যবর্জিত প্রচ্ছদবিশিষ্ট এই বইটা বেশ দারুণ।
বইটার বাঁধাই, প্রচ্ছদ, খুবই সুন্দর। হাতে নিয়েই মুগ্ধ হয়ে যাওয়ার মত। সত্যিই এই কথাগুলো মেনে চলা গেলে জগত শান্তির হত!
"আর কেহ যদি ভাল কাজ নাও করে একলা আমি করিব। যদি আর সকলে মন্দ কাজ করেও একলা আমি করিব না" "অপরের রূঢ় আচরণে কিংবা তাহারা কি করিয়াছে বা কি ফেলিয়া রাখিয়াছে তাহাতে মন দিও না খোদ তুমি কি করিয়াছ আর কি কর নাই তাহাতে মন দাও " "যেহেতু সমস্ত কিছু আমাদের মনের প্রতিবিম্ব তাই আমাদের মন মারফত সমস্ত কিছুর পরিবর্তন সম্ভব "
এর চেয়ে সুন্দর বই কম হয়। ছোট ছোট বাক্যগুলো আপনাকে ভাবাবে। নতুন করে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। প্রতিটা পাতা উলটানোর আগে আপমার মন ও মস্তিষ্ক একটু থেমে যাবে। চিন্তা করবে। আমি সবচেয়ে বেশি গিফট দিয়েছি মানুষকে এই বইটা।
১৪."আর দশজন নহে খোদ আমাদের চিন্তাই আমাদের বিপদে ফেলে।"
১৫."অজ্ঞতা হইতে আসে অহমিকা অহমিকা হইতে স্বার্থপরতা স্বার্থপরতা হইতে বিরক্তি বিরক্তি হইতে রাগ রাগ হইতে ঘৃণা ঘৃণা হইতে ধ্বংস।"
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন প্রাচীন ভারতের এক ধর্মগুরু এবং তাঁর দ্বারা প্রচারিত ধর্ম বিশ্বাস ও জীবন দর্শনকে বৌদ্ধ ধর্ম বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা তাঁর জীবনকথা ও শিক্ষা লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর শিক্ষাগুলি প্রথম দিকে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় চারশো বছর পর এগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়।
গৌতম বুদ্ধের পিতা ছিলেন রাজা শুদ্ধোদন আর মাতা ছিলেন মায়াদেবী। মায়াদেবী কপিলাবস্তু থেকে পিতার রাজ্যে যাবারপথে অধুনা নেপালের অন্তর্গত লুম্বিনি গ্রামে বুদ্ধের জন্ম দেন। তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে মায়াদেবীর জীবনাবসান হয়। পরে তিনি বিমাতা গৌতমী কর্তৃক লালিত হন। জন্মের পঞ্চম দিনে রাজা ৮ জন জ্ঞানী ব্যক্তিকে সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ ও ভবিষ্যৎ বলার জন্য ডাকেন। তাঁর নাম দেয়া হয় সিদ্ধার্থ – যে সিদ্ধিলাভ করেছে বা যার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, রাজকুমার একদিন সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে যাবেন এবং বোধিপ্রাপ্ত হবেন।বুদ্ধের বিবাহ সম্বন্ধে দু-ধরণের মত আছে। প্রথম মত অনুসারে ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর স্ত্রীকে লাভ করেন। আর একটি মত অনুসারে ২৮ বছর বয়সে তাঁকে সংসারের প্রতি মনোযোগী করার জন্য তাঁর পিতা-মাতা তাঁকে রাজকন্যা যশোধরার সাথে বিবাহ দেন।
কথিত আছে, একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ বেড়াতে বের হলে ৪ জন ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রথমে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অতঃপর একজন অসুস্থ মানুষ, এবং শেষে একজন মৃত মানুষকে দেখতে পান। তিনি তাঁর সহিস চন্নকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, চন্ন তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে এটিই সকল মানুষের নিয়তি। একই দিন কিংবা অন্য একদিন তিনি দেখা পেলেন একজন সাধুর, যিনি মুণ্ডিতমস্তক এবং পীতবর্ণের জীর্ণ বাস পরিহিত। চন্নকে এঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন উনি একজন সন্ন্যাসী যিনি নিজ জীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের দুঃখের জন্য। রাজকুমার সিদ্ধার্থ সেই রাত্রেই ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র, পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন। সিদ্ধার্থের এই যাত্রাকেই বলা হয় মহানিষ্ক্রমণ। তার মানে মানুষের বৃদ্ধ হওয়া, অসুস্থ হওয়া, মৃত্যু হওয়া, এবং সন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে বুদ্ধের কোনো ধারণা ছিল না। তিনি এগুলো জানতে পেরেছেন চন্ন নামের এক ব্যক্তি থেকে। দুঃখ ও দুঃখের কারণ সম্বন্ধে জানতে সিদ্ধার্থ যাত্রা অব্যাহত রাখেন। প্রথমে তিনি আলারা নামক একজন সন্ন্যাসীর কাছে যান। তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তিনি যান উদ্দক নামক আর একজনের কাছে। কিন্তু এখানেও কোনো ফল না পেয়ে কিছু দিন যাবার পর তিনি মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে গমন করেন। সেখানে প্রথমে একটি উত্তর-পূর্বমুখি শিলাখণ্ডের উপর বোধিসত্ত্ব জানু পেতে বসে আপন মনেই বলেছিলেন যে, "যদি আমাকে বুদ্ধত্বলাভ করতে হয় তা হলে বুদ্ধের একটি প্রতিচ্ছায়া আমার সম্মুখে দৃশ্যমান হোক।" এই কথা উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শিলাখণ্ডের গায়ে তিন ফিট উঁচু একটি বুদ্ধের প্রতিচ্ছায়া প্রতিফলিত হলো। বোধিসত্ত্ব তপস্যায় বসার পূর্বে দৈববাণী হয় যে, "বুদ্ধত্ব লাভ করতে গেলে এখানে বসলে চলবে না; এখান থেকে অর্ধযোজন দূরে পত্রবৃক্ষতলে তপস্যায় বসতে হবে।" এরপর দেবগণ বোধিসত্ত্বকে সঙ্গে করে এগিয়ে নিয়ে যান। মধ্যপথে একজন দেবতা ভূমি থেকে একগাছা কুশ ছিঁড়ে নিয়ে বোধিসত্ত্বকে দিয়ে বলেন যে, এই কুশই সফলতার নিদর্শন স্বরূপ।
বোধিসত্ত্ব কুশগ্রহণের পর প্রায় পাঁচ শত হাত অগ্রসর হন এবং পত্রবৃক্ষতলে ভূমিতে কুশগাছটি রেখে পূর্বমুখী হয়ে তপস্যায় বসেন। কঠোর সাধনার ফলে তাঁর শরীর ভেঙ্গে যায়। কিন্তু এ তপস্যায় তিনি ভয়, লোভ ও লালসাকে অতিক্রম করে নিজের মনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সক্ষম হলেন। সহসা তিনি বুঝতে পারলেন এভাবে বোধিলাভ হবে না। তিনি তাই আবার খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। অবশেষে কঠোর তপস্যার পর তিনি বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হলেন। তিনি দুঃখ, দুঃখের কারণ, প্রতিকার প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলেন। এ ঘটনাটিই বোধিলাভ নামে পরিচিত। আক্ষরিক অর্থে "বুদ্ধ" বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে "বোধি" বলা হয়।
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। এটাকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া, বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। এ-সম্বন্ধে বুদ্ধের চারটি উপদেশ (Four Noble Truths) যা আর্যসত্য বা চতুরার্য সত্য নামে পরিচিত। বলা হচ্ছে দুঃখ একটি বাস্তবতা – যা বুদ্ধের আগেও সবারই জানার কথা। এই দুঃখের কারণ হচ্ছে কামনা-বাসনা-বন্ধন। সকল প্রকার কামনা-বাসনা-বন্ধন থেকে মুক্তি লাভই হচ্ছে নির্বাণ। এগুলোকেই বুদ্ধের চারটি উপদেশ তথা "Four Noble Truths" বলা হয়।
বুদ্ধ পরকাল সম্বন্ধেও অনেক কিছুই বলে গেছেন। পরকাল নির্ভর করে মানুষের ইহ জন্মের কর্মের উপর। মৃত্যুর পর মানুষ ৩১ লোকভূমিতে গমন করে। এই ৩১ লোকভূমি হছে ৪ প্রকার অপায়: তীর্যক, প্রেতলোক, অসুর, নরক। ৭ প্রকার স্বর্গ: মনুষ্যলোক, চতুর্মহারাজিক স্বর্গ, তাবতিংশ স্বর্গ, যাম স্বর্গ, তুষিত স্বর্গ, নির্মানরতি স্বর্গ, পরনির্মিত বসবতি স্বর্গ। ১৬ প্রকার রুপব্রহ্মভূমি। ৪ প্রকার অরুপব্রম্মভূমি। মোট ৩১ প্রকার। এই ৩১ প্রকার লোকভুমির উপরে সর্বশেষ স্তর হচ্ছে নির্বাণ (পরম মুক্তি)। যেমন: ইহজন্মে মানুষ যদি মাতৃহত্যা, পিতৃহত্যা, গুরুজনের রক্তপাত ঘটায় তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ চতুর উপায়ে (তীর্যক, প্রেতলোক, অসুর, নরক) জন্মগ্রহণ করে, আর ইহজন্মে মানুষ যদি ভালো কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর সেই মানুষ বাকি ২৮ লোকভূমিতে গমন করে। ত্রিপিটক হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মীয় পালিগ্রন্থের নাম। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়। পিটক শব্দের অর্থ ঝুড়ি যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষণ করা হয়। খ্রীষ্টপূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল বুদ্ধের পরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্দে। প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়।
বৌদ্ধ ধর্মে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার কোনো ধারণা নাই। বলা হয়ে থাকে বুদ্ধও নাকি স্রষ্টার প্রশ্নে নীরব ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ধর্মগ্রন্থকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করা হয় না। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মাথায় রেখে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসীদের প্রতি কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন রাখা হলো (কোনো প্রকার আক্রমণ বা হেয় অর্থে নয়):
- বৌদ্ধরা জন্মান্তরবাদ তথা কর্মের উপর ভিত্তি করে জন্ম-মৃত্যু'র চক্রে বিশ্বাস করে। তাদের এও বিশ্বাস যে, গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে গৌতম বুদ্ধ কী করে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তিনি সত্যি সত্যি নির্বাণ লাভ করেছেন? বৌদ্ধ ধর্মে অনুসারীরাই বা কীসের উপর ভিত্তি করে তা বিশ্বাস করে। গৌতম বুদ্ধের পর আর কেউ নির্বাণ লাভ করেছেন কি-না?
- মানুষের কর্মের উপর ভিত্তি করে পুনঃ পুনঃ জন্ম-মৃত্যু হবে কি-না – কেউ নির্বাণ লাভ করবে কি-না – এগুলো কে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে?
- গৌতম বুদ্ধের সামনে শিলাখণ্ডের গায়ে তিন ফিট উঁচু একটি বুদ্ধের প্রতিচ্ছায়া কীভাবে প্রতিফলিত হলো, দৈববাণী এবং দেবগণ কোথা থেকে এলো, আর গৌতম বুদ্ধ জ্ঞান লাভই বা করলেন কোথা থেকে? - স্বর্গ, নরক, অসুর, প্রেতলোক, ইত্যাদির অবস্থান কোথায় এবং এগুলোকে কে সৃষ্টি করেছে?
- বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী খুনি, ধর্ষক, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, ও অন্যান্য বড় বড় অপরাধী যারা ইতিমধ্যে মারা গেছে তাদের বিচার ও তদনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা কে ও কীভাবে করবে? তাদের হাতে যারা বলি বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরই বা কী হবে? তারা কি কখনোই ন্যায়বিচার পাবে না? কে ও কীভাবে তাদের ন্যায়বিচার করবে?
- জীব হত্যা মহা পাপ – ভাল কথা। কিন্তু কেউ এই মহা পাপ করে ফেললে বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী তার কোনো বিচার বা শাস্তির ব্যবস্থা আছে কি-না? বি.দ্র: উপর্যুক্ত তথ্য সূত্র "এই সময় পত্রিকা হতে সংগৃহীত।"
বই কথন : “ বুদ্ধের হৃদয় ” লেখক : আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ( অনুবাদক ) রেটিং : ৯.৭/১০
" জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক " আজ হইতে আড়াই হাজার বছর পূর্বে বৌদ্ধধর্মের ২৮তম বুদ্ধ, গৌতম বুদ্ধ যে বাণী প্রসিদ্ধি করিয়াছিলেন তাহা কোন নির্দিষ্ট স্থান,কাল কিংবা পাত্র উদ্দেশ্যে ছিল না । মানব জীবনের পূর্ণতা ই ছিলো কেবল একমাত্র লক্ষ্য । বুদ্ধ এই লক্ষ্যে যাত্রার পন্থা দেখাইয়া গিয়াছেন। বুদ্ধের বাণীর ভাষ্যমতে, তিনি তাহার বাণী মাধ্যমে কোনো ধর্মীয় জাতি প্রতিষ্ঠা করিবার চাননি । আমরা মানব জাতি আদিম রিপুর লুপের মধ্যে রইয়া গিয়াছি। সকলেই লোভ,ক্রোধ,হিংসা,মোহ,ঘৃণা প্রভৃতি রিপু দ্বারা পূর্ণতার লক্ষ্য হইতে দূরে রইয়া গিয়াছি। আত্মশুদ্ধি ও প্রাণীর প্রকৃত সুখের উদ্দেশ্যে বুদ্ধের কিছু অক্ষয় বানী স্থান য়ইয়াছে এই বইখানাতে। বি:দ্র: আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান খুবই সাবলীল্ বাংলা ভাষায় আমাদের কাছে এই বাণীগুলো এই ছোট্ট সুন্দর বইয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু বাণী আমি এখানে টুকে দিচ্ছি,
❀ তোমার ভালবাসা ও মমতা পাইবার হক,সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আর কেহ যতটা রাখে ঠিক ততটা হকদার,তুমি নিজে। ❀ অতীতে ডুবিয়া থাকিও না,ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন বুনিও না,বর্তমান মূহুর্তে মন দাও। ❀ জাগরণ স্বাভাবিক,বিভ্রম নহে ।
'জীবন এক টুকরা মায়া একপ্রস্ত খোয়াব একখানা বুদবুদ একফালি ছায়া।
চিরস্থায়ী কিছু নাই রাগ করিবার কিছু নাই বিবাদ করিবার কিছু নাই। কিছুই নাই।'
এবং এমন আরো অনেক।
বইটা খুলে বসতে না বসতেই শেষ হয়ে যাবে। ভাগ্য ভাল হলে চৈত্রের দুপুরে এক বুক পিপাসা নিয়ে বাড়ি ফিরে মাটির সরায় রাখা শীতল পানির এক গ্লাস শেষ করার পরে যে অনুভূতি হয়,তা পাওয়া যেতে পারে। পিপাসা কিছুটা মিটবে,তবে তৃপ্তি পুরোপুরি হবেনা,আরো গ্লাস দুয়েক খেতে মন চাইবে। এমন বই বারবার শেষ করেও ঠিক যেন শেষ হয়না,মনে হয় আরেকটাবার..
This book contains words of wisdom making you into a Buddha or enlightened one. This book is very applicable to your everyday life even though the words it contain are said or written thousands of years ago. Everyday, I still seek enlightenment, I still seek learning and knowledge. I am very grateful to my seatmate that gave me this book. It is for free and I never did anything to her except that I talked about how interested I am into Buddhism lol. Bless her soul.