জন্মযান ও তিমিরের হার্লেম পনেরো বছরের ব্যবধানের দুটি আখ্যান ধরা থাকল এই সংগ্রহে। একজন খুঁজেছিল নিজস্ব বিছানা, শোয়ার ঘর, শহর। অন্যজন নদী পেরিয়ে পৌঁছাতে চেয়েছিল পিতৃ পুরুষের দেশে। শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকল এলোমেলো কিছু স্বপ্নের হাড়গোড়। কুয়াশাচ্ছন্ন রাত জুড়ে শুধু শোনা যায় কয়েকটি নদীর কান্না, স্বদেশের পাঁজর ভাঙার শব্দ।
রবিশংকর বল পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৬২ সালে। বিজ্ঞানে স্নাতক। ২০১১ সালে দোজখনামা উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন।
গল্পগ্রন্থ দারুনিরঞ্জন রবিশঙ্কর বল এর গল্প আর্তোর শেষ অভিনয় জীবন অন্যত্র ওই মণিময় তার কাহিনী সেরা ৫০ টি গল্প
উপন্যাস নীল দরজা লাল ঘর পোখরান ৯৮ স্মৃতি ও স্বপ্নের বন্দর পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন মিস্টার ফ্যান্টম বাসস্টপে একদিন মিলনের শ্বাসরোধী কথা নষ্টভ্রষ্ট এখানে তুষার ঝরে দোজখনামা আয়নাজীবন আঙুরবাগানে খুন জিরো আওয়ার
কবিতা ত্রস্ত নীলিমা ঊনপঞ্চাশ বায়ু
প্রবন্ধ সংলাপের মধ্যবর্তী এই নীরবতা কুষ্ঠরোগীদের গুহায় সংগীত মুখ আর মুখোশ জীবনানন্দ ও অন্যান্য
সম্পাদিত গ্রন্থ সাদাত হোসেইন মন্টো রচনাসংগ্রহ
জাহিদ সোহাগ : মানে আমি বলছি এই কারণে যে, আমাদের বাংলাদেশে রবিশংকর বলকে চেনা হচ্ছে দোজখনামা দিয়ে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখবেন? মানে এখানেও একটা ট্যাগ আছে। রবিশংকর বল : এটা বলা কঠিন, তবু যদি বলো তবে আমি বলব, আমার "মধ্যরাত্রির জীবনী" উপন্যাসটা পড়া উচিত, "বাসস্টপে একদিন" উপন্যাসটা পড়া উচিত, "এখানে তুষার ঝরে" উপন্যাসটা পড়া উচিত। "স্মৃতি ও স্বপ্নের বন্দর", "ছায়াপুতুলের খেলা" অবশ্যই। এই কটা লেখা অন্তত। আর "পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন" এই লেখাটা।
"ঘর ও দেশ খোঁজার অনির্দেশ্য যাত্রা" ধরা আছে "জন্মযান(৩/৫)" ও "তিমিরের হার্লেম(৪/৫)" এ। জন্মযানের অবনী দত্ত বাংলাদেশে আসে পিতৃপুরুষের ভিটার খোঁজে। অন্যদিকে তিমির খুঁজে ফেরে ঘর, একান্ত নিজের একটি বিছানা। অবনীর যাত্রা কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে বরিশাল; তার বাবা মায়ের স্মৃতি হারানোর গল্প মিশে থাকে এতে, মিশে থাকে আর্তনাদ। কিন্তু অস্ফুট আর্তনাদ ঠিকঠাক ভাষা খুঁজে পায় না লেখকের হাতে। রবিশংকরের স্বভাববিরুদ্ধ আবেগীয় মোচড় অবনীর কষ্টের তীব্রতা বুঝতে বাঁধা দেয়। অন্যদিকে তিমির ও তার শহর, তার পরিপার্শ্ব, সুতপা, সরোজিনী মিলে তৈরি করে এক গোলকধাঁধার যেখানে নদী নেই। তিমির জানে "নদী মরে গেলে তো মানুষ হিংস্র হয়ে যায়, মানুষের একা একা দাঁড়ানোর কোনো জায়গা থাকে না।" নদীহীন, শুশ্রূষাহীন নগরক্লান্ত জীবন থেকে মুক্তি নেই। তাই তিমির বেছে নিয়েছে শান্ত আত্মসমর্পণ ও নিজের একটা ভুবন। যদিও এ যাত্রার গন্তব্য নেই। শেষমেশ শুধু স্বপ্নের হাড়গোড় পড়ে থাকাই নিয়তি। কিন্তু আমাদের গল্পের শুরু নেই, শেষ নেই। যাত্রাপথটাই আসল, যেখানে আমরা বলবো,
"আমার বুকের মধ্যে একটা কাগুজে পাখি বলছে এখনো চুমুর ঋতু আসেনি।"
সেই ঋতুর অপেক্ষায় থাকা মানুষ ও তার যাত্রাই রবিশংকরের অন্বিষ্ট।