আজকের প্রজন্ম ভুলে গিয়েছে মুক্ত বাতাসের দৌড়ানো, তারা জানে না ঝুম বৃষ্টিতে কাদা পানি চুবিয়ে ফুটবল খেলার আনন্দ, বর্ষাকালে নদী-পুকুরে ডুব দিয়ে এক ভিন্ন দেশে যাওয়ার বিনোদন। যে কচি বয়সটা ছিল প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার, সেই বয়সটা এখন গ্রাস করে ফেলেছে কিছু ইলেক্ট্রিক ডিভাইস। প্রযুক্তি এবং মর্ডানাইজেসন আমাদেরকে যতটা কল্যাণের পাশাপাশি অকল্যাণ বয়ে এনে, তার মধ্যে এটি একটা। ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রিনে ডুবে থাকা শিশুটা হারিয়ে ফেলে চাঞ্চল্য স্বভাব। এই দিকে শপিং মলের রঙবেরঙের চোখ ধাঁধানো কাপড়ের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে মেয়ে শিশুটি! মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যার উদ্ভব, তা আজ বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। যুব সমাজের দ্বীন নষ্ট করার কারণ হয়েছে। সংসার ভাঙার কারণ হচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিত্বকে আজ কন্ট্রোল করছে এই ইন্ডাস্ট্রিগুলো।আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ফকিহ, শায়খ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ এই দিককে সামনে রেখেই দিয়েছেন অসাধারণ কিছু নসিহত। যা শিশু-যুবকদেরকে গেম নামক নেশা থেকে বেড়িয়ে আনতে সহায়ক হবে এবং প্রডাক্টিভ করবে, নারী থেকে শুরু করে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে সবার জন্য উত্তম নসিহত এবং কর্মপন্থায় ভরপুর একটি বই এটি।
একজন প্রথম শ্রেনীর ইসলামিক স্কলারযে কত রকমের জ্ঞান রাখে তার প্রমান এই বইটি। সাধারনত আমরা যখন কোন ইসলামিক আলেম বা স্কলারের কথা শুনি তখন তাকে মনে হয় তার যেন কুরআন হাদিসের বাইরে তেমন জ্ঞান নেই কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করলে আমরা দেখব অধিকাংশ প্রথম শ্রেনীর ইসলামিক স্কলারেরা অন্যান্য জ্ঞানও যথেষ্ট ভাল রাখেন আর এখানেই প্রথম শ্রেনীর ইসলামিক স্কলারদের সাথে সাধারন স্কলারদের পার্থক্য। সালেহ আল মুনাজ্জিদ একজন বিশ্বখ্যাত স্কলার। তিনি খুব সুন্দর ভাবেই এই বইতে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আধুনিক জুগে কমার্শিয়াল জগত যেমন গেমস, শপিং কমপ্লেক্স এর প্রভাব একজনের চিন্তাধারাকে কতটা প্রভাবিত করে অইসলামিক বিশেষ করে পশ্চিমা চিন্তাধারায় ডুবিয়ে ফেলে এবং একই সাথে একজন কিভাবে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে ছিটকে পরে। লেখক কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ ব্যাপারগুলো কতটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তাও ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষ করে তরুণদের জন্য বইটি অনেক শিক্ষণীয়।
সাধারণত গেমসের ক্ষতিকারক দিক বর্ণনা করতে গেলে বলা হয় যে গেম মানুষকে ভায়োলেন্ট করে দেয়৷ কিন্তু এই যুক্তি আমার নিজের কাছেই হাস্যকর মনে হয়৷ বাস্তবে গেমসের ক্ষতিকর দিকগুলি এর চেয়েও মারাত্নক যা আমার ভাবনাতেই আসেনি৷ যদিও বইটা লেখা হয়েছে ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে, গেমসের এই বাজে প্রভাবগুলি যে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই সমান ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনে৷