মাসকয়েক আগের কথা। একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। বিবরণ নয়, আমাকে আকৃষ্ট করেছিল ছবিটা। সদ্যোজাত এক শিশুর দিকে এগিয়ে এসেছে দু'টি রক্তমাখা নখরযুক্ত হাত। ছবিটার দিকে তাকালেই বুক কেঁপে ওঠে আশঙ্কায়। কী হবে ওই শিশুটির? হরর, বা ভয়ের গল্পের মূল আকর্ষণই হল এই আশঙ্কা। কখনও তা আসে নিজেকে নিয়ে, কখনও সন্তান-পরিবার-পরিজনকে নিয়ে। কখনও তা আসে মানবজাতির কথা ভেবে। আলোচ্য কাহিনি দুই মহাবল অলৌকিক শক্তির মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। এর উপজীব্য বড়োই জটিল। তার ওপর ন্যারেটিভ অসরলরৈখিক। ঘটমান বর্তমান জ্ঞানে যা পড়ছি তা আসলে অনেক আগে ঘটে গেছে। যে আছে বলে ভাবছি, সে যে কোথায় আছে তা বোঝা সহজ নয়। উভয় শক্তিই নৃশংস, এবং মানবতা বা নৈতিকতার ধরাবাঁধা সংজ্ঞার বাইরে। তাদের আচরণ আমাদের ধাক্কা দেয়, ভয় দেখায়, বিমূঢ় করে ভাবায়, এই যুদ্ধে ভালো বা মন্দ বলে কি আদৌ কিছু আছে? আর এই সাংঘাতিক পাশাখেলা, বা সাপলুডোয় ঘুঁটি হয়ে যায় বোলপুরের উপাধ্যায়বাড়ি, শীতের ছুটি কাটাতে সেখানে আসা দুই বোন, আর ওই গ্রামের এক ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। তার আশেপাশেই ঘটতে থাকে নানা রহস্যজনক ঘটনা আর মৃত্যু। ঠিক কী ঘটছে এখানে? এই ঘটনার সঙ্গে কি কোনো সম্পর্ক আছে দেবী দিক্করবাসিনীর? রৌম্য কারা? ভৈরবই বা কে? আর সব কথার শেষ কথা, কী হতে চলেছে প্রচ্ছদে চিত্রিত ওই নবজাতকের পরিণতি? আগেও বলেছি, আবারও বলছি। এই গল্প আনপুটডাউনেবল হলেও সহজ নয়। এও বলি, প্রথাগত তান্ত্রিক হরর পড়তে চেয়ে এই বইয়ে ডুবলে বিপদ আছে। কেন? (১) বাংলা সাহিত্যে, আমার জ্ঞানত, এই প্রথম তন্ত্র যে আসলে একটি পোর্টাল, সেই ধারণাটিকে কোনো কাহিনিতে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হল। শক্তিক্ষেত্রের ভৌগোলিক অবস্থান তথা জ্যামিতিক প্রক্ষেপণকে কাজে লাগিয়ে এই বইয়ে কিছু স্থান ও কালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তন্ত্রের এই তুলনামূলকভাবে দুর্জ্ঞেয় অংশটি এর ফলে যেভাবে ফুটে উঠেছে, তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। (২) এই কাহিনি পুরোপুরি প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের জন্য। এতে যৌনতা বা শরীরের উল্লেখ ঠিক সেভাবেই ঘটেছে যা তান্ত্রিক অভিচারে প্রযোজ্য, কিন্তু যার সঙ্গে আমাদের চেনাজানা ইরোটিক বিবরণের মিল নেই। অর্থাৎ শরীর এখানে একটা মাধ্যম বা আধার মাত্র। কিন্তু যে মুহূর্তে কোনো সম্পর্ক শরীর ছাড়িয়ে দেহাতীত আকার নিয়েছে, তখনই এই কাহিনি বিস্ফোরক স্পাইরালের আকারে কেন্দ্রীয় দুটি শক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পড়তে গিয়ে আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বলশালী কলমের অধিকারীদের একজন, শ্রী অভীক সরকার-এর লেখা একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে~ "ভালোবাসাই সবচেয়ে বড়ো তন্ত্র।"
এই কাহিনির দুর্বলতা কী-কী? প্রথমত, লেখকের লেখনী এখনও 'ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস' অবস্থায় আছে। একে তো গল্পটা রীতিমতো জটিল। তায় এতে গল্প, কিংবদন্তি, হিসেব-নিকেশের সঙ্গে মিশেছে বিশ্বাস, অবিশ্বাস, ভয়, সন্দেহ, কুসংস্কার, আবার কল্পনাতীত নিষ্ঠুরতা। ভাষাটা কিঞ্চিৎ কাঠ-কাঠ থেকে যাওয়ায় পড়ার অভিজ্ঞতা সবসময় সুখদায়ক হয়নি। মাঝেমাঝেই ছন্দপতন ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, এটা হররের সঙ্গে ফ্যান্টাসিকে যেভাবে মিশিয়েছে তা প্রশংসনীয় হলেও গোলমেলে। এতে যে-সব রূপক ও চিত্রকল্প এসেছে তাতে উইচার থেকে শুরু করে অনেক ঘরানা ছায়াপাত ঘটিয়েছে। লেখক এই ককটেলটি সযত্নে সামলেছেন। দুর্বল কলম এই জিনিস অনুসরণ করলে অখাদ্য-কুখাদ্যে বাজার ছেয়ে যাবে। তৃতীয়ত, কাহিনি এখানে শেষ হয়নি। গল্প যেখানে ও যেভাবে থেমেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে লেখক আমাদের সবাইকে বলছেন, "পিকচার অভি বাকি হ্যায় দোস্ত।" উপন্যাসের শেষে এমন "অন্তরে অতৃপ্তি রবে" ভাব জাগলে আমার অন্তত পিত্তি চটকে যায়।
পাঠকদের কাছে অনুরোধ, এই রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারটিকে প্রাণভরে উপভোগ করুন। আপনারা বইটা দনাদ্দন কিনে নিলে লেখক "বাকি পিকচার" প্রদর্শনে হয়তো আগ্রহী হবেন। বইটির মুদ্রণ সর্বার্থে প্রশংসনীয়। কয়েকটি অনভিপ্রেত বানান ভুল ছাড়া খুঁত ধরার মতো কিছু পেলাম না। লেখক যে পাঠকদের জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি সম্মান দিয়েও লেখাটিকে গড়েছেন তার প্রমাণ বইয়ের শেষে দেওয়া গ্রন্থপঞ্জি। আগ্রহী পাঠক সেটি অনুসরণ করে নিবিড় পাঠে উদ্যোগী হবেন নিশ্চয়। সব মিলিয়ে বলতেই হয়, যদি আপনি কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে প্রেম-পরকীয়া-যৌনতা নামক পারম্যুটেশন-কম্বিনেশন থেকে নিজেকে বের করে আনতে চান, তাহলে 'কালসন্দর্ভা' পাঠ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। পাঠ শুভ হোক।
রেটিং:4½ এক ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় হেব্বি পিটুনি খেয়ে পাঁচ মাস হসপিটালে থাকে। তো এই প্রেমিকই হচ্ছে গল্পের প্রোটাগনিস্ট তৌফিক।
দারুণ বই! এইটার সিকুয়েল আসবে বা আসা উচিত। যদি সিরিজ হয়ে আসে তো প্রথম বই হিসেবে খুব ভালোভাবেই উতরে গেল। গল্পের প্রধান চরিত্র থেকে ভিলেন সবার ক্যারেক্টারাইজেশন দারুণ দক্ষতায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
আর লেখিকা ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে নিজস্ব যে পৃথিবী তৈরি করেছেন…..সেটাকেও দারুণ লাগল। গল্পের এন্ডিংটা আমার ভালো লেগেছে। তৌফিককে এসপার কি ওসপার সিচুয়েশনে নেওয়ার জন্য লেখিকা কে ধন্যবাদ। এতে চরিত্রটি আরও শক্তিশালী হল।
আর সবচে' যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে, লেখিকা বিস্তর পড়ালেখা,পরিশ্রম আর গবেষণা করে বইটা লিখছেন। তৌফিক বিরাট জ্ঞানী কিন্তু ওর মুখ দিয়ে লেখিকা যত্রতত্র জ্ঞানের বুলি ছড়িয়ে দেন নি। বরং যতোটুকু দিয়েছে তা লেখিকার নিজের গবেষণার ফল। কোনো বই থেকে কপি-পেস্ট করে তুলে দেয়া না।
আমি বইটা নিয়ে স্যাটিস্ফাইড। বাংলা সাহিত্যে তন্ত্রসাধনা নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। অন্তত আমার পড়া বইগুলোর মধ্যে এই বইটাই এখন পর্যন্ত তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে লেখা বেস্ট থ্রিলার। সিকুয়েলের অপেক্ষায় রইলাম।
অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তাঃ তৌফিকের বয়স একুশ বছর এবং এই বয়সেই ওর দিল্লীতে খুব ভালো একটা চাকরি হয়ে যায়। এছাড়া ওর সহপাঠী এক বন্ধুও পুলিশের বড় পদে চাকরি করে। ভারতে কি লোকজন একুশের আগেই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে চাকরিতে লেগে যায়?🤔
অনেক দিন পর রাত জেগে একটা বই পড়ে শেষ করলাম। মানে হল, বইয়ের শেষ অংশ টা এতোটাই টান টান উত্তেজনা ছিল যে রাত ৪ টা পর্যন্ত জেগে শেষ করেছি বইটা। লেখিকার লেখনী দারুন। প্রথম দিকে একটু স্লোলি কাহিনী টা আগিয়েছে, ১৫০ পেজ পর্যন্ত কাহিনীর তেমন কিছুই হয় নি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছিল গল্পটা কিন্তু তারপর পুরাই রোলার কোস্টারের মত তর তর করে আগাতে লাগল কাহিনী। লেখিকা মোটেও গাজাখুরে গল্প ফাদে নি, সে রীতিমতো পড়াশুনা করে লিখতে বসেছে এই কাহিনী। তন্ত্র, মন্ত্র, হিন্দু পুরান, ফ্যান্টাসি, লৌকিক,অলৌকিক, আরবান ফ্যান্টাসি সব আছে এই গল্পে! অসাধারণ লেগেছে "কালসন্দর্ভা"। গল্পের প্রটাগোনিস্ট " তৌফকের" চরিত্রটা জোস প্রেমে পড়ার মত। তবে গল্পের এন্টাগোনিস্ট কে হবে তা আগেই প্রেডিক্ট করে ফেলেছিলাম। যদিও লেখিকা চেষ্টা করেছে থ্রিল ধরে রাখতে। আর যেভাবে শেষ করেছে গল্পটা, এটার সিকুয়েল আসলেও অবা�� হব না। প্রথম উপন্যাস হিসেবে লেখিকা বেশ ভালো লিখেছেন, এই জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।
সে অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল নরমাংসপ্রিয় দেবী দিককরবাসিনী। তার অনুচর রৌম্য পিশাচেরা যখন মানুষজন সব খেয়ে সাফ করতে লাগলো তখন স্বর্গ থেকে নেমে এলো ভৈরবের দল, এক ধুন্ধুমার লড়াই শেষে রৌম্যরা পরাজিত হলো। তবে হ্যাঁ, কোন মহাযোগী / মহাযোগিনীর অশেষ তপস্যা আর বিশেষ কিছু রিচ্যুয়াল মেনে চললে একটি নির্দিষ্টি সময়ে জন্ম নেবে মুর্তিমান এক রৌম্য শিশু, সাক্ষাৎ রাক্ষস।
এবার চলে আসি বোলপুরের উপাধ্যায় বাড়িতে। কলকাতা থেকে কৃষ্ণা, তার বান্ধবী সালঙ্কি আর তার বোন শাম্ভবি বেড়াতে এসেছে কৃষ্ণার দাদুবাড়িতে। হঠাৎ করেই পরিবর্তন দেখা দিতে লাগলো শাম্ভবির মধ্যে, কী যেন ভর করে ওর মধ্যে! উপাধ্যায় বাড়ির সাথে জড়িয়ে থাকা তিক্ত অতীত নিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওদের সাথে জড়িয়ে পড়লো তৌফিক। এদিকে দেবি দিককরবাসিনীর একনিষ্ঠ পূজারী মহাযোগিনী কালীসিদ্ধা অপেক্ষায় রয়েছে আসন্ন চন্দ্রগ্রহণের। সব ঠিক থাকলে এই চন্দ্রগ্রহণেই জন্ম নেবে আরেক রৌম্য শিশু। পৃথিবীর বুকে পিশাচের আগমনকে ঠেকানো যাবে কি?
শেষ কবে এত দ্রুত একটা বই শেষ করেছি, কে জানে! মনে হলো পুরো জার্নিটা একটা স্বপ্নের মধ্যে, ঘোরের মধ্য দিয়ে কেটে গেলো। বইটার মূল বিষয় তন্ত্রসাধনা লেখা হলেও থ্রিলার হিসাবেও এর জুড়ি নেই। লালকমল আর নীলকমলের বন্ধুত্ব, রৌম্যপিশাচ বনাম ভৈরবের লড়াই আর বিশেষ করে মিথোলজি আর অকাল্ট যেন ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছে এই উপন্যাসে। সবমিলিয়ে অকাল্ট, থ্রিলার, মিথ আর ফ্যান্টাসির ককটেল বইটা যেকোজ বইপ্রেমিকের জন্য মাস্ট রিড। লেখিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত ব্রিলিয়ান্ট একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য। ❤❤
যারা অকাল্ট থ্রিলার পছন্দ করেন তাদের জন্যে একটা মাস্টরিড বই। এই জনরার বাংলায় এমন উপন্যাস পড়া হয়নি। আর আমার পছন্দের জনরাতেও পড়ে না এই বই। কিন্তু তবুও একবার শুরু করার পর আর রাখতে পারিনি। এমন চুম্বকীয় আকর্ষণ ছিলো প্রতিটি পৃষ্ঠাজুড়ে।
প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে আমার একটিও প্লটহোল নজরে পড়েনি। প্রতিটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার সাথে খুব যত্নসহকারে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিছু কঠিন কঠিন অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার ছিলো যেগুলোকে উপেক্ষা করলেই মনে হয় ভালো হতো। (এই অপ্রচলিত শব্দগুলো হয়তো যারা নিয়মিত এই জনরার বই নিয়মিত পড়েন তাদের কাছে পরিচিতই মনে হতে পারে। আমি একেবারেই নতুন পাঠক।)।
শুরুর দিকে একটু খাপছাড়া মনে হচ্ছিলো। কাহিনির গতিপথ অনুসরণ করতে পারছিলাম না৷ কিন্তু 4/5 চ্যাপ্টার পড়ে ফেলার পর দুর্দান্ত গতিতে এগিয়েছে গল্পের কাহিনি। চমৎকার ক্লিফেঙ্গার ব্যবহৃত হয়েছে যেটা পাঠককে বাধ্য করবে গল্পে ডুবে থাকতে।
খুব উপভোগ করেছি পুরো বইটা। লেখকের প্রথম বই এই বিষয়টা অবিশ্বাস্য! নিশ্চয়ই ছদ্মনামে আগে অনেক বই বের করেছেন 😋
একটা চমৎকার টানটান উত্তেজনাময় একটানে পড়ে ফেলা বই শেষ হলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়, মনে হয় জানলা গলে চাঁদের আলো আসতে না আসতেই গুড়গুড় শব্দে মেঘ এসে খুশির মুহুর্তটাকে রাহুর মত গ্ৰাস করে নেয়।
সত্যি বলতে বেশ অনেকটা সময় পর থ্রিলার পড়লাম, আরেকটু স্পেসিফিক করে বললে অকাল্ট থ্রিলার। অনেকদিন ধরেই মারকাট মারামারি কাটাকাটি মন্ত্র তন্ত্র পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছিলো না। দোষটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিরুচির উপর চাপিয়ে দিবো। হয়ত আগামী বছরে আরো থ্রিলার পড়া হবে। হটাৎ এই কালসন্দর্ভা নামের বইটা চোখে পড়ে গেলো। কাহিনি সংক্ষেপ আর কভার দেখেই হয়ত আগ্রহ একটু বেড়ে গেলো।
অকাল্ট হিসাবে বেশ অন্য রকমের একটা প্লট, সম্ভবত সিরিজ হবে, এইজন্য বেশ কিছু জায়গায় একটু খাপছাড়া লেগেছে। এত বড় প্লট, এত-শত এলিমেন্ট নিয়ে লেখকের প্রথম বই ! নাহ তেমন একটা দোষ দিবো না, উনি হয়ত উনার মতো করে ভাল লিখেছেন, আমারও ভাল লেগেছে, এই যে একটা কিন্তু রয়ে গেছে। আপাতত সেটা কি হতে পারে, তা নিয়ে একটু ব্যক্তিগত অনুসন্ধান দরকার বৈকি।
পাঠকদের জন্য কালসন্দর্ভা নামের গল্পটা বলি তার চেয়ে… পুরাণে কোলাসুর কে বধ করার মাধ্যমে কুমারী পূজা শুরু করা হয়। ঘটনাটা এমন কোলাসুর শক্তিলাভ করে বর্গ ও মর্ত্য দুটোই দখল নিয়ে নেয়। তখন দেবতারা ভীষণ বিপদে পড়ে মহাকালীর কাছে যায়। তখন মহাকালী পুর্নজন্ম-এ কুমারীরূপে কোলাসুর কে বধ করেন। তারপর থেকেই কুমারি পূজার শুরু। আর নয় বছরের কুমারীকে বলা হয় কালসন্দর্ভা…
ইতিহাস, মিথ, তন্ত্রসাধনা সব মিলিয়ে জমজমাট সিনেমাটিক একটা হরর-থ্রিলার। একদম টানটান উত্তেজনার একটা গল্প! তবে যেসব জায়গায় ইতিহাস, মিথ, আর বিভিন্ন তথ্য নির্ভর জায়গা ছিল ঐগুলা একটু মনোযোগ দিয়ে ধীরেসুস্থে পড়তে হয়েছে (আমি এমন তান্ত্রিক নির্ভর বই কম পড়ার কারণে হয়তো এসব শব্দ কঠিন লেগেছে এবং ঐসব ইতিহাস নির্ভর বর্ণনাও কঠিন লেগেছে অনেক জায়গায়। তবে এই জায়গাগুলো নোট করে করে পড়তে হলো, তারপর ঐসব তথ্যনির্ভর জায়গায় ব্যাক এসে আবার পড়েছি)
লেখিকার লেখার হাত ছিল ভালো। আর উনার লেখাপড়া এবং গবেষণা ও ছিল চোখে পড়ার মতো (বইয়ের শেষে উনি রেফারেন্স বইয়ের নামগুলো দিয়েছেন)। উনি এই ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে অসাধারণ একটা দুনিয়া তৈরী করেছেন। তবে গল্পের অনেককিছু বেশ ড্রামাটিক লেগেছে। তাছাড়া কমতি লেগেছে উনার ডায়লগ প্রেজেন্টেশন। আমার মতে সংলাপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ এমন ধারার ডার্ক বইয়ের জন্য। সংলাপের মধ্যে বাচ্চামি আর ড্রামাটিক গন্ধ ছিল যা আমার ভালো লাগেনি (এটা একান্ত আমার মতামত, আপনার এমন নাও লাগতে পারে)
"তান্ত্রিক ভায়া করছো কি হে? অমাবস্যার চাঁদ বনে গেলে নাকি! দে���া সাক্ষাৎ নেই কদ্দিন। তো কি নিয়ে পড়ে আছ শুনি?" বলেই বিলম্ব না করে অভ্রন্নাথ তান্ত্রিকের তক্তপোশের গোড়ায় থাকা বইটা হাতে নিলাম। কি জিনিস রে বাবা। এত রক্ত আর জিরজিরে হাতদুইটা কিভাবেই না এগিয়ে আসছে বাচ্চাটার দিকে। আহারে! প্রচ্ছদের কি ছিরি!
"হয়েছে মরণ! এই দুপুর বেলায় কি মরতে এসেছিস? দিলি তো ঘুমের দফা রফা করে!"
"আরে বাবা রাগছো কেন?" জলদি জলদি বলে চললাম, "তো বইখানা কি হে ভায়া?বে���়ে কাভার করেছে কিন্তু!" তান্ত্রিক ভায়া আমার বই পড়ার পেছনের মুল হোতা। হেন বই পাওয়া যাবে না যা তার নাই, বেড়ে পড়েও বই কি! তবে কিছু বলতে গেলেই মুখে ওই একই বুলি,"কই..পড়ি না তো!"
"ও হলো 'কালসন্দর্ভা' ওপাড় বাংলার লেখকের বই। এপাড়ে প্রকাশ করেছে ভূমিপ্রকাশ।" নেড়েচেড়ে দেখলাম মোটে ২৩৫ পেজের বই, দামও বেশি না ৩২০ টাকা। "ও তান্ত্রিক ভাই, কি নিয়ে গো বইটা?"
"তা দিয়ে তোর কি রে মিনসে?"
"আরে বলোই না!"
"শোন তবে। বইটা হলো একটা অকাল্ট থ্রিলার। অকাল্ট কি জিনিস বুঝিস তো? অকাল্ট.....
" হ্যাঁ বুঝি দাদা, এবার গল্পে...!" কথা শেষ হবার আগেই একটা রাম গাট্টা এসে পড়ল আমার দেড়মণ ওজনের দেহটায়৷ তান্ত্রিক ভায়ার এই রকম গাট্টা সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে আমি খেয়ে আসছি। ও আমার সয়ে গেছে। "ওরে আমার বিদ্যার ঢেঁকি। সব জানিস তো আসছিস কেন? এই মুখে কুলুপ এঁটেছি!"
ওর এই কপট রাগ আমার চেনা বহুদিনের। মিনিট দুই চুপ করে থাকলে নিজেই কথা বলতে আসবে। এক্ষেত্রে মৌনতা প্রগতির লক্ষণ!
"তো শোন যা বলছিলাম", এবার মিনিট খানেক যেতেই ভগবান প্রসন্ন হয়েছে," বেড়ে কথা বলতে আসবি না। যা বলছি চুপটি করে শোন। শুরু করছি বইটার টাইটেল দিয়ে। 'কালসন্দর্ভা'! জানিস কি জিনিসটা? স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে ১৯০১ সালে কুমারী পুজার প্রচলণ হয় বেলুড়ে। তন্ত্র অনুসারে ১-১৬ বছর বয়সের কুমারীকে পুজো করার কথা বলা হয়েছে। বয়সভেদে ওর নামেরও ভিন্নতা আছে। দুবছরের কুমারীর নাম স্বরস্বতী, তিন বছরের বেলায় ত্রিধামূর্তি। তেমনি নয় বছরের কুমারীর নাম "কালসন্দর্ভা" তন্ত্রমতে এর পুজা করলে ঐহিক দারিদ্র্য ও শত্রুর বিনাশ হয়। "
পুজো আর্চনা নিয়ে আমার ভাড়ে মা ভবানী। তান্ত্রিক ভায়ার তাতে কিয়দংশ চর্চা আছে। আমি অবাক হলাম না। আর তান্ত্রিক ভায়া চালিয়ে গেলেন তার কথা, "ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলোতে দ্বাদশ ত্রয়োদশ শতকে আবির্ভাব হয় কিছু তন্ত্র সাধক গোষ্ঠীর। ক্রমশ তা রাজমহলেও ছড়িয়ে পড়ে। দেবী দিক্করবাসিনীর অনুগত পিশাচবাহিনীকে জাগিয়ে তোলেছিল যোগীনিরা। আর তার সেই পিশাচবাহিণীর সাথে যুদ্ধ করে ভৈরবের দল! যদিও ঘটনা সেই সময়কার তন্ত্রসাধনার থেকে অনুপ্রাণিত তবে বইটা কিন্তু ওই শতকের আদলে করা না!"
"তবে?"
"বইটায় গল্প বলা হয়েছে এযুগের কিছু চরিত্রের। শান্তিনিকেতনের উপাধ্যায় বাড়ির সদস্য আর বাড়িতে বেড়াতে আসা কিছু মেহমানের। যাদের জীবন পুরো তোলপাড় করে রেখে দেয় কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনার। যার ব্যাখ্যা কেবলই কালো জাদু! ব্ল্যাক ম্যাজিক আর তন্ত্রসাধনা!"
"এমন বই খুব বেশি বিরল না কিন্তু। তবে এটা কেন পড়ব?" মুখ ফসকে বলে ফেললাম। জানি এবার ঝাড়ি একটা মাটিতে পড়বে না। আমার দেড়মণ ওজনের দেহটা আর কত সইবে?
"ওরে বুরবক!" বলেই আরেকটা রাম গাট্টা। যেমন চিনচিনে দেহ তেমনি তার জোর! "শোন তবে কেন পড়বি বইটা। এক, বইটাতে তন্ত্রের সাথে সাথে আছে গণিত, জ্যামিতির এক মজার তথ্যা। তা পাবি কটা বইতে শোনি? তারপর শোন রক্তের এমন সুনিপুণ ব্যবহার আর কোথাও পাবি না। মনে হবে লেখিকা যেন আস্ত রাক্ষস। শুধু রক্ত আর রক্ত! তবে মজার ব্যাপারটা কি জানিস, এই এক্সেসিভ রক্তের ব্যবহারের জন্যই তুই বইটার প্রেমে পড়বি। আর তারপর শোন কজন লেখককে দেখিস বই লেখার জন্য রেফারেন্স বই ঘেঁটে ঘেঁটে তথ্য জোগাড় করতে? "
"ইনি করেছে?"
মুখ ভ্যাঙচিয়ে তান্ত্রিকদা বলল, "ইনি করেছে? আর বলদ হাতে বই নিয়ে বসে আছিস খোলে দেখ না বাপু লাস্টের পেজটা!" খোলে দেখি তাতে বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে বেশ অনেকগুলো রেফারেন্স বইয়ের লিস্ট দেয়া। অবাক এবার আমাকে হতেই হলো! লেখিকা প্রচুর ধকল সয়ে বইটা লিখেছে ভাবতেই শ্রদ্ধাবোধ কাজ করতে শুরু করল! "তো তান্ত্রিক ভায়া, বইটা তোমার খুব মনে ধরেছে তাই না?"
"মনেরে মারি গুলি! শোন তবে বইটায় এমন কিছু আছে যেটা আসলে কোনো অকাল্ট প্রেমি কিছুতেই মিস করতে চাইবে না। আর আমার ব্যাপারটা তো জানিসই! "
"হুম তাতো জানিই। আচ্ছা বইটার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি সত্যি? বইটা কি ঐতিহাসিক কিছু?".
" ভালো প্রশ্ন তবে তার উত্তর দিতে গেলে অল্প বিস্তর স্পয়লার যে দিতে হয়৷ কি দিব নাকি? তবে শোন......!" আমি বইটা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে পাগার পাড়৷ তান্ত্রিক ভায়াকে আমার চেনা আছে৷ এর আগে কতগুলো বইতে এভাবে স্পয়লার দিয়ে আমার পড়ার মজা বানচাল করে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এযাত্রায় ওর হাতে পড়লে এই বইও গেছে৷ আমি গেইট নাগাদ পৌঁছেছি তখন তান্ত্রিক ভায়া চিৎকার করে বললো,"ওরে বুরবক! পুরোটা শোনে যাবি তো!" আমাকে আর রুখে কে!
পরিশিষ্ট : তান্ত্রিক গজগজ করে তক্তপোশে আবার গা এলিয়ে দিল। বই নিয়ে যাওয়ার জন্য না বরং ঘুম ভাঙানোর জন্য ছেলেটাকে আপনমনে বেশ কিছু গালি দিল। তারপর বেঘোরে ঘুমিয়ে গেল। খবরটা কি ছেলেটা জানে?
কাহিনি সংক্ষেপঃ আসামের এক গ্রাম্য এলাকায় নিজের মামার বাড়িতে বেড়াতে এলো কৃষ্ণা। সঙ্গে ওর বান্ধবী সোলাঙ্কী ও সোলাঙ্কীর ছোট বোন শাম্ভবী। উপাধ্যায়বাড়িতে বেড়াতে আসার পর থেকেই নয় বছর বয়সী বালিকা শাম্ভবীর মধ্যে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিলো। তার মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলো দেবী দিক্করবাসিনীর নাম।
রক্তপিপাসু দেবী দিক্করবাসিনীর সাধনা করে চলেছে যোগিনী কালসিদ্ধা। রক্তবৃত্ত তৈরি করে রৌম্যপিশাচদের আহবান জানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছে সে। হ্যাঁ, সেই রৌম্যপিশাচের দল - যারা প্রাচীন আসাম জুড়ে চালিয়েছিলো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও নরমাংস ভোজনের মহোৎসব। শেষপর্যন্ত তাদেরকে পরাস্ত করতে পৃথিবীর বুকে পা রেখেছিলো ভৈরবদের দল। আবারও কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছে কালসিদ্ধা?
তৌফিক ভালোবেসেছিলো উপাধ্যায়বাড়ি'র বড় মেয়ে লতাকে। কিন্তু এরপর বাড়ি থেকে জোর করে লতাকে বিয়ে দেয়া হয় সজ্জন স্বভাবের জয়ন্ত'র সাথে। লতা এখন গর্ভবতী। তাকে নিয়ে জয়ন্ত বেড়াতে এসেছে শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু অস্বাভাবিক স্বভাবের বালিকা শাম্ভবী একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েই চলেছে। এসবের কারণে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন উপাধ্যায়বাড়ি'র প্রধান বৃদ্ধ তারকনাথ নিজেও। নানা রকম যজ্ঞের আয়োজন চলতে লাগলো বাড়িটাকে ঘিরে।
এদিকে তৌফিকের হিসেবে একটা ভয়াবহ ব্যাপার বের হয়ে এলো। আসামের নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে অমাবস্যার রাতে সৃষ্টি হচ্ছে রক্তবৃত্ত। সেই রক্তবৃত্ত, যা তৈরি করতে প্রয়োজন হয় নরবলি'র। এ এমন এক দরজা, যা সরাসরি সংযুক্ত নরকের সাথে। রক্তবৃত্ত খুলে গেলেই বেরিয়ে আসবে রৌম্যপিশাচরা। আবারও অন্ধকারে ঢেকে যাবে চারপাশ।
এখানেই শেষ না। পৈশাচিক দেবী দিক্করবাসিনীর কৃপায় জন্ম নিয়েছে 'বীজ'। যার রক্তে উজ্জীবিত হবে, খুলে যাবে নরকের দরজা। আর এই সমস্ত কিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়ে চলেছে বহু প্রাচীন একটা গুপ্তসঙ্ঘ। ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনার ছক কষে রেখেছে তারা৷ তৌফিক কি একা পারবে ওদের সামলাতে, নাকি বহুকাল আগে তার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু নীলকমল সাহায্য করবে ওকে?
যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে সবগুলোর পেছনে একটাই কারণ। কালসন্দর্ভা। একজন মেয়ের জীবনকালের এই নির্দিষ্ট একটা সময়কে কেন্দ্র করে কেনই বা এতো পৈশাচিকতা, এতো রক্তপাত আর এতো লড়াই! উত্তরটা লুকিয়ে আছে এই দুই মলাটের মধ্যেই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'কালসন্দর্ভা'-কে অকাল্ট থ্রিলার তো বলা যায়-ই, সেই সাথে এটা একটা দারুন ফ্যান্টাসি উপন্যাস। ওপার বাংলার লেখক অঙ্কিতা'র প্রথম উপন্যাস এটা। বইটা প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন্স থেকে। পরবর্তীতে ভূমিপ্রকাশ বাংলাদেশে বইটা প্রকাশ করে৷
কাহিনির শুরুটা সাদামাটা ভাবে হলেও আদর্শ থ্রিলার উপন্যাসের মতো এতেও একটা সময়ে এসে লেগেছে গতির ছোঁয়া। বেশ একটা আধিভৌতিক আবহ তৈরি করেছেন অঙ্কিতা উপাধ্যায়বাড়িকে ঘিরে৷ আর শাম্ভবীর আচার-আচরণ পুরো ঘটনাপ্রবাহকে আরো আনপ্রেডিক্টেবল করে তুলছিলো ক্ষণেক্ষণে। এর মাঝে তৌফিক আর লতা'র প্রেমের ব্যাপারটা কাহিনি'র গতিপথটাকে কিছুটা ঘুরিয়েই দিয়েছে। আর এই ব্যাপারটা যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো উপন্যাসটার জন্য, তা যতোই এগিয়েছি ততোই ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।
অনেকগুলো চরিত্র ছিলো 'কালসন্দর্ভা'-তে। কৃষ্ণা, সোলাঙ্কী, শাম্ভবী, অচিন্ত্য, জয়ন্ত, লতা, কালসিদ্ধা, বিশু ও তারকনাথ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এক হিসেবে এই উপন্যাসের নায়ক হিসেবে আমি তৌফিককেই ধরে নিয়েছি, যে কি-না মুসলিম হয়ে একজন ব্রাহ্মণ মেয়েকে ভালোবেসেছে। আর এই ভালোবাসার কারণেই তৌফিককে ভোগ করতে হয়েছে অবর্ণনীয় নরকযন্ত্রণা। পাঠক হিসেবে তৌফিক চরিত্রটার জন্য আমার ভেতরে একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে।
অঙ্কিতা তাঁর এই উপন্যাসে প্রাচীন ডাকিনীবিদ্যা, হিন্দু মিথোলজি ও গুপ্তসঙ্ঘকে বেশ চমৎকার ভাবে একীভূত করেছেন। কোন কোন সোর্স থেকে তিনি তথ্যের সাহায্য নিয়ে 'কালসন্দর্ভা' লিখেছেন, তা উপন্যাসের শেষে উল্লেখও করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রথম উপন্যাস হিসেবে 'কালসন্দর্ভা'-এর পেছনে অঙ্কিতা'র দেয়া শ্রম বৃথা যায়নি। বেশ উপভোগ্য ও থ্রিলিং একটা উপন্যাস, তাও অসাধারণ একটা প্লট নিয়ে। তাঁর লেখার স্টাইলও আমার বেশ ভালো লেগেছে। টুইস্ট গুলোও ছিলো অবাক করে দেয়ার মতোই।
ভূমিপ্রকাশ বাংলাদেশের পাঠকদের হাতে অঙ্কিতা'র আরও বই তুলে দেবে, এমনটাই আশা করি। বইটার বাঁধাই আর কাগজের মান সন্তোষজনক ছিলো।
তৃষা আঢ্য'র করা প্রচ্ছদটা পৈশাচিক রকমের ভালো লেগেছে। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'কালসন্দর্ভা'।
We shall dive down through black abysses...and in that lair of the Deep Ones we shall dwell amidst wonder and glory forever. - H.P. Lovecraft - কালসন্দর্ভা - পৃথিবীর আদিকাল থেকে রৌম্য এবং ভৈরব নামক দুই বিপরীতধর্মী শক্তির ভিতরে চলে আসছে এক যুদ্ধ। নানা সময়ের নানা পালাবদলে এখন সে যুদ্ধজয়ের জন্য এক পক্ষ ঠিক করে এক ভয়াবহ আচার উপাচারের মাধ্যমে একটি বীজ রোপণ করবে, যা পরবর্তীতে তাদের সহায়তা করবে এ যুদ্ধজয়ে। - বোলপুরের সর্বানন্দপুর গ্রামের উপাধ্যায়বাড়ি, তিন বিঘা জমির উপর বিশাল এই বাড়িতে থাকে অচিন্ত্য, তার বাবা,মা এবং ঠাকুরদা। পৌষসংক্রান্তির ছুটিতে সেখানে বেড়াতে আসেন কৃষ্ণা, সোলাঙ্কী এবং শাম্ভবী। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও তারা জানতে পারেনা যে তারা পড়তে চলেছে এক বিশাল ষড়যন্ত্রের ভিতরে। - এখন রৌম্য এবং ভৈরবদের এ যুদ্ধের শেষ কোথায়? "কালসন্দর্ভা" আসলে কি জিনিষ? এ সব কিছুর সাথে উপাধ্যায়বাড়ির বাসিন্দাদের কি সম্পর্ক? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখিকা অঙ্কিতার লেখা অকাল্ট থ্রিলারভিত্তিক উপন্যাস "কালসন্দর্ভা"। - "কালসন্দর্ভা" মূলত তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে রচিত একটি অকাল্ট থ্রিলার। প্রথমে বইটির কাহিনী তেমন একটা ইন্টারেস্টিং না মনে হলেও আস্তে আস্তে কাহিনী আগ্রহদীপ্তক হতে থাকে। লেখিকা যে তন্ত্র, মন্ত্র, আচার - উপাচার নিয়ে বিশদ পড়াশোনা করেছেন তা পড়তে গিয়ে বেশ ভালোভাবে বোঝা গিয়েছে। তবে যেভাবে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে সে ধরনের লেখা পড়তে অভ্যস্ত নই বলে বেশ কিছু যায়গায় লেখনী কাঠখোট্টা মনে হয়েছে। আবার যে ধরনের তন্ত্র, মন্ত্র নিয়ে বইতে আলোচনা করা হয়েছে সে ব্যপারে খুব একটা আইডিয়া না থাকায় কিছু ব্যপার বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে। - "কালসন্দর্ভা" চরিত্রগুলি কাহিনী অনুসারে ঠিকঠাক, তার ভিতরে শাম্ভবী এবং তৌফিককে বেশ লেগেছে। কাহিনীর প্রয়োজনে নানা ধরনের জ্যামিতিক নকশার প্রয়োগ ভালোই লাগলো। গল্পে আদিকাল থেকে লড়তে থাকা দুই পক্ষের যুদ্ধের ইতিহাস, ভয়াবহ ক্ষমতার দেব-দেবী, উপমহাদেশের নানা ধরনের মিথ এবং রুপকথার গল্পকে মুল গল্পের সাথে কানেক্ট করা দারুন লেগেছে। - "কালসন্দর্ভা" বইটি প্রথমে ভারত থেকে কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে, পরে বাংলাদেশ থেকে ভূমিপ্রকাশ এর বাংলাদেশী সংস্করণ বের করে। কারিগরি দিক থেকে কালসন্দর্ভার প্রোডাকশন বেশ ভালোই। বইয়ের প্রচ্ছদটিও চমৎকার হয়েছে এর কাহিনী অনুসারে। - এক কথায়, বাংলা ভাষায় উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে লেখা বেশ ভালোমানের একটি অকাল্ট থ্রিলার ভিত্তিক উপন্যাস "কালসন্দর্ভা"। যাদের গ্রামবাংলা ভিত্তিক হরর কিংবা তন্ত্র, মন্ত্র ভিত্তিক অকাল্ট থ্রিলার পড়তে ভালো লাগে তাদের বইটি ভালো লাগবে আশা করি।
ভীষণ পছন্দের একটা বই। আগেও একবার পড়েছিলাম। লেখিকার প্রথম বই হিসেবে চমৎকার লিখেছেন। সেই কবে থেকে সিক্যুয়েলের অপেক্ষা করছি। এইরকম দূর্দান্ত রোমহষর্ক কাহিনি আবারও আশা করছি।
খুব যে ভয় পেলাম তা নয়। তন্ত্রের ব্যাপারগুলো আমাকে থ্রিল দিলেও হাঁড়ে ঠোকাঠুকি লাগানো ভয় ধরাতে পারেনা, এক্ষেত্রেও পারেনি। তবে গল্পটা খুব থ্রিলিং। বীজ-রৌম্য, তন্ত্র-মন্ত্র, বলি-খুন নারকীয় দেব-দেবী সব মিলিয়ে বেশ একটা জমজমাটি অকাল্ট থ্রিলার উইথ এ টাচ অফ ফ্যান্টাসি বলা যায়। ভালোই পড়লাম।
মোটামোটি লেগেছে । লেখকের হাত দুর্বল(এইটা কোন ব্যাপার না। আমার নিজের লেখার হাতও দুর্বল)। সুবিশাল প্লটতাকে আরেকটু গুছিয়ে লেখা যেত। বইটা মোটামোটি হলেও শুধু লেখকের লেখনীর গুণে শেষ পর্যন্ত আসা গেলো। এই ক্রেডিটটা লেখক প্রাপ্য।
বইটা প্রায় ডবল দাম দিয়ে কিনেছিলাম বাংলাদেশে প্রকাশ হওয়ার আগে, ইন্ডিয়ান প্রিন্টটাই।কিন্তু, আলসেমি করে এতদিন পড়া হয়নি।
লেখিকার লেখার হাত চমৎকার।লেখিকার প্রথম বই হিসেবে আমার এক্সপেকটেশন অনেকটাই ফুলফিল হয়েছে।যদিও এন্ডিংটা আশানুরূপ হয়নি আরেকটু ভালো একটা এন্ডিং আশা করেছিলাম।
HIGHLY RECOMMENDED for occult thriller or horror lovers. লেখিকার স্টোরিটেলিং অন্যরকম। টিপিকাল বা গতানুগতিক নয়। সেই জন্য প্রথম ৭০/৮০ পৃষ্ঠা প্রচন্ড খুব ই কাঠখোট্টা লেগেছে। কিন্তু তারপরে এক বসাতে শেষ না করে উঠতেই পারলাম না। দুপুরে জরুরি মিটিং ছিলো বাট হেয়ার আই আম, সকাল হয়ে গেলো ভুলেই গেছিলাম! তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে আমি ওভার অবসেসড ছিলাম না কোনোকালেই। হিন্��ুইজমএর ইতিহাসের পড়তে পড়তে এ যে এতো ডার্ক হিস্ট্রি আর কালো জাদু সেইটা বইটা না পড়লে ধারণার বাইরেই থেকে যেতো।
অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তন্ত্র-মন্ত্রের কিছু জটিল ব্যাপার-স্যাপার ঘোলাটে লেগেছে বেশ,পূর্বের জানাশোনা না থাকায় হয়তো। আর স্টোরিটেইলিং টা অন্যরকম আগেই বলেছি। তন্ত্রের সাথে জ্যামিতির সম্পর্ক স্থাপন ও মনে ধরেছে আমার।
ভৈরব-রৌম্য যুদ্ধ যা আদিকাল থেকে চলে আসছে... মুসলিম তৌফিক-হিন্দু লতার অকৃত্রিম ভালোবাসা... চন্দ্রমৌলি... তন্ত্রের ডার্ক ইতিহাস.... শাম্ভবী... কালসন্দর্ভা... লালকমল...নীলকমল... বীজ... সোলাঙ্কী... কৃষ্ণা... বহুদিন মনে রাখবার মতো অনবদ্য কিছু উপাখ্যান... বইটার সিকুয়াল প্রত্যাশ্যা করি। না আসলে বরং মনক্ষুন্ন হবে আমার। শুভ কামনা লেখিকার জন্য।
আরেকটা হতাশাজনক গুডরিডস হাইপ। ভাষাভঙ্গি ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়া বাচ্চাদের মত, অগোছালো কাহিনী, চরিত্রগঠন প্রায় অনুপস্থিত। কে, কেন, কিভাবে--বোঝাই দায়। লোকজন কি আজকাল ভাল গল্প পড়া ভুলে গেছে, নাকি লেখক-প্রকাশকের ভাড়াটে রিভিউয়াররা গুডরিডস দখল করে ফেলেছে? তা না হলে এই বইয়ের এত রেটিং হয় কি করে?
শুরুতেই বলি আমি খুব সাধারণ এক পাঠক তাই এটা শুধু মাত্র আমার কেমন লেগেছে সেটাই ব্যাক্ত করার সাধারণ এক প্রয়াস এটা কোনো রিভিউ না।
বাংলা বই বাজারে চলা এক অতি বিখ্যাত জঁর এখন তন্ত্র, অভিক বাবুর ইনকুইজিশন সেই রাস্তায় পথিকৃৎ, যাহোক ধান ভাঙতে শিবের গীত না করে আসল কথায় আসা যাক, বিগত ১৬ ঘন্টায় শেষ করলাম তন্ত্র জঁর এর আর এক বিখ্যাত বই "কালসন্দর্ভা " প্রথমেই আসা যাক বই এর এই নাম কেনো এরকম নাম এর মানে কি? আমরা সবাই জানি বিশেষ শক্তি পূজা গুলি তে অষ্টমী পক্ষে কুমারী পুজো হয়, এই কুমারীর প্রতি বছর বয়সে এক একটি আলাদা নাম হয় তেমনি নবম বর্ষীয় কুমারীর বিশেষ নাম হলে কালসন্দর্ভা।
উপন্যাসের শুরুতেই থাকে টান টান উত্তেজনা অ্যাকশন ভিলেনের পরাজয় হিরোর জেতা এবং বুঝিয়ে দেওয়া যে বরং এটা শেষ না এটা শুরু, বই শেষ করার পর থেকে হ্যাংওভার কাটেনি এখোনো, মাথার মধ্যে রৌম্য পিশাচ, কেচাই খাতি, দিক্করবাসিনী, স্বর্গদেও, ভৈরব, কালসিদ্ধা পাক খাচ্ছে। ভৈরবের সাথে কালসিদ্ধার লড়াই বীজের জন্ম ও কালসিদ্ধার আপাত পরাজয় এর পর মেইন উপন্যাস চলে আসে বর্তমানে মানে তখনকার সেই লড়াই হয়ে গেছে প্রায় ৮০০ বছর আগে, লেখিকা এরিয়া ওফ অ্যকশন হিসাবে বেছে নিয়েছেন রাঢ় এর বীরভূম কে। প্রতি টা পাতায় আমি লেখিকার প্রচুর তন্ত্র, ভূগোল আর ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনার নমুনা পেয়েছি এটা যেমন ভালোও লেগেছে আবার এটা খানিকটা নেগেটিভের দিকেও গেছে কেমন যেনো একটা আমি জেনেছি তোমাকেও জানাবো টাইপ, তথ্যর ভারে বারংবার বড় জর্জরিত হয়েছি বেশ কয়েক জায়গায়।
মেন উপন্যাসের চরিত্র অনেক তবে প্রধান কিছু চরিত্র হলো কালসিদ্ধা, শাম্ভবী, তৌফিক, তারকনাথ, এরা কেনো প্রধান তা খানিকটা গোপন থাকা দরকার কারণ প্রধান চরিত্র গুলো এতো নিঁখুত ও রহস্যময় যে লেখিকার সাথে আমিও চাই যে বই টা কিনে যারা পড়বে তারা যেই রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত গোবিন্দদাস না হয়ে যায়, আর একটা কথা বইটা কিন্তু মোটামুটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সুতরাং লোভনীয় কভার দেখেই দুম দাম যাকে তাকে গিফ্টাবেন না,
বীরভূমের অজস্র জায়গা এবং তাদের উপর নির্ভরশীল উপন্যাস ও সেই উপন্যাসের ১০ এর উপর চরিত্রকে লেখিকা যে ভাবে শেষ পাতে এক করেছেন তা সত্যিই কাবিল এ তারিফ। এই মুন্সিয়ানা সত্যিই নব্য লেখিকার থেকে আমি আশা করিনি এজন্য লেখিকা কে ধন্যবাদ। একটা তন্ত্রের উপর বেসড উপন্যাসে কি নেই?? রহস্য, রোমাঞ্চ, প্রেম, ক্রাশ, অ্যাকশন, হরর, ফ্যান্টাসি সওওব সব আছে জট আছে জট ছাড়ানো আছে, আর আছে ভারতবর্ষের কিছু প্রাচীন জনজাতি ও তাদের মিথ এবং মিথের ইতিহাস। আনপুটডাউনেবল তকমা এই বইকে চোখ বুজে দেওয়া যায়। গোপন ক্রিয়ার সাথে গোপন রহস্যর মেলবন্ধনের এ বই এক অনন্য নিদর্শন।
মুখ আর মুখোশের লড়াই এতো তীক্ষ্ণ হয় আর তা লেখায় এমন ভাবে ফোটানো যায়,তা এ বই না পড়লে জানা যাবেনা। মানে ব্যাপারটা এরকম আপনি শুরু থেকে যাকে কিছু বলে ভাববেনও না শেষে দেখবেন সেই মেইন কালপ্রিট।
উপন্যাস টা প্যাঁচালো তবে এর গতি এতএতোটাই টাই সনিক যে দুমদাম কি হবে টেরই পাবেন না, তবে আরও একটা নেগেটিভ পয়েন্ট কিন্তু এই গতিই, অনেক জায়গাতেই অ্যকশন সিকোয়েন্স গুলো এতোটাই ফাস্ট যে সিকোয়েন্স গুলো মস্তিষ্কের উপর দিয়ে গেছে শেষে গিয়ে হয়তে কিছু কিছুর জট কেটেছে তবে সবটার না।
তবে ভালো মন্দ মিশিয়েই তো সব হয় আর এক্ষেত্রে ভালোর পরিমাণ এতোটাই বেশী যে খারাপটা প্রায় নেগলিজেবল, ৮০০ বছর আগের আসাম আর ২০১৮ র বীরভূম এ কি আশ্চর্য ভাবে লেখিকা ঘুরিয়েছেন তা আমি অন্তত বই পড়তে পড়তে টেরই পাচ্ছিলাম না। যদি রেটিং দিতে হয় ১০ আমি এই বই কে ৯.৫ দেবো,
সব শেষে বলবো এই বই কালেক্টর আইটেম কিনুন পড়ুন আর হারিয়ে যান তন্ত্রের মায়া গলিতে।
তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে বই পড়িই না আমি। খুবই বিরক্তিকর লাগে। এই বইটা গতবছর কিনে ফেলে রাখসিলাম। ভূমি প্রকাশনী দেখি একটা রিভিউ প্রতিযোগিতা দিলো ওদের বইয়ের। ভাবলাম আমিও লিখি। তারপর দেখি বাসায় ওই প্রকাশনীর বই একটাই। পড়ে ফেললাম তারপর আরকি।
পড়ে আমি খুশি!! অকাল্ট থ্রিলার বলে এই জনরা কে। আপনি যদি এই ধরনের বই পছন্দ করেন, আমার ধারণা এটা একটা গ্রেট সাজেশন আপনার জন্য!
কলকাতার লেখিকার প্রথম বই। বেশ ভালোই লাগলো। কিছু জায়গায় আক্ষেপ আছে, উনি চাইলে এই সুবিশাল প্লটটা নিয়ে অসাধারণ কাজ করতে পারতেন। ডিটেইল রিভিউ দিয়েছি ফেসবুকের 'বইপোকা' গ্রুপে (এত ডিটেইল রিভিউ লেখিনাই এর আগে :'3) দেখতে পারেন আগ্রহ থাকলে!
ভাল্লাগসে! ইউনিক একটা প্লট। তবে ভাব-ভঙ্গি মানে লেখার স্টাইলে মনে হয়েছে সিক্যুয়েল আসতে পারে। অপেক্ষায় রইলাম ^_^
আর তৌফিক ক্যারেক্টারটা! পুরাই ইয়ো! 😎
বি.দ্র. কেন জানি না ঠিক, বইয়ে তৌফিকের বর্ণনা পড়তে যেয়ে গালে কাটা দাগ এটা পড়ার পর থেকেই আমার মাথায় কেবল আ���ীর চ্যাটার্জি ঘুরেছে। why? why? why? 😂😛
বইটার যখন ৪০ পাতা বাকি, আমি বইটা রাইখা দিসি । অন্য আরো ১৫ টা বই পড়া শেষে আবার হাতে নিলাম। এবং, এই ৪০ টা পাতা আর সমাপ্তি বইটার রেটিং তিন-তারা থেইকা এক্কেরে ফাইভ-ইস্টার বানাইয়া দিল। মার্ভেলাস।
বই: কালসন্দর্ভা লেখক: অঙ্কিতা প্রচ্ছদকার: তৃষা আঢ্য প্রকাশনি: ভূমি প্রকাশ প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৩৫ মুদ্রিত মূল্য: ৩২০ টাকা
সংক্ষিপ্ত রিভিউ:
পূজোর বন্ধে সোলাঙ্কী তার ছোটবোন শাম্ভবীর সাথে বান্ধবী কৃষ্ণার মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছে। শীতের কনকনে ঠান্ডায় জমে গিয়েও সোলাঙ্কীর কাছে এই সর্বানন্দপুর গ্রামের উপাধ্যায় বাড়িকে তৈলচিত্রের দৃশ্যপটের মতো মনোরম লাগে৷ সোলাঙ্কী আর কৃষ্ণা দুজনই ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে৷ শাম্ভবী মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। অথচ পাশাপাশি দাঁড়ালে শাম্ভবীর বাড়ন্ত শরীর দেখে তাকে মোটেও অতো ছোট মনে হয় না। উপাধ্যায় বাড়িতে প্রতি বছর কুমারী পূজো হয় এই সময়ে৷ শাম্ভবীকে এবার কুমারী বানিয়ে পূজো করা হবে৷ কিন্তু শাম্ভবীর সাথে এমন এক গোপন রহস্য জড়িয়ে আছে যা তার কুমারী হবার পথে অন্তরায় হতে পারে৷ এ সত্য শুধুমাত্র সোলাঙ্কীর পরিবার আর কৃষ্ণা জানে।
শাম্ভবীকে কুমারী পূজো দেয়ার জন্য মন্ত্র পাঠ করার পরপরই শাম্ভবীর আচমকা শরীর খারাপ হওয়া, তার গলার মালায় আগুন লাগা সবকিছুই কেমন রহস্যময়। কুমারী পূজো শেষ হবার পরও কৃষ্ণার মামাতো দাদা ঘাবড়ে আছে৷ এ ঘটনায় যেন কোনো অশুভ কিছু লুকিয়ে আছে। পূজো শেষে শাম্ভবীর শরীর থেকে উজ্জ্বল আভা বের হওয়া যেন আরেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এ সব কিছুর সাথে দীর্ঘ নয় বছর আগের সে ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই তো? সে ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে পড়লে আজো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।আনমনে সেই চিলেকোঠার রুমে দরজার কাছে এসে ছোট দুটো হাতের ছাপ দেখে মনে মনে বিড়বিড় করে অচিন্ত্য, "ক্ষমা করো, ক্ষমা করো।"
অচিন্ত্যদের বাড়িতে লতাদি আর তার স্বামী জয়ন্ত বেড়াতে এসেছে। জয়ন্ত গৌহাটিতে একটা প্রাইভেট কলেজে ইতিহাস পড়ায়৷ ইতিহাসের বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলতে বলতে দিক্করবাসিনী দেবীর কথা উঠলে জয়ন্ত তাদের অদ্ভুত এক গল্প শোনায়৷ আসামের পূর্বপ্রান্তে এক উপনদীর নাম দিকরং। সেই নদীর তীরে দেবীর থানের নামানুসারে তার নাম দিক্করবাসিনী৷ পৃথিবীতে তার প্রেরিত সন্তানদের রৌম্যপিশাচ বলা হয়। কিন্তু এ দেবীর নাম শাম্ভবী জানলো কী করে তা রহস্য সবার কাছে হয়ে রইলো।
দেবী দিক্করবাসিনীর ডাকে সাড়া দিয়ে তার রৌম্যসন্তানেরা একত্র হচ্ছে। সম্মিলিত শক্তিতে দিক্করবাসিনী আবার রাজত্ব করবে পৃথিবীতে। এই ভয়াবহ দেবীর সাধনায় কালসিদ্ধা অমর, অজয় হয়ে উঠবে। এজন্য চাই কালসন্দর্ভা, যার শরীরে ভর করে সে পৃথিবীতে ফিরে আসবে নতুন রূপে। রৌম্যপিশাচদের ঠেকানোর জন্য ভৈরবরাও চেষ্টা করছে। কিন্তু চন্দ্রমৌলি অঘোর ঘুমে ঘুমোচ্ছে। চন্দ্রমৌলি এবার রৌম্যদের ষড়যন্ত্র রুখতে পারবে নাকি তা নিয়ে গভীর চিন্তায় আছে স্বর্গদেও-প্রধানরা৷
নয় বছর আগের সেই অদ্ভুত অমীমাংসিত রহস্যের জন্ম দেয়া ছেলেটার সাথে তৌফিকদার সম্পর্ক আছে। এই অলিখিত বন্ধুত্বের জন্যই হোক বা লতাদির ব্যাপারটার জন্যই হোক, অচিন্ত্য তাকে ভয় করে। তৌফিক দার কাছ থেকে তাই সে দূরে দূরে থাকে। কিন্তু নিয়তিতে কাছে আসা লেখা থাকতে তা খণ্ডানো যায় কী করে? ঘুরেফিরে বারবার তৌফিকের সাথেই ঘটনাচক্রর জড়িয়ে যায় সে বারবার। তৌফিকও তার নিয়তিকে এড়াতে পারে না৷ কৃষ্ণা আর সোলাঙ্কীর জোড়াজুড়িতে সবাই একসাথে ঘুরতে গেলে তৌফিক তাদের গণিতের সাথে যুক্ত তন্ত্র নিয়ে অদ্ভুত কিছু গল্প শোনায়, যার সাথে তারা নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যায়৷
একদিন হুট করে শাম্ভবী ও কৃষ্ণা বাবার সাথে দিল্লী ফিরে গেলো। অচিন্ত্য বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনার জন্য শাম্ভবীকে দায়ী করলো যা শাম্ভবীর বাবা মেনে নিতে পারেনি৷ তাদেরকে নিয়ে ফেরার পথে শাম্ভবী ও সোলাঙ্কীকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে তৌফিক তাদের ব্যাপারে জেনে গেলেও তার হাত পা বাঁধা। সে চাইলেও তাদের বাঁচাতে পারবে না। সম্মিলিত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তার কী-ই বা করার আছে? তার বাহুতে বাঁধা লালকবজ তাকে বাঁচাতে পারলেও বাচ্চা দুটো মেয়েকে বাঁচানোর সামর্থ্য তার নেই৷ তবু শাম্ভবীর বিশ্বাস লালকমলকে বাঁচাতে নীলকমল আসবেই। তাদেরকে ভয়ংকর যোগিনী থেকে বাঁচানোর জন্য, লালকমলের ডাকে সাড়া দিয়ে হলেও নীলকমল আসবে। বেঁচে যাবে কালসন্দর্ভা।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
নিজের মতামত দেয়ার আগে আমি অকাল্ট থ্রিলারের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই৷ অকাল্ট থ্রিলার হচ্ছে থ্রিলারের এমন একটি সাবজনরা যাতে অতিপ্রাকৃত, অলৌকিক, জাদুবিদ্যা, গুপ্তবিদ্যা ও দেবদেবী নিয়ে আবর্তিত রহস্যময় রোমাঞ্চকর কাহিনি উপস্থাপন করা হয়৷
কালসন্দর্ভাকে এক্ষেত্রে পুরোপুরি অকাল্ট জনরার বই বলা যেতে পারে। তবে বই পড়ার সময় আমার কাছে একে ফ্যান্টাসি ও মিথোলজির চমৎকার মিশেল মনে হয়েছে। যাকে বলা যায় "একের ভেতর সব"। বইটিতে গণিতের সাথে যুক্ত যে একান্নপীঠের গল্প আছে তা একই সাথে অদ্ভুত ও রহস্যময়। লালকমল নীলকমলকে নিয়ে লেখা গল্প, মিথোলজি সবকিছুই ভালো লেগেছে।
এ বই পুরোটা পড়ে আমি দ্বিধান্বিত। একবার মনে হয়েছে তৌফিক এ কাহিনির প্রধাণ চরিত্র। কিন্তু চন্দ্রমৌলি, শাম্ভবীও এ উপন্যাসে অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র। এছাড়াও অচিন্ত্য, কৃষ্ণা, সোলাঙ্কী, জয়ন্ত, লতা, তারকনাথ, অন্যতম প্রধাণ চরিত্র৷ প্রত্যেকটি চরিত্র চিত্রায়িত হয়েছে নিখুঁতভাবে। কোনো চরিত্র খাপ খাচ্ছে না বা অপ্রয়োজনীয় এমনটা মনেই হয়নি।
কালসন্দর্ভা পড়ার সময়ে শুরুর দিকে কিছুটা বিরক্ত ছিলাম। কাহিনি খুব ধীরগতির মনে হচ্ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে যত কাহিনির ভেতর ঢুকলাম ততোই পড়ার সময়টুকু উপভোগ করলাম। পুরোটা পড়ে মনেই হয়নি এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস৷ এর শেষটুকু পড়ে পরবর্তীতে আরেকটি বই আমরা পেতে যাচ্ছি বলে মনে হয়েছে৷
বাঁধাই, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য:
বইয়ের বাঁধাই একদম মনমতো হয়েছে। ভূমিপ্রকাশের বাঁধাই সবসময়েই ভালো হয়৷ এ বইয়ে তেমন কোনো প্রিন্টিং মিস্টেক পাইনি। আর প্রচ্ছদ দেখেই আমি মূলত আগ্রহী হয়েছিলাম। একটা ছোট্ট শিশু শুয়ে কাঁদছে, তার উপরে দুপাশে রক্তমাখা দুই হাত, দেখেই গা শিরশির করে৷ নামের নিচেও রক্ত ঝরে পড়ছে দেখেই গা কাঁটা দেয়৷ পড়া শুরু করার সময় ভাবছিলাম দিনে পড়বো না রাতে৷ কিন্তু তারপর পড়া শুরু করে আর সময়ের হিসাব রাখতে পারিনি৷ এই বইটি কলকাতার কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন্স থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়৷ পরবর্তীতে ভূমিপ্রকাশ থেকে বইটি ২০১৯ সাথে প্রথম প্রকাশিত হয়৷ যাদের কাছে গুপ্তবিদ্যা, আধিভৌতিক লেখা ভালো লাগে তাদের জন্য এ বইটি অবশ্যপাঠ্য৷
প্রথমেই বলে রাখতে চাই এ বই পর্যালোচনা করার দুঃসাহস আমি দেখানোর কোনোরূপ চেষ্টা করছিনা কারণ বইটির গূঢ় বিষয় সম্বন্ধে আমার জ্ঞান শূন্য বললেও বোধহয় বেশি বলা হবে । ফেবু তে কিছু রিভিউ পড়েছি যেগুলো পরেই বোঝা যায় যারা দিয়েছেন তাঁদের তন্ত্র নিয়ে সাহিত্যের ব্যাপারে বেশ কিছু পড়াশোনা রয়েছে । সেসব বিন্দু মাত্র আমার নেই(তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প বাদ দিয়ে) বলে আমি শুধু পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখছি ।
খুব ক্ষতিকারক বই বিশ্বাস করুন। আমি বাপু ৯ টা ৬ টা প্রাইভেট অফিসে দিন গুজরান করি, মাঝে মাঝে অফিসের ঠেলায় রাতের ঘুমও মাথায় উঠে যায় । সেই আমি যে কি কুক্ষণে এক বৃহস্পতি বারের ভোরবেলায় বইটা পড়া শুরু করেছিলাম কে জানে । নামাতে পারিনি , বললে বিশ্বাস করবেন না । সকালের একমাত্র স্নান ছাড়া আর সব কাজ করেছি বই হাতে । অফিসে আসতে আসতে পড়েছি । তারপর ঘণ্টা কয়েক বিরতি । তারপর যখন বুঝলুম বাকিটা না পরে কিছুতেই আমার দ্বারা অফিসের কাজ হবেনা তখন রেস্ট রুমে বসে বইটাকে শেষ করেছি সন্ধ্যে অবধি পরে । তার পরেও যদিও কাজ হয়নি । নেশা কাটা কি সহজ ব্যাপার ? তাও একেবারে কালসন্দর্ভার কালান্তক নেশা । বাড়ি ফিরে বৌকে পুরো গল্পটা ঘণ্টা খানেক ধরে শুনিয়ে তবে উত্তেজনা স্তিমিত হয়েছে একটু ।
কল্পবিশ্বের বন্ধুরা রেগে যাবেন না প্লিজ , বইটার প্রচ্ছদ দেখে দারুণ একটা কৌতূহল হয়েছিল লেখনী নিয়ে কিন্তু সেই কৌতূহলটা কিন্তু চট করে আগ্রহে বদলে যায়নি আমার । নতুন লেখিকার বই কিরকম হবে , কিরকম লাগবে পরে এসব সাত পাঁচ ভেবে তাৎক্ষণিক বইটা কিনিনি আমি। বিগত কয় মাসে একের পর এক ফেবুতে পাঠ প্রতিক্রিয়া পরে পরে আগ্রহটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল আমার । শেষ মেশ বইমেলায় গিয়ে কিনলাম । তবে হ্যাঁ কেনার পর এতটুকু অসম্মান দেখাইনি আমি । বইমেলা থেকে যে একডজন বই কিনেছি তার মধ্যে প্রথম পরে শেষ করলাম কালসন্দর্ভা।
আমার যেটা সব থেকে ভালো লেগেছে বইটার সেটা হল লেখনীর মধ্যে পাঠককে আবিষ্ট করে রাখার চূড়ান্ত(এবং দুর্দান্ত ভাবে সফল ) প্রচেষ্টা। প্রতিটা অধ্যায় শেষ হচ্ছে এরকম একটা অবস্থায় যেখানে পরের অধ্যায় না পরে চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা । পড়ার সময় একবারের জন্য মনে হয়নি আমি কোনও নতুন লেখিকার প্রথম উপন্যাস পড়ছি । দ্বিতীয়ত আমার একটু সেই টাইপের লেখা ভালো লাগে যেটা পাঠককেও একটু মাথা খাটানোর সুযোগ দ্যায় । এই বইতে আমার সেই চাহিদাও পূর্ণ হয়েছে । পড়তে পড়তে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করছেন লেখিকা যে পরে কি হতে পারে । তৃতীয়ত এই যে পাঠকের ভাবনা পরে কি হতে পারে সেটা চূড়ান্ত উত্তেজনা পাচ্ছে একের পর এক টুইস্টে । পাঠকের মন যখনই স্থির ভাবে ঘটনার পথ বিস্তৃত ভাবে সামনে দেখতে পাচ্ছে বলে মনে করছে ঠিক তখনি রাস্তায় চলে আসছে চমৎকৃত হওয়া বাঁক। এতে করে পাঠকের আগ্রহ আরও বেশি করে বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি ভাবতে উৎসাহ পাচ্ছে পাঠক । চতুর্থ পয়েন্টে আমি বলতে চাই এমন কোনও অতিরঞ্জিত ঘটনার উল্লেখ নেই গল্পে যেটার মূল গল্প প্রবাহের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই । কোনও ঘটনা নিতান্ত তুচ্ছ বলে যদি কোনও পাঠক স্কিপ করে পড়েন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি হোঁচট খাবেন গল্পের টুইস্ট গুলোতে এসে । সত্যি উপন্যাসটা প্রচণ্ড ভাবে আনপুটডাউনেবেল । পঞ্চম এবং শেষ পয়েন্ট এই যে গল্পের প্রতিটা পাতায় লেখিকার গবেষণার ছাপ সুস্পষ্ট । অসম্ভব ভালো এই থ্রিলার গল্প লেখার পিছনে লেখিকার যে কতটা অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা রয়েছে সেটা ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।
ভালো লাগার এরকম প্রচুর কিছু থাকলেও কেবল একটি জিনিসে আমার একটু খারাপ লেগেছে। যখনই আমি কোনও গল্প পড়ি তখন মাথায় সেই গল্পের পরিবেশ নিয়ে একটা ছোট খাটো চিত্র এঁকে ফেলি। এ গল্পের পটভূমি তো আবর্তিত হয়েছে তিন চারটি জায়গা জুড়ে কিন্তু একমাত্র বোলপুর ছাড়া অন্য কোনও জায়গাই কিন্তু আমার মনে দাগ কাটেনি। মানে যদিও অধ্যায়ের শিরোনামে পড়ছি পটভূমি ভারত ভূমি ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে কিন্তু লেখা পড়তে পড়তে সেই বিদেশের কোনও ছাপ আমার মনে পড়ছেনা। মনে হচ্ছে আমি এখনো বোলপুরেই রয়েছি। লেখিকার কোনও দোষ আমি দেখছিনা এখানে। আগেই বলেছি প্রয়োজন ব্যতিরেকে এক লাইনও গল্পে যোগ করা হয়নি কাজেই এই ত্রুটিটা হয়তো আমারই ব্যর্থতা।
সবশেষে লেখিকা কে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই বিষয় (যেটা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অন্তত আমার জ্ঞানত বড় কোনও কাজ হয়নি) নিয়ে আপনি যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন তার জন্য আপনাকে শত কুর্নিশ। সত্যি বলছি ধন্যবাদের ভাষা পাচ্ছিনা আপনাকে ভূষিত করার জন্য। এরকম জটিল তন্ত্রের বিষয় নিয়ে যেরকম সহজ পাঠ্য, সহজ বোধ্য, অসম্ভব ভালো থ্রিলার গল্প লিখেছেন আপনি তাতে আমার মনে হচ্ছে ভবিষ্যতের বাংলা সাহিত্যের ট্রফি রুমে আপনার জ্বলন্ত কীর্তি স্থান পেতে বাধ্য। আর হ্যাঁ বিনীত পাঠকের করজোড়ে নিবেদন , বইটার সিক্যুয়েল কিন্তু চাই চাই চাইই, এবং যত দ্রুত সম্ভব চাই।
কাহিনি সংক্ষেপ: কোন এক গ্রাম্য এলাকায় বেড়াতে আসার পর থেকেই নয় বছর বয়সী বালিকা শাম্ভবীর মাঝে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছিল। তার মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলো কোন এক দেবী দিক্করবাসিনীর নাম। রক্তপিপাসু দেবী দিক্করবাসিনীর সাধনা করে চলেছে যোগিনী কালসিদ্ধা। রক্তবৃত্ত তৈরি করে রৌম্যপিশাচদের আহবান জানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছে সে। কারা এই রৌম্যপিশাচের দল? কেনই বা তারা প্রাচীন আসাম জুড়ে চালিয়েছিলো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও নরমাংস ভোজনের মহোৎসব। শেষপর্যন্ত তাদেরকে পরাস্ত করতে পৃথিবীর বুকে কী হয়েছিল? আবারও কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছে কালসিদ্ধা?
অন্যদিকে সেই বেড়াতে আসা বাড়ি'র বড় মেয়ে লতা গর্ভবতী অবস্থায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে পড়েছে এক অপার্থিব সমস্যায়। অস্বাভাবিক স্বভাবের বালিকা শাম্ভবী একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েই চলেছে। এসবের কারণে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন বাড়ি'র প্রধান বৃদ্ধ তারকনাথ নিজেও। নানা রকম যজ্ঞের আয়োজন চলতে লাগলো বাড়িটাকে ঘিরে।
সেই সাথে নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে অমাবস্যার রাতে সৃষ্টি হচ্ছে রক্তবৃত্ত। যা তৈরি করতে নাকি প্রয়োজন হয় নরবলির। কি এমন এমন জিনিদ এই রক্তবৃত্ত যা খুলে গেলেই বেরিয়ে আসবে রৌম্যপিশাচরা, আবারও অন্ধকারে ঢেকে যাবে চারপাশ?
কারাই বা হুট করে এই সকল নারকীয়তার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে নতুন করে? কি এমন ভয়ংকর পরিকল্পনার ছক কেটে রেখেছে কোন এক প্রাচীন গুপ্তসংঘ? তৌফিক কি একা পারবে ওদের সামলাতে, নাকি বহুকাল আগে তার হারিয়ে যাওয়া বন্ধু নীলকমল সাহায্য করবে ওকে?
যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে সবগুলোর পেছনে কি একটাই কারণ? কালসন্দর্ভা? একটি মেয়ের জীবনকালের নির্দিষ্ট একটা সময়কে কেন্দ্র করে কেনই বা এতো পৈশাচিকতা, এতো রক্তপাত আর এতো লড়াই? উত্তর পেতে অবশ্যই বইটি পড়ে দেখতে হবে..
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'কালসন্দর্ভা'-কে অকাল্ট থ্রিলার তো বলা হয়েছে, যদিও আমি পুরোপুরি জানিনা অকাল্ট থ্রিলার বিষয়টা কি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা দারুন ফ্যান্টাসি উপন্যাস। ওপার বাংলার লেখিকা অঙ্কিতা'র প্রথম উপন্যাস এটি।
থ্রিলার উপন্যাস��র মতো এতটা গতিসম্পন্ন না হলেও একটা সময়ে এসে লেগেছে গতির ছোঁয়া বেশ ভালোই লেগেছিল যে আমি পড়তে গিয়ে অনেক কিছুই প্রায় স্কিপ (কিছু অংশ ঠিক ভাবে বুঝতে পারিনি) করে যাচ্ছিলাম। তবে বেশ একটা আধিভৌতিক আবহ তৈরি করে রেখেছিলেন পুরো বই জুড়ে।
অঙ্কিতাদি তাঁর এই উপন্যাসে প্রাচীন ডাকিনীবিদ্যা, হিন্দু মিথোলজি ও গুপ্তসঙ্ঘকে বেশ চমৎকার ভাবে একীভূত করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রথম উপন্যাস হিসেবে 'কালসন্দর্ভা'-এর পেছনে অঙ্কিতাদি অনেক অনেক খাটাখাটুনি করেছেন। অনেক অনেক তথ্য - উপাত্ত সংগ্রহ করে বইটি লিখেছেন অসাধারণ একটা প্লট নিয়ে। তবে টুইস্ট গুলো মনে হচ্ছিল আরেকটু ভালো হতে পারত।
সবমিলিয়ে যদি বলি, কালসন্দর্ভা' আমার খারাপ লাগেনি, তবে বইটি আমার জন্য বেশ কঠিন মনে হয়েছে। অনেক কিছুই আমি বুঝতে পারিনি হয়ত এই সকল তন্ত্র-মন্ত্রের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ তাই। তবে লেখিকা যা লিখেছেন তার চেয়ে ভবিষ্যতে আরো যা লিখতে যাচ্ছেন সেটা পড়তেই আমি বেশী আগ্রহী। আমার মত কট্টর থ্রিলারপ্রেমীর যেহেতু আগ্রহ তৈরী করতে পেরেছেন লেখিকা তাহলে আশাকরি ফ্যান্টাসি বা সাহিত্যবোদ্ধাদের ভালই লাগবে বইটা।
প্রথমেই একটা প্রশ্ন জাগবে কালসন্দর্ভা কি ? গুগল থেকে জানলাম - মহানবমীর দিন কুমারী পূজা করা হয়।সেখানে এক হতে ষোলো বৎসরের কন্যাকে কুমারী জ্ঞানে পূজা করা হয়।দেবী এক বছরের কন্যায় সন্ধ্যা, দুই বছরের কন্যায় সরস্বতী, তেমনই নয় বছরের কন্যায় কালসন্দর্ভা রূপে অবস্থান করেন।আর এই গল্পের মূলে আছে কালসন্দর্ভা।
গল্পটা মোটেও আমার কাছে সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য মনে হয়নি, বড্ড খটোমটো। প্রথম থেকে সেরকম কিছুই নাই বলতে গেলে, ১৫৫ পৃষ্ঠার পর থেকে টানটান উত্তেজনা আছে এটুকু বলতে পারি।রৌম্যজাগরণ, রক্তবৃত্ত এসব জটিল বিষয়কে কেন্দ্র করে এই কাহিনী - অন্তত আমার কাছে গল্পটা জটিল মনে হয়েছে।অষ্টম অধ্যায়, 'চন্দ্রমৌলির কথা' পড়ার সময় একটু ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। এক একটা জিনিস (যেমন - পাতরগণ্য সাধু,রৌম্য,ভৈরব, স্বর্গদেও প্রধান) আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হত। কেউ এই বইটিকে তন্ত্র মন্ত্র বিষয়ক হরর বই ভেবে শুরু করলে অত্যন্ত নিরাশ হবে।
যারা গল্পের বিষয়ে কিছু জানেন না তাদের জন্য সংক্ষেপে একটু বলে রাখি - এটিকে একটি অকাল্ট থ্রিলার, তাই এখানে তন্ত্র মন্ত্র, বশীকরণ, ডাকিনী যোগিনী আছেই। বোলপুরের সর্বানন্দপুর গ্রামে উপাধ্যায় বাড়িতে অর্থাৎ মামারবাড়ী বেড়াতে আসে কৃষ্ণা, সাথে তার বান্ধবী সোলাঙ্কি ও তার বোন শাম্ভবী। এই বাড়ির বড়ো মেয়ে লতা, বিবাহিত ও প্রেগনেন্ট।এই গল্পে তৌফিক একটা প্রধান চরিত্র, কি তার পরিচয় পড়লেই বুঝবেন। হঠাৎ এই শাম্ভবী অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। মন্দিরের সিঁড়িতে সে সিঁদুর দিয়ে দিক্করবাসিনীর নাম লেখে, কোনদিন জঙ্গলে গিয়ে ধ্যানে বসে। সবার অলক্ষ্যে উপাধ্যায় বাড়িতে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। অন্যদিকে রৌম্য পিশাচের দল - যারা পুরো আসাম জুড়ে চালিয়েছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও নরমাংস ভোজনের মহোৎসব। রৌম্যপিশাচ যারা উঠে আসে রক্তবৃত্ত থেকে। দেবী দিক্করবাসিনীর সাধনারত যোগিনী কালসিদ্ধা রক্ত বৃত্ত তৈরি করে রৌম্যপিশাচদের আহ্বানের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে আনে। প্রাচীন আসামে যা ঘটেছিল আবারও কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে ? এর সাথে কি উপাধ্যায় পরিবারের কিছু সম্পর্ক আছে ? শাম্ভবী আসলে কে ? লতার গর্ভে পালিত শিশুর আসল পরিচয় কি ?
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া বইয়ের নাম: কালসন্দর্ভা লেখিকা: অঙ্কিতা প্রকাশক: কল্পবিশ্ব মূল্য: ২৭৫₹
অকাল্ট থ্রিলার লেখাটা খুব একটা সহজ কথা না। একটা পারফেক্ট রহস্যগল্প লেখাটাই অত্যন্ত কঠিন, সেটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন সেটার বিষয়বস্তুটা বেঁধে দেওয়া হয় তন্ত্রে। তন্ত্র এমনিতেই একটু ধোঁয়াশার মত (ব্যক্তিগত মত)। আর সেটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে ফ্যাক্ট কুড়িয়ে নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী দাঁড় করানোটা বড় কঠিন। সেই সঙ্গে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন চ্যালেঞ্জটা হয় পাঠককে ভয় পাওয়াতে হবে। এই সমস্ত হার্ডল লেখিকা নিঃসন্দেহে টপকেছেন এই বই লিখতে গিয়ে। গল্পের প্লট নিয়ে সামান্য কিছুও বলব না। তাহলে পড়ার মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ কিছু বলতে গেলেই ভেতরের কোনো না কোনো রেফারেন্স দিতেই হবে। সেটা দিলেই উপভোগের মাত্রাটা কমে যাবে। গোটা উপন্যাসটাই প্রশংসার দাবী রাখে। তাও কিছু মেজর পয়েন্টস বলি এক এক করে: • অত্যন্ত যত্ন নিয়ে এবং সাবলীলভাবে অজানা তন্ত্রকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন লেখিকা। প্রয়োজন মত ডায়াগ্রাম ব্যবহার, কথোপকথনের ছলে নানা তথ্য প্রদান, যা একটা চাঙ্কে লিখলে বোরিং লাগত, এগুলো দারুণ লেগেছে। • প্রতিটা তথ্যকে গল্পের শেষ অবধি ব্যবহার করেছেন লেখিকা। একবারও মনে হয়নি "যাহ বাবা এই ঘটনাটা কেন ঘটছে" বা "এটা নিয়ে আগে এত বলা হল, কিন্তু তার সার্থকতা কী?" • চরিত্রগুলো অত্যন্ত প্রমিনেন্ট। এমনকি আমি নিজে তৌফিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি এখন। • খুব যত্ন করে লেখিকা টাইম অ্যান্ড স্পেস জাম্পিং করেছেন। • প্লট টুইস্টগুলো চরম প্রশংসনীয়। আর সাসপেন্স ধরে রাখাটাও। • রূপকথার মাধ্যমে বাড়ির ইতিহাস লুকোনোটা প্রশংসার দাবী রাখে। সবশেষে কল্পবিশ্বের কাছে অনুরোধ: এ বই নিয়ে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা কিছু করার কথা ভাবনাচিন্তা করুন প্লিজ। আর সেই সঙ্গে যদি ভাল আর্টিস্ট পাওয়া যায়, একটা গ্রাফিক নভেল হওয়ারও দাবী রাখে এই বই। লেখিকার থেকে আরও এরকম লেখা পড়ার আশা রইল। যাঁরা পড়বেন কিনা ভাবছেন, তাঁদের শুধু একটাই কথা বলব: যদি পড়তে পড়তে শিউরে ওঠার মত ফ্যান্টাসি থেকে থাকে, এ বই অবশ্যপাঠ্য।
শুরুর দিকে বইটা পড়তে একটু খেই হাড়িয়ে ফেলছিলাম। ধীরে ধীরে প্লটের বিস্তৃতির সাথে সেটা ঠিক হয়ে যায়। চরিত্রগুলোর বর্ণনাও কম বেশি ভালো ছিল। অবশ্য কয়েক জায়গায় 'সে/তাকে' দিয়ে কাকে বুঝানো হয়েছে, সেটা বুঝতে সময় লেগেছে। সব টুইস্ট শেষের জন্য না রেখে অল্প অল্প করে প্রকাশ করায় পুরো কাহিনীর প্রতি আগ্রহ ছিল। একশনের বর্ণনা মোটামুটি মানের। এটা পুরোপুরি হরর বই নয়, ভয় পাবার মত বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে, ভয় পাওয়া না পাওয়া সম্পূর্ণটাই পাঠক ভেদে ভিন্ন হবে। থ্রিলিং এর উপাদান আছে প্রচুর। প্রচ্ছদটা খুবই আকর্ষণীয় হয়েছে এটা বলতেই হবে। নতুন সিক্যুয়েল যেন আসতে পারে সেভাবেই সমাপ্তি টানা হয়েছে।