"পরশপাথর, পরশপাথর-- হাজার রাজার ধন, -- কোথায় থাকে পরশপাথর ? কেমন সে রতন ? কোন সে বনে, মরুভুমে, কোন সে নদীর কুলে, সাপের মাথায় বাঘের হাতায় এমন মানিক জ্বলে ? মানিক মানিক -- পরশ মানিক, মানিক মরুর ফুল; মরুভুমে মানিক জ্বলে -- নাইকো তাহার তুল।
" নূরনবী" অর্থাৎ নূরের নবী। নবীকরিম - তিনিই ছিলেন সেই মণি । তাঁর অঙ্গে ছিল নূরের ঝলক -- তাঁর মনে ছিল পুণ্যের চমক । ধর্মের ছবি, -- সবই পুণ্য আর পুণ্যময়।
তাঁর শরীরে কি -- আর মনেই কি, -- কোনখানে এতটুকু ময়লা কি এতটুকু পাপ-- তা তাঁর ছিল না। সূর্যের কথা ভাবো তো? সূর্য কেমন ?খালি আলো আর আলো ; তাতে না আছে কিছু কালো, না আছে কিছু আঁধার । তিনিও ছিলেন ঠিক তেমনি।
মহামানব, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল (স.) এর জীবনী তো অনেক লেখা হয়েছে। তার মাঝে এই বইটা একটুখানি ব্যতিক্রমই বলা যায়। তিনি কি কি ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করে গেছেন তার একটি অতি সংক্ষেপে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সংক্ষেপ বলার কারণ বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা শুধুমাত্র ৬১ । এইটুকুন একটা বইয়ের ভেতরে এতো জ্ঞান এবং দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সম্ভব, তা আমার কল্পনাতীত ছিল। বারে বারে জানা কথাগুলো আবার পড়েই মুগ্ধ হচ্ছিলাম আর একেকটা দম নিয়ে আবার শুরু করেছি।
বইটিতে নবী জীবনের আদর্শের পাশাপাশি রয়েছে তার পূর্ববর্তী আরবের বর্বরতা, সাথে আরো কিছু তৎকালীন ব্যক্তিবর্গের আদর্শ। চমৎকার লেখনশৈলীর পাশাপাশি আরও আছে মাঝে মাঝে কিছু কবিতা; যা বইটির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
বইটির প্রতিটি অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু তবু্ও কোন গল্প উপন্যাসের চেয়ে নেহাৎ কম আকর্ষণ তৈরী করেনি ।
নবী জীবনের দুঃখ কষ্টে লেখক যেন আমার হৃদয়কেও ব্যথিত করে দিলেন । ছোট্ট আকারের বিধায় বইটি যেকোন ধর্মের মানুষের পড়ার উপযোগী। তাই যেকোন বয়সী মানুষ বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
অসাধারণ! শুধু মুসলিম শিশুদেরই না, অন্য ধর্মের শিশুদেরও উপহার দেয়ার জন্য তালিকার ওপরে থাকার মতো এক বই। ধন্য হলাম এয়াকুব আলী চৌধুরীর মতো এমন এক মুসলিম মনীষীর সাথে পরিচিত হয়ে। আল্লাহ তাঁকে শান্তিতে রাখুন! কী সরল গদ্যে ফড়ফড়ে করে বলা হয়েছে, যা কিনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন কঠিন কাজ! হ্যাঁ, এয়াকুব আলীর এই বইয়ের ওপর সপ্রশংস মন্তব্য করেছেন বিশ্বকবি এবং দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি! এটা ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি রেনেসাঁসের অসাম্প্রদায়িকতার পরিচায়কও বটে। নবি করিম (সা.) এর জীবনী যদি পড়াও হয়ে থাকে আপনার, এ বইটা আপনার অবশ্যপাঠ্য।
লেখক এয়াকুব আলী চৌধুরী ধর্মের দার্শনিক যুক্তির প্রতি ছিল গভীর আকর্ষণ। তার সারা জীবনের সাহিত্য সাধনার মূল বিষয় ছিল ধর্মীয় দর্শনের চর্চা।
'নূরনবি' হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর কিশোর পাঠ্যজীবনী। মহানবি কে রূপকথার রাজপুত্র হিসেবে কল্পনা করে অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মধ্যে ঠিক ঐ রকম মহৎ মানুষ হবার স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়ে লেখক বইটি লিখেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটি পড়ে লিখেছিলেন- "নূরনবী পাঠ করিয়া আনন্দিত হইলাম। ইহার ভাষা সরল ও সুন্দর এবং ইহার বিষয় ও রচনাপ্রণালি শিশু পাঠকদের পক্ষে মনোরম। এইরূপ সহজ বাংলায় লেখা কঠিন কাজ"