Jump to ratings and reviews
Rate this book

নীরবিন্দু

Rate this book

506 pages, Hardcover

77 people want to read

About the author

Nirendranath Chakraborty

76 books33 followers
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে, ১৯ অক্টোবর ১৯২৪।পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের বিখ্যাত অধ্যাপক।শিক্ষা: বঙ্গবাসী ও মিত্র স্কুল; বঙ্গবাসী ও সেন্ট পল’স কলেজ।সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দৈনিক ‘প্রত্যহ’ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে আনন্দবাজার প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। একসময় ছিলেন ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক এবং পরবর্তীকালে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।কবিতা লিখছেন শৈশব থেকে। কবিতাগ্রন্থ ছাড়া আছে কবিতা-বিষয়ক আলোচনা-গ্রন্থ। আর আছে উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি।শব্দ-ভাষা-বানান-শৈলী নিয়ে রচিত বিখ্যাত বই ‘বাংলা: কী লিখবেন, কেন লিখবেন’।পুরস্কার: ১৯৫৮ উল্টোরথ, ১৯৭৩ তারাশঙ্কর, ১৯৭৪ সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৭৬ আনন্দ। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি (২০০৪-২০১১)। সাহিত্য অকাদেমির ফেলো ২০১৬। এশিয়াটিক সোসাইটির ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণপদক ২০১৫। কলকাতা (২০০৭), বর্ধমান (২০০৮), কল্যাণী (২০১০) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিদ্যাসাগর লেকচারার হিসাবে ১৯৭৫ সালে প্রদত্ত বক্তৃতামালা ‘কবিতার কী ও কেন’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৯০ সালে লিয়েজে বিশ্বকবি-সম্মেলনে একমাত্র ভারতীয় প্রতিনিধি।শখ: ব্রিজ ও ভ্রমণ।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
11 (57%)
4 stars
7 (36%)
3 stars
1 (5%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 8 of 8 reviews
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
November 12, 2025
কি যে সুন্দর বইখানা! পড়তে এবং দেখতে দুভাবেই জাস্ট দারুনননন। নীরেনবাবু সেই ছোট্টবেলার কথা দিয়ে শুরু করেছেন। ফরিদপুরের চান্দ্রা গ্রামে দাদুর কাছে থাকা সেই সময়ের গ্রামের অবস্থা, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, দুষ্টুমি নিয়ে স্মৃতিচারন করেছেন। এরপর বাবা-মায়ের সাথে কলকাতায় বাস, স্কুলে পড়া, কলেজে পড়ার সময়কাল নিয়ে বিস্তৃত লিখেছেন। উনার গদ্য একদম মধুময়। যা লিখেন তাই পড়তেই ভালো লাগে।
যেহেতু এটা উনার স্মৃতিকথা মূল চরিত্র তিনি নিজে হলেও আরো অনেক অনেক মানুষ এসে ভিড় করেছেন লেখায়। তিনি নিজের কথা বলতে গিয়ে কাকুর কথায় চলে যাচ্ছিলেন এরপর কাকুর বন্ধুর কথা সেখান থেকে কাকুর বন্ধুর দিদিমার কথা এভাবেই এগিয়েছেন, যা লিখতে গিয়ে যা মনে পড়েছে সবই তুলে দিয়েছেন বইয়ের পাতায়। পড়তে গিয়ে মাঝেমাঝে মনে হয় এইরে কোথায় যেন ছিলাম! কোথায় এলাম!
সব মিলিয়ে পড়তে দারুন লেগেছে। বেস মটো বই। যারা স্মৃতিকথা/ আত্মজীবনী পড়তে পছন্দ করেন তারা লিস্টে রাখতে পারেন।
আহা প্রচ্ছদটা কি অসাধারন সুন্দর!
Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
June 3, 2021
কবিদের লেখা জীবনী বা মেমোয়্যার পড়তে আমার ভাল লাগে; তাঁদের জীবনকে দেখার সরলতা সম্ভবত তার একটা কারণ। কবি নীরেন্দ্রনাথের 'নীরবিন্দু'-ও সেজন্যই ভাল লেগেছে। নিজের কবি হয়ে ওঠার চেয়েও তাঁর এত বড় আত্মজীবনীতে তাঁর চারপাশের মানুষ, পরিবার, প্রতিবেশী, সমাজ, দেশ আর সংবাদপত্রই প্রাধান্য পেয়েছে। দেশভাগের আগের, দেশভাগের সময়কার, এবং দেশভাগের অব্যবহিত পরের সময়টুকু নিয়ে নীরবিন্দুর ২ খণ্ড, এবং ২য় খণ্ডে এসে আরো কিছু লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুম করে কাহিনী শেষ! এরপরেও কি আরো কিছু আছে? জানার কৌতুহল আছে, কেউ জানলে জানাবেন।

গোটা লেখায় অনেক কিছুই ভাল লাগলেও তিনটি জিনিস মাথায় গেঁথে গেছে--
১। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ কিন্তু সোজাসাপ্টা বিবরণ। ব্রিটিশরা যে বাংলায় গোটা দুই দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে দুই দুর্ভিক্ষে কোটিখানেকের কাছাকাছি মানুষ মেরে সাফ করে ফেলেছিল, এবং সেই দুর্ভিক্ষের জন্য যে প্রায় সবটাই দায়ী ব্রিটিশ এবং তাদের সহযোগী কিছু দেশি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী, সেটা আজ সবাই জানে। তারপরেও ক্ষুধার্ত মানুষের ভাতের বদলে অন্তত একটু ফ্যান ভিক্ষা করা এবং সেটাও না পেয়ে পালে পালে মরে যাওয়ার কাহিনী পড়লে নিজের অজান্তেই ভেতরটা জ্বলতে থাকে। সারা দুনিয়াকে সভ্যতার সবক দিয়ে বেড়ানো ইংরেজদের কূটনীতি যে কতটা নোংরা আর অন্ধকার, সেটা দেখলে এদেরকে পৃথিবীতে শয়তানের অবতার বলে মানতে আর দ্বিধা হয় না।
২। পরেরটাও ব্রিটিশ সৃষ্ট, দেশভাগের সময়কার দাঙ্গা। উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেয়াও ইংরেজদের আরেক মহান কীর্তি, যদিও এর পেছনে আমাদের মজ্জাগত সাম্প্রদায়িকতারও দায় অস্বীকার করা যায় না।
৩। শুধু এই একটা জায়গার শিক্ষাই আজীবন মনে গাঁথা হয়ে থাকবে, লেখকের বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে স্টিমারে করে যাওয়ার সময় ঝড়ের মুখোমুখি পড়া এবং পদ্মার বুকে সারেংদের লড়াইয়ের বিবরণ। ঝড় শুরু হতেই পাড়ের কাছাকাছি থেকে স্টিমার সরিয়ে আনা হয় মাঝ নদীতে, নাহলে সেটা পাড়ে আছড়ে পড়তে পারে। গুটিয়ে নেয়া হয় পাল, যাতে বাতাস না আটকায়। আর স্টিমারকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় ঝড়ের মুখোমুখি, কারণ বাতাসের দিকে পেছন করলেই নাকি ঝড়ো বাতাসের ধাক্কায় স্টিমাফর উল্টে যাবে। ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাঝনদীতে ঝড়কে মোকাবেলা করাই নাকি পদ্মায় বেঁচে থাকার উপায়। সারেং জানায়--"ঝড়ের মুখে পলাইয়া বাঁচন নাই কত্তা, রুইখ্যা দাঁড়াইতে হয়, সেইটাই নিয়ম"।

যতদিন বেঁচে থাকবো, পদ্মার সারেংয়ের কথাটা মনে রাখার চেষ্টা করবো। জীবন সায়রে পলাইয়া বাঁচন নাই কত্তা, রুইখ্যা দাঁড়াইতে হয়, সেইটাই নিয়ম।
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
May 17, 2020
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!

অমলকান্তি কিংবা উলঙ্গ রাজার মতো কবিতা কিংবা ভাদুড়ী মশাই বা চারুচন্দ্র ভাদুড়ী চরিত্রের স্রষ্টা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মজীবনী বা স্মৃতিচারণা যাই বলি না কেন এই বই-নীরবিন্দু। বইটি দুই খন্ডে দুই সময়ে লেখা হলেও বর্তমান সংস্করণটি অখন্ড। ১৯২৪ সালে ফরিদপুরে জন্ম নেয়া এই কবির শৈশবের অনেকটাই কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। মামাবাড়িও ছিল তখনকার ফরিদপুর তথা বর্তমান রাজবাড়ি জেলায়। এখন তো ঢাকা ফরিদপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে হয়ে গেছে তখন কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু ভাটি এই অঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ। গ্রামে আর কলকাতা শহরে কাটানো শৈশব কৈশোরের বর্ণনা ছিল মন কেড়ে নেয়া।বিভিন্ন ছুটিতে কলকাতা থেকে ফরিদপুরে ভ্রমণের বর্ণনা, সেখানে বা পুরী কিংবা অন্য কোথাও কাটানো ছুটির বর্ণনাগুলোও মুগ্ধ করার মতো। যদিও নিজেকে আদ্যন্ত তিনি বাঙাল বলেই উল্লেখ করেছেন সেই পরিচয়েই গর্ববোধ করেছেন তবে তার ঠাকুরদার আদিবাড়ি ছিল পশ্চিবঙ্গেই। বাবা ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের শিক্ষক, সাবেক ফুটবলার।
ঠাকুরদা, ঠাকুরমা আর এক কাকা ছাড়া বাকিরা কলকাতাতেই থিতু ছিলেন তবে ভাড়া বাড়িতে।

নীরেন্দ্রনাথের ছাত্রজীবনও বঙ্গবাসী স্কুল ও কলেজ, মিত্র ইনস্টিটিউশন ও সেন্ট পলস্ কলেজে কেটেছে। তবে অধ্যাপক বাবার অসুস্থতা ও আর্থিক সমস্যার কারণে ছাত্র জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েছিলেন পত্রিকার কাজে। ল কলেজে ভর্তি হয়েও পড়া শেষ করেন নি হয়ে ওঠা হয় নি এ্যাটর্নীও। অনেক স্বরাজ, মাতৃভূমি, ভারত, সত্যযুগ এমন অনেক পত্রিকায় কাজ করলেও থিতু হতে পারেন নি শুরুর দিকে, কারণ পত্রিকাগুলোই কোনটিই দীর্ঘায়ু লাভ করে নি। পরবর্তীতে তিনি আনন্দবাজার ও আনন্দমেলায় যোগ দেন সেই তথ্য অবশ্য তার আত্মজীবনীতে নেই। প্রথম পর্ব তিনি লিখেছিলেন গত শতকের নব্বই এর দশকে, যার পরিধি ছিল তার মূলত তার স্কুল জীবন বা গত শতকের ত্রিশের দশক পর্যন্ত। তার স্মৃতিচারণায় গত শতকের ত্রিশের দশকের দিনগুলো বড় মধুর হয়ে ফুটে উঠেছে।চল্লিশের দশকের বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে ২য় খন্ডটি যা তিনি আরও অনেক পরে লিখেছেন। গত শতকের চল্লিশের দশকটি ছিল নানা কারণে ঘটনাবহুল, ২য় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা এর সবকিছুরই ধাক্কা লেগেছিল কলকাতা শহরে। কলকাতাবাসী নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন এসব ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী। যদিও এসময় তিনি শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে ভীষণই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাই কলেজ কিংবা পত্রিকা অফিসের বর্ণনা যতটুকু আছে সেরকম বিস্তারিত বর্ণনা অন্য কিছুর নেই। শৈশব কৈশোরের মধুর দিনগুলো ফেলে তিনিও তখন প্রবেশ করেছেন তারুণ্যে। সবকিছুর সাথে সাথে কবিতা লেখাও ঠিকই চলছিল। চলছিল ছাত্রদের পত্রিকা শ্রীহর্ষ সম্পাদনার কাজ। সেই সূত্রেই পরিচয় ও পরিণয় সুষমা দেবীর সাথেও। বিয়েটি যদিও ছিল অসবর্ণ তবু সেই সময়েও এরকম একটি সম্পর্ক রচনা করার সৎসাহস তো নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছিল। সরকারি চাকরি পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিলেন ভালো লাগে নি বলে। অমলকান্তির মতো রোদ্দুর হয়তো হতে চান নি, তবে ভালো বেসেছিলেন সাংবাদিকতাকেই। তাই অর্ধে��� বেতনের অনিশ্চিত পত্রিকার কাজে আবার ফিরে এসেছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে এসে নীরেন্দ্রনাথ তার স্মৃতিচারণাটি শেষ করেছেন। হয়তো আরও অনেক কিছু লেখার ছিল, লেখা হয়ে ওঠে নি।ভালো লাগার মতো একটি বই।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
June 29, 2024
চমৎকার একটা আ��্মকথা। যদিও পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রথম অংশে পূর্ববঙ্গের স্মৃতি বড়ো মায়াময় করে লিখেছেন লেখক৷ তাঁর শৈশব, আত্মীয়স্বজন, বেড়ে ওঠা সমস্ত কিছুই না দেখা ওই সময়টাকে অনুভব করায়।
পরবর্তী জীবনটা তাঁর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার গল্প। কত পত্রিকায় কাজ করলেন, একের পর এক। কত কবি-সাহিত্যিকদের সাথে পরিচয়।
তবে বইটি সম্পূর্ণ হলে ভালো হত। তাঁর কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং প্রথিতযশা কবি হয়ে ওঠার সময়ের কথা পেলাম না। এটা আফসোস এর।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
December 13, 2019
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মজীবনী, যদিও লেখক নিজে এ লেখাকে স্মৃতিকথা বলেছেন। আমি বলবো বইটি স্মৃতিকথার ধাঁচে লেখা আত্মজীবনী। লেখক হয়ত স্মৃতিচারণই করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছেলেবেলা থেকে যৌবন পর্যন্ত সময়ের বর্ণনা একে আত্মজীবনী করে তুলেছে।

ফরিদপুরের ছেড়ে নীরেন্দ্রনাথ ছেলেবেলা থেকে গ্রামের পরিবেশে থাকতে পছন্দ করতেন। যেমন ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। সারাজীবন কলকাতায় চাকরী করে শেষ বেলায় গ্রামে এসে ঠাই নিয়েছিলেন। ফরিদপুরের সে চান্দ্রা গ্রামে নীরেন্দ্রনাথের পিতামহের বসত কী করে তৈরি হলো সে গল্প থেকে শুরু করে দেশভাগ, দাঙ্গা, তাঁর কবি হয়ে উঠতে শুরু করার দিনগুলির কথা তিনি লিখেছেন এ বইয়ে। ছেলেবেলা থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়েছেন তিনি। পাঠককে গল্প বলার মতো করে বলেছেন নিজের জীবনের কাহিনী, সময়ের কাহিনী।

নীরেন চক্কোত্তি কবি মানুষ। কবিতা লেখেন সেই ছোটবেলা থেকে। তাঁর নিজের ভাষায় ‘পদ্য’। সে কবির গদ্যের হাতটি খারাপ হওয়ার কথা নয়। অন্তত তাঁর লেখা গোয়েন্দা কাহিনীতেই সে প্রমাণ আছে। এমনকি ‘নীরবিন্দু’ শুরুও করেছেন বেশ সুন্দর। সেখান থেকেই আগ্রহ বেড়েছিল কিন্তু বই পড়তে গিয়ে দেখা গেলো ‘স্বাদু গদ্য’র বদলে লেখক বেছে নিয়েছেন ‘সহজ গদ্য’। যেমনটা বললাম, গল্প বলার ভঙ্গীতে বলেছেন তিনি। তাই হয়ত সহজ করেই বলতে চেয়েছেন।

‘স্বাদু গদ্য’ হলো না বলে কি সুখপাঠ্য হলো না? না, হলো। সুখপাঠ্য বলেই এক সপ্তাহে পড়ে শেষ করা গেলো। যারা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের বাংলার ছোট কোন মহকুমা শহরের কথা জানতে চান, বিশ-তিরিশ দশকের কলকাতার কথা জানতে চান, কলকাতার বেড়ে ওঠার কথা জানতে চান, নীরেন বাবু তাদের জন্য গল্প আর তথ্যের ঝুলি খুলে বসেছেন এই বইয়ে। নিজের কথা, পরিবারের মানুষের কথার সঙ্গে সঙ্গে এসেছে তাঁর সাংবাদিকতা, সহকর্মী, সমসাময়িক লেখকদের কথা, ভারতের রাজনীতি অর্থনীতিও বাদ যায়নি। সব মিলিয়ে একটা ‘কমপ্যাক্ট প্যাকেজ’।

অখণ্ড ‘নীরবিন্দু’র প্রকাশকাল ২০১৬, প্রথম খণ্ড প্রকাশিত বাংলা ১৩৫৯ এ। দ্বিতীয় খণ্ড সম্ভবত অতি সাম্প্রতিক লেখা। কেননা দ্বিতীয় খণ্ডর মাঝামাঝি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র উল্লেখ আছে। আর শেষ বয়সে স্মৃতিচারণের কারণেই সম্ভবত দ্বিতীয় খণ্ডে কিছু পুনরাবৃত্তিও আছে। কিন্তু বিদগ্ধ পাঠকদের মতো পুনরাবৃত্তিতে আমি তেমন একটা বিরক্ত হই না। তবে ‘নীরবিন্দু’ লেখক শেষ করেছেন পঞ্চাশের দশকের কথায়। আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। তাঁর বিস্তৃত কর্মজীবন পড়ে রইলো। কিন্তু চক্কোত্তি মশাই সে গল্প বলার আর সময় পাননি।
Profile Image for Asif Khan Ullash.
143 reviews8 followers
October 27, 2023
“নীরবিন্দু” কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মজীবনী। সম্পূর্ণ জীবনের কথা বলার সময় কবি পাননি; ২০১৬ সালে দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশের দু’বছরের মাথায় ২০১৮ সালে তার প্রয়াণ ঘটে। এই অখন্ড সংস্করণে কবির শৈশব থেকে অনুর্ধ্ব ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে।

কবির ছেলেবেলা কেটেছে তার দাদাবাড়ি, ফরিদপুরে। এরপর কৈশোর, বাল্যকাল, যৌবন, কর্মজীবন সবই কলকাতায়। সেই ছোটবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত সবরকম অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে এই স্মৃতিচারণে। বিশেষ করে পঞ্চাশের মন্বন্তর ও হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কথা নীরেন্দ্রনাথ বর্ণনা করেছেন সাধারণ এক মানুষের চোখে, কোনপাশেই যার স্বার্থ নেই। বঙ্গবাসী স্কুল, মিত্র স্কুল, বঙ্গবাসী কলেজ, সেন্ট পল’স কলেজ নিজের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের কথাও তার লেখায় বিস্তারিতভাবে এসেছে। সহপাঠী, সহকর্মীদের কথা; অগ্রজ-অনুজদের কথা কারো কথাই বাদ যায়নি। কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাথে। তার লেখা থেকে সে-সময়ের ফরিদপুর এবং কলকাতা বিশেষ করে কলকাতায় বাঙালদের জীবনাচার তো বটেই একইসাথে তৎকালীন বাংলার বৌদ্ধিক সমাজের টুকরো ছবিও পাওয়া যায়।

কবিদের গদ্য বরাবরই সুপাঠ্য, নীরেনবাবুও তার ব্যতিক্রম নন। তবে ভাষার কারুকার্যের চেয়ে তার লেখায় বেশি চোখে পড়ে ভাষা ও বর্ণনার ‘সিমপ্লিসিটি’। একেবারেই আটপৌড়ে ঢংয়ে গল্প বলার মতো লিখে গিয়েছেন তিনি। সেকারণেই অর্ধ-সহস্র পৃষ্ঠার বইটি পড়তে একঘেয়েমি তো আসেই না বরং লেখনীর গুণে পড়া এগোয় তরতর করে।
6 reviews
August 24, 2024
লেখকের জীবনস্মৃতি - পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গের দিনগুলির সহজতম ভাষায় প্রকাশ , বইটি আর তার জীবনকথায় সীমিত নয়। তা তৎকালীন সমাজব্যবস্থা আর সেই সমাজের মানুষগুলো - লেখকের আন্তরিক চেষ্টায় ছবির মত ফুটে উঠে আমাদের চোখের সামনে।
Profile Image for Md. Tahmid Mojumder.
87 reviews7 followers
June 30, 2024
৩.৫/৫

"অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!"
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাথে এই কবিতাংশের মাধ্যমেই পরিচয়। লাইনটা এতটাই ভাল লেগেছিল যে লেখকের আরো কিছু লেখা পড়ার ইচ্ছা তখনই পেয়ে বসে।

বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল রাজবাড়ি-ফরিদপুরের লেখকের বলা বর্ণনাগুলোয় আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি ক্রমাগত।

"বাপের বাড়ির কাউয়াডাও ভালা" এই একটা কথার মধ্য দিয়ে আবহমানকাল থেকে চলে আসা বাবার বাড়ির প্রতি মেয়েদের যে টান তার কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়, যেটা লেখকের মায়ের কথায় উঠে এসেছে।

বিশেষ করে বলতে হয় লেখকের পিতামহ আর বাবার কথা। দুজনেই একই ধাঁচের মানুষ, এবং ইনাদের বর্ণনা যতটুকু পড়েছি, মনে একটা প্রশান্তি অনুভব করেছি। মানুষ তো এমনই হওয়া উচিত! পিতা কিংবা পিতামহ হিসেবে এমন যদি সবাই পেতো পৃথিবীটা অন্যরকম হয়ে যেতো।

"বাবুরা, পলাইয়া বাঁচন নাই, রুইখ্যা দাঁড়াইতে হয়, ওইডাই নিয়ম!" পদ্মায় স্টিমারে করে যাওয়ার সময় ঝড় থেকে বাঁচানোর কৌশল হিসেবে স্টিমারকে ঝড়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়ার সময় সারেঙের বলা এই কথাগুলো বেশি ভাল লেগেছে। কী অসাধারণ জীবনবোধ!

দুইটা বিশ্বযুদ্ধ, ব্রিটিশের শোষণ, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দাঙ্গা এই ব্যাপারগুলো সরাসরি দেখতে পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা বর্ণনা পাওয়া যায় এসব নিয়ে।

প্রথম অংশে লেখকের শৈশব কৈশোরের যে বর্ণনা পাই সেটা উপভোগ্যই ছিল, দ্বিতীয় অংশে সাংবাদিক জীবনের খুঁটিনাটি অনেক বেশি আসায় একঘেয়ে লেগেছে। তবে পড়ার ক্লান্তি খুব বেশি কাবু করতে পারিনি, অনেকদিন পর তাই ৫০০+ পৃষ্ঠার একটা বই পাঁচ দিনে শেষ করতে পারলাম।
Displaying 1 - 8 of 8 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.