লেখকদের নিজস্ব কোন জীবন থাকে না। তাদের জীবন হচ্ছে পরজীবীদের মত। তাদের সৃষ্ট চরিত্রদের জীবনের ওপর ভর করে তাদেরকে বাঁচতে হয়। কিন্তু যখন একজন লেখক রাইটার্স ব্লকের অসহায়ত্বে ভুগতে থাকেন? জীবন ধারন করে বেঁচে থাকার মত আর কোন চরিত্র যখন তার কাছে আর থাকে না? তখন? কোথায় গিয়ে এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি চান তারা? ম্যাডাম আনানসি ফিসফিস করে বললেন- এই শহরে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে লেখকরা একবার গেলে আর কখনো ‘লেখক’ হয়ে ফিরে আসে না।
খুন হতে শুরু হলেন বেশ কিছু লেখক ও প্রকাশক। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে শুরু করল এই প্রকাশনা জগতের এক ঘোলাটে অতীত। কে এই ‘পাছাখানার(!) ভূত’। আদাবরের পরিত্যাক্ত গীর্জায় কি এমন আছে? যার ঘন্টা মনে করিয়ে দেয় ভুলে যাওয়া এক কিংবদন্তী।
এই বিষাক্ত ঘোলা জলে ডুবে যেতে থাকেন জনৈক ভূত লেখক- টাকার বিনিময়ে যিনি অন্যের হয়ে বই লিখে দেন, একজন ক্রিমিনোলজিস্ট এবং ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের একজন ক্লান্ত এজেন্ট; ডুবে যেতে থাকেন গভীরে, আরো গভীরে। একজন লেখক, যিনি টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে বই লিখে দেন, আর একজন লেখক যিনি খ্যাতির মোহে বই লিখে যান। দুজনের সমান্তরাল জীবন মিলে যায় এক ফোঁটা রক্ত বিন্দুতে।
ঢং করে ঘড়িতে ঘন্টা বাজে, আর নিমি নামের বিড়ালটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে- সময় কত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে!
কোন কোন বই থাকে যেগুলো আপনাকে একবসায় শেষ করতে হয় এবং শেষ করার পরে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়! এটা এমনি একটা বই।
গতবছর সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে গুডরিডসে একজনের রিভিউ দেখে বইটা খুব পড়তে ইচ্ছে করে, নতুন বই দেখে কোন পিডিএফ ও ছিলনা। এটা বুকস্ট্রিট থেকে প্রকাশিত বই দেখে তাদেরকে নক দিই বইটা কুরিয়ার করা যাবে কিনা, কিন্তু বুকস্ট্রিটের ভাইয়া জানায় বইটা স্টক আউট! এইবছর আবার প্রিন্ট হবে সেটা জানায়, এদিকে আমিতো বইটা পড়ার জন্য জান যায় যায় অবস্থা।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আমি ২৮৭ পৃষ্ঠার একটা বই একবসায় শেষ করলাম। রোলারকোস্টার রাইড ছিল বলতে হয়। এবং 'একাত্তরের কানাগলি' পড়ার পরে এমন ভালো থ্রিলার খুব একটা পড়িনি। এটা আমার পড়া এখন পর্যন্ত বেস্ট থ্রিলার বলতেই হয়। বিদেশে এই বই বের হলে বেস্টসেলিং এর পাশাপাশি বেস্ট এডাপ্টেশন ও হতো।
আমি বইয়ের প্লট নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিনা, কারণ বইয়ের নামটাই যথেষ্ট বইটা পড়ার আগ্রহ জাগানোর জন্য। তারপরেও একটু বলি, গল্পটা সুকান্ত নামে একজন ঘোস্ট রাইটারের, যে টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য বই লিখে দেয়। আর একটা লেখক সংঘ, যারা 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' নামে পরিচিত, একজন ক্রিমোনোলজিস্ট এবং ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের একজন ক্লান্ত এজেন্টের গল্প। ডিটেকটিভের দরকার পরে কারণ হঠাৎ করেই একজনের পর একজন রাইটার খুন হতে থাকেন, যদিও খুনি কে আমি বইয়ের মাঝামাঝিতে এসেই গেস করে ফেলসিলাম, তবুও পড়তে একটু খারাপ লাগেনি। লেখকের লেখনী খুবই সুন্দর, পড়ে বোর হওয়ার একদমই কোন চান্স নাই। মোটকথা আপনি বই শেষ না করে উঠতে পারবেন না।
এই বই আমার ঘুম কেড়ে নিসে, আজকে আর ঘুম আসবেনা। আর আমার খুব ভয়(আমি অনেক ভীতু) করতেসে, যদিও বইতে শুধু লেখকদের-ই খুন করা হয়, তারপরেও ভয় পাচ্ছি কখন না আমি খুন হয়ে যাই!
পার্ফেক্ট থ্রিলার বইয়ের এক্সাম্পল চাইলে এই বইটাকে আমি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চাই। আমি বইটা যখন শেষ করেছি, তৃপ্তি নিয়ে এই বাক্যটাই বলেছি মনে মনে।
থ্রিলার বইয়ে পার্ফেক্ট ডিটেইলিং এর একটা অভাব আমি সবসময়ই বোধ করি। দেখা যায় অযাচিত পারিপার্শ্বিক বর্ণণা, অপ্রয়োজনীয় ঘটনা, ইতিহাস পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে গেলাম। তারপর গল্পের শেষে জানলাম এতক্ষণ যা পড়লাম এইটা আসলে কোনো লাইনেই পড়েনা। মূল ঘটনাই বদলায় গেলো শেষে। তারপর জোর করে মানতে হয় 'এইটা হলো ডিটেইলিং। তাই বই মোটা!' অথচ কম পৃষ্ঠায় এত বড় প্লট কতসুন্দরভাবে সব তুলে ধরে লেখা সম্ভব এই বইটা তার উদাহরণ।
জুবায়ের আলমের এই বইটা আমার প্রচন্ড ভালো লেগেছে যেসব কারণে তার মধ্যে সবার প্রথম কারণ চমৎকার ডিটেইলিং আর স্টোরিটেলিং। মূল গল্প যে লেখক, প্রকাশক, ছাপাখানা কিংবা বইপাড়া কেন্দ্রিক সেটা নাম পড়েই বুঝে গেছেন হয়তো। একের পর এক লেখক, প্রকাশক, ঘোস্ট রাইটা হত্যা হতে থাকে এই শহরে। সেগুলো তদন্ত করতে গিয়ে একটা দারুণ ঘোরপ্যাঁচ সৃষ্টি হয়। যেখানে সুকান্ত নামের এক ঘোস্ট রাইটার ফেঁসে যায়। মাঝে আবির্ভূত হয় এক লেখক সংঘের নাম, যেখানে লেখকরা চর্চার মাধ্যমে রাইটার্স ব্লক কাটাতে যান। এভাবেই আগাতে থাকে ঘটনা।
তদন্ত, গল্পের প্লট, একটা টানটান আবহ তৈরি করে রেখেছিলো পুরোটা সময় জুড়েই। হাত থেকে নামানো কঠিন। জাত লেখকের মতো লেখকের লেখনীও এত চমৎকার আর সুখপাঠ্য, পড়তে দারুণ আরাম। এখানে সব ছোট ছোট ক্যারেক্টার গুলোও সবাই ঠিকঠাক গুরুত্ব বহন করে গেছে, শুধু শুধু কেউ গল্পে ঢোকেনি। কে যে নায়ক, প্রধান ক্যারেক্টার, কে যে আসল দোষী এটা নিয়ে একটা ভালো বিতর্ক বসানো সম্ভব এই বই নিয়ে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার আপনি তদন্ত কি হচ্ছে না হচ্ছে পড়ছেন যখন, আপনি বুঝছেন তারা ভুল পথে এগুচ্ছে পুরোটা পথ...কিন্তু আপনার চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই!!
গল্পের ছলে লেখক কিছু সুক্ষ্ম ইংগিত দিয়েছেন বইপাড়া, প্রকাশনী পাড়ার। লেখকদের মনের দুঃখ, বিষন্নতা। আবার একই সাথে ক্ষমতার অপব্যাবহার, নির্দোষ ব্যক্তির ফেঁসে যাবার পরিণাম...এই ধরণের ব্যাপারগুলো নিয়ে তিনি ইঁদুর বিড়াল খেলেছেন খুব সুন্দরভাবে। শেষতক যাবার আগেই হয়তো আপনি ধরে ফেলতে পারবেন কে ঘটনা গুলো ঘটাচ্ছে। তার জন্য আপনাকে কিছুটা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে বৈকি। তবে টুইস্ট কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা ছিলোনা পুরো গল্পের আবহে, যেকারণে পাঠকের বইয়ের মাঝে এসেই টুইস্ট কি আন্দাজ করবার জন্য চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন পরবেনা। বরং এরপর কি হলো? এই প্রশ্নটাই আপনি করে যাবেন পুরো সময় জুড়ে। পরিমিত সবকিছু ভালো লাগে৷ যেটা আমাদের থ্রিলার লেখকগণ যেদিন বুঝে যাবেন, এই জনরা থামানো মুশকিল হয়ে যাবে।
লেখক বইটার মূল ঘটনা শেষ করলেও শেষ লাইনে গিয়ে মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে গেছেন। লেখক জুবায়ের আলমকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম দারুণ একটা থ্রিলার আমাদের উপহার দেবার জন্য। আমি থ্রিলার রেকমেন্ড করলে অবশ্যই এই বইটা লিস্টে থাকবে। তাই যদি না পড়ে থাকেন, আমার মনে হয় এই বইটা আপনার হাতে তুলে নেবার সময় এসে গেছে!
নি:সন্দেহে বইয়ের প্লট খুব ইউনিক। বইটা নিয়ে চারদিকের এতো উচ্ছ্বাসের কারণে অনেক দিন থেকেই আগ্রহের তুঙ্গে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্টার্টিংটা দুর্দান্ত হলেও এন্ডিংটা একটু 'কেমন যেন' টাইপ হয়ে গেল। কিছু জায়গায় মনে হয়েছে গোঁজামিল কিংবা তাড়াহুড়া (নাকি অন্যকিছু?) সুন্দর লেখনীর জন্য তরতরিয়ে পড়া হয়ে গেছে, প্লটও সুন্দর ছিল কিন্তু পড়া শেষে কী যেন একটা খুঁচাচ্ছে। খচখচ করছে.. মনে হচ্ছে আমি যেন কিছু প্রশ্নের উত্তর পাইনি। মাঝামাঝি টাইপ।
স্বভাবসিদ্ধ নিয়মে প্রথমেই খানিক পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাই৷ সিরিয়াল কিলিং/সাসপেন্স/মার্ডার মিস্ট্রি পাঠকদের জন্যটা বইটা মাস্ট রিড গোত্রের৷ বইয়ের প্লেট বেশ ইউনিক লেগেছে৷ গতানুগতিক থ্রিলার থেকে অত্যন্ত ভিন্ন ধাঁচের—ভিন্ন স্বাদের—ভিন্ন মশলার৷ একদম প্রথম পাতা ১০১ থেকে শেষ পুনশ্চ অব্দি — বইয়ের সামগ্রিক আবহাওয়ায় একটা ইন্টেন্স/গুরুগম্ভীর ভাবের হাতছানি ছিলো৷ এইটাই জুবায়ের আলমের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য — যা গল্পের ভাবনাকে অবিকৃত রেখে ভেজালহীন পূর্ণতা এনে দেয়৷ এমন চমৎকার বর্ণনাভঙ্গিতে দৃশ্যগুলো ভিজুয়ালাইজ করতে আরাম পাই৷ এই ব্যাপারটা লেখকের 'প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প' বইয়েও টের পেয়েছিলাম৷ (add on: প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প বইয়ে আমার সারাক্ষণ তুম্বাড় মুভির ঘোলাটে ধূসর মেঘাবৃত বৃষ্টিমুখর পরিবেশের কালার গ্রেডিংটা মাথায় ছিলো)৷ সচারাচর থ্রিলার বইয়ের এমন শক্তপোক্ত মসৃণ লেখনী নজরে আসে না৷ আরেকটা জিনিস ভালো লাগলো যে লেখা বাহুল্যবর্জিত (স্লাইড ক্যালিপার্স ধরে একদম মেপে মেপে লিখেছেন!)৷ বর্তমানে লেখকরা গল্পের ডালপালা গজানোর জন্য ডিটেলিং এর নামে গল্পের ভেতর অতিরিক্ত কথাবার্তা উদ্গিরণ করেন৷ যা একসময় পাঠকের কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর ঠেকে (যেমন, সম্প্রতি পড়া মুশফিক উস সালেহীনের 'ঋ')৷ একইভাবে প্লটের খাতিরে মঞ্চে আগত চরিত্রদের আনাগোনাও ছিলো সুবিন্যস্ত৷ প্রতিটা চরিত্রকে প্রয়োজনের বেশি টাইমিং দেওয়া হয় নাই এবং গল্পে সবার ই প্রভাব বজায় ছিলো৷ সবশেষে, গল্পের পরিণতিও একদম স্যাটিসফাইয়িং৷ তবে কমতি লেগেছে যে খুনের মোটিভ নিয়ে লেখক ঠিকভাবে এক্সপ্লোর না করায় মোটিভটা খানিক খাপছাড়া লেগেছে৷
(তুম্বাড় মুভির দৃশ্য)
লেখকরা বেঁচে থাকেন নিজেদের সৃষ্ট চরিত্রদের জগতকে আঁকড়ে ধরে৷ সেই জগতে পরজীবির মত বেঁচে থাকা লেখকরা বাস্তবজীবনে একেবারেই ভিন্ন৷ কিন্তু যখন একজন লেখক রাইটার্স ব্লকের অসহায়ত্বে ভুগেন, তখন? এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির উপায় কি? যে কলম ফুঁড়ে শব্দজগত সৃষ্টি হয়, সেই কলম কি হতে পারে খুনের অস্ত্র? ম্যাডাম আননাসি বলেন, এই শহরে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে লেখকরা একবার গেলে আর কখনো 'লেখক' হয়ে ফিরে আসে না৷ কোন সে জায়গা? খুন হতে শুরু করে বেশ কিছু লেখক ও প্রকাশক৷ ইনভেস্টিগেশনে নামের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের একজন ক্লান্ত এজেন্ট আর একজন ক্রিমিনোলজিস্ট৷ তদন্তে বেরিয়ে আসে একটি নাম — 'পাছাখানার(!) ভূত'৷ কে এই 'পাছাখানার (!) ভূত'? ক্রমেই খুনের সাথে জড়িয়ে পড়ে ভূত লেখক সুকান্ত, যে টাকা বিনিময়ে অন্যর বই লিখে দেয়৷ অন্যদিকে আছে যশ খ্যাতির মোহে আবিষ্ট লেখক হিরণ পাশা৷ ভাগ্যর নির্মম খেলায় দুইজন মিলিত হয় এক ফোঁটা রক্ত বিন্দুতে৷ শেষে?
Who is more to be pitied,a writer bound and gagged by policemen or one living in perfect freedom who has nothing more to say? - Kurt Vonnegut - শব্দযাত্রা লেখক সংঘ - সুকান্ত, প্রেসের একজন টাইপিস্ট এবং নানা রকমের বইয়ের গোস্ট রাইটার। মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যার। কিন্তু সেই জীবনে সমস্যা শুরু হলো যখন বই নিয়ে জড়িত বিভিন্ন ধরনের মানুষ খুন হওয়া শুরু করে। আর সে না চাইতেও জড়িয়ে পড়ে এ রহস্যে। - আমানুল্লাহ আমান, ডি.বি. এর এক বিশেষ শাখার চীফ, একটি টিম গঠন করে এ হত্যাকান্ডগুলো তদন্তে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে পাওয়া যায় এক অদ্ভুত চিরকুট।এদিকে তাদের টিমে যোগ দেন ক্রিমিনোলজিস্ট জয়েনুদ্দিন। - এখন কে বেছে বেছে এ ধরণের সিরিয়াল কিলিং করছে? তার সাথে সুকান্ত কিভাবে জড়িয়ে পড়ে? আমানুল্লাহ, জয়েনুদ্দিন আর তাদের টিম কি পারবে এই সিরিয়াল কিলারকে ধরতে? "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ" আসলে কি? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক জুবায়ের আলমের সিরিয়াল কিলিং বিষয়ক সাসপেন্স থ্রিলার "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ"। - "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ" মুলত সিরিয়াল কিলিং বিষয়ক একটি সাসপেন্স থ্রিলার। গল্পের প্লটটি বেশ ইউনিক লাগলো। তবে বইতে সবচেয়ে দুর্দান্ত লেগেছে এর লেখনী, একেবারেই আনপুটডাউনেবল ধাঁচের লেখা। কাহিনী প্রথম থেকেই গতিশীল যা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। বাংলা ভাষায় সিরিয়াল কিলিং নিয়ে এত ভালো মানের লেখা অন্তত আমার খুবই কম পড়া হয়েছে। - "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ" বইয়ের চরিত্রায়নের ভিতরে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সুকান্ত এবং মুনশী মোয়াল্লেম চরিত্র দুটি। বইয়ের জগতের এক অন্ধকার দিকও ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন লেখক। বইটির ফিনিশিংও বেশ ভালো লাগলো। - "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ" বইটির মূল সমস্যা মনে হয়েছে এর সম্পাদনায়। পুরো বইটি বেশ অগোছালো মনে হলো। বানান ভুল এবং সিলি প্রিন্টিং মিস্টেক ছিল বেশ পরিমানে। পরবর্তী সংস্করণে বইটি আরো ভালোভাবে সম্পাদনা করা উচিত। তবে বইটির বাঁধাই এবং কাগজের মান ভালোই। প্রচ্ছদটিও চমৎকার, বিশেষ করে নামলিপিটি। - এক কথায়, বাংলা ভাষায় সিরিয়াল কিলিং নিয়ে খুবই ভালোমানের একটি বই "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ"। যারা সিরিয়াল কিলিং, মার্ডার মিস্ট্রি কিংবা সাসপেন্স থ্রিলার পড়তে পছন্দ তাদের জন্য মাস্ট রিড একটি বই। লেখকের পরবর্তী কাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম।
এই প্রথম মৌলিক কোনো থ্রিলার পড়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। আর তাই এই প্রথমবার আমার রিভিউ লেখার চেষ্টা করা। আসলে এটা রিভিউ এর রিকয়ারমেন্ট পূরণ করতে পারবে কি না জানি না তবে এই হবে কিছু একটা!
বইটা যিনি লিখেছেন তিনি লিখতে হবে বলে লেখেননি, বরং লিখতে পারেন বলেই লিখেছেন। অর্থাৎ লেখার ভিতরে কৃত্রিমতা নাই একেবারেই।আর স্বভাবেই লেখক হওয়ার কারণে প্লটটা জোড়া তালি দেয়া মনে হয়নি। বিদেশি থ্রিলারগুলো আমার ভালো লাগে যেসব কারণে তার মাঝে একটা হলো সেখানে 'লিটল ডিটেইলস' গুলো খুব ভালোভাবে লুকিয়ে থাকে। যেসব না লিখলেও প্লটে কোনো পার্থক্য হয় না কিন্তু সেসবই 'থ্রিল' দেয়ার বা 'গল্পের নিজস্ব জগৎ' সৃষ্টির পিছনের রহস্য আর এই বইয়ে সেইটা আমার চোখে পড়েছে। গল্প শুরুর আগে ভূমিকা অংশটুকু বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহ অনেকখানি বাড়িয়ে দেয় যা পরে কৌতূহলের সাথে মিশে গিয়ে বইয়ের শেষ লাইন পর্যন্ত টিকে ছিলো!
ডেফিনেটলি ইউনিক প্লট, দারুন স্টোরি টেলিং! গেসিং গেম খেলে যেতে বাধ্য করেছে লেখক বই এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু চরিত্র এত দূর্বল কেন? বিল্ড এ সময় নিলেও কেন জানি ফুটে ওঠেনি৷ আবার ফিনিসিং এমন একটা তড়িঘড়ি ভাব যেন কেউ লেখকের পিছে কলম নিয়ে ধাওয়া করেছে!
লেখকের প্রটেনশিয়াল আছে, পল্ট এর সম্ভবনা ছিল। কিন্তু নষ্ট হয়েছে। ব্যাটেবলে হয়নি। তবে লেখকের কাছে থেকে ফিউচারে দারুন কিছু আসলে মোটেই অবাক হব না।
কাহিনীর বৈচিত্রেই হোক, কিংবা সুতীক্ষ্ণ লেখনীর দিক দিয়েই হোক, 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' যে গতানুগতিক থ্রিলারের তুলনায় অনেকাংশেই আলাদা কিছু, সেটা উপলব্ধি করতে এই বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট। এ যাবৎ পড়া সবচেয়ে প্রিয় থ্রিলারের তালিকায় একেবারে উপরের দিকেই থাকবে জুবায়ের আলমের দুর্দান্ত এই উপন্যাস। এই লোকের পরবর্তী বই আসছে সামনের মাসে, অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম।
জুবায়ের আলম একজন জাত লেখক। প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত তার প্রমাণ পাওয়া যায়। গতানুগতিক থ্রিলারের তুলনায় কাহিনীতে যেরকম বৈচিত্রতা আছে তেমনি চরিত্র আর বর্ণনার গাঁথুনিও আঁকড়ে ধরে শুরু থেকে। আশা করা যায় তার কাছ থেকে নিয়মিত এরকম উপন্যাস পাবো আমরা।
ধারণায় নতুনত্ব ছিল, প্রথম ১০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কাহিনিও মোটামুটি চলছিল। এরপর লেখকের মনে হলো, এলোপাতাড়ি ছররা গুলি না মারলে পাখি (অথবা পাঠক) মরবে না, কাজেই এ-গলি সে-গলি ঘুরে, এই চরিত্র সেই চরিত্র এনে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কাজকর্মে অবিশ্বাস্য রকমের গোঁজামিল দিয়ে, এবং শেষটায় কোন কার্যকর ব্যাখ্যা না দিয়ে (সেই পুরানো কিভাবে জানি কি হয়ে গেল, গুলি করলেও জায়গামত লাগলো না, প্রটাগনিস্ট কিভাবে কিভাবে যেন সব বুঝে গেল, ইত্যাদি ইত্যাদি) এবং ভিলেন কেন কি করলো কিভাবে করলো সবকিছু তালগোল পাকিয়ে বই শেষ। আর এই এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে গিয়ে আর সেগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করতে গিয়ে বইটাও অহেতুক কমপক্ষে আরো ১০০ পৃষ্ঠা টানা হলো। এর মাঝে আছে লেখকের মাঝে মাঝেই লম্বা রাজনৈতিক মনোলগ, দেশ-জাতি-ন্যায়-অন্যায় নিয়ে লেকচার। লেখকের আব���গ বা মতের প্রতিফলন তার লেখায় আসবে সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেটা কাহিনির মাঝে মিশে না গিয়ে যদি আলগা লেকচারের মত শোনায় তো সেটাকে সাদা দেয়ালে পানের পিকের মতই মনে হয়। সাথে যোগ করুন পাঠককে ছাগল ভেবে গাঁজাখুরি তথ্য গেলানোর প্রচেষ্টা (পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নাম-পরিচয়বিহীন লোককে খুনের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া বা সেটার সুপারিশ করা, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি দুই মাসের মাঝে এফবিআইতে চাকরি পেয়ে যাওয়া, ইত্যাদি), তখন পুরো লেখার ভাল দিকগুলোও ধামাচাপা পড়ে যেতে বাধ্য। আরেকটা ব্যাপারও ইদানিং খুব চোখে লাগে; নতুন থ্রিলার লেখকরা প্রায়ই নিজের ভাই-বেরাদরদের একেবারে নামধাম পেশাসহ বইয়ের চরিত্র বানিয়ে পিঠ চুলকানোর চেষ্টা করেন, নয়তো অ্যান্টি-ভাইবেরাদরদের নেগেটিভ চরিত্র বানিয়ে তার পিঠের ছাল ছাড়ানোর অপচেষ্টা চালান। এই লেখাতেও সে জিনিস বেশ নগ্নভাবে উপস্থিত, কিন্তু বিরক্তিকর ব্যাপারটা রেফারেন্স দিয়ে উল্লেখ করতে ইচ্ছা করছে না। এই গোষ্ঠীপ্রীতি বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিজেদের মাঝে যত খুশি চালাক, কিন্তু সময় আর অর্থ ব্যয় করে যে পাঠকরা বই পড়েন, তাদের এই কুরুচিকর অনুশীলনের মাঝে না টানা অত্যাবশ্যক। প্লটের নতুনত্বের জন্য ৩, প্রায়োগিক ব্যর্থতার জন্য মাইনাস ১, আর পাঠককে ছাগল ভাবার জন্য মাইনাস ১, সব মিলিয়ে রেটিং ১।
কিছু কিছু বই আপনাকে বোকা বানাবে। কিছু কিছু বইয়ের শেষটা স্তব্ধ করে দিবে।
আপনি কি একজন লেখক? রাইটার্স ব্লকে ভুগছেন? আপনার সমস্যা সমাধানে রয়েছি আমরা। "শব্দযাত্রা লেখক সঙ্ঘ"। আমাদের কোনো শাখা নেই।
রহস্যময় ভাবেই শহরে এক এক করে খুন হতে থাকল লেখক, প্রকাশক, চিত্রনাট্যকার ও লেখালেখি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সমূহ। খুনের অস্ত্র বিশেষ ধরনের এক কলম। কে করছে এ খুনগুলো?
এ খুনগুলোর সমাধান করার দায়িত্ব পড়ল সিনিয়র ডিটেকটিভ আমানুল্লাহর হাতে। হুট করেই শহরের বিশিষ্ট প্রকাশক অপরেশ পাল তাকে তদন্ত করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু কেন?
সুকান্ত। একজন ভূত লেখক। অপরের হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে বই লিখে থাকে। হটাৎ করেই তার হাতে একটা রহস্যময় পেনড্রাইভ এসে পড়ল। তাকে একটি বই লিখতে হবে। না লিখলে খুনগুলো বন্ধ করা যাবে না। বইটা লিখতে গিয়ে সে নিজেকে জড়িয়ে ফেলল খুনগুলোর সাথে। খুনি কি সুকান্ত নাকি সে শুধুমাত্র একটি ঘুটি?
অদ্ভুত ক্রিমিনোলজিস্ট জয়েনউদ্দিন। তার ক্ষমতা রয়েছে খুনের হুবুহু বর্ণনা দেয়ার। সে কি পারবে খুন গুলোর সুরাহা করতে?
অপরাধবিষয়ক লেখক অর্থনীতিবিদ জুবায়ের আলম স্ট্রাইকস অন্স এগেইন। তার দ্বিতীয় বই 'শব্দযাত্রা লেখক সঙ্ঘ'। প্রথমেই তার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য এরকম টানটান উত্তেজনাময়ী আরেকটা সিরিয়াল কিলিং বিষয়ক থ্রিলার উপহার দেয়ার জন্য। আমার জানামতে সালমান হকের তিন ডাহুকের পর এটা সিরিয়াল কিলিং নিয়ে লেখা বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৌলিক থ্রিলার। আমার মতে বইটাতে কোনো অপ্রাসঙ্গিক কোনো আলোচনা নেই। খুনগুলোর নিখুঁত বর্ণনা সহ সুন্দরভাবে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিতে উঠে এসেছে একজন লেখকের অভিজ্ঞতা,নিঃসঙ্গতা, অন্ধকার দিকসমূহ। নিঃসন্দেহে বইটা পেজ টার্নার। রহস্যের জট খুললে অবাক হতে হয়। শেষে একটা প্রশ্ন থাকল। বইয়ের নায়ক আসলে কে? ডিটেকটিভ আমানুল্লাহ? সুকান্ত? নাকি অন্ধকারে আচ্ছন্ন খুনি? সেটা আপনারা পড়ার পর সিদ্ধান্ত নিবেন। সুতরাং রগরগে সিরিয়াল কিলিংয়ের মজা নিতে চাইলে শীতের সন্ধ্যায় খুলে বসুন 'শব্দযাত্রা লেখক সঙ্ঘ'। হ্যাপি রিডিং।
সুকান্ত একজন প্রেত লেখক । তবে এটা কেউ জানে না । অপরের হয়ে যে গল্প লিখে দিতে তার ভালো লাগে সেরকম নয় এমনকি কাজটা যে সে অর্থের জন্য করে তাও না… লেখা বিক্রি করতে তার ঠিক মন্দ লাগে না । আরেকজনের হয়ে লেখার পর সেই লেখা সম্পর্কে আর কোন খোঁজখবর নিতে ইচ্ছা করে না । সুকান্তর কোন কিছুর উপর তেমন কোন মোহ নেই ! জীবন তারে যতখানি দিয়েছে তার বেশি যে ছিনিয়ে নিয়েছে এই ব্যাপারটা সুকান্ত যেমন জানে তার জীবন ও জানে । কিন্তু কেউ ই স্বীকার নিজেদের কাছে করে না । এভাবেই চলে যাচ্ছিলো । একদিন হঠাৎ খবর এলো প্রেসপাড়ার একজন প্রকাশক খুন হয়েছে । খুনের পদ্ধতি বিচিত্র । খুনি যেন বোঝাতে চায় খুন করার জন্য ছুরি , বন্দুকের কি দরকার যদি সামান্য কলম দিয়েই তা করা যায় । হ্যাঁ কেউ কলম দিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে পালিয়ে গেছে ।খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য দায়িত্ব নেন আমানুল্লাহ । দক্ষ অফিসার হওয়া স্বত্ত্বেও খুনীর কোন নাগাল তো পাচ্ছেন ই না উল্টো খুনের সংখ্যা আরো বাড়ছে । সেই একই অস্ত্র । ক - ল - ম রাইটার্স ব্লক লেখকদের জন্য একটা অভিশাপ । এই সময়ে লেখকরা এতোই মানসিক ভাবে বেড়াছেড়া অবস্থায় থাকেন যে তাদের খুব সহজেই ব্রেন ওয়াশ দেওয়া যায় । কিছুই চাই না শুধু একটু লিখতে চাই আশায় থাকা লেখকদের অবস্থা হয় দড়ি ছিঁড়ে ফেলা উন্মাদ গরুর মতো যেই গরু জানে না স্বাধীনতা কিভাবে উদযাপন করতে হয়... যাই হোক প্রাচীন কালে যেভাবে গুপ্তঘাতক তৈরি করা হতো এবং ট্রেনিং দেওয়া হতো সেইভাবে রাইটার্স ব্লক থেকে মুক্তি পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে কিছু দিকভ্রান্ত লেখকদের কিভাবে আবার লেখা শুরু করা যায় সেই ট্রেনিং দেওয়া শুরু করা হলো । ট্রেনিং সেন্টারের নাম শব্দযাত্রা লেখক সংঘ
প্রথমে বলতে হয় লেখনীর কথা!! সত্যি বলতে এমন লেখা পড়ি না অনেকদিন... সাহিত্যিক গুণ ছিল লেখাতে! আর এখানে অনেক philosophical কথাবার্তা আছে যা অসাধারণের চেয়ে বেশিকিছু, আর এগুলো থেকে বুঝা যায় লেখকের চিন্তাভাবনা কতটা উন্নত আর উঁচু পর্যায়ের!
আর গল্পটাও ছিল অসাধারণ! এমন জিনিস মিস করা উচিত হবেনা! একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থ্রিলার... হঠাৎ হঠাৎ এমন এমন কিছু ধাক্কা দেয় যা অভাবনীয়! বিশেষ করে আমাদের দেশের তদন্ত ব্যবস্থার যে অসঙ্গতি তা ভালভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। এই দেশে একজন সৎ মানুষের তদন্ত করতে নামলে যে কত বাদা পোহাতে হয় তা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে...
এই লেখকের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল এটা বলব আমি। আমার মতে উনি শুধু সমকালীন/ক্লাসিক ধারার গল্প লেখকেও বেশ সুনাম অর্জন করবেন... সবদিক দিয়ে এই বইকে মাস্টারপিস বলতে হয়!
এত সুন্দর ভাষা, মুগ্ধ হতে হয়। রহস্যটাও অন্যরকম। রহস্য উপন্যাসে লেখালেখি নিয়ে এরকম চমৎকার দার্শনিক আলাপ দুর্লভ। প্লটে আর চরিত্রগুলোয় অনেকগুলো বড়সড় ফাঁক থাকলেও বইটা রীতিমতো উপভোগ্য। সেরা চরিত্র জয়েনউদ্দিন। চার জুনিয়র এজেন্টের চরিত্রও অনেক ভালো লেগেছে।
আমার আছে বইটা অনেক ভালো লেগেছে, প্লটটা যেমন ইউনিক, লেখনীও বেশ পরিপক্ক। বইটা নিয়ে বেশ ভালো রিভিউ পেয়েছি এবং আমারো ভালো লেগেছে। পুরো বইটা পড়ে যেমন ভালো লেগেছে, এন্ডিংটা আরেকটু মনমতো হলে পুরোপুরি ভালো লাগতো। লেখকের প্রথম বই পড়ে বাকি বইগুলো পড়ার আশা রাখি।
অনেকদিন পর মৌলিক থ্রিলার ধরেছিলাম, এবং ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যেই প্রায় ৩০০ পাতার বইটা শেষ করতে বাধ্য হলাম। জুবায়ের আহমেদের লেখনশৈলী অদ্ভুত সুন্দর। সাথে ইউনিক প্লট, গতিশীল কাহিনী এবং বেশ কিছু চমক মিলিয়ে বইটা হাত থেকে রাখাই দায় হয়ে পড়েছিলো। এমন গ্রীপিং মৌলিক থ্রিলার অনেকদিন পড়া হয়নি আমার। থ্রিল, রহস্য, রোমাঞ্চ আর বিভিন্ন প্রশ্নের মাঝে খাবি খেতে থাকা পাঠক মুগ্ধ হবেন লেখকের পারিপার্শ্বিক বর্ণনায়ন আর আবহ তৈরীর ক্ষমতায়ও। বিশেষ করে সিলেটের হাওর এলাকার যে ডার্ক একটা এনভায়রনমেন্ট লেখক এখানে ফুঁটিয়েছেন তা শরীরের লোম দাঁড় করিয়ে দিতে বাধ্য। বাংলাবাজার এবং এর আশেপাশের পুরোনো ঢাকার এলাকা গুলোর বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছিলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে। খুনের বর্ণনা গুলোও ছিলো টপ নচ। খুনগুলোর বিভৎসতা যেনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। আর রহস্যের কানাগলি? সেটাও ছিলো মাথা এলোমেলো করে দেয়ার মতো। কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে এই ভাবনার পাশাপাশি আপনার মাথায় তৈরী হওয়া বিভিন্ন ধারণাগুলোও উল্টেপাল্টে যেতে বাধ্য। আমার ক্ষেত্রে বইয়ের সবচেয়ে বড় চমকটা ছিলো এর মাঝামাঝিতে হওয়া ওই রথের ঘটনাটা। আই ওয়াজ লাইক, "হোয়াট দ্য.... "!! এমনকি সেই ঘটনার বর্ণনা পড়েও মনে হচ্ছিলো আমি সেখানেই আছি। বইয়ের বেশকিছু জায়গায় লেখকের শব্দচয়ন আর উপমার ব্যবহার ছিলো দূর্দান্ত। বইয়ে অনেক চরিত্র থাকলেও, গল্পের ঘটনাবলী এতো দ্রুতলয়ে এগুচ্ছিলো যে কোনো চরিত্রই পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হতে পারেনি। তবে একটা ব্যাপার যেটা ভালো লেগেছে তা হলো প্রতিটা অধ্যায় শুরু হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনাম দিয়ে। এই ব্যাপারটা আগে অনুবাদ বইয়ে দেখেছিলাম, মৌলিকে এই প্রথম দেখলাম। বইয়ের এমনকি ভূমিকাটাও অন্যরকম আর সেটাও খুব ভালো লেগেছে আমার। অনেক কিছু জানতে পেরেছি লেখকদের সম্পর্কে সেখান থেকে।
এবং যথারীতি এই সব, সব ভালো লাগার শেষটা হয়েছে হতাশার মাঝে দিয়ে। আমাদের দেশের মৌলিক থ্রিলার লেখকদের রক্তে বহমান চিরন্তন সমস্যা ধরে রেখে শেষে এসে লেজেগোবরে করে ফেলেছেন লেখক। কিছু গোঁজামিল, কিছু ছেড়া সুতো জোড়া লাগাতে না পারা, কিছু প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বইটা শেষ করে দিয়েছেন। আচ্ছা আমাদের মৌলিক থ্রিলার লেখকদের সমস্যা কি? শেষে এসে কি উনাদের ইমাজিনেশনের অভাব হয়ে যায়? নাকী উনারা ধৈর্যহারা হয়ে যান? উনাদের কি বেটা রিডার থাকে না? তারা কি একেবারেই কমন ভুলগুলোও ধরিয়ে দিতে পারে না? নাকী সবাই শুধু "সেরা ভাই সেরা" বলেই খালাস!!
যাইই হোক, যারা বইটা পড়েছেন তারা যদি চান, তাহলে বইয়ের অসঙ্গতি গুলো নিয়ে কমেন্ট সেকশনে আলোচনা করা যেতে পারে। ওভারঅল অত্যন্ত সুখপাঠ্য বই। এমনকি শেষের আফসোস গুলো থাকার পরেও আমি থ্রিলারপ্রেমী সবাইকে বইটা রেকমেন্ড করবো।
#ব্যক্তিগত_রেটিংঃ ০৭/১০ (বই শেষ করে অনুভূতি যেমনই হোক, পাঠ অভিজ্ঞতা ছিলো আউটস্ট্যান্ডিং। আমার পরিচিত পাঠক মহলে এতোসব অসংগতি থাকা সত্ত্বেও বইটার অনেক প্রশংসা করা হয়। এ ব্যাপারটাই বইটা কতোটা ভালো তা প্রমাণ করে দেয়)
#প্রোডাকশনঃ বুক স্ট্রিট এর এই বইয়ের প্রোডাকশন চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। প্রচ্ছদটা অত্যন্ত সুন্দর। তবে ব্যাপক বানান ভুল ছিলো, কিছু বাক্যে শব্দ মিসিং হয়েছে। দ্বিতীয় মূদ্রণ হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যাপারগুলো ঠিক না হওয়াটা আফসোসের বিষয়।
লেখকের খুব সম্ভবত গুপ্তসংঘ প্রীতি আছে। ছায়াসংঘ কংসচক্র লেখক সংঘ দিয়ে ভরপুর। তবে প্লট টা জব্বর ফেঁদেছেন। বাংলাদেশের মৌলিক লেখা যে বহুদূর এগিয়েছে তা অস্বীকার করার জো নেই। লেখকের বর্ণনাশৈলি নিয়ে বলার কিছু নেই। "প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প" তেই মুগ্ধ করেছেন। এবারও মুগ্ধ হলাম। লেখাটা একটু ভিন্নধর্মী৷ তাই বেশি ভাল লেগেছে।
কাহিনি সংক্ষেপঃ ঘোস্ট রাইটার কাদেরকে বলে, জানেন নিশ্চয়ই? ঐ-যে, যাঁরা টাকার বিনিময়ে অন্যদের নামে বই লেখেন, তাঁরাই ঘোস্ট রাইটার। একজন ঘোস্ট রাইটার বা ভূত-লেখকের জীবনাচরণ অনেকটা ভূতের মতোই। তিনি লিখবেন, কিন্তু সেই বইটার লেখকের নামের স্থানে তাঁর নামের বদলে আসবে ঘোস্ট রাইটারের 'ক্লায়েন্ট'-এর নাম। এমন বহু ঘোস্ট রাইটার বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের প্রকাশনা জগতে চুপটি করে নিজেদের কাজ করে চলেছেন। আমাদের এই গল্পেও একজন ঘোস্ট রাইটার আছে, যার নাম সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভূত-লেখক সুকান্তের দিনকাল কেটে যাচ্ছিলো বেশ ঝামেলাহীন ভাবেই। কিন্তু হঠাৎ করেই সে একটা ভয়াবহ ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়লো। খুন হতে লাগলেন দেশের একের পর এক নামকরা লেখক ও প্রকাশকরা। অস্ত্র হিসেবে অদ্ভুত একটা বস্তু ব্যবহার করছে খুনি। তীক্ষ্ণ ফলার কলম। সেই কলম দিয়ে খুঁচিয়ে খুনি বাংলাদেশের সাহিত্য জগতের সাথে সম্পর্কিত দিকপালদের জীবনে অকস্মাৎ-ই একটা সমাপ্তি টেনে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এসবের সাথে নির্ভেজাল ঘোস্ট রাইটার সুকান্তের সম্পর্ক কি। সম্পর্ক আসলেও ছিলোনা যতোক্ষণ না ওর হাতে একটা এনক্রিপটেড পেনড্রাইভ এসে পড়লো। আর তার পরপরই পেনড্রাইভের মালিক বিখ্যাত লেখক ইমন মোস্তাফিজ খুন হলেন।
কথায় আছে, বিপদ আসতে থাকলে কখনো একা আসেনা। সাথে করে সঙ্গীসাথীদেরও নিয়ে আসে। সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনেও বিপদ এলো একেবারে পরিবার-পরিজন সমেত। লেখক ইমন মোস্তাফিজ সহ সিরিয়াল কিলিংয়ের শিকার হওয়া অন্যান্য লেখক-প্রকাশকদের খুনি হিসেবে সন্দেহ করা হলো সুকান্তকে। আর অবধারিতভাবেই সুকান্তের পালিয়ে বেড়ানোর জীবনটা শুরু হলো। এদিকে ইমন মোস্তাফিজের রগচটা ও অস্থির স্বভাবের মেয়ে নীরুও ওকে খুঁজতে লাগলো অদ্ভুত ও অনিশ্চিত এক প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য। নির্ভেজাল এই ঘোস্ট রাইটারের জীবন পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো নানারকম ভেজালে।
এদিকে লেখক-প্রকাশকদের সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ চিফ আমানুল্লাহ আমান। ডি.বি.-এর জুনিয়র এজেন্ট মল্লিকা, আরাফ, সাইদুর ও এলিনা সহ তাঁর এই টিমে আছেন জয়েনুদ্দীন নামের রহস্যময় স্বভাবের একজন ক্রিমিনোলজিস্টও। খুনগুলোর তদন্ত করতে গিয়েই বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত অখ্যাত একটা বইয়ের নাম আমানুল্লাহ সাহেব ও তাঁর টিমের সামনে চলে এলো। বইটার নাম 'পাছাখানার ভূত'। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ছাপাখানার ভূত না, পাছাখানার ভূত। মারাত্মক ডিস্টার্বিং কিছু বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা সেই বইটা নিষিদ্ধও হয়েছিলো প্রকাশের প্রায় পরপরই। কিন্তু ডি.বি. অফিসার প্রণব ঠিকই বুঝে গেলো দেশের প্রকাশনা জগতে ঘটতে থাকা সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনাগুলোর সাথে অদ্ভুত একটা সম্পর্ক আছে এই 'পাছাখানার ভূত'-এর।
ঘটনাগুলো আরো জট পেকে গেলো বাংলাদেশের প্রথম সারির এক প্রকাশনীর প্রকাশকের ধোঁয়াশাচ্ছন্ন আচরণে। হবিগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে নিভৃতে বসবাসকারী মুনশী মোয়াল্লেমও জানে অনেক কিছুই। আর ঘটমান এই সবকিছুর সাথে সাথে শব্দযাত্রা লেখক সংঘ নামের এক রাইটার্স ব্লক কাউন্সেলিং সমিতিকেও পায়ে পা মিলিয়ে চলেফিরে বেড়াতে দেখা যায়। গল্পটা যখন শেষ হয়েছে, তখন অনেক কিছু যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি পাওয়া গেছে অনেক প্রশ্নের উত্তরও - যা সত্যিই অকল্পনীয় ছিলো।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' নবীন লেখক জুবায়ের আলমের দ্বিতীয় থ্রিলার উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস ছিলো 'প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প', যা মূলত এসপিওনাজ থ্রিলার ঘরানার ছিলো। এবার তিনি লিখে ফেলেছেন মার্ডার মিস্ট্রি ও কাল্ট থ্রিলারের সমন্বয়ে দারুন এক কাহিনি। প্রকাশনা জগত নিয়েও যে এমন রোমাঞ্চকর কাহিনির অবতারণা করা যায়, তা 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' পড়ার অভিজ্ঞতা না হলে বুঝতে পারতামনা।
বেশ সাবলীল গতিতে জুবায়ের আলম এগিয়ে নিয়ে গেছেন উপন্যাসের কাহিনিটা। তারপর যেন হঠাৎ করেই একের পর এক ধাক্কা দেয়ার মহোৎসব শুরু করলেন তিনি। একজন অতি সাধারণ ঘোস্ট রাইটারের জীবনে ঘটে যাওয়া একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোর সাথে সাথে বেশ প্রকাশনা জগতের কল্পিত একটা ডার্ক সাইডের দারুন সমাবেশ ঘটিয়েছেন লেখক। নিঃসন্দেহে বেশ ব্যতিক্রমধর্মী একটা প্লট, এবং সেই প্লটটার ডেভেলপিংয়েও পেয়েছি পরিপক্বতার ছাপ। প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শিরোনাম গুলোও ছিলো আগ্রহ জাগানোর মতোই। রোমাঞ্চ ও রহস্যের কোন কমতি ছিলোনা 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ'-এ। বিশেষ করে হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওড়াঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঘটনার অংশটুকু পড়তে গিয়ে দারুন রোমাঞ্চ অনুভব করেছি। ২০১৯ সালে এখনো পর্যন্ত আমার পড়া উপভোগ্য বইগুলোর মধ্যে প্রথমদিকেই রাখবো আমি 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ'-কে।
বইটাতে ভুল-ভ্রান্তি তেমন একটা ছিলোনা। শুধু একটা জায়গায় খেয়াল করলাম, সুভদ্রাকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন লেখক। আসলে সুভদ্রা হিন্দু মিথোলজি অনুযারে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের বোন। ছোটখাটো দুই-একটা টাইপিং মিসটেক চোখে পড়ার মতো ছিলোনা। আরেক প্রতিভাবান লেখক ও প্রচ্ছদশিল্পী আবুল ফাতাহ'র করা প্রচ্ছদটাও বেশ দৃষ্টিনন্দন লেগেছে।
যেসব পাঠক একটু ভিন্ন ধরণের থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' দারুন একটা জার্নি হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। সবাইকে ধন্যবাদ৷ পাঠ শুভ হোক।
বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করছেন নবীন লেখক ‘জুবায়ের আলম’ সাহেব! আজ যে বইটি নিয়ে অনুভূতি ব্যাক্ত করতে যাচ্ছি সেটা উনার লিখা দ্বিতীয় উপন্যাস "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ!" প্রথম উপন্যাস এখনো অক্ষত অবস্থায় আমার চোখের ডানপাশে রাখা পুরানো ভাঙাচোরা টেবিলের উপরে রয়েছে তবে এখনো পড়া হয়নি!
ফ্ল্যাপ থেকে না বলে গল্পের আখ্যানভাগ নিজ থেকে বলছি! চিন্তায় কপালে ভাঁজ ফেলার দরকার নেই "থ্রিলার" জনরার গল্পের প্লট বলতে হয় স্পয়লার বিহীন সেটা আমার নখদর্পণে রয়েছে। নির্দ্বিধায় সামান্য সারাংশ পড়ে নিতে পারেন-
_ লেখকদের নিজস্ব কোন জীবন থাকে না। তাদের জীবন হচ্ছে পরজীবীদের মত। কোন এক শহরে খুন হতে শুরু হলেন বেশ কিছু লেখক, প্রকাশক ও পরিচালক। কেনো খুন হচ্ছে বা কে করছে খুনগুলো জানার গুরুদায়িত্ব পরলো ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের একজন ক্লান্ত এজেন্টের উপরে! অন্যদিকে একজন লেখক টাকার বিনিময়ে অন্যকারো হয়ে বই লিখে দেন, আর একজন যিনি খ্যাতির মোহে বই লিখে যান। দুজনের সমান্তরাল জীবন কোন এক অজানা কারণে মিলে যায় এক ফোঁটা রক্ত বিন্দুতে!
সবশেষে আপনাকে ‘শব্দযাত্রা লেখক সংঘে" স্বাগতম।।
ফ্ল্যাপ পড়েও আপনার গল্পের সামান্য কিছু অংশ অনুমান করে গল্পে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মিশে যাবেন লেখকের কাল্পনিক এক ঘোলাটে দুনিয়ার অন্তরালে। দারুন উপস্থাপনা ও শব্দের ব্যবহার আকৃষ্ট করেছে আমাকে ভীষণ, গল্পের বাহ্যিক দিক থেকে প্রত্যকটা অবস্থানের সূক্ষ্ম ডিটেইলস কল্পনাতে জীবন্ত রুপ ধারণ করেছে বলতে হয়। চরিত্রের ব্যাবহারে লেখকের বাড়তি যত্ন অসামান্য, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চরিত্রের ব্যবহার গল্পে সাবলীল ভাবে তুলে ধরেছেন। শুরুটা মর্মান্তিক ব্যাপার ঘটে যাওয়ার মাধ্যমে আপনাকে যে টানটান উত্তেজনার রোলার কোস্টার রাইডে লেখক বসিয়ে দিবে সেটা শেষ হবে একেবারে গিয়ে সমাপ্তির শেষ কয়েকটা পৃষ্ঠার পূর্বে।
বইয়ে কিছু সাধারণ বানানের ভুল লক্ষ্য করা গিয়েছে সেইসাথে স্পেস গ্যাপের সমস্যা! তবে একটা লাইন পড়ে হাসি পেলেও কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে! লাইনটা ১৫৩ পৃষ্ঠাতে পাবেন যেখানে জগন্নাথ ও বলভদ্রের বোন সুভদ্রা কে "ভাই" হিসেবে সম্বোধন করেছে!
গল্পের চরিত্র হচ্ছে প্রধান আকৃষ্ঠ করার কারণ, সেদিক থেকে চরিত্রের সমাহার থেকে কিছু আলাদাভাবে লিখতে গেলে অনেকে "স্পয়লার" বলে বকাঝকা করতে পারে! সেদিক থেকে আমি ‘নামছাড়া’ চরিত্রের পেশা দিয়ে কিছু লিখতে চাই! অর্থাৎ চরিত্রের নামটাও আপনাদের জন্য সাসপেন্স রেখে দিলাম।
_ আখ্যানভাগে লিখেছিলাম একজন লেখক যে টাকার বিনিময়ে নিজের সাহিত্য, ধ্যান, জ্ঞান সবকিছু উজার করে অন্যকাউকে মহান বানিয়ে দিচ্ছে! কেনো সেটা করছে? কারণ হিসেবে লেখক উদাহরণ টেনেছেন প্রচুর! অন্যদিকে খ্যাতির চূড়াতে উঠার জন্য মানুষ কতকিছু না করে থাকে! লেখকের ধারাভাষ্যমতে একজন লেখক লিখে তার নিজের জন্য! সে যদি খ্যাতির আশায় বা বিশিষ্ট কেউ বনে যাওয়ার জন্য লেখে তাহলে সে কোনভাবে লেখক বলে বিবেচিত হবে না। ফেসবুকের টুকটাক লিখনী দিয়ে বাস্তবিক জীবনের কোন গল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারবে না, সেই কারণে অনেক উদীয়মান তরুণ লাইক ও লাভ রিয়্যাকশনের আশাতে যা লিখে সেটাকে নিজের যোগ্যতা পুরোপুরি জাহির করার ভাবনা নিত্যন্ত হাস্যকর বটে।
লেখক যেইভাবে আসল "লেখক" কেমন হওয়া উচিত সেটার গুরুত্ববহন করে উক্তি গুলো যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন সেটা প্রশংসার যোগ্য বটে! লেখকের ও হতাশা থাকে! জ্বী সত্যিকারের লেখক সেই অভাব উপলব্দি করতে পারে যখন তখন সেটাকে "রাইটার্স ব্লক" বলে! এই রাইটার্স ব্লকের গুরুত্ব এই বইতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের এজেন্ট কেমন বা তাদের কতোটা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটা অজানা না! কিন্তু এইখানে শেষপর্যন্ত ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের এজেন্টদের মিলনমেলা ও সেটার কালো অধ্যায়ের অনেক দিকনির্দেশনা লেখক মুন্সিগিরি দেখিয়ে উল্লেখ করেছেন। লিখার অনেক কিছু আছে, আমি সব লিখে দিলে বই পড়ে করবেন কি!
দারুণ তথ্যবহুল ভূমিকার শুরুটা শেষ হয়েছে একরাশ ধোঁয়াশা না কাটানো সমাপ্তির মাধ্যমে! শেষটা নিয়ে আমি প্রশংসা করবো একদিকে কিন্তু অন্যদিকে পেটের নাড়ি কাঁপানোর অনুভূতি লেখক দিগুণ করে দিয়ে গেলো কেনো সেটা পড়লে বুঝতে পারবেন।
সবশেষে এই বিশেষ উপন্যাস একজন সত্যিকার লেখকের জীবনীর হতাশার অধ্যায় ও সংগ্রামের নেপথ্য কারণের সাথে দারুন ভাবে মিশে যায়! তরুণ উদীয়মান লেখকের জন্য ‘জুবায়ের আলম’ সাহেব এই উপন্যাস এক অসাধারণ দিকনির্দেশনা বটে!
ধন্যবাদ লেখক অসাধারণ বইটি আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
গুডরিডসে তুখোর সব পজিটিভ রিভিউ দেখে পড়তে বসা তুমুল আগ্রহভরে, অতঃপর যারপরনাই হতাশ হওয়া। এই বইকে কাঁচা হাতে লেখা থ্রিলারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা মনে হয়েছে।
পুরো লেখাই কেমন খাপছাড়া খাপছাড়া ভাব আর রয়েছে চরিত্রের মাত্রাধিক্যতা। যেমন তৌফিক এলাহীর চরিত্রটা না থাকলে এই বইয়ের কোন লাভক্ষতি বৃদ্ধি হতো কী না আমার জানা নেই। ঠিক তেমনি "পাছাখানার ভূত" নামক একখানা বইয়ের কথা এই বইয়ে বলা হয়েছে, যে বইয়ের খোঁজে পুরো তোলপাড় হয়ে গিয়েছে, রক্তের লহর বয়েছে, তাও লেগেছে বড্ড অপ্রয়োজনীয়।
আর এসব আদিখ্যেতা করতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই আলোকপাত করা হয়নি বলে মনে হয়েছে। যে "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ" নিয়ে এই বই, এমনকি এর নামেই বইয়ের নাম, সেই সংঘ নিয়েও লেখক এক আধ অধ্যায়ের বেশি লিখতে পারেননি, কী অদ্ভুত!
এছাড়াও অসংখ্য প্লটহোল, ক্যারেক্টার বিল্ডআপে ইনকন্সিস্টেন্সি পুরো লেখাকেই একঘেয়ে করে তুলেছে। শেষদিকে অতিরিক্ত তড়িঘড়ি করায় এ থ্রিলার কম রূপকথার গল্প বেশি মনে হয়েছে। তাই শেষে লেখক যে একটা ক্লিফহ্যাঙ্গার রাখার চেষ্টা করেছেন তা বিরক্তি ছাড়া আর কিছুর উদ্রেক করেনি।
ভালোর মধ্যে ভালো হল, লেখা ঝরঝরে, কোথাও আটকায় না পড়তে গেলে, দেড় দিনে শেষ করে ফেলা গেছে। কিন্তু গল্প বা থ্রিলার যাই বলি না কেন, ও আমার কাছে "পাছাখানার গল্প" ছাড়া কিছু মনে হয় নি।
গুডরিডসের রিভিউ দেখে নতুন বাংলা বই পড়ার আগে এখন থেকে দুবার করে ভাবতে হবে!!
এখন পর্যন্ত পড়া বছরের সেরা থ্রিলার। একটা বিদেশী ওয়েব সিরিজ হওয়ার মত সব উপাদান আছে। বর্ণনাগুলো এত জীবন্ত, বিশেষ করে সিলেটের হাওর এর অংশ, রথের মেলার অংশ এবং গির্জার অংশটা। হাওর এর অংশটুকুতে একটা Gothic ভাইব ছিল, যেটা দুর্দান্ত ছিল। রথের মেলার ঘটনাগুলি খুবই সুন্দরভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
ক্যারেক্টারগুলোও চমৎকার ছিল। অনেক ছোট ক্যারেক্টারও পরের দিকে কাহিনীতে বড় ইমপ্যাক্ট রেখেছে।
এবার যেগুলো ভালো লাগে নাই। এত সুন্দরভাবে এসে এন্ডিং একটু তাড়াহুড়া এ হয়ে গেল। প্রেস ব্রিফিং এই সব সমাধান করে দিল বলে ছোট-খাটো কিছু জিনিস বাদ পড়ে গেল। শিল্পকলা একাডেমির ক্ল্যাইম্যাক্সও কেমন হুট করে হয়ে গেল সব। আমানুল্লাহ এর মেয়ের ক্যারেক্টারটা আরো বেশী জায়গা দেয়া উচিৎ ছিল। বইয়ের মাঝ থেকে সে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে।
যেই শব্দযাত্রা সংঘ নিয়ে এত কিছু তাদের কিছুই জানা গেল না সেভাবে। অল্প কথাতেই শেষ করা হল। এইটার সিক্যুয়াল হবে কি না জানি না। হলে শব্দযাত্রা সংঘ এবং জয়েনুদ্দিন এর কাহিনী আরো ডিটেইল হয়ত পাওয়া যাবে।
ইংরেজ লেখক ও প্রকাশকরা ছাপা অক্ষরে কোন ভুল হলে বলতেন, ওটা ভূতের কাজ। The Ghost of Printing Press বা "ছাপাখানার ভূত" কথাটার উৎপত্তি ওখান থেকেই। এই শব্দটাকে আরেকটু বিকৃত করে "পাছাখানার ভূত" নামের একটি বই বেরোনোর কয়েক বছরের মাথায় নিষিদ্ধ করা হলো। লেখক, যারা লিখেন, মাঝেমাঝেই অজানা কারণে ভুলে যান কি লিখবেন, কিভাবে লিখবেন। চেনা শব্দগুলো অচেনা হয়ে যায়। এর পোশাকি নাম "রাইটার্স ব্লক"। শহরে রাইটার্স ব্লক আক্রান্ত লেখকদের লেখায় ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে, নাম "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ"। সুকান্ত একজন ভূত লেখক বা গোস্ট রাইটার। টাকার বিনিময়ে বই লিখে। হঠাৎ তাকে তাড়া করে ফেরে মৃত্যু। হঠাৎ করেই শহরের লেখকরা একেক পর এক খুন হতে থাকেন। অস্ত্র: ফাউন্টেন পেন।
এই সবগুলো খন্ড চিত্র একসাথে মিলে যায় এই থ্রিলারে। মোটামুটি এক বসায় শেষ করেছি। এই সিরিজের আগের বইয়ের তুলনায় অনেক পরিণত লেখা। লেখকের আরো থ্রিলার পড়ার অপেক্ষা করছি।
আপনি কি থ্রিলার পাঠক? সিরিয়াল কিলিং পছন্দ করেন? তাহলে এই বইটি আপনার জন্য। বইটি দারুণ লেগেছে। গল্পের শুরু থেকে শেষ অবধি লেখক টান টান উত্তেজনা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, গল্প কিংবা চরিত্র সবকিছুই স্টং ভাবে লেখক তৈরি করেছেন। এককথায় অসাধারন লেগেছে। শব্দযাত্রা লেখক সংঘ - জুবায়ের আলম এর দ্বিতীয় বই, এবং এই বইদিয়ে তার সাথে আমার পরিচয়, অতিশয় তার প্রথম বই প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প শুরু করবো। রেটিং :: ৫/৫।
বইয়ের শুরুর দিকটা বেশ ইউনিক। কিন্তু ধীরে ধীরে প্লট আর চরিত্রগুলায় বড়সড় ঘাপলা চোখে পড়তে থাকে। 'শব্দযাত্রা লেখক সংঘ' এর-ও কোনো জোরালো উদ্দেশ্য খুঁজে পেলাম না। যেটা কেন্দ্র করে বইয়ের নাম সেটার ব্যাপারটাই পুরো বইতে কেমন ঘোলাটে, খাপছাড়া। আর শেষের প্রায় ৮০ পাতা পুরোই জগাখিচুরি। লেখকের লেখনী ভালো তাই খুব একটা কষ্ট হয়না পড়তে- এই যা।
অসাধারণ লেখনী! লেখকের ভাষার বুনট আর বর্ণনাশৈলী তারিফ করার মতো। মুগ্ধ হয়েছি। এন্টাগনিস্ট কে, তা জানবার পর একটু বোকা হয়ে গিয়েছিলাম। শেষটায় প্রশ্ন একটাই, সুকান্ত আসলে কে? কোথায় আছে?
বই পড়া শেষ করেছি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। লিখবো লিখবো করেও রিভিউ লেখা হয়ে ওঠেনি। যান্ত্রিক জীবনের নানা জটিলতা হাত দুটোকে বেঁধে রাখে। অফিসের ইমেইল লেখায় ব্যস্ত হাতে রিভিউ লেখার আর সময় হয়ে ওঠে না!
তবে থ্রিলার প্রেমী হয়েও আমি এতো দেরি করে এই বইটা কেন পড়লাম, জানি না! বইটা এক কথায় চমৎকার ছিল। প্রত্যেক পাতায় ছিল উত্তেজনা। কি হবে, কি হবে এই ভেবে পাতার পর পাতা এগোনো। অনেকটা ছোটবেলার তিন গোয়েন্দা পড়ার মতো।
তবে শেষর দিকটা একটু বেশিই ড্রামাটিক ছিল। যে ধীর স্থির, গোছানো ব্যপারটা শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত ছিল, সেটা একটু এলোমেলো লেগেছে শেষের দিকে। ওভারঅল, থ্রিলার হিসেবে বইটা পারফেক্ট। লেখকের জন্য শুভকামনা।
প্লটটা খুবই আকর্ষণীয়। প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই লেখক সুন্দর করে গল্প বলে গেছেন। বেশ থ্রিলিং লাগছিল পড়তে। কিন্তু শেষে গিয়ে বাংলাদেশি থ্রিলারের চিরাচরিত রীতিতে তাড়াহুড়া করে মজা নষ্ট করে দিয়েছেন। কোনো চরিত্রকেই বেশি সময় দেননি। এই জায়গায় কাজ করতে পারলে ভাল হতো। আর সংলাপ অনেক জায়গাতেই কৃত্রিম লেগেছে। মানুষ কখনো এভাবে কথা বলে না।
বইয়ের নাম- শব্দযাত্রা লেখক সংঘ লেখক- জুবায়ের আলম প্রকাশনী- বুক স্ট্রিট প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারী ২০১৯ পৃষ্ঠা- ২৭৬ মুদ্রিত মূল্য- ৪০০ টাকা
কাহিনী সংক্ষেপঃ হঠাৎ এক রাতে নৃসংশ ভাবে খুন হলেন কালের কলম প্রকাশনীর প্রকাশক কায়সার আবেদীন। খুনের অস্ত্র ছিলো একটি ঝর্না কলম। কোনো ক্লু নেই, প্রমান নেই। এই খুনের ঘটনা ঘটার কদিনের মধ্যেই খুন হলো আরেকজন নাম ইমন মোস্তাফিজ যিনি যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সাথে। দুটো ঘটনায় যেন পুরো প্রেসপাড়া নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সবার মধ্যেই আতংক বিরাজ করছে। তার মধ্যেই একজন ছাপোষা টাইপিস্ট সুকান্ত যে টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে বই লিখে দেয় সে জড়িয়ে গেলো এই খুনের সাথে। ওদিকে একটা পেনড্রাইভ পাঠানো হলো তার কাছে যে পেনড্রাইভ এর তথ্যগুলো দ্রুত প্রকাশ না পেলে এভাবেই একের পর এক লেখক,প্রকাশক এবং এসবের সাথে যুক্ত লোকগুলো খুন হতে থাকবে একের পর এক। পুরো ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এই কেস এর সমাধানের জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠলো। খুনিকে না থামাতে পারলে হারাতে হবে অনেক প্রতিভাবান লেখক,প্রকাশক দের। তাহলে কে এই খুনি? কি সেই শব্দযাত্রা লেখক সংঘ?
আপনি কি রাইটার্স ব্লক এ ভুগছেন? হতাশ হবেন না। আমরা আছি আপনার জন্য "শব্দযাত্রা লেখক সংঘ"।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আমাদের দেশে সিরিয়াল কিলিং নিয়ে মৌলিক কাজ সম্ভবত একটু কম। কিন্তু তার ভিতরেও যেগুলো রয়েছে সেগুলো যে একেবারেই কাতারে ফেলা যায়না সেটা কিন্তু কেউ বলতে পারবেনা। হ্যাঁ এ বইটা সিরিয়াল কিলিং নিয়েই লেখা। কিন্তু লেখক এখানে সিরিয়াল কিলিং এর জন্য যে প্লট টা বেছে নিয়েছেন সেটা ছিলো দুর্দান্ত আর লেখনশৈলী? আহহা বলবো অসাধারণ ছিলো। বিশেষ করে বর্ননাভঙ্গি ছিলো দারুন উপভোগ্য। লেখক যখন ভূত লেখক সুকান্ত এর অতীত নিয়ে বর্ণনা করছিলো মনে হয়েছিলো সব যেন চোখের সামনেই ভাসছে আর ক্রাইম সিন গুলোর বর্ণনা তো আছেই। তবে মেইন কালপ্রিট কে সেটা গেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যদিও সেটা ব্যাপার না কেননা খুনি আসলে কে জানতে পারলেও তার খুন করার পিছনের কারণ টাই মূখ্য বিষয়। তবে এক্ষেত্রে যে শুধু কিলারকে নিয়েই সব কিছু তা নয় বইতে সরকারি লোকজনদের ভেতরকার বেশ কিছু চিত্র উঠে এসেছে। তবে এন্ডিং এ গিয়ে আপনাকে বেশ কিছু সুতো জোড়া লাগাতে হবে কেননা সিরিয়াল কিলিং এর সাথে আরো অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে এর সাথে। এক কথায় থ্রিলারপ্রমী দের জন্য এটা হতে পারে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা।