দশ হাজার বছরের পুরনো গুহাচিত্রে কীসের ইঙ্গিত... কলকাতার বুকে ঘটে চলেছে একটার পর একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড... যোগসূত্র শুধু একটাই - বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আদিম অতিকায় সাপ, জাইগানটোফিস।
নেপথ্যে কে?
ব্রাজিল থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনার কেভ পেইন্টিং, এমনকি হরপ্পার সিলমোহরে কার অদৃশ্য উপস্থিতি? কেই এই সরসরার? প্রোফেসর বসুরায় কেন এত চিন্তিত পৃথিবীর অস্তিত্বরক্ষা নিয়ে?
নর্স মিথোলজি মতে মহাবিশ্বের মোট ন'টা ভাগ। এক একটা ভাগে গড়ে উঠেছে এক এক ধরনের প্রাণ। একটা যাতে অন্যটার সঙ্গে মিশে না যায় সেটা নিশ্চিত করে 'ইগড্রাসিল' - ট্রি অব লাইফ। এরকমই একটা ভাল হল 'হেলহেইম' - অবলুপ্ত প্রাণীদের জগত! কী ঘটে চলেছে এই মুহূর্তে সেখানে?
একটি রূপকথার রাজকন্যা... খয়েরি জগতের রাজকন্যা - আরিন! কী ওঁর উদ্দেশ্য? কে পাঠালো ওঁকে এই মিডগার্ড বা মানুষের জগতে? আর কেন?
সমগ্র মহাবিশ্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে এক পৌরাণিক মহাযুদ্ধের... আরিন কি পারবে আবার মহাবিশ্বের স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে?
প্রায় সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার একটি বই, পড়তে লেগেছে একদিন। অর্থাৎ কাহিনী কোথাও ঝুলে যায়নি, লেখক টানটান ভাবটা বজায় রাখতে পেরেছেন। কিন্তু বর্ণনার ভঙ্গি যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ। প্রথমদিকের কাজ হিসেবে এটুকু অবশ্য ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই যায়।
আমরা যারা আরবান ফ্যান্টাসি পড়ে অভ্যস্ত, কিংবা রিক রাইঅর্ডেনের মিথোলজিত বেইজড ফ্যান্টাসি সিরিজ পড়েছি তাদের কাছে আউট অফ দ্য বক্স কিছু মিলবে না। কিন্তু.... বাংলার প্রেক্ষাপটে নর্স মিথোলজির নয় জগত, পৌরাণিক প্রাণী এবং বিভিন্ন রূপকথার যে গাথুনি গেথেছেন লেখক- তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে গতানুগতিক মিথ বেইজড ফ্যান্টাসিতে যেরকম বিভিন্ন দেবতাদের প্রাধান্য থাকে, আরিনের কাহিনীতে সেরকম নেই। এটাও ব্যতিক্রম। বরং পৌরাণিক ক্রিয়েচারসগুলোর প্রতিই ফোকাস ছিল বেশি৷ যেমন নিদহগ,ইয়োরমুনগ্যান্ডার...... মূল চরিত্র আরিন, তানিশ, নিনা আর প্রফেসর বসুরায়। তবে কাহিনীর ফ্যাসাদের কারণে কোন চরিত্রেরই সেরকম বিল্ড-আপ হয়নি৷ এটা হয়তো অনেকের চোখে লাগবে।
কাহিনী সংক্ষেপ বইয়ের পেছনেই পাবেন। আমি আর কিছু বললাম না সে সম্পর্কে। যারা অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চার, মিথ বেইজড আরবান ফ্যান্টাসির ভক্ত তাদের ভালো লাগবে।
লেখকের বর্ণনাশৈলী দক্ষতা মোটেও ভাল নয়। কয়েক জায়গায় বর্ণনা ছিল খাপছাড়া। এক জায়গায় পাইলট আকাশে আগুন দেখতে পেয়ে কিছুক্ষণ বিমান চালানো বন্ধ করে দিলেন! বুঝলাম না বিমান কি মাঝ আকাশে বন্ধ করে রাখা যায়? জানা নেই আমার। গল্পে ভিলেন নাকি অতিপরিচিত কেউ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলতে বোধহয় ভুলে গেলেন সেটা। আরেক জায়গায় তিনজন আরজেন্টাভিস ম্যাগনিফিকেন্সের পিঠ হতে আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু কিভাবে আলাদা হয় সেটাও ব্যখ্যা করা হয় নাই৷ অযথা গালিগালাজ মূল বিষয় থেকে ফোকাস সরিয়ে দেয় এইটা বিরক্তিকর ছিল। আর অকারণে ইংরেজি পুলিশ থেকে শুরু করে বস্তির লেখাপড়া না জানা মানুষও এখানে হরহামেশা ইংরেজি বলতেছে। তাছাড়া চরিত্রগুলো ভালো করে বিল্ড আপ করা হয় নাই। ব্যাককাভারে পৌরাণিক মহাযুদ্ধের আভাস দেখে যতটা আশা করছিলাম, ততটা পূরণ হয়নি। আরবান ফ্যান্টাসি, তাও কলকাতা শহরের ওপর! গল্পের পজেটিভ দিক বোধহয় এটাই।
কাহিনির মধ্যে কোনো লজিক নাই। খুন খারাবি কইরা সবাই যে যার মন মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ জেনেও খুনিরে ধরার ন্যূনতম চেষ্টাও করে না। এরমধ্যেও আবার মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর প্রেম; অর্থহীন, অকারণ ইংরেজি খিস্তি। কনসেপ্ট আর ইলাস্ট্রেশনের গুনে কিছুটা উৎরে গেল।
কাহিনির মধ্যে চমক দেবার প্রচেষ্টার কোন কমতি ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এসে একসাথে বুনে জমজমাট একটা বই লেখার চেষ্টায়ও ঘাটতি দেখিনি কোন। লেখক প্রচুর পরিশ্রম করছেন বইটা সুষ্ঠুভাবে লেখার জন্য। এজন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কিন্তু চরমভাবে হতাশ করেছে গল্প বলার ধরন। কাহিনি যতই ভালো হোক, উপস্থাপন ভালো না হলে পড়ে মজা পাওয়া যায় না। ঠিক তাই ঘটেছে প্রায় সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার এই বইটিতে। আর বিরক্ত লেগেছে অপ্রয়োজনে ইংরেজী/হিন্দী শব্দের প্রাদুর্ভাবে। যখন কোন চরিত্র কথা বলছে, সেখানে হিন্দী/ইংরেজীর প্রাচুর্য্য মেনে নেয়া যায়। কিন্তু লেখকের বর্ণনার মধ্যে ইংরেজী বা হিন্দী শব্দ ব্যবহার করলে, তাও যেটার একটা বহুল প্রচলিত বাংলা শব্দ আছে, মেজাজ ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। পশ্চিমা ধাঁচে একবার এখানের ঘটনা একবার ওখানের ঘটনা বলে পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা আছে, কিন্তু সে দুইয়ের মধ্যে সাযুজ্য বজায় রাখতে গিয়ে গল্প বলার ধরণ মার খেয়ে গেছে অনেকটা। পাশাপাশি অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনার দেখানো হয়েছে যেটা বাস্তবে কোনভাবেই সম্ভব না। ফ্যান্টাসী হলেও যে জায়গায় বর্তমান পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাস্তব বিবর্জিত কিছু দেখানো যায় না। যেমন আকাশে উড়ন্ত একটা প্লেনের পাইলট সামনে জ্বলন্ত কিছু দেখে প্লেনটাকে আকাশেই দাঁড় করিয়ে রাখলেন! প্লেন কি হেলিকপ্টার নাকি যে ওটাকে মাঝআকাশে থামিয়ে রাখবেন? আর প্লেনের এয়ার টাইট প্রেশারাইজড কেবিনে যত সূক্ষ ফুটোই করা হোক না কেন, তাতে যাত্রীদের কোন সমস্যা হবে না সেটাও মেনে নেয়া যায় না। আবার কিছু কিছু জিনিস হুট করে কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই বলে দেয়া হয়েছে। যেমন পাখির পিঠ থেকে তিনজনের তিন জায়গায় যাবার কী কারণ? উত্তর পাইনি বইতে।
এর পাশাপাশি যোগ করুন চরিত্র বিনির্মাণের দুর্বলতা! কোন চরিত্রই পুরোপুরি বিল্ড আপ হয়নি। ক্যারেক্টার কার্ভ একেবারেই অনুপস্থিত। এমনকি মুল চরিত্র আরিন - তারও চিত্রণ হয়নি ঠিক মতো। আরিনের খাপছাড়া ব্যবহারের ব্যাখ্যা কোথায়? কিংবা তার ভেতরে লুকিয়ে থাক সহিংসতার উৎসই বা কী এর কোন উত্তর বইতে খুঁজে পাইনি আমি। একইভাবে তানিশ, নিনা কিংবা প্রফেসর বসুরায় - এদের কারো চরিত্রই পরিস্ফুটিত হয়নি। যেন শুধুই ঘটনার পরে ঘটনা এসেছে।
তবে পাঠককে চমক দেবার জন্য লেখক যে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, তার প্রমাণ বইয়ের ছত্রে ছত্রে পাওয়া যায়। সেজন্য লেখক অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। বাংলাদেশে নর্স মিথোলজিকে সুন্দরভাবে নিয়ে এসে মিলিয়ে দেয়াতেও লেখককে কৃতিত্ব দিতেই হবে।
কলকাতার বেশিরভাগ বইতে যেটা দেখি - বানানের ব্যপারে খুব যত্ন, সেটা আছে এটাতেও। ভুল বানান পাইনি বললেই চলে। এটা খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। কিন্তু গল্পের বর্ণনা এতটাই বিরক্ত করেছে যে এই পজিটিভ দিকটাও রেটিং বাড়াতে খুব একটা সাহায্য করেনি।
কাহিনি ���ংক্ষেপঃ এক গভীর রাতে মাঝ গঙ্গায় মাছ ধরতে গিয়ে অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন জেলে সিদ্ধেশ্বর ও তার কিশোর পুত্র গনা। গঙ্গার ঘোলা পানিতে কিশোরী একটা মেয়েকে ভাসতে দেখে এই বাপ-বেটা, যার পুরো শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো নানা বর্ণের আলোকচ্ছটা। রাতের আকাশের বুকেও যেন ওড়াউড়ি করছিলো অতিকায় কোন একটা পাখি৷ ভাসতে থাকা মেয়েটাকে নিজের মেয়ে হিসেবে বড় করে তুলেছিলো সিদ্ধেশ্বর।
প্রাইভেট আইটি ফার্মে গাধার খাটুনি খেটে চলা তরুণ তনিশ গোস্বামী এক রাতে মাতাল হয়ে রাস্তায় হাঁটতে গিয়েই পড়লো বিপদে। একটা লেকে পড়ে গিয়ে সে ডুবে মারা যাচ্ছিলো যখন, ঠিক তখনই একটা রহস্যময় হাত তাকে বাঁচায়। হাতটাতে উল্কি করা ছিলো বিলুপ্ত মহাপক্ষী আরজেন্টাভিস। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তনিশকে কে বাঁচালো সেটা বের করতে গিয়েই একটা মহাপরিকল্পনার অংশে পরিণত হলো যেন সে।
গঙ্গার গভীর অংশের একটা ছবি হঠাৎ ভাইরাল হলো সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে৷ ছবিতে দেখা গেলো একটা বিশাল গাছের শেকড় জেগে উঠেছে নদীর জল ফুঁড়ে। আর সেই শেকড়কে জড়িয়ে নিয়ে আছে একটা অতিকায় সাপ। নর্স মিথোলজি অনুসারে মহাবৃক্ষ ইগড্রাসিলের শিকড়কেও এভাবে পেঁচিয়ে নিয়ে থাকে মহাসর্প ইয়োরমুনগ্যান্ডার। নর্স মিথোলজিতে বলে, ইগড্রাসিলের শাখা-প্রশাখায় অবস্থান করে দেবালয় অ্যাসগার্ড, পৃথিবী মিডিগার্ড ও বিলুপ্ত প্রাণীদের পরকালের জগৎ হেলহাইম সহ নয়টা জগৎ। তাহলে সেই ইগড্রাসিলের শেকড়কে গঙ্গার বুকে দেখা গেলো কেন! নাকি এটা একটা হোক্স! প্রশ্নটা কৌতুহলী করে তুললো আর্কিওলজির প্রোফেসর প্রণব বসুরায়কে।
উল্টোডাঙ্গা বস্তির কিশোরী নিনা একরাতে ধর্ষিত হতে হতেও অলৌকিক এক উপায়ে বেঁচে গেলো। এই মেয়েটাই ভয়ঙ্করভাবে পুড়িয়ে মারলো তার বাবাকে। কেন? এদিকে পুরো কলকাতা জুড়ে খুন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক মানুষ। খুন হচ্ছে কাছের মানুষদের হাতেই। এই খুনিরা ঘোরলাগা চোখে শুধু একটা জিনিসই দেখতে পাচ্ছে। আর সেটা হলো প্রাগৈতিহাসিক সাপ জাইগানটোফিস। রক্তের নহর বয়ে চলেছে কলকাতার পথেঘাটে।
খয়েরি জগতের রাজকন্যা আরিন। বহুকাল আগে থেকেই অজানা কোন একজনের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ সে। পুরো শহর জুড়ে ঘটে চলা ম্যাস মার্ডার আর নর্স মিথোলজিই যেন আরিনের ভাগ্যটা জুড়ে দিলো তনিশ ও নিনার সাথে। প্রাচীণ সব গুহাচিত্রে যে অর্ধমানব ও অর্ধপশু সরসরাসের উপস্থিতি দেখা যায়, তিনি কি ফিরে এসেছেন? কে এই সরসরাস? কেন ইগড্রাসিলের নয়টা জগতের ভেতরকার ভারসাম্য বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? আরিন, তনিশ, নিনা ও প্রোফেসর বসুরায় ভয়াবহ এক ইঙ্গিত পেলেন। পৌরাণিক এক মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাবিশ্ব। পরিস্থিতি একে তো ঘোলাটে, সেটা আরো ঘোলাটে হলো যখন দৃশ্যপটে হাজির হলো অতিকায় এক ড্রাগন।
শুভ আর অশুভের মধ্যেকার যুদ্ধ চলে আসছে সুপ্রাচীণ কাল ধরেই। আবারো এমন একটা যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হবে আরিনকে। কারণ, ওর দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো সভ্যতা।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ওপার বাংলার তরুণ লেখক সায়ক আমানের 'আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান' প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বিভা থেকে। বাংলাদেশ থেকে বইটা প্রকাশ করেছে চিরকুট। ফ্যান্টাসি ও মিথোলজির সাথে সায়ক আমান মিশিয়েছেন ক্রাইম ও সাসপেন্সকে। শুরু থেকেই ঘটনাপ্রবাহ গুলোর বহুমুখীতা বেশ উপভোগ করছিলাম। এরপরও ধীরে ধীরে আগ্রহটা যেন আরো বাড়ছিলো। শেষের ১৫০ পেজ তো একটানা পড়ে গেছি কোন বিরতি ও বিরক্তি ছাড়াই।
সায়ক আমানের লেখনীর ধরণ আমার কাছে ভালো লেগেছে। বাহুল্যবর্জিত ও সহজ বর্ণনাভঙ্গি বইটা পড়ার ব্যাপারে বেশ সাহায্য করেছে। মিথোলজি ও আর্কিওলজি সম্পর্কে তাঁর যে বেশ জানা-শোনা আছে তা বেশ বোঝা গেছে। 'আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান'-এর অন্যতম চরিত্র প্রোফেসর প্রণব বসুরায়ের নর্স মিথোলজি ও গুহাচিত্র সম্পর্কিত লেকচার গুলো ভালো লেগেছে৷ বিলুপ্ত প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জগৎ হেলহাইমের সিকোয়েন্স গুলোতেও ছিলো মুগ্ধতা। আর উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আরিনের কোমলে-কঠোরে মেশানো অ্যাটিচিউড ছিলো মনে রাখার মতোই৷
'আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান'-এর শেষের টুইস্টটা ভালো লেগেছে। এন্ডিং নিয়ে কিছু বলবোনা। এটুকুই বলি যে আমি রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছিলাম। নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটা ফ্যান্টাসি থ্রিলার এটা।
সামান্য কিছু টাইপিং মিসটেক ছিলো। তবে সবচেয়ে যেটা অদ্ভুত লেগেছে সেটা হলো এই বইয়ে সব জায়গাতেই 'বুঝতে পারা' কথাটাকে লেখা হয়েছে 'বুঝতে পাড়া'। পাশাপাশি পতিত হওয়া অর্থে 'পড়ে যাওয়া'-কে লেখা হয়েছে 'পরে যাওয়া'। 'র' আর 'ড়'-এর এমন ওলটপালট ব্যবহার লেখকের নিজস্ব আবিস্কার কিনা আমি জানিনা। তবে বেশ বিরক্ত হয়েছি ব্যাপারটাতে।
সজল চৌধুরীর করা প্রচ্ছদটা অসাধারণ লেগেছে। ভেতরের ইলাস্ট্রেশন গুলোও দারুন ছিলো। যদিও জানা নেই ইলাস্ট্রেশন গুলো কার করা। বইটার প্রোডাকশন কোয়ালিটি যথারীতি অসাধারণ।
২.৫ তারা সায়ক আমানের এখনকার লেখাগুলো মোটামোটি সবই শুনেছি,নিয়মিত শুনি।তাঁর গল্পের ক্যাচি পয়েন্টই হলো প্লট।লেখনি ও ভালো।এখনকার রহস্য লেখকের মধ্যে তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয়।
আরিন সম্ভবত আগের।ঠিক জানিনা।বেশ দুর্বল আর খাপছাড়া লাগলো।অনেক কিছুই অহেতুক এবং অতিরঞ্জিত।ফ্যান্টাসি ঘরানা বলে বলছি না,ওভারঅল কেমন জানি জমলো না।পট পট করে মানুষ মরতেসে,অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিসপাতি হয়ে যাইতেসে,আর উপন্যাসের চরিত্রগুলা এগুলা নিয়ে কেমন কাম এন্ড কুল!!ড্রাগন এর উপর উড়তে উড়তে এডাল্ট জোক মারতেসে!!ভাই তুই ড্রাগনের উপর,যেকোনো সময় মরবি,ঠাকুরের নাম নে!!
নর্স মিথোলজি আর বর্তমান সময়ের মিলমিশের কন্সেপ্ট ভালো লেগেছে।গল্পের শেষ দিকের অধ্যায় গুলো পড়তে ও ভালো লেগেছে। মূল চরিত্র-আরিন,যে কিনা অন্য কোনো সময়,অন্য কোনো গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে-তাকেই একটু ও মনে ধরেনাই।আর বাকিদের কথা কি বলবো?! আরিন সহ লেখকের লেখা তিনটি বই-ই পড়ে ফেললাম। "তার চোখের তারায়"- বইটি তিনখানার মধ্যে সেরা।
নর্স মিথোলজির উপর বেইসড আরবান ফ্যান্টাসী জনরার একটি ভাল বই। নর্স মিথোলজি সম্পর্কে যাদের ধারনা আমার মতোই প্রায় শুন্যের কোঠায়, তাদের আরো বেশি ভাল লাগার কথা।
গল্পের মূল চরিত্র মোট চারটি, ড্রাগ এডিক্টেড আরিন, ভিক্ষুক নিনা, কর্পোরেট কোম্পানিতে কাজ করা তানিশ আর আর্কিওলজি প্রফেসর বসুরায়। বইয়ের ব্যাপারে শুধু ভাল না বলে যথেষ্ট ভাল বা কিছু ক্ষেত্রে অসাধারন ও বলতে পারতাম, তবে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে লেখকের উদাসীনতার কারনে সেটা বলতে পারছিনা। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় মূল চরিত্র আরিনকে আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করা যেত। অপ্রয়োজনীয় স্ল্যাং, ইরোটিক হিউমার বিরক্তিকর লেগেছে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় হতাহতের বিষয়টি মূল চরিত্রের বিপরীতে হজম করতে মোটামুটি কষ্ট হয়েছে। নিনা চরিত্রটিও কনফিউসিং। প্রথমদিকের বর্ননা অনুসারে মনের মধ্যে ১৩/১৪ বছরের কিশোরী একটি মেয়ের চরিত্র কল্পনা করে নেওয়ার পর, হঠাৎ তার কাজকর্ম আর বয়সের সাথে সংগতিপূর্ণ মনে হয়নি।
এইসব সমস্যার পরেও নর্স মিথোলজি সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারনা থাকার কারনে বইটি ভালই ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ৩০০+ পেইজের বইটি একদিনে শেষ করতে তেমন কষ্ট করতে হয়নি।
ঘটনার শুরু নিনা নামের মেয়েকে দিয়ে । উল্টোডাঙ্গার বস্তির মেয়ে নিনা একরাতে ধর্ষিত হওয়ার সময় এক অলৌকিক রডের কল্যাণে বেঁচে যা���় । এই মেয়েটিই আবার তাঁর আপন বাবা জগাইকে পুড়িয়ে মারে ।
আইটি ফার্মে কাজ করা তরুণ তনিশ এক রাতে রাস্তায় মাতাল হয়ে হাঁটছিল । এমন সময় দুর্ঘটনাবশত একটি লেকে পড়ে যায় সে । নিশ্চিত মৃত্যু থেকে তাকে রক্ষা করে একটি রহস্যময় হাত , যে হাত অন্ধকারে আলোর মত জ্বলে , যে হাতে বিলুপ্ত মহাপক্ষী আরজেন্টাভিস এর উল্কি করা ছিল । বেঁচে ফেরার পর তাকে কে বাঁচিয়েছিল এর সন্ধান শুরু করে সে । তাঁর পর এক মহাবিস্ময়কর ঘটনার সাথে জড়িয়ে যায় সে ।
এক গভীর রাতে গঙ্গায় মাছ ধরতে যান জেলে সিদ্ধেশ্বর ও তাঁর ছেলে গনা । তখন গঙ্গার বুক থেকে কিছু একটা শক্তিশালী জিনিস এসে ধাক্কা দেয় তাদের বোটকে । তখন গঙ্গার ঘোলা পানিতে এক কিশোরীমেয়েকে ভাসতে দেখেন তারা ,যার পুরো শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো নানা বর্ণের আলোকচ্ছটা । আর আকাশেও বৃহৎ আকারের কিছু উড়াউড়ি করছিল । এই মেয়েটিকে বড় করে তুলেন সিদ্ধেশ্বর । যার নাম আরিন ।
বইয়ের মূল চরিত্র আরিন । পুরো ঘটনাতে একজনের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ সে । তাঁর কাছে আছে রহস্যময় অস্ত্র হেলরিল । যা কেবল তাঁর হাতেই কাজ করে । অতীত জীবনের কথা কিছুই মনে পড়ে না আরিনের ।সে কোথায় ছিল , কিভাবে পৃথিবীতে এলো , এখানে তাকে পাঠানোর উদ্দেশ্য কি এসব কিছুই তাঁর মনে নেই ।
হঠাৎ করে কলকাতার বুকে শুরু হয়েছে বিরাট হত্যাযজ্ঞ । আর খুনীরা আর কেও না , ভিকটিম এর ই আপনজন । যারা খুন করার পর শুধু একটা জিনিশই দেখতে পায় , প্রাগৈতিহাসিক সাপ জাইগানটোফিস।
নরস মিথোলজি মতে মহাবিশ্বের মোট ন'টা ভাগ । এক একটা ভাগে গড়ে উঠেছে এক এক ধরনের প্রাণ । সেগুলো হলো - Niflheim, Muspelheim, Asgard, Midgard, Jotunheim, Vanaheim, Alfheim, Svartalfheim এবং Helheim. এই নয়টি ভাগ যেন একটার সাথে অন্যটা মিশে না যায় সেটা নিশ্চিত করে বৃক্ষদেবতা ইগড্রাসিল। যাবতীয় নর্স মিথলোজি ইগড্রাসিল বা সেই নয় ভাগের কোন না কোনটার সাথে সংযুক্ত। এরকম একটা ভাগ হলো হেলহেইম , অবলুপ্ত প্রাণীদের জগত । কি ঘটে চলেছে সেখানে ?
প্রাচীণ সব গুহাচিত্রে যে অর্ধমানব ও অর্ধপশু সরসরাসের উপস্থিতি দেখা যায়, ,যার উদ্দেশ্য ৯ টা জগতকেই দখলে নেয়া।এই সরসরাস কি ফিরে এসেছে ?খয়েরি জগতের রাজকন্যা আরিনকে মিডগারড নামক মানুষের জগতে পাঠানোর কি উদ্দেশ্য ? আরিন, তনিশ, নিনা ও প্রোফেসর বসুরায় ভয়াবহ এক ইঙ্গিত পেলেন। মহাবিশ্ব প্রস্তুতি নিচ্ছে পৌরাণিক এক মহাযুদ্ধের। পরিস্থিতি আরও জটিল করে যখন দৃশ্যপটে হাজির হলো অতিকায় এক ড্রাগন।
সবমিলিয়ে বইটি দারুণ ছিল । যাদের মিথলজি নিয়ে আগ্রহ তাঁদের বইটি ভাল লাগবে ।
ধরুন...আপনি গঙ্গাবক্ষে স্টিমারে চড়ে যাচ্ছেন , হঠাৎ আপনার সামনে জল থেকে মাথা তুললো মহাজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম সাপ ইয়োরমুনগ্যান্ডার । কেমন অনুভূতি হবে আপনার ?
ভাবতে পারছেন না তো? যাতে আপনি খুব সহজেই ঐরকম দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন তার জন্য পড়তে হবে এই ‛মাইথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসি থ্রিলার’টি । নর্স মাইথোলজির ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রিয় শহর কলকাতার প্রেক্ষাপটে লেখক এমন একটি ফ্যান্টাসি থ্রিলার আমাদের উপহার দিয়েছেন যা বর্ণনা করার মতো বিশেষণ আমার জানা নেই ।
🔹একদিকে আমাদের চিরপরিচিত নিতান্তই সাধারণ জগত এবং অন্যদিকে নর্স মাইথোলজিতে বর্ণিত নয়টি স্তরবিশিষ্ট, রোমাঞ্চকর, ঘটনাবহুল জগত । নয়টি স্তরবিশিষ্ট যে জগতের কথা বলা হয়েছে সেটি বড়োই অদ্ভুত, সেখানে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রাণীদের স্থান হয় । দেবতাদের স্থান অ্যাসগার্ড, আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের জন্য মিডগার্ড, আর মৃত এবং অবলুপ্ত প্রাণীদের স্থান ‛হেলহেইম’ । বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ এড়াতে এদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে জীবনবৃক্ষ ‛ইগড্রাসিল’ ।
হয়তো ইগড্রাসিল’ই মহাবিশ্বে প্রাণের রক্ষাকারী, তাই আধুনিক যুগে খুঁজে পাওয়া লক্ষ লক্ষ বছরের প্রাচীন গুহাচিত্রে কোনো বৃক্ষদেবতার পুজোর ইঙ্গিত পাওয়া যায় । আর পাওয়া যায় এক রহস্যময় চরিত্রের ছবি, তার শারীরিক বা মানসিক কোনো বৈশিষ্ট্যই গুহাচিত্রগুলিতে স্পষ্ট নয় । এই গূঢ় চরিত্র এবং তার মনোবাসনাই এই উপন্যাসের মেরুদন্ড ।
🔹এক বিশেষ বলয় যার নাম ‛ক্রাক রিং’, আপনাকে স্থানান্তরিত করতে পারে এক জগত থেকে আরেক জগতে, যেখানে পদে পদে অপেক্ষা করছে বিস্ময় আর বিপদ । সেখানেই প্রয়োজন এক অসাধারণ চরিত্রের, যে নির্ভীকভাবে মোকাবিলা করবে সব মহাজাগতিক বিপদের ।
এখানেই ‛আরিণে’র আগমন । আরিণ এক পথভ্রষ্টা রাজকন্যার চরিত্র, বৈপরীত্যই তার পরিচয় । একদিকে মারাত্মক ড্রাগের নেশায় বিভোর, নিজের অতীত সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে । মুখে অকথ্য ভাষা । অপরদিকে, নির্ভয় এবং মানবিক গুণসম্পন্ন । আরিণ সাধারণ মানুষের মতোই দুঃখ পেলে কাঁদে, কিন্তু তার চোখের জল কারো ক্ষতস্থানে লাগালে মূহুর্তের মধ্যে সেই ক্ষত সেরে যায় ।
🔹এই কাহিনী আপনাকে নিয়ে যাবে এমন এক বিপদসঙ্কুল মহাবিশ্বে, যেখানে আরিণের সাফল্য বা ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করছে মহাবিশ্বের ভবিষ্যত ।
পাশাপাশি আছে তানিশ, নিনা এবং প্রফেসর বসুরায় - এর মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি । এছাড়াও আছে বিশাল মহাজাগতিক সাপ ‛ইয়োরমুনগ্যান্ডার’, প্রকান্ড ড্রাগন ‛নিদহগ্’ এবং মৃত ও অবলুপ্ত প্রাণীদের জগত ‛হেলহেইম’ ।
🔹বাংলায় এইরকম সুবৃহৎ প্রেক্ষাপটে ফ্যান্টাসি থ্রিলার কখনো লেখা হয়েছে বলে আমার জানা নেই । প্রেম-ভালোবাসা-বিচ্ছেদ, আনন্দ-দুঃখ ততটুকু করেই আছে যতটুকু আমাদের মনে গেঁথে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ।
লেখক সায়ক আমান সম্পর্কে যতই বলি ততই কম । এত তথ্য এবং কল্পনার মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি যে উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন তা এককথায় অনবদ্য । প্রায় সাড়ে তিনশো পাতার উপন্যাস পড়তে গিয়ে কাহিনী কোথাও এতটুকুও ঝুলে যায়নি, টানটান ভাবটুকু বজায় রাখতে সক্ষম, যা একটি থ্রিলারের মূল বৈশিষ্ট্য ।
বাংলা ভাষায় মৌলিক কাহিনির ফ্যান্টাসি উপন্যাস। চমৎকার কাহিনির জন্য লেখক প্রশংসার দাবিদার। মোটামুটি সবই ভাল লেগেছে, বর্ণনশৈলী বাদে। ব্যাককাভারে পৌরাণিক মহাযুদ্ধের আভাস দেখে যতটা আশা করছিলাম, ততটা পূরণ হয়নি।
“Yggdrasil is the Tree of Life, Its branches cover the world and stretch up to the sky. But it has only three roots. One is submerged in the waters of the Pool of Knowledge. Another in fire. The last root is being devoured by a terrible creature. When two of its roots have been consumed by fire and beast, the tree will fall, and eternal darkness will spread across the world.” ― Twan Eng Tan, The Garden of Evening Mists
- আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান - নিনা, কিশোরী এক মেয়ে যে ট্রেনে ভিক্ষা করে বেড়ায়। ছোটবেলায় মাকে হারানো সেই মেয়ে হঠাৎই অদ্ভুত এক রডের সন্ধান পায়, যার রয়েছে অলৌকিক কিছু ক্ষমতা। এই রড পাবার পরবর্তী কিছু ঘটনা নীনার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। - তনীশ, কলকাতার এক আইটি কোম্পানিতে চাকরি করে। মাসে একদিন মাতাল হয়ে কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় সে। তেমনি এক রাতে মাতাল অবস্থায় নদীতে পড়ে যায় সে। অলৌকিকভাবে সে সময় এক হাত এসে বাচিঁয়ে পাড়ে নিয়ে যায় তাকে। - সিদ্বেশ্বর আর তার ছেলে গনা পেশায় জেলে। মাঝ গঙ্গায় মাছ ধরতে গিয়ে তারা দেখে এক অতিপ্রাকৃতিক দৃশ্য। এক কিশোরী মেয়েকে সেখান থেকে পেয়ে তাদের পরিবারে স্থান দেয় তারা। - প্রফেসর বসুরায়, প্রাগৈতিহাসিক নানা ঘটনা সম্পর্কে তার বিস্তর জানাশোনা। তাই কলকাতার বুকে ঘটে চলা এক সিরিয়াল কিলিংয়ের ব্যপারে সাহায্য চাওয়া হয় তার, যেখানে অপরাধীরা খুন করার আগে শুধুমাত্র একটি বিশাল বড় সাপকে দেখে! - নর্স মিথোলজি অনুসারে মহাজগত নয়টি ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলো - Niflheim, Muspelheim, Asgard, Midgard, Jotunheim, Vanaheim, Alfheim, Svartalfheim এবং Helheim. এই নয়টি ভাগই যুক্ত ইগড্রাসিল নামক এক বিশাল গাছের সাথে। যাবতীয় নর্স মিথলোজি ইগড্রাসিল বা সেই নয় ভাগের কোন না কোনটার সাথে সংযুক্ত। - এখন নীনার পাওয়া সেই রডের আসল রহস্য কি? তনীশকে কে বাচায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে? গঙ্গায় পাওয়া সেই মেয়েটি আসলে কে? কারা কলকাতায় করছে ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিং? এ সব কিছুর সাথে নর্স মিথোলজির কি সম্পর্ক? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক সায়ক আমানের মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসি "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান"। - "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" প্রথমে ভারতের বিভা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়। পড়ে বাংলাদেশের চিরকুট প্রকাশনী এর বাংলাদেশী সংস্করণ বের করে। আমি বইটির চিরকুট সংস্করণটিই পড়েছি। "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" মূলত লো/আরবান ফ্যান্টাসি ভিত্তিক মিথোলজিক্যাল কনসেপ্টের বই যার প্রেক্ষাপট মুলত কলকাতা। বিশ্বে এ ধারায় অনেক লেখা হলেও বাংলা ভাষায় এ ধরনের কনসেপ্ট এত বিস্তৃত আকারে তেমন একটা প্রকাশিত হয়নি। সেদিক থেকে লেখককে সাধুবাদ জানাতে হয় এ ধরনের কনসেপ্ট চুজ করার জন্য। - "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইয়ের বর্তমান পৃথিবীর কনসেপ্টের সাথে মিথোলজিক্যাল কনসেপ্টের ব্লেন্ডিং ভালোই লেগেছে। তবে প্লট এবং কনসেপ্টের তুলনায় বইয়ের লেখনী দুর্বল মনে হয়েছে। মাঝে মধ্যেই গল্প কাহিনীর ভিতরে খেই হারিয়ে ফেলছিল। গল্পের প্লটের সাথে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তাও কিছু আছে যেগুলো কমানো যেতে পারতো। - "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইতে চরিত্রের পরিমান অনেক, তবে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টেও আরো ভালো কাজ দেখানো যেতে পারতো। বিশেষ করে প্রধান চরিত্র আরিনের চরিত্রটাই পুরোপুরিভাবে ডেভেলপ হয়নি বলে মনে হয়েছে, যেখানে এ ধরনের বইয়ের খুবই অত্যাবশ্যকীয় এক জিনিষ ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। প্রথম উপন্যাস যেহেতু, সামনে লেখক এ ব্যাপারে আরো খেয়াল রাখবেন এ আশা করছি। লো ফ্যান্টাসি হিসেবে ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, আর্কিওলজিজ্যাল কনসেপ্ট, ম্যাজিকের এবং ম্যাজিকাল বিস্টের ব্যবহার ভালো লেগেছে। গল্পের শেষের দিকের একশনটাও দুর্দান্ত লেগেছে। - "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইয়ের কারিগরি দিকে নজর দিলে তা প্রশংসাযোগ্য। বইয়ের বাধাই, কাগজের মান চমৎকার লেগেছে, বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়েনি। বইয়ের প্রচ্ছদ ও নামলিপি খুবই ভাল লেগেছে, কাহিনীর সাথে তা একেবারে ম্যাচ করে গিয়েছে। প্রচ্ছদশিল্পীকে ধন্যবাদ চমৎকার এই প্রচ্ছদটির জন্য ।"আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইয়ের ভিতরের ইলাস্ট্রেশন গুলোও বইটির একটি প্লাস পয়েন্ট। - এক কথায়, বাংলা সাহিত্যের হিসেবে বেশ ভালো এক মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসি হচ্ছে "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান"। যাদের ফ্যান্টাসি বিশেষ করে আরবান/ লো/ মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসি পড়তে পছন্দ তারা বইতে পড়ে দেখতে পারেন।
আবারও একবার লেখক একটি মাস্টারপিস তৈরি করেছেন আমাদের সাধারণ দুনিয়া আর কল্পোজগতের মাঝে নৈসর্গিক সেতুবন্ধন করে। বলে রাখা ভালো গল্প R rated। শিশুপাঠ্য একদমই না। ক্রমাগত কাটাকাটি, রক্তারক্তি আর গালাগালিতে রাঙিয়ে দেওয়া আছে অনেক অংশ। তবে ভালো লেগেছে অনেক কারণে। তারই কিছু তুলে ধরলাম.... i) গল্পের মূল চরিত্র female এবং সে রীতিমত ভয়ানক। তার ধারে কাছে ঘেঁসাও কল্পনাতীত। এই ধরনের কিছু rare character representation গল্পকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছে। ii)গল্পে প্রেম আছে কিন্তু প্রেম নিয়ে মাতামাতি নেই। যেটুকু আছে সেটুকুই অনবদ্য। iii)নরস মিথলজির জগৎকে লেখক নিজের কলমে যেভাবে তুলে ধরেছেন তা বর্ণনা করার বিশেষণ আমার কাছে নেই। iv)গল্পের কিছু অংশ আনন্দে চোখে জল এনে দিয়েছে। মনে হয়েছে বইটা জড়িয়ে এই দুয়েকটা পাতায় আটকে যাই। আর এগোব না। আবার বইয়ের শেষে এমন অবস্থা যে পাতাগুলোকে শুকনো রাখা মুশকিল হয়ে উঠছিল।
আরও অনেক বলা যায় কিন্তু বললে গল্পটা ফাঁস করে ফেলব। তাই এই থামলাম।
PS: মৃন্ময়, নিজে না পড়ে আমাকে আগে পড়তে দেওয়ার উদারতা দেখানোর জন্য তোর কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।
সায়ক আমানের লেখা এটি প্রথম বই আমার। বাংলা সাহিত্যে urban fantasy নিয়ে লেখা আছে কি না জানিনা। তবে এটি আমার চোখে সেরা। নর্স মিথলজি নিয়ে লেখককে রীতিমত পড়াশুনা করতে হয়েছে তা গল্পের বর্ণনাটি বোঝা যায়। একদম শিশুপাঠ্য এটি একদম ই না। এক কথায় এই গল্পের উত্তেজনা পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখবে।
নর্স মিথলজি মেশানো আরবান ফ্যান্টাসি। সায়ক আমানের লেখার ভঙ্গী বেশ ভালো লাগে। মাঝে একজায়গায় গোঁজামিল দিয়ে মেলানো লেগেছে। তা সত্ত্বেও অসাধারণ। এই নিয়ে দুইবার পড়লাম। ভবিষ্যতে সময় পেলে আরো বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছা রাখি।
নর্স মিথোলজি এবং আধুনিক কলকাতার সাবলীল মিথোস্ক্রিয়া। কিন্তু, কেন জানি চরিত্র গুলোর অবয়ব ধারালো ভাবে মনে ভাসেনি,এক্টু আবছা রয়ে গেছে। হয়তোবা মনোযোগ টা পাঠক হিসেবে পুরোটা দিতে পারিনি ☺। ৫ তারার হিসেবটা ঠিক আমার আসে না 😄, দেয়ার জন্যই দেয়া হয় আরকি 😇
সায়ক আমানকে আমি চিনি ইউটিউবের মাধ্যমে । তার একটা স্টোরী চ্যানেল আছে । সেখানকার নিয়মিত শ্রোতা আমি । সেখান থেকেই তার প্রথম বইটার খোজ পাই । "তার চোখের তারায়" বইটা চমৎকার ভাবে শুরু হলেও শেষটা আমার ঠিক পছন্দ হয় নি । মনে হয়েছিলো হয়তো আরও একটু ভাল হতে পারতো । তাই তার পরের বইটার ব্যাপারে একটু কম আশাবাদী ছিলাম । অনেকদিনের চেষ্টার পর তার বই "আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান" বইটা হাতে এসেছে । বইটা একই সাথে ফ্যান্টাসি, আরবান ফ্যান্টাসি এবং এভভ্যাঞ্চার ক্যাটাগরিতে পড়ে । তাই বই পড়ার আগে নিজের মনকে এই ভাবে ঠিক করে নিতে হবে যে এই বইটা পড়তে গেলে যুক্তির থেকে আপনার কল্পনা শক্তির ব্যবহার বেশি করতে হবে । নয়তো পুরো গল্পের আসল মজা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন ।
গল্পের শুরু হয় এক ছোট্ট মেয়ে দিয়ে । বস্তিতে থাকে সেই মেয়ে তার বাবার সাথে । তার মা বস্তির ঘরে আগুন লেগে মারা গিয়েছিলো । এক রাতে মেয়েটা নির্জন রাস্তায় দিয়ে বাসায় ফেরৎ আসার সময়ে কিছু মানুষের হাতে পড়ে । যখন মেয়েটির সাথে নির্মম কিছু হতে যাবে তখনই মেয়েটির হাতে একটা রড জাতীয় লম্বা দন্ড এসে পড়ে । আশ্চর্য ঘটনা ঘটে তখন । তারপর আসে এক আিটি সেক্টরে কাজ করা যুবকের । যে মাসে অন্তত একদিন কোলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় মাতাল হয়ে । বাস্তবতা থেকে নিজেকে আড়াল করে রাস্তায় রাস্তায় হাটে । সেই ছেলে একদিন রাতে হঠাৎ করে পড়ে যায় একটা জলাশয়ে । সাতার না জানা থাকায় যখন ছেলেটা মরতে যাবে তখনই একটা হাত এসে তাকে টেনে তুলে নিয়ে যায় । সেই মানুষটার খোজ করতে গিয়ে ছেলেটা জড়িয়ে যায় আরও বড় কিছুতে । আর আছে এক প্রোফেসর যে দুনিয়ানার নানান স্থানের কেভ পেইন্টিন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন । বিয়ে থ করেন নি । সারাটা সময় পড়াশুনা করে কাটিয়ে দেন । সেই এই অভিযানের সাথের সাথে জড়িত । এর পর আসে আরও একজন । ২৫/২৬ বছরের এক মেয়ে । এমন এক মেয়ে যার জন্ম এই পৃথিবীতে নয় । অদ্ভুত তার চরিত্র আর অশ্চর্য তার ক্ষমতা । শরীরে পানি পড়লেই তার শরীর থেকে আলো পড়তে থাকে ।
এই হচ্ছে গল্পের চরিত্র গুলো । এই গল্পটা আরও ভাল ভাবে পরতে হলে আপনাকে নর্স মিথোলজি সম্পর্কে একটু জ্ঞান থাকা দরকার । তাহলে বইটা আরও ভাল ভাবে বুঝতে সুবিধা হবে । গল্পনা মূলত আদিম এক অপদেবতা উত্থানকে কেন্দ্র করে । নর্স মিথোলজিতে মোট জগত আছে নয়টা । আদিম অপদেবতার সরসরার এই সব গুলো জগতই দখল করতে চায় । সেই ঘটাতে থাকে একের পর নৃশংস হত্যাকাণ্ড । আর যতই হত্যাকাণ্ড হতে থাকবে মানুষের মনে সেই বিশাল অতিকায় সাপ সরসরারের ভয় বাড়তে থাকবে, বাড়তে থাকবে তার ক্ষমতাও । কিন্তু ইগড্রাসিল এই অদেবতাকে রুখে দেওয়ার জন্যই তার নিজের সন্তানকে পাঠিয়ে দেয় এই পৃথিবীতে । সাথে যুক্ত হয় এক উপরের চরিত্র গুলো । চারজন গিয়ে হাজির হয় হেলহেইম নামের এক অবলুপ্ত প্রাণীদের জগতে । যুদ্ধ শুরু হয় ! এখন শেষ পর্যন্ত মেয়েটি কি পারবে অপদেবতাকে হারাতে ? তাহলেই কেবল পৃথিবীর সাম্যবস্থা ফেরৎ আসবে !
গল্পের কাহিনী বর্ণনা নিয়ে কোন কথা হবে না । সায়ক আমানের গল্প বলার ধরনটা খুবই সাবলিল আর চমৎকার । পড়তে পড়তে একটু বিরক্তি আসবে না বরং আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে । বইটা পুরো পুরিই একটা ফ্যান্টারি গল্প । আপনারা এটাকে আধুনিক রূপকথাও বলতে পারেন । চরিত্রের উপস্থাপন, তাদের পারস্পারিক সংলাপ সবই আমার কাছে চমৎকার লেগেছে । বইয়ের মাঝে মাঝে কিছু ছবি এই গল্পটাকে যেন আরও একটু বেশি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছে, কল্পনার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে । বলা যায়বই পড়ার পুরো সময়টা কেটে চমৎকার । আপনাদেরও পড়ার জন্য অনুরোধ করবো !
কিন্তুটা বইটা এই দেশে পাবেন কি না সন্দেহ আছে । ইন্ডিয়ান রাইটারের বই । এই দেশের কোন লাইব্রেরীতে পাবেন কিনা জানি না । তবে অনলাইনে কিছু পেইজ আছে যারা ইন্ডিয়া থেকে বই নিয়ে আসে । তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন !
আপনি কী হ্যারি পটার পড়ে তার যাদু জগত সম্পর্কে মোহিত? আপনি মার্ভেল ফ্যান? আপনার প্রিয় চরিত্র থর এবং সে জন্য নর্স মিথোলজির ওপর আপনার প্রবল আগ্রহ? এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আর সময় নষ্ট না করে হাতে তুলে নিতে পারেন সায়ক আমানের আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান। এ এক অসাধারণ জার্নি। সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বইটা শেষ করলেও এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম। লেখক সুচারুভাবে বর্তমান জগতের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন নর্স মিথোলজিকে। কিন্তু তার আড়ালেই লেখক দেখিয়েছেন আমাদের তিলোত্তমার সৌন্দর্যের আড়ালে কিছু বিষাক্ত দিক। এক কথায় বইটাকে বলা যায় 'আনপুটডাউনেবল'। যথেষ্ট পড়াশোনা করে লেখক এ গল্প বুনেছেন। প্রতিটা চরিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন সযত্নে এবং মেপে। কোথাও কোনো অংশ অত্যুক্তি মনে হয়নি। তবে পাঠকদের উদ্দেশ্যে শুধু একটাই স্ট্যাটুটরি ওয়ার্নিং। যদি আপনি দুর্বলচিত্তের মানুষ হন, তাহলে প্লিজ পড়বেন না। কারণ ভায়োলেন্সটা গ্রাফিক্যালি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে লেখক সিদ্ধহস্ত। গল্পের প্রতিটা টুইস্ট অত্যন্ত রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করা যায়। যেই মূহুর্তে মনে হয়েছে 'ওঃ, এর পর তো তার মানে এটা হবে, এই জায়গাটা প্রেডিক্টেবল', ঠিক তার পরের মূহুর্তেই কীভাবে যেন লেখক মনটা পড়ে নিয়ে মোচড় এনেছেন ঘটনাপ্রবাহে। স্পয়লার না দিয়ে লেখকের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলার। কেভিন ফাইজিও সিনেমার স্বার্থে মিথোলজির কিছু অংশ বদলেছিলেন। শেষে যদি আপনিও মিথোলজি ফলো না করে অন্যভাবে গল্পটা শেষ করতেন, আনন্দ পেতাম। এই মূহুর্তে বড্ড বেশি মন খারাপ হয়ে রয়েছে শেষটার জন্য।
প্রচুর সুতো ফেলে রাখা আছে গোটা গল্প জুড়ে, কিন্তু শেষে গিয়ে ঠিকঠাক বুনতে ভুলে গেলেন! ভিলেনটিকে "অতিপরিচিত" বলেও বলতে ভুলে গেলেন। প্লেন তো মাঝ আকাশে ওভাবে দাঁড়ায় না, ওভাবে ফুটো করাও যায়না। ফাইনালি বলতে বাধ্য হচ্ছি, সরসরারকে মারাত্মক আহামরি বিশাল কিছু ভয়ের করেও বানাতে পারলেন না। 3 টেনে টুনে দিলাম, কারন মন পুরো ভরল না। :(
"আসল রূপকথার গল্পের শেষে সব ভালোও হয় না, খারাপও হয় না। আসল রূপকথার গল্পের শেষই থাকে না... সে গল্পগুলো পাঠকের মনে জীবিত থেকে যায় চিরকাল... 'চিরকাল'- এর থেকে ভালো কিছু হয় আর?"
গল্পের শুরু হয় এক কিশোরী মেয়ে নিনাকে দিয়ে যে একটা বস্তিতে তার বাবার সাথে থাকতো আর রেললাইনে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। একদিন রাতে তার বাবাকে খুন করে সে বের হয়ে যায়��� অপরদিকে কলকাতার যুবক তনিশ, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা আর বসের ঝাড়ি খেয়ে যার দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। একদিন মাতাল হয়ে ডুবতে বসেছিল তখনই এক মেয়ে তার জীবন বাঁচায়। যার হাতে প্রাচীন পাখি 'আরজেন্টাভিস' এর ট্যাটু ছিল। সেই মেয়ের সন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারে সে চরমমাত্রায় মাদকাসক্ত যাকে এক নদীতে ছোটবেলায় পাওয়া গেছে। তার আসল পরিচয়, নাম ঠিকানা কেউই সঠিকভাবে জানে না। শুধু এতটুকুই তনিশ জানতে পারে ওর নাম আরিন এবং ওর একটি হেলরিল হারানো গিয়েছে। অন্যদিকে কলকাতায় এক নৃশংস সিরিয়াল হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। কে বা কারা এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে কেউ ই জানে না। আরিনের পরিচয় ই কী? সে কি এই পৃথিবীর বাসিন্দা না অন্য কোনো জগতের? নিনা, তনিশ আর আরিন এই তিনজনের মধ্যে কীসের সম্পর্ক? নিনা ই বা কেন ওর বাবাকে খুন করলো? আরিনকে কেন এই পৃথিবীতে পাঠানো হলো? আরিনের সাথে কি এই হত্যাযজ্ঞের কোনো সম্পর্ক আছে? নেপথ্যে কে? নর্স মিথোলজির আলোকে রচিত বইটিতে সব সমাধান লুকিয়ে আছে। এখানে আপনি রহস্যের সমাধানের সাথে সাথে নর্স মিথের এসগার্ড, মিডগার্ড, ইয়োরমুনগ্যান্ডার, ইগড্রাসিল সবকিছুর ধারণা পেয়ে যাবেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: বইটিতে লেখক কোথাও ঢিল দেন নি। সবটাতেই টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছেন। এক অংশ পড়ার পর অপর অংশ জানার জন্য নিজ থেকেই কৌতূহলবোধ করবেন। নর্স মিথলজি আর আধুনিক জগতের ম��্যে সংঘটিত হয়া হত্যাযজ্ঞের এক কম্বিনেশন। বইটিতে অতিরিক্ত পরিমাণে গালাগাল ব্যবহৃত আর অনেক খারাপ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার না করলেও চলতো। দুই একটা জায়গায় প্রেক্ষাপটের সাথে গালাগাল মানায় কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ছিল। যার কারণে বই পড়ার গতিতে সামান্য বাঁধা পড়ে এবং বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল আমার।
চরিত্রায়ন: আরিন আর নিনা এখানে মূখ্য চরিত্র হলেও তনিশের ভূমিকা ও নেহাত কম নয়। এছাড়া নর্স মিথলজির কিছু চরিত্রের দেখা পাওয়া যাবে।
প্রচ্ছদ: বইয়ের প্রচ্ছদটা অনেক সুন্দর ছিল। নর্স মিথোলজির বৃক্ষ ইগড্রাসিলকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। (প্রচ্ছদটা দেখেই বইটা নিয়েছিলাম। পরে কাহিনি ও মোটামুটি ভালোই লেগেছে।)
[ এটার সাথে নিল গেইম্যানের নর্স মিথলজিটা ও পড়তে পারেন। ]
যদি গল্পটার শেষ টা নে লেখা হত? তাহলে আর ভাল খারাপের ধার না ধারলেও চলতো,আসল রূপ কথার গল্পের শেষে সব ভালো ও হয়না,খারাপ ও হয়না,আসল রূপকথার গল্পের শেষ ই থাকেনা| সে গল্প গুলো চিরকাল পাঠকের মনে জীবিত থেকে যায় চিরকাল......"চিরকাল" থেকে ভাল কিছু হয় আর?
সব কিছুর ই পরিণতি বিদ্যমান|সবকিছুর ই শেষ আছে| একটা গল্প যেমন শেষ হয়? তেমনি পাঠকের ভাল লাগার ও শেষ আছে| ভাল লাগা জিনিস টা বোধয় সবসময় ই বেয়াড়া একটু| কখন যে কেমন লাগবে বোঝা মুশকিল| নর্স মিথোলজি থেকে অনুপ্রাণিত এপিক ফ্যান্টাসি(সম্ভবত) ঘরনার বইটি,শুরু থেকেই সুপারহিরোয়িক ভাব টা ধরে রেখেছে| একেবারে শুরুতে নিনার সাথে ঘটতে যাওয়া ঘটনা টা বাস্তব মনে হচ্ছিলো,ঠিক যখন বিরক্তি ধরে গেলো তখন ই হিরোয়িক ব্যাপার টা ঘটে গেলো| রড টা চলে এল নিনার হাতে|
চিরকাল মনে দাগ কাটার মত না হলেও বইটি টানা পড়তে পারবেন| তবে বই এর ভাষা প্রাঞ্জল না,আবার কিছু ব্যাখ্যা অপ্রয়োজনীয় কারণে হয়েছে|বই এর প্লট কলকাতা হওয়ার কারণে বোধয় একটু অসুবিধে হয়েছে আমার| একবার পড়ার মত,যাদের সুপারিজম পছন্দ তাদের ভাল লাগবে আশা করি|| সুপার ভিলেন এর বিনাশ এত সাদা মাটা দেখানো হল,বিষয় টা হজম হল না||
বই এর আর দুটো প্যারা তুলে ধরি-
-"ওই শহরটা দেখতে পাচ্ছিস অরিন?দেখতে পাচ্ছিস ওর অলিতে গলিতে দারিদ্রের ছাপ,ওখানে এখন ও মাঝরাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েদের,এখন ও মানুষ রাস্তার ধারে শুয়ে রাত কাটায়,মাথায় ছাদ নেই,পেটে ভাত নেই,ওখানে এখন ও রাজনৈতিক নেতারা ধর্ম কিংবা জাতপাত মাড়িয়ে ভোট চায়,তাও এই হোপলেস শহরের হোপলেস মানুষ গুলো রাতে একটা মিরাকলের স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে যায়,ভাবে কাল সকালে একটা নতুন ম্যাজিক হবে,রাতারাতি পাল্টে যাবে সব,কিন্ত যায়না....."
কল্পনা আর বাস্তব মিলেমিশে একাকার এখানে| লেখকের ভাবনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকাশ রয়েছে এখানে| দু:খ,কষ্টে জর্জরিত হয়ে যখন আমরা হতাশায় ভুগি,তখন কেও না কেও আর ও বেশি দু:খ-কষ্টে থেকেও জীবনের সাথে লড়ে যায়|সবাই ভাবী কাল থেকে জীবন পাল্টে যাবে|কিন্তু যায় না|শুধু আমার লড়াই টা আর ও বড় হতে থাকে||
-"আমাদের মাঝে মাঝে খুব সেফ ফিল করা দরকার|মাঝে মাঝে এটা অনুভব করা উচিৎ যে,আমরা একটা মহাজগতে নয়,একিটা বেশ শক্তপোক্ত দশফুট -বাইদশফুট ঘরের ভিতরে থাকি...."
জীবনের প্রয়োজনে ব্যস্ততার আড়ালে আমরা প্রায়শ ই ভুলে যাই,আমাদের ঘরবাড়ি আছে,আমাদের মা-বাবা,ভাই-বোন,স্বামী-স্ত্রী,সন্তানসন্তদি আছে|জীবনে সুখের পিছনে ছোটা,অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে ভুলে যাই - সুখ আর অর্থ ছাড়াও আমরা সুখী হতে পারি আর সেই সুখ থাকে কংক্রিটের ওই বদ্ধ ঘরে||
আরবান ফ্যান্টাসি, তাও কলকাতা শহরের ওপর! প্রথমে নেগেটিভ দিক নিয়ে বলি। লেখকের বর্ণণশৈলী মোটেও ভাল নয়। কয়েকজায়গায় বর্ণণা ছিল খাপছাড়া। এক জায়গায় পাইলট আকাশে আগুন দেখতে পেয়ে কিছুক্ষণ বিমান চালানো বন্ধ করে দিলেন! বুঝলাম না বিমান কি মাঝ আকাশে বন্ধ করে রাখা যায়? জানা নেই আমার। আরেক জায়গায় তিনজন আরজেন্টাভিস ম্যাগনিফিকেন্সের পিঠ হতে আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু কিভাবে আলাদা হয় সেটাও ব্যখ্যা করা হয় নাই৷ তাছাড়া চরিত্রগুলো ভালো করে বিল্ড আপ করা হয় নাই।
এবার আসি ভালো দিক নিয়ে। প্লটটা দুর্দান্ত, লেখক বিস্তর পড়াশোনা করে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন, বোঝাই যায়। কাহিনী বুঝতে সমস্যা হলেও পুরো সময় পাঠককে ধরে রাখবে, এমনভাবেই বিল্ড করেছেন লেখক। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে এর ভালো দিকগুলো বাজে দিকগুলোকে ছাপিয়ে গেছে। আর প্রথমবার বলে এসব ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করাই যায়৷
১. মাঝ আকাশে বিমান থেমে আবার চালু হচ্ছে ২. কলকাতার রাস্তায় পুলিশকে তলোয়ার দিয়ে কচুকাঁটা করছে একজন। দুনিয়ায় আর মানুষজন নাই ৩. ১৩-১৪ বছরের একটা ভিক্ষুক বাচ্চা হুট করে এতো ম্যাচিউর হয়ে গেলো ৪. ড্রাগনের উপর চেপে ইরোটিক কনভার্সেশন করতেছে যেখানে বাঁচা মরার ঠিক নাই ৫. বৃষ্টির সময় জোনাকি আলো জ্বালে নাকি বৃষ্টির পরে জ্বালে আমার জানা নেই ভাই
কেউ মনোযোগ ধরে রেখে পড়তে পারলে আরো অসংখ্য প্লটহোল ধরতে পারবে। আমার কাছে মেইন প্লটটাই গোলমেলে লেগেছে। চণ্ডালের পর এই আরেকটা ওপারের থ্রিলার/আরবান ফ্যান্টাসি পড়ে চূড়ান্ত রকমের হতাশ হলাম।
পুরো লেখাটাই হলিউডি একটা দৃশ্যপট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ বেশি দৃশ্যমান করতে যেয়ে অনেক জায়গাতেই লেজে গোবরে একটা অবস্থা হয়েছে। ফ্যান্টাসি বা মিথোলজির দুনিয়াতে ভুল ধরা কঠিন। সবকিছুই কোনো না কোনো কাল্পনিক নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায়। এই গল্পটাও তাই। ভালো লাগার মতো জায়গা যেমন ছিল তেমনই ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে অনেক জায়গাতেই.. লেখা আরো গুছানো হওয়া উচিত ছিল।