খুন হয়ে গেল ছদ্মনামে লেখালেখি করা জনৈক ‘নাস্তিক’ ব্লগার। হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ আসিফ আহমেদ সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লো মাঠে। কল্পনাও করতে পারেনি কাদের বিরুদ্ধে লাগতে যাচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার আসিফের পছন্দ নয়। অথচ ভবিতব্য এড়াতে পারলো কই? প্রাণ বাঁচাতে ট্রিগার চাপতে বাধ্য হলো দুঁদে গোয়েন্দা।
একুশ বছরের একটা মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। নিরুপায় বাবা শরণাপন্ন হলেন উঠতি এক প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের। জোহান লস্কর যখন কেসটা নিলো, ব্যক্তিগত জীবনেও চলছে টানপোড়ন। কাঞ্চনপুরে পা রাখতেই শুনতে হলো হুমকি, “সময় থাকতে চইলা যান। পরে জান লইয়া ভাগতে পারতেন না।”
একাত্তরে অসমসাহসী যুদ্ধ করেছে টাইগারবাহিনী। কিন্তু রাজাকার হায়দারের সাথে মুক্তিযোদ্ধা কিবরিয়ার দহরম মহরম হয় কি করে? পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চিত্রপটে এলো মুরং ওঝা, রহস্যময় আশ্রয়দাতা হাজীসাহেব, নিটোল সৌন্দর্যের অধিকারিণী সুমি।
একাত্তরে কাঞ্চনপুরে কি ঘটেছিলো যার জের টেনে আজকের দিনেও প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাধারণ ছাত্রকে? ক্যামেরা নিয়ে মাঠে নামলো ‘ছিঁচকে’ রিপোর্টার জন। পেছনে লাগলো নির্মম, চৌকস এক সংগঠন। পড়তে শুরু করলো লাশ!
দেশবাসীর চোখ তখন আটকে আছে মাহেন্দ্রপুরের মহাযুদ্ধে।
মাত্র ছয়জন যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে স্রেফ প্রখর বুদ্ধিমত্তা সঙ্গী করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আস্ত এক কোম্পানি সৈন্যের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে নামলো টাইগার। দিনশেষে বুঝতে পারলো, ষড়রিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধটা বন্দুকযুদ্ধের চেয়েও অনেক, অনেক বেশি কঠিন।
মুষ্টিমেয় কিছু সিভিলিয়ান শক্তভাবে দাঁড়ালো প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
“ছারপোকা : দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর” বইটি খুলতে যাচ্ছে এমন এক অধ্যায় যা বাংলাদেশে স্মরণ করা নিষিদ্ধ হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বানানোর পর থেকে।
Kishor Pasha Imon is a famous Bangladeshi crime writer.
Musa Ibne Mannan, known by the pen name KP Imon, is an accomplished writer who initially gained recognition through his short stories on social media. Over the course of his career, he has written over 220 short stories, captivating his online audience with his vivid imagination and storytelling skills. Building on his success in the digital realm, Imon went on to establish himself as a prominent novelist, with his works being published in both Bangladesh and India.
His regular publishers are Batighar publications, Abosar Prokashona Songstha, and Nalonda in Bangladesh. Abhijan Publishers solely publish his books in India. He is the author of 13 novels and translated 9 books to Bengali till date (5/10/23).
He graduated from the Department of Mechanical Engineering at Rajshahi University of Engineering & Technology. Presently, he resides in Dallas, TX, focusing on his PhD studies in Mechanical Engineering at UT Dallas after completing his MS at Texas State University.
His other addictions are PC gaming, watching cricket, and trekking.
আমরা তিন ভাইবোনই থ্রিলার প্রেমী। মোটামুটি কাজ চালানোর মতো থ্রিল পেলেই আমরা যেকোনো বইকে তিন তারা দাগাবো নিশ্চিত, যদিও আমার দুই ভাইকে বলেও গুডরিডসে অ্যাকাউন্ট খোলাতে পারিনি। নাকি তাঁরা হিসেব রাখার জন্য বই পড়েন না। গত শুক্রবার বাড়ি গিয়েছিলাম। রাস্তায় আর বাড়িতে গিয়ে পড়ার জন্য আমি আর বড় ভাইয়া যার যার পছন্দের বই নিয়ে যাই। আমি ইংরেজি বই একটা নিয়ে আর বাঁকিটা ট্যাবই চালিয়ে নেবে টাইপ চিন্তা করে গোছানো শেষ করেছিলাম। ভাইয়া তার দুইদিন আগে প্রায় সারারাত জেগে এই বই শেষ করেছে, পরদিন সন্ধ্যায় কেমন জানতে চাইলে বললো বেশ ভালো। কি ভেবে শেষ মুহুর্তে বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম জানি না। ৬ ঘন্টার জার্নি ১০ ঘন্টায় শেষ করেও একটুও বিরক্ত হইনি, ভাইয়ের সাথে চিল্লাপাল্লা করিনি। আসলে আমি বইটা পড়ছিলাম। পাটুরিয়া ঘাটে বসে থাকা আমার স্মরণকালের সবচেয়ে লম্বা সময় ৪ ঘন্টা কিভাবে পেরিয়ে গেছে জানি না। বাস থেকে যখন নেমেছি সুবিশাল বইটা শেষ ততক্ষণে। কিছু কিছু লুপহোল যে ছিলো না তা নয়, তবে লেখনীতে ধার আছে বলেই সেসব "ওভারলুকড" হয় আমার কাছে। Actually it says enough.
থ্রিলারের যে নিশে ইনভেস্টিগেশন এর মাধ্যমে ক্রাইম আর ক্রিমিনাল দুটোই এক্সপোজ করা হয়, এই নিশ টা রীতিমতো মত বিরক্তিকর আমার কাছে। কিন্তু বায়াসড হবার পরও কেপির লেখা, স্টোরিং টেলিং, ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট আর এক্সিকিউশন এত দারুন ভাবে গোছানো থাকবে এটা যেন বাংলা মৌলিক থ্রিলারে এ অনেক বড় পাওয়া।
সত্যিই কেউ যদি আমাকে বলে কেন ছাড়পোকাতে ৪ স্টার দিলাম, তার আসল কারন হিসাবে অবশ্যই থাকবে কেপির লেখনী আর চরিত্রের গঠন৷
হ্যা বিরক্তিকর কি কিছু ছিল না? অবশ্যই ছিল। এপ্রিলের মত একটা শ্যালো ক্যারেক্টারকে ইচ্ছা মত ইউজ করাকে বাস্তব সম্মত লাগে নি, টুকটাক অনেক যায়গায় ভুল এই ভাবে চেপে ধরা যায় যদি শুধু ভুল ধরার জন্যই বসি। তবে উপন্যাস টা এই ছোট ছোট জিনিস অভারলুক করা ডিসার্ভ করে৷
লেখকের নামের কারণেই এর কোন বই আগে কেনা হয়নাই। এবারে জহির বুক স্টোরের জহির ভাই খুব জোর করে বললেন যে আপা, নিয়েই দেখেন না। উনার উপরে গজগজ করতে করতে এই বিশাল উপন্যাসটা কেনা! আর পড়তে গিয়ে অসম্ভব অবাক হয়েছি। প্লট যেমন ভালো, তেমনি ঝরঝরে লেখা! দুই একটা মাইনর অসঙ্গতি ছাড়া এই বইটা ভীষণ ভালো লেগেছে, আমার মা, খালা এবং আমার নিজেরো! গল্পে এখনকার ঘটনা আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনার মেলবন্ধন ছিলো স্বাভাবিক, একেবারেই আরোপিত না। মাঝে কিছু পপ কালচার রেফারেন্সও খুব জুতসই হয়েছে। মোদ্দাকথা, লেখকের খাটনিটা চোখে পড়ে, এবং পাঠক হিসেবে আমার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে যায়, যে যাক বাবা, কেউ তো আমাকে বলদ ভাবছে না!
একটা জিনিস অ্যাড করতে চাই, বাঙ্গালী লেখকদের খুব বিদেশী বই পড়ার কারণেই বোধহয় চরিত্রের নামে বিদেশী শব্দ অনেক বেশী দেখা যায়। নিজে বিদেশী গল্পের অনুবাদ করতাম বলেই বোধহয়, এই জিনিসটা খুব চোখে লাগে!
কেপির লেখা আমার বরাবরই পছন্দ। তা সে যত বিতর্কিত বিষয়ই ধারণ করুক না কেন। কেপিকে আমি এই সময়ের অন্যতম সেরা বাংলা সাহিত্যিক মনে করি। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, তার লেখায় একটা ফিলোসফি থাকে। হতে পারে সে ফিলোসফি আমার ফিলোসফির সাথে ম্যাচ করে না। কিন্তু যে লেখক লেখায় ফিলোসফি ইনপুট করতে পারেন, তাকেই আমার লেখক মনে হয়। আর এই ফিলোসফি ইনপুট করার কাজটা যদি থ্রিলারে করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
তবে এত কিছু সত্ত্বেও কেপির এই বইটা আমার কাছে সেরা বইগুলোর একটা লাগেনি। কারণ ঐ ফিলোসফির ইনপুটই। বইতে এমন এমন অবস্থায় ফিলোসফি এসেছে যেখানে সেটা ইরেভ্যালেন্ট।মনে হচ্ছিলো আরোপিত ইনপুট। আর ঠিক এ কারণেই বইটাকে ৪ তারা দিতে পারলাম না। এছাড়া গল্পের ক্ল্যাইম্যাক্সে সকল ঘটনা ঘটার কার্যকরণ আমার কাছে ১০০% কনভিন্সিং মনে হয়নি। তবে অ্যাকশান দৃশ্যগুলোতে কেপি বরাবরই সেরা, এখানেও সেটাই দেখা গেছে। সবমিলিয়ে বইটা অবশ্যই খারাপ না, তবে কেপি এর চেয়েও সেরা লেখা লিখেছে; এই বই লেখার পরে এবং আগেও।
গুডরিডসের রিভিউ করার ক্ষেত্রে একটা কমন অভিযোগ - পূর্ণসংখ্যায় বই মাপতে হয়। দশমিকের জায়গা নেই এখানে। যেমন ধরুন এই বইটা। সাড়ে তিন বা পৌনে চার পাওয়ার যোগ্য, শেষমেশ কিন্তু থামলাম গাবদা গোবদা চার এ এসেই!
যাজ্ঞে। কিশোর পাশা ইমন কয়েকটা জিনিসের জন্য বাহবা পাবেন - ১. মসৃণ লেখা, ২. বর্তমান বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে চমৎকারভাবে গল্পের ভেতরে নিয়ে আসা, এবং ৩. ক্ষুদ্র খুঁটিনাটিতেও ভালো পরিশ্রম দেওয়া। বইতে যৌনতার খোলাখুলি প্রকাশে অনেকের আপত্তি আছে শুনেছি, আমার কাছে অশালীন লাগেনি। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল হাকিম সাবের লেখা মাসুদ রানার মৌলিক কোন কাহিনী পড়ছি।
তবে কাহিনি কিছু জায়গায় বিনা কারণে লম্বা হয়েছে, এ থেকে বি পয়েন্টে যেতে অযথা কলেবরে বেড়েছে। একজায়গায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইনার মনোলগে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের রেফারেন্স এসেছে দেখলাম, অড লেগেছে সেটা। কিছু প্লটপয়েন্ট রিপিট করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সামনে - একবার, দুবার, বারবার। যদিও, এসব অভিযোগ নয়, অনুযোগ।
আমি একটা সময়ের স্বপ্ন দেখি, যখন বাংলা রোমাঞ্চপন্যাসগুলো অনূদিত হবে বিদেশি ভাষায়, বিশ্বসাহিত্যের পাঠকেরাও আগ্রহ নিয়ে পড়বেন৷ লেখকেরা এরকম মৌলিক প্লট এবং পরিশ্রম সহকারে লিখতে থাকলে সেরকম দিন অর্ধশতাব্দী পরেই হয়তো দেখতো পাবো, খুব বেশি দূরের কথা নয় কিন্তু!
পড়তে বসেছি তখন দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর এসে সন্ধেতে থেমেছে সময়। ৪৩০টা পাতা পড়তে দুএকটা জায়গা বাদে তেমন বিরক্তি আসেনি কোথাও। দিনশেষে আমি সন্তুষ্ট।
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা কি কখনো যুদ্ধপরাধী হতে পারে? সবকিছুকে ব্ল্যাক কিংবা ওয়াইট হিসেবে চিন্তা করে অভ্যস্ত আমরা। হয় খারাপ না হয় ভালো! হয় হিরো না হয় ভিলেইন।
তবে স���াই কি শুধুই ভালো কিংবা শুধুই খারাপ হয়? "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অভ মহেন্দ্রপুর" হলো আমাদের সেই মানসিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দ্বন্দ।
অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে "পদ্মপাতার জল" নামে লেখালেখি করে সাফাত। একই ছদ্মনামে কয়েকটি বইও বের হয়েছে তার। কিছু গল্পের বই, আবার কিছু বই ধর্মের সমালোচনা করে। এক কথায় বলতে গেলে, "নাস্তিক ব্লগার" বা "নাস্তিক লেখক"। ছদ্মনামে লেখালেখি করে নিজের লেখক সত্ত্বাকে লুকিয়ে রাখলেও, একদিন রাস্তার মাঝেই কুপিয়ে হত্যা করা হলো এই জনৈক 'নাস্তিক' ব্লগারকে।
তদন্তে নামলো হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সফল ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ। সাথে সহকারী জিয়া। তদন্তে নামতেই খুন হলো 'পদ্মপাতার জল' লেখকের প্রকাশক। ইনভেস্টিগেশনে খুলতে শুরু করলো রহস্যের একটি একটি করে সুতা। সেখানে বাধ সাজলো এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের ছিচকে এক ক্রাইম রিপোর্টার জন।
অন্যদিকে দুইদিন হলো, বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তিনা। তার ভার্সিটি পড়ুয়া লেখক বয়ফ্রেন্ড কায়সারও নিখোঁজ ৪দিন থেকে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ধরে নিবে বয়ফ্রেন্ডের সাথেই হয়ত পালিয়েছে তিনা। তবে খতিয়ে দেখতে তিনার বাবা শরণাপন্ন হলেন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জোহানের৷ কায়সারের রুমে পাওয়া গেলো মেস ম্যানেজারের লাশ। জোহানের তদন্তে পরিচয় হলো কায়সারের বন্ধু শুভ এবং তিনার বেস্ট ফ্রেন্ড মহুয়ার সাথে৷ রহস্যের সূত্র জোহানকে টেনে নিয়ে গেলো কুমিল্লার কাঞ্চনপুর।
এই কাঞ্চনপুরেই একসময় যুদ্ধ করেছে অসমসাহসী টাইগারবাহিনী। হাইকমান্ডের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি তারা। সেই বাহিনী কিনা মাত্র পৌনে সাতজন যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে টেক্কা দিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানী বাহিনীকে।
সবগুলো সুতো একটার সাথে অন্যটা কানেক্টেড। ছোট ছোট টুইস্টের মাধ্যমে সুতোগুলো জোড়া দিয়ে প্রথম থেকেই লেখক গল্পে আটকে ফেলেন পাঠককে। গল্পে লেখকের পাঠক'কে ধরে রাখার ক্ষমতা অসাধারণ৷ এক নাগাড়ে পড়ে যেতে একদম অসুবিধা হয় নি। আবার পুরোটা শেষ না করা পর্যন্ত শান্তিও হচ্ছিল না।
প্রথম থেকেই গল্পে থ্রিলটা বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যায়৷ টানটান উত্তেজনা বলতে যা বোঝায়, ফলে পাঠক গল্পে আটকে যায়। তবে গল্পের মেইন টুইস্ট লেখক বইয়ের মাঝ পথেই প্রকাশ করে দেন। তাই শেষার্ধে স্বাভাবিকভাবে থ্রিলের পরিমাণটা ছিল কম।
কারন লেখক সম্ভবত গল্পে থ্রিলের থেকে, কন্টেন্টের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই এই গল্পের প্রধান আকর্ষণ থ্রিল না। বইটির কন্টেন্ট, বইটির প্লট। এত শক্তিশালী কন্টেন্টের ফিকশনাল বই আগে পড়েছি কি না জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধ যেখানে পণ্য, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কিছু সেন্সিটিভ টপিক নিয়ে লিখে কিশোর পাশা ইমন বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া "নাস্তিক ব্লগার" হত্যার মত কিছু ইস্যু নিয়ে কথা বলার সাহসও খুব লেখক দেখিয়েছেন।
বইটির কন্টেন্ট বইয়ের প্রথম শক্তিশালী দিক হলে, ২য় হবে লেখনী। লেখনী অত্যন্ত সাবলীল। এজন্যেই পাঠক'কে ধরে রাখতে পারে৷ "মিথস্ক্রিয়া"র পর থেকে কেপির এইদিকে ইম্প্রুভমেন্ট'টা লক্ষণীয়। যদিও "যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" বইয়ে লেখার স্টাইলটা আরেকটু বেটার ছিল। "ছারপোকা"য় লেখক মূলত চেস্টা করেছেন সহজ স্বাভাবিক ছন্দে গল্পটা চালিয়ে নিতে।
১৯৭১সালের পটভূমিতে বর্ণিত, টাইগারবাহিনীর মিশনগুলো বইয়ের সবথেকে রোমাঞ্চকর অংশ।
বইয়ে লেখক আমাদের সামাজিক কিছু অসঙ্গতি, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা - ইত্যাদি বিষয়ে অনেক জায়গায় কিছু ক্ষেত্রে সুক্ষ্ম, আবার অনেকসময় স্থুল কিছু 'প্রয়োজনীয়' খোঁচা দিয়েছেন৷ লেখককে সাধুবাদ।
লেখক বইয়ের মধ্যেই অনেকবার মূল কাহিনিটা রিভিউ করেছেন৷ তাই আপনি৷ যদি পড়তে পড়তে ভুলে যান, সেক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হবে না। কারন লেখকই আপনাকে আবার মনে করিয়ে দিবে। তবে কেউ যদি টানা পড়েন, তার ক্ষেত্রে একই জিনিস বারবার রিপিট হওয়ার বিরক্তি চলে আসতে পারে।
আবার বইয়ের এন্ডিং কিছুটা ক্লিশের পর্যায়ে চলে গেছে। এন্ডিং আরো ভালো এবং গুছানো হতে পারতো। লেখক নিজের লেখার গতি বাড়ানোর চেস্টা করছেন, এটা জানা আছে। তবে গতি বাড়ানোর জন্য লেখায় যেন তাড়াহুড়ো ভাবটা চলে না আসে, বুঝা না যায় - এদিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে লেখকের।
চরিত্র বেশ ওয়েললি ডেভেলপড। "মিথস্ক্রিয়া" বই এবং লেখকের অন্যান্য ছোটগল্প যারা পড়েছেন, তারা হোমিসাইডের আসিফ এবং জিয়ার সাথে আগে থেকেই পরিচিত। এছাড়া জোহান লস্কর, শুভ, এপ্রিল, মহুয়ার চরিত্রও বেশ ভালোভাবে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
তবে হাজীসাহেবের রোলটা ক্লিয়ার না। উনি কি কেবলই কাঞ্চনপুর গ্রামে প্রভাব বিস্তারকারী পরোপকারী আশ্রয়দাতা? ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তোর অবদানের কথাও লেখক এড়িয়ে গেছেন। শেষে হাজীসাহেবকে নিয়ে আরো কিছু এক্সট্রা আশা করেছিলাম।
কেপি'র আর সব বইয়ের মতোই "ছারপোকা" বইয়েও দুই-এক পেজ এডাল্ট কন্টেন্ট রয়েছে। তবে ৪৩২ পেজের বইয়ে ২/১ পেজ তেমন চোখে লাগার মতো নয়।
"মিথস্ক্রিয়া" বই দিয়ে কেপির লেখার সাথে পরিচয়। ই-বুক "ডিটেক্টিভ আসিফ সমগ্র" এবং "মৃগতৃষা" বইয়ের পর থেকেই তার লেখার ভক্ত৷ "যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" পড়ার পর থেকে সেটা পাকাপোক্ত হলো৷ আর "ছারপোকা" গল্পের পর কেপি এখন প্রিয় লেখকদের তালিকায়।
হ্যা, কেপি দিন দিন নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে "যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" এখনো কেপির লেখা সেরা সাহিত্য আমার কাছে।
২০১৯ বইমেলায় "ছারপোকা" বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়৷ বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এটি লেখকের চতুর্থ বই। বইয়ের পেজ কোয়ালিটি বাতিঘর স্ট্যান্ডার্ড। বাইন্ডিং নিয়ে বাতিঘর প্রকাশনীর বেশ কিছু বইয়ে অভিযোগ থাকে। তবে এই বইয়ের বাইন্ডিং ভালো। প্রচ্ছদ খারাপ না, চলনসই৷ তবে আহামরি ভালো নয়।
বাতিঘর প্রকাশনীর অধিকাংশ বইয়ে ভুল বানানের মহড়া দেখা যায়। এই বইয়ে সেরকম বানান ভুল না থাকলেও, টাইপিং মিস্টেক অনেক ছিল। আরো একবার রিচেক করলেই সেগুলি অনেকাংশে এড়ানো যেত। তবে এদিকটা কেন জানি প্রতিবার বাতিঘর প্রকাশনীর নজর এড়িয়ে যায়। এই বিষয়ে বাতিঘরের নজর দেয়া উচিত।
সবমিলিয়ে অসাধারণ প্লটে "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অভ মহেন্দ্রপুর" দারুন উপভোগ্য ছিল। এই বছরের অন্যতম সেরা থ্রিলার উপন্যাস নিসন্দেহে বলা যায়।
দুর্দান্ত একটা বই। রোলার কোস্টার রাইডের মতো সেই প্রথম পাতা থেকেই টানটান গতি, রীতিমতো স্নায়ুকে কষ্ট দেয়ার মতোই। এরকম বই পড়াও চমৎকার এক অভিজ্ঞতা।
দুই একটা জিনিস পার্সোনালি আজাইরা লেগেছে। যেমনঃ মাজহার - এপ্রিল - জোহানের লাভ ট্রায়াঙ্গেল। কাহিনীর সাথে এই ত্রিভুজ প্রেমের কী সম্পর্ক বুঝতে পারিনি। জাদুঘরেও এরকম একটা ত্রিভুজ প্রেম আছে কিন্তু সেটার তাৎপর্য ঐ উপন্যাসে ব্যাপক। কিন্তু ছারপোকায় এপ্রিল যদি জোহানের একার গার্লফ্রেন্ডও হতো, তাতে কোন ঝামেলা হতো না। কারন পুরো উপন্যাসে এপ্রিলকে যতই আইসিডিডিআরবির গবেষক হিসাবে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করা হোক না কেন, তার চরিত্রটাই এভাবে দেখানো হয়েছে যে সে একজন কামুকী, সেক্স বম্ব কিংবা বাংলা সিনেমার একজন শোপিস হিরোইন যার আসল দৌড় কেবল ক্লাইমেক্সে কিছু চোখা চোখা ডায়লগ মারা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এরচেয়ে স্বল্প পরিসরে মহুয়া, ক্রিসি কিংবা জয়িতা চরিত্রগুলো উপন্যাসের সাথে প্রচুর খাপ খেয়েছে। আর অবাধ যৌনতার কথা বাদই দিলাম, এতগুলো রগরগে বর্ণনা দিয়ে আমার মনে হয় না উপন্যাসের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। অতিরিক্ত বোল্ড হতে গিয়ে এমন সব দৃশ্য এসেছে যেগুলো পড়ে পর্ণের মতোই বাজে অনুভূতি হয়েছে।
“For there to be betrayal, there would have to have been trust first.” ― Suzanne Collins, The Hunger Games
- ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর - সাফাত, অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে "পদ্মপাতার জল" নামে ব্লগিং করতো। এই ছদ্মনাম ব্যবহার করে কিছু বইও লিখেছে সে। হঠাৎ একদিন রাস্তার মধ্যে ভয়াবহভাবে হত্যা করা করা হলো তাকে । - আসিফ আহমেদ, হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের এক ডিটেক্টিভ। তার সহকারী জিয়াকে নেমে পড়েন এ কেসটি তদন্তে। এদিকে এই কেসে শুরু হলো আরো খুন হওয়া। এই ইনভেস্টিগেশনে জড়িয়ে গেল সাফাতের বাড়িতেই থাকা জন নামের এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের ক্রাইম রিপোর্টার। - জোহান লস্কর, একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর বা সংক্ষেপে পি.আই.৷ তার কাছে আসে এক কিডন্যাপিং কেস। টিনা নামের একটি মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে সে জানতে পাড়লো মাহেন্দ্রপুর নামক এক এলাকার চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। - ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। একটি ছোট গেরিলা বাহিনী চালায় টাইগার নামের এক কমান্ডার। সেখানেই ঘটে এমন কিছু ঘটনা যা পরবর্তীতে দেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেয়। - এখন কে খুন করেছে "পদ্মপাতার জল" কে? জোহান আর আসিফ কি পারবে তাদের কেসের কুল কিনারা করতে? এ সব কিছুর সাথে "মাহেন্দ্রপুর" নামক জায়গার কি সম্পর্ক? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক কিশোর পাশা ইমনের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক থ্রিলার উপন্যাস "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর।" - "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর" মুলত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক থ্রিলার উপন্যাস। বইয়ের কাহিনী একদম প্রথম থেকেই ফাস্ট। বইয়ের প্লট যেমন দারুন, লেখনীও তেমন দুর্দান্ত লাগলো। একদিকে পুলিশ প্রসিডিউরাল, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন আরেকদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনা সবগুলোই দুর্দান্ত লেগেছে। বইতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গেরিলা আক্রমণ বেশ ভালো লাগলো। - "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর" বইয়ের চরিত্রায়নও বইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। ডিটেকটিভ আসিফ, পি আই জোহান , মুক্তিযুদ্ধের টাইগার বাহিনীর সদস্যরা থেকে প্রায় সবগুলো চরিত্র গুলোই বইয়ের কাহিনীর সাথে মানিয়ে গেছে। ফাস্ট পেসড এ বইতে ছোট ছোট টুইস্ট এবং একশন চমৎকার লেগেছে। তবে একটু হতাশ হয়েছি একদম ফিনিশিং এ, যে কারণে এত খুন খারাপি সেটিকে "পর্বতের মূষিক প্রসব" টাইপের মনে হয়েছে। - "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর" এর কারিগরি দিক থেকে বলতে গেলে বইয়ের সম্পাদনা আরো ভালো হওয়া উচিত ছিল। বইতে প্রিন্টিং মিস্টেকের ছড়াছড়ি ছিল। প্রচ্ছদে লেখা আছে মহেন্দ্রপুর অথচ বইয়ের ভিতরে লেখা মাহেন্দ্রপুর। বইয়ের বাধাই, কাগজের মান অবশ্য ভালোই। প্রচ্ছদ আরো ভালো করা যেতে পারতো। - এক কথায় , মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সম্পূর্ণ অন্য ধারার এক থ্রিলার উপন্যাস হচ্ছে "ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর"। থ্রিলার প্রেমীদের এ বইটি মিস করা কোনভাবেই উচিত হবে না।
অনেক অনেক দিন পর ২ দিনে একটা বই শেষ করেছি। টুকটাক টাইপো আর বানান ভুল থাকলেও গল্প এত ভালো লেগেছে যে সেসব ওভারলুক করা যায়। বই শেষ করেও অবশ্য অতৃপ্তি ছিল- শেষ হলো কেন।
খুন হয়ে গেল 'পদ্মপাতার জল' ছদ্মনামে লেখা এক লেখক ও এরপরেই তার প্রকাশক। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কোনো জঙ্গী সংঘটনের কাজ। নাস্তিক লেখক হত্যার এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু হোমিসাইড ডিটেক্টিভ আসিফ আহমেদ লেখালেখির জন্য খুন হয়েছে তা মানতে নারাজ। তার সহকারী জিয়াকে নিয়ে নেমে পড়লেন প্রিয় লেখক হত্যার তদন্তে।
হুট করে উধাও হয়ে গেছে টিনা নামের এক মেয়ে। বন্ধুর অনুরোধে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরকে নামতে হলো তার খোঁজে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তার বয়ফ্রেন্ড কায়সারও নিখোঁজ। প্রেমঘটিত পলায়ন ভেবে কেসটা শুরুতে নিতে না চাইলেও দ্রুতই ভুল ভাঙলো তার। হাজির হলো কাঞ্চনপুর গ্রামে। তার সাথে জড়িয়ে ফেললো টিনা আর কায়সারের বন্ধু শুভ আর মহুয়াকেও। তদন্তে নামতেই তাদের পিছে লেগে গেল অজ্ঞাত একটা দল। ওরা মুখের কথার আগে গুলি ছুড়ে।
১৯৭১ সাল অকোতভয় টাইগারবাহিনী কাঞ্চনপুরে লড়ে চলেছে পাকিস্তানিদের সঙ্গে। দুই টাইমলাইনে চলছে কাহিনি। কিন্তু বর্তমান বারবার টেনে নিয়ে যাচ্ছে ৭১ এর কাঞ্চনপুরের দিকে।
কেঁচো খুড়তে বেরিয়েছে সাপ। খুন, অন্তর্ধানের তদন্ত, ৭১ এ টাইগার বাহিনির অপারেশন আর বর্তমান রাজনীতির মাঠ সব একসূত্রে গাঁথা। পাঠক বেঁধে রাখে শেষটা জানতে।
পুরো বইয়ে টানটান উত্তেজনা না লাগলেও আগ্রহী করে রেখেছে পুরোটা সময়। কেপি ইমনের লেখা খুব গোছালো আর স্পষ্ট। মনে হয় সিনেমার মতো প্রতিটি ঘটনা দেখছি।
মুক্তিযুদ্ধ আর বর্তমান সময়কে ঘিরে লেখক যে গল্প ফেঁদেছেন তা অনবদ্য। ৭১ এর অংশটুকু পড়লে মনে হয় যেন সেটা পুরোটাই বাস্তব। আর প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত মনে হয়েছে। যত্ন করে লেখক সবগুলো চরিত্রের গল্পই কিছু না কিছু তুলে ধরেছেন। জোহানের হাফ গার্ল ফ্রেন্ড এপ্রিল থেকে শুরু করে কাঞ্চনপুরের সুমা। টাইগার থেকে শুরু করে তার কিশোর সঙ্গী বিল্লাল আর বল্টু। সবার সাথেই কমবেশি পরিচয় ঘটেছে। তাদের চিন্তাভাবনা খোলামেলা ভাবেই বলে দিয়েছেন।
ছারপোকা' মূলত মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক থ্রিলার উপন্যাস। বেশ বড় কলেবরের উপন্যাস হলেও ঝরঝরে লেখনীর কারণে পড়তে ভালো লাগে। উপন্যাসের প্রতি অধ্যায়েই রহস্য ধরে রাখার ব্যাপারটা দেখা যায়। কিশোর পাশা ইমনের বইয়ের যে ব্যাপারটা আমাকে আকৃষ্ট করে তা হলো তার আউট অফ দ্য বক্স প্লট। 'ছারপোকা'তেও সেটা রয়েছে ভালোভাবেই।
যেকোন থ্রিলার বইয়ের মূল সম্পদ তার ক্লাইমেক্স। আপনি এতো এতো পৃষ্ঠা ধরে যে কাহিনী ডেভলপ করলেন, তার ভিত্তি যদি শক্ত না হয় তাহলে থ্রিলার বই পড়ার আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। 'ছারপোকা'তেও সেই একই ব্যাপার ঘটেছে। চরম বাজে একটা ক্লাইমেক্সের কারণে বইয়ের আবেদন কমে গেছে অর্ধেক। 'ছারপোকা' হতে পারতো বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য থ্রিলার উপন্যাস কিন্তু তার বদলে সেই মধ্যমানের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেই শেষ।
উপন্যাসে ভালো লেগেছে তার দুর্দান্ত শুরু, গতিময় লেখনী - যার কারণে প্রথম থেকেই গল্পে ঢুকে পড়তে সুবিধা হয়েছে। খারাপ লাগার ভেতর আছে - বইয়ের অন্যতম প্রধান দুই চরিত্র আসিফ এবং জিয়ার মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া, হুট করেই টিনা এবং কায়সারের অন্তর্ভূক্তি কিংবা মহুয়ার দৃশ্যপট থেকে বিরতি নেয়া, বইয়ে প্রেমের অংশ যতটুকু আছে তার সংলাপগুলো বড্ড কাঁচা (বিশেষ করে একাত্তরের অংশটুকু) এবং কারণে অকারণে ছারপোকা শব্দের ব্যবহার।
লেখকের প্লট নির্বাচন বেশ ভালো। ক্লাইমেক্স কিংবা লেখনীর টুকটাক সমস্যাগুলো ঠিক করতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো কিছুর আশা করাই যায়।
কিশোর পাশা ইমন যেনো গল্পের শেষের সালাহউদ্দিন মুরশেদ হয়ে গেলেন। সালাহউদ্দিন যেমন করে সবকিছুর হাল ছেড়ে দিলেন, তিনিও তেমনটি করলেন।
কাহিনি শুরু করেছিলেন খুব চমৎকার ভাবে। চলছিলোও বেশ চমৎকার ভাবে। খুব সুন্দর লেখনী ছিলো লেখকের। মুক্তিযোদ্ধার একটি ছোট গেরিলা বাহিনীর ঘটনার সাথে বর্তমান সময়ের কিছু খন্ড চিত্র মিলিয়ে গল্পকে লেখক এগিয়ে নিয়ে যান। বেশ উপভোগ করেছিলাম গল্পটা। বইতে অসংখ্য বানান ভুল ছিল তারপরও সেসব মেনে নিয়েই ভালোই পড়ছিলাম। আর সেটুকুর জন্য রেটিং ৪.৫ অনায়াসে পেতেন তিনি। কিন্তু গল্পের মূল বেসটা যখন উদঘাটন হলো তখন আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলাম না। এখন মনে হচ্ছে আমার পড়ার লেখকের বইয়ের মধ্যে জাদুঘর বইটা এটার থেকে অন্তত বেটার ছিলো।
খুন যদি "এরাই" করে থাকে, মারার সময় "আল্লাহু আকবর" ঠিক কী উদ্দেশ্যে বলেছিল?বাসের সেই চোর মেয়েটা এলো একটি মাত্র দৃশ্যে, তার জন্য পুরো একটা চাপ্টার কেন?পুলিশ এই রকম অদক্ষ কেন?গা ঢাকা দেয়া দুটো ছেলেমেয়ের দুই বন্ধু আবার এতো দক্ষ হলো কীভাবে যে রীতিমতো আর্মি থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া লোকদের জাল ছিঁড়ে বের হয়ে যায়?দুজনের সাথে প্যারালাল প্রেম চালিয়ে যাওয়াটাকে এত স্বাভাবিকভাবে দেখানোর চেষ্টা কেন?ব্যাপারটা এতই যদি স্বাভাবিক হয়,তাহলে তার মূল পার্টনারকে জানিয়ে করা হয় না কেন? এই কেন কাননে হারিয়ে গিয়ে বইটি আর ভালো লাগেনি।তবে এর মূল থিমটা ভালো, ইতিহাস কীভাবে বিজেতাদের সব পাপ মুছে ফেলে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
কেপির লেখার মাঝে একটা সিগনেচার স্টাইল আছে, যা তার পাঠক রা খুব সহজেই অনুমান করতে পারেন। গল্প এগিয়েছে ভার্সিটি লাইফ কে প্রাধান্য দিয়ে কেপির সিগনেচার স্টাইলে। গোলযোগ টা বাঁধে ছদ্মনামে লেখালেখি করা এক নাস্তিক লেখকের খুনের মাধ্যমে। এই ধরনের খুনের পেছনে কি শুধুই মৌলবাদের হাত থাকে না আরও বড় কিছু? বাংলাদেশের এক সাংবাদিক দম্পত্তির সাথে কিছুটা মিল খুঁজলেও খুঁজতে পারেন! ষড়ঋপুর সাথে আপনি যুদ্ধে জিতবেন সেই আশা করাটাই বোকামী। সম্মুখ সমরে আপনার প্রজ্ঞা ও দক্ষতার কাছে অনেক দশাসই যোদ্ধাও হার মানতে বাধ্য, কিন্তু যুদ্ধটা যদি আপনার সাথে আপনার হয়? ব্যাপারটা অনেকটা এভাবে ব্যাখা করা যায়, শীতের সকালে আপনার ঘুম ভেংগে যাবার পরেও আপনি লেপের তলার ওম এর মাঝে আরামে শুয়ে আছেন। অথচ দুই দিন পরে আপনার প্রজেক্ট সাবমিশন। ষড় ঋপুর সাথে এই যুদ্ধ গুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত হারি। মুক্তিযুদ্ধ বিশাল ক্যানভাস এ ঘটা একটা ঘটনা, এর মাঝে কিছু বিচ্ছিন্নতা থাকবেই কিন্তু সেটুকু স্বীকার করে নেবার মত মানসিকতা কি এখনও আমাদের মাঝে জন্মেছে? এক জন মানুষ যোদ্ধা হলেই যে দুধে ধোওয়া তুলসী পাতা এই বোধ টা আমাদের অন্তরাত্মার সাথে মিশে গেছে, যখন থেকে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ কে পণ্য রূপে দেখা হয় বা বানানো হয়েছে। লেখনী বরাবরের মত ঝরঝরে। তবে বেড সীন গুলোতে লেখক বরাবর এত মতই বড্ড বেশী খোলামেলা, যা কিছু সময়ের জন্যে গা রি রি করা এক অনুভূতি তৈরী করে। জোহান এর চরিত্র খানা আলাদা করে নজর কেড়েছে। সালাউদ্দিন মুরশীদ চরিত্র খানা একটা অন্য আবহ গড়ে তুলেছে গল্পে। তবে ডক্টর এপ্রিল এর উপস্থিতি প্রয়োজন এর তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশী হয়েছে বোধ করি, সেই তুলনায় জয়িয়া বা মহুয়া আরো বেশী জায়গা পেতেই পারত। কেপি বরাবর এমন কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে গল্পের বিস্তার করেন যা অনেকের কাছে আলোচনা করাটাই ট্যাবু। পার্বত্য চট্টগ্রাম, স্টুডেন্ট পলিটিক্স, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে প্রদীপ এর নিচের অন্ধকার দিকটা নিয়ে কথা বলার মত সাহস ই খুব বেশী মানুষ দেখাতে পারেন না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বই এর পাতায় তা তুলে আনা দুঃসাহসিক। সহমত ভাই আর দাঁত ভ্যাটকানো সেল্ফির মাঝে বেড়ে ওঠা একটা প্রজন্মের মাঝে এই বই গুলো যত বেশী পৌঁছাবে ততই মংগল।
বরাবরই বাংলাদেশের সমকালীন ঘটনা ইনকর্পোরেট করে থ্রিলার লেখায় কিশোর পাশা ইমনের জুড়ি নাই। তবে এইবার বেশ বিতর্কিত একটা জিনিসে হাত দিয়েছে।
টিনা নামের একটি মেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। তাকে খুঁজতে বুয়েট পাশ প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জোহান লস্করকে ভাড়া করলো টিনার বাবা। এইদিকে নাস্তিক ব্লগার সাফাত নিজ বাসার সামনে খুন হলো। দেখে মনে হয় জঙ্গীদের কাজ।
কেঁচো খুড়তে সাপ বেরোনোর মত জানা গেল টিনার প্রেমিক কায়সারও নিখোঁজ। সে আর সাফাত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রিসার্চ করছিল কাঞ্চনপুরে। সেখানেও এক দানোর প্রকোপে একে একে মারা যাচ্ছে সব বয়স্ক লোক।
ইমনের লেখায় আমাদের আশেপাশের খুব সাধারণ মানুষেরা সময়ের প্রয়োজনে সুপারহিরো হয়ে ওঠে। কিছুটা অবাস্তব ফ্যান্টাসি থ্রিলারের মত। আর একটা জিনিস সবচেয়ে বিরক্তিকর যে সব নারীচরিত্রকেই কেন আগুন সুন্দরী হতে হবে? পুরা বইয়ে কোন সাধারণ মেয়ে নাই। যেন আগুন সুন্দরী না হইলে কেউ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হবার যোগ্যতাই রাখে না।
আর এত বানান ভুল এই বইয়ে! কভারে মহেন্দ্রপুর কিন্তু ভিতরে মাহেন্দ্রপুর সহ অনেক টাইপো।
এখন কিছুটা স্পয়লার আছেঃ
মুক্তিযোদ্ধাদের খুব আবেগের জায়গা থেকেই দেখা হয় এদেশে। তারাও মানুষ ছিলেন, তাদেরও দোষত্রুটি ছিল এমনকি যুদ্ধাপরাধও করতে পারতেন এমনটা হজম করা বেশ কঠিন। অবশ্য যেখানে মূল যুদ্ধাপরাধীদেরই বিচার হতে এতদিন লেগে গেল, সেখানে এরকম কোন ঘটনার (যদি সত্যিকারেও হয়ে থাকে) বিচার হওয়া নেক্সট টু ইম্পসিবল।
This entire review has been hidden because of spoilers.
ভালো একটা থ্রিলার উপন্যাস হতে পারতো, কিন্তু ক্লাইমেক্সটা একেবারেই পানসে। পুরো গল্প জুড়ে যেভাবে হাইপ তোলা হয়েছিল, যে গোপন জিনিসের জন্য এত খুনাখুনি, এমনকি আগামী ৫০ বছরের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এর উপর নির্ভর করছে - সেটা শেষমেশ এই! আর গল্পে বেশ অনেক প্লট হোল/ প্লট আর্মার ছিল, তবে লেখকের প্রথম দিককার লেখা হিসাবে দেখলে হয়তো ঠিকই আছে।
এছাড়া আরেকটা জিনিসে বেশ বিরক্ত লেগেছে - গল্পের বিভিন্ন জায়গায় লেখকের অদ্ভুত ফিলোসফি ঢুকিয়ে দেওয়া। একজন লেখকের চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন অবশ্যই তার গল্পে থাকবে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে জোর করে আরোপিত, অনেকটা ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ার মত। গাঁটের পয়সা খরচ করে থ্রিলার বই পড়তে চেয়েছিলাম, লেখকসাহেব কেনো বাচ্চা নেওয়াকে ঠিক মনে করেন না সেই বিষয়ে ৫ পাতা লেকচার তো শুনতে চাইনি! আর গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র টাইগার সম্ভবত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর থেকে অনুপ্রাণিত। আমি আসলে জানি না কাদের সিদ্দিকী এমন কিছুর সাথে জড়িত ছিলেন নাকি, যদি না থাকেন তাহলে হয়তো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকেই এমন চরিত্র বানিয়েছেন। (অনেকটা নাজিম উদ্দিনের নেমেসিস এর মত।)
বি: দ্র: এটা নিঃসন্দেহে ১৮+ উপন্যাস, গল্পের কিছু শারীরিক মেলামেশার বর্ণনা বেশ ডিটেইলড।কারো এসব ব্যপারে অ্যালার্জি থাকলে সাবধানতার সাথে পড়া উচিত।
১. নেটফ্লিক্স এর মুভি/সিরিজগুলোর মত অকারণে প্রাপ্তবয়স্কদের জিনিসপাতি অ্যাড করেন লেখার মাঝে। এভয়েড করলে কা���িনীর খুব একটা ক্ষতি হবে না। অথবা নাজিমউদদীন এর মত পরিমিত ব্যবহার করতে পারেন। অন্যান্য লেখায় ও এটা লক্ষ্য করা যায়।
২. এই প্রসঙ্গ বাদ দিলে ভালো একটা থ্রিলার। মনোযোগ ধরে রাখবে ভালো। সকালে শুরু করে রাতে শেষ করলাম। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীর সাথে বর্তমান সময়ের একটা সুন্দর প্লট তৈরি করেছেন। সমাপ্তিতে পাঠককে চিন্তা করতে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে রেকমেন্ড করছি পড়ার জন্য।
৩. On a different note: defence background এর হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে মোটামুটি ওয়াকিবহাল। তাই মেজর ভাইয়াটার কাহিনী আর কাজকারবার একটু cringe লাগছে। তবে বাকি পাঠকদের এটা ফিল হবে না একদম আসা করছি।
এই বইটা হয়তো অনেকের কাছেই লেখকের অন্য বইগুলোর মত জমজমাট লাগবে না । কিন্তু বইটা একদম স্লো বার্নিং , ধীরে ধীরে পোড়াবে আপনাকে । মোরালিটির গ্রে জোনটাকে লেখক খুব সুন্দরভাবে এক্সপ্লোর করেছেন । আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। হয়তো " জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে " বইটা পড়ার আগে পড়া দরকার ছিলো। যাই হোক , হাইলি রেকোমেন্ডেড।
ছারপোকা - দ্য ব্যাটেল অফ মাহেন্দ্রপুর লেখক- কিশোর পাশা ইমন মুদ্রিত মূল্য- 480 টাকা প্রকাশনা- Abhijan Publishers
গত বছর অভিযান ক্যাফে থেকে কিশোর পাশা ইমন এর বেশ কিছু বই সংগ্রহ করেছিলাম, শেলভে অনেকদিন ধরেই পড়ে ছিল, এই বছর মার্চ মাসে অত্যন্ত চাপের মধ্যেও পড়া শুরু করেছিলাম ছারপোকা - দি ব্যাটেল অফ মাহেন্দ্রপুর। কাজের চাপের কারণে বইটি শেষ করতে অনেকটা সময় লেগে গেলো। বইটির প্রচ্ছদ বেশ ইন্টারেস্টিং, আর ব্লারব পড়ে একটা আলাদা অনুভুতি হয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধ এর প্রেক্ষাপটে লেখা অনেকগুলি উপন্যাস পড়েছি, এই থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস গুলো বেশ ভালো লেগেছে পড়তে।
পটভূমি - খুন হয়ে গেল ছদ্মনামে লেখালেখি করা জনৈক ‘নাস্তিক’ ব্লগার। হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ আসিফ আহমেদ সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লো মাঠে। কল্পনাও করতে পারেনি কাদের বিরুদ্ধে লাগতে যাচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার আসিফের পছন্দ নয়। অথচ ভবিতব্য এড়াতে পারলো কই? প্রাণ বাঁচাতে ট্রিগার চাপতে বাধ্য হলো দুঁদে গোয়েন্দা। একুশ বছরের একটা মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। নিরুপায় বাবা শরণাপন্ন হলেন উঠতি এক প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের। জোহান লস্কর যখন কেসটা নিলো, ব্যক্তিগত জীবনেও চলছে টানপোড়ন। কাঞ্চনপুরে পা রাখতেই শুনতে হলো হুমকি, “সময় থাকতে চইলা যান। পরে জান লইয়া ভাগতে পারতেন না।” একাত্তরে অসমসাহসী যুদ্ধ করেছে টাইগারবাহিনী। কিন্তু রাজাকার হায়দারের সাথে মুক্তিযোদ্ধা কিবরিয়ার দহরম মহরম হয় কি করে? পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চিত্রপটে এলো মুরং ওঝা, রহস্যময় আশ্রয়দাতা হাজীসাহেব, নিটোল সৌন্দর্যের অধিকারিণী সুমি। একাত্তরে কাঞ্চনপুরে কি ঘটেছিলো যার জের টেনে আজকের দিনেও প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাধারণ ছাত্রকে? ক্যামেরা নিয়ে মাঠে নামলো ‘ছিঁচকে’ রিপোর্টার জন। পেছনে লাগলো নির্মম, চৌকস এক সংগঠন। পড়তে শুরু করলো লাশ! দেশবাসীর চোখ তখন আটকে আছে মাহেন্দ্রপুরের মহাযুদ্ধে। মাত্র ছয়জন যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে স্রেফ প্রখর বুদ্ধিমত্তা সঙ্গী করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আস্ত এক কোম্পানি সৈন্যের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে নামলো টাইগার। দিনশেষে বুঝতে পারলো, ষড়রিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধটা বন্দুকযুদ্ধের চেয়েও অনেক, অনেক বেশি কঠিন। তারপর অতীতের সাথে বর্তমানে ঘটে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হওয়া কিছু ঘটনাকে এক সূত্রে মিলিয়েছেন কিশোর পাশা ইমন। ব্যাপারটা তিনি এতোটাই রোমাঞ্চকর করে তুলে ধরেছেন যে বইটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দারুণ উপভোগ করেছি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া - রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার কোন কমতি ছিলনা বইটাতে। আর সেই সাথে যখন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ঘটনাগুলোর দেখা পেয়েছি, ভালো লাগাটা আরও গাঢ় হয়েছে।বইটি পড়ার পর এমন এক অধ্যায় খুলে গেছে যা বাংলাদেশে স্মরণ করা নিষিদ্ধ হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বানানোর পর থেকে।ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর' পড়া শেষ করা পর 'যুদ্ধাপরাধ' টার্মটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন কিছু ধারণা লাভ করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর সাথে যুদ্ধের চেয়ে ষড়রিপুর সাথে যুদ্ধটা যে আসলে কতটা কঠিন, তা সত্যিই জানা হলো। নিঃসন্দেহে কিশোর পাশা ইমন 'ছারপোকা - দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর' দিয়ে দারুণ সাহসী একটা কাজ দেখিয়েছেন। বইটি অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন।
কেপি ইমন থ্রিলার গল্প বলার জন্যই বিখ্যাত। তার গল্পে থ্রিল যে থাকবে এই বিষয়ে একেবারে পয়সা-ফেরত বাজি রাখা যায়।
ছারপোকার কাহিনী যদি একটু রাখ ঢাক রেখে বলি, এক নাস্তিক ব্লগারের, যে ছদ্মনামে ব্লগিং করে এবং বইটই লিখে, কল্লা একদিন পড়ে গেল ঢাকার এক রাস্তায়। শুরু হইল তদন্ত৷ কেঁচো খুঁড়তে গিয়া যে সাপটা পাওয়া গেল তার গায়ে জঙ্গিবাদের কোনো চামড়া নেই। বরং সাপটার মুখ যদিও পাওয়া গেল ঢাকাতেই, লেজ উদ্ধার হল ১৯৭১ সালের কুমিল্লাতে, মুক্তিযুদ্ধের একটি ব্যাটলফিল্ডে। যুদ্ধের ময়দানে মহান এক মুক্তিযোদ্ধা এমন একটি যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়ে ফেললেন যার জেরে আজকের বাংলাদেশে লাশ পড়তে লাগল একটা পর একটা। ইতিহাস বদলে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে, যা ঠিক করে দিবে দেশের ভবিষ্যৎ।
বইয়ের মোটামুটি চতুর্তাংশের দিকে গিয়েই দেখা যায় লেখক কাহিনী প্রেডিক্টেবল করে ফেলছেন। তারপর ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়, লেখকের এই গল্পটি লেখার মূল উদ্দেশ্য কেবল থ্রিলিং এন্টারটেইনমেন্ট দেয়া নয়। তিনি পাঠকসকলকে নিয়ে একটা ডিসকাশনে ঢুকেন, গল্পের ভিতরেই। মুক্তিযুদ্ধের ক্যানভাসেই তিনি পাঠককে সাদা এবং কালোর মধ্যখানে যে ধূসর অঞ্চল আছে, ওইখানটায় চরাইয়া বেড়ান। যুদ্ধাপরাধী সেই মুক্তিযোদ্ধার আখ্যানটা সামনে রেখে পাঠককে দেখান, একটা মানুষ ভালো এবং খারাপ এই দুইয়ের মধ্যখানেও অবস্থান করতে পারে। আইডিওলাইজ করার কিছু নাই।
এই যুদ্ধাপরাধীর ছুঁতোয় লেখক যুদ্ধাপরাধ জিনিসটার সাথেও আবার আরেকটু পরিচয় করান। জিনিসটা তো আমরা বুঝিই কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমরা ভাবি না, ওরকম একটা বয়ান তিনি দেন। দুঃখজনকভাবে, জাতীয় রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব কেবল চড়া দামে বিক্রিযোগ্য একটি পণ্য হয়েই রইল। এর ডিলারদের আগডুম বাগডুম প্রোপাগান্ডার চোটে যুদ্ধাপরাধ জিনিসটার ওরকম ব্যবচ্ছেদই আর হইল না৷
এই বইয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হচ্ছে এখানে রাজাকার চরিত্রগুলো যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। রাজাকারদের ব্যপারটি নিয়ে অনলাইনের মেহনতি জনতাকে মাঝে মধ্যেই লড়াই করতে দেখা যায়। সিনেমা নাটকে রাজাকারদের মুখে দাঁড়ি কেন দেখা যায়, এইটা তো খুবই কমন একটা বিতর্ক। কিন্তু এই সব আদর্শিক লড়াইয়ে সাধারণত জায়গা হয় না কাঞ্চনপুর গ্রামের রাজাকার হায়দার কোন আদর্শে রাজাকার হইল। এই রাজাকার বইয়ের মূল কোনো চরিত্র নয়, কিন্তু এই চরিত্রটা বানানোর পেছনে চিন্তাটা গুরুত্বপূর্ণ।
পাঠোত্তর অনুভূতি হইল, কেপি ইমনের প্রচেষ্ঠা বৃথা যায় নাই। পড়নেওয়ালাদের জন্য রেকমেন্ডেড। গল্পের কিছু কিছু জায়গায় লুজ ডেলিভারি দুই একটা পড়ছে, ব্যপার না এইগুলা।
কাহিনী সংক্ষেপ: একটা খুনকে ঘিরে এই গল্প শুরু। খুন হয় এক নাস্তিক ব্লগার। সেই খুনের তদন্তের ভার পড়ে হোমিসাইডের অফিসার ডিটেকটিভ আসিফ আহমেদের ওপর। ঘটনাচক্রে এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এক প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, শুভ ,মহুয়া, কায়সার নামের ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ তরুণী। তদন্তের ফলে প্রত্যেকের জীবনের ওপর নেমে আসে মৃত্যুর হুমকী। বেরিয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কনফিডেন্সিয়াল তথ্য যা প্রকাশ্যে আসলে নড়েচড়ে উঠবে সারা দেশ। ক্ষতি হবে বড় রাজনৈতিক দলের। এত কিছু সামাল দিয়ে কেসটা কি সলভ করতে পারবে আসিফ আহমেদ? কি এমন হয়েছিল অতীতে? শুভ, মহুয়ারা কি বেঁচে ফিরতে পারবে মৃত্যুর হাতছানি থেকে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: কিশোর পাশা ইমনের ' মৃগতৃষা ' পড়ে তার লেখনীর সঙ্গে পরিচিতি। ' মৃগতৃষা ' বেশ ভালই লেগেছিল। তাই বেশ ভালই এক্সপেক্টেশন ছিল এই বইটা থেকে। কিন্তু হতাশ হয়েছি আমি। বইটা ভালো। তবে মোটেও আহামরি টাইপের না। আমার যেগুলো ভালো বা মন্দ লেগেছে তা নিচে তুলে ধরছি।
পজিটিভ পয়েন্টস: ১. প্লট খারাপ না। সাদামাটা প্লটের ওপর হলেও প্রচুর সাসপেন্স ছিল। শুরু থেকেই বর্তমান আর অতীতের কাহিনী একসাথে এগিয়ে চলে। ২. কাহিনী প্রথম থেকেই গতিময়। প্রত্যেক অধ্যায়ের শেষ পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে বাধ্য করে। ৩. লেখনী বেশ ভালো ছিল। ঝরঝরে লেখা।পড়তে কোথাও অসুবিধা হয় না। ৪. ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট খুব সুন্দর ভাবে করা হয়েছে। পাঠক নিজেকে বইয়ের ঘটনার সঙ্গে একাত্ম করতে পারবেন। নিজেকে শুভর জায়গায় কল্পনা করে নিজেই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
নেগেটিভ পয়েন্টস: ১. প্রথমত বেশ কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ছিল।যেমন - মনে পা পা নিয়ে ঘুরছে মনে হয়( পাপ), ফি ডি এফ( পিডিএফ); মাশুকমিয়ার ছাগলের ক্ষেত্রে - তেল চক চক করতো লোক ( লোম হতো) , ঝা ব্যাটা ( ওঝা) ইত্যাদি। ২. প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় ভাগে ছয়টি প্যারার মধ্যে প্রায় ৯ বার উচ্চারিত হয়েছে ' পদ্মপাতার জল '। এই জিনিসটা মাথায় প্রচন্ড খোঁচা মারে। এতবার ' পদ্মপাতার জল ' না লিখে কিছু জায়গায় বিশেষণ ব্যবহার করাই যেত। ৩.ছোটোখাটো তথ্যগত ভুল: ১.এক রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলার ফাঁকে মহুয়া - শুভদের থেকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট খবর পেয়ে অর্ডার করা জুস না ছুঁয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে যায় প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জোহান। পরে আবার এক জায়গায় দেখা যায় সারাদিনে এক গ্লাস জুস ছাড়া কিছুই পেটে পড়েনি তার।( হিসাবে তার খালি পেটেই থাকার কথা) ২. এক জায়গায় আছে ' শুভর পয়েন্ট বুঝতে পারছেনা কায়সার ' এখানে কায়সার এর পরিবর্তে জোহান হবে। ৩. সাফাতের বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় আসিফ তাকে বলেন কায়সারের বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছেন ( পৃষ্ঠা ৮০) এর পরই ঘটনাচক্রে আসিফ সেখান থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু কাঞ্চনপুর এ ঘটনার শেষে আসিফের মুখে শোনা যায় -' কায়সারের বাবাকে ডেকে আনলাম অফিসে। জানা গেল...' ( কিন্তু কায়সারের বাবার সঙ্গে আসিফ আহমেদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় নি। ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল কায়সারের বাড়ির সঙ্গে)। ৪. জোহান আর শুভ যৌনপল্লীতে গেছিল বাইক নিয়ে। কিন্তু একটু পরে যখন শুভ নিজের মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়া খেয়াল করে তখন সে বলে ' শালার বাসেই মেরে দিয়েছে কোনো শুওরের বাচ্চা ' ( কিন্তু সারা বইয়ে বাসের কোনো নাম গন্ধ ছিল না, শুভ কখনো বাসে উঠেছিল বলে জানা যায় না)। ৪. শুভর মাঝে মাঝেই ' দড়ি দেখলে সাপ ' কথাটি বিরক্তির উদ্রেক করেছে। ৫. কাঞ্চনপুর এর হাজিসাহেবের চরিত্রটা পরিষ্কার হয় নি। আরেকটু সময় দেওয়া দরকার ছিল তার জন্য। ৬. যৌনতা। বলবো না খারাপ। তবে মাঝে মাঝে খুব অযৌক্তিক লেগেছে। আর এখানে যে তরুণী মেয়েই আসুক না কেন সে দারুন সুন্দর। সবার দারুন সেক্সী ফিগার, সবার সুডৌল বুক , যৌবন উপচে পড়া চেহারা। তাদের থেকে চোখ ফেরানো যায় না। এই জিনিসটা একটু অতিরিক্ত লেগেছে। ৭. অতীতের ঘটনা: অতীতের একমাত্র যুদ্ধ দৃশ্যগুলো ছাড়া বাকি দৃশ্য গুলো খুব একটা মনে দাগ কাটতে পারে নি। ৮. বইয়ে ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের ভূমিকা ছিল। কিন্তু ইন্টেলিজেন্স কে খুবই লো লেভেলের লেগেছে। যার পেছনেই ইন্টেলিজেন্স লেগেছে তারা সবাই টের পেয়ে গেছে। একই গাড়ি তাদের ফলো করে। একজন সাধারণ মানুষও তো বুঝে যাবে যদি দিনের পর দিন একই গাড়ি তাদের ফলো করে।( কায়সার একই গাড়ি সব জায়গায় দেখতে পায় আর বুঝে যায় তাকে ফলো করা হচ্ছে।) ৯. শুভ প্রায় শুরু থেকেই ' তাদের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে ' ভাবতে থাকে।কিন্তু তখনও সে জানতো না কে তাদের পেছনে লেগেছে বা ফোন ট্যাপের মত কোনো প্রমাণও ছিল না তার হাতে তবুও বার বার ' ফোন ট্যাপ ' কথাটা আসাতে বিরক্তিবোধ হয়। ( এপ্রিল যেমন করে ফোন ট্যাপ ব্যাপারটা ভেরিফাই করে তেমন কিছু দিলেও মানা যেত) ১০. গল্পটা বেশ ভালো এগোতে থাকলেও এন্ডিংটা ভালো ছিল না । আরো বেটার এন্ডিং আশা করেছিলাম। হুট করেই যেন কাহিনী থেমে যায়।
যাই হোক, ওভারঅল বইটা খুব একটা খারাপ লাগেনি। সাসপেন্স, থ্রিল, প্রেম, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি মিলিয়ে বেশ সুন্দর কাহিনী।
This entire review has been hidden because of spoilers.
টিনা নামের একুশ বছর বয়সী এক মেয়ে নিঁখোজ। ধারণা করা হচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। মেয়েটিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিলেন সদ্য লাইসেন্স পাওয়া পাতি প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জোহান লস্কর। খুবই সাদামাটা কেস। ক্লু খুঁজতে খুঁজতে তিনি হাজির হলেন কাঞ্চনপুর নামের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। 'পদ্ম পাতার জল' নামের জনৈক নাস্তিক ব্লগারকে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। সাধারণ একটি সেকুলার-কিলিং কেস। মৌলবাদী কিছু সংগঠন জিহাদীয়ো স্টাইলে এরকম খুন মাঝেমধ্যেই করে থাকে। এই কেস হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে কেন এবং একে কেন ডিটেকটিভ আসিফ এতো বিশেষভাবে দেখছেন- তা নিয়ে ডিটেকটিভ জিয়া মোটামুটি খাবি খাচ্ছে। তদন্ত শুরু করতে না করতেই খুন হলো আরও কয়েকজন। ডিটেকটিভদ্বয় কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। সাধারণ একটা সেকুলার-কিলিং কেসে কেন এতো লাশ পড়বে! এর উপর আবার আছে ছিচকে সাংবাদিক জনের উপদ্রব। বন্ধুকে খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া দুই তরুণ-তরুণী। স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক বিষয়টা দ���খা গেলো তখনই, যখন তাদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হলো। কে বা কারা যেন দিনরাত অনুসরণ করে যাচ্ছে তাদের। ছারপোকা সর্বত্র। ঘটনা আরও অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো যখন তাদের খুন করার চেষ্টা করা হলো। প্রতিপক্ষ কে বা কারা কিছু আন্দাজ করা না গেলেও, তাদের শক্তিসামর্থ্য সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা পেয়ে গেছে তরুণ-তরুণী। এদিকে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জোহান কাঞ্চনপুর এসে দেখলেন বাতাস আরও ঘোলাটে। ক্রমাগত খুন হয়ে চলেছে এখানেও। সাদামাটা মেয়ে ভাগানো কেসটা কেমন যেন জটিল হয়ে উঠছে দিন দিন! ক্রমেই দৃশ্যপটে অাবির্ভাব হলো একাত্তর। মাত্র সাড়ে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রশিক্ষিত পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসমসাহসী যুদ্ধ করে চলেছে টাইগারবাহিনী। সমগ্র দেশবাসীর চোখ তখন আটকে গেছে মহেন্দ্রপুর-কাঞ্চনপুরের মহাযুদ্ধে। সবার চোখ এড়িয়ে ঠিক কি হয়েছিলো কাঞ্চনপুরে, যার জন্য স্বাধীনতার এতো বছর পরেও ঝরছে রক্ত? জোহানের রহস্যময় আশ্রয়দাতা হাজী সাহেব কিংবা নিটোল সৌন্দর্যের অধিকারিণী সুমির সাথেই বা এর কিসের সম্পর্ক? কাঞ্চনপুরে এসে কি অমূল্য তথ্যের সন্ধান পেয়েছিল সাফাত-কায়সার? কেনই বা এক রহস্যময় অতি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণকে? জানতে হলে, পড়তে হবে 'ছারপোকা' কিংবা 'ছারপোকার মুভি স্ক্রিপ্ট'। সাফাত-কায়সার, আর আসিফ-জোহানের সাথে পাঠককে সেই ভুবনে স্বাগতম, মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বানানোর পর থেকে যেই ভুবনের কথা বাংলাদেশে স্মরণ করা হয়ে আছে নিষিদ্ধ। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ উপরের লেখাটি যেমন কনফিউজিং, বইটিও শুরুতে তেমনই মনে হচ্ছিলো। এতো খুন! এতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র! পুরো বইতে রহস্য যতটা না ধারালো ছিলো, এর থেকে কয়েকগুণ বেশি ধারালো ছিলো লেখকের নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবনা এবং পাঠকে ভাবাতে শেখানোর উপকরণ। অসাধারণ! এমন একটা সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে সুবিশাল উপন্যাস লিখে ফেলার যে দুঃসাহস লেখক দেখিয়েছেন- পড়া শেষ করার পর তা বিশ্বাসই হচ্ছিলো না, তব্দা মেরে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। লেখকের সবচাইতে বড় সার্থকতা বোধহয় এখানে এটাই যে তিনি এবার পাঠকদের শুধু বিনোদিতই করেননি, সেই সাথে তাদের ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্টেও কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালনে চেষ্টা করে গেছেন। উনার আগের প্রায় সব বইই পড়া হয়েছে। লেখা, গল্পবলার ধরণ, প্লট, কিংবা চরিত্র চিত্রায়ণে প্রতি বইয়েই ক্রমাগত তিনি নিজেকে ছাপিয়ে গেছেন। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আশা করছি পরবর্তী বইগুলোতেও তার কাছ থেকে এ'ধরণের সময়পোযোগী দুর্দান্ত সব প্লটের দেখা পাবো। 'থ্রিলার মানেই যে শুধু নিরেট বিনোদন না'- এই বইটি তারই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
কয়েকবছর আগে কোনো এক বই পড়ুয়াদের গ্রুপে একটা পোস্ট দেখি।কিশোর পাশা ইমন নামের এক লেখকের একটা বইয়ের আলোচনা।বইয়ের নাম ছারপোকাঃ দ্য ব্যাটল অব মাহেন্দ্রপুর। তিন গোয়েন্দা পড়া থাকায় কিশোর পাশা নামটি আমার কাছে অপরিচিত নয়।তবে কিশোর পাশা ইমনটা আমার কাছে তখন পর্যন্ত চেনা ছিল না।কারণ তখন সদ্য বর্তমান সময়ের বাংলাদেশী লেখকদের থ্রিলার পড়া শুরু করেছি।বইটার রিভিউ দেখে আগ্রহ জেগেছিল।তবে বেশ অনেকদিন অবধি বইটা পড়ার সুযোগ পাইনি। কাট টু দুই হাজার বাইশ।কেপিকে ফলো করা শুরু করেছি।ফেসবুকে বিভিন্ন লেখা পড়া হয়।দেখা হয় বিবিধ বিষয়ে বানানো ভিডিও।এর ফলে উনার বইয়ের সম্পর্কে জানতে শুরু করি কিছু।জাদুঘর সিরিজের ব্যাপক প্রশংসা দেখতে পাই অনেকের লেখায়।তারপর এক শুভদিনে পরিচিত একজনের কাছ থেকে হাতে আসে মিথস্ক্রিয়া বইটি।গোগ্রাসে গিলে ফেলতে সময় লাগেনি বেশিদিন।এরপর নিজে কিনে পড়ে ফেলি মৃগতৃষা,যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল আর জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে(বইঘরে)।কেপি পরিণত হন আমার পছন্দের এক লেখকে। এত কিছু হয়ে গেলেও যে বই দিয়ে কেপির কথা জানতে পারি সেই ছারপোকা আর পড়া হচ্ছিল না।বেশ আগে বইঘরে মাঝে মাঝে বই পড়লেও অনেকদিন মোবাইলে ইবুক পড়া থেকে দূরে ছিলাম।আবার ইনস্টল করি দিন কয়েক আগে।কেপির ছারপোকা দেখে কিনে ফেলি।আরও কয়েকটা পড়তে থাকা বইয়ের ইতি ঘটিয়ে শুরু করি এই বইটা। এই বইটা হার্ডকপিতে চারশো পাতার অধিক।বিশালাকার বলা চলে বেশ সহজে।তবে কেপির উপন্যাস এইরকম আকারেরই হয়। এই বইটা দুইটি টাইমলাইনে লেখা।একটা হচ্ছে উনিশশো একাত্তরে সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আর অন্যটা বর্তমান।বর্তমান কালে যেসব ঘটনা ঘটতে থাকে এর সাথে প্রথম দিকে পাঠক মুক্তিযুদ্ধের সামঞ্জস্য খুঁজে না পেলেও পরবর্তী সময়ে আস্তে ধীরে পেয়ে যাবেন।স্পয়লার এসে যেতে পারে তাই কাহিনি নিয়ে আর কিছু না বলাই ভালো। কেপির লেখার সবচাইতে ভালো দিক হচ্ছে লেখার স্টাইল।দুইশো এর অধিক গল্প রচনা করে হাত পাকানো লেখকের লেখার স্টাইল খারাপ হলেই অবশ্য অবাক করার মতো হতো।সময়ের সাথে সাথে ওর লেখার উন্নতি হচ্ছে এবং আশা করা যায় সামনেও এই ধারা চলমান থাকতে।মোটামুটি বড় আকারের উপন্যাসটা পড়তে এক বিন্দু বিরক্তির জন্ম হয় না উন্নত লিখনশৈলীর কারণে। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর পেছনে সময় দেওয়া হয়েছে।ডিটেকটিভ আসিফ আর জিয়া এই দুজনকে অবশ্য কেপির আরো বহু লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের বর্ণনায় সুন্দর করে সেই সময়টা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।এই সময় নিয়ে অনেক লেখা পড়তে আমার কাছে ভালো না লাগলেই এই বইয়ে পড়ে গেছি আগ্রহ ভরে।যুদ্ধের সময়ের বর্ণনায় লেখক কোপ মেরেছেন বড় আকারে।মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে ভালো পরিমাণে লেখা হলেও যুদ্ধের সময়ের বর্ণনায় অনেক লেখক দারুণ কিছু দিতে পারেন না।তবে কেপি এই কাজ করেন নি।অস্ত্রের ব্যবহার ও যুদ্ধের কলাকৌশল নিয়ে লিখেছেন খুব সুন্দর করে।এই বইয়ে যে বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কেপির লেখায় ফুঁটে ওঠতে দেখা যায় উনি যেমন সমাজ দেখতে চান সেইটার বর্ণনা।এই বইয়েও তেমন ছিল।আমি এটা উপভোগই করি বলা চলে।কারণ আমার চিন্তার মিল পাই লেখকের সাথে। বইটা পুরো সময় জুড়েই দুর্দান্ত গতিময় ছিল।কোনো জায়গায় অপ্রয়োজনীয় লেখাজোখা নেই।যা এসেছে তা কেবল দরকারের আলাপ।এই বইয়ে পাঠক পাবেন না কখনো ফাস্ট কখনো স্লো এমন লেখা।যা কেপির আরেকটি বৈশিষ্ট্য। এন্ডিংটা হুট করে আসেনি।সময় নিয়েছেন লেখক।এই বইয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো ইতি বেছে নিতে সক্ষম হয়েছেন লেখক। সবমিলিয়ে ভালো বই।উপভোগ করেছি সবটুকু সময় জুড়ে।
এদেশে খুব চালু একটি ন্যারেটিভ হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা মানেই উনি চমৎকার চরিত্রবান হবেন। উনাকে হতেই হবে। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ কিন্তু মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ইতিহাসের যত বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে তার অর্ধেক কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষে করা। যেমন অন্য রাজ্যের আক্রমণ থেকে স্বীয় রাজ্য রক্ষার্থে উনারা কিন্তু স্বাধীনতার জন্যই যুদ্ধ করেছেন। তো যারা সহজাত প্রবৃত্তি থেকে যুদ্ধ করছেন তাদের সেই একই প্রবৃত্তি থেকে তারা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ বা মাৎসর্য যেকোন কিছুতেই লিপ্ত হতে পারেন।
এই যে কয়টা অস্পষ্ট বাক্য লিখলাম এতে আমার ১৪ বার চিন্তা করা লেগেছে। আর এই জিনিসটা লেখক যেভাবে তার বইতে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন তা রীতিমত প্রশং��ার দাবীদার। লেখকের সাথে প্রথম পরিচয় হয় মৃগতৃষার মৃগতৃষা মাধ্যমে। উনার আপাত সরল ব্যাপারের পেছনের কঠিন চেহারাকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার যে ক্ষমতা তার প্রকাশ এখানেও খুব জোরালো। সহজপাঠ্য লেখা, শুরু থেকে শেষ পর্যন্তু পাঠক হিসেবে আমাকে ধরে রেখেছে উপন্যাসটা।
চরিত্রগুলো উপভোগ্য। বিশেষত প্রোটাগনিস্টদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া একটি প্রায় শিশুতোষ আনন্দদায়ক, ইতিবাচক উত্তেজনাকর মুহূর্ত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রেক্ষাপটে চরিত্রের বিকাশ দেখতে একঘেয়ে লাগার কথা হলেও এখানে তা লাগে নি বরঞ্চ এক্ষেত্রে লেখকের মুন্সিয়ানা দেখবার মত।
বরাবরের মতই চলতি সংলাপের আধিক্য এখানে লক্ষণীয়। যেই সমাজের প্রেক্ষাপটে কাহিনী রচিত, সংলাপ সে অনুসারেই হওয়ার কথা। আর সে বিচারে সংলাপ সামঞ্জস্যপূর্ণ। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের বর্ণনা আরেকটু বিস্তারিত হলে খারাপ হত না, সত্যি বলতে এখানে সম্প্রসারণ আশাও করছিলাম পড়বার সময়। সব মিলিয়ে চমৎকার উপন্যাস। সাহসী প্লটে টানটান থ্রিলার পড়তে চাইলে অবশ্যই পড়তে পারেন।
নাম : ছারপোকা দ্য ব্যটেল অভ মাহেন্দ্রপুর লেখক : কিশোর পাশা ইমন জনরা : থ্রিলার পৃষ্ঠা : ৪৩২
এগুলো বুক রিভিউ বলা যায় না, একটা বই পড়ে আমার কি অনুভূতি তাই লিখে রাখার চেষ্টা।
রমজান মাস বাইরে কাজে যাওয়া হয় নাই,অফিসে মিটিং এর বিরক্তি কাটাতেই বইঘর থেকে বইটা নেওয়া। আগেই বই টা সম্পর্কে একটা ধারণা ছিলো। সেই ধারণার উপরই পড়া শুরু। শুরুই করা হয় একজন নাস্তিক হত্যা নিয়ে। তারপর আসে ২ জন তরুণ তরুণীর হঠাৎ পালিয়ে যাওয়া। প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর তাদের খুঁজে বের করতে সশরীরে হাজির হয় কাঞ্চনপুর।এদিকে নাস্তিক হত্যার ইনভেস্টিগেশনে নামে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট এভাবেই কাহিনী গড়াতে গড়াতে কখন যেনো মুক্তিযুদ্ধের ভিতর পরে যাই। যা চোখের সামনে দেখি। এই লেখক এর লেখার স্টাইল টাই আমাকে প্রশ্ন করায় যা হইছে এটা কি ঠিক? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করায়। মুক্তিযুদ্ধের এমন অসংখ্য ঘটনা আমাদের জানার বাহিরে। আমাদের কতো সুন্দর রিসোর্স কিন্তু আমরা রূপালি পর্দায় দেখতে পাই না। বিহারীদের আমিও ঘৃণা করি কিন্তু একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা যেখানে আমি জানি না সে আমার জন্য ক্ষতিকর কিনা। তেমনি নাস্তিক হত্যাও ঘৃণিত। ক্ষমতা মানুষকে রাক্ষস বানায়। ক্ষমতা মানুষকে সব কিছু উপর থেকে দেখা শেখায়। ক্ষমতা সাধারণ মানুষকে নগন্য বানানো ও শিখায়। আর মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে কি হচ্ছে এসব তো চোখের সামনেই দেখা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিভাবে বিক্রি হয়ে যায়। একজন টাইগার কিভাবে ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের হাত ভেজানোও কিছুই মনে করে না। বরং নিজেকে আরো গ্লোরিফাই করে এই বই টি না পড়লে অনেক অনুভূতিই অজানা থেকে যেতো। আর দিন শেষে পৃথিবীটা বড্ড ছোট, রাজনীতির মাঠে তা আরো ছোট। আসুন বই পড়ি, আলোকিত হোই।