তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে সমস্ত পৃথিবীব্যাপী এক দেশ; মানব জাতির বৃহত্তর ঐক্য। তেইশ বছর কেটে গেছে এরপর। সবকিছু স্থিতিশীল, কিন্তু হঠাৎ দেখা দিলো এক দুর্যোগ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেরই এক ভয়াবহ জৈবিক অস্ত্র আবার আঘাত হানলো পৃথিবীতে। যে অস্ত্রের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিলো সতেরো বছর আগেই, তা আবার ফিরে এলো কী করে? আর কেনই বা আঘাত হানলো?
প্রতিকার খুঁজতে সরকার মরিয়া, কিন্তু সব পথই বন্ধ। ভাগ্যক্রমে পাওয়া গেলো একটি উপায়; তাতেও রয়েছে ঝুঁকি। এই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পাঠানো হলো সিকিউরিটি এজেন্সির সেরা এজেন্ট রাদিদ রুদ্রকে। ও কি পারবে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল হতে?
পাঠক, তানজিরুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস, কিন্তু আপনি পাবেন পরিপক্ক একটি গল্প। সময় পরিভ্রমণ ও বাটারফ্লাই ইফেক্ট অবলম্বনে লেখা টান টান উত্তেজনার সাইফাই-থৃলারে আপনাদের স্বাগতম।
তানজিরুল ইসলামের জন্ম লালমনিরহাটে। এস এস সি রংপুর জিলা স্কুল থেকে আর এইচ এস সি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুরে। স্নাতক শেষ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগ থেকে। বর্তমানে স্বনামধন্য একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ। থৃলার সাহিত্যের প্রতি রয়েছে তার আলাদা ঝোঁক। ‘অনুভূতিহীন’ নামক তার একটি সাই-ফাই গল্প প্রথম প্রকাশিত হয় কলেজ-ম্যাগাজিনে। থৃলার গল্পসঙ্কলন-৪ ছাড়াও গল্পের আসর এবং বিসর্গ’সহ কিছু সঙ্কলনে তার বেশ কয়েকটি মৌলিক গল্প প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন থৃলার লেখক হারলান কোবেনের ‘টেল নো ওয়ান’ তার প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ। ‘প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়’ তার প্রথম মৌলিক সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস।
বাংলা ভাষায় সায়েন্স ফিকশন। সায়েন্স ফিকশন লেখার চর্চা নেহাত কমও না বাংলা সাহিত্যে। এখানে যদি কোনো 'কিন্তু' টানা যায় সেটা টানতে হবে সায়েন্স ফিকশন গুলো কতটা সায়েন্স ঘেঁটে ফিকশন, আর কতটুকু ফিউচার টাইমলাইনে লেখা গল্প, সেখানে। 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রা'য় বইটা নিই ২০১৯ সালের উল্লেখযোগ্য একটা বই হিসেবে। বইটা সায়েন্স ফিকশন হিসেবে ভালো, চমৎকার কাজ করেছেন লেখক। গল্পের প্লট তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের ভবিষ্যতকে নিয়ে। পৃথিবীতে চলছে 'এক দেশ এক পৃথিবী' শাসনব্যবস্থা। একটা দুর্যোগ, তার সমাধান খুঁজতে সময়-পরিভ্রমণ। পথের বিপত্তি এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। লেখক বইয়ের শুরুতেই গল্পের প্লটের টাইমলাইনটা ফ্লো-চার্টে দেখিয়েছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কত বছর পর কোন বড় ঘটনা মাথায় রাখা লাগবে। এটা ভালো ছিল, কারণ এই কাজটা পাঠককে পরে গল্প বুঝতে সাহায্য করেছে। কেন তার দরকার ছিল, সেখানে আসছি। লক্ষ্য করুন, গল্প শুরুর সময়টাকে 'গল্পের প্লটের টাইমলাইন' বলেছি, কারণ এখানে মাল্টিপল টাইমলাইনের ব্যপার আছে। ওকে। এবার আসি সময় পরিভ্রমণের কথায়। যারা টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে গল্প পড়েছি সিনেমা দেখেচি তারা কিছু বেসিক কথা জানি (যেমন এভেঞ্জারস এন্ডগেইমে বলেছিল বাকি থাকা এভেঞ্জাররা) এই যেমন অতীতে গিয়ে অতীত পালটে দিয়ে আসা যায় না... তো কেন অতীত পালটানো যায় না, তা নিয়ে আছে কিছু কন্সেপ্ট এবং প্যারাডক্স। লেখক এমন দুচারটা প্যারাডক্সেরও কথা বলেছেন বইয়ে। অতীতে গিয়ে দাদাকে মেরে আসলেন, ফলে বাবা জন্মাল না, আপ নি জন্মালেন না, তাহলে ভবিষ্যতে তো আপনার অস্তিত্ত্ব নেই, অতীতে যাবেন কি! আর অতীতে না-ই যদি যান দাদাকে মারলো কে? দাদা না মরলে আপনি জন্মাবেন ভবিষ্যতে। অতীতে ফিরবেন, দাদাকে মারবেন। কিন্তু দাদা মরলে আপনি আছেন কিভাবে... এই হলো 'গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স'। তার উল্টো বলা যাবে 'বিলকার প্যারাডক্স'কে। কেউ একজন নিজের ভবিষ্যতে গেল, জেনে আসলো অপছন্দের কিছু ঘটছে নিজের সাথে, ভবিষ্যতে। অতীতে ফিরলো। সতর্ক হয়ে গেল এবং আসন্ন ভবিষ্যতে সেটা ঘটতে দিল না। তাহলে প্রথমবারের ভবিষ্যৎ সে দেখলো কি করে (যদি অপছন্দনীয় ঘটনাটা না-ই ঘটে থাকে?)। আবার আছে বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স, প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স (যারা 'Predestination' সিনেমাটা দেখে বুঝতে পেরেছেন, তারা জানবেন), আর সবশেষে, জবাব, 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট/Butterfly Effect'। যার ভাষ্যমতে, পৃথিবীর এক প্রান্তে কোনো এক প্রজাপতির ডানা ঝাপ্টানো-ও অন্য প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়ের কারণ হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে না নিই। সময়-পরিভ্রমণের ক্ষেত্রে, বাটারফ্লাই ইফেক্ট বলে, "কখনো ঘটনাপ্রবাহে ক্ষুদ্রতম পরিবর্তন পরবর্তীতে যেকোন বৃহৎ পরিবর্তনকে সূচিত করে।" আচ্ছা ধরুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের কথা। জার্মানি সবে ইউরেনিয়াম রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯৩৯ সালের কথা। সে বছরই জার্মান বিজ্ঞানীদের দুটি পেপার প্রকাশিত হয়েছে পারমাণবিক শক্তি ও বিস্ফোরণ ইত্যাদির উপর। দুই দুইয়ে চার মেলালেন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী লিও জিল্যারড, হয়তো জার্মানরা পারমাণবিক বোমা বানাতে চলেছে। আইন্সটাইনকে সাথে নিয়ে জিল্যারড চিঠি লেখেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে, এই আশঙ্কা নিয়ে। সেই চিঠি থেকেই টনক নড়ে প্রেসিডেন্টের, 'প্রজেক্ট ম্যানহাটান' লঞ্চ করেন, যারা পরে আবিষ্কার করে পারমাণবিক বোমা (আর কোনো দেশের আগে) এবং ফলশ্রুতিতে পারমাণবিক বিস্ফোরণ দিয়ে বিশ্বযুদ্ধের ইতি। এবার ওই চিঠির প্রসঙ্গে আসুন। মনে করি, ১৯৩৯ সালের কোনো এক সকাল। প্রেক্ষাপট মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন আপনি, নাস্তা করে। একটু ধূমপান মন্দ হয় না। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া খয়েরি ইউনিফর্মের সাদামাটা এক তরুণকে থামালেন, লাইটার চাইলেন। তরুণ মেইলম্যান হয়তো হেঁটে রাস্তাটা পার হয়েই যেত, অগত্যা আপনার ডাকে থামলেন, লাইটের বের করে সিগারেট ধরিয়ে দিলেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে রাস্তা পার হতে গিয়েই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা (একটু স্যাডিস্ট না হলে গল্প শেষ করা যাচ্ছিল না :3 )। চিঠিবাহক, এবং চিঠিভরা ব্যাগ, দুই-ই ক্ষতিগ্রস্থ হলো। ধরুন সেই ব্যাগেই ছিল লিও জিল্যারড এবং আইনস্টাইনের লেখা চিঠি। যেটা আদতে আর প্রেসিডেন্টের দরবারে পৌঁছুল না। হয়তো যুদ্ধ পরিস্থিতে সেটা আবার প্রেরকদ্বয় খোঁজ নিয়ে জেনে উঠতে পারলেন না। তাতে প্রেসিডেন্ট যথাসময়ে (ইতিহাসে যে সময়টায় ঘটেছে) প্রজেক্ট ম্যানহাটান শুরু করালেন না। যথাসময়ে পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার হলো না, জার্মানি কোণঠাসা হলো না, বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল পাল্টে গেল এবং পালটে গেল পুরো পৃথিবীর ইতিহাস। এখানে আপনার অবদান কি? কেবল অচেনা চিঠিবাহককে ডাক দেওয়া।
এভাবে বাটারফ্লাই ইফেক্টের কারণে আপনি সময় পরিভ্রমণ করে অতীত পাল্টাতে পারেন না, পালটে দিলেও 'আপনার বর্তমানে' পৌঁছাতে পারেন না, যে পরিবর্তিত টাইমলাইন তখন সৃষ্টি হলো সেটা একটা আলাদা টাইমলাইন, একটা আলাদা ইউনিভার্স (মাল্টিভার্স তত্ত্বমতে)। সেখান থেকে আপনি আপনার আগের টাইমলাইনে ফিরতে পারবেন না। অতীত এবং বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চিরতরে বদলে গেছে। মহাজগত পালটে গেছে আপনার কারণে। এই বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর উল্লেখ এসেছে 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়' বইয়ে। এবং তার অবদান এখানে অনেকখানি। মূলত উপন্যাসের ঘটনাপঞ্জি বড়সড় মোড় নেয় এখানে এসে। যেখানে ছিলাম... তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী, ঘটলো দুর্যোগ, সমাধানে প্রটাগনিস্ট রাদিদ রুদ্র সময় ধরে যাত্রা করলেন অতীতে। দুর্যোগকে নস্যাৎ করতে না, প্রতিষেধক আনতে। তারপর ঘটনা কোনদিকে গড়াতে পারে আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আন্দাজ করতে পারছেন। না, কোনো স্পয়লার দেওয়া হয়নি, বইটার মজার কিছুমাত্র কম হবে না আপনার জন্য। এই আলোচনা লেখকই আপনাকে দেবেন গল্প বুঝতে।
যেটা ভালো লাগেনি : (১) গল্প অনেকখানিই সরলরৈখিক। অনেকাংশে 'আর দশটা সায়েন্সফিকশনের মতো'। 'আসল কাহিনী' অর্থাৎ চোস্ত হয়ে বসার মতো টার্ন অব ইভেন্টস শুরু হয় দুইশ' পেজের পর এসে। একটা আড়াইশ পেইজের বইয়ের জন্য এটা কাম্য না। (২) পাঠককে গল্পের যে অংশটা ভাবাতে পারত, অর্থাৎ রাদিদ রুদ্রের সময় পরিভ্রমণ, টাইমলাইন বিভ্রাট এবং ইত্যাদি, ওখানে গল্প বেশী সময় থাকেনি। বরং সেই 'দুর্যোগ', যেটা আদৌ গল্পে কোনো উল্লেখ করার মতো মাথাব্যাথাই না, তার সমাধান করে দিয়েই গল্প শেষ হয়ে গিয়েছে। তা-ও পঞ্চাশ পেইজে। (৩) ডেবিউ বা প্রথম বই হিসেবে লেখকদের একটা সাধারণ ব্যাপার ইদানীং চোখে পড়ছে। প্রথম বইটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে খুব একটা চমৎকার কিছু হয়ে ওঠে না, বরং পরবর্তীতে একটা সিরিজ বা বইয়ের চমৎকার প্রারম্ভ বলা যেতে পারে তাদের। তানজিরুল ইসলামের এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই মনে হয়েছে, একলা একটা বই হিসেবে খুব একটা এনগেইজিং না, তবে সিরিজ হলে পরের বই কিনবো, এই আগ্রহটুকু রেখে গেছেন। ব্যাপারটা আদৌ একটা বইয়ের পক্ষে খুশির খবর না। (৪) দিস কুড বি এন এমেইজিং সিরিজ অব ইভেন্টস। ঝামেলা ওখানে মিটে না গেলে রাদিদ রুদ্রের সাথে সময়-পরিভ্রমণ আমি চালিয়ে যেতাম, বিলিভ মি! আর তারচে বড় কথা, লেখক যেভাবে বাটারফ্লাই ইফেক্টের গন্ডগোলটা মিটিয়ে দিয়েছেন সেটা আদৌ 'কনভিন্সিং' আমার কাছে মনে হয়নি।
ভালো লেগেছে যা : পুরোটাই! তা নাহলে এত কিছু লিখতে বসতাম না, তা করার মতো বাজে অবশ্যই হয়নি! (১) তবে প্রথমে মাথায় আসবে ক্যারেক্টারগুলো। ভিলেইন ক্যারেক্টাররা খুব একটা বর্ণিত না হলেও, প্রটাগনিস্টের আশেপাশের ক্যারেক্টাররা কম বর্��নায়ও দারুণ ছিল। Cowboy Bebop-এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার। (২) গল্পের নির্মাণ ভালোই। আরেকটু ধীরেসুস্থে শেষের ঘটনাগুলো এলে দুর্দান্ত একটা সায়েন্স ফিকশন স্টোরি হতে পারতো। (৩) প্রটাগনিস্টের সাথেই খানিকটা প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স আর বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স ঘটে গিয়েছে, যেটা টের পেয়েছিলাম বই শেষ করার পর! আর কোনো প্যরাডক্স ঘটেছে কিনা চিহ্নিত করতে পারিনি, তবে খানিকটা বিলকার প্যারাডক্সও বলা যেতে পারে 'সমাধান'কে। (৪) গল্পের 'টুল' খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। ফ্যান্টাসি গল্পে আপনি দুচারটা স্পেল ইউজ করেছেন, কেন করেছেন আর কোনটার কাজ কি তা পাঠককে ভেঙে বললে পাঠক এনজয় করবে বেশি। তেমনই সায়েন্স ফিকশনে দেখানো প্রযুক্তিগুলোও এক্সপ্লেইন করা উচিৎ। লেখক সেটা করেছেন। প্রযুক্তিগুলো কোনোটাই মাথার উপর দিয়ে যায়নি, বেশিরভাগই ব্যবহার করতে দেখেছি 'আয়রন ম্যান'কে।
আমরা অনেক অনেক লেখকদেরই প্রথম বই বের করতে দেখছি। দ্বিতীয় বই অব্দি পাঠক ধরে রাখাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, তার জন্য প্রথম বইকে নেহাত প্রথম বই বলে ছেড়ে দেবার মতো না হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবশেষে, তানজিরুল ইসলামের পরের বই-ও পড়বো, এবং রাদিদ রুদ্রের দ্বিতীয় অভিযানও। এরপরেরটা যদি তারেক রুদ্র বা ফারিয়া রুদ্র বা মুনসেক অথবা ড. হাসান মারজুককে নিয়েও হয় তবুও। প্রত্যেকেই যথেষ্ট আগ্রহোদ্দীপক চরিত্র ছিলেন গল্পে, এবং নতুন গল্প শুরু করার পক্ষেও। লেখকের জন্য শুভকামনা।
প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক : তানজিরুল ইসলাম জনরা : সায়েন্স ফিকশন প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশকাল : বইমেলা ২০১৯ গাত্রমূল্য : ২৬০ টাকা
সাই ফাই বই নিয়া যারা কাজ করে তাঁরা তো বটেই প্রায় মুভিতেই যেই জিনিসটাকে কচলিয়ে নষ্ট করে ফেলে তা হল টাইম ট্রাভেলিং এবং তার ফলে সৃষ্ট প্যারাডক্সগুলা। বিলিভ ইট অর নট ।টাইম ট্রাভেল নিয়ে পড়া/দেখা প্রায় সব মুভির শেষে আমার একটাই প্রশ্ন থাকতো, "তাহলে, এই প্যারাডক্সে কি ঘটল?ওই প্যারাডক্সে তাহলে কি হচ্ছে?"। লুপ হোল বাদ দিয়ে কেউ যেন লিখতেই চাচ্ছিল না। অবশেষে,এই বইটা পড়ে একটা শান্তি পেলাম।লেখক যেন জানতো একজন পাঠক হিসাবে এই প্রশ্নগুলো সামনে আসাটাই স্বাভাবিক। তাই যেই অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর সাথে কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে।
বলাই বাহুল্য, লেখক কাছের ছোট ভাই হওয়ার প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপি পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাই বলে আবার কেউ ভাইবেন না, পরিচিত বলে বায়াসড ও স্বজনপ্রীতি মূলক কথা বলতেছি। যদি কেউ সত্যিই মনে করে থাকেন আর এই নিয়ে চুলকানি হয় তবে বাজারে ওষুধ আছে। :D
বইয়ের নাম: প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক: তানজিরুল ইসলাম প্রকাশক: বাতিঘর পৃষ্ঠা: ২৫৬। মূল্য: ২৬০ টাকা।
কাহিনী সংক্ষেপ::
তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ভয়াবহতার তিন বছরের মাথায় বিদ্রোহীরা জয় লাভ করে। গঠিত হয় এক পৃথিবী-এক দেশ। পুরো পৃথিবী মিলে তৈরী হয় একটা দেশ। বর্তমান সময়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ২৩ বছর পর। প্রেসিডেন্ট শিনোয়ার আরেশি তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে বিশ্ব পরিচালনা করছে, সবকিছু ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু হঠাৎ পৃথিবীতে আঘাত হানলো ভয়ংকর এক দুর্যোগ, এক ভয়াবহ জৈবিক অস্ত্র, একটি ভাইরাস। যার অস্থিত্ব ছিল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে, যার কারণে হাজার হাজার বিদ্রোহী মারা গিয়েছিল এবং বিদ্রোহীরা একপ্রকার কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে মাত্র ৫ ঘণ্টায় ব্যবধানে আহত হয়েছে ২৯ হাজার এর বেশি মানুষ। তবে বিস্ময়কর খবর হল ভাইরাস এবং তার প্রতিষেধকের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল আজ থেকে ১৭ বছর আগে ড. হাসান মারজুক হাসানের ল্যাব বিস্ফোরণের ফলে। আবার কি করে ফিরে এলো এই ভাইরাস? ল্যাব বিস্ফোরণে ৫ মাস আগে হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল সিকিউরিটি এজেন্সির এজেন্ট তারেক রুদ্র। রেখে গিয়েছিল স্ত্রী বিজ্ঞানী ফারিহা রুদ্র এবং ছেলে রাদিদ রুদ্রকে। কি এমন ঘটেছিল যার কারণে লাপাত্তা হয়ে গেল তারেক রুদ্র? ড. হাসান মারজুকের ল্যাব বিস্ফোরণের সাথে কোন সম্পর্ক আছে তারেক রুদ্রের? ভাইরাস এর প্রতিকার খুঁজতে মরিয়া সরকার কিন্তু সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে হামলাকারীরা। প্রেসিডেন্ট আরেশি সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান ডিরেক্টর ব্রাউন কে নিয়ে শরণাপন্ন হোন সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফারিহা রুদ্রের। সামনে একটা পথই খোলা, যেতে হবে অতীতে, ওখানেই আছে এর প্রতিকার। তাতে রয়েছে অনেক ঝুঁকি। অতীত ভ্রমনে সতর্ক থাকতে হবে বাটারফ্লাই ইফেক্ট নিয়ে, নতুন প্যারাডক্স সৃষ্টি নিয়ে। যেখানে অতীতে ছোটখাটো পরিবর্তনের ফলে পুরো টাইমলাইন পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এই অপারেশনের জন্য ডাকা হয় সিকিউরিটি এজেন্সি সেরা এজেন্ট রাদিদ রুদ্রকে। রাদিদ কি পারবে সকল প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করে অতীত থেকে প্রতিষেধক নিয়ে ফিরে আসতে? পারবে পুরো পৃথিবী বাঁচাতে? বাকি কাহিনী জানতে হলে পড়ে ফেলুন তানজিরুল ভাইয়ার কল্প-বিজ্ঞান ভিত্তিক দারুণ বই ‘প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়’।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট:- পৃথিবীর কোথাও কোনো প্রজাপতি পাখা ঝাপটালেও অন্য কোন জায়গায় সেটার কারণে একটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে যেতে পারে, এটার নামই বাটারফ্লাই ইফেক্ট। সূক্ষ্ম কোন পরিবর্তনের জন্য বিশাল কোনো পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার ব্যাপারে বোঝাতেই কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:: পড়ার পর বইটা নিয়ে অনেক কিছু বলার ছিল তবে রিভিউতে বেশি কিছু বলতে পারলাম না স্পয়লার হয়ে যাবে। যারা কল্পবিজ্ঞান এবং সাসপেন্স জনরা টা পছন্দ করেন তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য। আমাদের দেশের সাধারন কল্পবিজ্ঞান বইগুলো থেকে এই বইটা আলাদা। এর মূল বিষয়বস্তু অতীত পরিভ্রমণ, বাটারফ্লাই ইফেক্ট, প্যারাডক্স, থিওরি অফ রিলেটিভিটি, স্পেস-টাইম এবং চতুর্থ মাত্রা ‘সময়‘। বাটারফ্লাই ইফেক্ট এবং বিভিন্ন প্রকার প্যারাডক্স যেমন গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স, বুটস্ট্রাপ প্যারাডক্স, বিলকার প্যারাডক্স, প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স এর চমৎকার বর্ণনা রয়েছে। বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর বর্ণনা, প্যারাডক্সে বন্দী হওয়া, টাইমলাইনের পরিবর্তন, সাসপেন্স, এ্যাকশন, গল্পের টুইস্ট, বিভিন্ন ডাইমেনশন নিয়ে গল্পের বিস্তৃতি পাঠক কে ভাবতে বাধ্য করবে। সাইফাই পাঠকদের মনের সকল খোরাক পূর্ণ করবে। বইয়ের শেষ দিকে লেখক যখন ছড়িয়ে থাকা সকল ঘটনার সুতা গুটিয়ে নেন তখন সব ঘটনার পেছনের কারণ পরিষ্কার হয়ে উঠে। সাইফাই, সাসপেন্স, পলিটিক্যাল কন্সপিরেসি, টুইষ্ট মিলিয়ে হয়ে ওঠে এক অপূর্ব আখ্যান।
সাইফাই ছাড়াও যারা সাসপেন্স, কন্সপিরেসি এবং গল্পে একটু টুইস্ট পছন্দ করেন এমন পাঠকদের ও ভালো লাগবে। দু একটা জায়গায় খুব ছোটখাটো অসঙ্গতি রয়েছে তবে তা খুবই ছোট। আমার ব্যক্তিগতভাবে সাজেশন থাকবে বইটা পড়ার। প্লট মেকিং, বর্ণনা, গল্পের বিস্তৃতি, ডাইমেনশন নিয়ে আলোচনা এবং শেষের টুইস্ট দারুণ লেগেছে। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আঠার মতো লেগে থাকবেন। বইয়ের নাম ‘প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়‘ গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে তা বই পড়লেই বোঝা যাবে। সিক্যুয়াল আসার একটা ইঙ্গিত রয়েছে এবং সিক্যুয়েল নিয়ে ���াইয়ার পরিকল্পনা রয়েছে❤️
সবশেষে তানজিরুল ইসলাম ভাইকে অভিনন্দন এরকম দারুন একটি বইয়ের জন্য। ভাইয়ার পরবর্তী কাজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
পুরো পৃথিবী এখন এক দেশ, এক রাষ্ট্র। তৃতীয় মহাযুদ্ধের সফল পরিণতির কারণেই পুরো বিশ্বে আজ নেই কোন সীমান্ত। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শিনোয়ার আরেশির যুদ্ধকালীন এবং ���রবর্তি নেতৃত্বের গুনাবলী এতকিছু সম্ভব করতে স়ক্ষম হয়েছে।
মানবজীবনে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি মনে হয় থাকে না। বহুবছর আগের সেই প্রাণঘাতী ক্রিটুনিয়া ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে আবার। ভয়াল এই ভাইরাস এবার ব্যবহৃত হচ্ছে জৈব অস্ত্র হিসেবে। এর পিছনে রয়েছে সুগভীর এক ষড়যন্ত্র।
ডিসি কমিক্সে ফ্ল্যাশ, মার্ভেলে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ সহ ফিকশন জগতে বড় কোন হুমকি এড়াতে অথবা ঘটে যাওয়া বিপর্যয় পাল্টাতে সময় পরিভ্রমণ বা টাইম ট্র্যাভেলিং এর পথ অবলম্বন করা হয় অনেক সময়। অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেইমেও আমরা টাইম ট্র্যাভেলিং করতে দেখেছি হিরোদের।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট। উক্ত তত্ত্ব সম্পর্কে পপ কালচারের কারণে এখন অনেকেই জানেন। সবকিছুই সবকিছুর সাথে যুক্ত। একটি ছোটখাট ঘটনা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বা ভিন্ন কোন সময়ে অনেক বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বিষয়টির সাথে প্রাসঙ্গিক ক্যাওস থিওরী তো সায়েন্টিফিক স্টাডি-ই। কোন প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর ফলে বিশ্বের অন্য প্রান্তে বড় ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে।
বর্তমানে ক্রিটুনিয়া ভাইরাসের নেই কোন প্রতিষেধক। বেশিরভাগ বিজ্ঞানী আক্রান্ত এই পরিকল্পিত আক্রমণে প্রচুর মানুষজনের অকাল মৃত্যু ঘটছে। কারণ সতেরো বছর আগে ভাইরাস এবং এর প্রতিষেধক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো এক এক্সিডেন্টে।
প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান এবং ডঃ ফারিহা রুদ্র মিলে শেষ প্রচেষ্টার পথ ধরেন। টাইম ট্র্যাভেলিং। পাঠানো হবে নিরাপত্তা সংস্থার সেরা ফিল্ড এজেন্টকে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তিনটি মাত্রা হলে চতুর্থ মাত্রা হল সময়। সময় পরিভ্রমণ করে রাদিদ রুদ্রকে ঠিক সেই টাইমে ফিরে যেতে হবে যেখান থেকে বর্তমান বিপদের উৎপত্তি। টাইম ট্র্যাভেলিং এর সময় বিভিন্ন রকমের প্যারাডক্স যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। অতীতে গিয়ে সামান্য পরিবর্তন সাধন করলে সৃষ্টি হয় নতুন প্যারাডক্সের। বর্তমান, ভবিষ্যত সব পাল্টে যায়। রাদিদ কি পারবে নিজ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে কোন অতীতে গিয়ে কোন প্যারাডক্স না ঘটাতে?
তানজিরুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস এটি। লেখক খুব ভালো একটা কন্সেপ্ট নিয়ে নভেল লিখেছেন। আমরা বিভিন্ন কমিক্স, মুভি, বৈজ্ঞানিক কল্পগল্পে সময় পরিভ্রমণের যে প্যারাডক্স হয়, অর্থাৎ একটি ঝামেলা মিটাতে গিয়ে হাজারটা নতুন ঝামেলা সৃষ্টি হয় তা দেখেছি। তানজিরুল বৈজ্ঞানিক কাঠখোট্টা ভাষায় না গিয়ে সহজ ভাষায় বিভিন্ন প্যারাডক্স বর্ণনা করেছেন। লেখকের ভাষায় দ্রুতগতিময়তা আছে। যা এইধরণের সায়েন্স ফিকশন-থ্রিলারে গুরুত্বপূর্ণ। রাদিদের বিভিন্ন অত্যাধুনিক গ্যাজেটের বর্ণনা ভালো দিয়েছেন লেখক। রাদিদের সময় পরিভ্রমণ কালে বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়া, তারেক বনাম কবিরের দ্বন্দ্ব, বাটারফ্লাই ইফেক্টের কারণে কি কি অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তা তানজিরুল দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।
বইটির পিছিয়ে থাকা দিক আমার মনে হয়েছে চরিত্রগুলোকে আরেকটু বিল্ড আপ না দেয়াটা। তাছাড়া বিজ্ঞানে এত আগ্রহী রাদিদ রুদ্র তার পোষা এআই থেকে প্যারাডক্স সম্পর্কে জানছে তা-ও টাইম ট্র্যাভেলিং করার পরে, বিষয়টা একটু অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে। যেখানে তাঁর মা ফারিহা রুদ্র ঐ ব্যাপারে গবেষণায় তুখোড়। পাঠকদের অন্যভাবেও বলা যেত মনে হয় প্যারাডক্সের ইনস এন্ড আউটস গুলো। তাছাড়া পুরো পৃথিবীর ভাগ্য যেখানে বিপর্যস্ত সেই সময় সেরা এজেন্টের অতি আবেগী আচরণ পুরো মিশনকে ভন্ডুল করতে পারে। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে রাদিদকে সময় পরিভ্রমণে পাঠানো, যেখানে গিয়ে সে বেশ অ্যামেচারের মত আচরণ করেছে। অবশ্য মানুষ আবেগী প্রাণী। কিন্তু মূল মিশন ছেড়ে শুধুমাত্র ইমোশনের বশবর্তী হয়ে রাদিদের সিদ্ধান্ত গুলো একটু কম পেশাদারী লেগেছে আমার কাছে।
উপন্যাসটি যে ধারণার উপর রচিত, সেটির আরো দুর্দান্ত প্রয়োগ দেখাতে পারতেন তানজিরুল ইসলাম বলে আমার মনে হয়। আরো এক্সপ্লোর করতে পারতেন বিষয়টি। কারণ তিনি চমৎকার এক কন্সেপ্ট বেছে নিয়েছিলেন। আমার মনে হয় লেখক নভেলের একটি সিক্যুয়েল লিখতে পারেন। নাকি লিখে ফেলেছেন? ওভারঅল তানজিরুল ইসলামের লেখনীতে একটা সুখপাঠ্য ব্যাপার আছে। উপাখ্যানের নামকরণটি আমার কাছে দারুন লেগেছে।
রাদিদ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এই তিন মাত্রা অতিক্রম তো করেছেন। চতুর্থ মাত্রা সময় অতিক্রম করেছেন। তবে ঐ মাত্রায় বসে আছে প্যারাডক্সের প্রজাপতি।
বই রিভিউ
বই : প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক : তানজিরুল ইসলাম প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৯ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদ : ডিলান জঁরা : সায়েন্স ফিকশন - থ্রিলার রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
ওয়েল, বইটা নিয়ে আসলে অনেক কথা বলার আছে। একদম একশ একশ না হলেও বইটা ভালো ছিলো। আরো পাঠক এনগেজ করার কথা ছিলো৷ কিন্তু আমাদের দেশে সাই ফাইয়ের যুগ বোধহয় এখনো আসেনি।
যাই হোক, এটার বিস্তারিত রিভিউ লিখবো পরে৷ আপাতত বলতে পারি, বইটা পড়তে পারেন। সুপার ডুপার না হলেও সময়টা একদম খারাপ কাটবে না।
বইটার চরিত্রগুলো নিয়ে রীতিমতো হতাশ। সারাদুনিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিনেটর, সিকিউরিটি ডিরেক্টর, শ্রেষ্ঠ এজেন্ট, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে হ্যাকার, ভাড়াটে সৈনিক, মাফিয়া গ্যাং লিডার পর্যন্ত প্রতিটা চরিত্রের চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম, কথাবার্তা হাস্যকর রকমের ইমম্যাচিউর। কাহিনি মাঝখানে কিছুটা গতি পেলেও শেষের দিকে যাচ্ছেতাই রকমের এলেবেলে। লেখকের ভাষা ঝরঝরে, বিভিন্ন কঠিন বিষয় বিশেষ করে টাইম প্যারাডক্সের ব্যাপারগুলো সহজভাবে বুঝানোর ব্যাপারটাও ভালো লেগেছে।
সুন্দর একটা টাইম ট্র্যাভেল গল্প।বিজ্ঞানের থিওরি কপচানো জিনিস নেই।সহজ সরল সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে কাহিনী।বিভিন্ন প্যারাডক্স সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। যে কোন টাইম ট্র্যাভেল বই পড়ার বা মুভি দেখার আগে এই প্যারাডক্স সম্পর্কিত বর্ননা আগে পড়ে নিবেন তাতে বুঝতে সুবিধা হবে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তির উন্নতি টাও দারুণভাবে দেখিয়েছেন। টাইম ট্র্যাভেল গল্প ভাল লাগে যাদের তাদের জন্য মাস্ট রীড এটা।
চমৎকার বই। লেখকের প্রথম বই হিসেবে এতটা মুন্সিয়ানা আশা করিনি। মাঝে একটু স্লো স্লো লাগছিল বটে তবে শেষদিকে কাহিনী এমনভাবে গতি পায় যে সবকিছু ঢেকে দিয়েছে। লেখকের লেখার হাত আছে, ন্যারেটিভের মধ্যে প্রসাদগুণ আছে। আমার ধারণা ভবিষ্যতে লেখকের হাত থেকে আরো ভালো কিছু আসবে।
বাটারফ্লাই এফেক্ট এর নাম শুনছেন কখনো? পৃথিবীর কোন এক স্থানে প্রজাপতি হালকা পাখা ঝাপটালে অন্য স্থানে যে বিশাল ঝড় জলোচ্ছ্বাস এর মতো পরিবর্তন হয় এটাকে বাটারফ্লাই এফেক্ট বলে। আরো বিস্তারিত জানতে গুগোলে সার্চ করে একবার দেখে আসুন না।
বইয়ের নাম : প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক : তানজিরুল ইসলাম জনরা : সাইন্স ফিকশন প্রচ্ছদ : ডিলান প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশ কাল : ফেব্রুয়ারী ২০১৯। পৃষ্টাসংখ্যা : ২৫৬ পেজ মূল্য : ২৬০ টাকা।
প্রেক্ষাপট ভবিষৎ এর কোন একসময়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পুরো পৃথিবীতে এক দেশ এক নেতা এক জাতী এক পৃথিবী এই নীতি অনুসরন করে চলছে। তার সাথে চলার সঙ্গী বিজ্ঞানের হাজারো নিত্য নতুন গেজেট।
কিন্তু এই সময়ে দেখা দিলো নতুন এক দূর্যোগ। প্রাণঘাতি এক ভাইরাস এর কারনে পুরো পৃথিবীতে মহামারী আকার ধারন করেছে। এই ভাইরাস তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাজারো সৈন্যের প্রাণ করে নিয়েছিলো। সেই অভিজ্ঞতার তিক্ত শিকার ছিলেন প্রেসিডেন্ট আরেশী। এই ভাইরাস এর প্রতিষেধক আবিস্কৃত হয়েছিলো আজ থেকে সতের বছর আগে ডা. হাসান মারজুক এর ল্যাবে। কিন্তু সতের বছর আগে হাসান মারজুক এর ল্যাব এক বিষ্ফোরণে ধ্বংশ হয়ে গেয়েছিলো।
এই সময়ে সবচে সফল বিজ্ঞানী ডক্টর ফারিহা রুদ্র। পুরো পৃথিবীর প্রান্তিক এই সময়ে আরেশী তার কাছে আসে। ডক্টর ফারিহা রুদ্রের সবচে যুগান্তকারি আবিস্কার ডিটি মেশিন। যা দিয়ে সময় পরিভ্রম করা যাবে। মানে টাইম ট্রাভেল। ফারিহা রুদ্রের ছেলে রাদিদ রুদ্র সময়ে সবচে বড় এজেন্ট। বড় বড় মিশন সে একাই সাকসেস করে এসেছে। তাই ডাক পরলো তারও। ডক্টর ফারিহা রুদ্রের ডিটি মেশিনে চরে রাদিদ রুদ্রকে যেতে হবে সতের বছর পুরনো ডক্টর হাসান মারজুক এর ল্যাবে আনতে হবে ভাইরাসটির প্রতিষেধক। কিন্তু শর্ত একটা টাইম ট্রাভেল এর সময় অতীত কিংবা ভবিষৎ এর কোন কিছু পরিবর্তন করা যাবে না, না হয় পরিবর্তন হয়ে যাবে বর্তমানের টাইম লাইন। তারপর রাদিদ তার সহযোগী রোবট কুরুকে নিয়ে সতের বছর পুরোনো অতীতে পারি দেয়। এবং সেখানে রাদিদের জন্য অপেক্ষা করছিলো পদেপদে বিপদ। রাদিদ তার লক্ষ অর্জনের কতটুকু সফল তা জানলে অপেক্ষা করতে হবে তানজিরুল ইসলামের সায়েন্স ফিকশন "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়" বইয়ের একদম শেষ পর্যন্ত।
পাঠ প্রতিক্রিয়া :: প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় যেহেতু একটি সাইন্সফিকশন তাই এখানে লেখক এর প্লট তৈরিতে কোন বাঁধা নেই। লেখক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের ভবিষৎকে নিয়ে শুরু করেছেন। মূলত এই বইয়ের আলোচিত হয়ে এসেছে টাইম ট্রাভেলিং। রাদিদ এর ডিটি মেশিন এ করে অতীতে যাওয়া এবং সময় পরিভ্রম যখন আলোচ্য বিষয় তখন বলতে হয় যে টাইম ট্রাভেলিং এর জন্য ফিজিক্স কিছু সূত্র আছে। তো বইয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও আমি আর্টস এর ছাত্র ছিলাম বলেই নাকি এসব আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে। সো ভারি লেখাগুলো পাশকাটিয়ে আমি টাইম ট্রাভেলিং এবং রাদিদ এর ট্রাভেলিং এর জটিলতা গুলো বুঝতে পরেছি। সো এক্ষেত্রে থামস আপ। একদম শুরুতে আমি বললাম বাটারফ্লাই এফেক্ট। এই বইতে একটি বড় আলোচিত বিষয় ছিলো এই বাটারফ্লাই এফেক্ট। এর ফলে পরিবর্তনটা কতটা ভয়ানক তা লেখক দেখাতে সক্ষম। তো অভার অল কাহিনী টা ভালো। আমার সাইন্সফিকশন পড়ার শুরুয়াত হয়েছিলো জাফর ইকবালের হাত ধরে সেই স্কুল লাইফে। তখন জাফর ইকবাল আর মোশতাক আহমেদ এর ছাইপাস খেয়ে সাইন্স ফিকশনের আসল সংজ্ঞাই ভুলে গেছি । তো অনেক দিন গ্যাপে আবার একটি সাইন্সফিকশন হাতে আসলো তানজিরুল ভাইয়ের "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়"। বইটা আমার জন্য দারুণ আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। কাহিনী প্লট ইত্যাদি ভালোই লেগেছে। এদিকে সাইফাইয়ের আদলে হালকা থ্রিলার ভাব রাখতেও লেখক সক্ষম। সর্বাপরি ভালো।
চরিত্রায়ণে বলতে হয় রাদিদ রুদ্র নায়ক চরিত্রে লেখক দারুণ সাজিয়েছেন। তার বাবা তারেক রুদ্র কিংবা মা ফারিহা রুদ্র রোবট কুরু পার্শ্বচরিত্র হলেও লেখক উপযুক্ত জায়গায় তুলে আনতে সক্ষম। বইটা পড়ার সময় বার বার ভেবেছি রাদিদ এর পরিনতি কি হবে। কিভাবে শেষ হবে। টাইম ট্রাভেলের জটিলতায় কি হবে ইত্যাদি। সব পাশকাটিয়ে লেখক সুন্দর ভাবে সবকিছু সাজিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ভালো হয়েছে।
বাতিঘর প্রকাশনীর বইয়ের উপর গল্পের উপর পাঠকের আস্তা থাকলেও প্রিন্ট মিস্টেক টাইপ, মিস্টেক বানান ভুল দূর্বল বাঁধাই কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। আপনি বই রানিং রাখবেন আর বই এর পেজ আস্তে আস্তে খুলবে। নো ওয়ে। প্লিজ বাতিঘর এই বিষয়ে নজর দিন।
অতপর টাইম ট্রাভেলিং, বাটারফ্লাই এফেক্ট এর মজা নিতে চাইলে ঘুরে আসুন তানজিরুল ইসলামে সাইন্সফিকশন " প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়"।
এই যুগে চমৎকার একটা কন্সেপ্ট দাঁড় করাতে বেশ মাথা খাটাতে হয়। বিশেষ করে সায়েন্স ফিকশন কিংবা ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে চমকপ্রদ কোনো প্লট না হলে জমে না।
তানজিরুল ইসলামের এই প্রথম সায়েন্স ফিকশনটাকে আমি ঠিক চমৎকার বলতে না পারলেও ভালো বলছি। কেননা একটা সুন্দর প্লটের উপর দাঁড়িয়ে লেখা হয়েছে বইটা। পৃথিবীতে তখন এক দেশ এক পৃথিবী নিয়মে চলছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পার হয়ে এমন একটা সময়ের কথা বলা হচ্ছে যখন সমস্ত পৃথিবী এক। ঠিক সেসময় হঠাৎ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ভয়াবহ জৈবিক অস্ত্র ক্রিটুনিয়া ভাইরাস আবার আঘাত হানে। যেটার প্রতিষেধক কিংবা প্রতিরোধ করতে পারে এমন কেউ তখন জীবিত নেই। বাধ্য হয়ে অতীতে টাইম ট্রাভেল করতে হয় এক এজেন্ট কে প্রতিষেধক নিয়ে আসার জন্য।
মোটামুটি এই-ই কাহিনী। লেখক নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র, তাই বিজ্ঞান বোঝেনও বেশ ভালো। গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স, বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স, বিলকার প্যারাডক্স, প্রিডেস্টিনেশন প্যারাডক্স এর মতো জটিল ব্যাপারগুলোও বুঝিয়েছেন খুব সুন্দর ভাবেই। এই গল্পের মূল থিম বাটারফ্লাই ইফেক্টকে কেন্দ্র করে। যদি টাইম ট্রাভেলে অতীতে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনা হয়, সেটা যেকোনো প্যারাডক্স সৃষ্টি করে বদলে ফেলতে পারে পুরো টাইমলাইন। মাঝে বেশ দারুণ কিছু একশন সিকোয়েন্স ছিলো। ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, ব্যবহারের বর্ণণাও ভালোই লেগেছে।
তবে ভালো লাগেনি আসলে সুন্দর একটা প্লট সাদামাটা একটা ঘটনায় শেষ করাটা। আমি আসলে আরও কমপ্লেক্স স্টোরি এক্সপেক্ট করছিলাম, কারণ আরও অনেক দিক যাওয়া যেত এই গল্পে। বেশ একহারা গল্প হয়ে গেছে। আর মূল ফোকাস যেখানে পাওয়া উচিত, গল্প সেটুক বাদ রেখে বাদবাকি অংশ বেশি টেনেছে। কাহিনী কোথায় মোড় নিচ্ছে প্রেডিক্টেবল ��িল্প। সংলাপ কিংবা আলাপচারিতা বেশ আনাড়ি ছিল (প্রথম বই বলে হয়তো)। প্রোটাগনিস্ট এত স্ট্রং এজেন্ট হলেও লক্ষ্যভেদেই কাঁচা। এই যুক্তিবাদী হচ্ছে, এই আবেগী হচ্ছে। সাইড ক্যারেক্টার গুলো ভালো ছিলো সেই তুলনায়।
বাংলা সাহিত্যে ভালো সায়েন্স ফিকশন সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। লেখক এরকম প্লট দাঁড় করিয়েছেন, সামনে হয়তো গল্পও স্ট্রং হবে। 'এন্ড্রোমিডার কসম!' কথাটা শুনে আমার সায়েন্স ফিকশন পড়ার হাতেখড়ি জাফর ইকবাল স্যারের বইগুলোর কথা মনে হয়ে গিয়েছে। 'বেজি' নামের চমৎকার একটা সায়েন্স ফিকশন পড়ে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম, সেই থেকে শুরু। সেই গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।
দেশি সায়েন্স ফিকশন হিসেবে পড়তে পারেন কিন্তু! এক্সপেকটেশন কম রাখবেন অবশ্যই।
“Is déjà vu actually the specter of false timelines that never happened but did, casting their shadows upon reality?” ― Blake Crouch, Recursion
- প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় - তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের পৃথিবী।"এক দেশ এক পৃথিবী" এই নীতিতে চলছে পুরো দুনিয়া। হঠাৎ সেখানে শুরু হয় এক মহামারী, যার প্রতিষেধক অতীতে থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। কারণ ১৭ বছর আগেই এক ল্যাব বিস্ফোরণে সেই মহামারী সম্পর্কিত সব তথ্য মুছে যায়। - ফারিহা রুদ্র, সময়ের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। অনন্যোপায় হয়ে দেশের হর্তাকর্তারা তার কাছে ধর্ণা দেয়। ঠিক হয় তার আবিষ্কৃত টাইম মেশিনে চড়ে তার ছেলে রাদিদ রুদ্র নিয়ে আসবে এর প্রতিষেধক। - এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এত বছর পরে কিভাবে আবার এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে পৃথিবীতে? ১৭ বছর আগে কেনই বা ড. হাসান মারজুকের এর ল্যাব বিস্ফোরিত হয়েছিল? রাফিদ রুদ্র কি পারবে অতীত থেকে প্রতিষেধক নিয়ে আসতে? তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক তানজিরুল ইসলামের সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার ঘরানার বই "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়"। - "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়" মূলত সাই ফাই থ্রিলার। সায়েন্স ফিকশন এবং থ্রিলারের মিশ্রণে এর প্লট নি:সন্দেহে আকর্ষণীয়। সেদিক থেকে লেখনী বিশেষ করে চরিত্রগুলোর কথোপকথন আরো বেটার হতে পারতো। বইয়ে লেখক ক্লাসিক সাই ফাই এর বিভিন্ন এলিমেন্টের সাথে টাইম ট্রাভেলিং এর মতো জটিল কনসেপ্ট ঢুকিয়ে দিয়েছেন। গল্পের শুরু থেকে রাদিদের মিশন পর্যন্ত সবটুকুই ভালোই লেগেছে, তবে শেষটা মনে হয় একটু তাড়াহুড়ো করেই হয়ে গেল। - "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়" বইয়ের চরিত্রায়নের ভিতরে সবচেয়ে ভালো লেগেছে রাদিদ আর তার ব্যক্তিগত রোবট কুরুকে। বাকি চরিত্রগুলোও মোটামুটি ঠিকঠাক গল্পের কাহিনী অনুসারে। বাংলা সাই ফাই হিসেবে এ ধরণের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং আমি খুব বইতেই পেয়েছি এবং এ বইয়ের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং ও সাই ফাই টার্মস এন্ড কন্ডিশনের যথোপযুক্ত ব্যবহারে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। - "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়" বইতেও দেখলাম বেশ কিছু সিলি প্রিন্টিং মিস্টেক রয়ে গেছে। দামের তুলনায় বাধাই, কাগজ এগুলো ভালোই। প্রচ্ছদ সিম্পলের ভিতরে মানানসই। - ওভারঅল, "প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়" পড়ার পরে আমি বেশ সন্তুষ্ট। বাংলা থ্রিলারের সাথে সাথে সাই ফাইয়ের মানেরও যে আস্তে আস্তে প্রচুর উন্নতি হবে সে ব্যাপারে আমি ব্যাপক আশাবাদী, আর এ ব্যাপারে এ ধরনের সাই ফাই বিশাল অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। সকল ধরণের সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের জন্য বইটি রিকোমেন্ডেড থাকলো।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়। পৃথিবীতে দেশ বলতে কিচ্ছু নেই। এক দেশ, এক পৃথিবী, এক প্রেসিডেন্টের শাসন চলছে। ঠিক সেই সময়েই একটা কু চক্রী মহল পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলো বিষাক্ত ক্রিটুনিয়া ভাইরাস। যে ভাইরাসের প্রতিষেধক পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে সতেরো বছর আগে। একমাত্র টাইম ট্র্যাভেল করেই সেটা ম্যানেজ করা সম্ভব। এজেন্ট রাদিদ রুদ্র টাইম মেশিনে পাড়ি জমালো অতীতে? সে কি পারবে অতীত থেকে প্রতিষেধক ফিরিয়ে বর্তমানে আনতে নাকি পড়বে অতীতের কোনো ঝামেলায়।
প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক অনুবাদক তানজিরুল ইসলামের প্রথম মৌলিক। বইটার জনরা সায়েন্স ফিকশন। এককথায় সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার। প্রথম বইয়েই লেখক বাটারফ্লাই ইফেক্ট ও টাইম ট্র্যাভেলের মত জটিল বিষয় বেছে নিয়েছেন। দুর্দান্ত একটা কনসেপ্টের সাহায্য বায়ো টেররিজম, টাইম ট্র্যাভেল, বিভিন্ন কাল্পনিক প্রযুক্তি ও এদের ব্যবহার দেখিয়েছেন। শুরুর দিকে স্টোরি ডেভেলপমেন্টের জন্য কাহিনী একটু ধীর লাগছিল, পরবর্তীতে সময়ের সাথে কাহিনীর গতি বেড়েছে। গল্পের প্লট মোটামোটি সরল ছিল, তবে সেটার প্রয়োগ মুন্সিয়ানার সাথে ঘটিয়েছেন লেখক। সায়েন্স ফিকশন হলেও নিজেকে জাহির করার মত জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় যাননি লেখক। সহজভাবে টাইম ট্র্যাভেল প্যারাডক্স ব্যাখ্যা করেছেন, এটা ভালো লেগেছে। ছোট ছোট অধ্যায় ও বাক্যে গল্প বলেছেন লেখক। টুইস্ট খুব ভারী ছিল না, বা টুইস্ট ছিল না বললেই ছিল। তবে যেটা ছিল সেটাকে কজ ইফেক্ট রিলেশনশিপ বলা যেতে পারে। বইয়ের সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় রইলাম। সায়েন্স ফিকশন ও থ্রিলার প্রেমীরা পড়তে পারেন বইটা। ভালো লাগবে আশা করি।
প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় তানজিরুল ইসলাম পৃষ্টা: ২৫৬ বাতিঘর প্রকাশনী
পাঠ প্রতিক্রিয়া- প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখক- তানজিরুল ইসলাম জনরা- সাইফাই/থ্রিলার
পৃথিবীতে হঠাৎ করে উদয় হয় এক প্রাণঘাতী ভাইরাসের। সে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যায় স্পেশাল এজেন্ট রাদিদ। ভাইরাসের সংক্রমণ এমনি এমনি হয়েছিল, তা নয়। কোন একটা পক্ষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যে কাজটা করেছে। যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে, সেটি নতুন কোন ভাইরাস নয়। অতীতেও পৃথিবীতে এ ভাইরাস এসেছিল। প্রতিষেধকও তৈরি করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী। কিন্তু দুর্ঘটনায় তার ল্যাব উড়ে গিয়েছিলো, মারা গিয়েছিলে তিনি। এখন ভাইরাস রোধের একটাই উপায়, অতীতে গিয়ে ভাইরাসের প্রতিষেধকের ফর্মুলা নিয়ে আসা সেই বিজ্ঞানীর কাছ থেকে। কিন্তু টাইম ট্রাভেল এত সহজ বিষয় নয়। অনেকগুলো প্যারাডক্স আছে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত। সবগুলো মাথায় রেখে কাজ করতে হবে রাদিদকে। নইলে ওলট পালট হয়ে যাবে সব কিছু। এসব নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর সাইফাই, প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়।
উত্তেজনাকর একটা উপন্যাস। জনরা সাইফাই হলেও স্পাই থ্রিলারের বেশ কিছুটা রেশ আছে। কিছু অ্যাকশন সিন আছে। টুইস্ট আছে মাঝে মাঝেই। গল্পটা সাইফাই হিসেবে বেশ ভাল একটা প্লটের। প্লটের রূপায়নেও বেশ মুনশিয়ানার ছোঁয়া রয়েছে। মাঝে মাঝে যখন গল্পের বাঁক বদলে যাচ্ছিল, ভাল লাগছিল। উপভোগ করছিলাম বিষয়গুলো।
উপন্যাসটির সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এখানে সব কিছু সবিস্তারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে কোন টার্ম, যে কোন টুইস্ট, প্যারাডক্স সহজবোধ্য করে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। কোন পাঠক এই সাইফাই পড়তে গিয়ে ইনিফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগবেন না। মনে হবে না, লেখক বেশি জানেন বলে বেশি জটিল করে লিখেছেন। বিষয়টা ভালো লেগেছে আমার কাছে। আইনস্টাইন বলেছেন, তুমি যদি সহজভাবে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে না পারো, এর অর্থ দাঁড়ায়, তুমি নিজেও ভালো করে ব্যাপারটা বোঝো না।
লেখকের অন্য বই ‘অমানব’-এর চেয়ে এটার বর্ণনা বেশ সাবলীল হলেও অনুবাদ অনুবাদ একটা ভাব আছে লেখায়। এটা ভালো না মন্দ, তা বলতে পারব না। একটু খুঁতখুঁত করেছে মনটা পড়ার সময়ে, বিশেষ করে কথোপকথনে। আহামরি কিছু নয়।
কাহিনি সংক্ষেপঃ ভবিষ্যতের পৃথিবী। বহুদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর সেই বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আলাদা আলাদা কোন রাষ্ট্র নেই। পুরো পৃথিবী মিলেই এক দেশ, এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটেছে। এই পৃথিবী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শিনোয়া আরেশি তুমুল জনপ্রিয় সমগ্র জনগণের কাছে। কিন্তু ফেলে আসা অতীতের ভয়াবহ এক অভিশাপ যে আবারো আধুনিক এই পৃথিবীর আকাশকে কালো মেঘে ঢেকে দেবে, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো ভয়ঙ্কর বায়ো ওয়েপন ক্রিটুনিয়া ভাইরাসে। ওই দুর্যোগ মোকাবিলা করাও সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু এতোদিন পর আবারো কোন এক শক্তিশালী দুর্বৃত্ত চক্র পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব শহরগুলোতে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে ক্রিটুনিয়া ভাইরাস। কাতারে কাতারে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, মারাও যাচ্ছে অনেকেই। আর সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো, ক্রিটুনিয়া ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক আজকের এই পৃথিবীতে নেই। সতেরো বছর আগেই বোমায় উড়ে যাওয়া ড. হাসান মারজুকের ল্যাব সহ ধ্বংস হয়ে গেছে সেই প্রতিষেধক।
ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট শিনোয়া আরেশি ও সিকিউরিটি এজেন্সির ডিরেক্টর জন ব্রাউন। বাঁচাতে হবে সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে। কিন্তু উপায় কই! উপায় একটা বের হলো বটে। প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ফারিহা রুদ্র'র আবিস্কার করা টাইম মেশিনে করে ফিরে যেতে হবে সতেরো বছর আগের অতীতে। ড. হাসান মারজুকের ল্যাব থেকে নিয়ে আসতে হবে ছড়িয়ে পড়া ভয়াল ভাইরাসের প্রতিষেধক। আর এই দায়িত্ব বর্তালো সিকিউরিটি এজেন্সির সবচেয়ে চৌকস এজেন্ট রাদিদ রুদ্র'র কাঁধে। মা ফারিহা রুদ্র'র টাইম মেশিনে চেপে রাদিদ পাড়ি জমালো অতীতে আর এই অভিযানে ওর সঙ্গী হলো ব্যক্তিগত রোবট কুরু।
এরপর ঘটে গেলো অনেক কিছুই। অতীতে জন্ম নেয়া অনেক রহস্যই এসে দাঁড়ালো রাদিদ রুদ্র'র সামনে৷ দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ বাবা তারেক রুদ্র ও তার টিম এবং কুখ্যাত মাফিয়া বস কবির শাবেরি এসব রহস্যের অংশ হয়ে উঠলো। আর এসব কারণেই রাদিদের কাছে ব্যাপারটা আর নির্ভেজাল টাইম ট্রাভেল রইলোনা। ক্ষণেক্ষণে পাল্টে যেতে লাগলো ওর মিশনের লক্ষ্য আর ঘটতে লাগলো একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যেখানে 'সময়' নামক চতুর্থ মাত্রাটা অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ ও বাটারফ্লাই ইফেক্টকে উপজীব্য করে লেখা সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়' লেখক তানজিরুল ইসলামের প্রথম মৌলিক উপন্যাস। এখানে লেখক তাঁর গল্পটা বলার জন্য বেছে নিয়েছেন ভবিষ্যতের পৃথিবীকে, যা মারাত্মক এক জীবাণু অস্ত্রের আক্রমণে বিপর্যস্ত। পুরো উপন্যাসের কাহিনিটা এগিয়েছেই এই প্লটটাকে কেন্দ্র করে। তানজিরুল ইসলাম তাঁর এই উপন্যাসে ডাইমেনশন ট্রাভেলার (ডিটি) মেশিন, শ্রিংকিং টেকনোলজি, রোবটিক্স অ্যাসিস্ট্যান্স সহ বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করেছেন। আর এসবের সাথে সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন বাটারফ্লাই ইফেক্ট, মাল্টিভার্স কনসেপ্ট, ডিফারেন্ট টাইমলাইনের মতো ব্যাপারগুলোর।
লেখকের গল্প বলার ধরণটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। সহজ ভঙ্গিতে তিনি ভবিষ্যতের পৃথিবীর গল্প বলে গেছেন। প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন নানা টার্ম। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোও যথেষ্ট উপভোগ্য ছিলো আমার জন্য। 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়' পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও আমার মনে হয়নি যে এটা তানজিরুল ইসলামের প্রথম উপন্যাস। লেখকের প্লট ডেভেলপমেন্ট আর হোমওয়ার্ক যে বেশ ভালো ছিলো, তা ভালোই বুঝতে পেরেছি।
বেশ দ্রুতগতির সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়'। সহজবোধ্য হওয়ার কারণে বেশ দ্রুতই পড়তে পারছিলাম। তবে পেশাগত ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে পড়তে গিয়ে একটু দেরিই হয়ে গেছে আমার বইটা শেষ করতে। বইটা যে উপভোগ করেছি, সেটা বলাই বাহুল্য।
তানজিরুল ইসলাম এর আগে হারল্যান কোবেনের বিখ্যাত থ্রিলার উপন্যাস 'টেল নো ওয়ান' ও জেমস এম. কেইনের 'ডাবল ইনডেমনিটি' অনুবাদ করেছেন। আর চলতি বইমেলায় বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে লেখকের সায়েন্স ফ্যান্টাসি উপন্যাসিকা 'অমানব'। লেখকের জন্য শুভ কামনা।
বানান ভুল বা টাইপিং মিসটেক বলতে গেলে ছিলোইনা এই বইয়ে। ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। ডিলান সাহেবের করা প্রচ্ছদটা 'ঠিকঠাক' ছিলো।
পড়ে ফেললাম বইটি। সত্যি বলতে চমৎকার। লেখকের প্রথম মৌলিক উপন্যাস, কিন্তু সেটা বিন্দুমাত্র বোঝা যায়নি লেখায়। পরিপক্ক লেখনী। পরিপক্ক গল্প। টাইম ট্রাভেল আর প্যারাডক্সের ব্যাপারগুলো বেশ গুছিয়ে লেখা। আর বাটারফ্লাই ইফেক্টের ব্যাপারটা তো দুর্দান্ত। সাস্পেন্সের সাথে সাথে টুইস্ট; তাও আছে যথেষ্ট। সবদিক দিয়েই একটা দুর্দান্ত গল্প। তবে দূর্বলতা যে নেই, এমনটা বলব না। অল্প দুই এক জায়গায় লেখনীতে কিঞ্চিত আড়ষ্টতা ছিলো। বানান ভুল চোখে পড়েছে। এই এটুকুই। পুরো কাজটার তুলনায় কিছুই না। বইটা পড়ে পয়সা উসুল।
বই - প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়। লেখক - তানজিরুল ইসলাম। প্রকাশনা - বাতিঘর। পৃষ্ঠা - ২৫৬
তৃতীয় বিশ্বযু*দ্ধের পর সমগ্র পৃথিবী এখন "এক পৃথিবী এক দেশ" এই নীতিতে চলছে। বর্তমান পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট প্রভাবশালী শিনোয়া আরেশি। বর্তমান পৃথিবীতে হঠাৎ করেই আঘাত হানল অতীতের বিভীষিকা ক্রিটুনিয়া ভাইরাস।কে বা কারা যেন এই ভাইরাসের মাধ্যমে পরিবর্তন চাইছে।ফলে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ৩য় বিশ্বযু*দ্ধে এই ভাইরাসকে জৈবিক অ*স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সফল হতে চেয়েছিল বিপক্ষ দল। সেবার ড. মারজুকের তৈরি প্রতিষেধক বাঁচিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীকে। কিন্তু অতীতেই ল্যাবরেটরি সহ তাকেও উড়িয়ে দেয় ঘাতকেরা। বর্তমান পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সেই প্রতিষেধকের। একমাত্র সম্ভাব্য উপায় বাতলে দিলেন ড. ফারিয়া রূদ্র।যার কাছে আছে ডিটি (ডাইমেনশন ট্রাভেলার) মেশিন।ডিটি মেশিনের সাহায্যে সময় পরিভ্রমণ করে অতীত থেকে প্রতিষেধক আনার দায়িত্ব দেওয়া হলো সিকিউরিটি এজেন্সির সেরা এজেন্ট "রাদিদ রূদ্রকে"। অতীত ভ্রমণ কোনো সহজ বিষয় নয়,কেননা এতে রয়েছে সমূহ বিপদ। অতীতের সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটাতে পারে বাটারফ্লাই ইফেক্টের মাধ্যমে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা। যার কারণে পরিবর্তন হতে পারে বর্তমানের টাইমলাইন। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্যারাডক্স ,যেগুলোর জন্ম হলে বর্তমানে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সমূহ বিপদ জেনেও পৃথিবীকে বাঁচাতে রাদিদ ফিরে গেল ১৭ বছর আগের অতীতে।রাদিদের সঙ্গী কুরু নামক রোবট। অতীতে রাদিদের সাথে দেখা হয় তার বর্তমান টাইমলাইনের নিরুদ্দেশ বাবার সাথে।যখন জানতে পারে তার বাবার ও তার উদ্দেশ্য একই তখন সে যোগ দেয় বাবার সিক্রেট মিশনে। প্রতিষেধক নিয়ে বর্তমানে ফেরা রাদিদের জন্য সহজ ছিল না, কেননা এতে তাকে মুখোমুখি হতে হয় মাফিয়া কিং কবির শাবেরির সাথে। এছাড়া ছিল প্যারাডক্সের মতো বিপদ যা তার টাইমলাইনকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।
বইয়ে পরিচয় করে দেওয়া হয়েছে ৩য় বিশ্বের কিছু যন্ত্রপাতি যেমন - স্মার্টকার,নিম্ফাস ,টেলিপোর্ট স্টেশন ইত্যাদির সাথে যেগুলোর ব্যবহার ছিল চমকপ্রদ। বইয়ে লেখক পদার্থবিজ্ঞানের টার্মগুলো বিশেষ করে প্যারাডক্স , বাটারফ্লাই ইফেক্ট সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন - এতে যে কারোরই গল্প বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না। তাছাড়া পুরো গল্প বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে এবং নায়ক থেকে ভিলেন - সবার পরিপ্রেক্ষিত থেকে গল্প বলা হয়েছে।এটা পড়া চালিয়ে যেতে বেশ সাহায্য করেছে। এছাড়া বইয়ে বানান ভুল খুব কমই ছিল।
অসাধারণ একটি প্লট হলেও এটাকে কোনোভাবেই আমার সাইফাই- থ্রিলার মনে হয়নি।বরং মনে হয়েছে শুধু সাইফাই জননার সাধারণ কোনো বই।( মেনে নিতে হবে এটা লেখকের ১ম উপন্যাস) সাসপেন্স ধরে রাখার যথেষ্ট উপাদান থাকা সত্ত্বেও লেখক ঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে পারেননি।ফলে পরের পৃষ্ঠায় যাওয়ার আগে যেরকম কৌতূহল থাকার কথা তা কোনোভাবেই আসেনি।এছাড়া নায়ক থেকে ভিলেন - প্রতিটি চরিত্রই অনেক বেশি সাদামাটা।কোনো চরিত্রের মধ্যে বিশেষ কিছুই ছিল না,ফলে গল্পের চরিত্রদের সাথে নিজেকে কল্পনা করতে পারলাম না। এছাড়া ভিলেন চরিত্রগুলো এত দুর্বল যা আমাকে হতাশ করেছে। এছাড়া কিছু চরিত্রের নাম ( রুশোভ শাহাদ, রাশা, রাদিদ রূদ্র ,তাশাত রাহিয়া) মনে রাখতে জট পাকিয়ে ফেলেছি।
আমি আমার পরিপ্রেক্ষিত থেকে বইটি নিয়ে লিখেছি। আপনার কাছে হয়তো অন্যরকম লাগতেও পারে। বইটি পড়ুন।৪র্থ মাত্রার ভুবনে স্বাগতম।
বিশাল কলেবরে লেখা হার্ডকোর সাই-ফাই জনরাটা যেন আমাদের কাছে এখন দুর্লভ বস্তু। সেই ছোটবেলায় জাফর ইকবালের একটা সাই-ফাই পড়েছিলাম বেজিদের নিয়ে, বইটার নামও খুব সম্ভবত বেজি। হুমায়ূন আহমেদ এর তোমাদের জন্য ভালোবাসা কিংবা দ্বিতীয় মানব ছাড়াও হাসান খুরশীদ রুমির করা অনেক অনুবাদও পড়েছি। মাঝে দিয়ে যেন এই জনরাটা আচমকাই ডুবে গেল অন্যান্য জনরার ভিড়ে।
থিওরি অফ রিলেটিভিটি, স্পেস টাইম, টাইম লুপ, প্যারাডক্স এবং বাটারফ্লাই ইফেক্টের মতো ব্যাপারগুলোকে উপজীব্য করে লেখা গল্পটাকে এক সুতোয় গাঁথা বেশ কষ্টসাধ্যই বটে। সেই কষ্টসাধ্য ব্যাপারটাকেই বেশ দারুণভাবে সহজ করে ফেলেছেন তানজিরুল ইসলাম। টাইমলাইনের বর্ণনার সঙ্গে বিভিন্ন ডাইমেনশনের বিস্তারিত আলোচনা লেখকের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।
পুরো উপন্যাসের লেখা সাবলীল, ভাষা প্রাঞ্জল আর বর্ণনাভঙ্গিও বেশ ভালো। তবে শুরু থেকে যেভাবে ব্যাপক বিস্তৃতি নিয়ে গল্প ছড়িয়েছে শেষের দিকে ততোটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে গল্পের পরিধি। আরেকটু সময় দেয়া দরকার ছিল বলে মনে হয়।
'ক্রিটুনিয়া ভাইরাস' তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন তান্ডব চালানো ভয়াবহ এক জৈবিক অস্ত্রের নাম।তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের তেইশ বছর পর, পৃথিবীতে যখন এক দেশ-মানবজাতির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠেছে, বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময়ই আঘাত আনলো সতেরো বছর আগে মুছে যাওয়া 'ক্রিটুনিয়া ভাইরাস', অথচ অতীতের সময় স্রোতে হারিয়ে গেছে ভাইরাসের প্রতিষেধক। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় সিকিউরিটি এজেন্ট রাদিদ রুদ্রকে দায়িত্ব দেওয়া হলো অতীতের সময় স্রোত থেকে খুঁজে আনতে প্রতিষেধক। এই মিশনে ভুল করার সুযোগ নেই রাদিদের, একটু ভুলই বদলে দিতে পারে বর্তমান পৃথিবীকে, রাদিদ হারিয়ে যেতে পারে সময় স্রোতের অলিতে-গলিতে ।
সাই-ফাই জনরার বই পড়তে গেলে আমার ঝামেলা লেগে যাই। বিজ্ঞানের ভারি থিওরি কপচানো শুরু হলে বোরিং ফিল করি এসব বইতে। এদিক দিয়ে বলতো গেলে 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়' বইটিতে গল্পের খাতিরে যেসব থিওরি আনা হয়েছে তা লেখক একদম সহজভাবে তোলে ধরেছেন।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট, টাইম ট্রাভেল, নানা প্যারাডক্স, টাইমটানেল, ডাইমেনশন বিষয়গুলো একদম সহজভাবেই লেখক উপস্থাপন করেছেন, বিশেষ করে বাটারফ্লাই ইফেক্টের পারফেক্ট প্রয়োগ করেছেন, বিশেষ করে ভিন্ন টাইমলাইনের যে লুপটা তৈরি করেছেন, এবং লুপের গোড়ায় সূক্ষ্ম টুইস্টটা দারুণ ছিলো।
বিজ্ঞানের বিষয় ছাড়াও বইটি থ্রিলার হিসেবে দারুণ ছিলো। রাদিদ রুদ্র এবং তার আইএ রোবোট কুরু কারেক্টারটা ভালোই উপভোগ করেছি। তবে কুরুর সাথে রাদিদের সম্পর্কটা ফর্মাল হিসেবে দেখালে ভালো হতো, অনেকটা মার্ভেলের আয়রন ম্যান আর জার্ভেসের মতো।
বইটির মাঝে মাঝে গল্প বর্ণনায় জড়তা পরিলক্ষিত হয়েছে, বইটিতে কিছু বানান ভুলও রয়েছে। তবে লেখকের প্রথম মৌলিক বই হিসেবে, দারুণ কাজ দেখিয়েছেন। বইটির বাইন্ডিং দূর্বল, বাতিঘরের বই বাইন্ডিং আরো মজবুত করা উচিত।
|| পিন্টুর পাঠ প্রতিক্রিয়া || বইঃ প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় লেখকঃ তানজিরুল ইসলাম প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী (বাংলাদেশ) প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ প্রকৃতিঃ সায়েন্স ফিকশন থৃলার প্রচ্ছদঃ ডিলান পৃষ্ঠাঃ ২৫৬ মুদ্রিত মূল্যঃ ২৬০ (বাংলাদেশী মুদ্রাতে) ধরণঃ হার্ডকভার। _________________________________________________ বাটারফ্লাই এফেক্টঃ- এই মতবাদের প্রবক্তা এডওয়ার্ড লরেঞ্জ। পৃথিবীর কোথাও কোন জায়গাতে প্রজাপতি ডানা ঝাপটালে অন্য জায়গাতে সেটার প্রভাবে ঘূর্নিঝড় বয়ে যেতে পারে, এটার নাম বাটারফ্লাই এফেক্ট। সূক্ষ্ন কোণ পরিবর্তনের জন্য বিশাল কোণ পরিবর্তনের ঘটে যেতে পারে এটাই বাটারফ্লাই এফেক্টের মূল বিষয়বস্তু। ________________________________________________ বইটা সংগ্রহ করেছিলাম বেশ অনেক দিন হল। বইটা শেষ করবার পর মনে হচ্ছে এত দেরী করে পড়লাম কেন আর আগে পড়া উচিত ছিল। অনেকদিন পর বাংলাতে মৌলিক প্রকৃত ও ভালো সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার পড়লাম। বিদেশে সায়েন্স ফিকশন ঘরানা টি বেশ পরিপূর্ন। আইজ্যাক আসিমভ, আর্থার সি ক্লার্ক, মার্থা ওয়ালেস, রে ব্রাডবেরি, হেইনলিন, প্রমুক দিকপাল লেখকদের অভিনব সৃষ্টিতে পরিপূর্নতা পেয়েছে। কিন্তু বাংলাতে সেদিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে এটি এখনও শিশু বা কিশোর পাঠ্য হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। বাংলাতে যে ধরনের সায়েন্স ফিকশন পড়ি এই বই সেগুলোর থেকে সম্পূর্ন আলাদা। তানজিরুল ইসলা্মের এই বই আমার মতে অন্য মাত্রা যোগ করবে। ________________________________________________ মূল কাহিনী সংক্ষেপঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিদ্রোহীরা জয় লাভ করে। গঠিত হয় এক পৃথিবী এক দেশ। মানে কোন ছোট বড় দেশ নয় এক পৃথিবী একটাই দেশ। সমস্ত পৃথিবীর প্রেসিডেন্ট হন শিনোয়ার আরেশি। আরেশির অনিচ্ছা সত্ত্বেও জনতার চাপে তাকে তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হতে হয়। সব কিছুই বেশ স্থিতিশীল ভাবে চলছিল, হঠাতই ছন্দপতন হয়। পৃথিবীর বুকে আঘাত আনে ভয়ংকর এক জৈবিক অস্ত্র। ক্রিটুনিয় ভাইরাস। ফলে হাজার হাজার লোক সংক্রমিত হতে লাগল। আতঙ্ক গ্রাস করল সবাইকে। চুর্তদিকে বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। এই ভাইরাস যার অস্তিত্ব ছিল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যার কারণে হাজার হাজার বিদ্রোহী মারা গিয়েছিল। প্রায় কোণঠাসা হতে বসেছিল তারা। যদি না ডঃ হাসান মারজুক তার প্রতিষেধক আবিষ্কার না করতেন। এতে বিদ্রোহীদের প্রভূত উপকার হয়, তার জিতে এক পৃথিবী এক দেশ কায়েম করে। কিন্তু তার পর আশ্চর্য জনক ভাবে ডঃ হাসান মারজুকের ল্যাব বিস্ফোরণে ধংস্ব হয়ে যায়, এতে মারজুকের ও মৃত্যু ঘটে। ল্যাব বিস্ফোরণ এর সাথে ভাইরাস ও তার প্রতিষেধক টিও চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায়। তাহলে তো যার অস্তিত্ব নেই হঠাত করে এত বছর পর সেই “ক্রিটুনিয়া” ভাইরাস এর সংক্রমণ ঘটল কি করে। কারা ঘটালও এটা? ল্যাব বিস্ফোরণের প্রায় পাচ মাস আগে হঠাত ই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন সিকিউরিটির এজেন্সির এজেন্ট তারেক রুদ্র। রেখে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী ফারিহা রুদ্র ও ছেলে রাদিদ রুদ্র কে। তিনি একজন বিজ্ঞানী আর তার ছেলে রাদিদ রুদ্র সিকিউরিটির এজেন্সির সেরা এজেন্ট। ভাইরাসের প্রতিষেধক খুঁজতে মরিয়া বর্তমান সরকার। কিন্তু হামলাকারীরা প্রায় সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট শিনোয়ার আরেশি, সিকিউরিটির প্রধান ব্রাউন নিয়ে হাজির হন ফারিহা রুদ্রের ল্যাবে। ফারিহা রুদ্র বর্তমান সময়ে গোপন রিসার্চে ব্যাস্ত। টাইম ট্রাভেল বা ডাইমেনশন ট্রাভেল নিয়ে। যেহেতু ভাইরাস ও তার প্রতিষেধক অতীতে নষ্ট হয়ে গেছে তাই তার সমাধান লুকিয়ে আছে সেই অতীতেই। কিন্তু তাতে রয়েছে ঝুঁকি। অতীত ভ্রমণে সর্তক থাকতে হবে বাটারফ্লাই এফেক্ট নিয়ে, যা নতুন প্যারাডক্স তৈরী করতে পারে, সেখানে ছোটখাটো পরিবর্তন পালটে দিতে পারে পুরো টাইমলাইন। ফলে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। রাদিদ কি পারবে অতীত থেকে প্রতিষেধক এনে পৃথিবীকে বাচাতে? নিরুদ্দেশ হওয়া তারেক রুদ্র কি এর পেছনে আছে নাকি অন্য কেউ? কারা বর্তমান সময়ে ভাইরাস ছড়িয়ে দিল? কি চায় তারা , পৃথিবীর ক্ষমতা নাকি অন্য কিছু? না আর বলা যাবে না, স্পয়লার হয়ে যাবে। বাকি জানার জন্য পড়তে হবে প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায়। _________________________________________________ পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ- বাংলাতে টাইম ট্রাভেল নিয়ে হালকা মেজাজের গল্প কয়েকটা পড়া আছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিস্তৃত বর্ননা সহ টাইম ট্রাভেল নিয়ে ২৫৬ পৃষ্টার সায়েন্স ফিকশন বাংলা থৃলার এই প্রথম পড়লাম। এই বইয়ের মূল বিষয় হচ্ছে অতীত ভ্রমণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাটারফ্লাই এফেক্ট এবং বিভিন্ন প্রকার প্যারাডক্স। যেমন গ্র্যান্ড ফাদার প্যারাডক্স, বিলকার প্যারাডক্স, প্রি ডেসটিনেশন প্যারাডক্স, বুটস্ট্রাপ প্যারাডক্স, ইনফরমেশন প্যারাডক্স, প্রভৃতি। বিভিন্ন প্যারাডক্স নিয়ে লেখক অত্যান্ত সহজ ভাষায় ও চমৎকার ভাবে বুঝিয়েছেন, যা গল্প বোধার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এছাড়া রয়েছে থিওরি অফ রিলেটিভিটি, স্পেস টাইম, টাইম লুপ এবং চতুর্থ মাত্রা সময়। বাটারফ্লাই এফেক্ট, বিভিন্ন প্যারাডক্স, টাইম লাইনের পরিবর্তন, সাসপেন্স, অ্যাকশন, বিভিন্ন ডাইমেশনের বিস্তৃত বর্ননা, যা পাঠককে মুগ্ধ করবে। সাই ফাই পাঠকদের সকল চিন্তার খোরাক এই বই তে আছে যা পাঠকে ভাবতে বাধ্য করবে। তানজিরুল ইসলামের এটি প্রথম মৌলিক বই। তাও এত জটিল বিষয়ের উপর। উনি বইতে বেশ দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন, তা বই পড়লেই বুঝতে পারবেন। বইয়ের শেষের দিকে লেখক যখন রহস্যের যবনিকা উত্তোলন করেন তখন ধীরে ধীরে সব ঘটনার পেছনের ঘটনার কারণ জলের মত পরিষ্কার হতে থাকে। এত আধুনিক সময়ে কেন হাসান মারজুক ক্রিটুনিয়া ভাইরাসের প্রতিষেধক এর ফর্মূলা সার্ভারে বা এ আই তে রাখলেন এই প্রশ্ন আমার মনে প্রথম দিকে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু গল্পের শেষে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। লেখক গল্পে সাসপেন্স, সারপ্রাইজ এলিমেন্ট, পলিটিক্যাল রিভেঞ্জ সব মিলিয়ে দারুণ এক উপভোগ্য এক প্লট তৈরী করেছেন। যা সাইফাই প্রেমীদের ছাড়াও থৃলার প্রেমীদের ও মন জয় করে নেবে। _________________________________________________ বইতে বানানভুল বেশ চোখে পড়ার মত। বাতিঘর প্রকাশনীর প্রুফ রিডার দরকার। কারন বাতিঘর আর শুধু বাংলাদেশের লোকাল প্রকাশনী নেই। এখানকার বহু পাঠক রয়েছে যারা বাতিঘরের নিয়মিত পাঠক। দু-এক জায়গাতে বর্ননা কিছুটা দুর্বল লেগেছে। ডিলান সাহেবের প্রচ্ছদটি অসাধারণ হয়েছে, যা গল্পের সাথে বেশ মানান সই। সবশেষে নবীন লেখক তানজীরুল ইসলামকে অভিনন্দন এরকম একটা চমৎকার বই লেখার জন্য। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকদের ধরে রাখবে। যারা সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালবাসেন, তাদের এই বই অবশ্যই পাঠ্য। আমার ব্যক্তিগতভাবে সাজেশন করব বইটা পড়ার। তবে গল্পের শেষে একটা সিকুয়েলের ইঙ্গিত আছে, লেখকের পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
দ্রষ্টব্যঃ- বেআইনি পি.ডি.এফ বানানো বা শেয়ার করা বা পড়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে লেখক, প্রকাশক এবং এর সাথে জড়িত সব কিছু কে আর সাহিত্যকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা একদম গ্রহণযোগ্য নয়। বই কিনুন পড়ুন, আর শেয়ার করুন। @ পিন্টু দাস।
প্লটের কথা যদি বলি, খুবই সুন্দর। প্যারাডক্স ক্রিয়েট করে আবার সেটা পাঠককে বুঝিয়ে দিয়ে সেটা সলভ করার মত মুনশিয়ানার তারিফ করাই লাগে। টেকনোলজি, টাইমলাইন বদল, একশন সিন- সবকিছুই সুন্দরভাবে ডিটেইলিং করা। একশন সিনগুলো বিশেষ করে প্রশংসনীয়। মূল থ্রিলিং পার্টের পরিমাণটা কম ছিলো, তবে যথেষ্ট বর্ণনা থাকায় সেটাই মানানসই ছিলো।
আমার মতে, এ্যান্টাগোনিস্ট চরিত্রগুলো ফুটেই উঠানো হয় নাই বইটায়। লেখার আরেকটা একটা দূর্বলতা লেগেছে, কিছু জিনিসের খুব স্লো বর্ণনা-কিছুক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ছিলো। তবে লেখকের প্রথম মৌলিক সাই-ফাই হিসেবে বলতে গেলে, more than expected!
এরকম ধরনের সাই-ফাই থৃলার খুব কমই লেখা হয় বাংলায়,বিশেষ করে টাইম ট্রাভেল,বাটারফ্লাই ইফেক্ট, প্যারাডক্স এসব বিষয় নিয়ে লিখে লেখক শুধু পাঠককে তৃপ্তিই দেবেন না বরং চিন্তাশীলতার উদ্রেক করবেন পাঠকদের মাঝে। তাই এ ধরনের কাজ প্রশংসনীয়। তবে আমার একটা বিষয় কেন জানি মনে হচ্ছে,রিসেন্টলি বেশ কিছু বাংলা থৃলার পড়েছি নতুন লেখকদের। চরিত্রের নাম সিলেকশনে নতুন লেখকরা সহজ হতে পারছেন না বোধ হয়। বাংলা নামগুলো অভিজাত ও খটমটে টাইপ দেখে বাছছেন মনে হচ্ছে। যদিও আমার ব্যক্তিগত অভিমত,তারপরও মনে হয় নামগুলো কিছু সহজ,সরল হলে একটা উপন্যাস বাস্তবের সাথে মিশে যায়,ওই জগতে পাঠক ঢুকে যেতে পারেন পুরোপুরি, কোনো বাঁধা থাকে না আর।
প্রথমদিকে লেখা খানিকটা ইমম্যাচিউর। লেখকের প্রথম বইয়ের জড়তা শুরুতে যতটুক প্রকাশ পেয়েছে পরেরদিকে সেটা কেটে গেছে। স্টোরি এবং আইডিয়ার দিক থেকে বেশ ভালো। তবে থ্রিল বা সাসপেন্স খুব একটা তৈরি করতে পারে নি।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে সাইফাই হিসেবে ভালো লেগেছে। 3.5/5
বইটার কনসেপ্ট টা বেশ সুন্দর। একই সাথে টাইম ট্রাভেল, মাল্টিভার্স, আর বাটারফ্লাই ইফেক্টের সমন্বয়ে লেখা সুন্দর কনসেপ্টের একটা সায়েন্স ফিকশন। শুধু কনসেপ্টের জন্য রেটিং দেয়া গেলে আমি ৫ এ ৪ দিতাম। বইটাতে যে জিনিসটার প্রচন্ড অভাব সেটা হচ্ছে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা। বইটার বর্ণনাশৈলী অত্যন্ত বিরক্তিকর। প্রয়োজনের অধিক কথাবার্তা, বাক্যগুলোও কেমন যেন, টানে না তেমন। এক কথায়, পাঠককে ধরে রাখার যে ক্ষমতা একটা বইয়ের থাকা উচিত, সেটা এই বইতে একদম অনুপস্থিত। শেষের দিকে গিয়ে লেখক তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে চেয়েছেন। বিশেষ করে যখন দ্বিতীয়বারের মত তার বাবাকে খুঁজে পেল রাদিদ। সব সিকিউরিটি এজেন্সি যেখানে তাকে এত বছর ধরেও খুঁজে পাচ্ছেনা, সেখানে রাদিদের এত সহজেই তাকে খুঁজে পাওয়াটা কেমন যেন খাপছাড়া। সবমিলিয়ে আমার রেটিং হবে এমনঃ
কনসেপ্টঃ ৪ ঘটনা প্রবাহঃ ৪ বর্ণনাশৈলীঃ ২ ওভার অলঃ ৩
সত্যি বলতে আরও চমকপ্রদ কিছু আশা করেছিলাম। প্লটটা বাস্তবিক অর্থেই দারুন, কিন্তু চরিত্রায়ন, উপস্থাপনা, ফিউচারিস্টিক ওয়াল্ড বিল্ডিং, বর্ণনাশৈলি এসবই বড্ড সাদামাটা, একমাত্রিক। শেষটা কাহিনী বেগ পায়, এর আগ অবধি রীতিমত মনের সাথে যুদ্ধ করে শেষ করেছি। গল্পটাকে আরও আলঙ্কারিকভাবে উপস্থাপন করা যেত। বিশেষ করে চরিত্রগুলো বেশ অপরিপক্ব।
The story line was promising in the beginning but the middle part and the ending was not as expected. But its writers creative choise and appritiate the effort of writing a science friction in bangla. Well done tanjirul islam.
বইয়ের নামটা পছন্দ হয়েছিল তাই হাতে নেই বইটা। কিন্তু খুবই আশাহত হলাম। নিচুমানের বই। লেখক মনে হয় পাঠকদের গাছ-বলদ ভাবেন। প্রথম বই বলে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। কিশোর সাহিত্যও এরচেয়ে পরিণত হয়। মোটামুটি অখাদ্য লেভেলের বই। শেষ যে করতে পেরেছি এটাই অনেক।
Less engaging than expected. Ending twist was good, but felt rushed. Also, the tropes used did not induce awe, like Future Shock trilogy by Elizabeth Briggs, or Steins; Gate anime. It was more a futuristic thriller than a sci-fi story.