চানাচুর খেতে ভারি মজা। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তেমনই পপুলার ফিকশনও পড়তে আরাম। আখেরে সেখান থেকে শিখতে চাওয়াটা বোকামিই বটে। অনির্বাণ ঘোষের পপুলার গ্রন্থকে আমি ফিকশনই বলব। নন ফিকশন হিসেবে মানতে রাজি নই।
কলকাতার দুই মেডিকেল শিক্ষার্থী স্পন্দন এবং দুষ্টুমতি প্রদীপ্তকে প্রাচীন মিশরের এ টু জেড শোনালেন পুস্তক বিক্রেতা ভবেশদা। চমৎকার মিষ্টি গল্প বলার ধরন। বইটি কেন খুবই ভালো বই তা অনেকেই লিখেছেন, ভবিষ্যতেও এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলবে। চলুক। আমি কিছু মন্দ কথা শোনাতে চাই। বেশি মিষ্টান্ন যেমন মুখ মেরে আনে, তেমনই অবস্থা হয়েছে এই বই পড়ে। কারণগুলো বলি-
১. মমি এবং অন্যান্য প্রত্নসম্পদের বৃহৎ অংশ মিশরের চোরেরা করে বলে দায়সারাগোছের একটি বক্তব্য বইয়ের একটি চরিত্রকে দিয়ে ঘোষ বাবু দেওয়ালেন। এর বিরোধিতা করে অন্য একটি চরিত্র বিদেশিদের কথা বললে। বিদেশি লুটেরাদের পরোক্ষ ক্লিনচেক দিয়ে একটি চরিত্র বলে ওঠে," লুট আবার করবে কী ততদিনে প্রায় সব সমাধি লুট হয়ে গেছে। "
আমি মেনে নিচ্ছি স্থানীয় চোরদের মাহাত্ম্যে ইংরেজ এবং ফরাসি ঔপনিবেশিক চোর-ডাকুদের নেওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। অথচ খানিকক্ষণ পরে লেখক নিজেই লিখেছেন, '' কায়রোর মিউজিয়ামের পরেই পৃথিবীতে মিশরের মমির সবচেয়ে বড় কালেকশন আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, প্রায় ১২০ খানা মমি আছে ওদের কাছে। "
তাহলে কী ধরে নেব এই ১২০টি মমি মিশরের উদার জনতা ব্রিটিশ 'প্রভুদের' উপহার দিয়েছিল? উপঢৌকন হিসেবে যে মমিগুলো ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাচার হয়নি তা তো লেখক নিজেই অল্পস্বল্প লিখেছেন। তাহলে এই দ্বান্দ্বিকতা কেন? নাকী ঔপনিবেশিক ডাকুদেরকে স্থানীয় চোরদের চে' বেশি নিষ্পাপ মনে করেছেন?
২. স্ফিংসের নাক কে ভেঙেছে? তা পড়তে গিয়ে জানলাম ত্রয়োদশ শতকে জনৈক মুসলমান সাধু এই কাজ করেছেন এবং জনতার হাতে প্যঁদানি খেয়ে অক্কা পেয়েছেন। আমি তো পড়েছিলুম, ফরাসি প্রভু নেপোলিয়ন ১৭৯৮ সালে এই কাণ্ড ঘটান! নিশ্চয়ই ভুল জানতুম। সন্দেহ পিশেচ আমি। গুগলের আশ্রয় নিতে চক্ষু ছানাবড়া! স্ফিংসের নাক কে ভেঙেছে তা নিয়ে বির্তক দীর্ঘদিনের। একপক্ষ বলে, স্ফিংসের নাকখানা ফরাসি বীর নেঁপোই ভেঙেছেন। এই দাবির সপক্ষে মিশরের ইজিপ্টটুডে.কম নামের সংবাদমাধ্যমটি ২০১৮ সালে ২০ জানুয়ারি গার্ডিয়ান পত্রিকার বরাতে জানাচ্ছে, স্ফিংসের নাকখানা নেঁপোই নিয়েছিলেন। অপরাপর বেশকিছু ওয়েবসাইট এই দাবিকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে, ঘোষ বাবুর গল্পটিকেও হিস্ট্রি.কমের মতো সূত্র সমর্থন করছে এবং একইসাথে বলছে নাকখানা নেঁপোও ভাঙতে পারে। অর্থাৎ দুটি মতই বাজারে বিকোচ্ছে।
ঘোষ বাবু নেপোলিয়নের মিশর অভিযানের গুণাগুণ নিয়ে বেশ ক'পাতা লিখলেন। কিন্তু বেমালুম ভুলে গেলেন নাকভাঙার দায়টা নেপোলিয়নের দিকেও বর্তায়। দাদর বেশ ভুলো মন দেখছি!
৩. হঠাৎ কলকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট নিয়ে লিখতে গিয়ে ১৭৫৬ সালে সিরাজুদ্দৌলা অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং হলওয়েল মনুমেন্ট নিয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করলেন। জ্ঞানী এবং পণ্ডিত ঘোষ বাবু ভুলেও অক্ষয়কুমার মৈত্রর 'সিরাজুদ্দৌলা' বইখানা খুলে দেখলেন না। দেখতে বুঝতেন প্রায় শত বছর আগেই ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ প্রভুদের বানানো গপ্পো। যা তাদের সাবেক কলোনির কতিপয় ভক্ত-আশেকান এখনো চোখ বুঝে বিশ্বেস করেন আর গাল পারেন স্বদেশিকে। এজন্যই কবি লিখেছেন,
"কতরূপ স্নেহ করি বিদেশের কুকুর ধরি, দেশের ঠাকুর ফেলিয়া।"
৪. যার নাম যা তার নাম সেভাবে লেখাটাই ভদ্রতাবোধ এবং জ্ঞানের পরিচায়ক। আবদুলকে আবদেল, খলিফাকে কালিফা, মুহাম্মদকে মহম্মদ, মদিনাকে মেদিনা লেখার মধ্যে কোনো গৌরব নেই। অথচ একজন ইউরোপীয়র নামের গরমিল হয়নি! এই ধরনের মানসিকতা পরিচয় যে লেখক দেন তার সম্পর্কে পাঠকের সম্মানবোধ বর্ধমান হয় না, ক্ষীয়মাণ হয়।
৫. মোজেসের সাথে দ্বিতীয় রামেসিসের ঝগড়াঝাটি ছিল এমনটি বেশিরভাগ মিশর কাহিনি সমর্থন করে। কিন্তু এই তথ্যকে তুড়ি মেরে ঘোষ মশাই দুসরা রামেসিসের বদলে আমেনহোতেপকে বসিয়ে দিলেন। কোত্থেকে তথ্যাদি পেলেন এ বিষয়ে 'কবি' নীরব!
নিশ্চয়ই আমার কথাবার্তা পড়ে রাগ হচ্ছে। এমন সারা জাগানো পুস্তক নিয়ে আজেবাজে বাক্যাদি লেখার জন্য। সেটাই স্বাভাবিক। যাক, এবার মধুর উচ্ছ্বাসপূর্ণ রিভিউগুলি পড়ে নিন।দেখবেন দিব্যি খুশি হয়ে গেছেন।
বইটা নিয়ে বেশি কিছু লেখার যোগ্যতা আমার নেই। বাংলা ভাষায় মিশরের ইতিহাস ও বিশ্বাস নিয়ে বই হয়তো আরও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে বিজ্ঞান, ধর্ম, কিংবদন্তি এবং রহস্য মিশিয়ে এমন সুখপাঠ্য বই বাংলায় আর একটিও নেই। অজস্র ছবি, গ্রন্থসূত্র, সর্বোপরি বইয়ের শেষে জবরদস্ত থ্রিলারকে হার-মানানো ক্লিফহ্যাংগার... না, এই বই নিয়ে বেশি কিছু বলব না। বরং পঁচিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই তথ্যে ঠাসা, স্বাদে খাসা বইটি অবিলম্বে পড়ে ফেলতে অনুরোধ করব। এই বই অদ্বিতীয়, প্রায় ক্লিওপেট্রার মতোই! আপনিও সিজার হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না প্লিজ।
দূর্দান্ত। আরোও দুএকটা তারা দিতে পারলে শান্তি পেতাম। রিডিং ব্লকে পড়ে যেখানে ভাল ভাল ফিকশন সহ্য হচ্ছিল না তখন নন ফিকশনে যে আমার রুচি ঠিক হবে ভাবতেই পারিনি। তবে পুরোপুরি নন ফিকশন ও না বইটা। নন ফিকশন এর মধ্যে দারুন একটা ফিকশন এর ছোঁয়া আছে। এই বই টা পড়ার পর বুঝলাম যে মিশর সম্পর্কে এতদিন আসলে কিছুই জানতাম না। মিশর সম্মন্ধে এই ধরনের বই আমি বাংলায় আগে কখনো পাইনি। একেবারে ইতিহাসের ক্লাস করে আসলাম অথচ একটুও বিরক্ত লাগলো না। যেন মনে হচ্ছিল ভবেশবাবু কোনো রূপকথার গল্প শুনিয়ে গেলেন। আর সবথেকে ভালো লেগেছে ছবিগুলো। বইয়ে এত সুন্দর করে ছবিগুলো না দেওয়া থাকলে বারবার আমাকে গুগোল করে সেগুলো বের করতে হত, আর তাতে বিরক্তই লাগত। আবার ঠিকঠাক ছবি খুঁজেও পেতাম না। পিজি ক্যারেক্টার টা বেশ মজার। হোস্টেল লাইফ আর ওদের বন্ধুত্ত টাও উপভোগ করার মত। আর ভবেশবাবু সম্পর্কে তো যতই বলবো কম হবে।🤎 শেষের দৃশ্যটা তো দুর্দান্ত ছিল। আজকে থেকে আমার টু ডু লিস্টে আরো দুটো জিনিষ যোগ হল। ১. এই বইয়ের ২য় পার্ট টা পড়তেই হবে। ২. মরার আগে একবার মিশর যেতেই হবে।
অসাধারন। যারা মিশরের ইতিহাস নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছেন তাদের জন্য কেমন তা জানিনা। কিন্তু আমার মত যাদের মিশরের ব্যাপারে আগ্রহ আছে কিন্তু জ্ঞান ওই ' পিরামিড, নীল নদ, ফারাও, ক্লিওপেট্রা ' এরকম আরো কয়েকটা শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাদের মিশরের ইতিহাস জানার জন্য অসাধারণ একটা বই। বইটা কোন হিস্ট্রিকাল ফিকশন না। সত্যিকার ইতিহাস -এত বছর ধরে এত এত প্রত্নতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ আরও কতজনের পরিশ্রমের কারণে সামনে এসেছে। কিন্তু এই ঠিকঠাক তথ্য গুলো দিয়ে খুব সুন্দর গল্প আকারে লেখা। গল্প বলার ছলে ইতিহাস শেখানোর কাজটা সবাই পারেনা। স্কুলের বইয়ের ইতিহাস এত বিরক্তিকর লাগতো না তাহলে। যেভাবে বইতে ভবেশ সামন্তকে দিয়ে ইতিহাস বলানো হল সেটাতে কারো বিরক্ত লাগার উপায় নেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই যে মিশরের ইতিহাস আর মিথোলজি নিয়ে জ্ঞান পেয়েছেন টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স , কাকাবাবু বই পড়ে নাহলে মামি রিটারন্স সিনেমা দেখে, আর তাতেই যে আমরা আটকে আছি সেটাও লেখক খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন চরিত্রগুলোর মধ্যে। যার কারণে অনেক কিছু হয়তো ভুল ও জেনেছি। কারণ গল্প বা সিনেমাকে আকর্ষণীয় করার জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। এতদিন বাংলা সাহিত্যের জগতে সবচেয়ে বেশি জ্ঞ্যানী হিসেবে জানতাম সিধু জ্যাঠাকে। এখন দেখলাম ভবেশ সামন্তও কম না মিশরের ইতিহাসের দিক দিয়ে। পরে যোগ করছিঃ শেষে গিয়ে একটা জায়গায় মিলাতে পারিনি। লাইব্রেরি ধ্বংসের ব্যাপারটা। যেটা নিয়ে ঐতিহাসিক মতামত অনেকগুলো আছে , এবং সম্পূর্ণ ভাবে সবকিছুর খোজ পাওয়া যায়নি সেখানে লেখকের ঢালাওভাবে একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়াটা ভালো লাগেনি। কিছুটা ধর্মবিদ্বেশ মনে হয়েছে ব্যাপারটা।
মিশর...ইতিহাস বা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি কেবল একটি নাম নয়,আবেগ ও বটে। সেই আবেগকেই দুই মলাটে বন্দী করার চেষ্টা করেছেন অনির্বাণ ঘোষ। উনার এই চেষ্টাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। সহজ ঘরোয়া আড্ডার ভঙ্গিতে, মিশরের বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাপারস্যাপার তুলে ধরেছেন 'হায়রোগ্লিফের দেশে'। জানিয়েছেন,অজানা অনেক গল্প।
তবে কিছু কিছু ব্যাপারে লেখকের বক্তব্য একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে। যেমন - স্ফিংস ভাঙা,অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি। ইতিহাসের বিতর্কিত এই অংশে লেখক নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে দোষারোপ না করে সম্ভাব্য সব পক্ষের ব্যাপারে আলোকপাত করলে, ব্যাপারটা দৃষ্টিনন্দন হতো। বইয়ের এই ত্রুটিটুকু ছাড়া, পুরো বইটি ভীষণরকম উপভোগ্য।
এক কথায় অসাধারণ। বাংলায় খুব সম্ভবত প্রাচীণ মিশর নিয়ে লেখা সেরা বই। গল্পের ছলে রহস্য সৃষ্টি করে প্রাচীন মিশরের কাহিনি বলায় ইতিহাসের কাঠখোট্টা ভাবও নেই। প্রাচীন মিশরের দেব দেবী, মিথ, ফারাও, পিরামিড, ভ্যালি অভ কিংস, টেম্পল অভ আবু সিম্বল, হায়ারোগ্লিফ, মমি, অবিলিস্ক, স্ফিংক্স, নেপোলিয়ন আর আলেকজান্ডারের মিশর আক্রমণ, আলেকজেন্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরি আর লাইটহাউস, বিখ্যাত সব আআর্কিওলজিস্ট আর তাদের আবিষ্কারের দুর্দান্ত কাহিনি, আখনাতেন, রামেসিস, তুতানখামেন, অনিন্দ্য সুন্দরী নেফারতিতি, ইতিহাসের প্রথম মহিলা ফারাও হাতশেপশুত, ক্লিওপেট্রা কি নেই এই এখানে। সাথে ক্লাসিক সব ছবি আর দুর্দান্ত সব ইলাস্ট্রেশন। বার বার পড়ার মত বই।
বইটা নিসন্দেহে আমার পড়া মিশরীয় ইতিহাসের সেরা বই। সহজ সাবলীল ভাষায় চমৎকার সব গল্প, শুধু গল্প বললে হয়তো ভুল হবে,বলা উচিৎ ইতিহাস। ইতিহাসকে এমন সুপাঠ্য করে পাঠকের সামনে আনাটা সত্যিই প্রশংসনীয়। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান আগ্রহ নিয়ে পড়েছি, কোথাও একটুও খারাপ লাগা কাজ করেনি। তবে, মেডিকেল স্টুডেন্ট দুইজন শ্রোতার মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো আচরণে খানিকটা খটকা লেগেছে। লেখক হয়তো আসল বিষয়বস্তে নজর দিতে গিয়ে এই শ্রোতাদের বাচ্চাদের মতো আচরণকে খুব একটা পাত্তা দেননি, আবার এমনও হতে পারে লেখক ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন। সবমিলিয়ে বেশ চমৎকার সুপাঠ্য একটা বই।
মিশর নিজের বুক মেলে দাঁড়িয়ে ইতিহাস, সময় আর পৌরাণিক কাহিনির বিশাল এবং সমৃদ্ধ ভাণ্ডার নিয়ে। প্রাচীন আরবে একটা প্রবাদের প্রচলন ছিল, "মানুষ ভয় পায় সময়কে, সময় ভয় পায় পিরামিডকে।" আর কেউ যদি মিশরের কথা বলে তাহলে চোখের সামনে নির্বিবাদে ভেসে ওঠে বালির মাঝখান থেকে গঁজানো বিশাল বিশাল আকদশচুম্বী পিরামিড, সাকোফেগাসে বন্দী মমি, স্ফিংক্স, ফারাও ইত্যাদি। মিশর পরদে পরদে আপনাকে চমৎকৃত করবে। যদি মিশরীয় মিথলজি নিয়ে বেসিক ধারণা পেতে চান তাহলল " হায়রোগ্লিফের দেশে " উপযুক্ত একটা বই। গল্পের ঢঙে অত্যন্ত সহজ করে লেখা হয়েছে মিশরের ইতিহাস এবং পৌরাণিক গাঁথাগুলো। এরপর যদি আপনার আরো বিশদে জানার পিপাসা পেয়ে যায় তাহলে "মিশরীয় মিথলজি আদী থেকে অন্ত" পড়তে পারেন। মিশর সম্পর্কে আপনাকে আরো বিস্তৃত ধারণা দিবে। অনির্বাণ ঘোষের বইটি সুখপাঠ্য এবং বেশ উপভোগ্য। পাঠক খুব সহজে হারিয়ে যেতে পারবেন এর গভীরে।
মিশর শব্দটার সাথে পরিচয় অনেক আগে। কিন্তু এর সম্পর্কে ডিটেলস কোন জানা শোনা ছিল না। তবে জানার আগ্রহ টা খানিক ছিল। হাতের কাছে কোন বই ছিল না। মিথোলজি প্রকাশিত হয়ছে দেখলাম,এত মোটা বই পড়ার ধর্য্য আমার হবে না,তাই এটা পড়া/কেনা থেকে বিরত ছিলাম।
কয়েকদিন আগে একটা বই উপহার পেলাম "হায়রোগ্লিফের দেশে"। এই বই সম্পর্কে ও জানতাম। তাই হাতে আসার পর দেরি করিনি,পড়া শুরু। ভালো লেগেছে বইটা। কত কি যে জানি না,সেটা আবার বুঝতে পারলাম। মিশর সম্পর্কে জানার আগ্রহ যেটা খানিক ছিল,সেটা বাড়ল। বেশ মজার সব ইতিহাস। লেখক ও চমৎকার কাজ করেছেন। গল্পের ছলে এত সুন্দর করে বলেছেন যে,পড়তে গিয়ে কোন হ্যাপা পোহাতে হয় নি। দারুণ লেগেছে আমার।
মিশর শুনলেই মনের মাঝে ভেসে ওঠে মমি, তুতানখামেন, হায়রোগ্লিফ, পিরামিড, স্ফিংস ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে ইত্যাদি ইত্যাদি বলার কারণ হলো মিশর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা বলি, মিথ বলি আর রোমাঞ্চকর ইতিহাসই বলি না কেন, সব দিক থেকেই মিশরের সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। এর মাঝে কিছু সত্যি কিছু আবার অতিরঞ্জন, কিছু আবার একেবারেই গুজব। সে গুজব, অতিরঞ্জন ছেঁকে একেবারে সত্য ইতিহাস নিয়ে হাজির হয়েছেন অনির্বাণ ঘোষ, অন্তত সে দাবির দলিল তার প্রথম ১ম বই ‘হায়রোগ্লিফের দেশে’। তবে ইতিহাস জানাতে গিয়ে পাঠককে যে বিরক্ত করেছেন এমনটা নয় মোটেও। কারণ ইতিহাস বেস করে হলেও বইটা ফিকশনের আদলে নন-ফিকশন। অনির্বাণ বাবু তার মিশরের জ্ঞান ঝেড়েছেন ভবেশদা নামধারী একজন মানুষের মুখ থেকে, যিনি কিনা পেশায় একজন বই বিক্রেতা। ভবেশদার কলেজ স্ট্রীটে একটা বইয়ের দোকান আছে। আর ভবেশদার এই গল্পের শ্রোতা হয়েছে স্পন্দন আর পিজি নামে দুই মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র। একদিন মিশর নিয়ে একটা বই খুঁজতে গিয়ে এই দুই ছাত্রের পরিচয় হয় ভবেশদার সাথে। তারপর একটু একটু ��রে তাদের কেমিস্ট্রি জমতে থাকে আর পাঠক হারিয়ে যায় নীল নদের পাড়ের সেই রহস্যময় দেশ মিশরের সুপ্রাচীন ইতিহাসে। কখনো বেনুদার টং এ চা খেতে খেতে ভবেশদা বলেছেন খুফুর পিরামিডের কথা, শিখিয়েছেন প্রাচীন মিশরের লোকেরা কিভাবে মমি বানাতো। কখনো বা এই আলাপ গিয়ে ঠেকেছে দিলখুশা কেবিনে। ওখানে ফিস কবিরাজী খেতে খেতে জানা গেলো স্ফিংসের গল্প, জানা হলো রাজা দ্বিতীয় রামেসিসের সেই বিখ্যাত আবু সিম্বেলের জোড়া মন্দির নির্মানের আদ্যোপান্ত। এত তথ্য স্পন্দন, পিজি যেমন গ্রোগ্রাসে গিলতো তেমনি মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতেন ভবেশদা। গল্প করতে করতে সময় কোনদিক দিয়ে চলে যেত টের পেত না কেউই। তাইতো দেখা যায়, এক ধাপ গল্প শেষে রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় ভবেশদা থেকে যাচ্ছেন স্পন্দনদের মেসে। সেই রাতে খেয়ে দেয়ে শিক্ষকের ভূমিকায় নামলেন ভবেশদা। শেখালেন কিভাবে পড়তে, লিখতে হয় সেই রহস্যময় হায়রোগ্লিফ লিপি।
অনির্বাণ বাবু বেশি কিছু ইনফরমেশন দিয়েছেন বইতে যা যে কোন মিশর নিয়ে আগ্রহী মানুষের মনের খোরাক বেশ ভালোভাবেই মেটাবে। সেই সাথে ২০০ এর ওপরে ছবি বইকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। এমন অনেক কিছুই বইতে পেয়েছি যা আগে কখনো শুনিনি। যেমন : আগে জানতাম ক্লিওপেট্রা নাকি দেখতে দারুণ সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু বই পড়ে জানলাম তিনি দেখতে আহামরি সুন্দরী না হলে বুদ্ধিমত্তা আর ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে ছিলেন নিদারুণ সুন্দর। আবার আমরা যে ক্লিওপেট্রাকে চিনি তার আগে আরো ৬ জন ক্লিওপেট্রা ছিলেন আর এই নাম আসলে যতটা না নাম তারচেয়ে বেশি টাইটেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটাও এই বই না পড়লে জানতাম না। ইতিহাসের সাথে ভবেশদা, স্পন্দন আর পিজির আড্ডার বর্ণনাগুলোই এতটাই উপভোগ করেছি যে কখন যে বইয়ের শেষে চলে এসেছি তা টেরই পাইনি। মজা পেয়েছি হায়রোগ্লিফ পড়ার পদ্ধতি শিখে কারণ এটা দেখতে যতটা জটিল বলে মনে হয় নিয়ম জানলে বাস্তবিকভাবে অতটা জটিল না। তবে সবচেয়ে খুশি হয়েছি শেষটায়। অনির্বাণ বাবু বেশ প্রচ্ছন্ন ভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছেন শীঘ্রই এই সিরিজের বই আসবে। তো সে বই আসতে আসতে যারা এখনও এই বইটি পড়েননি তার পড়ে ফেলতে পারেন অ্যাডভেঞ্চার, ইতিহাস, থ্রিলারের মিশ্রণে লেখা বই ‘হায়রোগ্লিফের দেশে’।
মিশরের নাম শুনলেই সবার আগে কাকাবাবুর 'মিশর রহস্য'-এর কথা মনে পড়ে যায়। অবশ্য শুধু আমারই না, আমার সাথে প্রদীপ্ত আর স্পন্দনেরও কিন্তু মিশরের নাম শুনলে পিরামিডের আগে কাকাবাবুর ছবিই চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
প্রদীপ্ত আর স্পন্দনকে চিনলেন না তো? আরে এরাই তো আমাদের মূল চরিত্র, সাথে ভবেশদাকেও ভুললে চলবে না। কারণ তিনিই তো আমাদের মিশর ঘোরাবেন! আগেই বলে দিচ্ছি, এইটা কোনো ইতিহাসের বই না। বরং স্পন্দন, প্রদীপ্ত আর ভবেশদার আড্ডা এইটা। মিশরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বর্ণনা গল্পচ্ছলে বলে আমাদের মোহাবিষ্ট করে গেছেন ভবেশদা।
মিশর নামটাতেই কেমন যেন একটা রহস্য রহস্য গন্ধ পাওয়া যায়। মিশরে কিন্তু শুধু পিরামিড আর তুতেনখামেনই না, আরো অনেক কিছুই ছিল। ওসাইরিস, হায়ারোগ্লিফ, বুক অব দ্যা ডেড, ফারাও নামের রহস্য, স্ফিংসের মূর্তি, ওবেলিস্ক, পিরামিড কীভাবে বানানো হলো, আর্কিওলজিস্টদের পরিচয়, ক্লিওপেট্রার ইতিহাসসহ আরো অনেক কথা এই বইয়ে উঠে এসেছে। সেই সাথে ইতিহাসের বিষয়গুলো ভালোমতো বোঝানোর জন্য ছবি আর ম্যাপ তো ছিলই।
তবে বইয়ের শেষে পেলাম বেশ বড়সড় একটা চমক! ভবেশদার ইঙ্গিত দেখে মনে হচ্ছে পরের কোনো বইতেও আমরা আবারও এই ত্রয়ীর দেখা পাবো।
ইতিহাসের মতন একটা কঠিন বিষয় যারা সহজ ভাষায় পড়তে চায়, তাদের জন্য এই বইটা এককথায় 'অমৃত'। বোঝাই যায় লেখক কতটা পড়াশুনা করে এই বইটা লিখেছেন। তাই তো অবলীলায় মিশরের অজানা ইতিহাস ও রহস্য সম্পর্কে কথা বলতে পেরেছেন তিনি। যাদের মিশরের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানার বিশেষ আগ্রহ আছে, তাদের জন্য এই বইটা খুব উপভোগ্য এবং আকর্ষনীয়।
মিশর ও মিশরের পিরামিডের আকর্ষণ বিশ্বজোড়া। ছোটবেলা থেকেই এই দেশটি সম্পর্কে কম বেশি সকলেরই জানার আগ্রহ থাকে। কেউ হয়তো পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে জানতে পারে। আবার কেউ বা ডকুমেন্টারি অথবা বইয়ের মাধ্যমে জেনে নেয়। গতবছর এই বইটি অনলাইনে অনেক জনপ্রিয় হয়। বইটাতে নাকি পিরামিডের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন লেখক। সেই আশাতেই বইটিকে সামনে নিয়ে বসা। পিরামিড ও ফারাওদের শাসনকে ডকুফিকশনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন লেখক।
মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী স্পন্দন ও প্রদীপ্ত ঘোষ; প্রদীপ্তকে ছোট করে পিজি নামে ডাকা হয়। স্পন্দনের মামা সম্প্রতি মিশর ঘুরে এসেছেন। মামার কাছে মিশরের গল্প শুনে স্পন্দনেরও মিশর সম্পর্কে আরো জানতে ইচ্ছে হয়। কলেজস্ট্রিটের পুরাতন বইয়ের দোকানে তাই উইলবার স্মিথের 'রিভার গড' বইয়ের খোঁজ করে স্পন্দন ও পিজি। বইটি ভবেশ সামন্ত নামের এক ব্যক্তির দোকানে পাওয়া যাবে বলে জানতে পারে। ভবেশ সামন্ত মিশর সম্পর্কে আগ্রহ দেখে তাদের সাথে মিশরের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে গল্প করেন। বৈঠকি আড্ডার সেই গল্পের মাধ্যমেই উঠে এসেছে পিরামিড, স্ফিংস, ফারাও, মমি ও হায়রোগ্লিফিক ভাষার কথা। এছাড়া বইটিতে অনেকগুলো ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা তথ্যগুলোর পাশাপাশি আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোকে কল্পনা করতে সহজ করে দিয়েছে।
মিশরের ফারাওরা ছিলেন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। তাদের আপ্তবাক্য জনগণ এক কথায় মেনে নিত। জীবিতকালে দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে শাসন করে মৃত্যুর পরেও সেই ক্ষমতার প্রয়োগ করতেন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের পাথেয় হিসেবে সঙ্গে করে দাস-দাসী ও সম্পদ সমাধিতে রাখা হতো। পিরামিডগুলোর আশ্চর্য স্থাপত্যশৈলী এখনো মানুষকে বিস্মিত করে। কয়েক হাজার বছর আগেই তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। গিজার পিরামিড ইতিহাসবিখ্যাত। তাদের বিজ্ঞান এতটাই উন্নত ছিল যেন, মন্দিরের একটা নির্দিষ্ট অংশে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আলো পৌছানোর কোনো ব্যত্যয় ঘটতোনা। প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্ম বিশ্বাস বিভিন্ন দেবদেবীকেন্দ্রিক ছিল। একেক ফারাও একেক দেবতার পূজা করতেন এবং নিজেকে ঐ দেব-দেবীর অবতার হিসেবে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতেন। পিরামিডের সমাধিতে অনেক গোপনীয়তা অবলম্বন করে ফারাওদের মমিগুলো রাখা হতো। তবে সম্পদের লোভে পড়ে মানুষ সেইসব সমাধিতে একাধিকবার ডাকাতি করেছে। লুন্ঠন করে নিয়েছে সম্পদ ও মমি। মিশরের জাদুঘরের পর পিরামিড সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ রয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। তবে এর পেছনে স্থানীয় দালাল ও আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসনের প্রভাব রয়েছে। পিরামিডের সম্পদ ও মমিগুলো বিভিন্ন হাত ঘুরে বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে জায়গা পেয়েছে। ভারতেও এমন একটি মমি রয়েছে। মমিগুলোর আবিষ্কর্তা ও হায়রোগ্লিফিক ভাষাকে বোধগম্য করে তোলা নিয়ে অনেককিছু জানা যায়। বইটিতে বিপুল তথ্যের সমাবেশ রয়েছে, যা চরিত্রগুলোর কথোপকথনের মাধ্যমে উঠে এসেছে।
বইটাকে পুরোপুরি ফিকশন কিংবা নন-ফিকশন বলা যায়না। মধ্যপন্থার বই এটি। তবে যেহেতু ইতিহাসের উপাদান রয়েছে তাই লেখককে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন করতে হয়েছে। কিন্তু বইটিতে লেখকের একটা দৃষ্টিভঙ্গি চলে এসেছে, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য থেকে দূরে সরে গিয়েছে। অন্ধকূপ গণহত্যা যে ইংরেজদের তৈরি গালগল্প, তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু লেখক এই তথ্যকে বৈধতা দিয়ে হলওয়েল মনুমেন্টের ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সাহায্য নিয়েছেন পশ্চিমাদের বইগুলো। স্বভাবতই সেই বইগুলোতে ইসলামকে ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ওমর (রা) এর আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার ধ্বংস করার ঘটনা হুমায়ুন আজাদ কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের বইগুলোতেও পাওয়া যায়। তবে পি কে হিট্টি ও বারট্রান্ড রাসেল এই সম্পর্কিত গালগল্পকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি ইসলামের ইতিহাসেও এই ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কি�� সত্যতা পাওয়া যায়না। আলেকজান্দ্রিয়া ধ্বংসের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে ওমর(রা) এর শাসনামলেরও পাঁচশো বছর পর। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আলেকজান্দ্রিয়া ধ্বংস হয়েছিল ইউরোপীয়দের দ্বারা। ইউরোপীয়দের পিরামিডের সম্পদ লুটকে মিশরীয় সভ্যতাকে সবার সামনে তুলে ধরার অবদান বলে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চুরি ত চুরিই। তবে বইটার সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হলো শেষের কিছু অংশ। কী দরকার ছিল এ���কম একটা বইয়ের এমন সমাপ্তি টানার? এভাবে সমাপ্তি টানতে গিয়ে বইটিকে থ্রিলার রূপ দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মনে হয়েছে। কারণ পুরো বইতে কাহিনি নির্মাণ না করে হুট করে কোনো রহস্যের সৃষ্টি করা বোধগম্য হয়নি।
প্রাচীন মিশর ও সংশ্লিষ্ট ইতিহাসের বিপুল তথ্যের সমাবেশ করে লেখক একটি রূপরেখা দাঁড় করিয়েছেন। সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে প্রাচীন মিশরের খুঁটিনাটি জানার জন্য বইটা পড়তে পারেন। এর বেশি কিছু বলে বইটিকে বিশেষায়িত করা যায়না। হ্যাপি রিডিং।
মানুষ সময়কে ভয় পায়, আর সময় ভয় পায় পিরামিডকে!
আরব্য উক্তি, অত্যুক্তি নয়। ঐতিহ্য নিয়ে বড়াই করতে চাইলে সগৌরবে করতে পারে মিশরের মানুষ। পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, চাট্টিখানি কথা নয়। হাজার রাতের গল্প ফুরোবে, হাজার মনের দুঃখ ঘুচবে, হাজার পাতা লেখা শেষ হবে...তবুও শেষ হবেনা যেই ইতিহাস, সেই ইতিহাস পৃথিবীর বুকে একটার পর একটা পাথরের টুকরো গেঁথে তিলে তিলে রচনা করেছে একটা জাতি।
আমার মনে আছে, খুব সম্ভবতঃ আমি আমার স্কুলজীবনে দুই কি তিনবার কোনো এসাইনমেন্ট করেছি প্রবল উৎসাহে। তার মাঝে মিশর নিয়ে ছিল একটি। পৃষ্ঠাসংখ্যা, কন্টেন্ট, তথ্য কিভাবে যোগাড় করেছিলাম কিছুই মনে নাই। তখন ইন্টারনেট অতটা সহজলভ্য ছিলনা। আমার শুধু আবছাভাবে যা মনে পড়ে আমি আমার এক বন্ধুর থেকে মিশর নিয়ে একটা বিশাল মোটা ইঙ্গরেজি বই এনেছিলাম। বইটার কয়টা পাতার দৃশ্য আমার চোখে ভাসে। আর একটা গন্ধ ছিলো বইটার। একটা পুরনো গন্ধ, কিন্তু মিষ্টি। ইতিহাসের গন্ধ বোধহয় এমনি হয়, না? পাতায় পাতায় ছবি ছিল, মমিকরণ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ছবি আকারে দেখানো ছিল, পিরামিডের এভারেজ পোস্টমর্টেম এত ভালোভাবে ওখানে পেয়েছিলাম, যে এই বিষয়গুলো নিয়ে আর কখনো তেমন পড়বার প্রয়োজন হয়নি। তখন যে অংশগুলো বাদ পড়েছিলো তার মধ্যে ইতিহাস, মিথ, আর্কিওলজির কথা ছিল প্রধান। আমার ধারণা এই বইটি থেকে আমি সেই অংশগুলোই বেশ সহজে পেয়েছি। একটি ধর্মকেন্দ্রিক জাতি কিভাবে পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী ইতিহাস স্থাপন করে বসে আছে, সেটাই ভাবছিলাম পুরোটা সময়। শুধু হায়রোগ্লিফিক দুর্বোদ্ধ এক ভাষার আবিষ্কারটাও কি কম শ্বাসরুদ্ধকর ছিলো?!
যে যুগের উদ্ধারকৃত গল্প পড়লাম, যে সময়ের এস্ট্রোনমি আর আর্কিটেকচার জ্ঞান নিয়ে জানলাম, পুরো ভিত নড়ে উঠলো মনে হয়। যুগের চাইতে অগ্রসর বোধহয় এটাকেই বলে। মেলাতে গেলে মিশরের ইতিহাসের সাথে ঘুরেফিরে সব কিছু কেমন যেন কানেক্টেড মনেহয়। হেরোডটাস, মার্ক টোয়েন, নেপোলিয়ন, জুলিয়াস সিজার, আলেকজান্ডার...ইতিহাস প্রসিদ্ধ এরকম সব নাম জড়িয়ে আছে এর সাথে, ব্রেকিং ব্যাডের সর্বশ্রেষ্ঠ এপিসোড থেকে শুরু করে, হাজারও ধর্মগ্রন্থে, আইনে, বিজ্ঞানের সাথে লিয়াজু দেখে চক্ষু কপালে ওঠে। গ্রিক, নরডিক, এরাবিক এর মতো পুরাণ হোক, সংস্কৃতি হোক, যোগাযোগ আছেই মিশরের সাথে। কতশত কনসেপ্ট ধার করে তাবৎ দুনিয়ার শিল্প সাহিত্য চলছে ভাবলেও অবাক লাগে। অনির্বান ঘোষ বেশ গল্পচ্ছলে সহজ সুন্দর ঢংয়ে মিশরের ইতিহাস বলে গেছেন। আর বাংলায় মিশর নিয়ে সবচাইতে ভালো বইয়ের তকমা দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলুক, কিন্তু আমার কাছে কেমন যেনো গল্পের ঘ্রাণটাই বেশি রয়ে গেছে মনে হচ্ছিলো। মানে জানার চাহিদা ঠিক পুরোপুরি পূরণ হয়নি। এই যেমন মুসা (আঃ) বা মোজেস এর টপিক ভুলে যাওয়া, সবরকম কনস্ট্রাকশনের বর্ণণা খুব কম তুলে ধরা, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে কথা না বলা, ইত্যাদি খুঁটিনাটি বহু টপিক রয়ে গেছে অধরাই। তবে হাজার বছরের ইতিহাস এক মলাটে আনার যে গুরুভার, তা ঠিক লেখক ঘাড়ে নিবেন কিনা তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে।
শেষ করবো একটা চিন্তা দিয়ে, মিশর তার যুগের চাইতে অনেক অগ্রসর ছিল, ফারাওদের গল্প নিয়েই হয়তো মাতামাতি চলছে সবখানে। কিন্তু ইমহোটেপ এর মতো মহাজ্ঞানী যেই মানুষগুলো আদতে ইতিহাসটাকে তৈরি করেছেন জেনে বুঝে, যাদের ক্ষমতার মোহ ছিল না। তারা নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে সচেতন ছিলেন তারা কি করছেন। শুরুর সেই আরব্য উক্তিটার মতো, এমনকি হতে পারেনা, সেই মানুষগুলো আমাদের ইতিহাস যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন, সামনে একটা পিরামিড তুলে দিয়ে... আমরা সেটাই দেখছি। আসল বেশিরভাগ সত্য আমরা কখনোই জানবোনা। কিংবা ইমহোটেপ আদতে উধাও হয়ে যান নি, হয়তো তিনি অমরত্বকে জয় করে ফেলেছিলেন। হতেই পারে ঢাকা শহরের শান্তিনগরে নীল চোখা ছফুট লম্বা লিকলিকে শরীরের যে ঝালমুড়ি ওয়ালা মামাকে দেখেছি গত দুইদিন, তিনি আর কেউ নন, খোদ...
বইপাড়ার একটা দোকানের একজন মালিক ভবেশ সামন্ত, কোনো গোপন কারণে মিশর নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান। সে সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো মিশরের ইতিহাস আর পুরাণের গল্প বলে মেডিক্যাল কলেজের দু-জন স্টুডেন্ড পিজি আর প্রদীপ্তকে।
গল্পের মতো করে বৈঠকী আবহে ভবেশ সামন্ত আমাদের মিশরের ইতিহাস আর পুরাণের—পিরামিড, বুক অফ দ্য ডেড, মমি, স্ফিংস, গুপ্তধন, বিলুপ্ত লিপি, ফারাও, ক্লিওপেট্রা, আলেকজান্ডার, সিজার আর আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির গল্প বলেছেন।
প্রাথমিকভাবে মিশরের ইতিহাস জানার জন্য ভালো বই। আর বইতে রয়েছে প্রচুর ছবি যেগুলো মিশরের ইতিহাস জানার জন্য পাঠককে আগ্রহী করে তুলবে।
তবে লেখক ইতিহাসের একটি বিতর্কিত বিষয়কে বইতে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেন সেটি নির্ভরযোগ্য সত্য। যেমন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে খলিফা ওমর আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত গ্রন্থাগার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেন। অথচ ইতিহাসবিদদের মধ্যে এ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে এবং এই দাবির পক্ষে কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। গবেষণায় দেখা যায়, ওমরের শাসনামলের বহু আগেই বিভিন্ন যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি বেশ কয়েক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং ধ্বংসপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। তাই এই ঘটনার দায় এককভাবে খলিফা ওমরের উপর চাপানো ইতিহাসের যথার্থ চিত্র তুলে ধরে না। বইয়ের এই বিষয়টা লেখকের সংশোধন করা উচিত। বিশ্বের কাছে ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করার খেলা কবে বন্ধ করবেন আপনারা!
চমৎকার! অন্তত যাদের আমার মতো মিশর সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান তাদের জন্য এই বই রিকমান্ডেড। ইতিহাস এর মতো জিনিসকে এতো সাবলীল গদ্যে প্রকাশের জন্য লেখকের তারিফ করতে হয়।
বইটা শুরু করেছিলাম এ মাসের শুরুতে। অতঃপর ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলে এল। লোভ সামলাতে না পেরে পরীক্ষার মাঝেই শেষ দিয়ে দিলুম!
জানেন না? আচ্ছা, নিদেনপক্ষে হায়রোগ্লিফে নিজের নাম���া লেখতে পারেন তো?
তাও না? কুছ পরোয়া নেই, শিখে যাবেন স-ব। ভবেশদা আছেন না! ভবেশদা বলে তো ভবেশ সামন্ত, মিশরীয় সভ্যতার চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানগুলো রয়েছে না? তারই এক গুমটিতে বইয়ের স্তুপে ডুবে থাকতে দেখা যায় তাকে।
স্পন্দন বসু আর প্রদীপ্ত ঘোষ, দুই মেডিক্যালের ছাত্র। প্রাচীন মিশর নিয়ে ভারি আগ্রহ দুজনের, বিশেষ করে স্পন্দনের। সেই সূত্রেই মিশর নিয়ে লেখা বই খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেল ভবেশদাকে। বিক্রি-বাট্টা নেই তেমন তার দোকানে, তাই এক প্যাকেট বিড়ি বা বেনুদার টং এর ফিশ ফ্রাই পেলে খুলে বসেন গল্পের ঝাঁপি।
এই ভবেশদার কল্যাণেই শেখা হয়ে গেল মিশরীয় পবিত্র লিপি, মমি আর পিরামিড তৈরীর কলাকৌশল, দেবতাদের আখ্যান আর মৃতদের বইয়ের কথা। ভেঙ্গে গেল অনেক ভুল ধারণাও।
কে জানত, ক্লিওপ্রেট্রা কেবল একজন নন, গুনে গুনে সাতজন ছিলেন! তাও যে বিশ্ববিখ্যাত সপ্তম ক্লিওপেট্রা, তিনি মোটেই তেমন মারকাটারি সুন্দর ছিলেন না। মোজেস চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যে ফারাওকে, তিনি দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন না, ঘটনাটি হয়েছিল দ্বিতীয় আমেনহোতেপের সময়। তুতানখামেনের অভিশাপের রহস্যটিও একেবারেই গুজব। ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে যে Rx লেখা হয়, সেটিও জড়িয়ে আছে মিশরীয় পুরাণের সাথে, এসেছে 'আই অফ হোরাস' থেকে।
খুফুর গ্রেট পিরামিডের আদ্যোপান্ত জানালেন ভবেশদা। বললেন সেই বিশাল স্ফিংসের গল্প, যা কে তৈরী করেছিল কেউ জানে না। জানা ছিল না, মার্ক টোয়েন একবার খুফুর পিরামিডের চুড়োয় উঠেছিলেন। আবু সিম্বেলের আর্কিটেকচারাল নিপুণতার কথাও বললেন, মজার কথা হচ্ছে দ্বিতীয় রামেসিসের এই মন্দিরটি ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পুরোটা ছোট ছোট টুকরোয় খুলে নিয়ে আবার জুড়ে দেওয়া হয়েছিল নিরাপদ দূরত্বে।
ঈশ্বরের লিপি বা হায়রোগ্লিফ প্রথম পড়তে শিখেছিলেন ফ্রান্সের শাম্পেলিয়ন। এই লিপি পড়তে গিয়েই জানা যায় মিশরীয়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনেক চমকপ্রদ তথ্য। তবে এই অবদানের মাশুল দিতে হয়েছিল শাম্পেলিয়নের জীবন দিয়ে, কাজের চাপ আর নিজের প্রতি অযত্নে ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান তিনি।। মিশরীয় সভ্যতা অনেকটাই অজানা থেকে যেত আরেকজন না থাকলে, তিনি জিওভান্নি বেলজোনি। রামেসিসের মন্দির উদ্ধার, রাজাদের উপত্যকায় ফারাও সেতি আর আই'র কবর আবিষ্কার, দ্বিতীয় রামেসিসের সুবিশাল মুর্তি ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া সহ অনেক অবদান তার।
লেখক অনির্বাণ ঘোষ গোটা একটি ইতিহাসের বই সাজিয়ে ফেলেছেন মজার গল্প বলার ছলে। ভবেশদা যেন একালের সিধু জ্যাঠা, স্পন্দন আর প্রদীপ্তকে একের পর এক শুনিয়ে গেলেন মিশরের কাহিনী। প্রদীপ্ত বা পিজির ফচকেমি, ভবেশদাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা আর সবজান্তা ভাব নিয়ে ফুট কাটার স্বভাব বারবার কাকাবাবুর 'জোজো'র কথা মনে করায়। মূল চরিত্র তিনটিকে লেখক তৈরী করেছেন তার পরিচিতদের আদলে, নামটাও তাদের থেকে নেওয়া।
নিরেট ইতিহাসের হলেও, লেখকের বলার গুণে বইটি একদমই ক্লান্তিকর নয়। ছোট ছোট অধ্যায়ে বলে গিয়েছেন পিরামিড, মমি, ওবেলিক্স, খুফুর নৌকো, আর বিভিন্ন ফারাওদের কথা। পাতায় পাতায় ফটোগ্রাফ আর অলংকরণ বর্ণনাগুলোতে বুঝতে সহজ করেছে। ইতিহাস বর্ণনার পাশাপাশি, ধারাবাহিক ভাবে পড়ে গেলে একটা রহস্য পাকিয়ে উঠার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। ভবেশদা আর মিশর নিয়ে সেই রহস্যের সমাধান হবে বোধকরি লেখকের পরবর্তী উপন্যাসে।
ভারতীয় বইগুলো সবসময়ই শক্তপোক্ত বাঁধাই আর পাতার মান দিয়ে মুগ্ধ করায়। ছাপার ভুল একেবারে নেই বলবো না, তবে তা হাতে গোনা যায়। আর কালো - সোনালী প্রচ্ছদটি দেখলেই মিশরের কথা মনে পড়ে। বাংলা ভাষায় এমন সহজপাচ্য ইতিহাসের বই কম-ই আছে।
আজ পড়ে শেষ করলাম অনিবার্ণ ঘোষের ' হায়রোগ্লিফের দেশে'। বইটা পড়ার পর মনে হলো এতো সুন্দর বই আগে কেনো পড়লাম না। মিশর নিয়ে বাংলায় তেমন বই নেই বললেই চলে। যা অল্প আছে তা একেবারে কাঠখোট্টা। এই বইয়ের বিশেষত্ব হলো বইতে লেখক কোনো জ্ঞান দেয়নি। বরং গল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উপাখ্যান যেমনঃ মমি, পিরামিড, হায়রোগ্লিফিকস, তাতেনখামেন, ক্লিওপেট্রা সহ জানা-অজানা কিছু উপাখ্যান নিয়ে সহজ সরল ভাবে গল্প বলে গিয়েছে যা কোনো অংশে থ্রিলারের চাইতে কম নয়।
বইটার সবচেয়ে বেশি মূল্যবান অংশ সম্ভবত বইয়ে থাকা ছবিগুলো। যে উপাখ্যান নিয়ে গল্প বলেছে তার মূল্যবান ছবি বইয়ের সঙ্গে যুক্ত করা আছে তাই গল্পগুলো আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বইটার আরেকটা বিশেষত্ব হলো যেকোনো পর্ব থেকে বইটা পড়া যাবে ( দুয়েকটা ধারাবাহিক গল্প বাদে)। সর্বোপরি বাংলা ভাষায় এই ধরনের বই এই প্রথম। গল্পের শেষ পর্যন্ত পাঠকদের টেনে রাখার ক্ষমতা তারানাথ তান্ত্রিক এর মতোই৷
এসময়ের বেশিরভাগ বাংলা বই পড়ে আমার মনে হয় অহেতুক পৃষ্ঠা বাড়ানো হয়েছে। একই গল্প আরেকটু ছোট করে বললেই বোধহয় পাঠকেরা বেশি অাকর্ষিত হতো।
কিন্তু এ বইয়ের বেলায় উল্টো ফিলিং হচ্ছে। কিঞ্চিৎ মেজাজ খারাপও হচ্ছে। পুরো মিশরের ইতিহাস মাত্র ২৬৪ পৃষ্ঠায়! মেনে নিতে পারছিনা।
ইন্ট্রোডাকশন! বুঝছি। কিন্তু আরও অন্তত শ'দুয়েক পৃষ্ঠা বেশি লেখা হলে, এই ইন্ট্রোডাকটরি বইটাই বুঝতে আরেকটু সুবিধা হতো। শুধুমাত্র টপিক ইন্ট্রোডিউস করার চক্করে লেখক বেশ কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি, অথবা আমি ঠিকঠাক বুঝিনি।
শুধু এই বিষয়টা ছাড়া বইয়ের সবকিছুই দুর্দান্ত। আর অল্প একটু ডেসক্রিপটিভ লেখা হলে, এ বইকে অনায়াসেই ৫/৫ দেওয়া যেতো।
আমি মিশর সম্পর্কে কিছুই জানি না, কিন্তু আগ্রহী কম নই। আর সেই আগ্রহ থেকেই বইটা পড়া শুরু করা। এটা ইতিহাসের খটখটে বইয়ের মতো নয়, গল্পের তালে লেখক হাজার বছর পুরনো ইতিহাস বলে গেছেন। মিশর নিয়ে আমার দৌড় যেহেতু ডিসকাভারি চ্যানেলের 'এক্সপেডিশন আননোওন' পর্যন্ত তাই ঠিক বলতে পারব না ইতিহাস কতটা সঠিক ভাবে জেনেছি। উপরন্তু বইয়ের নেগেটিভ রিভিউ বলতে গেলে এক দুটো। বিজ্ঞদের কথা বলতে পারব না। কিন্তু আমার মতো যারা আনাড়ি পাঠক আছেন তারা মিশর নিয়ে আগ্রহী হলে এই বইটা অবশ্যই পড়তে পারেন। নি:সন্দেহে অনেক ইনফরমেটিভ বই।
বইটা অর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো বই শেষ ��া করলে অস্বস্তি লাগে। তাই পুরো শেষ করলাম! হুউ....মিশর যেতে ইচ্ছে করছে খুউব! মিশর নিয়ে এমন সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা বই হয়তো আর নেই। মজার ছিলো বইটা।
'আত্মপ্রকাশ' নামক ফেসবুক গ্রুপে সিরিজ আকারে শুরু হয় 'হায়রেগ্লিফের দেশে' 'র যাত্রা (পরবর্তীতে বই আকারে আসে)। লেখক মূলত নন-ফিকশনকে ফিকশনাল্লি প্রেজেন্ট করতে চেয়েছেন। ভবেশ সামন্ত নামের এক বই বিক্রেতা, দু'জন মেডিকেল স্টুডেন্টকে শোনাবে মিশরের গল্প। খুব সহজ-সাবলীল লিখা ।
ইতিহাস,মিথলজি, পিরামিড,মিশর,ফারাও, হায়রোগ্লিফ এসবের একদম বেসিক জিনিষপত্র আছে বইটিতে। এগুলো নিয়ে বিষদ পড়াশোনা করতে চাইলে বইটি হতে পারে আপনার হাতেখড়ি। খুবই কম পরিশ্রমে আপনি ফারাও ইতিহাসের কঠিন কঠিন টার্মের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। কিন্তু এত স্বনামধন্য একটা বই যেমন আশা নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম, ততটা তৃপ্ত করতে পারেনি।
বইটা পড়ে মোটামুটি ভালোই লেগেছে তবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে খটকা থেকেই গেছে:
★ আলেকজেন্দ্রিয়ার লাইব্রেরি পোড়ানোর দায় লেখক খলিফা (বইতে কেন ক্যালিফ লিখেছেন জানি না) উমর এর উপর চাপিয়ে দিলেন!
উইকিপিডিয়াতে গেলে দেখা যায় 'সেরাপিয়াম এর পূর্বেই তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান সম্রাট অরেলিয়ান এর আক্রমণে এই লাইব্রেরি টা আংশিক ভস্মীভূত হয় এবং ৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে এর ধ্বংস সম্পন্ন হয়।' যেখানে খলিফা উমর এর আমলে মুসলমানরা আলেকজান্দ্রিয়া জয় করে ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে।
★মোজেস এর এক্সোডাস এর সাথে আমেন হোটেপ কে এনেছেন লেখক (আমি যতদূর জানি আমেন হোটেপ আরো পরের ফারাও) । 'টেন কম্যান্ডমেন্টস' সিনেমাতে দ্বিতীয় রামেসিসকে দেখানো হয়েছে মোজেসের এক্সোডাস এ, যেটাকে তিনি ভুল বলে দাবি করেছেন। যদিও গুগল বলছে মুসা'র এক্সোডাস দ্বিতীয় রামেসিস এর সময়ই ঘটেছিলো। মানে সোজা কথায় বলতে গেলে মুসা আর ফেরাউন এর কাহিনী কার অজানা!!
★ চতুর্থ আমেন হোটেপ, আমুন সহ সকল দেবদেবীর পূজা নিষিদ্ধ করেন। তিনি নিজেকে অখনাতুন (আতুন এর দাস) ঘোষণা করেন। কিন্তু সেখানে যোসেফ বা ইউসুফ এর গল্পটা আশা করেছিলাম।
তবে এই বইটা পড়ার পরে মিথলজির বইগুলো খুব সহজেই রিলেট করতে পারবো আশা করি।
স্বপ্নের দেশ, বিস্ময়ের দেশ মিশর। মিশর নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিরামিড, মমি, স্ফিংসের ছবি। মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় টিভিতে দেখা মমির ছবি, ইংরেজির পাঠ্যবইয়ে পড়া তুতানখামেনের ওপর প্রবন্ধ, সত্যজিৎ রায়ের 'প্রফেসর শঙ্কু ও ইজিপ্সিয় আতঙ্ক' এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'মিশর রহস্য' উপন্যাসে আমার প্রিয় খলনায়ক হানি আলকাদির কথা। তাই এই দেশটি ও তার মাঝে ছড়িয়ে থাকা নানান গল্প সম্বন্ধে জানার আগ্রহ ছিল। আর সেই ইচ্ছেপুরণ করতে খোঁজ পেলাম এই বইটির।
মমি, গ্রেট পিরামিড, স্ফিংস, ওবেলিস্ক সহ ২৫টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তথ্য, এর সাথে জড়িত গল্প বা গুজব- এই সবকিছু গল্পের ছলে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। গল্প বলছেন কলেজ স্টিটের বই বিক্রেতা ভবেশ দা এবং তাঁর দুই শ্রোতা হচ্ছে স্পন্দন ও প্রদীপ্ত নামে দুই বন্ধু। মানে সরাসরি গল্পগুলো না লিখে লেখক এই তিন চরিত্রকে দিয়ে, আড্ডার ছলে গল্পগুলো বলিয়ে নিয়েছেন।
বইটি নিঃসন্দেহে খুবই ভালো একটি প্রচেষ্টা। ইজিপ্টে মমি আর পিরামিড ছাড়াও যে এত গল্প জানার আছে তা আগে জানতাম না। আর কতরকম তাঁদের দেবতা ছিলেন! তাঁদের নিয়ে কতই না গল্প, এক একজনের রূপ ও চেহারাও ইউনিক! তা ছাড়াও এই বইয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এর অজস্র ছবি। বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে লিখে সাথে তাঁর ছবি জুড়ে দেওয়া আছে। বোঝা যায়, যে ছবিগুলো অনেক পরিশ্রম করে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে এনেছেন লেখক।
বইটি ফিকশন নাকি নন ফিকশন? এই প্রশ্নটি পাঠকের মনে আসবেই। সেই হিসেবে আমি বলতে চাই যে বইটিতে যে গল্পগুলো বলা হয়েছে সেগুলো ফিকশন নয়। এখানে শুধুমাত্র গল্প বলিয়ে আর দুই শ্রোতারা কাল্পনিক। তাই এটা হচ্ছে ফিকশনের ছোঁয়াযুক্ত একটি নন ফিকশন। মিশর সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে চাইলে 'হাইরোগ্লিফের দেশে' হচ্ছে একটা 'কমপ্লিট প্যাকেজ'।
এর আগে আমি মিশর সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।তাই আমার জন্য এটা প্রচুর তথ্যবহুল একটি বই।পড়তে কোথাও বিরক্ত লাগে নি।সরাসরি মিশরের ইতিহাস এর গল্প রুপকথার মতো পড়লাম মনে হোল।এর সাথে বই এর প্রতিটি পাতায় যে ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে ঐ গুলাও ইন্টারেস্টিং লাগছে।
বইটি ভালো ও তথ্যবহুল সন্দেহ নেই। আমায় যেটা একটু অস্বস্তিতে ফেলল সেটা হল বইটাকে খুব একটা সুন্দর সাহিত্যের ঘরানায় বোধকরি ফেলা যায়না। সাবলীল অবশ্যই। কিন্তু কিছুটা শিশুতোষ। পিজি একটু বেশিই কম জানে যেন। সামান্য তলাপত্র আর ক্লিওপেট্রা যে সেম এটা বের করার জন্য মোগলাই খেতে খেতে উত্তেজিত হবারও দরকার ছিল না। যাই হোক। খারাপ বলব না। একাধিকবার পড়াও যায়, নেহাৎ না জানা তথ্যউপাত্তগুলোকে একটু হাইলাইট করে রেখে। আশা করব, নেক্সট সিজনে লেখক আরো সুন্দর ও টানটান করে চিত্রনাট্য উপস্থাপন করবেন।
নন ফিকশন বইতে লেখকের নিজস্ব মতামত বা কল্পনা আশা করি নি। বই ভালোই ছিল, কিন্তু ভুল আংশিক ও বিতর্কিত তথ্যগুলো হতাশ করেছে। ২ স্টার দিলেই ভাল লাগত। দিলাম না, কারণ, বেশ তথ্যমূলক ও মোটামুটি সুপাঠ্য বই, ২ স্টারের বেশিই ডিজার্ভ করে।
I never thought that I would enjoy this much reading a book full of historic information. This book is amazing and captivating. The author narrates the history of Egypt using a storytelling method which is engaging. This was the main reason I devoured a book like this full of historical facts. The way the author narrates the story it feels like I can see and feel the things.The author also provided some fascinating and unique historic facts about Egypt which anyone would love to know.
অসাধারণ। আমিতো এমন বই চাই। যেটা পড়ার সময় আমার বোর লাগবে না। ইতিহাসও জানা হলো আবার সেটা উপভোগও করলাম। হায়রোগ্লিফের দেশে বইটা আমাকে সেই আনন্দটাই দিলো। অনির্বাণ দা'র কাছ থেকে অতি শীগ্রই এর পরের পার্ট আশা করি।