কী এক বাঁক বদল হলো বখতিয়ারের জীবনে যে দিনমান ঘৃণা করা বুড়ো রবীন্দ্রনাথ জেঁকে বসলো তার জীবনে?
টেকনাফের ডাকাত হাবিজুলের বিষ নজর পড়লো নিরীহ আনিছুরের ওপর। হাবিজুল এমনি ব্যক্তি যে থানায় বসেও তার নাম ফিসফিস করে উচ্চারণ করতে হয়। আনিছুর কী বাঁচতে পারবে?
খোরশেদের গাড়িতে চাপলো এক লাস্যময়ী তরুণী। রহস্যময় তার কথাবার্তা। হঠাৎ হাজির হলো একটা সাদা মাইক্রোবাস, খোরশেদদের সঙ্গে শুরু করলো ইঁদুর-বেড়াল খেলা। গাঢ় হলো তরুণীর গলা। বললো, 'রেসে হারাতে পারলে আমাকে পাবে।' সরল বিশ্বাসে খোরশেদ স্টিয়ারিং ধরে চললো এমন গন্তব্যে, যা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কেবল রহস্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।
এমন পনেরোটি গল্প নিয়ে আজ বের হচ্ছে আমার প্রথম গল্পের বই 'বিস্ময়ের রাত।' অজস্র নাটকীয় ও রহস্যময় ঘটনায় ভরপুর গল্পগুলো উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। 'আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল' এর পর এই বইটিও আপনাদের নজর কাড়বে নির্ঘাত।
নিয়াজ মেহেদীর জন্ম রংপুরের বেনীপুর গ্রামে, ২৯ আগস্ট ১৯৮৯ সালে। মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান নিয়াজের হাতেখড়ি পত্রিকার ছোটদের পাতায় লিখে। একসময় লেখালিখি ভুলে গিয়েছিলেন। প্রত্যাবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর অনুজ নাবিল মুহতাসিম ও অগ্রজ লেখক মশিউল আলমের। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল বিপুলভাবে সমাদৃত। এরপর লিখেছেন উপন্যাস আড্ডা দেওয়া নিষেধ ও ধাঁধার থেকেও জটিল। ছোটগল্পের দুটি বই বিস্ময়ের রাত ও মর্কট মঞ্জিল। তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো, রহস্য পত্রিকা, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, বণিক বার্তা ও কিশোর আলোর পাতায়।
আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেলের কথা মনে আছে? সেই যে ২০১৮ এর বইমেলায় মাঝরাতে একটা ভাতের হোটেলে অলৌকিক/অতিপ্রাকৃত গল্পের কথকদের সম্মেলন ঘটেছিল? হ্যা, আওলাদ মিয়ার স্রষ্টা নিয়াজ মেহেদী ভাইয়ের দ্বিতীয় বই "বিস্ময়ের রাত।" ১৫ টি ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে সজ্জিত এই গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুই, তবে লেখক হিসেবে তাকে নতুন বলা যায় না। প্রথম আলো, বণিক বার্তা, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, রহস্য পত্রিকার মতো স্বনামধন্য পত্রিকাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে তার একাধিক গল্প।
গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানবমনের বিচিত্র রূপের প্রতিচ্ছবি। ইংরেজিমাধ্যমে পড়ুয়া এক কিশোরের রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের সাথে পরিচয়, তার মা-বাবার দ্বন্দ্ব ঘিরে ঘনিয়ে ওঠা এক মর্মস্পর্শী পারিবারিক ড্রামা। কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী রাতের বাসে এক রহস্যময়ী সহযাত্রী তরুণীর বদান্যতার মুখোমুখি হয় এক সরল-হৃদয় রোমান্টিক তরুণ। বাবার অসংযত আচরণের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়লে বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয় তরুণী কন্যা। ঘুমবঞ্চিত কিশোর হোটেলকর্মীর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয় যৌন নির্যাতনের বিভীষিকাময় যন্ত্রণা।
জীবনধর্মী গল্পের পাশাপাশি কিছু অলৌকিক গল্পও স্থান পেয়েছে বইটিতে। যাত্রী, বাস, মানিক- গল্প তিনটি অতিপ্রাকৃত হলেও তাতে সূক্ষ্মভাবে মিশে আছে জমাট বাধা দীর্ঘশ্বাস আর বিষাদের তীব্র আর্তনাদ।
অজস্র নাটকীয় ও রহস্যময় ঘটনায় গড়ে ওঠা গল্পগুলো একদিকে যেমন উত্তেজনায় পরিপূর্ণ, ঠিক তেমনই তাতে ফুটে উঠেছে শক্তিশালী, দক্ষ বর্ণণাভঙ্গী। সহজ-সরল ভাষায় এমন গল্প পাঠককে কল্পনার জগতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে বাধ্য।
একটি ভাইরাল দুঃস্বপ্ন, পুতুল এবং ঘুমদানো - এই তিনটি গল্পের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। আমার মতে বইয়ের সেরা গল্প এগুলো।
নিয়াজ ভাইয়ের প্রতি শুভকামনা রইলো। তার দক্ষ হাত ধরে এমন চমৎকার সব গল্প আসতেই থাকবে, এই বিশ্বাস অটুট থাকুক।
"নগরীতে সহস্র অট্টালিকা। অসংখ্য দরজা-জানালা আছে কিন্তু কোথাও কোনো মানুষ নেই। রাজপথের তপ্ত পিচে কোনো মানুষের ছায়া নেই। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক রিকশা, সেগুলোতে কোনো যাত্রী নেই। গলির মুখে টং দোকান আছে। কেতলিতে চায়ের বাষ্প আছে কিন্তু কোনো খদ্দের নেই। ভ্যান গাড়িতে লাল শাক, পটোল, কাঁচা মরিচ আছে কিন্তু দরদামের হাপিত্যেশ নেই। রাজপথ আর ফ্লাইওভারের প্রাণহীন শহরটাতে সে একা।" – নিয়াজ মেহেদী
তরুণ গল্পকার নিয়াজ মেহেদীর গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে নানা পরিস্থিতিতে মানবমনের বিচিত্র রূপ। ইংরেজিমাধ্যম পড়ুয়া এক কিশোরের রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের সঙ্গে পরিচয়, তার মা-বাবার দ্বন্দ্ব ঘিরে ঘনিয়ে ওঠে এক মর্মস্পর্শী পারিবারিক ড্রামা। কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী রাতের বাসে এক রহস্যময়ী সহযাত্রী তরুণীর নাটকীয় বদান্যতার মুখোমুখি হয় এক সরল-হৃদয় রোমান্টিক তরুণ। বাবার অসংযত আচরণের ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়লে বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয় তরুণী কন্যা। ঘুমবঞ্চিত কিশোর হোটেলকর্মীর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয় যৌন নির্যাতনের বিভীষিকাময় যন্ত্রণা।
এরকম অজস্র নাটকীয় ও রহস্যময় ঘটনায় গড়ে ওঠা গল্পগুলো উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। নিয়াজ মেহেদীর ভাষা সহজ, বর্ণনা প্রাঞ্জল; গল্প বলার কৌশল ও ভঙ্গি সাবলীল। তাঁর গল্পগুলোয় লোকজনের অনায়াস যাতায়াত নিরেট বাস্তব থেকে স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের অতিবাস্তবতায় ফেরি করে। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত নিয়াজ মেহেদীর বিস্ময়ের রাত বইটিতে মোট ১৫টি ছোটগল্প আছে।
ভিন্ন ধারার ১৫টি ছোট গল্প নিজেরাই নিজেদের নিজস্বতাকে বজায় রাখতে সম্ভব, তা খুব ভালোভাবেই টের পাওয়া গেছে। এই বইয়ের রিভিউতে আমি গল্পপ্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করিনি। তবে হ্যাঁ গল্পগুলো কেমন লেগেছে? বা লাগবে সে সম্পর্কে বিস্তারিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। ধ্রুব এষের প্রচ্ছদ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর মাওলা ব্রাদার্সের পেইজ, বাইন্ডিং বা আউটলুক নিয়েও নতুন করে কিছুই বলার নাই।
১) এক পোলার জবানিতে কওয়া হইছে পয়লা গল্প "দ্য ম্যান উইথ মিস্টিরিয়াস বিয়ার্ড"। পোলার মায়ে সংস্কৃতিমনা। সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথরে নিয়া অবসেসড ব্যাপক পরিমাণে। রবিবাবুরে নিয়া কিছু কইলে রণরঙ্গিণী হয়া যায়। দাঁড়িঅলা এই ব্রাক্ষ্ম হিন্দু বুড়া ঘর-সংসারের থিকাও বেশি প্রায়োরিটি পায়। পোলার বাপ প্রথমদিকে পশ্চিমা সভ্যতার পূজারী থাকলেও পরে ইসলামী ভাবধারার দিকে আকৃষ্ট হয়। আর তখনই লাগে ক্যাচাল। ক্ল্যাশ। অমুসলিম আর মুসলিম কালচারের মইধ্যে। এই ক্ল্যাশে পোলাডা ডিপ্রেশনে পইড়া কুপথে গিয়া আল্টিমেটলি নিজেরে শেষ কইরা দিবার চায়। তখনই রবিবাবু হ্যার ত্রাণকর্তা হইয়া তার কাছে ধরা দ্যান। এইখানে মূলত ইসলামের বিপরীতে অনৈসলামিক কালচারের জয় দেখানোর অ্যাটেম্ট নেয়া হইছে বলে আমি মনে করি। গল্পটার ভাষা জোর কইরা প্রমিত না কইরা পরিচিত কথ্য ভাষা ইউজ করার কারণে পোলাটার চরিত্রটা বুঝতে সুবিধা হইছে। লেখক এইটার জন্য অবশ্যই হাততালি পাইবেন।
২) 'যাত্রী' গল্পটা এক্কেরে ভুতের গল্পের ব্যকরণ মাইনা লেখা একটা গল্প। এক মাইক্রো ডাইভারের গল্প। এর বেশি কমু না। ভাল্লাগছে। ভাল্লাগছে উত্তরবঙ্গের ভাষার ব্যাবহারও।
৩) বিস্ময়ের রাত। এই গল্পটার নামেই সংকলনটার নাম। কোনো এক ট্যুর শেষে ফিরতি পথের গল্প এইটা। আ জার্নি বাই বাস। গল্পের নায়ক এক পার্ভাট পোলা, মাইয়া দেখলে হুঁশ থাকে না। বাসের এক মাইয়ারে চোখ দিয়া গিলতে থাকে হেয়। নায়কের বন্ধু সাকিব পোলাডার বাস্তব বুদ্ধি ভালা, সে নায়করে রিয়েলিটি চেক দেয়...মাইয়াবাজি করতে মানা করে। গল্পের লাস্টের টুইস্টটা ধরবার পারছিলাম মাঝামাঝিতে।
৪) পাহারা গল্পটা এক সন্তানহারা ব্রিজরক্ষকের। তার সন্তান সুইসাইড খাইছিলো প্রতারণার শিকার হইয়া। এই গল্পে ধাক্কা আছে, হালকার উপ্রে শিরকি এলিমেন্ট আছে, পোয়েটিক জাস্টিস আছে। গল্পের শেষে কন্টিনিউইটি আছে। উত্তরবঙ্গীয় টানের সংলাপ আছে।
৫) ট্যাবলেট গল্পটাও একটা বাস জার্নির গল্প। তয় এই জার্নি ২ নম্বর গল্পের লাহান বাস জার্নি লয়। লেখক গরম আবহাওয়ার বর্ণনা ভালো উপমা দিয়া দিছেন। আমাগো চিনা পরিচিত বাস জার্নির চিত্রটা বেশ ভালো ভাবে ফুটায়া তুলছেন। টুইস্টও আছে শেষে।
৬) চরপ গল্পটায় আজহারের চেয়ে বদিয়াকে আমার বেশি ইন্টারেস্টিং ক্���ারেক্টার মনে হইছে। তার বাপের চরিত্রটাও। ভাবের গল্প আছে। দুই সময়কার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রার ডিফারেন্সের কথা আছে। " বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ"। এই কথাটার মাহাত্ম্য ফুটে উঠছে গল্পে। টুইস্ট আর আঞ্চলিক ভাষা তো আছেই। সব মিলায়ে এনজয়েবল।
৭) ঘানি আগের ৬ টা গল্প থিকা পুরাই আলাদা। প্রাণীদের দিয়ে যেইভাবে লেখক ঘটনাটারে, মাইনষের মনস্তত্ত্বরে স্কেচ করছেন, সেইটা হাততালি পাওনের যোগ্য। এইটা সেরা।
৮) একটি ভাইরাল দুঃস্বপ্ন। একটা চমকের মধ্য দিয়া শুরু হইয়া একটা কোশ্চেন মার্ক রাইখা শেষ হইছে গল্পটা। ওপেন এন্ডেড। এইরকম এন্ডিং আমার ভাল্লাগে। পাঠক নিজের মতো ভাইবা নিতে পারে এন্ডিং। মুরাদুল ইসলামের কিছু গল্পের মতন। লেখক সাবে গল্পের মূল ক্যারেক্টারের মানসিক সিচুয়েশনটাও ভালো ফুটাইছেন।
৯) অন্তরাল একজন সরকারি কর্মকর্তার গল্প। অথবা সাদামনের লো লাইফ মাইনষের গল্প। গল্পটা নিরীহ কারো ত্রাস হইয়া উঠারও। নৃশংসতারও। তবে সব শেষে এইটা একটা আফসোসের গল্প।
১০)
একলা জোকার মঞ্চে হাঁটে মেকআপ নিয়ে দুঃখ ঢাকে চোখের কোণের এক ফোঁটা জল খুব যতনে লুকিয়ে রাখে আমি-তুমি-আমরা যারা দর্শক সারি দখল করে আমরাও তো দেখাই খেলা অন্যকোথাও, অন্যখানে হাততালি পাই এক-দু মিনিট জীবন কাটে মিছেয়, ভানে।
আমাদেরও একশো বিষাদ জাপটে ধরে একলা হলে একলা সময় মিথ্যে গায়েব জমাট বুকের বরফ গলে
এই দুনিয়ায় সবাই জোকার প্রিটেন্ড করি সুখী থাকার সুখ তো অধরাই থেকে যায় গড়ি শুধু ইগোর পাহাড়।
-বেন্যা বকুল
'পুতুল' নামের এই গল্পটা অসহায়ত্বের। যারা খেলা দেখায় অন্যরে নিজের হাতের পুতুল বানাইয়া...তারা নিজেরাও কারো না কারো হাতের পুতুল। এইটা একরকম আয়রনি।
১১) ঘটনার ভেতর ঘটনা থাকে। তার ভেতর আরো ঘটনা থাকে। তার ভেতর আরো। তার ভেতর...। পুরনো গল্পের বইয়ের ভেতর গল্প থাকে। আবার সেই বইটারও নিজের একটা গল্প থাকে। বইটা আগে যারা পড়েছেন বা যাদের কাছে ছিল, তাদের গল্প। 'মানিক' গল্পটা এমনই এক পুরনো গল্প সংকলন বইয়ের একটা গল্প, যে গল্প একজন অদ্ভুত বালককে নিয়ে। গল্পটা অতিপ্রাকৃত ঘরানার বলা যায়।
'ফেরা' একটা মফস্বলি প্রেমের গল্প। বলা ভালো, এক তরফা প্রেমের গল্প। রংপুরের হনুমানতলার দিকে যারা থাকতেন তারা ভালো রিলেট করতে পারবেন।
১৩) 'ঘুমদানো' গল্পের পটভূমির সাথে দূরপাল্লার যাত্রীরা কিছুটা পরিচিত। যাত্রাবিরতিতে থামা হোটেলের পটভূমি। কিন্তু এইটা আমাগোর পরিচিত পটভূমিতে একটু অপরিচিত গল্প। অসুস্থ লালসা আর অসহায়ত্বের গল্প।
১৪) গল্পের নামই যেহেতু 'বাস', সেহেতু এই গল্প যে বাস জার্নি নিয়াই সেইটা তো আর কওয়ার অপেক্ষা রাখে না। পরিচিত রাজধানীর রাইতের এক অপরিচিত, অতিপ্রাকৃত রুপ। ভয়ার্ত ছবি।
১৫) 'অনুজ' মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা হইলেও কোথাও গিয়া এইটা একটা ভ্রাতৃত্ববোধের গল্প।
এই বইটা নিয়াজ মেহেদীর দ্বিতীয় বই হইলেও উনি যে ম্যালা আগে থিকাই লেখালেখির মইধ্যে ছিলেন, চর্চাটা ছিল বেশ ভালোই...সেইটা গল্পগুলার বুনন, ম্যাচুরিটি, গল্প বলনের শৈলী দেইখাই আন্দাজ করা যায়। ভাষার ব্যাপারেও কোনোপ্রকার আপোষ করেন নাই লেখক। পটভূমি অনুযায়ী যেমন সংলাপ দরকার ছিল, যতটুক আঞ্চলিকতা দরকার আছিলো সবটুকই প্রয়োগ করেছেন। জোর কইরা প্রমিত ভাষা চালায় দ্যান নাই সংলাপে। যারা পড়ার সময় এই জেনারেশনের লেখকদের ছোটগল্প খুঁজেন আর যারা উত্তরবঙ্গ বিশেষ কইরা রংপুরের মানুষ বা ঐসকল জায়গার জন্য টান অনুভব করেন...তাগোরে স্ট্রংলি সাজেস্ট করুম এই বইটা।
বিস্ময়ের রাত এটি একটি গল্প সংকলন আমার পছন্দের তালিকায় এটাকে সবার শেষে রাখা যদিও।কারণ আমার মনে হয়েছে উপন্যাসে লেখকের যেমন হাত খোলে,ছোটগল্পে গিয়ে একটু discomfort টের পাওয়া যায়।আরেকটা কারণ হলো এটা ২৪ ঘন্টা ডিউটি চলাকালীন পড়ে শেষ করা,তাই এই বইয়ের সাথে সুখস্মৃতি জড়িত নেই আমার,তাই মতামত বায়াসড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু গল্পসংকলনের প্রাণ যেটা-বৈচিত্র্য,সেটা পুরোদমে বিদ্যমান।বইয়ের শুরুটাই হয় সাইকিয়াট্রিক গল্প "দ্য ম্যান উইথ মিস্টিরিয়াস বিয়ার্ড" দিয়ে,যেটা বইয়ের পছন্দের গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।তবে সবচেয়ে পছন্দের গল্প বলতে গেলে "যাত্রী" র নাম নিতে হবে।