এই ব্যাপারটা আমার ভীষণ অপছন্দের। ২০১৯ এ এসে, রোমেনা আফাজ যুগের শব্দের ব্যবহার বাজে লাগে খুব।
গল্প নিয়ে খুব খাটতে হয়নি লেখিকার। ইতিহাসের সাথে ১ চিমটি ফিকশান মিশিয়ে গেছেন (আর সেটা ভীষণ সেকেলে গন্ধযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে)। বলবেন না, প্রাচীন সময়টা ধরবার প্রয়াস ছিল সেটা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারা শংকর এখনও সমসাময়িক লাগে।
বইয়ের চেহারা খুব ভাল ছিল। খুব শিগগীরই লেখিকার আর কোন বই হাতে উঠছেনা, সেকেলে শব্দ ব্যবহার তাঁর স্টাইল হয়ে থাকলে, হয়তো আর কখনোই না।
জমজমাট প্লট ! কি নেই এতে ইতিহাস, থ্রিলার, মিথোল্জী - সব আছে ! ঘটনা এতই প্রবাহ নিয়ে এগিয়েছে, যে এক বসায় শেষ করে ফেলা যায়, তেমন কোন ভুল চোখে পরে নাই - শুধু ৯৩ নাম্বার পেইজের ১০ নাম্বার লাইনে - রোমের মাটিতে আজ যা ঘটেছে বিগত তিনশো বছরেও এমন "অনাথ" ঘটেনি, এখানে "অনাথ" এর পরিবর্তে খুব সম্ভবত "অনর্থ " হবে !
মূল গল্পটি এগিয়েছে সায়মন নামে এক সাধারণ যুবকের অসাধারণ অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে- এই অভিজ্ঞতার ভেতরে আছে মহামান্য সিজারের দরবারে প্রবেশ, টাইম ট্র্যাভেল , দেবীর অভিশাপ গ্রস্থ হয়ে হারিয়ে যাওয়া নিজের ভুখন্ডেই ! অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে ইসাবেলের সাথে তার অদ্ভুত কিন্তু নিষ্পাপ ভালবাসা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে আগ্রহ ধরে রাখতে, এমনকি শেষ হবার পরেও আক্ষেপ রয়ে গেলো - আহা, এমনটা না হলেও হতো !!
যাই হোক অসম্ভব ভালো লেগেছে, অবশ্যই সুখপাঠ্য ! লেখিকার জন্য শুভকামনা, আশা করি উনি সাইমনকে নিয়ে আরো লিখবেন । ধন্যবাদ এত ভালো একটি ইতিহাস/ মিথলজী ভিত্তিক থ্রিলার উপহার দেবার জন্য !
কখনও কী আপনার অতীতে ফিরতে ইচ্ছে করেছে? হাজার বছরের পুরনো অতীতে? ইন্দ্রজাল অতীতে ফেরার একটি মায়াময় গল্প। ইন্দ্রজাল সময়ের কিংবা মায়ার জালে আটকে পড়ার গল্প। কী নেই বইটিতে? রহস্য, রোমাঞ্চ, প্রেম, ইতিহাস, দর্শন, মিথ— সব মিলিয়ে কলমের নিখুঁত আঁচড়ে অঙ্কিত এক অনন্য অসাধারণ আখ্যানের নাম ‘ইন্দ্রজাল’।
কাহিনি সংক্ষেপ :
গল্পের শুরুটা বিখ্যাত রোমান প্রত্নতত্ত্ববিদ সায়মনকে দিয়ে। বিশেষ কোনো ব্যক্তি নয় সে। প্রত্নতত্বের অনুসন্ধানী অতি সাধারণ যুবক। গ্রিসে এসেছে প্রত্নতত্ত্বের অনুসন্ধানে। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো একটি জিউস মন্দিরে বহু প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন বিরাজমান। অনেক বাঁধা ডিঙিয়ে মন্দিরের তলদেশ থেকে একটি বাক্স উদ্ধার করে সে। বাক্সের ভেতর পায় ব্রোঞ্জ নির্মিত, মূল্যবান ধাতু দিয়ে কারুকার্য খচিত একটি দরজা। মোহগ্রস্ত এক দরজা! যে দরজার কাছাকাছি হলেই মাথা ঝিমঝিম করে। আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করে প্রাচীন এই দুয়ারটিকে!
দরজার ভেতর দিয়ে সময়ের ফাঁদে পা বাড়ানো। ‘ইসাবেল’ নামক একটি মহামায়ার সাথে জড়িয়ে যাওয়া। মায়ার জাল বিচ্ছেদ করে, সময়ের জাল ভেদ করে সায়মন কী ফিরতে পারবে তার সময়ে? নাকি আটকে থাকবে জুলিয়াস সিজার কিংবা অগাস্টাস সিজারের শাসনামলে?
পর্যালোচনা :
সায়মন চরিত্রটিকে যেন মহাকালের প্রতীক হিসেবে আঁকা হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন তার হৃদয়কে বিদীর্ণ করে রেখেছে। অযাচিতভাবে ছুটছে এক মায়ার পেছনে। গভীর ইন্দ্রজালে আটকে গেছে সে। লেখিকা চরিত্রটি এঁকেছেন বেশ বিচক্ষণতার সাথে। যার প্রমাণ মেলে শেষ পৃষ্ঠার শেষ লাইনগুলোতে। অনুসন্ধানী এ যুবক যে দরজার সন্ধান পায়, পুরনো বই ঘেটে জানতে পারে এটি প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির জীবনের সাথে জড়িত। অতীত ভ্রমণের এক রোমাঞ্চকর গল্প জড়িয়ে আছে দরজাটির সাথে। সেও অতীতের ফাঁদে পড়ে যায়। একাকীত্ব তাকে গ্রাস করে। “তার এই একাকীত্বের কথা কেউ জানে না। কেউ দেখতে পায় না তার শান্ত চেহেরার আড়ালে বিষাদগ্রস্ত আত্মাটাকে।”
ধূসর অতীতে সায়মনকে পরিভ্রমণ করিয়ে ইতিহাসের যে সত্য বর্ণনা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে সেটিও প্রশংসার দাবি রাখে। জুলিয়াস সিজারের শাসনামল, বিশ্বস্তদের বিশ্বাসঘাতকতা, জুলিয়াস সিজারকে হত্যা, অগাস্টাস সিজারের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা এবং তাঁর হাত ধরে এক নতুন রোমের সূচনা, রোমের স্বর্ণযুগের উত্থান। লেখিকা বর্ণনার দক্ষতায় ঠিক সেই সময়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন সূক্ষ্মভাবে।
ইসাবেল শ্বাস রুদ্ধ করে রাখা মায়াময় একটি চরিত্র। এই মনে হচ্ছে মরে যাবে, এই ধর্ষিত হবে, এই মেরে ফেলা হবে, এই সায়মনের বুকে লেপটে রবে.... কিন্তু শেষপর্যন্ত হয় কী? খুব জানতে ইচ্ছে করে টোবায়েসরা ইসাবেলকে কী করে? কিন্তু কখনও জানা হবে না। এই জানতে চাওয়ার ইচ্ছেটুকু বোধকরি লেখিকার পরিপক্বতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। বার বার চোখ ছলছল করা অনুভূতি জাগিয়ে তোলা ইসাবেল যেন স্বয়ং প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি! সায়মন নামের অতি সাধারণ যুবকটির প্রেমে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। কিন্তু সায়মনকে সে প্রেম কিছুতেই স্পর্শ করে না। নাকি গভীর স্পর্শে বুক থেকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না তাকে? না হয় মনে মনে সায়মন কেনো বলে, “তোমার মায়াবী চাহনিতে যে তীক্ষ্ণতা রয়েছে; তাতে আমি হাজারবার খণ্ডিত হয়ে যাই।”
প্রতিক্রিয়া :
ইন্দ্রজাল একটি শ্বাসরুদ্ধকর গল্প। গভীর ঘোরে আটকে আছি এখনও। যে ঘোর কাটছে না কিছুতেই! এই ধরণের গল্প খুব কমই পড়া হয়েছে। কীভাবে এমন গল্প বলা যায়? লেখিকার দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা আর সুনিপুণতার এক অনন্য স্বাক্ষর ইন্দ্রজাল। এখনও ফিরতে পারছি না সেই পাহাড় থেকে, যেখানে তীর বিদ্ধ এক নিষ্পাপ আত্মা। ফিরতে পারছি না সেই সময় থেকে, যেখানে ইন্দ্রজাল তার মায়ার জালে আটকে রেখেছে ভেতরটাকে। পলক পড়ছে না প্রচ্ছদে থাকা সায়মনের মায়াময় নিষ্পলক চোখজোড়া থেকে। যেন বার বার সায়মন আওড়িয়ে যাচ্ছে—
“আমি একজন খ্রিস্টান। কিন্তু এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে এখনও জেসাসের আগমন ঘটেনি। ভবিষ্যৎ বলতে পারি আমি। না, আমি কোন জ্যোতিষী কিংবা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। আমি সায়মন, অতি সাধারণ এক যুবক। জড়িয়ে গেছি এক জালে। যার নাম ইন্দ্রজাল।”
মূলত বইটি শেষ করে ফ্ল্যাপের এই লেখাগুলো অনেকবার পড়েছি। তাই আবার সংযোজন করে দিলাম এখানে। কী দারুণ কথাগুলো! গল্পটি শুরু করার কিছুক্ষণ পরই পাঠক বুঝতে পারবেন ফ্ল্যাপের এই লেখাগুলোর মর্মার্থ।
রোমান উপনিবেশিক প্রেক্ষাপটে রচিত লেখিকার কাজগুলোকে বলা যায়, বাংলাসাহিত্যে এক নতুন ধারার সংযোজন। পৌরাণিক কাহিনির এইসব গল্প লেখিকা যথোপযুক্ত শব্দের গাঁথুনি দিয়ে অসম্ভব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলেন। শব্দের সম্মোহনীতে হাজার বছরের সেই পুরনো দিনগুলোতে আপনি চলে যেতে বাধ্য হবেন। সহজ-সরল অথচ শক্তিশালী বর্ণনায় কালো হরফের শব্দগুলো আপনার কল্পজগতকে এতো গভীরভাবে আলোড়িত করবে যে, মনের অজান্তে কখন আপনি সেইসব দিনরাত্রিতে ঘুরে বেড়াবেন— টেরই পাবেন না। আমি বলব, এটি জিমি হাইসনের লেখার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাস হচ্ছে না? ‘ইন্দ্রজাল’ হাতে নিয়ে বসে পড়ুন। আপনার সময় এবং অর্থ কোনোটাই অপচয় হবে না বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
বইয়ের কথা :
নাম : ইন্দ্রজাল (হাজার বছরের পিছুটান) লেখক : জিমি হাইসন প্রকাশনী : ঐতিহ্য প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ বিক্রয়মূল্য : ১৮৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৪০
ভালোবাসার জন্য মানুষ কতদূর যেতে পারে? কী কী করতে পারে? এমনকি দেব-দেবীরাও! তারাও কখনো কখনো রেহাই পায়না এই "প্রেম" নামক মায়াজালের হাত থেকে... কিন্তু, ভালোবেসে কি অতীতেও চলে যাওয়া সম্ভব? হাজার বছর পেছনে?....
#কাহিনী সংক্ষেপ : সায়মন—একজন সুদর্শন, তরুণ রোমান প্রত্নতত্ত্ববিদ গ্রীসে আসে নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়। এসে জানতে পারে প্রেমের দেবি আফ্রোদিতি আর মানুষ শিকারীর করুণ প্রেম কাহিনী,দেবতা জিউসের বরে পাওয়া অদ্ভূত দুয়ারের কথা — অভিশপ্ত দুয়ার। ভাগ্যক্রমে একদিন সেই দুয়ার দিয়ে সাইমন চলে যায় তার জন্মভূমি রোমে। কিন্তু তার সময়ের থেকে হাজার বছর পেছনে; জুলিয়াস সিজারের শাসনামলে। কিন্তু, কেন যাবে? কীভাবে? কার টানে? কী এমন অপেক্ষা করছে সেখানে সায়মনের জন্য? দেবতার ক্রোধের অভিশাপ? নাকি জন্মের পর জন্ম ধরে বয়ে বেড়ানো পরিনতি না পাওয়া কোনো প্রেমের যন্ত্রণা? আদৌ কি কখনো ফিরতে পারবে আর সায়মন নিজের সময়ে? নাকি আজীবনের মত আটকে যাবে সময়ের জালে? তার ইতিহাস জ্ঞান কি কোনো প্রভাব ফেলবে তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে? ঠেকাতে পারবে কি জুলিয়াস সিজারের মর্মান্তিক মৃত্যু?.....
#পাঠ প্রতিক্রিয়া: নতুন লেখকদের বই পড়তে গেলে সবসময় একটা ভয় কাজ করে । এই বইটাও একটু ভয়ে ভয়েই শুরু করেছিলাম। কিন্তু কয়েক পেজ পড়তেই আমি মুগ্ধ! প্রথম দিকে প্রেমের দেবীর কাহিনী পড়তে পড়তে বারবার হেনরি রাইডারের "রিটার্ন অফ শী" এর কথা মনে পড়ছিল। ফ্ল্যাপে লেখা না থাকলে হয়ত বুঝতেই পারতাম না এটা কোনো মৌলিক লেখা! লেখিকা খুব সুন্দর,সাবলীলভাবে বর্ণনা দিয়ে গেছেন মূল কাহিনীর সাথে পারিপার্শ্বিক ঘটনাগুলোর ও। সময় সংক্রান্ত বইগুলো সাধারণত খুব একটা পড়া হয় না। কেমন যেন জট পাকিয়ে যায় মাথায় খুব বেশিক্ষণ এ ধরনের বই নিয়ে ভাবতে গেলে। এ বইয়ের ক্ষেত্রেও এরকম একটা ঘোর কাজ করেছে। তবে বলব, এই ঘোরের স্বাদটা পাওয়ার জন্য হলেও পড়া উচিত বইটা৷ সেইসাথে জুলিয়াস সিজার আর তার পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা, সে সময়ের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রসহ রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণাও পেয়েছি। আর সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সায়মন আর ইসাবেলার পবিত্র প্রেম মুগ্ধ করবে যে কোনো মানুষকেই। সব মিলিয়ে অসম্ভব রকম ভালোলাগার একটা বই।
হাজার বছরের পিছুটান যে প্রেমের মোহে হারিয়ে যাবে সেটা কে জানত? লুপ না টাইম ট্রাভেল এই রহস্য বরং আপনাদের জন্য থাক। শুধু বলব ইতিহাসের পাতায় কী ঘটেছিল সেটা নিজ থেকে জানতে চাইলে অথবা মানসনেত্র দিয়ে অনুধাবন করতে চাইলে ❛ইন্দ্রজাল❜ উপন্যাসিকা আপনাকে পরিপূর্ণ তৃপ্ত দিতে বাধিত করবে। সায়মনের সাথে আপনিও ঘুরে আসতে পারবেন খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের প্রাচীন রোম সভ্যতা থেকে। যেখানে গনতন্ত্র থেকে রাজ্যতন্ত্র নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখছিল স্বয়ং জুলিয়াস সিজার। এরপরে রোমের ইতিহাস হয়তো সবার জানা, কিন্তু সায়মনের চোখে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখে হৃদয়ে যে ঘোড়দৌড় শুরু হবে কে জানত। সে ঘোড়দৌড়ের সাথে পাল্লা দিয়েছে প্রেমের হাওয়া; যার মোহে আবিষ্ট হয়ে পড়েছিল সায়মন। ভুলে গিয়েছিল যে আটারো শতাব্দীতে তার জন্ম; অপেক্ষার প্রহর গুনে যাচ্ছে তার পিতা-মাতা!
উঠে এসেছে গ্রিক দেবি আফ্রোদিতির ইতিহাস। যে আফ্রোদিতিকে রোমের মানুষরা ভেনাস নামে চিনত। সে আফ্রোদিতির ইতিহাসের মোহে নিজেকে আবদ্ধ করতে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক সায়মন নিজেই বন্দি হয়ে পড়েছে ইন্দ্রজালে...
আমার কাছে ৩ স্টার মানে চলে আরকি টাইপ। খুবই সাধারণ একটা প্লটে লিনিয়ার ভাবে বর্ণনা করা গল্প। শুরুর দিকে একেবারেই ঘেঁটে গিয়েছিলো তবে তা আস্তে আস্তে একটু উন্নতির দিকে গিয়েছে। সব মিলিয়ে এ বই না পড়লেও কিছু যাবে আসবে না।
বাই দি ওয়ে, ভাষা যতই এক হোক, ১৮০০ বছরে কি বাচনভঙ্গী এতটাই অল্প পার্থক্য যে কেউ ধরতেই পারলোনা? নায়েস তো।
*দেবী আফ্রোদিতি, এডোনাইস,গহীন অরণ্য,অনাকাঙ্খিত দুয়ার,পাপ,পবিত্রতা,প্রেম, শাস্তি,আলোকবর্ষ.... এবং আরো কিছু শব্দ।
এটা যেনো কোনো বই না৷ সময়ের সৃষ্টি করা একটি ধাধা। উপন্যাসের মুলচরিত্র সায়মন,একজন তরুন প্রত্নতাত্ত্বিক ; নতুন কিছু আবিস্কার করার আশা নিয়ে পারি জমায় গ্রীসে। নিষেধের বেড়াজাল টপকে সে পেয়েও যায়; কিন্তু পাওয়াটাই হয়ে দাঁড়ায় কাল। টাইমট্রাভেলের সাথে মিথোলজি,প্রেম, ইতিহাস মেশানো তাও মাত্র একশ চল্লিশ পৃষ্ঠার বইয়ে সত্যিই খুব দুঃসাধ্য। যতটা সহজে আমি ভাল না লাগাটা পরিষ্কার করে বলতে পারি, সেভাবে ভাল লাগার বইগুলো নিয়ে নিজের অনুভূতি ঠিক মত প্রকাশ করতে পারি না। বইয়ের শেষে আমার মন খারাপ হয়েছিল,খালি খালি লেগেছে,বিস্মিত হয়েছি আমি। এটাই বোধয় লেখিকার লেখনীশক্তির অদ্ভুত পরিচয়৷ নিজের অজান্তেই সায়মনের মতই ইশ্বরকে বলেছি "ইশ্বর ইসাবেল কে বাঁচাও"।
প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেয় জানা নেই আমার তবে এটুক বলতে পারি বইটির ব্যাপকতা অনেক, এবং তার চেয়েও গভীর এটি নিবিড় ভাবে পাঠের সুখানুভূতি। থ্রিলারের ভিন্ন দুনিয়াতে নিয়ে নতুন বিস্ময়ে মুগ্ধ করে রাখার জন্য ধন্যবাদ লেখিকার অবশ্যই প্রাপ্য।
বইয়ের নাম - ইন্দ্রজাল লেখিকা - Jimee Hison মুদ্রিত মূল্য- ২৫০ টাকা প্রকাশকাল- বইমেলা ২০১৯ রেটিং- ৪.৫/৫
পড়ে শেষ করলাম #ইন্দ্রজাল। হাজার বছরের পিছুটান........।
কি লিখবো বুঝতে পারছিনা। আগে রেটিং দেই ? উমমমম... ৫ এ ৫ দেওয়া যায় !
লেখিকার বড় বড় বই দেখতাম আর মনে মনে গালি দিতাম এত বড় বই লেখার কি দরকার ? ছোট লিখলে আমি কিনতে পারতাম। আমার গালি শুনেই হয়তো লেখেছিলেন এই ছোট বই।
ছোট বইটা পড়ে মনে হচ্ছে বড় গুলো অবশ্যই পড়তে হবে। কি চমৎকার গল্প। বিশ্বাস ই হচ্ছিল না লেখিকা আমাদের দেশি। মনে হচ্ছিলো অনুবাদ বই পড়ছি।
রোমান ইতিহাস সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছি ছোট্ট বই থেকে। ইতিহাস থেকেও যেটা বেশি আমার ভালো লেগেছে সেটা হলো রোমান্টিকতা। এটা একটা প্রেমের উপন্যাসও। আহা কি প্রেম !
সেদিন নাজিম এর রবি বাবু আসেননি পড়ে মেজাজ খারাপ ছিল। কারণ সব পুরুষকে তিনি ধর্ষণক বানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু এই বইটা পড়ে মনে হলো পুরুষ এমনই ভালো ও হয়। নাজিমকে এটা পড়তে দেওয়া উচিত। উনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারলেও অনেকেই পারে।
উমমমম হেনরি রাইডার হেগার্ড এর ���ী সিরিজের কিছুটা স্বাদ পায়েছি।
ইতিহাস এবং রোমান্টিক যাদের ভালো লাগে তারা অবশ্যই পড়বেন। ভালো লাগা গেরান্টি। ইকটু চেখেই দেখেন বইটি।
অমর দেবী আফ্রোদিতি প্রেমে পড়েছিলেন মরনশীল অ্যাডোনিসের। অনেক বাধা পেরিয়ে তাদের প্রেম সফলও হয়েছিল। এরপর বহু বছর আফ্রোদিতি এবং অ্যাডোনিস একসাথে স্বামী –স্ত্রীর মতোই সময় কাটালেন। তারা একসাথে শিকারে যেতেন, গল্প করতেন- কত কী! কিন্তু সুখতো চিরস্থায়ী নয়! তাদের এ প্রেমে হিংসে হয় দেবী পার্সিফোনির। তিনি আফ্রোদিতির আরেক প্রেমিক যুদ্ধবাজ দেবতা অ্যারিসকে বললেন, “অ্যারিস, তোমার আফ্রোদিতি আর তোমার নেই! সে এখন এক মরণশীলের কব্জায়”। একদিন আফ্রোদিতি কোনো একটি কাজে দূরে কোথাও গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে অ্যাডোনিসকে বন্য হিংস্র জন্তু শিকার করতে নিষেধ করে গিয়েছিলেন। কিছু একটা তিনি সন্দেহ করেছিলেন বটে! আর সেদিনই এলো সেই ভয়ংকর দিন। পার্সিফোনির কথা শুনে রাগে, ক্ষোভে, ঈর্ষায় অ্যারিস এক ভয়ংকর সুন্দর বন্য শুকরের ছদ্মবেশে অ্যাডোনিসের সামনে এলেন। এই ভয়ংকর সুন্দর বন্য শুকরটিকে দেখে অ্যাডোনিস আফ্রোদিতির নিষেধ বাণী ভুলে গেলেন। তিনি বন্য শুকরটি শিকারে মত্ত হয়ে গেলেন। আক্রমন করলো শুকরটি, ধারালো দাঁত দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললো অ্যাডোনিসকে। অ্যাডোনিস আর্তনাদ করে উঠলেন। সেই সময়ে আকাশপথে আফ্রোদিতি তার কাজ শেষ করে অ্যাডোনিসের দিকেই আসছিলেন। তিনি দূর থেকেই শুনলেন অ্যাডোনিসের করুণ আর্তনাদ, আফ্রোদিতি ঝড়ের গতিতে এলেন অ্যাডোনিসের কাছে। অ্যাডোনিসের তখন শেষ সময়, দেবী চুমু দিলেন অ্যাডোনিসের তুষার শুভ্র কপালে, চুমু দিলেন ঠোঁটে, কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী অ্যাডোনিস তা বুঝতেও পারলেন না। মৃত অ্যাডোনিসকে আফ্রোদিতি জীবন দিতে পারেননি, কিন্তু জীবন্ত অ্যাডোনিসের সাথে আগের মতোই প্রেম করে গিয়েছিলেন আরো অনেক বছর.!!! কিন্তু কিভাবে???
রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজার রোমান রিপাবলিক নামক ছোট নগর রাষ্ট্র থেকে গড়ে তুলেছিল বিশাল রোমান প্রজাতন্ত্র। শক্তি, সাহস আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন আশেপাশের বহু অঞ্চল আর সামরিক শক্তিতে হয়ে ওঠেন অদ্বিতীয়। তিনিই ছিলেন একমাত্র রোমান জেনারেল যিনি রোমান সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন ইংলিশ চ্যানেল ও রাইন নদী পর্যন্ত এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডেও অনুপ্রবেশ করেন। তবে এতো সাফল্য আর শক্তির অধিকারী হয়েও তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়!... কেনো???
ভুল সময়ের অসহায় প্রেমে কবি বলেছিলেন, "তোমাকে দেখলে ইচ্ছে করে, শুরু থেকে শুরু করি আমার জীবন..."। হ্যা, ঠিক এভাবেই জীবন থেকে যা হারিয়ে যায়, তার জন্য আক্ষেপ আমাদের চিরকালের। আমরা ভাবি, যদি আরেকবার সুযোগ পেতাম, তিল তিল করে শুধরে নিতাম অতীতের সব ভুল। আসলে কি আমরা পারতাম? যদি শুরু থেকে শুরু করা যেতো, তবে কি শুধরানো যেতো অতীতের সব ভুল?? আমরা কী ইতিহাসকে বদলে দিতে পারতাম???
প্রতিটা প্রেম ই মানুষকে দেয় নতুন জীবন। নতুন জীবন পেয়ে তখন মনে হয়, এই সমগ্র জীবনটা বড্ড ছোট! ভালবাসার জন্য প্রয়োজন অনন্ত জীবন। আচ্ছা কেমন হতো বিধাতার দেয়া সেই অনন্ত জীবন? কতটুকু প্রেমে মানুষ লাভ করে অনন্ত জীবন??
আমাদের মনের এই সব প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেই কন্টক পথ পাড়ি দিয়েছে উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র। সাধ করে নিয়েছে গরল পেয়ালা, বর্শা হেনেছে বুকে...
ইসাবেলের জন্য অদ্ভুত মায়া হচ্ছিলো আমার। কারো কারো জীবন যেমন চোখের জলে শুরু হয়ে চোখের জলে শেষ হয়, তেমনি জীবন ইসাবেলের। হঠাৎ একটা মুহূর্তে তার মনে হয়, " স্বর্গের তোরণদ্বারটা নিশ্চয়ই এখন খোলা! সেই উন্মুক্ত তোরণদ্বার দিয়ে হয়তো ভালবাসার দেবী ভেনাস মর্ত্যলোকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। তা না হলে এ রকম স্বর্গীয় মুহূর্তের সৃষ্টি হতো না।" অথচ তার এ অনুভূতিও মিথ্যে হয়ে যায়। তবুও... সবচে কালো রাত্রিটির পরও আবার সূর্য উঠে। তেমনি উজ্জ্বলতম সূর্যটি ইসাবেলের আকাশ রাঙ্গিয়ে দিক... এই কামনা।
আর সায়মন? অগণিত বার এক ভয়ংকর ভবিষ্যৎ যার কাছে বর্তমান হয়ে ধরা দিয়েছে সেই অভিশপ্ত, আশীর্বাদ প্রাপ্ত কিংবা ভেসে যাওয়া ব্যাক্তিটি সায়মন। কোন সুখের বৃষ্টিই যেনো তাকে ছুঁতে পারেনা, যে বৃষ্টিতে সুর ছিলো, ছিলো ছন্দ। কিন্তু সেই সুরে কান পাতেনা সায়মন। উদ্বেলিত হয়না সেই ছন্দেও। সেই সুযোগও ছিলোনা তার। পায়ে বাধা তার অদৃশ্য শেকল....
বইটা পড়তে গিয়ে রাজা সিনাইরাসের ভাগ্য বিড়ম্বিত সুন্দরী কন্যা স্মার্নার নিষিদ্ধ আসক্তিতে পড়ে ভীষণ ই অসহায় ভাবে বলা কথাটি খুব মনে পড়ছিল। সে বলেছিল- “মানব সভ্যতা বিদ্বেষপূর্ণ বিধান রচনা করেছে। প্রকৃতি যা অনুমোদন করে, ঈর্ষান্বিত বিধান তা নিষেধ করে”। সত্যিই তো! ধরুন , আপনি যাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসেন, যে আপনাকে ছাড়া সত্যিই বাঁচবেনা, তার সাথে যদি ঘর বাধতে চান তবে চিরতরে বিসর্জন দিতে হবে আপনার পরিবারকে! তখন আপনার কেমন অনুভূতি হবে? নিশ্চই চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হবে, এতো নিয়ম কেনো পৃথিবীতে? কেনো এতো বিধান?? চিরকাল আমরা যা চাই, তা কেনো পাইনা???
হ্যা, এই বইটি এমনি এক ইন্দ্রজাল, যেখানে অদ্ভুতভাবে একাকার হয়ে গেছে ইতিহাস আর মিথলজি। আপনি যেমন অনায়াসে একে বলতে পারবেন মিথোলজিক্যাল থ্রিলার, তেমনি হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার বললেও অত্তুক্তি হবে না। কিংবা সব ভুলে খুব গোপনে আপনি এই বইয়ের নাম দিয়ে দিতে পারেন "জন্মান্তর রহস্য"।
ইতালির বেতিবুপ থ্রি স্টুডিওর করা প্রচ্ছদটি আমার কাছে অসাধারণ না লাগলেও খারাপ লাগেনি। সময়ের কাগজ ফুড়ে বেড়িয়ে এসেছে দুটি চোখ। বাদামী চোখটিতে পড়েছে উজ্জ্বল আলো। কালো চোখটিতে পড়েছে ছায়ার আড়াল।তবে দুটি চোখেই দেখলে মনে হয়,- "এ মর্ত্যলোকটা আসলে দুঃখের প্রতিচ্ছবি। ঈশ্বর এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানব সম্প্রদায়কে। তারপর তার সৃষ্টিকে সীমাহীন দুর্দশায় পতিত হতে দেখে হয়তো এক ধরনের সুখ অনুভব করেন তিনি।"
আর আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, তাতে ঐতিহ্য'র কোন বইয়ের পেজ, প্রিন্টিং, বাইন্ডিং নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না। তেমনি এই বইটিও প্রিন্টিং, বাইন্ডিং এর দিক থেকে নিখুঁত, কাগজ হিসেবে ভার্জিন রেজিন অফসেট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে এবং আমার অসতর্ক দৃষ্টি কোন বানান ভুল খুজে পায়নি। আমার ব্যক্তিগতভাবে খারাপ না লাগলেও শুরু থেকেই অনেক পাঠককে দেখেছি লেখিকার সাধু ভাষা ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আশা করি লেখিকা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
সবশেষে বলতে চাই, আমি যে ধরনের বই পড়তে ভালবাসি, বইটা যেনো ঠিক তেমন ই। মিথলজি আর ইতিহাস যেন নিপুণভাবে গাথা হয়েছিল কলমের সুতোয়। পানিতে ঢিল ছুড়লে তা যেমন তলদেশে পৌঁছবার দ্রুততম পথটা বেছে নেয়, তেমনি উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই প্রত্যেকের জায়গায় ছিল গতিশীল। এটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মতো বই, এটা রুদ্ধশ্বাসে শেষ করার মতো বই। এক মায়াভরা বেদনামাখা অতৃপ্তির নাম "ইন্দ্রজাল"।
মোটামুট��, গল্পের প্লট ভালো, মিথলজিকে টেনে ভালোই গল্প সাজিয়েছেন। এক বসায় শেষ করার মতো বই। সায়মন এর অন্তদ্বন্দটাতেই পাঠক আটকাবে। সর্বাপরি ভালো লেগেছে।
বইটা পড়লাম। যতটা আশা রেখেছিলাম ততটা পায় নি। বইটার নাম আর ভূমিকা দৃষ্টি কেড়েছিল। সেজন্যই নেয়া। বইটিকে থ্রিলার ভেবে ভুল করেছিলাম। থ্রিলার ধরানার বইয়ের মধ্যে এটি পড়ে না। বইয়ে প্রেম, ইতিহাস, মিথোলজির ব্যাপক এলিমেন্টস রয়েছে। এক বসাতেই বইটি শেষ করলেও কেন জানি আমার তৃষ্ণা মেটাতে সমর্থ হয় নি এই বই। এর সিকুয়্যাল 'ইন্দ্রজাল২' এবার বইমেলাতে বেড়িয়েছে। এখনো সন্দিহান দ্বিতীয় খন্ড টা কিনব কি না।
ছোট করে বইয়ের কাহিনীটা লেখছি।
ঘটনাটা ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের। রোমান যুবক সায়মন, এক তরুণ প্রত্নতত্ত্ববিদ রোম থেকে গ্রিসে এসেছে কিছু অসাধারণের খোঁজে। প্রাচীন জিউস মন্দিরের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এসে সে খুঁজে পায় এক গুপ্ত দূয়ার। এ দূয়ার যে সে দূয়ার নয়, বর্তমান থেকে অতীতে যাবার দূয়ার। স্বয়ং দেবী আফ্রিদিতির ব্যবহার করা দূয়ার। তীব্র কৌতূহল আর অজানাকে জানার ব্যাপক আগ্রহ নিয়েই সায়মন ঢুকে পড়ে সেই অলৌকিক দূয়ারে আর এর সাথেই শুরু হয় তার টিকে থাকার লড়াই। প্রায় দেড়শ যুগ পূর্বে ফিরে এসে সময়চক্রে আটকা পড়ে সায়মন। নিজের মা বাবার কাছে ফেরার শত চেষ্টাও ব্যর্থ হয় তার। সময়ের মারপ্যাঁচে এটকে থাকে সায়মন। নিজের জন্মভূমের যে ইতিহাস পড়ে সে বড় হয়েছে তা নিজের চোখে ঘটতে দেখে সে। তার চোখের সামনে রচিত হচ্ছে ইতিহাস যা তার আগে থেকেই জানা। কোনোভাবেই নিজ সময়ে ফিরবার উপায় ঠাওরাতে না পেরে যখন প্রচন্ডভাবে হতাশ সায়মন, ঠিক তখনই তার সাথে দেখা হয় ইসাবেলের। বিষণ্ণ অতীতের এই জীবনে ইসাবেলেই সায়মনের একমাত্র ভালো লাগা আর এক মাত্র কারণ যা তাকে বলে অতীতেই থেকে যাই। কিন্তু পরমূহূর্তেই চোখে ভেসে ওঠে নিজ সময়ে থাকা চিন্তিত বাবা-মা 'র প্রতিচ্ছবি। এত স্বার্থপর তো সে হতে পারে না। পারবে কি সায়মন সময়ের মায়াজাল ভেদ করে সেই অতীত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে? নাকি বর্তমান সময় হতে প্রায় আঠার শতাব্দী পেছনে সে থেকে যাবে ইসাবেলের জন্য?
রিকমেন্ডেশন লেভেলঃ মডারেট।
This entire review has been hidden because of spoilers.
সায়মন নামক এক খ্রিস্টান যুবকের বার বার বর্তমান থেকে একই কালের আবর্তনে ফিরে যাওয়ার কাহিনী এবং সেই কালের মধ্যে তার নীরব প্রেম নিয়ে রচিত হয়েছে ইন্দ্রজাল! সায়মন একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং শখের চিত্রকর। সে গ্রিসে প্যাগানদের মন্দিরের তলদেশে প্রত্নতত্ত্বের খোঁজে গিয়ে বারবার নিজের কঙ্কাল আবিষ্কার করে এবং সেই সাথে দেবী আফ্রোদিতির কাল ভ্রমণের অভিশপ্ত দুয়ার! যে দুয়ারটি শুধুমাত্র পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার সময় খোলা যায়। সায়মন এই বিষয়টি জানতো না, কিন্তু সে যেদিন দুয়ারটি খোলার চেষ্টা করেছিল সেদিন পূর্ণিমা ছিল। যার ফলে দুয়ারটি খুলে যায় এবং সায়মন সেই দুয়ারে প্রবেশ করে সিজারের সময়কালে। নতুন পরিস্থিতিতে তাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়। সে প্রথমে তার স্বর্ণের লকেট বিক্রি করে অর্থ জমায়৷ যাতে সে গ্রীসে গিয়ে অভিশপ্ত দুয়ারটি খুলে বর্তমানে চলে যেতে পারে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে সে আবার রোমে চলে আসে। সেখানে চিত্রকর হিসেবে কাজ করতে থাকে। একদিন নারীদের স্নানাগারের চিত্র আঁকতে গিয়েই পরেন বিপাকে! গুপ্তচর হিসেবে তাকে বন্দী করে সিজারের নিকট নেওয়া হয়। সিজার তার আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়ে তার স্ত্রী কালপূর্ণিয়ার ছবি আঁকিয়ে নেয়। এরপর থেকে প্রায় রাজভিলা থেকে তার ডাক আসতো। সায়মনের মাথায় শুধু বর্তমানে ফিরে যাওয়ার চিন্তা খেলা করতে থাকে। কিন্তু তার এই চিন্তার ব্যাঘাত ঘটাতো ইসাবেলা নামক এক রমণী! ইসাবেলাকে তার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিল। ইসাবেলার বাবার ধার পরিশোধের মাধ্যমেই ইসাবেলা আর সায়মনের মধ্যে পরিচয় ঘটে। এর আগে শুধু দুজনের দেখা হতো, তাও সায়মন ইসাবেলাকে অনুসরণ করার ফলে। সায়মন যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রাখতো। একই ছাদের নিচে থেকেও কখনো গভীর প্রণয়ের কথা জানায়নি ইসাবেলাকে। এভাবেই একদিন সায়মন আবিষ্কার করে ফেলে বর্তমানে কীভাবে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু ইসাবেলার নির্বুদ্ধিতার ফলে অনেকগুলো সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়! শেষপর্যন্ত সায়মন কী সব প্রতিকূলতা পার করে পেরেছিল তার সময়ে ফিরে যেতে নাকি প্রতিবারের ন্যায় আবারও ইন্দ্রজালে আটকে গেছে সেটা জানার জন্য পড়ে ফেলতে হবে জিমি তানহাবের ইন্দ্রজাল বইটি।
This entire review has been hidden because of spoilers.
সায়মন, উনিশ শতকের প্রথম দিককার একজন চিত্রকর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক। এক অমূল্য প্রত্নসম্পদ পাওয়ার আশায় গ্রীসের পথে পা বাড়ায় সে। কিন্তু সে সম্পদের সাথে সাথে সে সময়ের এক চক্রে জড়িয়ে পড়ে, যা নিয়েই বইটা বাকি অংশটি লেখা।
ইন্দ্রজাল বইটা কিছুটা হিস্টোরিক্যাল ফিকশন, কিছুটা মিথোলজি আর বাকিটা রোমান্টিক জনরার মিশ্রণ। হিস্টোরিক্যাল ফিকশন হওয়ায় গ্রীসের সেই সময়কালের কিছু প্রভাবশালী চরিত্রদেরও গল্পে দেখতে পাওয়া যায়। বইয়ের প্লট প্রথমদিকে বেশ আকর্ষণীয় মনে হলেও শেষে গিয়ে একেবারে ওয়ান ডাইমেনশনাল হয়ে গিয়েছে। এছাড়া মূল দুই চরিত্র সাইমন আর ইসাবেল ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো গল্পে তেমন কোন স্পেস পায়নি, তার ভেতরে সায়মনের টানাপোড়েনের পার্টটা সবথেকে ভালোভাবে লেখা হয়েছে। সময়কাল হিসেবে বইয়ের লেখনশৈলী এবং সংলাপ সেকেলে ধাঁচে লেখা হয়েছে, যা পছন্দ/অপছন্দের ব্যপারটা পাঠকভেদে পরিবর্তিত হবে। আর প্রোডাকশনের দিক থেকে বইটা ভালোই, তবে প্রচ্ছদটি খুব একটা মনে ধরেনি। যারা হিস্টোরিক্যাল ফিকশনের সাথে হালকা রোমান্স ঘরানার বই পড়তে পছন্দ করেন তাদের অবশ্য বেশ ভালো লাগতে পারে বইটা।
কাহীনী সংক্ষেপঃ গল্পের শুরু ১৮১২সালে গ্রিসে।বিখ্যাত রোমান প্রত্নতত্ত্ববিদ সায়মন কে ঘিরে ��ড়ে উঠে গল্পের প্রেক্ষাপট। প্রত্নতত্ত্বের অনুসন্ধানী এক সাধারন যুবক। সুদূর রোম থেকে গ্রিসে এসেছে প্রত্নতত্ত্বের সন্ধানে। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরোনো প্রাচীন জিউসের মন্দিরের প্রত্নতত্ত্ব উদ্ধার তার উদ্দেশ্য।যদি হাজার বছরের পুরোনো কিছু উদ্ধার করতে পারে সে ইতিহাসে নাম তুলে ফেলবে রাতারাতি। কিন্তু জিউসের মন্দিরের প্যাগান পুরোহিতদের বুঝিয়ে মন্দিরে প্রবেশে ব্যর্থ হলে তাকে মন্দিরে প্রবেশের জন্য অন্য পথ খুঁজতে হয়। একদিন রাতের অন্ধকারে সে সবার আড়ালে প্রবেশ করে মন্দিরের গুপ্তপথে। মন্দিরের তলদেশে খুঁজে পায় একটি বাক্স।বাক্স হতে সে হাতে পায় ব্রোঞ্জ নির্মিত, বিভিন্ন কারুকার্য খচিত এক দরজা। যেই দরজায় মোহগ্রস্ত হয়ে যায় সায়মন। এরই মাঝে খাদে একদিন একটি কংকাল খুঁজে পায় সে।প্রায় ১৫০০বছর আগেকার সেই কংকাল!
ব্রোঞ্জের সেই দরজার কাছাকাছি এলেই যেনো সায়মনের মাথা ঝিমঝিম করে!কেন? কথিত আছে এই দরজা দিয়ে অতিতে যাওয়া যায়।দেবী আফ্রেদিতি এই দরজা দিয়ে অতিতে যেতে পারতেন।অজানাকে জানার জন্য দোটানার মধ্য দিয়ে দরজায় পাড়ি জমায় সায়মন। পৌঁছে যায় অতীতের এমন এক সময়ে তখনো জন্ম নেয়নি যিশু!চারদিকে প্যাগানদের জয়জয়কার। যখন বর্তমানে ফিরে আসার জন্য পথ খুঁজতে থাকে তখনই তার দেখা হয় অনিন্দ্য সুন্দরী "ইসাবেলের" সাথে।তার মহামায়ায় যেন বন্ধী হয়ে যায় সায়মন! পিতার মৃত্যুর পর দরিদ্র ইসাবেলের পাশে ছায়া হয়ে পাশে থাকে সায়মন।কি এক মায়ায় যেন ইসাবেলের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেনা সে। এরই মাঝে ঘটতে থাকে একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা। সেই মায়া আর সময়ের জাল ভেদ করে সায়মন কি ফিরতে পারবে তার সময়ে? নাকি আটকা পড়বে জুলিয়াস সিজার কিংবা অগাস্টাস সিজারের শাসনামলে?
পরিশিষ্টঃবার্ধ্যক্য তাকে কখনোই আলিঙ্গন করতে না পারলেও মৃত্যু আলিঙ্গন করেছে বারেবার।বারংবার মৃত্যু যেনো ইসাবেল কে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে।আর তার পুরো শরীর নির্জন পাহারের খাদে সময়ের ব্যবধানে কঙ্কালে পরিনত হয়।
আলোচ্যঃ সায়মন চরিত্রটি যেন মহাকালের প্রতিক বয়ে বেড়াচ্ছে।মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়নের বিদীর্ণ হৃদয় নিয়ে সে ছুটে চলেছে এক মায়ার পিছনে।লেখিকার সুনিপুন হাতের যেন চরিত্রটি আলাদা প্রান পায়। অনুসন্ধানী এই যুবকের খোঁজে পাওয়া দরজার আড়ালে রয়েছে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির অতিতে চলে যাওয়ার রহস্য। অযাযিতভাবে সায়মন নিজেও অতীতের ফাঁদে পড়ে যায়।চলে যায় প্রায় আঠারোশো বছর আগে!
ধূসর অতীতে সায়মন ভ্রমন কালে ইতিহাসের সত্য ঘটনা লেখিকা তুলে ধরেছেন বেশ বিচক্ষণতার সাথে। জুলিয়াস সিজারের শাসনামল,বিশ্বাসঘাতকতা, জুলিয়াস সিজারের হত্যাকান্ড,অগাস্টাস সিজারের বেড়ে উঠে রোমের শাসন ব্যবস্থা হাতে তুলে নতুন সভ্য রোমের উত্থানের প্রায় সবটাই লেখিকা খুব সুন্দর ভাবে অল্পকথায় প্রকাশ করেছেন।
ইসাবেল কে দিয়ে লেখিকা যেনো কৌশলে গল্পে নতুন মোড় আনেন।ইসাবেলক্র যেনো গল্পের অনন্য এক চরিত্র হিসেবে প্রকাশ করেন। এই বুঝি সে বিপদে পড়ল,এই বুঝি তার মৃত্যু অনিবার্য, আবার কখনো সায়মনের প্রেমে মত্ত...... খুব জানতে ইচ্ছে করে টোবায়েসরা শেষ অবধি ইসাবেলের কি করে।হয়তো কখনোই জানা হবেনা।পাঠক হৃদয়ে এর জানার তৃষ্ণা জাগিয়ে রেখে লেখিকা গল্পের গভীরতা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ইসাবেলের মধ্যে যেনো প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি এর রুপ দেখতে পাই।সময়ের আবহে সে সায়মনের প্রেমে পড়ে।সায়মন কি তাকে ভালোবাসে? নাকি মায়াজাল কাটিয়ে উঠার তাড়নায় বার বার নিজের আবেগকে হৃদয়ে চাপা দেয়! "তোমার মায়াবী চাহনিতে যে তীক্ষ্ণতা রয়েছে; তাতে আমি হাজারবার খণ্ডিত হয়ে যাই।”সায়মনের মনে মনে বলা এই কথাগুলো ই পাঠককে সঠিক উত্তর জানিয়ে দিবে।
প্রতিক্রিয়াঃ ইন্দ্রজাল এক শ্বাসরুদ্ধ কর ইতিহাস নির্ভর অতীত উপাখ্যান।বইটি পড়ে যেনো।একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছি।কিছুতেই সেই ঘোর কাটতে চাইছে না।ইন্দ্রজাল পড়ে পাঠক লেখিকার বিচক্ষণতার পরিচয় নতুন করে পাবে। ইন্দ্রজাল লিখতে গিয়ে যে লেখিকা রোম আর গ্রিস সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছেন তা পাঠল ইন্দ্রজাল পড়া মাত্রই বুঝতে পারবে।নিঃসন্দেহে এই জন্য লেখিকা প্রশংসার দাবী রাখেন। বেশ মুগ্ধ হয়ে পড়েছি মায়াজালের এই উপাখ্যান। তবে বেশ কিছু জায়গায় পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলেও লেখিকা পুরো বইয়ে যেনো তা পুষিয়ে দিয়েছেন।হয়তো অজ্ঞতার কারনে বুঝতে পারিনি.....তাই মায়াময় "ইন্দ্রজালে"তেমন কোন ত্রুটি পাইনি বললেই চলে। তাই পাঠক সানন্দে বইটি পড়তে পারেন।বইটি পড়ার সাথে সাথে নিজেকে অতীতে আবিষ্কার করতে না পারলে দারুন এক অনুভূতির সৃষ্টি হতে বাধ্য পাঠকের।
বিঃদ্রঃ রিভিউটি শতক পাঠাগার- Shatak এর সরলেখা ম্যাগাজিন২০২০ এ প্রকাশিত হয়েছে।
সারসংক্ষেপ: সময়টা ১৮১২ খ্রিস্টাব্দ। গ্রিস, কাভালো বন্দর। রোম হতে আগত একটি জাহাজ এসে নোঙর করল। কাঠের সিঁড়িতে একে একে নামতে শুরু করেছে যাত্রীরা। সবার শেষে নামল সুদর্শন এক তরুণ। বংশপরম্পরায় পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে প্রত্নতত্ত্বকে। তরুণটির নাম সায়মন। শুনেছে, সানাতারিও অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার বছর পুরোনো এক জিউস মন্দিরের নিচে এবং তার আশেপাশে প্রত্নতত্ত্ব নির্দশন রয়েছে। তবে প্যাগান পুরোহিতদের উপস্থিতিতে সেখানে অনুসন্ধান চালানোটা প্রায় অসম্ভব।
তবে সায়মন হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। পুরোহিতদের কাছে অনুমতি নিতে গিয়েও যখন খালি হাতে ফিরল তখন সে ঠিক করল, কোনোভাবেই সে খালি হাতে ফিরবে না। কিছু কিছু নিয়ে যাবেই হোক সেটা পুরোহিতদের অগোচরে।
মধ্যরাতে মন্দিরের তলদেশের দেখা পাওয়া মাত্রই মশাল বানিয়ে ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল সায়মন। তলদেশের ভেতরকার দেয়ালে দেখা মিলল ল্যাটিন ভাষায় লিখিত প্রায় মুছে যাওয়া এক শ্লোক। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কিছু শব্দই শুধু বোঝা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই সে আবিষ্কার করল একটি বিশাল বাক্স বাক্সের ভেতর রয়েছে একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত দরজা। দরজাই সাথে শোভা পাচ্ছে দরজাটি খোলার চাবি। তেমন কিছু না ভেবে ভারী বাক্সটা নিয়েই রওনা দিল সায়মন।
বাক্স বন্দি হয়ে পড়ে থাকা প্রাচীন সেই অভিশপ্ত দুয়ারের অভিশাপ সাধারণ সেই যুবক সায়মনের জীবনকে এক মুহুর্তেই এলোমেলো করে ফেলে। বদলে যায় সবকিছু। এক নিমিষেই বদলে যায় সময়। হাজার বছরের পিছুটানে আটকে পড়ে এক গভীর জালে। যার নাম 'ইন্দ্রজাল'।
সায়মন কি শেষমেশ পারবে এই মূর্তিমান অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসতে? নাকি অপেক্ষা করছে আরও ভয়ংকর কিছু? জানতে হলে পড়ুন, লেখিকা জিমি তানহাবের ইন্দ্রজাল সিরিজের প্রথম বই "ইন্দ্রজাল: হাজার বছরের পিছুটান"।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া: বইটা পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল মূলত বইটির পাঠকপ্রিয়তা দেখে। লেখিকার লেখনশৈলী হতে শুরু করে বইয়ের প্লট, বইয়ের প্রডাকশন সব নিয়েই একটা পজিটিভ ভাইবস দেখেছি। আরেকটা বিষয় ছিল যেটা আমার আগ্রহ তৈরি করেছে। আর তা হচ্ছে, উপন্যাসটি ইতিহাস আশ্রিত। আমি সবসময়ই বলি, ইতিহাস নিয়ে আমার আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। সুতরাং, সবমিলিয়ে বইটি পড়লাম।
লেখিকার লেখার সঙ্গে এই বইয়ের মাধ্যমেই আমার প্রথম পরিচয়। পূর্বে আমি তার কোনো বই পড়িনি৷ তার লেখার ধরনটা ইউনিক বলা যায়। নিঃসন্দেহে লেখার হাত ভালো। আগামীতে তার আরও কিছু বই পড়ার ইচ্ছে আছে।
একটানা পড়ে শেষ করার মতো একটি বই। তবে বইটা নিয়ে আমার এক্সপেকটেশন বেশি হয়ে গিয়েছিল সম্ভবত। এতো হাই এক্সপেকটেশন থাকায় কিছুটা হতাশ হয়েছি৷ স্টোরিলাইন আমায় খুব বেশি টানেনি বা আকর্ষিত করতে পারেন। আহামরি কিছুই মনে হয়নি বরং সাধারণ লেগেছে।
"ইন্দ্রজাল" শব্দটির অর্থ হচ্ছে, জাদুবিদ্যা। যদিও উপন্যাসে কোনো জাদুকর বা জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই তবুও উপন্যাসের মূল যে বিষয়টি সেটি ঘটেছে অনেকটা ম্যাজিকের মতোই। এছাড়া "ইন্দ্রজাল" শব্দের আরেকটি অর্থ আছে তা হচ্ছে, বিমোহিত করা বা মায়া, মায়াজাল। এই অর্থটার দিক থেকে চিন্তাভাবনা করলে বইয়ের শিরোনাম একদম ঠিক আছে।
যেহুতু এটি একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস সেহুতু বেশকিছু ঐতিহাসিক চরিত্রের দেখা মিলেছে, উপন্যাসে। জুলিয়াস সিজারের শাসনামলের একটি চিত্র ফুঁটিয়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন লেখিকা।
ক্যারেক্টর ডেভেলপের ব্যাপারে বলতে হলে, ওটায় বেশি সময় লাগাননি। ধরতে গেলে, সরাসরি মূল কাহিনিতে ঢুকে গেছেন। যেহুতু বইটি ��কারে ছোট সে হিসেবে ঠিক আছে।
বইয়ের প্রডাকশন সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমরা কমবেশি সবাই ঐতিহ্যের প্রডাকশন সম্পর্কে ধারণা রাখি। এককথায় অসাধারণ। পেজ, বইয়ের বাঁধাই সবই ভালো হয়েছে। তবে প্রিন্টিং নিয়ে আমার একটু অভিযোগ আছে। সেটি হলো, কিছু কিছু জায়গায় কিছু কিছু শব্দের প্রিন্ট ঠিকভাবে উঠেনি। ফলে শব্দগুলো অস্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া ঐতিহ্যের একটি জিনিসই শুধু অসহ্যকর। আর তা হচ্ছে, বইয়ের ভেতরকার মলাটটা। বাজে অবস্থা থাকে সেগুলোর। জ্যাকেট খুলে আলাদা করার পর দেখলে মনে হয়, অনেকদিন যাবত রোদে পুড়ে পুড়ে সেটির রঙ উবে গেছে!
বানান ভুল নেই বললেই চলে। বইটির প্রুফ রিডিং কাজে যিনি নিয়োজিত ছিলেন তাকে একটা বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই এজন্য। সম্পাদককে বিশেষ ধন্যবাদ। বইয়ের সম্পাদনাও চমৎকারভাবে করেছেন।
জিমি তানহাব এর ইন্দ্রজাল-১ পড়ে শেষ করলাম অনেকটা এক বসাতে। অনেক দিন পর কোনো বই এক বসায় পড়লাম৷ কারণ ইদানিং ফিকশন জাতীয় লেখা কম পড়া হয়। পাঠক হিসেবে আমি উন্নত মানের নই। তাই লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে গেলে হাত কাঁপে। তারপরেও একটা পাঠ-প্রতিক্রিয়া দেয়া উচিত কারণ বইটাতে লেখিকার অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম, একটা আলাদা আবেগ আছে।
প্রথমত জিমি তানহাব এর লেখার সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হালকা করে সাহিত্যিক-পাঠক পরিমন্ডলে যাওয়া আসার সুযোগ হয়। সেভাবেই কোনো এক ভালো পাঠকের টাইমলাইনে লেখিকা সম্পর্কে মন্তব্য পাই ' নিঃসন্দেহে তিনি এই সময়ের একজন সেরা গল্পকার। আজকের তার সাথের ছবিটার মূল্য ১০ বছর পরে বুঝবেন।' এই ঘটনাও কয়েক বছর আগে। কিন্তু তারপরেও জীবন ছোট অনেক ভালো বইই তো পড়া হয় নাই৷ এই কথা ভেবেই আমরা নতুন লেখকদের উঠতে দিই না। সত্য বলতে ভেবেছিলাম কালের স্রোতে ইদানিং অনেকেই বই বের করে এও তেমনই একজন৷ কিন্তু ইন্টারনেট ঘেটে দেখলাম তার একটা ভালো ফ্যান-ফলোয়ার আছে। এপার বাংলা, ওপার বাংলায় দুজাগাতেই তার বেশ সমাদর। নিজে ক্ষুদ্রু পাঠক বলেই বিচারে আমার ভুল ছিল।
লেখিকার রূপে মুগ্ধ হয়েই এবং তার পাঠকদের নানান রিভিউ পড়ে বেশ কৌতুহল জাগে৷ ঠিক করলাম তার বই পড়ব। ফেসবুক মারফত জানতে পারলাম তিনি বইমেলায় আসবেন। তার অটোগ্রাফ নেয়ার সুযোগটাও লুফে নিলাম। তিনি ও তার লেখা খুবই সুন্দর। লেখা যেহেতু পরে পড়েছি তাই ব্যক্তিকে নিয়েই আগে বলি, তার সব থেকে বড় গুণ সম্ভবত তার বিনয়।
এবার লেখায় আসি। ছোট বেলায় সেবা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া অনেক 'ওয়েস্টার্ন' পড়তাম। প্রথম প্রথম মনে হচ্ছিল এটা ওই ধারার লেখার অনুকরণ। অনুকরণ কথাটা আমি ছোট করে ব্যবহার করতে চাইছি না। অনুপ্রাণিত বললে বোধ হয় ভালো হয়। উপন্যাসের ধারাটাই তো পশ্চিমাদের থেকে তথা ব্রিটিশদের থেকে আমরা শিখেছি। আর হুমায়ুন আহমেদের অনুকরণ করে অনেক লেখককে ফুলে ফেঁপে বড়ও হতে দেখছি কবছর ধরেই। সেখানে জিমি তানহাবের লেখা ব্যতিক্রমধর্মী। অনেক দিন বাদে খুব পরিচিত লেখকদের বাদে, নতুন ( বা তথা কথিত নতুন অর্থাৎ আমার না জানার কারণে নতুন) কারো লেখা পড়ে বেশ নড়েচড়ে বসতে হয়েছে। ইন্দ্রজাল -১ এর ফ্ল্যাপে লেখা কথা গুলোর চৌম্বকীয় শক্তি আছে। ভেতরে ঢুকলে প্রতি পাতায় থ্রিল পাওয়া যায়। প্রতিটা দৃশ্য যেন কল্পনা করেও মজা। একদম যেন সিনেমার প্লট। একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এর অভিজান কিভাবে অলৌকিক ভাবে মোড় নেয় তার সাথে প্রেম, বিচ্ছেদ সব কিছুর সুন্দর মিশেল। লখিকার গ্রীক ও রোমার মিথোলজিতে বেশ দখল সাথে ইতিহাসেও। কিভাবে কাহিনীর মধ্যে সুন্দর করে ব্যবহার করা যায় তাও তিনি দক্ষতার সাথে দেখিয়েছেন। মোটের উপর একটা ফিউশনধর্মী রান্নার মত লেগেছে বইটা যেটা খাওয়ার পর তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যায়। বই এর ক্ষেত্রে হয়ত ঢুকুর তোলা যায় না কিন্তু বই শেষে বন্ধ করে কিছুক্ষণ মলাটে চেয়ে থাকা লাগে। হ্যা এটা তেমনই বই। ট্রাইএঙ্গেল নামে একটি সিনেমা দেখেছিলাম সেখানে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে অদ্ভুত ভাবে। ইন্দ্রজাল-১ এর শেষের কথা গুলো আমাকে ঐ সিনেমা কথা মনে করে দিল। উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট সাইমনের কি একই ঘটনা বার বার ঘটছে? আমি আগ্রহ নিয়ে বসে আছি দ্বিতীয় খন্ড পড়ার জন্য।
জিমি তানহাব অবশ্যই মৌলিক একজন লেখক। পাঠকের মন ছুয়ে লিখতে পারলে পাঠকের 'ডে-জা-ভু' হয়; অতীতে পড়া বই, দেখা চলচ্চিত্রের সাথে মিল খুজতে চেষ্টা করে। এটা লেখিকার ক্যারিশমা বলেই আমি মনে করি৷
বই এর ভেতর কি আছে তা আর বলতে চাইছি না। স্পয়লার হবে। যারা লেখাটা পড়ছেন তারা বইটা পড়ে দেখতে পারেন। কিছুটা সময় ভালো যাবে।
তার অধিকাংশ বই না পড়েই অনুমান থেকে বলছি হয়ত বেশিরভাগ লেখার স্থান কাল বৈদেশিক ও প্রাচীন। তার লেখনীতে আমার দেশ আমার সময় কেমন ভাবে ফুটে ওঠে তা দেখতে মন চায়। পাঠকের এর আবদার নিশ্চয় তিনি পূরণ করবেন।
জিমি তানহাবকে অনেকে হেররি রাইডার হ্যাগার্ড এর সাথে তুলনা করেন। আমি তুলনায় বিশ্বাসী না। আমি জানি জিমি তানহাব সাহিত্যে নিজস্ব জায়গা করে নেবেন আরো শক্ত ভাবে। লেখিকার জন্য শুভকামনা। তার পাঠকদের জন্যও শুভেচ্ছা। তার ফ্যানদের তালিকায় নিজের নাম লিখে সৌভাগ্যবান মনে করছি নিজেকে।
'এটা আমার সময় নয়। আমি এ সময়ের বাসিন্দা নই। হে ঈশ্বর! তুমি তো সর্বসময়ের। আদিতে অন্তে সবসময়ই তুমি বিরাজমান। সময়ের ফাঁদ থেকে আমাকে রক্ষা কর ঈশ্বর!' এটা ছিল জেসাসের প্রতি এক সুদর্শন যুবক 'সায়মন' এর হৃদয় চেড়া হাহাকার মিশ্রিত প্রার্থনা। কিন্তু হায়! যে সময়ে দাঁ��়িয়ে সায়মন জেসাসের প্রতি তার প্রার্থনা নিবেদন করছে সেই সময়ে তো জেসাসের আবির্ভাবই হয়নি পৃথিবীতে! এ কিভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর 'কালভ্রমণ' বা কোন 'ইন্দ্রজাল'। অর্থ্যাৎ এক সময় থেকে অন্য সময়ে গমন। যাকে আমরা বলে থাকি Time travel. কিন্তু কি সেই কালভ্রমণের পন্থা? এজন্য আমাদের যেতে হবে গ্রীক পূরাণে। ভালবাসার দেবী 'আফ্রোদিতি' প্রেমে পরেন এক সাধারন মানব 'এডোনাইস' এর। এডোনাইস ও সাড়াদেয় আফ্রোদিতির প্রেমে। তারা মিলিত হতে থাকে গহিন অরণ্যে। কিন্তু মরণশীল মানব এডোনাইট ঢলে পরে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কোলে। আর এই মৃত্যু শোকে উন্মাদপ্রায় আফ্রোদিতিকে তার পিতা 'জিউস' উপহার দেয় এক আশ্চার্য ব্রোঞ্জের দুয়ার। যার তালা খুলে আফ্রোদিতি প্রতি পূর্ণিমা রাত্রে অতীত ভ্রমণে যেতো, আর মিলিত হত এডোনাইস এর সাথে। কিন্তু আফ্রোদিতির স্বামীর অভিযোগে, আফ্রোদিতির মাতা 'হেরা' তাকে এই কালভ্রমণে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু সেটা অমান্য করে আফ্রোদিতি আবার কালভ্রমণে বের হলে হেরা অভিশাপ বর্ষণ করে। ফলে, আফ্রোদিতি আটতে যায় তার অতীতে। পিতার অনুগ্রহে আফ্রোদিতি পুনরায় স্বর্গে ফীরে আসলেও সেই ব্রোঞ্জের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায় চীরতরে। শোনা যায় দুয়ারটি গ্রিসের কোন প্যাগান মন্দিরের তলদেশে সুরক্ষিত রয়েছে। সায়মন, সেই ব্রোঞ্জের দুরায় দিয়েই কালভ্রমনে আঠার'শ বছর অতীতে চলে যায়! ফেঁসে যায় এক ইন্দ্রজালে! কিন্তু কীভাবে? একজন প্রত্নত্ত্ববিদ হিসেবে সায়মন জানতে পারে গ্রীসের এক মন্দিরের তলদেশে কিছু লুকানো আছে। তারই অনুসন্ধানে রোম থেকে গ্রীসে আসে সায়মন। মন্দির পুরোহিতরা তাকে অনুসন্ধানের অনুমতি না দিলে, গোপনে রাতের অন্ধকারে সে মন্দিরে তলদেশে প্রবেশ করে আর খুঁজে পায় সেই ব্রোঞ্জের দুয়ার। অজান্তে সেই দুয়ার দিয়েই সায়মন চলে যায় কালভ্রমণে! চলে যায় আঠার'শ বছর অতীতে! সময়কাল, জুলিয়াস সিজারের। আটকে যায় সে এক ইন্দ্রজালে! অন্যদিকে, অদ্ভুত কালচক্রে আটকে যাওয়া সায়মন মাঝে মাঝেই জেগে উঠে এক নারীর চীৎকারে। দুঃস্বপ্নে। কে এই নারী? কেনইবা সায়মনের কাছে বড়ই চেনা লাগে এই নারীর কণ্ঠস্বর! এদিকে, অতীতে এসে নিজ গুনে সিজারের রাজসভায় চিত্রকরের কাজ পেয়ে যায় সায়মন। আপাতত বেঁচে থাকার মত কিছুটা উপায় হলো সায়মনেন। তখনি পরিচয় হয় ইসাবেলার সাথে। উত্তাল রোম। বিশ্বাসঘাতকতা, ক্ষমতা দখল আর দ্বন্দ্বের রোষে জ্বলছে রোম। খুন হয়েছে জুলিয়াস সিজার। এর সবকিছুই তো সায়মনের জানা। কারন সে এসেছে ভবিষ্যৎ থেকে। ইসাবেলার হাত ধরে পালাতে শুরু করে সায়মন। কিন্তু এতসহজে? কালচক্র থেকে কি বের হতে পারবে তারা? নাকি জড়িয়ে পরবে আরেক কালচক্রে! নাকি সৃষ্টি করবে এক লুপ! যেখানে বারংবার সায়মন ফীরে আসবে অতীতে! বারংবার দেখা হবে ইসাবেলার সাথে! বারংবার অনিশ্চিত পথে ছুঁটে পালাবে তারা! মুক্তি পাবে কি এই ইন্দ্রজাল থেকে! পাঠ প্রতিক্রিয়া: প্রথমেই বলবো, অসম্ভব ভাল একটা বই। এক বসাতেই শেষ করেছিলাম। মিথ, ইতিহাস, ফিক্সন, রোমান্টিকের এর অনবদ্য সংমিশ্রণ 'ইন্দ্রজাল'। আমি রোমান্টিক ঘরানার লেখ একদম পড়ি না, তবুও বলবো এই ভঙ্গিতে যদি শুধু রোমান্টিক প্লটেই লেখা হত, তবুও পড়ে মুগ্ধ হতাম। জিমি আপুর লেখার প্যাটান টাই এমন। আরেকটা বিষয় নজর কেড়েছে, সেটা হলো প্রতিটি অধ্যায়ের বিভিন্ন পরিচ্ছেদ গুলোর ছোট ছোট বিন্যাস। এজন্যই বোধ করি এক বসাতে পড়ে শেষ করতে পেরেছি। imagery, diction, lucid language, Dramatic irony hyperbola 'র মত কাঠখোট্টা শব্দগুলোর প্রয়োগেও যদি উপন্যাস টা বিচার করি, আমার বিশ্বাস কোন অংশেই কম না লেখিকার লেখনি। অথবা বিন্দু পরিমান বাড়াবাড়িও করেন নি লেখিকা। তবে, nothing is perfect এর মত ছোটখাট কয়েকটি ছোটখাট বিষয়ে একটু আশাহত আমি। এটা আমার ব্যাক্তিগত পাঠ অনূভুতি। যেমন: প্রথমেই উপন্যাসের চরিত্র বিশ্লেষন করতে গেলে দেখা যাবে, সমগ্র উপন্যাসে কেবল 'সায়মন' ই। বলতে গেলে, দ্বিতীয় কোন প্রধান চরিত্র চোখে পরে না। এইদিক থেকে আরও কয়েকটি প্রধান চরিত্র আনা যেত পারতো। আর, যেহেতু ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ছিল তাই সিজার বা অন্য কোন চরিত্রটাকে আরও স্পেস দেওয়া যেত পারতো। আরেকটি দুর্বল দিক হচ্ছে, ইতিহাস নির্ভর হলেও ঐতিহাসিক বিষয় বস্তু বা ঘটনার বর্ননা একটু কম থাকা। ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত মূলক আরেকটু ঘটনা যুক্ত করলে বইটা আরও বেশি রিচ হতো। যদিও লেখাটি ঐতিহাসিক না, তবুও প্লটে যেহেতু ইতিহাস এসেছে তাই এমনটা মনে হলো। ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ বরাবরই আছে আমার, এজন্য আরও বেশি আশা করেছিলাম। ঘটনার আকস্মিকতা বইটার অনেক বড় একটা দূর্বল পয়েন্ট, এটা বলতেই হবে। বর্তমান সময়ের অনেক লেখকের লেখায়, ঘটনা অযথা টেনে লম্বা করার প্রবণতা থাকলেও জিমি আপুর লেখায় ঘটেছে ঠিক উল্টো! কয়েকটি বিশেষ স্থানে ঘটনার আকস্মিকতা সত্যিই চোখে পরে। তবে, এগুলো আমার একান্তই ব্যাক্তিগত মতামত। সর্বোপরি একজন পাঠক হিসেবে বলতে পারি, সামান্য কিছু বিষয় (যেগুলো আমার ব্যাক্তিগত) ইগনোর করলে একটি ভাল বইয়ের সঙ্গায় যা কিছু বলা প্রয়োজন তার সবটাই আছে 'ইন্দ্রজাল' বইটাতে। বইটা পাঠের অনুভূতি অন্য আট-দশটি বই পাঠের থেকে ভিন্ন এবং নিঃসন্দেহে বলতে পারি অন্যতম একটা সেরা পঠিত বই 'ইন্দ্রজাল'।
বই : ইন্দ্রজাল - হাজার বছরের পিছুটান লেখক : জিমি তানহাব
কাহিনী সংক্ষেপ- উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র সায়মন বিখ্যাত রোমান প্রত্নতত্ত্ববিদ। বংশপরম্পরায় এ পেশায় নিয়োজিত হওয়া সায়মন হাজার বছরের প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধানে পাড়ি জমায় গ্রিসের কাভালোতে। তিন হাজার বছরের পুরনো জিউস মন্দিরের তলদেশে খুঁজে পায় বাক্সবন্দী হয়ে থাকা ব্রোঞ্জ নির্মিত একটি দরজা। যেটিকে দেখলেই অন্যরকম এক মোহে আকৃষ্ট হয়ে যায় সে। শক্ত হাতে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করে। একসময় সেই দরজা দিয়েই প্রবেশ করে সময়ের ইন্দ্রজালে। ফিরে যায় আঠারোশ বছর অতীতে জুলিয়াস সিজারের সময়ে। সেখানে খুঁজে পায় অপরূপ সুন্দরী ইসাবেলকে। আস্তে আস্তে জড়িয়ে যেতে থাকে তার মহামায়ায়। অতীতের মায়া কাটিয়ে সায়মন কি ফিরতে পারে তার সময়ে???
পাঠ প্রতিক্রিয়া- ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসগুলো বরাবরই প্রিয়। এরসাথে কিছু পৌরাণিক কাহিনী যুক্ত করলে সেটি হয় আরও আকর্ষণীয়। "ইন্দ্রজাল" উপন্যাসে তারই প্রমাণ দিয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত লেখিকা জিমি তানহাব। এ গল্পের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় প্রাচীন রোম শহরে। কল্পনার ক্যানভাসে চিত্রায়িত করা যায় ইসাবেলের অপরূপ সৌন্দর্য, জুলিয়াস সিজারের রক্তাক্ত দেহ, অগাস্টাস সিজারের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোমান শাসক হয়ে ওঠাসহ আরও অনেক ঘটনা। গল্পের শেষটায় অনেকেরই মনে হতে পারে "ইস! শেষ না হয়ে আর কিছুক্ষণ চলতো!" সর্বোপরি বইটা খুব ভালো লেগেছে। সময় করে আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে।
ইন্দ্রজাল : হাজার বছরের পিছুটান লেখক- জিমি তানহাব প্রকাশনী- ঐতিহ্য পৃষ্ঠাসংখ্যা- ১৪০ মলাটমূল্য- ২৫০ টাকা
ইতিহাস আর মিথলজি নির্ভর একটি উপন্যাস এটি। সেই সাথে রয়েছে খুবই আকর্ষণীয় এক এলিমেন্ট।
কাহিনীর মূখ্য চরিত্র সায়মন। ঘটনাপ্রবাহে, সায়মনের সাথে ঘটে যায় খুব আকর্ষণীয় এক ঘটনা। তারপর সেই ঘটনাচক্রে ইসাবেল নামক এক অপরূপ সুন্দরী নারীর সাথে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকেই কাহিনীর মূল বিষয়ের সাথে ডিল করতে থাকে চরিত্রটি।
যেহেতু অবাঞ্চিত কোন কথা নেই এবং ঝরঝরে ধরনের বাচনভঙ্গি সেহেতু সময় হাতে থাকলে একবসাতেই শেষ করে ফেলার মত।
প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং দুটোই চমৎকার। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই৷ বানান ভুল নেই বললেই চলে, দুই তিন যায়গায় চোখে পরেছিল।
বিভিন্ন যায়গায় এটা পজিটিভ রিভিউ, এবং পাঠ প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা দেখে যদি বিবেচনা করে যদি পড়তে শুরু করেন তবে হতাশ হবেন না। কেন না, তখন বইয়ের মাঝে অন্যের তৈরি করা হাইপ থেকে আপনার ভিতর এক্সপেকটেশন চলে আসে। এতে, বই পড়ে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
কাহিনি সংক্ষেপঃ: গল্পটার শুরু হয় ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের গ্রিসে। একজন বিখ্যাত রোমান আর্কিওলজিস্ট এসেছে একটি প্রাচীণ মন্দিরের নীচে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধানে। কিন্তু মন্দিরের পুরোহিত তাকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিলেন না।
অনুমতি না পেয়ে সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ লুকিয়ে লুকিয়ে সেখানে গিয়ে উদ্ধার করলো তিন হাজার বছরের পুরোনো ব্রোঞ্জের তৈরি একটি দরজা। কী বিশেষত্ব সেই দরজার? কেন সেটা নিয়ে এতো গোপনীয়তা?
গুহার দেয়ালে লেখা দেবী আফ্রোদিতি, এডোনাইস, গহিণ অরণ্য, অনাকাঙ্খিত মৃত্যু, রাত, দুয়ার, অনুপ্রবেশকারী, পাপ, পবিত্রতা, প্রেম, শাস্তি, জগৎ, কালভ্রমণ, দূরত্ব, আলোকবর্ষ – এই ভাঙা ভাঙা শব্দগুলোর তাৎপর্য কী? আঠারো শতাব্দী আগে বসবাসরত চিত্রকর সায়মনের সাথে প্রত্নতত্ত্ববিদের সম্পর্কটাই বা কী?
সর্বোপরি, কী সেই হাজার বছরের পিছুটান?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ এনজয়েবল। স্টোরি টেলিং বেশ স্মুথ আর ইন্টেলিজেন্ট ছিলো। একটানে শেষ করে ফেলার মতো একটা নভেলা। গল্পের এলিমেন্টগুলো বেশ যত্নসহকারে গুছানো হয়েছে।
ইতিহাস, মিথোলজি আর টাইম ট্রাভেল মিলে বেশ দারুণ কম্বিনেশন।
সায়মন এক প্রত্নতাত্ত্বিক যে প্রাচীর জিউস মন্দির থেকে লুকিয়ে উদ্ধার করে আফ্রোদিতির বাক্স, যার দরজা দিয়ে সে চলে যেত অতীতে, মৃত প্রেমিকের সাথে মিলিত হতে। সেই অতীতে পা বাড়ায় সায়মন নিজেও, ফিরে যায় আঠারোশো বছর আগের জুলিয়াস সিজারের সময়কালে। তারপর কী হলো?
এক বসায় পড়ে ফেলেছি ছোটো বইটি। ভালো লেগেছে কাহিনীর প্যাটার্ন৷ প্রেমকাহিনীটা জমাট ছিল, উপভোগ করেছি।
A very beautiful book! I might not have understood if I hadn't read this story about how to get lost in time and loops. It feels like a nice trip through the history of ancient Rome with the story of Simon and Isabel. An excellent story on a very small scale.