ডাইনী আসলে একজন উন্মত্ত সত্ত্বা। তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সে নিজেই। সে চায় নিজেকে অমর করতে, চির যৌবন ধরে রাখতে আর কাছের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু এই অসম্ভব শক্তি ধারণ করতে হলে তার দরকার একধরণের বিশেষ পুরুষ। ডাইনী চায় যে কোনো কিছুর বিনিময়ে সেই পুরুষকে দখল করতে। সেই দখলে কোনো ভালোবাসা নেই। ডাইনী একের পর এক জীবন ধ্বংস করে অদ্ভুত এক খেলায় মত্ত। এই খেলার আসলে শেষ কোথায়? এমন মানুষরূপী ডাইনীরা কি খেলায় জিতে যায়?
২.৫ তারকা। বইয়ের সবচেয়ে স্ট্রং দিক হলো এর ঝরঝরে লেখনী। শুরুটা দারুণ ছিল এবং অযথা জটিল করার চেষ্টা করা হয়নি। তবে বইয়ে কোন কোয়েস্ট বা অ্যান্টাগনিস্ট নেই। ম্যাজিক সিস্টেমের কোন ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কিসের আশায় পাঠক আটকে থাকবে? যেটা হতে পারতো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম হরর ফ্যান্টাসি সেটা স্রেফ একটা প্রেম কাহিনী হয়ে রয়ে গেল।
শেষটা পড়ে খুবই হতাশ হলাম। অসাধারণ এক ডাইনীর গল্পের অপমৃত্যু ঘটলো মানবিক প্রেমের গল্পে। লেখিকার কনসেপ্ট, লেখার হাত, চরিত্রগুলোর গড়ে ওঠা আর পরিবর্তন সবই দুর্ধর্ষ। শুধুমাত্র এরকম একটা জঘন্য এন্ডিং না হলে বাংলায় উইচক্র্যাফটের এক কাল্ট ক্লাসিক হয়ে থাকতো বইটা।
কাহিনী সংক্ষেপঃ একটি মেয়ে, যে কিনা বংশগতভাবে ডাইনী, বইতে সে তার নিজের জীবনের গল্প বলে যায়। ষোলো বছর বয়সে নিজের মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে সে একজন ডাইনী। তবে চাইলে সে বিয়ে-শাদী করে, সন্তান-সন্ততির মা হয়ে নিজের ডাইনী সত্ত্বা পরিত্যাগ করতে পারে। যেমনটা তার মা করেছিলো। আবার চাইলে কিছু শর্ত মেনে অনন্তকাল চিরযৌবন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, তাকে একজন তামালিক পুরুষ খুঁজে বের করতে হবে। এই তামালিক পুরুষের কাছ থেকেই সে প্রতিনিয়ত জীবনীসুধা পাবে, ওদিকে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে থাকবে সেই তামালিক পুরুষ। এমনি করে একদিন সেই তামালিক পুরুষের মৃত্যু হবে। তখন ডাইনীকে খুঁজে নিতে হবে আরেকজন তামালিক পুরুষ। এখন প্রশ্ন হলো, তামালিক পুরুষটা আসলে কে/কী? এটা একমাত্র ডাইনীই বুঝতে পারে। অন্য কেউ তাদের সংস্পর্শে এলেও বুঝতে পারবে না। বইটি পড়ার একবারে শেষ পর্যায়ে লেখক বলে দেওয়ায় হুঁশ হলো, বইতে ডাইনীর কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুরো বই উত্তম পুরুষে বর্ণনা করা হয়েছে, তাই নামের আবশ্যকতা দেখা দেয়নি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অবশেষে সুলেখক সালমা সিদ্দিকার ‘ডাইনী’ বইটি পড়ার সুযোগ হলো, যদিও ২০১৮ সালে ধারাবাহিকভাবে বইটির এক তৃতীয়াংশ ফেসবুকে পড়া হয়েছিলো। তবে পরবর্তীতে লেখক ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এটি বই হিসেবে আসছে। ডাইনী ভৌতিক বা ভয়ের কোনো বই নয়, যদিও এর প্রচ্ছদ যথেষ্ট ভয় জাগানিয়া, একই সঙ্গে কৌতূহলোদ্দীপকও। বইটিকে আমি ফ্যান্টাসি ধারাতেই রাখবো। ডাইনী পড়তে আগাগোড়াই ভালো লেগেছে, তবে...তবে কিছু কথা না বললেই নয়। বইতে ডাইনীর শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ নেই, অর্থাৎ সেইরকম কোনো অ্যান্টাগনিস্ট নেই যা কাহিনীতে থ্রিলের ঘাটতির সৃষ্টি করেছে। কাহিনীতে সাসপেন্স রয়েছে, রোমান্স রয়েছে, ড্রামাটিক ব্যাপার-স্যাপারও রয়েছে, কিন্তু থ্রিলের অভাব প্রকটরূপে পরিলক্ষিত হয়েছে। বইতে ভয়েরও কোনো এলিমেন্ট নেই, বরং পড়ার একপর্যায়ে ডাইনীর জন্য আপনার মায়া লাগতে শুরু করবে। তবে ওভারঅল ফ্যান্টাসি ফিকশন হিসেবে বইটি বেশ ভালো।
ব্যাক-টু-ব্যাক 'ডাইনী' ও 'ডাইনী পুনরাগমন' পড়ে এখন নিজের বউকেও ভয় পাচ্ছি! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম শুকিয়ে যাচ্ছি কিনা! জোকস্ অ্যাপার্ট—মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে বই দুইটা পড়ে।
ডাইনী বইয়ের গল্পে মূলত ডাইনীর সেটআপ করা হয়েছে। ডাইনী হিসেবে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন প্রটাগনিস্ট। তার জীবন সংগ্রাম এ বইয়ের উপজীব্য। পড়তে মজা কিন্তু তার প্রতি কোনো টান বা সহানুভূতি অনুভব করা দুষ্কর।
অপরদিকে ডাইনী পুনরাগমন ভিন্ন স্ট্যাইলে ভিন্নভাবে ডাইনী বিষয়টাকে ব্যবহার করেছে। প্রথম বইটা পুরোটাই ডাইনী-ফোকাসড গল্প, ফার্স্ট-পারসন ন্যারেটিভে, সংকীর্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সবকিছু এগিয়েছে। দ্বিতীয়টাতে ডাইনী বিষয়টা অনেক উপাদানের একটা মাত্র। এখানেও যদিও গল্পের বৃহদাংশ একজনের পয়েন্ট অভ ভিউ থেকেই আগায় তবুও এটা আলাদা। এখানে পাঠক চাইবে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে ডাইনী যেন তার লক্ষ্যে পৌঁছায়।
এই ডাইনী উপমহাদেশের প্রচলিত ডাইনীদের মতো আবার ইউরোপিয়ান লোরেও সমৃদ্ধ। খারাপ নজর লেগে যাওয়া, অনিষ্ট ভাবা এসব তো চিরায়ত বাংলার মুখে মুখে চলে আসছে।
এ জাতীয় অতিপ্রাকৃত বিষয়ে আমার গো-টু গাইড সুপারন্যাচারাল টিভি সিরিজ। সেখানে স্ট্রিগা নামে আলবেনীয় উইচ বা ডাইনী আছে। যার সাথে আমাদের ডাইনীর সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সহবাসের মাধ্যমে জীবনী শক্তি শোষণ করা বৈশিষ্ট্যটি সাকিউবি বা সাকিউবাস-দের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। তবে তাঁদের প্রকার ও মাধ্যম আলাদা।
সবমিলিয়ে, এই বইয়ে আলোচ্য বিষয় অর্থাৎ ডাইনীর ব্যাপারে আগ্রহ থাকলে 'মনোরঞ্জনের' জন্য এই সিরিজ বেশ ভালো উপায়। গল্প কথনের ভাবটাই এমন যেন সবকিছুই বুঝি খুব স্বাভাবিক—এমন তো হতেই পারে। মনে হতে পারে বিশাল সাসপেন্স, অ্যান্টিসিপেশন নেই। কিন্তু খেয়াল করলেই বুঝা যাবে গল্পটাই ইটসেলফ অনেক ইন্ট্রিগিং!
৪.৫★ ডাইনী নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে নানা মিথ, ভয় আর গল্প। এই বইটা আধুনিক এক ডাইনীর গল্প, যে মাতৃসূত্রে ডাইনী হয়ে জন্মেছে। সেই ডাইনীর আছে কিছু অলৌকিক শক্তি। অগাধ ক্ষমতা আর অন্তত যৌবনের রহস্য৷ কিন্তু বংশপরম্পরায় ডাইনী হলেও অপরিসীম সেই ক্ষমতা অর্জনে রয়েছে একটি বাঁধা- ভালোবাসা। সেই বাঁধনে আটকা পড়লেই নষ্ট হবে ডাইনীর ক্ষমতা। ডাইনী কি পারবে অমরত্ব লাভ করতে?
কাহিনী এত আগ্রহোদ্দীপক ছিল যে একটানে পড়ে শেষ করে ফেলেছি৷ ডাইনী বলে গেছে আর আমি শুনে গেছি তার জীবনের রোমহষর্ক গল্পটা।
লেখনী সাবলীল, প্লট ইউনিক, সব মিলিয়ে বইটা বেশ চমৎকার। আমার ভালো লেগেছে। সময়টা উপভোগ করেছি।
গতানুগতিক ধারার বাইরে, ডাইনী নিয়ে লেখা ফ্যান্টাসি ফিকশন জঁরার বই। তৃতীয় পুরুষে বর্ণিত বইটিতে, ডাইনী চির যৌবন ধরে রেখে অমর থাকার জন্য তামালিক পুরুষদের খোঁজে; যাদের জন্ম আশ্বিন মাসের প্রথম অমাবস্যা রাতের মঙ্গল তিথিতে। এসব পুরুষদের সাথে শারীরিক মিলনের মাধ্যমে তাদের জীবনীশক্তি ডাইনী নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়।
পড়তে গিয়ে যেসব অসুবিধা হলো: দ্রুত স্থান পরিবর্তন, তাড়াহুড়োর ছাপ লক্ষণীয় হয়তো সংক্ষিপ্ত বাক্য ও বাক্যগঠন দুর্বল হওয়ার কারণে। লেখাগুলো কিছুটা প্রাণহীন লেগেছে(ব্যক্তিগত অভিমত)। এন্ডিং ভালো লাগেনি।
লেখিকার হাতের লেখা বেশ ঝরঝরে। পড়তে আরাম লাগে। কিন্তু গল্পের গভীরতা কম বলে গল্পটি জমেনি। গভীরতা ভাল হলে গল্পটি আরও ভাল লাগত। কিছু কিছু জায়গায় বেশ তাড়াহুড়োর ছাপ মনে হয়েছে। চরিত্রগুলোর বিল্ডআপ আরও ভাল হতে পারত।
কিভাবে ডাইনী আসল বা কিভাবে কি হল তার বর্ণনাও বেশ অস্পষ্ট।