বিজ্ঞান আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আর এই বিজ্ঞান ও । প্রযুক্তির মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃতিকে করেছে জয়, অসম্ভবকে । করেছে সম্ভব। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অবদান বিশাল। কিন্তু এই বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে। একটা ভুল ধারণা আছে সবার মধ্যে—বিজ্ঞানীরা জটিল ও। নিরস সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন। ব্যাপারটা আসলে তা না, । বিজ্ঞানীরা আমাদের সবার মতোই মানুষ, হাসি কান্না আনন্দ। বেদনায় তাদের জীবন। এই গ্রন্থের লেখক রাগিব হাসান। শৈশবে পড়েছিলেন আবদুল্লাহ-আল-মূতী শরফুদ্দিনের লেখা।আবিষ্কারের নেশায় বইটি। তার পেশা ও নেশা হিসেবে। বিজ্ঞানকে বেছে নেওয়ার পেছনে সেই বইটির ভূমিকা। অপরিসীম। লেখকের সন্তান যায়ান ও রিনীতা যোয়ীকে রূপকথার বদলে তিনি বিজ্ঞানীদের জীবনের অসাধারণ সব গল্প শোনান- যা। অনেক ক্ষেত্রে রূপকথাকেও হার মানায়। প্রতিদিন, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওদের গল্প শোনাতে লেখকের মনে হলো, এই গল্পগুলো সবার জানা দরকার। সেই চিন্তা। থেকেই ২০১৮ সালের বইমেলায় বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানার ১ম খণ্ডটি লিখেছিলেন। লেখক ভেবেছেন, অল্প কয়েকজন। শিশুকেও যদি বিজ্ঞানের অপার সৌন্দর্যের আলোয় উদ্বুব্ধ। করতে পারা যায় তবে তার সার্থকতা। কিন্তু লেখককে অবাক। করে দিয়ে প্রচুর শিশুকিশোর তরুণ-তরুণী বইটি পড়েছে। তারা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের জীবনের কথা জেনেছে, রোল। মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে সেই বিজ্ঞানীদের। উৎসাহের। সাথে তারা সেসব কথা লেখককে জানিয়েছে। তাই বাকি। অনেক বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে প্রকাশিত হলো বিজ্ঞানীদের। কাণ্ডকারখানা সিরিজের দ্বিতীয় বইটি।
লেখক বিজ্ঞানীদের কাণ্ড কারখানা বই প্রকাশের পর সেই বই এর আরেকটি অংশ হচ্ছে এই বিজ্ঞানীদের কাণ্ড কারখানা-২ বইটি । যা আগের বইটির মতই নানা বিজ্ঞানীদের নানা ঘটনাকে প্রকাশ করে। এই বইয়ে যেমন লুই পাস্তুর , কেকুল , টেসলা, গ্যালিলিও এর মত বিজ্ঞানীদের ঘটনা তেমনি আছে কাজি আজিজুল হক, শশীকান্ত, অমর গোপাল বসুর মত আমাদের অনেকের অপরিচিত বিজ্ঞানীদের ঘটনা।
পাস্তুর এর ঘটনাসমূহ বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত এর আভাস দেয়। দুধ বা মদ পচার কারণ হিসেবে তিনি জীবাণুকে দায়ী করেন। পাস্তুরায়ন পদ্ধতি তৈরি করেন সংরক্ষণের জন্য। জলাতঙ্কের টিকা আবিস্কার ছিল এক অসামান্য আবিষ্কার।
আমাদের দেশের খুলনার কাজি আজিজুল হক এর কথা অনেকেই হয়ত শুনি নি। বর্তমানের অপরাধী শনাক্তকরণের ব্যবহৃত পদ্ধতিটির ভিত্তি ছিল কাজি আজিজুল হকের অপরাধী শনাক্তকরণের ব্যবহৃত পদ্ধতিটি।
Test এর বদলে Taste শুনে শশিকান্তের ভুলটি ছিল আসলেও অসাধারণ।
কেকুলের দুঃস্বপ্ন সম্পর্কে আমি আগেও শুনেছি কিন্তু নিজে কখন পরে দেখা হয় নি অবশেষে এই বই এর মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ্ আমার সেই আশা পূরণ হয়।
শ্রীনিবাস রামানুজন পরীক্ষায় ফেল করায় ১৮ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার পর তার মা ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় দেয়া নিখোঁজ সংবাদের বিজ্ঞপ্তির ছবি বই এ দেখতে পাওয়াটা নিঃসন্দেহে এক অসাধারণ ব্যাপার ছিল এবং রামানুজনের নোট খাতার একটি পাতার ছবি আমার জন্য ছিল আবেগময় মুহূর্ত।
এডা লাভলেসের লেখা প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর ছবিটিও ছিল অসাধারণ।
লুকানো নোবেল মেডেল অধ্যায়টি আমার কাছে সবচেয়ে মজাদার অংশ এই বই এর।
বিজ্ঞানী টেসলার গল্পগুলো সত্যিই অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে টেসলার জুয়া খেলার ঘটনাটি !
জার্মান ভাষা হতে অন্য কোন ভাষায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রথম অনুবাদক সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা। সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে কিছুটা জানলেও মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতাম না । মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে তাই জানার ইচ্ছে ছিল যা বইটির মধ্যে খুজে পাই।
গ্যালিলিওর নোটবুকের পাতা এবং গ্যালিলিওর বিখ্যাত বই ডায়ালগের প্রচ্ছদের ছবিগুলো রীতিমত বিস্ময়কর।
স্টিফেন হকিং এর সম্পর্কে যে বলা আছে তা তো বই এর প্রচ্ছদ দেখলেই অনেকটা আন্দাজ করা যায়।
এছাড়া আরও কিছু বিজ্ঞানীদের নানা ঘটনা লেখক এই বইটিতে তুলে ধরেছেন।
বইটি পড়ে আলহামদুলিল্লাহ্ আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি এবং আমার বিশ্বাস যে কোন মানুষ বইটি পড়ে বিজ্ঞানের প্রতি এক অন্যরকম অনুভূতি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ্ ।
আবদুল্লাহ আল মুতী স্যারের লেখার মত মনে হয়েছে। খুব অল্প তথ্য তবে গল্পের ডংে ভালো লিখেছেন৷ লেখকের উদ্দেশ্য সার্থক হয়েছে। তরুণদেরকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে ভালো টোপ হতে পারে আই সিরিজটি।
প্রথমেই বলে দেয় যারা প্রথম পার্ট টি পড়েন নাই তারা অবশ্যই পড়ে নিবেন। আর একটি অসাধারণ বই রাগিব হাসান এর। এই বই বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব কিছু ঘটনার অসাধারণ কিছু বর্ননা আছে। আর কিছু ঘটনা আছে যেগুলো খুব বেশি প্রচলিত নয় কিন্তু খুব মজার এবং জানার। এই ধরনের বই যেকোনো বিজ্ঞান মনস্ক মানুষকে পুলকিত করবে। তার চেয়ে বড় কথা ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা এসব সত্যি গল্প পড়ে উৎসাহিত হবে অনেক বেশি বেশি। যেমন আমি নিজে এই বই পড়ে বাঙালি গণিতপ্রেমী কাজি আজিজুল হক এর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে আবিষ্কার এর কথা জানলাম। জানলাম প্রথম প্রোগ্ৰামার অগাস্টা অ্যাডাকে, জানলাম মেঘনাদ কে, জানলাম প্রথম কম্পিউটার বাগের কথা... আরো কত কি!!! বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি ব্যক্তিগতভাবে রাগিব হাসান ভাইয়াকে খুব পছন্দ করি কারণ উনি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে যে জায়গায় উনি এক্সপার্ট সেই বিষয়ক কাজ করে সুদূর বিদেশে বসেও বাংলাদেশ এর জন্য নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। উনাকে একটি অনুরোধ করবো উনি যদি উনার লেখার সাথে একটু রেফারেন্স দিয়ে দিত তাহলে আরো বেশী করে জানা হতো। আর লেখক কে ধন্যবাদ আমার একজন প্রিয় বিজ্ঞানীকে প্রচ্ছদে স্থান দেবার জন্য।