ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা সীমিত, অন্যদিকে তার নৃশংস ও পাশবিক হওয়ার ক্ষমতা সীমাহীন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে উপন্যাসের নায়ক মাথা ঘোরানো এক সফরে নামেন মানব ইতিহাসে বর্বরতার যত অলিগলি রয়েছে, তার অনেকগুলো ধরে। তিনি বুঝতে চান কী সম্পর্ক আছে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সঙ্গে দূর ইতিহাসের নিয়ানডারথাল মানুষের ঝাড়ে বংশে নির্মূল হওয়ার? রাশিয়ান দুই মহান কবির মৃত্যু কী সূত্রে গাঁথা শেখ কামালের খুনের সঙ্গে? আর 'সময়' ও 'স্মৃতি' নিয়ে এত পড়াশোনা করেও কেন তিনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন বঙ্গনন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে তার প্রবল অবসেশনের তল খুঁজে পেতে? কেন এ পৃথিবীতে এরকম হতেই হলো, যেখানে সহিংসতাই সভ্যতার নিগূড়ার্থ? কে বানাল, এই গর্বোদ্ধত, মহিষ-নিয়ন্ত্রিত পাষাণ পৃথিবী, যেখানে মানুষের বিশ্বাসগুলোর মধ্যে আছে শুধু কাব্যিকতা, লড়াইগুলোয় হাস্যরস, আর সব লড়াইয়ের উপসংহারে দুর্বিষহ এক মৃত্যুময়তা?
জন্ম- ১৯৬৯ অক্টোবরে, খুলনা। পড়াশুনা করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এবং আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন-এ।
প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ: ঈশ্বরদী, মেয়র ও মিউলের গল্প (২০০১)। বইটি সে বছর প্রথম আলোর নির্বাচিত বইয়ের তালিকায় মনোনীত হয়েছিলো।
মাসরুর আরেফিন কে আমি চিনেছি কাফকা'র অনুবাদক হিসেবে। তার হোমার অনুবাদও পড়েছি বিস্মিত হয়ে। বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি মাসরুর আরেফিনের অনুরাগ ও পাণ্ডিত্য সর্বজনবিদিত। সেই বিদগ্ধতার ছাপ পড়েছে তার সকল মৌলিক লেখাতেও। বিশ্বসাহিত্যের নানান লেখক এবং লেখা বারবার তার লেখায় আসে চমৎকারভাবে।
" আগস্ট আবছায়া " মাসরুর আরেফিনের প্রথম উপন্যাস। আগস্ট নাম থেকেই অনুমেয় যে এটি আগস্টের শোকাবহ সেই ঐতিহাসিক হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপটে রচিত। লেখকের মতে তিনি এই উপন্যাসে সেই হত্যাকান্ডের ঐতিহাসিক পটভূমি সাথে সাথে আবহমানকালের নৃশংস ক্ষমতালিপ্সার উপাখ্যান আনার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতা'র আদিম পৈশাচিক কালো ষাঁড় কিভাবে অন্ধভাবে ইতিহাসের ঘটনার দেয়াল ভেঙে গুড়োর করে দেয়, তিনি সেই গল্প বলতে চেয়েছেন। তিনি কি সফল হয়েছেন?
গুণগান আগে হোক তারপর দোষের কথা। তো, প্রথমেই বলতে হয় মাসরুর আরেফিনের গদ্যশৈলী'র কথা। মাসরুরের গদ্য অত্যন্ত সুখপাঠ্য, কাব্যিক এন্ড ফুল উইদ ডিটেইলস। ফার্স্ট পার্সন ন্যারাটিভে উপন্যাসটা লেখা হয়েছে। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রধান চরিত্রের সাইকি, তার শৈশবের নস্টালজিয়া, চারিত্রিক এবসার্ডিজম ফুটিয়ে তুলেছেন। অত্যন্ত অভিনবত্বের সাথে তিনি উপন্যাসে মার্সেল প্রুস্ত, পুশকিন, লেরমন্তভ সহ বিশ্বসাহিত্য প্রাসঙ্গিকতার সাথে নিয়ে এসেছেন। বইটি পড়তে পড়তে প্রুস্ত পড়বার প্রবল স্পৃহা জন্মেছে মনে। আমার ব্যক্তিগত এমন ধরণের লেখা পছন্দ যেটা তে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকরা খোদ সাহিত্য হিসেবে উপস্থিত হয়।
বইটি তিনশো পৃষ্ঠার ও কিছু বেশি। শুরু থেকে ২৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিখুঁতভাবে এনজয় করতে করতে পড়েছি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু'র হত্যাদিন মানে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট তিনি এতো অপূর্বভাবে ইমাজিনারি রি-ক্রিয়েট করেছেন যে মুগ্ধ হতে হয়। আপনি যখন সবচেয়ে চরম মুগ্ধতার সময়টাতে থাকবেন, ঠিক এরপরপরই কয়েক পৃষ্ঠা যাবার আপনার মেজাজ খারাপ হতে শুরু করবে। মনে করেন আপনি রোস্ট দিয়ে খানা শুরু করলেন। রোস্টের পর আয়েশ করে খাসির রেজালা নিলেন। মনে মনে চিন্তা করতেছেন খাস বাঙালিয়ানা করে একটু দই-ভাত খেয়ে ঢেঁকুর তুলে উঠে যাবেন। তখন যদি আপনের পাতে তিতা করলা ভাঁজি'র সাথে একথাল হিঁদল-শুটকি ভর্তা ঢাইলা দেয় আপনের কেমন লাগবো? এই উপন্যাসে ঠিক এইটা ই ঘটছে। শেষ করার পর মাথার চুল টানতে টানতে ভাবতেছিলাম কি দরকার আছিলো শেষে কতগুলো গাঁজাখুরি ব্যাপার আমদানি করার? যদি শেষ না ই করতে পারতো লেখক সাহেব, তাহলে কি দরকার আছিলো ভুজুংভাজুং দিয়া শেষ করবার? উনি যদি অসমাপ্ত রেখে ভালো অংশটুকু তুলে দিতেন তাহলে বেশ হতো। এতো বিশ্রীভাবে এতো সুন্দর একটা লেখারে বরবাদ করা হবে ভাবিনি। কে যে তারে অপূর্ব ডকুফিকশন হতে যাওয়া উপন্যাসরে সাই-ফাই বানাইবার বুদ্ধি দিছিলো!? শুনেছি ব্রাত্য রাইসু নাকি লেখকের প্রিয় বন্ধু, বইতে সরাসরি নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন। আমার তো ক্যান জানি সন্দেহ, কেষ্ট বেটাই চোর! 🙂
বহুল আলোচিত, সমালোচিত এবং তারচে বেশি বিতর্কিত বই। কিন্তু সব ধরনের বিতর্কের ক্ষেত্রে যে জিনিসটা হয়, যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ সেটা না হয়ে অন্য সব বিষয় নিয়ে আলাপ হয়। এই বইয়ের কন্টেন্ট নিয়ে আসলে কোনো বিতর্ক হয় নাই। হইছিল কী নিয়ে তা অনেকেরই জানা। বিতর্ক তাই নতুন করে উল্লেখ করলাম না। তবে আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিল এই বইয়ের ভাষা, গল্প বলার ধরণ এবং লেখকের দর্শন নিয়ে।
'আগস্ট আবছায়া'র বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকাতে গেলে প্রথমেই যেটা চোখে পড়ে সেটা হলো বিশ্ব সাহিত্যের সাথে লেখকের গল্পও বলার এগিয়ে যাওয়া। কাফকা দিয়ে শুরু করে তিনি তিনি মার্সেল প্রুস্তে চলে যান এবং বারবার সেখানে ফিরে যান। কিন্তু আদতে ব্যপারটা হলো যদিও গল্পের প্রধান চরিত্র নিজের ইচ্ছা মতো প্রুস্তের এক জায়গা থেকে পড়া শুরু করে কিন্তু আসলে লেখক মূল গল্পের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অংশই উল্লেখ করেছেন। ফলে আগস্টের সঙ্গে তিনি যে গল্পের যোগ করতে চান, অর্থাৎ মুজিব হত্যা, সে গল্পটা বলার জন্যে যিনি কখনো কখনো প্রুস্তের সাহায্য নিয়েছেন। নিয়েছেন কাফকা, ভিটগেন্সটাইনের। শেষ দিকে কখনও এমিলি ডিকিনসন।
বইটার যে আয়তন তার অনেকখানি জুড়ে আছে লেখকের নিজস্ব দর্শন, কাফকা থেকে প্রুস্ত পর্যন্ত আরও অনেক লেখকের প্রভাব। পুরোপুরি প্রভাব না, কখনও বিশ্লেষণ। এর সঙ্গে কিছুটা রাজনৈতিক, কিছুটা দার্শনিক দিক। কিন্তু যে গল্পটা বলার জন্য এতো আয়োজন, মুজিব হত্যার সে বয়ান এই বইয়ের মাঝামাঝি কয়েকটা পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ। এর বেশি আসলে দরকারও ছিল না। মাসরুর আরেফিনের 'আগস্ট আবছায়া' এই কারণে আলোচিত হওয়া উচিৎ ছিল যে ১৫ আগস্টের মধ্যরাত থেকে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার দাফন পর্যন্ত সময়ের একটি ধারাবাহিক বর্ণনা তিনি দিয়েছেন লেখকের কল্পনা থেকে। ১৫ আগস্টের ঘটনা নিয়ে এমন ভিভিড (কিন্তু কাল্পনিক) দৃশ্য এর আগে সম্ভবত কেউ তৈরি করেননি।
এর পরের অধ্যায়ে ঠিক কী হলো আমি বুঝতে পারিনি। লেখকের খামখেয়াল নাকি তিনি সময়ের অন্য কোনো মাত্রায় চলে গেছেন জানি না। মনে হবে পুরো বইয়ের সঙ্গে এই অংশের আসলে কোনো সংযোগ নেই। তবু কিছুটা থাকে মূল চরিত্রদের কারণে। অথবা হতে পারে মাসরুর বোঝাতে চেয়েছেন আগস্টের সবকিছুই অস্পষ্ট, ব্যাখ্যাহীন।
এ বই পড়ার পর লেখকের পাঠের বিস্তৃতি দেখে অবাক হতে হয়। পাশাপাশি বইটাকে আলাদা করা যায় কেননা বাংলা ভাষায় এভাবে গল্প বলার, উপন্যাস লেখার চল নেই (ইদানিং কিছু হচ্ছে)। কেউ চাইলে বলতে পারেন যে লেখক ফেঞ্চ, জার্মান, লাতিন থেকে ধার করে লিখছেন। কিন্তু সে রকম হলেও এই ধারাটা এমন খারাপ কিছু না। শুনেছিলাম মাসরুর আরেফিনের লেখা দুষ্পাঠ্য (ইলিয়াডের অনুবাদ অবশ্য তেমনই লাগছিল) কিন্তু আগস্ট আবছায়া মোটেও দুষ্পাঠ্য না বরং চাইলে ভিন্ন দর্শন, ভিন্ন ধারায় ডুব দেওয়া যায়।
মাসরুর আরেফিনের লেখার সাথে পরিচয় হয় কাফকার গল্পের অনুবাদ দিয়েই । মাঝে মাঝে খটমটে আবহাওয়ার অনুবাদ মনে হলেও পাঠ পর্যালোচনা আর টীকা-ভাষ্যগুলো ছিল অসাধারণ । পড়ে একজন ঋগ্ধ এবং একনিষ্ঠ পাঠকের পরিচয় পেয়েছিলাম । কাফকার প্রতি লেখকের যে আবেগ তা আমকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল । এছাড়া দৈনিক সমকালের শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকী কালের খেয়াতেও সাহিত্য সম্পর্কিত রচনা পড়েছিলাম বলে মনে পরে । তাই এবছর ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসরুর আরেফিনের প্রথম উপন্যাস নিয়ে রব ওঠা দেখে আগ্রহী হয়ে উঠি । এরপর দেখি বেশ জল ঘোলা হয় উপন্যাসটি নিয়ে । বইয়ের ব্যাপারে দাবি করা হয়েছে যেন এই বইয়ের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের পাপমোচন হয়েছে । আবার হাসান আজিজুল হককে নিয়েও সৃষ্টি হয় বিতর্ক । তাঁর অজান্তেই নাকি একটি উক্তি বইয়ের বিজ্ঞাপন এবং বইয়ের গায়ে ছেপে দেয়া হয়েছে । বইয়ের ব্যাক কভারে লেখা হাসান আজিজুল হকের উদ্ধৃতি, "অসাধারণ উপন্যাস । বাংলা সাহিত���যে এমন লেখা আছে বলে আমার মনে হয় না । প্রত্যেক পাঠকের জন্য এ অনন্য গ্রন্থটি অবশ্যপাঠ্য ।" তারপর আগস্ট আবছায়া নিয়ে ফেসবুকে ব্রাত্য রাইসুর পোস্টে দেখি লিখেছেন, "মাসরুর আরেফিনের 'আগস্ট আবছায়া' বাংলা ভাষার নতুন ক্লাসিক। হাসান আজিজুল হকের প্রশংসা বা না-প্রশংসায় এই উপন্যাসের কিছুই যাবে আসবে না। হাসানের প্রশংসার গুরুত্ব যাদের কাছে তাদের কাছে হাসানের উপন্যাসের গুরুত্ব কতটুকু? কোন উপন্যাসের? সুতরাং বলা চলে, মাসরুরের উপন্যাসের শেষ প্রচ্ছদে ও পোস্টারে হাসানের বক্তব্য যুক্ত করাটা মাসরুরের দিক থেকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন। ও বিজ্ঞাপনই মাত্র।"
এছাড়া বইয়ের বিজ্ঞাপনের প্রক্রিয়া নিয়েও দেখি অনেকের মাঝে প্রতিক্রিয়া । তবে আমি নিজে বইয়ের বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে কোন খারাপ মত পোষণ করি না । বরং এই বিরান সমাজে বই নিয়ে যে লেখক প্রকাশক প্রচারণা চালান তাই দেখি খুশি হয়েছিলাম । এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল যদি না শেষ পর্যন্ত আমি নিজে আগ্রহী হয়ে বইটার ৩২৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে না ফেলতাম । আর এখন যেহেতু নিজের অভিজ্ঞতায় আওতাতেই বইটি আছে, পড়ার পর লেখক আর উপন্যাসের সাথে আমার একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে এবং সেই সম্পর্ক-অভিজ্ঞতা যেমনি হোক না কেন এই বই পাঠের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার অধিকার আমার এখন আছে । তাই অন্য কারো বক্তব্য বা মতামত আর কোন মানে রাখে না ।
উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপককে ও তার অবসেসনকে ঘিরে । অধ্যাপক চষে বেড়িয়েছেন বিশ্বসাহিত্য এবং নন্দিত-নিন্দিত সব দার্শনিকদের রচনার সুবিশাল প্রান্তর । লেখকের মতোই অধ্যাপক অনুবাদ করছেন কাফকার গল্পের অনুবাদ । বার বার বিভিন্ন সূত্রে লেখকের নিজের ব্যক্তিত্বের ছাপ অধ্যাপকের চরিত্রে স্পষ্ট । খেয়ালী প্রেমিক অধ্যাপকের অবসেসন ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যা নিয়ে । কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না এই হত্যা কাণ্ড । তাই এই হত্যার কুশলীদের মনস্তত্ত্ব এবং প্রেক্ষাপট নিয়ে ভেবেছেন প্রচুর । ভেবেছেন সে সময়ের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো নিয়ে । পর্দার আড়ালের কুশলীদের দিকেও আলো ফেলেছেন ।সৌরজগতের পাথুরে এক গ্রহে স্তন্যপায়ী মানুষের জীবনের অনিত্যতা-অসহায়তা ও মানুষের সহজাত হিংস্রতা নিয়ে অধ্যাপক বিচলিত। আর এই উপলব্ধিতে পৌঁছাবার পাশাপাশি চেতনার বেদনায় অধ্যাপক নিজে যেমন জর্জরিত সাথে পাঠকদেরও করেছেন নাজেহাল । ৭৫ আগস্টের রাতে পৌঁছাবার আগের শ'খানেক পাতায় লেখক চালিয়েছেন পাঠকের উপর এক অমানুষিক অত্যাচার । খাপছাড়া-বিস্বাদ গদ্যে-ঘটনার ঘনঘটায় হয়েছি ক্লান্ত এবং বিরক্ত ।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুর আগে থেকেই উপন্যাস কিছুটা গতি পায় । লেখক ইবরাহিম নামের একটি চরিত্র ও অধ্যাপকের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মুদ্রার দু পিঠকেই উন্মোচিত করে ধরেন । বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট এবং পেছনের আরেক বাস্তবতার ছবি পাওয়া যায় ইবরাহিমের বয়ানে । পরস্পর বিরোধী এবং নানান সংবেদনশীল বাস্তবতার বর্ণনায় উপন্যাসের এই অংশ দারুণভাবে আগ্রহউদ্দীপক । এরপর দ্বিতীয় অধ্যায়ে অনেকটা জাদু বাস্তবতার ধাঁচে অধ্যাপকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের একটা পরিষ্কার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে । এই অংশটাই উপন্যাসের চুম্বক অংশ । একদম সৈনিক পর্যায়ের বিদ্রোহীদের থেকে শুরু করে ফারুক-রশিদ-ডালিম-নূরের মনস্তত্ত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ একটা ছবি দেখা যায় । এর জন্য লেখক বাহবার দাবীদার ।
তৃতীয় অধ্যায়ে ঘটনা পরম্পরা একেবারে লেজে গোবরে পরিস্থিতির অবতারণা করে । না মনে হয়েছে সায়েন্স ফিকশন না ফ্যান্টাসি । থ্রিলার হিসেবে দেখলে আরও ভজঘট পরিস্থিতি । বিকট শব্দের অবতারণা ঘটিয়ে তার সাথে পৃথিবীর চলমান ভূরাজনীতির সম্পৃক্ততা এবং এসব কিছুর সাথে ১৫ আগস্টের যে সেতুবন্ধন লেখক করতে চেয়েছেন তা একেবারে মাঠে মারা গেছে । বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মত এক ঐতিহাসিক পালা বদলের একটি ঘটনার সাথে এমন অভিনব ঘটনার মেল বন্ধন রচনার জন্য যেই বিশ্বাসযোগ্য পরিস্থিতির বুনট দরকার ছিল তা তৈরি হয়নি মোটেই । ঘটনা পরম্পরা এক হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই করতে সমর্থ হয় নি । আমি তাও হাস্যকর বলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । সায়েন্স ফিকশন-ফ্যান্টাসি-থ্রিলারের পাঁড় পাঠকের পড়ে কি বলবেন জানি না । সত্যি বলতে এই অধ্যায় আমার জীবনে যে নির্মল হাসির উপহার নিয়ে এসেছে তা লেখকের উদ্দেশ্য ছিল না নিশ্চয়ই ।
সবশেষে আমি বিরক্ত । কারণ এটি যেমন বাংলা সাহিত্যের জঘন্যতম সৃষ্টি নয় তেমনি শ্রেষ্ঠতম রচনার উদাহরণও নয় । তাও একে নিয়ে যে জল ঘোলা হল তা যে আধুনিক বাজার ব্যাবস্থাপনার একটি নিছক বিজ্ঞাপনী স্টান্ট সেটা বুজতে আর বাকি নেই । নিজে পড়বার পরে এই বই নিয়ে মানুষের বিকট উচ্ছ্বাস, গুড রিডসের মত প্ল্যাটফর্মে জাল আক্যাউন্টের রিভিউ-রেটিং দেখে আমি সন্দিহান এবং বিরক্ত । তলানিতে মানুষের খ্যাতি-স্বীকৃতি পাওয়ার সহজাত প্রবৃত্তির উদগ্র আকাঙ্ক্ষাই খুঁজে পেয়েছি । এরপরে হাসান আজিজুল হক বিতর্ক আমার কাছে পরিষ্কার । এবং আমি মর্মাহত । এর চেয়ে দর্শন নির্ভর একটি নিরেট আখ্যান লেখকের কাছ থেকে পেলে বরং সুখপাঠ্য একটা ঘটনা ঘটত । এমন জারিজুরির কোন দরকারি ছিল না । অপ্রত্যাশিত এক উপায়ে লেখকের ব্যাপারে আমার মোহভঙ্গ হল । উপন্যাসে লেখকের প্রজ্ঞার-বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া গেছে নিশ্চয় । ভোজবাজির মত হঠাৎ হঠাৎ সাবলীল গদ্যে লেখা এগিয়েছে । কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা বই জুড়ে বিরল । গুড রিডসের আপাত গুরত্বহীন রেটিং ব্যাবস্থায় আরও এক-আধটা তারা যোগ করাই যেত কিন্তু বই পড়ার সময় এবং বাইরে বিরক্তিকর পরিস্থিতি উদ্রেকের জন্য এই একক তারার অবতারণা ।
আগস্ট আবছায়া, আর দশটা মহৎ সাহিত্যের মতই সমস্ত সীমাবদ্ধতাসহ বাংলা সাহিত্যের একটা ফেনোমেনা। উপন্যাসের নামের কারণেই ঐতিহাসিক বিষয় নির্ভর কিছু মনে হতে পারে- যখন কেউ ঐতিহাসিক কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখেন, তার উপর যেন ঐতিহাসিক সত্যের বোঝা চাপানো হয়। লেখকরা ঐতিহাসিক এই দায় কেন নিতে যান, সেটা অন্য কোন প্রবন্ধের বিষয় হতে পারে কিন্তু মাসরুর আরেফিন তার আগস্ট আবছায়ায় এই চেষ্টা করেন নাই।
উপন্যাসটার রিয়েলিটি “সাহিত্য বাস্তব”হবার কারণেই- বিশ্বসাহিত্যের বেশ কয়জন বিখ্যাত চরিত্রের সাথে আমি উপন্যাসের ঘটনাবয়ান করা উত্তমপুরুষের মানসিক অবস্থা, সিচুয়েশনাল সাদৃশ্য কিংবা বৈসাদৃশ্য আনব আলোচনার প্রয়োজনেই।
এরকম তুলনায়, যে ভুল বোঝাবুঝিটা ঘটে থাকে সাধারণত- তা হচ্ছে আলোচিত উপন্যাসকে “জাতে তোলার” একটা প্রয়াস দেখা যেতে পারে। কিন্তু এই উপন্যাসের আলোচনায় এটা ইনএভিটেবল, কেননা সে তার অস্তিত্বকে দর্শন আর সাহিত্যের ভেতরেই যাপন করেছে। স্পয়লার অ্যালার্ট দিয়ে রাখা হচ্ছে কেননা প্রোটাগনিষ্ট এবং অন্যান্য চরিত্রগুলোকে আলোচনা করার সময় ঘটনা প্রবাহকে না এনে পারা যাবে না।
আগস্ট মাসের প্রথমদিকে কোনো একদিন উপন্যাসের উত্তম পুরুষ কাফকার ’গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ অনুবাদ করতে গিয়ে ধৈর্য্যচ্যুত হন, তার অস্থির লাগে। আমরা জানতে পারি তার এই অস্থিরতা প্রতিবছর আগস্টেই আসে। বছরের পর বছর এমন একটা অবসেশন তাকে ভীষণ ভোগালেও, সেটাকে সমস্যা হিসেবে নয়, স্বাভাবিকতা হিসেবে মেনে নিতে দেখা যায়�� তার অনুধাবনে ব্যক্তি মানুষ নিঃসঙ্গ, বিমর্ষ এবং সমষ্টি হিসেবে মানুষ নিষ্ঠুর। ব্যক্তি মানুষের এই অসহায়ত্ব, রোগ, শোক যন্ত্রণাকে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন ফরমে সে বহন করে চলে।
চরিত্রটি দীর্ঘ আটবছর ধরে অ্যাল্প্রাজোলাম বলে একটা প্যানিক ডিজঅর্ডারের ওষুধ খাচ্ছেন। যেটার লং টার্মে ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়, বায়োলোজিক্যাল হাফ সাইকেল ১১ ঘন্টা থেকে ১৫ ঘন্টা। আমরা হ্যালুসিনেশনের কিছু ঘটনাও ��েখতে পাই । এমন একজন মানুষের বয়ানের যে ক্রেডিবিলিটি ক্রাইসিস থাকার দরকার সেটা নেই। মাসরুর আরেফিন কিন্তু আমাদের তার উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের বয়ানে যখন জানান ব্যাপারটা, আমরা এড়িয়ে যাই- কেননা চরিত্রটি যেই স্ফিয়ারে থাকেন- তার সেখানে যে বিচরণ তাতে সে অনেক আত্মবিশ্বাসী।
বাংলা সাহিত্যের ভালো রুচি থাকা উত্তম পুরুষ অথবা কেন্দ্রীয় চরিত্রে হিসেবে পেটিবুর্জোয়া তৈরি করতে পেরেছেন বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ূন আজাদ উনার দীর্ঘ লেখালেখি জীবনে আত্মবিশ্বাসী উত্তম পুরুষের অনেক অ্যাটেম্পট নিলেও- সেসব মূলত রাগী অ্যাংরি ইয়ংম্যান হিসেবে হাজির হয়েছে শেষ পর্যন্ত- “কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ” কিংবা “সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে” তে হুমায়ুন আজাদের এই প্রচেষ্টা ছিল- কিন্তু উপন্যাসে দম ধরে রাখতে পারেন নাই । আগস্ট আবছায়ায় সেই দমটা ধরে রাখা গেছে।
প্রোটাগনিস্ট অবিবাহিত, একটা প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষক তিনি, দুইজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর সহকর্মী- নূর আর মাসুম, যাদের একজন দাম্পত্য জীবন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন, আর একজন ভুগছেন ক্যান্সারে।
আমরা মূল আলোচনায় ফিরে আসি আবার, প্রধান চরিত্র কাফকা অনুবাদ শুরু করেছে,এমন জায়গা থেকে উপন্যাসটা শুরু হয়েছে বলেই হয়তো ঐসময়টায় আমার হঠাৎ মনে হলো এই উপন্যাসের যেই সুতা,যেই কেন্দ্র,তা কি কাফকার “পেনাল কলোনির” মতো একটা মারণাস্ত্রের বর্ণনা,একটা সামরিকযন্ত্রের নিষ্ঠুরতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ,১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের এক নির্মম নিরাসক্ত ডিটেইল- এই উপন্যাস কি তবে সংঘবদ্ধ মানুষের নিষ্ঠুরতার অনুসন্ধান? আততায়ীরা কি বিবেচিত হবেন একটা যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ হিসেবে?
ঔপন্যাসিক যখন মুম্বাই শহরকে পরিচয় করান,আমার মনে পড়ে প্লেগের ওরান শহরের কথা। আমি আলবেয়ার কামুর উপন্যাসগুলোর দারুণ ভক্ত হলেও,কামুর উপন্যাসগুলোর মধ্যে আমি একটা ল্যাবরটরির গন্ধ পাই,ব্যাক্তি কিংবা সামষ্টিক মানুষকে এমন আকস্মিক অনিবার্যতায় তিনি ঠেলে দেন,তাতে মানবমনের নানা বৈচিত্র্য প্রকট হয়ে ধরা পড়ে- মানবচরিত্র বিশ্লেষণের একটা জবরদস্তি মনে হয় কখনো কখনো। কিন্তু মাসরুর আরেফিন ধাবমান স্বাভাবিক বিশ্বের মধ্যেই মুম্বাইয়ের পাম বিচ ক্রিকের খানিক বর্ণনার মধ্যে নিয়ে আসেন এক গুমোট মৃত্যুময় দুনিয়ার মিনিয়েচার, আমরা পরিচিত হই দক্ষিণে ভারতের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার আইয়ারের সাথে। আইয়ারের সাথে উত্তম পুরুষের কথোপকথনের একটা জায়গায় আমরা জানতে পারি আইয়ার শেখ মুজিবর রহমানের নামের সাথে পরিচিত এবং তাঁর হত্যার ব্যাপারে নিজের স্মৃতি আছে। এই জায়গায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইন্দিরা গান্ধীর একটা ভীতির কথা আমরা জানতে পারি, "তিনি বলতেন, তার নাতি রাহুল মুজিবের ছেলের সমান বয়সী, কাল তার অবস্থাও তো এমন হতে পারে।”
আইয়ারের সাথে ছোট এই যাত্রায় তার বেশ আন্তরিক কথোপকথন হয়, বিশেষত গাছ ফুল নিয়ে আইয়ারের আগ্রহ হয়তো তাকে আনন্দিত করে। আইয়ারের বর্তমান জীবনযাপন তাকে সহানুভূতিশীলও করে। কিন্তু আইয়ার তার কাছে টিপস প্রত্যাশা করলে সে সেটা তাকে দেয় না। পরে এটা নিয়ে তার গিল্ট (অপরাধবোধ) তাকে ভোগায়। খুব তাৎক্ষণিক একটা ঘটনা, কেবল ইচ্ছা হয় নাই বলে সে টিপস দেয় নাই ব্যাপারটা এমন যেমন হতে পারে, হতে পারে তার সাথে ক্ষণিক আন্তরিকতার জন্য আইয়ার যেমন টিপসকে তার পাওনা হিসেবে ধরে নিয়েছিল সেই দাবিকে সে অস্বীকার করতে চেয়েছিল, আবার এক মানবেতর জীবন যাপন করা আইয়ারের প্রতি তার তা ক্ষোভ আছে- সে যেটাকে পাওনা ভাবে সেটা তাকে না দিলেও তার যে কিছুই করার ক্ষমতা নেই, সেটা বোঝানোর জন্যও হতে পারে কি?
গোটা বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ আছে, হতাশা আছে কিন্তু সেটার কোনো সমাধান তার কাছে নাই। সে কী চায় সেটা তার জানা নেই, তা নিয়ে তার অনুসন্ধানও নাই, কিন্তু যা যা আছে সেটা যে চায় না সে বিষয়ে সে নিশ্চিত। জীবন যার কাছে যথেষ্ট উপভোগ্য নয় এবং মৃত্যু যার কাছে কদর্য। সুতরাং চরিত্রটি তার নিজের জগতকে একটা সাহিত্যিক বাস্তবতা দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছে। কাফকা, প্রুস্ত, তুর্গিনেভ, পুশকিনের অসুখ, প্রেম, জরা, ক্রোধ ইত্যাদিকে কেবল তথ্য হিসেবে নয় নিজের অভিজ্ঞতা হিসেবে আত্মস্থ করেছে, এই বাস্তবতার একটা নিজস্ব ভাষা আছে, যেটা ঠিক আর সবার অনুমোদনের মুখাপেক্ষী নয়। উত্তম পুরুষে লেখা উপন্যাসের ভাষার যে আকাঙ্ক্ষা থাকে পাঠককে একাত্ম হবার সুযোগ করে দেবার, আগস্ট আবছায়ার ভাষা তেমন নয়। এই ভাষা একটা দূরত্ব রেখেছে। প্রচুর কোটেশন এসেছে, যেগুলো মূলত বাস্তবতাকে, জীবনের প্রতি তার তির্যক অবস্থানকে কখনো র্যাশনালাইজ করতে কখনো বা সহনীয় করতে এসেছে।
জগতের প্রতি তার নিরাসক্তি আছে, কিন্তু সে নির্বিকার থাকতে পারে না, অপরাধবোধ তাকে নিরাসক্ত থাকতে দেয় না। পনের আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে তার এই যে মুখোমুখি হবার ইচ্ছা, সেটাকে সাদা কালোর শেষ রিস্টোর পয়েন্ট ধরে নেবার ইচ্ছা কিন্তু তার পড়াশুনার ধারাবাহিকতা না। এটা তার মনের খেয়াল- যেন কেবল তার নীরব থাকা কিংবা না থাকাই যেকোনো পরিস্থিতির নির্ধারক।
ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টের রাসকলনিকভের যে স্নায়বিক চাপ, যেটাকে দস্তয়ভস্কি আরও কঠিন করেছেন, সেই তুলনায় মাসরুর আরেফিন তার চরিত্রকে বরং বেশ কিছু জায়গায় আগলে রেখেছেন। হঠাৎ অসুস্থ্ হয়ে যাওয়ার পরে মেডিকেল বিলের জন্য তাকে খুব বেশি ভাবতে হয়নি। আবার বন্ধুর মৃত্যুর পর তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এককালীন টাকা আদায় করা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আগস্ট আবছায়ার প্রধান চরিত্রের যে সংকট, তা পারিপার্শ্বিক নয় বরং খুব অভ্যন্তরীণ হিসেবে এসেছে। ঔপন্যাসিক তাকে পরিস্থিতিতে ঠেলে দেননি, চরিত্রটি তার সমস্যা নিজেই তৈরি করেছে। জীবনের অর্থ এবং অর্থহীনতা নিয়ে তার ভাবনা “যখনই জীবন আমার কাছে মনে হয়েছে অর্থপূর্ণ, মনে হয়েছে আমি আমার জীবনের কোন একটা অর্থ খুঁজে পেয়েছি, তখনই দেখেছি বদলে দেয়া হয়েছে তার অর্থ”
লক্ষ্য করার মত ব্যাপার হচ্ছে, জীবনের সেই অর্থ বদলে যায় নি, কিংবা তার নিজের কাছে অর্থ পালটে যায় নি, বরং কেউ পালটে দিয়েছে। কে পাল্টেছে ? চরিত্রটি ঈশ্বর উদাসীন, সুতরাং সে তার এই অবস্থানকে ইন্টেলেকচুয়ালাইজ করতে চরিত্রটি একটা নিরবিচ্ছিন্ন, প্যারালাল রিয়েলিটি তৈরি করেছে। এতে কিন্তু তার স্ট্রেস আরও বেড়ে যায়। বাস্তবতাকে বাইপাস করতে সবচেয়ে জটিল কসরৎটা করতে হয়। মেন্টাল জিমন্যাস্টিক।
সাহিত্যের ফুলবাগানে চোখ বুজে থাকা এক ঘরগোশের প্রলয় আটকানোর প্রচেষ্টা দেখি আমরা। সদা কুৎসিত মৃত্যুময় উপত্যকায়, কেউ তার হৃদয়ে ফু দিয়ে পাঠিয়েছেন “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি নেকড়ের পালে ভেড়া হিসেবে, সুতরাং সাপের মত ধূর্ত আর ঘুঘুর মত নিস্পাপ হও” আর তার এই ইনোসেন্সকে ঔপন্যাসিক আগলে রেখেছেন এক পিতাসুলভ দায়িত্বে।
তার সাথে ঘনিষ্ঠ যে দুইজন নারীকে পাওয়া যায়, তারা দুইজনই উচ্চবিত্ত। ঠিক মধ্যবিত্ত নারীর প্রেমে যে চাপ থাকে, স্বাধীনতার ঘাটতি থাকে সেটা হয়তো চরিত্রটির জন্য ঠিক জুতসই না। মেহেরনাজ ও সুরভী ছেত্রী । সুরভী ছেত্রী পরে উন্মোচিত হন প্রধান চরিত্রের কিছু কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বেশ কাছাকাছি কিছু স্বভাব নিয়ে। মেহেরনাজের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকটির আকাঙ্ক্ষা অনেকটা যেন শাসিত হবার। শিক্ষক ছাত্রীর প্রেমের স্বাভাবিক ধারাটা ঘুরে যেতে খুব সময় নেয় না। কাফকার গল্পের দ্বিতীয় খণ্ড অনুবাদে তার এই ছাত্রীর প্রতি একধরণের নির্ভরতা দিয়ে মেহেরনাজের উপন্যাসে প্রবেশ, সুরভী ছেত্রীর চরিত্রটি যেমন ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়, ম��হেরনাজেরটা তেমন না। মেহেরনাজ চরিত্রের প্রকাশিত হবার ভেতরে অন্যরকম আকস্মিকতা দেখা যায়। আর একটা নারী চরিত্র লুনা, চরিত্রটির বন্ধুপত্মী, লুনা চরিত্রটির নির্মাণ সাবলীল। লুনাও বেশ ধনী ঘরের মেয়ে- এবং আমরা লুনার আপাত চরিত্রহীনতার একটা ব্যাখ্যা পাই, যেহেতু উত্তম পুরুষের নিজেরই একটা আগ্রহ থাকে লুনার এই আচরণের অসামঞ্জস্য এবং স্বেচ্ছাচারীতার ব্যাপারে। ফারজানা, যার ভেতরে মধ্যবিত্ত ম���ল্যবোধ প্রবল- লেখকের ভাবনায়, স্মৃতিতে সে এসেছে সরব চরিত্র হিসেবে। স্বামীর অসুখের জন্যেই হয়তো উপন্যাসের যে “বর্তমান” তাতে তার চলাফেরা ছিল অনেক প্রচ্ছন্ন। উপন্যাসের পরিণতিতে তাকে দিয়ে লেখক আর একটা লড়াইয়ের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখেন।ফারজানা তার স্বামী মারা যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে এককালীন টাকা পেয়েছিল, সেটা তার শ্বাশুরি নিয়ে নেন। সন্তানকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে আমরা আর একধরণের ফারজানাকে দেখি। মাসরুর আরেফিন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ভয়াবহ দিকটি আমাদের খুব আলগোছে শোনান। কিংবা লুনার বাবা হত্যার গল্পটা আমরা যেভাবে জানি সেখানে মাসরুর এমন একটা আশ্চর্য গল্প শোনানোর উত্তেজনায় কোনরকম চঞ্চলতা দেখান না। আগস্ট আবছায়ার প্রধান চরিত্রের উর্দি পরা সিকিউরিটি গার্ড, তাদের হাতের মারণাস্ত্রের যে ব্যাপক ধ্বংসক্ষমতা সে বিষয়ে জানাশোনা, সেই বিষয়ে ভীতি, সামরিকযন্ত্রের প্রতি তার অবিশ্বাস ব্যাপারগুলো একুশ শতকের ব্যক্তিমানুষের গোটা ব্যবস্থার সামনে যে অসহায়ত্ব তার সবটা নিয়ে প্রকাশিত হতে থাকে। সরফরাজ নেওয়াজের সাথে কথোপকথন, লুনার তার দাদির সাথে ফোনে আলাপচারিতা, মাসুমের মৃত্যু, কাউসার বলে এক শিশুর গলায় পিন আটকে যাওয়া এবং তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া, এয়ারপোর্টে কর্পোরেট হায়ারার্কি নিয়ে ভীষণ কালো কৌতূকময় একটা ঘটনার অবতারণা- এরকম বেশ কিছু দৃশ্য, যেগুলো বাস্তব হবার দায় নেয় নাই বরং বাস্তবতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। চরিত্রটি বিশ্বরাজনীতি নিয়ে খুব সচেতন হলেও, দেশের রাজনীতি নিয়ে আপাত উদাসীন, তার যে বয়স তাতে ধারণা করা যায় দুটো সামরিক শাসন সে দেখেছে, তার অনেক স্মৃতিচারণের ভেতরে আমরা কোন মিছিলে শামিল হওয়া দেখি না। এমন একটা চরিত্রকে দিয়ে ১৫ আগস্টের বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা মাসরুর আরেফিন করেছেন।
এই জায়গায় ইব্রাহীম বলে এক আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির চরিত্রকে এরপর উপন্যাসের গতি বাড়তে থাকে। প্রধান চরিত্র যে মহাপরিকল্পনার বর্ণনা দিতে থাকে তা খুবই নিখুঁত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ। আমরা যখন গুন্টার গ্রাসের টিন ড্রাম পড়ি, প্রধান চরিত্র যে কি না তার গল্পগুলো বলতে থাকে একটা মানসিক হাসপাতাল থেকে। ফলে আমরা তার অনেক বলা কথায় সন্দেহ করতে পারি- সেসবের যথার্থতা এবং সত্যতা নিয়ে, এই চরিত্রের ক্ষেত্রে তা পারি না। কিন্তু মনবৈকল্যের খুব স্বাভাবিক যে লক্ষণ, পৃথিবীর কোন মহাপরিকল্পনা, গোপন ষড়যন্ত্র জেনে ফেলা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা- সেই প্রবণতা প্রধান চরিত্রের ভেতরে ক্রমে প্রবল হতে থাকে, শেষে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেয়, টুকটাক ব্যবসার চেষ্টা করে।
সুরভী ছেত্রীর যে পরিণতি লেখক উপন্যাসের পরিশিষ্টতে সংযুক্ত করেন তাতে নাইনটিন এইটি ফোরের জুলিয়ার সাথে পার্কে উইনস্টন স্মিথের শেষ দেখার কথা মনে পড়ে যায়। সাত দশক আগে অরওয়েল যে ভয়াবহ পৃথিবীর কথা কল্পনা করেন, রাষ্ট্রের সর্বময়তার চাহিদা লক্ষ্য করে- মাসরুর আরেফিন সেটা নিশ্চিত করেন, আরও জটিল ক্ষমতা কাঠামো থেকে। রাষ্ট্র এবং তার আমলাতন্ত্রই কেবল এই বিপর্যয়কর বিশ্বের উপাদান নয় আরও কুটিল এর কাঠামো। চিলে
এই উপন্যাসের টুইস্টটা এই জায়গায়, বিশেষত সুরভী ছেত্রীর আদৌ অস্তিত্ব আছে কি না, নাকি এটা তার কল্পনা,কিংবা ইব্রাহিম বলে কেউ আছে কি না, মসজিদ কমিটির বামপন্থী সভাপতি- এসব আমাকে বারবার উপন্যাসটি উল্টাতে বাধ্য করেছে। সরফরাজ নেওয়াজের উপর প্রোটাগনিস্টের যে ক্রোধ তা সে রাষ্ট্র ব্যবস্থা দিয়েই শোধ দিয়েই তুলেছেন। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের র্যাটম্যান কেসের কথা পড়ে যায়। যেই জটিল কুটিল আর রহস্যকে সে ভয় পেয়েছে, সেটার পুরস্কার বা শাস্তির ব্যাপারে তার কেমন জানি একটা উত্তেজনা আছে।
তবে মাসরুর আরেফিন উপন্যাসের চরিত্রকে নিজের থেকে আলাদা করতে চেয়েছেন সবসময়, তার এই সচেতন চেষ্টাটা না ঘটলেই ভালো হতো- প্রাইভেট ভার্সিটিতে দর্শন বিভাগ থাকাটা একটু উইশফুলই লাগে অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
মাসরুর আরেফিন চরিত্রটির চূড়ান্ত বিকারগ্রস্থতার সময় হাত গুঁটিয়ে নিয়েছেন, ক্রুসিফাই হতে দিয়েছেন, আহা মাসরুর, তার স্বনির্মিত ক্রুশকাঠে সে যখন ঝুলে পড়ছে, সেও কি বলেছিল “লামা সাবাক্তানী”
গতবছর প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে, আলতাফ শাহনেওয়াজের করা প্রশ্নের উত্তরে মাসরুর আরেফিন বলেছিলেন, ‘আমার উপন্যাসের ভাষাই এর প্রধান সৌন্দর্য। দীর্ঘ বাক্য। গঠনে প্রুস্তিয়ান, বুননে লরেন্সিয়ান, রঙে ও গন্ধে চেখভের গদ্যের মতো হিম ধরানো।’ সেই সময়ে লেখকের কোনো মৌলিক কাজের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। কিন্তু আগ্রহ বোধ করেছিলাম অনেক। কোনো সাহিত্যিক, বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের কেউ, এভাবে নিজের লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন, যেখানে তিনি বিশ্ব সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ তিন লেখককে জুড়ে দিয়েছেন নিজের সাথে, সেটা বিস্মিত করেছে। এখন নিঃসন্দেহে বলতে পারি, সাম্প্রতিক কালের যেসকল লেখকের গদ্যের সাথে পরিচয় ঘটেছে, তাদের মধ্যে মাসরুর আরেফিনের লেখা একেবারে শুরুতে থাকার মতো। শুধু গদ্যের সৌন্দর্য নয়, বরং তার পড়াশোনা, আলাদা করে বলতে হয় মার্সেল প্রুস্তের ইন সার্চ অব লস্ট টাইম নিয়ে, দর্শন নিয়ে, সেগুলো এই উপন্যাসকে মহিমান্বিত করতে সাহায্য করেছে। তবে শেষ অধ্যায়ে গিয়ে, কাহিনিতে যে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তা আমাকে হতবাক করেছে। এর আগে, পুরো বইয়ে লেখক যে শক্তিমত্তা দেখিয়েছেন তার এমন দুর্বল সমাপ্তি দেওয়াটা মানা যায় না। এরপরেও এই উপন্যাসটিকে পছন্দের তালিকায় স্থান দিতে হবে।
মাসরুর আরেফিনের অন্যান্য উপন্যাস পড়ার ইচ্ছা রাখলাম।
ইতিহাসের কানাগলি আর বিশ্ব সাহিত্যের উপাদানে ঠাসা উপন্যাস। আগস্ট নিয়ে অবসাদগ্রস্থ একজন মানুষের কিছু কার্যকলাপ আপনার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগলেও কিছু স্থানে গল্প ঝুলে গেছে।
Mashrur Arefin’s Phantoms of August is an exploration of history’s dark corridors. Blurring reality and dreams, it examines the horrors of Sheikh Mujibur Rahman’s assassination through a philosophical lens. With vivid prose and Arunava Sinha’s translation, this novel demands your attention. Read the full review on https://www.tusharmangl.com/2024/11/p...
Phantoms of August is a gripping, introspective novel that follows an unnamed narrator in search of understanding, not just about the mysteries surrounding his personal life, but about the events that have shaped his nation. The story flits between reality and dreams, as the narrator's exploration of his fractured memories and the traumatic history of Bangladesh unfolds. Set against the backdrop of political turmoil and personal loss, he embarks on a journey to make sense of the assassination of the nation's founding leader, Sheikh Mujibur Rehman, and the lingering questions about the fate of his family. This journey, both literal and philosophical, is infused with a dreamlike quality that makes it as much about the narrator’s inner world as it is about the nation’s scarred history.
Even though I'm not quite a fan of historical books, I was instantly drawn to this book for some unknown reason and I absolutely enjoyed this ride. I was hooked immediately. Yet it's a lengthy book so I took my time which it definitely deserved.
Mashrur Arefin’s writing, brought to life through Arunava Sinha's translation, feels almost ethereal at times. It is haunting in its portrayal of a mind that cannot separate itself from the horrors of history. I was drawn in by the novel's layered narrative. The dreamlike quality of the novel made it feel both timeless and immediate, as if the past and present were constantly in conversation with one another. It's a profoundly affecting and thought-provoking read.
Phantoms of August, at its brilliance, is an amalgamation of history and literature. The narration involves an unidentified narrator’s search for the facts surrounding Sheikh Mujibur Rahman’s killing, which turns into an intense investigation of truth, recollection, and ethics.
Mashrur Arefin's work shines throughout the storytelling as it is weirdly playful that keeps you on the edge of the seat in tension. Words of this book deepen our understanding of our past events and our understanding of history. 'Phantoms of August' is a slow buzz. It's a swift and keeps you unaware of what is yet to come, just like it feels to be stunk by a honeybee. Sinha, with his mindful translation of this masterpiece delivers the mindset of the unnamed narrator whose primary task was to manage deadlines and translate Framz Kafta's stories but his mind keeps wandering in bird songs and trees making him not only a professor but also a nature enthusiast. The story gears up when the narrator travels from Pune to Mumbai and meets Aiyar, the taxi driver who shares the events of assassination of Sheikh Mujibur Rahman The narrator becomes restless and almost doubts the intent of the driver. Perhaps this might be the aftermath of reading this book to many readers: the visualization is haunting and makes you restless.
The writing is luxurious and might attract more experienced readers, yet it’s fulfilling for individuals prepared to immerse themselves fully. This book has a layered undertone that must be discovered with great enthusiasm in order to actually relish the true essence.
চার স্টার দিলেও আসলে এই বইটাকে দেওয়া আমার মুল রেটিং হচ্ছে - ৪.৭/৫
বইটা কিনেছিলাম ফেসবুকে এর রিভিউ আর আলোচনা-সমালোচনা দেখে । বিতর্কিত কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ থাকেই আর তাছাড়া মাসরুর আরেফিনের আগের কোন লেখা আমি পড়িনি । এই বইটাকে আমি তার লেখার ধরন বুঝার একটা প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েছিলাম । এই রিভিউয়ে হালকা স্পয়লার থাকতে পারে ।
প্রথমেই আসা যাক, বইয়ের প্লটের দিকে । বইয়ের প্রচ্ছদ আর নামের মাঝেই এই বইয়ের সবচেয়ে বড় দুটো প্লট বা বিষয় লুকিয়ে আছে । বইয়ের প্রধান চরিত্রের মুখেই আমাদেরকে পুরো উপন্যাসটা শুনে যেতে হয় । প্রধান চরিত্র একজন দর্শনের অধ্যাপক । আলভোলা কিন্তু বিচক্ষণ । কোন কিছু নিয়ে বেশি চিন্তিত নন এমন একটা ভাব নিজের মাঝে রাখতে চান তিনি কিন্তু ঠিকই তার আশেপাশের প্রতিটা মানুষকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেতে থাকেন । পনেরই আগষ্ট নিয়ে তার অবসেশন তার জীবনের সব সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে । বইয়ের শুরুতে মুম্বাইয়ের রাস্তায় পরিচিত হওয়া ক্যাব ড্রাইভার আইয়ারের প্রতি মমতায় ভরে যায় তার মন । আইয়ারের দিনে মাত্র দুই ঘন্টা ঘুমিয়ে জীবন যুদ্ধ চালানোর ব্যাপারটা তার মাঝে হাহাকার জাগায় । কিন্তু আইয়ারের প্রতি তার আগ্রহ জাগে ১৫ই আগষ্ট (১৯৭৫) , ইন্দিরা গান্ধী এসব নিয়ে আলাপ করতে যেয়েই । নাহলে মুম্বাইয়ের প্রকৃতিতে ডুবেই হয়ত অধ্যাপক তার পুরো সফর কাটিয়ে দিতেন ।
অধ্যাপক একজন বেখেয়াল অনুবাদকও । কাফকা এর লেখার অনুবাদ করে বই প্রকাশ করে বিখ্যাত হয়ে গেছেন । কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ডের কাজ ঝুলিয়ে রেখেছেন প্রায় বছরখানেক ধরে । পুরো উপন্যাসজুড়ে তার মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা আছে দেখানো হয় । এই অস্থিরতার কারণেই ভদ্রলোক অনুবাদে মনোযোগ দিতে পারেন না । কিন্তু তার পরিচিতির একটা বড় অংশ জুড়েই আছে তার এই লেখক সত্ত্বা, এটা তার অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেয় ।
অধ্যাপকের দুইজন প্রেমিকা আছেন - মেহেরনাজ এবং সুরভী ছেত্রী । মেহেরনাজ তারই ছাত্রী । তড়িৎ গতিতে সমস্যা সমাধানে পটু কিন্তু মাঝে মাঝে তার মাঝে শিশুসুলভ (নাকি মেয়েলী) কিছু ভুলের উপস্থিতি দেখা যায় । উপন্যাসের শেষে মেহেরনাজকে নিয়ে একটা ভালো চমক আছে । অন্যদিকে নেপালের বিখ্যাত লেখিকা সুরভী ছেত্রী এর চরিত্রকে কে যেন তিলে তিলে বড়ই করা হয়েছে একজন ভিক্টিম হিসেবে । অধ্যাপকের মনে মেহেরনাজের উপস্থিতিতে এক ধরনের প্রেমময়তার ছাপ থাকলেও সুরভী ছেত্রীকে নিয়ে তার আহ্লাদ অনেকটুকুই শুধুই শারীরিক । সুরভী এর চরিত্রটার পরিণতি যেমনটা হতে পারত তেমনটাই হয়েছে, কিন্তু তার জন্য একটা খারাপ লাগা কাজ করে । প্রেমিক পুরুষ অধ্যাপকের মাঝে নিজেকে এসব থেকে নির্মোহ হিসেবে জাহির করার একটা প্রবণতা আছে কিন্তু ঠিকই উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত সে তার প্রেমিকাদের জন্য তীব্র অনুভূতির প্রকাশ করে গেছেন । শারীরিক ভাবে তাদের প্রতি তার আকর্ষণের অনুভূতি প্রকাশের সময় কিংবা তাদের সাথে যৌনতার সময়েও অধ্যাপক শুধুই তাদের প্রেমিক হিসেবে থাকার চেষ্টা করেছেন । তার অস্থির মনের বর্ণনা শুনে মনে হবে সে আসলে তার প্রেমিকাদের ব্যাপারে নির্মোহ কিন্তু উপন্যাসের পুরো প্লটের দিকে পাখির চোখে তাকালে প্রেমিকাদের প্রতি তার আসক্তির ব্যাপারটা বোঝা যায় ।
অধ্যাপকের চরিত্রটা তুলে ধরতে যেয়ে লেখক গত কয়েকবছরে আমাদের মাঝে হওয়া আত্নপরিচয় নিয়ে যুদ্ধগুলো তুলে ধরেছেন । প্রেক্ষাপটটা ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ধরা যায় । অধ্যাপকের মাঝে একজন দুর্বিনীত কবি বাস করেন কিন্তু তিনি আশেপাশের রাজনীতি সম্পর্কে চরম সচেতন । তিনি ধর্মীয় পরিচয় আর তার প্রেক্ষিতে চলা ক্ষমতার দ্বন্দ্বটা বুঝেন । জারের শাসনকালে ডুয়েল লড়ে অকালপ্রয়াত প্রিয় কবিদের নিয়ে তার মাঝে যেমন হাহাকার আছে ঠিক তেমনি তিনি তার এলাকার ধর্মীয় নেতার সাথে তর্কে যাওয়ার উপকরণগুলোও মাথায় নিয়ে ঘুরেন ।
আমার কাছে বইয়ের তিনটা অংশ আছে বলে মনে হয়েছে । প্রথম অংশে অধ্যাপকের জীবন আর তার আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে । এই অংশে অনেক উপমা ব্যবহার করা হয়েছে । অনেক লেখক-কবিদের রেফারেন্স টানা হয়েছে । যারা এই কবি-লেখকদের লেখা পড়েছেন তাদের জন্য হয়ত এই অংশটা বেশি উপভোগ্য মনে হতে পারে । যারা পড়েননি তাদের কাছেও খারাপ লাগবে না, তবে ধরে থাকতে হবে । দ্বিতীয় অংশ পুরোটাই পনেরোই আগষ্ট নিয়ে । কী অদ্ভুতভাবে অধ্যাপকের মনের মাঝে দিয়ে লেখক আমাদের সেই দিনের ঘটনাগুলো বর্ণনা করে গেলেন । নরম মনের পাঠক বার বার হোঁচট খাবেন । চির অনিশ্চয়তায় ভোগা মানুষ ঘোরের মাঝে কত কিছু করে ফেলেন । কারও দাবার ঘুঁটি হিসেবে সে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা বোঝার উপায় থাকে না তার । এই অংশেই এক সময় অধ্যাপকের অবসেশন পনেরোই আগষ্ট এর মুল ঘটনা প্রবাহ থেকে এর পরবর্তী টুঙ্গিপাড়ার ঘটনার দিকে চলে যায় । বইয়ের তৃতীয় অংশটুকু হচ্ছে এই বইয়ের একমাত্র নতুন সৃষ্টি । প্রথম দুই অংশ যেখানে ইতিহাস, দর্শন আর রাজনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তৃতীয় অংশে সেখানে লেখকের কল্পনার ঘোড়া ছুটেছে । এখানেও বর্তমান বিশ্বরাজনীতির প্রভাব আছে । ব্যক্তিগতভাবে এই অংশটার কিছু জিনিস আমার কাছে প্রথম দুই অংশের মত জোরালো মনে হয় নি । লেখক তাড়াহুড়ো করেছেন বলে মনে হয়েছে । কাল্পনিক অংশ বলেই অনেক যুক্তিহীন ব্যাখ্যাতীত ব্যাপার মেনে নেওয়া যায় ।
একেবারে শেষে একটা অংশ আছে যেখানে লেখক উপন্যাসের চরিত্রদের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা করে গেছেন । আমি প্রথমে এই বইকে চার স্টার দিলেও পরে শুধু এই অংশটার জন্য এই রিভিউয়ের শুরুতে আরও "০.৭" (৪.৭) যোগ করলাম । এই অংশটা নাকি তিনি তার পান্ডুলিপি রিভিউ করা ব্রাত্য রাইসু এর অনুরোধে যোগ করেছেন । এই সংযোগটা সার্থক । পাঠকের মনে একটা পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয় ।
"বাংলাসাহিত্যে এমন লেখা আছে বলে মনে হয় না" - বাক্যটা নিয়ে আমি কিছুটা সন্দিহান । এই উপন্যাসকে একটা দার্শনিক থ্রিলার বলা যায়, যার মাঝে কল্পকাহিনী আছে, বিজ্ঞান আছে, রাজনীতির বর্ণনা আছে । এমন লেখা বাংলা সাহিত্যে আছে কিনা আমি জানি না কারণ আমি সেরকম পাঠক না ।
-A slow descent into Madness- Review of 'Phantoms of August' by Mashrur Arefin translated by Arunava Sinha
Phantoms of August starts innocuously, almost innocently. Maybe just like madness treads- silently it comes and envelopes your mind. Little specks that dance in front of eyes expand and coalesce to fall a curtain so dark upon your lids, you hardly recognize a truth in the heap of falsities. Similarly, here in this story, superbly translated by Master-Translator Sinha, a reader never gets to know if what they are reading rightfully belongs to the mind of the writer or if it has been borrowed from a certain taxi driver with whom the narrator spent sometime on his Mumbai visit.
On a restless August evening in Bangladeshi town of Bashundhara, a university professor is trying to translate Framz Kafka's Complete Stories. And like all those wield pens and keyboards, his mind keeps drifting away from the work at hand. His attention is pulled towards multitudes of birds hanging in various trees (many names are thrown around here), giving the reader the impression that the professor is a naturalist too. Have a gander- "The torment of memory simply would not let me focus on Kafka. The human heart can hold only so much sorrow at one time, and sometimes it turns out that even several years under the sun are not enough to fully accept the reality of someone’s death. ‘For with the perturbations of memory are linked the intermittencies of the heart,’ I remembered this line from Marcel Proust, though I could not recollect exactly where he said it in the seven volumes of his In Search of Lost Time."
Then the story moves a few days back in mind and we meet a driver Aiyar from Chennai, who stops his car and shows trees and birds to the professor. He tells professor about the major assassinations of South Asian politicians (Sheikh Mujibur Rehman being the talking point here) and from here the things start to go downhill. Professor starts hallucinating, visualizing a gun pointed at him by a North Indian Pahadi youth. Have a look at this paragraph- "For a moment, I wondered whether I’d been outside the taxi at all. Perhaps I had fallen asleep and had a dream. But Aiyar insisted that he had parked the car and I had rushed back to it from the general store like a madman. Was Aiyar lying? Was he kidding me? But why would he do that? Did my account of Bangabandhu’s horrifying murder on the night of 14–15 August prompt him to play a joke on me, invoking the supernatural?"
The book constantly plays with the reader. It's a dissection of a madness that engulfed a country and on paper, it engulfs the mind too. Here's my favorite quote- "Guilt, like sorrow, pain, grief and loneliness, is one of the mind’s primary negative emotions."
১. পড়তে পড়তে হয়ত ক্লান্ত হয়েছি, বার বার হয়ত একই লাইন একই বাক্য কয়েকবার পড়েছি। বোঝার চেষ্টা করেছি কারণ মাসরুর আরেফিনের "আগস্ট আবাছায়া'' বইটি আমাকে কিছু কিছু বিষয় নতুন করে ভাববার, নতুন করে বোঝার জন্য প্ররোচিত(!) করেছে। ক্লান্ত হয়েছি বইটি পড়ে কিন্তু বিরক্ত হইনি এতটুকু।
২. আমার একটি অভ্যাস বই পড়ার সময় একটি লাল রঙের কলম নিয়ে পড়তে বসা। যে লাইনটি ভাল লাগে, মনে নতুন করে দাগ রেখে যায় সেই লাইনটি আমি বইয়ের পাতায় লাল রঙে রাঙায়। যথারীতি এই বইটিতেও সেই কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু অচিরেই দেখলাম বইটির প্রত্যেকটি পাতা লাল কালিতে ছেয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে দাগানো বন্ধ করে দিলাম। আমি শুধু পড়তেই থাকলাম আর নতুন কিছু নিজের মধ্যে আবিষ্কার করলাম।
৩. বইটির রিভিউ পড়ে বইটি পড়ব কি পড়ব না তা সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম। পরে একসময় ভাবলাম, "ধুর ছাই! কি আর হবে? অনেক তো বাজে বই পড়ে এই ক্ষুদ্র জীবনের ততোধিক ক্ষুদ্র কিন্তু মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি। তাই চল মন, আরম্ভ করলাম পড়া শুরুর কার্যক্রম। ফলাফলে আমিই জিতলাম। না পড়লে থেকে যেত জীবদ্দশায় একটি "ভাল বই" পড়ার আফসোস।
৪. তবে বইয়ের 'মহিষ' এর বর্ণনাগুলো একটু কেমনতর ঠেকেছে। তবে লেখক যেহেতু ফ্রাৎস কাফকার গল্পের ভক্ত সেহেতু এটুকু জিনিসকে আমি প্রশ্রয় দিতেই পারি।
৫. একটি ভাল বইয়ের সার্থকতা নির্ভর করে সেটি পাঠককে কতটুকু নতুন করে সবকিছু ভাবাতে বাধ্য করবে এবং একই সাথে আরো নতুন কিছুর সন্ধান এনে দিবে। আগেই বলেছি যে 'আগস্ট আবছায়া' বইটি আমাকে নতুন করে সবকিছু ভাবাতে বাধ্য করেছে। এখানে নতুন যে দিগন্তের সন্ধান আমি পেয়েছি তা হল লেখক আমাকে পরিচয় করে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের নতুন নতুন দিক ও দিক উন্মোচনকারীদেরকে। ইভান তুর্গেনেভ, মার্সেল প্রুস্ত প্রভৃতি লেখকের কথা জানতে পারি এ বইয়ের মাধ্যমে। আমি নতুন করে সেই সব বিশ্ব সাহ্যিতিকদের সাহিত্য সুধা পানের জন্য পিপাসা বোধ করছি।
৬. এ বইয়ের একটি লাইন ছিল, "মার্সেল প্রুস্ত তার(লেখকের বন্ধু উইলিস) কাছে কঠিন লাগছে কিন্তু আবার অনেক ভালোও লাগছে"। বইটি সম্পর্কে সারসংক্ষেপ করতে গেলে আমি এই বাক্যটিকেই অবলম্বন করব......
আমার পড়া অন্যতম সেরা বইয়ের একটি হয়ে থাকবে আগস্ট আবছায়া। বিশ্ব সাহিত্যে যে ধরণের বই লেখা হয়ে থাকে সেটা এখন পর্যন্ত আমরা বাংলা সাহিত্যে খুবই অল্প পেয়েছি অন্তত বিষয় বৈচিত্র্য, ভাষাভঙ্গিতে। ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গভীরতম বেদনার দিন। খুব কম আখ্যানে আমরা সেই মর্মবেদনা ভালো করে অনুভব করতে পেরেছি। মাসরুর আরেফিন যিনি কিনা আগে কোন উপন্যাস লিখেননি তিনি শুরুই করলেন একটি কঠিন বিষয় দিয়ে। তারপরেও তিনি যে গল্প বলতে চেয়েছেন সেই গল্পের গ্রিপ তিনি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছেন। এই যে আমাদের ক্ষুদ্র জীবন তার ভেতর যে হিংসা, ক্ষোভ, ষড়যন্ত্র কুটিলতা তা তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন ১৫ই আগস্টকে সুতা ধরে। আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে, বেদনায় সিক্ত করেছে, ভাবিয়েছে । এইটিই মনে হয় গল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। এই বই মনে করিয়ে দেয় কাফকার ইন পেনাল কলোনি কে, কাজুও ইশিগুরোর আনকন্সোল্ডকে কিংবা আমাদের গোরাকে। গল্পের শুরুতে শক্ত চরিত্র নির্মাণ, তারপর ঘাম ঝরানো মধ্যভাগ আর শেষ দিকে উদাসী হালকা করে তোলা এই হল আগস্ট আবছা। তবে বারবার বিদেশি লেখকদের তুলে ধরা গল্পে দৃষ্টিকটু লেগেছে।লেখক বিষয়টি আরেকটু স্বল্প পরিসরে নিয়ে আসতে পারতেন। আর বাঙলা সাহিত্যে এমন উপন্যাস নেই-এ ধরণের উচ্চবাচ্য খুব ভালো শোনায় না তাহলে চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াবনামা, অলীক মানুষ,ঢোড়াই চরিত মানুষ এর মত উপন্যাসের প্রতি অবিচার করা হয়। একটি জিনিস খুব ভাবায় যে কাফকা আর কত অনুসারী তৈরি করবেন মার্কেজ, কামু, নভোকভ, ইশিগুরো আর মনে হয় মাসরুর। 😋 পড়তে ভুলবেন না যেন আবছায়ার গল্প।
The Phantoms Of August By Bangladeshi author Mashrur Arefin & translated by Arunava Sinha is one of a kind.
In August, our narrator feels most restless. There are so many bitter memories. Even when he's busy with his translation project, he takes a seat back and remembers the days of Mumbai when he met a Taxi driver. And that day, changed his life.
While travelling, this driver shared a few moments of life experiences. How's working almost 22 hours a day & his ancestral village.
But in this conversation, they dived into something political Indira Gandhi and the assassination of Sheikh Mujibar Rahman.
A taxi driver's knowledge about this, was quite astonishing to him. But again only after that, the narrator started to experience THINGS
It seems like someone is changing the plot for him. Or rewriting things. But as the narrator isn't much of believer, he starts to give the benefit of doubts to parallel universe.
The whole story of the book we get to know from the narrator. This unnamed narrator is a professor & translator.
Now, as it's written in 1st person POV, the story often feels lengthy as the narrator keeps on going back and forth to his life, political scenarios and some of the global finest literature work.
On the other hand the ending is another WTH moment. But again being a Murakami fan, I'm not surprised.
If you want little bit of sci-fic and thriller, loads of Philosophy, bucket full of conspiracy theory, pick this one up.
Phantoms of August by Mashrur Arefin is a thought-provoking novel that blends historical fiction, literary drama, and hard-hitting realism. The book revolves around the intricate lives of its characters, exploring themes of identity, love, loss, and the sheer weight of history.
The story unfolds against the backdrop of a war-torn Bangladesh, where political unrest and social turmoil shape the personal stories of the characters. Arefin creates a vivid and haunting setting, where the past and present are intertwined, and the boundaries between reality and memory are often blurred.
The characters are multifaceted and complex, with each one of them struggling with their demons and at the same time, grappling with societal pressures that surround them. Arefin deep dives into the psyche of his characters and wades us through their emotional journeys.
This book is perfect for readers who deeply engage with their novels as Arefin takes us between different timelines and perspectives, which can be a bit disorienting for normal readers.
Overall, Phantoms of August is a beautifully written book and leaves an ever-lasting impression on its readers, asking us tough questions about our histories and prompting us to confront them.
Phantoms of August by Mashrur Arefin is a Bengali novel that beautifully blends historical events with magical realism and deep psychological insights. Set in the turbulent times of August 1975 in Bangladesh, the story explores the aftermath of Sheikh Mujibur Rahman’s assassination. It captures how this national tragedy deeply affected the personal lives of its characters while reflecting the struggles of an entire society.
The novel shows how a nation grieves and how some wounds, even those shared by a whole country, never fully heal. History plays a big role in the story, but it’s told in a way that feels unsettling, keeping readers engaged. These “phantoms” represent not just forgotten lives but also memories of a painful past.
The beauty of the book lies in its portrayal of brokenness. It makes readers think about memory, regret, and the guilt that history carries. It’s not just a story of loss but also about fading hope, with a lingering sadness that feels almost impossible to escape.
Reading translations, has been a deeply immersive and humbling experience for me, an opportunity to discover something significant that wouldn't have been possible if not translated to a common or widely read language. Phantoms of August, is one such compelling example, a novel exploring Bangladesh's turbulent history.
Phantoms of August explores the assassination of Sheikh Mujibur Rehman, the founding father of Bangladesh along with his family. We have an unnamed protagonist struggling to find ground and make a sense of his life, he is on a journey to unravel the past that decided the fate of his nation. Persistant melancholy, grief, loss along with the unsettling events of political disturbance pave the way for the plot to progress in a transcendental fashion. Strangely, this doesn't depress but leaves the mind in a hypnotised state.
Arunava Sinha's brilliance at striking the right cords whether is the emotions or the vivid portrayal of events throughout the translation is the cherry on the cake. The plot- brilliant. Translation - emotive. Book- Highly recommended.
One of the best books I've read so far. This will definitely go in my top list. The unnamed narrator's obsession with the assassination of Sheikh Mujibur Rahman and family, his passion for literature/literary characters and the melding of both as his mind descends in fits of hallucinations is a fantastic medley which has to be read to fully appreciate it. Flawless translation. I hope there will be more from Mashrur Arefin. The book is dark yet intelligent.
I bought it on the 2nd day! Started...now landed on 101 page...can't read 2-3 pages at a time as it needs to think, rethink what I'm absorbing...it's not that kind of novel what you can read in a relax mood sitting in a rocking chair...rather you need to be in fresh mood to expect the unexpected! Loving the inner thrill of narratives...it's a very unique book...hats off to Mashrur Arefin for revealing a new chapter in Bangla Literature!!
a strange weird book, nonetheless a frustrating read. The occassional brilliance of the prose is overwhelmed by the plot that makes little sense. The chapter 3 which consists of the killing of Bangabandhu is really great, however it comes after 200 pages of ramblings that go nowhere but is tolerable because it covers stuffs by proust, pushkin, Bibhutibhushan, kafka, rilke etc. The book turns batshit crazy in the last chapter which suddenly makes it part scifi,part political thriller. It tries to connect the plot points which it never got to establish.
অগাস্ট আবছায়া।
মাশরুর আরেফিন
বইটার কথা প্রথম জানতে পারি, হাসান আজিজুল হকের বইয়ের পিছনের মন্তব্য নিয়ে কন্ট্রভারসির পোস্ট থেকে। একটু ঘাটতেই বের হল হাসান আজিজুল হক নাকি টাকা নিয়ে মন্তব্য দিয়ে তারপর সেটা ডিনাই করেছেন। টাকা দিয়ে মন্তব্য পাশ্চাত্য তে খুবি কমন ব্যাপার স্টিফেন কিং, নিল গেইমান অনেকেই করে থাকেন, কিন্ত আমার কৌতুহল জাগল লেখকের একটা মন্তব্যে, তিনি দাবি করেছেন এরকম বই বাংলা ভাষায় আর লেখা হয়নাই, তার ফেসবুক পেইজে ও অনেকে তা দাবি করেছেন। লেখকের আগের সব বইয়ের কথা আমি শুনেছি কিন্ত কখনও পড়া হয় নাই, মূলত দাম অনেক বেশি তাই, এবার সেটা বড় বাধা না, ডিস্কাউন্ট সহ ৬০০ টাকা হলেও, ডলারে কামান পারিশ্রমিকে তা একটা ভরপেট মিলের চেয়ে কম হয়, কিন্ত বইটা টরন্টোতে পৌছানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ, এক হিতাকাঙ্ক্ষীর বদান্যতায় হাতে পেলাম এবং সাথে সাথে পড়া শুরু করলাম।
আমি লেখকের সাথে একটা বিষয়ে সহমত, আসলেই বাংলা ভাষায় এরকম করে বই কেউ লেখেনা এটলিস্ট বাংলাদেশে না। বইটা ৩২০ পাতার কিন্ত এটাতে লাইন গ্যাপ বেশি দিয়ে বড় করার প্রচেষ্টা নেই। sentence প্রায় সব জটিল বাক্যে লেখা, তিন থেকে পাচ লাইনের। একটা লাইন পরে অনেক্ক্ষণসেটা নিয়ে চিন্তা করা যায়। মোট কথা ৩২০ পাতা মানে ৩২০ পাতাই গদ্য। প্রতি লাইনে লাইনে প্রুস্ত, রিল্কে,পুস্কিন,কাফকা,বিভুতিভূষন, এবং আরও না পড়া লেখকেরলেখা থেকে ঊদ্ধৃতি (নাম গুলার বানান ভুলএর জন্য ক্ষমাপ্রার্থি)। এসব জায়গা গুলো আমার খুব ভালো লেগেছে কারন বিভুতিভূষন ছারা আর কিছু আমার পড়া ছিলনা। লেখকের এর আগের সব কাজ অনুবাদ এবং সবগুলা তেই তিনি নানা রকম সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন তার পাশ্চাত্য সাহিত্যের দখল আসলেই ঈর্ষনীয়। লেখা লেখি ছাড়াও বরিশাল ক্যাডেট থেকে পাশ করে তিনি গরেছেন অসম্ভব সফল ক্যারিয়ার, এখন কর্মরত আছেন দি সিটি ব্যাংক এর সিইও হিসা, এরকম ব্যাস্ত একটা মানুষ কিভাবে এরকম একটা বই লিখলেন আল্লাহ জানেন।
অনেক বেশি কথা বলে ফেললাম মূল আলোচনার আগে এখন আসা যাক মূল বইয়ে। এত বড় বই হলেও চ্যাপ্টার মাত্র চার যার প্রতিটি বই হতে পারত। প্রথম দুই চ্যাপ্টারএ ২০০ পৃষ্ঠা জুরে বলতে গেলে কিছুই হয়না অন্য দিকে শেষ দুইটি তে একটু বেশিই ঘটে। bongobondhu এর মৃত্যু নিয়ে তৃতীয় চ্যাপ্টার টা সবচেয়ে ভালো। কিন্ত প্রথম দুইটা চ্যাপ্টার খুবই মন্থর গতির, বলতে গেলে কিছুই নাই প্রুস্ত, কাফকা ইত্যাদি নিয়ে বর্ননা ছারা। আর শেষ চ্যাপ্টার যেটা একটা পলিটিকাল থ্রিলার এ রূপ নেয় সেটা একটা আটার গারবেজ। অনুবাদক বিধায় তার লেখা পরলে কেন জানি মনে হয় অনুবাদ পরছি।
('at this point i need to abandon typing in Bengali, after trying for 2 minutes couldnt write Bangobandhu in Bengali). The story revolves around a private university teacher of philosophy, he is unnamed and straight out of the pages of Kafka. Although its not mentioned but it seemed like he is schizophrenic, drawing strange relationships between the killing of Bangabandhu and events of history and literature. What happens in the professor's life is not at all interesting. The writer continuously switch between translations of others works and relate them to the professor's life, these parts were really good but whenever we go into the real story it becomes frustratingly boring and uninteresting. I just wish someone with good editing skill came and fixed the book out. The writer combined a lot of stuffs by others with his own rambling, in the end creating a joga-khichuri and sadly the works of others stood out far better than his.
The ending of the book felt also perplexing, confusing and rushed. It combined scifi elements with political thriller with a lot of conspiracy theories which didnt work for me.
In the end i would say that i wrote what i felt about this book and it is not a literary criticism. Another reader may feel completely different. I felt the same about Zia Haider Rahman's In the light of What We Know which was universally praised but i found an effort by the writer to prove how intellectually superior he is.
আগস্ট আবছায়া---নামটাই কি দারুণ! আবছায়া আগস্ট শুনতেও দারুণ! কিন্তু আগস্ট আবছায়া শুনতে জানালায় জমে থাকা বেদনাহত কুয়াশাগুলোর মত। প্রচ্ছদটা কতটা নীরব! কেমন গভীর শূন্যতা আর বিশাল পৃথিবীর কেমন এক ভোরের আহবানের মিশেল! ভালো লাগা তৈরি হয় বইটা ছুঁয়ে। আগস্ট আবছায়া নামটা ভেতরে গেঁথে গেছে। শুরু করেই পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বিস্ময়ে আমি থমকে পড়ি। ওহ্ মাই গড! কতদিন এমন কিছু পড়ি নাই? সেই কবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা, চিলেকোঠার সেপাই, শহীদুল জহিরের সে রাতে পূর্ণিমা ছিল, মাহমুদুল হকের জীবন আমার বোন, শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন, পড়া হয়েছিল এতটা নিবিড় করে! চোখ ভিজে আসতে থাকে গর্বে যে এই ২০১৯ এ কেউ একজন বাংলা সাহিত্যে এ কি সৃ্ষ্টি করে ফেলেছেন! আমার যতটা এক্সপেকটেসন ছিল তা ভেঙ্গে-চূড়ে আগস্ট আবছায়া এগি��়ে চলে আরও উঁ���ুতে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে অনেক বছর পর পুনরায় অহংকার করতে পারি সমসাময়িক লেখা নিয়ে। _______________ আগস্ট আবছায়ায় কয়েকটি বিষয়/বোধ সমান্তরালে আগায় বা মিশে থাকে। ১. লেখকের বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে অবসেসন, ২. অর্থহীন পৃথিবীর অর্থময়তার রুপ দিয়ে/প্রলেপ দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার বিভ্রম, ৩. যুগ-যুগ ধরে মানুষের ক্রুরতা/হিংস্রতাই একটা সিস্টেম দাঁড় করায়, ৪. চিরন্তন বৈষম্য ধনী-দরিদ্রে যা অমোচনীয়ই, ৫. অসভ্য এই পৃথিবী থেকে মুখ ফিরিয়ে বেঁচে থাকতে সাহিত্যে/সংগীতে/পাখিতে/গাছের কাছে বার বার ফিরে এসে লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা। ৬. ধনী রাষ্ট্রগুলোর ছকে বাধ্য হয়ে চলা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের, ৭. মানুষের যুক্তি-যুক্তি খেলা, জীবনের অর্থ দাঁড় করানোর চেষ্টা আপাত ঘৃণার এই পৃথিবীতে নিজেদের নোংরামি ঢাকতে, ৮. ঘাড়ের উপর মাথা বসিয়ে দেয়া অণ্ডকোষ ঝুলিয়ে চলা মানুষের সঙ্গম প্রিয়তা/প্রেম প্রেম খেলা, ৯. অসুস্থ নগর/পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেই দিন আর রাতের মধ্যে শরীরটা ঢুকিয়ে দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জাস্ট বেঁচে থাকা, ১০. বিশ্বাসহীনতা,অতি বিশ্বাস এর কিম্ভূত এক সামাজিক জীবন নিয়ে কনফিউজড হয়ে আমাদের চলা। ________________ বইয়ের শেষ দিকে লেনদি লাগতে পারে। বাট ওখানে এই লেনদি জায়গাটা না থাকলেও অপূর্ণাঙ্গ থাকত আগস্ট আবছায়া। অইটুকু লেনদি জায়গার প্রয়োজন ছিল। কি নাই আগস্ট আবছায়ায়? ম্যাজিক রিয়ালিজম, এক্সিসটেনসিয়ালিজম, স্যুরিয়ালিজম...সব। পুরো পৃথিবীটা যেন আছে আগস্টের আবছায়ায়। লেখকের বোধ, অগাধ পড়াশোনা বিশ্বের বিভিন্ন সাহিত্য নিয়ে, তার চারপাশের দেখা জীবন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার অবসেসন সাবলীলভাবে চলে এসেছে। এটা বিস্ময়কর! আগস্টের আবছায়া বিপুল আশাজাগানিয়া আমাদের মত পাঠকদের জন্য যারা বইমেলা এলে তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকি নতুন কোন ক্ল্যাসিক উপন্যাসের জন্য। নিঃসন্দেহে আগস্ট আবছায় বাংলা সাহিত্যের সর্বশেষ কালোত্তীর্ণ সংযোজন। _____________________
মাসরুর আরেফিন বিস্ময়কর দার্শনিক পলিটিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস লিখেছেন, নিশ্চিত করেই বলা যায় এটি বাংলায় নতুনভাবে সংযোজিত মহামুল্যবান ক্লাসিক। ভাষাগত ইউনিকনেস না পাইলেও (আমি পাচ্ছিনা), ঘটনাপ্রবাহের প্রবল আরহন এবং মনস্তাত্তিক অবরহনের বৈদ্যুতিক সংঘাত উপন্যাসের বহু মাত্রিক বাস্তবতাকে হিসটোরিক্যাল ইম্মরটালিটি দেয়। যে পথে লেখক চলেছেন, বিশ্বের প্রধানতম লেখকেরা বোধ করি এরকম মানবজাতির সমগ্র ইতিহাসের গোধুলি ধরে আলোর ধুতি টেনে নামিয়ে দেখিয়েছেন সাম্রাজ্য এবং সভ্যতার অন্ধকারে বর্বরতার নির্দয় নগ্নতা। বাংলা সাহিত্যে এরকম সহসা ঘটে বলে আমি জানিনা। আগস্ট আবছায়া ইজ আ ফেনোমেনোন আফটার অল। শেষ করি নাই, আরো দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা বাকি পৃষ্ঠাগুলায় আশা করছি।
বইটা বিশ্বসাহিত্য নিবিড় ভাবে পাঠের অভিজ্ঞতার বয়ান। বিভিন্ন সময়কালে সাহিত্যের পটভূমি ধরে আবেগময় হিস্তেরিয়া। অনেক অসামঞ্জ্যস্য খেয়াল করছি, অনেক বাতুলতাও আছে, আবেগের অতিরিক্ত বিস্ফরন আছে, পলিতিকেলি গোলমাল চিন্তা আছে, ধর্ম বিষয়ক নতুন কথা নাই, প্রেম ও যৌনতার ক্লাসিক্যাল ভাব ধারনাই প্রবল, কিন্তু এত বিস্তীর্ণ প্রেক্ষাপট ধরে ঘটনার রেশ টেনেছেন যে পশ্চিম প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ওরিয়েন্টাল সাহিত্য দিস্করসে। চেতনা যে বিশ্বায়িত, তার মানচিত্র পুরো একটাই, বিভাজন কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা, সেটা এই বইতে স্পষ্ট। আরও বহুবিধ কারনে বইটা একটা ইউনিভারসাল হেজিমনি তৈরি করে যা মানবিকতার প্রাথমিক ও জটিল প্রস্নগুলিকে সামনে আনে। সবচেয়ে বড় কথা, বইটা হাই ইস্পিরিতেদ এন্তারতেইন্মেন্ত, তবে সেটা নিবিষ্ট পাঠককুলের ভাল লাগার কথা, যারা বৈশ্বিক চেতনাপ্রবাহে ঋদ্ধ।
লেখক মাসরুর আরেফিন স্যার আমার কাছে একেবারেই নতুন নাম। উনার অন্য একটি ভিন্ন পরিচয়ের সুবাদে দুই বার খুব কাছে থেকে বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়। ক্লিন শেভড এই ভদ্রলোক লেখালেখিও করেন এটা আমার ধারনার অতীত। ৩২৮ পৃষ্ঠার আগস্ট আবছায়া বইটি হাতে পেয়ে ভাবছিলাম ৩ দিনে কাভার করব, কিন্তু আগস্টের ঘোরেই ৫ দিন লাগল। অনেক গুলো বিদেশি বইয়ের সংমিশ্রণ সহ লেখকের সুন্দর, সাবলীল, এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ লেখনিতে উঠে এসেছে প্রকৃতি প্রেম, প্রেম ভালবাসা, বাংলাদেশের ইতিহাসের কলংকিত অধ্যায় সহ সমাজ সভ্যতার বাস্তব চিত্র। বইটি পরতে গিয়ে কখনো মনে হয়েছে আহামদ ছফার পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ নতুন আঙ্গিকে অনুদিত হয়েছে, আবার কোথাও মনে হয়েছে সেলিনা হোসেন জেলেপারা বাদ দিয়ে ঘাটকোপারের কোম্পানি গ্যারেজ নিয়ে লিখছেন, পাওলো কোয়েলহোর অ্যালকেমিস্টকেও মনে পরতেছিল বার বার, আবার মনে হয়েছে ওদের কেউ না!!! এটা স্রেফ মাসরুর আরেফিন। সম্পুর্ন ব্যতিক্রম, একধম ভিন্ন ধরনের, গতানুগতিক ধারার বাইরের একটি উপন্যাস। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম এখনো আছি। তবে মেহেরনাজের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত গুলি আরো রুচিসম্মত হতে পারতো, ইব্রাহীম এর বক্তব্যকে আরও জোরাল ভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত ছিল যেটা অনেকটা ইতিহাস বিকৃতির সামিল। আর পনেরই আগস্টের বর্ণনায় উত্তম পুরুষ বাদ দিলে আমি শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেল থেকে এখানে নতুন কিছুই পাইনি। অন্যসবকিছু মিলিয়ে বইটি আমার অসম্ভব রকম ভাল লেগেছে, লেখকের অনুবাদ গুলি যেগুলি প্রকাশিত হয়েছে এবং হবে ওইগুলির অপেক্ষায় থাকব, বিশেষ করে কাফকা।
আগস্ট আবছায়া নিয়ে লেখার মতো দুঃসাহস অর্জন করতে চেষ্টা করছিলাম অনেকদিন ধরে। আমি ভালো পাঠক হলেও ভালো লেখক নয় বলেই বলতে পারছি না। তবু কিছু কথা বলি বাংলা সাহিত্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হিসেবে আগস্ট আবছায়া রয়ে যাবে। উপন্যাসের পাতায় পাতায় যে কী পরিমাণ জ্ঞান গবেষণার প্রয়োজন হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। লেখক প্রচুর পড়াশোনা জানা লোক লেখা পড়লেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বইটা একই সাথে দর্শনের, প্রেমের উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন আবার রাজনৈতিক উপন্যাসও বটে। বঙ্গবন্ধু হত্যা, আরও বিখ্যাত অনেকের হত্যাকে এমন এক সূতোয় এনেছেন যেন এই আগস্ট মাসটা পৃথিবীর জন্য অভিশাপের এক মাস।
শুরুতে আয়ারকে নিয়ে লেখা যে কি না দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমান। পরিশ্রমের কারণে। আয়ার চরিত্র এমন এক চরিত্র যাকে কখনও মনে হবে খুবই ভালো মানুষ আবার দেখানো হচ্ছে লোভী। আসলে মানুষ যে কেমন এটা উপন্যাস পড়েই বুঝা যাবে। এই উপন্যাস পড়লে আর মানুষের প্রতি কারও অভিযোগ থাকবে না। ভাববে মানুষ এমনই হয়।
সুরভী ছেত্রী আর মেহেরনাজ দুইজন প্রেমিকা উপন্যাসের নায়কের। এই দুই চরিত্রও ইন্টারেস্টিং। শেষ পর্যন্তও আমি মেহেরনাজকে চেয়েছিলাম মিলনে। কিন্তু মেহেরনাজ এমন এক বিচ্ছেদ ঘটায় যেটা ভাবনার সীমা ছাড়িয়ে। খুবই হতবিহ্বল হয়ে পড়ি এই ভেবে এটা কী করলো!
বঙ্গবন্ধু হত্যার বর্ণনায় যা এসেছে সেটুক পড়ে কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয়েছিল।