পাঠ্যপুস্তকে আমাদের শুধু ভাল কেরানী, পুঁজিবাদের ভাল সেবক হওয়া শেখায়। যেন জীবনে চাকরগিরির ক্যারিয়ারই সব। টাকা কামানোই একমাত্র উদ্দেশ্য। বেশি বেশি বস্তু কেনাই কামিয়াবি। ভেবে দেখেন চাকরি যেমন একটা মেজর ইভেন্ট আমাদের জীবনে, বিয়েও কি একটা মেজর ইভেন্ট না? সন্তান জন্ম দেয়া এবং পালন করাও কি একটা মেজর টাস্ক নয় জীবনের? তাহলে আমাদের প্রচলিত শিক্ষা যদি ‘ভবিষ্যত জীবনের জন্য আমাদের গড়ে তোলা’রই দাবি করে, তবে ভালো চাকুরের সাথে ভালো স্বামী/ভালো বাবা/ ভালো সন্তান হবার সিলেবাস কোথায়? তার মানে ওরা আপনার সুন্দর জীবন চায় না, চায় শুধু আপনার সু্ন্দর সার্ভিসটুকু। ষাট বছর হলে ছিবড়ে ফেলে দেবে ছুঁড়ে, ব্যস। ওদের কিচ্ছু যায় আসে না, যে আপনার ছেলে মানুষ হল কি না। আপনার ডিভোর্সে ওদের কিসসু আসে যায় না। আপনি আপনার বৃদ্ধা মা-কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠালেও ওরা দেখবে না। স্রেফ আপনার কাজ নেবার জন্যই এত আয়োজন, এতকিছু। এই বইটি আমাদের সিলেবাসের সেই অসূ্র্যম্পশ্যা অংশটুকু নিয়েই, যেগুলো কখনও আলোর মুখ দেখেনি।
ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাবস্থা। আমাদের আচার-আচরণ, চলা-ফেরা, কথা-বার্তাসহ প্রতিটি কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হবে এর সবকিছুরই নির্দেশনা দেয়া আছে ইসলামে। কিন্তু আমরা এই দ্বীনের কতটুকু জানি বা জানার চেষ্টা করি আর জানলেও কতটুকুইবা মেনে চলি! আমাদের অধিকাংশই গাফেল! আমরা এই শান্তির দ্বীনকে ছেড়ে গ্রহণ করেছি পশ্চিমা সংস্কৃতি আর তাই আমাদের জীবনেও নেমে এসেছে অশান্তি।
ইসলাম মানেই হচ্ছে শান্তি। আর তাই যখনই আমরা ইসলাম অনুযায়ী অর্থাৎ কুরআন ও রাসূলﷺ এর সুন্নাত অনুসারে জীবনকে সাজাবো তখনই আমরা পাবো এমন এক জীবন - যে জীবন জুড়ায় নয়ন।
▪কুররাতু আইয়ুন-- ইসলাম অনুযায়ী যারা পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে নিজেকে সাজাতে চান তাদের জন্য এই বই।
▪"মুসলিম ঘরের সন্তান মুসলিম থাকবে কি না, কাফেরের সন্তান মুসলিম হবে কি না - দুটোই নির্ভর করে একটা আমলের উপর - দাওয়াহ। সব নবীর উম্মত গোমরাহ হবার আগে মুসলিমই ছিলো। দাওয়াহ অভাবে কাফের হয়ে গেছে মুসলিমদের পরবর্তী প্রজন্ম। আবার নবী এসেছেন। দাওয়াহ শুরু হয়েছে, কাফেরের সন্তানেরা মুসলিম হয়েছেন। দাওয়াহ না থাকলে মুসলিম বংশের সন্তানও নাস্তিক-মুরতাদ হয়ে যাবে।"-- কুররাতু আইয়ুন
কুররাতু আইয়ুন বই এর বিষয়বস্তু গুলো আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।বইটিতে ভূমিকাসহ মোটমাট ১২ টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়টিই ছিল পারিবারিক দাওয়াহ নিয়ে। আমরা যখন পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম অনুসরণ করতে চাই তখন প্রথম বাধাটিই আসে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি আমাদের পরিবার দ্বীনদার না হয়ে থাকে তাহলে। আর তখনই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। প্রথমে নিজেকে দ্বীনের উপরে মজবুত করতে হবে এরপর ধৈর্য সহকারে নিজের পরিবারকে দ্বীনের দাওয়াহ দিতে হবে এবং তাদের জন্য দুআ করতে হবে। মনে রাখবেন আজকে যদি আপনি আপনার পরিবারকে দ্বীনের দাওয়াহ না দেন আর সঠিক পথে চলার আহ্বান না করেন তবে যেদিন আপনার সামনে আপনার পরিবারকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নেওয়া হবে সেদিন কেঁদে কেটেও লাভ হবে না। কীভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন, বয়স্ক সন্তান, স্বামী বা স্ত্রীকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে হবে এ ব্যাপারে কুররাতু আইয়ুন বইতে বিস্তারিত দেখুন।
দ্বিতীয় অধ্যায়টি হচ্ছে বিয়ে নিয়ে। আমাদের সমাজে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার ক্ষেত্রে যা হয়, ছেলে পক্ষের মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই মিলে আসে মেয়েকে দেখতে কিন্তু ছেলের বাবা-ভাই তাদেরতো মেয়েকে দেখা জায়েজ নয় কারণ তারা তো আর মেয়ের মাহরাম না। যেখানে প্রথমেই ইসলামের বিধানকে অবমাননা করে মেয়েকে দেখা হয় এবং দেখানো হয় সেই বিয়েতে বরকত কিভাবে আসবে! এছাড়া বাগদান, গায়ে হলুদ এগুলো তো স্পষ্ট হিন্দু সংস্কৃতি থেকে প্রবিষ্ট কিন্তু নিজেকে মুসলিম দাবী করেও এসব অনুষ্ঠান মানুষ ধুমধাম করে আয়োজন করেই যাচ্ছে। বিয়ে হচ্ছে ক্লাবে কিন্তু মসজিদে বিয়ে যে সুন্নাহ তা কি সবাই ভুলে গেছে! মেয়ের বিয়েতে মেয়ের বাবার কোনো খরচ ইসলাম রাখেনি। তাই যৌতুকের তো কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু পক্ষান্তরে কি হচ্ছে আমাদের সমাজে!
আলহামদুলিল্লাহ, বইটি যতই পড়েছি ততোই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। মাত্র ১১৮ পৃষ্ঠার একটি বই কিন্তু কি আছে যা নেই এই বইতে! বিয়ের ক্ষেত্রে, বিয়ের পূর্বে করনীয় অর্থাৎ নিয়ত ,দুআ ও আমল ইত্যাদি থেকে শুরু করে পাত্রী নির্বাচন, গায়ে হলুদ, মসজিদে বিয়ে, বরযাত্রী, যৌতুক, মাহরসহ সব বিষয়ের ব্যাপারেই লেখা আছে বইটিতে।যারা এখনো বিয়ে করেননি বা যারা সামনে বিয়ে করবে অথবা যারা নতুন বিয়ে করেছে তাদের জন্য এই বইটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয় অধ্যায়টি হচ্ছে বরফ গলবেই। পারিবারিক জীবনে আমাদেরকে কীরকম হতে হবে এই ব্যাপারে এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের প্রথম অংশে ভাইদের প্রতি, দ্বিতীয় অংশ বোনদের প্রতি এবং তৃতীয় অংশে হবু শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ▪"আমার মা আল্লাহ না করুন শয্যাশায়ী হলে, আমি নিজেই আমার বউকে কাছে ঘেঁষতেও দেব না। খাওয়ানো, পায়খানা সাফ সব নিজের হাতে করবো। নিয়ত এমন থাকা চাই। জান্নাত কামানোর এমন সুবর্ণ সুযোগ বউকে কেন দেবো। চাকরি ছুটি নিয়ে, দরকার হলে ছেড়েও।"--কুররাতু আইয়ুন.
চতুর্থ অধ্যায়টি হচ্ছে আঁতুড়ঘর: ভেতরে ও বাইরে। এ অধ্যায়ে গর্ভাবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় নেক আমল, দুআ, খাবারদাবার, সতর্কতা, প্রসবকাল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাছাড়াও প্রসবপরবর্তী করনীয় নিয়ে ইসলামীক এবং বৈজ্ঞানিক উভয় ভাবেই আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আসে মানবশিল্প টপিকটি। পশ্চিমা পুঁজিবাদ আমাদেরকে শিখিয়েছে গৃহিণী মানেই তুমি বেকার ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু জানেন প্রতিটি গৃহিণীই এক একটি মানবশিল্পী যে তার সন্তানকে লালন পালন করে সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে মানব হতে মানুষে পরিণত করে । "কেবল এই মানবশিল্পের খাতিরেই আপনাকে ইসলাম অব্যাহতি দিয়েছে রোজগারের বাধ্যবাধকতা থেকে, যুদ্ধের দ্বায়িত্ব, শাসনের গুরুভার থেকে। মাকসাদে শারিয়াহ বা ইসলামী সিস্টেমের পাঁচটি মৌলিক উদ্দেশ্যর একটা 'আন নাছল' বা প্রজন্ম, অর্থাৎ মানবশিল্প। ইসলাম মানব চায় না, মানুষ চায়।"--কুররাতু আইয়ুন
"নারীকে পেশা নেবার অনুমোদন ইসলাম দেয়। তবে সে পেশা অফিসে পুরুষ কলিগদের সাথে ৯ টা-৫ টা দাসত্ব নয়। সেটা ঘরোয়া পরিবেশে, স্বাধীনভাবে, ইচ্ছেমতো, যেদিন ভালো লাগে পেশা করলাম, যেদিন ভালো লাগছে না করলাম না এবং সৃজনশীল কাজ - ডাটা এন্ট্রি বা কেরানিগিরি না।"--কুররাতু আইয়ুন
পঞ্চম অধ্যায়টি হচ্ছে সন্তানের তারবিয়াহ(দীক্ষা) নিয়ে। ▪"শিক্ষা দেবার জন্য অনেকেই আছে। কিন্তু দীক্ষর জন্য আসলেই আপনি ছাড়া আর কেউ নেই, খেয়াল করে দেখুন।"--কুররাতু আইয়ুন। সন্তানকে সুন্নাহের সাথে পরিচিত করা এবং সন্তানের আকীদা গড়ে তোলার ব্যাপারে এ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। ▪"আর যা আপনি তাকে এখন শেখাবেন সেটাই সে সারাজীবন লালন করবে, সেটাই তার ব্যক্তিত্ব গঠন করবে, সেটাই হবে 'সে'। এই সময় তাকে ব্যাবসায়ীদের হাতে তুলে না দিয়ে আপনি তাকে শেখান।"--কুররাতু আইয়ুন.
এরপর আসে সন্তানের শিক্ষা।এ অধ্যায়ে লেখক সন্তানের সু শিক্ষার জন্য অনেক ভালো ভালো উপদেশ দিয়েছেন। যেমন সন্তানকে বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী করে তোলা, সন্তানের মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা, বাচ্চাদের হাতে খেলনা পিস্তল না দিয়ে বই তুলে দেয়া ইত্যাদি। ▪"আর সন্তানকে অভিশাপ দিবেন না, ডিমরালাইজ করবেন না। তোর দ্বারা কিছু হবে না- এসব বলবেন না। দুআ করবেন, পিতা-মাতার দুআ সন্তানের জন্য কবুল।"--কুররাতু আইয়ুন.
ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ : প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতি অধ্যায়টি এককথায় অসাধারণ। লেখক অত্যন্ত সুন্দরভাবে নাস্তিক এবং ইসলামবিদ্বেষীদের মানসিকতাকে তুলে ধরেছেন। ▪"নাস্তিকটা যে প্রশ্নটা তুলেছে, সেটা তো সে জানার জন্য তোলেনি। জানতেই যদি চাইতো, তবে ফেইসবুকে পোস্ট দিতো না। উপযুক্ত লোকের কাছে প্রশ্নটা করতো। সে প্রশ্নটা পোস্ট করেছে ট্রল করার জন্য, টিটকারি দিয়ে সমমনাদের সাপোর্ট আর মুমিনদের কষ্ট দেবার জন্য। আপনি কমেন্টে সময় বের করছেন মানেই সে সফল, সে আপনাকে কষ্ট দিতে পেরেছে। আপনি Angry রিঅ্যাক্ট দিচ্ছেন। সে খুশি, এটাই তো সে চেয়েছিলো।"--কুররাতু আইয়ুন.
প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতির মধ্যে কিছু হলো: নাস্তিক এবং ইসলামবিদ্বেশীদেরকে আনফলো করা তাদের পোষ্টে কম���ন্ট, রিঅ্যাক্ট, শেয়ার না করা।নাস্তিকদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেয়া পারলে দুআ করা, গালি না দেয়া। ব্যক্তিগতভাবে ইলম চর্চার উপর গুরু���্ব দেয়া, আলেমদের সাথে উঠাবসা করা, নিজের ঈমান ও আমলের হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। যাদের ওয়াসওয়াসা হয় তাদের জন্য আরিফ আজাদ, মুসফিক মিনার, সত্যকথনসমগ্র সংগ্রহে রাখা ইত্যাদি।
সর্বশেষ অধ্যায়টি একটি অমুসলিম ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে লিখিত, একটি পরীক্ষা: উপেক্ষার উপাখ্যান। কেন আমরা অন্য ধর্মকে সম্মান করি না এর একটি চমৎকার ব্যখ্যা দিয়েছেন লেখক। আমার মতে এই অধ্যায়টি মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েরই পড়া উচিত।
কুররাতু আইয়ুন বইটি ভিতর ও বাহির উভয় দিক দিয়েই চমৎকার একটি বই।বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় একটি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেয়া হয়েছে। কীভাবে ইসলাম অনুযায়ী নিজের জীবনেকে সাজাতে হবে তা জানতে অবশ্যই পড়ুন --কুররাতু আইয়ুন.
মুসলিমের সন্তান মুসলিম থাকবে কি না, কাফেরের সন্তান মুসলিম হবে কি না_____ দুটোই নির্ভর করে একটা আমলের উপর- দাওয়াহ!সব নবীর উম্মত গোমরাহ হবার আগে মুসলিমই ছিলো। . এতো সুন্দর করে লিখে কিভাবে? কী সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন। আমাদের ঈমান কেমন নড়বড়ে তা আমরাই ভালো জানি, তবুও কিছু ক্ষেত্রে পান্ডিত্য জাহির করতে যাই। নাস্তিকরা ইসলামকে ছোট করতে পারলেই খুশী, আর তার পথও করে দেই আমরা। তারা আমাদের যে আঘাতটা করে, তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে তা বৃথা! . লেখক খুব সুন্দর করে, বিভিন্ন টপিক গুছিয়ে প্লাস বুঝিয়ে লিখেছেন।
মূলত পরিবার নিয়ে লেখা। পরিবারে কীভাবে দাওয়াহ দেওয়া যায়, পরিবাবে ইসলাম চর্চা, বিয়ে থেকে সন্তান লালন-পালন বিষয়ে চমৎকার কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন লেখক। মাঝেমাঝে লেখক নিজের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার কথাও বলেছেন। বইটি বেশ কিছু লেখা আপনাকে নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। যারা স্বপ্ন দেখেন একটি ইসলামি পরিবারের– যা জুড়াবে নয়ন– তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য।
পাঠ্যপুস্তকে আমাদের শুধু ভাল কেরানী,পুজিবাদের ভাল সেবক হওয়া শেখায়। যেন জীবনে চাকরগিরির ক্যারিয়ার সব। টাকা কামানোই উদ্দেশ্য..
কিন্তু ভালো চাকুরের সাথে কিভাবে ভালো স্বামী / ভালো বাবা/ ভালো সন্তান হওয়া যায় সে সিলেবাস আমাদের নাই! আর সে সিলেবাসের বিকল্প হিসাবে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে এই বই।
ইনশাআল্লাহ এই বই আপনাকে নতুন করে ভাবাবে, নতুন করে শেখাবে।
আরেফীন ভাইয়ের লিখা বরাবরই সাবলীল মাশাআল্লাহ। অনেক কিছুই ভাবাবে, পাশাপাশি ইসলাম মেনে চলতে শুরু করা ভাই-বোনদের জন্য নাসিহাহ হিসেবে কাজ করবে ছোট এই বইটা ইনশাআল্লাহ।
একজন গড়পড়তা বাঙালী মুসলিমের দীনের পথে ফিরে আসা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়ে উঠার জন্য যা যা দরকার সব ই আছে এই এক বইয়ে। নিজে দাওয়াহ প্রাপ্ত হওয়ার পর পরিবারকে কিভাবে দাওয়াহ দিতে হবে। ইসলামিক ভাবে বিয়ে করা, বাসর রাত, সংসার, বাচ্চাকাচ্চা চাওয়া, আল্লাহর রহমতে বাচ্চাকাচ্চা প্রাপ্ত হলে তাদেরকে দীনের তারবিয়াতে মানুষ করা থেকে শুরু করি সব কিছু নিয়ে সুন্দর ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে আঁতুড়ঘর অংশটা আমার আহলিয়া খুব পছন্দ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ লেখক কে উত্তম জাযা দান করুন। আমিন।
মুসলিম সন্তান মুসলিম থাকবে কি না, কাফের সন্তান মুসলিম হবে কিনা - দুটোই নির্ভর করে একটা আমলের উপর - দাওয়াহ। সব নবীর উম্মত গোমরাহ হওয়ার পূর্বে মুসলিম ছিলো। দাওয়াহর অভাবে কাফের হয় গেছে মুসলিমদের পরবর্তী প্রজন্ম। আবার নবী এসেছেন। দাওয়াহ শুরু হয়েছে, কাফেরের সন্তানেরা মুসলিম হয়ছেন। দাওয়াহ না থাকলে মুসলিম বংশের সন্তানও নাস্তিক-মুরতাদ হয় যাবে। এই কিতাবের দ্বারা আল্লাহর কাছে যে বদলা আশাকরি, তা বন্টিত হোক আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই লোকগুলোর আমলনামায়, যারা প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন সব কিছুর বিনিময়ে। আরও বন্টিত হোক তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে, যারা বংশ পরম্পরায় চালু রেখেছেন দাওয়াহকে, যার কারনে আজ আমরা মুসলিম; আমরাও এই দাওয়াহ চালু রাখবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের পরবর্তী বংশধরদের আমরা বেঈমান দেখতে চাই না।
স্নরণিকা দেখে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন লেখক বইটিতে কতটা দরদ দিয়ে কি বুঝাতে যাচ্ছেন।
ভূমিকা সহ বইটিতে মোট ১১ টি টপিক নিয়ে লেখক আমাদের জন্য আদর মিশ্রিত দাওয়াহ বা পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছেন।
১ম টপিক, পরিবারে দাওয়াহঃ
আমরা অনেকেই আছি পরিবারের বাহিরে দাওয়াহর কাজে সফল হলেও পরিবারে দাওয়াত দিতে ব্যর্থ হই বা সুকৌশল অবলম্বন করতে পারি না। এই টপিক পড়লে আপনি পরিবারের দাওয়াতের ভিন্ন ভিন্ন অসাধারণ কিছু কৌশল রপ্ত করতে পারবেন। এই ধরুন পিতামাতাকে কিভাবে দাওয়হ দিবেন, নিজের স্ত্রীকে কিভাবে দাওয়াহ দিবেন, স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে দাওয়াহ দিবেন এবং বয়স্ক সন্তানকে কিভাবে দাওয়াহ দিবেন।
২য় টপিক, বিয়েঃ
বিয়ের কথা শুনলে আমাদের অনেক চেহারা যেমন উজ্জ্বল হয় উঠে অনেকের আবার ভয়ে কিছুটা মলিন হয়ে যায়। কিন্তু লেখক এইখানে বিয়ের প্রসঙ্গটা কে এত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যে আপনি বিয়ের প্রকৃত সংজ্ঞা খুঁজে পাবেন ইন শা আল্লাহ। এই ধরুন আপনি বিবাহ পরবর্তী সুখী জীবন কাটাতে বিয়ের পূর্বে কি কি বদ অভ্যাস গুলো ছেড়ে দেওয়া উচিত এবং কিভাবে ছাড়বেন পদ্ধতিগুলো তুলে ধরেছেন।
তারপর পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে কেমন পাত্রী নির্বাচন করবেন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। পাত্রী নির্বাচন শেষে ইসলামী শরীয়তের অনুমোদিত পদ্ধতিতে কিভাবে বিবাহ কার্য সম্পাদন করবেন এবং ইসলামে শরীয়তের নিষিদ্ধ কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত যে সব কু প্রথা আমাদের সমাজে চালু আছে তা থেকে বের হয়ে আল্লাহর হুকুম ও নবীজীর সুন্নাহর অনুসরণ করে কিভাবে দাম্পত্য জীবনে বারাকাহ ব্যবস্থা করবেন তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
৩য় টপিক, বরফ গলবেইঃ
বরফ গলবেই নাম শুনে আশাকরি বিষয়টা কি নিয়ে হতে পারে। বিয়ের পরে যখন ফ্যামিলিতে নববধুকে কিভাবে শশুর শাশুড়ির সাথে একটা সু-সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় এক্ষেত্রে ছেলে হিসেবে আপনার কি কি দায়িত্ব তা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক এবং একই সাথে (বোনদের জন্যে) স্ত্রী হিসেবে কিভাবে স্বামীর শ্রম লাঘব করে পরিবারের সামলানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে কিভাবে পরিবারের মধ্যে সুখের স্রোত ধারা প্রভাহিত করবেন তার সুন্দর দিক নির্দেশনা। এবং মায়েদের আচরন কেমন হবে পুত্রবধুর সাথে তাও বিষদ ভাবে তুলে ধরেছেন।
৪র্থ টপিক, আঁতুঘড় : ভেতরে ও বাহিরঃ
সন্তানের তারবিয়াহ জন্মের পরে না, বরং শুরু হয় জন্মের আগ থেকেই। গর্ভধারনেরও আগ থেকে। সন্তান কেমন হবে, তা আল্লাহ নির্ধারিত তাকদীর, গায়েবের চাবি। তবে আমরা চেষ্টার জন্য জবাবদিহি করবো, তাকদিরের জন্য না। লেখক এইখানে তুলে ধরেছেন সর্ব প্রথম নেক সন্তানের জন্য নিয়ত করা থেকে শুরু করে স্বামী ও স্ত্রীর জীবন যাত্রার পরিবর্তন, আদব ও সুন্নত বজায় রেখে কিভাবে সহবাস করবেন। বাচ্চা গর্ভে আসার পর গর্ভবতী মায়ের গুনাহ থেকে কিভাবে দূরে থাকবে এবং নেক আমলের পদ্ধতি। আরো আলোচনা করা হয়েছে গর্ভবতী মায়ের যত্ন, খাবারদাবার, প্রসবকাল এবং প্রসব পরবর্তী করনীয়- ডান কানে আযান দেওয়া,বাম কানে ইকামত এবং নবীজীর সুন্নাহ অনুযায়ী 'জন্মাবার পরই মিষ্টিমুখ, ' ইত্যাদি। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫ম টপিক, মানবশিল্পঃ
লেখক শুরুতেই তুলে ধরেছেন লেখকের পরিবার ও মেয়ের যত্নে উনার স্ত্রী কত পরিশ্রম করে থাকে সকাল থেকে রাত অবধি। খাদিজার(লেখকের মেয়ের নাম) মায়ের কষ্ট তার বাবার(লেখকের) চোখে এইভাবে ধরা দিয়েছে - কোন অভিযোগ নেই, কোন অপারগতা নেই। সাময়িক বিরক্ত যে নেই, তা নয়। তবে তাতে দু'চামচ মমতা মেশানো থাকে।
এরপরেই লেখক আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার ছোটবেলায় ঠিক একই ভাবে আপনার মা বাবা আপনাকে পরম যত্নে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। মুহূর্তে মধ্যে মা বাবার জন্য আপনার হৃদয়ে ভালবাসার ঝড় উঠবে, ইনশাল্লাহ।
সন্তানের প্রতিপালনের জন্য লেখক মায়েদের কে দিয়েছে মানব শিল্পের মর্যাদা। কিন্তু এখানে সবচাইতে বড় বাধা হচ্ছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজের দালাল গুলো তারা নারীদের শিখিয়ে দিয়েছে, ঘরে থাকো মানে তুমি অকম্না, বেকার। কিন্তু এখানেই তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য শক্ত হাতে কলম ধরেছেন, আপনার চিন্তার জগৎকে নাড়িয়ে দিবে । যাতে করে আপনার স্ত্রী ঘরে থাকে বলে আপনি একটুও হীনমন্যতায় না ভোগেন। লেখকের আকুতি, ভাইজান - আপনার স্ত্রীর কারনে আপনার সন্তানের টিচার - খরচ, ডাক্তার-খরচ, ডে-কেয়ার খরচ, আরও কত খরচ বেঁচে যায়, সেটা চোখে পড়ে না। মাস শেষে যে টাকাটা আপনি ব্যাংকে রেখে স্বপ্নের জাল বোনেন, ভাই ওটাই আপনার স্ত্রীর ইনকাম। মানব শিল্পের পিছনে বেঁচে যাওয়া মূল্যটাই জমানোর মওকা মিলে আপনার।
একই সাথে লেখক নারীদের চাকরি - ব্যাবসা করার পক্ষে কর্ম পদ্ধতি খুব সুন্দরভাবে অবতারণা করেছেন - নারীকে পেশা নেবার অনুমোদন ইসলাম দেয়। তবে সে পেশা অফিসে পুরুষ কলিগদের সাথে ৯-৫টা পর্যন্ত দাসত্ব না। সেটা ঘরোয় পরিবেশে, স্বাধীনভাবে, ইচ্ছেমতো, যে দিন ভালো লাগে পেশা করলাম, যে দিন ভালো লাগছে না, করলাম না এবং সৃষ্টিশীল কাজ---ডাটা এন্ট্রি বা কেরানিগিরি না। এবং নারীবাদী এজেন্ডাগুলোতে মুসলিম মেয়েরা পা দেওয়ার মূল কারণ এবং এক্ষেত্রে আমাদের পুরুষেদের করনীয় গুলো কি কি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন।
৬ষ্ঠ টপিক, সন্তানের তারবিয়াহঃ
সন্তানের শিক্ষার তো অনেক ব্যবস্থা আছে, কিন্তু দীক্ষাটা কিভাবে হবে? সচেতন বাবা মাত্রই এই প্রশ্নটি যে কোন সচেতন বাবা মা বুঝতে পারলেও যারা সন্তানের অনেক বাবা এই সম্পর্কে উদাসীন থাকে। বাচ্চাকে প্রাথমিক শিক্ষা কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে শিশুর মনে ইসলামের আকিদার বীজ বপন করবেন তা জানতে হলে আপনাকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সন্তানের তারবিয়াহ এই টপিকটি পড়তে হবে। যেখানে আপনি পাবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন নাবালক চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে এবং লোকমান হাকিম কিভাবে আকিদা ও নসিহত শিখিয়েছেন ।
৭ম টপিক, সন্তানের শিক্ষাঃ
দ্বীনি কমিউনিটির মা - বাবাদের একটা অন্যতম পেরেশানির হচ্ছে সন্তানের শিক্ষা। কোন আলমকে কখনো এই বিষয়টি কখনো খুব একটা পেরেশান হতে দেখা যায় না। কিন্তু জেনারেল শিক্ষিত অভিভাবককে সর্বক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়।
এই টপিকটা আপনার পেরেশানির পরিমাণ পুরোটা না হলে অনেকাংশেই দূর করবে, ইনশাআল্লাহ।
৮ম টপিক, দ্বিতীয় ভাবনাঃ
আমাদের দেশে ইসলামিক শিক্ষা অর্জন করার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে আমরা বিবেচনা করি সব সময় মাদ্রসা শিক্ষা থেকে , ব্যাপারটা আমরাও স্বীকার করি। কিন্তু একটা বড় অংশ যারা জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তাদের অনেকেই ইসলামের অনেক মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানার ঘাটতি থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য যারা দ্বীনি খেদমতের পিছনে অর্থ ব্যয় করতে চায় তাদের জন্য রয়েছ, অঅসাধারন একটি কর্মপন্থা যাতে করে এই বৃহৎ জেনারেল শিক্ষিতদের কে দুনিয়ার মোড়কে দ্বীন গিলিয়ে দেওয়া যায়। তখন মাদ্রসা শিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলেম যেমন বের হবে একই সাথে এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে দীনদার মানুষ।
৯ম টপিক, ইসলাম বিরোধী নাস্তিক্যবাদ: প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতিঃ
অনলাইনে অনেক ভাই আলহামদুলিল্লাহ বেশ দরদী। আল্লাহ এই দরদকে উম্মতের ফায়দায় ব্যবহার করুন, তারা নাস্তিকেদের পোস্টে কমেন্টের পর কমেন্ট করতে থাকেন। তার চেয়েও বেশি ব্রেনওয়ার্ক করতে থাকেন, বিতর্ক করতে থাকেন। শেষ অবধি ফলাফল কি?
নাস্তিকটা যে প্রশ্নটা তুলেছে, সেটা তো সে জানার জন্য তোলেনি। জানতেই যদি চাইতো, তবে সে পোস্ট দিতো না। উপযুক্ত লোকের কাছেই প্রশ্নটা করতো। সে প্রশ্নটা করেছে ট্রল করার জন্য। আপনি কমেন্টে সময় ব্যয় করেছেন মানেই সে সফল, সে আপনাকে কষ্ট দিতে পেরেছে। আপনি Angry React দিচ্ছেন, সে খুসি এটাই সে চেয়েছিলো ।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা নাস্তিকেদের বুঝাতে না পারলে আমাদের নিজেদের উপর মেজাজ খারাপ হয়ে যায় বা তাদের ইসলাম বিরোধী কথা শুনলে আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপনার মুখ দিয়ে গালিগালাজ বের হয় যেতে পারে। আলটিমেটলি নিজের আমল নামাতে গুনাহ যুক্ত হবে তাতে লাভ কি হলো? অনেক সময় ইসলাম সম্পর্কে কম জানা ব্যক্তি তাদের সাথে তর্ক করতে গিয়ে তাদের গর্তে পা দিয়ে নিজেই ঈমান হারা হয়ে যায়, এই সম্পর্কে কয়েকটি বাস্তব উদাহরন টেনে এনেছেন এই অধ্যায়। এজন্য যারা আম পাবলিক লেখক তাদের কে পরামর্শ দিয়েছেন -
- নাস্তিকদের আইডি আনফলো/আন ফ্রেন্ড করে দিন। - সব নাস্তিক পেইজে আনলাইক করে দিন। -সব নাস্তিক তর্ক বিতর্ক গ্রুপে আনফলো করে দিন। -নাস্তিকদের তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিন, পারলে দুআ করেন, গালি দেবো না একদম। -কোন নাস্তিক তর্কাতর্কি করার চেষ্টা করলে জবাব দেবো না। ঠিক আছে ভাই, তুমি তোমার মতো আর আমি আমার মতো। -প্রশ্নের ভঙ্গি দেখে যদি মনে হয় আসলেই সে জানতে চায়, তবে লিংক, বই ইত্যাদি দেবো। আপনার জবাবের চেয়ে লিংক, বই এগুলোতে সে বেশি ভাবনার সুযোগ পাবে। -ওদের স্ট্যাটাসে আপনার কমেন্ট, রিএক্ট, ফলো শেয়ার এগুলোতে ওদেরই লাভ হয়। পাবলিসিটি বাড়ে, নিউজ ফিডে উপরে চলে আসে। -ব্যাক্তিগত ইলম চর্চার উপর গুরুত্ব দিবো। -আরিফ আজাদ, মুশফিক মিনার, সত্যকথন, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড সমগ্র রাখবেন । সবার পড়র দরকার নেই,যার ওয়াসওয়াসা হয়, কেবল তিনি পড়বেন। -আকিদার ব্যাপারে সঠিক ধারণা রাখবো, আলেমগণের সাথে ওঠাবসা করবো। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাদের পরামর্শ নেবো।
১০ম টপিক, অর্থময় জীবনঃ
দাওয়াতের ক্ষেত্রে একজন দা'ঈর নমনীয়তা, কৌশল এবং ধৈর্য অবলম্বনে কিভাবে সহজে সাফল্য এসে ধরা দেয় তার বাস্তব একটি উদাহরন তুলে ধরেছেন, মুফতি তালহার চুয়াডাঙ্গা সফরের অসাধারণ সাফল্য। উত্তম আখলাকের মাধ্যমে অনেক সময় মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়, যা অনেক সময় লম্বা লম্বা বয়ানের মাধ্যমে হয় না। লেখক এই অধ্যায় একজন দা'ঈর গুনাবলী সংক্ষিপ্ত করে হলেও খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
এই বিশ্বচরাচরের একজন অভিভাবক আছেন, তিনি স্রষ্টা, তিনিই সত্ত্বাধিকারী, আমরা তার সম্পত্তি, বানানো জিনিস। তিনি মৃত-অজীব নন। জবাব দেন, সাহায্যে করেন, বাবা মায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং বেশি কনসার্নড। তিনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, বাপের সব সিদ্ধান্ত যেমন সন্তান বোঝে না, ঠিক আল্লাহর সকল চিন্তাধারাও মানব জাতির এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বোঝার ক্ষমতা থাকবে না স্বাভাবিকভাবেই।
পরীক্ষা হলো কার কাজটা, সবচাইতে সুন্দর হয় - আহসানু - আমালা । কে বাবা মায়ের সাথে, স্ত্রীর সাথে, প্রতিবেশীর সাথে, গরিবের সাথে, পিচ্চি ওয়েটারের সাথে, কাজের মেয়ের সাথে, নিজ ওয়াদা - আমানত, মানে নিজের সাথে এবং নিজ মালিক স্রষ্টার সাথে সবচেয়ে সুন্দর করে। পরীক্ষার সময় লাইফ টাইম।
এই সুন্দর ব্যবহারের আচরনের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্ক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আচরন ।তার আচরনের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে সবার। যত কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে তত মার্কস উঠবে। কিন্তু এই পথে আমাদের একমাত্র বাধা হচ্ছে ইবলিশ সয়তান। লেখক শয়তানের প্ররোচনাতে কিভাবে যুগে যুগে মানুষ ধর্মের বিকৃতি ঘটিয়েছে তা তুলে ধরেছেন এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত তা কুরআনের সূরা আনআম এর আয়াত ১০৮ এর উদ্ধৃতি দিয়ে তুলে ধরেছেন।
এবং একজন অমুসলিম কে দাওয়াত দিয়ে লেখক যে ঘটনার মুখোমুখি হয়ছেন এবং অমুসলিমের দাওয়াতের সময় সাহাবীদের কর্মপন্থা কেমন ছিলো তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
একটা কুকুর বিড়াল আগুনে পুড়তে থাকলে তাকে বাঁচানো মানবতার দাবি। সেখানে মানুষ, আমারই অমুসলিম ভাই প্রশ্নের ভুল উত্তরের কারনে অনন্ত কাল নরকের ৭০ গুন তেজের আগুনে পুড়বে, এটা আমরা কিভাবে সহ্য করি! অমুসলিম তো আমাদেরই রক্তের ভাই-এক আদমের সন্তান।
লেখকের শেষ আকুতি এমন ছিলো, এখন বলুন দাওয়াত কি অপমান, নাকি আকুতি-সম্পর্কের দাবি, শেষ চেষ্টার আবেগ? আমার জবাব শেষ। এটাই সংক্ষিপ্ত। নইলে বুকের যে কষ্টটা, আকুতিটা, ব্যাথা- সেটা লিখতে গেলে কলম সইতে পারতো না, পারবেও না।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় (জাহেলিয়াত) থেকেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালালে কিভাবে দ্বীনের অনেক হক আদায় করতে পারি তারই এক বাস্তব উপস্থাপনা বলা যেতে পারে ছোট্ট এই বইটিকে। এক্কেবারে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে কিভাবে আমরা একটু সাহস ও চেষ্টা করলেই দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিতে পারি তা নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রিয় শক্তি ভাই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন বইটিতে।
যা প্রমাণ করে দেয় যে, একমাত্র আমাদের গাফলতি আর আলসেমির ফলেই আমরা দ্বীনের কোনো খেদমত করতে ব্যর্থ হই। দিন খারাপ, পরিবেশ খারাপ, পরিস্থিতি খারাপ এগুলো কেবল বাহানা ছাড়া আর কিছুই না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমীন।
বইটিতে অত্যন্ত সহজভাবে ফুটে উঠেছে কিভাবে আমরা উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত দিবো, নিজের জীবন সঙ্গী অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমরা কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেমন হবে সম্পর্ক, সন্তান জন্মানোর পেছনে নিয়ত কি হবে এবং কোন পদ্ধতিতে লালনপালন করলে সে দ্বীনদার হয়ে উঠবে ইত্যাদি পারিবারিক নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আবার সমাজেও কিভাবে আমরা নানান প্রদর্শনমূলক কাজের (নেক নিয়ত ও ইখলাসের সাথে অবশ্যই) মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারি আর ইসলামের প্রতি মানবজাতিকে আকৃষ্ট করতে পারি সেক্ষেত্রেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হয়েছে। এভাবেই জীবনে চলার পথে কিভাবে আমরা একটু চেষ্টা করলেই ইসলামের খেদমত করতে পারি, আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারি তা-ই যেন এই বইয়ের মূল বার্তা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন। প্রিয় শক্তি ভাইকে আরও বেশি বেশি দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দিন। সকল প্রশংসা এই বিশ্বজাহানের একক স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর।
যারা দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম পুরোপুরিভাবে অনুশীলন করতে চান তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষানবিস বইয়ের মতো। তবে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে: এটি মূলত পুরুষ পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখা
আমি মহিলাদের চাকরির বিষয়ে লেখকের মতামতের সাথে আংশিক একমত। বইটি পড়ার পর, আমি "ইসলামে মহিলাদের চাকরি" নিয়ে অনুসন্ধান করেছি এবং লেখক উল্লেখ করেননি এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বইটি কিছুটা ইঙ্গিত পেয়েছে যে লেখক ব্যক্তিগতভাবে কর্মজীবী মহিলাদের পছন্দ করেন না। লেখক এমনকি শ্রমজীবী নারীদের সম্পর্কে খাদিজা (রাঃ) রেফারেন্সকেও উপেক্ষা করেছেন। এবং কেন তিনি এটিকে উপেক্ষা করছেন তার কোনও ব্যাখ্যা ছিল না।
ইসলাম অনুযায়ী নারীদের চাকরি বা চাকরি করার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। লেখক সহজে পয়েন্ট দ্বারা পয়েন্ট ব্যাখ্যা করতে পারতেন। সেটা তিনি করেননি বা করতে চাননি।
এক বসায় পড়ে ফেলার মত বই।পুঁজিবাদের এই যুগে আমাদের ভাল সন্তান,ভাল ভাই,ভাল স্বামী হওয়ার কোন ফর্মুলা আছে?
হ্যাঁ,কুররাতু আইয়ুন বই সেই ফর্মুলার কথা বলে।পুঁজিবাদের নির্মম বাস্তবতা থেকে উঠিয়ে আনতে,পরিবার,বিয়ে,দাওয়াহ ইত্যাদি বিষয়ে নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে এই বই।
""নব্য যারা বিয়েশাদির চিন্তাভাবনা করছেন তারা বইটা পড়ে নিয়েন। কীভাবে পরিবারে দ্বীনের উপর চলবেন কিংবা দ্বীনের পথে সবাইকে চালাবেন তা সহজেই জানতে পারবেন। অনেক চমৎকার পারিবারিক সূত্রাবলি বইয়ে বিদ্যমান শুধু জীবনে প্রয়োগ করলেই আপনি সফল। সংসারে শান্তি আর শান্তি হবে বিরাজমান । সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। বিয়ের যাবতীয় দ্বীনি তরিকা, পিতামাতার খেদমত,স্বামী-স্ত্রী করণীয় -বর্জনীয়, মানবশিল্পীর আখ্যান, সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদি জীবনের যাবতীয় দ্বীনি কর্মকাণ্ড ডাক্তার সাহেবের জীবনের অনেক ছোট ছোট গল্পছলে কৌতূহলে উদাহারণ দিয়ে সহজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ""
পরিশেষে যারা বইটা পড়েন নাই পড়ে নিয়েন।
বাকিটা না হয় পড়েই স্বয়ং বিচার করুন।
বইমেলায় আবার আসছে কুররাতু আইয়ুন ২ উপেক্ষিত অপেক্ষায় রইলাম!
This entire review has been hidden because of spoilers.
বইয়ে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, পরিবারে এবং সমাজে কিভাবে ইসলামের দাওয়াহ দিব, বিয়ের আগে কিভাবে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করব, গর্ভধারণের সময় করণীয় ও সন্তান লালন পালন। লেখক বিষয়গুলোকে নিজস্ব ভাবনার আলোকে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজে যেহেতু তাবলীগে কাজ করেছেন তাই দাওয়াহর বিষয়গুলো আলোচনায় তিনি তাবলীগ থেকে যা শিখেছেন সেগুলোও আলোচনায় রেখেছেন।
নিজেকে ইসলামের উপর রেখে পরিবার এবং সমাজের মানুষদেরকে দ্বীন ইসলাম পালনে সচেতন করতে বইটি সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
বই - কুররাতু আইয়ুন লেখক - ডা শামসুল আরেফিন রেটিং - 4/5
মুসলিম সন্তান মুসলিম থাকবে কি না, কাফেরর সন্তান মুসলিম হবে কিনা -দুটোই নির্ভর করে একটা আমলের উপর--দাওয়াহ।
একজন সাধারণ শিক্ষায়(নন-ইসলামিক) শিক্ষিত বাঙালি ইসলামের পথে ফিরে আসা হতে শুরু করে কিভাবে আস্তে আস্তে প্রাক্টিসিং মুসলিম হয়ে উঠা, পরিবারে দাওয়াহ, বিয়ে, সন্তানের শিক্ষা, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ, অর্থময় জীবন ইত্যাদি এরকম প্রায় ১১টা বিষয় এবং তার সব দিকনির্দেশনা নিয়ে সাজানো একটি বই।
⇸অনুভূতি লিখে বুঝানো যায় না,অনুভূতিকে অনুুভবেই বুঝতে হয়।
(প্রথম ৭০ পৃষ্ঠা সম্পর্কে) একটা বিষয় খোলাসা হওয়া জরুরি। "কুররাতু আইয়ুন : যে জীবন জুড়ায় নয়ন" কোনো ফিকশন ধর্মী বই নয়। নন-ফিকশন বইয়ের ক্ষেত্রে আমার অভিমত এর রিভিউ করবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সম্পন্ন কেউ। সাধারণ পাঠক হিসেবে আমরা শুধু নিজেদের পাঠের অনুভূতি জানাতে পারি। বা কি কি বিষয়ে উপকৃত হলাম সেই বিষয়গুলো। তাহলে শুরু করা যাক। . ১. পরিবার ও ইসলামি অনুশাসন ও দাওয়াত সম্পর্কিত প্রথম প্রবন্ধটি যখন পড়ছিলাম চোখের কোণায় পানি জমছিলো। একটি সুন্দর ইসলামি পরিবার আমার কাছে মনেহয় এক টুকরো জান্নাতের মত। আমার মনে উঁকি দিচ্ছিলো সেই মমছোটবেলার দিনগুলো যখন আম্মু -চাচিদের কোরআন তেলাওয়াত হত ঘুম ভাঙার পর আমাদের প্রথম শোনা রব (ধ্বনি)। মক্তবে যাওয়ার পথে বাড়ীর ও পথে অন্যান্য ঘর গুলো থেকেও অনুচ্চ স্বরে তেলাওয়াতের আওয়াজ পেতাম। হায়! সেসব সোনালী দিন কোথায়?! তারপর গ্রামে টিভি এলো, এখন ডিসলাইন এসেছে। এখন যখন কোনো বাড়ি বা ঘরের পাশ দিয়ে যাই শুনি বিজাতীয় সংস্কৃতি, উচ্চস্বরে গান বাজনা, স্যাটেলাইট চ্যানেলের হম্বিতম্বি। এই ঢেউয়ে আমাদের পরিবার, সমাজটাই পাল্টে গেলো। কেন? ওইযে দাওয়াতের অভাব। এখন বুঝি বাড়িতে প্রথম টিভি আনার পর ছোট দাদা (আমার কোরআন শিক্ষক) কেন বলেছিলেন বাড়িতে শয়তানের বাক্সো এসেছে। আহা! এখন ও কি খুব দেরি হয়ে গেছে? আমাদের অনাগত প্রজন্ম কি সেই জান্নাতি পরিবেশ পাবে না? পান করতে পারবে না সেই জান্নাতি সুধা? উত্তর দেয়া আছে এই প্রবন্ধে। . ২. পর্ণ, হস্তমৈথুন, আমাদের সমাজের দুটো নিষিদ্ধ জিনিস যা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। এই আলোচনা উঠে সমবয়সী বন্ধুদের আড্ডায়। পাশাপাশি চলে নানা অশ্লীল কথাবার্তা। এটাকে ছোটখাটো মদের আসরের সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু যুবারা যে হারিয়ে যাচ্ছে এর নীল ছোবলে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। অনেক ভাই মানে দ্বীনি ভাই বলেন বিয়েটাকে সহজ করা উচিৎ, নাহলে পবিত্র জীবনযাপনের যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা আরো কঠিন হয়ে যাবে বা পদস্খলনের সমূহ সম্ভাবনা। আমি বলি না বিয়েটাই একমাত্র সমাধান। আরো অনেক কিছুই পরিবর্তন করা জরুরি। বিশেষভাবে দ্বিতীয় প্রবন্ধটি যেহেতু বিয়ে নিয়ে তাই এই দুটো সমস্যার কথা দিয়ে শুরু করেছি (যার যা প্রায়োরিটি বা যার যে সমস্যার সমাধান নিয়ে বেশি চিন্তা আরকি!)। প্রবন্ধটি পড়ে আমার অভিমত যারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। আর যারা বিয়াইত্তা, নিজের বিয়ের ভুল গুলো যাতে অন্যের বিয়েতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য পড়তে পারেন। আবিয়াইত্তারা কি করবে? আপনিও পড়ুন। পরিকল্পনায় কাজে দিবে! . ৩. বউ-শাশুড়ীর সম্পর্ক কিরকম হবে মা-মেয়ে নাকি সাপেনেউলের? স্বামী, স্ত্রী আর শাশুড়ির এক্ষেত্রে করণীয় কি হবে তা নিয়ে তৃতীয় প্রবন্ধ। আমার মতে লেখকের বাতলানো উপায়গুলোর পূর্ণ অনুশীলন একটি ঘরে জান্নাতের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে। . ৪. চতুর্থ প্রবন্ধটি পুরোপুরি তাত্ত্বিক, সন্তান মায়ের পেটে আশা থেকে জন্মের পর প্রাথমিক ও আনুষাঙ্গিক কার্যাদি নিয়ে। ডাক্তার সাহেব ধর্ম আর বিজ্ঞানের মিশেলে যুগোপযোগী এক ফর্মুলা বাতলেছেন। আপনি উপকৃতই হবেন আশাকরি। . ০৫. মানবশিল্প শিরোনামের প্রবন্ধটি নিয়ে লিখলে আরেকটি মা মা মা এবং বাবা উপাখ্যান তৈরি হয়ে যাবে তাই ইস্তফা দিচ্ছি। প্রবন্ধটি পড়ে আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল আর চোখের কোণায় পানি জমছিলো। (রাব্বির হামহুমা..........)
পরিবার মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের দ্বিনের সবচেয়ে বড় অংশ আমাদের পরিবার। অথচ আমরা এ বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণে অনেক উদাসীন। আমরা আমাদের পরিবারে দাওয়াত দিতে লজ্জাবোধ করি। অথচ ইসলাম কতই না সুন্দর, রাসুল (স.) আমাদের তো সবই শিখিয়েছেন।
আজকাল ডিভোর্স'টা খুব বেশী বেড়ে গেছে, এর মূল কারণ দ্বিনের ব্যপারে অজ্ঞতা। একজন আরেকজনের দোষ দিচ্ছে, কিন্ত কেউ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছে না, "আমি কতটুকু আমার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করছি"। দুঃখ্যজনক হলে সত���য গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের এসব থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। কিভাবে আমাদের পরিবার সাজাবো, কিভাবে একটা সুন্দর পরিবার হবে এসব আমাদের শিখায়নি।
কুররাতু আয়ুন বইটা আমাদের কে এ শিক্ষাটাই দেয়। খুবই চমৎকার একটি বই। আলহামদুলিল্লাহ, আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার মনেহয় প্রতিটি মুসলিম ভাইয়ের একবার হলেও বইটি পড়া উচিৎ। রাব্বুল আলামীন লেখককে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
-আচ্ছা! ভাই বিয়ে করবেন ভাবছেন? বইটি পড়ে দেখুন না আপনার জন্যে ডাক্তার সাহেব কিছু কথা বলেছেন। বিয়ে করবেন এটা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কাউকে দেখলেন পছন্দ করলেন বিয়ে করলেন। সুখের জীবন গড়ে ফেললেন! জীবন তো এরকম হয় না ভাই। তাহলে? বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন কিভাবে আগাবেন, সংসারকে নূর রহমত দিয়ে সাজাবেন, বাচ্চাকে সাচ্চা মুসলমানের বাচ্চা করে বড় করবেন। -শুধু কি বিয়ে নিয়েই কথা? -না। আশেপাশের সমাজকে কিভাবে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে একটি সুন্দর সমাজ গড়া যায় সেটা নিয়েও কিছু কথা বলেছেন লেখক। সবই চমৎকার আইডিয়া। যদি সাধ্যে কুলোয় তবে রাঙিয়ে দিতে দেরী কেন! চমৎকার বইটি সকলকে পড়ার অনুরোধ রইলো।
মাঝে মাঝে মনে হয় চিৎকার করে মানুষকে বলি "যেই রাস্তায় আছো সেইটা শয়তানের। সে শপথ নিয়েছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পথে রাখবে। সময় আছে এখনো। আল্লাহর রাস্তায় এসে পড়ো। " দাওয়াতের লোকগুলো ঠান্ডা মাথায় কীভাবে মানুষকে দীনের পথে আনে তা আমার মাথায় ধরেনা। এই বইটাতে মুসলিম দের জীবনব্যবস্থা কেরকম হওয়া চাই তার সম্পর্কে একটু ধারনা দেওয়া হয়েছে। লেখক তাবলীগের সাথে জড়িত হলেও বইটি সবার(সালাফি, হানাফি, সুন্নি) সবার উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে যেরকম ইসলামের চর্চা ও চিত্র থাকার দরকার ছিলো, সে চর্চা ও চিত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে এই বইটাকে গাইডলাইন বলা চলে।
এতো সুন্দর সাবলীলভাবে লেখক প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেছেন, যা একদম অন্তরে গেঁথে যায়। বইটা শেষ করার পর একটা দীর্ঘকালীন প্রভাব কলবের উপর এমনভাবে পড়বে, যে আপনি অনৈসলামিক কিছু করতে গেলে অন্তরে একটা খচখচানি ভাবের উদয় হবেই হবে।
বইটা সবারই পড়া উচিৎ! জাহিলিয়াতের জীবন থেকে ফিরে আসার পর সামনে আগানোর স্টেপগুলি কেমন হওয়া উচিৎ তা ঠিক করতে একদিকে যেমন সহায়িকা, আরেকদিকে তেমনি প্র্যাক্টিকাল গাইডেন্সের ফুলঝুড়ি। শক্তি ভাই এর খিদমৎ আল্লাহ্ কবুল করুন। আর আমাদেরকে আকাশের মতো বিশাল পাহাড়ের মত অটল মাটির মতন নরম আর বরফের মত ঠান্ডা হবার তৌফিক দিন। বইটার এখানে সেখানে পেন্সিলে মার্ক করে রেখেছি, যদিও বইতে দাগ দিতে আমার রাজ্যের অপছন্দ। মার্ক করে রেখেছি গুরুত্বপূর্ন যায়গাগুলি। জীবনে ব্যবহারের ব্যবহারের জন্য।