তন্ত্র! এই ছোট্ট শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য, অনেক আশঙ্কা, আশা, ভয়। বাঙালির জীবনে এই জিনিসটি যখন প্রভাব বিস্তার করে তখনও বাংলা ভাষাটাই সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তারপরেও, রণ, রক্ত, অশ্রু ও উল্লাস পেরিয়ে আসা আমাদের এই জীবনে তন্ত্র থেকে গেছে পর্দার আড়ালে এক অমোঘ উপস্থিতি হয়ে। আমরা জানি, সে আছে। কিন্তু তাকে নিয়ে আমরা এত কম জানি যে তার প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা অন্য কথায় চলে যাই। সেজন্যই বিভূতিভূষণ তারানাথ তান্ত্রিকের দু'টি গল্প লিখলেও তারাদাস ছাড়া কেউ তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেননি। সেজন্যই সৌমিত্র বিশ্বাস 'হেরুক' লেখার আগে বেশ কয়েক প্রজন্মের পাঠক জানতেনই না, গল্পের কত উপকরণ লুকিয়ে আছে তন্ত্রের মধ্যে। অবস্থাটা বদলায় অভীক সরকারের সৌজন্যে। 'ঋতবাক'-এ প্রকাশিত তাঁর 'শোধ' গল্পটি আজকের পাঠককে মুগ্ধ করে। তারপর আসে 'ভোগ'। এবং অবশেষে আসে একটি আস্ত বই "এবং ইনকুইজিশন"। ফলে মনস্তত্ত্বের আলো-আঁধারির বাইরে, একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দেখা ভয়ের আখ্যান ফিরে আসে বাংলায় নতুন করে। মনীষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা এই ছোট্ট বইটি সেই ধারার ফসল। কী-কী গল্প আছে এতে? ১) অভিশাপ: সত্যি আর সম্ভাবনার মাঝে দাঁড়ানো এক দারুণ ভয়ের, অথচ ট্র্যাজিক গল্প এটি। ২) পিশাচ: বিদেশি সিনেমায় যা হাস্যকর ঠেকে, সেই জিনিসই যদি একান্ত দেশজ হয়ে আসে তাহলে কী হয়? এই গল্প সেই শ্বাসরোধী আতঙ্কের রূপদান। ৩) রাতপরী: এই বইয়ের সবচেয়ে ফর্মুলাইক গল্প এটিই। সুখপাঠ্য, রোমাঞ্চকর, কিন্তু প্রত্যাশিত। ৪) রক্ষাকবচ: এই গল্পটা মারাত্মক! মাঝে কিছু ইনফোডাম্পিং হলেও যেভাবে সুদূর মিশরের বিশ্বাস আর আমাদের মহাবিদ্যার আরাধনাকে একই সূত্রে বাঁধা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। লেখকের কাজ এখনও ওয়ার্ক-ইন-প্রোগ্রেস। তাই পড়তে গিয়ে কোনো-কোনো অংশ অমসৃণ লাগে। কোথাও মনে হয়, একজন সম্পাদকের কল্যাণস্পর্শ গল্পগুলোকে আরও নিটোল করে তুলতে পারত। তবে হ্যাঁ, গল্পগুলো আপনার যেমনই লাগুক, এই নাতিদীর্ঘ বইটি কিন্তু সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যে প্যারাডাইম শিফটের অন্যতম এভিডেন্স হয়ে থাকবে। 'ছদ্মবেশী' সিনেমায় মহানায়ক যে সংলাপটি বলেছিলেন, আমিও এই বইটির প্রসঙ্গে সেটিই বলব~ "ক্ষুদ্র বলিয়া উহাকে উপেক্ষা করিবেন না।" বইটি ঝটপট পড়ে ফেলুন। ভয় পান!
✒️ সত্যি বলতে গল্প গুলো খুবই সাদামাটা লেগেছে। ভয়ের লেশমাত্র নেই একেবারেই।আমার rules শুরু করলে শেষ করতেই হবে,তাই বাধ্য, নাহলে ইচ্ছা করছিলো না পুরোটা পড়তে,বড্ড ধীর গতির গল্পগুলো। তন্ত্র নির্ভর বই এর আগে আরও পড়েছি, তাই এটা ঠিক মন কাড়তে পারলো না। বইটিতে স্থান পেয়েছে মোট ৪টি গল্প। প্রতিটা গল্পের বিষয়ে একটু hints আর নিজের কেমন কি লাগলো তাই শেয়ার করলাম।
📍অভিশাপ : এক যুক্তিবাদী প্রফেসরের জীবনে আছড়ে পড়ে এক তান্ত্রিকের ভয়ানক অভিশাপ। সেই অভিশাপের হাত থেকে কিভাবে মুক্তিলাভ করেন সেই প্রফেসর ? শেষপর্যন্ত কি তন্ত্র বিদ্যায় বিশ্বাস করতে হয় তাকে !!? 📍পিশাচ : সুন্দরী হাসিখুশি একটা মেয়ে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে। নানান চিকিৎসার পরও সুস্থ হয়ে ওঠে না। শেষে বোঝা যায়, তাকে বেতাল ধরেছে। এরপর ? কিভাবে মুক্তি পায় সেই মেয়েটি ?? 📍 রাতপরী : আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করা এক যুবকের জীবন হঠাৎই পাল্টে যায়। তার জীবনে আসে এক রাতপরী। ইউরোপের বহুল চর্চিত এক অপদেবী অ্যাবেজু এর সাথে জুড়ে জয়শ্রী যুবককে জীবন। কিভাবে ? এর শেষ পরিণতি কি হয় ? 📍রক্ষাকবচ : হরি শাস্ত্রী যেকোনো মানুষকে দেখা মাত্র তার ভূত ভবিষ্যৎ বলে দেন। অতীতে সুদূর মিশর থেকে ভারতের বুকে এসেছিল এক অত্যাশ্চর্য রত্ন। সেই রত্ন তার ধারক কে বিপদ থেকে রক্ষা করে। শেষপর্যন্ত কে পেল সেই রক্ষাকবচ ?? *এই গল্পে দেবী ছিন্নমস্তার রূপের বিস্তৃত বিবরণ আছে।
ফেবুর এক নামকরা বই পড়া গ্ৰুপে সাম্প্রতিক সময়ে তন্ত্রমন্ত্র সাধনা নিয়ে কি কি বই লেখা হয়েছে ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ কয়েক জনের ভূয়সি প্রশংসা দেখলাম "রক্ষাকবচ" নিয়ে
ভয়ে কেউ কাটা হয়ে গেছে(আসলেই?!)কারো কারো মনে হয়েছে বইখানা আধুনিক তন্ত্রমন্ত্রের তথ্য নিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা এক অসাধারণ সৃষ্টি (এক মিনিটের জন্য ও তা মনে হয়নি😑)
তো এরকম যখন জয়জয়কার সর্বত্র এই বইয়ের সিন্ধান্ত নিলাম দেখি পড়ে কি এমন মহামূল্যবান রত্মখনি লুকিয়ে আছে যা না পড়লে মিস করবি অনেক কিছুই 😏
এবং কি হল? আমি হতাশ,ওভার হাইপ সৃষ্টি করা বইগুলো বেশিরভাগই দেখি শেষ পর্যন্ত আমারে হয় হতাশ করে না হয় সেই রকম আত্মতৃপ্তির শান্তি দেয় না যতটা পড়ুয়া ভাইয়া আপুরা রিভিউতে আশ্বাস দিয়ে বলেন
চারটা গল্প-অভিশাপ,পিশাচ,রাতপরী আর রক্ষাকবচ , খুব বেশি ভয় পেতে চাইলে বা নতুন কিছু জানার আগ্রহ থাকলে এই বই ঠিক কতটা সেই প্রত্যাশা পূরন করতে পারবে তার তর্কে বিতর্কে নাই যাই,তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে একফোঁটা ভয় লাগে নাই এক ফোঁটা ও না বরং বিরক্তই লেগেছে পিশাচ আর অভিশাপ পড়তে গিয়ে,রাতপরী চলে মন্দের ভালো হিসেবে, রক্ষাকবচ ও আহামরি কিছু নয় কিন্তু বাকি গল্পের তুলনায় বেশ ভালোই ছিল
ওপার বাংলার লেখক মনীষ মুখোপাধ্যায়ের সাতটা অতিপ্রাকৃত গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে 'রক্ষাকবচ'৷ গল্প গুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি। সেই সাথে জুড়ে দিচ্ছি নিজের পাঠ প্রতিক্রিয়া।
পিশাচঃ সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. দেবায়ন সেন অদ্ভুত এক কেস পান। তাঁর বর্তমান রোগিণী শতরূপা সাহা একটা জায়গায় বেড়াতে গ��য়েছিলো। সেখান থেকে ফিরে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছে মেয়েটা। পুরুষালি কণ্ঠে অকথ্য গালাগালি, আশেপাশের মানুষদেরকে আঘাত করার চেষ্টা, এমনকি নিজের শরীরের মাংস নিজেই খাওয়ার চেষ্টা করছে মেয়েটা। এমন ভয়ঙ্কর ব্যাপার দেখে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন ডা. সেন৷ ঘটনাচক্রে জানা গেলো, ভয়ঙ্কর পিশাচ বেতালের ভর আছে শতরূপার ওপর। ডা. দেবায়ন সেন জানেন না, তিনি কি করবেন।
মোটামুটি ভালোই লেগেছে আমার কাছে 'পিশাচ'। পজেশন নিয়ে বেশ একটা হরর গল্প। তবে শুরুর দিকে শতরূপা বারবার যে 'বিজাতীয়' ভাষায় কথা বলছিলো, সেটার পাঠোদ্ধার করতে পেরেছি আম শুরুতেই। আমার ধারণা, একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে যে-কেউ পারবেন। গল্পের অন্যান্য চরিত্রদের বুঝতে এতো দেরি হলো কেন, বুঝলাম না।
রাতপরীঃ স্বপন রায় চৌধুরী নামে মডার্ন আর্টসের একজন ছাত্র হঠাৎ-ই আগ্রহী হয়ে ওঠেন ডার্ক আর্টসের ওপর। ইতালিতে গিয়ে ডার্ক আর্টসের অনেক নিদর্শনও দেখেন তিনি। এরপর ফিরে আসেন নিজ দেশে৷ কি এক খেয়ালে অপদেবী অ্যাবিজু'র একটা মূর্তি গড়েন স্বপন। এরপর থেকেই শুরু হয় দুঃস্বপ্নের কাল। অপার্থিব এক অশরীরী অস্তিত্বের অপার্থিব লালসা ও সীমাহীন কামনার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন তিনি। আর এসবের অনেক অনেকদিন পর তাঁরই ভাগনে বিক্রম এসে ওঠে তাঁর স্টুডিওতে। কি অপেক্ষা করছে সেখানে?
চমৎকার লেগেছে এই গল্পটা আমার কাছে। আধিভৌতিক একটা আবহের দেখা তো এখানে পেয়েছিই, সেই সাথে ডার্ক আর্টস সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা তথ্যও জানতে পেরেছি 'রাতপরী' থেকে। এন্ডিংটাও বেশ ভালো লেগেছে এই গল্পের।
রক্ষাকবচঃ মিশর থেকে আগত একটা গোমেদ রত্ন। সাধারণ কোন রত্ন নয় এটা। বরং ভয়াবহ শক্তিধর এই গোমেদ যে ধারণ করবে, সে সবসময় থাকবে সুরক্ষিত। দেবী ছিন্নমস্তাকে আহবানের জন্য এর আহুতি দেয়াও অতি প্রয়োজন। আর তেমনটাই করেছিলেন বৃদ্ধ জমিদার কল্যাণেশ্বর সিংহ। এরপর ঘটেছিলো ভয়াবহ কিছু ঘটনা। এমন কিছু দৃশ্য দেখেছিলেন যিনি, যা তাঁর কল্পনার বাইরে ছিলো। আজ এতোদিন পর এই গল্পটা শোনাচ্ছেন শতবর্ষী জ্যোতিষী হরিনারায়ণ শাস্ত্রী মহাশয়, যিনি নিজে একজন ত্রিকালদর্শী।
বেশ উপভোগ্য ছিলো গল্পটা। ছিন্নমস্তার সাধনা সহ দশমহাশক্তির সাধনা সম্পর্কে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য পাওয়া গেছে গল্পটা থেকে। শেষটাও ভালো লেগেছে।
আঁধারঃ বনগাঁ'র ছোট্ট একটা গ্রাম বেড়বাড়ি। এই গ্রামের অধিবাসী গোপাল চ্যাটার্জি নানা ভেষজ ওষুধপত্র দিয়ে গ্রামবাসীর চিকিৎসা করতেন৷ হঠাৎ-ই একদিন তাঁর লাশ পাওয়া গেলো। রক্তশূন্য ফ্যাকাশে শরীর শক্ত হয়ে গেছে, ঠিকরে বেরিয়ে আসছে দুই চোখ। বীভৎস সেই লাশ দেখে পুলিশ বুঝতেও পারলো না, ব্যাপারটা সুইসাইড নাকি মার্ডার। মৃত গোপাল চ্যাটার্জির ভাতিজা তার কাকার অন্তিম ক্রিয়াকর্ম সম্পাদনের জন্য পা রাখলো বেড়বাড়িতে। বিজ্ঞানমনস্ক ছেলেটা সেখানে পা রেখেই ব্যাখ্যার অতীত কিছু রহস্যের মুখোমুখি হলো। সে জানতে পারলো, তার কাকা ভয়ঙ্কর এক অপদেবীর আরাধনা করতে গিয়েই যতো গণ্ডগোল পাকিয়েছিলেন। এসব থেকে কি আদৌ মুক্তি পাওয়া সম্ভব!
'আঁধার'-এর শুরুটা ভালো লাগলেও শেষটা আমার পছন্দ হয়নি। ভালো লেগেছে অঘোরী সন্ন্যাসী ভৈরোনাথের অমায়িক ব্যবহার। সচরাচর অঘোরী সন্ন্যাসীদের এতোটা বিনয়ী আচরণ দেখা যায় না। আরেকটা মজার জিনিস জানতে পারলাম; গৃহ গোধিকা মানে হলো টিকটিকি। ব্যাপারটা মজার ছিলো।
অদ্য রজনী বাকিঃ দাম্পত্যজীবনে অসুখী এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই খুন করে ফেললো তার স্ত্রীকে। সতেরো বছরের বিবাহিত জীবনের রক্তাক্ত সমাপ্তি ঘটলো। বারের এক রহস্যময় লোকের প্ররোচনায় সে স্মরণ করছিলো শয়তান পাজুজুকে। সবই ঠিক ছিলো রান্নাঘর থেকে প্রেশার কুকারের সিটি আসার আগে পর্যন্ত।
মোটামুটি ভালো লেগেছে এই ছোট্ট গল্পটা। শেষটা ইন্টারেস্টিং ছিলো।
.
আরো দুটো গল্প ছিলো এই সঙ্কলনে। ভয়ঙ্কর এক অভিশাপে পুরো পরিবার ছারখার হয়ে যাওয়া একজন মানুষের গল্প 'অভিশাপ' ও আধিভৌতিক কর্মকাণ্ডে ভরপুর এক শ্মশানের গল্প 'বজ্রচর্চিকা'। 'বজ্রচর্চিকা' গল্পটা এর আগে আদী প্রকাশন প্রকাশিত বেশ কয়েকজন লেখকের হরর ও থ্রিলার গল্প সঙ্কলন 'নিশুতি-২'-এও স্থান পেয়েছিলো। সেখানেই পড়েছিলাম। বেশ ভয়ঙ্কর একটা গল্প।
ওপার বাংলার লেখক মনীষ মুখোপাধ্যায়ের গল্প বলার স্টাইল চমৎকার। বেশ ধীরেসুস্থে, কিন্তু আগ্রহ জাগানিয়া ভঙ্গিতে তিনি গল্প বলেন। তন্ত্রমন্ত্র সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানও মুগ্ধ করার মতো। তাঁর অন্যান্য বই গুলোও পড়ার ইচ্ছা আছে। বইটার কলকাতা সংস্করণে চারটা গল্প থাকলেও বাংলাদেশ সংস্করণে লেখকের আরো তিনটা গল্প যোগ করা হয়েছে। আদী প্রকাশনকে ধন্যবাদ 'রক্ষাকবচ' এপার বাংলায় প্রকাশ করার জন্য।
বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক চোখে পড়েছে বইটা পড়তে গিয়ে। বিশেষ করে 'ছোট্ট' শব্দটাকে সব জায়গাতেই 'ছোট্র' লেখা হয়েছে। এই ব্যাপারটা বেশ চোখে লেগেছে। পরবর্তী সংস্করণে এসব ঠিক করা হবে আশা করি।
সজল চৌধুরীর করা দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদের কারণে বইটা পেয়েছে ভিন্ন একটা মাত্রা। ভালো লেগছে প্রচ্ছদ। প্রোডাকশন কোয়ালিটিও ভালো ছিলো।
প্রচ্ছদ দেখে এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে খানিকটা জেনে বই মেলা থেকে বইটি সংগ্ৰহ করবো ভেবে রেখেছিলাম। বিশেষ করে 'তারানাথ তান্ত্রিক' ও 'এবং ইনকুইজিশন' পড়বার পর তন্ত্রসাধনার উপর লেখা গল্প ও উপন্যাস আমার মতো অধিকাংশ পাঠকের পড়ার ইচ্ছা নিঃসন্দেহে বেড়েছে বলেই মনে হয়। আর এই ঘরানার লেখায় মূলত অলৌকিক, অতিপ্রাকৃত বা ভয় এই সমস্ত বিষয়গুলি প্রাধান্য পেলেও তন্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও গবেষণা অত্যন্ত জরুরী আর তার সাথে লেখকের অভিজ্ঞতা ও কল্পনায় নিপুণ মিশ্রনে এই ধরনের গল্প হয়ে ওঠে জীবন্ত। যাই হোক এবার এই বই এর কথায় আসি। চারটি অলৌকিক অতিপ্রাকৃত গল্পের সংকলন হলো রক্ষাকবচ।তন্ত্রের অপপ্রয়োগ এবং না জেনে শুধু কৌতুহলবশত ঐ পথে যাওয়ার পরিনাম যে কি বিপজ্জনক হতে পারে সেই ভয়াল রূপ গল্পগুলি তে আবর্তিত হয়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে অপদেব-দেবী ,বেতাল,ডার্ক আর্ট যারা গা ছমছম অনুভূতি ও ভয়ের বাহক।লেখকের সহজ ও সাবলীল বর্ননা গল্পগুলি কে আরো মনোগ্ৰাহী করে তুলেছে।দক্ষ লেখনী তে বিষয়ের উপর দখল ও গবেষণা স্পষ্ট কিন্ত্�� কোনও ভাবে একঘেয়ে মনে হয়নি।গল্পতো বটেই শুরুতে লেখকের লেখা ভূমিকাও আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে চতুর্থ ও অপেক্ষাকৃত বড় গল্প 'রক্ষাকবচ'। এই গল্পের মাধ্যমে মা ছিন্নমস্তা ও ডাকিনী দেবীর ভয়ংকর রূপের বর্ননা পড়ে আমি রোমাঞ্চিত ও মুগ্ধ হলাম। লেখকের কাছ থেকে এইধরনের আরও লেখার অপেক্ষায় রইলাম। কাফে টেবিলের উপস্থাপনা ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ এই সংকলনটিকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে ।পাঠকদের বলব যারা তন্ত্রের বা অলৌকিক কাহিনী পছন্দ করেন তারা সংগ্রহ করুন ও পড়ুন।আমার বিশ্বাস আপনাদের ভালো লাগবেই।
তন্ত্র ও অতিপ্রাকৃত বিষয়ের ওপর লেখা চারটি গল্প আমার কেমন লাগলো তা সংক্ষেপে বলি -
১. অভিশাপ : বেশ ভালো ভাবে শুরু হয়েও গল্পটি বড্ড তাড়াতাড়ি প্রেডিক্টেবল হয়ে পড়ায় ঠিক জমল না।
২. পিশাচ : বিদেশি খাবার কে দেশি পদ্ধতিতে রান্না করলে কেমন লাগে? কখনও খারাপ কখনও ভালো। লেখক এই গল্পটির ক্ষেত্রে সেই পন্থাই নিয়েছেন। তবে আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগলো। সত্যি বলতে, The Exorcist (১৯৭৩) সিনেমাটা দেখতে গিয়ে যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই আবার ফিরে এল এই গল্পটির হাত ধরে।
৩. রাতপরী : আমার ধারণা ছিল, পৌরাণিক অপদেব-দেবীদের এক অমোঘ আকর্ষণ ক্ষমতা রয়েছে, যার দ্বারা এঁরা মানুষকে বিপথে চালিত করে। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম এই ভাবনাটা পুরোপুরি ভুল না হলেও ঠিকও কিন্তু নয়। মেন কালপ্রিট হচ্ছে আমাদের ষড়রিপু। একে নিয়ন্ত্রণে রাখলে কোনো সমস্যাই হয়না। কিন্তু এর ভয়াল গ্রাসে হাবুডুবু খাওয়া মানেই বিপদ ডেকে আনা.. এই গল্পও কিঞ্চিৎ এই বার্তাই বহন করে।
৪. রক্ষাকবচ : তারাদাস নয় বরং কিছুটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পের ফ্লেভারটা পেলাম এখানে। দশমহাবিদ্যা.. ডাকিনী.. ছিন্নমস্তা.. আর রক্ষাকবচ.. সব মিলিয়ে একটা জমজমাট গল্প ফেঁদেছেন লেখক বলতেই হচ্ছে। তবে শেষটা আমার পছন্দ হয়নি।
গল্প নিয়ে আর কিছু বলার নেই। প্রচ্ছদ ঠিকঠাক। দামটা ১২৫ মতো হলে ভালো হতো। রেকমেন্ডেড।
চারটি তন্ত্র নির্ভর গল্পের একটা ছোট সংকলন এই বইটি। গল্পগুলি হলোঃ অভিশাপ, পিশাচ, রাতপরী আর রক্ষাকবচ। রাতপরী গল্পটার অডিও এডাপটেশন সানডে সাসপেন্সে শুনেছিলাম বছর তিনেক আগে। অন্য দুটি গল্প থেকে রাতপরী আর রক্ষাকবচ গল্পটা বেশি ভালো লেগেছে। রক্ষাকবচ গল্পটিতে ইনফো ডাম্প করেছে প্রচুর, মিশর আর ভারতীয় পুরাণের একটা সংমিশ্রন দেখতে পাই এই গল্পে।
গত ৫-৬ বছর ধরে বাংলা ভৌতিক সাহিত্যে তন্ত্রমন্ত্র আর মিথিকাল কাহিনী ভিত্তিক গল্প অনেক বেশি লেখা হচ্ছে। শয়ে শয়ে গল্প অডিও আকারে ও বাজারে আসছে। কিন্তু ঐ, লেবু বেশি কচলে ফেলছে সবাই, যার জন্য এখন তন্ত্র নির্ভর কাহিনী শুনলেই কেমন ভ্রু কুচকে যায়। এই জনরায় মানসম্মত কাজ হাতে গোনা কয়েকটা।মনীষ মুখোপাধ্যায় তাদের মধ্যে অন্যতম যাদের কাজ এই বিষয়ে বেশ ভালো হচ্ছে। তার লেখনশৈলী সুন্দর, বেশ একটা প্রাচীনত্বের আবহ পাওয়া যায় পড়ার সময়। যারা খাঁটি তন্ত্র নির্ভর গল্প পড়তে চান তাদের এই বইটি ভালো লাগবে।
বইটির নাম আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি সাধারণ হরর জনরা ভয় পাওয়ার বা তন্ত্রমন্ত্র জানার জন্য পড়ে থাকি। বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে বলেই পড়ি আরকি। এটাও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কেনা। . তবে আমি হতাশ। এর বড় কারণ হরর বা ভয় বলতে যা বোঝায় এখানে তেমন কিছু নেই। বইটি সাধারণ ভাষায় লেখা। ভয়ের চিহ্ন খুজতে হয়। গল্পের পল্ট গুলোও বেশ সাধারণ বলা যায়। যতটা ভয় পাওয়া যায় বা ভয়ের হবার কথা ছিল তা হয়নি।
বাংলাদেশ থেকে এই বইটা প্রকাশ করেছে আদী প্রকাশণ। আদী বর্তমান সময়ে খুব ভালো বইগুলো নিয়ে কাজ করছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই কিন্তু এই বইয়ে বানান ভুল অতিমাত্রায়।