মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান লেখকদের কৃতি নিয়ে রচিত ‘প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান’। এই সময়ে রচিত সাহিত্যের পরিচয় দিতে গিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ধর্মসম্প্রদায় নির্বিশেষে বঙ্গদেশে সাহিত্যচর্চায় যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তা উদঘাটিত হয়েছে লেখকের পর্যবেক্ষণের গভীরতায়।
Rai Bahadur Dinesh Chandra Sen (Bengali: দীনেশ চন্দ্র সেন) was a Bengali writer, educationist and researcher of Bengali folklore. He was the founding faculty member and the Ramtanu Lahiri Research Fellow of the Department of Bengali Language and Literature of the University of Calcutta.
In 1882, he passed his University Entrance examination from Jagannath University in Dhaka. In 1885, he passed his F.A. examination from Dhaka College. He passed his B.A. examination with Honours in English literature in 1889 as a private student. In 1891, he became the headmaster of the Victoria School in Comilla. During 1909-13, he was a Reader in the newly founded Department of Bengali Language and Literature of the University of Calcutta. In 1913, he became the Ramtanu Lahiri Research Fellow in the same Department. In 1921, the University of Calcutta conferred on him the Doctorate of Literature in recognition of his work. In 1931, he received the Jagattarini gold medal for his contribution to the Bengali literature. He retired from service in 1932.
He worked on collection and compilation of Bengal folklore. Along with Chandra Kumar De, he published Mymensingh Gitika (Ballads of Mymensingh), a collection of 21 ballads.
'যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী সে সবার কিবা রীতি নির্ণয় না জানি। মাতা-পিতামহ ক্রমে বঙ্গেতে বসতি দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি। দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায় নিজ দেশ তেয়াগি কেন বিদেশ না যায়।'
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান সাহিত্যিকদের অবদান নিয়ে লেখা বইটি। এই সময়ের সাহিত্যের পরিচয় দিতে গিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের চিত্র তুলে ধরেছেন। মুসলমান লেখকদের অবদান আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বাংলায় হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করেছেন। বৈদিক যুগে এবং পরবর্তীতে হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈনদের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছিলো। সেই তুলনায় তিনি হিন্দু-মুসলিম বিরোধকে ততটা সংঘাতময় মনে করেননি।
১৯৩৮ সালে লেখক দীনেশচন্দ্র সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান সম্পর্কে কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতাই সংকলিত হয়ে বই আকারে প্রকাশ হয়। বইতে বাংলার সমাজ জীবনে এবং সাংস্কৃতিতে দুই ধর্মের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিই তাঁর কাছে প্রধান হয়ে ঊঠেছে। লেখক প্রমাণ করতে চেয়েছেন ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও সকল বাঙালির বাঙালি পরিচয়টাই মুখ্য।
সেন রাজত্বের অবসানের পরে গৌড়ের পাঠান রাজদরবারে বাংলা ভাষার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আরকানের মগরাজা এবং তাঁদের বাংলা ভাষাপ্রীতি মধ্যযুগে মুসলিম লেখকদের বাংলা সাহিত্য চর্চায় অনুকুল পরিবেশ দিয়েছিলো। বিশেষ করে আরকান রাজসভার কথা বলতে হয়। ডক্টর এনামুল হকের ভাষায়, 'সপ্তাদশ শতাব্দীতে আরাকানের রাজসভায় বাঙ্গালা ভাষা যেরূপ নানাদিক দিয়া পুষ্টি লাভ করিয়াছিল, তাহার আপন ভূমিতে ইহা তেমন হইতে পারে নাই, প্রধানতঃ চট্টগ্রামের মুসলমান কবিদের হাতেই ইহা বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছিল, আরাকানের রাজ-সভার মুসলমান কবিদের হাতেই বাঙ্গালা ভাষা নূতন রূপ ও নবীন প্রেরণা লাভ করে।' দৌলত কাজী, আলাওলের মত লেখকদের আবির্ভাব ঘটে সেই সময়ে। লেখক বলছেন যে, ১৫শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কি পূর্ববঙ্গে, কি পশ্চিম রাঢ় দেশে, প্রাচ্য বঙ্গের সীমান্তে আরাকানে বা চাকমা রাজ্যে, ভাগীরথী, পদ্মা ও কর্ণফুলীএ তীরে, এক কথায় পেগু থেকে আসাম পর্যন্ত একটা বড় জনপদ বাংলা লেখকদের তীর্থে পরিনত হয়েছিলো।
তবে আলাওল, দৌলত কাজী বা মাগন ঠাকুরেরাই বাংলা সাহিত্যের সবটুকু নন। বাংলা প্রাচীন সাহিত্যে মুসলমানের অবদান এরচাইতে শতগুন বেশি। মুসলমানরা এই বিরাট সাহিত্যের শুধু পৃষ্ঠপোষক নন, তারা এর রক্ষক। এই বিরাট সাহিত্য হলো পল্লী-সাহিত্য। এই পল্লী সাহিত্যের ব্যপকতা সাগরের মতই বিশাল। এই সাহিত্যের রচনা বাংলার কৃষক শ্রেণির মানুষ। তাদের সাহিত্যে পাণ্ডিত্য নেই কিন্তু কবিত্ব আছে।
লেখক প্রমাণ করেছেন, এই পল্লীকাব্যগুলির মধ্যে এমন সব বড়মাপের কবি আছেন যাদের সমকক্ষ কবি তথাকথিত ভদ্র সাহিত্যেও বিরল। এই কাব্যগুলোর রচকদের অনেকেই নিরক্ষর কিন্তু এদের দৃষ্টি এত সূক্ষ্ম যে, নিজের সমাজ ও দেশের যে ছবি তাঁরা একেছেন তা একেবারে নিখুঁত।
কেন বাংলার মুসলমান সমাজ পল্লীসাহিত্যে এতটা সমৃদ্ধ সেটাও বর্ণনা করেছেন। তবে সেই আলোচনায় গিয়ে লেখা আর বড় করতে চাচ্ছি না। নয়ন জুড়ানো প্রচ্ছদটি করেছেন সব্যসাচী হাজরা। অষ্টম পরিচ্ছেদের শেষ অংশে মনে হয়েছে ওখানে লেখা শেষ না করেই পরের পরিচ্ছেদে চলে গেছে। হতে পারে প্রিন্টিং এ ঝামেলা হয়েছে। কেউ বইটা পড়ে থাকলে এই ব্যপারটা একটু বলে যাবেন।