অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় : হুমায়ুন আজাদের 'আমার অবিশ্বাস' গ্রন্থের অপনোদন
বাংলা সাহিত্যের জগতে প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক হিসেবে পরিচিত অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ। যিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, কিশোর-সাহিত্যিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক হিসেবে পরিচিত। সামসময়িকদের কাছে তিনি আবার কুম্ভীলক (Plagiarist - রচনাচোর) হিসেবেও সমালোচিত। ব্লগপূর্ব যুগের নাস্তিকতাপন্থী লেখালেখিতে যে-কয়জনের নাম চলে আসে তাদের মাঝে তিনি অন্যতম।
তিনি নিজেকে গর্বভরে অবিশ্বাসী হিসেবে পরিচয় দিতেন। স্বীয় অবিশ্বাসের নেপথ্যে কথামালা সাজিয়েছেন আমার অবিশ্বাস গ্রন্থে। বাংলাদেশে নাস্তিকতাবাদের মুখপাত্র মুক্তমনা ব্লগে আমার অবিশ্বাস বইটি সম্পর্কে বলা হয়েছে -
“তিনি আরো লিখেছেন আমার অবিশ্বাস । যার তীব্র আলোয় আলোকিত হয়েছে হাজারও তরুণ প্রাণ।”
অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় অবতারণার উদ্দেশ্য হলো, উনার আরোপিত অভিযোগগুলোকে খতিয়ে দেখা - যুক্তি, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্বের কাঠগড়ায়। একই সাথে এসকল অভিযোগের পিছে ক্রিয়াশীল মনস্তত্ত্বকে উন্মোচন করা। এ যাত্রায় বিচার করা হবে, যাচাই করা হবে উনার অবিশ্বাস আসলেই কতটা ভিত্তিপূর্ণ। আসলেই কি তিনি প্রথাবিরোধী, নাকি নিজের প্রথার বলয়েই চক্রাকারে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে আশা করি।
আসলে সেভাবে বলার কিছু নাই। আমি আপ্লুত, আমি বিমোহিত বইটি পড়ে। আরিফ আজাদ এবং শামসুল আরেফীন ভাইয়ের লেখা পড়ে, আমার মনোজগতে এক পরিবর্তন, এক আলোড়ন অনুভব করেছিলাম ২১ মাস আগে।
স্বল্প জ্ঞানের কারণে ( আমি এখনও নিরেট মূর্খ) আমি একটা সময় ঘোর নাস্তিক ছিলাম, এরপর হলাম সংশয়বাদী। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজের মাঝে এক ধরনের পরিবর্তন আসে। বিলিয়নের উপরে মানুষ ১৪০০ বছর ধরে একটা system কে আঁকড়ে ধরে আছে কেন? একটা চেয়ারও তো বাহ্যিক বল ছাড়া নড়ে না, ইত্যাদি নানান চিন্তা আমাকে ঘিরে ধরে।
উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবার পরে আমার সামনে এক নতুন দ্বার খুলে যায়। বিশেষ করে নিউটন সাহেবের ১ম সূত্র আর entropy আমার চিন্তা আমূল পালটে দেয়। আমি পড়তে শুরু করি। সত্যিকার পড়া। একদিন জানতে পারলাম কোরআনে নাকি ১ম আয়াতই নাজিল হয়েছিলো ‘পড়ো’ শব্দ দিয়ে।
তবে আমার এই পরিবর্তন এম্নিতে আসেনি, অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে। Academic Result যা-তা, একই ক্লাসে ৩ বছর, পরিবারের গঞ্জনা সইতে হয়েছে, বাইরের বই পড়ার জন্য মানুষের টিটকারি আরও কত কী!!! তবে ওসব আর আমাকে আঘাত দেয় না।
কারণ, আমি আমার আনন্দ-বেদনা সব সমর্পণ করেছি সেই পরম সত্তার কাছে। এখন চরম দুঃখেও আশায় বুক বাঁধতে সাহস রাখি। পরীক্ষার রেজাল্ট আর ভাবায় না। কারণ, রাতে যখন ঘুমোতে যাই, এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করি। আমি ইসলাম আর বিজ্ঞানকে যুগপৎ জানবার চেষ্টা করেছি। আমি জানি মহান আল্লাহর রহমতের বিশালতায়, এ জানা, জ্ঞান, তথ্য অতীব তুচ্ছ। কিন্তু আমার ব্যক্তিজীবনে এই ঢের৷
১৪০০ বছর আগে মরুর বুকে একজন এতীম, নিরক্ষর মানুষ আমার মতো মানুষের কথা ভেবেই তো রাজত্ব, বাদশাহী, নারীর লোভ সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। আহ!!! কী প্রতিদানই না আমি দিচ্ছিলাম সেসবের।
এই বইটি মূলত হুমায়ুন আজাদের মিথ্যা, বানোয়াট আর ভ্রান্ত বিশ্বাসের জবাব দিয়ে লেখা। আমি আশ্চর্য হয়েছি লেখকের পাণ্ডিত্যে, একজন চিকিৎসক হয়েও, এতো ব্যস্ততার মাঝেও কী পরিমাণ শ্রমই না দিয়েছেন!
দর্শনের এক নতুন ব্যাখ্যা পেয়েছি। ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু ধর্মকেও নতুন করে জানলাম। বুঝতে পারলাম, ইসলামকে আক্রমণ করার হেতু। নারীবাদী, জাতীয়তাবাদী, সেক্যুলারিটি ইত্যাদি স্রেফ প্রপাগাণ্ডা। নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং অনৈতিকতাকে সমর্থন করার জন্য এগুলোর উদ্ভব করা হয়েছে।
ড. আজাদদের, জাফর ইকবালদের যতই বুঝাও, প্রমাণ দাও, এরা বুঝবেনা। কোরআনেও এদের ব্যাপারে বলা আছে, “এরা তো নিজেদের প্রবৃত্তির উপাসনা করে।”
অবশেষে পড়ে শেষ করলাম ডা. Rafan Ahmed ভাইয়ের বহুল আলোচিত গ্রন্হ 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়'। জীবনের দীর্ঘ একটা সময় ধরে হুমায়ূন আজাদ ছিলেন আমার আদর্শিক গুরু। (আল্লাহ তা'আলা আমাকে মাফ করুন।) তাই 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটি পড়ার প্রতি আমার অন্যরকম ব্যক্তিগত একটি আগ্রহ ছিলো। কারন, এ বইটি ছিলো হুমায়ূন আজাদের 'আমার অবিশ্বাস' গ্রন্হকে রিফিউট করে লেখা। এই 'আমার অবিশ্বাস' বইটি আমার জীবনের বেশ কিছু সময়কে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে বলা চলে। তবে এখন আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি- 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটি শেষ করার পর এর প্রতি অন্যরকম ব্যক্তিগত এক ধরনের ভালোবাসা আমি অনুভব করছি।
. কিছু কিছু বইকে আমি বলি 'চেতনা হরণকারী'। মানে বইটি পড়লে পাঠকের চেতনা কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিছুটা হলেও চিন্তার বিবর্তন ঘটে। আল্লাহ প্রদত্ত ফিতরাহকে (স্বভাবজাত বৈশিষ্ঠ্য) তো আর এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। রাফান ভাইয়ের বইটিও তেমন। 'চেতনা হরণকারী'। কেউ যদি নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা নিয়ে বইটি পড়ে, তাহলে তার বুদ্ধিবৃত্তিতে, মন ও মননে, চিন্তা ও চেতনায় নিজের অজান্তেই এক ধরনের পরিবর্তন ঘটে যাবে ইন-শা-আল্লাহ। তার ফিতরাহ জাগ্রত হয়ে উঠবে ইন-শা-আল্লাহ।
. 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটিতে কোন আবেগঘণ বয়ান দেয়া হয়নি। লেখক যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়েছেন। সাজিয়েছেন রেফারেন্সের পর রেফারেন্স। আর এসবের তোড়েই হুমায়ূন আজাদ তার অবিশ্বাস নিয়ে ভেসে গিয়েছেন বানের জলের মতো। সাথে নিয়ে গিয়েছেন তার অগনিত চ্যালা, চামুন্ডাদের। হুমায়ূন আজাদ যে আবেগের বশবর্তী হয়ে নাস্তিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন, রাফান আহমেদ সে আবেগকে নিতান্ত ভুল প্রমান করেছেন কঠিন কঠিন সব যুক্তির মাধ্যমে। সারাজীবন নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিসম্পন্ন হিসেবে গন্য করা আবেগী হুমায়ূন আজাদ শেষ পর্যন্ত ভূপাতিত হলেন সেই যুক্তির কাছেই। আর এসব যুক্তি প্রয়োগে লেখক যেসব রেফারেন্স টেনেছেন তার প্রায় শতভাগই তিনি নিয়েছেন হুমায়ূন আজাদ গংদের ঈশ্বরতুল্য পশ্চিম থেকে। পশ্চিমা বিভিন্ন প্রাচ্যবিদ, বিজ্ঞানী ও নাস্তিক গবেষকদের বিভিন্ন গ্রন্হ থেকে উদ্ধৃতি প্রদানের মাধ্যমে ডা. রাফান হুমায়ূন আজাদ ও তার অনুসারীদের নাস্তিক্যবাদী আবেগের অসরাতা প্রমানে সচেষ্ট হয়েছেন।
. বিস্ময়ের সাথে এখানে যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয়- বইয়ের শেষে সংযোজিত রেফারেন্সের তালিাকটিই মোট ১০ পৃষ্ঠার মতো। এই একটি বই লিখতে গিয়ে লেখকে শত-শত বই পড়তে হয়েছে। দর্শন থেকে শুরু করে বিজ্ঞান; ডারউইনের বিবর্তববাদ থেকে শুরু করে নানা অপবিজ্ঞান; ইসলাম ধর্ম থেকে শুরু করে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব; শিল্প ও সাহিত্য থেকে শুরু করে সভ্যতা ও সংস্কৃতি- সম্ভাব্য কোন বিষয়ই লেখকের পাঠ থেকে বাদ পড়েনি। এক কালের নাস্তিক রাজ এন্টনি ফ্লিউ থেকে শুরু করে রিচার্ড ডকিন্স, স্যাম হ্যারিস, লরেন্স এম. ক্রাউস; চার্লস ডারউইন থেকে শুরু করে আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং কে নেই তার পাঠ তালিকায়? স্বতন্ত্র হিসেবে তার এই রেফারেন্স তালিকাটাই আস্ত এক হীরের খনি। অধম পাঠক ইতিমধ্যে বেশ কিছু বই পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
. বইটিতে অধ্যায়গুলো যে ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে সেখানেও লেখকের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় স্পষ্ট। 'অবিশ্বাসীর বিশ্বাস' নামক অধ্যায়ে অবিশ্বাসীরা কিরূপ বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রিয়েলিটি, বস্তবাদ, বিজ্ঞানের দর্শন এসব নানা কিছু নিয়ে আলোচনা করে লেখক একজন প্রথাবিরোধীর জীবনে নানা প্রথার উপস্হিতি সম্পর্কে আলোচনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন অবিশ্বাসী নাস্তিকেরা কতটা অজ্ঞানতা ও ভন্ডামীর ভেতর জীবনযাপন করেন। আর এভাবেই লেখক পাঠককে একে একে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অবিশ্বাসীদের নানা অযৌক্তিক ফ্যালাসির সাথে। পরিশেষে তিনি বইটি শেষ করেছেন তার বিশ্বাসের উপর যৌক্তিক বয়ানের মাধ্যমে। এখানে সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে- অধ্যায়ের টপিক বুঝাতে প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতেই গল্পের ছলে লেখক যে উপমাটি দিয়েছেন সেটা। লেখকের সাবলীল লেখনীতে গল্পগুলো রীতিমতো জান্তব মনে হয়েছে। হাই ইবনে ইয়াকজানের দার্শনিক গল্প থেকে শুরু করে শেষ অধ্যায়ের ঈশ্বর বিষয়ক কথোপকথন সবই ছিলো ভাবনার খোরাক জাগানিয়া এক একটি পরিবেশনা। আমার কাছে লেখকের এ স্টাইলটি খুব অভাবনীয় মনে হয়েছে। আর গল্পগুলোও ছিলো অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়ের সাথে যথাযথ।
. তবে বইয়ের বেশ কিছু জায়গায় মূদ্রন প্রমাদ রয়ে গিয়েছে। লেখক রেফারেন্স দিতে গিয়ে ১,২,৩,৪... এর যে ক্রম দিয়েছেন তা পুরো বইতে ইউনিক থাকলেই ভালো হতো। প্রতিটি অধ্যায়ে পুনরায় ১ থেকে ক্রম শুরু করা আমার কাছে বেশ অসুবিধাজনক মনক হয়��ছে। কাউকে বলতে গেলে বলতে হয় অমুক অধ্যায়ের এত নং রেফারেন্স। আর বেশ কিছু জায়গায় সঠিক রেফারেন্স নাম্বারও দেয়া হয়নি। যা পড়ার সময় বেশ জটিলতার সৃষ্টি করেছে। আর আরেকটি ব্যাপার প্রকাশকদের মাথায় রাখা উচিত। প্রায় ৩০০ পৃষ্টার একটি বই ছাপা হলো পেপারব্যাকে। পেপারব্যাক কালেকশনের জন্য খুব টেকশই নয়। একটু নাড়াচাড়া করলেই বই নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমেই হার্ড বাইন্ডিং এডিশন প্রকাশ করলে খুব কি ক্ষতি হতো?
. তবে যাই হোক, 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটি আমার জন্য এক অতুলনীয় চিন্তা ভ্রমন ছিলো। চেতনার একেবারে সমূলে যেসব বই আঘাত করে, সে রকমই একটি বই হচ্ছে 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়'। যারা চিন্তার দৈন্যতা রোগে ভুগছে তারা হয়তো এর দ্বারা খুব একটা প্রভাবিত হবে না। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই মুক্তমনের চর্চা করেন, তাদের জন্য বইটি নিশ্চিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। কারণ, এ বইতে শুধু হুমায়ূন আজাদের একটি বই নিয়েই আলোচনা করা হয়নি। এখানে আলোচিত হয়েছে, সমালোচিত হয়েছে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছে হুমায়ূন আজাদের মতো মানুষের লালিত আদর্শের সমগ্র ভিত্তিকে। তাই 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' পরিণত হয়েছে বাংলা গবেষনা সাহিত্যের একটি খাঁটি রত্নে। পরিশেষে লেখকের কথা দিয়েই আলোচনা শেষ করি-
একটা চমৎকার বই।সবারই এই বইটি পড়া উচিত বিশেষকরে যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করেন।হুমায়ুন আজাদ রচিত আমার অবিশ্বাস বইয়ের বিপরীতে এই বইকে ধরা হলেও মূলত এই বইটি নাস্তিকদের সকল প্রশ্নের জবাবস্বরূপ। নাস্তিকরা মূলত তাদের স্বঘোষিত কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে যাদের বা যেসব পদ্ধতি অনুসরন করে তাদের কে সেসব পথেই সেইসব বিশ্বাসের ভুল,ভ্রান্তি ও অসাড়তা তুলে ধরেছেন। আলোকিত হতে এমন একটি বই আবশ্যক।
আমাদের দেশের মুক্তমনাদের কাছে হুমায়ুন আজাদ একজন দেবতুল্য ভাবগুরু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে| সত্যি কথা বলতে 'আমার অবিশ্বাস' বইটি আমার পড়া হয়ে ওঠেনি! রাফান ভাইয়ের 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটি হাতে পাওয়ার পর আজাদের বইটিও এই বইয়ের সাথে প্যারালালি উল্টে পাল্টে দেখলাম| সত্যিই অবাক হয়েছি আজাদের চিন্তার দৈন্যদশা দেখে| উনি একজন বড় ভাষাবিদ হতে পারেন কিন্তু বিজ্ঞান, দর্শন আর ধর্মতত্ত্ব নিয়ে যখন কথা বলেছেন তখন ওনার অজ্ঞতা, ইগো, বিকৃত মানসিকতা আর বায়াসনেস মিলিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছেন|
যদিও 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' একটি অপোনদন জনরার বই তবুও একে নিছক অপোনদন বললে ভুল হবে| বইটি থেকে হুমায়ুন আজাদ আর তার সংশ্লিষ্ট কথাবার্তা বাদ দিয়ে দিলেও একটা পূর্ণাজ্ঞ বই হবে| কারণ লেখক এখানে আজাদকে কেবল উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আজাদের মত যারা চিন্তা করেন তাদের চিন্তার মূল ভিত্তিতে আঘাত হেনেছেন| আর এটা করতে গিয়ে লেখক আশ্রয় নিয়েছেন খোদ পশ্চিমা সেকুলার বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর প্রাচ্যবিদদের গবেষণার কাছে; স্বয়ং আজাদের মস্তিষ্ক যেই পশ্চিমাদের দ্বারা উপনিবেশিত|
বইটি কাঠখোট্টা বিষয়ের হলেও লেখকের শব্দ চয়ন আর ভাষাশৈলী চোখে পরার মত ছিল| বইয়ের অধ্যায় গুলোর মধ্যে কন্টিনিউইটি ছিল | প্রতিটি অধ্যায় শুরু হয়েছে এক একটি গল্প দিয়ে যেমন ইবনে তোফায়েলের বিখ্যাত হাঈ ইবন ইয়াকজান কিংবা ওয়াইন ডায়ারের জনপ্রিয় জমজ শিশুর কথোপকথন দিয়ে, আর প্রতিটি অধ্যায় শেষে ছিল পুরো অধ্যায়ের সারমর্ম যা বইটিকে নতুনত্ব দিয়েছে|
নামটা দেখে বুঝতে পারিনি ভেতরে কি আছে। এক কথায় অসাধারন। হুমায়ুন আজাদের মত ইসলাম বিরাগীদের জবাব দিতে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় এত ভাল কাজ খুব একটি চোখে পরেনি। হুট করে কিছু লেখক তৈরি হয়ে যার ক্ষুরধার লেখা এক এক করে মিথ্যে অভিযোগ গুলোকে কচু কাটা করতে থাকে তেমনি একজন মনে হল এই লেখককে। পড়াকালীন সময়ে মনে হচ্ছিল কেউ যেন এক সত্যের ঝড় তুলেছে যার তীব্রতা এক এক করে মিথ্যের ঝুড়িকে ধুলিকনায় পরিনত করে দিচ্ছে।
যারা বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে মুখে ফেনা তুলে সব বিচার করতে চায় বইটা তাদের শিক্ষার জন্য, যারা সংশয়বাদী তাদের বিশ্বাস প্রকটের জন্য, যারা ধর্ম বিদ্বেষী তাদের সততা যাচাইয়ের জন্য আর যারা ইসলামকে ভালবাসে তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য।
একজন ভালো চিকিৎসকের (physician) কাজ হলো রোগীর জন্যে এমন পথ্য বাছাই করা, যা টার্গেট করবে রোগীর লক্ষণ-উপসর্গকে নয়, বরং রোগের causative agent কিংবা factor কে। ডা.রাফান আহমেদ অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়- তে ঠিক এই কাজই করেছেন। অনন্য এক ঢঙে পুরোদস্তর ব্যবচ্ছেদ করেছেন নাস্তিকতার causative agent এবং নাস্তিক্যবাদের বেসিক ইস্যু "অবিশ্বাস"কে। বাঘা বাঘা সব নাস্তিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের পিয়ার রিভিউড পেপার, পুস্তকাদি ও ডকুমেন্টারি দিয়েই বিশ্লেষণ করেছেন অবিশ্বাসের সিঁড়ির প্রতিটা ধাপকে, যেগুলো মাড়িয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। সুখপাঠ্য এই গ্রন্থের প্রতিড়ি পরতে পরতে তিনি উন্মোচন করেছেন অবিশ্বাসীদের মনস্তত্বের অসংগতি, তাদের মধ্যে থাকা অযৌক্তিক বিশ্বাস, বিজ্ঞান নিয়ে ভুল ও বিকৃত ধারণা, স্রষ্টা, ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে থাকা অজ্ঞতা ও অপযুক্তিকে। সর্বোপরি বিশ্বাসীদের মধ্যে থাকা বিশ্বাসের যৌক্তিকতাকে আলোয় উদ্ভাসিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। বাংলা ভাষায় এমন বই দুর্লভ!
এটি মূলত একটি গবেষণামূলক বই। বাংলাদেশের নাস্তিক মুক্তমনারা হুমায়ুন আজাদকে দেবতুল্য মনে করে। হুমায়ুন আজাদ তার “আমার অবিশ্বাস” বইটির মাধ্যমে যুব সমাজে নাস্তিকতার বীজ রোপণ করতে কিছুটা হলেও সফল হয়েছিলেন। এই বইটি মূলত হুমায়ুন আজাদ এর মত অনেক নাস্তিক মুক্তমনাদের ভ্রান্ত ধারণাকে যৌক্তিকভাবে খন্ডন করে লেখা। হুমায়ুন আজাদ যাদেরকে গুরু (বাট্রান্ড রাসেল, রিচার্ড ডকিন্স) মনে করে মূলত তাদের রেফারেন্স দিয়েই রাফান আহমেদ নাস্তিকতার ভ্রান্ত যুক্তি খন্ডন করেছেন।
বইটি শুরু হয়েছে টারজান বা মোগলীর মত একটা গল্প দিয়ে। যেখানে মানবশিশুটি নিজের বুদ্ধি দিয়ে আস্তে আস্তে সব কিছু আয়ত্ত করে নিচ্ছে। তার স্রষ্টাকে খুঁজে পাচ্ছে। না দেখে রবকে বিশ্বাস করাই তো মানব জনমের সার্থকতা। আমাদের অনেকেই হয়তো জানি না এই টারজান বা মোগলী গল্পটি ৯০০ বছর পূর্বে মুসলিম দার্শনিক ইবনে তুফাইল রচিত প্রথম দর্শনভিত্তিক উপন্যাস “হাঈ ইবনে ইয়াকজান ” গল্পের আদলে তৈরি হয়েছে। ৫০০ বছর আঁধারে থাকার পর ১৭০০-১৮০০ সালের দিকে টারজান বা মোগলী নিউইয়র্কে বেস্টসেলার হয়। থাক এবার মূল কথায় আসি।
২৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটিকে লেখক মূলত ৭ টি ভাগে ভাগ করেছেন পাঠকদের সুবিধার জন্য।
অবিশ্বাসীর বিশ্বাস, বিশ্বাসের সাতকাহন, ধর্ম নিয়ে যত কথা, ওপারে, অবিশ্বাসের ভাইরাস, আমার অবিশ্বাস, বিদায়বেলা এই সাতটি প্রবন্ধে লেখক তথ্যের পর তথ্য দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন অবিশ্বাসের দুর্গ। প্রতিটি অধ্যায়ই শুরু হয়েছে চমৎকার সব গল্প দিয়ে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে সংক্ষিপ্ত করে এর সারাংশ দেয়া আছে। প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে নাস্তিকদের অপনোদন।
বইটার গুরুত্ব বেড়েছে এই কারণে যে লেখক মুসলিম স্কলারদের থেকে বেশি রেফারেন্স না নিয়ে, রেফারেন্স নিয়েছেন পশ্চিমা দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের থেকে যাদেরকে নাস্তিকরা গুরু মনে করে। কেননা মুসলিম স্কলারদের গবেষণার রেফারেন্স দিলে তো আবার অনেকের চুলকানি উঠে!
এই বইয়ে যে রেফারেন্স দেয়া হয়েছে তা যেসব বই থেকে নেয়া হয়েছে তা বইয়ের শেষে তালিকা হিসেবে দেয়া হয়েছে। প্রায় দশ পৃষ্ঠা এই তালিকা। কোনো সন্দেহই নেই লেখককে প্রচুর বই পড়তে হয়েছে এই জন্য। রাফান আহমেদের ” বিশ্বাসের যৌক্তিকতা ” বইটি ছোট হলেও তা ছিল মূলত এই “অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়” বইটির ট্রেইলার। এই বইটির মাধ্যমে যেন লেখকের কাজটি পূর্ণতা পেল।
এই বইয়ের রেটিং ৫/৫ না হলে লেখকের চেষ্টাকে ছোট করা হবে, তা চাইনা। প্রচ্ছদ চমৎকার। কিন্তু বইটির ফন্ট স্টাইল, আর বাঁধাই যদি আরেকটু সুন্দর হতো তাহলে আরো ভালো লাগত। আল্লাহ লেখকের লেখায় বারাকাহ দান করুক, আমিন। সবাইকে বইটি পড়ার দাওয়াত রইল।
যেহেতু, রাফান আহমেদ ভাই "আমার অবিশ্বাস" বইয়ের বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলোকে সামনে তোলে এনে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যাসহ সেগুলোর অসাড়তা প্রমাণ করেছেন, তাই আমার প্রথম দায়িত্ব হবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে "আমার অবিশ্বাস" বইটি আগে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে পড়া। কারণ, ইসলাম সেই অবকাশ দিয়েছে। কারো অন্ধ অনুকরণ না করার ব্যাপারে ইসলামে কঠোর বিধিনিষেধ আছে।
◼️প্রশ্ন করতে পারেন, আমার মনে কি একটুও খটকা লাগলো না বাজে বাক্য দেখে? কিংবা কিছু বিভ্রান্তিকর বাক্য লেখা দেখে?
না। লাগেনি। কারণ, (১) ভাষাশৈলীর দিক দিয়ে অতি সুন্দর ও সূক্ষ্মভাবে হুমায়ুন আজাদ সেগুলো তোলে ধরেছেন। সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। অনেকসময় অতি সাধারণ, সারমর্মহীন বস্তু অতি সুন্দর হয়ে উঠে শিল্পীর ছোঁয়ায়। আর হুমায়ুন আজাদ সাহেব তো কথাসাহিত্যিক।
(২) উনি নি:সঙ্কোচে সব কথা লিখেছেন। যতো কটুবাক্যই হোক, নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।
(৩) হুমায়ুন আজাদ বিজ্ঞান, দর্শনের ক্ষেত্রে কাঁচা ছিলেন। সেটা হয়তো উনি বুঝেননি, কিংবা উনার আশেপাশে যারা ছিলেন, উনারাও বুঝানোর চেষ্টা না করে উনার থেকে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছেন; যা এখনো বিদ্যমান।
(৪) "নাইটিংগেলের প্রতি" অধ্যায়টা খুব ভালো লেগেছে। গোছানো লেখা। পাঠকের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন।
⚫️ব্যক্তি হুমায়ুন আজাদ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু উনার ভুল ব্যাখ্যা বা অপবিজ্ঞানের কথাগুলো খণ্ডন করা এই মুহূর্তে বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিলো। কারণ, লাখো তরুণ-তরুণী উনার লেখার ভক্ত। উনাকে আদর্শ মানা হয়। বাংলাদেশের নাস্তিক মহলে তিনি গুরুর আসনে আসীন।
এজন্যই, রাফান ভাই কলম তোলে নিয়েছিলেন। আর সেটি শেষপর্যন্ত প্রায় ৩০০ পৃষ্টার একটি বইয়ে রূপ নিয়েছে। আসলে দেখেন, আমাদের সবার উচিৎ ব্যক্তিপূজা থেকে বের হওয়া। একইসাথে আত্মপূজারি থেকে বের হওয়াও উচিৎ। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সব বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করে সত্যটা যাচাই করে সেটাকে বেছে নেয়াই আমাদের উচিৎ। যেই সত্যকে হুমায়ুন আজাদ নিজেই খুঁজে ফিরেছেন "আমার অবিশ্বাস" গ্রন্থে।
আবারো আমি হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হবো, "তাহলে আপনি কি রাফান আহমেদের ব্যক্তিপূজা করছেন না?" উত্তর হচ্ছে, "জি না। করছিনা। কেন করছিনা সেটা বুঝতে হলে 'অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়' বইটি কিনে পরখ করে দেখতে পারেন।"
এই গ্রুপে রাফান আহমেদ ভাইয়ের আরেকটি বইয়ের রিভিউ আমি দিয়েছিলাম। "বিশ্বাসের যৌক্তিকতা" সেটা পড়তে পারেন। এতে করে কিছু বিষয় পরিষ্কার হবে হয়তোবা। আমার নাম সার্চ দিলেই পাবেন। সেই রিভিউ থেকেও কিছুটা ধারণা পাবেন আশা করি।আমি আর "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" বই সম্পর্কে বিষদ ব্যাখ্যা দিচ্ছিনা। বইটিতে মোট ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। (১) অবিশ্বাসীর বিশ্বাস (২) বিশ্বাসের সাতকাহন (৩) ধর্ম নিয়ে যত কথা (৪) ওপারে (৫) অবিশ্বাসের ভাইরাস (৬) আমার বিশ্বাস
আশা করি একইসাথে রেফারেন্স এবং তথ্যবহুল আপনাদের কাজে লাগবে। অ্যাকাডেমিক বই না হলেও অনেকাংশে অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে এই বই রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।
🔵পরিশেষে বলবো, এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হেইট স্পিচ না ছড়িয়ে আসুন পড়ি, জানি। অন্যের প্রতি সুধারণা পোষণ করি। হুমায়ুন আজাদ উনার রাস্তায় উনি চলে গেছেন। কিন্তু আমরা কি এখনো আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখবো? উনার মৃত্যুর এই বেশ কয়েকবছরে বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে, দর্শন অনেক এগিয়েছে। আসুন না ভাই, ভ্রান্তি থেকে বের হই। হুমায়ুন আজাদের সত্যিকারের পাঠকদের উচিৎ হবে উনার ভুলগুলো কোথায় তা জেনে নিয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা নিয়ে সামনের পথে এগিয়ে চলা। একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" বইয়ের শেষ অংশটুকু দিয়েই লেখাটা শেষ করছি:
"বইয়ের কাজ শুরু করার আগে মুক্তমনা ব্লগে* হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে এক উক্তি চোখে পড়েছিলো: "হুমায়ুন আজাদ মানে, সত্যের বুলেটে মিথ্যে আবেগের তীক্ষ্ম জলাঞ্জলি" বইয়ের কাজ শেশ করার পর আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে: "হুমায়ুন আজাদ মানে, মিথ্যের বুলেটে সত্য আবেগ জলাঞ্জলি দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা"।
স্রষ্টা-নৈতিকতা-ধর্ম-পরকাল-জীবনের উদ্দেশ্য এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও প্রতিচিন্তার ইতিহাস মানবের অস্তিত্বের মতোই পুরোনো; বিতর্কেরও বটে। তবে এগুলো নিয়ে নির্মোহ চিন্তার সময় অধুনা মানুষের তেমন নেই। ‘পশ্চিমায়ন’, ‘আলোকায়ন', 'আধুনিকায়ন'—এই সমার্থক শব্দগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ভোগবাদ, পুঁজিবাদ, শ্বেত আধিপত্যবাদ, বর্ণবাদ ও অপরায়নের সিলসিলা ঠিক করে দেয়- কোনটা ভাবার যোগ্য আর কোনটা না, কোনটা অভিজাত আর কোনটা অদ্ভুত।
বাঙালি মুক্তচিন্তক, সুশীল, প্রগতিশীলদের এমনই একটা সিলেবাস আছে, আছে মুক্তচিন্তার একটা নির্দিষ্ট মাপের বাক্স। গা থেকে গা-য়ের গন্ধ ঝেড়ে ফেলে প্রথাগত প্রথাবিরোধিতার এ পথে হাঁটতে চাইলে এই বাক্সে আপনাকে ঢুকতে হবে। কারণ বাক্সের বাইরে থাকা সবাই বোকা, পশ্চাৎপদ, মূর্খ, মধ্যযুগীয় বর্বর! “অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়” বইতে বাঙালি মুক্তচিন্তার কিছু ডমিনেন্ট ন্যারেটিভকে যাচাই করা হয়েছে বাক্সের অন্দর ও বাহির থেকে। প্রোটোটাইপ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে এককালের প্রথাবিরোধিতার আইকনকে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে তাদের যুক্তি, চিন্তা ও অভিযোগগুলোকে। যুক্তিতক্কোর এই শ্বাসরুদ্ধকর এজলাসে সবাইকে স্বাগতম।
বঙ্গদেশীয় সুশীল, সেকুলার ও মুক্তমনাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বাস্তবতা বোঝার জন্য এই বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই বইটি হুমায়ুন আজাদ কে উদ্দেশ্য করে লেখা, কিন্তু এই বইয়ে তার বক্তব্যের প্রতিউত্তরের পাশাপাশি হুমায়ুন আজাদের চিন্তার উৎস তথা পশ্চিমা ধ্যান ধারণাকে প্রমাণভিত্তিক ও যৌক্তিকভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা ও সমালোচনা করা হয়েছে।
যারা হুমায়ুন আজাদের লেখা "আমার অবিশ্বাস" বইটি পড়েছেন তাদের অবশ্যই এই বইটি পড়ে দেখা উচিত। এছাড়াও ওনার অন্যান্য বইয়ের কিছু বক্তব্য প্রতিউত্তরও এসেছে এই বইয়ে। বলতেই হয়, "আমার অবিশ্বাস" ও "অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়" বই দুটো একটি কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ যেখানে ডক্টর রাফান আহমেদের অংশটির সৌন্দর্য অপর পিঠ কে খুব জোরালোভাবেই ম্লান করে দেয়।
অবশেষে বলতে হয়, তরুণ লেখক ডক্টর রাফান আহমেদ এই বইটি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যা মুক্তমনা থেকে শুরু করে ইসলামপন্থী সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। বইয়ের প্রাসঙ্গিক রেফারেন্স, ব্যাখ্যা, প্রাঞ্জলতা ও বিষয়ের বর্ণনার ধারাবাহিকতার কারণে একজন পাঠকের জন্য বইটি পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
হুমায়ুন আজাদকে (তার বিশ্বাসকে) ধুইয়ে রোদে দেয়া হয়েছে শুকানোর জন্য এই বইয়ে। যদিও তার বিশ্বাসের পরিবর্তন আর সম্ভব নয়। কিন্তু তার থেকে "অনুপ্রাণিত" বা"ঙ্গুদের বিশ্বাসের ভিত নড়ে যাবে।ডা. রাফান আহমেদের লেখা অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় বইটি লেখা হয়েছে হুমায়ূন আজাদের লেখা আমার অবিশ্বাস বইটিকে ঘিরে। হুমায়ূন আজাদের ফালতুসব কুযুক্তি খন্ডন করার পাশাপাশি তার উত্থাপিত প্রশ্নগুলোরও উত্তর দেয়া হয়েছে। আমার অবিশ্বাস বইয়ের মিথ্যাচার আর ভুলভাল তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। মোট কথা হুমায়ূন আজাদ পূজারীদের এই বইটি অবশ্যপাঠ্য।
তাই হুমায়ূন আজাদের পূজারীদের এই বই একটু নেড়েচেড়ে দেখার অনুরোধ করছি।