MOHAMMAD NAZIM UDDIN (Bengali: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন) is a writer and Translator of more than 26 novels..His original works are NEMESIS, CONTRACT, NEXUS, CONFESSION,JAAL, 1952: nichok kono number noy, KARACHI, RABINDRANATH EKHANE KOKHONO KHETE ASENNI and KEU KEU KATHA RAKHE. These six Thriller novels are highly acclaimed by the readers.
ছোটগল্পের একটা আকর্ষনীয় দিক হলো, একবার গল্পে মজে গেলে টানা এরপরের গল্প, তার পরের গল্প এরকম করতে করতে দেখা যায় বই শেষ। হরেক বিষয়আশয়ের দেখাও মেলে যেগুলো হয়তো উপন্যাসে আকার দিলে জমতোনা, কিন্তু কন্সেপ্ট হিসেবে দারুণ। আরব্যরজনীর গল্পগুলো কেন এতো বিখ্যাত, এক উদাহরণেই বোঝা যায়। জনপ্রিয় লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এর পরিচয় যেরকম আমার কাছে, এই বইটি দিয়ে সেই পরিচয় বেশ খানিকটা বদলে গেল। লেখক মূলতঃ থ্রিলার সাহিত্যের জন্যই সুপরিচিত। কিন্তু এর বাইরেও তিনি যে শক্তিশালী লেখক হতে পারেন সেটা্র জানান জোরেশোরে দিতে পারে বইটি। 'নিছক গল্প কিংবা আখ্যান' হতে পরবর্তিতে 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' নামে পরিবর্তিত হয়ে প্রকাশিত হলেও খুব একটি প্রচার পায়নি এই বইটি লেখকের অন্যান্য বইগুলোর মতো। এখানে লেখক থ্রিলার, সাইফাই, ইতিহাস, ক্রাইম কিংবা নিছক সামাজিক ঘরাণার গল্প নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন।
বইটিকে যদি আমি আমার মতো ব্যবচ্ছেদ করতে চাই, এখানে মোট আঠারোটি গল্পের মাঝে আমার খুব ভালো লেগেছে যেগুলো, সেগুলোর শিরোনাম হলো... ঈশ্বরকার, রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা, নিছক একটি টুরিং টেস্ট, বায়ান্ন বাজারের তিপান্ন গল্প, আয়নার বায়না, সুন্দরবনে যেভাবে শুয়োরের দল জায়গা করে নিলো, লটারি ইত্যাদি। এছাড়াও লেখকের আসন, পিথিকোফোবিয়া কিংবা অন্দরে বান্দর, ছিট ফিরোজের বিবাহসংক্রান্ত জটিলতার উপাখ্যান, শেষ থার্টিফার্স্ট... গল্পগুলোও ভিন্ন ধরণের আনন্দ দিয়েছে। ছিট ফিরোজ কিংবা সুন্দরবনে শুয়োরের দল গল্পগুলো থেকে লেখকের হিউমার যে বেশ উন্নত, কিংবা তিনি যে একজন সহজাত গল্প বলিয়ে সেটার একটা আভাস পাওয়া যায় (যদিও সেটি কিছুদিন আগে লেখককে সামনাসামনি এক আড্ডায় দেখেই বুঝেছি)। এখানে লেখক নিজের আঞ্চলিক পুরান-ঢাকাইয়া ভাষার বহুল ব্যবহার ঘটিয়েছেন, যেটা আগে সেভাবে চোখে পড়েনি। ভিন্ন ধারার গল্পগুলোর জন্য বইটি প্রশংসার দাবীদার।
লেখক আসলে প্রথম থ্রিলার নিয়ে দেশে জোরেশোরে কাজে নামার জন্যই জনপ্রিয় হননি। জনপ্রিয় হয়েছেন নিজ লেখার গুণে। এই জনরায় একটা শক্ত গল্পের সাথে জলবৎ তরলং অথচ পর্যবেক্ষণশীল লেখা খুব কম চোখে পড়ে। বেশিরভাগই দেখা যায় একটি গল্পের কন্সেপ্ট দাঁড় করিয়েই লিখে যেতে থাকেন। লেখা নিয়ে যে এই লেখক চর্চা করেন বা অন্তত খেয়াল রাখেন, সেটির পরিচয়ও পাবেন আপনি 'লেখকের আসন' গল্পখানায়। জনপ্রিয় লেখক হবার চাইতে চর্চায় উন্নত হওয়া লেখকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অনেক বেশি। লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সেই পথেই থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস।
নানা স্বাদের অনেকগুলো গল্প। সায়েন্স ফিকশন গল্পগুলো - কজিতো আর শেষ থার্টিফার্স্ট ভাল ছিল। তবে সেরা গল্প লটারি। আগেই পড়া ছিল, আরও একবার পড়লাম। এমন সংকলন আরও আশা করব।
আমার বইটার নাম হলো 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা'। দুই বাংলায় একই বইয়ের নাম রাখতে যেয়ে ভিতরের সব গল্প বহাল তবিয়তে রেখে প্রচ্ছদ আর নামের পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। আমার কাছে এই বই আরেকটু বাড়তি আনন্দের যোগ। লেখকের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, খুশিতে লাফাতে লাফাতে অটোগ্রাফ নিয়েছি। কিন্তু প্রিয় লেখকের সাথে দেখা হবার উত্তেজনায় তার সাথে ছবি তুলতেই ভুলে গেছি। আরগম বারগম কি কথা বলেছি ছাই তাও মনে নেই ভালো করে। নাজিমুদ্দিন অনেকগুলো গল্পের সংকলন বইটা। খুব ভালো লেগেছে। প্রতিটা ভিন্ন স্বাদের গল্প। সবগুলোই ভালো, তবে কজিতো, লটারি, টুরিং টেস্ট, শেষ থার্টিফাস্ট, ঈশ্বরাকার (যদিও এটার ঠ ঠ টাইপ শব্দগুলার জন্য একটু অস্বস্তি লাগতেসিল)বেশি সেরা!
নামের বৈচিত্র, কাহিনির বিচিত্রতা... উফফ! আর কি লাগে। 🔥
খুব ভাল লাগলো। ছোটগল্পেও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন, থৃলার সমান পারদর্শী। গল্পগুলো শিহরিত করে, রোমাঞ্চিত করে, ভাবিয়ে তোলে কখনও। শহীদুল জহিরের “সম্ভাব্যতা” ধারণ করে যে গল্পটি বলা হল, সেটা আশাবাদী করে ভীষণ।
লেখক নাজিম উদ্দিন থ্রিলার বই লিখে জনপ্রিয় হলেও তিনি যদি ভিন্ন জনরার বই লিখতেন নিঃসন্দেহে সেই বইগুলো জনপ্রিয় হতো। কেন বললাম? কারণটা হলো যখন কোন লেখক খুব ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে নিজের ভেতরের লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলেন বা নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে ভিন্ন ধারার কিছু লেখার চেষ্টা করেন তখনই তার লেখাগুলো এক অনন্য মাত্রা পায়। আমি এর আগে বিভিন্ন বুক রিভিউ পোস্টে বলেছি রিডার্স ব্লকে থাকলে আমি ছোট গল্প সংকলনের বই পড়ি। কারণ ভিন্ন ভিন্ন জনরার স্বাদ একসাথে পাওয়া যায় এসব গল্পে।
"রহস্যের ব্যবচ্ছেদ কিংবা হিরন্ময় নীরবতা" ছোট গল্প সংকলনের একটি বই। এই বইটিতে লেখক বিভিন্ন প্লটের বিভিন্ন জনরার গল্পগুলোকে একের পর এক সাজিয়েছেন। আপনি কখনোই ভাববেন না যে একটি গল্প সংকলনের বইয়ের সবগুলো গল্পই আপনার ভালো লাগবে। না লাগাটাই স্বাভাবিক। অন্তত এমনটা আমি আমার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি। তবে প্রতিটা গল্প সুন্দর ও সাবলীলভাবে লেখা। লেখক এই বইটিতে বিভিন্ন গল্পের উপর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন বলে মনে হলো। লেখক যে শুধু থ্রিলার লেখার জন্যে জনপ্রিয় হননি বরং নিজ লেখার গুণে জনপ্রিয় হয়েছেন তা এই বইটি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন। লেখকের থ্রিলার বইগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও এই বইটি নিয়ে তেমন কোন সাড়াশব্দ আমি বইপাড়ায় দেখিনি।
" লেখকের আসন ", " ঈশ্বরকার", "মেকানিক ", " বায়ান্ন বাজারের তিপ্পান্ন গল্প ", " যে কারণে লাশ ভেসে উঠতে পারে " এই গল্পগুলো অসাধারণ। এছাড়া "ছিট ফিরোজের বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা " এবং "সুন্দরবনে যেভাবে শুয়োরের দল জায��গা করে নিলো" গল্প দুটি হাস্যরসাত্নক। "লটারি " গল্পটির কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। এই গল্পটির শুরু যেভাবে হয়েছে এবং এর শেষ পরিণতি আপনাকে বার কয়েক ভাবাবে।
এই বইয়ের গল্পগুলো ঠিক নামের মতই। কোনো গল্পে রহস্যের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে, তো কোনো গল্পে লেখক রেখে গেছেন হিরণ্ময় নিরবতা। ছোট গল্প পড়তে আপনার ভালো লাগলে এই বইটিও আপনার ভালো লাগার কথা। লেখক নাজিম উদ্দিনের লেখা অনেক থ্রিলার তো পড়লেন এবার সময় থাকলে এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি এবারও লেখক আপনাকে নিরাশ করবেন না!
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বেশ কয়েকটি গল্প পেপারে পড়া হয়েছিলো । না পড়া গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ওগুলোকে খুঁজে পেয়ে ভালো লাগলো । লেখকের আসন , বায়ান্ন বাজারের তিপ্পান্ন গল্প , পিথিকোফোবিয়া কিংবা অন্দরে বান্দর , নিহত হওয়ার স্বাদ , সখেদ , নিছক একটি টুরিং টেস্ট , নিত্য ওথেলো , শেষ থার্টফার্স্ট গল্পগুলো ভালো লেগেছে । কজিতো আর লটারি আগেই পড়া ছিলো , তাই আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না । এই বইটির যে দিকটি নিয়ে বলতে হয় বিষয়ের বৈচিত্র্য । আশা করি লেখক ভবিষ্যতেও আরো গল্প সংকলন উপহার দেবেন আমাদেরকে ।
এই বইয়ের প্রত্যেকটা গল্প একেকটা মাল! শেষ না হলেই খুশি হতাম।
গল্প সংকলনগুলো কেনার আগে কে না দ্বিধায় থাকে। বইয়ের সবকয়টা গল্প যে ভালো হবে না তা একরকম জানা কথাই। কিন্তু এই সংকলেনর সবচেয়ে সাধারণ মনে হওয়া গল্পটাও একটা তৃপ্তিময় আমেজ রেখে যায় মনে। নাজিম উদ্দিন স্যার ইজ আ জিনিয়াস।
নাজিম উদ্দিনের ক্যারিয়ারের সবচে বাজে একটা গল্প দিয়ে শুরু করা একটা বই নিয়ে খুব বেশি আশা করিনি শুরুর দিকে। রবীন্দ্রনাথ সিরিজের সস্তা একটা spoof কোন দুঃখে উনি বানাতে গেলেন কে জানে কিন্ত এর পরের পঠন অভিজ্ঞতা টা দারুন !!
Anthology হওয়ায় সব গল্প সমান ভাল লেগেছে বলব না, কিন্ত সব গুলোই ইউনিক।হরর , মিস্ট্রীী, থ্রিলার , সাইফাই, ড্রামা মোটামুটি সব জনরার গল্প ই পেয়েছি।দুই একটা বাদে সব গুলোই ভাল লেগেছে।আমার সবচে ফেভারিট হল পিথিকো ফোবিয়া আর লটারি এই দুইটা। লটারি নিয়ে অলরেডি একটা সিরিজ ও হোয়েছে চরকি তে সম্ভবত।
আমি মূলত বইটির পরিবর্তিত সংস্করণ 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' পড়েছি।
থৃলার গল্পগ্রন্থ পড়ার আনন্দটা অন্যরকম। প্রতিটি গল্পই একেকটা সারপ্রাইজ। হরর হতে যাচ্ছে, নাকি থৃলার, নাকি সাইকোলজিক্যাল গল্প, নাকি সায়েন্স ফিকশন? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে পড়ার সময়। অ্যান্থলজিক্যাল বই কিংবা সিনেমা দুটোই আমার ভীষণ পছন্দের। গল্পগ্রন্থ পড়ার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এরপর কী হবে, সেটা জানার জন্য বই শেষ করবার তাড়না থাকে না। প্রতিবার কাজের ফাঁকে ফুরসত পেলে, বা খেতে খেতে বই পড়তে গেলে, একটা-দুটো গল্প শেষ করে ফেলা যায়। টেরই পাই না কখন বই শেষ হয়ে গেছে।
২০১৩ সালে নেমেসিস পড়ার পর, লেখকের কোন বই পড়তে আমি দুবার ভাবিনি। এ বইটার একটা পুরনো সংস্করণ ‘নিছক গল্প কিংবা আখ্যান’ পড়া না থাকায়, গল্পগুলো প্রায় সবই আমার কাছে নতুন। তাই বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি সবগুলো গল্পই।
গল্পগ্রন্থের রিভিউ দেওয়া একটু কঠিন। একেকটা গল্পের স্বাদ একেক রকম। একেকটা গল্প একেক বিষয় নিয়ে লেখা। আবার প্রতিটি গল্পের আলাদা রিভিউ দেয়াটাও রিভিউ হিসেবে খুব একটা উপকারে আসে না পাঠকদের। তাই বইটার বিভিন্ন দিক নিয়ে অল্প-স্বল্প বলি।
লেখনী দুর্দান্ত। এই একটা কারণেই নাজিম উদ্দিন ভাইয়ের কোন লেখা আমার খারাপ লাগে না। টুকটাক ছোটগল্পগুলোও মনোযোগ ধরে রাখে আমার। শুরু থেকেই গল্পে মন বসে, শেষ পর্যন্ত থাকে। বড় গল্প হলে চরিত্র বিশ্লেষণ আরও ভালোলাগা যোগ করে। লেখকের সিগনেচার স্টাইল হলো ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। প্রতিটি চরিত্র যেন জ্যান্ত হয়ে ওঠে বইয়ের পাতায়। ছোটগল্পে চরিত্রায়নের সুযোগ একটু কম থাকলেও যতটুকু যা ছিল, তা বেশ ভালো লেগেছে আমার।
প্লট নিয়ে বললে, একেকটা প্লট একেক রকম ছিল। প্রতিটি প্লটই যে খুব শক্তিশালী ছিল, তা নয়। কিছু কিছু গল্পে (যেমন মেকানিক) খুবই সাদামাটা দুয়েকটা দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। কিছু কিছু গল্পে প্লট বেশ ভালো ছিল (যেমন লেখকের আসন)। কোন কোন গল্পে বেশ সম্ভাবনাময় সুদীর্ঘ গল্প লেখার প্লট ছিল (যেমন ঈশ্বরকার)। তবে ছোটগল্পে সব সময় প্লট মুখ্য নয়, থৃলার হলেও। এখানেও গল্পের প্লটের চেয়ে প্লটের চিন্তাটা বেশি ভাবায়। যেমন কজিতো গল্পে যার চিন্তা করার ক্ষমতা আছে, সেই জীবিত- এই ধরনের একটা দর্শন থেকে সাইফাই গল্প লেখার প্রয়াসটা বেশ ভালো লেগেছে। বেশিরভাগ গল্পের পেছনেই এই ধরনের একটা চিন্তা বা ধারণার উপস্থিতি চোখে পড়ে।
জনরা নিয়ে বললে, লেখকের সবচেয়ে শক্তিশালী জনরা হলো আরবান ক্রাইম। এক অনুচ্ছেদে গল্প শেষ করে দিতে হলেও তিনি ভালো গল্প বলতে পারবেন শহুরে অপরাধ নিয়ে। শুনে মনে হবে বুঝি বাস্তব কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছে। লেখায় বাস্তবধর্মিতা চোখে পড়ে প্রকটভাবে। অন্যান্য জনরার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক গল্পেও তার মুনশিয়ানা দেখা যায়। আর সাইফাইয়ের ক্ষেত্রে গল্পগুলো টুইস্টভিত্তিক হওয়ায় (এবং হয়তো প্রচুর প্রচুর সাইফাই পড়া থাকায়) শেষটা অনুমান করে ফেলতে পেরেছি, তাই প্লটের চেয়ে স্টোরিটেলিং মনোযোগ কেড়েছে আমার। এমনিতেই ভালো স্টোরিটেলিং হলে আমি যে কোন কিছু মাফ করে দিতে রাজি আছি।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখকের আসন গল্পটা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম। সমাপ্তিটুকু দুর্দান্ত লেগেছে। সমাপ্তি খুব গোছালোভাবে বলতে পারেন লেখক। আর সবচেয়ে সাদামাটা লেগেছে প্রথম গল্পটা- রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সিরিজ ও রবীন্দ্রনাথের প্রতি ট্রিবিউট ছিল বোধহয় ওটা। শিরোনামের গল্প, রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা- এর পেছনের দর্শনবোধটুকু দারুণ। কেন দারুণ, সে স্পয়লার দিচ্ছি না আর।
বইটি পড়ার আগে হিরণ্ময় শব্দটার অর্থ জানা ছিল না আমার। পড়ার সময় অভিধান ঘেঁটে অর্থটা পেলাম- স্বর্ণময়। নীরবতা হিরণ্ময় একটা প্রবাদও বটে। অর্থাৎ কখনো কখনো নীরবতাই ভালো।
ছোটগল্প পড়তে পছন্দ করলে এ বইটা অপছন্দ করার কারণ নেই কোন। যে কারও ভালো লাগবে বইটি। থৃলার গল্প নিয়ে বাংলায় একক গল্পগ্রন্থ কি আর আছে?
"তোমার রক্তে যদি আগুন থাকে— আমি তা নেব না আমার ঠোঁটে যদি আগুন থাকে— তুমি কি তা নেবে?" — বিষ্ণু দে
মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিনের 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' একটি অনন্য গল্পগ্রন্থ যেখানে রহস্য, দার্শনিকতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এক অনবদ্য মিশ্রণ ঘটেছে। এই গ্রন্থে গল্পের বুনন যেমন অভিনব, তেমনি তার অন্তর্নিহিত ভাবনার স্তরগুলি গভীর ও চিন্তান্বিত করে। লেখকের ভাষাশৈলী একাধারে মায়াবী, ক্ষুরধার এবং গভীরভাবে দার্শনিক। তিনি রহস্যের জাল বিস্তার করেন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে, যা পাঠককে এক অদ্ভুত মোহে আচ্ছন্ন করে রাখে।
"ভাষার গভীরে যে অন্ধক��র, তা কি আলো হয়ে ওঠে?" — জীবনানন্দ দাশ
মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিনের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার সংলাপের বাস্তবতা এবং বর্ণনার সূক্ষ্মতা। তিনি শব্দের মাধ্যমে এমন এক আবহ সৃষ্টি করেন, যা পাঠককে কেবল গল্পের ভেতর প্রবেশ করায় না, বরং তাদের এক নৈর্ব্যক্তিক দর্শকের মতো প্রতিটি ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করতে বাধ্য করে।
ভাষার সরলতাও কোথাও কোথাও গল্পের গভীরতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, বিশেষত যেখানে চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়।
"একটি গল্প কি কখনো শেষ হয়, নাকি তা অন্য কোথাও নতুন রূপে জন্ম নেয়?" — বিষ্ণু দে
বইটির প্রতিটি গল্পই রহস্যের ছদ্মাবরণে ঢেকে থাকা এক ধরনের অস্তিত্ববাদী অনুসন্ধান। ‘রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরন্ময় নীরবতা’ শিরোনাম গল্পটি রহস্যের গভীর স্তর উন্মোচন করে, যেখানে নীরবতার অর্থ ও তার অন্তর্গত সত্য খোঁজা হয়েছে। ‘লেখকের আসন’ গল্পে আমরা দেখি একজন স্রষ্টার আত্মদ্বন্দ্ব ও সৃষ্টির তাড়না, যা সাহিত্যের নিজস্ব সংকটকেও তুলে ধরে।
‘যে কারণে লাশ ভেসে উঠতে পারে’ গল্পটি রহস্য ও বিজ্ঞানের সংমিশ্রণে এক চমৎকার দৃষ্টান্ত, যেখানে লেখক আমাদের জিজ্ঞাসু করে তোলেন বাস্তবতার প্রকৃতি সম্পর্কে। অন্যদিকে ‘বায়ান্ন বাজারের তিপান্ন গল্প’ শহরের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা গল্পের বহুমাত্রিকতা তুলে ধরে।
‘নিছক একটি টুরিং টেস্ট’ ও ‘মেকানিক’ গল্প দুটি প্রযুক্তির প্রতি আমাদের নির্ভরতা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ‘নিত্য ওথেলো’ গল্পটি শেক্সপিয়রের চিরাচরিত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বকে আধুনিক সময়ের আলোকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে।
‘লটারি’ ও ‘শেষ থার্টিফার্স্ট’ ভাগ্যের অনিশ্চয়তা ও জীবনের অপ্রত্যাশিত বাঁকগুলোকে তুলে ধরে, যা পাঠককে তার নিজের জীবন নিয়েও ভাবতে বাধ্য করে।
সামগ্রিকভাবে, এই বইটি শুধুমাত্র রহস্যকাহিনীর গণ্ডিতে আটকে নেই; বরং এটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, সমাজভাবনা ও অস্তিত্ববাদী প্রশ্নের এক জটিল মিশ্রণ। লেখকের শৈলী পাঠককে রহস্যের গভীরে টেনে নিয়ে যায়, কিন্তু তিনি কখনোই সরাসরি উত্তর দেন না—বরং পাঠককে নিজেই উত্তর খুঁজে নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। বইটি তাই শুধু বিনোদন নয়, বরং এক ধরনের মননশীল পাঠ-অভিজ্ঞতা, যা পাঠকের মননে দীর্ঘস্থায়ী দাগ রেখে যায়।
লেখকের অন্যান্য বইয়ের তুলনায় এই বইটির হাইপ সম্ভবত পাঠক সমাজে সবচেয়ে কম হয়েছে। মূলত বইটি একটি গল্পগুচ্ছ। এতে রহস্য, থ্রিলার, সাইন্স ফিকশন, সাইকোলজিকাল সহ কয়েকটি জনরার সর্বমোট ১৮ টি গল্প আছে। গল্পগুলোর নাম যথাক্রমে: ১. রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন ২. রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরন্ময় নীরবতা ৩. লেখকের আসন ৪. কজিতো ৫. পিথিকোফোবিয়া কিংবা অন্দরে বান্দর ৬. ঈশ্বরকার ৭. মেকানিক ৮. নিছক একটি টুরিং টেস্ট ৯. বায়ান্ন বাজারের তিপান্ন গল্প ১০. শেষ থার্টিফার্স্ট ১১. নিহত হওয়ার স্বাদ ১২. আয়নার বায়না ১৩. ছিট ফিরোজের বিবাহসংক্রান্ত জটিলতার উপাখ্যান ১৪. যে কারণে লাশ ভেসে উঠতে পারে ১৫. সুন্দরবনে যেভাবে শুয়োরের দল জায়গা করে নিলো ১৬. সখেদ ১৭. নিত্য ওথেলো ১৮. লটারি
এর মধ্যে সাইন্স ফিকশন জনরার কজিতো, নিছক একটি টুরিং টেস্ট, শেষ থার্টিফার্স্ট এবং থ্রিলার জনরার সখেদ, লটারি এই গল্পগুলো ভালো লেগেছে। এছাড়া 'ঈশ্বরকার' গল্পটাও কিছুটা ভিন্ন স্বাদ দিয়েছে। বাকি গল্পগুলো হয় পরিচিত নাহয় গতানুগতিক লেগেছে। বইটা নিয়ে আমার অনুভূতি তাই মিশ্র। লেখকের অন্যান্য বই পড়ার পর এই বইটা পাঠকদের কাছে ভালো না লাগার সম্ভাবনাই বেশি।
নাজিমউদ্দিনকে আমি চিনি লেখক হিসেবে। চমৎকার একজন থ্রিলার লেখক হিসেবে। আমি সর্বদাই ভাবতাম তিনি চ্যাপ্টার চ্যাপ্টার না লিখে পারেন না। তার হাত থামেনা বলেই তার বইগুলো এমন ঢাউস সাইজের হয়ে যায়। তিনি ভুল ভাঙালেন, চমৎকারভাবেই ভাঙালেন।
এই বইটি শুধু রহস্যগল্প দিয়েই গঠিত না। নাজিমউদ্দিন তার চিরায়ত জনরার বাহিরে গিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলেন, এবং তিনি সেখানেও সফল।
'লেখকের আসন' গল্পে তিনি বুঝালেন লেখক যে লিখে সে না, লেখাটা যার মাথায় থাকে, সে। 'পিথিকোফোবিয়া' দিয়ে তিনি এক অন্য জগতে পৌছে দিলেন, একদম অন্যরকম এক গল্পে। দাত ভাঙা গল্প 'ইশ্বরকার' মাথায় ঢুকে বসার মাথা হয়তো হয়নি এখনো।
'সুন্দরবনে' গল্পটা দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার অস্ত্রোপাচার আবার 'সখেদ' দিয়ে একেবারেই আড়ালে পড়ে থাকা ফেটিশনেসকে তুলে ধরা। কখনো 'মেকানিক' ও 'নিহত হওয়ার স্বাদ' দিয়ে নিজের সিগনেচার বুঝিয়ে তোলা অথবা 'যে কারণে লাশ ভেসে উঠতে পারে' দিয়ে নিজেকে অন্য ধাচে এগিয়ে নেওয়া।
সব মিলিয়ে নাজিমউদ্দিন সাহেব চমৎকার থ্রিলার লেখকের পাশাপাশি বেশ ভালো একজন গল্পকার ও। উনি যেন আরো আরো গল্প লিখেন, সেই প্রত্যাশা রইলো।
বই : নিছক গল্প কিংবা আখ্যান লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রকাশনা: বাতিঘর (ফেব্রুয়ারি ২০১৯) রেটিং: ৩.৫ পৃষ্ঠা: ২৫৬ আমার পড়া লেখকের একটু ভিন্ন ধর্মী বই। কারণ এতদিন উনার শুধু থ্রিলার উপন্যাস পড়েছি। আর এই বইটি ১৮টি ছোট ছোট গল্প নিয়ে সাজানো যেখানে থ্রিলার, ফিকশন এবং সায়েন্স ফিকশন সবই আছে। লেখকের প্রতিটি গল্পই আলাদা এবং আকর্ষণীয়।
তবে ১৮ টি গল্পের মধ্যে কজিতো, নিছক একটা টুরিং টেস্ট, প্রেম প্রকল্প, ঈশ্বরকার, শেষ থার্টি ফার্স্ট ইত্যাদি খুব ভাল মানের সায়েন্স ফিকশন কিন্তু যারা সায়েন্স ফিকশন পাঠক তাদের কাছে খুব পরিচিত মনে হবে। আমি জানি না হয়তো কোনো বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন এর ছায়া অবলম্বনে লেখা কিনা? নিত্য ওথেলো গল্পটিও পরিচিত মনে হয়েছে। তবে ভালো গল্প। লটারি গল্পটিও অসাধারণ।
লেখকের মনে হয় পূর্নাঙ্গ সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস লেখা উচিত। এবং আমি এটাও মনে করি লেখকের কখনোই থ্রিলার লেখা বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ উনি খুব ভালো টুইস্ট দিতে পারেন গল্পে। #ধূসরকল্পনা
পিএইচডির ব্যস্ততায় স্পিডরিডিং করছি বিভিন্ন গল্প সঙ্কলনের, কারণ উপন্যাস পড়ার মত হুকড হবার সুযোগ সময় কোনোটাই নেই। তারই ধারাবাহিকতায় পড়ে ফেললাম নাজিম উদ্দিনের মতে তার প্রিয় গল্পগুলো। বেশ ছোটো ছোটো গল্প বেশিরভাগ, পড়তে বেশিক্ষণ লাগে না। বিভিন্ন ধাঁচের গল্পগুলো সব। সবচেয়ে ভালো লেগেছে - লেখকের আসন, বায়ান্ন বাজারের তিপান্ন গল্প (শুটার সামাদকে ফিরে পেলাম আবার), পিথিকোফোবিয়া কিংবা অন্দরে বান্দর, নিহত হওয়ার স্বাদ, কজিতো, নিছক একটি টুরিং টেস্ট, নিত্য ওথেলো, ঈশ্বরকার।
নাজিমউদ্দীন ভাইয়ের ছোটোগল্প এই প্রথম পড়লাম। পুরো গল্পগুচ্ছের প্রতিটাই নিজস্ব স্বকীয়তায় বেস্ট হিসেবে মনে হয়েছে। প্রতিটা গল্প ইউনিক আর প্লট এন্ডিং মারাত্তক। কোনো গল্পই বোরিং লাগেনি। বেস্ট স্টোরি ক্লালেকশন। লেখকের আরো ছোটোগল্প লেখা উচিত
ভালোই লেগেছে। শেষ গল্প 'লটারি' থেকে ভিকি জাহেদের 'টিকেট' দেখেছিলাম ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আগেই। অন্যান্য গল্পের মধ্যে মেকানিক, সুন্দরবনে যেভাবে শুয়োরের দল বাসা জায়গা করে নিলো, লেখকের আসন ভালো লেগেছে।
রবীন্দ্রনাথ এখানে এসেছিলেন,মেকানিক,টেস্টিং টু,পিথোফিবিয়া বা অন্দরে বান্দর এবং লটারি এই কয়েকটি গল্প ছাড়া প্রায় সব গল্পই এভারেজ বা বিলো এভারেজ।আসলে জমে নি সংকলন টা যতটা আশা করেছিলাম ততটা না
কেউ একজন বলেছিলেন, সাহিত্য এমন একটা ব্যাপার— যা ভেতরে একটা শূন্যতা, একটা হাহাকার জাগিয়ে তোলে। ঠিক এই হাহাকারটা, এই শূন্যতাটা নিজের মধ্যে বারবার অনুভব করার জন্য আমি ছোটগল্পের জগতকে বেছে নিই নিজের জন্য। আমার মনে হত, থ্রিলার জনরায় এই একটা ব্যাপারের কমতি থাকে। থ্রিলারে টানটান উত্তেজনা থাকে, চমকের পর চমক থাকে কিন্তু নিঃসীম শূন্যতায় খাবি খাওয়া একটা বিকেলের ডুব থ্রিলারে আমি অন্তত পাইনি। যে গল্পগুলো শুধু রহস্য আর রোমাঞ্চের, ভাবনার জগতে সেগুলোর স্থায়িত্ব খুব একটা বেশি হয় না। রহস্য, রোমাঞ্চ আর অপরাধকে ছাপিয়ে যেসব গল্পে ফুটে থাকে গভীর জীবনবোধ—তেমনই কয়েকটি নাগরিক গল্প পেয়েছি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' বইটিতে।
আমার মনে হলো, এই বইয়ের গল্পগুলো ঠিক নামের মতই। কোনো গল্পে রহস্যের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে, তো কোনো গল্পে রেখে লেখক রেখে গেছেন হিরণ্ময় নিরবতা। নামের কী দারুণ সার্থকতা!
বাংলার ‘থ্রিলার সম্রাট’ খ্যাত মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন মূলত তার রচিত মৌলিক থ্রিলার ও অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বিখ্যাত। তবে তিনি মাঝেমধ্যে কিছু ছোটো গল্পও লিখেছেন যা এই সংকলনটিতে নিবন্ধ হয়েছে। মোট ১৮টি থ্রিলার ও নন-থ্রিলার গল্প রয়েছে বইটিতে। প্রতিটি গল্পই লেখকের সাহিত্যগুনে আলাদা আলাদা ভাবনার দুনিয়া তৈরি করেছে। প্রতিটি গল্পই বেশ ভালো লেগেছে তবে বিশেষভাবে রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরন্ময় নীরবতা, লেখকের আসন ও লটারি এ তিনটি গল্প মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। পেটমোটা উপন্যাসগুলোর ফাকে ফাকে এই ছোটো গল্পগুলো টনিকের কাজ করে। ব্যক্তিগত রেটিং ৪/৫ হ্যাপি রিডিং 📖
শুধু একটা গল্প নিয়েই কথা বলব, 'সখেদ' । এটা পড়ার পর গা গুলিয়েছে আমার। সবকিছু এত ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মনে হয়েছে সত্য ঘটনা পড়ছি। এটা পড়ার পর যতবার কোন কবরস্থানের আশপাশ দিয়ে গেছি মনের অজান্তে তাকিয়েছি এরকম কিছু দেখা যায় নাকি। এরকম কেও করলেও দিনের বেলায় করবে না। কেও করলেও বলছি কারণ অসম্ভব কিছু তো না। বাস্তব তো বাস্তবিকই কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত।