Jump to ratings and reviews
Rate this book

ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস : মলয় রায়চৌধুরীর উপন্যাস

Rate this book
এই উপন্যাসটি পড়ে জানতে পারলাম কেমন করে ব্যাঙ্ক নোট নষ্ট করা হয় । বইটির প্রধান গুণ এর ভাষা এবং জাতিপ্রথা নির্ভর ভারতীয় সমাজে বর্ণসংঘর্ষ ।

100 pages, Hardcover

First published October 14, 1994

4 people want to read

About the author

Malay Roy Choudhury

104 books15 followers
Malay Roy Choudhury (born 29 October 1939) is an Indian Bengali poet, playwright, short story writer, essayist and novelist who founded the Hungryalist movement in the 1960s.
Roy Choudhury was born in Patna, Bihar, India, into the Sabarna Roy Choudhury clan, which owned the villages that became Kolkata. He grew up in Patna's Imlitala ghetto, which was mainly inhabited by Dalit Hindus and Shia Muslims. His was the only Bengali family. His father, Ranjit (1909–1991) was a photographer in Patna; his mother, Amita (1916–1982), was from a progressive family of the 19th-century Bengali Renaissance. His grandfather, Laksmikanta Roy Choudhury, was a photographer in Kolkata who had been trained by Rudyard Kipling's father, the curator of the Lahore Museum.

At the age of three, Roy Choudhury was admitted to a local Catholic school, and later, he was sent to the Oriental Seminary. The school was administered by the Brahmo Samaj movement, a monotheistic religion founded in 1830 in Kolkata by Ram Mohun Roy, who aimed to purify Hinduism and recover the simple worship of the Vedas. There, Roy Choudhury met student-cum-librarian Namita Chakraborty, who introduced him to Sanskrit and Bengali classics. All religious activities were banned at the school, and Roy Choudhury has said that his childhood experience made him instinctively secular.

Roy Choudhury has proficiency in English, Hindi, Bhojpuri and Maithili, apart from his mother tongue Bengali. He was influenced, though, by the Shia Muslim neighbors who recited Ghalib and Faiz in the Imlitala locality. At the same time his father had two workers Shivnandan Kahar and Ramkhelawan Singh Dabar at his photographic shop at Patna ; these two persons introduced Roy Choudhury to Ramcharitmanasa written by Tulasidasa as well as saint poets Rahim, Dadu and Kabir

Roy Choudhury did his Masters in Humanities. He later studied Rural Development which gave him a job to visit almost entire India for the upliftment of farmers, weavers, fishermen, artisans, craftsmen, potters, cobblers, landless labourers, jute farmers, potato growers and various under-caste Indians.
The Hungryalist movement was initially led by Roy Choudhury; his brother, Samir Roychoudhury; Shakti Chattopadhyay; and Haradhon Dhara, known as Debi Roy. Thirty more poets and artists subsequently joined them, the best-known being Rajkamal Chaudhary, Binoy Majumdar, Utpal Kumar Basu, Falguni Roy, Subimal Basak, Tridib Mitra, Rabindra Guha, and Anil Karanjai. The movement's English name was derived from Geoffrey Chaucer's line "in the sowre hungry tyme", and its philosophy was based on Oswald Spengler's "The Decline of the West".

Hungryalism petered out in 1965, when the West Bengal government issued arrest warrants for eleven Hungryalists, including Roy Choudhury and his brother. Some members, such as Subhash Ghosh and Saileshwar Ghosh, testified against Roy Choudhury in Kolkata's Bankshall Court. He was jailed for a month for his poem Stark Electric Jesus by Kolkata Bankshall Court in 1966. However he was exonerated by the Kolkata High Court in 1967. From the letters of Sunil Gangopadhyay written to Sandipan Chattopadhyay during 1964 published recently it is known that Sunil Gangopadhyay felt that Hungry generation literary movement was a threat to his Krittibas group of poets of 1950s.

Roy Choudhury went on to write poetry, fiction, plays, short stories and essays on Bengali social and cultural issues. He has written more than seventy books till date.

Howard McCord, a professor of English at Washington State University and Bowling Green University who met Roy Choudhury during a visit to Kolkata, wrote in City Lights Journal Number Three: "Malay Roy Choudhury, a Bengali poet, has been a central figure in the Hungry Generation's attack on the Indian cultural establishment since the movement began in the early 1960s. ... Acid, destructive, morbid, nihilistic, outrageous, mad, hallucinatory, shrill—these characterize the terri

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
3 (100%)
4 stars
0 (0%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 3 of 3 reviews
18 reviews
August 18, 2022
আলোচ্য বইয়ের ক্ষেত্রে কথাগুলো বলা জরুরি হয়ে পড়ল কারণ বর্তমানে বাংলাভাষায় যে-সমস্ত এজেন্ডাহীন গদ্যরাজি উপন্যাস নাম নিয়ে চলে-ফিরে বেড়াচ্ছে তাদের প্রায় প্রত্যেককেই এই লেখার সামনে বায়বীয় বোধ হয়।এ বঙ্গে লেখক বহু। সচেতন লেখক গুটিকয়। সমালোচক হিসাবে মলয় রায়চৌধুরীকে সচেতন বলার সঙ্গে-সঙ্গেই জিম্মেদারি জন্মায় নিজের অবস্হানকে জাস্টিফাই করার। তবে তা করার আগে ডিসক্লেমার স্বরূপ বলে নেওয়া ভালো যে, গোটা আলোচনাটাই হবে গ্রন্হের প্রথম অংশ ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’ প্রসঙ্গে। গ্রন্হভুক্ত বাকি দুটি অংশ [জলাঞ্জলি ও নামগন্ধ] পাঠককুলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল। যে সচেতনতার কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই যুক্তিজাল বিস্তৃত হোক। তবে তার আগে ছোট করে বলা থাক, যে সময় বিহার অঙ্গরাজ্য হিসাবে চরম অপশাসনে আক্রান্ত, সেই সময় একটি সরকারি আফিস, যাদের কাজ হল অচল ও পচে যাওয়া নোট চিহ্ণিতকরণ ও জ্বালিয়ে ফেলা, সেখানকার কর্মচারী ও পারিপার্শ্বিক সমাজ তথা রাজনীতিই হল এই উপন্যাসের উপকরণ।

গ্রন্হের শুরুতেই ‘লেখকের কথা’য় মলয়বাবু জানাচ্ছেন, এই এপিক লেখাটির মোটিভ বা এজেন্ডা কী। এবং এই জানানো যে শুধু বলার জন্য বলা নয় তাঁ ওঁর লেখায় প্রমাণিত।লেখক বুঝেছেন যে ভারতীয় সমাজে ছাপোষা মানুষের জীবনের সারাৎসার তার আয়ুবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ উবে যেতে থাকে। এই উবে যাওয়ার বিমূর্ততাকে, শারীরিক করবার অভিপ্রায়ে, লেখক শুরুতেই বর্জন করলেন ‘মেট্রপলিটান সাহিত্যরীতির’ ‘প্রটাগনিস্ট-কেন্দ্রিক’ পুঙ্খানুপুঙ্খ চরিত্রচিত্রণ।

শুধু যে বর্জন করলেন তাই নয়, গোটা শুরুটাই যেন জাতিদাঙ্গাধ্বস্ত, আঞ্চলিক রাজনীতির সংকীর্ণতা তথা স্বার্থপরতায় বিদীর্ণ তৎকালীন বিহারের যে কোনও দিনের খবরের কাগজ। অজস্র নাম।অজস্র পাড়াভিত্তিক মারামারি, খেয়োখেয়ির ডিসপ্যাশনেট বর্ণনা।কিন্তু আবার তারই মধ্যে সূত্রের মতো ইনজেক্ট করলেন এমন কিছি ঘটনা ও চরিত্র, যেগুলোর ক্ষেত্রে লিখনশৈলীর কিঞ্চিৎ অন্যতা, সর্বাদা নায়ক-আগমন-প্রত্যাশী পাঠককে ধন্দে ফেলবে যে এরাই মূল চরিত্র নয় তো। অথবা এই ঘটনাই উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে না তো।পায়াভারি ও ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে এ সমস্ত চরিত্র অনোখা ঠেকতে পারে।তবে সকলেই এদের উপভোগ করবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সুশান্ত ও অতনু। দুটি ডায়ামেট্রিকালি বিপরীত মানুষ, যারা টানা পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে হোটেল-রুমের দরজায়, আফিসের বড়সাহেবের প্রাত্যহিক যৌন অভিযানে কান পাততে গিয়ে আধুনিক ও চিরায়ত সংগীতের রীতিমত বোঝদার হয়ে ওঠেন। হিউগো মনটেনেগরো, বাখ, ফিল কলিন্স, বনি এম, সন্ধ্যা দ্বিজেন।প্রত্যেকদিন ভাড়া করা মহিলার সঙ্গে মৈথুনকালে বড়সাহেবের বদলে যেতে থাকা সাংগীতিক অভিরুচি এদের জীবনে এনে দেয় বিনি পয়সার মিউজিকাল এক্সট্রাভ্যাগেনজা।

শর্ট সার্ভিস কমিশনে, আর্মির চাকরি করে-আসা রাঘব, যিনি সমস্ত অফিস জুড়ে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকাকালীন জিপের ট্রলার থেকে শুরু করে মরুভূমিতে উটের ছায়ায় অব্দি হোমো করার ফিরিস্তি শুনিয়ে বেড়ান।

অফিস পিকনিকের ১৮ জনের দল, যারা ভাড়া করা মহিলার সঙ্গে নালান্দার ধ্বংসস্তুপে লুকোচুরি খেলেন। ‘যৌনতার এই চিট ফান্ড’ অবশ্য বিজয়ীকে প্রতারিত করে না। জিনি জিতবেন তিনি পাবেন দশহাজার টাকা এবং উক্ত মহিলার সঙ্গে রাত কাটানোর সুযোগ।

অফিসের উচ্চপদস্হ সেনগুপ্ত সাহেব, যিনি কলগার্লের ডিরেক্টরি সঙ্গে রাখতেন এবং যাঁর মৃত্যুতে জনৈকা সহকর্মী ফেয়ারওয়েল মন্তব্য করেন—“যৌনতা বাদ দিলে লম্পটদের চরিত্র আদারওয়াইজ ভালো হয় ।”

যদি অতিরিক্ত যৌনগন্ধে কোনো পাঠকের দম বন্ধ হয়ে আসে তবে তার জন্য রয়েছে অফিসের টেবিলে বসে ক্রমাগত হাই তুলতে গিয়ে রেটিনা ফ্র্যাকচার-করা মৌলিনাথ। তবে চরিত্র ও ঘটনাবলীর এই বিপুল ও অনুপম সমাহারকে কুর্ণিশ জানালে আরেকটি গুরুতর অভিযোগেরও উদ্ভব হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লেখককুল বহুবিধ ঘটনা সংবলিত উপন্যাস ভালো মতো শুরু করলেও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেন।এবং লেখার অর্গানিক গ্রোথ-এর দোহাই দিয়ে কোনওমতে লেখাটি শেষ করেন। যে কারণে বাংলাভাষায় গুণী থ্রিলার উপন্যাসের সংখ্যা হতাশাজনক ভাবে কম।

তবে মলয় রায়চৌধুরী সেই দোষও কাটিয়ে রেখেছেন। লেখার শুরুতেই বহু ঘটনার মধ্যে থেকে একটি স্বল্পবর্ণিত ঘটনাসূত্র উপন্যাসের শেষে মোক্ষমভাবে ফিরে আসে ও লেখার সামগ্রিক অবস্হান ব্যাখ্যা করে।

তখন প্রশ্ন উঠতে পারে , মানুষের জীবনের প্রতিপাদ্য যদি ক্রমশ উবে-যাওয়া হয় সেক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্হান ব্যাখ্যা করার দরকার কী । দরকার এই জন্যই যে উদ্বর্তন প্রক্রিয়ার একটা উলটোপিঠও রয়েছে যেটি গঠনমূলক।

বিভিন্ন জলাশয় থেকে বাষ্পীভূত জল যেমন একটি মেঘের টুকরোয় সম্মিলিত হয়, ঠিক তেমনই যুদ্ধক্ষেত্রে বাঙালিকে ফিরত আনতে চাওয়া সুশান্ত, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার স্বকল্পিত গ্লানি থেকে মুক্ত হতে চেয়ে কয়েকদিনের জন্য জোর করে পাগল হয়ে-যাওয়া অরিন্দম, বিহারের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন, অথচ চরম অনিরাপদ উত্তরপূর্বে নিশ্চিন্তে বসবাসকারী দুই বোন জুলি ও জুডিথ— এই সমস্ত চরিত্রের জলাশয় থেকে তৈরি হয় সেই মেঘ, যার নাম অতনু।

ঔপনিবেশিক সাহিত্যরীতির ফিউডাল মানসিকতার নায়কনির্মাণ প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করে লেখক তার অতনু নির্মাণ করেন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে। প্রত্যেক পার্শ্বচরিত্রের সমপরিমাণ প্রতিনিধিত্ব বজায় রেখে। তাদের মৃতদেহের উপর নয়। আবার চরিত্রের নির্দিষ্ট মেয়াদ ফুরোলে, অর্থাৎ উপন্যসের শেষে, অতনুকে একগুচ্ছ বিকল্পের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। এ যেন মেঘের নির্দিষ্ট সময়সীমা ফুরোলে, পুনরায় জলাশয়ে জল হয়ে ঝরে পড়ার নির্দেশ। তবে অনিশ্চিত অতনু জানে না যে, সে সেখানেই ফেরত যাবে কিনা যেখান থেকে ওর জন্ম। হাওয়ায় কত মেঘই তো এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ভেসে যায়।

লিখনশৈলীর ক্ষেত্রে উল্লেখ্য হল, এই প্রকার একটি রূঢ়, খর্খরে, ও প্রখর বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস, যেখানে কিডন্যাপড হওয়া মেয়ের জন্য মায়ের হিন্দিতে লেখা এফ আই আরটা অব্দি চরিত্রে পর্যবসিত হয়েছে, সেখানেও লেখকের ভাষা উপমাময়, স্মার্ট এবং নির্মেদ। দাঙ্গা খুনোখুনিতে পর্যদুস্ত এক গ্রীষ্মের দুপুরের বর্ণনায় লেখক বলছেন— ‘ঘন সবুজ কচি আমের থুতনিতে হাত দিয়ে আদর করছিল একটা প্রৌঢ় আমপাতা’। সম্পাদনা প্রসঙ্গে বলার এই যে, রচনাগুলির প্রকাশকাল ডিটেলে বলার দরকার ছিল। যাঁরা অ্যাকাডেমিকালি লেখাটি নিয়ে ভাববেন তাঁদের সুবিধা হবে, কারণ লেখাটির সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক স্হানাঙ্ক রয়েছে।


Profile Image for Shankar Sen.
111 reviews5 followers
December 20, 2021
লেখক দু'প্রকার। লেখক এবং সচেতন লেখক। স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, সচেতনতাটা কী বা কোনটা। একজন সৎ ইন্সটিংকটিভ ও একজন বুদ্ধিমান মোটিভেটেড লেখক, দুজনেই পাঠকের কাছে সচেতন স্রষ্টা হিসাবে ধরা দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কি প্রাগুক্ত পার্থক্য নিরূপণ সম্ভব! আদৌ কি তার কোনো প্রয়োজন আছে ? প্রয়োজনীয়তা নাই থাকতে পারে, তবে পার্থক্য একটা থেকেই যায়। এই পার্থক্য বুঝবার সহজতম উপায় হল উভয়ের লেখা দুটি পাশাপাশি পড়ে ফেলা।
যদি কোনও লেখকের উদ্দেশ্য হয় গল্প বলা তাহলে তিনি ছোথগল্প বা পাঁচালি লিখতে পারেন। কিন্তু ��পন্যাস রচয়িতার উপর দায় বর্তায়, নিছক ধারাবিবরণীর উপরে উঠে, যা তিনি লিখছেন সেটিকে চেতনা এবং দর্শনগত অভিমুখ প্রদান করা। তা যদি না হয় তবে ঔপন্যাসিক ও ডায়েরি-লেখকদের পার্থক্য করা মুশকিল।
আলোচ্য বইয়ের ক্ষেত্রে কথাগুলো বলা জরুরি হয়ে পড়ল কারণ বর্তমানে বাংলাভাষায় যে-সমস্ত এজেন্ডাহীন গদ্যরাজি উপন্যাস নাম নিয়ে চলে-ফিরে বেড়াচ্ছে তাদের প্রায় প্রত্যেককেই এই লেখার সামনে বায়বীয় বোধ হয়।এ বঙ্গে লেখক বহু। সচেতন লেখক গুটিকয়। সমালোচক হিসাবে মলয় রায়চৌধুরীকে সচেতন বলার সঙ্গে-সঙ্গেই জিম্মেদারি জন্মায় নিজের অবস্হানকে জাস্টিফাই করার। তবে তা করার আগে ডিসক্লেমার স্বরূপ বলে নেওয়া ভালো যে, গোটা আলোচনাটাই হবে গ্রন্হের প্রথম অংশ 'ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস' প্রসঙ্গে। গ্রন্হভুক্ত বাকি দুটি অংশ [জলাঞ্জলি ও নামগন্ধ] পাঠককুলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হল। যে সচেতনতার কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই যুক্তিজাল বিস্তৃত হোক। তবে তার আগে ছোট করে বলা থাক, যে সময় বিহার অঙ্গরাজ্য হিসাবে চরম অপশাসনে আক্রান্ত, সেই সময় একটি সরকারি আফিস, যাদের কাজ হল অচল ও পচে যাওয়া নোট চিহ্ণিতকরণ ও জ্বালিয়ে ফেলা, সেখানকার কর্মচারী ও পারিপার্শ্বিক সমাজ তথা রাজনীতিই হল এই উপন্যাসের উপকরণ।
গ্রন্হের শুরুতেই 'লেখকের কথা'য় মলয়বাবু জানাচ্ছেন, এই এপিক লেখাটির মোটিভ বা এজেন্ডা কী। এবং এই জানানো যে শুধু বলার জন্য বলা নয় তাঁ ওঁর লেখায় প্রমাণিত।লেখক বুঝেছেন যে ভারতীয় সমাজে ছাপোষা মানুষের জীবনের সারাৎসার তার আয়ুবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ উবে যেতে থাকে। এই উবে যাওয়ার বিমূর্ততাকে, শারীরিক করবার অভিপ্রায়ে, লেখক শুরুতেই বর্জন করলেন 'মেট্রপলিটান সাহিত্যরীতির' 'প্রটাগনিস্ট-কেন্দ্রিক' পুঙ্খানুপুঙ্খ চরিত্রচিত্রণ।
শুধু যে বর্জন করলেন তাই নয়, গোটা শুরুটাই যেন জাতিদাঙ্গাধ্বস্ত, আঞ্চলিক রাজনীতির সংকীর্ণতা তথা স্বার্থপরতায় বিদীর্ণ তৎকালীন বিহারের যে কোনও দিনের খবরের কাগজ। অজস্র নাম।অজস্র পাড়াভিত্তিক মারামারি, খেয়োখেয়ির ডিসপ্যাশনেট বর্ণনা।কিন্তু আবার তারই মধ্যে সূত্রের মতো ইনজেক্ট করলেন এমন কিছি ঘটনা ও চরিত্র, যেগুলোর ক্ষেত্রে লিখনশৈলীর কিঞ্চিৎ অন্যতা, সর্বাদা নায়ক-আগমন-প্রত্যাশী পাঠককে ধন্দে ফেলবে যে এরাই মূল চরিত্র নয় তো। অথবা এই ঘটনাই উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে না তো।পায়াভারি ও ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে এ সমস্ত চরিত্র অনোখা ঠেকতে পারে।তবে সকলেই এদের উপভোগ করবেন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সুশান্ত ও অতনু। দুটি ডায়ামেট্রিকালি বিপরীত মানুষ, যারা টানা পঁয়তাল্লিশ দিন ধরে হোটেল-রুমের দরজায়, আফিসের বড়সাহেবের প্রাত্যহিক যৌন অভিযানে কান পাততে গিয়ে আধুনিক ও চিরায়ত সংগীতের রীতিমত বোঝদার হয়ে ওঠেন। হিউগো মনটেনেগরো, বাখ, ফিল কলিন্স, বনি এম, সন্ধ্যা দ্বিজেন।প্রত্যেকদিন ভাড়া করা মহিলার সঙ্গে মৈথুনকালে বড়সাহেবের বদলে যেতে থাকা সাংগীতিক অভিরুচি এদের জীবনে এনে দেয় বিনি পয়সার মিউজিকাল এক্সট্রাভ্যাগেনজা।
শর্ট সার্ভিস কমিশনে, আর্মির চাকরি করে-আসা রাঘব, যিনি সমস্ত অফিস জুড়ে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকাকালীন জিপের ট্রলার থেকে শুরু করে মরুভূমিতে উটের ছায়ায় অব্দি হোমো করার ফিরিস্তি শুনিয়ে বেড়ান।
অফিস পিকনিকের ১৮ জনের দল, যারা ভাড়া করা মহিলার সঙ্গে নালান্দার ধ্বংসস্তুপে লুকোচুরি খেলেন। 'যৌনতার এই চিট ফান্ড' অবশ্য বিজয়ীকে প্রতারিত করে না। জিনি জিতবেন তিনি পাবেন দশহাজার টাকা এবং উক্ত মহিলার সঙ্গে রাত কাটানোর সুযোগ।
অফিসের উচ্চপদস্হ সেনগুপ্ত সাহেব, যিনি কলগার্লের ডিরেক্টরি সঙ্গে রাখতেন এবং যাঁর মৃত্যুতে জনৈকা সহকর্মী ফেয়ারওয়েল মন্তব্য করেন---"যৌনতা বাদ দিলে লম্পটদের চরিত্র আদারওয়াইজ ভালো হয় ।"
যদি অতিরিক্ত যৌনগন্ধে কোনো পাঠকের দম বন্ধ হয়ে আসে তবে তার জন্য রয়েছে অফিসের টেবিলে বসে ক্রমাগত হাই তুলতে গিয়ে রেটিনা ফ্র্যাকচার-করা মৌলিনাথ। তবে চরিত্র ও ঘটনাবলীর এই বিপুল ও অনুপম সমাহারকে কুর্ণিশ জানালে আরেকটি গুরুতর অভিযোগেরও উদ্ভব হয়।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লেখককুল বহুবিধ ঘটনা সংবলিত উপন্যাস ভালো মতো শুরু করলেও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেন।এবং লেখার অর্গানিক গ্রোথ-এর দোহাই দিয়ে কোনওমতে লেখাটি শেষ করেন। যে কারণে বাংলাভাষায় গুণী থ্রিলার উপন্যাসের সংখ্যা হতাশাজনক ভাবে কম।
তবে মলয় রায়চৌধুরী সেই দোষও কাটিয়ে রেখেছেন। লেখার শুরুতেই বহু ঘটনার মধ্যে থেকে একটি স্বল্পবর্ণিত ঘটনাসূত্র উপন্যাসের শেষে মোক্ষমভাবে ফিরে আসে ও লেখার সামগ্রিক অবস্হান ব্যাখ্যা করে।
তখন প্রশ্ন উঠতে পারে , মানুষের জীবনের প্রতিপাদ্য যদি ক্রমশ উবে-যাওয়া হয় সেক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্হান ব্যাখ্যা করার দরকার কী । দরকার এই জন্যই যে উদ্বর্তন প্রক্রিয়ার একটা উলটোপিঠও রয়েছে যেটি গঠনমূলক।
বিভিন্ন জলাশয় থেকে বাষ্পীভূত জল যেমন একটি মেঘের টুকরোয় সম্মিলিত হয়, ঠিক তেমনই যুদ্ধক্ষেত্রে বাঙালিকে ফিরত আনতে চাওয়া সুশান্ত, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার স্বকল্পিত গ্লানি থেকে মুক্ত হতে চেয়ে কয়েকদিনের জন্য জোর করে পাগল হয়ে-যাওয়া অরিন্দম, বিহারের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন, অথচ চরম অনিরাপদ উত্তরপূর্বে নিশ্চিন্তে বসবাসকারী দুই বোন জুলি ও জুডিথ--- এই সমস্ত চরিত্রের জলাশয় থেকে তৈরি হয় সেই মেঘ, যার নাম অতনু।
ঔপনিবেশিক সাহিত্যরীতির ফিউডাল মানসিকতার নায়কনির্মাণ প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করে লেখক তার অতনু নির্মাণ করেন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে। প্রত্যেক পার্শ্বচরিত্রের সমপরিমাণ প্রতিনিধিত্ব বজায় রেখে। তাদের মৃতদেহের উপর নয়। আবার চরিত্রের নির্দিষ্ট মেয়াদ ফুরোলে, অর্থাৎ উপন্যসের শেষে, অতনুকে একগুচ্ছ বিকল্পের সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। এ যেন মেঘের নির্দিষ্ট সময়সীমা ফুরোলে, পুনরায় জলাশয়ে জল হয়ে ঝরে পড়ার নির্দেশ। তবে অনিশ্চিত অতনু জানে না যে, সে সেখানেই ফেরত যাবে কিনা যেখান থেকে ওর জন্ম। হাওয়ায় কত মেঘই তো এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ভেসে যায়।
লিখনশৈলীর ক্ষেত্রে উল্লেখ্য হল, এই প্রকার একটি রূঢ়, খর্খরে, ও প্রখর বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস, যেখানে কিডন্যাপড হওয়া মেয়ের জন্য মায়ের হিন্দিতে লেখা এফ আই আরটা অব্দি চরিত্রে পর্যবসিত হয়েছে, সেখানেও লেখকের ভাষা উপমাময়, স্মার্ট এবং নির্মেদ। দাঙ্গা খুনোখুনিতে পর্যদুস্ত এক গ্রীষ্মের দুপুরের বর্ণনায় লেখক বলছেন--- 'ঘন সবুজ কচি আমের থুতনিতে হাত দিয়ে আদর করছিল একটা প্রৌঢ় আমপাতা'। সম্পাদনা প্রসঙ্গে বলার এই যে, রচনাগুলির প্রকাশকাল ডিটেলে বলার দরকার ছিল। যাঁরা অ্যাকাডেমিকালি লেখাটি নিয়ে ভাববেন তাঁদের সুবিধা হবে, কারণ লেখাটির সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক স্হানাঙ্ক রয়েছে।
আর যা না বললেই নয়, প্রচ্ছদের সঙ্গে লেখার ধাতের বিন্দুমাত্র মিল পেলেও ভালো লাগত।
Profile Image for Shankar Sen.
111 reviews5 followers
March 20, 2019
বর্ণসংঘর্ষের পৃষ্ঠপটে কাব্যিক ভাষায় এরকম উপন্যাস বাংলায় আর নেই বলে মনে করি
Displaying 1 - 3 of 3 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.