Shamsur Rahman (Bengali: শামসুর রাহমান) was a Bangladeshi poet, columnist and journalist. Rahman, who emerged in the latter half of the 20th century, wrote more than sixty books of poetry and is considered a key figure in Bengali literature. He was regarded the unofficial poet laureate of Bangladesh. Major themes in his poetry and writings include liberal humanism, human relations, romanticised rebellion of youth, the emergence of and consequent events in Bangladesh, and opposition to religious fundamentalism.
তাকে অনেকেই বলে জাদুর শহর। আমার কাছে সে একটা মায়া। মায়ার শহর। ঢাকা আমার জন্মস্থান নয়। বেড়েও উঠিনি এখানে। বড় হয়ে এসেছি এই শহরে। কিন্তু আমার জন্মস্থানের মতই আমি ভালোবাসি আমার প্রিয় ঢাকাকে। তাই অতীতের সেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকার পথে পথে আমি ফিরি বিভিন্ন বইয়ের পাতায় পাতায়। ঢাকার ঐতিহ্য, ইতিহাস নিয়ে যে কোন লেখা আমাকে অনেক বেশী টানে। কবি শামসুর রাহমানের স্মৃতির শহর বইটি অনেকদিন থেকেই খুঁজছি, পাচ্ছি না। এবার বইমেলায় কেনা হল পিয়াস মজিদের সম্পাদনায় "আমার ঢাকা" বইটি, যেখানে ঢাকার স্মৃতি নিয়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের কিছু লেখা, কবিতা আর ছবি স্থান পেয়েছে। কবির সেই ঢাকা আর আজকের এই ঢাকার আকাশ পাতাল ব্যবধান। সেসময় পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে হেঁটে বেড়াতেন শামসুর রাহমান, অমলেন্দু বসু, নরেশ গুহ, রশীদ করিম, শিবনারায়ন রায়, বুদ্ধদেব বসুর মত রথী মহারথীরা। আওরাতেন কীটস, শেলীকে। তখন বাংলাবাজার ছিল ক্ল্যাসিক সব নতুন পুরনো বইয়ের আখড়া। পুরনো বইয়ের ঘ্রাণ নিতে কতবার কবি ছুটে গেছেন বাংলাবাজারে। এখনকার অবহেলিত পুরনো ঢাকার অলিতে গলিতেই তখন হয়েছে সাহিত্য চর্চা, শিল্প চর্চা। সেই ঢাকাই হয়তো সৃষ্টি করেছেন একজন শামসুর রাহমানকে। আসাদ চৌধুরী লিখেছিলেন, " জেমস জয়েসের যেমন ডাবলিন, যেমন নাগিব মাহফুজের কায়রো, যেমন ওরহান পামুকের ইস্তাম্বুল, সুনীল ও শক্তির যেমন কলকাতা, তেমনই শামসুর রাহমানের ঢাকা।
বইটি পড়ে হারিয়ে ফেলা সেই ঢাকার প্রতি মুগ্ধতা আরো বেড়ে গেছে।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ছোট সে ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা লেখক শামসুর রহমানের। ঢাকা শুধু তাঁর প্রিয় শহর নয়, অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা এক হৃৎস্পন্দনের নাম। জন্ম ও বেড়ে ওঠার হাজারো স্মৃতির সাথে মিশে আছে স দুর্ভিক্ষ, ভয়াল কালোরাত, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সে নির্মল সকাল। কবিতায় লেখায় বার বার উঠে এসেছে সেই সব।
"আমার ঢাকা" মূলত বিভিন্ন সময়ের লেখা ঢাকাকে কেন্দ্র কের নানা স্মৃতিকথা ও কবিতা নিয়ে ছোট্ট একটা বই।
কি চমৎকার সব গদ্য। কি অসাধারণ সব কবিতা। নিজের শহরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেই বুঝি,এমন সুন্দর সব কথা লেখা সম্ভব হয়। এই বইয়ের কবিতাগুলো পড়ার পর বুঝলাম, কত বড় ভুল আমি করেছি,শামসুর রাহমানের কবিতা না পড়ে।
"জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, ঢাকাও মরাল হতে জানে পূর্ণিমায়, দেখে নিই। যেন দরদালান সমেত যাচ্ছে উড়ে দুলিয়ে বিপুল ডানা মগজের জ্যোৎস্নায় আমার। ওলোট-পালোট কত স্মৃতি গোলাপের মতো ঝরে এখন আমাকে ঘিরে, ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে পড়ি।"
শহর বড় তাড়াতাড়ি বদলাতে থাকে, নিমেষে চেনা গলি গোলকধাঁধা হয়ে যায়। বাড়ির মালিকানায় হাত বদল হলে বাড়িটাও চেনা লাগে না আর। পাড়ার মোড়ের গাছটা কাটা হয়ে গেলে দিকভ্রান্ত লাগে। একটা হাইরাইজ গোটা পাড়ার মনটাকেই বদলে দেয়। নিষ্ঠুর লাগে এই বদলে যাওয়া। তবুও শহরের সঙ্গে কীসের যে টান, কেন যে ছেড়ে যাওয়ার ভাবনা আসতেই বুকে নদী ঢেউ তোলে, কে জানে! শামসুর রাহমান তাঁর ঢাকা শহরটাকে মনে রেখেছিলেন শব্দ দিয়ে। চোখ বন্ধ করলেও ঢাকা শহরের শব্দ শুনতে পেতেন, প্রাণের শহরটা সামনে এসে দাঁড়াত যেন। বদলে যাওয়া ঝাঁ-চকচকে ব্যস্তসমস্ত শহরের মাঝে তিনি চোখ বুজে দাঁড়িয়ে। ঘোড়ার গাড়ির শব্দ, পাখির গান, বাড়ি ফেরার টান, রিকশার রিনধিন আওয়াজ শুনতে শুনতে তাঁর মনে হয়– ‘আমার মনের ভেতরে সময় সময় এই শহর এক অর্কেস্ট্রা হয়ে যায়।’
আমার কাছে আমার প্রাণের শহর চট্টগ্রাম। শামসুর রহমান এর "ঢাকা" শহরকে আমি কখনও আপন ভাবি নি। হয়তো, আমি যখন প্রথম ঢাকাকে নিজের অস্তিত্বে অনুভব করেছি তখন তার ঢাকা অনেকটাই বদলে গেছে। বদলটাই বেশি চোখে পড়লেও সেই ছোট বেলার কবিতায় পড়া ঢাকাকে বার বার পেতে পেতে কখনও পাই নি আবার কখনও খুব পেয়েছি। তাই তিলোত্তমা ঢাকাও কাঁদে, ভীষণ বিষণ্ণ হয়, সমগ্র অস্তিত্বে অনুভব করে তার প্রাক্তন প্রেমিক শামসুর রহমানকে। আসাদ চৌধুরী লিখেছিলেন, " জেমস জয়েসের যেমন ডাবলিন, যেমন নাগিব মাহফুজের কায়রো, যেমন ওরহান পামুকের ইস্তাম্বুল, সুনীল ও শক্তির যেমন কলকাতা, তেমনই শামসুর রাহমানের ঢাকা।
বইটি ছোট। খুব আস্তে আস্তে পড়েছি। সবমিলে স্মৃতিমেদুর ঘনকুয়াশায় ঢাকা "ঢাকা"কে ঠিক আবার নতুন করে দেখলাম।
❛জোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, ঢাকাও ম রাল হতে জানে পূর্ণিমায়, দেখে নিই। যেন দরদালানসমেত যাচ্ছে উড়ে দুলিয়ে বিপুল ডানা মগজের জোৎস্নায় আমার।❜
স্মৃতির শহর ঢাকা, প্রাণের শহর ঢাকা। ধুলোবালি, ইট পাথরে ঘেরা, দূষিত বায়ুর শহর ঢাকা। কোটি মানুষের স্বপ্নের শহর ঢাকাকে ঘিরে আছে বহু মানুষের আজন্ম ভালোবাসা। তাদেরই অন্যতম একজন নাগরিক কবি শামসুর রাহমান। জন্মশহর ঢাকাকে কবি ভালোবেসেছেন প্রিয়ার মতো। হয়তো তার থেকেও বেশি। কবির কথায়, চিত্তে, মননে, কবিতায় সবখানে প্রাধান্য ছিল ঢাকা। বিশেষ করে পুরোনো ঢাকা। বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির পুরোনো ঢাকা লেখকের আবাসস্থল। সেখানে কাটানো সময়গুলো, বাড়ির উঠোনে দিকে চেয়ে কবিতা রচনার সময়গুলো লেখক সযত্নে লালন করেছেন। ঢাকাকে অলিগলিতে লেখক স্মৃতিচারণ করতে করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন শিবনারায়ণ রায়, ড. অমলেন্দু বসু, নরেশ গুহ, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং রশীদ করিমের মতো নামী ব্যাক্তিদের সাথে। ছ'জনের আড্ডায় উঠে এসেছিল কতশত কথা, সাহিত্যের অধ্যায় ভরপুর সেই দুপুরের কথা লেখক ভুলে যাবেন না।
বাংলার বিজয় অর্জনের মুহূর্ত, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর সময়গুলো আর বাড়ির উঠোনের সেই অবাধ্য বেড়ে ওঠা ঘাসগুলো কবির ঢাকার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। শ্যাওলা ধরা, পিচ্ছিল ওই আশেক লেনের বাড়িতে লেখকের পায়চারী, উদাস দুপুর কিংবা অশান্ত মনে শুধু আশেক লেনের ওই ছোট্ট ঘরে থেকে কীভাবে জীবনের সবথেকে সুখের সময়গুলো কাটিয়েছেন তার স্মৃতিতে ভরপুর। নিউমার্কেট, বাংলাবাজার কিংবা নীলক্ষেতের ওই পুরোনো শীর্ণ বইগুলোর প্রতি ভালোবাসা কবির অসীম। শীর্ণ হলদে মলাটে যে ভালোবাসা পাওয়া যায় তার জন্য উচ্ছল কিশোর বালকের মতো লাফঝাঁপ দিতে কবির দ্বিধা ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালের স্মৃতি, মধুর ক্যান্টিনে মধুদার সাথে কাটানো সময়গুলো কবির জীবনের সোনালী স্মৃতি। এই মধুর ক্যান্টিনে বসে কত ইতিহাস হয়েছে তা আজকের জমানায় ক’জন-ই জানি! কবির তরুণকালের ঐ ঢাকা তার মধ্যবয়সের ঢাকার মতো না হলেও ভিন্ন নতুন রুপী ঢাকাকেও কবি ভালোবেসেছেন। যখন যে রূপে ঢাকা কবির সামনে এসেছে সে রূপকেই বিশ্বস্ত প্রেমিকের মতো ভালোবেসেছেন। ঢাকা ছলনাময়ী, কঠোর আবার নিষ্ঠুর হলেও ঢাকা তো ঢাকা। তার প্যাঁচানো, হাই রাইজ বিল্ডিংয়ের ভিড়েও ঢাকা ঐ ষোড়শী রমণীর মতোই স্নিগ্ধ কবির কাছে। তাইতো কবিতায় ঢাকাকে, ঢাকার অলিগলিকে, ঢাকার কোমল কঠোর সব রূপকেই ঠাই দিয়েছেন।
তাইতো আসাদ চৌধুরী ভুল বলেননি, ❛যেমন জেমস জয়েসের ডাবলিন, যেমন নাগিব মাহফুজের কায়রো, যেমন ওরহান পামুকের ইস্তাম্বুল, যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপধ্যায়ের কলকাতা তেমন শামসুর রাহমানের ঢাকা।❜
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা ঢাকায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই ঢাকায়। ঢাকার সাথে সম্পর্ক আমার তাই একদম গোড়া থেকে। রিক্সা বাসের ভিড়ের ঢাকায় অতীতের ঢাকা হয়তো আমার জন্য বইয়ের পাতায় জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবুও দশককে দুই দিয়ে গুণ দিয়ে আমার বয়স আরো কিছুদূর পেরিয়ে যাওয়া ছোট্ট এই জীবনে ঢাকাকে আমি ভালোবেসেছি। আমার মতো করে ভালোবেসেছি। জীবনের তাড়নায় নতুন শহরে আসলেও ঐ যে ঢাকা ময়লা, দুর্গন্ধ, জ্যাম, ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা বিল্ডিংয়ের সাথে বিল্ডিং ঐ ঢাকাকে খুব অনুভব করি। কবি শামসুর রাহমান নাকি ঢাকা ছেড়ে কোথাও থাকতে পারতেন না। দমবন্ধ লাগতো। তিন চার মাসের বেশি ঢাকার বাতাস না পেলে কেমন করতেন। ঢাকাকে অনন্ত যৌবনা প্রিয়ার মতো ভালোবেসেছেন তিনি। তাকে ছেড়ে তো থাকা কষ্টের হবেই! ❝আমার ঢাকা❞ শামসুর রাহমানের সময় অসময়ে ঢাকাকে ঘিরে লেখা প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণমূলক লেখা, কবিতার এক সংকলন। যা সংকলন করেছেন পিয়াস মজিদ। কবিতা, স্মৃতির শহর ঢাকা নিয়ে লেখা ছোটখাটো এই প্রবন্ধের পাশাপাশি ১৩৩ পৃষ্ঠার ক্রাউন সাইজের এই বইতে স্থান পেয়েছে কবির কিছু স্থিরচিত্র। ঢাকা নিয়ে আমার ফ্যাসিনেশন অনেক। নতুন ঢাকায় বেড়ে ওঠা হলেও কবির মতো আমিও পুরোনো ঢাকার প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করি। তাইতো ঢাকা নিয়ে লেখা লেখকের এই বইটির সংকলনের খোঁজ পেয়ে সংগ্রহ করেছিলাম। পড়া হয়নি সাথে সাথেই। সদ্য ঢাকাকে বিদায় জানানো, নতুন পরিবেশে আসা আর ঢাকার ফেলে আসা সময়গুলো ভেবে স্মৃতিকাতর হতে হতে এই বইটা পড়ার মেলবন্ধন আমার কাছে মন্দ মনে হলো না।
অতীতের ঢাকার সাথে বর্তমানের প্রযুক্তি নির্ভর ঢাকার মিল খুব একটা নেই বললেই হয়। তবুও ঢাকা তো ঢাকাই। কবির সময়ের ঢাকা আর এই সময়ের ঢাকার মিল না থাকলে আলাদা রূপে দুই সময়ের এই শহর লালন করেছে আমাদের। তাইতো বইটা পড়তে গিয়ে কবির চোখে ষাট-সত্তর দশকের ঢাকা, সদ্য বিজয় পাওয়া ঢাকাকে উপলব্ধি করেছি। ভালো লেগেছে পড়তে। কবিতাগুলোও সুন্দর ছিল। কবিতাগুলোতে কখনো প্রকাশ পেয়েছে এই শহরের প্রতি কবির ভালোবাসা, আবেগ, বারবার ফিরিয়ে দিলেও শহরের প্রতি নিদারুণ টান। আবার কখনো অভিমানী, রাগী হয়ে লিখেছেন কবিতাগুলো। প্রত্যেকটা কবিতাই উপভোগ্য। কিছুটা কঠিন মনে হলেও ঢাকার স্মৃতির সাথে মিলিয়ে পড়তে গেলে বুঝতে বেগ একটু কমই পেতে হয়।
ছোট্ট এই বইটা পড়তে গিয়ে লেখকের কথার সাথে আমিও একমত বা এক চিন্তা করছিলাম। বিশেষ করে পুরোনো ঢাকায় যখন যাই, তখন বারবার মনে হয় এই একই পিচঢালা পথে কত অতীত মানুষের ধুলো আছে, আছে যো দ্ধা দের র ক্ত। ব্রিটিশ বাহিনীর বুটের খটখট আওয়াজ আছে, আছে পাক বাহিনীর বেয়নেটের খোঁচা। কতকিছু পেরিয়ে আজকের এই ঢাকা। পুরনো ঢাকার জীর্ণশীর্ণ ওই বাড়িগুলো দেখতে দেখতে মনে হয় এখানে অতীতে কত শান-শৌকত ছিল, ছিল জমিদারি, ছিল রাজা রানীর আবাস। আজ সেই রাজবাড়ি গুলো দর্শনার্থীদের ২০-৩০ টাকার টিকেটের বিনিময়ে ঘুরে যাওয়ার স্থান! আন্টাঘর ময়দানের দিকে গেলে কবির মতো আমারও কি মনে পড়ে এখানে কত সিপাহীকে ঝুলতে হয়েছিল ফাঁ সি তে?
ঢাকা জাদুর শহর। জ্যাম, ধুলো, গরম, প্রকৃতির ছোঁয়া কমে যাওয়া শহরটা তারপরেও টানে। টানে শিল্পকলার কোনো প্রদর্শনীতে, টানে টিএসসির রঙিন চায়ের দোকানে, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, বিউটি লাচ্ছি কিংবা আর্মেনিয়ান চার্চে টানে। রাতের ল্যাম্পপোস্টের ঐ হলদে বাতির নিচে হাঁটার জন্যেও টানে। বৈশাখের বটমূল, নীলক্ষেতের সস্তার বই, বাংলাবাজারের আগের মতো পুরোনো বইয়ের দোকানের আধিক্য না থাকলেও বই আছে। নতুন বইয়ের সমাহার আছে। এক ঢাকাকে ভালোবাসতে আর কী লাগে? কবির স্মৃতিকাতরতা পড়তে পড়তে নিজেও কখন স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম কে জানে। ঢাকা নিয়ে আগ্রহ থাকলে, ঢাকার অতীত ইতিহাসের একটু ঝলক পেতে চাইলে বইটি না পড়ার কোনো কারণ নেই।
কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে বিদায় নেই,
❛হে শহর, হে প্রিয় শহর, হে অন্তরঙ্গ আমার, তুমি কি সেই ভীষণ দলিলে সই করে ফেলেছ, যার প্রতাপে আমি কাঁদব দীর্ঘ পরবাসে? আমার সঙ্গে কোনো ছলাকলার প্রয়োজন নেই, তুমি অসংকোচে উচ্চারণ করতে পারো নিষ্ঠুরতম ঘোষণা- আমি রৌদ্রমাখা ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলে যাব প্রতিবাদহীন, কোনো অভিমানকে প্রশ্রয় না দিয়েই। ........ আমি সন্তের মতো অপেক্ষা করবো উপবাসে দীর্ঘকাল।❜
বিভিন্ন সময় ঢাকা শহর নিয়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের প্রবন্ধ ও কবিতার সংকলন 'আমার ঢাকা'।পুরান ঢাকা নিয়ে কবির অবশেসন ও স্মৃতিকাতরতা ফুটে উঠেছে সংকলিত প্রবন্ধ ও কবিতাগুলোতে।শামসুর রাহমানকে নাগরিক কবি বলার কারণ খুঁজতে বইটি সাহায্য করবে।
আপনার আমার বেড়ে উঠা এই শহরে। কতশত স্মৃতি। হাজার হাজার বছরের এই শহরের কত অশ্রু গোপন করে গেছে কতজন হারিয়ে গেছে শতশত স্মৃতির মাঝে! শামসুর রহমান এর লেখাগুলো আমায় খুব টানে হোক সেটা গল্প কিংবা কবিতা। কেমন জানি আপন মনে হয়। তাঁর জন্ম ঢাকাতেই। এই হাজারও স্বপ্নের বীজ তিনিও পুঁতেছিলেন ঢাকাতেই। একসময় তিনিও হারিয়ে যান খরস্রোতা কালের নদীতে কিন্তু রয়ে গেছে তার শত স্মৃতির এই ঢাকা। রয়ে গেছে ঢাকা নিয়ে লেখা অজস্র লেখা, গল্প, কবিতা! তার সকল কিছুর সংকলনই এই বই। এই বই যেনো বারবার না বলে যাওয়া শামসুর রহমানকে বলে যায় আমাদের মাঝে!
চমৎকার গদ্যশৈলী। বেশ ভাল স্মৃতিচারণ৷ ঢাকায় আসার আগে ঢাকা আমার পছন্দ ছিল না৷ ঢাকার জ্যাম আর পরিবেশ দূষণ দূর করলে আক্ষরিকঅর্থেই ঢাকা এক জাদুর শহর। ঋদ্ধি বুকক্যাফেতে বসে বইটা পড়ার সময় ঢাকায় আমার একা একা ঘুরে বেড়ানোর মুহুর্তগুলো মনে পড়ছিল।