‘প্রার্থনা’ কি? ইহা আট বছর পর প্রকাশিত সলিমুল্লাহ খানের নতুন বই। বিষয় একালের কয়েকজন মহাত্মা। এইসব স্মৃতি কিংবা রচনাবিচরণ ১৯৯৯ হইতে ২০১৮ সালের মধ্যে লিখিত। বিষয়গণ কেহ লেখকের পরম শিক্ষক, কেহ প্রাণের বন্ধু কি ছাত্র আর কেহ বা তাঁহার কালের সাধক। গ্রন্থভুক্ত শোকনিবন্ধগুলি নির্ভেজাল অশ্রু বিসর্জন নহে, কিছু গুরুতর প্রশ্নেরও বিস্তার। আর মুখবন্ধ জাতীয় গুটিকয় রচনা বারবার মেলিয়া দেয় লেখকের স্মৃতির ঝাঁপি। লেখক ‘আত্মকথা’ রচিতে নারাজ। ফলে তাঁহার জীবনস্মৃতির স্বাদ এই স্মৃতিমালার ঘোলেই আমাদের মিটাইতে হইবে। ‘প্রার্থনা’ জাতীয় সাহিত্য গ্রন্থমালার দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথম খণ্ড—নাম ‘আহমদ ছফা সঞ্জীবনী’—বাহির হইয়াছিল ২০১০ সালে।
Salimullah Khan is a Bangladeshi writer, thinker, critic, and public intellectual. Regarded as an eminent thinker of Bangladesh, Khan explores national and international politics and culture using Marxist and Lacanian theories. Informed and influenced by Ahmed Sofa's thoughts, his exploration of Bangladesh's politics and culture has a significant following among the country's young generation of writers and thinkers.
Khan translated the works of Plato, James Rennell, Charles Baudelaire, Frantz Fanon, Dorothee Sölle into Bengali. In Bangladesh, he is a regular guest in talk shows on national and international political issues.
A proponent of anti-colonial movements, Khan has engagements in the global and regional political economy and culture from a Lacanian-Marxist perspective. A critic of Western interventionism, Salimullah Khan analyzes Western thought and discourse through critical scrutiny of the colonial and imperial legacy of the West. From this perspective, he has written on the works of Charles Baudelaire, Walter Benjamin, Michel Foucault, Frantz Fanon, Claude Lévi-Strauss, Edward Said, Aime Cesaire, Talal Asad and many others. Since 1997, his engagement with Freud and Lacan has made him use psychoanalysis to explore Bangladesh's politics and culture and also international issues. He also wrote two books on Freudo-Lacanian philosophy: Freud Porar Bhumika, and Ami Tumi She.
নানান ধরনের বই পড়লেও সলিমুল্লাহ খানের বই পড়তে আমার একটু দেরিই হয়ে গেল। তবে তাঁর বক্তব্য শোনা হয়েছে। সলিমুল্লাহ খানের লেখা বেশ কঠিন, তবে পড়তে বেশ লাগে। এমন অভিনব ধাঁচে লেখা চোখে কম পড়েছে। সব কটা রচনাই যদিও একই লিখনরীতি মেনে লেখা হয়নি। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে লিখলে সম্ভবত সাধুভাষাই ব্যবহার করেন, কারণ বেশিরভাগ লেখাই সাধুভাষায়। অল্প কয়েকটা লেখা, যেগুলো মৃত ব্যক্তি স্মরণে তৎক্ষণাৎ লেখা বা পঠিত, সেগুলো চলিত ভাষায়। যতি, নিয়তি, রতি এবং বিরতি এই চারভাগে মোট ৩১টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধ না বলে, স্মৃতিকথাও বলা যায় কয়েকটি লেখাকে। নানান বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি এই বইটিতে আসলে প্রাধান্য পেয়েছে ব্যক্তি। লেখকের পরিচিত কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে স্মৃতিচারণ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ এইসবই বইয়ের উপজীব্য। লেখকের নানান বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য এবং প্রজ্ঞা বিস্মিত করার মতো। ফিদেল কাস্ত্রো এবং কিউবার আশ্চর্য রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে একটি প্রবন্ধ খুব ভালো লেগেছে। বেশ কজন নতুন মনীষীকে চিনতে পারলাম, আগে জানতাম না, আমার নিজেরই অজ্ঞতা। মমতাজুর রহমান তরফদার এবং মোহন রায়হান এই দুই কবির সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগল। খটকা যেটুকু লাগল, সেটা হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা এবং তারেক মাসুদকে নিয়ে লেখকের মূল্যায়ন। তাঁর যুক্তিটা মনে নেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়াও ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কোন কারণ ছাড়াই একটু খোঁচা দিয়ে দেয়ার প্রবণতা ভালো লাগল না। দেশ, ধর্ম, ইতিহাস, রাজনীতি এবং অগ্রজ, অনুজ, সমসাময়িক ব্যক্তিদের নিয়ে সলিমুল্লাহ খানের জ্ঞান এবং স্মৃতিকথন নিঃসন্দেহে পড়ার মতো, উপভোগ করার মতো বিষয়। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই মনীষীর লেখার সাথে প্রথম পরিচয় নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এখন আমাদের কি কর্তব্য? তারেক মাসুদ যে কীর্তি রাখিয়া গেলেন আমরা কি তাহার মধ্যে শুদ্ধ নিজেদের চেহারা দেখিব? নাকি 'কলবের মধ্যে আয়না বানাইয়া' তাহার পারদটা মুছিয়া ফেলিব, তাঁহাকেও দেখিব? ['আমার বন্ধু তারেক মাসুদ', সলিমুল্লাহ খান, প্রার্থনা, জাতীয় সাহিত্য ২ (ঢাকা: মধুপোক ২০১৯), পৃ ৬৯ ]
পড়তেছিলাম 'প্রার্থনা'। সলিমুল্লাহ খানের নতুন বই। জাতীয় সাহিত্য সিরিজের দুই নম্বরটা। আমার কাছে বইমেলার বই মানে গরম গরম। ইমরুল হাসানের অনূদিত 'রুমির কাহিনির' মধ্যে ঢুইকা পড়ছে এই 'প্রার্থনা'। খান সাহেব বইটাতে ঢাকার মনীষীদের চিনাইতেছেন বা কাহিনি কইতেছেন যাদের কাছে তাঁর এই জন্মের ঋণ আছে। খান সাহেব নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া সারছেন এইসব লেখাতে, আর পাঠকরেও ঢুইকাইতে পারছেন একি পাইপে, একি কক্ষপথে।
তারেক মাসুদরে নিয়া এখন পর্যন্ত দুইটা প্রবন্ধ পাইলাম। 'আমার শিক্ষক তারেক মাসুদ' আরেকটা 'আমার বন্ধু তারেক মাসুদ'; এই দুইটা প্রবন্ধ শেষ কইরা পড়াতে বিরতি টানা লাগলো। তারেক মাসুদ বা তার স্বপ্ন বা সিনেমা বা তারেক-সলিম সম্পর্কের মধ্যে ভাবনা আটকে থাকে না। আমার নিজের বোঝাপড়ার লগেও নিজের বোঝাপড়া হইতেছিলো। ভিন্ন পাঠকদেরো এই বোঝাপড়ার ভিত্রে দিয়া যাইতে হইতে পারে। *** বন্ধুত্ব চিরকালের না। থাকে বা থাকেনা। দূরত্ব বাড়ে। কম বা মহাসমুদ্র সমান। আমাদেরো বন্ধুত্ব হারাচ্ছে চলতি পথে। সুস্পষ্ট কারণ আর বোঝাপড়া থেকেই হয়তো। বাট শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা রয়ে যায় বা স্মৃতিগুলা। বিশ্বাস আর বোঝাপড়ার লগে লগে বন্ধুত্ব সমান্তরালে আগায় না মেইবি। কোনো এক বাঁকে গিয়া দিক বদলায়।
বইয়ের সুরত সুন্দর। বাইন্ডিং চমৎকার। কাগজ ভালো। পড়ে তো আরাম, ধরে আর ঘ্রাণেও।
"যতি" অংশের লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, লেখক কেন আত্মজীবনী লিখেন না! টুকরো টুকরো ভাবে অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে তাঁর পরিচয়, কাজের কথা পড়ে মনে হয়েছে, এ সবকিছু ধারাবাহিকভাবে পড়তে পারলে ভালো হত! এই অংশে একটি ফরাসী কবিতাও আছে। এর অনুবাদ থাকলে খুশি হতাম!
"রতি" আর "বিরতি" অংশে যেসকল ব্যক্তি / বই/ পত্রিকা নিয়ে লেখা হয়েছে, তাদের অনেকের সম্পর্কেই আমার তেমন কোন ধারণা নেই। তাই লেখাগুলো লেখকের লেখার গুণে পড়ে গেছি, কিন্তু অনেক কিছুই বুঝিনি বা আগ্রহ পাইনি।
"মাটির ময়না" সম্পর্কে লেখকের মতামতে আমি কনফিউজড। অনেক আগে দেখেছিলাম এটা। যদ্দুর মনে পড়ে ভালোই লেগেছিল। এখন মনে হচ্ছে আবার দেখতে হবে৷