এই বইটি মূলত দুই বইয়ের মিলন। দুটি গল্পগ্রন্থকে একীভূত করা হয়েছে। কিছু গল্পকে ত্যাজ্য করেছি, সেগুলো বাদ পড়েছে। রচনার সময়কাল অনুযায়ী গল্পগুলোর ক্রম সাজানো হয়েছে। তাতে একজন লেখকের বিবর্তন আরো স্পষ্ট হবে। --ওবায়েদ হক
প্রত্যাশা বেশি ছিলো কি? বইয়ের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগুলো বেশি ভালো লেগেছে। বিসর্জন, অসুখ, বুড়ো দাঁড়কাক মরেনি, ছোঁয়া, প্রায়শ্চিত্ত, ফ্যাকাশে লাল ফুল গল্পগুলো চমৎকার। কিছু গল্প একেবারেই ভালো লাগেনি, জোরপূর্বক ট্র্যাজেডি সৃষ্টির চেষ্টা কোনোকালেই ভালো লাগেনা।বিশেষভাবে খারাপ লেগেছে ভুল সাক্ষাৎ আর অধর্ম। ভুল সাক্ষাৎ এর মতো ঠিক একই বিষয় নিয়ে (পতিতালয়ে দেহপসারিনী মেয়ে/ মায়ের সাথে খদ্দের বাবা/ ছেলের দেখা হয়ে সুগভীর ট্র্যাজিক পরিণতি দেওয়ার চেষ্টা) এইবছরই আরো দুইটা গল্পে পড়েছি (হরিশংকর জলদাস আর মোজাফফর হোসেন এর)। বাজে অবস্থা!
নাম: একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য লেখক: ওবায়েদ হক প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী প্রকাশনী: ভূমিপ্রকাশ প্রথম প্রকাশ: এপ্রিল ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪ মুদ্রিত মূল্য: ২৫০/-
খন্ড খন্ড ভালোবাসাগুলোকে লেখক বন্দী করেছেন এক মলাটে। তবে এই ভালোবাসার কিন্তু রকমফেরও আছে। কারো ভালোবাসা সন্তানের প্রতি, তো কারো মা-বাবা, তো আবার কারো আছে প্রিয়জন, তো কারো জন্য আবার অমূল্য বস্তু, তো আবার দেশও। তবে একসুতই এসে বাঁধা পড়েছে সকলে আর তা হলো ❝ভালোবাসা❞, যার জন্য তারা অসাধ্য সাধন করতেও প্রস্তুত। লিখনশৈলী প্রানবন্ত যেন চরিত্রগুলোর আবেগ পাঠককে ঘোরে নিয়ে যায়। পড়ে কখনো হেসেছি তো আবার কখনো মন খারাপ হয়ে বইটা ছেড়েও উঠে গেছি। ষোলটি ছোট গল্প আমাদের চারিপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করেই লেখা, হয়তো কারো সাথে মিলেও যেতে পারে!
১. প্রায়শ্চিত্ত:
সব থাকারও পরও কী যেন নেই এই ভাবনা কামরুল সাহেবকে ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অঢেল সম্পত্তি, বাড়ি, গাড়ি, কারবার সবই তাকে একখন্ড সুখ দিতে অপারগ। শান্তির ঘুম কতযুগ থেকে যেন ঘুমান নাই। কীভাবে ঘুমাবেন যখন অতীতের পাপ তাকে ভিতর থেকে পুড়িয়ে মারছে! আত্মগ্লানির দহন, নরক যন্ত্রণার সমতূল্য। না দেয় বাঁচতে তো না দেয় মরতে। মাঝামাঝি এই অবস্থায় পড়ে ব্যক্তি হয়ে যায় হিতাহিত জ্ঞান শূন্য। কামরুল সাহেব চরিত্রটির মধ্যে ফুটে উঠেছে; যে পাপ তাকে সবই দিয়েছে কিন্তু কেঁড়ে নিয়েছে সুখশান্তি সে পাপ ঘুচতে করবেন কী। স্মৃতিচারণ করতে করতে প্রায়শ্চিত্তের পথেও এগিয়ে গেছেন। সমাপ্তি যদিও অনুমেয় ছিল তবে প্লটটা ভালো লেগেছে।
২. একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা:
দশ বছরের জয়নাল প্রতিদিন গাব গাছের কোটের একান্ত নিজস্ব কিছু সময় কাটায়। ঘুমন্ত চোখে কোটর থেকে একদিন বের হয়ে দেখে গ্রাম জনমানবশূন্য! মা-বাবা কি তাহলে ভুলে তাকে রেখে পালিয়ে গেছে? গায়ে মায়ের অতিপ্রিয় শাড়িটি জড়িয়ে জয়নাল ছুটতে থাকে পরিচিত মুখগুলোর সন্ধানে। পাকবাহিনী নিধনে শফিকুল কামরাঙা বোমা হাতে ঝাপিয়ে পড়ে। প্রিয়জন ও মাতৃভূমি প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ ফুটে উঠেছে ছোট জয়নালের মধ্যে।
৩. ছোঁয়া:
বৃদ্ধা মালতী দাস বহু কষ্টে পড়া শিখছে। এই বয়সে এসে কেন পড়া শিখতে হবে তা বুঝে আসে না অনেকের। ভাষা শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা নাকি হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে আবারও ফিরে পাওয়ার আকুলতা এক মায়ের, শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুঝা মুশকিল।
৪. উপহার:
পৃথিবীতে মা-বাবার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার যেমন সন্তান তেমনি সন্তানের জন্য তার মা-বাবা। সেলিনা-কালাম দম্পতি যেন তারই বহিঃপ্রকাশ। একমাত্র সন্তান তাও প্রতিবন্ধী কিন্তু ভালোবাসায় নেই কোনো ঘাটতি। শেষটা পড়ে কিছুখন স্তব্ধ হয়েছিলাম। বইয়ে এটাই সবচেয়ে পছন্দের গল্প।
৫. সুখের মণি:
নুরুল-লুৎফার তাদের পাঁচ বছরের ছেলে আমীরকে নিয়ে টোনাটুনির সংসার। সংসারে অভাব থাকলেও সুখের কমতি নেই। কিন্তু ভবিষ্যৎ চিন্তা নুরুলকে অস্থির করে তোলে। একরাতে পেয়ে যায় সাপের মণির দেখা কিন্তু জেগে থাকতে হবে সারারাত! সুখস্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্নে বিভোর হয়ে কেটে যায় রাত। উচ্চাকাঙ্ক্ষা মানবজীবনের এক সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু এর ফাঁদে পড়ে আমরা ভুলে যায়, যে সুখের খোঁজ আমরা করছি তা আসলে আমাদের কাছেই রয়েছে। লোভে অন্ধ যেমন শান্তি খুঁজে পাই না তেমনি হারিয়ে ফেলে সুখও। নুরুলের সে একরাতই আমাদের বুঝিয়ে দেয় আমরা আসলে খুঁজছি কী।
৬. ভুল সাক্ষাৎ:
ব্যক্তি যতই স্বার্থপর হোক না কেন একজন মা তা হতে পারে না। অন্যের সন্তানের সাথে খারাপ করতে হয়তো তার বিবেকে বাঁধে না কিন্তু যখন প্রশ্ন তার সন্তানের তখন লড়তে প্রস্তুত পুরো জগতের সাথে এমনকি নিজের সাথেও। এমনই এক মা মনোয়ারা। নিষিদ্ধ পল্লীতে যে রাজ্যত্ব করে চলেছে বহুবছর ধরে। কিন্তু ফেলে আসা অতীত আর সন্তানের বাঁধান তার পরিচয়কে ছাপিয়ে যায়।
৭. অধর্ম:
মোতালেব মিয়ার বয়স হয়েছে, ইচ্ছে হজ্জে যাবে। ইচ্ছে নেক হলেও চিন্তা নেক নয়। কারণ সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার জন্য নয় বরং সমাজ থেকে পাওয়া জোরপূর্বক সম্মানের প্রতিই যত মোহ। হজ্জে যাওয়ার অর্থ জোগাতে ও রাতারাতি সম্পদের মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ছেলের বিয়ে দিবে। কিন্তু কথায় আছে না, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। প্রবাদটিকে সত্য করতেই যেন মোতালেব মিয়ার পিছে ফেলে আসা অতীত হঠাৎ করে তারই সামনে চলে আসে। পড়ে যায় ধর্মসংকটে! চলতে চলতে কতই না পাপ হয়ে যায় ব্যক্তি দ্বারা কিন্তু সম্মান রক্ষার্থে তা অবলীলায় লুকিয়েও ফেলা হয় কিন্তু সবসময় কি সম্ভব হয়? সম্মান আর ধর্ম যখন সামনাসামনি তখন মোতালেব কোন পথে হাঁটবে, এটিই মূলত গল্পের প্লট। অসমাপ্ত ইতি টানা হয়েছে।
৮. হয়তো:
চোখে দেখা, কানে শোনাতেও ভুল হয়ে থাকে কখনো। অতিপ্রাকৃতিক বিষয়ে সবার তো আর বিশ্বাস নেই। তখন সহজেই বলে দেওয়া যায় হয়তো ভুল ছিল কোথাও। গল্পকথকের ঘটনাটাও সেরকমই। প্রতি অমাবস্যায় গাছটি কাঁদে। আগ্রহ দমন করতে না পেরে একাই বেড়িয়ে পড়ে রহস্যের জবাব উদ্ধারে। এই গল্পটা পড়ে অনেক হেসেছি। বাস ভ্রমণের কাহিনীটা মজার ছিল। কান্দন গাছের অতীত ঘটনাও ভালো লেগেছে।
৯. অসুখ:
অসুস্থের সাথে বেশিখন থাকলে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হতে সময় লাগে না। খালেদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে লোপার জীবন বিষিয়ে গেছে। শেষ কবে প্রানখুলে হেঁসেছিল মনে করতেও কষ্ট হয়। রত্না আপার আগমনে লোপা খুব করে অনুভব করে তার মুক্তির প্রয়োজন। পতিব্রতা স্ত্রী লোপার গল্প। সাথে লেখক আরও একটি বার্তা দিয়েছেন, মানুষের মূল্য ততদিন পর্যন্তই যতদিন সে কর্মক্ষম থাকে।
১০. আংটি:
খুবই নির্বিবাদী মেয়ে রুমালি। এতটাই যে অলস, বেকার স্বামীর সব আবদার পূরণ করতে যেয়ে আজ নিঃস্ব। একমাত্র গয়না সোনার আংটি হাতে নিয়ে অতীতে হারিয়ে যায়। প্রিয় মানুষটির একমাত্র বস্তুটি যখন হাতছাড়া হতে লাগে জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয় কাজটি করে বসে। এই গল্পটা তেমন ভালো লাগে নাই। রুমালি চরিত্রটা বেশ জটিল মনে হয়েছে।
১১. ফ্যাকাশে লাল ফুল:
একটি জামা, কারো কাছে শখ তো আবার কারো কাছে স্বপ্ন। ছোট কুসুমের একটিই জামা কিন্তু তা পড়ার সৌভাগ্য হয় ঈদ বা শীতে। সময়ের সাথে বুঝতে পারে তার খুব প্রয়োজন একটি জামার। কিন্তু বিপদের মধ্যে বিপদ শুরু হয়। বাবা যেন উধাও হয়ে গেছেন। মাও আর পারেন না আগের মতো কাজ করতে। অসময়েই ছোট কুসুমের হঠাৎ করে বড়ো হয়ে যাওয়ার গল্প। চারিপাশে কী হচ্ছে বুঝে উঠার আগেই মুখামুখি হ���় কঠিন বাস্তবতার। মা-বাবা ছাড়া প্রত্যেকেই যে কতটা অসহায় কুসুম চরিত্রের মাধ্যমে লেখক সেটাই বলতে চেয়েছেন।
১২. রমজান:
শৈশব কী বুঝতে পারার আগেই অন্ন কীভাবে যোগাতে হয় বুঝতে শিখেছে রমজান। কয়েক পেজের গল্প তবুও উঠে এসেছে পথশিশুটির পুরো জীবন। কেউ চলে গেলে তার জন্য কাঁদবে এমন ভাগ্য সবার থাকে না।
১৩. চশমা:
সময় সবাইকেই চলতে শিখিয়েই দেয়। কিন্তু চলতে যেয়ে কি আদোও সব অতীত ভুলে থাকা যায়? অতীতের ফেলে আসা সুখস্মৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সাবেক প্রেমিকাকে দেখে। কিন্তু আজ সে অন্য কারো গৃহের গৃহিণী। গল্পকথকের মনে একটাই প্রশ্ন, সবই কি ভুলে গেছে সে। এই গল্পের মধ্যে নতুনত্ব কিছু পাইনি।
১৪. নিমকহারাম:
নসিব মিয়ার পুরোনো বন্ধু তার দুই গরু। বহুকাল ধরে সেবা দিয়ে আসলেও নসিব তাদের উপর অত্যাচার করেই চলেছে। পাপের ফল প্রায়শ্চিত্তে যায়, নসিবের ভাগ্য এমটাই বলে। বেচারি টুনির জন্য কষ্ট পেয়েছি।
১৫. বুড়ো দাঁড়কাক মরেনি:
অতীতের কোনো পুরনো ইচ্ছে যদি হঠাৎ করে ফিরে আসে তাহলে কেমন লাগবে? এত বছর পর হঠাৎ বেলী পাগলিকে দেখে মনে পড়ে যায় অতীত। উদ্দেশ্য আজ ভিন্ন তবে অতীতের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চায়। চারিপাশে আমাদের এমন অনেকেই আছে যারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিন্তু সমাজ থেকে প্রাপ্ত নাম ❝পাগলী/পাগল❞। পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে। তাদের তো বোধ নেই কিন্তু যাদের আছে তারা সুবিধা নিতে কতোই না নিচে নামতে পারে!
১৬. বিসর্জন:
বৃদ্ধা লক্ষণকে সন্তানরা ফেলে পালিয়ে গেছে পাকবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে। বাঁচার তাগিদে বেড়িয়ে পড়ে বৃদ্ধাও। জীবন রক্ষাকারী হিসেবে আগমন ঘটে কিশোরী দুর্গার। কিন্তু সারাজীবন যে শুধু নিজের কথাই ভেবেছে সে কি কখনো ভালো হতে পারে? বইয়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর চরিত্র আমার কাছে লক্ষণ। শেষে তো এত রাগ লেগেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো এমন মানুষই টিকে যায়!
বইয়ে টুকিটাকি কিছু বানান ভুল আছে তবে পড়তে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বইয়ের পেজ, বাঁধাই, হার্ডকভারের মান সন্তোষজনক। বইয়ের সাথে বুকমার্ক ফিতা থাকলে ভালো হতো। প্রচ্ছদটাও সুন্দর।
for your kind information, "একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা" বইয়ের সব গল্প এটাতে আছে। ঐগুলোর সাথে আরো কিছু গল্প আছে। বইটা 'ভূমি প্রকাশ' থেকে বের হয়ছে। ধন্যবাদ 😊
"সফল ভালোবাসগুলো মরে যায় সন্দেহে, নিগ্রহে, বাস্তবতায় পিষ্ট হয়ে। ব্যর্থ ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাকে অভিযোগে,অভিশাপে, দীর্ঘশ্বাসে কিংবা লুকিয়ে রাখা একফোঁটা চোখের জলে।"
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য সুলেখক ওবায়েদ হকের গল্প সমগ্র। এই সমগ্রের প্রত্যেকটি গল্পের মধ্যে একটা বিষয় কমন। সেটা হল বিষণ্নতা ও না পাওয়ার বেদনা। গল্পগুলো পড়তে গেলে অজান্তেই মন খারাপ হয়ে ওঠে। একপ্রকার বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়। প্রায় সব গল্পই ভালো। প্রত্যেকটা গল্পেই উঠে এসেছে টানাপোড়নের চিহ্ন। তবে ব্যক্তিগতভাবে অসুখ, হয়তো ও চশমা গল্প তিনটি আমার বেশি পছন্দ।
"রানা প্লাজা ট্রাজেডির" আজ কত বছর? এইতো সেদিনের ঘটনা, না! নাকি বহু আগের? হিসেব করলে দেখা যায় ১০ বছর ৫ মাস ২৪ দিন পার হয়ে গেছে।
চিংড়ি ভাজা আমার ফেবারিট। কিন্তু সেই চিংড়ি ভাজা যদি পর পর সপ্তাহ খানেক ধরে খাওয়ানো হয় তবে নিশ্চিত বিরক্তি আসবে। এই বইয়ের দ্বিতীয় গল্প "একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা" পড়ার পর তেমনটাই মনে হয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো লেখক গিট বেঁধে নিয়েছেন ঠিক একটি জনরাতেই। সেই ৭১, রাজাকার আর যুদ্ধ, মুক্তিবাহিনী ছাড়া মনে হয় অন্য কিছু নিয়ে লিখতে পারবেননা। সব উপন্যাসেই সেই একই সুর পড়তে পড়তে একটু বিতৃষ্ণা আসা স্বাভাবিক। বিভিন্ন জনরা নিয়ে একটু তো ঘাটাঘাটি করায় যায়! এক লেখকের এক জনরাতেই সব লেখা পড়তে ভালো লাগেনা। তবে হ্যাঁ, লেখকের লেখার শক্তি যে প্রচুর আর লেখার মায়াজালে যে আটকে রাখতে একটু বেশিই সক্ষম সে ব্যাপারে সন্দেহর অবকাশ নেই। আমার অভ্যাস হলো, কোনো বই শুরু করলে শেষ না করে রেহাই নেই। যত খারাপই লাগুক। সেই সুবাদে এটাও পড়ে যাওয়া। কিন্তু সেই অভ্যাসই ফলপ্রসূ হলো। পরবর্তী গল্পগুলো ৭১ রিলেটেড না হয়ে হলো সমাজের বিভিন্ন বাস্তব চিত্রের। ব্যাস আর কী লাগে!
উপরে "রানা প্লাজা ট্রাজেডির" কথা বলছিলাম। "উপহার" গল্পটা পড়ার পরই মনে হয়েছিলো এটা রানা প্লাজা ধ্বংসের কাহিনী ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা। সত্যমিথ্যা যাচাই করতে গুডরিডসে কিছু রিভিউে একটু চোখ বোলালাম। কিন্তু কেউ কিছু বলেনি। তবে গল্পটা রানা প্লাজাকে নিয়েই। খুবই ছোট্ট একটা গল্পে কিভাবে বাস্তবতার সাথে ফিকশন মিশায়ে অমৃত সৃষ্টি করা যায় সেটা এই একটা গল্পই প্রমাণ করতে পারে। যে মানুষগুলো সেদিন মারা গেছিলো তাদের মধ্যে সবাই ঠিক এই গল্পের দম্পতির মতোই ছিলো হয়তো। বুকের ভেতর আশা নিয়ে আর সেই আশার উদ্যমে জীবনকে চালিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা সবারই ছিলো। "কিন্তু বিল্ডিংয়ের রড তো এত চিকন হয়না।" এই বইয়ের ভালো লাগা গল্পগুলোর ভেতর এই গল্পটা অন্যতম।
এছাড়াও ছোঁয়া, প্রায়শ্চিত্ত, সুখের মণি, হয়তো, ফ্যাকাসে লাল ফুল, নিমকহারাম, বিসর্জন গল্পগুলো বেশিই ভালো লাগার মতো। অন্যগুলোও যথেষ্ট ভালো।
ওবায়েদ হক প্রতিটি গল্পে রেখে গেছেন সমাজের বিচিত্র চিত্র আর অনেক অনেক কষ্ট। পড়তে পড়তে ভালো লাগা, বিষন্নতা, আশা, আকাঙ্ক্ষা সব একসাথে উঁকি মারে।
বইঃ একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য। লেখকঃ ওবায়েদ হক। পৃষ্ঠাঃ ১৪৫
এইসব নিছক গল্প? নাহ! গল্পগুলো রূঢ় বাস্তবতার — অপ্রাপ্তির — স্বার্থপরতার — বিষাদমাখা জীবনের — যে জীবন ফড়িংয়ের — প্রতিনিয়ত দেখি, কিন্ত সেইসব ফড়িংরূপী মানুষের গল্পগুলো কি জানি? ওবায়েদ হক মানুষ এবং তাঁর জীবনকালকে গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ কিছু সংলাপ / চরিত্রদের ভাবনা সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়৷ কয়েকটা গল্প পড়ে মনে হলো, লেখক কোনো মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব গল্পের বয়ান স্রেফ নিজস্ব শব্দবিন্যাসে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন৷ কত সুন্দরভাবে একেকটি চমৎকার গল্প বলে গেলেন৷ প্রিয় কিছু গল্প — একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা, উপহার, অসুখ, ফ্যাকাশে লাল ফুল৷
কামরাঙ্গা বোমা আর নেপথ্যে নিমকহারাম-এই দুই বইয়ের মাঝে কামরাঙ্গা বোমাই বেশি প্রিয়। কি গল্প একেকটা!! পিডিএফ পড়ার পর চিন্তা করছিলাম, এই বই যদি রিপ্রিন্ট না হয় তবে দরকার হয় পিডিএফ থেকে প্রিন্ট করায়ে বইটা আমার সংগ্রহে রেখে দিব। যাক! ওই অকাজটা আর করতে হয়নি।
ওবায়েদ হক সমাজের নিচুস্তরের মানুষের গল্প বলেন। জীবনের নিমর্মতার গল্প বলেন। জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়া মানুষের গল্প বলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসকে টেক্কা দিতে যাওয়া মানুষের কুৎসিত দিককে তুলে ধরেন তার গল্পে।
এই গল্পসংকলনটা প্রায় বছরখানেক ধরে পড়লাম। প্রত্যেকটা গল্প জমিয়ে রেখে পড়লাম। প্রত্যেকটা গল্প পড়ে কিছুক্ষণ থ মেরে বসে থাকলাম, নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। এত সুন্দর লেখনী, এত নির্মম বাস্তবতা। যেকোনো গল্পসংকলনের একেকটা গল্প সাধারণত একেক মানের হয়ে থাকে। কিন্তু ওবায়েদ হকের জাদুকরী লেখনীতে প্রতিটা গল্পই অসাধারণ ছিলো। 'নীল পাহাড়' পড়ে তৃপ্তি পেয়েছিলাম। এই গল্পসংকলন পড়ে রীতিমতো ভক্ত হয়ে গেলাম লেখকের।
◽ওবায়েদ হক বর্তমানে পাঠকদের কাছে এক জনপ্রিয় নাম। লেখক তার লেখনী দিয়ে অর্জন করেছেন বেশ সুখ্যাতি। তার উপন্যাস পড়ার সুযোগ এখনো আমার হয়নি তবে তার আগেই লেখকের ছোটগল্প পড়ার সৌভাগ্য হয়ে গেলো। একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য বইটি মূলত লেখকের দুই বইয়ের মিলন যেখানে দুটি গল্পগ্রন্থকে একীভূত করা হয়েছে। কিছু গল্প ত্যাজ্য করার ফলে বাদ পড়েছে। বইটিতে গল্পগুলো লেখকের বিবর্তনকে তুলে ধরে কেননা রচনার সময়কাল অনুযায়ী ক্রম সাজানো হয়েছে।
◽বইটিতে মত ১৬ টি গল্প আছে। ১৬ টি গল্পে নির্দিষ্ট কোনো সময়কাল, নির্দিষ্ট কোনো বিষয় উঠে আসেনি। তবে যেই বিষয়টি প্রবলভাবে উঠে আসে তা হলো লেখকের মানব জীবনবোধের প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টিপাত। লেখক যেনো অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মানুষকে এবং তাদের জীবনকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। এতটা তীব্র, এতটা নিগূঢ়। প্রত্যেকটা গল্পে আবেগ-অনুভূতির সাথে বাস্তবতার মিশেল বুকে মোচড় দেয়, চাপা কোনো এক কষ্টের সঞ্চার করে। লেখক যেনো চরিত্রগুলোকে তুলে এনেছেন আপনার আমার মধ্য থেকেই। আর গল্পের চরিত্রগুলো কেউ নিখুঁত নয়, অপটু, আপনার আমার কিংবা প্রতিদিনকার রাস্তায় হেঁটে যাওয়া আট দশটা মানুষের মতোই। কেউ নায়ক নয়, আবার কেউ খলনায়কও নয়। যখন জীবন তাদের যা হতে বাধ্য করেছে তারা তাই। কি অসাধারণ লেখনী! কি নিখুঁত গল্প বলার স্টাইল! প্রতিটি গল্পই খুব ভালো লেগেছে কিন্তু আলাদা করে নাম বললে ব্যক্তিগতভাবে "ছোঁয়া", "উপহার", "আংটি", "নিমকহারাম" ও "বিসর্জন" এই পাঁচটি গল্প মনে একবারে দাগ কেটে গেছে।
◽বইটির প্রচ্ছদ নিয়ে কিছু না বলে শেষ করা যায় না। কি সুন্দর, নান্দনিক এবং নজরকাড়া প্রচ্ছদ!
'..... সফল ভালোবাসগুলো মরে যায় সন্দেহে, নিগ্রহে, বাস্তবতায় পিষ্ট হয়ে । ব্যর্থ ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাকে অভিযোগে,অভিশাপে, দীর্ঘশ্বাসে কিংবা লুকিয়ে রাখা একফোঁটা চোখের জলে ।'
📄 'উপন্যাস' লেখা বেশ কঠিন সাহিত্যচর্চা বলে আমার মনে হয় । কিন্তু তার চেয়েও শক্ত কাজ বোধহয় 'ছোটগল্প' লেখা । খুবই স্বল্প পরিসরে, অল্প শব্দসংখ্যায় চরিত্র-গঠন, সেই চরিত্রের ওঠা-পড়া, এবং পরিণতি পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে হয় । আবার গল্পের সমাপ্তি এমনভাবে করতে হয় যেন সেই পরিসমাপ্তি পাঠককে রীতিমতো স্তব্ধ করে, তার কল্পনাশক্তিকে উস্কে দেয়... তবেই সেটি একটি সার্থক ছোটগল্প বলে বিবেচিত হয় । তাই 'প্রকৃত' ছোটগল্পকে আমি উপন্যাসের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী বলেই মনে করি ।
📝 'ওবায়েদ হক' নামটি বর্তমানে দুই-বাংলার পাঠকদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম । এই লেখকের 'নীল পাহাড়', 'জলেশ্বরী', 'তেইল্যা চোরা' ইত্যাদি উপন্যাসগুলি সীমানা পেরিয়ে এই দেশের পাঠকদের হাতে পৌঁছেছে এবং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে তা বলাই বাহুল্য । তাই কৌতূহল জাগে 'ঔপন্যাসিক' ওবায়েদ হকের লেখা 'ছোটগল্প' গুলি ঠিক কতটা সুন্দর ? জানতে ইচ্ছে হয়, কেমন ছিল লেখকের একদম শুরুর দিকের লেখাগুলি ? সেই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা পাওয়া যায় এই ছোটগল্প সংকলনটিতে ।
🖊️ বইটির ভূমিকায় লেখক বলেছেন - "এই বইটি মূলত দুটি বইয়ের মিলন । দুটি গল্পগ্রন্থকে একীভূত করা হয়েছে । কিছু গল্পকে ত্যাজ্য করেছি, সেগুলো বাদ পড়েছে । রচনার সময়কাল অনুযায়ী গল্পগুলোর ক্রম সাজানো হয়েছে । তাতে একজন লেখকের বিবর্তন আরো স্পষ্ট হবে ।"
📄 বইয়ের ১৬টি গল্প কোনো নির্দিষ্ট সময়, সমাজ বা বয়সের প্রতিনিধিত্ব করে না । আলাদা আলাদা কাল, পরিবেশে কিছু নির্দিষ্ট মূল্যবোধের কাহিনী এতে উঠে এসেছে । সহজ-সরল, রোজকার ঘটনার মধ্যে দিয়ে গল্পগুলি পাঠক-মনে অসামান্য কিছু চিন্তার খোরাক যোগায় এবং গল্পের শেষে আচমকা মোচড় পাঠককে স্তব্ধ করে দিয়ে গল্পগুলিকে অনবদ্য করে তোলে ।
📄 এইগুলি কি নিছকই গল্প ?
নাহ ! গল্পগুলো রূঢ় বাস্তবতার, অপ্রাপ্তির, স্বার্থপরতার, বিষাদমাখা জীবনের । এই সংকলনের প্রত্যেকটি গল্পের মধ্যে যে বিষয়টি সাধারণ সেটা হল 'অপ্রাপ্তির বেদনা' । গল্পগুলো পড়তে গেলে অজান্তেই মন খারাপ হয়ে ওঠে, একপ্রকার বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয় ।
📝 গল্পগুলি পড়ে বোঝা যায় লেখক 'মানুষ এবং সমাজ' কে কী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন । আমাদের পারিপার্শ্বিক সমাজের নানা বিচিত্র চরিত্রের মানুষদের নিয়েই তৈরি হয়েছে প্রতিটি কাহিনীর বুনিয়াদ । গল্পগুলির প্রেক্ষাপট ও চরিত্র-গঠন অতি সাবলীল ও স্পষ্ট । এর ফলে দৃশ্যগুলি চোখের সামনে ছবির মতো ভাসতে থাকে এবং অনুভূতির সবকটি স্তরে ছুঁয়ে যায় লেখকের লেখনী । কয়েকটি গল্প পড়ে মনে হয়, লেখক কোনো মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব গল্পের বয়ান স্রেফ নিজস্ব শব্দবিন্যাসে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন ।
🔻 এই গল্প সংকলন প্রকাশ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই 'অরণ্যমন প্রকাশনী'কে । সবসময়ের মতো এই বইয়েরও প্রোডাকশন্ খুবই সুন্দর । কিন্তু যদি গল্পগুলির শেষে রচনার সময়কাল উল্লেখ থাকতো তাহলে লেখকের বিবর্তন সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা আরও স্বচ্ছ হতে পারতো বলেই আমার মনে হয় ।
🔻 পরিশেষে এটাই বলবো, যারা 'ওবায়েদ হক'এর 'নীল পাহাড়', 'জলেশ্বরী' ইত্যাদি পড়েছেন এবং মুগ্ধ হয়েছেন তারা অনুগ্রহ করে এই বইটি পড়ে দেখুন, লেখককে নতুন করে আরো একটু চিনবেন ।
ছোট গল্প খুব একটা পড়া হয় না।কিন্তু এই বই পড়ে মনে হলো আরো পড়া দরকার। প্রতিটি গল্প ভালো লেগেছে।গল্পগুলো ছোটো কিন্তু স্বাদ দেয় বড়ো উপন্যাসের ❣ প্রতিটি গল্পই কিছুনা কিছু শিক্ষা দিয়ে যাবে। সমসাময়িক, বাংলাদেশের যুদ্ধ, ভুমিকম্পে গার্মেন্টস ভাঙন,মনুষ্যত্ব, ভুল,নির্মমতা,আমাদের জীবন-প্রায় সবকিছুই উঠে এসেছে গল্পগুলোতে। যুদ্ধের গল্পগুলোতে গায়ে কাঁটা দেয়-মনে হয় আমার সামনে ঘটছে সেসব নৃশংসতা- তাণ্ডব। ছোঁয়া,আংটি,ভূল সাক্ষাৎ, ফ্যাকাসে লাল ফুল,নিমকহারাম -গল্পগুলো নজর কেড়েছে বেশি।ছোট গল্প পড়ে কান্না আসবে কখনো চিন্তাও করিনি।
ইদানীং কী যে হয়েছে আমার, জানিনা। বইয়ের পৃষ্ঠায় মন থাকতে চাচ্ছে না। একরকমের অস্থিরতার মাঝে দিন কাটাচ্ছি। সে যাইহোক, বইয়ের সঙ্গ যে একেবারে ছেড়ে বসে আছি তাও না। উপন্যাস পড়ছি না। কারণ একটি ঘটনা�� পরিক্রমা দীর্ঘসময় ব্যাপি পড়ে যাওয়ার মতন ধৈর্যের অভাব দেখা দিয়েছে আমার মাঝে। সে জন্য সাহায্য নিয়েছি ছোটগল্পের। এখানে কোন আবদ্ধতা নাই। একটা গল্প পড়ে চাইলেই বইটা ফেলে উঠে যেতে পারি। মনের মাঝে কোন পিছুটান থেকে যায় না।
বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে একটা পরিচিত নাম ওবায়েদ হক। দারুণ সব গল্প-উপন্যাস লিখে পাঠকমন জয় করে নিতে তিনি যথেষ্টই সফল হয়েছেন বা হচ্ছেন। ওনার লেখা তেইল্যা চোরা উপন্যাসটা শেষ করে এত ভাল লাগছিল, মনে মনে ভাবছিলাম হয়ত এবছরের পড়া টপ ৫ বইয়ের মাঝে এটা স্থান করে নিবে অবশ্যই। লেখকের প্রতি expectation ও বেড়ে যায়৷ এর ধারাবাহিকতায় আজ শেষ করলাম ওনার লেখা "একটি শাড়ি এবং কামরাঙ্গা বোমা ও অন্যান্য" গল্পগ্রন্থটি।
বইটিতে সর্বমোট ১৬ টি গল্প আছে। প্রতিটি গল্পের আকারই ছোট ছোট। কিন্তু গল্পগুলার মনস্তাত্ত্বিক দিকটা ব্যাপক। ছোট একটা গল্প শেষ করে, এর ইন্ডিং আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে দীর্ঘক্ষণ। বইটি শেষ করে আমি কনফিউজড বর্তমানে। আমার কাছে কেমন লাগল, জানিনা। সুখপাঠ্য? বইটি নির্দ্বিধায় অসাধারণ। কিন্তু সুখপাঠ্য হয়ত না। কারণ প্রায় প্রতিটা গল্পেই লেখক যে বিরহ মিশিয়েছেন.. একে সুখপাঠ্য বলতে আমি পারব না বরং দুঃখপাঠ্য বলা চলে।
সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একি লাইনে দাড় করিয়ে জীবনের যে নিষ্ঠুরতাকে লেখক তুলে ধরেছেন তা পাঠক পড়তে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়বে৷ লেখক ১৬টি গল্পকে ১৬ রকম করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। হতাশা, বিষন্নতা, আক্ষেপ, বিশ্বাসঘাতকতা, মৃত্যুর মতন সিরিয়াস ইলিমেন্ট গুলাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন বইটা শেষ করে ভিতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস অনুভব করবে পাঠক।
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা লেখক : ওবায়েদ হক প্রকাশক : অরণ্যমন মূল্য : ২০০/-
২০২৫ সালের ৬ নং বই এবং ৪ নং গল্প সংকলন, আমার খুব প্রিয় লেখক ওবায়েদ হকের গল্প সংকলন "একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা" পড়লাম। ১৬টি ব্যতিক্রমী ও মৌলিক গল্পের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই গ্রন্থটি।। অনেকদিন আগেই বইটি সংগ্রহ করে রেখেছিলাম পড়া হয়ে ওঠেনি, আর যখন পড়া শুরু করলাম হক সাহেব লেখনীর মাধ্যমে পুরোটা সময় হিপনোটাইজ করে রেখেছিলেন।। প্রতিটি গল্প যেমন বিষয়বৈচিত্রে মহা- শক্তিশালী তেমনি ধারালো বিশ্লেষণের অধিকারী।। মোট ১৬টি গল্পের মধ্যে আমি আমার পছন্দের কয়েকটি গল্প নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করে রাখলাম।।
⭐⭐ প্রায়শ্চিত্ত - কামরুল সাহেবের সবকিছু থাকার পরেও কি একটা নেই সেই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে।। শান্তির ঘুম তিনি ঘুমাতে পারেননি কতদিন হয়ে গেল।। অতীতের এক পাপ তাকে ভিতর থেকে পুড়িয়ে মারছে।।আত্ম গ্লানির দহন নরক যন্ত্রণার সমতুল্য, না দেয় বাঁচতে না দেয় মরতে।। এই গল্প কামরুল সাহেব স্মৃতিচারণ করতে করতে এগিয়ে গেছেন প্রায়শ্চিত্ত করার পথে।।
⭐⭐ একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা - একটি শিশুর দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানুষের হাহাকার এবং নিজের বাবা মাকে খুঁজে বার করার আপ্রাণ চেষ্টা সত্যি ভয়াবহ।।
⭐⭐ ছোঁয়া - বৃদ্ধা মালতী দাস অনেক কষ্টে লেখা পড়া শিখছে।। এই বয়সে এসে লেখা পড়া শেখার ইচ্ছা কি শুধুমাত্র ভাষা শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা নাকি হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুলতা তা বোঝা যায় না।।
⭐⭐ উপহার - দরিদ্র প্রতিবন্দি আলালকে বাঁচানোর প্রবল চেষ্টা করতে থাকে হতদরিদ্র বাবা মা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাবা কালামমিয়া সর্বস্ব দিয়ে ছেলে আলালকে তার মা উপহার দেয়।।
⭐⭐ অধর্ম - মোতালেবমিয়ার সম্মানের কাঙালপনা নিদারুনভাবে উপস্থাপনা করেছেন লেখক। কিন্তু ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে ভাবি পুত্রবধূর মৃত মার ফোটোর দিকে তাকিয়ে সব হিসেব ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।।
⭐⭐ হয়তো - প্রতি অমাবস্যায় গাছটি কাঁদে।। আগ্রহ দমন করতে না পেরে একাই বেরিয়ে পরে রহস্যের খোঁজে।।
⭐⭐ ফ্যাকাশে লাল ফুল - ছোট কুসুমের একটি মাত্র জামা, পড়ার সৌভাগ্য হয় ঈদে নয় শীতে।। বড় হওয়ার সাথে সাথে সে বুঝতে পারে তার জামার একটি অত্যন্ত প্রয়োজন।।সমস্যার মধ্যে তৈরি হয় সমস্যা, মা এখন আর আগের মত কাজ করতে পারছে না, আর বাবা শহরে গেছে প্রায় অনেকদিন,খোঁজ খবর নেই।। কুসুমের হঠাৎ বড় হওয়ার গল্প।।
⭐⭐ চশমা - এই গল্প প্রকৃতির বৃষ্টি আর মনের ভেতরের বৃষ্টির যে মেলবন্ধন দেখানো হয়েছে তা ভোলার নয়। হারিয়ে যাওয়া মানুষকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া এবং আবার হারিয়ে ফেলার যে গভীর বাস্তব যন্ত্রনা দেখানো হয়েছে, তা শুধুমাত্র ওবায়েদ সাহেবই পারেন।।
⭐⭐ বুড়ো দাঁড়কাক মরেনি - অতীতের পুরোনো কোনো ইচ্ছা যদি হঠাৎ করেই ফিরে আছে? এত বছর পর বেলী পাগলিকে দেখে মনে পড়ে যায় অতীত, উদ্যেশ্য আজ ভিন্ন তবে অতীতের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চায়।।
⭐⭐ বিসর্জন - বৃদ্ধা লক্ষণকে সন্তানরা ফেলে পালিয়ে গেছে নিজেরা পাক বাহিনীর হাট থেকে বাঁচতে।। বাঁচার তাগিদে বেরিয়ে পড়ে বৃদ্ধাও।। জীবন রক্ষাকারী হিসেবে আগমন ঘটে কিশোরী দুর্গার।।
🎭🎭 পাঠ প্রতিক্রিয়া -
এই সমগ্রের প্রত্যেকটি গল্পের মধ্যে একটা বিষয়ের মিল তা হল বিষন্নতা ও না পাওয়ার বেদনা।। গল্প গুলো পড়তে গিয়ে অকারনেই মন খারাপ হয়ে ওঠে।। একটি গল্প শেষ করার পর আর একটি গল্পে প্রবেশ করা সহজ ছিলনা। প্রতিটি গল্প তার নিজস্ব প্রভাব এতটাই পাঠকমনে বিস্তার করেছে যে আমাকে বেশ কিছুটা সময় নিতে হয় নিজেকে বাস্তব অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।। কোনো গল্পই পূর্ব অনুমানের সুযোগ দেননি লেখক, লাস্ট লাইন বা লাস্ট প্যারাগ্রাফ গুলো পড়ে বাস্তবে ফিরে আস্তে আহত হতে হয়েছে বারবার।। বেশিরভাগ গল্পের প্রেক্ষাপট ও চরিত্রগুলোর আদানপ্রদান অতি সাবলীল ও স্পষ্ট।। দৃশ্যগুলো চোখের সামনে জলের মত ভাসতে থাকে।। অরণ্যমন প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর প্রচ্ছদসহ একটা আদ্যোপান্ত অপূর্ব উপস্থাপনার জন্যে।।
বইটা পড়ার পর একটু ওভাররেটেড বই-ই মনে হল আমার। কয়েকটা গল্প দারুন। একবারে তাক লাগিয়ে দেয়ার মত। স্পেশালি যেগুলা তে টুইস্ট আছে। কিন্তু যে গল্পগুলা দুঃখের সে গল্পগুলার কয়েকটা আমাকে টাচ করে নাই। বোধহয় আমি মানুষ না, রোবট।
অনেক অনেক দিন আগের কথা, কোনো এক সান্ধ্যকালীন রাতে- নাম জানা এক সামাজিক মাধ্যমের বইসংক্রান্ত গ্রুপের কোনো এক অজনপ্রিয় পোস্টের ভেতর তিনটা সাধাসিধে জাস্ট 'লাইক' সংবলিত একটি কমেন্টে আমার চোখ আটকে গেলো। তখনো অনুভূতি প্রকাশের জন্য নানান রকম অভিব্যক্তি, হৃদয় সংবলিত কিছুর জন্ম হয়নি। লাইক ছাড়াও অনূভুতি প্রকাশ করতে মানুষ দুটো কথা লিখতো। তো সেই কমেন্ট যিনি লিখেছেন, তিনি শুধু লিখেছেন 'একটি শাড়ি এবং কামরাঙা ব��মা'। কিন্তু এ কেমন কমেন্ট? কন্টেক্সট কিধার হ্যায় বলে মর্মার্থ বুঝতে পোস্টে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম কোনো একটি গল্পের কথা বলা হচ্ছে। যেই গল্পটি পড়ে ওই ব্যক্তি অভিভূত হয়ে গেছেন। যেহেতু তখন রিলস ছিল না, ইন্টারনেটে সার্চ করে সহজেই সেই গল্পটি আমি পেয়ে গেলাম এবং পড়ার পর কেদারাসুদ্ধ নড়েচড়ে বসলাম! গল্প পড়া হলো, অভিভূতও হওয়া হল, কিন্তু লেখকের নাম আমি খুঁজে পেলাম না। বেশ কষ্টেসৃষ্টে শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম লেখকের নাম ওবায়েদ হক। তিনি টুকটাক গল্পটল্প লিখেন। আপাতত আমার এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত থাকতে হবে, সামনেই বই প্রকাশিত হবে। তো সেইযে নামটা আমি আবিষ্কার করলাম, তার বই পড়বো বলে সেই কবে অদ্ভুত নামের সেই বইটা কিনে আনলাম, এরপর আর পুরোপুরি কখনোই পড়া হলনা। আজ অনেকদিন পর মনোযোগ দিয়ে পুরো বইটাই পড়লাম, এবং একজন লেখকের উত্থানের সময়টা খুব আনন্দ নিয়ে অনুভব করলাম।
ওবায়েদ হক ��খন অত্যন্ত পরিচিত এবং সম্ভাবণাময় নাম। যদিও লেখকের নতুন লেখাগুলোতে আমি আর তেমন আনন্দ পাইনা, যতটা এই ছোটগল্পের বইটিতে পেলাম। ওবায়েদ হকের ছোটগল্পের সিগনেচার হল- প্রচন্ড আবেগঘন ছোট ছোট গল্প। সহজ সরল ভাষায়, এড়িয়ে যাওয়া কোনো টপিকে, অত্যন্ত সুচারু দৃষ্টিতে দৃশ্যপট, চরিত্র পর্যবেক্ষণ করে লেখা। প্রতিটি গল্পই একটা পরিণতিতে গড়ায়, ওপেন এন্ডিং থাকে খুব সামান্যই। এবং সেই পরিণতি এতটাই তীব্র যে বিহবল লাগতে শুরু করে। বইয়ের শুরুতে লেখা আছে- সময়কাল অনুযায়ী গল্পগুলোর ক্রম সাজানো হয়েছে, তাতে একজন লেখকের বিবর্তন আরো স্পষ্ট হবে। খুবই বোল্ড এবং কনফিডেন্ট স্টেইটমেন্ট। ভালো লাগলো স্টেইটমেন্টটার সার্থকতা খুঁজে পেয়ে। গল্প গুলোর আদতেই সময়ের সাথে পরিপক্কতা বেড়েছে। প্রথম গল্পটা কুড়িয়ে পাওয়া ভাগ্য নিয়ে একটা চমক দিয়ে শুরু হয়, এরপর মুক্তিযুদ্ধের অত্যন্ত স্পর্শকাতর দুটি গল্প। অক্ষরজ্ঞান নিয়ে গল্পটা আমাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। লেখকের বিষয়বস্তু নির্বাচন চমৎকার, প্রতিটি গল্প পড়েই বলতে হয়। প্রতিবন্ধী সন্তান, রানাপ্লাজার মত বিপর্যয়, না পাওয়া সৌভাগ্য, কোন এক নাজমা বোর্ডিং এ ছেলের সাথে দেখা ইত্যাদি নানান ধরণের নানান শ্রেণীর গল্প আছে বইতে। গ্রামীনব্যাংক এর কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে একটা গল্প আছে, গল্পটির নাম 'আংটি'। খুবই অস্বস্তিকর, কিন্তু পরিচিত গল্প। এই পরিচিত পরিচিত গল্প ভাবটাও লেখকের সিগনেচার। [যাহোক, সরাসরি গ্রামীনব্যাংক নাম উচ্চারণ করায় আমার কিছু বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছা হচ্ছে, সময় পেলে করতে চাই।]
এখানে 'অসুখ' শিরোনামের মত গম্ভীর, অন্ধকার গল্প যেমন আছে, 'ফ্যাকাশে লাল ফুল' নামে বুক এফোড়ওফোড় করে দেয়া এক শিশুর কষ্টের গল্প আছে; তেমনি 'হয়তো' নামের হাস্যরসের আবহে লেখা লৌকিক গল্পের সাবপ্লটে ভৌতিক গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে 'অধর্ম' নামের একটি গল্প। ওবায়েদ হক কে এরকম ভাবে আবার পড়তে চাই সামনে কখনো। লেখক যেন নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে না ফেলেন সেটাই কাম্য। যারা ওবায়েদ হক এখনো পড়েননি, এটা দিয়েই শুরু করুন।
‘একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য’ বইটি ওবায়েদ হকের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ। এখানে সবচেয়ে ভালো দিকটি হলো ক্রম অনুসারে যেই গল্পগুলো আগে লেখা হয়েছে সেগুলো আগে রেখে গল্প সাজানো হয়েছে। এতে করে সত্যিকার অর্থেই একজন লেখকের উন্নতি কিংবা রূপান্তর স্পষ্ট হয়। তেমনি ভাবে গল্পের সঙ্গে সঙ্গে ওবায়েদ হকের রূপান্তর এখানে বেশ স্পষ্ট।
বইটির প্রথম গল্পেই সেই ইঙ্গিত পাই। ইকরাম নামের একজন ব্যক্তি রাস্তা থেকে অনেক টাকা কুড়িয়ে পেয়ে ধনী হয়ে যান। তিনি খুব দ্রুত জানতে পারেন এই টাকার আসল মালিক মুলত নিজেদের অপহরণকৃত ছেলেকে মুক্তি করতে এই টাকাগুলো মুক্তিপন হিসেবে রেখে গিয়েছিলো। এবং অপহরণকারীদের পর্যন্ত টাকাগুলো না পৌছানোর কারণে ছেলেটির লাশ পাওয়া যায়। আত্মহত্যা করতে করতে ইকরাম ভাবেন তার প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে হতে পারে? বেশ দুর্দান্ত একটি প্লটের গল্প মনে হচ্ছিলো ঠিক ঠাক দাঁড়ায়নি।
অথচ বইটির শেষের গল্পটি পড়লে আপনি চমকে যাবেন। লক্ষণ নামের বয়ঃপ্রাপ্ত অসুস্থ্য একজন মানুষকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পায় দুর্গা নামের একজন কিশোরী। তাকে সেবা করে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করে মেয়েটি। তখন বৃদ্ধ ভাবে হয়তো এই মেয়েটিই তার কাছে দেবী দুর্গা। তিনি কিশোরী দুর্গার কাছে হাতজোর করে জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ দেন। একদিন পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বাড়িতে এলে তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য মেয়েটিকে তাদের হাতে তুলে দেন। এবং তার জীবন বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য আবারও দুর্গাকে ধন্যবাদ দেন। কিন্তু সেটি কোন দুর্গা তা আর বোঝা যায় না।
প্রথম ও শেষ গল্পের গঠনে আকাশ-পাতাল তফাত মুলত লেখক ওবায়েদ হকের রূপান্তরের এক অনন্য উদাহরন। তার পরবর্তী লেখাগুলো কীরূপ শক্তিশালী হতে চলেছে তার ইশারা পাই আমরা এই বইতে। অন্য একটি গল্পে আমরা দেখতে পাই, শিশু রমজানের পঙ্গু হবার আকুতি যেন পঙ্গু হয়ে অধিক ভিক্ষা সে পেতে পারে। ভাগ্যের পরিক্রমায় সে পঙ্গু হয় ঠিকই কিন্তু বেঁচে আর ফেরে না। কেউ এই ঘটনা মনে রাখলেও তার সঙ্গী দু’টো কুকুর বিষণ্নভাবে ডেকে উঠে বারবার।
এই বইটির সব গল্পই বেশ দুর্দান্ত প্লটে লেখা। কিন্তু প্রথম দিকের বই হওয়ায় সেগুলো খুব দারুন গল্প হয়ে ওঠেনি। তবে যে কোন পাঠক এই বইটি পড়ে আনন্দ পাবেন এবং বর্তমান সময়ের শক্তিশালী ওবায়েদ হকের রূপান্তরের স্বাক্ষী হতে পারবেন বলেই আমার মনে হয়।
******************* ***************
Obayed Haque's Carambola bomb
The book ‘Ekti Shari Ebong Kamranga Boma O Onnanyo’ (A Sari and Carambola Boma and Others) is a storybook written by Obayed Haque. The best part is that the stories are sorted in order of precedence. In this way, the improvement or transformation of a writer in the true sense becomes clear. In the same way, the transformation of Obaid Haque along with the story is quite clear here.
I find that hint in the first story of the book. A man named Ekram got rich by picked up a lot of money from the streets. He knew very quickly that the real owner of the money had left the money as a ransom to free his abducted son. And the boy's body was found because the money did not reach the kidnappers. Going to commit suicide, Ekram thought of atonement. The story of a great plot didn't seem right.
But when you read the last story of the book, you will be shocked. A teenage girl named Durga picks up a sick man named Lakshman from the road. The girl tried to heal him by serving him. Then in old age maybe this girl is Goddess Durga to him. He thanked the teenager Durga for saving her life. One day when the Pakistani invaders came home, he handed the girl over to save his own life. And thanked Durga again for saving her life. But it is no longer understood which Durga it is.
The difference between the structure of the first and the last story is a unique example of the transformation of the writer Obayed Haque. In this book, we get a hint of how strong his later writings are going to be. In another story, we see that the child name Ramjaan's desire to be crippled so that he can become crippled and get more begging. In the course of destiny, he is crippled, but he never survives. Even if one remembers this incident, his companion two dogs repeatedly barking sadly.
All the stories in this book are written with a great plot. But since they were early books, they did not become great stories. But I think any reader will enjoy reading this book and witness the transformation of the powerful Obayed Haque of the present time.
‘সফল ভালোবাসাগুলো মরে যায় সন্দেহে, নিগ্রহে, বাস্তবতায় পিষ্ট হয়ে। ব্যর্থ ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাকে অভিযোগে, অভিশাপে, দীর্ঘশ্বাসে কিংবা লুকিয়ে রাখা এক ফোঁটা চোখের জলে।’ (চশমা)
আমার পড়া ওবায়েদ হকের দ্বিতীয় বই। উনার লেখা যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হই। পছন্দের গল্প বেছে নেয়া কিছুটা কঠিন। কোনো গল্পকে ভালো বললে অন্য গল্পের প্রতি যেন অবিচার করা হয়। তার মধ্যেও ছোঁয়া, উপহার, প্রায়শ্চিত্ত, চশমা বেশি ভালো লেগেছে।
২০১৩/১৪ এর গল্পগুলোর পড়ার পরে ২০১৬/১৭ তে লেখা গল্পগুলো পড়তে গিয়ে বোঝা গেলো মাঝের এই একটি বছরে তাঁর লেখায় একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। প্রথমদিকের ঈশপের গল্প লেখার মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়ে হয়েছেন অনেক পরিণত।
সবগুলো গল্পেই মানুষের প্রতি তাঁর মমতা আমাকে মুগ্ধ করে। সেই মুগ্ধতায় ক্ষমা পেয়ে যায় বেশ কিছু মাঝারি মানের গল্প।
বইয়ের একটা কি দুটো বাদে বাকি সব গল্পই অত্যন্ত ভালো। সব গল্পে আলাদা স্বাদ আলাদা অনুভূতি ❤। এটা আমার পড়া লেখকের প্রথম বই ছিলো। জলেশ্বরী আর তেইল্যা চোরা পড়া হয়নি এখনো। তেইল্যা চোরা সংগ্রহে আছে পড়ব শীঘ্রই।
সত্যিই খুব ভালো লাগা একটি বই। অনেকদিন এরকম বই পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। লেখক ওবায়েদ হকের বই এবারই প্রথম পড়া। আশা করছি তাঁর অন্যান্য বই খুব শিগগিরই পড়ে ফেলতে পারবো।
amazing stories. Previously I read two of his books, both showed promise but in the end didnt live up to their promises. This one however surpassed those. I think this guy will go a long way.
ডিকশনারীতে এত বিশাল শব্দটির অর্থ দেখাচ্ছে অসাধারণ, অনুপম, দুর্দান্ত । কিছুক্ষণ আগে ওবায়েদ হক এর ছোটগল্প সংকলন একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য পড়ে শেষ করলাম। ছোট গল্প সংকলন এর রিভিউ লেখার অসুবিধাটা হচ্ছে এখানে গল্পগুলো নিয়ে বেশি কিছু বলতে গেলে স্পয়লার দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার এ বইটি শেষ করবার পরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে বিশাল সাইজের কিছুও লিখতে ইচ্ছে করছে না। স্বল্প শব্দের মায়াবী বুননের মাধ্যমে লেখক আমার মনে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন আমার মনে হয় না তা পুরোপুরি প্রকাশ করে কিছু লিখবার মত সামর্থ্য আমার এখনো হয়েছে। তাই এই এক শব্দের রিভিউ - Supercalifragilisticexpialidocious
আমার পড়া লেখকের প্রথম বই ছিল 'নীল পাহাড়। বইটা পড়ে খুব ভালো লেগেছিল।এরপর উনার অন্যান্য বই পড়ার খুব আগ্রহ হলো। দ্বিতীয় বই হিসেবে পড়লাম 'একটি শাড়ী কামরাঙ্গা বোমা ও অন্যান্য'। নিসন্দেহে দারুন একটি বই। এই বইটিতে ১৬ টি ছোটগল্প আছে।প্রথম গল্পটির নাম হলো 'প্রায়শ্চিত'।সেটা পড়েই তকমা লেগে গেল। সব গল্প জুড়েই জীবনের হরফের। সাধারণ আবার অসাধারন। #reccomended
ওবায়েদ হকের লেখা নিয়ে বলার কিছু নেই শুধু পড়ে যেতে হবে। উনার লেখা প্রথম বই পড়েছি কাঙালসংঘ। এই বইটি মুলত দুইটি বইয়ের সমষ্টি। বইটিতে ১৬ টি ছোট গল্প আছে। একেকটি গল্প একেকক স্বাদের।
ওবায়েদ হকের লেখা বরাবরই খুবই সুন্দর, এই বইটিও বেশ ভালো ছিল। কিছু গল্প বেশি আকর্ষণীয়, কিছু একটু কম , তবে কোনোটাই পড়তে খারাপ লাগবে না। গল্পের সংকলন বইটিতে আমার সবচেয়ে পছন্দের ছোট গল্প হচ্ছে উপহার।
১৬ টি ছোট গল্প নিয়ে ১৩৬ পৃষ্ঠার একটা বই। চাইলে একসাথে পুরো বইটা শেষ করা যেত। তবে আমি করিনি। সাথে অন্য একটা বইও পড়ছিলাম। হঠাৎ করে বই খুলে যে গল্পটা এসেছে সেটাই পড়েছি। এভাবে একটু একটু করে পড়ে জেনেছি মালতী দাসের বৃদ্ধ বয়সে অ আ শেখার কাহিনী, মায়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে জয়নালের ছুটে বেড়ানোর গল্প, এক মায়ের ভুল সাক্ষাৎ, বাবার দেওয়া সেরা উপহার, রবীন্দ্রনাথের 'হঠাৎ দেখা' কবিতার মতো দুই প্রাক্তনের কথোপকথন। আর প্রতিটি গল্প পড়ে মনের অবস্থা হয় শঙ্খ ঘোষের কবিতার মতো, “মস্ত বড় অন্ধকারে স্বপ্ন দিল ডুব— বেঁচে থাকব, সুখে থাকব সে কি কঠিন খুব?”