‘যতক্ষণ সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিচ্ছ, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ততক্ষণ তোমাকে সহ্য করা হবে। যা করার সিস্টেমের ভেতরে ঢুকে করো, কিন্তু কোনোভাবেই সিস্টেমের বিরোধিতা করা যাবে না। প্রশ্ন করা যাবে না কাঠামো নিয়ে, বিশ্বব্যবস্থা আর সাম্রাজ্য নিয়ে। প্রশ্ন করা যাবে না হুবালের কর্তৃত্ব নিয়ে। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যের যুগে এটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ। অপরাধী বলে বিবেচিত হবার জন্য কিছু করার, এমনকি বলারও প্রয়োজন নেই, সিস্টেমের বিরুদ্ধে কোনো চিন্তা থাকাই যথেষ্ট। এসব চিন্তা অবৈধ, এসব চিন্তা অপরাধ। যে শরীয়াহর অনুসরণ কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ মানবজাতির ওপর ফরয করেছেন, যুগের হুবালের বিরুদ্ধে গিয়ে অ্যামেরিকান বিশ্বব্যবস্থার মোকাবেলায় সেই শরীয়াহ বাস্তবায়ন হোক এটা চাওয়া–কিছু করাও না, কিছু বলাও না–শুধু এটা চাওয়া অপরাধ। কিছু করার দরকার নেই, বলার দরকার নেই, চিন্তাটাই অপরাধ। থটক্রাইম। চিন্তাপরাধ।
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। দীর্ঘ এ পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু করছি ছোট্ট দুটি আলাপচারিতা দিয়ে।
. আলাপচারিতা-১ঃ
ঈদের পর সিলেটে এক প্রিয় ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা। কথায় কথায় সে জিজ্ঞাসা করলো 'চিন্তাপরাধ' পড়েছি কি না। আমি বললাম, "এখন পড়ছি"। সে তখন বইটির বেশ প্রশংসা করলো। বললো, "আমার পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর কিছু বই পড়ার ইচ্ছে ছিলো। নোয়াম চমস্কি, হান্টিংটন সহ অন্য কিছু লেখকের বই লিস্ট আউট করে রেখেছিলাম। কিন্তু 'চিন্তাপরাধ' পড়ে মনে হচ্ছে সেগুলো পড়ার আর প্রয়োজন নেই। আমার যা জানার বা বোঝার ছিলো সে প্রয়োজন মিটে গিয়েছে।" আমি মনে মনে বললাম, "সুবহান'আল্লাহ!"
. আলাপচারীতা-২ঃ
অফিসে নিজের ডেস্কে বসেছিলাম। হঠাৎ প্রিয় এক জুনিয়র কলিগ এসে হাজির। আমার ডেস্কে প্রায় সময়ই কোন না কোন বই থাকে। তখন ছিলো 'চিন্তাপরাধ'। বইটি নাড়া চাড়া করতে করতে সে বলে উঠলো, "ভাইয়া, আমরা তো বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলছি। কিন্তু এর একটি পাতা লিখতে গিয়ে লেখককে কতই না স্টাডি করতে হয়েছে। একটি পৃষ্টা লিখতে গিয়ে হয়তো তাকে পুরো ২/৩-টি বইই পড়ে ফেলতে হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ডকুমেন্টারী দেখতে হয়েছে।" আমি এর কোন জবাব দিতে পারলাম না। শুধু বললাম, "আল্লাহ তা'আলা দুনিয়া ও আখিরাতে লেখক ভাইয়ের শ্রমের উত্তম প্রতিদান দিন।"
. 'চিন্তাপরাধ' বইটি নিয়ে এ হলো আমার পরিচিত দুইজন পাঠকের লাইভ প্রতিক্রিয়া। তারা দু'জনেই বেশ সিরিয়াস ধারার পাঠক। আমার মতো হেজিপেজি কেউ না।
. সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যখন প্রথম জানলাম যে, প্রিয় একজন মানুষ আসিফ আদনান ভাইয়ের প্রথম বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে, তখন আমি অত্যন্ত ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আমার চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনে ভাইয়ের গবেষনাধর্মী লেখার বিশাল এক ভূমিকা রয়েছে। তাই তার লেখার প্রতি আমি বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবেই এক প্রকার ঋণী। লেখকের লেখাগুলোকে এক মলাটে পাওয়া তাই আমার জন্য ছিলো এক বাড়তি পাওনা।
. বইয়ের কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনার আগে এর নামকরণ নিয়ে কিছু বলা যাক। 'চিন্তাপরাধ' নামটি বেশ ভাবনার খোরাক জোগায়।
. বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে আমাদের মুসলিমদের চিন্তা-চেতনার অবস্হান আজ কোথায়? এক সময় অর্ধ জাহান শাসন করা মুসলিমদের চিন্তা-চেতনা আজ কোন সে কারাগারে বন্দী? ব্যক্তিগত, সমাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা রাজনৈতিক চর্চায় আমরা এখন কাদের মতবাদ বা চিন্তা-চেতনাকে অনুসরণ করছি?
. ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিমদের যেখানে রয়েছে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান, সেখানে আজ আমরা সেগুলোকে ভুলে অনুসরণ করছি মানুষের তৈরী কিছু ভ্রান্ত জীবন ব্যবস্হার। দীর্ঘদিন ধরে আমরা আউড়ে চলেছি অন্যের শেখানো বুলি, যেন আমরা সিনেমার কোন রোল প্লে করছি। স্ক্রিপ্টের বাইরে চিন্তা করার কোন স্বাধীনতা আমাদের নেই। আমরা মুসলিমরা যেন কোন পাপেট শো এর দড়ি বাঁধা পুতুল। পশ্চিমা মোড়লেরা আমাদের যেভাবে নিয়ন্ত্রন করবে আমরা সেভাবেই পরিচালিত হবো। আমরা যেন সেই রোবট যার রিমেট কন্ট্রোল রয়েছে অন্যের হাতে। রোবটের যেমন নিজস্ব কোন চিন্তাশক্তি নেই, আমাদের মুসলিমদেরও তেমনি নিজস্ব কোন চিন্তাধিকার নেই।
. এখানে কেউ ভিন্ন চিন্তা করলেই সে অপরাধী। আমরা মুসলিমরা যেন বাস করছি বিখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েলের বহুল পঠিত উপন্যাস 1984 এর সেই ডিসটোপিয়ান বিশ্বে। যেখানে বিশ্ব মোড়লেরা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে War is Peace, Freedom is Slavery, Ignorance is Strength। যেখানে যুদ্ধই শান্তি, মুক্তিই দাসত্ব এবং অজ্ঞতাই হচ্ছে শক্তির মূল। আর আমরা অন্ধের মতো সেটাকেই বিশ্বাস করে দিনাযাপন করছি। আমাদের মুসলিমদের আজ কোন চিন্তার স্বাধীনতা নেই। কোথাও চিন্তার স্বাধীনতা থাকলেও তা প্রকাশের অধিকার নেই। পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসনে আজ আমরা নিজ মস্তিস্কের কোটরেই বন্দী জীবন যাপন করছি।
. সংবিধানের অশুভ একালে আজ শরিয়াহ আইনের কথা বলা দোষনীয় অপরাধ। নারী স্বাধীনতার অশ্লীল এ সময়ে হিজাব-পর্দার থিওরী আজ হাস্যকর। বিজ্ঞানের আলোকিত এ যুগে কুরআন-সুন্নাহর চর্চা আজ মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ব্যাংক ও কালোটাকার এ দূর্ণীতিগ্রস্ত ব্যবস্হায় ইসলামী বায়তুল মালের কথা বলা আজ রীতিমতো অযৌক্তিক। ভ্যাট-ট্যাক্সের এ কালো অমানিশায় যাকাতের আলোর অন্বেষন আজ অবহেলিত। গণতন্ত্রের ফাঁপা বুলি আউড়ানো এ যুগে খিলাফতের তত্ত্ব আজ থার্ড ডিগ্রী মার্ডার কেইস। ধর্মীয় সম্প্রীতির এ ধূসর সময়ে জিহাদের ডাক দেয়া হচ্ছে সন্ত্রাস ও জন্গিবাদ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহীতা।
. কারণ, আমরা আজ আমাদের চিন্তা-চেতনাকে বন্দক দিয়ে রেখেছি আমাদের পশ্চিমা প্রভুদের কাছে। পশ্চিমা গুরুরা ইসলামের যে ভার্সন আমাদের চর্চা করতে বলে, তার বাইরে কোন কিছু চর্চা করা তাদের চোখে অপরাধ। তারা আমাদের যেভাবে চিন্তা করতে বলে, তার ব্যতিক্রম হলেই আমরা অপরাধী।
. আর 'চিন্তাপরাধ' বইটি আমাদের সেভাবেই চিন্তা করতে শেখায়, যা পশ্চিমাদের চোখে অপরাধ। এ বই আমাদের মননে এমন চিন্তার উদ্ভব ঘটায়, যা প্রশ্ন করে বসে পশ্চিমা সকল ধ্যান-ধারণার ভিত্তিকে। সেক্যুলারিজম থেকে শুরু করে বাক-স্বাধীনতা, নারী অধিকার থেকে শুরু করে সমকামি বা ট্রান্সজেন্ডার মুভমেন্ট- বইটি সব কিছুর বুদ্ধিবৃত্তিক ডাইসেক্টিং করে দেখিয়ে দেয় পশ্চিমা সমাজের ভন্ডামী ও অসারতা, তাদের চিন্তার মেকিত্ব। মানসিক দাসত্বের যুগে এ বই তাই 'চিন্তাপরাধ'।
. বইয়ের কাভার উল্টোলেই উৎসর্গ পত্রে গিয়ে পাঠক কিছুটা ধাক্কা খাবেন নিশ্চিত। উৎসর্গঃ ৩৩:২৩। প্রথমে একটু ধাঁধার মতোই মনে হয়। এমন সৃজনশীল ও অভাবনীয় উৎসর্গপত্র আমি আমার পাঠক জীবনে কখনও পাইনি। লেখক আল-কুরআনের ৩৩ নাম্বার সূরা সূরাতুল আহযাবের ২৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা'আলা যাঁদের কথা বলেছেন তাঁদেরকেই তার বইটি উৎসর্গ করেছেন। একবার দেখে নিই তাঁরা কারা-
"মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কতক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে (শাহাদাত বরণ) করেছে আর তাদের কতক অপেক্ষায় আছে। তারা (তাদের সংকল্প) কখনো তিল পরিমাণ পরিবর্তন করেনি।" - [সূরা আহযাব, ৩৩:২৩]
. সুবহান'আল্লাহ! আল্লাহ তা'আলা লেখকের কাজকে কবুল করুন ও তাকেও এই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন।
. বইটি সব মিলিয়ে ১৬ টি প্রবন্ধের সংকলন। প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধেই লেখক কোন না কোন পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার অসারতা প্রমান করতে সচেষ্ট হয়েছেন। কিংবা এটাই প্রমান করতে চেয়েছেন যে, সৃষ্টির আদিকাল থেকেই একটা গোষ্ঠী ইসলামের বিরোধীতা করে আসছে, মুসলিমদের শত্রু মনে করে আসছে, তার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। ইহুদী, মুশরিক সহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুখে যতোই সম্প্রীতির কথা বলুক না কেন, তলে তলে তারা ক্রুসেডের ধারাবাহিকতাই বহন করে চলেছে। একাদশ শতকে পোপ দ্বিতীয় আরবান ইসলামের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের সূচনা করেছিলো, পশ্চিমারা আজও সেই লিগ্যাসি বজায় রেখেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যড়যন্ত্র করে চলেছে। লেখক খুব সফল ভাবে, পশ্চিমা বিভিন্ন লেখকের রেফারেন্সের মাধ্যমে তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমান করেছেন।
. যুদ্ধংদেহী অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উন্মোচনকারী প্রথম প্রবন্ধ 'সহস্র সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল' থেকে কিছু অংশ পড়ে নেয়া যাক-
"অ্যামেরিকান ঐতিহাসিক জন লুই গ্যাডিস দেখিয়েছেন ২০০২ সালের বুশ ডকট্রিনের সাথে অ্যামেরিকার ষষ্ট প্রেসিডেন্ট জন কুইন্স��� এ্যাডামসের ১৮১৮ সালের 'সম্প্রসারণেই নিরাপত্তা' (expansion is the path to security) তত্ত্বের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। দুটোর মূল বক্তব্য একই। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য কোন প্রতিদ্বন্ধী উদয় হবার আগেই তাকে আক্রমন করা। আগাম যুদ্ধের এ দর্শন অনুযায়ী দুই শতাব্দীর বেশী সময় ধরে ঘরে-বাইরে কাজ করে যাচ্ছে অ্যামেরিকা। আণবিক গণহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া ট্রুম্যান থেকে শুরু করে শুধু ২০১৬-তেই মুসলিম বিশ্বের উপর ২৬০০০ এর বেশী বোমা ফেলা আর ড্রোন হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রেসিডেনশিয়াল 'ক্রসফায়ার' চালানো শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শান্তিকামী যুদ্ধাপরাধী বারাক ওবামা পর্যন্ত, মেরিলিন মনরোর প্রেমিক ও ভিয়েতনামের কসাই নিপাট ভদ্রলোক জন এফ. কেনেডি থেকে শুরু করে পর্ন অভিনেত্রী আর পতিতাপ্রেমিক গোঁয়ারগোবিন্দ ট্রাম্প পর্যন্ত- একই সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রত্যেক অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট। নাম বদলেছে, মুখ বদলেছে, বদলেছে শ্লোগান; কিন্তু বদলায়নি অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ঠান্ডা মাথায় ধ্বংসযজ্ঞের পলিসি।"
. পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কালে-কালে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তারে যাকেই শত্রু গন্য করেছে তাকেই আক্রমন করে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তা সে হোক উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা কিংবা অন্য কোন ভূমি। আর এভাবেই পশ্চিমারা সামরিক আগ্রাসনে মাধ্যমেই বিশ্ব কতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। আর মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে দীর্ঘকালীন এক চিন্তার দাসত্ব।
. তৃতীয় প্রবন্ধ 'চিন্তার জট'-এ লেখক এদিকেই দৃষ্টিপাত করেছেন। সাধারণ দৃষ্টিতে পশ্চিমাদের দুনিয়াবী সাফল্যের পেছনে যে ফলাফল সেটাকেই আমরা দেখি কারন হিসেবে। যেমন, আমরা বলি পশ্চিমাদের উত্থানের পেছনে রয়েছে এ্যানলাইটেনমেন্ট, শিল্প বিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন এগুলো। আদতে এসব কিছুই হলো ফলাফল। পশ্চিমাদের সাফল্যের পেছনর মূল কারন হচ্ছে ঔপনিবেশিক লুটপাট, সামরিক শক্তি ও কূটনীতি। একবার ভাবুন, আর আমরা মুসলিমরা মাথা খুড়ে মরে গিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করছি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। পশ্চিমা বাপদের খুশী করার জন্য আমরা চিৎকার করে গেয়ে চলেছি, 'গাহি সাম্যের গান'।
. এভাবে সকল প্রবন্ধেই পশ্চিমা কোন না কোন মতবাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর দেখিয়ে দেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে সেগুলো কত নিম্নস্তরের প্রডাক্ট।
. 'পূজারি ও পূজিত', 'গোঁড়ায় গলদ' ও 'ভুল মাপকাঠি' -তে আলোচনা করা হয়েছে সেক্যুলারিজম নিয়ে। সেক্যুলারিজমের বক্তব্য যে কতটুকু অযৌক্তিক ও পরস্পরবিরোধী এবং কিভাবে মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাত (স্বভাব) বিরোধী এবং কিভাবে তা মানুষ ও সমাজে জন্য ক্ষতিকর তা প্রমান করে দেয়া হয়েছে সুনিপুন যুক্তিতে ও উপযুক্ত রেফারেন্সের মাধ্যমে।
. 'শুভঙ্করের ফাঁকি' -তে আলোচনা করা হয়েছে নারী শ্রম নিয়ে। নারী শ্রমের Opportunity Cost নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং দেখিয়ে দেয়া হয়েছে পরিবার ও সমাজের জন্য তা কতটা ক্ষতিকর। নারী শ্রমের পক্ষে পশ্চিমাদের দেয়া যুক্তিগুলোকে খন্ডানো হয়েছে অপূর্ব দক্ষতায়।
. 'সমকামী এজেন্ডাঃ ব্লু-প্রিন্ট' ও 'বালির বাঁধ' প্রবন্ধদ্বয়ে আলেচনা করা হয়েছে সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে। পশ্চিমারা কিভাবে কওমে লুতের ঘৃণিত সেই পাপে লিপ্ত এবং কিভাবে তারা মানুষের সহজাত ফিতরাত বিরোধী অপকর্মকে সমাজে বৈধতা দিতে চাচ্ছে এবং মানুষের ভেতর স্বাভাবিক করে তুলতে চাচ্ছে তার পেছনের পুরো পরিকল্পনা নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ প্রবন্ধ দুটিতে।
. 'মানসিক দাসত্ব' ও 'হাউস নিগার' প্রবন্ধদ্বয়ে আলোচনা করা হয়েছে মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব নিয়ে। কিভাবে মানসিক পঙ্গুত্ববরন করে আমরা পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হয়েছি এবং পরিণামে আমরা কি পেয়েছি তার প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে লেখকের স্বভাবজাত লেখনীতে।
. সবশেষে আলোচনা করা হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতার বিদায় ডঙ্কার উপর। প্রতিটি সভ্যতারই উত্থান ও পতনের কিছু স্বাভাবিক সিম্পটম রয়েছে। ঐতিহাসিকরা এ ব্যাপারে বিস্তর গবেষনা করেছেন। সেসব রেফারেন্সের মাধ্যমে লেখক তার 'সাম্রাজ্যের সমাপ্তি' ও 'অবক্ষয়কাল' প্রবন্ধে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌছেছে।
. আর এসব মিলিয়েই বইটি হয়ে উঠেছে 'চিন্তাপরাধ'। হয়ে উঠেছে প্রথাবিরোধী এক আকর গ্রন্হ। পরিণত হয়েছে পশ্চিমা বিভিন্ন মানব সৃষ্ট অসারতাকে আমূল প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়ার তাত্ত্বিক রিসোর্সে।
. পরিচিত অনেকের কাছে বইটির প্রচ্ছদ তেমন ভালো না লাগলেও, আমার কাছে খারাপ লাগেনি। ছবিটি যেন আমাদের মন ও মগজের বন্দীত্বের রূপক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। চিন্তার দাসত্বের প্রতিরূপ হিসেবে অঙ্কিত হয়েছে।
. বইটিতে বেশ কিছু মূদ্রন ত্রুটি লক্ষণীয়। যা আশা করি পরবর্তী সংস্করণে উত্তম এডিটিংয়ের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যাবে ইনশা'আল্লাহ। তবে নেগেটিভ সবকিছুই কর্পূরের মতো বিলীন হয়ে গিয়েছে লেখকের চিন্তা ও লেখনীর বরাতে। লেখকের লেখনী যে কত শক্তিশালী তা তিনি অনলাইনেই প্রমান করেছেন। বই প্রকাশের মাধ্যমে এবার তিনি নেট জগতের বাইরেও তা প্রমান করলেন।
. আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে বোঝার তাওফিক দিন। 'চিন্তাপরাধ' বইটি থেকে আমাদের সকলকে উপকৃত হবার তাওফিক দান করুন। বইটির নেপথ্যের সকলকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।
. দীর্ঘ এ লেখা শেষ করছি নিজের কিছু কথা দিয়ে। পশ্চিমা চিন্তার শেকলে আবদ্ধ অবস্হায় মুক্তির স্বপ্ন দেখা বিশ্ব মুসলিমদের জন্য অনেকটা উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতোই। বৃথা চেষ্টা। আপনি যার খাবেন তার বিরুদ্ধে তো আর নেমকহারামী করতে পারবেন না। তাই মুক্তির প্রথম পর্যায়েই আমাদের এই চিন্তার শেকলকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে হবে। পশ্চিমে চর্চিত এসব চিন্তা ও মতবাদ যে মানুষ ও সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা নিয়ে আমাদের গবে.ষনা করতে হবে। মানুষের মাঝে এ সকল মতবাদের অসারত্বকে প্রকাশ করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করে ইসলামী আইন-কানুনের চর্চা শুরু করতে হবে। চোখ থেকে পশ্চিমা চশমাটি খুলে আমাদের সমাজ ও দুনিয়াকে দেখতে হবে ইসলামী চিন্তা-চেতনার ভিত্তিতে। এছাড়া পশ্চিমা কু-আগ্রাসন থেকে বাঁচার দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই।
. আমাদের মুসলিমদের চিন্তাপরাধী হিসেবেই গড়ে উঠতে হবে। আমাদের শিশুদের মগজে পুঁতে দিতে হবে চিন্তাপরাধের বীজ। আমাদের মা-বোনদের অন্তরে রোপন করতে হবে চিন্তাপরাধের চারা। পশ্চিমা সমাজের ভিত্তিমূলকে কাঁপিয়ে দিতে হবে সুনিপুন যুক্তির মাধ্যমে। ফাঁটিয়ে দিতে হবে একের পর এক চিন্তাপরাধের এটম বোমা। কারণ, আদতেই 'চিন্তাপরাধ' সাধারণ কোন বই নয়। এটা রীতিমতো একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এটম বোমা।
. #চিন্তাপরাধ, Not just an ordinary book. It's an intellectual atom bomb.
. 'চিন্তাপরাধ' বইটি অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন নিচের লিংকগুলোতে -
[২+২=৪ এটা একটা ফ্যাক্ট। কিংবা ফিজিক্সের সূত্র বা কেমিস্ট্রির বিক্রিয়াগুলো ফ্যাক্ট। উদযান ও অম্লযান মিলে জল-ই হয়। এগুলোর সন্ন��বেশনের কাজটা পশ্চিমে হয়েছে বলে, পশ্চিমে সন্নিবেশিত সবকিছুকেই ফ্যাক্ট মনে করার একটা টেন্ডেন্সি সাবেক নেটিভদের মধ্যে কাজ করে। পশ্চিমের সামাজিক বিজ্ঞানগুলোকেও আমরা ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথের মত ধ্রুব-চিরন্তন-সঠিক মনে করি। এগুলো ধ্রুবক ও পারফেক্ট ধরে আলোচনা চালাই। অর্থনীতি-পৌরনীতি-রাষ্ট্রবিজ্ঞান-সমাজবিজ্ঞান-নৃতত্ত্ব-মনোবিজ্ঞান-দর্শন এগুলোর সকল তত্ত্বের মূল তত্ত্ব হল ‘ব্যক্তি’র ধারণা। এই ‘ব্যক্তি’র সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে সব সামাজিক বিজ্ঞানগুলো দাঁড়ানো। সেই ব্যক্তি স্বাধীন-সার্বভৌম-কারো কাছে দায়বদ্ধ নয়-তার চাহিদা ���ীমাহীন-তার জীবন শুধু ইহকাল-উপভোগই তার সফলতা। ব্যক্তির এই সংজ্ঞা ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট-এর ফসল। বস্তুবাদ-ভোগবাদ-পুঁজিবাদের দেয়া ‘ব্যক্তি’র সংজ্ঞার সাথে ইসলাম একমত নয়। ফলে পশ্চিমা সামাজিক বিজ্ঞানগুলোও ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এগুলোকে এবসোলিউট মনে করা মানসিক দাসত্বের পরিচায়ক। বিস্তারিত দেখুন ‘চিন্তাপরাধ’-এ। (শামসুল আরেফীন শক্তি)]
প্রকৃতপক্ষেই আমার চিন্তাভাবনা এখন অবশ হয়ে আছে। গুছিয়ে কিছু ভাবতেই পারছিনা৷ লেখা তো দূর!
কী ছিলো ভাই এই বইতে! কী ছিলো!!
সামান্য ২০-২২ লাইনে এই বইয়ের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ধারণা দেওয়া মুশকিল। একটাই অনুরোধ, পড়ুন। সময় বের করে পড়ে ফেলুন। এই বই পড়লে হয়তো আপনি কেরানি কিংবা ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী হবার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন না কিন্তু মস্তবড় এক ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারবেন।
এই বইটা কেবল কিছু ফ্যাক্টসের পরিবেশন নয়। বিষয়বস্তু একটু ভারীই বটে! তাই পড়বার সময় মনোযোগটা একটু বেশীই লাগবে।
অতি সংক্ষেপে কিছু বলি। আসলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।
আপনি কি জানতেন, যে আমি-আপনি বা আমরা যারা এদেশে বাস করি সবাই আমেরিকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খরচ বহন করি? আপনি কি জানতেন, আমরা সবাই পশ্চিমের বানানো পণ্যের মার্কেটিং বিনামূল্যে করে দেই নিজেদের অজান্তেই? আপনি কি জানতেন, আপনাদের উৎপাদিত পণ্য আপবাদেরই কাছে বিক্রি করে মুনাফা দ্বিগুণ কামায় পাশ্চাত্যের উদারমনারা?
গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, নারী অধিকার ইত্যাদি ফাঁকা বুলি আওড়ে পাশ্চাত্যের রঙিন চশমা পরিয়ে আমাদের স্বপ্ন দেখায় মুক্তমনার (নাকি উচ্ছৃঙ্খলার?)। আর শ্বেত সন্ত্রাসীদের হয়ে এদেশে এজেন্ট হয়ে কাজ করে যাচ্ছে জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল, শাহরিয়ার কবির, খুশি কবির, প্রিয়া সাহা, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো উচ্ছিষ্টভোগীরা।
আমাদের স্বপ্ন দেখায় বিজ্ঞানমনস্ক হতে 🙂.
আমাদের এটা বুঝায় পশ্চিমের মানবসৃষ্ট আইনই শ্রেষ্ঠ, বাকি সব ভূয়া। প্রশ্ন করা যাবেনা। যেহেতু এবিষয়ে চিন্তা করলেই সেটা অপরাধ, ‘চিন্তাপরাধ’। তাই ভাবনাই যথেষ্ট।
ভৌগোলিকভাবে আমেরিকার সাম্রাজ্য হয়তো ৮৮+ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে সীমাবদ্ধ, কিন্তু আরও একটা সাম্রাজ্য আছে, যা দেখা যায় না। সেটা হলো ওদের চিন্তা-চেতনা দিয়ে আমাদের ক্যাপচার করা। আমরাই সজ্ঞানে-অজ্ঞানে দাওয়াত দিয়ে এই ফাঁপা গ্যাস বেলুন এনেছি।
পড়ুন বইটা৷ এটা জানতে ওরা আসলে আপনার সম্বন্ধে কী ভাবে?!
এই বইটা পড়ার পরে আমি কেঁদেছি। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া ভাই-বোনগুলো অন্ধভাবে কী একটা ময়ালসাপকে জড়িয়ে ধরেছে। যখন ছোবল খাবে তখন তো সইতে পারবেনা।
এই বইটারে যদি হাজারটা তারকাও রেটিং দেন, তাও কম পরে যাবে! এইটা আসলে বই না, এইটারে ছোটখাট রিসার্চ জার্নাল বললেও ভুল হবে না! বইটা পড়তে আপনার খুব মনোযোগ দেওয়া লাগবে! আপনি কি পড়তেছেন তা মিলানোর জন্য রেফারেন্সগুলাও সাথে সাথে দিয়ে দেওয়া আছে! আমি সব কয়টা রেফারেন্স খুব ভালোভাবে পড়ে দেখছি! লেখকের এফোর্টকে দাঁড়াইয়া স্যালুট না দিলে অপরাধ হবে!
বইটা ইসলামকে নিয়ে! সভ্যতার পড় সভ্যতা কেন ইসলাম "পিছায়" পড়তেছে, কেন ভুল পথে আগাচ্ছে! কোথায় মাইর খাচ্ছে, কিভাবে মাইর খাচ্ছে, কেন খাচ্ছে, কারা মারতেছে এই নিয়েই বইটা!
ইসলাম শুধু একটা ধর্ম না! এইটা একটা স্বতন্ত্র আকিদাহ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, শাসনব্যবস্থা ও ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়া একটা সম্পুর্নতা - যা অন্য কোন "মানব" সৃষ্ট দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ স্বীকৃত দেয় না! মুসলিমরা ভাঙ্গতে পারে, কিংবা মচকাতে পারে; কিন্তু ইসলাম এইসকল কিছুর উর্ধে! ইসলামী শরীয়াহর সৌন্দর্য হইলো, শরীয়া মানুষের ফিতরাহ বা সহজাত প্রবণতার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন! মানুষ ফেরেশতা না! প্রাণী হিসেবে মানুষ একই সাথে ধারণ করে অত্যন্ত মহৎ এবং অত্যন্ত পাশবিক আচরণের সক্ষমতা ও প্রবণতা! মানুষের পক্ষে সম্ভব না নিষ্পাপ হওয়া! সম্ভব না নিজের কুপ্রবৃত্তি , কুচিন্তাকে পুরাপুরি ঝেড়ে ফেলা!এই প্রবণতা কভার করার জন্য ধর্ম এবং সেকুলারিজমের কোথায় আসল গ্যাপ, সেটা লেখক বেশ সুন্দর করে লিখছেন!
আমরা বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানকে কেন এক পাল্লায় মাপবো না, কেন "ফ্যাক্ট" এবং "মানব ধারনা" আলাদা সেটা আমাদের চিন্তার খোরাক হইতে হবে! হইতেই হবে!
ইউরোপীয় সামাজিক বিজ্ঞানের জন্মই হইছে ধর্মের বিকল্প বের করার জন্য! বইটাতে"ইসলাম"এর সাথে পশ্চিমা সভ্যতা, স্যেকুলারিজম এইসবের মধ্যে ফান্ডামেন্টাল ডিফারেন্সগুলা কোথায় কোথায় সেটা বেশ সুন্দরভাবে ফোটায় তোলা হইছে!এইসব রাতারাতি মানুষের মাঝে ইঞ্জেক্ট হয় নাই! এইগুলা প্রোমোট করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে, করে আসছে এবং এখনো করতেছে "মিডিয়া"!আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে, দশকের পর দশক একটা নিষিদ্ধ এবং অসুস্থ "আইডিয়া"গুলোকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি করে দেখাইছে মিডিয়া! দুঃখজনকভাবে আমরা একদল(বেশিরভাগ) এই মিডিয়ার নেওটা, আরেকদল সেই এদের সাথে পাল্লা দিয়ে আগানোর জন্য আমরা মুসলমানরাই ইসলামকে পশ্চিমা ছোঁয়া দেওয়াতে ব্যস্ত হয়ে গেছি!হয়ে যাচ্ছি ইসলামের সংস্কারকর্মী কিংবা হালের "মডারেট মুসলিম"! বলে বেড়াচ্ছি পশ্চিমা ভালো দিকগুলা থেকে আমাদের বেশি বেশি নেওয়া উচিত! যেখানে আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল "আমি কে?" তা না হয়ে আমরা সব সময় ব্যস্ত আছি , "আমরা কার দলে?" এই নিয়ে!
কেউ যদি বইটা পড়তে চান, আমার কাছ থেকে নিয়েন! আমার কাছের কিছু মানুষরে বইটা গিফট করবো চিন্তা করে রাখছি! হ্যাপি রিডিং <3
সাবধান! আপনার নিস্তরঙ্গ, ভাবলেশহীন চিন্তার জগতে এই বই একটা এটম বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আপনি হতবুদ্ধি হয়ে যেতে পারেন এ ভেবে যে 'এ কী ঘোরের মধ্যে আমরা চলছি, ফিরছি!' লেখক যুক্তির পরে যুক্তি সাজিয়ে, পাল্টা যুক্তিরও উত্তর দিয়ে একেবারে আপনার আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু তিক্ত সত্যের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। পশ্চিমা ঠুলি মাথায় দিয়ে আমরা যে গোলকধাঁধার মধ্যে পথ হাতড়ে মরছি তাঁর স্বরূপ জানতে হলে এই বইটা আপনার পড়তে হবে। পড়তে হবেই।
জীবনে অনেক বই পড়া হয়েছে। কোন বই আমার মতাদর্শ, চিন্তাজগতকে এতোটা উলট পালট করে দিতে পারেনি। বইটা পড়ার পর নিজের বিশ্বাস নিয়ে লজ্জিত হয়েছি, কিছুটা চক্ষু খুলেছে।
বইটা প্রত্যেকের পড়া উচিত। বিশেষ করে সেক্যুলারদের আখড়ায় বসে যেসব মুসলিম মডারেট হবার পথে অজান্তেই এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য এটা পড়া মাস্ট। প্রবল এক ঝাকুনিতে ব���টা আপনার সম্বিত ফিরিয়ে আনবে।
খুবই ঘাটাঘাটি করে লিখা, শত সহস্র রেফারেন্সে ভর্তি। যুক্তিগুলো খুবই শক্তিশালী। অনলাইনে লিবারেল,সেক্যুলাররা তো প্যারাডক্সিকাল সাজিদকে গার্বেজ ছাড়া বই ই মনে করেনা। এটা পড়ে দেখুন। সত্যিকারের লজিক্যাল বই। আমি আবারও পড়বো। বইয়ের যুক্তিগুলো এমনকি মুখস্ত করে রাখা প্রয়োজন।
লেখকের বিশ্লেষণী ক্ষমতা চমৎকার। যারা প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ টাইপ বই এর ডেপথ নিয়ে হতাশ, তাদের জন্য এই বই। অসম্ভব তথ্যপূর্ণ, এবং চিন্তার খোরাক সমৃদ্ধ। বই এ প্রচুর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো ভারী ভারী সংজ্ঞা আছে। যারা সেগুলো জানেন না তাদের জন্য বইটা খানিকটা দুর্বোধ্য লাগতে পারে।
নাম, প্রচ্ছদ, ভাষাশৈলী, শব্দ চয়ন, কন্টেন্ট, চাপ্টার হেডিং সব কিছুকে ৫ তারকা রেটিং দেয়া যায়! কিছু বই আছে, পড়ার সময় মস্তিষ্ককে খুব যন্ত্রণা দেয়। খাটিয়ে মারে। আবার কিছু আছে চুম্বকের মত টেনে রাখে। দূরে সরানো যায় না চাইলেও। খুব কম সংখ্যক বইয়ের এদুটো গুণই থাকে। চিন্তাপরাধ তার একটি।
বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের জন্য লিখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। এটি একটি মাইলফলক। আমার চিন্তার জগতকে এভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে এমন একটি বই শেষ কবে পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই। খুব সম্ভবত শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের তাফসিরে সূরা তাওবাহ বা মাওলানা আসেম ওমরের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দাজ্জাল সিরিজটি হবে। তবে এগুলোর মধ্যে একমাত্র চিন্তাপরাধ-ই মৌলিক ভাবে বাংলা ভাষায় লিখা।
বইটিতে মূলত, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহকে যে মানসিক দাসত্ব পেয়ে বসেছে সে সম্পর্কে তাদের সজাগ করা ও এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অহবান করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমা সভ্যতার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবের ফলে আমরা বিগত কয়েকশ বছর ধরে এরকম অনেক মতবাদ বা চিন্তাধারা,অনেক ক্ষেত্রে নিজের অজান্তেই,লালন করে আসছি যেগুলো আসলে সরাসরি আল্লাহর দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। এই বইয়ে এগুলোর বাস্তবরুপ আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে কিভাবেই বা এগুলো আমাদের মস্তিষ্কে স্থান পেয়েছে আর আজ পর্যন্ত আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে।
ঈমান ও কুফরের দ্বন্দ্ব চির সত্য,কেয়ামত অবধি তা অব্যাহত থাকবে। কখনো তা হবে সরাসরি জিহাদের ময়দানে আবার কখনো তা হবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে। অর্ধেক লড়াই-ই মনস্তাত্ত্বিক। অত্যন্ত দূঃখের সাথে স্বীকার করতে হচ্ছে যে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান এই উভয় ময়দানেই অত্যন্ত দুর্বল আজ। আর সবচেয়ে বেশি দুর্বল মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে। আমাদের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে আমরা বন্ধু কে আর শত্রু কে তাও আজ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমাদের জাগতিক বিভিন্ন দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা আমাদের শত্রুর শরণাপন্ন হই, তারই অনুকরণ করার চেষ্টা করি। ঈমান ও আখলাকের সুরতে যার চওড়া মূল্য দিতে হয় আমাদের। যা কেবল আমাদের আপমান ও ব্যর্থতাই বৃদ্ধি করে আর সফলতা মরিচীকা হয়ে দূরেই রয়ে যায়। বইটি আমাদের সম্মুখে শত্রুর মুখোশ চূড়ান্তভাবে উন্মোচন করে দিবে ইন শা আল্লাহ।
বইটি মোট ১৬ টি অধ্যায়ে বিভক্ত। বিষয়বস্তু ও আলোচনার দিক থেকে সব কয়টি অধ্যায়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি অধ্যায়েই রয়েছে আমাদের জন্য চিন্তার খোরাক। সব কয়টি অধ্যায় নিয়ে এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধু বইটি সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারণা দেয়ার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
★নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহার করে হিরোশিমা, নাগাসাকির মতো অমানবিক গনহত্যা ও ধবংস তান্ডব করার পরও বিভিন্ন শব্দ ও তার অর্থ নিয়ে খেলাকরে বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে কিভাবে আমেরিকা নিজেকে শান্তির বাহক হিসেবে উপস্থান করে আসছে আর সাধারণ মানুষ তা মেনেও নিচ্ছে, এ বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৭৩ বছরে মোট দুই কোটি মানব হত্যা। ইরাক,আফগানিস্তান ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে অমানবিক সব গণহত্যা কিন্তু তারপরও তারা কিভাবে শান্তির প্রতিক আর নিজেদের ভূমি ও জান আত্মরক্ষাকারীরা সন্ত্রাসী?
★ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদের হাতেই লিখা হয়। গত কয়েক শতক ধরে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো,তাদের ভাষায়, আমাদের উন্নতি ও সভ্যতার স্বার্থে নাকি নিজের মানবতা ও দায়িত্ববোধ থেকে নিজেদের জীবন বাজি রেখেও আমাদের ভূমি গুলো দখল করেছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আসল উদ্দেশ্য ছিলো লুটপাট ও ডাকাতি। আর এর ফলেই মাত্র কয়েক শতকে পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর সম্পদে এতোটা তফাৎ সৃষ্টি হয়েছে আর জাগতিক দিক থেকে তারা এতো উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।
★খৃষ্টধর্মের জুলুম-অত্যাচার জনিত শাসনব্যবস্থার ব্যতিক্রম হিসেবে পশ্চিমাবিশ্বে জন্ম হয়েছিল সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার। সব ধর্মের মানুষের ব্যক্তিজীবনে তার ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যেটা বাস্তবায়নে তারা চর্মভাবে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষভাবে মুসলমানদের ক্ষেত্রে। ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্রে কোনো বিশেষ ধর্ম ও তার অনুসারীদের সার্থ রক্ষা নয় বরং দেশের সব জনগনেরর সমান সার্থ ও অধিকার নিশ্চিত করাই হবে তার মানব রচিত আইনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। আর এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই সবচেয়ে সভ্য ও মানবতাবাদী বলে দাবি করে বাকি সকলের উপর চাপিয়ে দিতে চায় পশ্চিমাবিশ্ব।শুনতে ভালো হলেও, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী যেখানে আল্লাহ প্রদত্ত শরিয়তের আইন অনুযায়ী পুরো দেশ চলবে, দেশের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা চলবে, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে আইন প্রনয়ণ করবে মানুষ নিজে, কোনো বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে।
★ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমাবিশ্বের সফলতা অনস্বীকার্য। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে তাদের সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শনও একই ভাবে সফল ও অনুকরণীয়। বাস্তবতা বরংচ বিপরীত। তাদের সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শন তাদের সমাজকে ভিতর থেকে একেবারে ধ্বংশ করে দিচ্ছে।খুন,ধর্শন,মাদকাসক্ত,তালাক,গর্ভপাত,যৌনবিকৃতি ইত্যাদি সব ধ্বংসাত্মক রোগে আজ তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন আক্রান্ত হয়ে আছে। অর্থনীতির দর্শনের ক্ষেত্রেও সমান অবস্থা। সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী ইনসাফ বিবর্জিত এই অর্থনৈতিক দর্শন মানবজাতিকে একবারে ধবংস করে ফেলছে। অথচ আমাদেরকে যুগযুগ ধরে সবক দেয়া হচ্ছে পশ্চিমাবিশ্বে যেসকল মতবাদ ও দর্শন প্রচলিত রয়েছে এগুলোর অনুকরণের মধ্যেই আমাদের সফলতা নিহত।
★সমকামিতা,শিশুকাম,ট্রান্সজেন্ডার। যেকোনো যৌন বিকৃতিকে কিভাবে সমাজে স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয় এর একটি ব্লু প্রিন্ট পেশ করা হয়েছে। কিভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে মাত্র কয়েক দশকে সমকামিতা প্রসঙ্গে আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবির্তন করা হয়েছে। আর এখন শিশুকাম-এর ব্যাপারে সমান প্রক্রিয়া চলছে এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা এসেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে চলা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও মিডিয়ার সমকামিতাকে স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার অপতৎপরতার কথাও এসেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এর কড়া মাশুল দিতে হবে আমাদের নিকট ভবিষ্যতে।
★বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের গবেষণা আমাদেরকে জানান দিচ্ছে যে পশ্চিমা সভ্যতা আজ তার শেষনিঃশ্বাস ফেলছে। বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজয় ও এর ফলে সৃষ্ট ঋণ ও অর্থনৈতিক মন্দা, নৈতিক বিপর্যয়, যৌনবিকৃতি আমেরিকাকে আজ দাঁড় করিয়েছে একেবারে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে। মানব ইতিহাসে কোনো সভ্যতা তার ধ্বংসলগ্নে যে রুপ ধারণ করে আমেরিকা ও পশ্চিমাবিশ্ব আজ তার প্রতিচ্ছবি। অথচ আমাদেরকে আজও সবক দেয়া হচ্ছে তাদের অনুসরণের! বর্তমান বিদ্যমান কোনো সভ্যতার অন্ধ অনুকরণ নতুন এক সভ্যতা গড়ে তোলার পথ নয়। এ জন্য প্রয়োজন ভিন্ন এক পন্থা ও পদ্ধতির অবলম্বন। যা আমাদের কাছে আগে থেকেই মজুদ, প্রয়োজন শুধু এতোটুকু সৎসাহসের।
এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এসেছে বইটিতে। এই বই মিস করলে আসলেই অনেককিছু মিস করবেন। এ আলোচনা গুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দুঃখজনক ভাবে দুর্লভ। তাই সকলেই বইটি অবশ্যই পড়ে নিবেন।
দুটো নেতিবাচক কথা, বইয়ে অনেক ভুল বানান রয়েছে। অবশ্য আমার বইটি প্রথম সংস্করণ। বর্তমানে বাজারে কোনটা আছে আর সেটার কি অবস্থা আল্লহু আ'লাম। আর পেপারব্যাক হলেও কাভারটা আরো শক্ত হলে ভালো হতো। যাই হোক, আল্লাহ তা'য়ালা সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন। বিশেষভাবে আসিফ আদনান ভাইকে। উনাকে দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন,হেফাজত করুন এবং আরও বেশি বেশি এরকম কাজ করার তৌফিক দিন।আমীন।
সকল প্রশংসা এই বিশ্বজাহানের একক স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর।
If I could give this book a 100 stars I would. Reading it opened so many doors and windows in my mind! This book is IMPORTANT. This talks about the clash of civilization and the how and why of the impending doom of the Western civilization. But perhaps most important of all, this is an eye-opener for Muslims all over the world. Which direction are we heading to? Where should we focus our efforts? How do we make sure we don't blindly follow that which shines but is hollow inside and instead grasp and hold that which is true and pure and beautiful and good and salvation, both in and out?
চরম নৈরাজ্যের দিকে যাত্রা করা এ দুনিয়ার অধঃপতনের পেছনের কারণ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ও বিষোদ্গারের তত্ব রহস্য নিয়ে লেখা এক অনবদ্য সংকলন। উন্মোচিত হয়েছে অনেক অপ্রিয় সত্য, উঠে এসেছে আমাদের উদাসীনতা ও তার পরিণাম আর মনস্তাত্বিকভাবে আমাদের পরাজয়ের এক করুণ চিত্র।
একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কি ভাবে তৈরি হয় তার অনেকটাই নির্ভর করে সে সমাজকে কি শেখানো হচ্ছে, কি দ্বারা প্রভাবিত করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এই প্রভাবিত করার সবচেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার এখন মিডিয়া। এই মিডিয়া আবার কাকে, কি দিয়ে, কি ভাবে প্রভাবিত করবে সেটা আবার নির্ভর করে সেই মিডিয়ার অন্তরালে কে বা কারা কাজ করে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা বর্তমান প্রজন্ম সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বারা আর তারা এটা অনুধাবনও করতে পারছেনা এই প্রভাব তাদের চিন্তা, চেতনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। যদি এই প্রজন্ম এটা বুঝতো এই প্রভাবের পেছনে যে বিষাক্ত ছোবল লুকিয়ে রয়েছে তাহলে তারা নিজের ব্যাক্তিগত চিন্তাধারা ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হত আর মিডিয়ার ছলনাময়ী প্রভাবের অন্ধকার দিকটা ছুড়ে ফেলে দিত। এই ব্যাপারটা দারুনভাবে উপলব্ধি করেছেন লেখক আসিফ আদনান এবং তিনি অসাধারন দক্ষতায় তা ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কি ভাবে পশ্চিমারা মানুষের চিন্তা-চেতনাকে বদলে দেয়, কি ভাবে মানুষের ভালবাসার ঐতিহ্যে, বিশ্বাসে ঘ্রীনা তৈরি করা হয় আর কত সুক্ষ ছলচাতুরী মাধ্যমে তাদের স্বার্থ আদায় হয়ে যায়। বর্তমান পৃথিবী কি ভাবে চলছে, কোন দিকে মোড় নিচ্ছে আর কতটা বোকার মত আমরা না বুঝেই পঙ্গপালের মত মিডিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি লেখক তা ভালভাবেই টের পেয়েছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস, অর্থনীতি, রাজনীতি এমনকি সাম্প্রদায়িকতার নাম নিয়ে সুকৌশলে আমাদের ভাবনাকে কতটা দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে তা বুঝতে পারার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে "চিন্তাপরাধ" বইটি।
২০২০ সালে আমার পড়া সেরা বই । আপনি যে ঘরানারই হোননা কেন , এই বইটি পড়ে একটা ধাক্কা খাবেন গ্যারান্টি । দুঃখের বিষয় বইটি নিয়ে আশানুরূপ আলোচনা চোখে পড়ছে না । মাস্ট রিড একটি বই । অবশ্যই নিজে পড়ুন এবং মডারেট মনা বন্ধুবান্ধবদের জোর করে পড়ান ।
নিরাশা, আশা, মনোকষ্ট, আনন্দ নিয়ে শেষ করা বই। তাদের কুচক্র যেখানে ভয়ের সঞ্চার করে, সেখানেই আনন্দেরও সঞ্চার করে। নিকট ভবিষ্যতের ভয় আর ভবিষ্যতের মুক্তি দুটোরই মিশেলে লেখা বই। চিন্তাভাবনার মাঝে নতুনত্ব তৈরীর মতো অনেক উপকরণ দিয়ে সাজানো।
এক কথাই "মাস্টারপিচ"। . লিবারেলিজম, সেক্যুলারিজম এই দুইটা মতাদর্শে এমন অসংখ্য জিনিস আছে যা সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, আরও সূক্ষ্মভাবে বলা চলে অবস্থান বিপরীত মেরুতে। তারপরও মুসলিমরা এই দুইটা মতাদর্শের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে, কিন্তু কেনো? সোজা উত্তর পশ্চিমা মিডিয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়া দ্বারা তৈরি হওয়া চিন্তার দাসত্বের কারনে। পশ্চিমারা এক সময় পুরো পৃথিবীজুড়ে নিজেদের অস্ত্রের মাধ্যমে দেশে দেশ সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলো, তাদের সেই অস্ত্রের মুখে তৈরি করা সাম্রাজ্যবাদ অনেক আগেই শেষ, কলোনিয়ালিজমের মৃত্যু ঘটেছে, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু পশ্চিমা আগ্রাসন কি শেষ হয়েছে? পশ্চিমারা কি এখন দুনিয়া জুড়ে নিজেদের মতাদর্শ এবং ভাবাদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছেনা! কয়েক শত বছর জুড়ে পৃথিবীতে পশ্চিমা ভাবাদর্শগুলোর ছড়িয়ে পড়ছে, বিগত কয়েক দশকে মিডিয়ার মাধ্যমে তা সবথেকে বেশি ছড়াচ্ছে। পশ্চিমারা মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের এমনভাবে পশ্চিমা সকল মতাদর্শ, ভাবাদর্শ এবং পশ্চিমা চিন্তাভাবনা দিয়ে ম্যানিপিউলেট করছে যে আমরা সকলে ধরেই নিয়েছি পশ্চিমারা যা বলে তা সত্য, পশ্চিমাদের সমাজবিজ্ঞান শতভাগ ধ্রুব। লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমারা সভ্যদের মুখোশ পড়ে কিভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, মানুষের মাঝে অ্যান্টি-ইসলামিক চিন্তাভাবনা প্রবেশ করাচ্ছে। যার দ্বারা মুসলিমরাই বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। মুসলিমরা এখন পশ্চিমাদের খুশি করতে মডারেট মুসলিম, মর্ডানিস্ট মুসলিম নামক অনেক শব্দ ব্যবহার করছে। মুসলিমরা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যায় এমন সকল কিছু জীবন থেকে সড়িয়ে নিচ্ছে, এবং পশ্চিমাদের সকল কিছু গ্রহন করছে, যেনো পশ্চিমারাই সঠিক, বাকি সকল কিছু ভুল। ঠিক কিভাবে আমরা পশ্চিমাদের চিন্তার দাসত্বে প্রবেশ করেছি, কিভাবে আমাদের চিন্তাভাবনা পশ্চিমারা নিয়ন্ত্রণ করছে, কেনো আমাদের কাছে পশ্চিমাদের সেক্যুলারিযম এবং লিবারিলজম শব্দগুলো সঠিক মনে হচ্ছে! পশ্চিমা থেকে আমদানি সেক্যুলার, লিবারেল, ইনডিভিজুয়ালিজম এইসকল কিছুর মাধ্যমে পশ্চিমারা আমাদের মুসলিম পরিচয় থেকে এবং ইসলামের থেকে কিভাবে দূরে সড়িয়ে নিচ্ছে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে বইটিতে। একইসাথে রয়েছে এইসকল মতাদর্শের ভিতরে থাকা শুভঙ্করের ফাঁকির বর্ণনা। বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠায় রয়েছে অসংখ্যা রেফারেন্স, বাংলার মুসলিম জনগণের পশ্চিমা চিন্তাভাবনার দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে এই বই অবশ্যপাঠ্য। তবে, এই বই আপনার চিন্তাজগতে এক বিরাট ধ্বাক্কা দিতে বাধ্য।
এই বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ঠা যখন পড়ছিলাম, মনে হচ্ছিলো আমরা পশ্চিমা ব্ল্যাকহোলের ভেতর পুরোপুরি ফেঁসে গেছি। আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি মনস্তাত্ত্বিক দাসত্বের। এ থেকে বের হবার একমাত্র পথ দ্বীনি ইসলাম কায়েম করা। পরিবার থেকেই শুরু হোক সঠিক দ্বীন চর্চার। " ইন শা আল্লাহ্ " আমরা সফল হবো।
ভাবনার অনেক অনেক দুয়ার খুলে গেল। লেখক আসিফ আদনান একটা অসাধারণ কাজ করেছেন, আল্লাহ্ তাঁকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করুন। এটা একটা অবশ্যপাঠ্য বই। ইচ্ছে করছে ধরে ধরে কিশোর-তরুণদের পড়াই। লিবারেল সেকুলারদের পরানো চোখের ঠুলিটা খসে পড়ুক সবার! আদর্শিক ঔপনিবেশিকতার এই যুগে চিন্তাপরাধী হওয়াটা বড্ড গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শিক গোলামির অর্গল ভেঙে যেন চিন্তাপরাধী হতে পারি এবং এর মাধ্যমে চিন্তার জগতে যেন প্রকৃত আজাদি অর্জন করতে পারি। আল্লাহ্র কাছে এই দুআ-ই করি।
এই বই পড়ার আগের আর পরের আপনি কখনোই একই থাকবেন না ইন শা আল্লাহ। মনে হবে কেউ আপনার চিন্তার জগৎকে ভীষণ ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে, আপনার ভিতর ঘটে গেছে হিরোশিমা নাগাসাকি। আপনার চোখে থাকা যে চশমা দিয়ে আপনি দুনিয়া দেখেন , সেই কাঠের চশমা কে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে ফেলবে এই বই। পাঠক চিন্তার জগতের নতুন দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম।
মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। আমরা চিন্তা করতে পারি। চিন্তা-ভাবনা আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। সিদ্ধান্তের প্রভাব থাকে কর্মে। আর কর্ম ব্যক্তি-সমাজ ইত্যাদির সাথে সম্পর্ক রাখে। যে কারণে প্রচলিত সমাজ সভ্যতা আমাদের জন্য একটা চিন্তার ক্ষেত্র বা গণ্ডি তৈরি করে রাখে। যাতে করে আমরা সমাজ সভ্যতার বিভিন্ন ব্যাপারে প্রশ্ন করতে না পারি। এটা এক ধরণের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বলা যায়। এখন যেসব চিন্তা এই গণ্ডি পার করে বা সমাজ সভ্যতার ব্যাপারে আপত্তি উঠতে পারে এমন সব চিন্তা করা কি চিন্তাপরাধ না কি এই প্রচলিত পশ্চিমা প্রভাবিত সভ্যতার ভেতরে থেকে এর পক্ষে চিন্তা করা বা একে ডিফেন্ড করা এবং একে শ্রেষ্ঠ করার জন্য অন্যান্য সভ্যতাকে মধ্যযুগীয়, বণ্য ইত্যাদি বলাটা চিন্তাপরাধ সেটা একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এখানে দুইটা পক্ষ।
#বই_পরিচিতি এটা আসিফ আদনানের প্রথম মৌলিক বই। বইটির পরিচয় লেখক ভূমিকায় লিখেছেন, চিন্তাপরাধ কোনো ইসলামী বই না, তবে মুসলিমদের জন্য লেখা বই। সর্বব্যাপী মিডিয়া প্রপাগান্ডা, প্রথাগত প্রথাবিরুদ্ধতা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, আর আদর্শিক ঔপনিবেশকতার কালে বইটি যদি মুসলিমদের চিন্তার জট খুলতে কার্যকরী হয়, চিন্তার জগতে অল্প হলেও নাড়া দেয়, তবে সেটা হবে একটা বড় পাওনা।
#পাঠ_পর্যালোচনা বইটিতে মোট প্রবন্ধ আছে সতেরটি। বইটি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তার ধারা নিয়ে ভাবতে শেখাবে বা বলবে। বইয়ে পশ্চিমা সভ্যতা, সেক্যুলারিযম ইত্যাদি বিষয়ের একটা ব্যতিক্রমী দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কেন একটা দেশের সমস্ত আক্রমণ, যুদ্ধ ইত্যাদি গ্লোরিফাই করা হবে, কেন একদল খুন করলে সেটা ন্যয়, মানবতা আর আরেকদল এর প্রতিবাদ করলে র্যাডিকাল ন্যাশনালিস্ট বা টেরোরিস্ট; এটা একটা প্রশ্ন। আমেরিকা সৃষ্টিই হয়েছিলো সাম্রাজ্য হিসেবে। বলেছেন নোয়াম চমস্কি। এই সম্রাজ্য পৃথিবী থেকে সম্পদ লুণ্ঠন করছে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে। আর এটা প্রতিষ্ঠা করতেই পুরো পৃথিবীতে তৈরি করেছে একটা বৈষম্য। তাদের কাছে টেররিস্ট বা র্যাডিক্যাল ন্যাশনালিস্টের অর্থ যারা তাদের কথা শোনে না, যারা তাদেরকে সম্পদ লুটতে দেয় না তারা।
সাদা চ���মড়ার সভ্যতা হলো শ্রেষ্ঠ সভ্যতা। এর প্রমাণ মেলে তাদের বিভিন্ন লেখা বই-চিঠিতে। এখন প্রশ্ন হলো কেন এই সভ্যতাই শ্রেষ্ঠ, কেন তাদেরটাই সেরা, কেন আমাদেরটা না? কিন্তু এই প্রশ্ন করা বা এটা নিয়ে কাজ করা লোকের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। সবাই ব্যস্ত আজকে ইসলামকে এই সভ্যতার অনুগামী করতে। এই যে ইসলামের মূল শরিয়াহকে বাদ দিয়ে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলা বা তাদেরটা গ্রহণ করা; এর হুকুম কী? আর এই মিলিয়ে ফেলার দ্বারাই বা কতটুকু ফায়দা হচ্ছে? হান্টিংটন ক্লাশ অফ সিভিলাইজেশানে দেখিয়েছেন, সভ্যতার সাথে সভ্যতার সংঘাত। তিনি ইসলামকে চিহ্নিত করেছেন একটি সভ্যতা হিসেবে।
সেক্যুলারিযমের বক্তব্য হলো ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাষ্ট্র কারো ধর্ম পালনে বাধা দেবে না। অথচ দেখা যাচ্ছে এক ধর্ম অন্য ধর্মের অবমাননার কারণ হয়ে যাচ্ছে, বাধছে সংঘাত। এর সমাধান কী হবে? কেন নিজের ধর্ম অনুযায়ী পোশাক পরাটাও অপরাধ হবে? এসব প্রশ্ন থেকে কি বুঝে আসে না, যে ধর্মের ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র একটা ধোঁকা?
আরেকটি ব্যাপার দেখুন, নারীকে কেন চাকরি করতে হবে বাইরে আসতে হবে? কেন নারীর উন্নয়ন বাহিরে বের হওয়ার মাধ্যমে? বলা হয়, ইসলাম নারীকে ঘরে আটকে রেখেছে। উন্নয়নের মাপকাঠি কী হবে? জিডিপি-জিএনপি কতটুকু সঠিক মাপকাঠি হওয়ার জন্য? কেনই বা ৪৫হাজার টাকা আয় করেও মানুষকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে? এই হাস্যকর উন্নয়ন কীভাবে সঠিক হতে পারে?
একটা সভ্যতা যখন উন্নতির শিখরে চলে যায় তখন তাদের মধ্যে বিলাসিতা চলে আসে। আসে বিভিন্নরকম অবক্ষয়। আজকের পশ্চিমা সভ্যতা নারী-পুরুষের সংজ্ঞাকেই পালটে ফেলেছে। গে, লেসবিয়ান, ট্রান্সজ্যান্ডারের মতো বিকৃতি আজকে মানবাধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। এই বিকৃতিকে সুস্থরূপ দিতে হলিউড আর পশ্চিমা মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারণা। এই সমকামিতা যে যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে সেই যুক্তিই শিশুকাম ও পশুকামের বৈধতা দেয়। কিন্তু এটাকে সমাজে খারাপ ভাবা হয়। তাহলে যুক্তি কী করে একটাকে বৈধতা দিচ্ছে আরেকটাকে অপরাধ বানাচ্ছে?
আনউইন সেক্স এন্ড কালচারে একটি সিদ্ধান্ত দেন। অবাধ যৌনতা সামাজিক শক্তি হ্রাস করে। সামাজিক শক্তি আর যৌনতার মধ্যে সভ্যতাকে যে কোনো একটি বেছে নিতে হয়। আর এর পক্ষে প্রমাণ হলো এক প্রজন্মের বেশি কোনো সমাজ একসাথে এ দুটি চালিয়ে নিতে পারে না। ইবনে খালদুন দেখিয়েছেন একটি সভ্যতার ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া। যখন সভ্য সমাজ বিলাস ব্যসনে মত্ত হয়ে যায়, অধঃপতনের চরম পর্যায়ে চলে যায় তখন তাদের ধ্বংস হয়। তাদের উপরই নতুন আরেক সভ্যতা উঠে দাঁড়ায়। তাদের ধ্বংসের কারণ হলো সামাজিক শক্তির অভাব আর যারা এই সভ্যতাকে আক্রমণ করে তারা থাকে সামাজিক দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। আলফ্রেড ম্যকয়ের ধারণা আমেরিকান সাম্রাজ্যের পতন আসবে ২০৩০ এর মধ্যে। তবে এর পরেই এই সভ্যতার পতন হবে না। এটা হবে সূচনা।
লেখক শেষ প্রবন্ধে বর্ণবাদ, নাৎসি সংগঠন আর চরম ডানপন্থীদলগুলোর উত্থান দেখিয়েছেন। এই দলগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করছে। তারা অভিবাসনকে মনে করছে শ্বেতাঙ্গদের জন্য হুমকি। প্রচন্ড আক্রমণাত্মক এই বর্ণবাদীরা য়ুরোপে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে। এর খণ্ড খণ্ড চিত্র এই প্রবন্ধে রয়েছে।
এসব থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটা হলো, এই সভ্যতা এখন পতনমুখী। এই সভ্যতার উপরে কারা আবার গড়ে তুলবে তাদের সভ্যতা?
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে এটা আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটা। অনেককিছু যেমন নতুন করে ভাবতে শেখায় তেমন, প্রশ্নের জায়গাগুলোকে পয়েন্ট আউট করে দেয়।
এর দুইটা খারাপ দিক আছে। বানান ভুল, টাইপিং মিস্টেক আর ইংলিশ শব্দের প্রচুর ব্যবহার। এ ছাড় বইটা অসাধারণ।
জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং। বইয়ের প্রতিটা লাইন যেন মগজ খুবলে খেয়েছে। এটি এমন এক বই, যেখানে পাঠককে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিমা সভ্যতা ও বিশেষত অ্যামেরিকার মুসলিমদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির গভীরে। মুসলিম সমাজকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
এখানে ফুটে উঠেছে সেই 'থট ক্রাইম' এর ধারণা। অর্থাৎ মানুষের চিন্তাভাবনাকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রবণতা।
বইটির প্রতিটি অধ্যায় যেন ছোটখাটো একটা রিসার্চ পেপার। লেখক অত্যন্ত যুক্তিনির্ভরভাবে দেখিয়েছেন ‘কীভাবে পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম পরিচয়কে হুমকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরেও এই বৈরিতা কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিশ্লেষণও।’
যুক্তিনির্ভর লিখার ধরণ, কোথাও বাড়তি আলাপ নেই। প্রতিটি লাইন পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। এটি একাধারে তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ, আবার একইসাথে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করার মতো শক্তিশালী একটি বই। শুরুতে স্লো স্টার্ট, কিছুটা কঠিন ও ক্ষেত্রবিশেষে বোরিং লাগতে পারে কিন্তু পরবর্তী 'পূজারি ও পূজিত' 'গোড়ায় গলদ' 'বালির বাঁধ' 'মানসিক দাসত্ব' 'সাম্রাজ্যের সমাপ্তি' 'শ্বেত সন্ত্রাস' এর মত টপিকগুলো আপনার মগজ ধোলাই করে চিন্তার সাগরে নিয়ে যাবে। 💥
‘চিন্তাপরাধ’ শুধু একটি বই নয়, বরং আমাদের বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। মুসলিম পরিচয়ের রাজনীতি, পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা ও ভয়াবহতা এবং চিন্তার স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা বোঝার জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য।
বিশ্বরাজনীতি, ইসলামফোবিয়া এবং সমসাময়িক চিন্তার স্বাধীনতা যাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তাদের জন্য বইটি হাইলি রিকমেন্ডেড। বিগিনার লেভেলের পাঠকদের কঠিন মনে হতে পারে, তাই বুঝে না আসার কারণে পড়তে ভালো লাগবেনা। তবে পড়া অত্যাবশ্যক সবারই।
আসিফ আদনান ভাইয়ের এই লিখাটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। আল্লাহু সুবাহানাহু ওয়া তা'আলা ভাইকে শয়তানের চক্রান্ত থেকে হিফাজত করুন এবং লিখার হাতকে আরও প্রশস্ত করুন।