চলে গেছে জীবনের কতগুলো রমযান! পুষ্পিত বসন্তের সুবাসিত ফল্গুধারা নিয়ে! রহমত-মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে! দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি ‘মাহে রমযান‘! অসামান্য অর্জন ও অত্যুচ্চ প্রাপ্তির অপার সম্ভাবনা নিয়ে!
কিন্তু ….। কীভাবে যেন কেটে যায় দিনগুলো! হেলায়-ফেলায়- অবহেলায়-উদাসীনতায়! মাস শেষে আফসোস! বার দু’য়েক দীর্ঘশ্বাস! রমযান এল, রমযান গেল, এগার মাসের মতই!
অথচ ….। এই রমযানই হয়তো জীবনের শেষ রমযান! শেষ সুযোগ ক্ষমা লাভের! শেষ সুযোগ প্রাপ্তি ও অর্জনের! গতবার কতজন ছিলেন! সাহরীতে-ইফতারীতে! জীবনের পরতে-পরতে! আজ তারা নির্জন কবরে! রমযান শেষেই হয়তো আমার পালা, ডাক আসার!
তাহলে ….। কীভাবে কাটাবেন আপনার জীবনের শেষ রমযান?! কীভাবে কাজে লাগাবেন প্রতিটি ক্ষণ, সেকেন্ডের প্রতিটি ভগ্নাংশ?! কীভাবে ভাবতে শিখবেন- ‘এটাই আমার জীবনের সর্বশেষ রমযান’?! তা জানতেই প্রিয় পাঠক আপনার জন্য ‘এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমযান’!
বইয়ের নাম "এটাই হয়ত জীবনের শেষ রমযান " হলেও লেখকের আসল উদ্দেশ্য ছিল তার ৮৮ পৃষ্ঠার পুরো বইটি পড়ার শেষে এসে ৮৬ পৃষ্ঠার শেষ বাক্য হিসেবে লেখা -
"আমার পুরো জীবন হবে জীবনের শেষ রমযান" দিয়ে যেন আমার মতো গাফেল আর উদাসীন পাঠকের অন্তরে মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিতে পারেন। আবেগের জোয়ারে হৃদয়ের দুই কূল উপচে পড়ছিল বারংবার! এই ছোট্ট বইখানিতে এত এত মূল্যবান কথার সংযোজন তিনি ঘটিয়েছেন কত দারুণভাবে! এত এক রত্নভান্ডারই বটে!
নির্দিষ্ট টপিকের আলোচনার পর সারমর্মটুকুও যত্ন করে বুলেট পয়েন্টে লিখে দিয়েছেন। বই পড়ার সময় নোট রাখা অভ্যাস যাদের আমার মতো, এই বইয়ের জন্য তা করার কোনো প্রয়োজনই পড়ার সময় খুঁজে পাই নি। পুরো বইটাই রমজান মাসের জন্য এক সাজানো-গোছানো আবশ্যিক নোটবুক।
আমাদের উম্মাহর ভাই রাগিব সারজানি ও বাংলা অনুবাদ করা আবু মুসআব ওসমান, তাদের এই মেহনতকে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন কবুল করে নিন এবং উত্তম প্রতিদান দান করুন।
মৃত্যু অনিবার্য তবুও কি এক অদ্ভুত কারণে আমরা মৃত্যুকে ভুলে বসে আছি। সারাদিনে একবার মনেও পড়ে না যে, আজই যদি হয় আমার শেষ দিন। তবে আমি স্রষ্টার সামনে দাড়িয়ে কি জবাব দেবো আমার সময়ের, আমার যৌবনের, আমার সম্পদের, আমার পরিবার - পরজনের ঈমান আমলের। আছে কি এই সবের জবাব আমার মাঝে? তবে কেন এই জবাব গুলো না খুঁজে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন আছি? কি আমাকে এই দুনিয়ার প্রেমে পাগল করে দিলো? আজ (০২-০৪-২০২২) সন্ধ্যা থেকে রামাদান মাস শুরু হয়েছে। আগামীকাল (০৩-০৪-২০২২) এই বছরের প্রথম সাওম (রোজা)। এটাই কি আমার জীবনের শেষ রামাদান হতে পারেনা? কি গ্যারান্টি আছে যে, আগামী বছর আবার আমি আরেকটি রামাদান পাবো? কি গ্যারান্টি আছে যে, পহেলা সাওমের পর ২য় সাওম পাবো? তবে কেন এই উদাসীনতা? কিসের মায়ায় ডুবে আছি?
একজন প্রসিদ্ধ আরবি কবি বলেছেন,
"বিস্মৃত বস্তুর তালিকায় আমি মরণকেও যোগ করেছি, ভুলে গেছি মৃত্যুকে; যেন আমি কখনো কাউকে দেখিনি মারা যেতে। মৃত্যুই কি প্রতিটি জীবনের চূড়ান্ত কথা নয়? তাহলে কি হলো আমার! সময় চলে যাচ্ছে অথচ নেই কোনো তাগাদা, নেই ব্যাকুলতা - অস্থিরতা!"
তাই আসুন, দুনিয়াবি সব জঞ্জাল ভুলে প্রতিজ্ঞা করি। হে আল্লাহ এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ রামাদান। - এই রামাদানে যেন তোমার সন্তুষ্টির জন্য সাওম পালন করতে পারি। - খুশু খুজু সহকারে সালাত আদায় করতে পারি। বিশেষ করে ফরজ সালাত সমূহ যেন জামাতে আদায় করতে পারি। - বেশি বেশি দান সাদাকাহ করতে পারি এবং রামাদান শেষে ঈদের সালাতের পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারি। - আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশির হক আদায় করতে পারি। - বেশি বেশি তাওবা করে তোমার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। - শেষ দশকে যেন ইতিকাফ করতে পারি এবং প্রতি রাতে তোমার ইবাদাতে মশগুল থাকার মাধ্যমে কোন এক রাতে লাইলাতুল কদরের ফযিলত লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি। - বেশি বেশি নফল ইবাদাত করতে পারি। - উম্মাহর জন্য দরদ ভরা দিল তৈরি করে দাও যাতে করে উম্মাহর কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে তোমার সন্তুষ্টি লাভ করে জান্নাত লাভ করতে পারি।
এমন সব প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে জানতে, প্রতিজ্ঞা করার জন্য আপনার মনকে তৈরি করতে পড়তে পারেন ড. রাগিব সারজানি রচিত ও আবু মুসআব ওসমান অনূদিত "এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমজান" শীর্ষক ছোট্ট এই পুস্তিকাখানা।
মুসলমানদের জীবনে মাহে রমযান আগমন করে পুষ্পিত বসন্তের সুবাসিত ফল্গুধারা নিয়ে, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে। কিন্তু... যথার্থ প্রস্তুতির অভাবে অনেক সময় মাহে রমযানের দিনগুলো অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। প্রস্তুতি না থাকায় আমাদের মাঝে থাকে না রোযার গুরুত্ব-অনুভব, তেলাওয়াতে কোরআনের অনির্বচনীয় স্বাদ এবং কিয়ামুল লাইল ও তারাবীহ নামাযে বিনম্রতার অনুভূতি। অথচ মহিমান্বিত এ মাসের প্রতিটি ক্ষণ ও প্রতিটি ভগ্নাংশ মুমিন বান্দার জীবনে অমূল্য সম্পদ। লেখক বলছেন, আলেম-ওলামা, দাঈ ও খতীবগণসহ উম্মাহর পথপ্রদর্শক ও শ্রেষ্ঠতম কাফেলার সদস্যগণ রমযান মাসে নিজেদের আমলের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শাবান মাস হতেই আমলের বিশেষ ধারা ও পদ্ধতি অবলম্বন করেন। আগে থেকেই তারা নিজেদেরকে নানান ইবাদতবন্দেগীতে যুক্ত করতেন। যেকারণে তারা রমযান মাসটিকে সর্বোত্তম পন্থায় ব্যবহার করতে পারতেন। এই ব্যাপারটিকে মাথায় রেখে লেখক এই বইয়ের ধারণা উপস্থাপন করেছেন। ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় আপনি আমি হয়তো আর নাও থাকতে পারি। এটাই হয়তো হতে পারে শেষ রমযান। তাই সচেতন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য-বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের ফল্গুধারায় সিক্ত এ মাসে আমলের বিষয়ে সামান্য শিথিলতা না করা। লেখক এই বইতে দেখিয়েছেন, আমরা কী কী করতে পারি যেন অন্তত এই মাসের আমলের উসিলায় আমরা আখিরাতের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি। মসজিদে জামায়াতের সাথে নামায পড়া, নামযে একাগ্রচিত্তে আল্লাহকে স্মরণ করা, নামাযে দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া, সিজদায় বেশী বেশি দোয়া করা, রোযা ও সিয়াম-সাধনা, রাত জেগে ইবাদত করা, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, আত্মীয়তা-সম্পর্কের দাবি রক্ষা করা, ইতেকাফ, তাওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা, উম্মাহ-দরদ/জাতি-চিন্তার মতো নানান কিছু পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, সাথে এগুলোর পেছনের দালিলিক প্রমাণ ও বিবরণী ও উল্লেখ করেছেন। পরামর্শগুলো কাজে লাগালে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর নৈকট্য ও প্রশান্তি লাভ করা যাবে। পড়ার আমন্ত্রণ রইল।