Jump to ratings and reviews
Rate this book

তারানাথ তান্ত্রিক #1-3

তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র

Rate this book
তারানাথ তান্ত্রিক চরিত্রটির স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণের প্রথম তারানাথ তান্ত্রিক কাহিনীতে তারানাথের এইরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় – একতলা বাড়ির গায়ে টিনের সাইনবোর্ডে লেখা আছে তারানাথ জ্যোতিবিনোদ, তারপর তারানাথের গুণ ও ক্ষমতার বর্ণনা। বিভূতিভূষণ তাঁর তারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্পে মধুসুন্দরী দেবীর আবির্ভাব ও তারানাথ তান্ত্রিকের ক্ষমতাপ্রাপ্তির কথা বলেছেন। বিভূতিভূষণের তিরোধানের পর লৌকিক ও অলৌকিক ঘটনা নিয়ে বিভূতিভূষণ-পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের কথা হত। তাইতেই উৎসাহিত হয়ে তারাদাস তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে বেশ কয়েকটি উপাখ্যান লেখেন। সেগুলি একত্র করে ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।।
তারানাথ তান্ত্রিক পাঠক মহলে সমাদৃত হওয়ায় সকলের অনুরোধে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অলাতচক্র’ নামে তারানাথকেন্দ্রিক উপন্যাসটি রচনা করেন। এটি কথাসাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পাঠকদের অনুরোধে বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিক কেন্দ্রিক দু’টি গল্প, তারাদাসের ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ গ্রন্থটি এবং ‘অলাতচক্র উপন্যাস সবগুলি একত্র করে তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র গ্রন্থটি প্রকাশিত হল। আশা করি আগ্রহী পাঠকদের এই সমগ্ৰ সংকলনটি সন্তুষ্ট করবে।


সূচি -

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প

তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
তারানাথ তান্ত্রিক
অলাতচক্র

465 pages, Hardcover

First published February 1, 2019

105 people are currently reading
726 people want to read

About the author

Bibhutibhushan Bandyopadhyay

203 books1,089 followers
This author has secondary bangla profile-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.

Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.

The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
494 (62%)
4 stars
252 (32%)
3 stars
37 (4%)
2 stars
3 (<1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 102 reviews
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews85 followers
October 14, 2022
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কলকাতা শহর। রেডিও তে দিনরাত যুদ্ধের ক্রমবিবরণী আর দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি সহ নানা সংবাদ।সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুৃষ অরণ্যচারী থেকে নগরবাসী হয়েছে।দিন দিন মানুষ প্রকৃতি থেকে বিমুখ হয়ে যন্ত্রের দিকে আগাচ্ছে। গ্রাম বাংলার জীবন থেকে শহুরে জীবনে অভ্যস্ততা বাড়ছে। আদিম কুসংস্কার আর অন্ধ অলৌকিক বিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে যুক্তি দিয়ে সব কিছু যাচাইয়ের প্রবণতা বিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানুষদের। প্রাচীন গাল-গল্প বিশ্বাস করা তো দূরের কথা, শুনতেই হাস্যকর লাগে। তবুও মানুষের গল্প শোনবার এক অদম্য চাহিদা রয়েছে।বিশেষ করে অতি প্রাকৃত আর অলৌকিক গল্পের মোহ তো ভীষণ। গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা কোনভাবেই গল্পের স্বাদ আস্বাদনে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনা। তো এই সব গল্প শোনার লোভে বইয়ের কথক আর তার বন্ধু কিশোরী সেন সুযোগ পেলেই হাজির হয় মট লেনের তারানাথ তান্ত্রিকের বাড়িতে।এবং অবশ্যই 'পাসিং শো' সিগারেটের প্যাকেট সাথে করে, কখনো সখনো তেলেভাজা বা বেগুনী। ' পাসিং শো' সিগারেট তারানাথের ভীষণ প্রিয়।সিগারেটে গভীর টান,গভীর গল্পে নিয়ে যেতে পারে। গল্প শুনতে শুনতে এটা সেটা খেতে বেশ লাগে।

তারনাথ তান্ত্রিক অদ্ভুত মানুষ। আপাতত মানুষের কোষ্ঠী বিচার,হাত দেখা, ভবিষ্যৎগণনা করে জীবিকা নির্বাহ করে।পসার একদম নেই।এই আধুনিক যুগে এসবে মানুষের বিশ্বাস প্রায় উঠে যাচ্ছে। তাই তারানাথের দিনকাল বেশ মন্দা।একটা সময় নাকি তারানাথের বাড়িতে ভীড় লেগে থাকতো মানুষের।প্রচুর আয় হতো।এখন সে সব দিন গত। তবে তারানাথ নিজেকে সাধারণ ভেল্কিবাজ তান্ত্রিক বলতে না'রাজ। তারানাথ কৈশোর থেকেই পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছে।লাভ করেছে অনেক সাধুসঙ্গ, তন্ত্রসাধনা আর শব সাধনা করেছে।রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা,যা দিয়ে সে অনেক আশ্চর্য কান্ড করেছে।তারানাথের একটা প্রত্যক্ষ গুণ রয়েছে।সেটা হলো,গল্প বলার আশ্চর্য ক্ষমতা।তারানাথ অবশ্য গল্প বলতে না'রাজ।বলে সবই বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা। তারানাথের ঝুলিতে গল্পের অভাব নেই। সেসব গল্প অতিপ্রাকৃত, অলৌকিক আর অভূতপূর্ব। তারানাথের গল্প কিংবা জীবন কাহিনী সবই অদ্ভুত, সাধারণ অভিজ্ঞতার বাইরের ব্যাপার। কিশোরী সেন যতই উশখুশ করুক না কেন গল্পের যুক্তিগ্রাহ্যতা নিয়ে,তারানাথ যখন বলতে থাকে তখন সেগুলো পরম বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হয়। তারানাথের গল্পের বিষয়বস্তু এক ভিন্ন জগতের সেখানে দেবী,পিশাচ,কাপালিক,বেতাল,ব্রহ্মদৈত্য,প্রভৃতিরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করে।

তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো নিছক অতিপ্রাকৃত রোমাঞ্চ গল্প নয়। তারানাথ তান্ত্রিকের সব গল্পগুলো ই অলৌকিকতা ছাপিয়ে হয়ে উঠে গভীর মানবিক। তারানাথ তান্ত্রিক বিচিত্র জীবনযাপন করে ও মনের দিক থেকে সারল্য আর মানবিকতায় পরিপূর্ণ।তারানাথের স্রষ্টার মতো তারানাথও বাংলার প্রকৃতির সাথে ভীষণ একাত্ম। সারা বাংলার কত নদী,পথ,ঘাট,মাঠের কি অপরুপ বর্ণনা!গ্রাম বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে সাথে বাংলার চিরায়ত সমাজের রীতি, খাদ্যবৈচিত্র,সংস্কৃতির প্রতি তারানাথের রয়েছে গভীরতর অনুরাগ। সবশেষে তারানাথের রয়েছে সৃষ্টির রহস্যাবৃত শক্তিসমূহের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। অবশেষে বলা যায় তারানাথ তান্ত্রিকের সান্নিধ্য ঢের দিন মনে থাকবে।

পিতা-পুত্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো। লৌকিকতার সীমা পেরিয়ে চমৎকার এই জীবনপাঠের জন্য..
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
219 reviews288 followers
February 12, 2025
সিরিজ শেষ করেছি, তবু আবার পাঁচটা গল্প বাদ পড়ে যায় দেখে সমগ্রটা নিয়ে বসেছিলাম। গল্পগুলোতে আর নতুনত্ব পাচ্ছিলাম না তেমন... তবু পড়তে খারাপ না। এই গল্পগুলোর জন্যই রেটিং এক তারা কম দিলাম।

তারানাথকে নিয়ে এতদিন অনেক কিছু বলেছি। তার আজগুবি তন্ত্র-সাধনা‌র কথা সত্য‌ কিংবা মিথ্যা যাই হোক, সে যে মানুষ ভালো তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সবসময়ই মন্ত্রতন্ত্র ভালো কাজেই‌ ব্যবহার করেছেন, নিম্নগোছের প্রেতসাধনার ধারকাছ দিয়েও যাননি। চেষ্টাও করেননি...

এখন আপনি আমাকে কিশোরী সেনের মতো‌ প্রশ্ন করতেই পারেন, 'তারানাথের পক্ষে কী বলছেন এসব! তার সব কথাই বিশ্বাস হলো‌‌ বুঝি?' ... আমি বলব, সময়টা তো ভালো কাটল!

▫️▫️▫️

পুনশ্চ: সম্প্রতি তারাদাসের পুত্র তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তারানাথের প্রত্যাবর্তন' বের হয়েছে। আবার গপ্পো মীরের ঠেকে 'ভণ্ড তারানাথ' নামে তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা নতুন এপিসোড এসেছে। কেউ কি বলতে পারেন, এই দুটো এক‌ই কিনা?
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
January 26, 2021
কোন ভূত প্রেত নাই, তবু গা ছমছম করা একটা অনুভূতি দেয় গল্পগুলো।

আমি সাধারণত হরর কিছু পড়িনা, রাতে ঘুমাতে পারবোনা বলে। সাহস করে এই বইটা যখন পড়তে নিলাম তখন দেখি কিন্ডেলে পড়া যাচ্ছেনা ভালো প্রিন্ট না দেখে, পরে একটা অনলাইন পেজে বইটা অর্ডার-ই করে ফেললাম। কিন্তু তারা বইটা নিয়ে আসতে এতো দেরি করতেছে, তাই যখন দেখলাম Litmosphere(fb group) এ একজন আপু বইটা সফটকপিটাই পড়েছেন, তখন লিংক চেয়ে বসলাম। আপু একটা মোবি লিংক দিল, যেটার প্রিন্ট অনেক ভালো, কিন্তু সমস্যা হল, এখানে বিভূতি বাবুর লেখা গল্প দুটি নেই। আর অনেক বানান ভুল ছিল, তবে তার জন্য পড়তে কোন সমস্যা হয়নি, বরং গল্পগুলো শীতের রাতে পড়ে বেশ মজা পেয়েছি।
আফসোস, এরকম অতিপ্রাকৃত গল্প এখন আর কেউ লিখেনা। :(
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
September 25, 2024
অবশেষে পুরো সমগ্রই শেষ করে ফেললাম এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়। দুটো উপন্যাস ও বেশ কয়েকটা ছোটগল্প নিয়ে এই সমগ্র। প্রত্যেকটাতেই গল্প বলিয়ে তারানাথ তান্ত্রিক। নিজের অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছে সে পাঠককে। কয়েকটা ভয়ের আবার কয়েকটা গা শিউরে ওঠে, আবার কোনোটা মজার। সবমিলিয়ে বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা। সব তান্ত্রিকের সেরা তান্ত্রিক যে তারানাথ, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
Profile Image for Israt Jahan.
64 reviews4 followers
August 31, 2024
আকাশে মেঘ থমথমে অবস্থা দেখলেই মনে কেমন একটা কি করি- কি করি ভাব হয়। কারো সাথে আয়েশ করে বসে কাপ ভর্তি চা আর সর্ষের তেল দিয়ে মুড়ি মেখে খেতে খেতে ভয়ের গল্প করতে মন চায়। যেমনটা পাড়াগাঁয়ের মানুষরা করে আরকি।

জুন মাসের এমনই একটা বাদলের দিনেই বই-তাকের এক কোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা তারানাথকে খুঁজে পেলাম।আমাদের আলাপ শেষে বুঝতে দেরি হলো না ইনিই সেই যাকে গল্পপ্রেমীরা ঝড়বাদলার দিনে খুব করে চায়।

এরপর তিনি আর রেহাই পেলেন না, আকাশ কালো হোক কিংবা বৃষ্টি... তারানাথের গল্প বলতেই হবে। এভাবেই গল্প শুনতে শুনতে দু'মাস পেড়িয়ে আজ বইটার শেষ নামালাম।

[ ০১.০৯.২০২৪ ]



ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই অথচ ফাঁকা ঘরে পড়তে গেলে গায়ে কাটা দেয়। কি সাঙ্ঘাতিক!!
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
November 19, 2023
আমি চোখ খুললাম
আর বৃষ্টির দিকে তাকালাম,
এবং এটার ফোঁটা আমার মাথায় পড়ে
আর আমার মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয়।

সেদিন বৃষ্টির ফোঁটা কি আমার মাথায় পড়েছিল? আজও মনে করতে পারিনি। কিন্ত সেই ঝুমবৃষ্টির রাতের শীতলতায় আমার ঘুম ভেঙে যায়। এমন অসময়ে সহজে আর ঘুম আসতে চায় না। সাধারণত এমন সময়ে আমি কখনো বই পড়ি না কিন্তু কি ভেবে ঐদিন বিভূতির তারানাথ তান্ত্রিক হাতে নিয়েছিলাম। কাহিনির ভিতরেও বৃষ্টির বর্ণনা আছে দেখে পড়ার শুরুতেই অবাক হলাম। পড়ার সময় বইয়ের কাহিনির সাথে যদি বাস্তবতার কিছু অংশ মিলে যায় স্বাভাবিকভাবে আপনার মনের অজান্তেই কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি হবে। এসব দূরে সরিয়ে আমি টানা পড়ে গেছি তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্রে বিভূতির গল্প দুটো। এক টানে প্রথম গল্পটা পড়ার পর চলে আসি মধুসুন্দরী দেবীর আবির্ভাব গল্পটিতে। এই গল্পে বলা তারানাথের জীবনের এক অদ্ভুত কাহিনি আজ আপনাদের শোনাবো।

কাহিনির শুরুতেই দেখা যায় গল্পকথক মোহনবাগান ক্লাবের শোচনীয় পরাজয়ের পর মনটা একটু চাঙ্গা করার জন্য ধর্মতলা মোড়ের মট লেনে এক জ্যোতিষীর বাড়িতে আড্ডা দিতে যান। সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে তাদের গল্প ধীরে ধীরে জমে ওঠে। জ্যোতিষী তারানাথ ছোটবেলা থেকেই সাধু সন্ন্যাসীদের সাহচার্যে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। তার গল্পের ঝুলিতে রয়েছে অলৌকিক, রহস্যময় সব স্মৃতি। কিন্তু নিজের একান্ত কিছু স্মৃতি থাকে যা কেউ কখনো বলতে চায় না; সেরকমই একটা ঘটনা হঠাৎ বলতে শুরু করেন। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আপনার জীবনের সবচেয়ে ট্রাজিক ঘটনা কি হতে পারে? অবশ্যই প্রেমের ব্যর্থতা অথবা কোনো মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। সেই বিরহ বা সুখস্মৃতির কথা বলতে বলতে তারানাথ আমাদের নিয়ে গেলেন বরাকর নদীর ধারে শালবনের মধ্যে এক সাধু বাবার কাছে। অভিজ্ঞতা থেকেই তারানাথ বুঝতে পারেন সাধু বেশ শক্তিশালী তান্ত্রিক। তন্ত্রসাধনা জানার দুর্বার নেশায় পণ করেন, এই সাধু বাবার পিছ তিনি ছাড়বেন না। এক শুক্লপক্ষের ফুটফুটে জোসনা রাতে তারানাথ দেখলেন সাধু বাবা এক পরমা সুন্দরী রমণীর সাথে কথা বলছেন। এভাবে পরপর কয়েকদিন দেখার পর মেয়েটির প্রতি তার অমোঘ আকর্ষণ শুরু হলো। কে এই মেয়ে? এত নির্জন রাতে, জনবসতি থেকে এত দূরে যার দেখা মেলে? এতটাই প্রবল সে আকর্ষণ যে তার জন্য সাধুর পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সাধনা করতেও রাজি তারানাথ। সে কি আদৌ মানুষ, কোনো জিন ভূত নয় তো। নাকি কোনো সত্যিকারের দেবী?  

এই গল্পে বিভূতির সরল গদ্যশৈলীর মাধুর্যের সাথে মিশে আছে অসাধারণ‌ কল্পনাশক্তি। এই গল্প পড়ার পর সেটা বাস্তব না অবাস্তব পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে পাঠকের মনে। আমাদের অজানা অদৃশ্য জগৎ চিরন্তন অপরিবর্তনীয় পূর্ণ; আমাদের দৃশ্যমান জগত তারই একটা অপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। বিভূতির অসাধারণ লেখনশৈলীর গুনে অপূর্ণের মধ্যে পূর্ণের, খন্ডের মধ্যে অখণ্ডের আবিষ্কার ও প্রকাশ ঘটেছে। কাহিনি এত সুন্দরভাবে গল্প বলার ঢঙে এগিয়েছে আপনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকবেন। লেখক তারানাথ তান্ত্রিক নামে যে চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তাকে বাস্তব জগতের একজন তন্ত্র-মন্ত্র সাধনা করা সাধুর থেকে আলাদা করতে পারিনি। গল্পকথকের বয়ানে তারানাথ চরিত্রের অনেক দিক চলে আসবে। তার জীবনে তিনটি প্রবল নেশা ছিল ঘোড়দৌড়, মদ ও নারী। গল্পে তারানাথের জীবনের প্রথম দিকের প্রেমের কাহিনি যৌবনের আবেগি টানের লালিত্যে উঠে এসেছে। 

তন্ত্র সাধনায় ভূতডামরে নানা রকমের উপদেবীদের নিয়ে কারবার আছে। সাধনার বশীভূত হয়ে এদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার আপন হয়ে থাকতে পারে। আপন করে কোনো যোগিনীকে প্রণয়িনী হিসেবে নেয়া ভয়ংকর সর্বনাশের কারণ হতে পারে। সাধুর কথা উপেক্ষা করে তারানাথ প্রেমিকা হিসেবে পেতে চাইলেন এক অপরিচিতা যোগিনীকে। একরাতে নীল কাপড় পরিহিত কস্তুরীগন্ধমোদিতা যোগিনী তার প্রেমে সাড়া দিলেন। তারানাথের সাথে মধুসুন্দরী দেবীর সেই প্রেমে ছিল এক অদ্ভুত মাদকতা। মধুসুন্দরী দেবী প্রতি রাতেই তারানাথকে দেখা দিতেন। নদীর তীরে সেই নির্জন জায়গায় মানুষ যোগিনীর প্রণয় গভীর থেকে গভীরে চলে যায়। তারানাথ নিজেই বলেন, তার জীবনে শুধুমাত্র তিন মাস তিনি সত্যিকার অর্থে বেঁচে ছিলেন আর সেই তিন মাস তিনি ছিলেন মধুসুন্দরী দেবীর সাথে। অতিপ্রাকৃত সম্পর্ক হলেও তাদের মধ্যকার নিবিড় বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা স্বর্গীয় অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল। 

মধুসুন্দরী তারানাথকে শুধু সঙ্গ আর ভালোবাসাই দিয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। ত্রিকালদর্শী এই দেবী তাকে সব বিষয়ে সযত্নে আগলে রাখতেন। আবার অন্য মেয়ের সাথে কথা বলায় কালভৈরবীর মতো মূর্তি ধারণ করতেন, অভিমান করতেন ঠোঁট ফুলিয়ে। এই রকম প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে যদি পিশাচী যোগিনী  আপনার ঘাড় মটকে দেয়? নিমেষেই যদি শেষ হয়ে যায় আপনার প্রতি তার মায়া মমতা, তখন কি করবেন? পুরো গল্প জুড়েই মায়াবী, পিশাচিনী এই দেবীর রহস্যে ভরা। তবে একজন মানুষ যদি দেবীকে সত্যিকার অর্থে চায় তার জন্য মধুসুন্দরীর মন সর্বদাই তৃষিত হয়ে থাকবে। সেজন্যই মধুসুন্দরী দেবী তারানাথকে বলেন, নদীর তীরের তিন মাস তাদের এই সহঅবস্থানের কথা দেবী কখনো ভুলতে পারবেন না। তারানাথ আর মধুসুন্দরীর স্মৃতিগুলো বিরহ-বিষাদ মাখা অসম্ভব প্রেম কাব্য যেখানে একজন মানুষ ও দেবীর মধ্যে কখনোই বাস্তবে সংসার করা সম্ভব নয়। কবি তার কাব্যে এই প্রেমের হৃদয়স্পর্শী এক রূপ একেঁছেন__

এখানে প্রেমিক যারা তারা বড় বেশি ক্ষণিকের 
স্মৃতির পাথরে গড়ে অস্তিত্বের চলন্ত বাসর;
বিরুদ্ধ বাস্তবতার মুখে সমর্পিত দেবীর লাবণ্য 
শশ্মানে অবমুক্ত আত্মার সঙ্গীত শোনে। 

অসম যুগল হলেও মধুসুন্দরী দেবী তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে বহু দূরে চলে যেতে চেয়েছিলেন। গল্পের মূখ্য চরিত্র এই দুইজনকে দিয়েই তাদের মধ্যকার সম্পর্কের এমন ভৌতিক উপস্থাপনা অসাধারণ ছিল। কাহিনির বুনটের সাথে এই গল্পের চরিত্রায়ন হয়েছে শক্ত গাঁথুনীতে। উপন্যাসিকার আকার পেলে হয়তো পড়ে আরো তৃপ্তি পেতাম। মধুসুন্দরী দেবীকে নিয়ে তারানাথের ব্যাকুলতা আপনার হৃদয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি করতে বাধ্য। তান্ত্রিকের সাথে জীবন গড়তে মধুসুন্দরীর সেই স্বপ্ন কি আসলেই বাস্তবায়িত হয়েছিল? সেই গল্প আজ আর আপনাদেরকে বলবো না, আপনারা নিজেরাই তারানাথ তান্ত্রিক পড়ে দেখুন। 

একবিংশ শতাব্দীতে বিজলির আলোতে, সিমেন্ট বালুর দালানে বসে তারানাথ তান্ত্রিক পড়ে হয়তো আর ভয় পাবেন না। কিন্তু সব গল্পের কাহিনি কি বইয়ের পাতার সাথেই শেষ হয়ে যায়? একটা বিষয় কিন্তু আমার অবচেতন মনে রেশ থেকেই গেছে। বিভূতি কি মধুসুন্দরী দেবীকে সৃষ্টি করেছেন তার কল্পনায় না বাস্তবে এরকম কেউ ছিলেন? এই প্রশ্নটা করার একটা বড় কারণ আপনার নিশ্চয়ই জানেন বিভূতির প্রথম স্ত্রী গৌরী দেবী অকালে মারা যান। বিভূতি কখনোই তার প্রথম স্ত্রীকে ভুলতে পারেননি। তারানাথ তান্ত্রিক তার নিজের সৃষ্টি করা কাল্পনিক চরিত্র হলেও বাস্তবে বিভূতিভূষণ স্ত্রীর শোকে অনেকদিন সন্ন্যাসীর মত জীবন যাপন করেছিলেন। এমন কি হতে পারে না এই গল্পের আড়ালে যে স্বল্প সময়ের সুখস্মৃতি বিভূতি লিখেছেন তা গৌরী দেবীকে নিয়েই লেখা? তারানাথকে দিয়ে কি তার প্রেমের স্মৃতিচারণ করেছেন না বাস্তবেই তার সাথে দেখা হয়েছিল কোনো রূপবতী অশরীরীর? গল্প পড়ে আমার এটাই উপলব্ধি হয়েছে বিভূতি আর তারানাথ উভয়েই বড্ড রহস্যময়। কোনটা বাস্তব আর কোনটা কাল্পনিক সেই ভেলকি দেখাতে দুইজনেই সমান তালে পারঙ্গম__🔸মানুষের মন আসলে একটাই.…মায়ার আবরণে আলাদা আলাদা দেখ��য়। পর্দা টাঙিয়ে দিলে ওপারে কী আছে দেখায় যায় না, পর্দা সরিয়ে দিয়ে আবার সব স্পট দেখা যায়। মায়ার পর্দা সরিয়ে দিলে সবাই এক।🔸
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
December 19, 2020
তারানাথ একজন তান্ত্রিক। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন তন্ত্রসিদ্ধপুরুষের সহচররূপে থেকে কিছু ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন যা আবার লোভের ফলে এই ক্ষমতা হারিয়েও ফেলেন। শেষ বয়সে এসে দুই বন্ধুর কাছে এসব ঘটনার বিবরণও দিয়েছেন। অনেক��া বলা যায় তারানাথ তার জীবনকথাই বলেছেন।
তারানাথকে নিয়ে বাবা ছেলে উভয়েই লিখেছেন। অসাধারণই বলা যায়। দুইজনই লেখার মধ্যে টান টান ভাব বজায় রেখেছেন। আর বাংলা সাহিত্যে এর চেয়ে ভাল কোন হরর প্লট আছে বলেও আমার জানা নেই। সো সব পাঠকের উচিৎ হবে এ বইটা পড়ে ফেলা।
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
December 8, 2021
কেউ কেউ বলার মত গল্পও বাচনভঙ্গির দোষে নষ্ট করে ফেলে , আর তারানাথ নিতান্ত তুচ্ছ ঘটনা বলার গুণে চিত্রাকর্ষক করে তোলে । ' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্রে সাধারণ ডাল ভাত খাওয়া জীবনের কথা নয় , যেন অচেনা ভাষায় অচেনা সুরে অদ্ভুত গান শুনিয়েছেন ।
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
June 18, 2019
তারানাথের গল্প গুলো ভুতপ্রেতের গল্পকে একটা ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভালো লাগাময় গা ছমছমে গল্প।

১৯৩৯, কলকাতার এক চায়ের দোকান। পা দোলাতে দোলাতে হুল্লোড় করার সময় একেবারেই নয়। উথালপাতাল করা সেই সময়ে সকলেরই কান তখন রেডিওর দিকে। খবর আসে, হিটলারের সেনাবাহিনী পোল্যান্ড দখল করে ফেলেছে।

চায়ের দোকানে আড্ডারত দুই বন্ধুর উৎকণ্ঠা, এক দিকে দুর্ভিক্ষ, আর এক দিকে যুদ্ধ। অর্থাৎ মৃত্যুই একমাত্র রিয়্যালিটি। এই দশা থেকে মুক্তির কি কোনও উপায় নেই?

আছে অবশ্যই আছে। একজনই বাঁচাতে পারেন। তিনি তারানাথ তান্ত্রিক।দুই বন্ধু চলেছেন তারানাথের সঙ্গে দেখা করতে। এক বন্ধুর আবার তন্ত্রসাধনার মতো ‘বোগাস’ জিনিসপত্র একেবারেই পোষায় না। কিন্তু অপর জন নাছোড়বান্দা। দু’জনে এসে দাঁডালেন তারানাথের দুয়োরে।

সাইনবোর্ডে লেখা, তারানাথ জ্যোতির্বিদ্যাবিনোদ। হাত দেখানো, সঙ্গে কোষ্ঠী বিচার করা হয়। গ্রহ শান্তির কবচ তন্ত্রমতে প্রস্তুতও করেন তারানাথ। এমনকি এ হেন তন্ত্রসাধকের কাছে বড় বড় রাজা-মহারাজাদের সার্টিফিকেট অবধি আছে। তবে খরচা নিমিত্ত মাত্র। বড়জোড় একটা সিগারেট চেয়ে বসতে পারেন তান্ত্রিক মহাশয়। বদলে গালভরা গল্প। গল্পের পর গল্প। লোকটার বড় অদ্ভুত ইতিহাস।

"গল্প নয়। সত্যি কথা। আর সেটা মারাত্নক।'"'

ওই দুই বন্ধুকে বলেন তারানাথ। একটা সিগারেটেরও আবদার জানান পাঁচতারা যুক্ত তান্ত্রিক।আর তার পরেই অলৌকিক আর অতিলৌকিক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ে তারানাথ বলে ওঠেন,

"মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।"

Image Hosted by UploadHouse.com

১৯৪০ সালে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন, তবে তিনি এই চরিত্রটি সমন্বিত দুটি ছোট গল্প লিখেছিলেন এবং এই গল্পের মাধ্যমে তারনাথের বেশিরভাগ জীবন প্রধানত প্রদর্শিত হয়।

বিভূতিভূষণের প্রয়াণের পরে তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতিগহীন থেকে তুলে আনেন তারানাথকে। তারনাথ তান্ত্রিক সমন্বিত ছয়টি গল্প তাঁর পুত্র তারানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা তারানাথ তান্ত্রিক (১৯৮৫) এবং তারানাথকে কেন্দ্র করে লেখেন ‘অলাতচক্র’(২০০৩) নামের একটি উপন্যাস।

Profile Image for Dr. Md. Abul Hasnat  Abdullah.
29 reviews40 followers
August 16, 2024
বাংলা সাহিত্যের নিজস্ব সম্পদ বলতে এগুলোই। আর কোন সাহিত্যে যেসব পাওয়া যাবেনা। সম্ভব না। আমাদের নিজস্ব ভৌগলিকগত কাহিনি, বাংলায় জন্ম না নিলে স্বাদটাও ঠিক চেটেপুটে নেয়া সম্ভব না। তারানাথ তান্ত্রিক, তুমুল বৃষ্টির দিনে মুড়ি-পেঁয়াজ নিয়ে বসে বসে পড়তে এখনো তোমার জুড়ি নেই।
Profile Image for Bookish Bro.
3 reviews4 followers
August 8, 2022
ভূতের গপ্পো পাবো বলে পড়া ধরেছিলাম। আরম্ভ করে দেখি ভূত নেই। তাহলে কিসের?
কিছুদূর পড়ার পর ভেবেছি হয়তো প্রেতসাধনার বই। ওমা, দেখি কি তাও না!
পড়তে পড়তে বুঝলাম ভূত-প্রেত আর তন্ত্র সাধনার মাঝে আকাশপাতাল তফাৎ।
বাঙালি জন্মের পর থেকেই ভূতের ভয় পেতে অভ্যস্ত।রূপকথা,লোককাহিনি, পৌরাণিক গল্প সবকিছুতেই কোনো না কোনোভাবে ভূতের হাল্কা ছোঁয়া হলেও আছে। তবে এখানে বিভূতিভূষণ আর তারাদাস দুই বাপ-ব্যাটা মিলে অন্য পথে হেঁটেছেন। ওদের এই জার্নিতে ভূত নেই। ওরা পোট্রে করেছেন এমন একটা চরিত্র যে কিনা অতিপ্রাকৃত ব্যপার নিয়ে গল্প বলে। এই গল্প কথকের নাম ই তারানাথ তান্ত্রিক।
তারানাথ অতি বাল্যে ভবঘুরে থেকে তন্ত্র সাধনায় প্রবেশ করেছিলো। তারই জীবন অভিজ্ঞতা বর্ণনা হয়েছে নানাভাবে। অদ্ভুত সব গল্প সে বলে যায় চা, তেলেভাজা আর রানিং শো নামক সিগারেটে টান দিতে দিতে।
.
বিভূতিবাবুর সৃষ্টি এই তারানাথ।তারানাথকে নিয়ে মাত্র দুটো গল্প উনার লিখা
১) তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প
২) মধুসুন্দরী দেবীর আবির্ভাব।
এই দুটো বাদে বাকি সবকটা গল্প আর একটা উপন্যাস (অলাতচক্র) লিখেছেন বিভূতিবাবুর ছেলে তারাদাস বন্দোপাধ্যায়।
.
বিভূতিভূষণ নিজের জীবনে তন্ত্রমন্ত্র বিশ্বাস করতেন খুব। সেই আকর্ষণ থেকেই তারানাথকে এঁকেছেন তিনি কালি ও কলমে।প্রথম স্ত্রী গৌরীদেবীর মৃত্যুর পর বিভূতিভূষণ খুব আঘাত পেয়েছিলেন। অই সময় একদিন টালিগঞ্জের দিকে একলা ঘুরতে ঘুরতে তাঁর দেখা হয়েছিল এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে। তিনিই বিভূতিকে অশরীরী আত্মার বিচরণ সম্পর্কে ব্রহ্মসূত্রের কথা বলেছিলেন। তাঁর কাছে বিভূতি অবাক হয়ে শুনতেন, বৃহদারণ্যকে জনকসভায় মহর্ষি আত্মা-তত্ত্বের কী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সেই শুরু হয়েছিল। তারপরে সারা জীবন বিভূতিভূষণ বিশ্বাস করে গিয়েছিলেন আত্মা-চর্চায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, আত্মাকে ডাকলে তাঁকে পাওয়া যায়; শুধু ডাকার মতো ডাকতে জানা চাই। মৃত গৌরীকে দেখতে চেয়েই তিনি সেই সন্ন্যাসীর কাছেই শিখেছিলেন ‘মণ্ডল’। অর্থাৎ প্ল্যানচেটে আত্মাকে ডাকা। দরজা-জানলা বন্ধ করে, ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে ডাকতেন তাঁর প্রিয় গৌরীকে। গৌরীর সাথে কথা বলতেন একা একা গভীর নিশীথে। গৌরীর সাড়া না পেলে কান্নায় প্রিয়তমার শোকে আকুল হতেন। সন্ন্যাসীর কাছ থেকে আত্মা-আবাহনের কৌশলটি রপ্ত করার পর সেটা নিয়ে কয়েক দিন তুমুল মেতেছিলেন তিনি। বিস্তৃত এই পরলোকচর্চার স্বাদ পেয়ে, নাম লিখিয়েছিলেন কলেজ স্কোয়ারের থিওসফিক্যাল সোসাইটিতেও।
বিভূতিভূষণের দ্বিতীয় স্ত্রী কল্যাণীদেবীর পিতা ষোড়শীকান্ত নিজেই একজন তান্ত্রিক ছিলেন। দীক্ষাও নিয়েছিলেন এক ভৈরবীর কাছে। তাঁকে নিয়েই বিভূতিভূষণ ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ লিখেছিলেন।
জামাইয়ের পরলোক নিয়ে অতি উৎসাহে অবাকই হতেন ষোড়শীকান্ত। জীবনের শেষ পর্বে বিভূতিভূষণ যখন ব্যারাকপুরে ছিলেন তখন সেখানে দেখাও পেয়েছিলেন এক ভৈরবীর। বিভূতি মেতেও উঠেছিলেন তাঁর সঙ্গে। ভৈরবী শবসাধনা করতে এসেছেন জেনে, বিভূতিও তাঁর কাছে নিত্য যাতায়াত বাড়িয়েছিলেন।
.
যাই হোক ধান ভানতে শীবের গীত গাইছি।মূল আলোচনায় ফিরি। বিভূতিভূষণের লিগ্যাসি অনেক দিকেই টানার চেষ্টা করেছিলেন তারাদাস বন্দোপাধ্যায়। পথের পাঁচালির অপুকে নিয়েও লিখেছেন তিনি৷ সেই সাথে তারানাথকেও টেনেছেন। তবে এই টানা হ্যাঁচ���়ায় একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, বিভূতির লেখা আর তারাদাসের লেখার মাঝে বিস্তর ফারাক। পিতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি পুত্র।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভূতিভূষণের লেখায় উপমার ছড়াছড়ি, ঘটনার বর্ণনা আর পরিবেশের বিস্তৃত প্রকাশের ভঙ্গিটা বেশি উপভোগ করি।সেই সাথে তার লেখনীতে ক্যারেক্টার পোট্রে করার ব্যাপারটা থাকে তীব্রভাবে। অন্যদিকে তারাদাস বাবুর লেখায় এই বিষয়গুলো অতোটা আসেনি। উনি সরলরেখায় গল্প বলার চেষ্টা করেছেন মাত্র। ইনটেন্স ব্যাপারটা ছিলো না। তবে তারাদাসের লেখাও সুখপাঠ্য। তারানাথকে নিয়ে লিখা অলাতচক্র উপন্যাসটা ভালো লেগেছে। অন্য গল্পগুলো মাঝামাঝিগোছের ছিলো।
এই বইটা নিয়ে সবাই দেখি খুব হাইপড। আমি সব সময় অতি জনপ্রিয় জিনিসের প্রতি সরু চোখে তাকাই। এর ক্ষেত্রেও এমনটাই করেছিলাম। পড়ার পর অতিমুগ্ধতা আসেনি আবার বিরক্ত ও হইনি। নির্মল গল্প পড়ার আনন্দ পেয়েছি।
Profile Image for Rizal Kabir.
Author 2 books45 followers
December 20, 2020
বাংলা ভাষায় সৃষ্ট অন্যতম রহস্যময় এবং সফল চরিত্র তারানাথ। তান্ত্রিক বলতে ছোটবেলা থেকে যে চিত্রটি ভেসে ওঠে, তারানাথ এর ধারেকাছে কিছু নন। শুভক্ষণে জন্ম নিয়ে পরবর্তিতে সিদ্ধিলাভ, ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলেও তিনি সংসারী, প্রবীণ এক লোক। কখনো সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে, কখনো কলকাতার ‘তেলেভাজা’ খেতে খেতে মট্‌ লেনের সাদামাটা এক বাড়িতে তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ একের পর এক আধিভৌতিক গল্পের জাল বিছিয়ে গেছেন গোটা বইজুড়ে।

‘তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র’ মূলত তিনটি বইয়ের সংকলন। বিভূতিভূষণের হাতে এই চরিত্রের সূচনা হলেও তারানাথের পূর্ণতা তার ছেলে তারাদাস বন্দোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই। ঘর ছেড়ে অজানার পথে, সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করতে বেরিয়ে পড়া তারানাথের বিচিত্র, অলৌকিক, অতিপ্রাকৃতিক কাহিনীগুলোর বেশিরভাগই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। সূতোয় টান পড়ে পূর্বপুরুষের কিছু ঘটনাও উঠে এসেছে, তবে সবগুলোই সমানভাবে জমে গিয়েছে বইয়ের আবহের সাথে।

বইয়ের গল্পগুলো কোনটিই ঠিক পিলে চমকানো অথবা অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেয়া ভৌতিক নয়। সবগুলো কাহিনীর সাথেই বেশির ভাগ অংশে মিশে আছে বাংলার সামাজিকতা, রীতিনীতি কিংবা নিত্যনৈমিত্তিক জীবন। পরিবেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েই ঘটেছে একেকটি ঘটনা। যেমন – তারানাথ নিজেই বলেছেনঃ
আমি জীবনের গল্প বলি, জীবন যেমন বিচিত্র উপলব্ধির মালা দিয়ে গাঁথা, আমার গল্পও তাই। কখনও মেঘ, কখনও রোদ্দুর।

বলাই বাহুল্যঃ বিভূতিভূষণ আর তারাদাস – দুজনে মিলে পাঠককে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক দোলাচলে নিয়ে গিয়েছেন। চেনাজানা-ব্যস্ত নাগরিক জীবনের বাইরে, ঘরছাড়া তারানাথের জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাখ্যাতীত সব ঘটনার বর্ণনা পড়তে গিয়ে গা ছমছম করেছে প্রায়ই। চারপাশের অবিশ্বাস্য সুন্দর বর্ণনা বিভূতিভূষণের লেখার ট্রেডমার্ক – কিন্তু তারাদাসও দেখলাম কম যান নি। পাহাড় কিংবা ফুল, গ্রামের জলাশয়, সন্ধ্যার আকাশ, জমিদারবাড়ি, পূজোর আড়ম্বর, অবিশ্রান্ত বর্ষা, মুখুজ্জেবাড়ির খাবার – বাদ যায় নি কিছুই। অশরীরীকে উপস্থিত করতে পরিবেশকে যেভাবে উপস্থাপন করতে হয় – ঠিক সেভাবেই শব্দের গাঁথুনী দিয়ে সাজিয়েছেন লেখক।

পড়তে পড়তে কিছু কথা অন্তরের অন্তঃস্থল স্পর্শ করেছে। প্রায়ই সাদামাটা কথার মাঝে গভীরতায় ডুব দিয়েছেন লেখক। রহস্য, অলৌকিকতার মাঝেই বারবার বড় হয়ে উঠেছে মানবতা, জীবনবোধ। আর স্বাভাবিকভাবেই – হিন্দুধর্মের বিভিন্ন লোকাচার, পূজো, রীতি প্রাধান্য পেয়েছে সবগুলো গল্পেই। এর মাঝেই মধুসুন্দরী দেবী এসেছেন, মাতু পাগলীর সান্নিধ্য লাভ করেছেন তারানাথ, দেবদর্শনের জমিদারবাড়িতে আগমন ঘটেছে মঙ্গলবারতার।
কেবল মনে হয় কখন সন্ধ্যা নামবে বরাকর নদীর শালবনে, কখন দেবী মধুসুন্দরী নায়িকার বেশে আসবেন! সারারাত্রি কোথা দিয়ে কেটে যাবে স্বপ্নের মতো, নেশার ঘোরের মতো। আকাশ, নক্ষত্র, দিক্‌বিদিকের জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যাবে কয়েক প্রহরের জন্যে—কয়েক প্রহরের জন্যে সময় স্থির হয়ে নিশ্চল হয়ে স্থাণুর মতো অচল হয়ে থেমে থাকবে বরাকর নদীতীরের বনপ্রাঙ্গণে।

তৃতীয় পর্ব অর্থাৎ অলাতচক্রে গল্পের ধরণ ও গঠন বেশ খানিকটা বদলে গেছে, তবে ভাল লাগা বেড়েছে – কমে নি। শেষের দিকে তো রুদ্ধশ্বাসে পড়ে গিয়েছি একদম। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিশাল অজানার ভাণ্ডারে যুক্তিতর্কের অসহায়ত্বকে খুব চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। কেমন একটা হাহাকার, সমর্পণের অনুভূতিও কাজ করছিল বইটি পড়তে পড়তে।
বাংলার বাতাসে বৈরাগ্য আছে, বুঝলে? কিছুক্ষণ চুপ করে খোলা হাওয়ায় বসে থাকলে মনে হতে শুরু করে-কে কার? কি হবে অনর্থক উন্নতির চেষ্টা করে?
Profile Image for Tahia Tasnim.
25 reviews6 followers
September 11, 2022
হাতে আসার পরে বলা যায় এক নিঃশ্বাসেই শেষ করলাম বইটি। গল্পগুলো খুবই ভালো লেগেছে, বিশেষ করে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগুলো। আমার সবসময়ই প্রাচীন বাংলার মানুষগুলোর সংস্কার, সংস্কৃতি জানতে ভালো লাগে। একটু স্টার কম দিতে চেয়েছিলাম বইয়ের মুদ্রণে অজস্র টাইপোর কারণে, কিন্তু মনে হলো চার তারা একটু বেশিই অবিচার হয়ে যায় এই বইয়ের জন্য।
Profile Image for Mesratul Jannat.
33 reviews
December 24, 2024
#বই_রিভিউ

#তারানাথ_তান্ত্রিক_সমগ্র
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়- তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনী: মিত্র ও ঘোষ
মুদ্রিত মূল্য: ৪৫০
পৃষ্ঠা: ৪৩২
জনরা: অতিপ্রাকৃত
রিভিউয়ার: জান্নাত


তারানাথ তান্ত্রিকের আবিষ্কারক হলেন প্রথমে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর বিভূতিভূষণ পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিকের অনেকগুলি কাহিনি লিখেন। পরে লিখেন তারানাথ তান্ত্রিক নিয়ে একটি গোটা উপন্যাস 'অলাতচক্র'। সেই সমস্ত কাহিনি একত্র করেই এই গ্রন্থ তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র।

মিত্র ও ঘোষ থেকে প্রকাশিত তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্রতে বিভূতিভূষণের ২ টা গল্প আর তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর ৮ টি গল্প প্রকাশিত হয়েছে।
তারাদাস তান্ত্রিক এর প্রতিটা গল্প ঘোর লাগা।প্রতিটা গল্পই বিশ্বাসের উর্ধে পাঠক কে গল্পের মাঝে এমন ভাবে আটকে রাখবে যেনো পাঠক তারাদাসের গল্প পড়ছেন না বরং নিজেই চাক্ষুস দর্শন করছেন।
বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প আর মধুসুন্দরী দেবীর আবির্ভাব এর গল্প কাহিনী ছিলো অবাস্তব, অবিশ্বাস্য।

তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার বাবার ছন্দে তাল লয় ঠিক রেখে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন শেষ অবধি। সেসব গল্প কাহিনী তে শুধু কিশোরী আর কথকই নয় পাঠক ও মুগ্ধ হয়ে নেশায় পরে যাবে। পুরো বইটাতেই তারানাথের করা অদ্ভুত সব ঘটনাবলির বিবরণ বিশদ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।


বিভূতিভূষণ এবং পুত্র তারাদাস দুজনেই পরলোক চর্চার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে প্রকাশিত প্রথম মুদ্রনে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন -

❝পাঠকেরা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যা নিয়েই পড়তে শুরু করেন না কেনো, এ কাহিনি গুলো সত্য।❞ 😳

মানে গল্পের অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত কাহিনি গুলো বাস্তবিক ভাবে ঘটেছে😳 মৃতুঞ্জয় বা অমরজীবন সত্যই অদ্ভূত ভাবে অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়!!! এটা বাদ দিলেও কথকের সেই গহীন পাহাড়ে মাঝরাতে বিপদে পড়ে তারানাথকে স্মরণ করে ডেকে আনাটা!!!
মানে #বাইলোকেশন? একই সময় একই ব্যক্তির ২ জায়গায় অবস্থান করাকে থিওসফির ভাষায় বলে বাইলোকেশন। বিজ্ঞানে যা অসম্ভব।

সত্যই atypical. বিশ্বাস অবিশ্বাস পাঠকের কাছেই। যথার্থই বলেছেন জে.বি.এস. হ্যালডেন -

❝ সত্য যে কল্পনার চেয়েও বিচিত্র শুধু তাই নয়, আমাদের কল্পনা যতদূর পৌঁছায় সত্য তার চেয়েও অদ্ভূত।❞

#রেটিং: ৫/৫
Profile Image for Prottorthy Zaman Diya.
19 reviews12 followers
July 5, 2025
এইচএসসি পরীক্ষা চলমান। সমাস, ইন্টিগ্রেশন, নিউটনিয়ান, জৈব যৌগদের ভীড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে তারানাথের মট লেনের বাড়িতে ঢুঁ মারতে গিয়ে মনে হলো যেন যুদ্ধবিরতি নিচ্ছি!

ব্যস্ত শহরের অস্বস্তিকর গুমোট পরিবেশ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কোলকাতায় বাসকারী অখ্যাত কোষ্ঠীবিচারকারী জ্যোতির্বিনোদ তারানাথের ড্রয়িং রুমে বসে শোনা উদ্ভট সব গল্পগুলো পড়তে পড়তে। বিভূতিবাবু এভাবেই পরিচয় করিয়েছিলেন তারানাথের সাথে। তাঁর লেখা তারানাথের গল্প দুটি পড়েই আমার মতো নিতান্ত নির্জীব প্রাণিরও হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হয়ে উঠছিলো। তারাদাস বাবুর লেখা গুলোও প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু ভয় যা পেয়েছিলাম তা কেবল ঐ বিভূতিবাবুর লেখা মাতু পাগলী আর মধুসুন্দরী দেবীর কথা পড়েই।

পুরো সমগ্র একসাথে পড়ায় কিছু কিছু ঘটনার বারবার বর্ণনায় খানিক অধৈর্য হয়তো হতে হয়, তবে পরমুহূর্তেই তা দূর হয়ে যায় তারানাথের মুখে মোহিত করা কোনো দর্শনের কথা শুনে। প্রাত্যহিকতার মোহ ত্যাগ করে বিস্ময়পূর্ণ সত্যের অলাতচক্রের রুপ প্রত্যক্ষ করার বৈরাগ্য বরণ করতে ইচ্ছে হয়।

তাই,বই শেষ করেও সম্মোহনবিদ্যায় সিদ্ধ হতে না পারা কিংবা পরীক্ষার খাতায় সি প্রোগ্রামিং লিখতে পারার নিশ্চয়তা সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করতে না পারা- এসবের আক্ষেপ ঝেড়ে ফেলে, সঠিক সময়ে সঠিক বইটা বেছে নিতে পারার অভাবনীয় সফলতার পুরস্কারস্বরুপ নিজেকে একটা বাহবা দেয়াই যায় বোধ হয়।
Profile Image for Susmita Sarker (বাচ্চা ভূত).
193 reviews11 followers
August 21, 2023
সেরার চেয়েও সেরা কিছু আছে নাকি?
অবশ্যই
সেটা হচ্ছে - তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র!
Profile Image for Tridev Devnath.
120 reviews2 followers
April 23, 2024
রেটিং ৪.৫/৫


আমার কাছে তারাদাসের রচনা গুলোই বেশি মনে ধরেছে। বিভূতি বাবু বেশি লেখার সুযোগ পাননি যদিও। তারাদাস বেশ একটা মডার্ণ ফ্লেভার এনেছেন বাবার টোন টা অক্ষত রেখেই।

বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে তারানাথের মধ্যে অসাধারণ কিছু নেই, সে মোটেও কোন হিরোইক চরিত্র না। তান্ত্রিক হিসেবে খুব সফল না, আবার একদম সাধারন মানুষও না সে।তার অসাধারনত্ব আসলে তার গল্পের ফুলঝুড়ির মধ্যে। শুধুমাত্র চিরায়িত তান্ত্রিক বিদ্যা নিয়ে অতিলৌকিক গল্প, কিন্ত কোন গল্প ই রিপিট টাইপ লাগেনি।একজন সনাতন ধর্মী হিসেবে জানা জগতের অজানা এক কোনায় চলে গিয়েছিলাম পিতা পুত্রের লেখনীর হাত ধরে।সঠিক পরিবেশে পড়লে গা শিউরে উঠতে পারে, কিন্ত খুব বেশি হরর বলা যাবে না।
অনেক বেশি ভাল লাগবে তারানাথের পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন। একমাত্র কন্যা চারির চরিত্রটা এমন ভাবে লেখা হয়েছে, যে "পিতা তারানাথ" ই এই সংকলের একটা গুরুত্বপূর্ন অংশ হয়ে উঠেছে।

অলাতচক্র উপন্যাস আমার কাছে খুব স্লো লেগেছে শুরুতে। প্রিকুয়েলের পাশাপাশি তারানাথের জগৎ কে কিছুটা বিস্তৃত ও করেছে।তবে আস্তে আস্তে গল্পে জোর বেড়েছে, উপভোগ্য হয়েছে। জয়তলা গ্রামের গল্পের শেষে এসে খুব কঠিন মানুষের মনটা ও একটু হলেও বিষণ্ণ হয়ে আসবে হয়তো।

নি: সন্দেহে পড়তে পারেন। প্রথাগত হরর ভাবলে ভুল করবেন, কিন্ত ভয়ের আবহ অবশ্য ই আছে।এক বসাতেই শেষ করে উঠতে পারেন।
Profile Image for Ishak Al Mamun  Rohan.
76 reviews
July 24, 2024
দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। তারাদাসের লেখা পড়ে বিভূতি বাবুর ফিল পেলাম।
Profile Image for Shibajee Samaddar.
41 reviews7 followers
September 13, 2020
কোনো বই ভালো না খারাপ তা পাঠকের সাথে সাথে একটু একটু করে বদলে যায়। তারানাথের মত বই বাংলা সাহিত্যে আর নেই।
ভালো-খারাপের বাইরে গিয়ে স্রেফ এই কারণেই তারানাথ পাঠ্য। এই কাহিনীগুলি শুধুই তন্ত্রকথা নয়- পরম জীবনবোধে সিক্ত।
Profile Image for Nuary .
98 reviews
Read
November 5, 2024
ভয় লাগে পরবো না আর!
Profile Image for Shoroli Shilon.
164 reviews71 followers
June 11, 2022
দক্ষিণের আকাশ কালো হয়ে আসে, বৈশাখী মেঘের গমগমে ভাব, এই বুঝি বৃষ্টি নামবে—এই বই এর স্বাদ, ঘ্রাণ একদম সেরকম! কবি কালিদাস বলে গিয়েছেন আকাশে মেঘ এলে আমার তারানাথের কাছে যেতে ইচ্ছে করে বটে। বর্ষার দিনে আর গরম গরম তেলেভাজার মতো তারানাথের গল্পও একটা আবশ্যিক ব্যাপার। কথাগুলো কিন্তু মন্দ বলেনি!

"তারানাথ তান্ত্রিক" মূলত তারানাথের তান্ত্রিক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প। আলাপের মাধ্যমে রোমাঞ্চকর অতীতের গা ছমছমে অভিজ্ঞতার সবিস্তর বর্ণনা। কি তন্ত্রসিদ্ধপুরুষের সহোচররুপে মন্ত্রসাধনা করে তিনি তান্ত্রিক হয়ে উঠলেন আবার লোভে পড়ে কিছু ক্ষমতা হারিয়েও ফেললেন, কীভাবে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে নানা বিচিত্র চরিত্রের মানুষের সঙ্গে তার আলাপ হলো, আশেপাশের ঘটে যাওয়া অপার্থিব সব ঘটনা ঘটে যাওয়া কিংবা কি পরিমান ফারা কাটিয়ে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন তার বর্ণনা!

বিভূতিভূষণকে নিয়ে আর কি বলবো! তার পরলোক-চর্চা বিষয়ে আগ্রহ অনেকেই জ্ঞাত আছেন। ওনার লেখায় যে অনুরক্তি মেলে তা সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। আর এই ভূতের গল্প বলার যে ব্যাপারটা বা যে পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন পড়ে তার ক্ষেত্রে সেটা একদম সেরাদের সেরার কাতারে পড়ে। তবে সত্যিই খুব বেশি আলাদা করা যায় না বিভূতিভূষণ আর তারাদাসের লেখা। ছেলে হিসেবে একদম বাবার লিগ্যাসি ধরে রেখেছে। গল্পগুলো একদম সাধারণ, ছিমছাম। ভয়ে গুটিসুটি মেরে যাওয়ার মত না একদমই। তবে বাচনভঙ্গির গুনেই বাংলায় এত সুন্দর প্লটের ভৌতিক সংকলন খুব বেশি একটা খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। শেষের দিকে কিছু গল্প একঘেয়েমি লাগছিলো। তবে মোটের উপর বেশ উপভোগ করেছি।
Profile Image for Arnab Pal.
51 reviews9 followers
October 26, 2021
বুঝতে পারছিনা কি হলো কেসটা। যতটা হাইপ করা হয়, তারানাথ তান্ত্রিক তার ধারকাছ দিয়েও গেলো না। মাত্র কয়েকটা গল্পের কয়েকটা অংশ বাদ দিয়ে বাকি গোটা বইটাতে তেমন কিছুই পেলাম না। অলাতচক্র তো বাদই দিলাম - কয়েকটা বিলো অ্যাভারেজ ���োটগল্প জোর করে জোড়াতাপ্পি দিয়ে বানানো একটা উপন্যাস।
উচ্চশিক্ষিত বিদ্বজ্জনদের (মানে যারা ফাইভ স্টার রেটিং দিয়েছেন) থেকে আমার এডুকেশন লেভেল খুবই কম সেই জন্যই হয়তো... কিংবা হাল আমলে বাংলায় যেসব হরর ফিকশন বই বেরিয়েছে তার অনেকগুলো পড়ে ফেলার পর তারানাথ তান্ত্রিক পড়তে বসেছি বলেই হয়তো একদমই ভালো লাগলো না। পুরোটাই জোলো লাগলো।
বিশ্বাস করুন, অনেক চেষ্টা করলাম ফোর স্টার রেটিং দিতে, তাও পারলাম না।
আমার মতো অশিক্ষিত লোক যারা আছেন তাদের জন্য জনস্বার্থে প্রচারিত: চেষ্টা করুন বইটা না কেনার; অনেক দাম তো, আর যাই হোক। এতগুলো টাকা বেকার নষ্ট করলাম। পাইরেটেড পিডিএফ জ়িন্দাবাদ।
Profile Image for Mahadi Hassan.
129 reviews11 followers
May 6, 2022
বইটাই কি ওভার হাইপড, না নিজেরই বুঝার ভুল, মাথায় আসছে না। বিভূতিভূষণের গল্প দুটো, আর তারাদাসের লেখা গুটিকয়েক গল্পই ভালো লাগার মত। বাকি সব লেখাই একেবারেই সাদামাটা, এমনকি কিছু কমন জিনিসের বারবার পুনরাবৃত্তি বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছে। গল্প গুলা তার পরেও চলনসই, কিন্তু অলাতচক্র যেন সব ছাড়িয়ে গেছে। নামেই উপন্যাস, আদতে গুটি কয়েক ছোটগল্প, যার কয়েকটা আবার আগেও পড়া হয়েছে, জোড়াতালি দিয়ে লেখা একটা বই। শেষ দিকে কিছু কিছু প্যারা স্কিপ করে গিয়েছি, একেবারেই অপ্রোয়জনীয় মনে হচ্ছিল।

অনেক বিদগ্ধজনের বইটি নিয়ে অনেক উচ্চ রেটিং দেখলাম, নিজে দুইয়ের উপরে উঠতে পারলাম না। বিভূতিভূষণের গল্প দুটিই ভয় জাগাতে পেরেছে। বাকি গুলো ভয় না হোক, পড়ার আনন্দটুকুও দিতে পারে নি।
Profile Image for Kamruzzaman Kamrul.
16 reviews22 followers
April 7, 2021
লেখনী শক্তিশালী, গল্প বলার ভঙ্গীটা খুবই পরিচিত, অনেকটাই যেন খুনসুটিগুলো পর্যন্ত অনুমান করে নেওয়া যায়, এমন। গল্পের বৈচিত্র্য গড়পড়তা, ভাষা সাবলীল, এবং গতি আছে। সম্ভবত অনেক কিছু পড়ে এসে তারপরে এটি পড়ার কারণেই খুব বেশি স্থায়ী কোনো দাগ ফেলেনি মনের মধ্যে। ভিন্ন কোনো সময়ে, ভিন্ন পরিস্থিতিতে হয়তো আরও অনেক বেশি ভাল্লাগতো! লেখনীতে দশে দশ, গল্প উপস্থাপনের ঢং ও বৈচিত্র্যে দশে আট, কিন্তু নিজের মধ্যে রেখে যাওয়া ছাপটুকু মাপতে বসে, দশে পাঁচ।
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews23 followers
April 27, 2023
বাস্তব অবাস্তব মিলে দারুণ এক আখ্যান। বিশ্বাস করাটা আপনার উপর। তারানাথের গল্প বলার ধরণটাই মনোমুগ্ধকর।
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
January 31, 2022
তারানাথকে নিয়ে কিছু বলার নেই! শুধু নতুন তারানাথের কোনো গল্প পাবোনা,ঘুরেফিরে এসে এগুলোই পড়তে হবে,এইটাই যেনো আফসোস।
Profile Image for AR Dipu.
37 reviews1 follower
July 16, 2022
তারানাথ তান্ত্রিক বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি।
Profile Image for Aditya Narayan Datta Mallick.
2 reviews
June 27, 2024
প্রকৃতির অবর্ণনীয় বর্ণনায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেরা। তার পুত্র তারাদাসও কম নয় কোনো অংশে। বইটি পড়ার সময় পুরোপুরি ঢুকে গিয়েছিলাম যেন।
Profile Image for Monami Arani.
42 reviews8 followers
March 10, 2021
অনেক দিন পর ছোটবেলার ভূতের গল্প পড়ার সময়টাতে ফিরে গিয়েছিলাম। গা ছমছমে একটা অনুভূতি আর অদ্ভুত আকর্ষণ। সংগ্রহে রাখার মত একটা বই।
Displaying 1 - 30 of 102 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.