দ্বীপটা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে। নির্জন, জনমানবহীন। বহুকাল আগে রোগ-জীবাণু নিয়ে গবেষণা করা হতো ওখানে। এখন দ্বীপটা পরিত্যক্ত, ওখানে যাবার ব্যাপারে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অথচ বাড়ি থেকে পালিয়ে সেই দ্বীপেই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এক আপনভোলা, পাগলাটে শিল্পী। কেন? কীসের ভয়ে? পুলিশই বা তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে কেন? কী রহস্য লুকিয়ে আছে তাঁর অসমাপ্ত শিল্পকর্মে? কৌতূহলী হয়ে উঠল অয়ন-জিমি। নিজেদের অজান্তে পা দিয়ে বসল ভয়াবহ এক ফাঁদে। ঝড়ের রাতে নিষিদ্ধ দ্বীপে আটকা পড়ল ওরা। পড়ে গেল ভয়ঙ্কর এক রোবট-মানবের কবলে!
কিশোর বয়সী মগজ যে রহস্যে বিভ্রান্ত হবে, যে ট্যুইস্টে চমকে উঠবে- পুর্ন বয়সী মগজের কাছ থেকে স্বভাবতই সেই একই প্রতিক্রিয়া আশা করা যায় না। কাজেই প্রত্যাশার ঘুড়িকে বেশি উঁচুতে না উড়িয়েই ছেলেবেলার অন্যতম প্রিয় সিরিজের নতুন এই বই গুলো পড়া শুরু করেছিলাম। তাছাড়া ঘুরি বেশি উঁচুতে উড়ানোও রিস্কি ব্যাপার,মাঞ্জা দেয়া ধারালো সুতায় বেঁধে স্যাটেলাইট ফ্যাটেলাইট ভেঙে পরে যেতে পারে 😑। সে যাই হোক, প্রত্যাশা যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে লেখকের লেখনি এবং এই সিরিজের অতীর রেকর্ড। অতীতে অনিয়মিত ভাবে অল্প যে কয়েকটা বই বের হয়েছে এই সিরিজের, সবগুলোর কাহিনিই ছিল মানসম্মত। আর লেখকের যে কয়টা অনুবাদ বা রুপান্তর আগে পড়েছি, তার সবগুলোর কাহিনীই হয়তো আমার সমান ভাল লাগে নাই, কিন্তু অনুবাদ পড়ার স্বাদ পেয়েছি ষোলআনা। আগেই বলেছি, খুব জটিল কোন গল্প আশা করিনি, কিন্তু তারপরও স্বীকার করতেই হচ্ছে, প্রতিটা বইয়েরই একাধিক জায়গায় চমকে দিতে সক্ষম হয়েছেন লেখক। চারটে বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে 'এমিলির চোখ' - সম্ভবত এর ব্যাতিক্রমধর্মী কাহিনির জন্য। বিষয়বস্তর জন্য 'কালোজাদু' হয়তো অনেককেই 'তিন গোয়েন্দা' সিরিজের টেরর ক্যাসেলের কথা মনে করিয়ে দেবে, তবে মিল ওই টুকুই। 'রাত নিশুতি' বলা যায় পিওর সাসপেন্স থ্রিলার। এই বইটায় গোয়েন্দাপ্রধান অয়নের অ্যাক্টিভিটি তুলনামুলক কম থাকলেও (মগজাস্ত্রের ব্যবহার বাদে), দুর্দান্ত গতির কারণে পড়া শুরু করার পর হাত থেকে রেখে দেয়া মুশকিল। তবে একটা বিষয় নিয়ে সামান্য একটু খটকা আছে। এখানে বললে স্পয়লার হয়ে যাবে, সময় সুযোগ হলে লেখকের কাছ থেকে জেনে নেবার ইচ্ছা আছে। 'নিষিদ্ধ দ্বীপ' যথেস্ট আনপ্রেডিক্টেবল, এমিলির চোখের পর এটাই সবচেয়ে বেশি ভাল লাগছে। সবগুলা বইয়েরই প্রচ্ছদ চমৎকার হয়েছে। বইগুলো সংগ্রহ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বড় হবার পর আমার কন্যা পড়বে এগুলো। একই উদ্দেশ্যে আরও বই সংগ্রহ চলছে :) । কিন্তু কেনার পর নিজেই পড়ার লোভ সামলাতে পারি না। একেকটা বই যেন একেকটা টাইমমেশিন। কয়েক ঘন্টার জন্য যে কিশোর বয়সে ফিরে যাই। অয়ন-জিমির কাছে ফিরে আসি। ছেলেবেলার প্রিয় এই সিরিজটা কেন যেন সবসময়ই কিছুটা আড়ালেই থেকে গেল। একটা সময়ে তিন গোয়েন্দার স্বর্ণালী যুগের ছায়ায় ঢাকা পরে গিয়েছিল এই সিরিজটা। আর এখন সম্ভবত লেখকের পেশাগত ব্যস্ততা একটা কারণ। কারণ যাই হোক, সিরিজটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে (করোনার জন্য একটা ছেদ পরেছে যদিও), আশা করা যায় বিরতিহীন ভাবে আরও অনেকদিন চলবে সিরিজটা। আপাতত 'জল টলমল' এর অপেক্ষায়। আরেকটা বিষয়, যতদূর জানি, এই সিরিজের প্রথম বই 'কালকুক্ষি' সম্পূর্ন মৌলিক। 'কালোজাদু' বইয়ের ভেতরেও 'বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে' - এই কথাটা লেখা নাই। তাহলে কি ধরে নেয়া যায়, এটাও মৌলিক গল্প। নাকি ভুলে বাদ পরে গেছে?
তিন গোয়েন্দার পাশাপাশি একটা সিরিজ আমাকে দারুণ আকৃষ্ট করতো, অয়ন-জিমি সিরিজ। যদিও অয়ন-জিমি সিরিজের সাথে পরিচয় মাত্র কয়েক বছর আগে থেকে। তিন গোয়েন্দার ব্যাপক জনপ্রিয়তার আড়ালেই থেকে গেছে অয়ন-জিমি সিরিজ। তিন গোয়েন্দার পাঠকেরা এখন আর তিন গোয়েন্দার প্রতি অতটা আকর্ষিত হন না, সেটা তিন গোয়েন্দার মান পড়তির জন্য। আনন্দের কথা হচ্ছে প্রিয় ইসমাইল আরমান ভাই অয়ন-জিমি সিরিজ লেখা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন, ইতিমধ্যে ভলিউম ১ রিপ্রিন্টও হয়েছে।
বইটি থেকে খুব বেশি আশা করি নি, তবে লেখক কয়েকজায়গায় চমকে দিয়েছেন। আগেও বলেছি এখনও বলছি, ইসমাইল আরমান ভাই এর বর্ণণাশৈলী চমৎকার। সেটা হোক অনুবাদ বা মৌলিক। সবমিলিয়ে বইটি উপভোগ্য