রম্য লেখক শশিশেখর বসু মূলত ইংরেজিতে লিখতেন; আটাত্তর বছর বয়সে জীবনসায়াহ্নে এসে তিনি বাংলায় লেখা শুরু করেন। এ গ্রন্থটি তাঁর বিহার ও উত্তর প্রদেশের নানা শহরবাসের স্মৃতিচারণসহ অনবদ্য রম্য রচনা ও গল্পের সংকলন।
শশীশেখর বসু এক আশ্চর্য প্রতিভার নাম। রাজশেখর বসুর এই ভ্রাতা আজীবন ইংরেজিতে কলাম লিখেছেন। সত্তর বছর বয়সে বাংলা লিখতে শুরু করেন। তাঁর এই বইয়ের লেখাগুলো পড়ে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, শশীশেখর আমাদের আগে লেখালেখির লাইনে এলে করে খেতে হতো না। বইটা পড়ে মনে হলো মুজতবা আলী অত্যুক্তি করেননি।
" যা দেখেছি যা শুনেছি " স্মৃতিকথা এবং গল্পগ্রন্থ। দুটোই সরস। অতিশয় পাচ্য। অসামান্য উইট এবং বাংলা, ইংরেজি, উর্দু,হিন্দি, সংস্কৃত এবং ফারসি মিলিয়ে এমন অত্যুত্তম গদ্য পুরো বাংলা সাহিত্যে একজনই লিখতে পারতেন, তিনি হলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। শশীশেখর বসুর লেখা মুজতবা ফ্লেভার পাবেন। অগাধ পাণ্ডিত্যের সাথে যোগ হয়েছে উইট।
গ্রন্থ শুরু "সোনাপুর কাহিনী" দিয়ে। আমরা সবাই জানি নীলকর সাহেবরা ভীষণ অত্যাচারী ছিল। তবে শশীশেখর বসু জানাচ্ছেন নীলকর সাহেবদের মধ্যে অনেকেই পণ্ডিত ছিল। গাবদা-গোবদা কেতাব লিখে ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি ভরিয়েছে। এই নীলকরদের একজন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও হয়েছিল।
সিপাহি বিদ্রোহে কানপুর, লখনৌ কিংবা এলাহাবাদের মতো স্থানের ভূমিকা কম-বেশি সবাই জানি। তবে শশীশেখর বসুর মতো জানি না। সিপাহি বিদ্রোহের কাহিনি এমন সরস ভঙিমায় লিখেছেন যেন চোখের সামনে ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে নানা হাস্যরস সৃষ্টি। যেমন,
" দানাপুর ও পাটনার মাঝখানে অনেক গণ্ডগ্রাম আছে। যখন খবর আসত সিপাহী পল্টন আতা হ্যায়, জোয়ান ছুকুরীরা সব ভাগো। এই সর্তকবাণী শুনে যুবতীরা সব চোঁ চোঁ পালাত। একবার একটা আশি বছরের বুড়ি তাদের সঙ্গে পালাতে উদ্যাত হলো। লোকে তাকে বলল, " তুম কাহে ভাগতা গে বুঢিও? তুমে ক্যা ডর হায়? বুড়ি কাঁদতে লাগল, বললে, " অাগার পল্টন মে কই বুড়া সিপাহী রাহে তব?" "
প্রয়াগের কুম্ভমেলায় গিয়ে পাপী-তাপী, সাধু-সন্তের দেখা মিলেছে। উপলব্ধি করেছেন,
"পত্নীর সঙ্গে ঝগড়া করে অনেকে সন্ন্যাসী হয়, আবার অমুক মেয়েটা পত্নী হলো না বলে সন্ন্যাসী হয়। বিয়েটাই তাহলে প্রধান কারণ হলেও সন্ন্যাসী, না হলেও সন্ন্যাসী। "
সাধু হলেও জাতপাত, সাদা-কালো ভেদ ঘুচে যায় না। শশীশেখরের পর্যবেক্ষণ,
"১৯১০ সালে এক আমেরিকান সাধু এসেছিল। কালা সাধুর সঙ্গে বসে নি। আলাদা গাছতলায় বসতো ও গাঁজা খেতো। "
সরস এক গদ্যগ্রন্থ এবং স্মৃতিকথা " যা দেখেছি যা শুনেছি "।