Kolkata based food blogger Lahiri's account of the city's food- a confluence of cultures and ethnicities that has been amalgamating in a heterogeneous cuisine for hundreds of years.
লেখক ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী তাঁর "মহামুশকিল" ব্লগের মাধ্যেই সবচেয়ে বেশি সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ইউটিউবে ফুডকা সিরিজের মাধ্যমে উনার নামটি প্রায় সবারই কমবেশি জানা।
ফুডকা সিরিজ মূলত ফুড ব্লগিং হলেও সমসাময়ীক অন্যান্য ফুড ব্লগারের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন তা বলতেই হবে। যেখানে খাবারের অন্যান্য গুণের পাশাপাশি আটপৌরে গল্পের ঢং এ খাবারের ইতিহাস, ভূগোল যা'ই বলেন না কেন, তা বেশ চমকপ্রদ ভাবে বলা হয়ে থাকে। যা মূলত এই বইয়ের লেখক ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী করে থাকেন।
এবার আসি বইয়ের মূল বিষয়বস্তুতে। ফুডকা সিরিজ যারা দেখেছেন তাদের কাছে এই বইটা খুব পরিচিত মনে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ইউটিউবে দেখা ফুডকা সিরিজের গল্প বলার যে ধরণটা, তা অনেকটা এখানে লক্ষ্য করেছি। আদতে তো একই মানুষ, একই গল্প বলার ধরন, তাই এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক ধরে নিচ্ছি। অন্যভাবে বলতে গেলে ফুডকা সিরিজের একটা লিখিত রূপ বলেই ধরে নেয়া যায় বইটাকে।
কোলকাতা কেন্দ্রিক খাবার, বা বলা যায় কোলকাতার মানুষ সচরাচর স্ট্রিটফুড হিসেবে যা খায় (আপনি চাইলে বাইরের খাবারও বলতে পারেন।) প্রধানত সেসব খাবার গুলো নিয়েই পুরোটা বই। এখানে বলে রাখা ভালো বাংলাদেশি হিসেবে বইয়ে উল্লেখিত অনেক খাবারই হয়তো আমরা চোখে দেখিনা বা আমাদের এখানে বইয়ে লেখা খাবারের একটা অন্য ধরনের রেসিপি চল আছে। তা সত্ত্বেও লেখকের বর্ণনার নৈপুণ্যে অনেকটা যেন চেখে দেখার অনুভূতি হলো। বর্ণনার এমন সাবলীলতা খুব কম বইয়েই লক্ষ্য করা যায়। আপনি খাদ্য রসিক হন বা না হন, আপনার কাছে বইটা ভালো লাগবেই, এটা জোর দিয়েই বলা যায়।
পরিশেষে বলা যায় আপনি যদি খাদ্যরসিক হন, আর কোলকাতায় খাবারের খোঁজে বের হন। তাহলে আপনার জন্য এই "ফুড কাহিনী" গাইডবুক হিসেবে তার যথার্থ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
ভূতের রাজার কাছে গুপী-বাঘা বর চেয়েছিল, "যা খুশী খাইতে পারি/ যেখানে খুশী যাইতে পারি।" আমরা বাঙালিরা আবার একটু 'খাই-খাই' স্বভাবের। তার উপর কলকাতার নাম শুনলে আবার আমাদের সেই খাই-খাই স্বভাবটা বেশ চাড়া দিয়ে উঠে। উঠবে নাই বা কেন, 'সিটি অফ জয়' নামে কলকাতাকে চেনে সারা বিশ্ব। কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া লাগে না, রাস্তার ধারেই লাইন লেগে থাকে সব মুখরোচক খাবার দিয়ে।
ফুডকার কোনো একটা ভিডিও আমার ইউটিউব রেকমেন্ডেশনে এসেছিল। আমার আবার এসব ফুড ভ্লগ দেখতে ভালোই লাগে। তাই তাদেরটাও দেখা শুরু করি। তারা গতানুগতিক ধারায় রিভিউ দেন না। যেখানেই যেই খাবারটাই খান না কেন, সেটার ইতিহাস সম্পর্কেও আমাদের জানিয়ে দেন।
মূলত সেই ইতিহাস জানতে চাওয়ার কারণে এই বইটা পড়া শুরু করি। বইটা পড়ার সময় দেখি নিজের মধ্যে প্যাভলভের নীতি কাজ করছে! খাবারের কথা পড়তে বা পড়তেই জিভ দিয়ে এই লালা ঝড়লো বলে!
চৈনিক ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে মোঘলদের খানা, নেহারি থেকে মোমো, কাবাব থেকে শুরু করে জিইউয়িশ পরিবারের কেক, সুরা থেকে থলথলে ময়দার ডোয়ের মধ্যে শূকরছাবক- সবই পাবেন এই কলকাতায়৷ আর ঠিক কোন জায়গায় পাবেন তাই তো জানতে চান? আরে বাবা, সেসব নিয়েই তো এই বই! ফুডকাদের বর্ণনা থেকে বাদ যায়নি কলকাতার একটিও গলি!
লেখনশৈলী নিয়ে কোনো খারাপ লাগা নেই, দারুণ একটা জিনিস! খাওয়ার সাথে সাথে ইতিহাসের বুলি- অদ্ভুত সুন্দর একটা কম্বিনেশন!
কলকাতায় যাওয়ার সৌভাগ্য এখনো হয়নি দেখে বলতে পারছি না তাদের রেকমেন্ডেড জায়গাগুলো আসলেই ভালো নাকি (সেজন্য এক তারা কম)। তবে হ্যাঁ, পড়েই যে আদ্ধেক ভোজন হয়ে গেছে, তা আর বলতে! তবে পড়ার সময় এক বসায় পুরোটা পড়তে যাবেন না, এইটা থ্রিলার না৷ খাবার নিয়ে যেহেতু, একটু রসিয়ে রসিয়ে পড়াটা ভালো! পারলে এক বাটি মুড়ি-চানাচুরসমেত বসে বইটা পড়ুন। কারণ পড়তে বসে খিদে লাগলে পরে তো আমাকেই মারতে আসবেন :3
আপনি খেতে ভালোবাসেন? খাওয়াতে ভালোবাসেন? বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের প্রাপ্তিস্থান ও তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? খাদ্যসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনি আগ্রহী? এই প্রশ্নগুলির মধ্যে যদি কোন একটির উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে এই বইটি আপনার পড়া উচিত।
কিন্তু বইটি পড়ার আগে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে এই বইতে আপনি মূলত মহানগর কলকাতা কেন্দ্রিক অসংখ্য বিখ্যাত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যের প্রাপ্তিস্থান ও তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তথা বর্ননা পাবেন। বইটি মূলত নন ফিকশন গোত্রের হলেও লেখক অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে বৈঠকি আড্ডার মোড়কে ও মজাদার ভঙ্গিতে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
বইটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত।
১)অবাক জলপান- কলকাতায় কোন কোন জায়গায় কি কি বিখ্যাত প্রাতরাশ বা সান্ধ্যকালীন জলখাবার পাওয়া যায় সেগুলি সম্পর্কে এই অংশে বলা হয়েছে। পোদ্দার কোর্ট অঞ্চলের চীনা জলখাবার, বিভিন্ন মোগলাই প্রাতরাশ, বিভিন্ন প্রকার তেলেভাজা, লুচি কচুরি, ফুচকার, বিভিন্ন রকমের রোল, মোমোর সম্পর্কে বলা হয়েছে।
২)নোলা শকশকঃ এই অংশটি এই বইয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ। এই অংশে পাঁচমিশালি প্রকারের খাদ্যের কথা বলা হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন পাইস হোটেল, কিছু আদি চীনা রেস্তোরাঁ, অফিসপাড়ার খাওয়াদাওয়া, প্রাচীন কিছু ক্যাফে কেবিন, দুর্গাপূজার সময়কার খাওয়া, বড়বাজারে পাওয়া কিছু বিশেষ খাদ্য, কলকাতায় লভ্য খাঁটি বৈদেশিক খাদ্যের সম্বন্ধে জানানো হয়েছে।
৩)মাছ মিষ্টি আরঃ এই অংশে দুই বাংলার খাদ্যাভ্যাস, ইলিশ মাছের গল্প, বিভিন্ন সন্দেশ, জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া, কেক পেস্ট্রি, বিরিয়ানি সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন।
৪)খায় যত পানীয়ঃ এই অংশে কলকাতায় পাওয়া যায় এমন কিছু বিখ্যাত চা, শরবত ও সুরাপানের সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
৫)আর যাহা খায় লোকেঃ বইটির এই অংশে লেখক কলকাতা থেকে বাইরে বেরিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের আম ও বিভিন্ন নবাবি খাওয়া, দীঘা পুরী দার্জিলিং এর কিছু বিখ্যাত খাদ্যের কথা, দক্ষিণ ভারতের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
যে কোন বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার সময় আমি সবসময় বইটির ইতিবাচক দিকগুলি নিয়েই প্রথমে আলোচনা করি। কিন্তু এই বইটির ক্ষেত্রে আমি উল্টোটা করতে বাধ্য হচ্ছি, এর এক এবং একমাত্র কারণ বইটিতে অজস্র ভুল আমার নজরে এসেছে।
প্রথমত এই বইয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আমার মনে প্রশ্ন উঠেছে, মোবাইলে জোমাটো বা লেখকের ইউটিউব চ্যানেলে যা তথ্য পাওয়া যায় তার অতিরিক্ত একটিও তথ্য এই বইতে নেই। এই বইটিকে কোনভাবেই খাদ্যসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করা যায়না, বড়জোর একটি কলকাতা ভিত্তিক ফুডগাইড বলা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত এই বইতে প্রদেয় তথ্য অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ। লেখক সম্ভবত নিজের পছন্দের খাদ্য ও তাদের প্রাপ্তিস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু পাইস হোটেলের তালিকা থেকে আমন্ত্রণ, জগন্নাথ বা আদর্শ হিন্দু হোটেলের নাম বাদ পরা অনুচিত। সুরাযাপনের তালিকায় খালাসিটোলার দেশি মদের আড্ডার নাম নেই। বিরিয়ানির তালিকায় আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত দাদা বৌদির হোটেল। পিটার ক্যাট বা মোবাম্বোর মতন বিখ্যাত কন্টিনেন্টাল খাদ্যের পরিবেশ��� রেস্তোরাঁগুলির নাম নেই। জাকারিয়া স্ট্রিটের বিখ্যাত খাদ্যসম্ভারের কথাও আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত।
তৃতীয়ত একটি ফুড গাইডে যে কোন হোটেল বা রেস্তোরাঁর কিছু বিশেষ মেনুর দাম উল্লেখ করা উচিত, সেগুলি অনুপস্থিত।
চতুর্থত বইটির প্রচ্ছদ অত্যন্ত দুর্বল। ছবির চরিত্রগুলিকে মজাদার ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা হয়েছে। একটি খাদ্যসংস্কৃতি বা ফুডগাইডের বইতে যা একদমই মানানসই নয়।
পঞ্চমত বইটির নাম, ব্যকরণগত দিক দিয়ে কোন পুস্তকের নাম দুটি মিশ্র ভাষায় হওয়া অনুচিত।
ষষ্ঠত বইটিতে অজস্র বানান ভুল রয়েছে। যতিচিহ্ন ব্যবহার সঠিকভাবে হয়নি। একটি বইকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে শুধুমাত্র ভালো কাগজ বা উন্নত ছাপা যথেষ্ট নয়। উপযুক্ত প্রচ্ছদ ও বানানের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সপ্তমত বইটিতে যে সকল আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলিতে কোন হোটেলের ছবি বা কোন মেনুর ছবি সেগুলির উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। অনেক আলোকচিত্র অস্পষ্ট ছাপা হয়েছে। বিখ্যাত কিছু হোটেল বা রেস্তোরাঁর ছবি দেওয়া উচিত ছিল।
অষ্টমত এই বইয়ের অন্তিম অংশে বেশ কিছু খাদ্যের পাকপ্রণালী দেওয়া হয়েছে, যা বইটিকে অযথা ভারাক্রান্ত করেছে।
বইটি সম্পাদিত হওয়া সত্বেও এতগুলি ভুল চোখ এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। প্রুফ কারেকশনের বিষয়ে প্রকাশককে অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে। আশা রাখি পরবর্তী সংস্করণে এই ত্রুটিগুলি সংশোধিত হবে।
এই বইটির অনেকগুলি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলা ভাষায় খাদ্যসংস্কৃতি নিয়ে এমন ঝরঝরে ভাষায় ও বৈঠকি আড্ডাতে এর আগে কোন বই আমি পড়িনি। লেখক শ্রী ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীর লেখনী সাহিত্যগত বিচারে খুব উন্নত না হলেও তাতে মিষ্টত্বের অভাব নেই। যে সমস্ত হোটেল বা রেস্তোরাঁর বর্ননা লেখক দিয়েছেন সেগুলিতে তিনি নিজে গিয়ে সেখানকার খাদ্যের স্বাদ আস্বাদন করে তারপরে লিখেছেন। ভোজনরসিক ও খাদ্যরসিক বাঙালি এই বইটি হাতে নিয়ে খুব সহজেই ফুডওয়াকের পরিকল্পনা করতে পারেন। বইটির কাগজের গুণমান, ছাপা, বাঁধাই অত্যন্ত উন্নত মানের। প্রচ্ছদটি উপযুক্ত না হওয়া সত্বেও গ্রন্থনির্মানের উৎকর্ষের জন্য বইটি একবার দেখলেই ভালো লেগে যায়। ২৩৪ পাতার হার্ডকভার বইটির দাম যথাযথ । পরবর্তী সংস্করণে ত্রুটিগুলি সংশোধন করে নিতে পারলে বইটি যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে।
ফুডকাহিনী আমার নতুন বছরের পড়া প্রথম বই হলেও রিভিউ দিতে বেশ দেরী করে ফেললাম। দেরী করার পেছনে অবশ্য কাহিনী আছে।
এটা তো আর যেনতেন বই নয়, এ খোদ কলকাতার (মূলত) সুস্বাদু খাদ্যের শুলুক সন্ধান নিয়ে লেখা বই। তবে আমার সাথে এ বইয়ের যোগসূত্র কি? অনেক বড় যোগসুত্র। তা নিজের গল্পটা একটু বলে নেই, তারপর নাহয় বইয়ের রিভিউ দেয়া যাবে।
কলকাতা সবার জন্য সিটি অফ জয় হলেও আমার জন্য ছিল সিটি অফ ড্রিমস। ছোটবেলা থেকে পড়া পছন্দের উপন্যাসগুলোর প্রধান চরিত্ররা এই শহরেই হেটে বেড়িয়েছে। কিংবা আশেপাশের মফস্বল থেকে খোদ কলকাতায় কখনো না কখনো তাদের আসতেই হয়েছে। কলকাতার জোড়াসাকোতে ঠাকুরবাড়ী ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে জমজমাট শহর তো কলকাতাই ছিল।
আমি সবসময় কলকাতা যেতে চেয়েছি আবার কলকাতা গিয়ে যদি আমার আশাভঙ্গ হয়, সে ভয়ও ছিল। অনেক জল্পনা কল্পনা প্ল্যানিং প্লটিং এর পর ২০১৯ এ আমার প্রথম কলকাতা সফর হয়। এবং প্রথমবারেই কলকাতা বইমেলায় যেতে পেরেছিলাম। নিজের ভ্রমণবৃত্তান্ত এখানে না দিয়ে এটুকুই বলি- কলকাতা আমায় একদম নিরাশ করেনি। ২০১৯ এই আমি কলকাতা ২য় বারের মত যাই, প্রথমবার ঘোরা আর খাওয়া সমানতালে চললেও, ২য় বার গিয়েছিলাম শুধু খেতে আর পুরোন কলকাতার (উত্তর কলকাতা)অলিগলি দেখতে। তা আমার দু’বারের কলকাতা ভ্রমণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য যেহেতু পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন খাবার দাবার চেখে দেখা ছিল, সেহেতু এই বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহটা বেশি হবে এ আর অবাক কি!
বইটির প্রকাশকাল ২০১৯। ২০১৯ এ ২য় বার কলকাতা যাত্রার আগেই ফুডকা ইউটিউব চ্যানেলের সাথে পরিচয় হলেও বইটি পড়তে একটু দেরী হয়ে গেল। বইতে সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যার আহার্য পানীয়র ইতিহাস, বর্ণনা , প্রাপ্তিস্থান এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তিগত রেকমেন্ডেশন রয়েছে। দেশি খাবার, বিদেশি খাবার, বেকারি আইটেম, বিরিয়ানী, চাইনিজ , মোঘল , মিষ্টি, ঝাল , রঙ্গীণ পানীয়, দিশি নাস্তা, ফিউশন ফুড কিসের সন্ধান নেই এতে। ভারতবর্ষের দেশি খাবারের প্রথম ফাইন ডাইনিং রেস্তোরা নিউমার্কেটের কাছেই পিয়ারলেস ইন, শোভাবাজারের মিত্র ক্যাফে, কলেজ স্ট্রীটের বসন্ত কেবিন,প্যারাডাইসের শরবত ও পুটিরাম (আহা!), নিউমার্কেটের নাহুমস বেকারি, শোভাবাজারের হরিদাস মোদকের সকালের নাস্তা, নিজামের কাঠি রোল (কুসুম কাঠি রোল খেয়েছি যদিও) এগুলো কমন পরে গেল, নোলাও শক শক করে উঠলো সাথে সাথে। দু’বার গেলেও সময় সুযোগের অভাবে কলকাতার বিরিয়ানী চেখে দেখা হয়নি, এটা একটা আফসোস বটে। গোলবাড়ির কষা মাংশ ও ফ্লুরিসের ব্রেকফাস্টের উল্লেখ নেই দেখে একটু অবাক হয়েছি! সাতকাহন পড়ে ফ্লুরিস নিয়ে আমার একটা ক্রেজ ছিল। এক সানডে সকালে পার্কস্ট্রীটে ফ্লুরিসে ব্রাঞ্চ করতে গিয়ে হতাশ হইনি। যদিও এটা একটু বিলাসি ব্যাপার, ফ্লুরিসে খেতে গেলে পকেটে বেশ টান পরে তবুও। বইতে আরো জানা অজানা কত যে খাবার জায়গার সন্ধান পেলাম! লিস্টে টুকে নিয়েছি বটে । ফের কখনো কলকাতায় পা রাখা হলে সেসব খাদ্য বস্তু চেখে দেখার ইচ্ছে রইলো! বিশেষ করে ডেকার্স লেনের স্ট্রীট ফুড এবং পাইস হোটেলের খানাদানা। ওয়েস্ট বেঙ্গলের আশেপাশের কিছু জায়গার খাবার সন্ধান দেয়া আছে , এর মধ্যে দার্জিলিং এর খাবার রেকমেন্ডেশনগুলো কাজে দিতে পারে। বইটি আলাপচারিতার ধরনে লেখা বলে তর তর করে পড়ে ফেলা গেছে, একদমই বোরিং মনে হয়নি।
বইয়ের শেষে কিছু খাবার রেসিপি দেয়া হয়েছে। আমার মতে এগুলো না দিলেও কোন ক্ষতিই হত না। কলকাতা-ইতিহাস-পশ্চিমবঙ্গের খাবার নিয়ে আগ্রহ থাকলে বইটি পড়ে ফেলতে পারেন, খারাপ লাগবে না। সেসাথে ইউটিউবে ফুডকা/ Foodka চ্যনেলটি চেক আউট করতে পারেন।
ইন্দ্রজিৎদার লেখা প্রথম পড়ি তাঁর Moha Mushkil ব্লগে, প্রায় ২০১৬-১৭ সালের দিকে। তখনই মুগ্ধ হয়েছিলাম—খাবার নিয়ে তাঁর আবেগ আর গল্প বলার সহজ ভঙ্গি যেন একেবারে কাছের বন্ধুর আড্ডা শুনছি। পরে জানলাম তিনি বাংলায় খাবারকেন্দ্রিক দুটি বই লিখেছেন, আর সেই দুটিই একত্রে প্রকাশিত হয়েছে অখণ্ড ফুড কাহিনি নামে। সদ্য পড়া শেষ করলাম, আর সত্যিই মনে হলো—এ এক সোনার খনি, বিশেষ করে যাদের খাবারের ইতিহাস জানতে ভালো লাগে। কলকাতা ও আশেপাশের খাবারই মুখ্য, তবে তিনি বাংলার বাইরেও গিয়েছেন। শুধু ইতিহাস নয়, আজ কোথায় গেলে সেই খাবার চাখা যায়, তাও উল্লেখ করেছেন। লেখনী এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে মনে হয় আড্ডায় বসে গল্প শুনছি। যারা এই ধারার বই ভালোবাসেন, তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী র লেখা কলকাতা আর বাংলার খাবার দাবার নিয়ে এই বই টি বেশ চমকপ্র। আপনারা কেউ যদি ফুডকা টা ফলো করে থাকেন ,দেখবেন এই বই তে ওর অনেক টা স্বাদ ই ধরা আছেই। বয়ে টার আমার যেটা খুব ভালো লেগেছে সেটা হলো খাবার দেয়ার কোথায় ভালো পাওয়া যায় স��টা তো আছেই তার সাথেই তাদের কিছু ছোট্ট ইতিহাস যেটা জড়িয়ে আছেই সেই বর্ণনা টা.আর লাহিড়ী মশাই এর আরো একটা তারিফ করতেই হয়ে যে ওনার খাবার এর রসবোধ এর মতন ওনার লেখা তেও সেই রখম এক ই প্রভাব পাওয়া যা। অনেক হালকা মেজাজ এ লেখা ,বই টা পরে আপনার পেটুক মন আনন্দে ফুর ফুর করে উঠবে। বই টার একটাই ত্রুটি যেটা আমি লাহিড়ী মশাই কে বলবো অন্য বার কোনো বই লিখলে সেটা তুলে ধরতে ,বই তে মোটামুটি South ,Central আর একটু North কলকাতা র ই স্বাদ ধরা হয়েছে। বাকি অন্চল যেমন দম দম ,দক্ষিণ 24 পারগানাস ,আরো অন্নান্ন জায়গা র উল্লেখ আমি দেখলাম না। Drawback বলতে এটাই একটা। Final verdict in the words of লাহিড়ী মশাই "এক বার পরেই দেখুন না ,আহামুক কে গলাবেন না বরংচ ধন্যবাদ ই দেবেন। "
ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী - নামটা শোনা? না শুনে থাকলে ওই ভদ্রলোকটিকে মনে করুন যিনি দেখতে লম্বা, চওড়া, সর্বদা মুখে হাসি লেগে থাকা, সম্পর্কে মীরের পাতানো কাকা, যাকে দেখতে পাওয়া যায় কলকাতা অথবা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো খাবারের দোকানে, যার ইউটিউব ভিডিও দেখে বাড়িতে বসে নিজের অজান্তেই আমাদের জিভে আসে জল - হুঁ, সেই ফুডকা থুড়ি - ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী।
অনেকেরই প্রিয় ফুড ব্লগার। কিন্তু ওনার লেখা বইটি হয়তো এখনও অনেকে পড়েন নি।
এই বইটি আমার মাস কয়েক আগে কেনা ও পড়া। হটাৎ চোখে পড়তে আবার খুলে বসলাম। কিছু বই যতবারই পড়ুন, ক্লান্তি লাগেনা। তাছাড়া, ভোজনরসিক বাঙালি ভোজন সংক্রান্ত বৃত্তান্ত পড়তে কি আর হাপিয়ে যেতে পারে?
বই প্রসঙ্গে বলি, ফুডকা নিজে যেমন মজাদার মানুষ ব্যাক্তিগত জীবনে, তার এই বইতে পাতায় পাতায় সেই ছাপ স্পষ্ট। শুরুতেই বর্ণনায় ব্যাক্ত করেছেন কিভাবে ওনার ছেলের জটিলতম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে শেষমেশ ফুড কাহিনীর জন্ম হয়। তারপর জলখাবার, মধ্যাহ্ন ভোজন এভাবে বিভিন্ন ধাপে এগোতে থাকে কাহিনী।
প্রতিটি খাবার নিয়ে আলোচনার পূর্বে উনি সেই খাবারটির ভারতে অথবা পশ্চিমবঙ্গে কিভাবে আবির্ভাব ঘটেছে তার সুষ্ঠু বর্ণনা দিয়েছেন যা পড়তে পড়তে বেশ কিছু ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়। তারপর এসেছেন সেই খাবারটির ঠায় ঠিকানায়।
এখানে বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই বইটি বগলদাবা করে কলকাতার রাস্তায় খেতে নামলে রীতিমত মানচিত্র সাথে খেতে চলেছেন, এরকম feel হবে। অলি, গলি, কোন রাস্তার কোন দরজা ঠেলে কোনদিকে বেরোনো যাবে এতটাই সুন্দর করে লিখেছেন, তা প্রশংসনীয়। শুধু তাই না, কোন দোকানের কোন খাবারটি একদম ছাড়া উচিৎ না, কোনটির পর কোনটা খাবেন, কত দাম - কলকাতার সব খাবারের ঠিকুজি কুষ্টি পেয়ে যাবেন এই বইটিতে।
বইটির পাতায় পাতায় তুলে ধরা হয়েছে বেশ কিছু ছবি, যা দেখলে আপনার খিদে বেড়ে যেতেই পারে। 😛
জরুরী কথা, আমি কলকাতা থেকে ২০০+ কিলোমিটার দূরে থাকি। তাও বইটি পড়ার সময় বর্ণনার চোটে মনে হচ্ছিল আমি চোখের সামনে ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি। সেইমত, যারা কলকাতা নিবাসী, তারা এই বইটি পড়তে আমার মতে বেশ মজা পাবেন। নিজের শহরের হয়তো অনেক অজানা দরজা খুলে যাবে আপনার সামনে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে সুস্বাদু খাবার 🤤🤤
বাঙালি এবং খাদ্যরসিক - কথাদুটি যেনো পরস্পরের পরিপূরক। আপনিও যদি এই দলে পড়েন, পড়ে দেখতে পারেন ফুড কাহিনী।
বই - ফুড কাহিনী মুদ্রিত মূল্য - ₹২৭৫/- প্রকাশক - বুকফার্ম
কলকাতা, সেই আদ্যিকাল থেকে ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে.. খাদ্য সংস্কৃতি ও তাই আবহমান কালের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী দ্বারা অনুপ্রাণিত, সমাদৃত। খাবারদাবার আর তার হাল হকিকত নিয়ে পড়তে ভীষণ ভালো লাগে.. "Food কাহিনি" শহর কলকাতায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রেখে যাওয়া নানান খাবারের উৎস অনুসন্ধান নয় শুধু, সাথে হাল ফুডব্লগিংয়ের জমানায় কোথায় কবজি ডুবিয়ে তরিবৎ করে খাওয়া যাবে তার অনুসন্ধানী লেখন ও বটে। ফুডকার লাহিড়ী যেমন সুন্দর উপস্থাপন করেন, লেখেন ও কড়াপাকের সন্দেশের মতো মিষ্টি করে। উপাদেয় বই 👌
লেখকএর সাথে পরিচয় ইউটিউব এ ফুডকা চ্যানেল এর মাধ্যমে। সেখান থেকেই এই বইটির বাপারে জানলাম। লেখক হাল্কা ছলে বাঙালি খাবারের বিভিন্ন ঘরানার সাথে আলাপ করিয়েএছেন। প্রধানত কলকাতা র অনেক বিখাত খাবার দোকান, অনেক গুপ্ত মনিমানিকের খোঁজ দিএছেন। খাদ্য সাহিত্য তে গবেষণা ধর্মী বইগুলঅর মধ্যে প্রথম সারিতে না থাকলেও বইটি পরে অনেক কিছুই জানা যাই। তবে একটা জিনিষ বলতেই হয় অনেক তথ্যের এই বারংবার পুনরাবৃত্তি রয়েছে।
It's a light fun book, which is essentially a collection of blogs written by the author. It's not a book to look for historical origins of various branches of Kolkata's diverse cuisine, but more like a review of best (and quite obscure, some of them) of the trends.