আমাদের না দেখেও যিনি আমাদের জন্য কেঁদেছেন। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও যিনি আমাদের জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন। হাজার বছরের ব্যবধান হলেও যিনি আমাদের জন্য পেরেশান হয়েছেন। যিনি আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। দিশা দিয়েছেন চিরসাফল্যের দীপ্তময় পথের। যিনি আমাদের ভালোবেসেছেন। আমাদের জন্য পার্থিব সব সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন...
কে তিনি? কে সে মহামানব?? কে করল আলোকিত আজম ও আরব??? ...তিনি আর কেউ নন; তিনি হলেন দুজাহানের সরদার, সৃষ্টির সেরা, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় মুহাম্মাদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁকে আমরা কতটুকু চিনি? কতটুকু জানি তাঁর চলাফেরা, তাঁর কথাবার্তা, তাঁর আচার-আচরণ? যিনি চৌদ্দশ বছর আগে আমাকে নিয়ে ভেবেছেন, আমার জন্য চোখের পানি ফেলেছেন, আমার জন্য রক্ত ঝরিয়েছেন; এমন মহান ব্যক্তিত্বকে কি আমরা ভালো করে চিনতে পেরেছি?
জানেন, কেমন ছিলেন তিনি? একটু বলি... তিনি নিজের জামা নিজেই সেলাই করতেন। নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন। নিজেই ঘর নিজেই মুছতেন। নিজেই বকরির দুধ দোহাতেন। পশু জবেহ করতেন। রান্নার কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতেন। মেহমান এলে নিজেই আতিথেয়তা করতেন। সহজভাবে কথা বলতেন। অত্যন্ত উদার ব্যবহার করতেন। সফরে বের হলে পালাক্রমে একবার নিজে সওয়ার হতেন, আরেকবার তার সাথিকে সওয়ার হতে দিতেন। তিনি যবের রুটি খেতেন। চাটাইয়ের বিছানায় ঘুমুতেন। কখনো খালি পায়েও হাঁটতেন। দাস-দাসীদের সাথে মিশতেন। ছোটদের স্নেহ করতেন। বড়দের সম্মান করতেন। কখনো খাবার খেতেন, আবার কখনো উপোষ থাকতেন। অর্থ-সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিতেন। নিজের জন্য পাই পয়সাও জমা করতেন না। আরও আরও আরও...
এ মানুষটাকে কি জানতে মনে চায় না? চায় না কি মনে একটু তার জীবনীটা জানতে? বস্তুত প্রতিটি মুমিনের অন্তরই চায় জানতে, কেমন ছিলেন তিনি? এ প্রশ্নেরই উত্তর নিয়ে রুহামা পাবলিকেশনের এবারের পরিবেশনায় থাকছে “যেমন ছিলেন তিনি”। শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের অনবদ্য রচনা “কাইফা আ’মালাহুম”-এর সরল অনুবাদ এটি। বইটি অন্যান্য সিরাত গ্রন্থ থেকে পুরোই ভিন্ন আঙ্গিকের। তাই অন্য কোনো সিরাত পড়লেও এটার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে না। হাদিস ও দলিলসমৃদ্ধ এ গ্রন্থটি আপনাকে দেবে সিরাতের ভিন্ন এক স্বাদ।
محمد صالح المنجد فقيه وداعية وعالم دين إسلامي، ولد في 30/12/1380 هـ ، نشأ وتعلم في المملكة العربية السعودية
ونشأ في الرياض . وأنهى المرحلة الأولى من تعليمه الابتدائي والمتوسط والثانوي في مدينة الرياض. ثم أنتقل إلى مدينة الخبر ودرس وتخرج من جامعة الملك فهد للبترول والمعادن بشهادة بكالوريس إدارة صناعية.
‘যেমন ছিলেন তিনি’ মূলত নবীজি (সা.)-এর হাদীস সংকলন। এই বইয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে—নবীজি (সা.) বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করতেন, তা হাদীসের মাধ্যমে শ্রেণীভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে পাঠকদের জন্য বুঝতে সহজ হয়—আমাদের জীবনে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেমন আচরণ করা উচিত।
গত রমজান মাসে আমি বেশ সময় নিয়ে পড়েছিলাম ‘যেমন ছিলেন তিনি’ বইয়ের প্রথম খণ্ড। যারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না বা সময়ক্রম অনুযায়ী তাঁর জীবনের ঘটনাগুলোর স্পষ্ট ধারণা নেই—তাদের কাছে মনে হতে পারে বইয়ের কিছু কিছু অংশে বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকলে ভালো হত। তবে নবীজির (সা.) জীবনের ঘটনাগুলো সময়ানুক্রমে সাজানো না হলেও, আচরণগত হাদীসগুলো এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, পাঠক সহজেই বুঝতে পারে—নবীজি (সা.) কেমন ছিলেন, কীভাবে মানুষকে মূল্য দিতেন। ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে জানার জন্য বইটা ভীষন ভালো মনে হয়েছে আমার।
এই বইটা থেকে আমি নিজের জীবনের জন্য অনেক মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আসছে রমজানে দ্বিতীয় খণ্ড পড়ে ফেলবো ইন শা আল্লাহ্।