কণা আর তরঙ্গ - যিনি কণা, তিনিই তরঙ্গ। বিজ্ঞানের জানা ইতিহাসে সবচেয়ে রহস্যময় জিনিসগুলোর একটা হচ্ছে - তোমার শরীরের প্রতিটা কণা, প্রতিটা ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন, আলোর কণা ফোটন, এমনকি তুমি নিজেও নাকি কখনও কণা কখনও তরঙ্গ!
যে ব্যক্তি কখনও কণা কখনও তরঙ্গ তার নিয়ম কানুন বড় অদ্ভুত। কেউ কেউ বলে সে নাকি একই সাথে দুই জায়গায় থাকতে পারে। সময়ের উল্টাদিকে চলতে পারে। আলোর বেশি বেগে যোগাযোগ করতে পারে! জন্ম দিতে পারে প্যারালাল ইউনিভার্সের!
এই যে একটা জিনিস কখনও কণা কখনও তরঙ্গ, এ জিনিস নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তার নাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এখানে লর্ড রাদারফোর্ড হুঁকায় টান দিতে দিতে তোমাদের শোনাবেন নিউক্লিয়াসের গল্প, নীলস বোর শোনাবেন আলো আর রঙের কাহিনী। স্টার্ন আর গারল্যাক শোনাবেন আধিভৌতিক স্পিনের কেচ্ছা। টমাস ইয়াং আর ডি ব্রগলি গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোমাদের নিয়ে যাবেন তরঙ্গের দুনিয়ার। হাইজেনবার্গ ঘুরিয়ে আনবেন অনিশ্চয়তার জগৎ থেকে, পল ডিরাক চেনাবেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার, জন বেল ঘুরিয়ে আনবেন এনট্যাঙ্গেলমেন্টের দুনিয়া থেকে, আর নিষ্ঠুর বিড়াল মানব শ্রোডিঙ্গার জটিল সব সমীকরণ এঁকে বুঝাবেন তরঙ্গ ফাংশন!
একেবারে বেসিক থেকে শুরু করে গল্প, গ্রাফ আর ম্যাথ দেখতে দেখতে আমরা ঢুকে যাবো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গভীরে। সাথে থাকবেন আক্কাস আলি, বক্কর ভাই আর জসিম।
মানুষ এক জীবনে দশ থেকে বার হাজার বই পড়তে পারে। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কত বই পাবলিশ হয়েছে? কোটি? শতকোটি? তাই খুব সাবধানে এই লিমিট খরচ করা উচিত।
এই বইটা সেই তালিকায় সন্দেহাতীত ভাবে ঢুকে যাবে। পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দুর্বোধ্য, সবচেয়ে ভূতুড়ে বিষয়টি কি অবলীলায় হাসতে খেলতে আনন্দে লিখে ফেলেছেন লেখক নাঈম হোসেন ফারুকী!
ক্লাস নাইন টেন থেকে শুরু করে অনার্সের সকল ছাত্রের জন্যে এই বইটা অবশ্যপাঠ্য।
কখন যে এতো মজা করে, কৌতুকের মাধ্যমে, আলু-পটল কেনার মতো করে ফিজিক্সের সবচেয়ে জটিল বিষয় মগজের ব্যাগে পুরে ফেলেছি টেরই পাইনি।
মহামানব তুল্য বিজ্ঞানীদের বিন্দুমাত্র অসম্মান না দেখিয়ে, মজা করে, তাদের নিয়ে কৌতুক করে বইয়ের মূল সুর বাজিয়ে গেছেন লেখক; আমার কেবল মনে হয়েছে কোনও অপার্থিব মিউজিক শুনেছি পুরোটা সময়। সেই সাথে বক্কর ভাই, আক্কাস ভাই রকস!
সময়টা গতবছর। লেখক তার প্রথম বই "বিজ্ঞানে অজ্ঞান" এর পর ২য় বইয়ের প্রিপারেশন নিচ্ছেন৷ কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে। প্রথমে সিরিজ আকারে অনলাইনে চালালেন। লেখার নিচে কত প্রশ্ন, সবই লেখক উত্তর দেন। কঠিন বিষয় সহজ করে দেন। ফলে বই লেখার সময় এ বিষয় গুলো আরো সহজ হয়ে ফুটে উঠাই সাভাবিক।
সাধারণ ভাবেই ফেইসবুকে স্ক্রল করছিলাম হুট করে দেখি বইটির নামকরণের পোস্ট এলো। আমার আবার স্পয়েলার এলার্জি আছে। অনলাইনে যে লম্বা সিরিজ চালালেন, পুরাটা না পরে নামকরণ আমাকে দিয়ে মানায় না। তারউপর নিজের লিখা আর্টিকেলের নামকরণ করতেই মোট সময়ের অর্ধেক যায়। নামকরণের পোস্টে ভুরি ভুরি নাম। যারা নাম দিয়েছেন মেক্সিমামেরই সিরিজটা পড়া। আমার হাতে তেমন বিশেষ কাজ ছিলনা। তাই কমেন্ট করে কিছু নাম দিলাম, লাভ হলো না, উনার ভালো লাগেনি। ইনবক্সেও দিলাম, চলবে না। এরপর গেলাম ইন্টারনেটে, অনেক নাম, ইংরেজি নামগুলো সুন্দর। তবে এগুলোর অনুবাদ নাম দিলে লোকে কপিবাজ বলবে, দেওয়াও উচিত না। তাই ইংরেজি মৌলিক নাম বানিয়ে দিলাম, তাও লেখকের চলবে না, উনার বাংলা চাই। বাংলা নাম সোজা না, কিছু মৌলিক নাম মাথায় এল তবে বইয়ের সাথে যায় না, কমন নাম হয়ে যায়, উনার বিশেষ নাম চাই।
সময়টা সে বছরের কোনো একদিন সন্ধ্যেবেলা, আমি নামকরণ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। এতক্ষণে অবশ্য ২০+ নামের একটিও উনার ভালো লাগেনি। আমি চা প্রিয় মানুষ। সকাল - সন্ধ্যা চা নাহলে আমার একদম চলে না। নামকরণের উক্ত সময় আম্মুর চা দেবার কথা, ঠিক তক্ষুনি মাথায় এল, নামটা "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" দিলে কেমন হয়! ভেবেচিন্তে নামটা উনাকে ইনবক্সে দিয়ে চায়ে চুমুক দিলাম। এটা নাকি অনেকটাই নেওয়া যায়। অবশ্য এর পরও কিছু নাম দিয়েছিলাম, টিকে নি। তবে, নামটা যে অচিরেই ঝড়ে যাবে সেটা নিশ্চিত ছিলাম।
ইনি আবার পোস্ট দিলেন। আমার নামের সাথে অন্যদের নাম টেক্কা দিবে। লেখকের আইডিতে ফ্রেন্ড ৪,৫০০-৫,০০০ সাথে ফেইসবুক গ্রুপ। এ নাম টিকবে না সেটা আমি বিশ্বাস করতাম। তারপরও দেখি কিভাবে না কিভাবে টিকে আছে। টিকার খুশিতে হাসব নাকি ভুল বিশ্বাসে কান্না করব বুঝতে পারিনি। যাক এই প্রথম নিজে দেওয়া অন্যের জন্য কোনো নাম কেউ গ্রহণ করেছে।
নামকরণের ব্যাখ্যা
চায়ের সাথে বিস্কুট ভালই চলে। আমি খাই, কমবেশি সবাই খান। কফির সাথে বিস্কুট চলে কিনা তা আমার জানা নেই। যাহোক, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, পানি কিংবা দুধভাতের মত সোজা নয়। কিছুটা শক্ত বটে। তাই শক্ত বিস্কুট তরল চায়ে না ভিজিয়ে খেলে একটু বেশিই কষ্ট লাগতে পারে। বইতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স যথাসম্ভব সহজ করেই বোঝানো হয়েছে, চায়ের মধ্যে চুবানি দিতে দিয়ে যথাসম্ভব নরম করা হয়েছে। তবে একদম বেশি চুবানি দেয় নি, তাহলে সমস্যা। বিস্কুট গলে গিয়ে চায়ের কাপের নিচে পড়ে থাকবে। সহজে তোলা যাবে না, তুলতে চামচ লাগবে। বইয়ের বেলায় চামচ না লাগলেও, অন্য বইয়ের সাহায্য লাগতে পারে বিধায় বিস্কুটের মতো এভাবে গলানো হয়নি। তবে যথেষ্ট নরম করা হয়েছে। এটা সেমি-পপ বই। একেবারে পপ না, আবার টেক্সট বইও না; এ দুই বইয়ের মাঝামাঝি। এমন সেমি-পপ বই মূলত শিখার জন্য স্টান্ডার্ড, শিক্ষার্থীদের জন্য পারফেক্ট।
কফির ব্যাখ্যাও অবশ্য চায়ের মতন। অনেকেই কফি প্রেমি। তবে এর ব্যাখ্যায় বলা যায়, কোয়ান্টাম মেকানিক্স যার হাত ধরে এসেছে অর্থাৎ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, শোনা যায় তিনি এ নিয়ে গবেষণাকালে টানা ২ মাস ঘুমান নি, পুরোটা সময় উনার সঙ্গী হিসেবে ছিল মগের পর মগ কফি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুধভাতের মতন সোজা না, কে জানে, আপনাকেও হয়তো মগের পর মগ চা কিংবা কফি নিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝতে হতে পারে। বইয়ের ভেতরে অবশ্য "চা পানের বিরতি" নামের কিছু অধ্যায় আছে। আমি নামকরণে কতটুকু সার্থক তা পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের জন্য কিছু........
গত বছর জামাল স্যারের বিশ্ববিখ্যাত "দি আল্টিমেট ফেট অভ দি ইউনিভার্স" বইটি পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। বইখানা পড়া শেষে আমার গুডরিডস একাউন্টে রেটিং আর রিভিউ দিয়ে গিয়ে স্যারের প্রোফাইলটা একনজর ঘুরে এলাম। প্রোফাইলের নিচে "কোট" বা উক্তি নামের একটা অপশন আছে৷ তবে সেটা খালি, কোনো উক্তি নেই। একটু কষ্ট সাভাবিক ভাবেই লাগল। পরে দেখি গুডরিডস - এ উক্তি সংযোজনের উপায় আছে। দেখামাত্র স্যারের বইটা আবার উল্টিয়ে বইয়ের যে সব কথা উক্তি হিসেবে নিজের কাছে ভালো লেগেছে সেগুলো এক রাতেই স্যারের একাউন্টে এড করে দিয়েছি৷ ২০-২২টা হবে। পরে অনলাইনে এটি লিংক দিয়ে শেয়ার করি। লেখকেও বলেছিলাম আমার সংযোজিত স্যারের কোনো উক্তি ভালো লাগলে দিতে। লেখক ঠিকই সেখান হতে উনার পছন্দের মত স্যারের একটি উক্তি উনার বইতে স্থান দেন। জামাল স্যারের জন্য আমার মত ছোটখাটো কেউ বড় কিছু হয়তো করতে পারবে না, তাই এতটুকু করতে পেরে আমি কিছুটা হলেও গর্বিত।
শেষ কথা
পুরো বইতে আমি শুধু বিন্দুমাত্র কাজ করতে পেরেছি। বইয়ের নামকরণ, লেখক পরিচিতিতে একটু এডিট আর জামাল স্যারের উক্তি। যা সত্যি বলতে পুরো বইয়ের আসল কাজ অপেক্ষা অতি নগন্য। তারপরও আমি হ্যাপি এবং কিছুটা গর্বিত। বইটি সম্ভবত বাংলায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স জগতে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বেস্ট বই হবে। রসায়নের অনেক বেসিক, পদার্থবিজ্ঞানের তরঙ্গ, কসমোলজির কিছু সহ আরো নানান বেসিক বিষয়ের ধারণা এ বইতে বিদ্যমান। বইটি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী সকলেই পড়া উচিত। এ বই দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর হাতেখড়ি নেবার আশায় বসে আছি। লেখকে ধন্যবাদ এ ক্ষুদ্র মানব কে এই মহান কাজের সুযোগ দেবার জন্য।
বইটা বিজ্ঞান প্রেমি সকলে অবশ্যই পড়বেন। পরিচিত পদার্থবিজ্ঞান প্রেমিদেরও নিতে বলবেন।
হৃদয় হক, ০৫/২/২০২০ নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ব নিয়ে বৃটিশ বিজ্ঞানী আর্থার এডিংটনকে এক সাংবাদিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "কথাটা কি সত্য যে মাত্র তিন জন মানুষ এই তত্ব বোঝেন?" এডিংটন কৌতুক করে বলেছিলেন, "আমি ভাবছি তৃতীয় ব্যাক্তিটা কে?" এখন অবশ্য আপেক্ষিকতার তত্ব অনেকেই বোঝে, তার চাইতে অনেক বেশী ছাত্রছাত্রী পরীক্ষার খাতায় শুধু মুখস্ত করে ঢেলে দিয়ে আসে
পরমাণুর বা ইলেকট্রনের পর্যায়ে নেমে গেলে আমাদের স্কুল কলেজের শেখা পদার্থবিজ্ঞানের অনেকটাই আর কাজ করে না। একটা ইলেকট্রন কোথায় আছে, সেটা আমরা আর নিশ্চিন্ত করে বলতে পারি না, শুধু সেটার বিভিন্ন অবস্থানের সাম্ভাবনা বলতে পারি।।
অনেকেই হয়তো জানে, আলোর গতির চাইতে দ্রুত আর কিছু যেতে পারে না। যদি তার কাছাকাছি গতিতে কিছু যায়, তাহলে সেখানে সময় ধীরে চলতে থাকে।
পুরাই মাথা খারাপ করে দেয়া ব্যাপারস্যাপার। কিন্তু ঠিক কতখানি মাথা খারাপ করে দেয়ার মত ব্যাপার? এই আলোর গতি থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞান আজ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে আমাদের ভাবতে হচ্ছে, আমাদের এই মহাবিশ্বই একমাত্র নয়, আরো অগুণিত মহাবিশ্ব আছে। কিন্তু সেই চিন্তার জগতে আমরা কীভাবে পৌছাবো?
নাঈম হোসেন ফারুকী চমৎকার একটা গাইডবুক লিখেছে সেখানে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কেউ যদি মুখস্ত না করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স গোড়া থেকে জানতে চায়, এই বইটার মত ভাল বই বাংলাতে তো নেইই, এই টপিকের ওপর অন্তত পঞ্চাশটা ইংলিশ বই আর অগুনিত রিসার্চ পেপার পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সম্ভবত অন্য কোন ভাষাতেও নেই।
কেন এত বড় কথা বললাম? কারন এটা এমনভাবে লেখা হয়েছে যে ক্লাস নাইন-টেন এর বিজ্ঞানমনষ্ক ছাত্রছাত্রীদেরও বুঝতে অসুবিধা হবে না, কিন্তু আবার অন্য দিকে ফিজিক্সের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও কাজে লাগবে। ক্লাস নাইন-টেন? এটা কিন্তু শুধু মুখের কথা না। বইটার অনেক লেখা আগে অন-লাইনে প্রকাশিত হয়েছে, এবং স্কুল পড়ুয়ারা যে লেখাগুলি বোঝে, সেটার পরীক্ষা হয়েছে।
আমি বইটার চ্যাপটার ধরে ধরে ব্যাবচ্ছেদ এখানে করছি না। বইটার সবচাইতে ভাল লেগেছে, গল্প বলার ধরণে বিজ্ঞান শেখানোয়। মাঝে মাঝে গল্প আর আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে উদাহরণ। যেমন আলুর ব্যাবসায়ীর আলু চোরকে আটকানোর গল্প পড়তে গিয়ে আমরা পেয়ে যাব আলুর প্যাকেট থেকে আলোর প্যাকেটের ধারণা। তাই বইয়ের "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" নামটা খাপে খাপে মিলে গিয়েছে। পড়তে গিয়ে মনে হবে বড় ভাইয়ের সাথে বিজ্ঞান নিয়ে আড্ডা হচ্ছে, আর সেই আড্ডা থেকে বের হয় অবাক হয়ে দেখবে, বিজ্ঞানের কঠিনতম বিষয়গুলির মধ্যে একটা বেশ ভালই শেখা হয়ে গিয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞান তো বটেই, এমনকি রাসায়ন নিয়েও যার বিন্দুমাত্র উৎসাহ আছে, এমন স্কুল বা কলেজ-পড়ুয়াদের জন্য এটা একটা অবশ্যপাঠ্য বই। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় বমি না করে যারা আসলেই শিখতে চায়, তাদের জন্য এটা অত্যন্ত সহজ ভাষায় লেখা দারুণ একটা বই।
নিজে বিজ্ঞান নিয়ে ভাবলে, বা বিজ্ঞান নিয়ে ভাবে এমন কাউকে উপহার দিতে হলে, এই বইটা চমৎকার।
পুনশ্চ: লেখকের সম্পর্কে একটা ছোট মন্তব্য। বিজ্ঞানের ভাইরাস একবার ধরলে আর ছাড়ে না, এবং অন্যদের মধ্যেও সেটা ছড়াতে থাকে। নাঈম নিজেই এটার একটা উদাহরণ। নিজের প্রচুর সময় ও শ্রম দিয়ে ও বিজ্ঞানপ্রচার করে যাচ্ছে, এবং কয়েক হাজার ছেলে মেয়ের মধ্যে নাঈম এই বিজ্ঞানুরাগ ছড়িয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সেটার জন্য নাঈমকে আলাদা একটা ধন্যবাদ। নাঈম-এর ওয়েবসাইট http://nayeem.science/ এ ওর অনেক লেখা পড়া যাবে।
যদিও বা বলা হয় 'Don’t judge a book by its cover', আমি কিন্তু আসলে প্রচ্ছদ এবং নাম দেখে ইন্টারেস্টেড হয়েই বই আনিয়ে নিয়েছিলাম। নাম ও প্রচ্ছদ যতটা নজরকাড়া, বইয়ের ভেতরটাও পুরোটা সময় চোখ সরানোর সুযোগ দেয়নি। ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটে, মাধ্যমিক শুরু হওয়ার দিনগুলিতে যখন কোয়ান্টাম মেকানিক্স আলাদা করে ভালো লাগার অনুভূতির উদ্রেক ঘটিয়েছিল, সেসব দিনে এই বইটা পেলে কতটা চমৎকার হত ভেবেই আফসোস হচ্ছে।উচ্চ মাধ্যমিকের অনেকেই এই বিষয়গুলোকে ভয়,খানিক বিরক্তি,খানিকটা না বুঝার কারণে এড়িয়ে চলে। এই বইটা তাদের হাতে গুঁজে দিলে চিত্রটায় একটা সিগনিফিক্যান্ট পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে বলে আশা করছি।
সহজ বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে একসময় পুরো দেশের চেহারা বদলাবে- এই স্বপ্ন নিয়ে আমরা যারা বাঁচি- তাদের স্বপ্নের হালে পানি পাওয়ার মত একটা বই। খটমটে তত্ত্ব- সমীকরণ বুঝানোর আগে ভেতর থেকে গাঁথুনি বানানো,ইন্টারেস্টিং রিপ্রেজেন্টেশন এর ব্যবস্থা করা- সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল এর উপর একটা সিরিজ ক্লাস নেয়া যায়।সামনে থাকবে এক ঝাঁক চকচকে চোখ,লোভাতুর হয়ে বিজ্ঞানের গল্প শোনাই যাদের স্বপ্ন...... 😅
লেখক জানেন, লেখার আগে যথেষ্ট ঘাঁটাঘাঁটিও করেছেন। তবে গদ্য এতটা অসামঞ্জস্য হওয়ার কারণে পড়তেই পারলাম না। প্রচু্র বানান ভুল; বানানপ্রমাদ যদি সমস্যা না হয়, তাহলে একটা ইংরেজি বিজ্ঞান বই এনে আমাকে দেখান, যাতে একটা বানান ভুল আছে। কেবল গুচ্ছ/অখণ্ড বলবিদ্যার কথাই যদি বলি, আমি ইংরেজি ইলেকট্রিক ফিল্ড আর বাংলায় তড়িৎ প্রাবল্য পড়েই অভ্যস্ত—বাংলাটা মোটেও খটোমটো নয়; এটা যদি খটোমটো হয়, তবে ডয়েচ ভাষা মটোখটোখটখটমটো। যা-ই হোক, মহাকর্ষ ফিল্ড বা গ্র্যাভিটি ফিল্ড আসলে বাংলা ভাষার বইয়ে পড়া যায় না। আমি পড়তে পারি না। বাংলা ভাষায় ছাত্রপাঠ্যপুস্তক যে কৌতূহলবিকর্ষী, তার জন্য ভাষাকে তো দোষ দিতে পারেন না; সে দোষ লেখকের, যিনি প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন নি। গদ্য জুতসই না হলে, য়ুটিয়ুব ভিডিয়ো প্রভাষণ হয়তো শুনতে পারি; তবে ঠিক বই না।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স জিনিসটা কি? খায় নাকি মাথায় দেয়? না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স খাওয়া বা মাথায় দেয়ার জিনিস না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স হচ্ছে পরমাণু, ইলেক্ট্রন, ফোটন এদের মতো কণার জগৎ কিভাবে কাজ করে, তা ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞান। মোটামুটি তো বুঝলেন তাই না? হ্যাঁ, এইটা নিয়েই বই। কি ভাবছেন? যে, এগুলা তো আগে থেকেই জানি। হুদাই এই ব্যাটা গ্যাঁজাচ্ছে কেনো? আরে না! গ্যাঁজাচ্ছি না। আমি জানি, আপনি জানেন। তবে, অনেকদিন থেকে ফিজিক্স চর্চায় না থাকার কারণে ভুলেও তো যেতে পারেন। যেমনটা আমি গেছিলাম। হ্যাঁ, বইটা পড়ার সময় দেখলাম বেশ অনেককিছুই ভুলে গেছি। ভাগ্যিস গুগল বাবাজি ছিলো!
আচ্ছা, বইয়ের কনসেপ্ট তো মোটামুটি বুঝেছেন। এবার আসি বইটা কেমন সেই প্রসঙ্গে। বই মোটাদাগে ভালো। নাঈম ভাই যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতো ক্যাটক্যাটে বিষয় এতো সহজভাবে গেলাবে, তা আপনি কল্পনাতেও আনতে পারবেন না। বই পড়তে গিয়ে আপনার সাথে দেখা হবে আইনস্টাইন, টমসন, ডি ব্রগলি, বস শ্রোডিঙ্গারের মতো মহাপুরুষদের সাথে। আর মার্ভেল ফ্যানস, হতাশ হবার কিছু নাই। আপনাদের জন্যে থাকছে মাল্টিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্স, মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশানের মতো জিনিসপাতি। তাই বলে 'এজ অফ আলট্রন'-এর মতো কিছু হবে বলে ধরবেন না প্লিজ। এখানে থর, আইরন ম্যানদের মারামারি নাই। তবে, যা আছে তা আপনার মাথা ঘুরাবার জন্য যথেষ্ট।
সবমিলিয়ে, সায়েন্সের স্টুডেন্ট যারা আছো, যাদের কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে আগ্রহ আছে তাদের জন্য এই বইটা মাস্টরিড। হ্যাঁ, কিছু কিছু জায়গা কাঠখোট্টা টাইপ লাগতে পারে। আমারও লেগেছে। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে ইহা একখানা চমৎকার বই!
রিডীং আওয়ার্সঃ দুই ঘন্টা (শেষ বার) প্রকাশঃ একুশে বই মেলা '২০
নাঈম ভাইয়ার "চা,কফি আর কোয়ান��টাম মেকানিক্স" বইটা যে কারোর সারাজীবন সংগ্রহে রাখার মতোন একটা বই। আশা করছি এর ইন্টারন্যাশনাল কপি বেরোবে। নীতি, থিউরী সমস্তকিছু ভাইয়া উপমা,গল্প,রসাত্মক ছবি দিয়ে সাজিয়েছেন। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের প্রতিটা পর্যায়ে টাচ করে করে যাওয়া হয়েছে। কণা হয়েছে কামানের গোলা। প্রথমতো "চা, কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" একটা প্রচন্ড রকমের ইনফরমেটিভ, অ্যাক্সপেন্সিভ বই। বই সম্পূর্ণ শেষ করার পরেও গত দুদিনে আমি তিনবার করে পড়েছি! যতোবার শেষ হয়েছে, সূচিপত্রে একবার চোখ গেলেই মনে হয়েছে কোনটা যেনো আমি স্কিপ করেছি। আবার পড়েছি। বই পড়তে গিয়ে একসময় মাথা ব্লার্ডও হয়ে যেতে পারে, ইনফরমেশনের দিক দিয়ে টপ মোস্ট রিচ। বই এক বসায় পড়ে ফেলার দরকার নেই। ভাইয়া চা পানের বিরতি রেখেছেন। সেটা জরুরী। সবচে জরুরী এসএসসি লেভেলের বাচ্চাদের দিয়ে এই বই পড়ানো। বেইজ টা মজবুত হোক। তবে প্রিকশোনারী কথা হচ্ছে, ওদের অবশ্যই খাতা-কলম নিয়ে বসাটা প্রেফারেবল। নতুন কিছু শিখতে হলে তাই করতে হয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনেক স্পাইসি খাবার। সবার খাওয়া হতে হলে যা করতে হয়, ভাইয়া সেটাই করেছেন। এমন বইয়ের কোটা ফাঁকা ছিলো, সেই শূন্যস্থানটা চোখে পড়াতেই ভাইয়ার এটা নিয়ে লেখা। বইতে শুরুতেই ভাইয়া এক ধাক্কায় সমীকরণ/থিউরী নিয়ে বসেন নি। শুরু হতেই মনে হয়েছে এর পর কী এর পর কী। আমার পুরোটা সময় কিছুতে ডুবে আছি মনে হয়েছে। কখনো বোঝা যায়নি এই গল্প দিয়ে এই টপিক বোঝানো সম্ভব, গল্প পড়তে গেলে খেয়াল থাকেনা কি পড়ছি, কি নিয়ে পড়ছি কিন্তু একেকটা গল্প শেষ হতেই টপিকও শেষ হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া শুরু থেকে শেষ ধরে ধরে এগিয়েছেন। খুব সূক্ষ্ম বিষয়গুলোও টাচ করেছেন, যেমন, কম্পাঙ্ক, মহাকর্ষ, ইলেকট্রন-পজিট্রন হোল, তরঙ্গের নোড-অ্যান্টিনোড। সমস্ত কিছুতে বোঝাতেগিয়ে ভাইয়া গল্প টেনে এনেছেন। ধরে ধরে সাইন কার্ভ রেডী করা হয়েছে। আস্তে আস্তে তরঙ্গের সমীকরণ সাজানো হয়েছে সবাইকে নিয়ে বসে। একবার পড়ে রেখে দেয়ার মতোন বই তো না ই, বইয়ের একটা গল্প আবার একটা পাতায় কিংবা একটা চা পানের বিরতিতে শেষ হয়ে যায়নি। বারবার ঘুরে ঘুরে এসেছে, যেভাবে বিজ্ঞান আমাদের জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে ফিরেফিরে রয়েছে। এমনটা নয় যে শুধু বিজ্ঞান নিয়ে পড়া কেউ ই এই বই পড়বে। পপ সায়েন্স নয় আবার সমীকরণ আর তত্ত্ব দিয়ে ঢালাই করে দেয়া কোনো বইও নয়। সায়েন্স ফিকশনও যে নেই, সেটাও বা কেনো বলছি! পার্টিকেল পার্ট টা আমার পুরোটা থ্রিলার অর্থাৎ রমাঞ্চের (বাংলায় বলতে মন চাইছে) মতো কেটেছে। বইয়ের একটা দেখার মতোন টুইস্ট হচ্ছে, একইসাথে কেউ একাডেমিক এবং ন্যাচর্যাল ফিজিক্সের জন্য বইটা পড়তে পারে। তবে সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে, শুধু ফিজিক্সের জন্যই বা কেনো পড়বে। বিজ্ঞান রহস্য। কী, কেন, কিভাবে ছাড়া বাস্তবিক জীবনতো সম্ভব নয়।
. তাপমাত্রা বাড়ালে ওই ম্যাক্সিমামটার মান আরো বাড়ে, হয়তো আরো বেশি কম্পাঙ্কের জন্য শক্তি ম্যাক্সিমাম হয়, কিন্তু একটু পর কমতে থাকে। ঠিক যেন, কোন এক আশ্চর্য কারণে, তুমি ১০০ টাকার নোটে মোট যত টাকা নিতে পারছ, ৫০০ টাকার নোটে সেটা পারছ না। কি হতে পারে কারণটা?
. যে চোর দুই ফুট পুরু টাইটেনিয়ামের দেওয়াল ভেদ করতে পারে সে বস্তার ভেতর ঢুকে কেন আলু বের করতে পারলো না, এই চিন্তা দুই একবার মাথায় এসেছিল আক্কাস আলীর, কিন্তু চিন্তা করে খুব একটা লাভ হলো না।
.বিজ্ঞানী অটো স্টার্ন বোরের মডেলের ঘোর বিরোধী। তিনি খুবই সিরিয়াস টাইপের নো ননসেন্স বিজ্ঞানী। তাঁর সাথে সমসময় একটা হাতুড়ি থাকে। যন্ত্রপাতি কথা না শুনলে হাতুড়ি দিয়ে ভয় দেখান। স্টার্ন এবার রেডি হলেন বোরের মডেলকে ব্রেক করার জন্য। সাথে তাঁর সহকারী গার্ল্যাক।
অটো স্টার্ন হাতুড়ির বাড়ি মারলেন। ভেঙ্গে গেলো প্যান্ডোরার বাক্স। বের হয়ে আসলো দানব!
. অটো স্টার্ন এখন মহাকাশচারী, তাকে পাঠানো হয়েছে নতুন এক সৌরজগতে। উদ্ভট কিছু একটা হয়েছে এখানে, কেউ ঠিকমত ধরতে পারছে না।
স্টার্ন ঘুরে ঘুরে দেখলেন। এই ওই গ্রহে নামলেন। খটকা লাগাটা আরো বারলো। কি এক অদ্ভুদ কারণে সবগুলো গ্রহ একই রকম দেখতে। হুবহু একই রকম। তাঁর চেয়ে বড় কথা, কি কারণে জানি সবগুলো একই অক্ষ বরাবর ঘুরছে। Z অক্ষ বরাবর।
. ইনফ্লেশানের ফলে জন্ম একেকটা শিশু মহাবিশ্বে একেক রকম নিয়ম। তাদের কারো কারো নিয়ম কানুন হয়তো আমাদের মত। এই শিশু মহাবিশ্বগুলোর কেউ কেউ অনেকদিন বেঁচে থাকে। তারা বড় হয়। তাদের গর্ভে নক্ষত্রের জন্ম হয়। সেই নক্ষত্রের চারপাশে কখনও হয়তো কোন অনুজ্জ্বল নীল সবুজ গ্রহতে প্রাণেরও আবির্ভাব ঘটে।
ইনফ্লেশান যদি চিরদিন চলতে থাকে, তাহলে, আরও একদিন, অন্য কোন মহাবিশ্বে, হুবহু তোমার মতো একজনের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... চা-কফির কোয়ান্টাম মেকানিক্সে আমার হারিয়ে যাওয়া কয়েকটা জায়গা তুলে ধরেছিলাম।
চা-কফিতে আইন্সটাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির "বিস্তারিত" আলোচনাটা শুধু রাখা হয়নি, ওটা ভাইয়ার গত মেলার "বিজ্ঞানে অজ্ঞান" বইতে রয়েছে। অনেকে বলবেন বইতে ইন্টারমিডিয়েটের অনেক টপিক রাখা হয়েছে। একটু বুঝে শুনে বলা উচিত! এটাতো সত্যিই যে ইন্টারমিডিয়েটে প্রায় অধিকাংশ জিনিসই টাচ করানো হয়, সেটা হোক এক লাইনে কিংবা এক সমীকরনে :”(
শেষ করবো ভাইয়ার একটা কথা দিয়ে, "যখন বুঝতে পারবা তোমাকে হেল্প করার কেউ নেই, একটা আশ্চর্য সুন্দর জানালা তোমার সামনে ওপেন হবে।"
বই শেষ হয়েছে। এতোবার পড়েও আমার শেষ হয়নি। আসলেই কি কোয়ান্টাম মেকানিক্স সবার জন্য নাহ?
- বইটা কতদূর পড়া হল, নাঈম? - এই যে সায়ন ভাইয়া, আর একটুখানি বাকি আছে। - আচ্ছা, দ্রুত শেষ করে রিভিউ দিয়ো।
নাঃ, তেমন কিছু না, নাঈম হোসেন ফারুকী নামের একটি ছেলে কন্টেস্টে জিতে আমার লেখা 'ভাত ডাল আর উৎপটাং থিওরি' নামের বইটা প্রাইজ হিসেবে পেয়েছে। বইটা পড়ে রিভিউ দিতে বললাম। এখন অবশ্য আমি 'ডাল ভাত আর ঘচাং-ফু থিওরি' বইটা লিখছি, আর তার জন্য প্রচুর চিন্তাও করতে হচ্ছে। চিন্তার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য চিন্তা শুরু করলাম আমার আগের বই 'ভাত ডাল আর উৎপটাং থিওরি' নিয়ে। কিছু উদ্ভট কথা এল মাথায়। উৎপটাং থিওরির কিছু হাইপোথেটিক্যাল ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী, অন্য কোনও মহাবিশ্বে হয়তো আছে অন্য কোনও সায়ন খাঁন, আছে অন্য কোনও নাঈম হোসেন ফারুকী! সেখানে হয়তো সায়নের বদলে বইগুলো লিখছে নাঈম, ‘ভাত ডাল আর উৎপটাং’ থিওরি’ হয়ে গেছে ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’, ‘ভাত ডাল আর ঘচাং-ফু থিওরি’ হয়ে গেছে ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’, (কী সব বিদঘুটে নাম!) আর সায়ন ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ পড়ে রিভিউ দিচ্ছে! আচ্ছা, যদি সেরকমই হয়, তবে কেমন হত সেই সায়নের রিভিউ?
স্বপ্নে এইসব দেখছি, এমন সময় ভেঙে গেল ঘুম। খুবই অদ্ভুত স্বপ্ন ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। এটা কি শুধুই স্বপ্ন, নাকি অন্য কোনও মহাবিশ্বে বাস্তবও? জানি না। অন্য কোনও মহাবিশ্বের অস্তিত্বের বা অনস্তিত্বের কোনও প্রমাণ নেই, তাই বলা যাচ্ছে না কিছুই। যাই হোক, আমি মনে হয় আমার রিভিউ থেকে অনেক দূরে, (নাইম্বাইয়ের স্টাইলে হয়তো বলা যায় কয়েক মহাবিশ্ব দূরে), তাই আপাতত রিভিউতে ফিরি।
পপ বই নাকি পপ নয়, সেই নিয়ে আগে অনেক কথাই হয়েছে, নতুন করে বলার কিছু নাই। সেই সব থেকে নাকি জানা গেছে, একে সেমি-পপ বললে সবচেয়ে ভালো হয়। যাই হোক, সেই সব বাদ দিয়েই বলি বরং।
এটা গল্পের বই।
এটা দেখেই হয়তো অনেকের অনেক রকম প্রতিক্রিয়া হতেই পারে, কিন্তু আমার কাছে এটাই মনে হয়েছে। এই বই গল্প বলে। ‘গল্প হলেও সত্যি’ বলে। ভূতের গল্পের চেয়েও বেশি ভূতুড়ে বাস্তবের গল্প বলে। তো এবার হবে কি, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতো বিজ্ঞানের থিওরিকে ‘গল্প’ বলার জন্য অনেকেরই হয়তো কোয়ান্টামানুভূতিতে লাগবে। আচ্ছা, তাহলে একে বরং ‘গল্প’ না বললে কী হয়ে যাচ্ছে, সেটাই একটু দেখা যাক না হয়।
-(বই পড়তে পড়তে) সূর্যের সাদা আলো আসলে সাত রঙের আলোর মিশ্রণ। (জিজ্ঞাসা) আচ্ছা, রঙ সাতটাই কেন? ছটা বা আটটা নয় কেন? -এই তো দেখাই যাচ্ছে, এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাতটা রঙ… -কিন্তু আমার তো সেই রকম ভাগ করতে ইচ্ছা নাও করতে পারে। যদি ধরি এই দুটোর মাঝে একটা আলাদা রঙ, আর এই দুটোর মাঝে যদি… -বিজ্ঞানীরা এই রকম সাতটা রঙে ভাগ করেছেন। তুই কি বিজ্ঞানীদের চেয়েও বেশি জানিস? -(মাথা চুলকে) না তো… -তাহলে বাজে বকছিস কেন? যা লেখা আছে মুখস্থ কর।
এদিকে, রঙ হচ্ছে আসলে কল্পনা, বাস্তবে কল্পনার রঙ যার ওপর নির্ভর করে, সেটা হল আলোর কম্পাঙ্ক। যেহেতু আলোর কম্পাঙ্ক অসীম সংখ্যক হতে পারে, সুতরাং রঙও অসীম সংখ্যক হতে পারে, শুধু আমরা আমাদের সুবিধার জন্য সাত ভাগে ভাগ করেছি, অন্য যে কোনও সংখ্যক ভাগে ভাগ করা যেত। এই তাহলে অবস্থা!
আচ্ছা, এবার বরং একটু অন্য দিকে তাকানো যাক। ওই যে, একজন ইয়ং-এর ডাবল-স্লিট এক্সপেরিমেন্ট পড়ছে। তাকে বরং তার পড়া ধরে দেখা যাক, সে আসলেই কতটা বুঝেছে।
-ইয়ং-এর ডাবল-স্লিট পড়া হচ্ছে? বেশ! আচ্ছা, বিজ্ঞানী ইয়ং কীভাবে জানলেন যে আলো আসলে তরঙ্গ, সেটাও আছে নিশ্চয়ই! -হ্যাঁ, আছে তো! উনি পর্দায় আলোর প্যাটার্ন দেখে বলেছিলেন। -কিন্তু উনি যখন এটা বলেছিলেন, তখন তো সবাই আলোকে কণা বলেই জানত। তাহলে শুধু ওই প্যাটার্ন দেখে কীভাবে বললেন উনি? আর যদি আলো ছাড়া অন্য কিছুর জন্য প্যাটার্ন হত, তাহলেও কি সেটা তরঙ্গই হত? -(কিছুক্ষণ ভেবে) তা তো জানি না!
তো, আমি চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ার পরামর্শ দিয়ে এলাম। এই রকম প্রতিটা ঘটনা, প্রতিটা নতুন তথ্য আবিষ্কারের পেছনে যে গল্প আছে, যে ভাবনা আছে, তা কিন্তু কোনও সাধারণ টেক্সট বই পড়ে জানতে পারা প্রায় অসম্ভব। শুধু তাই নয়, আরও একটা বড় ব্যাপার হল, এগুলোতে ভাবতে শেখানো হয় না। বা বলা যায়, শুধু বিজ্ঞান পড়ানো হয়, বিজ্ঞান শেখানো হয় না। হ্যাঁ, বিজ্ঞান পড়া আর শেখার মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য আছে, তা হয় তো অনেকে জানতেই পারে না। বিজ্ঞান শেখার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ভাবা। হ্যাঁ, চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভাবতে শেখাবে। মাঝে মাঝেই থাকবে কিছু আপাত অসঙ্গতি বা সমস্যা, যার সমাধান পাওয়ার আগে ভাবানো হবে।
ভাবার ক্ষেত্রে অন্যতম সুবিধাজনক পদ্ধতি হচ্ছে ভিজুয়ালাইজেশন, যা যতটা সম্ভব বেশি করানোর চেষ্টা হয়েছে বইটিতে। উদাহরণস্বরুপ ধরা যেতে পারে ইলেকট্রনের স্পিন ±১/২ হওয়ার বিষয়টি। কোনও কিছুকে ৩৬০° ঘোরানো হলেও তা যে আগের অবস্থায় ফিরে নাও আসতে পারে, এটা সাধারণভাবে ধারণা করা খুব একটা সহজ নয়। তাই, ভিজুয়ালাইজ করানোর মতো করে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও, মাঝে মাঝেই থাকছে চা পানের বিরতি, আর তাতে থাকছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কিত ইন্টারেস্টিং সব বিষয়, তার কিছু বাস্তব, কিছু কাল্পনিক …
আর শেষে থাকছে ভয়ঙ্কর কিছু, যা নিয়ে গ্রুপের অনেকেই কৌতূহলী! কী সেই “ভয়ঙ্কর কিছু”? জানতে হলে অবশ্যই পড়ুন ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’!
তবে হ্যাঁ, এই বই পড়তে হলে অবশ্যই ভাবার পাশাপাশি গ্রাফ এবং নাইন-টেনের ম্যাথ আর ফিজিক্স বুঝতে হবে, তবেই এই বই ভালো ভাবে বুঝে ওঠা যাবে।
এবার একটু অন্য দিকে আসি।
প্রুফ রিডের আগের অবস্থায় থাকায় প্রচুর পরিমাণে বানান আর ব্যাকরণগত ভুল পাওয়া গেছে, তাই মূল বইতে ভুলের পরিমান কী রকম সেই বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। তবে এই ভুলগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করেছে ‘না’ শব্দটি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় না-এর অনুপস্থিতি চোখে পড়ল।
এছাড়া মূল কনটেন্টের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যা নেই। তবে, সমাবর্তনের ক্ষেত্রে বেলের অসমতার প্রয়োগে সম্ভাব্যতার হিসাব বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে যোগ-বিয়োগগুলো সরাসরি না করে, আর একটু ব্যাখ্যা সমেত দিলে ভালো হত বলে মনে করি।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স হলো ফিজিক্সের মাথা খারাপ করে দেওয়া বিষয়গুলোর একটি। এটা খোদ আইনস্টাইনকেও নাকানিচুবানি খাইয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "ঈশ্বর পাশা খেলেন না"৷ আসলে তিনি যে ভুল ছিলেন সেটা বোর দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কঠিন বলেই কি কোয়ান্টাম জগতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের চেষ্টা করা উচিত নয়? অবশ্যই করা উচিত আর এই বইটা সেটাই করবে। প্রচলিত পপ সায়েন্সের মতো শুধু বর্ণনা দিয়েই শেষ করা হয়নি বরং গাণিতিকভাবে ব্যাখা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।গল্পের ভঙ্গিতে কাহিনীকে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে গল্পের চরিত্র হিসেবে হিসেবে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা হাজির হয়েছেন।কখনো মঞ্চ নাটকের মতো তাদেরকে মঞ্চে উপস্থিত করানো হয়েছে, কখনো নেয়া হয়েছে তাদের ইন্টারভিউ আবার কখনো তাদের কাল্পনিক ডায়েরির পাতা থেকে লেখা নিয়েছেন। তবে প্রথমেই তাদেরকে সম্মান জানিয়ে বরণ করে নিতে লেখক ভুলে যাননি।
" বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরে সাজ সাজ রব,আজকে এক বিশেষ অতিথি আসছে তাদের দেশে। তিনি নাকি সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী, ফিজিক্সের আইন কানুনকে একেবারে উলটে ফেলেছেন। তার নাম শুলে সসম্ভ্রমে উঠে উঠে দাঁড়ান পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীরা।............ আলবার্ট আইনস্টাইন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একজন জনক। তার জন্য সম্মান ও ভালোবাসা"
বিষয়টা যাতে ফিল করা যায় সেজন্য দারুণভাবে সব ব্যাখা দিয়েছেন যেমন স্পিন বোঝানোর ক্ষেত্রে লিখেছেন, "যে কণাকে 180 ডিগ্রি ঘুরালে আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তাদের স্পিন হচ্ছে দুই।....। আবার যে কণাকে 120 ঘুরালে আগের অবস্থায় আসে তাদের স্পিন দুই।.....। এর উদাহরণ হতে পারে তাসের কার্ড। তাসের রাণিকে 180 ডিগ্রি ঘুরালেই তাকে আগের অবস্থায় দেখি তাই রাণির স্পিন 2। আর হার্টকে 360 ঘুরালে আগের অবস্থায় দেখা যায় না, তাই এদের স্পিন 1।"
বাংলায় লেখা বইগুলোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই আমার অভিযোগ থাকে যে গ্রাফ দিয়ে যেটা নিমিষেই বোঝানো সম্ভব সেটা না করে দুই পৃষ্ঠা বর্ণনা দিতে যান।কিন্তু এই বইটির ক্ষেত্রে সেটা বলতে পারছি না কারণ পুরো বইটা জুড়েই বিভিন্ন রকম গ্রাফে ভরপুর।
অনেক লেখকই বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে লেখাটাকে আরও দুর্বোধ্য করে ফেলেন৷ পারলে "মোবাইল ফোনটা চার্জার দিয়ে চার্জ দেব" এটাকে "দূরাভাস যন্ত্রকে আহিতকরণ যন্ত্র দ্বারা আহিত করব" এরকম কাঠখোট্টা বানিয়ে দেন৷ প্যারাডক্সকে কূটাভাস আর চার্জকে আধাণ লিখে পাঠকের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। কিন্তু এই বইয়ের লেখক তা করেননি যেটাকে প্রচলিত যে নামে চিনি সেই নামেই লিখেছেন।
বইটা পড়তে গিয়ে আপনি বোর হবেন না সূক্ষ্ম সব রসিকতার জন্য। এর একটা নমুনা দেই
"এইটুকু বলার পর লর্ড রাদারফোর্ডের মোবাইলটা মিষ্টি সুরে বেজে উঠল। উনি ক্লাসের সামনে যেয়ে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করলেন। দেখতে দেখতে তার চোখমুখে অন্যরকম একটা ভাব চলে। তার গাল একট��� লাল হয়ে গেল৷ আমি আর কথা না বাড়িয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। "
বইটা পড়তে গেলে আপনাকে প্রচুর ভাবতে হবে। প্রতি পদে পদে লেখক প্রশ্ন করবেন আর সেটার উত্তর আপনাকে ভাবতে হবে।
আচ্ছা বলতে পারেন কণারা কোন পথে চলো, কোথায় থাকবে, বোজন কেন একসাথে থাকে?হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি আসলে কি বল?এসব উত্তর তো বইটাতে পাবেনই তাছাড়া বোরের বর্ণালি, সমারফিল্ড মডেল,কণার দৈততা, কোয়ান্টাম টানেলিং, বেলের সমতাসহ মোটামুটি এই ফিল্ডের সব টপিকই। আর এর সাথে বাঙালির প্রিয় জিনিস প্যারালাল ইউনিভার্স আর স্ট্রিং থিওরিও আছে।প্রত্যেকটা চা পানের বিরতির সময় একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় জানতে পারবেন এবং সেটা আপনাকে অবাক করতে বাধ্য। বইটার বিশেষ কিছু চিহ্নের ব্যবহার বইটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
পরিশেষে বলতে চাই বইটাতে আস্তে আস্তে জটিলতার দিকে ঝুকেছে,বিশেষ করে শেষের দিকের টপিকগুলো অনেক জটিল৷ আমি নিজেও পুরোপুরি ভাবে বুঝে উঠিনি আবার করে সেগুলো পড়তে হবে। যেগুলো নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে সেগুলো নিয়ে এখনও ভাবছি আরও ভাবতে হবে।বইয়ের কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে অতটা গল্প না করলেও হতো।তাছড়া আমার কাছে মনে হয়ে কাল্পনিক ব্যক্তির নাম এই টাইপের হয়েছে হয়ে গেছে তাই আমার ব্যালান্স ঠিক রাখতে কষ্ট হয়েছে ৷ যাহোক বইটা দারুণ একটা বই বিশেষ করে বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য।বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে যদি অবশ্যপাঠ্য বইয়ের কোনো লিস্ট করা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে জায়গা করে নিবে বইটি।
ছোটবেলায় আমার মাথায় আসা হরেক চিন্তার মাঝে অন্যতম ছিল, 'আচ্ছা, যদি একটা বক্স নেই, যার ভেতর পুরোটা আয়না, এবং আলো বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই, এবং এর ভেতর একটা লেজার লাইট অন করে রেখে দিলে কী ঘটবে? আলো তো বের হতেই থাকবে, এবং প্রতিফলিত হতে হতে পুরো বক্স ভেতরে আলো দিয়ে ভরে যাবে৷ এরপর? আলো যেহেতু বাইরে বের হতে পারছে না, লেজার থেকে কী আলো বের হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে? বক্স না খুলেই যদি বাইরে থেকে কোনোভাবে দেখা যেত তাহলে কী আলো ভর্তি কিছু দেখতাম?' ছোট বেলায় আমার ধারণা ছিল আলো খুবই ছোট গোল বলের মত। ঠিক কীভাবে আমার মাথায় এই ধারণা এসেছিল আমি জানি না, কীংবা মনে নেই। তাই ওপরের প্রশ্নের উত্তর আমার মাথায় কখনোই আসত না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে আমার প্রথম পরিচয় A levels এ এসে। ওয়েভ-পার্টিকেল ডুয়েলিটি বিষয়টা আমাকে বেশ অবাক করেছিল। বিখ্যাত ডাবল-স্লিট এক্সপেরিমেন্ট কেন এটা প্রমাণ করে যে আলো আসলে একটা তরঙ্গ, বা ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট কেন এটা প্রমাণ করে যে আলো আসলে একটা কণা সেই বিষয়গুলো দিয়েই শুরু৷ এরপরে প্রশ্ন আসে, কণা জিনিসটা আসলে কী? কণা ভাঙলে কী পাওয়া যায়? একটা ইলেক্ট্রন কণা আর প্রোটনের মাঝে পার্থক্য কী? আর চার্জ বলতেই বা কী বুঝি? চা-কফি ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটা মূলত কণা, তরঙ্গ, এদের অবস্থান, ভরবেগ সম্পর্কিত ব্যাখা, গণিত ও এক্সপেরিমেন্টাল প্রমাণ নিয়ে লেখা একটি উপভোগ্য একাডেমিক বই যা ক্লাস টেন পড়ুয়াদের জন্য বেশ উপযোগী। একটু খোলাসা করে বলি। বইটি শুরু হয় বড় বড় সব বিজ্ঞানী মহারথিদের নাম দিয়ে, কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যাদের অবদান অমূল্য। আলো জিনিসটা যে কণা অথবা তরঙ্গ, এই জিনিস দুটো প্রমাণ হওয়ার আগে তা নিশ্চয়ই হাইপোথিসিস ছিল। এগুলোকে গাণিতিকভাবে কী করে প্রমাণ করা যায়? কার মাথায় এসেছিল এটা? কীংবা কেমিস্ট্রিতে সারাজীবন পড়ে আসা, ইলেক্ট্রনের নিজস্ব কক্ষপথ আছে। প্রথম ইলেকট্রন শেলে দুইটা, পরেরটায় আটটা কেন থাকে? কেন আচ্ছা, ইলেকট্রনও তো আবার আলোর মত তরঙ্গ-কণা। তাহলে সে আবার অরবিটে থাকে কী করে? কীংবা, আলো কেন এই নির্দিষ্ট গতিতেই ভ্রমণ করে? এর বেশি গতি কেন সম্ভব নয়? আমরা যা কিছু দেখি, মাপি, উপভোগ করি সবই দুই অন্ধকারের মাঝে স্যান্ডুইচ করে রাখা জগৎ। এক অন্ধকারের বর্ডার, মহাবিশ্বের যে পর্যন্ত আমরা দেখতে পাই, যার পর থেকে আর আলো আসে না। এবং অন্য অন্ধকার হল প্লাংক লেংথ। এরচেয়ে কম দৈর্ঘ্য মাপা যেন নিষেধ! বলেছিলাম বইটা উপভোগ্য। কেন? একাডেমিক বই আবার উপভোগ্য কেন হবে? বইটা সাজানো হয়েছে এক বিশাল মঞ্চ হিসেবে৷ শুরুতেই যেই মহারথিদের নাম আমাদের জানানো হয় তারা আদতে এই রঙ্গমঞ্চের নায়ক, কখনো কখনো খলনায়ক। এরা এক এক করে আসেন, তাদের কার্যপদ্ধতি, চিন্তাভাবনা আমাদের জানিয়ে দেন। মাঝে মাঝে আক্কাস আলী ও বক্কর ভাই তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে হাজির হন। তাদেরকে আমরা কোনো সিরিয়াস নাটকের কমেডি রিলিফ বলতে পারি। তবে তাদের এই সমস্যাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমস্যাগুলোর সাথে মিলে যায়। এবং তাদের সমাধানগুলোও তেমন। উল্লেখ্য, বক্কর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড তাকে একবক্স দামী কয়েন গিফট করেছে। একই ধরণের বাক্স নিজের কাছেও রেখেছে। বক্কর ভাই এটা নিয়ে বাড়ি যাবে। এরপর বাক্স খুলবে। কয়েনগুলো সোজা করে রাখা ছিল, খোলার সাথে সাথে কিছু হেডস, কিছু টেইলস হয়ে পড়ে যাবে। কেউই আগে থেকে বলতে পারবে না সেগুলো হেড হবে, না টেইল হবে। কিন্তু বক্কর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড পারবেন। কীভাবে? মনে আছে নিশ্চয়ই তার কাছেও একই রকম বাক্স ছিল। তিনি সেটা আগেই খুলেছেন। তার কয়েনগুলো যেই প্যাটার্নে হেড-টেইল হয়ে পড়েছে একই প্যাটার্নে তার ঠিক উল্টো পাশ বক্কর ভাইয়ের গুলো হবে। অর্থাৎ, আপুর বক্সের কয়েন হেড-হেড-টেইল-হেড-টেইল হয়ে পড়লে বক্কর ভাইয়ের গুলো পড়বে টেইল-টেইল-হেড-টেইল-হেড হয়ে। কেউ কিছু বুঝেছেন? লেখক এখানে খুবই সুন্দর উপমা দিয়ে মৌলিক কণার এনট্যাঙ্গেলমেন্ট বুঝিয়েছেন। এবং সেটার গাণিতিক প্রমাণও পাশাপাশি বুঝিয়ে গেছেন। এজন্য এটাকে উপভোগ্য একাডেমিক বই বলেছি। আমরা অনেক কিছু জানতে পারি, তবে সেটা যদি অন্যকে সহজে বোঝাতে না পারি তার অর্থ আমরা নিজেরা সেটা ভাল বুঝি না। পুরো বইটা শেষ করার পর আপনি এটমের গঠন সম্পর্কে জানবেন। এর মাঝে ইলেকট্রন কীভাবে বিন্যাস হয়ে তা জানবেন। নিউক্লিয়াসের মাঝে পজিটিভ চার্জের প্রোটনকে একসাথে কে ধরে রাখে জানবেন। রেডিওএক্টিভ ডিকে বা ক্ষয় কী করে হয় তা জানবেন। মঞ্চে শ্রোডিঙ্গার একদম শেষের দিকে আসেন৷ কারণ তার থলের বেড়াল বেশ ভয়ানক! তার বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্টের কথা আমরা নিশ্চয়ই জানি অনেকেই। দেখার আগ পর্যন্ত বাক্সে বন্দি বিড়াল একই সাথে জীবিত ও মৃত। আমরা ভাবি, হোয়াট দা ফাংগাস! ভূয়া জিনিস! কিন্তু এটার গভীরে যেয়ে লেখক এখানে আপনাকে চিন্তা করাবেন। তিনি আপনাকে বিড়ালকে বিড়াল হিসেবে নয়, বাক্সকে বাক্স হিসেবে নয়, ও নিজেকে নিজ হিসেবে নয় বরং সবকিছুকে কণা-তরঙ্গ রূপে দেখতে ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলবেন। তখন আপনার কাছে ব্যাপারটা আর হাস্যকর নয় বরং ভয়ানক লাগতে পারে! কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের পরিচিত জগৎকে একদম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র লেভেল থেকে ব্যাখা করে। বইটা তাদের জন্য যারা প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। যারা ব্যাখা খুজতে ভালোবাসে। এবং যারা রহস্যে আবৃত প্রকৃতি দেখে বিমুগ্ধ হয়। যারা নাইন কীংবা টেন এ আছে তাদের জন্য কোয়ান্টাম জগৎ এ পদার্পণ করার জন্য, যারা ইন্টার কীংবা এ-লেভেলে, তাদের পাঠ্যবই এর বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এর জন্য, এবং যারা আমার মত ইউনিভার্সিটিতে তাদের মেদযুক্ত টেক্সট বইয়ের পিপীলিকা ফন্টের বইয়ের ভাষা ও সমীকরণ সহজে বুঝতে পারার জন্য বেশ ভালো একটি বই কীংবা মঞ্চ হল চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এমন বই বাংলা ভাষা দূরে থাক ইংরেজিতেও চোখে পড়েনি। তো আর দেরী না করে হাতে নিন বইটি, প্রবেশ করুন অনিশ্চয়তাপূর্ণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগৎএ!
"মিসির আলী পরম মমতায় তাঁর হাত রাখলেন মুনিরের মাথায়। তাঁর চোখ ভিজে উঠছে। তিনি তাকিয়ে আছেন জানালার দিকে। জানালার ওওপাশে আলো আঁধারের কী এক অপুর্ব রহস্যময় জগৎ!" ___হুমায়ূন আহমেদ
বইটা হাতে নিলাম। কিছুক্ষণ লাল মলাটের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি যেটাকে বই বলে দেখছি__এই যে লাল রং! মহাবিশ্বের কাছে এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। এই শক্ত মলাটটা! প্রকৃতির কাছে তারও আল্টিমেট কোন অস্তিত্ব নেই, নেহাতই শক্ত নরম আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় গঠিত একপ্রকার ইল্যুশন। বাস্তবতা রিলেটিব। সেই লাল মলাটের আরো গভীরে গেলে পাওয়া যাবে এটমিক ক্রিস্টাল, পরমাণুদের ইটারন্যাল ভাইব্রেশন। আরো গভীরে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নাকি ইলেক্ট্রন ঘুরছে। কেউ জানে না এই বস্তু দেখতে কেমন। এটাও জানে না এটা আদৌ বস্তু নাকি অবস্তু। সেই অজানা অদেখা বস্তুর মাইক্রোস্কোপিক জগতে একে একে ডিটেকটিব বিজ্ঞানীরা ঢুকে পরছে ছোট ছোট কিছু ক্লু নিয়ে। তারপর সেই প্লাম পুডিং মডেল থেকে ইতিহাস গড়ালো শ্রোডিংগারের পরমাণু মডেল পর্যন্ত। পরমাণু মডেলের উপর হরেক রকমের সার্জারী করে জানা গেল অবশেষে, ইলেক্ট্রন নাকি মেঘের মত ছড়িয়ে থাকে। তার স্পিন নাকি সাধারণ ঘুর্ণনের মতো না। ওয়েভ ফাংশনের মাঝেই নাকি লুকিয়ে আছে কণার ভবিষ্যৎ। অবজারবেশনের আগ অব্ধি কণা নিজেও নাকি জানে না সে কোথায় আছে, এদিকে অবজার্বেশনের পর সে কোথায় আছে জানলে তার ভরবেগ কোথায় যাচ্ছে তা জানে না! এ কেমন বেখেয়ালীপণা! ওদিকে আবার তার জমজ ভাইকে টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে সুখ দুঃখের সব খবর জানাচ্ছে, তারও খবর নিচ্ছে, আলোর বেগকেও পাত্তা না দিয়ে। বেশ দায়িত্ববানও বটে! কিন্তু একজনের এত ন্যাচার কি করে হয়! এসব দেখে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেঁধে গেছে বাক-বিতর্ক। আইনস্টাইন বলে- God doesn't play dice বোর তীরের মত পাল্টা জবাব ছুড়ে দিয়ে বলে- Einstein, stop telling God what to do. এসব দেখে ওদিকে কণা মহাশয় বেশ মজা পাচ্ছে। কিন্তু ধরা দিচ্ছেনা, এক চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তা। এক Eternal randomness....যা তাকে মহাবিশ্বের গুপ্ত রহস্যগুলো প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। ডিটেকটিব বিজ্ঞানীরা কণাকে ধরতে গেলে সে তরঙ্গের রুপ নিয়ে টানেলিং করে পালিয়ে যাচ্ছে। যেন চোরের উপর বাটপারী। আরো অজস্র কাহিনী। লেখক সাধ্যমত বিষয়গুলোকে পয়েন্ট করে করে গুছিয়ে বইয়ে দারুণভাবে বিশ্লেষণ করেছে। বইয়ের প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা অব্ধি পাঠকের প্রতি তার ডেডিকেশন চোখে পরার মত, বুঝানোর দায়িত্বটা একদম ঘাড়ে নিয়ে প্রতিটা টুইস্ট নিজের ওয়েতে গল্পে গল্পে এক্সপ্লেইন করেছে যেন ভুল করেও কেউ এটা বলার সাহস না পায় Physics is a boring subject. আর কিছু কিছু এক্সপ্লেইনেশন এত ভালো লেগেছে আমি পেন্সিল দিয়ে পাশে লিখে রেখেছি Terribly beautiful, কোথাও <3 রিয়্যাক্ট, আর লেখকের হিউমার লেভেলও প্রবল। তাই হাহা রিয়েক্ট দেওয়া থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে পারিনি। যে লাইনগুলো বেশি মনযোগ দিয়ে দেখার মত ওগুলোর নিচে আন্ডারলাইন করেছি। অবশ্য এর আরো একটি কারণ। আমার স্মৃতিজনিত সমস্যা রয়েছে। কিছুদিন পর আমি যা পড়েছি তার ৭৫% ভুলে যাবো। এভাবে আন্ডারলাইন করে পরলে কিছুটা আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায় এই পড়াটা আমার পরিচিত। রিয়েক্টগুলো দেখে যেন মনে করতে পারি, এ জিনিসটা পড়ে আমি আগেও ফিল করতে পেরেছি। অবশ্য বইটায় এমন। ওটা আপনাকে ফিজিক্স কতটা বৈচিত্রময় আর টুইস্টে ভরপুর একটা সাবজেক্ট তা এক্সট্রিমলি ফিল করাবে। পড়ে কখনো মনে হবে না আপনি রোবটের মত পড়ে গেলেন। সাবএটমিক জগত থেকে যাত্রা শুরু করে, সৌরজগত হয়ে, নিউট্রন স্টার ছুয়ে, বিলিয়ন বছর অতীতের সিংগুলারিটি পয়েন্ট হয়ে_ বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে ব্লাস্ট হয়ে_ রিলেটিভিটির জগতে ছিটকে পরে, গ্যালাক্সির কোন এক সুর্যের চারপাশে ঘুর্ণনরত পৃথিবীর পারটিকেল এক্সিলেটরের আবার সেই সাবএটমিক ওয়ার্ল্ডে ফিরে আসতে পারবেন বইটির হাত ধরে।
আর একটা কথা। যারা ফিজিক্স নিয়ে অনার্স করছেন বা করবেন তাদের জন্য বইটা মাস্ট রিডিং। সেই অনার্স লেভেলের বইগুলো পড়ে কখনো কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে ফিল করতে পারবেন না, আমি গ্যারান্টি দিতে পারি। আইগেন মান কি, আইগেন স্টেটে কি হয়, ওয়েভ ফাংশনেরর তাৎপর্য কি,, নরমালাইজেশন কেন করা হয়, বিভব কুপ, টানেলিং সবগুলোর কি সব গুরু গম্ভীর ব্যাখ্যা। কান্না পেয়ে যাবে পড়তে। এই বইটিতে মৌলিক বিষয়গুলো পয়েন্ট বাই পয়েন্ট খুব ভালো ভাবে এক্সপ্লেইন করা হয়েছে। আমার শুধু ছোট একটা কমপ্লেইন, কোথাও কোথাও গল্পটা একটু বেশি হয়ে গেছে মনে হয়েছে। But still I'm really so grateful to the honourable writer for writing such a crucial book with an easy way. It was demand of time. And I must recommend, if you wanna understand the Quantum world, so start your journey with this book. It will make strong your foundation.
বই- চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স লেখক- নাঈম হোসেন ফারুকী প্রকাশন- প্রান্ত প্রকাশন পৃষ্ঠা- ৩৩৬ ব্যক্তিগত রেটিং- ৮.১/১০ (দুঃখিত বইটা পড়ে আমার ১০/১০ দিতে ইচ্ছা করছিল। বাট কিছু কারণে দিতে পারছি না। কেন পারছি না তা না হয় একেবারে শেষেই বলি)
সত্যি কথা বলতে কি আমি প্রথমে কোয়ান্টাম বলতে শুধু ধ্যানকেই বুঝতাম। এটা অবশ্য দুইটা কারণ ছিল- এক. আমার স্কুলের এক স্যার কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য। দুই. আমার স্কুলের কাছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর একটা শাখা আছে। (বিশ্বাস না হলে map এ দেখতে পারেন। লিংক- https://maps.app.goo.gl/hT1xhhTP7rnHR... ) স্কুলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিষয়, ধ্যান-ধারণা এসব নিয়ে লিফলেট, স্টিকার বিতরণ করত, দেওয়ালে লাগাত আবার সেই স্যারের বকবকানির (কোয়ান্টাম এই, কোয়ান্টাম সেই, ধ্যান করলেই হয়, সেই হয়... আরো কত কি) ফলেই বোধহয় আমার মাঝে এই ভুল ধারণা জন্মে। তবে সব ভুল ধারণা বিশ্বাসে যেমন একটা অন্ত থাকে তেমনি আমারও এই ভুল ধারণা অন্ত ঘটায় আমার এক বন্ধু। মনে পড়ে গত বছর যখন নবম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমার সেই বন্ধু একদিন স্কুলের রেজা এলিয়েনের লেখা কণা তরঙ্গ বইটা আনে। টাইটেল আর লেখকের নামটা ইন্টারেস্টিং ছিল দেখে সাতপাঁচ না ভেবে তাকে গুতাগুতির করতে শুরু করি বইটা পড়তে দেওয়ার জন্য। পরে অবশ্য তিন-চারদিন পর আমার গুতাগুতির ঠেলায় হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক সে আমাকে বইটা পড়তে দেয়। বইটা পড়া শুরু করি। সত্যি কথা বলতে কি বইটা পড়ে জানি না আমি কি বুঝতে পারেছি বা কতটুকু বুঝতে পারাছি তবে আমি এইটা বলতে পারি যে এই বইটা পড়েই আমি কোয়ান্টাম নিয়ে মোটামুটি একটা সঠিক ধারণা পাই। ''ধরণী দ্বিধা হও। যেখানে সারা বিশ্ব কোয়ান্টাম বলতে বুঝে কণার কথা। আর আমরা বুঝি মেডিকেশন ধ্যানের কথা।" এরপর অবশ্য এই সম্পর্কে তেমন কোনো বই পড়িনি। এই বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বের হয় 'চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স' নামক বইটা। ব্যক্তিগত কিছু কারণে বইটা অবশ্য তখন কিনতে পারিনি। এরপর এপ্রিল মাসে বইটা অর্ডার দেই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে হাতে পৌঁছায় দীর্ঘ দুই মাস পর জুন মাসে। শুনেছি অপেক্ষার ফল ভালো হয় আসলেই কি তাই?... ও মাই গড লিখতে বসছি বইয়ের রিভিউ আর লেখা শুরু লেখছি নিজের কেচ্ছা কাহিনি। যাইহোক এবার আসল কথায় আসি। চল ঘুরে আসি এক অদ্ভুত জগতের অতি অদ্ভুত বইয়ের দুনিয়ায়।
"চারপাশে অন্ধকার পর্দা, মাঝখানে অসহায় মানুষ ছটফট করছে, তার কাছে একটা মাত্র হাতিয়ার: ছিয়াছি বিলিয়ন নিউরনের তৈরি অদ্ভুত রহস্যময় এক ভয়াবহ পাওয়ারফুল মস্তিষ্ক। ইচ্ছা করে না তাকে ব্যবহার করতে?" লাইনগুলো আমার অত্যন্ত প্রিয়। কেন প্রিয় তা বলব না পুরোটা পড়ে আপনিই বুঝে নিন। জগতটা আসলেই ভারী অদ্ভুত। কিন্তু তার থেকেও অদ্ভুত সেই জগত যে জগত মানুষের চিন্তা ভাবনার সীমাকে হারিয়ে দেয়। এই অদ্ভুত রহস্যময় ভাবনা চিন্তাগুলোকে বুঝতে সাহায্য করেছে তার দেড় কেজি ভরের ছিয়াছি বিলিয়ন নিউরনের তৈরি মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্ক দিয়ে মানুষ কত না কি করেছে! কিন্তু ভাবতেই অবাক লাগে যে এই চিন্তা ভাবনা শুধুই কিছু ইলেকট্রনিকেল সিগনালের সমষ্টি। কি বিশ্বাস ���চ্ছে না? এই যে আমরা দেখি তা তো কোনো কিছু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখের রড কোনে গিয়ে আয়োডিনজনিত বিক্রিয়া করে আয়ন বের হয়ে ইলেকট্রনিকেল সিগনাল হিসেবে সেই মস্তিষ্কে যায় ফলে আমরা দেখি। শুনার ক্ষেত্রে, অনুভব করার ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে। এই সিগনাল তো কৃত্রিমভাবেও তৈরি করা যায়। পার্থক্য কিছুই বুঝব না। সবই যদি সিগানালের খেলা হয় তাহলে আমি বা কে তুমিই বা কে? কি মাথা ঘুরাচ্ছে শুনে? আরে এতো মাথা ঘুরানোর মতো কিছুই না আসল মাথা ঘুরানো তো এখনও বাকি। ওই যে কিছুক্ষণ আগে একটা অদ্ভুত জগতের কথা বললাম না, তার নাম কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগত। সেই জগত আমরা প্রতিনিয়ত দেখি, অনুভব করি। কিন্তু জগত এতই ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখতে কষ্ট হয়ে যায়। এমনকি অনেক কিছু দেখাও যায় না সে যন্ত্র দিয়ে। জান সেই জগতের কোনোকিছুই আমাদের জগতের মতো নয়। সেই জগতের নিয়মকানুন এতই অদ্ভুত যে কথিত আছে যে আমি বা আমরা নাকি আমাদের একেকটা কাজের জন্য একটা পুরো নিজস্ব জগত তৈরি করে ফেলি(!)। অদ্ভুত না...! তবে তাই বলে সে জগতের সব যে এক হব তা নয়। একটা জগত আর একটা জগত থেকে একেবারেই আলাদা। এই জগতে যেমন আমি এই লেখাটা লিখছি হতে পারে আমি অন্য জগতে এই লেখা লিখছি না আবার হতে পারে আর একটা জগতে পুরো অন্যকিছুই লিখছি এভাবেই চলতে থাকবে। আবার সে জগত নিয়ম অনুযায়ী এই যে আমরা আলো দিয়ে দেখি এগুলো নাকি তরঙ্গ আর কণা ছাড়া কিছুই না। তরঙ্গের ব্যাপার বুঝা সহজ বাট কণা! কণা কেমনে কি? তাহলে কি আমাদের চোখে কি প্রতিনিয়ত কণা আঘাত করে? হ্যাঁ কথাটা অনেকটা এরকমই। তুমি জানতেও পারবে না তা। আবার রংধনুর যে সাতটা রং আমরা দেখি সেগুলো আসলে তরঙ্গ আর মানব মস্তিষ্কের খেলা ছাড়া কিছুই না। কেননা সবই যে আসলে এক। সব রঙেরই উৎপত্তি তরঙ্গ থেকে। কিন্তু সেই সব রঙের একেকটা ভিন্ন ভিন্ন দৈর্ঘ্যের তরঙ্গের সমষ্টি। এই যেমন ধরলাম একটা রঙের দৈর্ঘ্য 400nm (বেগুনি)। যদি এর সাথে 350nm এর তরঙ্গ যুক্ত হয় তবে আর একটা রঙ তৈরি হবে(লাল)। আবার যদি ঐ 400nm দৈর্ঘ্যের তরঙ্গের সাথে অন্য দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ না যোগ করে সরাসরি 750nm দৈর্ঘ্যে নিয়ে যাই তবে তা ওই একই রঙের (লালে) পরিনত হবে। ওই যে আলোর কণার কথা বললাম না, জান এই কণার ভর শূন্য। অদ্ভুত লাগছে নাকি অবাক লাগছে? তা অবশ্য অবাক লাগারই কথা কেননা ভরহীন কিছু থাকতে পারে নাকি!? হ্যাঁ থাকতে পারেনা। কিন্তু এই যে অদ্ভুত জগত কোয়ান্টামের জগতে তাও সম্ভব। এমনকি একটা কণা আলোর থেকে দ্রুত গতিতে একাধিক আলোকবর্ষ দূরের অন্য একটা কণার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যা আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির সূত্রকে লঙ্ঘন করে। কিন্তু ওই যে বললাম কোয়ান্টামের জগতে কথা সেখানে সেটাও সম্ভব। কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই অদ্ভুতুরে জগতের কথা শুনে শুনে??? যদি হয় তাহলে তা অত্যন্ত স্বাভাবিক কথা হবে। কেননা এই অদ্ভুতুরে জগতের কাণ্ড কারখানা জেনারেল রিলেটিভিটির প্রর্বতক ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একজন অন্যতম প্রর্বতক আইনস্টাইনেরও মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, "ঈশ্বর পাশা খেলা খেলে না।" হয়তো এসব দেখার পর বলবেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই অদ্ভুতুরে জগত সম্পর্কে জানা আমার কর্মের নয়। কিন্তু এই জগত যে কতটা মজার তা অত্যন্ত সুন্দর করে মজা করে লেখক নাঈম হোসেন ফারুকী ওরফে নাইম্বাই অত্যন্ত সহজ করে বুঝিয়েছেন। বুঝানোর জন্য তিনি কখনো টেনে এনেছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একেকজন জনককে। যখনই কোনো কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তখনই তিনি তখনই তাদের উদাহরণ টেনে আনেন। কখনো টেনে এনেছেন বোরকে, কখনো রাদারফোর্ডকে, কখনো সামারভিলকে, কখনো বা আইনস্টাইনসহ অন্যান্য জনকদের নিয়ে উদাহরণ। কখনো বা তুলে এনেছেন তাদের থেকে নেওয়া ইন্টারভিউ, কখনো বা তাদের স্বপ্নের কথা, তাদের লেখা ব্যক্তিগত ডায়েরির একেকটা পাতার কথা(অবশ্য কাল্পনিক)। আবার কখনো বা টেনে এনেছেন আক্কাস আলী,বক্কর আলী ও তাদের গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে উদাহরণ। লেখক এতটাই ...(কি বলতাম বুঝে পারছি না) যে তিনি শুধু বুঝিয়েই শান্ত হননি তিনি কোথাও কোথাও পাঠকের জন্য ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রশ্ন। তিনি এতটাই অদ্ভুত যে, এই প্রশ্নগুলোকে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন। তার মতে, "বাঁচতে হলে ভাবতে হবে।" কেননা কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝতে হলে অবশ্যই ভাবতে হবে চিন্তা করতে হবে। আবার তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম শাখা তরঙ্গ নিয়ে বুঝতে গিয়ে টেনে এনেছেন বিভিন্ন ধরনের গ্রাফকে। তবে তিনি এখানেও শুধু গ্রাফ দিয়েই ক্ষ্যন্ত হয়নি দিয়েছেন আবার সে সব নিয়ে বাড়ির কাজ ও। এই সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ বাংলায় লেখা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বইগুলোতে তেমন দেখা যায় না। আবার আর এই বইগুলোর বেশিরভাগই বিদেশি ভাষার লেখা বইগুলোর অনুবাদ। যার কারণে অনেকসময় কিছু কিছু আভিধানিক শব্দ বা ভাষা ব্যবহার করে যা সাধারণত বর্তমান প্রজন্মের কাছে কিছুটা হলেও দূরবোর্ধ্য। লেখক কিন্তু প্রচলিত সেই দিকে না গিয়ে তরুণ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে তার বইয়ে যতটা সম্ভব পেরেছেন সেই অভাব পূরণ করেছেন। শুরু করেছেন একেবারে মাইক্রোস্কোপিক লেভেলের পরমাণুর কথা দিয়ে আর শেষ করেছে এক বৃহৎ স্কেলের মহাবিশ্বকে নিয়ে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত জগত সম্পর্কে জানতে বই একবার পড়েই ফেলুন না একবার। আমি চোখ বন্ধ বলতে পারি যে আপনি বইটা পড়ে নিরাশ হবেন না।
আমি তো অপেক্ষা করছি জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে তার নেক্সট বই জন্য।
একেবারে প্রথমে মনে হয় বলেছিলাম যে কেন আমি ১০/১০ দিতে ইচ্ছা করার পরও ৮.১ দিয়েছিলাম। এখন তা খোলাসা করছি- ১) আমার মনে হয় বইতে লেখক কোথাও কোথাও গল্পাকারে লেখা উচিত হয় নি। গল্প ফাঁদিয়ে আরো জটিল করে ফেলেছেন।(-০.৫) ২) বইটায় কোথাও কোথাও মনে হয়েছে তিনি সহজ জিনিসকে কঠিন করে ফেলেছেন (ডিপে গেছেন)। হতে পারে আমি তুলনামুলক ভাবে নিচু শ্রেণীতে পড়ার কারণে হয়ত সেই সহজ জিনিসগুলো (যা আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছে) আমার বোধগম্য হয়নি। তাই (-০.৪)। প্লিজ নাইম্বাই মাইন্ড করিয়েন না। ৩) বইয়ে অনেক ভুল। বানান সংশোধনে আর একটু জোর দেওয়া উচিত ছিল। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। তাই (-১.০০)। যাইহোক ওভারঅল জোস একটা বই।
স্বপ্নীল জয়ধর ১৮/০৬/২০২০ ইং নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স! বইটার নাম শুনে মনে হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোধহয় মামুলি একটা টপিক, যেটা ১/২ কাপ চা/কফি খেতে খেতেই পড়া যায়! কিন্তু যারা বিজ্ঞানের ছাত্র,ফিজিক্সে এক্টু আগ্রহী তারা আগে থেকেই কোনো না কোনোভাবে এই টপিকটার নাম শুনে,এবং জেনে যায় এর থেকে রহস্যময়,জটিল কিছু আর হয় না। আমরা এই "জটিল/রহস্যময় " শব্দ শুনলেই দুর্বল হয়ে পড়ি,ভাবি এ আমার জন্য না! কিন্তু বিজ্ঞানের যে সত্যিকারের সৌন্দর্যই হলো রহস্য।বই থেকেই আইন্সটাইনের বলা সেই উক্তিটিই বলি,
"রহস্যই সর্বাতীত সৌন্দর্যর প্রতীক। সমস্ত বিজ্ঞান আর শিল্পকলার উৎস হচ্ছে রহস্য। এই অনুভূতিটি যার মধ্যে অনুপস্থিত,বুকভরা জীবন্ত রহস্যের সামনে দাঁড়িয়েও যার মন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায় না,ধরতে হবে তার মৃত্যু হয়েছে, তার মন আর চোখ দুইয়েরই।"
সত্যি তাই। আমি এও বলছি না যে বিষয়টি সহজ।বড়ভাইয়ারা,যারা এ বিষয়ে পড়েন তারা জানেন ই এটি জটিল বিষয়! কিন্ত আমি বলব আপনি সরল/জটিল নিয়ে আগে ভাবতে যান কেন? টপিক যেরকম ই হোক,আপনার কি সেটা জানার আগ্রহ আছে? যদি থাকে,তাহলে অই সহজ জটিল ম্যাটার না! জানাতে পারাটাই তখন আনন্দের! আর এই বইটা আপনাকে সবচেয়ে সহজে কিন্তু গভীর থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে আপনার সামনে হাজির করাবে! যদি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে কখনোই এই বই না পড়ে থাকা যায় না!ভালো লাগতে বাধ্য! লোভ সামলানো কঠিন!
এরপর আবার অনেকেই বলবে এটা পপ সায়েন্টিফিক বই! সত্যি বলতে,বইটা পড়ার সময় কখনোই পপ টাইপ মনে হই নি!কারণ পপ বইয়ে এ যেটা হয়,মজার মজার কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য থাকে,অল্প ব্যাখ্যা, জাস্ট আগ্রহ তৈরি করার জন্য ,এই যা। কিন্তু চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ সব টপিকে বেসিক সহ ডিটেইলস ব্যাখ্যা আছে। আমাকে পড়া সময় ভাবতে হইছে,চিন্তা করচে হইছে,ম্যাথ করতে হইছে, বুঝতে পারার আনন্দটা পাইছি🖤 উদাহরণ হিসেবে বলি.. জটিল সংখ্যার বাস্তব প্রয়োগটা বুঝতে পারছি, এটার কাজ আসলে কি। তরঙ্গের ইকুয়েশন,ইন্টারফিয়ারেন্স এসবের বেসিক একদম ক্লিয়ার হইছে। তারপর আমাদের রসায়ন বইতে হাইজেনবার্গ এর অনিশ্চয়তার নীতি, পাউলির বর্জন নীতি ,ইলেকট্রন এর স্পিন এসব পড়লেও,ভালো মতো কিছুই বুঝি নাই। কিন্তু চা কফি তে এসব বুঝতে পারছি, গাণিতিক সমীকরণ সহ। তাই কোনোভাবেই এটা পপ সায়েন্টিফিক বই বলা যায় না! এমনকি যারা এই বইকে পপ বলে, তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য বইয়ে যথেষ্ট ভয়াবহ সমীকরণ দেয়া আছে! :3 (বি.দ্রঃসব সমীকরণ এর ই ব্যাখ্যা,প্রতিপাদন সব দেয়া আছে)
আর বইএর শেষে কিছু খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে,চোখ খুলে দেয়ার মতো। উহু স্পয়লার দিব না কোনো, নিজে পড়ে নিয়েন!
এতো কিছুর পিছনে যে মানুষটা, ভাই, তিনি আসলেই প্রশংসার দাবিদার| বাচতে হবে,ভাবতে হবে,অনেক কিছু জানতে হবে|🖤
১৯৯৯ - ২০০৩ এর মাঝের কোন একটা সময়, একদম ঠিক কোন সময় তা মনে নাই । আমি তখন নবম থেকে দ্বাদশের মধ্যে কোন একটা ক্লাসে । নব্বইয়ের দশকে আমাদের সেই স্কুল জীবন এখনকার থেকে অনেক ভিন্ন ছিল । মোবাইল, ইন্টারনেট এইসব তো দূরের কথা, এমনকি একটা কম্পিউটারও আমার ছিল না । টিভির চ্যানেল সংখ্যা হাতে গোনা যেত । আর তাই তখন আমাদের ছিল অফুরন্ত সময়, আর সেই অফুরন্ত সময় কাটানোর উপায় ছিল গল্পের বই । মধ্যবিত্ত আর দশটা পরিবারের ছেলের মতন টিফিনের টাকা, রিকশাভাড়ার টাকা, বৃত্তির টাকা এসব নিয়ে চলে যেতাম বইয়ের দোকানে, ঘুরে ঘুরে কিনে ফেলতাম যতখানি সাধ্যে কুলায় ।
এইরকম কোন একদিন বইয়ের দোকানে বই দেখছি । হঠাৎ করে একটা বইয়ে চোখ আটকে গেল । নাম মহাজাগতিক আলোয় ফিরে দেখা, লেখক আসিফ । আগে পরে আর কিছুই নাই, শুধুই আসিফ । আর উনার পরিচয় হচ্ছে বিজ্ঞানবক্তা । উল্টে পাল্টে যা বুঝলাম যে এটা বিজ্ঞানের বই । কি মনে করে কিনেও ফেললাম । তখনও জানি না যে এই সামান্য একটা বই দীর্ঘমেয়াদে আমার জীবনটাকে উলোট-পালট করে দিতে যাচ্ছে ।
কি ছিল আসিফের সেই বইয়ে ? গল্প, বিজ্ঞানের গল্প । সেখানে ছিল হাইপেশিয়ার গল্প, ছিল গ্যালিলিওর কথা, নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির করুণ ইতিহাসের কথা, ছিল নীল তিমির গান নিয়ে ভয়েজারের মহাকাশপানে ছুটে চলার কথা । আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, কিন্তু তখন পর্যন্ত আমার কাছে বিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটা জিনিস যেটা ভালো ছাত্ররা পড়ে আর যাতে পড়লে বেশি বেতনের চাকরি পাওয়া যায় । কিন্তু বিজ্ঞানবক্তা আসিফের লেখা সেই মহাজাগতিক আলোয় ফিরে দেখা (কি অসাধারণ একটা নাম !) আমার সামনে খুলে দিল নতুন একটা জগৎ, প্রথমবারের মতন আমি উপলব্ধি করলাম যে বিজ্ঞান শুধুই টাকা কামানোর বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞানের এই জগৎ এক ভালোবাসার নাম ।
স্কুল-কলেজের পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করে এখন ১২ বছর ধরে প্রযুক্তি সংক্রান্ত চাকরিতে আছি । এবং সেই চাকরির জন্যে এখনও প্রচুর পড়াশোনা করতে হয় প্রযুক্তি নিয়ে । একাডেমিক বা চাকরি জীবনে খুব যে আহামরি কিছু একটা করে ফেলছি এমন দাবি করার কোন উপায় নেই, কিন্তু একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি । সেটা হচ্ছে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা করাটা আমি উপভোগ করি । কারণ আমার কাছে এরা শুধুই পরীক্ষা পাশ আর টাকা কামানোর বিষয় না, বরং ভালোবাসার বিষয় । আর এই ভালোবাসার জন্ম হয় আসিফের সেই বইয়ের মাধ্যমে । এমনিতে বইয়ের রেটিং করাটা আমার পছন্দ না, কারণ আমার মনে হয় যে পড়া প্রত্যেকটা বইই আমাকে একটু একটু করে পরিবর্তন করেছে । তবে এই জীবনে খুব অল্প যে কয়টা বই পড়ছি তার মধ্যে যদি পাঁচটা বইকে বেছে নিতে হয় যেগুলো আমার জীবনকে সবচে বেশি প্রভাবিত করেছে তাহলে সেই পাঁচটার মধ্যে একটা হবে মহাজাগতিক আলোয় ফিরে দেখা ।
বিজ্ঞান ও প্রয়ুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু পড়াশোনা করা হলেও দুঃখের সাথে বলতে হবে যে বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে খুব একটা বেশি বই পড়া হয়নি । অল্প কিছু যাও পড়া হইছে তার মধ্যে অনেকগুলোই খুবই ভালো বই, কিন্তু আসিফের সেই বই পড়ার যে অনুভূতি তা বাংলায় বিজ্ঞানের অন্য কোন বই পড়ে আর হয়নি । দীর্ঘ ২০ বছরের ব্যবধানে আবার একটা বাংলা বিজ্ঞানের বই পড়ে ঠিক সেইরকমের ঘোরলাগা অনুভূতি হচ্ছিল । বইয়ের নাম - চা, কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স । লেখক নাঈম হোসেন ফারুকী ।
চা, কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞানের বই । নাহ্ ভুল বললাম, এটা আসলে গল্পের বই । নাহ্ তাও হলো না, এটা আসলে বিজ্ঞানের গল্পের বই । কিন্তু কাঠখোট্টা বিজ্ঞান, তাও আবার কোয়ান্টাম মেকানিক্স - এটা আবার গল্প হয় নাকি ? হয় হয়, বিজ্ঞান যখন ভালোবাসার নাম তখন এইসব কোয়ান্টাম মেকানিক্সও গল্পের মতন হয়ে যায় । এক শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলারের মতন আমাদের সাময়ে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের রহস্যময় জগৎ ।
এই বইয়ের একদম শুরুতেই আমরা দেখতে পাই কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের হিসাব নিয়ে ভ্রু কুঁচকানো ম্যাক্স প্ল্যাককে । একসময় হুক্কা হাতে আসেন লর্ড রাদারফোর্ড যিনি ঘোষনা দেন এইসব টমসনের পুডিং টুডিং কিছু না, বরং পরমানু হচ্ছে সৌরজগতের মতন । কিন্তু হায় হায়, এই সৌরজগৎ তো টিকার কথা না । ধুম ধুম করে সব ইলেকট্রনের নিউক্লিয়াসে পড়ে যাওয়ার কথা । সেই রহস্য থেকে উদ্ধার করতে আসেন নীলস বোর । কিন্তু না, বোরও তো সব রহস্য উন্মোচন করতে পারেন না । অনেক প্রশ্ন থেকেই যায় উত্তরের অপেক্ষায় । এরপরে একসময় সবকিছু উলোট-পালট করে দিতে মঞ্চে আসেন ডি ব্রগলি, যিনি বলেন সবকিছুই নাকি একই সাথে কণা আর তরঙ্গ এইরকম আপাত উদ্ভট কথা । এইযে আমি এখন টাইপ করতেছি, এই আমিও নাকি আসলে একটা তরঙ্গ - যদিও এত এত ক্ষুদ্র যে তা ধরার উপায় নেই ।
ডি ব্রগলির এই কণা তরঙ্গ দ্বৈতধর্ম এসে উল্টায়ে ফেললো কয়েকশ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পদার্থবিজ্ঞানের সব প্রচলিত ধ্যান ধারণা । গল্পের এখানেই শেষ না, বরং বলা যায় এ তো মাত্র শুরু । একটু একটু আঁধার কাটে কিংবা বলা যায় আঁধার আরও ঘনীভূত হয় । এইযে ইলেকট্রন, এইটা নাকি একসাথে সবরকম স্টেটের সুপারপজিশনে থাকে কিন্তু আমরা দেখতে গেলেই নাকি সেটা সাথে সাথে একটা স্টেটে কলাপ্স করে । আবার হাইজেনবার্গ এসে বললেন যে একই সাথে নাকি অবস্থান আর ভরবেগ দুইটাই জানা সম্ভব না । ও হ্যাঁ, আর ওদিকে একহাতে সায়ানাইড আর অন্যহাতে বিড়াল নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন শ্রোডিঙ্গার ।
চা, কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের এইসব গল্প শুনায় । মাঝে মাঝেই চলে আসে আক্কাস আলী আর বক্কর ভাই, কখনও কখনও তারা টানাটানি করে আলুর বস্তা নিয়ে (শক্তির প্যাকেট) আবার কখনও বক্কর ভাই ধুম করে কিভ���বে যে জেল থেকে পালিয়ে আসে কেউ জানে না (কোয়ান্টাম টানেলিং) । এইসব গল্পের মধ্যে দিয়েই আমরা দেখি কোয়ান্টামের জটিল সব বিষয় । এইভাবে জটিল সব রহস্যের সমাধান করে ফার্মিওন বোজোনের ভুতূরে জগৎ পার হয়ে একসময় আমরা চলে যাই প্যারালাল উইনিভার্সে ।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স খুবই অদ্ভুতূরে একটা বিষয় । সুপারপজিশন, ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স, কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা এইরকম জটিল বিষয়গুলোর সম্পর্কে একটা ধারণা পেলাম এই বই পড়ে । সবকিছু যে বুঝে ফেলছি এমন দাবি করবো না । কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতন জটিল একটা বিষয় একটা বই পড়েই সবকিছু বুঝে ফেলবো এমন চিন্তা করাটাই তো হাস্যকর । তবে বলবো যে এই বইটা অবশ্যই হতে পারে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম পাঠ ।
পড়তে পড়তে একটা মজার কথা মনে আসলো । কয়েক বছর আগে কম্পিউটারে র্যান্ডম নাম্বার জেনারেশন অ্যালগরিদম নিয়ে হালকা পড়াশুনা করতে হইছিল । কম্পিউটারের এইসব র্যান্ডম নাম্বার কিন্তু আসলে সিউডোর্যান্ডম, মানে তারা সত্যি সত্যি র্যান্ডম না কিন্তু এমনভাবে জেনারেট করা হয় যেন দেখতে মনে হয় র্যান্ডম । তখন একটা কথা দেখছিলাম যে একমাত্র কোয়ান্টাম ইভেন্টগুলাই হচ্ছে সত্যি সত্যি র্যান্ডম । এই true randomness এর বিষয়টা তখন বুঝতে পারিনি ঠিকমতন । এই বইয়ের একটা বড় অংশেরই আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কোয়ান্টাম ইভেন্টগুলোর এই true randomness ।
যাই হোক, সবশেষে বলবো যে লেখালেখি অনেক কঠিন একটা কাজ । এইযে এই সামান্য একটা রিভিউ লেখতেই আমার ঘাম ঝরে যাচ্ছে, আর সেইখানে ঢাকা শহরের জাম ঠেলে, দশটা ছয়টা অফিস করে আর বসের ঝাড়ি খেয়ে যে বই লেখতে পারে, তাও আবার কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতন জটিল একটা বিষয়ে তাকে শ্রদ্ধা না জানানোর কোন উপায় নেই ।
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি । আমার মতে এই বইয়ের মূল গুরুত্ব কিন্তু এইটা না যে আমরা এখান থেকে গল্পের মতন করে কোয়ান্টাম মে���ানিক্স শিখতে পারি । কেউ কেউ বোধহয় চোখমুখ কুঁচকাচ্ছেন, এতো কিছুর পরে এসব কি বলি । নাহ্ কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ না । আমার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রতি লেখকের ভালোবাসার প্রকাশ । এই বই আমাদের শুধুই বিজ্ঞানের সূত্র শেখায় না, বরং আমাদেরকে বিজ্ঞান ভালবাসতে শেখায় । শেখায় যে বিজ্ঞান শুধুই পরীক্ষা পাশ আর টাকা কামানোর বিষয় না, বরং ভালোবাসার বিষয় । অনেক অনেক বই, ব্লগ বা ইউটিউব ভিডিওই হয়তো পাওয়া যাবে যেগুলো সহজভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখায় । কিন্তু বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শেখায় এমন বই কিন্তু খুবই খুবই সীমিত । আর এইটাই আমার মতে লেখক নাঈমের মূল স্বার্থকথা ।
আজ থেকে ২০ বছরের মতন আগে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আমি যেমন আসিফের বই পড়ে বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শিখেছিলাম, আমি নিশ্চিতভাবেই জানি এখন যারা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তারাও অনেকে নাঈমের বই পড়ে বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শিখবে ।
জটিল quantum জগতের কিছুটা হলেও আমার মতো সাধারণ বিজ্ঞান এর শিক্ষারথীদের কাছে বোধগম্য হওয়ার জন্য বইটি বেশ উপকারি বলে মনে হয়েছে ।যদিও বই এর বেশ বড় অংশ বিভিন্ন documentary থেকে আগেই জানতে পেরেছিলাম কিন্তু অনেক নতুন নতুন বিষয়ও এই বই থেকে জেনেছি আর পূর্বে জানা aspect গুলো ও মাথার মধ্যে একটা ক্রমে সাজিয়ে ফেলা গেছে এই বই টা পড়ে । লেখক কে এমন ভালো সময়োপযোগী বিজ্ঞান বই সহজ করে student friendly way তে লেখার জন্য অনেক সাধুবাদ । ইনশাআল্লাহ এই ধরনের বই যদি আরো বেশি বেশি লেখা হয় তাহলে আমাদের দেশ এর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান ভীতি অনেক কমে যাবে এবং বিজ্ঞান বিষয়ে কৌতুহল জন্মাবে । এটা তো সর্বজন বিদিত যে কৌতুহল ই উদ্ভাবনের মূলমন্ত্র , আর আমরা চাই উন্নত দেশ গুলোর মত আমাদের দেশেও অনেক নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবক এর জন্ম হোক ;আর সে জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সহজ বিজ্ঞান বিষয়ক বই এর মাধ্যম ছোট থেকেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করা । চা কফি কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটি হয়তো একদম ছোটরা বুঝবেনা কিন্তু ইন্টারমিডয়েটে পড়া শিক্ষার্থী যারা একটু বুঝে বুঝে ফিজিক্স পড়েছে তারা মোটামুটি বুঝতে সক্ষম হবে আশা করা যায় , যদিও বেশ কিছু জটিল সমীকরন আছে। এই বই এ লেখকের অনেকগুলো impressive লাইন এর মধ্যে একটা লাইন না উল্লেখ করলেই নয় ; লাইন টা হলো : "বাঁচতে হলে ভাবতে হবে " । বইয়ের এই লাইন টা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ।
‘ব্যাথা অভিমান মিলে যে পাহাড় এঁকেছিলে ধূসর হয়ে তা মিশে গেছে নীলে। তুমি কি আছ? তুমি কি ছিলে?!'*
এটা কীসের বই?বইটা কেন পড়া উচিত? বইটা কাদের জন্য লেখা? কোনো বইয়ের রিভিউ পড়তে এলে পাঠক সম্ভবত উপরের তিনটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। জানেন,অনেক সহজ প্রশ্নের উত্তর সংক্ষেপে ও সরাসরি দেয়া যায় না।আমি আজ আমার অসম্ভব প্রিয় একটা বইয়ের কথা বলবো।সেই প্রলাপ থেকে আপনারা উপরের তিনটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেবেন।
বইটা ২০২০ সালের বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।সেই থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য বিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকের মনে 'সে' দাগ কেটে গেছে।জানেনই তো,কিছু কিছু দাগ কখনো মুছে যায় না!এটা শুধুমাত্র একটা বিজ্ঞানের বই-ই নয়।একজন বিজ্ঞানে অজ্ঞান অতিমানব বিজ্ঞান লেখকের চোখের জল ও ভালোবাসার স্পর্শে বেড়ে ওঠা সন্তান!
Charles Bukowski-র সেই কথাটা মনে আছে?
'An intellectual says a simple thing in a hard way. An artist says a hard thing in a simple way.'
এই কথাটা দিয়ে যদি নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়াকে বিচার করি তাহলে আমার কাছে তিনি শুধু একজন বিজ্ঞান লেখকই নন।একজন 'শিল্পী'! কোয়ান্টাম মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম জটিল একটা বিষয়।কোয়ান্টাম মেকানিক্সের পাঠ্যবইগুলোতে প্রায় 'ইন্টেলেকচুয়ালদের' সামনে অসংখ্য বিদঘুটে সমীকরণের আড়ালে নতজানু হয়ে থাকে মহাবিশ্বের রোমাঞ্চকর সব রহস্যের সমাধান।বইটাতে লেখক জটিল একটা বিষয়কে কত সহজেই না শিখিয়েছেন!পাঠকের চোখের সামনে একটা একটা করে রহস্যের সমাধান করেছেন। কিন্তু... আইন্সটাইন বলেছিলেন, 'Make everything as simple as possible.But not simpler.' তিনি কি কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে অতি সরল করে ফেললেন?না! বইটাতে গ্রাফ,সমীকরণ,সমীকরণের প্রতিপ্রাদন,ব্যাখ্যা ও ইন্টুইশন দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখানো হয়েছে।জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইগুলো পড়ে তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা,ম্যাটার ওয়েভ,জটিল তরঙ্গ ও কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গ্যালমেন্ট সম্পর্কে অনেক মিথ্যে বিশ্বাস জন্ম নিয়েছিল আমার মধ্যে।লেখক সেসব ভেঙে ফেললেন!
কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে জানাশোনাটা এই বই দিয়েই শুরু করুন। বইটা পড়তে হলে মাথা খাটাতে হয়।বিশেষত,বেলের অসমতা পড়তে গিয়ে সব চিন্তা দারুণভাবে জট পাকিয়ে যাচ্ছিল।আপনার সাথেও এমন কিছু হলে 'চা পানের বিরতি' নিয়ে আবার পড়তে বসুন!লেখকের লেখার ধরণ 'সম্মোহনী'।
আপনি কি বইটা পড়ে দেখবেন?প্ল্যাঙ্ক বসে আসে আপনার জন্যে।আপনার চোখে,মুখে,বুকে প্যাকেট প্যাকেট ফোটন এসে পড়ছে - প্ল্যাঙ্কের কাছে তাদের গল্প শুনে আসুন। রাদারফোর্ড,বোর,সমারফিল্ডের সাথে তাদের পরমাণু মডেলগুলো দেখে আসুন না একবার!আইন্সটাইনের ফটো ইলেক্ট্রিক এফেক্টের গল্পটা শুনে আসুন। পরিবার,সমাজ,দেশের হাজারটা কথাকে কয়েক আলোকবর্ষ পেছনে ফেলে ব্রগলী কলম হাতে নিয়েছেন।রিসার্চ পেপার লিখছেন।তাঁর বস্তু তরঙ্গের গল্পটা শুনবেন না?মঞ্চে শ্রোডিঙ্গার আসছে ত্রিশুল হাতে!সবার শেষে দাঁড়িয়ে আছেন জন বেল।আপনাকে কোয়ান্টাম ভালোবাসার গান শোনাবে বলে...
~ সমাপ্ত~ *তোমাকে না পেতে পেতে গানের লাইন।নিজের 'apophenia' কে কাজে এটার সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সংযোগ খোঁজার দায়িত্ব পাঠকের।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুভব করার জন্য চমৎকার একটা বই। উদ্দেশ্য যদি হয় অনুভব করা, এই বই সেক্ষেত্রে শতভাগ সফল।
ভাষা নিয়ে বয়সভেদে একেকজনের একেকরকম এক্সপেরিয়েন্স হতে পারে। ঠিক বইয়ের ভাষা না, আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে ফেসবুক বা মুখের চলতি ভাষায় লেখা হয়েছে বইটা। টার্গেট রিডারদের এক্সেস করার জন্য সেটা আসলে সুবিধাই হয়ে এসেছে।
মজার সব উদাহরণ যেমন আছে, তেমনি প্রয়োজনীয় সমীকরণও আছে বইয়ের খানিকটা ভেতরে। কাজেই, রিডার একটু ধাতস্ত হয়ে আস্তে-ধীরে ঢুকে যেতে পারবেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার রহস্যময় জগতে। সেমি-পপুলার সায়েন্স বুক বলা যায় সব মিলিয়ে।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় আগ্রহ আছে, এরকম সবারই এটা একবার পড়ে দেখা উচিৎ। মন্দ লাগবে না।
পদার্থবিজ্ঞান পড়ছেন অথচ কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর নাম শোনেননি এমন ছাত্র মনে হয় খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি বা কেনোই এর আবির্ভাব অনেকেই হয়তো সেটা জানেন না। আবার অনেকের কাছে এই সাবজেক্টটা মানে মাথা ব্যাথার এক অনন্য কারন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়তে গিয়ে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হয়নি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। দুর্বোধ্য সব জটিল সমীকরণগুলো হুট করেই কোথা থেকে যেনো টপকে পড়ে। সেগুলোকে আরো জটিল করতে গ্রিক অক্ষরের কিছু লেটার আর দুর্বোধ্য চিহ্নেরাতো সাথে আছেই। একাডেমিক বইগুলো পড়ে মোটামুটি শরীরে ভাব আসার কোনো উপায়ই নেই, বোঝা তো দূরে থাক। আমি দেখেছি যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স করছেন তাদের অনেকের কাছেই "কোয়ান্টাম মেকানিক্স" হলো এক আতঙ্কের নাম। পরীক্ষার দুইমাস আগে থেকে তারা সাজেশন মুখস্ত করতে শুরু করেন। তারপর পরীক্ষার খাতায় সেগুলো বমি করেন। অথচ কেনো যে তারা এটা লিখছেন সেটা তারা নিজেরাই জানেননা। তারা সবাই যেনো একটা ধারা অনুসরণ করে আসছেন। সাজেশন খোলো - মুখস্ত করো - পরীক্ষার হলে বমি করো - A+ জিত।
এবার বইয়ের কথায় আসা যাক। আমার লাইফে এর আগে আমি একাডেমিক বইয়ের বাইরে বিজ্ঞান বিষয়ক অন্য কোনো বই পড়িনি। তাই "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বইটি আমার পড়া প্রথম বই। এবং প্রথম বারেই বইটি আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। বইটির লেখক সম্মানীয় "নাঈম হোসেন ফারুকী" ভাইয়া। ভাইয়ার কথা আর কিইবা বলবো...। অন্যান্য যারা ওনাকে চিনেন তারা জানেন যে তিনি কেমন। ভাইয়ার লেখাও এককথায় অতুলনীয়। আর সেটা ফুটে উঠেছে তার লেখা " চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বইয়ে। আপনার কি কখনো জানার ইচ্ছা হয়েছে যে, এই যে অদৃশ্য সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা এদের লাইফ স্টাইলটা কেমন? এরা দেখতে কেমন? এদের আকার, আকৃতি? এদের আচার আচরণ? এদের না দেখা সকল কর্মকাণ্ড? যদি আপনি পদার্থবিজ্ঞান ভালোবাসেন তবে এসব আপনাকে সত্যিই ভাবিয়েছে। কোয়ান্টাম জগতে আপনাকে স্বাগতম। আর হ্যা... কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র না দেখা কণাগুলোর গল্প বলে। আর এইসকল ঘটনাগুলি গল্পে গল্পে, ম্যাথ আর গ্রাফে লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন তার এই বইয়ে। কি নেই তার এই বইয়ে!!!! "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বইটি আমি সকলের জন্যই রেকমেন্ড করি। যারা বইটি পড়েছেন একমাত্র তারাই বুঝবেন যে আসলে তারা কি পেয়েছেন। যারা এখনও পড়েননি তারা বুঝতে পারবেন না যে আসলে তারা কি মিস করতে চলেছেন। এখানে একেবারে বেসিক লেভেল থেকে সবকিছু শুরু করা হয়েছে। যাদের ক্লাস টেনের বেসিক স্ট্রং আছে বইটি তারাও পড়তে পারবেন। বইটি প্রথমেই শুরু হয়েছে উপক্রমণিকা শব্দটি দ্বারা। বইয়ের লেখক বলেছিলেন এই বইটি পড়তে হলে ("উপক্রমণিকা") এই জাতীয় শব্দের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে হবে। হয়েছেও তাই। আমি এই বইয়ের প্রথম যে শব্দটির জন্য ডিকশনারি ঘেঁটেছি সেটা হচ্ছে এই "উপক্রমণিকা"। হাহাহাহা.....সেইরকম একটা কিউট ব্যাপার স্যাপার। বইয়ে একে একে আলুর বস্তা থেকে সুপারডিটারমিনিজম পর্যন্ত বুঝতে যখন যেটা লাগে লেখক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন সেগুলোকে আনতে। পুরো বইটা জুড়েই ছিলো ম্যাথ, গ্রাফ আর ছবির অসম্ভব ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই লেখক ভাবার জন্য কিছুনা কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। এবং সতর্কতা হিসেবে দিয়েছেন কিছু চিহ্ন ও তাদের মানে। লেখকের এমন প্রচেষ্টায় আপনি আমি শিখতে বাধ্য। কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে ফিল্ড কি? কণারা কি এখানে বল খেলে নাকি দৌড়ায়? নাকি অন্যকিছু? স্পিন কি? কি সেই ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট যার জন্য বিজ্ঞানী আইনস্টাইন নোবেল জিতেছিলেন? কি এই তরঙ্গ কণা দ্বৈততা? এটা কি কোনো দৈত্য!!! যে একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে...। কেনো সবকিছুতে এতো অনিশ্চয়তা???? এমন অনেক জিনিসই খুব যত্ন সহকারে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তার এই বইয়ে। ওয়েট..ওয়েট..। আপনি কি ভাবছেন এগুলাই শেষ? যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ভাবনায় ছেদ পড়লো বলে। এতো সবেমাত্র শুরু। এখনও অনেকটা বাকি। স্টেট, জটিল তরঙ্গ, মাল্টিভার্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটার, বোজোন- ফার্মিওন, সুপারপজিশন, কোয়ান্টাম টানের্লিং, ψ, বেলের অসমতা, ইন্টারপ্রিটেশান, শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল, বিখ্যাত টাইম ইন্ডিপেন্ডেন্ট শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণসহ আরো অনেক অনেক কিছু। এইসব বড়ো মাপের দাঁতভাঙ্গা উচ্চারণের জিনিসগুলো বোঝা তো দূরে থাক অনেকে নামই শোনেননি। এইসব জিনিস কেনো কিভাবে হচ্ছে লেখক তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করে গেছেন। তিনি নানান রকম কাল্পনিক চরিত্র ব্যাবহার করে একটার পর একটা রহস্য ভেদ করে গেছেন। যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর জন্য আপনার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তবে শিওর থাকুন এই বইটি আপনার জন্যেই। আপনাকে কোয়ান্টাম প্রেমী বানাতে এই একটি বই'ই যথেষ্ট। যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে প্রতিটা পদে পদে ফিল করতে চান তবে "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বইটি আপনার জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড।
এবার বইয়ের উপসংহারে আসা যাক। এটাকে আসলে উপসংহার না বলে মোটিভেশনাল স্পিচ বলি। কারণ লেখকের এই কথাগুলি কোনো অনুপ্রেরণা থেকে কম কিছু নয়। সত্যিকার অর্থে বর্তমান সময়ে ফিজিক্স কতোজন বুঝে পড়ে তা আমার জানা নেই। বেশির ভাগ স্টুডেন্টই চায় পরীক্ষায় পাস করার জন্য পড়তে। যারা সত্যিই বুঝে পড়তে চায় ফিজিক্স আসলে তাদের জন্যই। যতক্ষণ আপনি এটা এমন কেনো, কিভাবে, এমন কেনো নয়, কারণ কি এসব নিয়ে না ভাবছেন ততক্ষণ আপনি নেহাতই শুধু সময় নষ্ট করছেন। তাই বুঝতে হলে আপনাকে ভাবতে হবেই।
বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে কিছু গাণিতিক প্রমাণ দেওয়া আছে। আছে শ্রোডিঙ্গারের সময় নির্ভর ও অনির্ভর সমীকরণের প্রতিপাদন, বেলের অসমতার প্রমাণ। এবং বইয়ের সবশেষে লেখক তার বইয়ে ব্যাবহৃত প্রতিটি ব্যাখ্যার রেফারেন্স দিয়েছেন যা তার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
যাইহোক পরিশেষে এই বলবো যে, যদি আপনি সত্যিকার অর্থেই বুঝতে চান যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে কি বা কেনো তাহলে সময় নষ্ট না করে বইটি সংগ্রহ করে ফেলুন। আশা করি আপনি ঠকবেন না। আমি বইটির প্রথম এডিশন নিয়েছিলাম তাই বইটিতে সামান্য কিছু বানানের ভুলত্রুটি ছিলো। আশা করি সেকেন্ড এডিশনে সেই ভুলের সুযোগটা আর নেই। আর বইটিকে আমি ১০/১০ রেটিং দিয়েছি এই কারণেই যে, বাংলায় এতো সহজ সাবলীল ভাষায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বই পাওয়াটা আমাদের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। দুর্বোধ্য এই জিনিসটাকে লেখক কতোটা সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন যে ক্লাস টেনের একজন স্টুডেন্টও এই বইটি পড়তে পারবে। সত্যিই ভাবতে খুব অবাক লাগে। লেখকের জন্য একবুক ভালোবাসা রইলো। আশা করছি পরবর্তীতে লেখক আমাদের আরো ভালো ভালো বই উপহার দিবেন।
"বৃদ্ধ নীলস বোর ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠলেন। তাঁর সারাজীবনের প্রতিদ্বন্দ্বী আইনস্টাইন কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তাঁরও যাবার সময় হয়ে এসেছে। তাঁর সারাজীবনটাই কেটেছে স্বপ্নের মতো। এতগুলো বছর গেল, এত এত গবেষণা হলো, এখনও কেউ বুঝতে পারলো না পার্টিকেল আসলে কি জিনিস! কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশন আসলে কি মিন করে ।"
মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ প্রকৃতি নিয়ে ভেবেছে। এ কাজে মানুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছে রহস্যকে। গত শতাব্দীকে পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় বলা চলে। প্রমান হিসেবে বলা যায় পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটা শাখার নাম—"কোয়ান্টাম মেকানিক্স"। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরুটা ব্লাকবডি রেডিয়েশন থেকে। সমাধানে ম্যাক্স প্লাংক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন hilfsgrosse ধ্রবকের। "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স"- বইয়ের ৩য় অধ্যায় (পরমাণুর গল্প:প্রথম যুগ) থেকে বইয়ের সাধারণ আলোচনা শুরু হয়েছে। রাদারফোর্ড মডেল ম্যাক্সওয়েলের ক্লাসিক্যাল ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক থিউরিকে কেনো সমর্থন করতে ব্যার্থ হয় তার ছোটখাটো একটা ব্যাখ্যা এখানে পাওয়া যাবে।
৪র্থ অধ্যায় (তরঙ্গ বলবিদ্যা) থেকে লেখক শুরু করেছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সিরিয়াস আলোচনা। শুরুতেই তরঙ্গ নিয়ে বেসিক কথাবার্তা থেকে তরঙ্গের ব্যাতিচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কণাদেরকে যখন ডাবল স্লিটের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় তারা আসলে কিভাবে প্রবেশ করে? মার্বেলের মতো? উত্তর হলো হ্যা বা না। যখন দ্বি-চির পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন দেখা গেলো কনা সলিড বস্তুর মতো আচরন করে আবার পর্যবেক্ষণ না করলে তা তরঙ্গের মতো ব্যাতিচার ধর্ম প্রদর্শন করে। এরপর আসে ফোটনের দূঃখের জীবন যার কারন হিসেবে লেখকের দাবী ফোটনের নিজের কাজে পুরো মহাবিশ্বে সময় বলতে কিছু নেই দূরত্ব বলতে কিছু নেই! কেন এমন হয়? ভরের কিভাবে জন্ম হয়? রিলেটিভ ভর কি? এগুলো নিয়ে ৪র্থ অধ্যায়ের ২টি অংশ সাজানো। ডি ব্রগলির সম্ভাবনার তরঙ্গের সাথে পুকুরের ঢেউ এর তরঙ্গের প্রধান পার্থক্য হলো মাধ্যম। সম্ভাবনা তরঙ্গের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় কণার সম্ভাব্য অবস্থান। এ আলোচনার পর আসে ডি ব্রগলির পরমানু মডেলের কচকচানি। ইন্টারের বইয়ে থাকা থিউরী গুলোকে এই পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে।
এর পরের অধ্যায়ে আসে অনিশ্চয়তার নীতি। সাধারন সমীকরনের মাধ্যমে এ অধ্যায়ে অনিশ্চিততার নীতিকে বোঝানো হয়েছে তবে সরাসরি হাইজেনবার্গ প্রিন্সিপালকে প্রমান করা হয়নি।
৬ষ্ঠ অধ্যায়ে কনাদের স্টেট ও কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে একে একে উঠে এসেছে সুপারপজিশন, নরম্যালাইজেশন, জঠিল স্টেট আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গল্প। কাল্পনিক সংখ্যা থাকলেই যে সমীকরন অতিভৌতিক কিছু হয়না তা গানিতিকভাবে বুঝিয়েছেন লেখক।
এরপর একে একে আসে বহুল প্রতিক্ষিত শ্রোডিঙ্গার সমীকরনের আলোচনা। শুরুতেই জঠিল তরঙ্গগুলো দেখতে কেমন? জঠিল তরঙ্গ কিভাবে একটি ইকুয়েশনে ব্যবহার করা হয় তা হাতে কলমে দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে শ্রোডিঙ্গারের এর সমীরকন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক আগে থেকেই একটা আমার প্রশ্ন ছিল যে পরমানুতে অর্বিটালগুলো দেখতে এরকম কেনো? একটি কণা অসীম বিভবের প্রাচীরের মাঝে আটকা পরলে তার যে অবস্থা হয় তার সমীকরন এর সাথে পরমানুর অর্বিটালের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তা নিয়ে আলোচনায় আমার বহুদিনের প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। এরপর কোয়ান্টাম টানেলিং এর গাণিতিক ব্যাখ্যা সহ একটি আলোচনা।
এরপরের অধ্যায়ে আছে কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন, বেলের উপপাদ্যের গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, কনাদের চোখে পৃথিবী কেমন এগুলোর আলোচনা। এছাড়া এখানে আছে বিখ্যাত ইপিআর প্যারাডক্স, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট এর ব্যাখ্যা। অন্যদিকে আলোর পোলাইরাইজেশন নিয়ে গাণিতিক ব্যাখ্যা যা বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে। এখানে খুব ছোট একটা প্যারা উল্লেখ না করলেই নয়, "আমরা যখন দেখি তখন আসলে কি হয়? আমরা দেখছি বলেই কি আমাদের অতীত আছে? আমরা কি দেখে দেখে নিজেদের অতীতকে বাছাই করছি? আমরা দেখছি বলেই কি এই চারপাশের জগৎ আছে? আকাশে জ্বলজ্বলে জ্যোৎস্না আছে? এটা কি সম্ভব, আমরা দেখে জন্ম দিয়েছি এই মহাবিশ্বের?"
শেষের অধ্যায়ে গাণিতিক কোনো চিহ্ন লেখক রাখেননি। এ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ইন্টারনেটে বহুল আলোচিত মাল্টিভার্স,ইউনিভার্স তার সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিভাবে সম্পর্কিত। সাথে আছে মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশন।
পরিশিষ্ট অংশে লেখক রেখেছেন কিছু সমীকরনের গাণিতিক প্রমাণ।
মাঝের কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়নি। যে অধ্যায়গুলো আলোচনা করা হয়নি তার সবই অগাণিতিক। গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ বই টিকে আমার কাছে বেসিক লেভেলে উপযুক্ত মনে হয়েছে।
বইটি লেখক বাজারের সাধারন বইয়ের মতো করে লেখেননি। মাঝে মাঝেই লেখক চরম কিছু মজার গল্প বলেছেন তা আবার জুরে দিয়েছেন সমীকরনের মারপ্যাচে। এতে করে বইটি পপ-সাইন্স বা টেক্সট ক্যাটাগরির মাঝখানে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে লেখকের দাবী বইটি মাঝে মাঝে পপ-সাইন্স এবং মাঝে মাঝে গাণিতিক সমীকরন বুঝিয়েছেন তাই টেক্সট ক্যাটাগরি। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স যারা অলরেডি টেক্সট লেভেলে পড়েছেন তাদের জন্য এটি একটি মজাদার বই। যদিও বা লেখক দাবী করেছেন ৯-১০ এর বেসিক থাকলেই বইটি পড়া সম্ভব তবে এ ব্যাপারে আমি একমত নই। আমার ধারনা এ বইটির সব টার্মগুলো বুঝে পড়তে ইন্টারের অনেকাংশ বেসিক থাকা প্রয়োজন। বইটি আমি কিনেছিলাম ২০২১ সালের শুরুর দিকে। তখন অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। তবে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট হিসেবে বইটি অনেক বেশি বোধগম্য ও সাবলীল বলে আমি মনে করি।
আমার দেখা বাংলায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে এটিই একমাত্র সাবলীল বই। যেটি করতে গিয়ে লেখক গাণিতিক সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করে পাঠককে হতাশ করেছেন, কিছু কিছু লেখায় তা স্পষ্ট। — "সব শেষে সমীকরণ। ডেরিভেশন সম্ভব না, সেটার জন্য ফুরিয়ে ট্রান্সফর্ম, আরো অনেক কিছু জেনে আসতে হবে । যদি অবস্থানের তরঙ্গ Δx মিটার চওড়া হয়, অর্থাৎ কণা এই Δp জায়গার মধ্যে যেকোন জায়গায় থাকতে পারে, আর সেজন্য তার ভরবেগের তরঙ্গ যদি চওড়া হয়, হয়, তাহলে ফুরিয়ে ট্রান্সফর্ম আমাদের বলে, ΔpΔx≥h/4π"
এক ফ্রেন্ডের পোস্ট দেখেছিলাম, মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে একাডেমিক সব পড়াশোনা ছেড়ে ছুড়ে শুধু ফিজিক্স নিয়ে পড়ে থাকি। অথবা অন্য যেসব টপিকে খুবই আগ্রহ, সেগুলো নিয়ে পড়ে যাই দিনের পর দিন রাতের পর। আমার ও এই ইচ্ছে টা খুব। খুব মানে খুউব। যদি অঢেল টাকা পয়সা থাকত। হয়তো তাই করতাম। বই এর স্তুপে ডুবে থাকতাম। ইকুয়েশন সলভ করতাম। ভুল বসত কিছু আবিষ্কার করে ফেললেও মন্দ হয় না। সেই সুরাত্রিতে ভেজা ভেজা চোখে আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে মহাবিশ্বের নব উন্মোচিত রহস্যকে উপলব্ধি করতাম। অথবা, সেই নতুন সমীকরণ যে পাতায় লেখা। কাপা কাপা হাতে দেবে যাওয়া সে লেখা গুলো কে বার বার স্পর্শ করে দেখতাম। তবে না সে সুযোগ নেই। অঢেল টাকা আমার নেই। সেই সুবাদে আমার কোনো প্রাইভেট টিউটর ও নেই। কখনও কোনোদিন ছিল না। কোথাও কোচিং করারও ইচ্ছে আমার নেই। আগে হয়তো এ নিয়ে হাহুতাশ করতাম। কিন্তু সেটা কেটে গেছে অনেক দিন আগেই, আমাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় একটা কথা,
"যখন বুঝতে পারবে তোমাকে হেল্প করার কেউ নেই, একটা আশ্চর্য সুন্দর জানালা তোমার সামনে খুলে যাবে" - নাঈম হোসেন ফারুকী।
হ্যাঁ একা একা অনুভব করে চলেছি ফিজিক্সের ইকুয়েশন গুলো। গণিতের চিহ্ন গুলোর পেছনের গল্প। সঙ্গি হয়েছে খাতা, কলম আর বই। একাডেমিক স্টাডি ছাড়া টা সম্ভব না হয়তো তবে দিনের অধিকাংশ সময় কাটে পছন্দের বিষয় ফিজিক্স নিয়েই। আগ্রহ টা দিনে দিনে একটু একটু করে বেড়েছে। সেই আগ্রহে ইন্ধন জুগিয়েছে কিছু অতি অসাধারণ বন্ধু, বড়ো ভাই। আবার মাঝে মধ্যে কিছু অতি অতি অসাধারণ বই।
হ্যাঁ "বই" যা আঙুল ধরে পথ দেখিয়েছে। পেতে সাহায্য করেছে অমৃতের খোঁজ। খুঁজে দিয়েছে রহস্যের সৌন্দর্য অনুভবের পদ্ধতি। বাংলায় লেখা হাজার টা অপবিজ্ঞানের বইএ আমাকে বিলিন হয়ে যেতে দেয় নি। খুব গর্বের সাথে বলতে ইচ্ছে করে এমন একটা বই হলো,
"চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স"
আর খুবই ভাগ্যবান আমি এমন একটা বই হাতে পেয়ে। রহস্যকে জানার অমূল্য ইচ্ছা কে যে বই ত্বরান্বিত করতে পারে না, তা বিশেষ জ্ঞানের বই না। যা বইটি যথার্থই পেরেছে। শুরু থেকে শেষ অবধি টেনেছে আমায়, বাধ্য করেছে কাঁদতে। খাতা কলম নিয়ে বসিয়েছে। ইকুয়েশন সলভ করিয়েছে। বইটির পদে পদে রয়েছে উন্মাদনা। অসম্ভব সুন্দর কিছু রহস্য ও তার সহজ সমাধান। রয়েছে একরাশ বিষ্ময় নিয়ে ভাববার অবকাশ। ভাবতে শেখানোর কী অসাধারণ কৌশল! ও এরপরই প্রশান্তি।
ঘরে ঢুকবার আগে আমার আম্মুর তিনটা ঘরের ও রান্না ঘর আর বাথরুম এ থাকার মোট সম্ভাবনা ১। কিন্তু এখন যেহেতু দুপুর বারটা তাই রান্না ঘরে থাকার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। আর আলমারিতে ঢুকে বসার সম্ভাবনা প্রায় শুন্য। কিন্তু আমি তাকে দেখার আগ অবধি সে প্রতিটা ঘরেই সুপারপজিশনে আছে। এমনকি আলমারিতেও।
কী একটা শিহরণ খেলে যায় সারা শরীরে, এমন অদ্ভুত জিনিস ভাবলে। রাদারফোর্ড এর ক্লাসিকাল মডেল থেকে শুরু করে লুই ডি ব্রয়লে এর কোয়ান্টাম মডেলের উন্মোচন। কণা তরঙ্গ দ্বৈততা দিয়ে বোরের মডেলের যে সমীকরণ সেটার জাচাই। এবং তার মডেল কে বিট করে বের করে নিয়ে আসা পরমাণুর প্রথম কোয়ান্টাম মেকানিকাল মডেল। যা এক রহস্যময় জগতের পর্দা হালকা ফাঁক করে দিতে সক্ষম। রহস্যের শুরু সেখানেই। কণা তরঙ্গের ডাক পড়েছে অনিশ্চয়তার জগতে। হাইজেনবার্গ এর অনিশ্চয়তা সূত্রের নিশ্চয়তা আজ অবধি ১৬ আনা খাঁটি। সেই খান থেকে সাদা মাটা সাইন তরঙ্গ রূপ ধারণ করে ψ এর। নাম সাই হলেও এই ব্যাটা নিজের পরিচয় দিতে একটুও সাই ফিল করে না। শ্রোডিঙ্গারের অমর সমীকরণ সামনে আসে। পরমাণুর নিখুত চিত্র ফুটে উঠে সেই সমীকরণ থেকেই। একটা পরমাণুতে একটাই ইলেক্ট্রন হলেও সে থাকে মেঘের মতো। না না বিভ্রান্ত হবেন না। ইলেক্ট্রন থাকে সুপারপজিশনে। একই সাথে অগণিত সম্ভাব্য স্থানে। সেগুলোই আমরা নিজের মধ্যে আঁকি মেঘের মতো করে। যেখানে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি সেগুলোকেই আসলে নাম দেয়া হয়েছে অর্বিটাল নামে।
এপর্যন্ত সব ঠিক ঠাক। সুপারপজিশনে থাকা মেনে নিলাম। খুবই অদ্ভুত জিনিস তবুও মেনে নিলাম। কিন্তু যখন আমাকে বলা হবে আমার একটা হুবহু দেখতে আরেকটা কপির থাকে শত আলোকবর্ষ দূরে থেকে আমি তার সাথে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছি। তাহলে কেমন হবে? হ্যাঁ এটাও হচ্ছে। কণানিজেও জানে না তাকে দেখার আগ অবধি সে কোথায়। তবু এমন অদ্ভুত জিনিস প্রকৃতিতে ঘটে চলেছে। এর কারণ? কেউ জানে না। শুধু জানে আলোর চেয়ে বেশি বেগে কোনো কিছু যেতে পারে না। তাই এইরকম ভাবে যোগাযোগ ও সম্ভব না। এসব জিনিস ভাবলে যদি কেউ একটা ঘোরের মধ্যে না তলিয়ে যায় সে কি মানুষ? আমি নিজেকে আটকাতে পারি নি।যা, অদ্ভুতুড়ে এই মহাবিশ্বের রহস্যে ঘেরা প্রকৃতিকে জানবার ইচ্ছাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। অমৃতের স্বাদ পেয়েও পিপাসায় কাতরাচ্ছি। শুধু ভেবে চলেছি কোনোদিন কি মানুষ জানবে, নাকি দূরে কোনো প্যারালাল ইউনিভার্স এ এই রহস্য আগেই ভেদ হয়ে আছে। প্রয়োজন শুধু সেই দুইনিয়ার সাথে যোগাযোগ। কিন্তু কীভাবে? কেউ জানে না।
তবে যে জানতেই চায় না, তাকে দেখে খুব আশ্চর্য লাগে।
বইটির উপসংহারের শেষ কিছু কথা,
চারিদিকে অন্ধকার পর্দা, মাঝখানে বসে অসহায় মানুষ ছটফট করছে। তার একটা মাত্র হাতিয়ার: ছিয়াশি বিলিয়ন নিউরনের তৈরি অদ্ভুত রহস্যময় এক ভয়াবহ পাওয়ারফুল মস্তিষ্ক।
ইচ্ছা করে না তাকে ব্যবহার করতে?
হ্যাঁ খুব ইচ্ছে করে। খুবই।
বই এর রেটিং ১ থেকে ১০ এর মধ্যে পড়ার আগ অবধি সুপারপজিশনে ছিল আমার কাছে। কিন্তু আমার কাছে এটি=> ১০
বোরের একটা উক্তি দিয়ে শেষ করছি,
"If You are not astonished by quantum mechanics then you have not understood it!" _ Niels Bohr
আমি তেমন একটা বাইরে বেরোই না আজকাল। অনেক কিছুই বিরক্ত লাগে। চার দেয়ালের মাঝে থাকতে তেমন অসুবিধা হয় না কারন এর মধ্যে এক গাঁদা ইউনিভার্স, আমি যখন ইচ্ছা পোর্টাল চালু করে হারিয়ে যাই সেসব আজব দুনিয়ায়! সেখানে কোনো সংঘাত নেই, হিংসা নেই। বড্ড ভালো লাগে। ইচ্ছে করে চিরকাল সেসব জায়গায় থেকে যাই। কিন্তু পারি না।
একদিন হঠাৎ করেই রিলেটিভিটির বই পড়তে পড়তে কিসস্যু মাথায় ঢুকছে না দেখে বিরক্ত হয়ে সেটা ছেড়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বই হাতে নিই। বুঝতেই পারিনি কখন বইয়ের প্রায় একশো পেইজ পড়ে ফেলেছি! চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি টেক্সট বই। চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স হলো সেমি-পপ ধরনের বই। মানে এখানে কিছু সমীকরণ, গ্রাফ থাকবে আবার সহজ বাংলায় ব্যাখ্যাও থাকবে যেন আগ্রহ মরে না যায়। এরপর অবশ্য বেশ কিছুদিন আর বইটা ধরার সময় পাইনি। পরে আস্তে আস্তে পড়ে আজ শেষ করলাম। এই বইয়ের ব্যাপারে যদি এক শব্দে বলতে হয়- "অদ্ভুত"। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞানের সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলোর একটা মনে হয় আমার কাছে। আগে পপ বই, আর্টিকেল পড়ে হালকা পাতলা এর ব্যাপারে জানতাম। তবে বুঝতাম না। তখন থেকেই মাথার মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এই বই পড়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবেই পেয়েছি। আর বোনাস হলো, আরো এক গাঁদা প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি মারছে! আরো গভীর থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে জানার ইচ্ছা প্রবল হচ্ছে। তাই বলে আবার ভাবার সুযোগ নেই চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স হালকা বই। গল্পের মতো পড়ে ফেলা যাবে। এটাকে বরং আমি একটা নতুন জনরা- বৈজ্ঞানিক থ্রীলার বলতে চাই। লেখকের বর্ণনার অসাধারণ দক্ষতা ফুটে উঠেছে এই বইয়ে। প্রথমে রহস্যের জাল বুনেছেন। পাঠককে অস্থির করে তুলেছেন উত্তর জানার জন্য। আর প্রায় অধ্যায়ের শেষে গিয়ে সমস্ত জট খুলে গেছে। তার সাথে সাথে উদয় হয়েছে আরো কিছু প্রশ্ন! সেখান থেকে শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়ের গল্প। আবার পাঠক যেন চিন্তা করা থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য লেখক রেখেছেন কুইজ! বইয়ে দারূণভাবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। আমি জানি, এই ব্যাপারটা খুব কমন না। এবার যদি বলি, শুরুর দিকটার কথা, হুট করেই গভীরে ঢুকে পড়েননি লেখক। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝার জন্য যা যা লাগবে সেসব শিখিয়েছেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে। কিছু জিনিসকে নতুনভাবে জেনে অবাক আর মুগ্ধ হয়েছি। এভাবেও ভাবা যায়! মূলত আগে থেকে অন্তত নাইন-টেনের ফিজিক্স আর ম্যাথের কনসেপ্ট না থাকলে এই বই পড়ে বোঝা সম্ভব না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স যে অদ্ভুত তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। তার ফলাফল সম্পর্কে হালকা আইডিয়া বিজ্ঞানের কম বেশি সব শিক্ষার্থীরই আছে। তবে এই আইডিয়াগুলো কীভাবে আসলো তা সবার জানা নেই। আমারো তাই। এই বই পড়ে শুধু যে পুরোনো প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়েছি শুধু তাই নয়, বরং, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আসল সৌন্দর্যের ব্যাপারে যে চরম মাত্রায় প্রতারিত হয়েছিলাম তাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বইয়ের ভাষার কথা যদি বলি, সেটা আর দশটা বিজ্ঞানের বইয়ের মতো ঠিক ফরমাল না। এমনভাবে লেখা যেন লেখক সামনে বসে গল্প শোনাচ্ছেন আর আমি পাঠক মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে তার সেই আশ্চর্য গল্প শুনছি। বইয়ের মাঝে মাঝে জোকস টাইপ জিনিসপত্র আছে। পড়ালেখা করতে হবে মনের সব আনন্দ মাটি করে। এই ধারণার বিরোধী আমি। তাই এসব রিলিভ্যান্ট জোকস বেশ এনজয় করেছি। রিভিউয়ের পাঠক হয়তো ভাবছেন বইয়ের কন্টেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত কেন বলছি না। আসলে আমি চাই যে কেউ এই বইটা পড়বে, সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে, ছোট্ট ছোট্ট আইডিয়া থেকে কী অবিশ্বাস্য সব সত্যি উঠে এসেছে! সিমিউলেটেড ইউনিভার্সের মতো অধ্যায়ের শেষে এসে কী এক আশ্চর্য শক্তিতে শরীরে মৃদু কাপাকাপি শুরু হয়েছে! হাত-পা নাড়াতে না পারার অনুভূতি হয়েছে! ভেবেছি, কী ভয়ঙ্কর রহস্যময় আর সুন্দর জগতে বাস করি আমরা! আর ছোট্ট একটা গ্রহের ছোট্ট ছোট্ট মানুষ হয়ে কতকিছু চিন্তা করতে শিখেছি! এসব জিনিসের সাথে আগে থেকেই পরিচিত থাকলেও লেখকের বর্ণনায় মনে হয়েছে যেন নতুন করে জানছি। লেখকের সাবলীল লেখনী আ��নাকে নিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আজব দুনিয়ায়। এই আমাদেরই দুনিয়া, সেটাকে চিনতেন শুধু, অস্তিত্ব জানতেন, বুঝতেন না তাকে! এখনো কেউই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। সেই আফসোস লেখকের না হলেও আমার কিছুটা হয়। মানুষের সাফল্য দেখতে আমার ভালো লাগে। ইচ্ছে হয় এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে যদি রহস্যময় প্রকৃতিকে পুরোপুরি জানতে পারতাম! তবুও ভেবে অবাক হই, সামান্য এককোষী জীব থেকে বিবর্তিত হয়ে আমরা কতকিছুই না করেছি, করছি! সবেশেষে, যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে বিস্তারিতভাবে প্রাথমিক ধারণা পেতে চান, গাণিতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ, তাদের জন্য এই বই সেরা। এরপরে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর টেক্সট বই পড়তে অনেক সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। ঘুমের ঘোরে বইয়ের রিভিউ ঠিকমতো দিতে পারলাম কিনা বুঝতে পারছি না। ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিতভাবে রিভিউ লেখার ইচ্ছা আছে। আপাতত কিছু মানুষকে জানাতে চ���ই, এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বইয়ের জগত একেবারেই আলাদা। আমার কাছে একটা নতুন ইউনিভার্স! সে জগতে একবার ঢুকলে আর বেরোতে চাইবে এমন কেউ নেই পৃথিবীতে। হ্যাঁ, সবাই ঢুকতে পারবে না! তার জন্য বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে আর প্রচুর চিন্তা করতে হবে। আমি বইয়ের সবকিছু ক্লিয়ার বুঝে গিয়েছি বলতে পারবো না। তবে কিছু টপিক বাদ দিলে, এই বই পড়তে পড়তে বিজ্ঞানকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছি! এই বইটা রিভিউয়ের অনেক উর্ধ্বে বলে মনে করি। যতটা না বিষয়বস্তুুর সৌন্দর্যের জন্য, তার চেয়ে বেশি লেখকের অভাবনীয় চিন্তাশক্তির জন্য, যিনি দিনরাত শ্রম দিয়ে জিনিটার সৌন্দর্য একটুও নষ্ট না করে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যতটা সম্ভব সহজ, সাবলীল করে। লেখকের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশ যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ খেলায় জয়লাভ করে, তখন সাংবাদিক রা কি সুন্দর, অসামান্য, হৃদয়গ্রাহী প্রতিবেদন তৈরি করে, সেগুলা নিশ্চয়ই আপনাদের দেখার সৌভাগ্য হয়েছে? আমি প্রায় শতাধিক বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়েছি। এই প্রথমবার আমি সেইরকম একটা বই পেলাম, যেটায় বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের অবিস্মরণীয় মেধা, ধৈর্য্য ও বিশ্ব রহস্যের উন্মোচনের নিরন্তর লড়াইয়ের ইতিহাস গুলোকে আবেগজড়িত, হৃদয়গ্রাহী ও মনোমুগ্ধকর লেখনিতে বর্ণনা করতে পেরেছেন লেখক। যেন মনে হচ্ছিল কোন সনামধন্য টিভি চ্যানেলের অভিজ্ঞ রিপোর্টার। আমি পদার্থবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছি। এবং দুঃখের বিষয়, আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভালোমত বুঝতাম না। আমি বাংলা ইংরেজি প্রায় ৫/৬ টা একাডেমিক বই পড়েছি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর। একাডেমিক বইয়ে তো সংক্ষিপ্ত ভূমিকা, প্রাসঙ্গিক আলোচনা, বৈজ্ঞানিক পদ/ একক সমূহের সংজ্ঞায়ন, সূত্র প্রতিপাদন এবং সংশ্লিষ্ট অংক ইত্যাদির মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায় অধ্যায় গুলা। এইটুকু কলেবরে বিজ্ঞান জগতের সবচেয়ে জটিল বিষয় কোয়ান্টাম ফিজিক্স ভালোমত বুঝা তো দূরের কথা, মোটামুটি পর্যায়ের অনুধাবন করাই সম্ভব হয় না। এমনকি বিশ্বব্যাপী সাইন্স গ্র্যাজুয়েট দের অবশ্য পাঠ্য বই, ফান্ডামেন্টালস অব ফিজিক্স ( হ্যালিডে, রেসনিক, ওয়াকার) এর বই পড়ে বাংলা ভাষী দের কোয়ান্টাম মেকানিক্স মোটামুটি বুঝার সম্ভাব্যতা অনেক অনেক কম। স্থান কাল কাঠামোয় কোন ঘটনার বৈজ্ঞানিক দৃশ্যায়ন উপলব্ধি করানো অত্যন্ত কঠিন। কিন্ত লেখক তা অত্যন্ত সাধারণ গল্প ও দৃশ্যকল্পের মাধ্যমে তা বুঝাতে পেরেছেন। এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্লাসে স্যারেরা স্বল্প সময়ে তা বুঝাতে পারবেনও না। বইতে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় স্থান পেয়েছে, যেগুলা বহুল প্রচলিত বৈজ্ঞানিক ভুল ধারণা ভেঙে দিবে অনেকের। যেমনঃ ১) কোন বৈজ্ঞানিক মডেল ভুল প্রমাণ বা বাতিল হওয়া মানেই তা একেবারেই ভুল বিষয়টা এমন না। বরং তা অধিকতর সূক্ষ্মতর বা জটিলতর হওয়া। বিজ্ঞান আজ যা সঠিক, কাল তা ভুল হিসেবে সাব্যস্ত করে এই ধারণাও অনেকাংশে ভুল।বিজ্ঞান মানেই পরিবর্তনশীল এটাও ভুল ধারণা। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা সমীকরণ গুলো উত্তরোত্তর সূক্ষ্মতর বা জটিল হয় সময়ের সাথেসাথে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির মাধ্যমে, এটাই বিজ্ঞান। ২) মৌলিক রঙ যে মাত্র ৩ টা, এই ধারণাও একপ্রকার ভুল। এগুলো মস্তিষ্ক অনুভূত এবং বোঝার সুবিধার জন্য আপেক্ষিক ধারণা। ৬০০ ন্যানোমিটার এর তরঙ্গ দৈর্ঘকে আরো ক্ষুদ্রতর পিকোমিটার, ফেমটোমিটার ইত্যাদি পর্যায়ে ভাগ করলে ঠিকই আরো অগণিত রঙ কে নামকরণ করা সম্ভব। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান রঙ বা আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কনসেপ্ট কে এত সুন্দর করে ব্যাখ্যা দেওয়া আমি আর কোথাও পাই নাই। লেখককে অনেক ধন্যবাদ রঙের ক্ষুদ্রতর গন্ডি থেকে অসীমের গন্ডিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তরঙ্গ সমীকরণ, কণা তরঙ্গ সমীকরণ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিষয়ক সমীকরণ গুলায় কোন পদ কেন হবে, ওই সমীকরণ কণা বা তরঙ্গের কি পরিস্থিতি বুঝাচ্ছে, ইত্যাদি অত্যন্ত সহজ গল্পে বুঝানো হয়েছে এই বইয়ে। পপ সায়েন্সের বিভিন্ন সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলা যেমন মাল্টিভার্স, উচ্চতর ডাইমেনশন, স্ট্রিং থিওরি, সুপার ডিটারমিনিজম ইত্যাদির ভালোই ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। নাঈম ভাইয়ের ফ্যানবেইজ, রিডার বেইজ দের একটা বড় অংশই তরুণ তরুণী। তরুণ তরুণী দের যেইরকম বাক্যচয়ন, শব্দচয়ন ভালো লাগবে, সেইরকম ঢঙেই লেখক লিখেছেন। আমার পড়ার সময় খুব মজা লেগেছে। অনেক জায়গায় দম ফাটা হাসি এসেছে। রসিকতা, রহস্য দুইয়ের মিশেল চমৎকার ছিল। আর বিখ্যাত ওয়েব সিরিজের চরিত্র আর ঘটনা দিয়ে বৈজ্ঞানিক অবস্থা বুঝানোর চেষ্টাটাও অনেক ভালো লেগেছে। একজন বিজ্ঞানের ছাত্রের কাছ থেকে সাহিত্যিক রস সমৃদ্ধ লেখা পাওয়া একটা বাড়তি পাওয়া। বইয়ের শেষের দিকে গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ গুলোর সমাধান, প্রতিপাদন ও বেলের অসমতা ছক দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে অনেক উপকার করেছেন। আর রেফারেন্স অংশটার জন্য আরো একটা বাড়তি ধন্যবাদ কারণ সেই রেফারেন্স বই, ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল গুলা ঘাটাঘাটি করলে বিজ্ঞান সম্পর্কে আরো অনেক জ্ঞান আহরণ করা যাবে। বইটি যাদের জন্যঃ দশম শ্রেণীর যারা জটিল সংখ্যা বুঝে থেকে, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রী, অনার্স মাস্টার্স এ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে যারা পড়বেন এবং বিশ্বের যে কোন বাংলাভাষী, যিনি বিজ্ঞানের সবচেয়ে জটিলতম বিষয়টা সবচেয়ে সহজে বুঝতে চান, তাদের সবার বিজ্ঞান উপলব্ধির পথচলা শুরু হোক এই বইটার মাধ্যমে। জন্মদিন, জাতীয় দিবস, পারিবারিক অনুষ্ঠানে কিশোর কিশোরী দের বিজ্ঞান বিষয়ক বই উপহার দিন সকলে। বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠনে এগিয়ে আসুন সবাই।
বইটা মাসখানিক আগেই পড়ে শেষ করছি।বইটা পড়ার পর লেখকের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি,তা বলে বুঝাতে পারছি না।এই প্রথম আমি কোনো বই সম্পর্কে রিভিউ দিতাছি।কথা সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারি না,তাই লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে পারি না।বইটা পড়ার পর আমার প্রতিনিয়ত মনে হইছে যে, অগুছালো ভাষাতে হলেও অনুভূতি টা ব্যক্ত করা আমার কর্তব্য। বিজ্ঞানের যেকোনো টপিক নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলে,অনেক লম্বা লম্বা ডকুমেন্টারি সামনে আসে,ইংলিশ রাইটারদের বিভিন্ন বই সামনে আসে।সেগুলো বুঝে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও ইংরেজিতে প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে একটু পর পরই ডিকশিনারির হেল্প নিতে হয়।অনেক সময়ইবুঝতে সমস্যা হয়,লেখক কি বুঝাতে চাচ্ছেন। বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল ভালোবাসা থাকলেও কিভাবে ভালোবাসতে হবে,তা জানা ছিল না।আবেগের বশে স্টিফেন হকিং এর ব্রিফ হিসটরি অফ টাইম, বইটা পড়া শুরু করি।ফার্স্ট চেপ্টার Our Picture of the Universe সম্পর্কে বিভিন্ন কিচ্চা কাহিনি পড়তে পারিলেও, সেকেন্ড চেপ্টার Space and Time এ গিয়ে হুচড় খাই,,কণা নামের জিনিস টা নিয়ে।আগ্রহ জ��্মে পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ নিয়ে।ইচ্ছা জাগে কণা, তরঙ্গকে জানার এবং কল্পনায় অনুভব করার। ইচ্ছাগুলো পূর্ণতা পেল চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটা পড়ে।বইটাতে লেখক সীমাহীন দক্ষতার সাথে পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে শুরু করে মাল্টিভার্স আর সুপার ডিটারমিনিজম দিয়ে শেষ করেছেন। অতিক্ষুদ্র থেকে অতি বিশাল! কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়তে ভয় কাজ করতো,কিন্তু এই বইটাতে লেখক এই জটিল বিষ��় টাকে কতটা সহজ ভাবে উপস্থাপন করেছেন,ভাবতেই অবাক লাগে।কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ফাউন্ডিং ফাদার্স দের ধারাবাহিক অবদান এবং পরমানু সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনা থেকে শুরু করে... তরঙ্গ বলবিদ্যাঃ ইয়াং এর তরঙ্গ, ফটো ইলেক্ট্রিক ইফেক্ট, ডি ব্রগলির দ্বিচির, ফোটনের দুখের জীবন ( হতভম্ব 😱হওয়ার মতো কিছু),,,ভরের জন্ম (এই জিনিসটা বুঝার জন্য ক্লাস নাইন টু টেন ছটফট করা লাগছে,,ক্লাস ৯-১০ ফিজিক্স পাঠ্য বই এর তৃতীয় অধ্যায় এর ভরবেগ টপিকটা আলোচনার সময় স্পষ্ট লেখা আছে,ভর এবং বেগের গুনফলকে ভরবেগ বলা হয়,,,কিন্তু একটু নিচেই লেখা আছে,আলোর কণা অর্থাৎ ফোটনের কোনো ভর নেই কিন্তু ভরবেগ আছে!!!!!ক্লাস ৯-১০ এজন্য মাথা হেং মারার জন্য যথেষ্ট), ডি ব্রগলির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, কণা কোথায় থাকে,কণা তরঙ্গ দৈত্বতা,ডি ব্রগলির পরমানু)।
এরপরে আছে হাইজেনবার্গ এর অনিশ্চয়তার নীতি, স্টেট আর কম্পিউটার, মৌলিক কণা ফার্মিওন ও বোজনের বৈশিষ্ট্য, শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ সহজ ভাষায় বিস্তারিত, কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল, ই পি প্যারাডক্স, বেলের অসমতা, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট, সিমিউলেটেড ইউনিভার্স,কণার অতীত, প্যারালাল দুনিয়া, জাত বেজাতের মাল্টিভার্স, স্ট্রিং থিওরির মাল্টিভার্স,মেনি ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রিটেশন,সুপারডিটারমিনিজম।
টক জিনিস দেখা মাত্রই যেমন জিহবায় পানি চলে আসে,,,,ঠিক তেমনই একজন বিজ্ঞান প্রিয় মানুষ এই টপিক গুলো দেখা মাত্রয় জ্ঞানের তৃষ্ণা জাগবে।বিজ্ঞানের জটিল জটিল বিষয় গুলোকে লেখক বইটাতে খেলার ছলে, বিভিন্ন কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে ঘটনার অবতারণা করে, সহজ ভাষায় কঠিন জিনিসকে উপস্থাপন করেছেন। যেকোনো জটিল জিনিস সামনে এলেই,লেখক তা কাল্পনিক চরিত্র আক্কাস আলী, জসিম, বক্কর ভাই,লক্কড় আপার আশ্রয় নিয়েছেন। এইবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এস এস সি পরীক্ষা দিলেও, বিজ্ঞানের কোনো বিষয় আমায় কল্পনার স্বাদ দিতে পারে নাই।চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটা আমায় ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। ( বাচতে হলে ভাবতে হবেই☺)
বইয়ের শেষে সূত্র প্রতিপাদন এর আগে,লেখকের নিজস্ব অভিব্যাক্তি গুলো সত্যিই যে কাউকে ইন্সপায়ার করতে পারে।লেখক প্রাইভেট কোচিং এর অখাদ্য খেয়ে পেট খারাপ না করে,নিজ প্রচেষ্টায় সুশিক্ষিত হয়ে বুয়েটে চাঞ্চ নিয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন,,এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে এমন সুন্দর একটা বই উপহার দেওয়ার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
কোথায় যেন একটা লাইন পড়েছিলাম,"I do believe something very magical can happen when you read a book"
চা-কফি কোয়ান্টাম মেকানিকস বইটি পড়ে আমার ক্ষেত্রে এমন ম্যাজিকাল,সত্যিকার অর্থেই ম্যাজিকাল কিছু হয়েছে।কেন বলছি?বইটি নিয়ে কিছু বলা যাক।
আমার মতে,বিজ্ঞানে কি প্রশ্ন যেমন গুরুত্বপুর্ণ,তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কেন?কিভাবে?এটাই কেন?ওটা নয় কেন এসব প্রশ্ন।কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর বাংলায় লেখা আরো কিছু বই পড়ে আমি কেবল কি প্রশ্নের,কি হয়,কি হয়না,কিছু ঘটনা,সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের নাম এসবই মূলত জানতে পেরেছি,কিন্তু চা-কফি কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটিতে সাল,ঘটনা এসব নিয়ে মাতামাতি না করে মাতামাতি করা হয়েছে জিনিসটা সত্যিকার অর্থেই কি বোঝায় তার উপরে।প্রথমেই ব্লাক বডি রেডিয়েশন নিয়ে বিজ্ঞান যে সমস্যায় ভুগছিল,তা কিভাবে প্লাঙ্ক সাহেব সলভ করলেন তা খুটিয়ে খুটিয়ে,কখনো বা গল্পের সহায়তায় বোঝানো হয়েছে।বিজ্ঞানী বোরের পরমানু মডেল,বর্ণালী,বিশেষত স্পিন,এগুলো নিয়ে হয়েছে বিস্তারিত আলোচনা,ফিল্ড কি জিনিস,খায় না মাথায় দেয়?পার্টিকেল,রঙ এসব নিয়েও হয়েছে আলোচনা।মাঝেমধ্যে গল্পের তালে তালে অনেক বেসিকস ক্লিয়ার করা হয়েছে যেমন:মৌলিক রঙ কি জিনিস?মহাকর্ষের বেসিক,নক্ষত্রের জীবনচক্র,ভরের জীবনকথা,one electron universe,বেশিরভাগ ভর যে হিগস বোসন থেকে আসে না,সেটিও পরিষ্কার করা হয়েছে।সমগ্র বই জুড়েই প্রকৃতির রহস্যছেদের চেষ্টা চালানো হয়েছে।এত সুন্দর কেন বইটা?প্লিজ আন্সার,সত্যিকার গবেষনাধর্মী বইএর স্বাদ পাবেন আপনি বইটি থেকে।
বইটির বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে হাইজেনবার্গ Uncertainty, চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে স্রোডিঙ্গার ইকুয়েশন নিয়ে,কি বোঝায়?কি না বোঝায়?আমাদের পপুলার মিসকনসেপশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে জোরদার।সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হল,বইটির ভাষা-ভঙ্গি।সর্বদাই আপনার মনে হবে,যেন এক কৌতুহলী চরিত্র আপনার কাছে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে তার কৌতুহল ব্যক্ত করছেন,নিজেই প্রশ্ন করে করে উত্তর দিয়ে চলেছেন,বিজ্ঞান নিয়ে লেখক যেন আপনার সামনে বসে গল্প করছেন।এমন সাবলীলতা সচারচর বইতে পাওয়া যায় না,Trust me.
আরেকটা কথা,বইটিকে পপ সায়েন্স বলে পাপের বোঝা ভারী করবেন না,মাঝে মাঝেই প্রয়োজনীয় সমীকরণ ব্যবহৃত হয়েছে,শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ সলভ করা হয়েছে,২/১ টা কেসে,এখান থেকেই অরবিটাল এর আইডিয়া বোঝানো হয়েছে,শেষে আছে পরিশিষ্ট,সমাধান গেস করে স্রোডিঙ্গার ইকুয়েশন এর একটা প্রুভ দেখানো হয়েছে,ইন্টারেস্টিং ♥
বইটির শেষের দিকে জন বেলের অসমতা থেকে প্রকৃতি যে নিজেই তার ব্যপারে শিউর না,তার পেটের ভিতরে কিছু নেই, তা দেখানো হয়েছে।"Quantum world is not unknown,it is unknowable until measured"কোয়ান্টাম এন্ট্যাংগলমেন্ট নিয়ে গ্রেট বোর আইন্সটাইন ডিবেট😫
শেষ অংশ পড়ে আপনার ভেতরে জাগবে শিহরণ,কি ভয়ংকর সব ব্যাখ্যা কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর,যদি কোয়ান্টাম বাস্তবতা জেনে আপনি শিহরিত না হয়,চারপাশ নিয়ে,আপনার এগজিস্টেন্স নিয়ে দোটানায় পড়ে না যান তবে আপনি মৃত,অন্তত মনের দিক থেকে।
এত কিছু একবারে জানবার লোভ যদি আপনার না থাকে,যদি প্রশ্ন করেন এসব জেনে,পড়ে কি লাভ?একটি কথাই বলব,
"I think I can safely say that nobody understands quantum mechanics." - Richard Feynman
কোয়ান্টাম মেকানিক্স জিনিসটা ঠিক কী? "কেউ বোঝেনা" বলতে ফাইনম্যান ঠিক কী বোঝাচ্ছেন? কিছুই বোঝার নাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর? পুরাটাই মুখস্থ?
ফাইনম্যান আসলে "কেউ বোঝেনা" বলতে এটা বোঝাননি যে একেবারে কিছুই বোঝা যায়না, সম্পূর্ণটাই মুখস্থের। উনি বলতে চেয়েছেন, কোয়ান্টাম জগতটা আমাদের আশেপাশের জগতের এক্সপেরিয়েন্সের থেকে একেবারে আলাদা। অন্যরকম রুলস দিয়ে চলে। কিন্তু তার মানে তো এই না যে এই রুলগুলোতে বোঝার কিছু নাই!
কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অনেক বিখ্যাত টেক্সটবুক নিলে আপনার মনে হবে, আসলেই বোঝার কিছুই নাই, সম্পূর্ণ আকাশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে জিনিসগুলো! অঙ্কের হাজারটা জিলাপির প্যাঁচের মধ্যে ফিজিক্স হারিয়ে ফেলে নিজের সত্তাকে। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে জানার বদলে আমরা কিছু দুর্বোধ্য সমীকরণ গলাধঃকরণ করে নিই। "অমুক সমীকরণের জন্য তমুক জিনিস ঘটে।" কিন্তু "অমুক সমীকরণ" টা আসলো কোত্থেকে? এটা কেন, কীভাবে কাজ করে? এসব প্রশ্ন হয়ত এক-দুই সেমিস্টারের "ছোট" কোর্সে কাভার করা সম্ভব হয়না।
আবার শুধু কী কেন কীভাবে হচ্ছে সেটা বুঝে বসে থাকলেও চলবেনা। ক্যালকুলেশন করা তো লাগবেই! নাহলে তো থিওরী কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ঘটনা একেবারে নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করা যাবেনা! যেমন ধরেন, আমি ম��াকর্ষের তত্ত্ব দিলাম - মহাকর্ষ বল দূরত্ব বাড়লে কমে, দূরত্ব কমলে বাড়ে। কিন্তু কত বাড়ে কমে না জানলে আমি বুঝব কীভাবে যে পৃথিবী থেকে ঠিক কত বেগে রকেট মারলে সেটা আর গ্র্যাভিটির টানে মাটিতে ধপাস করে পড়ে যাবেনা?
ফিজিক্স ভালভাবে শেখার জন্য তাই যেমন দরকার নিখাদ ক্যালকুলেশন, তেমনি অঙ্কের মারপ্যাঁচের আড়ালের কী কলকাঠি নড়ছে, সে কাহিনীও জানা দরকার - তাহলেই নলেজটা হবে পাক্কা। আগেই বলেছি, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ওপর এরকম বই হয়ত কমই আছে। গত বছর পাঁচেক ধরে বহু টেক্সট আর পপ-সায়েন্স বই পড়েও এরকম একটা বই পাইনি যেটায় অংক করে নিখাদ নিখুঁত হিসেবও দেখাচ্ছে, আবার পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে সেটাও বলছে। আর বলাই বাহুল্য, বাংলায় তো নেইই! তার ওপর প্রায় সব বই এক্কেবারে (রসালো)^-1! অপূর্ব সুন্দরী রমনীকে চুল ছেঁটে দিয়ে সারা গায়ে কাদা মেখে পাত্রপক্ষের বাসায় নিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা!
এই বইটায় নাঈম ভাই তাঁর সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন গল্পে গল্পে কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখানোর। পর্দার সামনের গণিতের কারুকার্যও যেমন আছে, তেমনি পর্দার পেছনের গল্পও আছে। প্ল্যাংকের আলুর বস্তার গল্প দিয়ে শুরু করে, রাদারফোর্ডের নোবেল জিতার কোচিং সেন্টার, ফাইনম্যানের টাইম মেশিন, শ্রোডিঙ্গারের পার্ভার্শন থুক্কু ইকুয়েশন ইত্যাদি আরও অনেক গল্প। আর একেবারে গরম গরম হট নিউজের মধ্যে পাচ্ছেন (ম্যাক্সিমাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইতেই থাকেনা আরকি :p), যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বেল'স ইনইকুয়ালিটি ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভাইয়ার ট্রেডমার্ক সাহিত্যিক ঢঙে রসের হাঁড়িটাও প্রায় জমে উঠেছে। আর সাথে আছে বেরঙের (রঙ নাই 🤫) শত শত, স্যরি দশক দশক ছবি (যার অনেকগুলোই আবার আমার আঁকা 😛)। পড়তে পড়তে যে বোরড হবে সে হয় সন্ন্যাসী🙄, নাহয় ভূত 👻
যাইহোক, বইটার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সবাই কিনবেন কিন্তু!
সাধারণত আমি রিভিউ টিভিউ এ খুবই কাঁচা। আর বিজ্ঞানের সব বই-ই আমার ভালো লাগে তাই রেটিং দিতেও কনফিউসড হয়ে যাই। যাই হোক যেই বইটা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো তা হলো - "চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স", বইটি নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়ের লিখা। রেটিং দিতে কনফিউসড আগেই বলেছি তার পরেও বইটা পড়ার পরে পারসোনাল যদি রেটিং দেই তবে আমার রেটিং হবে -
রেটিংঃ ৯/১০ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৩৫ কেন ১০ এর মধ্যে ৯? একটা কথাই বলবো বাংলা ভাষায় পদার্থ বিজ্ঞানের কোয়ান্টাম জগত সম্পর্কে এতো প্রাঞ্জল তো বোধগম্য এর থেকে বেটার একটি বই দেখান আমাকে!
এই বইটা কেনার প্রতি আগ্রহ জাগে তার পূর্বলিখিত একটি বই " বিজ্ঞানে অজ্ঞান" (যদিও নামটা কিছুটা ভিন্ন) বইটি পড়ে। সেই বইটার প্রতিটা অধ্যায় আমাকে টেনেছিলো। আমি অনেককে সেই বইটা দিয়েছিলাম পড়তে৷ কারণ বইটা একটা বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতা ক্রিয়েট করতে সক্ষম। এছাড়াও লেখকের গ্রুপ "ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান" এ তার চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কিছু পোষ্ট ও অধ্যায়ের ছোট ছোট কিছু পোষ্ট দেখে বইটা কিনতে আগ্রহী হয়েছিলাম। বইটা কিনেছিলাম ফেব্রুয়ারিতে, আর বইটা পড়ে শেষ করেছি জুন মাসে মেবি। আমি একটানা পড়ে যেতে পারিনা। তাই দুই একটা করে চ্যাপ্টার পড়ি সেগুলা থেকে যা নতুন তথ্য পাই সেগুলো পরবর্তীতে গুগলে একটু ঘাটাঘাটি করি। তাই সময় লেগে যায়। আর সত্যি বলতে আমি পারসোনালি মনে করি এই টাইপের বইগুলো সময় নিয়েই পড়া উচিত। এগুলো তো উপন্যাস না যে ঝাড়া পড়ে গেলাম। এগুলোর প্রতিটা জিনিস বুঝার সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত ঘাটাঘাটির জন্য সময়ের দরকার।
বইটিতে শ্রোডিঙ্গারের ইকুয়েশন, ওয়েভ পার্টিকেল ডুয়ালিটি, ফিল্ড কি, ওয়েভ ফাংশান, পলির নীতি বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে বোধগম্য ভাষার ব্যাখ্যা করা হয়েছে সাথে গ্রাফ তৈরি করেও দেখানো হয়েছে তা প্রশংসনীয়। আরেকটা কথা হচ্ছে আমি এই বইটা পড়েও কোয়ান্টাম টানেলিং সমন্ধে ভালোভাবে বুঝতে পারলাম না।যদিও তা সহজে বুঝাতে অনেক সমীকরণ, গ্রাফ আঁকা হয়েছিলো। (আমি গণিতে কাঁচা) হয়তো কোয়ান্টাম টানেলিং জিনিসটা কঠিন। আরও পড়া লাগবে।
বিভিন্ন থিওরী থেকে আসা মাল্টিভার্স সমন্ধেও অনেক কিছু জানতে পারলাম। ওভারঅল বইটি বাংলাদেশি স্টুডেন্ট দের জন্য একটা মাস্টারপিস বলা যায়। বইটিকে অনেকে পপ সাইন্সের বই বলে আখ্যায়িত করেছেন, যদিও আমি পারসোনালি একে পপ সাইন্সের বই ভাবিনা। পপ সাইন্সের বই হিসেবে উদাহরণ দিতে পারি নিল ডিগ্র্যাস টাইসনের "অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পিপল ইন অ্যা হারি" এবার আপনারা দুটো বইয়ের মধ্যে ডিফারেন্স বের করুন। জানি এখন বলবেন টাইসনের বইটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর না! হুম এটা সত্য। কিন্তু আমি বইটার এইজন্য বললাম যে বইটা পড়লে পপসাইন্স কি তা অনন্ত বুঝতে পারবেন। যাই হোক আগেই বলেছি রিভিউ টিভিউ এ আমি অভ্যস্ত না তাই বেশি কথা বলে রিডার দের পেইন দিতে চাইনা। আর হুম লেখকের পরবর্তী বই জেনারেল রিলেটিভিটি, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরির উপর বেস করে হবে হয়তো। বইগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
নাঈম ভাইয়ের লেখা মানেই ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন কিছু! . তার রচিত কোনো বই যখন হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করি, একই সাথে ভালো লাগে, আবার খারাপও লাগে। ভালো লাগে এজন্য যে, বইগুলো সহজ ভাষায় রচিত, প্রতিটা টপিক পানির মতো সহজ করে বুঝিয়ে দেন তিনি। বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও যেকেউ তার বইগুলো পড়ে আনন্দ পাবেন, এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। . নাঈম ভাইয়ের লেখা পড়ে খারাপ লাগার কারণ, তার বইগুলো আমি হাতে পেয়েছি মাত্র ১ বছর আগে। আমার খুব আফসোস হয়, এমন বই যদি আরো দশটা বছর আগে পেতাম, তাহলে আজ হয়তো আমার জ্ঞানের পরিধি আরো অনেক বেশি থাকত! প্রতি বছর আমাদের দেশের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আমার মতে, এর প্রধানতম কারণ, বিজ্ঞানের পাঠ্যবইগুলো লেখা হয় কাঠখোট্টা টাইপের বাংলারূপী হিব্রু ভাষায়। এসব বই পড়ে বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হওয়া তো দূরের কথা, বিজ্ঞানের আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যায়! . বিজ্ঞানের প্রতি যাদের ভালোবাসা ও আগ্রহ রয়েছে, বিজ্ঞান নিয়ে যারা পড়াশোনা করতে চান, তাদের জন্য নাঈম ভাইয়ের বইগুলো বন্ধু হয়ে পাশে হয়ে পাশে দাঁড়াবে সবসময়, এ নিশ্চয়তা আপনাকে দিতে পারি। কিছুদিন আগে তার লেখা ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ বইটা পড়ে শেষ করেছি আমি। এত চমৎকার একটা বই সম্পর্কে কিছু যদি না বলি, তবে অন্তরে একটা অতৃপ্তি রয়ে যাবে। . বইটা খুলতেই প্রথম চোখে পড়েছে হৃদয়-ছুঁয়ে-যাওয়া এক উৎসর্গপত্র। লেখক তার প্রিয় নানিকে নিয়ে লিখেছেন, যিনি পড়াশোনা করেছেন ম্যাট্রিক পর্যন্ত। খেলনার বদলে শিশুর হাতে বল তুলে দিয়ে বলেছেন, আমাদের পৃথিবী দেখতে এই বলটির মতো। পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারদিকে... বোঝাই যাচ্ছে, লেখক নাঈম ভাইয়ের বিজ্ঞানচর্চার পেছনে এই মহিয়সী নারীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। . এবার আসি মূল কথায়। পুরো বইটি গড়ে উঠেছে গল্পের ছলে সহজ সাবলীল সুন্দর ভাষায়। পরমাণু, ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, কণা, তরঙ্গ, ভরবেগ, কৌণিক বেগ, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, গাণিতিক সমীকরণ ইত্যাদি হাজারো বৈজ্ঞানিক আলোচনায় ভরপুর। সেই সাথে প্রতিটি পাতায় দেখা মিলবে বড় বড় বিজ্ঞানীদের জীবনে ঘ���ে যাওয়া মজার মজার গল্প। খুঁজে পাবেন আক্কাস আলী, বক্কর ভাই আর জসিম মিয়াকে, যারা আপনাকে ক্ষণে ক্ষণে বিনোদনে মাতিয়ে রাখবে। . লেখাটিকে আর বড় করছি না। চাইলে এ বইটি নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো মানুষজন বেশি বড় লেখা পড়তে চায় না। যাই হোক, লেখাটি শেষ করছি নাঈম ভাইয়ের একটি গল্প দিয়ে— . নাঈম ভাই তার ছাত্রজীবনে কখনো কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হননি। কোনো প্রাইভেট টিউটরের কাছেও পড়েননি। এমনকি তিনি গাইডবইও ব্যবহার করতেন না। সবসময় চেষ্টা করতেন নিজে নিজে অঙ্ক করতে। যদি কখনো বাধ্য হয়ে গাইডবইয়ের সাহায্য নিতে হতো, তখন তিনি আফসোস করে বলতেন, ইশ, এই অঙ্কটি আজ আমার হতে পারত! . তাই বাঁচতে হলে ভাবতে হবে। বিজ্ঞান হোক আমাদের পথচলার সাথি। বিজ্ঞান পড়ুন, বিজ্ঞান বুঝুন। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে ভালো রাখুন।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সুবিশাল রাজ্যে বেশ উঁকি দিয়েছি।মানে বিভিন্ন আর্টিকেল,সিরিজ পড়েছি।আর“চা-কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স”- বইয়ের মাধ্যমে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মহাসমুদ্রে ঝাপ দিয়েছি।নামের সাথে আলোচনার একদম মিল পেয়েছি।
প্রথমত,উপস্থাপন কৌশল আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।বেশ মজা করে,আকর্ষণীয় করে বোঝানো হয়েছে।নরমালি,আপনাকে প্রথমেই সবাই বলবে -এটা খুবই কঠিন,পারবা তো?এইসব নেগেটিভ কথা। আর লেখক গিয়েছেন এদের প্যারালালে।তিনি দেখিয়েছেন, খুব সাবলীলভাবে কোয়ান্টাম জগতে বিচরণ সম্ভব।আমাদের সাথে থাকবে আক্কাস আলী,বক্কর ভাই।লেখার ভাষা সহজেই বোধগম্য বলে পড়ে তৃপ্তি পেয়েছি।
লেখক অনেক জায়গাতে, ১০ তলা বিল্ডিংয়ের ৮ তলা পর্যন্ত ওঠা শিখিয়ে বাকিটা আমাদের নিজে করতে বলেছেন ”বাঁচতে হলে ভাবতে হবে"-উক্তির মাধ্যমে।এসব সমাধান করেই বোঝা যাবে, আমি কি আদৌ ক্লিয়ার করেছি বিষয়টা?
এবার আসি মূল বিষয়ে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বিষয়গুলোর জন্ম কীভাবে,বিজ্ঞানীদের নিয়ে কথা-এসব থাকায় আগ্রহ টা ওখানেই সেট হয়ে যায়।এরপর আপনাকে ঘোরানো হবে,রহস্যময় এক জগতে।যেখানে,জে.জে.টমসন আর রাদারফোর্ড এর অবদানে পরমাণুর প্রাথমিক ও চিত্তাকর্ষক ধারণা জানবো। না না,এটা পপ সাইন্সের বই না।এখানে পিওর সাইন্স টা দারুণভাবে বোঝানো হয়েছে।ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের দারুণ কিছু তথ্য জানবো এখানে।নীলস বোরের কৌণিক ভরবেগের চমৎকার সূত্র দেখবো।সেই সাথে তার বর্ণালির ব্যখ্যা পাবো। এখানে,মজার একটা বিষয় আছে-ভরের জন্ম। কণার অবস্থান,কণা তরঙ্গ দ্বৈততা- ভালোভাবে ব্যখ্যা করা আছে।
পাবেন,ফাইনম্যানের টাইম মেশিন।খুব খুব বিখ্যাত শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণের আদ্যোপান্ত আছে। এরপর সেই অসীম লেভেলের কৌতুহল সৃষ্টিকারী মাল্টিভার্স আর সুপার ডিটারমিনিজন।কয়েকটা টপিক উল্লেখ করলাম।আরও ইন্টারেস্টিং টপিক্র ভরপুর বই।
বইটা একদম মন ভালো করার মতো একটা বই।আমি স্যাটিসফাইড। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারেন,আপনার চারিদিকেই রহস্যের মায়াজালে ঘেরা।
আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে,মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি জিনিস বুঝে বুঝে পড়া। আমি কয়েকটা কঠিন জিনিস ২ বার পড়াতেই মেইন থিম ধরে ফেলেছি।একদম ই কঠিক কিছু না।খাতায় করে করে সলভ করার ও শেখার ট্রাই করবেন।তাহলে,নিজের খুঁটিনাটি ভুল ধরা পড়বে।
সর্বশেষে,লেখকের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। আকুল আবেদন থাকবে নেক্সট মেলায় জেনারেল রিলেটিভিটি বের করার।ওহ,,হ্যাঁ! গুরুত্বপূর্ণ কথা। একদম নতুন সাইন দেখলে ওই পেইজ টা ঠিকমতো খুঁজে দেখবেন;বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। বই টা একদম পর্যায়ক্রমে পড়ার অনুরোধ থাকবে।
বইয়ের নাম: চা কফি ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স (নাঈম হোসেন ফারুকী) পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৩৫ Genre:Science চলে গেলাম ছোটদের জগতে। আমার সামনে রয়েছে একটা হাইড্রোজেন পরমাণু। এর চারপাশে দেখতে পাচ্ছি সম্ভাবনার মেঘ। দেখতে গেলে সেই ইলেকট্রনের অবস্থানের তরঙ্গ কল্যাপস করবে, ভরবেগের তরঙ্গ হয়ে পড়বে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কোন এক দৈব ভাবে ঈশ্বর বিজ্ঞানীদের সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন, তাই তো কোন জ্যোতিষীর সবসময় প্রতারণার সাহায্য নিতে হয় ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। বিড়াল জীবিত ও মৃতের সুপারপজিশন থাকতে পারে। অর্থাৎ এই জগতে একটি বিড়াল থাকতে পারে একই সাথে মৃত ও জীবিত। একেক বিজ্ঞানীদের পরমাণুর অভ্যন্তরীণ অবস্থা পরিস্থিতিকে উদঘাটন করতে অদম্য প্রচেষ্টা, প্লাম পুডিং থেকে কোয়ান্টাম মেকানিকাল মডেলের বিবর্তনের কাহিনী রচিত হয়েছে এই গ্রন্থে। আক্কাস আলীর আলুর বস্তার উপমায় কিভাবে বস্তুর বিকিরণ এর পরীক্ষালব্ধ মানের সাথে মিলে যাওয়া ম্যাক্স প্লাংকের বর্ণনা তত্ত্ব প্রদান করেন তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে অত্যন্ত সাবলীল ও সুচারুরূপে।এইচ কাট এর এহেন নামের কারণ সর্বপ্রথম জেনেছি এই বই থেকেই। শুধুমাত্র কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও পাতলা স্বর্ণের পাত দিয়ে কিভাবে রাদারফোর্ড প্রথম বের করলেন একটি অস্থায়ী ত্রিমাত্রিক পরমাণুর মডেল যার মধ্যে ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করে ঘুরতে ঘুরতে নিউক্লিয়াসের পতিত হয় হওয়ার মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ পরমাণু মডেল হিসেবে পরিগণিত হয় তা বর্ণনা করা হয়েছে। তারপরে আসে বোরের পরমাণু মডেল যাতে প্রথম কোয়ান্টাম নম্বর সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়। শক্তির পার্থক্য হিসাব মিলাতে গিয়ে নিলস বোর পর এমন এক কাজ করেছেন যাতে পরবর্তীতে ডি ব্রগলি ব্যাখ্যা করেন। এই বইয়ে লেখক ব্যাখ্যা করেছেন ভয়ঙ্কর সব পরীক্ষার। এই বইয়ে লেখক চমৎকারভাবে উল্লেখ করেছেন ইয়াং এর দ্বী চির পরীক্ষা ও আইনস্টাইনের ফটোইলেকট্রিক পরীক্ষা যা বিজ্ঞানীদের মনের জায়গায় সন্দেহ গড়ে তোলে যে আলো আসলে তরঙ্গ নাকি কণা। এই বইয়ে অনিশ্চয়তার তত্ত্বকে গাণিতিকভাবে বোঝানো হয়েছে। বোজন ও ফার্মিয়নএর ধর্মকেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ গ্রন্থে লেখক দেখিয়েছেন কণারা একে অপরের সাথে আলোর চেয়েও বেশি বেগে যোগাযোগ করে। কোয়ান্টাম স্টেটকে কাজে লাগিয়ে আমরা দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড কে ভেঙ্গে ফেলতে পারি। আবার একই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড জেনারেট করতে পারি।এই বইয়ের একটি বিশেষ গুণ রয়েছে সেটা হলো, এই বই পাঠককে ভাবতে শেখায়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখার জন্য এই বইটি খুবই প্রয়োজনীয়।
একবার গ্যালিলিও বলেছিলেন" Mathematics is the language with which God has written the universe." তাই আপনি যদি মহাবিশ্বকে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যে স্কেলেই বুঝতে চান গনিত আপনার জন্য অপরিহার্য এবং এটি আপনাকে বিষয়বস্তুর গভীরে নিয়ে যাবে।হয়তো সেরকম মনে করেই নাঈম হোসেন ফারুকী 'চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স' বইটি লিখেছিলেন।তার সে কাজে সে অনেকখানিই সফল বলা চলে।কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক বিষয় লেখক এখানে গণি��ের মাধ্যমে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।অনেকে হয়তো সমীকরণ এড়িয়ে চলেন কিন্তু আপনি ব্যাসিক কিছু জিনিস বুঝলে হলে সাবলীলভাবেই বইটি পড়তে পারবেন যেখানে আপনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের টেক্সবুকের দুর্বোধ্য গণিত প্রায় একটুও বুঝতে পারবেননা। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্ম কীভাবে হলো তা থেকে শুরু করে আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অনেক বিষয় এখানে বর্ণিত হয়েছে।আর বইটিতে প্রচুর ইনফরমেশন রয়েছে এবং তার অনেক বড় পরিসরে ব্যাখা রয়েছে।তবে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো আপনি হুট করেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে যেতে পারবেননা।অনেক বিষয়ে লেখক ভাবার সুযোগ দিয়েছেন যা আমার মতে সৃজনশীলতাকে শাণিত করবে।তবে আসলে প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায়ই আসলে চাইলে আপনি অনেক ভাবতে পারবেন যেটা লেখক আলাদা করে উল্লেখ করেননি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স যে কতটা অদ্ভুত আপনি জানতে পারবেন।আমরা নাকি নিজেরাই ঠিক করি আমরা কি দেখবো।দেখার আগ পর্যন্ত নাকি সম্ভাব্য সব অবস্থানেই কণাকে পাওয়া যাবে।কণারা নাকি আলোর চেয়ে বেশি বেগে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারে।এছাড়াও অনেক অদ্ভুত বিষয়ের সম্মুখীন হবেন আপনি আর গণিত সহ তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাবেন এবং তা ভালোভাবে বোঝার জন্য আপনাকে খাতা কলম সহ বসতে হবে। তাই পড়তে একটি গণিতবিহীন বই থেকে সময় বেশি লাগলেও বোরিং হবেননা আশা করি।সবচেয়ে বড় কথা হলো এই বইটি আমার মত অধমকেও আশা দেয়।সব সুন্দরী রমণীরা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি দেখতে গেলেই ভালোবাসার ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স করে আর এমন এক স্টেটে দাঁড়ায় যে স্টেটে ভালোবাসার বিস্তার শূন্য।সবচেয়ে বড় কথা কোন ইউনিভার্সে এমা ওয়াটসন আমার সহধর্মিণী আর প্রিন্সেস ডায়ানা হলো তার সতীন।যদিও সেগুলোতে যাওয়ার এখনো কোন প্রযুক্তিই আমাদের হাতে আসেনি তবে কথায় আছে "আশায় বাচেঁ চাষা"।হ্যাপি রিডিং!