কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্তৃক ২০০২ সালে গুজরাটে কয়েক মাস ব্যাপী চলা মুসলিম গণহত্যা ও মর্মান্তিক নির্যাতনের এক অনন্য দলিল গুজরাট ফাইলস।
দীর্ঘ আট মাস যাবত এক অনুসন্ধানের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব। এই জীবনবাজী রাখা অনুসন্ধানের ফল “গুজরাট ফাইলস”। অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু ছিল গুজরাট দাঙ্গা, সাজানো বন্দুকযুদ্ধে নিরীহ মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে হত্যা এবং গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পান্ডিয়ার হত্যার রহস্য। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সমূহ সম্ভাবনা স্বত্বেও এই অনুসন্ধান অব্যাহত রেখে তিনি উদর ফুরে বের করে এনেছেন অসংখ্য বিস্ময়কর তথ্য ।
মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে (জ্বী হ্যা, ঠিক লিখেছি) জনপরিচিত মুসলিম মহিলা(!!!) সাংবাদিক হয়েও বেশ ভূষা এবং নাম বদলে ভারতের মত দেশে পুলিশ প্রধান, রাজনৈতিক নেতা এমনকি মোদীর সাক্ষাৎকার নেবার নামে মৃত্যুঝুকি নিয়ে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাংগার ইস্যুতে যে স্টিং অপারেশন তিনি করেছেন তার প্রভাব এবং পরিধি ব্যাপক। বইটি পড়লে খুব সহজেই বোঝা যায় রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য মোদি তথা সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যাবহার করে ধর্মভিত্তিক দাংগা বাধিয়ে সেটা চলতে দিয়ে কত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর নীলনকশা করেছিলেন। এই কঠিন সত্য তুলে ধরবার জন্যে বইটিকে ৪তারা দিলাম। আমি অনুবাদ পড়েছি, অনুবাদের মান মোটামুটি, আরেকটু সাবলিল হলে আরো ভাল হত।
গুজরাট ফাইলস-রানা আইয়ুব। রানা আইয়ুব একজন মহিলা সাংবাদিক। যিনি নিজের জীবনের বাজি রেখে স্পাই সেজে কাজ করেছেন গুজরাটের নানা মহলের অপকর্মের ফিরিস্তি উদঘাটনে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছদ্মনামে অন্য কেউ সেজে বেঁচে থাকার কষ্ট শেষ পর্যন্ত তার কাজকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে কিন্তু ক্ষমতার দাপটে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। . বই পড়ে জানা যাবে আজকের ভারতের বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী মোদির পেছনের গল্প। জানা যাবে, -গুজরাটের মহিলাদের কাছে ‘সেক্স সিম্বল’ খ্যাত এই মোদির অপকর্ম। -সরকারের কাছে বিকিয়ে যাওয়া প্রশাসন এর কথা। -তার ২০০২ সালে করা গুজরাটি মুসলমান নিধনের কথা। -সাধারণ ধর্মান্ধ উগ্র হিন্দুদের প্রভাবিত করে ক্ষমতায় জেঁকে বসার কথা। -গুজরাটে মুসলিম হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়ে কিভাবে ক্ষমতার চূড়ায় উঠতে থাকে কসাই মোদি তার কথা। -ক্ষমতালোভী কসাই মোদি কিভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী খ্যাতনামা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হারেন পান্ডিয়ার খুন করিয়ে গদি নিশ্চিত করে তার কথা। -তার সাথে উগ্র হিন্দু নেতা অমিত শাহ এর মোদির সাথে মিলে সন্ত্রাসী কাজ করার কথা। -বর্তমান হিন্দুত্ববাদের উত্থানের নেতৃত্বে থাকা আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ(ইসকন) কতটা ইসলাম বিদ্বেষী এবং কিভাবে অন্যায় ও পাপাচারের রাজ্য কায়েমে কাজ করছে সে সম্পর্কের কথা।
অবাক করার মতো বিষয় হলো এতো কম বয়সের মহিলা সাংবাদিক তাও আবার মুসলিম মহিলা, সে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে পুলিশ এবং ক্ষমতাশীল নেতাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতো তথ্য সংগ্রহ করেছে; কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি এবং গুজরাটের অপকর্মের বিষয়ে খুবই পরিস্কার তথ্য তুলে ধরেছেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব নামের এই সাহসি নারী।
গুজরাট দাঙ্গার ভেতরের গল্প এবং নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের উত্থান সম্পর্কে জানার জন্য দারুণ একটি বই। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের রাজনৈতিক জীবনের অন্ধকার গলির গল্পগুলো দারুণভাবে সামনে এনেছেন রানা আইয়ুব। কিছু জায়গায় ভুল আছে, এরপরও অনুবাদ ভালো লেগেছে।