Jump to ratings and reviews
Rate this book

পুতুলনাচের ইতিকথা

Rate this book
পুতুলনাচের ইতিকথা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় উপন্যাস এবং চতুর্থ মুদ্রিত গ্রন্থ। উপন্যাসটি ভারতবর্ষ পত্রিকায় বাংলা ১৩৪১ সালের পৌষ থেকে ১৩৪২ সালের অগ্রহায়ণ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়।

214 pages, Paperback

First published May 22, 1936

294 people are currently reading
4150 people want to read

About the author

Manik Bandopadhyay

129 books493 followers
Manik Bandopadhyay (Bengali: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bengali novelist and is considered one of the leading lights of modern Bangla fiction. During a short lifespan of forty-eight years, plagued simultaneously by illness and financial crisis, he produced 36 novels and 177 short-stories. His important works include Padma Nadir Majhi (The Boatman on The River Padma, 1936) and Putul Nacher Itikatha (The Puppet's Tale, 1936), Shahartali (The Suburbia, 1941) and Chatushkone (The Quadrilateral, 1948).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
2,341 (58%)
4 stars
1,256 (31%)
3 stars
309 (7%)
2 stars
49 (1%)
1 star
21 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 384 reviews
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
August 28, 2017
জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’পড়ে যে বিপন্ন বিস্ময়ের বোধ আমার মনের মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল এই বইটাও তেমনি অনুভূতি জাগিয়েছিল। নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর উপর যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ হারাই তখন মনে হয় আমরা পুতুলই বৈকি। অজানা কোন এক সূতার টানে নেচে যাই, অভিনয় করে যাই জীবনের মঞ্চে।

অদ্ভুত রঙ্গমঞ্চ আমাদের এ জীবন।প্রাকৃতিক নির্বাচনের এই জগতে প্রতিটি মানুষের স্বতন্ত্র জীবন বৈচিত্র্য, নর-নারীর এক অমোঘ আকর্ষণ,যুগ যুগ ধরে টিকে থাকা ভুয়োদর্শনের উপর অন্ধবিশ্বাস,সার্থক জীবনের নামে এক মরীচিকার পিছে ছুটে চলা এইসব মিলিয়ে ফুলে-ফেঁপে ওঠা জীবনকে সঙ্গী করে আমাদের বেঁচে থাকা।বইটিতে মানিক বন্দোপাধ্যায় বলেছেন,এক গ্রাম্য যাপিত-জীবনের গল্প।আপাত দৃষ্টিতে যাকে বৈচিত্র্যহীন,সঙ্কীর্ণ স্বকেন্দ্রিক বলে ভুল হয়।কিন্তু মানিক দেখিয়েছেন এর মাঝেও আছে কত বৈচিত্র্য, কত রহস্য,ক্ষুদ্র-বৃহৎ ঘটনা প্রবাহের কত বিশাল প্রভাব সেখানকার মানুষগুলোর জীবনে।তারা বাস করে এক ঘোর লাগা জীবনে।সেখানে নিজেদের জীবন কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা।নিজেদের সৃষ্ট সুতোর জালে নিজেরাই আটকে পড়ে অনেকটা পুতুলের মত নেচে যায় তারা অদৃশ্য কোন শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।

শশী নিজের সাথেই দ্বন্দ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পরাজিত এক সত্তা।হৃদয়,আবেগের বশবর্তী হয়েও সে চায় যুক্তি দ্বারা জীবন চালনা করতে।তাই সে বারবার নিজের কাছে নিজেই পরাজিত হয়।কুসুম শশীকে ভালোবাসে।সামাজিক বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেও শশীকে প্রেম নিবেদন করে নানা উপায়ে।কিন্তু শশীর বিক্ষিপ্ত মনের অস্থিরতা তার অনুভূভুতিগুলোকে অবহেলা করে।মৃত্যু ঘটে কুসুমের হৃদয়ের।প্রকৃতপক্ষে মানবসৃষ্ট এই সঙ্কীর্ণ সমাজে আমরা অনেকেই শশীর মতই বেঁচে থাকি।নিজের আবেগকে জোর করে অবদমিত করি সামজিকতা নামক এক দুর্ভেদ্য যুক্তির জালে জড়িয়ে।



ঘোর লাগিয়েছে কুমুদের বোহেমিয়ান জীবনধারা।অনর্থক চাওয়া-পাওয়ার জালে আটকে পড়া এ জীবনকে এক চমৎকার অর্থহীন অর্থ দিয়ে ফেলেছে সে।প্রত্যাশার পাহাড় অবহেলা করে বেঁচে থাকাকে রূপ দিয়েছে এক গতিশীল কাব্যে,এক ছন্নছাড়া জাদুবাস্তবতায়।জীবন মানে তার কাছে শুধু কোন কিছুর মোহে ছুটে বেড়ানো নয়,বরং নির্মোহ এক প্রত্যাশায় জীবনকেই ছুটিয়ে বেড়ানো।
যাদবের ঘটনার মধ্য দিয়ে মানিক আমাদের জানিয়ে গেছেন সত্যের মোড়কে ঢাকা এক ভয়াবহ মিথ্যের গল্প। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত থাকবার আশায় স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে ধন্বন্তরি পুরুষ! যুগ যুগ ধরে হয়তোবা এভাবেই টিকে আছে আপাত দৃষ্টিতে পাপ-পতনের হাত থেকে জীবনকে বাঁচিয়ে চলার নামে জীবনকে সঙ্কীর্ণ করে ফেলা কোন ভুয়োদর্শন। “মিথ্যারও হয়তোবা মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করে দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্য সত্য হয়েও থাকতে পারে মিথ্যা।" এই লাইনগুলো আমার ভিতরটাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। প্রশ্ন জাগায়!

গোপালের চরিত্র আমাদের দেখিয়েছে ভয়াবহ স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক এক মানুষের জীবনযাত্রাকে।যারা সুখ খোঁজে অর্থ-সম্পদে,ক্ষমতার প্রকাশে।আর চায় এসবের মাঝেই তাদের অস্তিত্বকে অমর করতে।

নানা বিচিত্র চরিত্রের জীবনধারার মাঝে আরো আছে মতির মত অপরিণত,আবেগী নারীর গল্পকথা, পরাণের মত উত্তাপহীন জীবনমুখী চরিত্র,আছে ভালোবাসার ভুল মায়ায় জড়ানো জয়ার জীবনকাহিনীও।

জীবনের নানা বিচিত্র ভাবপ্রবণতা,নানা শ্রেণী ও সমাজের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের গল্পগাঁথা,যুক্তি দিয়ে জীবন চালাতে গিয়ে হৃদয়ের মৃত্যু এসবই মানিক অত্যন্ত মুন্সীয়ানার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন এই কালজয়ী উপন্যাসে। পৃথিবীর অন্য কোথাও হয়তোবা অন্য প্রেক্ষাপটেই মঞ্চস্থ হয় এই নাটক। কুশীলব আলাদা হলেও যার ঘটনার প্রবাহ একইদিকে।

এই বই মনের এক কোণে কেন যেন একটা হাহাকারের সুর বাজিয়ে দেয়। আসলেই কি আমরা তাহলে পুতুল?নিয়তির অদৃশ্য শক্তির দ্বারা চালিত এক অনিবার্য স্রোতের টানে ভেসে চলেছি?নাকি আমাদের ভয়,জীবন সম্পর্কে অজ্ঞতা,বিকাশের পথে নিজেদেরই সৃষ্ট অন্তরায় এসবই আমাদের পুতুল বানিয়ে নাচাচ্ছে? সমাজ,সংসার সব কি আসলেই মিছে?জীবনের ভার বয়ে নিরন্তর শুধু শুন্যতার দিকেই ছুটে চলা?নাকি ক্ষুদ্র এ জীবনকে নিজের মত করে স্বার্থপর বানিয়ে বেঁচে থাকা?

ফরেস্ট গাম্পের শেষ দৃশ্যের কথাগুলো মাথায় গেঁথে যায় শেষমেশ। “May be we each have a destiny or if we are all just floating around accidental like on a breeze. Maybe both happening at the same time!”


হয়তোবা জীবন মানেই এভাবে বিচিত্র ভাবে, খাপছাড়া ভাবে বেঁচে থাকা।জীবনকে শ্রদ্ধা করে তাকে আনন্দময় করে তুলে সবার সাথে যুক্ত হয়ে,বাঁচার মত করে বেঁচে থাকা।এটাই হয়তো আমাদের জীবন নামের পুতুল নাচের ইতিকথা
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
July 11, 2015
শশী-কুসুম, মতি-কুমুদ, যাদব, সেনদিদি, গোপালদের নিয়ে মানিক পুতুল নাচালেন, পাঠকও সুতো ধরে নড়ে গেলো সাথে। বিস্ময়কর যে এতো স্বল্পবাক হয়েও মানিক একই সাথে এতোগুলো ভিন্ন চরিত্রের অন্তর্লোকেও কীভাবে প্রবেশ করলেন!
Profile Image for Rifat.
501 reviews330 followers
January 26, 2021
স্কুলে থাকতে বাংলা বইয়ের লেখক পরিচিতি অংশে যখনই এই বইটির নাম দেখতাম তখন ভাবতাম গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের বৃত্তান্ত নিয়ে এই পুতুলনাচের ইতিকথা। মনে মনে বলতাম পুতুল নাচ নিয়ে বইও লিখছে! পরে শুনলাম এটা উপন্যাস। আবার এই বইয়ের সাথে যাত্রা শুরু হওয়ার পর ভুল ভাঙলো, পুতুল নাচের কথাই তো বলা! তফাত শুধু এক জায়গাতেই- কাঠের পুতুলের বদলে রক্ত মাংসের জ্যান্ত পুতুল! গ্রামের সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র।

গাওদিয়া গ্রামের বধূ কুসুম, শশী ডাক্তার, শশীর বাবা গোপাল, সেনদিদি,পাগলদিদি, যামিনী কবিরাজ, যাদব, মতি, কুমুদ, কলকাতার জয়াসহ খুঁটিনাটি আরও বেশকিছু চরিত্রের মাধ্যমে কি খেলাটাই দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়!

শশীর নিজের সত্ত্বার সাথে নিজের দ্বিমুখীতা, কুসুমের মন হঠাৎ করে মরুভূমির মতো শুকিয়ে যাওয়া, নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা পরান, গোপালের এমন অদ্ভুত স্বার্থপরতা, গ্রামের কিশোরী মেয়ে মতির হঠাৎ সংসারী হয়ে ওঠা, কুমুদের এমন ভবঘুরে জীবন কিংবা জয়ার সেই ভালোবাসা কি(!) তা আবিষ্কার করার কাহিনী সবকিছুকেই কেন জানি আমার কাছে অনেকটা চেনা-পরিচিত বারবার দেখা ফটো/ছবি জুম করে দেখার মতো মনে হচ্ছিল। এমনি একটা ছবি দেখলে ফোকাসড অবজেক্ট ব্যতীত তেমন কিছু নজরে আসে না, খুব কাছে থেকে কিংবা জুম করে দেখলে আরও কত কি দেখা যায়!


সহজ-সরল গ্রাম্য জীবনভিত্তিক প্লট দেখে অতি সহজ ভাবার কোনো সুযোগ নেই। পিঁপড়ের দল সারি বেঁধে হেঁটে যায়; দূর থেকে মনে হয় স্বাভাবিক বিষয়, কোনো জটিলতা নেই। কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায় ফেরোমন হরমোন নিয়ে কিসব কাহিনী। জীবনানন্দের বাংলার রূপকে বিশেষভাবে দেখার চোখ যেমন আর পাঁচজন মানুষের তেমনটা নেই! তেমনই মানিক বাবুর মতো মনকে কাটাকুটি করার ক্ষমতাও খুব কম মানু্ষের আছে।


এই বইটার নামকরণ ছিল সবচেয়ে সুন্দর। এর থেকে ভালো নাম আর হতে পারতো না! পথ চলতে চলতে মানুষ বিভিন্ন সম্পর্কের জালে আটকে যায় আবার সময়ের ফেরে সেই সম্পর্ক ছি���্ন করেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়। পুতুল নাচ নয়তো কি!?


মানিক বাবুর সাথে আমার তেমন বনে না। কয়েকদিন আগে টুকিটাকি কাজ করতে করতে বইটার অডি���বুক শুনতেছিলাম। আর ভাবতেছিলাম মানিক বাবুর সাথে এবার বন্ধুত্ব হয়ে গেল বোধহয়!😅

বন্ধুত্ব উপলক্ষে ৫ তারা😁

~২৯ ডিসেম্বর, ২০২০
Profile Image for Tiyas.
449 reviews124 followers
May 24, 2024
সার্থক উপন্যাসের সংজ্ঞা বুঝি না। সাহিত্যের ছাত্র তো নই। কীই বা আর পড়লাম জীবনে? তবুও যদি কোনোদিন একান্তই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হই, তাহলে হয়তো চোখ-বুজে 'পুতুলনাচের ইতিকথা'-র নাম বলবো। কেন বলবো, তার সবটা জানি না। তবে এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ, সুলিখিত সামাজিক উপন্যাস, বাংলা সাহিত্যে আর দুটো আছে বলে মনে হয় না। তবুও, পাঁচ-পাঁচটি তারা দেখে, ভ্রু-কুঞ্চিত করার কিছু নেই। পুরোটাই আপেক্ষিক। এমন বইয়ের রেটিং ব্রাত্য রাখতে পারলে বেঁচে যেতাম।

আমার আবার এ জিনিস পড়ার পেছনে কোনো আলাদা গল্প নেই। কোনো শৈশবের ঘটনা, কোনো কলেজ জীবনের অ্যানেকডোট, কোনো পাঠ-ইতিহাস, কিছুই না। মানিক বন্দোপাধ্যায় প্রথম পড়েছি কয়েক বছর আগে। 'দিবারাত্রির কাব্য' দিয়ে হাতেখড়ি। তারপরে 'জননী' দিয়ে হাত পাকানো। এইতো। প্রায় বছরখানেকের ওপর কোনো মানিক পড়া নেই। তবুও, যেন এমনটাই হওয়ার ছিল। কোথাও গিয়ে, যেন আমার মন ক্রমাগত জানান দিয়ে গেছে। তোমার রেহাই নেই। এ জিনিস না পড়ে, তোমার রেহাই নেই।

সত্যিই তো। মাত্র সাতাশ কি আটাশ বছর বয়সে মানিক বন্দোপাধ্যায় যেই দুঃসাহসটি দেখিয়েছিলেন, সেই স্পর্ধারই পূর্ণাঙ্গ ফসল, 'পুতুলনাচের ইতিকথা'। লেখকের ম্যাগনাম ওপাস। বইজুড়ে ব্যতিক্রমী গদ্য, স্বচ্ছ দর্শনবোধ। এমন পরিণত সাহিত্যগুণ। মনের গহীনে নাড়া দিয়ে যায় অচিরেই। পল্লিগ্রাম কেন্দ্রিক উপন্যাস তো কম নেই বাংলায়। তবে এমন আধুনিকতা কি তাতে মেলে? পাওয়া যায়, এমন সংযমী তীক্ষ্ণ সংলাপ? বা ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট?

মজার কথা, বইটা পড়তে গিয়ে আমার চোখ দিয়ে খুব বেশি জল গড়ায়নি। ক্লাসিক উপন্যাস। তায় গ্রাম্য গল্প। চোরা সেন্টিমেন্ট থাকলেও, এতে মোটা-দাগের আবেগী আতিশয্য নেই। এটা দ্রষ্টব্য বটে। এখানেই লেখকের কলমের স্বচ্ছতাকে কুর্নিশ জানানো কর্তব্য। প্যাচপ্যাচে মেলোড্রামা ব্যবহার না করে, স্রেফ মাটিতে কান পেতে যে মাটির গল্প বলা যায়, এটাই বা কজনে পারে? সত্যি করে বলুন তো দেখি, শশীর বয়ানে যাদব ও পাগলদিদির সেই ঘরটির প্রশান্ত বর্ণনা পড়ে, একবারের জন্যও কি ইচ্ছে হয় না, সেখানে বসে দু-দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার? ইচ্ছে হয় না, তালবন মাঝে সেই মাটির টিলাটির উপরে দাড়িয়ে একবারটি হলেও সূর্যাস্ত দেখতে?

তাই তো বলছি। এই উপন্যাসটি পড়ে, হয়তো কান্না পেলো না। তবে মনের অলিন্দে কালবৈশাখী ন্যায় একটা ঝড় বয়ে গেলো। এবং বয়েই চললো। এই ঝড়ের বিরাম নেই। এই ঝড়ে গান বাঁধার নিয়ম , 'আমি কোথাও পাবো তারে...আমার মনের মানুষ যে রে?' এহেন মানব জনমে এমন সুখী কজনই বা হয়, যারা প্রকৃত শান্তির খোঁজ পায়? কুমুদের মত বোহেমিয়ান মানুষেরা হয়তো বা সেই কাঙ্ক্ষিতের খোঁজ পেয়ে থাকে। তবে অপ্রত্যাশিত পিছুটানের আবেগে সেই হিসেবেও গড়মিল দেখা যায়। এই অঙ্কের কোনো বাঁধাধরা হিসেব নেই। মিলিয়ে দেখার গাইড বই নেই কোনো। তাই, এক্স ইকোয়ালস টু শূন্য! বরাবরই।

উপন্যাসটির মূলেই মৃত্যু। সেই প্রথম পৃষ্ঠা থেকে মৃত্যু ছায়ার মতো তাড়িয়ে বেড়ায় পাঠককে। হারু ঘোষের তড়িৎস্পৃষ্ঠ পরিণতি, প্রায় শৈল্পিক দক্ষতায় বর্ণনা করেন মানিক। এগিয়ে দেন, দাবার প্রথম গুটি। শশী। এই উপন্যাসের নায়ক শশী। পাঠকের হয়ে, এই মৃত্যু রুপি অনিবার্যতার সঙ্গে ক্রমাগত দন্ধে লিপ্ত হয় শশী। তার ভেতরে যেন দুটো পৃথিবীর বাস। কি চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব। কি কঠিন অসুখী মন। সে কর্মঠ কারিগর। ওষুধ দিয়ে রোগ সারাতে জানে, কিন্তু মনের খবর বোঝে না। জীবন ও মৃত্যুর কাঁটাতারের মাঝে রোগী ঘাটতে ঘাটতে, সে ভুলেই যায় সে কি চায়। এক টুকরো মনের সন্ধান বোধহয়। তাই বুঝি সে সুধোয়, "শরীর! শরীর! তোমার মন নাই...?"

মন কার নাই, সেই পরিচয় নাহয় তোলা থাক। ভ্রান্ত চাহিদা সকল। কি চাইতে, যে কি হারায় মানুষ। যারা জানেন, তারা জানেন। সহজ সরল গ্রামীণ বাস্তবতায়, সাইকোলজির এ কি সুচারু খেলা, মানিকের লেখা না পড়লে মনে হয় অবিশ্বাস্য। দিনের শেষে এরা সবাই লেখকের হাতেগড়া পুতুল। তারা কোন খাতে বইবে, কোন স্রোতে হবে বিলীয়মান, ঠিক করেন খোদ অদৃষ্ট স্বরূপ লেখকই। উপন্যাসটি পুরুষকেন্দ্রিক হলেও, নারী চরিত্রদের ভিড়ে মুখরিত। মতির কিশোরী উচ্ছলতা, কুসুমের রহস্যঘন আত্মবিশ্বাস, জয়ার বিচূর্ণ প্রত্যয় বা বিন্দুর শহুরে বিষাদ। সবটাই কোন এক রঙিন সুতোর ধূসর গিটে বাঁধা। এ বাধন খোলে, তেমন সাধ্য কার?

শহুরে আবেগে বশবর্তী হয়েও, পাঠক-মন তাই বারংবার ফিরে যায় গাওদিয়ার গ্রাম্য মনজঙ্গলে। কতকটা যেন শশীরই মতন। যেই মাকড়শার জাল ছিড়ে বেরোনোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সে, সেই জালেই ক্রমাগত জড়িয়ে যায় নিষ্ফল আক্রোশে। যেই শহর, যেই রোমান্টিসিজম, যেই চিন্তাধারার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সে স্বপ্ন দেখে এক ভিন্ন ভবিষ্যতের। ক্রমাগত প্রতিকূলতার সমরে, বিষিয়ে যায় তার সমস্তটাই। পিতা, গোপালের সঙ্গে তার অস্থির সম্পর্ক এই বইয়ের অন্যতম শক্তিশালী অংশ। বাপের সাথে সহাবস্থানের উপায় খুঁজে পায় না সে। ভালোবাসা ও অশ্রদ্ধার মিশ্র প্রকোপে চোরাবালী ন্যায় আটকে থাকে গাওদিয়ার বুকে।

কোণঠাসা শশী, কুমুদের মতো শান্তির খোঁজ পায় না। পায় না নিশ্চয়তার আচ্ছাদন। সে তল পায় না কুসুমের তীব্র অভিভূত মনের। হাফিয়ে ওঠে ওষুধের ঝাঁঝালো গন্ধে। বন্ধু বানায়। বন্ধু হারায়। জেকিল ও হাইড প্রকৃতির এক হতাশ উগ্রতা স্থান পায় তার কর্মঠ মনের গভীরে। সে হেরে যায় কী? হয়তো বা। আবার হয়তো বা, আমরাই ভুল। রক্তমাংসের জীবনের সমস্ত সমীকরন স্রেফ হার-জিতের জগদ্দল হিসেবে মাপতে চাওয়াটাই একটা মস্ত বড় ভুল। সত্যিই তো, "মানুষ কি লোহার গড়া, যে চিরকাল সে একরকম থাকবে, বদলাবে না?"

শশী ভিন্ন অন্য কোনো চরিত্র এই গল্পের মূল কান্ডারী হলে, 'পুতুলনাচের ইতিকথা' উপন্যাস হিসেবে নিজের মাত্রা হারাতো। এ এক যোগ্য সমাপতন। সার্থক উপন্যাসের সার্থক নায়ক। তবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বই থেকে কিছুটা হলেও আমার পাওনা বাকি রইল। আপাতত, সেই হিসেবটুকু সঞ্চিত রাখলাম ভবিষ্যতের আমিতে। পরিণত কোনো আতস কাঁচের লেন্সে বাজিয়ে দেখার অনিবার্য অপেক্ষায়। ফিরতে আমাকে হবেই, এই ভবিতব্য। আজকের আমি, আর কালকে রইব না। ফিরবে অন্য কেউ। সময়ের সাথে, এই বইটিও হয়তো বদলে যাবে।

সেই ভালো। বদলে যাকে। বদলই নিয়ম।

(৫/৫ || আগস্ট, ২০২৩)
Profile Image for Akash.
446 reviews147 followers
May 18, 2024
আমরা যত কিছু চিন্তা করি না কেন, আমরা সারাজীবন একা একা থাকব, ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াব পুরো দুনিয়া। তবে দিনশেষে আমাদের চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে আমাদের পৃথিবীর নিয়মে জীবন যাপন করতে হয়। আমাদের একটা সংসার পাততে হয়। মেয়েদের নতুন জায়গা হয় তার স্বামীর কাছে। আর ছেলেদের প্রিয় জায়গা দখল করে নেয় তার প্রিয়তমা স্ত্রী। এভাবে চলতে থাকে পুতুল নাচের ইতিকথা মান-অভিমান, আশাভঙ্গ, হতাশা, দুঃখ-কষ্ট, সুখ-শান্তি, প্রতারণা, বিরহ-বেদনা নিয়ে।

পুতুল নাচের ইতিকথায় শশীকে নিজের জায়গায় কল্পনা করতে কষ্ট হয় নি। যদিও শিক্ষিত যুবক গ্রাম্য ডাক্তার তবে অতি আবেগি এক ছেলে। নিজেকে সে যত জানতে চাই, ততই সে দুঃখী হতে থাকে। মাঝে মাঝে জগতকে তার বিস্বাদ লাগে আবার মাঝে মাঝে জগতকে স্বাদ লাগে।

যাধব নিজেকে মহাপুরুষ প্রমাণ করতে যেয়ে নিজেই বিপদে পড়ে যায়। যার সর্বশেষ পরিণতি হয় নিজ ইচ্ছায় মৃত্যু। যাধবের মতো রহস্যময় মানুষের রহস্য সত্য-মিথ্যায় জড়ানো। যাধবের মিথ্যা চিরকালের জন্য সত্য হয়ে যায় তার মৃত্যুর মাধ্যমে। তবে যাধবের মৃত্যুর জন্য কী শশীকে দায়ী করা যায়? মনে হয়, আবার মনে হয় না।

শশীর বন্ধু কুমুদ। কুমুদকে আসলে ���গতের জন্য সহনশীল করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে সবকিছুতেই আনন্দ আনন্দ খুঁজে পায়। জগতের কোনো দুঃখ-কষ্ট তাকে স্পর্শ করতে পারে। প্রকৃত সুখী যাকে বলে। মতিকে কী দারুণভাবে বশ করিয়ে নিয়েছে তার জীবনের সাথে। সত্যি বলতে কুমুদকে আমার খুব ভালো লেগেছে।

কুসুম, বিন্দু, নন্দ, জয়া, বনবিহারী, নন্দলাল, যামিনী কবিরাজ ও সেনদিদির কথা নিয়ে আমি আর কিছু লিখছি না। আশা করি পাঠকবৃন্দ আমার রিভিউটা পড়ার পর বইটা পড়ে নিবে(যারা এখনো পড়েনি)।

পুতুলনাচের ইতিকথা বইতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় কিছু দর্শন শিখিয়েছে।

1. সংসারে যেখাানে যত টাকা সেখানে তত নারী, সেখানে তত পাপ।
2. যে কাঁচা মনে বিনা কারণে সর্বদা আনন্দ ভরিয়া থাকে, কোনো একটা তুচ্ছ কারণে মনে যাহার উত্তেজিত সুখ হয়, যে সুখের সংজ্ঞা না জানিয়া সুখী, সেই প্রকৃত সুখী।
3. মনে পাপ থাকার এই একটা লক্ষ্মণ, মনে হয় সকলে বুঝি সব জানে। সাপ উঠিয়া পড়ার আশংকায়, কেঁচো কুরিবার চেষ্টায় মানুষ ইতস্তত।
4. গ্রামের লোকেদের অনুমান সত্যিই প্রখর, সকালে আকাশের দিকে থাকিয়া বলিয়া দিতে পারে বিকালে বৃষ্টি হইবে। বিকালে যদি নেহাত বৃষ্টি নাই হয় সে অপরাধ অবশ্য আকাশের।
5. জীবনকে শ্রদ্ধা না করিলে জীবন আনন্দ দেয় না।
6. রাগ-প্রতিহিংসা এসব যে মানুষের অবলম্বন, সহজে ওসব সে ছাড়িতে চায় না। ছাড়িলে বাঁচিবে কি লইয়া।
7. সব মানুষের মধ্যে একটি খোকা থাকে, যে মনের কবিত্ব, মনের কল্পনা, মনের সৃষ্টি ছাড়া অবাস্তবতা, মনের পাগলামি লইয়া সময়ে-সময়ে খেলা করিতে ভালোবাসে।
8. পরের চেষ্টায় মনের যা বিকাশ তা অস্বাভাবিক, অপ্রীতিকর। মনের মতো ঘরিয়া তুলিতে গেলে মানুষ মনে মত হয় না।
9. সত্যি-মিথ্যায় জড়ানো জগৎ। মিথ্যার মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করিয়া দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্য সত্য হইয়াও থাকিতে পারে মিথ্যা।
10. কল্পনার এমন কতগুলি স্তর আছে বিশেষ কোনো উপলক্ষ ছাড়া যেখানে উঠিবার ক্ষমতা মানুষের নাই। একেকটা ঘটনা যেন চাবির মতো মনের একেকটা দোয়ার খুলে দেয়। যে দুয়ার ছিল বলিয়া মানুষ জানিত না।
11. যারা মরে তারা চেনা, স্নেহে ও বিদ্বেষে দীর্ঘকালব্যাপী সম্পর্ক তাদের সাথে। যারা জন্মায় তারা তো অপরিচিত।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,952 followers
January 7, 2022
পুতুলনাচের ইতিকথা নিয়ে আক্ষেপ আমার একটাই, যখনই পড়ি, বড্ড দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শশী ডাক্তার, কুসুম, মতি, কুমুদ- এদের জীবন নিয়ে পুতুলের মত খেলতে খেলতে মানিক বাবু কখন যে পাঠকদের অনুভূতি/আবেগ নিয়ে দক্ষ পুতুল নাচিয়ের মতন খেলা শুরু করে দেন, বোঝা দায়। উপন্যাস তো এরকমই হয়, নাকি?
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
February 26, 2022
সংসারে মানুষ চায় এক, হয় আর এক, চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তারবাবু। পুতুল বৈ তো নই আমরা, একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।

আড়ালে বসে মানুষের জীবনকে কেউ একজন খেলাচ্ছেন বলেই আমাদের অনেকের বিশ্বাস। মানুষ তার জীবনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে না, তাই মানুষের জীবন এতটা অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। কখনও নিজের কাছেই নিজেকে দুর্বোধ্য মনে হয়। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস তো আর এমনি এমনি বলেননি - নিজেকে জানো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা সাধারণের থেকে অনেক বেশি ছিল, তাই অন্যেদের রহস্যময় চরিত্র পড়তে এবং বিশ্লেষণ করতে পারার বিরল ক্ষমতা তাঁর ছিল। যাকে একজন গুণী লেখকের সহজাত ক্ষমতা বলা যায়। এবং তাঁর গুণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ পুতুলনাচের ইতিকথা। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৌলিক ফিকশনাল রচনা "পুতুলনাচের ইতিকথা" তিনি যখন লিখেছিলেন, তার বয়স তখন মাত্র সাতাশ কি আঠাশ।

"খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন।"

জমকালো ভাষায় পুতুলনাচের ইতিকথার শুরুটা প্রায় সব পাঠককেই চমকে দেয়। উপমার চমকে এটা বুঝতে কয়েক মুহূর্ত দেরি হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, বজ্রপাতে হারু ঘোষের মৃত্যু হয়েছে।
আরেকটা চমকের কথা, সাধু ভাষায় লেখা উপন্যাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় চলিত রীতির সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। উপন্যাসটা যখন পাঠকমহলে সাদরে গৃহীত হয়েছিল, মৌলবাদি ব্যাকরণবিদের দল কি তখন কাঁদিয়া কাটিয়া একাকার করিয়াছিল? জানিতে ইচ্ছা হয়!
যাইহোক, ভাষার অলঙ্কার পুতুলনাচের ইতিকথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাহলে উপন্যাসটিকে কেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্মের একটি বিবেচনা করা হয়? কোথায় তার বিশেষত্ব?
পুতুলনাচের ইতিকথাকে মহান করেছে তার কাহিনীর বাস্তবতা। বাস্তবতাকে অনুধাবন করা যেমন সহজ নয়, বাস্তবতার গল্প সহজভাবে বলাও তেমন সহজ কাজ নয়। যেমন সত্যজিৎ রায়ের ছবি পথের পাঁচালী, সাধারণ গ্রামীণ বাস্তবতার ছবি, কিন্তু সবাই অবাক হয়ে দেখে।

স্থান, কাল, পাত্রের প্রভাবে মানুষের সাইকোলজিকাল পরিবর্তন হয়; এটা খুব সহজ সত্য, তবে ক্ষেত্রবিশেষে তা বিস্ময়কর মনে হয়। পুতুলনাচের ইতিকথা থেকে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক; গ্রামের অবুঝ বালিকা মতিকে বিয়ে করে কুমুদ। আর্টকালচার কুমুদের নখদর্পনে, সে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসার হাসির ব্যাখ্যা করতে পারে, যাযাবরবৃত্তি তার জীবনদর্শন; সেই কুমুদের ঘরে বালিকা নিজেকে খাঁচায় আটকা পড়া বনের পাখির মত মনে করে। পরবর্তীতে আমরা আবিষ্কার করি কালের পরিক্রমায় সেই বালিকা মতি মনে মনে যাযাবরদের মত সাহসী হয়ে গেছে। মানিকের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এত চমৎকার যে, মতির চরিত্রের এই অচিন্ত্যপূর্ব পরিবর্তন একটুও খাপছাড়া মনে হয় না। এমন পরিবর্তন পুতুলনাচের সব মূল চরিত্রের ক্ষেত্রেই আমরা কমবেশি ঘটতে দেখি।

শশী আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক তরুণ। ডাক্তারি পাস করে নিজ গ্রামে ফিরে এসে মানুষকে সেবা দিচ্ছে। গ্রামে একটা লাইব্রেরি পর্যন্ত নেই। চারিদিকে অশিক্ষিত, কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষ। গ্রামের জীবনে হাঁপিয়ে ওঠে সে, গ্রাম ছেড়ে চলে যাবার কথা তার বারবার মনে হলেও এক তরুণীর দ্ব্যর্থক ইশারা তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে রাখে। ইন্টেলেকচুয়াল রোমান্সের স্বপ্ন দেখা যুবক গ্রামের এক চপলা তরুণীর ফ্লার্টিংয়ে কুপোকাত হয়ে যায়। যদিও কুসুমকে গ্রাম বা শহরের সাধারণ আর দশটা তরুণীর সাথে তুলনা করলে অন্যায় করা হবে,কুসুম অনন্যা। সে অকপট মিথ্যা কথা বলে, ধরা পড়লে দুষ্টু হাসিতে মেনে নেয়; নিষিদ্ধ কথা বলতে পারে অবিচলিতভাবে, কথোপকথনের সুর সেই ঠিক করে দেয়, সেই নিয়ন্ত্রণ তার আশেপাশের হাওয়া, তার আত্মবিশ্বাসকে সবাই সমীহ করে, ভয় করে।বুঝতেই পারছেন ছলাকলায় পটিয়সী কুসুমের মুখের কথা যেকোনো তরুণ পাঠককেও রোমান্সের মেঘের উপর ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে।

'হাসব?' - কুসুম জিজ্ঞাসা করিল।
'কেন, হাসবে কেন?'
কুসুম হাসিয়া বলিল, 'আমার হাসি দেখলে আপনার মন নাকি জুড়িয়ে যায়? তাই শুধোচ্ছি।'


স্থান কাল বিবেচনা করলে ধারণা করা যায় কুসুম কেমন ভয়ানক আকর্ষণীয় নারী।নিষিদ্ধ বস্তুর মত আকর্ষণ ক্ষমতা দিয়ে কুসুমকে সৃষ্টি করেছেন মানিক। সে ভীষণ রহস্যময়ী, তার রসিকতা হতে পারে নিছক কৌতুক, হতে পারে অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত; সেই রহস্য ভেদ করতে কখনো কখনো বেপরোয়া হতে হয়, সম্মানহানির ঝুঁকি নিতে হয়। পরিণত মস্তিষ্কের মানুষ কাঁচা বয়সীদের মত সহজে ঝুঁকি নিতে পারে না। আবেগের আতিশয্যে মাথা খারাপ হয়ে গেলে অবশ্য পারে। তবে ঝুঁকি না নিলেও জীবন কিন্তু থেমে থাকে না। জীবনানন্দের যেমন লিখেছেন,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, 
নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?



পুতুলনাচের ইতিকথা যখন আমি প্রথমবার পড়েছি তখন আমার মনের বয়স অল্প, Life should be lived to the point of tears.- আলবেয়ার কামুর এই কথাটা আমি তখন হৃদয়ে ধারণ করতাম। বিশ্বাস করতাম উন্মাতাল প্রেমে। আমার দৃষ্টিতে উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল প্রেম, এবং অবশ্যই কুসুমের সুড়সুড়ি দেওয়া সংলাপগুলি; তারপর মানিকের সাইকোলজিকাল বিশ্লেষণ ক্ষমতা, ঝরঝরে ভাষায় তার প্রকাশ।

দ্বিতীয়বার যখন পুতুলনাচের ইতিকথা পড়লাম, মানে ত্রিশোর্ধ হবার পরে; আমার কাছে প্রেম-ভালোবাসা-বিপ্লব সব ওভাররেটেড হয়ে গেছে। নাটকীয়তাবিহীন সরল জীবন এখন আমার পছন্দ।

দ্বিতীয় পাঠে আমার মনে গভীর রেখাপাত করলেন গোপাল, শশীর বাবা। মানুষটা আংশিক ভিলেন টাইপের। গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি কর্তব্যবোধ যদিও তার আছে, কিন্তু হিংসা বিদ্বেষের মত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য তার চরিত্রে প্রকট, টাকা-পয়সা-সম্পত্তির প্রতি লোভও আছে। নিজ কন্যার প্রতি গোপালের অবহেলাও চোখে পড়ে, পুরুষপ্রধান সমাজ বলে কথা। কিন্তু একটা মহান বৈশিষ্ট্য সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় - পুত্র শশীর প্রতি তার ভালোবাসা। আর দশটা বাবার মতই সন্তানকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসেন গোপাল। গোপাল ছেলের জন্য সব করতে পারেন; অথচ ছেলের সাথে তার ব্যক্তিত্বের বিরোধ মেটাতে পারেন না। পুত্র শশী সুশিক্ষিত, সহানুভূতিশীল, মহানুভব, উদার প্রকৃতির মানুষ - সে সংকীর্ণমনা পিতার স্নেহের টান অনুভব করে না। হৃদয়বিদারক হলেও সত্যি, গোপালের সাথে শশীর মানসিক দূরত্ব হয়ত ঘোচার নয়। তারপরও পুত্রের জন্য পিতার যে ঐশ্বরিক পক্ষপাতিত্ব আমরা পুতুলনাচে দেখি, যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা অনুভব করি- সেটা কি আমাদের নিজ পিতার কথা মনে করিয়ে দেয় না? এইখানে লেখক মানিকের সার্থকতা, তাঁর ক্ষমতা; কী মমতা দিয়ে মানিক বাবা চরিত্রটি গড়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! আপনার যদি বাবা থেকে থাকেন, আপনি বুঝতে পারবেন; আপনি যদি বাবা হারিয়ে থাকেন, তাহলে আরও বেশি করে বুঝতে পারবেন। আমার দৃষ্টিতে পুতুলনাচের ইতিকথার সবচেয়ে সুন্দর, মহান, ও তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে সন্তানের প্রতি পিতার নিঃশর্ত ভালোবাসা।


শিল্প-সাহিত্যের সমঝদার অনেক মানুষ যৌবনে একরকম চাপা অহংকার অনুভব করে (অনেকে সারাজীবনই অহংকারী থেকে যায়)। মনে করে বই পড়ে, ছবি এঁকে, গান গেয়ে বা শুনে, নিজ আদর্শের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে একটা কঠোর ভাবমূর্তি তৈরি করে তারা নিজেদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলছে, তারা Larger than life. বাকিরা অশিক্ষিত, ক্ষ্যাত, বস্তুগত আকর্ষণের বেড়াজালে বন্দী, জীবনকে যাপন করতে জানেনা। এই অশিক্ষিত শ্রেণীর প্রতি শিল্প সমঝদাররা বরাদ্দ করে করুণা আর অবজ্ঞার হাসি। এই দর্শনের আলোয় উদ্ভাসিত একজন নারী জয়া। কোন গ্রাম্য অশিক্ষিত বালিকা যে সত্যিকার ভালোবাসার খোঁজ পেতে পারে, তার জীবনেরও গভীরতা থাকতে পারে, এমনটা জয়া একসময় বিশ্বাস করতো না। তারপর একটা "গেঁয়ো" মেয়ের সাথে মেলামেশার অভিজ্ঞতা জয়ার বিশ্বাসে ফাটল ধরায়। এখানে ভাবনার খোরাক হচ্ছে, গেঁয়ো বা শহুরে, সবার জীবনই নদীর মত, কোথাও গভীর কোথাও অগভীর, কিন্তু জীবন সবসময় প্রবহমান। কারও জীবনই তুচ্ছ নয়, আবার খুব দামিও হয়ত নয়।

জীবনকে শ্রদ্ধা না করিলে জীবন আনন্দ দেয় না। শ্রদ্ধার সঙ্গে আনন্দের বিনিময়, জীবনদেবতার এই রীতি।
শশী তাই প্রাণপণে জীবনকে শ্রদ্ধা করে। সঙ্কীর্ণ জীবন, মলিন জীবন, দুর্বল পঙ্গু জীবন - সমস্ত জীবনকে।


পুতুলনাচের ইতিকথা নানা রকম জীবনের গল্প বলে। জীবনের গতিময় ছবি এঁকে পরিবর্তনকে উপলব্ধি করায়। জীবনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখায়। এটা মূলত গ্রামের মানুষের জীবনের গল্প, কিন্তু গ্রাম এবং শহরের মানুষের জীবন আমরা কোথাও কোথাও এক বিন্দুতে মিলিত হতে দেখি। কারণ সবাই মানুষ। সবাইকেই পুতুলের মত খেলাচ্ছেন কোন অদৃশ্য হাত।

ছোট বোন সিন্ধু পুতুল খেলছে। অবুঝ শিশুর সেই খেলা মনোযোগ দিয়ে দেখছে শশী।
'খুকি, বড় হয়ে তুই কি করবি?'
'পুতুল খেলব।'
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews738 followers
October 7, 2017
পড়বার সময়ও ভাবছিলাম অনেক বিশ্লেষণাত্মক একটা রিভিউ লিখবো কিন্তু পড়া শেষে আর কিছু মাথায় আসছেনা। আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সমাজের সাধারণ চিত্র তার লেখায় প্রতিবার আঁকেন এবং বারবার তার ভেতরেই কিভাবে যে বৈচিত্র্যের সমাহার নিইয়ে আসেন সেটাই পড়া শেষে মুগ্ধ করে রাখে। পুতুলনাচের ইতিকথা বুঝতে হলে এর গভীরে যেতেই হবে নাহয় নেহায়েত পুরনো ভাতের স্বাদ লাগবে। কিন্তু এর ভেতরে লেখক প্রতিটি চরিত্র অংকনে, পুতুলের মতো জীবন রচনায় যে মুন্সিয়ানা রচনায় নিজের জাত চিনিয়েছেন তা অনুভব করতে আলাদা যোগ্যতা প্রয়োজন।

বাংলা সাহিত্যের সহজ মোড়কে জড়ানো এক জটিলতম ভাবের গল্প এই পুতুলনাচের ইতিকথা। ঘোর থেকে বের হতে পারলে হয়তো এসব আবোলতাবোল না লিখে নিজের অনুভূতিগুলো আরও সুন্দর করে লিখতে পারতাম। কিন্তু মানিকবাবু ঘোর থেকে মনে হচ্ছেনা এত সহজে বের হতে দিবেন।
Profile Image for Antu Paul.
110 reviews79 followers
November 30, 2025
বেশিরভাগ মানুষের আলাপে, তার নিজের গল্প যখন উঠে আসে তখন কোণঠাসা অবস্থাটা বেশি স্পটলাইট পায়। নিয়তিকে উপলব্ধি করে কোণঠাসা অবস্থায়।

পুতুলনাচের ইতিকথার কথাগুলি শশীর, পাশ করে গ্রামে বসে কলকাতার স্বপ্ন বোনা ডাক্তার, তবে গল্পটা গাওদিয়ার আর অদৃশ্য নিয়তির সুতোর। চরিত্র কম নয়, শশীকে ঘিরেই তারা।
এ কাহিনী শুরু হয় মৃত্যু দিয়ে, পুরো উপন্যাস জুড়ে কিছু অস্বাভাবিক মৃত্যু আর এর মধে্যই শশীর দেখা ভবিষ্যত বিক্ষিপ্তভাবে অনিশ্চয়তায় মোড় নেয় ।

পরাণের বউ কুসুম তো শশীর মতো কথা সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে জানে না। কুসুম তার ব্যাকুলতা, গ্রামের সাধারণ বৌয়ের সহজ নাটুকে অজুহাতকে ভাষা বানিয়েছে। শশী সব বোঝে। সেও সব অনুভূতি বোঝে কিন্তু শশীর স্বপ্নবিভোর আড়ষ্ট নীরব মন সে অঞ্জলি নেয় না। তবে নীরবে মিথ্যায় সব অনুভূতির বিনিময় হয়। শিকড়ও ছড়ায়।
শশী একটু হাসিল, কিছু বলিল না। কুসুমের এরকম সরল মিথ্যাভাষণ সে মাঝে মাঝে লক্ষ করিয়াছে। ধরা পড়িবে জানিয়া শুনিয়াই সে যেন এই মিথ্যাকথাগুলি বলে। এ যেন তাহার একধরনের পরিহাস। কালোকে সাদা বলিয়া আড়ালে সে হাসে

তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কুমুদ আর মতির সাবপ্লটে সুতো কেটে বেরোনোর স্বতঃস্ফূর্ত যাত্রার গল্পও লিখেছেন। সুতোর জড়িয়ে যাওয়া যেখানে নিত্যদিনের সঙ্গী দূরারোগ্য ব্যাধির মতো, সুতো কাটার এই নেশা সেখানে তীব্র সংক্রামক মহামারী।

কাহিনী যত সামনে এগোয় সম্পর্কের টানাপোড়েন জটিল কিছু পরিস্থিতির জন্ম দেয় যা শশীর পক্ষে অসহনীয়। এসব নিয়ে শশীর গম্ভীর স্বগোতক্তি নেই তবু গভীরভাবে প্রভাব রেখে যায় শশীর মনে। শশীর সহজে মেনে নেওয়া তার জীবনের নিত্যদিনের ঘটনা, পাথরের মতো চেপে বসে তবে আবার হাজার শূনন্যতায় একটি পলকা অবলম্বন বেছে নেয় শশী, শশীর বোন, কুমুদ, মতি, কুসুম, পরাণ শশীর বাবা আর মাতৃস্থানীয়রা।

টিপ্যিক্যাল গ্রাম গাওদিয়ার পরিবেশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষা জাদুর মতো চোখের সামনে বাস্তবতার জাল বুনে চলেছে। গাওদিয়ার বাস্তবতা সহজ নয়, কঠোরও নয়, ভাইরাসের সংজ্ঞার মতো। কৃত্রিমতাহীন। এই উপন্যাসের বাস্তবতার স্তর অনেক শিকড় ছড়িয়ে নিজেকে অনড় করে ধরে রেখেছে। শশী পুরোটা জুড়ে কিন্তু পাঠক তুচ্ছতম চরিত্রটির অ���্তর্লোকেরও সন্ধান পায় পুতুলনাচের ইতিকথায়।

তৃতীয়বারের চেষ্টায় শেষ করলাম। প্রথম ক্লাস সিক্সে পড়তে গিয়ে বুঝি উপযুক্ত হয়নি এখনও। এখনও এর উপযুক্ত কিনা জানি না। তবে বাংলা সাহিত্যে এখন পর্যন্ত দুটো সামাজিক ক্লাসিক আমার সবচেয়ে প্রিয়। পুতুলনাচের ইতিকথা আর সূর্য-দীঘল বাড়ী। দুটো উপন্যাসই পড়ার সময় ছাপানো সাদা কাগজ আর বাস্তবতার ব্যবধান সম্পূর্ণ বিলীন করে দিয়েছে।
Profile Image for তানজীম রহমান.
Author 34 books755 followers
March 8, 2022
এই বইয়ের বিষয়বস্তুর থেকে বড়ো প্রসঙ্গ, বড়ো থিম কোনো উপন্যাসের হতে পারে কিনা জানি না। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’-তে মনে রাখার মতো অনেক চরিত্র আছে। কিন্তু বইয়ের মূল চরিত্র আসলে দুটো: জীবন, আর মৃত্যু।

আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে: লেখক যে সময়ে বেঁচে ছিলেন, যে জায়গায় বেঁচে ছিলেন—সেসময় জীবন আর মৃত্যু ঠিক কোন চেহারায় দেখা দিতো মানুষের মধ্যে? কোন ধরনের জীবনকে মানুষ ‘সফল’ মনে করতো, আর কোনটাকে ব্যর্থ? সফল জীবনের জন্য প্রেম বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না দায়িত্ববোধ? মৃত্যু কখন, কীভাবে মানুষের কাছে আসতে পারে? বা মানুষ মৃত্যুর কাছে কীভাবে যেতে পারে?

এই বিশাল প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়েছে বইজুড়ে। এবং সহজ, হ্যাঁ-না জবাব এড়িয়ে লেখক বেছে নিয়েছেন জীবনের মতোই জটিল, মৃত্যুর মতো ভাবনা উদ্রেককারী সব উত্তর।

একটা বিষয় না বললেই নয়—লেখক জোর দিয়েছেন পুরুষের জীবন ও মৃত্যুর ওপর। কিন্তু তার সময়ে পুরুষদের সিদ্ধান্তের কারণে নারীদের জীবন কীভাবে এলোমেলো হয়, অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস হয়—সে ব্যাপারটাও এই বইয়ে পরিষ্কার এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এসেছে। কখনও রীতি ধরে রাখার চেষ্টায়, আবার কখনও রীতি ভাঙার, কখনও প্রেম থেকে দায়িত্বকে আলাদা করার অপারগতায়, কখনও দুই পুরুষের শত্রুতার শিকার হয়ে—অসংখ্যভাবে নারীকেই বারবার অনিশ্চয়তা মেনে নিতে হয়, নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হয়। সে তুলনায় পুরুষেরা নারীকে ঠিক মানুষ হিসেবে ভাবেন না। অন্তত তাদের সমকক্ষ, পূর্ণাঙ্গ মানুষ তো অবশ্যই না। এই সমালোচনাটা উপন্যাসে তীক্ষ্নভাবে এসেছে, সেটা দেখে ভালো লাগলো।

লেখক যে কোনো সহজ উত্তরে যাননি বা কোনো চরিত্রকে ‘জিতিয়ে’ দেননি, সেটাও ছিল ভালো লাগার বিষয়। সবথেকে স্পষ্ট তুলনা এসেছে শশী আর কুমুদের জীবনযাত্রার মধ্যে। একজনের রীতি আর অতীতকে ঝেড়ে ফেলার ক্ষমতা নেই, আরেকজন বর্তমানের বাইরে চিন্তা করতে পারে না। একজন দায়িত্বের মোহে ভালোবাসা বিসর্জন দেয়, আরেকজন নিজের দায়িত্ব পর্যন্ত নিতে চায় না। কুমুদের মতো ভীষণ স্বাধীনচেতা হতে চাইলে যে স্বার্থপর হতে হবে, খুব কাছের বন্ধুরাও যে এমন মানুষকে অপছন্দ করবে আর ভুল বুঝবে—এই ব্যাপারটা লেখকের নজর এড়ায়নি। তাই হিমুর মতো প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা চরিত্র, যাদের প্রতি আবার আশেপাশের প্রায় সবাই আকর্ষণ বোধ করে, ভালোবাসে, তাদের জায়গা শুধু কল্পনায়। অন্যদিকে শশীর মতো কেউ, যে কর্তব্য আর দায়িত্বের অজুহাতে নিষ্ঠুর হতে পারে, অন্যকে ছোটো করে নিজেকে উঁচু বেদীতে বসাতে পারে—তেমন মানুষ হওয়া যে খুব ভালো, সে দাবিও মানিক করেননি।

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র জন্য মৃত্যু এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ, যে বইয়ের শুরু হয় এক আচমকা মৃত্যু দিয়ে (আহা, কী অসাধারণ, কাব্যিক বর্ণনা সেই দুই পৃষ্ঠাজুড়ে, বইটা শেষ করার পর কমপক্ষে চারবার পড়েছি)। তারপর একেক রূপে দেখা দেয় মৃত্যু—কখনও গ্রামজীবনের দৈনিক, প্রায় একঘেয়ে বাস্তবতা হিসেবে, কোথাও অসুখ হয়ে, কোথাও দুর্ঘটনা হয়ে। একটা উদাহরণ দেখে খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো: সাধারণত কেউ নিজের বিশ্বাস, আদর্শের জন্য জীবন দিলে সেটাকে খুব মহান উৎসর্গ হিসেবে দেখার চল আছে আমাদের সমাজে। কিন্তু এই উপন্যাসে তেমন একটা মৃত্যুকে করুণ, প্রায় বোকামী হিসেবে দেখানো হয়। বিশ্বাসের চেয়ে কি জীবন বড়ো? তাই তো হওয়া উচিত, তাই না?

কয়েকটা বিষয় একটু চোখে লেগেছে, হয়তো ২০২২ সালে বইটা পড়েছি বলে। একজন নারী চরিত্রের জীবনের সাফল্য হিসেবে দেখানো হয় যে সে বাকি সব ছেড়ে নিজের পুরুষসঙ্গীর পথ বেছে নিয়েছে। কিছু জায়গায় মনে হয় নিষ্ঠুর রীতিরও টিকে থাকার প্রয়োজন আছে, কারণ সেগুলো রীতি। তবে এগুলো নিয়ে এখন খুব বেশি বলতে চাই না। হয়তো আবার পড়লে কিছু বিভ্রান্তি কেটে যাবে।

সব মিলিয়ে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ প্রায় মহাকাব্যিক একটা কাজ। প্রকাণ্ড স্কোপ আর গভীর অর্থে সমৃদ্ধ লেখা। শেষ করার পর মনে হলো একটা আস্ত জীবন পার করলাম। অনেকদিন মনে থাকবে এই বইয়ের কথা, সন্দেহ নেই।
Profile Image for Tasnim Dewan  Orin.
159 reviews79 followers
June 24, 2021
‘সংসারে মানুষ চায় এক, হয় আর, চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তারবাবু। পুতুল বই তো নই আমরা, একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।’

আমার সবচেয়ে প্রিয় বইয়ের একটি। এস এস সি পরীক্ষার ঠিক পরে যে লম্বা ছুটি পাওয়া যায় সেই সময় পড়া। বইটি আমি ধরতে গেলে এক বসায় পড়েছিলাম। মানিক বন্ধ্যেপাধ্যায় যেন এক টুকরো গ্রাম বাংলার নিপুণ দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন এই বইয়ের ক্যানভাসে। তুলে ধরেছেন চরম সত্য। জীবন এক রঙমঞ্চ ছাড়া কিছুই না। বিধাতার হাতে একেক জন পুতুল। আমার প্রিয় কোন মানুষকে যদি বই উপহার দিতে হয়, আমি এই বইটি দেই। বইটি পড়ার অনুরোধ রইল।

পুনশ্চ ঃ শশীকে জীবনে ভুলতে পারবেন না।
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
February 2, 2022
“সব মানুষের মধ্যে একটি খোকা থাকে যে মনের কবিত্ব, মনের কল্পনা, মনের সৃষ্টিছাড়া অবাস্তবতা, মনের পাগলামিকে লইয়া সময়ে-অসময়ে এমনিভাবে খেলা করিতে ভালবাসে।”

সদ্য ডাক্তারি পাস করা শশীকে ঘিরে পুতুলনাচের ইতিকথা বইটির মূল কাহিনি। মানুষের নানা ধরণের আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলা একটি চমৎকার ক্লাসিক গল্প হচ্ছে “পুতুলনাচের ইতিকথা”। বইয়ের নামকরণও বেশ ভালো লেগেছে, নিয়তির হাতে এই উপন্যাসের সবাই যেন পুতুল, সেই পুতুলনাচের ইতিকথাই শোনানো হয়েছে এই গল্পে।
Profile Image for Arup.
13 reviews13 followers
February 23, 2016
এইসব দিন-রাত,আকাশ-বাতাস,সম্পর্ক,জীবন আসলে কী তাৎপর্য নিয়ে আসে? মর্মে মর্মে একেকজনের অভ্যন্তরীণ আলো-অন্ধকার বাহিরের বাস্তবতায় যে অদ্ভুত রঙ ধরে,এইসবই মনে হয় 'পুতুলনাচের ইতিকথা।'বাসায় যায়া একমাত্র এই কাজটাই হইছে,এইটা পড়া।পড়তে পড়তে, বন্ধ করা।আবার পড়া।আসলে থামা লাগছে,থামতে হয়।মানিক এতভাবে এত এঙ্গেল থেকে আলো ফেলেন,যে তাকানো কঠিন হয়া পড়ে।সবাই যে নিজেকে ভোলায়,কী ভীষণ গভীরভাবে বোঝা গেল (নাকি গেল না?),জীবন অজস্র তরঙ্গ-তরঙ্গহীনতার মর্মান্তিক কোলাহল।এত ডাইভার্সিটির জীবন,এত ভাঙচুর।কী হয়,তারপর যখন একটা লোক নিস্তব্ধতার জীবন কাটায়,জীবনের পুরনো সব লাউডনেসগুলো নিয়ে?তারও কি সিসিফাসের জীবন?
Profile Image for Roksana Asma.
2 reviews15 followers
August 17, 2015
অদ্ভুদ এক ঘোরের মাঝে বন্ধী করে রাখতে পারেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। দেরিতে হলেও পুতুল নাচের ইতিকথা পড়ে ফেললাম। কুমুদ আর শশী তারা দুজনেই তো দুজনের বিপরীত মুখছবি। কুমুদের কোন চিন্তা নেই,যখন যা জুটবে তা নিয়েই দিন কাটিয়ে দিবে অপরদিকে শশী দায়িত্বের চাপে নিজের স্বপ্নগুলো নিয়ে ভাবতে পারে না। চারপাশে এমন চরিত্র প্রায় দেখা যায়। একজন জীবনকে উপভোগ করতে পারে নিজের মতো করে অন্যজন জীবনকে বেঁধে রাখে দায়িত্ব -কর্তব্যের সাথে। কুসুম,মতি গোপাল, সেনদিদি সব চরিত্র যেন আশেপাশের চরিত্র। লেখক যে পটুহাতে চরিত্রের স্বরুপ তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অসাধারণ। পুতুল আমরা।কেউ একজন আমাদের নিয়ে খেলে। মানুষ নামের পুতুল খেলে যায় প্রতিনিয়ত তার জীবদ্দশায়।
Profile Image for Arupratan.
235 reviews382 followers
April 20, 2024
"লাল টকটকে করে তাতানো লোহা ফেলে রাখলে তা-ও আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে যায়, যায় না?"
Profile Image for Mou.
86 reviews1 follower
October 15, 2025
আমার কাছে মনে হয়, একটা উপন্যাসের সার্থকতা কেবল প্রেক্ষাপট, কাহিনীর গতিময়তা বা ঘটনার ঘনঘটার উপর নির্ভর করে না। বরং সেটা অনেক বেশি নির্ভর করে চরিত্রায়নের উপর। একজন লেখক যখন তার চরিত্রগুলোকে এতটাই নিখুঁতভাবে নির্মাণ করেন যে তাদের বাস্তব মনে হয়—পাঠকের সাথে চরিত্র গুলোর একটা মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়—তখনই সেই উপন্যাস সত্যি হয়ে ওঠে। পুতুল নাচের ইতিকথা তেমনই একটি উপন্যাস, যেখানে গল্প যতটা না টেনেছে, তার থেকেও বেশি মুগ্ধ করেছে চরিত্রায়ন।

শশী ডাক্তার, কুসুম, মতি, গোপাল, বিন্দু—প্রায় প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই এমন একটা স্বকীয়তা আছে, যে কাউকে কম মনে করা যায় না। বাস্তব জীবনের মতোই, এখানে কেউ একদম ভালো না আবার একেবারে খারাপ ও না। প্রত্যেকেই নিজের জায়গা থেকে সঠিক, আবার তারা জীবনের পথে চলতে গিয়ে ভুল ও করে ফেলে। আর এই চরিত্রগুলোর যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন, তা এতটাই বাস্তব যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।

এই উপন্যাসে আমার ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে অপছন্দের চরিত্র ছিল কুসুম। এমনকি একটা পর্যায়ে গিয়ে কুসুমের প্রতি একটা অদ্ভুত ঘৃণার জন্ম হয়েছিল, যেটা বই পড়তে গিয়ে আমার আগে কখনো হয়নি। কিন্তু শেষের দিকে এসে... কুসুমের ব্যক্তিত্বের যে দৃঢ়তা, তার নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার যে ক্ষমতা, সেটা আমাকে থমকে দেয়। তাকে হয়তো আমি ভালোবেসে ফেলিনি, কিন্তু আমার সেই তীব্র অপছন্দের জায়গাটা নরম হয়ে আসে। হয়তো সেখানেই লেখক তার চরিত্রের সত্যিকারের গভীরতা দেখাতে পেরেছেন।

এই উপন্যাসে কেউ 'নায়ক' না, কেউ 'খলনায়ক' না। সবাই সাধারণ মানুষ। সবার নিজের মত করে একটা গল্প আছে, অনুভূতি আছে,দ্বিধা - দ্বন্দ্ব আছে। সেই অনুভূতির পিঠে ভর করেই কাহিনি এগোয়—আর পাঠককে টেনে রাখে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।

বইটা শেষ করে মনে হয়েছে—লেখক আসলে কোনো গল্প বলেননি শুধু। গল্প বলার ছলে দেখিয়েছেন একেকটি মানবসত্তা, যাদের অনুভূতির প্ররোচনায় মানুষ পুতুলের মত নাচে এই বিশাল বিশ্বমঞ্চে। আর তাই উপন্যাসের নাম পুতুল নাচের ইতিকথা।
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book67 followers
April 12, 2020
মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে, শশী ডাক্তার এখন কেমন আছে? ওই যে গাওদিয়ার হাসপাতালটা, ওখানে কি এখনও সে শশব্যস্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক মাথা উঁচু ঢিবিটার ওপর থেকে সে এখনও সূর্য দেখে ? তালবনের শনশনানি শুনে সে এখনও কেঁপে কেঁপে ওঠে ? এখনও সে কি অপেক্ষা করে, কোনো কুহকিনী এসে হাত ভাঙার নাম করে তার সঙ্গে কথা বলবে ?

সেনদিদির ছেলেটা এখন কেমন আছে ? নিশ্চয়ই এতোদিনে সে বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে? মায়ের রূপের কতখানি সে পেয়েছে? কাশীতে গিয়ে গোপালের খুব বেশিদিন বেঁচে থাকার কথা নয়। গঙ্গা নদীর স্রোতে হয়তো তার ছাইভস্মও ভেসে গেছে। শশী কি সেই খবরটা জানে ? সেনদিদির ছেলেও কি জানে, হাজার মাইল দূরে একজন তার জন্য কতটা অপত্যস্নেহ নিয়ে বেঁচে আছে ?

কুসুম, সেই বা কেমন আছে ? আগের সেই বাঁকা হাসির চকিত চাহনি কি খেলা করে তার মুখে ? বাজিতপুরে নিশ্চয়ই ঘরকন্না করছে, এখনও গাওদিয়ার সেই দিনগুলোর কথা ছলকে ওঠে না স্মৃতিতে? যার জন্য একদিন নিজের সবটুকুই দিতে পারত, তাকে অমন করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটুও কি আক্ষেপ হয় না ? আচ্ছা, বাজিতপুরে কি তালবন আছে? সন্ধ্যার অস্তরাগে কুসুম কি ওখানে গিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকে ?

কুমুদ আর মতিই বা কেমন আছে ? এখনও কি দুজন জলে ভাসা পদ্মের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ? কুমুদের যাত্রা দেখে কি মতির শরীরে আগের মতো পুলক খেলে যায় ? নাকি বেলা শেষে দুজন এখন থিতু হয়েছে, জীবনের বিপুল বিস্তারে দুজন কি সব উদ্দামতাকে সমর্পণ করেছে ? কুমুদ কি এখনও মতিকে দিয়ে পা টেপায় ? আর মতি, কুমুদ কি তার খোলনলচে বদলে দিতে পেরেছে ?

পুতুল নাচের ইতিকথার পড়ে এই কথাগুলোই যেন ঘুরে ঘুরে আসতে থাকে
Profile Image for Utsob Roy.
Author 2 books77 followers
July 24, 2016
এতদিন বইটা না পড়া রীতিমত একটা অপরাধ। সত্যিকারের কালজয়ী লেখা বলতে যা বোঝায় এ হলো তাই।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রগুলো সাদামাটাভাবে শুরু হয়। তাদের আচরণ, গন্তব্য সব সাদামাটা। দরিদ্র আদর্শ দরিদ্র, জোতদার ছেচড়া জোতদার, গ্রাম্য ডাক্তার যথার্থ গ্রাম্য ডাক্তারের মতই ফিসের তাগাদা দেয়। এবং, শেষমেশ তাদের নিয়তিও এমনকিছু আশ্চর্যজনক না। আশ্চর্যের ব্যাপার তাদের হঠাৎ কোনো ব্যবহার, কোনো কথা, কোনো হাসি। 'শেষের কবিতা'য় রবীন্দ্রনাথ লাবণ্যের প্রথম পরিচয় যেমন পাহাড়ের পটভূমিতে বিদ্যুতঝলকের মত দেখিয়েছিলেন, চরিত্রগুলে তেমন কোনো ঝলকে ঝলকে বোধি দেয়, জানিয়ে দেয় যে মানুষের ভেতরে আরো কোনো মানুষ থাকে যে তার গড় মানবিকতার উর্ধ্বে। মানুষ তারা, এমন মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালোলাগে, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।

ফলতঃ জোতদার গোপাল পুত্র গৃহত্যাগী যেন না হয় তাই নিজেই গৃহত্যাগী হয়, মতি কেমন বাউন্ডুলের যোগ্য গিন্নি বনে যায়, শশী শেষ মুহুর্তে আবিষ্কার করে কুসুমকে সে ভালোবাসত, যাদব স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন।

উপন্যাসে অসাধারণ সব ঘটনা সাধারণ জীবনের সাথে মিশে যায়। মনে হয় না বানানো কথা, মনে হয় রোজকার কথাই, আমার দেখার চোখ নেই বলে এমন দেখিনা।
Profile Image for হাসান নাহিয়ান নোবেল.
105 reviews169 followers
April 29, 2020
এইখানে প্রোটাগোনিস্ট শশী নাকি র‍্যান্ডম সেনদিদি-গোপাল-যাদব-কুসুম-কুমুদ—এই নিয়ে আমি শাহাবুদ্দিন ভাইয়ের দোকানে বসে বিশাল তক্ক করতে রাজি আছি। শশী ডাক্তার কেবল অনেকখানি জায়গাজুড়ে আছে। নইলে কুমুদের ওজন কি নিতান্ত কম!

সবই জানি। তবু মানিক বন্দ্যোর একটা ছোট্ট লেখা পড়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তিনি নাকি মানুষকে “ভাগ্যের পুতুল” বলতে চান নাই! সবাই মিলে স্রেফ এই ইন্টারপ্রিটেশনটা দ���ঁড় করায়ে নিসে।

মানিক বলতেসেন, যারা মানুষকে পুতুলের মত নাচায়—এই বইটা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ—

“বইটা নয়—বইয়ের নামটা বিভ্রান্ত করে দিয়েছে সমালোচক থেকে বইটা যাতে বেশি বিক্রি হয় সেই উদ্দেশ্যে বইয়ের পিছনের বিজ্ঞাপনটির লেখককে পর্য্যন্ত।

পুতুলনাচের ইতিকথা? তবে আর কথা কী, মানিকবাবু মানুষকে পুতুল বানিয়েছেন, ভাগ্যের দাস বানিয়েছেন।

এটা হল বিচারকদের রায়।

যারা বিচার করে না, যারা আজ বিশ বছর ধরে বইটাকে জীবন্ত রেখেছে, তারা টের পায় এ বইখানা মানুষকে যারা পুতুলের মত নাচায় তাদের বিরুদ্ধে দরদী প্রতিবাদ।

প্রচণ্ড বিক্ষোভ নয়, স্থায়ী দরদী প্রতিবাদ।
… … …
সামন্ততান্ত্রিক অবস্থায় হাবুডুবু খেতে খেতেও এতগুলি মানুষ চেষ্টা করছে সে অবস্থাকে অতিক্রম করতে—কুড়ি বছর আগের বাংলা দেশে যখন সামন্ততন্ত্র প্রধান সমস্যা বলেই গণ্য হত না, তখন মানুষের সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, কিছু মানুষের হাতে পুতুল হবার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ, স্লোগানের বদলে সাহিত্যসৃষ্টির মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।

আমি ভাবছি, হায়! যদি বইটার একটা ভূমিকা দিয়ে লিখে দিতাম মানুষকে কীভাবে পুতুল করা হয়েছে এটা তারই উপন্যাস—আমার বইখানার পিছনে হয়তো প্রচারক আমাকে ভাগ্যবাদী ঘোষণা করতেন না।

কত বোকামিই করেছি!”

এটাকে আদৌ বোকামি বলে কিনা কে জানে। পাঠকের এমনিতেই স্বাধীনতা আছে লেখাকে নিজের মত করে বোঝার। এই বইয়ের নাম যদি “একজন আশাবাদী নাট্যকর্মী ও তার ডাক্তার বন্ধু” হত—তাও এইটা পড়ে জিহাদ নিহিলিজ্‌মমাখা গলায় বলতো, আমরা সবাই নিয়তির অধীন—অত উৎসাহ নিয়ে কোনো কাজে ঝাঁপায়ে পড়ার মানেই হয় না! ভোটকা জাহিন বলতো, মানুষের জীবন খুবই স্যাড, অনেকটা কুসুমের মত স্যাড।

আমি অবশ্য মানিক বন্দ্যোর মতই দেখতেসি। “দরদী প্রতিবাদ” কথাটা আমার ভালো লাগসে। মামুনুর রশীদ সাহেবের সাথে কোথায় একটা মিল আছে। যেখানে প্রতিবাদের ভাষাটা কেবল অন্ধকার নিয়ে হা-হুতাশ করবে না, হাত মুঠো করে আলোর দিকেও আগায়ে যাবে।
Profile Image for Shoroli Shilon.
164 reviews71 followers
May 8, 2024
অগোচরে অদৃশ্যমান কিছু সুতার জালে জড়িয়ে পড়া মানবকূলের সবচাইতে বড় এবং উন্মুক্ত রহস্য। সবই যেন নিয়তির খেলা; পুতুলের বেশে সজ্জিত হওয়ার মহড়া। পর্দার আড়ালে বসে হাসছেন অজানা নাচিয়ে। পুতুলনাচের সে পর্দা উন্মোচন হওয়া মাত্রই সব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পুতুলগুলো একে একে দরকারে-অদরকারে, অবস্থা কিংবা পরিপ্রেক্ষিতের ভিত্তিতে স্বভাব, রুপ বদলাচ্ছে।

বলছি,
পুতুল হয়ে নিষ্পলক জীবন কাটিয়ে দেওয়ার এক জাঁকজমকপূর্ণ আখ্যান এর কথা। বলছি, 'পুতুলনাচের ইতিকথা' র কথা। বলছি, শশী-কুসুম, মতি-কুমুদ, নন্দ-বিন্দু–বিবিধ পুতুলদের কথা।

এ খেলায় কিভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হলো–
যে জীবনগুলো আমাদের কেন্দ্র করে সাঁতার কাটে, আপাতদৃষ্টিতে যে জীবনগুলোকে আামাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে মনে করা হয়, সে জীবনগুলোর ক্লাইমেক্স কিংবা উপসংহারে অথবা ইতিতে আমাদের ভূমিকা সময়ের সাথে ম্লান হয়ে আসে।
কি করলে দারুণ এক আদর্শে এবং দর্শনে স্বয়ংসম্পূর্ণ গতিতে জীবনকে আশ্রয় করে অনিবার্য মৃত্যুকে গ্রহণ করা যায় ঠিকই কিন্তু সে পথ দেখানোর আমরাই বা কে?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাই অবহেলা করতে শিখতে হয়। সম্পর্কগুলোর দরজায় তালা লাগাতে হয়, যাতে ধুলোর স্তর পড়ে যায় তাতে। সহসা ভুলে যেতে পারি আমরা। কারণ, জীবনটা আসলে ভুলে থাকা ছাড়া আর কি? যাবতীয় প্রয়োজনের চাহিদা মেটানোর পর বিবিধ বিষয়বস্তু নিয়ে যাদের ভাবনার অবকাশ নেই, তারাই কি সুখী নয়? অথচ জীবনকে যারা বুঝতে চায়, বড় বড় প্রত্যাশা করে তারা তত দুঃখী। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করতে চায় যারা, তারা তত অসুখী। চাইলেই জীবনকে সবচাইতে নিখুঁত ভিতের গড়নে গড়ে তোলা যায় না।
কারণ, মনুষ্যকূল বড় অদ্ভুত সৃষ্টি!
দুঃখে পায় দিশা,
সত্যের তরে তাহাদের কঠোর অনীহা।

তবুও এতটা সজাগ হয়েও আমরা কেন গড়তে পারি না জীবন, নিজেদের মত করে? আরেকটু মনের মত করে! আমাদের কে নাচায়? পুতুল বই তো নই আমরা? যেন একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন? হয়তো নিয়তির হাতেই আমাদের অদৃশ্য নৃত্যের সূচনা এবং ইতি। নিয়তিই রচনা করে কল্পনাতীত, বিস্ময়কর পুতুলনাচের ইতিকথার।
Profile Image for Amanna Nawshin.
191 reviews57 followers
December 29, 2019
এই উপন্যাসটিকে সারাজীবন প্রবন্ধ ভেবে এসেছি সমম্ভব নামের কারণে। আর আজ বইটা পড়ার পর মনে হচ্ছে নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক।

গ্রাম্যজীবনের তথা মানুষের সম্পর্কগুলো নিয়ে পুতুল খেলা যেনো মানিকবাবুর কাছে ছেলেখেলার মতোই। এই চিত্রগুলো তিনি আঁকতেও পারেন ভালো। কোন ধরনের শক্তিমান চরিত্র না সৃষ্টি করেই কতোগুলো সাধারণ চরিত্র দিয়ে তিনি যে অসাধারণ গল্প লিখেছেন তাতে লেখককে সাধুবাদ জানালেও সেটা কম হয়ে যায়।

গল্পে কুমুদ আর মতির ব্যাপার স্যাপার গুলো বেশ ভালো লেগেছে, ওদের সমাপ্তিটাও সুন্দর। বরং মতি তার পূর্ববর্তি অবস্থানে ফিরে গেলেই সেটা হতো দুঃখের। শশীকে গল্পের প্রধান চরিত্র হিসেবে একদম মানিয়ে গিয়েছে, তাছাড়াও পরাণ, মোক্ষদা, যাদব, পাগলাদিদি, যামিনী কবিরাজ, সেনদিদি, বিন্দু, গোপাল কিংবা কুন্দর চরিত্রগুলোও যেনো গ্রামের চিরাচরিত দৃশ্যের সাথে একদম মানানসই। আর কুসুমকে যে পরিমাণ মাধুর্য ঢেলে লেখক চিত্রায়িত করেছেন তাতে অধিকাংশ সময়েই শশীর মতো আমারো ওকে দূর্বোধ্যই মনে হয়েছে। আসলে চরিত্রের এই দুর্বোধ্যতার জন্য দায়ী সমাজ, সেখানে লেখককে দোষারোপ করার কোন ভিত্তি নেই। আমাদের এখনকার সমাজের দূর্বোধ্য মানুষগুলোও সমাজের সৃষ্টি, অথবা সমাজের সাথে নিজেকে খাপখাওয়াতে মানুষ নিজেই নিজেকে কখনো কখনো দূর্বোধ্য করে তোলে। মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা না থাকলে মানব চরিত্র বোঝাটা অনেক সহজ হয়ে যেতো। আর এই ব্যাপারটাই গল্পে রূপ দিতে পারদর্শী লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই গল্পটা টিনএজে পড়লে এতো ভালো লাগতো না। বলছি কারণ "পদ্মা নদীর মাঝি" পড়েছিলাম কলেজে থাকতে, কুবের আর কপিলা কে তখন ক্যারাক্টারলেস বলতে খুব ভালো লাগতো। এখন আর লাগে না। কারণ মানব সম্পর্কটা যে কতোটা দূর্বোধ্য এই ধারণা পাওয়ার মতো বিবেচনাবোধ অথবা বুদ্ধি কোনটাই তখন ছিলোনা!

অবশ্যপাঠ্য একটা বই। টিন এজে পড়ে যদি কারো ভালো না লেগে থাকে তবে বলবো এখন আবার পড়ুন। শুভকামনা।
Profile Image for Madhurima Nayek.
361 reviews135 followers
March 25, 2019
পুতুলনাচের ইতিকথা একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। উপন্যাসের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু গাওদিয়া গ্রাম ও এই গ্রামের মানুষজন। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সহজাত বৈজ্ঞানিক কৌতূহল ও মননশীলতার প্রাধান্যে গ্রামীণ জীবন অবলম্বনে রচিত ' পুতুলনাচের ইতিকথা ' উপন্যাসটি। এখানে পুতুলনাচের কথা সরাসরি কোথাও বর্ণিত হয়নি - তবে পুতুল কথাটি এবং পুতুল খেলার প্রসঙ্গ একাধিকবার উল্লেখিত হয়েছে।

উপন্যাসের শুরু থেকেই অদৃশ্য নিয়তির এক অদ্ভুত লীলার সূচনা হয়ছে। বজ্রাঘাতে দগ্ধ হারুর দেহখানি শশী ডাক্তার দেখতে পায় এবং গোবর্ধনের সহযোগিতায় গ্রামে ন���য়ে আসে। এরপর গ্রামের লোকজনের সহায়তায় মৃতদেহ সৎকার করা হয়।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে, লেখক সুকৌশলে শশীর সংসার ও পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের কাহিনি ভাগে দেখা যায় শশী ডাক্তার কলকাতা শহরে ডাক্তারি শিক্ষা সম্পূর্ণ করে গ্রামেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করে এবং গ্রামের লোকেদের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। গ্রামের হারু ঘোষের কন্যা মতি ও পুত্রবধূ কুসুমের সঙ্গে শশী ডাক্তারের সম্পর্কের টানাপোড়েনেই মূল কাহিনির উপজীব্য, তার একাধিক উপকাহিনিও (কুমুদ - মতি, বিন্দু - নন্দলাল) গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধি করেছে। সবমিলিয়ে জীবন্ত পুতুলদের মর্মান্তিক যান্ত্রিক জীবনের ব্যর্থতার ইতিহাস হয়ে উঠেছে ' পুতুলনাচের ইতিকথা '।

এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন যে, মানুষের সামগ্রিক প্রয়াস, ইচ্ছা বাসনার পূর্ণতা কিংবা অপূর্ণতার পরিণাম তার নিজের হাতে নেই।এক অজ্ঞাত শক্তির অমোঘ পরিচালন - নির্দেশের কাছে মানুষের ভূমিকা নিছক পুতুলের।
Profile Image for Ahmed Aziz.
379 reviews69 followers
August 10, 2025
মেয়েরা প্রায়ই বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে ক্লিয়ার বা ভেজাল ওয়ালা সিগনাল পাঠাইতে থাকে কিন্তু বাংলার মাটিতে অধিকাংশ পুরুষের সিগনাল ধরার এন্টেনা কাজ করে না বিধায় হয় পুরো সিগনাল রেঞ্জের বাইরে দিয়ে যায় অথবা এমন সময় সেই সিগনালের পাঠোদ্ধার হয় যখন লাইফের ভয়েজার সৌরজগতের বাইরে। গ্রাম বাংলার পটভূমিতে মাঝারি বলদ ডাক্তারের এইরকম ক্লিয়ার সিগনাল বুঝতে দেরি করার অনবদ্য ধ্রুপদী উপন্যাস।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
January 4, 2025
২৫ সালের শুরু হল মানিকবাবুর এপিক উপন্যাসটি দিয়ে। কতবার নাম শুনেছি বইটার—পুতুল নাচের ইতিকথা, পরবো পরবো করে জমিয়ে রাখা। মাস ছয়েক আগে বইয়ের দোকানে দেখে কিনেও ফেললাম, কিন্তু পড়া শুরু হলো কই। এবার বই অবলম্বনে বানানো সিনেমার ট্রেইলার দেখে ভাবলাম, পড়ার এই সময়। সিনেমার কাস্ট দেখে মুগ্ধ, আর পড়ার সময় সেই অভিনেতাদেরই চরিত্রগুলোর জায়গায় কল্পনা করলাম।

শশী ডাক্তারি পাশ করে গ্রামে এসে রোগী দেখে। শশীর মধ্যে এক শহুরে, শিক্ষিত যুবককে দেখি—যে স্বতন্ত্রে বিশ্বাসী, প্র্যাকটিকাল বা বৈষয়িক ঠিকই, কিন্তু শিক্ষা তার ব্যক্তিত্বে এক নতুন স্তর যোগ করেছে। তাই গ্রাম্য জীবনে শশীর মন পুরোপুরি টেকে না। গ্রামে শশির মান-সম্মান অনেক, একমাত্র পাশ করা ডাক্তার, অসুখ-বিসুখে ভরসা, নানা কাজে পরামর্শদাতা। কিন্তু তার এই উঁচু মনের কথা ভাগাভাগি করার লোক কই। বাড়িতে তার অতি বৈষয়িক বাবার কর্তৃত্ব, চায়ের দোকানে একঘেয়ে এক সুরে গ্রাম্য আলাপ।
তারপর বাজারের সন্ন্যাসী, বাজার দর, একাল-সেকালের পার্থক্য, নারী হরণ, পূর্ণ তালুকদারের মেয়ের কলঙ্ক, বিদেশবাসী গাঁয়ের বড় চাকুরে সুজন দাস, এইসব আলোচনা। শশী কি এত উঁচুতে উঠিয়ে গিয়াছে যে এইসব গ্রাম্য প্রসঙ্গে তাহার মন বসিল না, শান্ত অবহেলার সঙ্গে নীরবে শুনিয়া গেল? তা তো নয়। শুধু আধখানা মন দিয়া সে ভাবিতেছিল, এতগুলি মানুষের মনে মনে কি আশ্চর্য মিল। কারো স্বাতন্ত্র্য নাই, মৌলিকতা নাই, মনের তারগুলি এক সুরে বাঁধা।

মানিক বাবুর এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো সমাজের ভিন্ন স্তরগুলোর একটা স্যাম্পল। এবং তাদের উপস্থাপনও দারুন। কুসুম—তার মন বোঝা মুশকিল, গ্রামের সরল মেয়ে মতি, রূপবতী সেনদিদি, প্রবীর রাজপুত্র সেজে আগমন কুমুদের, বনবিহারী ও জয়ার সংসার—পাঠকের বোরড হওয়ার কোন জায়গা রাখেনি মানিকবাবু। ২০০ পাতার নভেল যে কিভাবে শেষ হয়ে গেল, আর তার গতি যেন মানুষের জীবনের মতই—আনপ্রেডিক্টেবল।


Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
May 28, 2025
সব ধরনের মহৎ(!!) লেখা শেষ করার পর যেমনটা হয়, স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি কিছুকাল। এটার বেলায়ও তাই হয়েছে।

মানিকের লেখা এতটা টানটান, এতটা রূঢ় আর নির্মমভাবে সৎ যে, প্রথম দিকে পড়তে গিয়ে থমকে গেছি। আমাদের যেসব ছোটগল্পে বা নাটকে গ্রামীণ জীবনকে "পলিটিক্যালি কারেক্ট" ভঙ্গিতে দেখানো হয়, সেখানে এই উপন্যাস একটা ঝাড়ু মারা ঝড়ের মতো। এখানে কেউ নিস্পাপ না, কেউ সম্পূর্ণ খারাপও না—মানুষরা জটিল, দ্বিধাগ্রস্ত, এবং প্রাকৃতিকভাবে নোংরা হয়ে ওঠে, পরিস্থিতির চাপে। শশী, কুসুম, মতি, গোপাল, বিন্দু—তারা কেউ "সিম্বল" না, কেউই "আদর্শ চরিত্র" না। তারা আছে, যেমন করে বেঁচে থাকা যায়।

স্বল্প কথায়, অল্প ক্যানভাসে কতকিছু যে বলে ফেলা যায়! মুগ্ধ বিমোহিত ও স্তব্ধ হয়ে গেসি।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
January 27, 2023
পুতুলনাচের ইতিকথা অনেকটা বসন্তের বাতাসের মতো। কেমন উতল করে তোলে৷ আনমনা করে দেয়। আর শেষ হয়েও ছাপ রেখে যায়।
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,860 followers
October 9, 2012
One of the most complex & poignant classics of Bengali literature whose power & intensity is to be believed only upon reading. Recommended.
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
April 15, 2020
ভারি বিচিত্র মানুষের এই মন। কখনো চাইলে সে কান্নাকেও গান বলে চালিয়ে দিতে পারে।
Profile Image for Ashkin Ayub.
464 reviews228 followers
September 20, 2022
ভেসে যাওয়া যাত্রা থেকে সংসারের চকমকি খুচরো স্মৃতিগুলো ধ্বনি তোলে; ধীরে ধীরে দৃশ্যকল্প ছেড়ে একগাদা ইমোজির কাছে শিখে নিতে হয়, যাপিত জীবনের গল্প। এক লহমায় পাল্টে যায় দিন রাতের জীবন নামের থিয়েটারের সব নাটক।

ঘরের সবুজ দেয়ালে কোনো তেলরঙ ছবি দ্রুত ভেসে যাচ্ছে – ধরতে হয়? পুরানো ঘর থেকে কোনো গম্ভীর দিনের শুকনো ফুল রেখেছো? মানিকবাবুর লেখা পেয়েছিলে? মনের জন্য ন্যাপথলিন খুঁজতে গিয়ে বিড়বিড় করি রোগাশোয়া কুকুরের পাশে টাউনের মোড়ে।

কিছু বানিয়ে লেখা মানে হচ্ছে ট্রেনে ঝাঁপ দিয়েও মরে না যাওয়ার মতন কিছু একটা। যদিও আমি ট্রেনে ঝাঁপ টাপ কখনই দিইনি। কাগজের কালো কালি ছাড়িয়ে শশী ডাক্তার, কুসুম, মতি, কুমুদের নিজস্ব বোঝাপড়ায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখি, যখন পুরানো আবেগগুলো নাড়া দিইয়ে উঠে। এককালে সবুজ গঙ্গাফড়িং দেখে ভেবেছিলাম দুপুরের রঙ। ঈশ্বর একটু কায়দা করে আমাকে ভূগোলের ওই প্রান্তে ঢিল মেরেছিলেন কি না জানিনা। তবে গঙ্গাফড়িং দেখলেই এখনও রাত বিরেতে দুপুর চলে আসে। দুপুর আমার নামও হতে পারে, আবার প্রেমিকার নামও হতে পারে। হয়ত দুপুরগুলো রঙটাও পাল্টে পাল্টে একসময় সাদা হয়ে যায়।

সাদা রঙে ছবি এঁকেছিলাম সাদা কাগজে। সেই আঁকা দেখে খুব হেসেছিলে। সেই প্লাবন হাসির সাথে সাথে সব কিছু কোথায় হারিয়ে গেলো – সেটাও এক সাদা স্মৃতি!

জীবনে তো এমনটাই হয়, নাকি?

Displaying 1 - 30 of 384 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.